শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
১২ আশ্বিন ১৪৩২

গাজায় গণহত্যা রোধে পদক্ষেপ নিতে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের নির্দেশ

নেদারল্যান্ডসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের অধিবেশনে বিচারকরা। ছবি: এপি
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত : ২৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ২৩:০৫

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত সাড়ে তিন মাস ধরে স্মরণকালের ভয়াবহ হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই বর্বরতা এবং গণহত্যা বন্ধ করতে নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) সম্প্রতি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। শুক্রবার এ মামলার রায় দিয়েছে আইসিজে। রায়ে গাজায় গণহত্যা ও গণহত্যার উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড রোধে সাধ্যের মধ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছে জাতিসংঘের এই শীর্ষ আদালত।

তবে যুদ্ধবিরতি বা ইসরায়েলকে সামরিক অভিযান বন্ধের কোনো নির্দেশ দেননি বিচারকরা। গাজায় মানবিকসংকট নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এই আদালত। এদিকে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ২৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা, ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি ও রয়টার্স এবং জার্মানির গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

আল-জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, আইসিজের আদেশে গণহত্যা ঠেকানোর ব্যবস্থা নিতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দেওয়া হলেও গাজায় অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। আদালতের আদেশের পর কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো, তা এক মাসের মধ্যে আইসিজেতে জানাতে ইসরায়েলের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিবিসি প্রতিবেদনের বরাতে জানা গেছে, আইসিজের আদেশে বলা হয়েছে, গাজায় গণহত্যা ঠেকাতে ইসরায়েলকে তার ক্ষমতার আওতার মধ্যে থাকা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ইসরায়েলি সেনারা যাতে গাজায় গণহত্যার মতো কোনো কিছু না করে, সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে গাজা উপত্যকায় মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে ইসরায়েলকে।

রয়টার্স বলছে, আদালত অবশ্য গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা ঘটিয়েছে কি না, এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বলেছে, গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা সনদের আওতায় গণহত্যা থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার আছে। আইসিজের আদেশে বলা হয়, ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর অনুমতি দিতে হবে।

গাজায় গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গত ডিসেম্বরে আইসিজেতে মামলা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। চলতি মাসের শুরুর দিকে আইসিজেতে দুই দিনের শুনানি হয়। এরপর শুক্রবার আদালত সাময়িক এ আদেশ দেয়। আইসিজেতে শুনানির সময় দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে গাজায় জরুরিভিত্তিতে ইসরায়েলি অভিযান বন্ধ করার নির্দেশ দিতে আবেদন জানানো হয়েছিল। তবে আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেনি।

ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রায়ের সময় আইসিজে বিচারক প্যানেলের প্রেসিডেন্ট জোয়ান ডনোঘু বলেছেন, ‘আদালত এই অঞ্চলে (ফিলিস্তিন) সংঘটিত হওয়া মানবিক ট্র্যাজেডির মাত্রা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত রয়েছে। এই আদালত গাজায় প্রাণহানি ও মানবিক দুর্ভোগের অব্যাহত ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিচার আদালত মনে করে, গাজায় ইসরায়েলের কিছু কর্মকাণ্ড অন্তত জাতিসংঘের জেনোসাইড কনভেনশনের আওতায় পড়ে।’

গাজায় প্রয়োজনীয় মৌলিক পরিষেবা এবং মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা করতেও অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারকের প্যানেল।

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশনাসহ নয়টি বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা হেগভিত্তিক এই আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়েছিল। তার মধ্যে গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা সংঘটিত করছে বলেও তাদের অভিযোগ ছিল। ইসরায়েল এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মামলা বাতিলের আবেদন করে, যা আদালত মেনে নেয়নি। অর্থাৎ ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে কি না, সে বিষয়ে বিচারিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

যুদ্ধবিরতি বা সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ না দিলেও আদালত ইসরায়েলকে গণহত্যা ও গণহত্যার উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড রোধে সাধ্যের মধ্যে সব ব্যবস্থা নিতে বলেছে। সে অনুযায়ী ইসরায়েল কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা এক মাসের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগে গত ২৯ ডিসেম্বর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। যদিও গণহত্যার অভিযোগের বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েল। তারা বলেছে, দক্ষিণ আফ্রিকা সত্যকে বিকৃত করেছে। ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে এবং তারা হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়ছে।

বিচারকদের মধ্যে একজন বলেন, এই রায় ইসরায়েলের জন্য আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করেছে। তবে বিচারক পরিষদ ইসরায়েলকে কেবল আন্তর্জাতিক আইন মেনে কার্যক্রম চালানোর নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিতে পারে।

আন্তর্জাতিক এই আদালতের কেবল পরামর্শমূলক মত দেওয়ার ক্ষমতা আছে। রায় আইনি প্রক্রিয়ায় দেওয়া হলেও সেটি প্রয়োগে আদালত জোর করতে পারে না। যদিও এই রায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক-রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে। তাদের শক্তিশালী আন্তর্জাতিক মিত্রদের ওপরও চাপ বাড়বে।

দুই সপ্তাহ আগে এই মামলাটি শুরু হওয়ার পর দুই দেশই সাক্ষ্য দেয়। সেখানে ইসরায়েল দক্ষিণ আফ্রিকার আনা এই অভিযোগ জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

ফিলিস্তিনিদের জোরালোভাবে সমর্থন করে আসা দক্ষিণ আফ্রিকা আদালতের কাছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ৯টি বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেছিল। যার মধ্যে আছে, গাজায় সামরিক তৎপরতা বন্ধ করা, যেটিকে ‘গণহত্যা’ বলছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এই বিষয়ে কোনো রায় আসতে সময় লাগতে পারে এবং সেটি কয়েক বছরও হতে পারে। তবে গণহত্যার অভিযোগের বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েল। তারা বলেছে, দক্ষিণ আফ্রিকা সত্যকে বিকৃত করেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরায়েলের বক্তব্য

দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে অভিযোগে জানানো হয়েছে, ইসরায়েল তার কর্মকাণ্ডে জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে৷ ‘জাতিগত নিধনের উদ্দেশে ফিলিস্তিনি জাতি, বর্ণ এবং নৃগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশের ওপর তারা ধ্বংসযজ্ঞ' চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ সাউথ আফ্রিকার৷

তবে ইসরায়েলের আইনজীবী টাল বেকার সাউথ আফ্রিকার অভিযোগকে বাস্তব ও আইনি চিত্রের বিকৃত উপস্থাপন বলে অভিহিত করেছিলেন৷ এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার এই মামলার বিরোধিতা করেছে ইসরায়েলের শক্তিশালী মিত্র যুক্তরাষ্ট্র৷ এছাড়া প্রত্যাখ্যান করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্র ও ব্রিটেন৷

আইসিজের আদেশ বিশ্লেষণ

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) আদেশে ইসরায়েলের অভিযান বন্ধের নির্দেশ না থাকায় তা দক্ষিণ আফ্রিকা ও ফিলিস্তিনিদের হতাশ করবে। যদিও আদেশে গণহত্যা রোধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া ও মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে ইসরায়েলের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ চেয়ে দায়ের করা মামলায় শুক্রবার প্রাথমিক আদেশ দেন আইসিজে। গাজার বাসিন্দাদের গণহত্যা থেকে সুরক্ষায় ‘ক্ষমতার আওতায় থাকা সব ব্যবস্থা গ্রহণে’ ইসরায়েলকে নির্দেশ দেন বিচারকেরা।

শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়, আদালত যেন জরুরি ভিত্তিতে ইসরায়েলকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেন। বিবিসির কূটনৈতিক প্রতিবেদক পল অ্যাডামস বলেন, আদালত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার অনুরোধে সম্মত হননি। এটা এমন কিছু, যা দক্ষিণ আফ্রিকার পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদেরও একইভাবে হতাশ করবে। কিন্তু আদালতের ১৭ বিচারকের মধ্যে ১৫ জনের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে দেওয়া রায়ে বলা হয়েছে, অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে ইসরায়েলের উচিত ফিলিস্তিনিদের হত্যা, তাঁদের গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা কিংবা ফিলিস্তিনি নারীদের সন্তান জন্মদানে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যবস্থা আরোপ এড়াতে দেশটির ক্ষমতার আওতার মধ্যে সবকিছু করা।

গাজায় গণহত্যার অভিযোগের বিষয়ে এটি চূড়ান্ত রায় নয়। মূল রায়ের জন্য কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে। তবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার করা মূল অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে আদালত গতকাল কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। গাজার ফিলিস্তিনিরা যাতে কিছু সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ পান, তা নিশ্চিত করতেই এই আদেশ দেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েলকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে কীভাবে তারা এই আদেশের প্রতিক্রিয়া জানাবে। আইসিজের আদেশ পালনের আইনি বাধ্যবাধকতা ইসরায়েলের রয়েছে। তবে ইসরায়েল সেটা না মানলে আদেশ বাস্তবায়নের কোনো ব্যবস্থা আইসিজের নেই। ইসরায়েল পুরো রায়ই না মানার পথে হাঁটতে পারে। অবশ্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এখন দৃশ্যত দুই মাসের যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনার দিকে জোর দিচ্ছে এবং গাজা উপত্যকায় ত্রাণ সরবরাহের পরিমাণ বাড়ানোর প্রচেষ্টাও চলছে। তাই ইসরায়েল যুক্তি দিতে পারে, তারা ইতিমধ্যে আদালতের আদেশ পালনের জন্য পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছে।

আল-জাজিরার সাংবাদিক জেমস বেস বলেন, এটি একটি আগ্রহোদ্দীপক রায়। কারণ, বিচারকেরা দক্ষিণ আফ্রিকার বেশির ভাগ যুক্তির সঙ্গে একমত হয়েছেন। তাঁরা সম্মত হয়েছেন, এই মামলার বিচার করার এখতিয়ার তাঁদের রয়েছে, তাই তারা বিচার করছেন। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগের মধ্যে কিছু বিষয় অবশ্যই গণহত্যা সনদের সংজ্ঞার মধ্যে পড়েছে বলেও আদালত আদেশে উল্লেখ করেছেন। তবে অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধের বিষয়টি অন্তর্র্বতী আদেশে না থাকাটা দক্ষিণ আফ্রিকাকে আশাহত করবে। যদিও কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ইসরায়েলকে অবশ্যই নিতে হবে। এক মাসের মধ্যে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত প্রতিবেদন নিয়ে ইসরায়েলকে আইসিজেতে হাজির হতে হবে।

আদেশে বলা হয়েছে, গণহত্যার মধ্যে পড়তে পারে এমন কর্মকাণ্ড ঠেকাতে ইসরায়েলকে তার ক্ষমতার মধ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনি বিশেষজ্ঞদের এখন এর ওপর নজর দিতে হবে। কারণ, গণহত্যা সনদ অনুযায়ী সুরক্ষিত গোষ্ঠীর আওতায় পড়ে এমন লোকজনের প্রাণহানি ঠেকানোর বিষয়টিও এর মধ্যে রয়েছে।

গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ২৬ হাজার

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বর্বর হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলের বাহিনী। ইসরায়েলি স্থল ও বিমান বাহিনীর অভিযানে গত সাড়ে তিন মাসে গাজায় নিহতের মোট সংখ্যা পৌঁছেছে ২৬ হাজার ৮৩ জনে পৌঁছেছে। এই নিহতদের পাশাপাশি মোট আহত হয়েছেন আরও ৬৪ হাজার ৪৮৭ জন। এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় নিহত হয়েছেন ১৮৩ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন ৩৭৭ জন। নিহতদের একটি বড় অংশই নারী, শিশু এবং কিশোর-কিশোরী বলে জানা গেছে।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সামরিক-বেসামরিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকসহ ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় আরও ২৪০ জন ইসরায়েলি এবং অন্যান্য দেশের নাগরিককে।

১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে সেদিন প্রথম একদিনে এতজন মানুষের হত্যা দেখেছে ইসরায়েল। অভূতপূর্ব সেই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এবং তার এক সপ্তাহ পর বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় স্থলবাহিনীও।

গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘোষিত এক মানবিক বিরতির সময় ১০৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। তবে এখনও এই গোষ্ঠীটির হাতে আটক রয়েছেন ১৩২ জন জিম্মি।

এই জিম্মিদের ছাড়িয়ে আনতে আবারো একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসকে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় করার আগ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান বন্ধ হবে না।


রোহিঙ্গা সংকট: স্থায়ী সমাধান ও তহবিল বৃদ্ধির আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান এবং তহবিল বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তহবিল সংকটের কারণে আজকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ন্যূনতম জীবনমান বজায় রাখার যৌথ প্রয়াসও ভঙ্গুর হয়ে উঠেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ইতোমধ্যে এই সংকটের বিষয়ে সতর্ক করেছে। অবিলম্বে নতুন তহবিল না এলে, মাসিক রেশন অর্ধেকে নামিয়ে মাথাপিছু মাত্র ৬ ডলারে নামতে পারে, যা রোহিঙ্গাদের অনাহার ও অপুষ্টিতে নিমজ্জিত করবে।’

প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, ‘বিদ্যমান তহবিলের বাইরে নতুন ও বর্ধিত তহবিল নিশ্চিত করতে হবে এবং মিয়ানমার সরকার ও রাখাইনের অন্যান্য অংশীদারদের উপর ইতিবাচক পরিবর্তন ও দ্রুত রাজনৈতিক সমাধানের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে হবে।’

মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারে চলমান সংঘাত সমগ্র অঞ্চলের জন্য এক গভীর উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এটি শুধু আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকেই ঝুঁকিতে ফেলছে না, বরং বাংলাদেশে আশ্রয়প্রাপ্ত বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনও কঠিন করে তুলেছে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আট বছর পার হলেও রোহিঙ্গা সংকটের কোনো সমাধান দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। উপরন্তু, বাংলাদেশ প্রতিনিয়তই মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাধ্য হচ্ছে। সাংস্কৃতিক পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতির কারণে রোহিঙ্গাদের ওপর অধিকার বঞ্চনা ও নির্যাতন রাখাইনে অব্যাহত রয়েছে।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রান্তিকীকরণের প্রক্রিয়া আর চলতে দেওয়া যাবে না। যেসব বৈষম্যমূলক নীতি ও কর্মকাণ্ড আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তার সমাধান এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা এখনই গ্রহণ করা সম্ভব।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘পূর্ণাঙ্গ জাতীয় রাজনৈতিক মীমাংসার অপেক্ষা না করে রাখাইনের সমস্যাগুলোর চূড়ান্ত রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন। তবে এর জন্য রাখাইন অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট সকল জাতিসত্তার অংশগ্রহণে এমন একটি বন্দোবস্ত প্রয়োজন যেন রোহিঙ্গারা সমঅধিকার ও নাগরিকত্বসহ সমাজের অংশ হতে পারে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই সংকটের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী রোহিঙ্গারা, আর তাদের পরেই বৃহত্তম ভুক্তভোগী হল বাংলাদেশ। তবে রোহিঙ্গা সংকট কোনোভাবেই বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের কোনো দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয়। আমরা শুধু একটি দায়িত্বশীল প্রতিবেশী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে আমাদের মানবিক দায়িত্ব পালন করে আসছি।’

তিনি যোগ করেন, ‘অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোকেও তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাখাইনে স্থিতিশীলতা আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে কোনো যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সদাপ্রস্তুত।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের উচ্চপর্যায়ের রোহিঙ্গা সম্মেলন বিশ্বব্যাপী দৃঢ় সংকল্প তৈরি করবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য বাস্তবসম্মত আন্তর্জাতিক সহায়তা নিশ্চিত করবে, যেখানে তহবিল সংগ্রহ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে। একইসঙ্গে একটি রোডম্যাপ গ্রহণ করে সময় নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে।’

সূত্র : বাসস


জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় কূটনীতিকদের ওয়াকআউট

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তব্য দেওয়ার জন্য মঞ্চে ঊঠতেই বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক প্রতিনিধিরা গণহারে ওয়াকআউট করেন। তবে একই সময় দর্শক সারিতে থাকা তার সমর্থকরা উল্লাস প্রকাশ করেন।

জাতিসংঘ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।

সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের প্রথম দিনে নেতানিয়াহু তার ভাষণ শুরু করার আগে সকল প্রতিনিধিদের শান্ত থাকতে বলা হয়।

সূত্র : বাসস


ইসরাইলি হামলায় সানায় নিহত ৯, আহত ১৭০

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

ইয়েমেনের রাজধানী সানায় গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরাইলি বাহিনী হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলি ওই হামলায় কমপক্ষে নয় জন নিহত এবং ১৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ইয়েমেনের হুতিরা এই তথ্য জানিয়েছে।

দক্ষিণ ইসরাইলে বিদ্রোহীরা ড্রোন হামলা চালানোর একদিন পর ইসরাইলি বাহিনী এই হামলা চালায়।

সানা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।

এএফপি’র সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, তারা সানা এলাকার তিনটি স্থান থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন এবং ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়তে দেখেছেন। গাজা যুদ্ধের পর হুতিরা ইসরাইলকে টার্গেটে পরিণত করার পর থেকে এটি সর্বশেষ প্রতিশোধমূলক হামলা।

ইসরাইলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্রোহী-অধিষ্ঠিত রাজধানীতে ইসরাইলি বাহিনী হুতি-সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি স্থাপনায় আঘাত হেনেছে এবং আরো হামলা হতে পারে।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী পরে বলেছে, ‘ইয়েমেন থেকে ছোঁড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে’। এই সময় মধ্য ইসরাইলে সাইরেন বেজে ওঠে।

হুতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আনিস আলাসবাহি এক্স-এ এক পোস্টে বলেছেন, ইয়েমেনে উদ্ধারকারীরা এখনো ইসরাইলি হামলার শিকারদের সন্ধান করছে। হামলায় ‘নয়জন শহীদ এবং ১৭৪ জন আহত’ হয়েছেন।

হুতির আল-মাসিরাহ টেলিভিশন চ্যানেল, ‘একটি নিরাপত্তা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ইসরাইল ‘নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার একটি সংশোধনাগারকে টার্গেট করে হামলা চালিয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকজন বন্দী রয়েছে।’
আল-মাসিরাহ আগে বলেছিল, একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং দ’ুটি আবাসিক এলাকাকে টার্গেট করা হয়েছে। আল-মাসিরাহ শেয়ার করা ছবিতে বোমা বিস্ফোরিত হওয়াসহ নিচু ভবনগুলো দেখা যাচ্ছে।

একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে রাস্তা পেঁচানো ধাতু ও কংক্রিটের টুকরো দিয়ে ভরা এবং অন্য ছবিতে একটি ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ দেখা যাচ্ছে।

ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ বলেছেন, এই হামলা ‘সানায় হুতিদের অসংখ্য সন্ত্রাসী স্থাপনার ওপর একটি শক্তিশালী আঘাত’।

কাৎজ এক্স-এ বলেছেন, তারা ‘বেশ কয়েকটি সামরিক শিবিরে আঘাত করেছে ও হামলায় কয়েক ডজন হুতিকে নির্মূল করা হয়েছে এবং ইউএভি (ড্রোন) এবং অস্ত্রের মজুদ ধ্বংস করেছে।’

ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, স্থাপনায় হুতিদের জেনারেল স্টাফ সদর দপ্তরসহ অন্যান্য নিরাপত্তা ও গোয়েন্দার স্থান অন্তর্ভুক্ত ছিল। যার মধ্যে কিছু অস্ত্র মজুদ এবং ইসরাইলে হামলার ‘পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন’ করার জন্য ব্যবহৃত হত।

এতে আরো বলা হয়েছে, হুতিদের ‘সামরিক জনসংযোগ সদর দপ্তর’ও টার্গেট করা হয়েছিল।


‘আমরা মৃতদের সাথে বাস করি’: গাজার বাস্তুচ্যুতরা কবরস্থানে আশ্রয় নেয়

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

দক্ষিণ গাজার একটি কবরস্থানে সমাধিফলকের মধ্যে তিনটি শিশু বালি এবং নুড়িপাথর নিয়ে খেলছে। অন্যদিকে একটি কিশোর খালি পায়ে কবরস্থানের মধ্য দিয়ে দুই বালতি পানি বহন করে তাঁবুতে নিখোঁজ হয়ে গেছে।

এই ভয়াবহ দৃশ্যগুলো কিছু বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রতিদিনের বাস্তবতা, যারা অন্য কোথাও আশ্রয় খুঁজে না পেয়ে দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের একটি কবরস্থানে তাঁবু স্থাপন করতে বাধ্য হয়েছে।

গাজার খান ইউনিস থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে।
রান্ডা মুসলেহ তার তাঁবুর ভেতর থেকে তার ১১ সন্তানের সাথে চা পান করতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না’।

তিনি এএফপি’কে বলেছেন, বাড়িওয়ালারা ‘মোটা অঙ্কের টাকা চেয়েছেন।’

মুসলেহ বলেন, ৫০ বর্গমিটার (৫৪০ বর্গফুট) জমির তুলনামূলকভাবে ছোট অংশের দাম মাসে ১ হাজার শেকেল (৩০০ ডলার) পর্যন্ত হতে পারে। বেশিরভাগ গাজাবাসীর জন্য এটি একটি অত্যন্ত কঠিন পরিমাণ।

গাজার উত্তরে বেইত হানুনে তাদের বাড়ির কাছে ইসরাইলি সামরিক অভিযান তীব্রতর হলে তিনি তার সন্তানদের নিয়ে খান ইউনিসে পালিয়ে যান।

তিনি বলেছেন, ‘আমি হেঁটে হেঁটে আমার সন্তানদের জন্য বসবাসের উপযুক্ত জায়গায় জমি খুঁজে পাই।

লোকেরা আমাদের বলেছিল, মরুভূমি এবং কবরস্থানের মধ্যে আমাদের এখানে অর্থ প্রদান করতে হবে না’।
‘তাই আমরা তাঁবু স্থাপন করেছি এবং এখানেই থেকেছি।’

গাজা শহরের অভ্যন্তরে ইসরাইলি সেনাবাহিনী যখন আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক বাসিন্দা দক্ষিণে পালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই জনাকীর্ণ এলাকায় জায়গা খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছেন, কারণ সেখানে লক্ষ লক্ষ লোক আশ্রয় নিচ্ছে।

বৃহস্পতিবার, ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ৭ লক্ষ মানুষ গাজা শহর ছেড়ে চলে গেছে।

ইসরাইল বলেছে, তারা হামাসের অবশিষ্ট গোষ্ঠীগুলোকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে, যেখানে হামাসের শেষ শক্ত ঘাঁটিগুলোর মধ্যে একটি, যারা অক্টোবর ২০২৩ সালে আক্রমণ যুদ্ধের সূত্রপাত করেছিল।

জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ একটি কম পরিসংখ্যান জানিয়েছে, আগস্টের মাঝামাঝি থেকে গাজার উত্তর থেকে ৩৮৮,৪০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই গাজা সিটি থেকে।

পরিবহন এবং আশ্রয়ের চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে দাম আকাশচুম্বী হয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, পরিবারগুলোকে পরিবহন, একটি তাঁবু এবং জমির জন্য ৩ হাজার ডলারেরও বেশি দেওয়া উচিত।

অনেকেই এই খরচ বহন করতে পারে না এবং পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করতে বাধ্য হয়, যেখানেই জায়গা পাওয়া যায় সেখানে তাঁবু স্থাপন করে।

মুসলেহ বলেছেন, ‘এখানে পানি নেই এবং আমার বাচ্চারা পানি পেতে প্রায় চার কিলোমিটার (২.৫ মাইল) হেঁটে যায়’।

‘এবং আমরা মরুভূমিতে আছি এবং সেখানে বিচ্ছু এবং সাপ রয়েছে।’

কবরের কাছাকাছি থাকা পরিবারগুলোর দুর্দশা আরো বাড়িয়ে তোলে।

উত্তরাঞ্চলীয় শহর বেইত লাহিয়া থেকে সরিয়ে নেওয়া উম্মে মুহাম্মদ আবু শাহলা বলেছেন, ‘আমরা কবরস্থানের মাঝখানে আছি এবং আমরা কোনো জীবন খুঁজে পাচ্ছি না’।

তিনি এএফপি’কে বলেছেন, ‘আমরা মৃতদের সাথে থাকি এবং আমাদের অবস্থা মৃতদের মতো হয়ে গেছে’।

তিনি বলেছেন, ‘তারা আমাদের পুরো গাজা উপত্যকায় পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে বোমা মারুক যাতে আমরা বিশ্রাম নিতে পারি’।


জাতিসংঘে ৩ ‘ষড়যন্ত্রের’ তত্ত্ব দিলেন ট্রাম্প

দাবি করলেন তদন্তের
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ নেতারা। তাদের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও আছেন। তবে তার এই ‘সফর’ সুখের হয়নি। একের পর এক ঝামেলায় পড়েছেন তিনি। দাবি করেছেন, তিনি তিন ষড়যন্ত্রের শিকার। গতকাল বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে সিএনএন।
গত বুধবার ট্রাম্প তার সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে বলেন, ‘জাতিসংঘে যা ঘটেছে, তা প্রকৃত অর্থে অপমানজনক- একটি নয়, দুইটি নয়, তিনটি অশুভ ঘটনা ঘটেছে!’
জাতিসংঘের সদরদপ্তরে বন্ধ হয়ে যাওয়া এসকেলেটর, নষ্ট টেলিপ্রম্পটার ও অডিও নিয়ে দুর্ভোগ পোহান ট্রাম্প। তিনি এই ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে এর যথাযথ তদন্তের দাবি করেছেন।
গত মঙ্গলবার সকালে জাতিসংঘে বক্তব্যের শুরুতেই তিনি ওই তথাকথিত ষড়যন্ত্রের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘আমি জাতিসংঘের কাছ থেকে দুটি জিনিস পেয়েছি: একটি নষ্ট এসকেলেটর ও অন্যটি নষ্ট টেলিপ্রম্পটার।’
পরের পোস্ট তিনি বক্তব্য দেওয়ার সময় ‘অডিও’ নিয়ে কারিগরি সমস্যায় ভোগার কথাও উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, টেলিপ্রম্পটার এমন একটি যন্ত্র যা বক্তাকে বক্তব্য রাখায় সহায়তা করে। ওই যন্ত্রের ছোট স্কিনে পরের লাইন বা এর অংশবিশেষ ফুটে ওঠে, যা দেখে বক্তা বোঝতে পারেন এরপর কোনো কথাগুলো বলতে হবে।
এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইতোমধ্যে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী মিশনকে নিজেই জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব।’
যুক্তরাষ্ট্র যেসব ঘটনা উল্লেখ করেছে, সেগুলোর কারণ খুঁজে পেতে যা যা করণীয়, সে বিষয়ে জাতিসংঘ শতভাগ স্বচ্ছতায় সংশ্লিষ্ট মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত।
মুখপাত্র দুজারিক ব্যাখ্যা দেন, একটি ‘বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাওয়ায় এসকেলেটর বন্ধ হয়।
মার্কিন প্রতিনিধিদলের এক ভিডিওগ্রাফার অজান্তে ওই নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করে দেন বলে উল্লেখ করেন দুজারিক। দীর্ঘ বক্তব্যে বিষয়টির খুঁটিনাটি জানান তিনি।
বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশে আন্তর্জাতিক সংস্থাটির প্রতি ট্রাম্পের সার্বিক বৈরী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। গত সপ্তাহে একাধিকবার জাতিসংঘের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ট্রাম্প।
এসব কারিগরি সমস্যা নিয়ে লেখা পোস্টে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘বলাই বাহুল্য, যে কাজের জন্য জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, সে কাজটিই তারা করতে পারছে না।’
‘প্রথমত, বক্তব্য দেওয়ার জায়গাটিতে পৌঁছানোর জন্য নির্ধারিত এসকেলেটরটি জোরে শব্দ করে বন্ধ হয়ে গেল।’
‘কপালগুণে আমি আর মেলানিয়া ওই ধারালো স্টিলের সিঁড়িতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাইনি। আমরা শক্ত করে রেলিং ধরে রেখেছিলাম। না হলে চরম বিপর্যয় হতো,’ যোগ করেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘এটা নিঃসন্দেহে ষড়যন্ত্র।’
সপ্তাহান্তে লন্ডন টাইমসে প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। সেখানে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের কর্মীরা ট্রাম্পকে হেনস্তা করতে এসকেলেটর ও লিফট বন্ধ রাখা নিয়ে কৌতুক করেছেন।
‘যারা এই কাজ করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করা উচিত,’ বলে মনে করেন ট্রাম্প। পোস্টে ট্রাম্প জানান, সাধারণ পরিষদে বক্তব্যের শুরুতেই টেলিপ্রম্পটার ‘অকেজো’ হয়ে যায়।
পরে টেলিপ্রম্পটার চালু হলেও ট্রাম্প তার বক্তব্যের শেষে বলেন, ‘মিলনায়তনে অডিও ঠিক মতো কাজ করছিল না।’
এরপর বিদ্রূপাত্মক সুরে ট্রাম্প বলেন, ‘বিষয়টা এমন, সঙ্গে থাকা দোভাষীদের ইয়ারপিস কানে না লাগালে কোনো বিশ্বনেতা আমার কথাই শুনতে পেতেন না।’
ট্রাম্প জানান, যথাযথ তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি জাতিসংঘের নেতৃত্বের কাছে ইমেইল পাঠাবেন। তিনি এসকেলেটরের আশেপাশের ভিডিও ফুটেজও দেখতে চাওয়ার দাবি করেছেন। এ কাজে মার্কিন গোয়েন্দারা সহায়তা করবে বলেও জানান তিনি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও বলেন, ‘এটা কাকতালীয় ঘটনা নয়। জাতিসংঘে তিনবার ষড়যন্ত্রের ঘটনা ঘটেছে। তাদের লজ্জিত হওয়া উচিত। আমি এই চিঠির কপি মহাসচিবকে পাঠাব। এ নিয়ে অবিলম্বে তদন্তের দাবি জানাব।’
জাতিসংঘ ও প্রশাসন একে অপরকে এই ‘কারিগরি ত্রুটির’ জন্য একে অপরকে দায় দিয়েছে। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানান, প্রেসিডেন্টের টেলিপ্রম্পটার পরিচালনার দায়িত্ব হোয়াইট হাউসের। অপরদিকে, হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার দাবি, যন্ত্রটি জাতিসংঘ সরবরাহ করেছিল।
জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এক্স পোস্টে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ফোরামে নিরাপত্তা ও সম্মানহানির হুমকি বরদাশত করবে না। এ বিষয়টিতে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা ও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের প্রত্যাশা করছি।’
ট্রাম্পের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ত্রুটি গ্রহণযোগ্য নয়। এতে একটি ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানের গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকির প্রতিফলন ঘটেছে।’
গত মঙ্গলবার বিকেলে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট এসব ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি এক পোস্টে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডি যখন এসকেলেটরে পা রাখতে যাচ্ছেন, তখন যদি জাতিসংঘের কোনো কর্মী ইচ্ছা করে তা বন্ধ করে দিয়ে থাকেন, তাহলে তাকে অবিলম্বে বরখাস্ত করে বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে হবে।’
তার এই দাবিকে প্রতিষ্ঠা করতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমসের এক প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট শেয়ার করেন লেভিট। সেখানে বলা হয়, ‘ট্রাম্পের আগমনকে ঘিরে জাতিসংঘের কর্মীরা ঠাট্টা করে বলছিলেন, তারা এসকেলেটর ও লিফট বন্ধ করে দেবেন আর প্রেসিডেন্টকে বলবেন, আমাদের টাকা ফুরিয়ে গেছে। এখন আপনাকে সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে উঠতে হবে।’


‘জেন-জি' দের বিক্ষোভে উত্তাল ভারতের লাদাখ

* সহিংসতায় নিহত ৪, কারফিউ জারি * চ্যালেঞ্জের মুখে মোদি সরকার
বিক্ষোভ চলাকালে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় একটি পুলিশের গাড়ি। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ০০:১৮
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ভারতের লাদাখে রাজ্য মর্যাদা এবং সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিকে ঘিরে চলমান আন্দোলন সহিংস রূপ নিয়েছে। গত বুধবার লেহ শহরে ব্যাপক বিক্ষোভে অন্তত চারজন নিহত এবং অন্তত ৮০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। বিক্ষোভ-আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠায় লেহ শহরে কারফিউ জারি করেছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী।
লাদাখে এখন হাড় কাঁপানো শীত। হিমালয়ের সাড়ে ১১ হাজার ফিট উচ্চতায় ছিমছাম ছোট শহরে এখন বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে। আলাদা রাজ্যের মর্যাদা ও বিশেষ সংবিধানিক সুরক্ষার দাবিতে তরুণরা ফেটে পড়েছেন বিক্ষোভে। আগুন দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির স্থানীয় কার্যালয়ে।
ভারতের হিমালয় অঞ্চলের লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা, স্থানীয় বাসিন্দাদের চাকরির কোটা, লেহ ও কার্গিলকে নিয়ে একটি লোকসভা আসনের দাবিতে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে অনশন করে আসছিলেন পরিবেশকর্মী সোনম ওয়াংচুকসহ ১৫ জন।
একসময় তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আন্দোলনের ডাক দেয় লাদাখ অ্যাপেক্স বডি(এলএবির) যুব শাখা। পরে গত বুধবার এনডিএস মেমোরিয়াল গ্রাউন্ডে জমায়েত হয় কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী।
এরপর মিছিল নিয়ে তারা লেহ শহর প্রদক্ষিণ করার সময় বিজেপি সদরদপ্তর ও হিল কাউন্সিলের অফিসে ইট-পাটকেল নিক্ষেপে অবনতি হয় পরিস্থিতির।
তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল নিক্ষেপ করলে জনতা সহিংস হয়ে ওঠে। এরপর দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত ও ৮০ জনের বেশি আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৪০ জন পুলিশ সদস্য।
এরপরই অনশনভঙ্গ করে বিবৃতি দেন সোনম ওয়াংচুক।
তিনি বলেন, ‘আমি সব যুবককে সহিংসতা থামিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা লাদাখ বা দেশে অস্থিরতা চাই না।’
তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বিক্ষোভের দায় কংগ্রেসের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে শাসক দল বিজেপি।
বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য এক্সে একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করেন, লেহ শহরের আপার ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর ফুনছগ স্তানজিন ছেপাগকে বিক্ষোভকারীদের উসকানি দিতে দেখা গেছে।
এরপর বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সাম্বিত পাত্রা দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে আরও একধাপ এগিয়ে অভিযোগ তুললেন, লাদাখে জেন জিয়ের নামে যে আন্দোলনের ছবি দেখানো হচ্ছে, তা আসলে কংগ্রেসের ষড়যন্ত্র।’
পাত্রার দাবি, ওই কাউন্সিলরকে অস্ত্র হাতে বিজেপি কার্যালয়ের দিকে মিছিল করতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, ‘এটা আসলে রাহুল গান্ধীর নকশা, জর্জ সোরোসের সঙ্গে মিলে দেশকে অশান্ত করার চক্রান্ত।’
অন্যদিকে, এই অভিযোগ একেবারেই উড়িয়ে দিয়েছেন পরিবেশকর্মী সোনম ওয়াংচুক। তিনি বলেন, ‘লাদাখে কংগ্রেসের এত প্রভাব নেই যে তারা পাঁচ হাজার তরুণকে রাস্তায় নামাতে পারে।’ তার দাবি, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ফল না মেলায় তরুণদের হতাশাই সহিংসতার বড় কারণ।
ওয়াংচুক আরও জানান, জেন জি প্রজন্ম এতদিন বিক্ষোভে সেভাবে অংশ নেয়নি। তবে গত বুধবার একসঙ্গে ২ থেকে ৫ হাজার তরুণ বিক্ষোভে যোগ দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
এছাড়া দুজন বয়স্ক নাগরিকের আহত হওয়ার ঘটনা বিক্ষোভকারীদের মধ্যে স্ফুলিঙ্গের মতো কাজ করেছে। আর তাতে জ্বালানি জুগিয়েছে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত দাবি, সঙ্গে কেন্দ্রের প্রতিশ্রুত আলোচনার তারিখ পিছিয়ে যাওয়ার মতো সিদ্ধান্ত।
লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া ও ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত করার দাবি ২০১৯ সালে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের পর থেকেই তীব্র আকার ধারণ করেছে। তবে বিজেপি এখন সেটিকে কংগ্রেসের ষড়যন্ত্র হিসেবে ব্যাখ্যা করে দায় মুক্তি চাইছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বিক্ষোভকারীদের।
লাদাখ ভারতের একটি কৌশলগত এলাকা, যা চীনের সঙ্গে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার সীমান্ত শেয়ার করে। ২০২০ সালে ভারত-চীন সেনাবাহিনীর সংঘর্ষেও এই এলাকাই ছিল মূল কেন্দ্র।
এখন এই সীমান্তবর্তী এলাকায় অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ ভারতের জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিদ্দিক ওয়াহিদ বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যে সিদ্ধান্ত ২০১৯ সালে নিয়েছিল, তারই ফল এখন ঘরে ঘরে আগুন হয়ে ফিরছে। আগে ছিল কাশ্মীর, এখন লাদাখও সরকারের মাথাব্যথা।


ট্রাম্পের মন্তব্যের কড়া জবাব দিল রাশিয়া

দিমিত্রি পেসকভ
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে হঠাৎই অবস্থান বদলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনীকে ‘কাগুজে বাঘ’ বলে খোঁচা দিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ক্রেমলিন। বলেছে, ‘রাশিয়া বাঘ নয় ভালুক।’

ট্রাম্প গত মঙ্গলবার ট্রুথ সোশ্যালে বলেছিলেন, রাশিয়া তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে উদ্দেশ্যহীনভাবে এমন এক যুদ্ধ লড়ছে, যা এক সপ্তাহেরও কম সময়ে জয় করা উচিত ছিল। কিন্তু রাশিয়া তা না পারায় তারা ‘কাগুজে বাঘ’ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

তিনিও আরও বলেছিলেন, ‘ভ্লাদিমির পুতিন ও রাশিয়া এখন বড়সড় অর্থনৈতিক সমস্যায়, এখনই সময় ইউক্রেনের পদক্ষেপ নেওয়ার। (যুদ্ধে) রাশিয়ায় যে অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে তা দেখে আমার মনে হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন নিয়ে লড়াই করার ও তার সব অঞ্চল আদি অবস্থায় পুনরুদ্ধার করতে ইউক্রেইন পারবে।

ট্রাম্পের এমন সব মন্তব্যের পরেই কড়া প্রতিক্রিয়া জানাল রাশিয়া। তার ‘কাগুজে বাঘ’ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘রাশিয়া বাঘ নয়, বরং রাশিয়াকে ভালুকের সঙ্গে তুলনা করা হয়। আর আমরা কাগুজে ভালুক নই। সত্যিকারের ভালুক।’

রাশিয়ার অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে ট্রাম্প যা বলেছেন সে প্রসঙ্গে ক্রেমলিনের জবাব, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার চাপে থাকার পরও রুশ অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে। আর ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর ধীর অগ্রযাত্রা মূলত কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ, দুর্বলতা নয়।

‘যুদ্ধে ইউক্রেন জিততে পারে’- এমন পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করেছেন দিমিত্রি পেসকভ। তিনি বলেন, রাশিয়ার জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করতে বিশেষ এই সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে। দেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য এ লড়াই করা হচ্ছে। এর কোনো বিকল্প নেই।

মস্কোর ওপর যুদ্ধ বন্ধে চাপ সৃষ্টি করতে ট্রাম্প ইউরোপের দেশগুলোকে রাশিয়ার জ্বালানি কেনা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

পেসকভ এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক স্বার্থেই ট্রাম্প ইউরোপের দেশগুলোকে রুশ জ্বালানি কিনতে বাঁধা দিচ্ছেন। এর ফলে ইউরোপের স্বার্থও ক্ষুণ্ণ হবে।’

গত কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প রাশিয়ার অনুকূল বার্তা দিয়ে আসলেও এবার সরাসরি অবস্থান বদলে ইউক্রেন এবং ইউরোপের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য দুষেছেন রাশিয়াকে।

এর মধ্যেই গত বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ট্রাম্পের প্রশংসা করেন। সেইসঙ্গে নিউইয়র্কে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি। তারপরেই রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ ঘিরে অবস্থান বদলান ট্রাম্প।


নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আশা ভঙ্গ হবে ট্রাম্পের, যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

ডোনাল্ড ট্রাম্প
আপডেটেড ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২১:৩৭
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বহুদিন ধরেই নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার আশা করছেন। তবে নোবেল বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বছর তার সেই প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ট্রাম্পের কার্যকলাপ ও নীতিকে তারা আন্তর্জাতিক শান্তির আদর্শের পরিপন্থি বলে মনে করছেন।

নোবেল শান্তি পুরস্কারের ইতিহাসবিদ আসলে স্বেন বলেন, ট্রাম্পের এই পুরস্কার পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। গাজায় যুদ্ধের সময় তার ইসরায়েলপ্রীতি এবং ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা- দুটোই তাকে বাদ দেওয়ার বড় কারণ।

রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নোবেল কমিটির একজন সদস্য বলেন, পুরস্কার নির্বাচন প্রক্রিয়া চাপমুক্ত রাখতে চান তারা। বাইরের লবিং, বিশেষত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো প্রার্থীর পক্ষ থেকে করা চাপ, বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে।

পিচ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অসলো-এর পরিচালক নিনা গ্র্যাগার বলেন, ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছেন, তিনি বন্ধু ও মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন। এগুলো কোনোভাবেই শান্তির প্রসারে সহায়ক নয়।

তিনি আরও বলেন, একজন শান্তিপ্রেমী নেতার থেকে যা আশা করা হয়, ট্রাম্প তার বিপরীত কাজ করছেন।

এ বছর শান্তি পুরস্কার পেতে পারেন এমন সংস্থাগুলোর মধ্যে আছে, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনসিএইচআর), শিশু সংস্থা ইউনিসেফ, রেড ক্রস, ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস, সুদানের এমার্জেন্সি রেসপন্স রুম নামের একটি স্থানীয় গ্রাসরুট সংগঠন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেকেই এমন পরিবেশে মানবিক কাজ করছেন, যা ট্রাম্প প্রশাসনের তহবিল কাটছাঁটের কারণে আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। তাই এ ধরনের সংস্থাগুলোর ভূমিকাই নোবেল কমিটির চোখে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছা অনুযায়ী, এই পুরস্কার সেই ব্যক্তিকে দেওয়া হয়, যিনি জাতিগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও শান্তি প্রচারে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের নীতিগত অবস্থান ও আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে তার ভূমিকাই তাকে সেই মানদণ্ড থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছে।


গাজায় ১৭০ লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত গাজার একটি এলাকা। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২১:১০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ২৪ ঘণ্টায় ১৭০ লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের যুদ্ধবিমান গাজা উপত্যকায় ১৭০টি ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে’ হামলা চালিয়েছে এবং এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তিনটি ডিভিশনের সৈন্য গাজা সিটি ও এর উত্তরাঞ্চলে স্থল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এ সময় তারা কয়েকজন ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা এবং একটি অস্ত্র গুদাম ধ্বংসের দাবি করেছে। তবে এসব দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা হাজির করেনি।

বিশ্বনেতাদের আহ্বান উপেক্ষা করে গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। এতে নিহত হয়েছেন আরও ৮৫ জন। এর মধ্যে নুসেইরাত শরণার্থী ক্যাম্পে আল-আহলি স্টেডিয়ামে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুতদের ওপর হামলায় ১২ জন প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে ছিলেন সাত নারী ও দুই শিশু।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা হামাসের দুই যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। তবে হতাহতের তথ্য তাদের তথ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এরই মধ্যে হামাসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত শহরের কেন্দ্রে অগ্রসর হওয়া অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনীর ট্যাংক ও সৈন্যরা।

এখনো হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্ত করাই স্থল অভিযানের লক্ষ্য বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর ‘চূড়ান্ত পরাজয়’ নিশ্চিত করাও এই বাহিনীর লক্ষ্য বলে তারা জানিয়েছে।

গাজার সবচেয়ে বড় শহর থেকে এখন পর্যন্ত লাখ লাখ বাসিন্দা পালিয়ে গেছে। যেখানে গত মাসেই জাতিসংঘের সমর্থিত একটি সংস্থা দুর্ভিক্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

কিন্তু আরও লাখ লাখ মানুষ সেখানে এখনো ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিতে রয়েছে। স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিষেবা সেখানে ভেঙে পড়েছে।

এদিকে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে আরব মুসলিম নেতাদের এক দলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘মধ্যপ্রাচ্য ও গাজায় শান্তির জন্য ২১ দফা পরিকল্পনা’ উপস্থাপন করেছেন।

এই পরিকল্পনা সম্পর্কে উইটকফ বিস্তারিত আর কিছু জানাননি। তবে তিনি বলেছেন, এটা ইসরায়েলের উদ্বেগের পাশাপাশি এই অঞ্চলের সব প্রতিবেশীর দুশ্চিন্তাকে তুলে ধরেছে। আমরা আশাবাদী, এমনকি আমি আত্মবিশ্বাসী হয়েও বলতে পারি, আগামী দিনগুলোতে আমরা যেকোনো ধরনের যুগান্তকারী সাফল্য ঘোষণা করতে পারব।

গাজা সিটির হাসপাতালগুলো গত বুধবার বিকেলে জানিয়েছে, তারা মধ্যরাত থেকে ইসরায়েলি হামলা ও গুলিবর্ষণে নিহত ৬০ জনেরও বেশি মানুষের মরদেহ পেয়েছে।

হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, ফাইরাস মার্কেটের কাছে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত একটি ওয়্যারহাউসে ইসরায়েলি হামলায় এক তৃতীয়াংশ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে ছয়জন নারী এবং নয়জন শিশু রয়েছে।

বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের গাজা সিটিতে স্বাধীনভাবে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাই এসব সংবাদ ভেরিফাই বা যাচাই করা কঠিন। কিন্তু ঘটনাস্থলের একটি ভিডিও ফুটেজে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে কম্বলে মোড়ানো একটি মরদেহ সরিয়ে নিতে দেখা গেছে লোকজনকে।

নিহতদের মধ্যে মোহাম্মদ হাজ্জাজের আত্মীয়ও রয়েছে। তিনি এএফপি নিউজকে বলেছেন, যখন লোকজন ঘুমাচ্ছিল তখন ওই স্থানে ‘ব্যাপক বোমা হামলা’ চালানো হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা এসে শিশু ও নারীদের ছিন্নভিন্ন অবস্থায় দেখতে পেয়েছি। এটি এক করুণ দৃশ্য ছিল। আরেকটি ছবিতে দেখা গেছে, আল আহলি হাসপাতালের বাইরে মেঝেতে সাদা কাফন এবং প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা ছয়টি মরদেহের পাশে বসে মানুষ শোক পালন করছে।

তালা আল-দীব নামে এক নারী জানিয়েছেন, মরদেহগুলোর মধ্যে তার বোনের স্বামী, দুই সন্তান এবং বোনের শ্বশুরসহ চারজনের মরদেহ রয়েছে।

এ বিষয়ে ইসরায়েলি ডিফেন্স বাহিনীর মন্তব্য জানতে চাইলে তারা বলেছে, দুই হামাস সন্ত্রাসীকে লক্ষ্য করে হামলা করেছে তারা।

গাজা সিটির অন্যান্য স্থানের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ-পশ্চিম তেল আল-হাওয়া এবং উত্তর-পশ্চিম রিমাল পাড়ায় ইসরায়েলি ট্যাংক দেখতে পেয়েছেন তারা।

ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, তাল আল-হাওয়ার আল-কুদস হাসপাতালের বাইরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বাহন মোতায়েন করা হয়েছে এবং ইসরায়েলি গুলিবর্ষণে এর অক্সিজেন স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অকেজো হয়ে গেছে।

আইডিএফ গত বুধবার জানিয়েছে, হাসপাতালের দিকে সরাসরি কোনো হামলা চালানো হয়নি। এই ঘটনার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে তারা।

গাজায় যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা উপস্থাপন করলেন ট্রাম্প

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২১-দফা একটি নতুন পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন।

গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কে আরব ও মুসলিম নেতাদের সঙ্গে একটি বৈঠকে এই পরিকল্পনাটি নিয়ে আলোচনা করা হয়। গত বুধবার সিএনএনকে দেওয়া তথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এই খবর জানিয়েছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে এই বৈঠকে তিনিসহ আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

উইটকফ বলেন, ‘আমরা বেশ ফলপ্রসূ আলোচনা করেছি। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ২১-দফা পরিকল্পনাটি আরব নেতাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি যে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন গাজায় সহিংসতা বন্ধ হবে, তেমনি ইসরায়েল এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্বেগও দূর হবে।’

তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই বিষয়ে কোনো ধরনের অগ্রগতির ঘোষণা আসবে। ট্রাম্পের পরিকল্পনার কয়েকটি মূল বিষয় হলো: গাজায় আটক সব জিম্মিকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া, গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করা, গাজার প্রশাসনকে হামাসের প্রভাবমুক্ত করা এবং পর্যায়ক্রমে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার করা।


ইসরাইলের পর্যটন নগরী ইলাতে ইয়েমেনের ড্রোন হামলায় আহত ২২

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

ইয়েমেনের ড্রোন হামলায় ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলীয় পর্যটন নগরী ইলাতে অন্তত ২২ জন আহত হয়েছে।

বুধবার জানিয়েছে দেশটির জরুরি সেবা সংস্থার বরাত দিয়ে জেরুজালেম থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। ইহুদি নববর্ষ রোশ হাশানাহের দ্বিতীয় দিনে হামলাটি চালানো হলো।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, ড্রোনটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে লোহিত সাগরের উপকূলীয় শহর ইলাতে পতিত হয়। আহতদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা গুরুতর।

মাগেন ডেভিড অ্যাডম জরুরি সেবা জানিয়েছে, তাদের দল ২২ জনকে চিকিৎসা দিয়েছে। এর মধ্যে ২৬ ও ৬০ বছর বয়সী দুই ব্যক্তি গুরুতর আহত, একজন মাঝারি ও অন্যান্যরা সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত।

পুলিশ জানায়, ড্রোনটি ইলাত শহরের কেন্দ্রে আঘাত করে, যা পর্যটক সমাগমের স্থান হিসেবে পরিচিত। এতে এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

হুথি সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি পরে এক বিবৃতিতে জানান, তাদের বাহিনী দক্ষিণ ইসরাইলের দুটি স্থানে দুইটি ড্রোন হামলা চালিয়েছে।

ইলাতের মেয়র ইলি ল্যাঙ্ক্রি সরকারের প্রতি হুথিদের বিরুদ্ধে কঠোর পাল্টা হামলার আহ্বান জানান।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, হামলার আগে ইলাতজুড়ে বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠে। শহরটি মিশর ও জর্ডানের সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত।

ইসরাইল ইতোমধ্যেই ইয়েমেনে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে। গত মাসে হুথি সরকারের প্রধানসহ আরও ১১ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে।

হুথিরা ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গাজার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলের দিকে বারবার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করে দাবি করছে যে তারা ফিলিস্তিনি মিত্র হামাসকে সমর্থন করছে।


ইউক্রেন সম্পর্কিত ট্রাম্পের ‘স্পষ্ট বার্তাকে’ স্বাগত জানালেন মাখোঁ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

ইউক্রেন সংঘাতের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘খুব স্পষ্ট বার্তাকে’ বৃহস্পতিবার স্বাগত জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ।

ট্রাম্প তার অবস্থান থেকে সরে এসে কিয়েভ রাশিয়ার দখলকৃত সমস্ত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে পারে বলে ঘোষণা দেওয়ার পর মাখোঁ তাকে স্বাগত জানালেন।

নিউ ইয়র্ক থেকে ফ্রান্স ২৪ ও রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল (আরএফআই)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাখোঁ বলেন, এই বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান পরিবর্তন ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ এবং এটি একটি ‘নতুন দৃষ্টিভঙ্গি’ প্রদান করেছে, কারণ কিয়েভের জন্য ‘মার্কিন সরঞ্জাম ও সমর্থন প্রয়োজন।’

মাখোঁ বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে এটি একটি খুব স্পষ্ট বার্তা যে রাশিয়া নিঃসন্দেহে দুর্বল, অনেকের যেমন বলছে তার চেয়েও ভঙ্গুর।’

নিউইয়র্কে বার্ষিক জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দিচ্ছেন মাখোঁ। তিনি সেখান থেকে জানান, তিনি ‘ইউক্রেনকে (রাশিয়াকে) আরও বেশি প্রতিরোধ করতে এবং এমনকি (দখলকৃত) অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম করবেন।’


ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করার পর ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ইইউর সহায়তায় ‘পুরো ইউক্রেনকে তার আসল রূপে ফিরিয়ে আনার’ জন্য লড়াই করা ও জয় করার অবস্থানে রয়েছে ইউক্রেন।

২০১৪ সালে একটি অভিযানের পর ক্রিমিয়ার ইউক্রেনীয় কৃষ্ণ সাগর উপদ্বীপকে নিজেদের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে রাশিয়া।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কোর পূর্ণ মাত্রার হামলার পর এখন ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করছে রাশিয়া।

ন্যাটো সদস্যরাষ্ট্র পোল্যান্ড ও রোমানিয়ায় ড্রোন হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করার পর, মাখোঁ বলেন, মস্কোর ‘নতুন উস্কানির ক্ষেত্রে জোটের প্রতিক্রিয়া আরো ‘এক ধাপ উপরে যেতে হবে।’

তিনি বিস্তারিত উল্লেখ না করে আরো বলেন, ‘এর অর্থ হল, কেউ যদি আপনাকে আবার উস্কানি দেয়, তাহলে আপনাকে আরও কিছুটা কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।’


গাজা সিটিতে হামাসের লক্ষ্যভেদী হামলায় ইসরায়েলি সেনা নিহত

ফিলিস্তিনের গাজা সিটিতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার সময় বিস্ফোরণের পর সেখান থেকে ওঠা ধোঁয়া। ছবি: রয়টার্স
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ফিলিস্তিনে গাজার প্রধান শহর গাজা সিটিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর জোরদার স্থল হামলার মধ্যেই হামাসের পাল্টা হামলায় এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, বুধবার হামাস যোদ্ধাদের লক্ষ্যভেদী (স্নাইপার) হামলায় ওই ইসরায়েলি সেনা নিহত হন।

নিহত সেনার নাম চালাচেউ শিমন ডামালাশ (২১) । তিনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নাহাল ব্রিগেডের ৯৩২তম ব্যাটেলিয়নের স্টাফ সার্জেন্ট ছিলেন। তার বাড়ি ছিল ইসরায়েলের বিরশেবায়।

প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে আইডিএফ জানিয়েছে, একটি সেনা শিবিরের গার্ড পোস্টে দায়িত্ব পালন করাকালে ডামালাশ লক্ষ্যভেদীর গুলিতে নিহত হন।

গাজা সিটিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অভিযান শুরু করার পর থেকে সেখানে এই নিয়ে তাদের দুইজন সেনা নিহত হল।

একই দিন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শহর এলাতে ইয়েমেনের হুতিরা ড্রোন হামলা চালায়। বিরশেবার সোরোকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টার জানিয়েছে, এই হামলায় গুরুতর আহত ২৬ বছর বয়সী এক পুরুষ এখন হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন।

এই ড্রোন হামলায় ২৪ ও ৬৫ বছর বয়সী আরও দুই ইসরায়েলি পুরুষ আহত হয়েছেন।


নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে চাইলে ট্রাম্পকে গাজা যুদ্ধ থামাতে হবে: ম্যাক্রোঁ

আপডেটেড ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২২:১৮
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ গত মঙ্গলবার বলেছেন, যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সত্যিই নোবেল শান্তি পুরস্কার জিততে চান, তবে তাকে গাজার যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।

নিউইয়র্ক থেকে ফ্রান্সের বিএফএম টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাখোঁ বলেন, শুধু ট্রাম্পেরই ক্ষমতা আছে ইসরায়েলকে যুদ্ধ শেষ করার জন্য চাপ দেওয়ার।

ফরাসি প্রেসিডেন্টের কথায়, ‘এ বিষয়ে কিছু করার ক্ষমতা একজনের আছে। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট।’

মাখোঁ আরও বলেন, ‘আরেকটি কারণে তিনি (ট্রাম্প) আমাদের চেয়ে বেশি করতে পারেন। তা হলো, আমরা এমন কোনো অস্ত্র সরবরাহ করি না, যা গাজায় যুদ্ধ চালানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। আমরা এমন কোনো সামগ্রী সরবরাহ করি না, যা গাজায় যুদ্ধ চালানোর সুযোগ করে দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা করে।’

এদিন ট্রাম্প জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় কড়া ভাষায় বক্তৃতা দেন। তিনি পশ্চিমা মিত্রদের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, এটি হামাসের জন্য পুরস্কার হবে।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের অবিলম্বে গাজার যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। আমাদের অবিলম্বে শান্তি আলোচনা শুরু করতে হবে।’

ট্রাম্পের বক্তৃতা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে মাখোঁ বলেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্টকে দেখি, যিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়েছেন। আজ সকালে পডিয়াম থেকে তিনি পুনরায় বলেছেন, ‘আমি শান্তি চাই। আমি সাতটি সংঘাত সমাধান করেছি।’ তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার চান। নোবেল শান্তি পুরস্কার শুধু তখনই সম্ভব, যদি আপনি এই সংঘাত (গাজা যুদ্ধ) বন্ধ করেন।’

কাম্বোডিয়া, ইসরায়েল, পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ ট্রাম্পকে এ বছর নোবেল পুরস্কার দেওয়ার জন্য মনোনয়ন দিয়েছে।

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এ পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য, যা তার চারজন পূর্বসূরি প্রেসিডেন্টকে দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি বলেছেন, ‘যারা জাতিসংঘে উপস্থিত ছিলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তির জন্য একাই তাদের সবার চেয়ে বেশি কাজ করেছেন।’

মুখপাত্র আরও বলেন, ‘শুধু এই প্রেসিডেন্টই বিশ্বে স্থিতিশীলতার জন্য এত কিছু অর্জন করতে পেরেছেন। কারণ, তিনি কার্যত যুক্তরাষ্ট্রকে আবার শক্তিশালী করেছেন।’


banner close