ওয়াশিংটনের পূর্বের অসমর্থিত খসড়া প্রস্তাবটিতে সমর্থনের ইঙ্গিত দেওয়ার পর শুক্রবার ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে ভোট নেওয়ার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তুত।
কয়েকদিন বিলম্বের পর এএফপি’র দেখা খসড়াটির সর্বশেষ সংস্করণে অবিলম্বে নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার ও শত্রুতা বন্ধের টেকসই শর্ত তৈরি করার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে চুক্তিটি অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানায়নি। খবর এএফপি’র।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রস্তাবটি আনা হলে আমরা এটিকে সমর্থন করব।’
প্রস্তাবটি খুব শক্তিশালী ও ‘আরব গ্রুপের সম্পূর্ণ সমর্থিত’ বলে উল্লেখ করে তিনি খসড়া প্রস্তাবকে শিথিল করার কথা অস্বীকার করেন।
গাজার অবনতিশীল পরিস্থিতি ও ক্রমবর্ধমান মৃতের সংখ্যার পটভূমিতে এসেছে। ম্যানহাটনে জাতিসংঘ সদর দফতরে কূটনৈতিক বিতন্ডার ফলে এই সপ্তাহে ভোট স্থগিত করা হয়েছিল।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক রিচার্ড গোয়ান বলেন, ‘খসড়াটির কিছু কথা অবাস্তব।’ তিনি বিশেষভাবে ভেটো-ক্ষমতাসম্পন্ন রাশিয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘খসড়াটি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার দীর্ঘস্থায়ী যুক্তি “যুদ্ধবিরতি অপরিহার্যের” বিরুদ্ধে যায়। তাই খসড়াটি সমর্থন করতে পারবে কি-না তা নিয়ে রাশিয়াকে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
এএফপি’র মতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পৃষ্ঠপোষকতায় খসড়া প্রস্তাবটির সংস্করণে, সমঝোতা সুরক্ষিত করার জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সংশোধন করা হয়েছে।
পৃথিবীতে এসেছে প্রথম সন্তান, কিন্তু সদ্যজাত সন্তানকে কোলে নেওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। তাই বুকভরা যন্ত্রণা নিয়ে লুইজিয়ানার আটককেন্দ্র থেকে নবজাতকের উদ্দেশ্যে একটি হৃদয়বিদারক চিঠি লিখেছেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে মাহমুদের চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে।
পুত্র দীনকে উদ্দেশ্য করে মাহমুদ লিখেছেন, ‘আমি যখন ভাবি, তোমাকে প্রথমবার কোলে নিতে পারিনি, তোমার প্রথম কান্না শুনতে পারিনি, তোমার মুঠোবাঁধা হাত খুলে দিতে পারিনি, কিংবা তোমার প্রথম ডায়াপার বদলাতে পারিনি; আমার হৃদয় ব্যথিত হয়ে ওঠে।’
নিজের সন্তানের জন্মের সময় তার অনুপস্থিতিকে তিনি ফিলিস্তিনের বহু পিতার অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে উল্লেখ করেছেন মাহমুদ।
বেদনা জড়িত বাক্যে তিনি লেখেন, ‘বর্ণবাদী শাসন ও দূরবর্তী কারাগারে বন্দি হয়ে আমিও অন্যান্য ফিলিস্তিনি পিতাদের মতো তোমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছি।’
‘প্রতিদিন জন্ম নেওয়া যেসব শিশুর পাশে তাদের বাবারা থাকেন না— তারা স্বেচ্ছায় যান না কোথাও। যুদ্ধ, বোমা, কারাগার কিংবা দখলদারত্বের নির্মম যন্ত্রের মাধ্যমে তাদের ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তোমার মা ও আমি যে শোক অনুভব করছি, তা ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর বহু প্রজন্ম ধরে ডুবে থাকা দুঃখের সাগরের একটি ক্ষুদ্র ফোঁটা মাত্র’, বলেন মাহমুদ।
নিজেকে একজন রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে বর্ণনা করে মাহমুদ চিঠিতে আরও লেখেন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রতি অটল সমর্থনের কারণেই তিনি আজ বন্দি।
সন্তানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘একদিন হয়তো তুমি জানতে চাইবে কেন ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য মানুষকে শাস্তি পেতে হয়, কেন সত্য ও সহানুভূতি ক্ষমতার জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।’
‘এই প্রশ্নগুলো কঠিন, কিন্তু আমি আশা করি আমাদের গল্প তোমাকে এটা শেখাবে; এই পৃথিবীর প্রয়োজন আরও সাহস। এমন মানুষ প্রয়োজন যারা সুবিধা নয় বরং ন্যায়কে বেছে নেন।’
গত বসন্তে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সংঘটিত বিক্ষোভে জড়িত থাকার কারণে এ বছরের ৮ মার্চ মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তার করেছিল দেশটির অভিবাসন কর্মকর্তারা। এরপর থেকে লুইজিয়ানার জেনা শহরে একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রে রয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদিবিদ্বেষী বিক্ষোভ বন্ধের অভিযানের প্রথম শিকার ৩০ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি যুবক। মাহমুদ খলিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের শিক্ষার্থী। যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের গ্রিনকার্ড রয়েছে তার। গ্রেপ্তারের পরই তার গ্রিনকার্ড বাতিলের কথা জানায় ওয়াশিংটন।
চার দিন ধরে চলা ভয়াবহ পাল্টাপাল্টি হামলার পর অবশেষে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় দুই দেশের মধ্যে এই তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের পরমাণু সক্ষমতা ও উত্তেজনার ক্রমবর্ধমান মাত্রা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি করেছিল। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সংঘর্ষে সাময়িক বিরতি এলেও—যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া ও কৃতিত্ব নিয়ে দুই প্রতিবেশীর ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
হঠাৎ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা
যুক্তরাষ্ট্রের সময় সকাল ৮টার কিছু আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ লেখেন, ‘দীর্ঘ রাতের আলোচনার পর আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, ভারত ও পাকিস্তান একটি সম্পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।’ তিনি দুই দেশের নেতাদের ‘সাধারণ জ্ঞান ও চমৎকার বুদ্ধিমত্তার’ প্রশংসাও করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এ ঘোষণাকে আরও বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে বলেন, শুধু যুদ্ধবিরতি নয়—ভারত ও পাকিস্তান একটি নিরপেক্ষ স্থানে বিস্তৃত আলোচনা শুরু করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি জানান, গত দুই দিন তিনি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স উভয় দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখেছেন। পাকিস্তান তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করে। কিছুক্ষণ পর ভারতও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়।
কৃতিত্ব ঘিরে দ্বিমত
যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মার্কো রুবিও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছেন, তবে ভারতের তথ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যুদ্ধবিরতির এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের সরাসরি আলোচনার মাধ্যমেই হয়েছে। তারা পরবর্তী কোনো আলোচনা হবে কিনা সে বিষয়ে ‘কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি’ বলেও জানায়।
অন্যদিকে পাকিস্তান পুরো বিষয়টিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রশংসা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্ব ও সক্রিয় ভূমিকায় আমরা কৃতজ্ঞ।’পাকিস্তানের এক সূত্র সিএনএনকে জানান, মার্কো রুবিওর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চুক্তি অনিশ্চিত অবস্থায় ছিল।
ভিন্ন অবস্থান: কেন?
বিশ্লেষকদের মতে, এই ভিন্ন ব্যাখ্যার পেছনে রয়েছে দুই দেশের মৌলিক কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। ভারত দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার বিরোধী। ওয়াশিংটনের হাডসন ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. অপর্ণা পান্ডে বলেন, ‘ভারত কখনোই কোনো দ্বন্দ্বে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা মেনে নেয় না, হোক তা পাকিস্তান, চীন কিংবা অন্য যে কোনো দেশের সঙ্গে।’তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান সবসময় আন্তর্জাতিক সহায়তা চায়, কারণ সেটিই একমাত্র উপায় যেটি ব্যবহার করে তারা কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।’
সংঘর্ষ যেভাবে শুরু
এই উত্তেজনার সূত্রপাত ২৬ এপ্রিল, কাশ্মীরের পাহালগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা থেকে। সেখানে ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নিহত হন। ভারত হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে। এরপর দুই সপ্তাহ পর ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালায়, যার আওতায় পাকিস্তান এবং পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে বিমান হামলা চালানো হয়।
পাকিস্তান পাল্টা জবাব দেয়। শনিবার সকালের দিকে ইসলামাবাদ-সংলগ্ন ঘাঁটি পর্যন্ত ভারতীয় হামলার অভিযোগ তোলে পাকিস্তান। জবাবে পাকিস্তানও ভারতের সামরিক ঘাঁটিতে মিসাইল হামলা চালায়। সেনাবাহিনীর ভাষায়, ‘চোখের বদলে চোখ।’
এই হামলার পর শ্রীনগর ও জম্মুতে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, ‘ভারতের আগ্রাসনের জবাবে পাকিস্তান যথাযথ প্রত্যুত্তর দিয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ কেন সক্রিয় হলো?
মাত্র দুই দিন আগেও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছিলেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ‘যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি বিষয় নয়।’ কিন্তু শুক্রবার নতুন গোয়েন্দা তথ্য আসার পর পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় সক্রিয় ভূমিকা নেয়। স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা জানান, সংঘাত ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছাতে পারে এমন তথ্য পাওয়ার পর তারা দ্রুত হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেন।
যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ কি?
যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কাশ্মীরের উভয় অংশে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিকবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনেন। পাকিস্তানও ভারতকে একই অভিযোগে দায়ী করে। তবে দেশটি জানায়, ‘আমরা চুক্তি পালনে আন্তরিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এই উত্তেজনার মধ্যে দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক ব্যবস্থা নিয়েছে—যেমন, ভিসা স্থগিত, বাণিজ্য বন্ধ এবং ভারতের পানিবণ্টন চুক্তি থেকে সরে আসা। এই সিদ্ধান্তগুলো ফিরিয়ে নেওয়া হবে কি না, সেটি এখনও অনিশ্চিত।
ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আগামী ১৫ মে তুরস্কের ইস্তানবুলে সরাসরি আলোচনায় বসতে ইউক্রেনের প্রতি আহ্বান জানান। তবে ট্রাম্প ও ইউরোপীয় মিত্রদের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। কিয়েভ থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
রোববার ভোরে ক্রেমলিনে দেওয়া এক ভাষণে পুতিন বলেন, ‘কোনো শর্ত ছাড়াই আমরা কিয়েভকে আবার আলোচনায় বসতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’ এর কয়েক ঘণ্টা আগেই ইউক্রেন, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডের নেতারা সোমবার থেকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য একযোগে মস্কোর প্রতি আহ্বান জানান।
পুতিন বলেন, ‘২০২২ সালে যেসব আলোচনা অমীমাংসিত রয়ে গেছে তা ফের শুরুর জন্য কিয়েভ সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।’ উল্লেখ্য, ২০২২ সালের শুরুতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম দিকে ইস্তানবুলে সরাসরি আলোচনা হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।
পুতিন আরো জানান, ‘আমরা দেরি না করে আগামী বৃহস্পতিবার ইস্তানবুলে ফের সংলাপ শুরু করতে চাই।’ এ আলোচনার আয়োজন করতে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সহায়তা চাইবেন বলেও জানান রুশ প্রেসিডেন্ট।
তিনি বলেন ‘আমি ইউক্রেনের সঙ্গে আন্তরিক আলোচনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমে সংঘাতের মূল কারণ চিহ্নিত করে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির ভিত্তি স্থাপন করতে।’ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনকে ‘ডি-নাজিফাই’ করা, রুশভাষীদের নিরাপত্তা, ন্যাটোর সম্প্রসারণ রোধ ও ইউক্রেনের পশ্চিমমুখী নীতির বিরোধিতা।
তবে, কিয়েভ ও পশ্চিমারা বরাবরই এসব দাবিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা এটিকে রাশিয়ার ‘সাম্রাজ্যবাদী ভূমি দখলের প্রচেষ্টা’ বলেও আখ্যা দিয়েছে।
পুতিন বলেন, তিনি আলোচনায় রাজি। সম্ভব হলে পরেও যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যেতে পারে। তবে তিনি ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্রদের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সেই সঙ্গে ইউরোপীয় নেতাদের বিরুদ্ধে রাশিয়া বিরোধী মনোভাব ও আল্টিমেটাম দেওয়ার অভিযোগ করেন। তবে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
এর কয়েক ঘণ্টা আগেই কিয়েভ সফর করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক। তারা একযোগে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। সেই প্রস্তাবে সাড়া না দিলে রাশিয়াকে নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেন।
ম্যাক্রোঁ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোনো শর্ত ছাড়াই আগামী সোমবার থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। রাশিয়া এতে সাড়া না দিলে ইউরোপ ও আমেরিকা একসঙ্গে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেবে।’ ইউক্রেনের পক্ষে থাকা ২০টি দেশের নেতাদের সঙ্গে কিয়েভে ভার্চুয়াল বৈঠকও করেন ইউরোপীয় চার নেতা ।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন দীর্ঘদিন ধরেই একই ধরনের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছিল। তবে রাশিয়া সেই প্রস্তাবে কখনো সাড়া দেয়নি।
পাল্টাপাল্টি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ আলোচনার পর শনিবার (১০ মে) যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে।
তবে রবিবার (১১ মে) ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগর ও জম্মুতে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির দাবি, ‘পাকিস্তান বারবার যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। তারা হামলা চালিয়েছে, পরে ভারতীয় সেনারা তার জবাব দিয়েছে।’
নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘চুক্তি লঙ্ঘনের এই কার্যকলাপগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ও পরিস্থিতির মোকাবেলায় যথাযথ গুরুত্ব ও দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন করার জন্য আমরা পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানাই।’
অন্যদিকে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ভারতের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করা হয়েছে। বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে তারা ‘পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনা গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত ২২ এপ্রিল ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে হামলা চালিয়ে ২৬ পর্যটককে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ায় চিরবৈরি এই দুই প্রতিবেশি দেশ।
এই হত্যাকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। তবে ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে। পরবর্তীতে দুপক্ষই একে অপরের কূটনীতিক ও নাগরিকদের নিজেদের দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে। পাশাপাশি সীমান্ত ও আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
এরপরই গত ৬ মে দিবাগত রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এতে পাকিস্তানে অন্তত ৩৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানায় দেশটির সরকার। আবার পাকিস্তানও পাল্টা অভিযান ঘোষণা করে। পাকিস্তানের হামলায় ২১ ভারতীয় নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ভারত সরকার।
এতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ভারত-পাকিস্তান।
শনিবার নিজের সামাজিকমাধ্যম ট্রুথে দেওয়া এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতে দীর্ঘ আলোচনার পর তারা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছেন। আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান।’
পরে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। প্রায় তিন ডজন দেশের কূটনৈতিক সহায়তায় এই চুক্তি সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি।
পরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস. জয়শঙ্করও চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, উভয়পক্ষই শত্রুতা বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ় অবস্থানের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও একে বৃহত্তর স্থিতিশীলতার পথে একটি পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, নিরপেক্ষ জায়গা থেকে এক গুচ্ছ বিস্তৃত বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়েছে দুই দেশ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের শাহবাজ শরিফসহ দুই দেশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গেল ৪৮ ঘণ্টা বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও মার্কো রুবিও।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন যে, এটি দীর্ঘমেয়াদে বজায় থাকবে।
ভারত বলছে, পাকিস্তান তাদের ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই পাকিস্তান অভিযোগ করে যে, ভারত তাদের তিনটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। ভারতের সেনাবাহিনী এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানকে উসকানিমূলক এবং সংঘাতমূলক আচরণের জন্য অভিযুক্ত করেছে। খবর বিবিসির।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ভারতের এস-৪০০ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করেছে—যা দিল্লি পুরোপুরি অস্বীকার করেছে।
গত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে যে হামলা চালায়, তারই পাল্টা হিসেবে ইসলামাবাদ ‘অপারেশন বুনইয়ান-উন-মারসুস’ নামে এক অভিযান শুরু করেছে।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার ভ্যোমিকা সিং এবং পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি উভয়েই পাকিস্তানের হামলায় ভারতের কোনো সামরিক স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে—এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
উইং কমান্ডার সিং বলেন, পাকিস্তান ক্রমাগত বিদ্বেষপূর্ণ বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করেছে। তারা বলছে, আদমপুরে ভারতীয় এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি হয়েছে, সুরাট ও সিরসায় বিমানঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে, নাগরোটায় ব্রহ্মোস স্পেস, ডেরাঙ্গিয়ারি ও চণ্ডীগড়ে আর্টিলারি অবস্থান এবং চণ্ডীগড়ের গোলাবারুদ ডিপো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এসব দাবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে ভুয়া প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
যে কারণে পাকিস্তানের অভিযানের নাম ‘অপারেশন বুনিয়ানুন মারসুস’
পেহেলগাওকাণ্ডে পাকিস্তানকে দায়ী করে দেশটির অভ্যন্তরে ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান চালিয়েছে ভারত। গত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানের ২৪টি স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে এই অভিযান শুরু করে ভারত। এতে দেশটিতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এর পাল্টা জবাবে ‘অপারেশন বুনিয়ানুন মারসুস’ নামে অভিযান শুরু করেছে পাকিস্তান।
গত শুক্রবার মধ্যরাতে ও শনিবার ভোরে ভারতের বারামুলা থেকে ভুজ পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা বাহিনী। তাদের অভিযানের নাম বুনিয়ানুন মারসুস কেন- তা নিয়ে রয়েছে যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারীদের কৌতূহল। জানা গেছে, ‘বুনিয়ানুন মারসুস’ আরবি শব্দগুচ্ছ। এর অর্থ কংক্রিট কাঠামো বা দৃঢ় ভিত্তি। পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেছেন, বুনিয়ানুন মারসুস অর্থ সিসা ধাতু দিয়ে তৈরি সুরক্ষিত প্রাচীর’।
অভিযানের নাম ‘অপারেশন বুনিয়ানুন মারসুস’ রাখা প্রসঙ্গে পাকিস্তানের আইএসপিআর জানিয়েছে, পবিত্র কোরআনের সুরা আস-সাফের ৪ নং আয়াত থেকে এ শব্দগুচ্ছ নেওয়া হয়েছে। ওই আয়াতে ব্যবহৃত ‘বুনিয়ানুন মারসুস’ ইসলামে ঐক্য, শৃঙ্খলা এবং দুর্নিবার প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। মূলত এখান থেকেই পাকিস্তানের অভিযানের নামকরণ করা হয়েছে।
সুরার অনুবাদ হলো: ‘আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন, যারা তার পথে লড়াই করেন, যেন তারা গলিত সিসা দিয়ে তৈরি শক্ত প্রাচীর’ (সুরা আল-সাফ, আয়াত ৪)
নয়াদিল্লির দেওয়া অভিযানের নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’ প্রসঙ্গে ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছিল, পেহেলগাওয়ে ২৫ নারী বিধবা হয়েছেন। এদের মধ্যে মাত্র কয়েকদিন আগে একজনের বিয়ে হয়েছিল। সিঁদুর সনাতনী নারীরা বিয়ের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেন। ভারতের হামলার নাম অপারেশন সিঁদুর রাখা হয়েছে মূলত ওই হামলায় স্বামী হারানো নারীদের ক্ষত এবং কষ্টের কথা তুলে ধরে।
ভারতের সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পছন্দে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামটি রাখা হয়েছে।
উত্তেজনার আগুনে পরমাণু নয়, বললেন খাজা আসিফ
এদিকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, এই মুহূর্তে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনায় নেই। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, যদি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাহলে শুধু আমাদের নয়, যারা বাইরে থেকে দেখছে, তারাও এর প্রভাব থেকে রেহাই পাবে না।
ভারত-পাকিস্তানের চলমান সামরিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন।
খাজা আসিফ বলেন, ‘আমি বিশ্বকে বলছি, এটা শুধু এই অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না; এর ধ্বংস অনেক বিস্তৃত হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারত যেভাবে পরিস্থিতি তৈরি করছে, তাতে আমাদের বিকল্পগুলো কমে আসছে।’
তবে এই পরিস্থিতি চরমে ওঠার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে ভারত-পাকিস্তান উভয়পক্ষই যুদ্ধবিরতিতে যেতে রাজি হয়।
ভারতের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর পাকিস্তান শনিবার তার আকাশসীমা পুনরায় খুলে দিয়েছে। পাকিস্তান বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (পিএএ) একথা জানিয়েছে।
করাচি থেকে এএফপি এই খবর জানায়।
পাকিস্তান বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর, ‘সব ধরনের ফ্লাইটের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা সম্পূর্ণরূপে খুলে দেওয়া হয়েছে।’
পরিপূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ভারত পাকিস্তান। শনিবার (১০ মে) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন তথ্য জানিয়েছেন।
নিজের সামাজিকমাধ্যম ট্রুথে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতে দীর্ঘ আলোচনার পর তারা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছেন। আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, পরিপূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান।
সাধারণ জ্ঞান ও দুর্দান্ত বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগানোর জন্য দুদেশকে তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এদিকে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক ধরও এমন তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার সঙ্গে আপস না করেই এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সবসময় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান।
পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাওয়ায় সংঘাতের ‘তাৎক্ষণিক উত্তেজনা হ্রাস’ ও ‘সর্বোচ্চ সংযমের’ আহ্বান জানিয়েছে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলো। শুক্রবার এ আহ্বান জানান অর্থনৈতিক জোটের নেতারা।
মন্ট্রিল থেকে এএফপি জানায়, বিশ্বের সাতটি উন্নত ও ধনী গণতান্ত্রিক দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘সামরিক উত্তেজনা আরো বাড়লে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি হতে পারে’। উভয় পক্ষকে ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে সরাসরি সংলাপে অংশ নেওয়ার’ আহ্বান জানান তারা।
উল্লেখ্য, জি-৭ সদস্য দেশগুলো হলো: যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও জাপান।
এই জোট বৈশ্বিক অর্থনীতি, নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক সংকটসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমন্বিত নীতি নির্ধারণ ও আলোচনার মাধ্যমে কাজ করে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও শুক্রবার পাকিস্তানের জন্য ঋণ কর্মসূচি পর্যালোচনার অনুমোদন দিয়েছে। যার ফলে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার জরুরি তহবিল ছাড় করা হয়েছে এবং নতুন ১শ’ ৪০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি বেইলআউট প্যাকেজ অনুমোদন করা হয়েছে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
২০২৩ সালে পাকিস্তান দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়, যখন রাজনৈতিক সংকট আর অর্থনৈতিক মন্দা এক সঙ্গে মিশে দেশটির ঋণের বোঝা চরম মাত্রায় পৌঁছে। তখন আইএমএফের ৭ বিলিয়ন ডলারের বেইলআউট প্যাকেজ পাকিস্তানকে রক্ষা করে। যা ১৯৫৮ সালের পর থেকে তাদের ২৪ তম আইএমএফ সহায়তা।
আইএমএফ এক বিবৃতিতে বোর্ডের প্রথম ঋণ পর্যালোচনার অনুমোদনের কথা উল্লেখ করে গণমাধ্যমের খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছে, ‘পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ শক্তিশালী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে, যা অর্থায়ন এবং বৈদেশিক খাতে উন্নতি এবং একটি ধারাবাহিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে।’
এছাড়াও ‘জলবায়ু ঝুঁকি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতি অর্থনৈতিক সহনশীলতা গড়ে তোলা পাকিস্তানের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য’ প্রায় ১ শ’ ৪০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি নতুন ঋণ কর্মসূচির অনুরোধও অনুমোদন করেছে আইএমএফ’র বোর্ড।
পাকিস্তানের সাথে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ভারত ভোটদানে বিরত থাকে। আইএমএফ বোর্ডে ভুটান, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ভারত। এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন একজন ব্যক্তি এএফপি’কে নিশ্চিত করেছেন, ভারতের সিদ্ধান্তের ফলে ওই চারটি দেশই কার্যত ভোটদানে বিরত ছিল। তবে ওই ব্যক্তি প্রকাশ্যে গণমাধ্যমের সামনে কোনো কথা বলেননি।
ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘পাকিস্তানের দুর্বল রেকর্ডের কারণে সেখানে আইএমএফ কর্মসূচির কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।’
নয়াদিল্লি আরো আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, এই অর্থ পাকিস্তান ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদে’ ব্যবহার করতে পারে।
আইএমএফ বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত বেড়েছে এবং তিন দিনের ক্ষেপণাস্ত্র, গোলাবর্ষণ ও ড্রোন হামলায় ৫০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে।
ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ সেনা অভিযানের পাল্টা জবাব দিতে ‘অপারেশন বুনিয়ান উন মারসুস’ শুরু করেছে পাকিস্তান। এ অভিযানের আওতায় ইতোমধ্যে শুক্রবার রাতে ভারতের ১১টি সামরিক স্থাপনায় ২৬ সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনী।
শুক্রবার (৯ মে) রাতে ভারতের বারামুলা থেকে ভূজ পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা এসব হামলা চালানো হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, সামরিক অভিযানটির নাম ‘অপারেশন বুনইয়ান–উন–মারসুস’ রাখা হয়েছে। আরবি ভাষার এ শব্দগুচ্ছের অর্থ ‘সুদৃঢ় প্রাচীর’।
জানা যায়, শুক্রবার রাতের হামলায় ভারতের জম্মু-কাশ্মিরের বারামুলা জেলার উরি শহরে ভারতীয় সেনবাহিনীর একটি ব্রিগেডের হেডকোয়ার্টার এবং সরবরাহ বা রসদ ডিপো, নাগরোটা শহরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি আর্টিলারি ব্যাটারি ধ্বংস হয়েছে।
অন্যদিকে ভারতের মন্ত্রণালয়ের দাবি, পাকিস্তান থেকে চালানো সন্দেহভাজন সশস্ত্র ড্রোন বেসামরিক ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার চেষ্টা করেছিল। বারামুল্লা, শ্রীনগর, অবন্তীপোরা, নাগরোটা, জম্মু, ফিরোজপুর, পাঠানকোট, ফাজিলকা, লালগড় জাট্টা, জয়সলমীর, বারমের, ভুজ, কুয়ারবেত এবং লক্ষী নালার কাছে ওই ড্রোনগুলো দেখা গেছে।
তারা আরও জানায়, ফিরোজপুরের একটি বেসামরিক এলাকায় একটি ড্রোন থেকে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। ওই হামলায় স্থানীয় অনেক বাসিন্দা গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং নিরাপত্তা বাহিনী এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে।
বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, শনিবার ভোর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে বিস্ফোরণের খবর আসছে। বিবিসির সাংবাদদাতারা ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগর এবং জম্মু শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তবে এই বিস্ফোরণের উৎস শনাক্ত করা যায়নি।
গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারায়। এই হামলার দায় পাকিস্তানের ওপর চাপিয়ে মঙ্গলবার রাতে দেশটির ২৪টি স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এতে পাকিস্তানে কমপক্ষে ৩৬ জন নিহত হন। আহত হন ৪৬ জনের বেশি। এর প্রতিশোধে পালটা হামলা চালিয়ে ভারতের বেশ কয়েকটি বিমান এবং ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভিডিও প্রকাশ করেছে ভারতের সেনাবাহিনী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে এ ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। শুক্রবার আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় সেনাবাহিনী একটি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করেছে, যাতে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ভারতের দাবি, লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) লঙ্ঘনের জবাবে এ হামলা চালানো হয়েছে। গত রাতে একাধিক সংঘাতের অভিযোগ করে এক এক্স (টুইটার) পোস্টে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যথাযথ জবাব দেওয়ার কথা জানায় ভারত।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, পাকিস্তান গত রাতে এলওসিজুড়ে একাধিক আগ্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে। আমাদের সেনারা তা প্রতিহত করে শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, প্রকাশিত ভিডিওটিতে একটি লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার মুহূর্ত ধারণ করা হয়েছে। তবে ভিডিওটির সত্যতা বা স্থান-কাল নিয়ে এখনো স্বতন্ত্রভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভারতের আক্রমণের জবাবে তাদের বাহিনী শুধু প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। পাকিস্তান অভিযোগ করেছে, ভারত গত কয়েকদিনে বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।
এর আগে, মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর আওতায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তত ৯টি শহরে একযোগে হামলা চালায় ভারত। ভারত দাবি করে, জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে তারা এই অভিযান চালিয়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার সারাদিনজুড়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে আরও বহু ড্রোন হামলা চালানো হয়।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানান, বাহাওয়ালপুরের আহমেদপুর পূর্বাঞ্চলে ১৩ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে দুই-তিন বছর বয়সি একটি শিশু মেয়ে, সাতজন নারী ও চারজন পুরুষ। আহতদের মধ্যে রয়েছেন ৯ নারী ও ২৮ পুরুষ।
এদিকে পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের পাল্টা হামলায় ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ও একটি যুদ্ধ ড্রোন ভূপাতিত হয়েছে। আইএসপিআরের ডিজি বলেন, শত্রুর আগ্রাসনের জবাবে প্রতিরক্ষামূলকভাবে আমরা ৩টি রাফায়েল জেট, একটি মিগ-২৯, একটি এসইউ বিমান এবং একটি হেরন যুদ্ধ ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছি।
ভারতের বন্দর-টার্মিনালে নিরাপত্তা জোরদার
পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভারতের সব বন্দর, শিপিং টার্মিনাল ও শিপইয়ার্ডে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি উত্তপ্ত সীমান্ত পরিস্থিতির বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তরাঞ্চলের ২৪টি বিমানবন্দরে বেসামরিক ফ্লাইট চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। গত কয়েক দিনে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের জেরে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভারতের বিমানসেনা বুধবার পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়, যার জেরে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই পাকিস্তানের নাগরিক।
ভারতের বড় বিমানসংস্থাগুলো যেমন- এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো ও স্পাইসজেট, বুধবার থেকে ১০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে। বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখনো বন্দর নিরাপত্তা জোরদার করার সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা বা পাকিস্তানের প্রতি সরাসরি কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সামরিক ও বেসামরিক অবকাঠামোতে সম্ভাব্য হামলা রোধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর আওতায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তত ৯টি শহরে একযোগে হামলা চালায় ভারত। ভারত দাবি করে, জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে তারা এই অভিযান চালিয়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার সারাদিনজুড়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে আরও বহু ড্রোন হামলা চালানো হয়।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানান, বাহাওয়ালপুরের আহমেদপুর পূর্বাঞ্চলে ১৩ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে দুই-তিন বছর বয়সি একটি শিশু মেয়ে, সাতজন নারী ও চারজন পুরুষ। আহতদের মধ্যে রয়েছেন ৯ নারী ও ২৮ পুরুষ।
এদিকে পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের পাল্টা হামলায় ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ও একটি যুদ্ধ ড্রোন ভূপাতিত হয়েছে। আইএসপিআরের ডিজি বলেন, শত্রুর আগ্রাসনের জবাবে প্রতিরক্ষামূলকভাবে আমরা ৩টি রাফায়েল জেট, একটি মিগ-২৯, একটি এসইউ বিমান এবং একটি হেরন যুদ্ধ ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছি। তিনি জানান, জম্মু, আখনুর ও শ্রীনগরের সাধারণ এলাকাগুলোতে একটি করে বিমান এবং অবন্তীপুরে দুটি বিমান গুলি করে নামানো হয়েছে।
সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যকার দীর্ঘদিনের উত্তেজনা নিরসনে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় এ বিষয়ে দুদেশের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা।
বুধবার (৭ মে) প্যারিসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি।
আল-শারা বলেন, ‘সিরিয়া ও ইসরায়েল এখন মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় পরোক্ষভাবে আলোচনা করছে। এ আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো উভয় দেশের মধ্যকার পরিস্থিতি শান্ত ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা, যাতে করে এটি আবারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না সিরিয়া আবারও সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হোক। আমাদের লক্ষ্য হলো, দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।’
এ সময় সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইসরায়েলের অযাচিত হস্তক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘সিরিয়ার ভূখণ্ডে ইসরায়েলের হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। তারা ১৯৭৪ সালের অস্ত্রবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করছে। আমরা দামেস্কের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জানিয়েছি যে, সিরিয়া ১৯৭৪ সালের চুক্তির শর্ত রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে, এমনকি প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসের কাছেও বিমান হামলা চালিয়েছে। আল-শারার অভিযোগ, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার অজুহাত দেখিয়ে গত এক সপ্তাহেই ইসরায়েল সিরিয়ায় ২০ বারের বেশি বোমাবর্ষণ করেছে।
এ বিষয়ে ইসরায়েলের দাবি, সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দ্রুজ মিলিশিয়াদের সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে বসবাসরত দ্রুজ সংখ্যালঘুদের রক্ষায় এসব হামলা চালাচ্ছে তারা।
চলতি বছরের মার্চ মাসে সিরিয়ার ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত আলাউই অধ্যুষিত অঞ্চলে গণহত্যার ঘটনার পর দ্রুজ এলাকায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপরই এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে ইসরায়েল।
গত ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে সিরিয়ায় শতাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তারা বলছে, সিরিয়ার নতুন শাসকদের তারা জিহাদপন্থি মনে করে এবং তাদের হাতে উন্নত অস্ত্র পৌঁছানো ঠেকাতেই এসব হামলা চালানো হচ্ছে।
ইসরায়েলি সেনারা গোলান মালভূমির ১৯৭৪ সালের অস্ত্রবিরতির সীমারেখা অতিক্রম করে মালভূমির জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত নিরপেক্ষ অঞ্চলেও প্রবেশ করেছে এবং দক্ষিণ সিরিয়ায় আরও গভীরে অভিযান চালিয়েছে।
তবে ইসরায়েলি বাহিনীসহ জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক বাহিনীকেও নিরপেক্ষ অঞ্চল ছেড়ে ব্লু-লাইন বা বিচ্ছিন্ন রেখায় ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আল-শারা।
এদিকে, সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলার সমালোচনা করে ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ বলেন, ‘এসব হামলা দীর্ঘমেয়াদে ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে না। বোমাবর্ষণ ও আগ্রাসন বাজে একটি দৃষ্টান্ত। প্রতিবেশীর ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে কোনো দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না।’
উল্লেখ্য, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটসের হুমকির পর গত শুক্রবার ভোরে ইসরায়েল দামেস্কের প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসের কাছে হামলা চালায়। সে সময় তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, সিরিয়ার নতুন শাসকরা যদি দ্রুজ সম্প্রদায়ের জনগণকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ইসরায়েল এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও এ হামলাকে সিরিয়ার নতুন শাসকদের প্রতি স্পষ্ট বার্তা হিসেবে উল্লেখ করেন।
আজ সন্ধ্যায় নতুন পোপ নির্বাচিত হতে পারেন বলে জানিয়েছেন কলেজ অব কার্ডিনালের ডিন গিওভান্নি বাতিস্তা রে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) ইতালীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করছি, আজ সন্ধ্যায় যখন আমি রোমে ফিরব, ততক্ষণে সিস্টিন চ্যাপেলের চিমনি দিয়ে সাদা ধোঁয়া বের হওয়া শুরু হবে।’
সকালে একবার কার্ডিনালরা ভোট দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। দুপুরের আগে কালো ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে চিমনি দিয়ে।
গিওভান্নি বাতিস্তা রের বয়স এখন ৯১ বছর। পোপ হওয়ার জন্য আশি বছরের কম বয়স হতে হবে। যে কারণে তিনি কার্ডিনালের কনক্লেভে অংশ নিতে পারেননি। পোপ হওয়ার যোগ্য ১৩৩ কার্ডিনালকে নিয়ে গঠিত কলেজ অব কার্ডিনালস।
কোনো ধরনের মনোযোগ নষ্ট হওয়া ছাড়াই যাতে প্রার্থনা ও ধ্যান করতে পারেন, পাশাপাশি পোপ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, সে কারণে ভ্যাটিকানের ভেতরে কার্ডিনালদের আলাদা করে রাখা হয়েছে।
নতুন পোপ নির্বাচিত হওয়ার জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগবে। পোপ নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সকাল ও বিকালে নিয়মিত ভোট হবে।
ভোট হওয়ার পর একটি বিশেষ স্টোভে ব্যালট পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কালো ধোঁয়া বের হওয়ার অর্থ হচ্ছে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত আসেনি, অর্থা পোপ নির্বাচিত হননি। আর সাদা ধোঁয়া বের হলে বুঝতে হবে নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন।
পোপ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রার্থী নেই। তবে বেশ কয়েকজন কার্ডিনাল আছেন, যারা পোপ হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।
তাদের মধ্যে আছেন, কনক্লেভের দেখভাল করা কার্ডিনাল পিয়াত্রিও প্যারোলিন, এশিয়ান ফ্রান্সিসখ্যাত কার্ডিনাল লুইস তাগলা, কঙ্গোর রক্ষণশীল কার্ডিনাল ফ্রিডোলিন এমবোঙ্গো বেসুঙ্গু ও ইতালীয় পিয়ারবাতিস্তা পিজ্জাবালা।
এদিকে নতুন পোপের নাম শোনার জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে অনেককেই। রোমের বাসিন্দা প্রিসিলা পার্লান্তি বলেন, ‘এই অপেক্ষা অসাধারণ।’