পাকিস্তানে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এ নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি। সরকার গঠন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি আসনে জয় পেয়েছে ইমরান সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। দেশটিতে সরকার গঠন কারা করবে এ নিয়ে গোলকধাঁধার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে মোট আসন ৩৩৬টি। এর মধ্যে ৭০টি নারী ও সংখ্যালঘুদের সংরক্ষিত। সরাসরি নির্বাচন হয় ২৬৬টি আসনে। তবে একটি আসনে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় এবার ২৬৫টি আসনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে দলগুলোকে। ভোট গণনা প্রায় শেষের দিকে। দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিশন ইসিপি এখনো সব আসনের ফলাফল জানায়নি। এককভাবে সরকার গঠন করতে কোনো দলকে জিততে হবে ১৩৪টি আসনে। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানে নির্বাচনে কোনো দলই এই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। সব আসনের ফল প্রকাশের পর তাই বেশ কয়েকটি চিত্র সামনে আসছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বলছে, এককভাবে কোনো দলের সরকার গঠনের আর সুযোগ নেই। পাকিস্তানি বিশ্লেষক জাইঘাম খান বলেছেন, সব আসনের ফল প্রাথমিকভাবে প্রকাশের পর দুটি চিত্র সামনে আসতে পারে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাবন্দি ইমরান খানের দলের জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাদ দিয়ে বাকি দলগুলোর একটি জোট করে সরকার গঠন। এভাবে সরকার গঠন করলে বিলাওয়াল ভুট্টোর দল পিপিপি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন ছাড়াও জোটে আসবে এমকিউএম, জামাত-ই-ইসলামী ও বাকিরা।
জাইঘাম খান বলেন, দ্বিতীয় আরেকটি চিত্র আছে। তবে সেটি হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। এ ক্ষেত্রে পিপিপিকে পিটিআইয়ের সঙ্গে হাত মেলাতে হবে। কেননা এ পর্যন্ত ঘোষিত আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসনে জিতেছে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে যেভাবেই সরকার গঠন করা হোক না কেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পাকিস্তানে অচিরেই আসছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষক জাইঘাম খান।
এদিকে, পিটিআই জানিয়েছে, তারা সব স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, ভোটের ফল প্রকাশ শেষ হওয়ার আগেই দেশবাসীকে বিশেষ বার্তা দেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে কোনো ধরনের অরাজকতা ও মেরুকরণ না করার তাগিদ দেন তিনি।
ডন বলছে, প্রকাশিত ২৫৩ আসনের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন ৯২টি আসনে। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী পিএমএল-এন জিতেছে ৭১টিতে। ৫৪টি আসন পাওয়া পিপিপির সঙ্গে তারা জোটে রাজি হয়েছে বলে জানায়। এই জোট নিয়েই এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন (৭১) ও বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপি (৫৪) জোটে রাজি হলেও এখনো তারা মিলে ১৩৪টি আসনে জিততে পারেনি। মোট জিতেছে ১২৫টিতে। আরও ১২টি আসনের ফল বাকি। একটিতে ভোটগ্রহণ বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে কারাগারে থেকে ইমরান বলেছেন, তিনি জয়ী হয়েছেন। তার দলও দাবি করছে, জোট বানিয়ে সরকার গঠন করবে পিটিআই। আবার পিএমএল-এনের নেতা নওয়াজ শরিফ রীতিমতো জনসভা করে বিজয় ঘোষণা করেছেন। সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করবেন বলে জানান তিনি। তাকে সেনাবাহিনী সমর্থন দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী কোনো দল যদি এককভাবে সরকার গঠন করতে চায় তাহলে সংরক্ষিত আসন ছাড়াই অন্তত ১৩৪টি আসনে জয় পেতে হবে এবং সংরক্ষিত আসনসহ পেতে হবে ১৬৯টি।
স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, নিবন্ধিত দল হিসেবে অংশ নেওয়া নওয়াজ ও বিলওয়াল ভুট্টোর দল এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে না। তাই এরই মধ্যে জোট সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা করেছেন তারা। দুই দল যদি জোট গঠনে একমত হতে পারে তাহলে সংরক্ষিত আসনসহ সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে তারা। তবে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন পেয়েও বিপাকে ইমরান সমর্থিত জয়ী প্রার্থীরা। কারণ দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় সংরক্ষিত আসনও পাবে না তারা। ফলে তাদের পক্ষে সরকার গঠন করা প্রায় অনিশ্চিত। কারণ পিপিপি ও পাকিস্তান মুসলিম লীগের সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে তেহরিক-ইনসাফ।
প্রশ্ন উঠছে, এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীদের করণীয় কী? পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, তিন দিনের মধ্যে তারা অন্য কোনো দলে যোগ দিয়ে সরকার বা বিরোধী দল গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে।
জোট সরকার গঠন নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা হয়নি: বিলাওয়াল
পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন, পিপিপিকে ছাড়া কেন্দ্রীয় এবং পাঞ্জাব ও বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক সরকার গঠন করা যাবে না। শনিবার জিও নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বিলাওয়াল বলেন, পিপিপি প্রতিটি প্রদেশে প্রতিনিধিত্ব করছে। কে সরকার গঠন করবে, সে বিষয়ে এখনো কথা বলার সময় আসেনি।
পিপিপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা এখনো ভোটের পুরো ফল জানি না, বিজয়ী স্বতন্ত্র পার্লামেন্ট সদস্যরা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বা নিচ্ছেন, সেটাও আমরা জানি না। পিএমএল-এন, পিটিআই বা অন্যদের সঙ্গে জোট সরকার গঠনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি।’
বিলাওয়াল আরও বলেন, রাজনৈতিক হিংসা-বিদ্বেষ কেন, সেটা চিহ্নিত করা ছাড়া কোনো সরকারই জনগণের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। পিপিপির চেয়ারম্যান জানান, তিনি মনে করেন, সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে যদি ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে দেশের জন্য সেটা কল্যাণকর হবে।
বিলাওয়াল বলেন, ‘পিপিপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার নাম প্রস্তাব করেছে। এখন আমাদের যদি সেটা পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে আরেকটি বৈঠক করতে হবে এবং সেই বৈঠকে আমরা কীভাবে এগোব, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
সরকার গঠন নিয়ে যা বললেন পিটিআই চেয়ারম্যান
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যান গহর আলী খান দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি সরকার গঠনের জন্য তার দলকে আমন্ত্রণ জানাবেন। কারণ, জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়েছেন। ইসলামাবাদে গতকাল শনিবার গণমাধ্যমের উদ্দেশে গহর আলী বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই না। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যাবো এবং সরকার গঠন করব।’
পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান বলেন, জনগণ অবাধে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা ভোট গণনা করে ফরম-৪৫ পূরণ করেছেন।
ইমরান খানের দলের চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের কণ্ঠ এবং কাঙ্ক্ষিত সরকার গঠনের উদ্যোগকে দমন করা হলে অর্থনীতি তার ধাক্কা সইতে পারবে না।
পূর্ণ ফলাফল দ্রুত ঘোষণা করা উচিত উল্লেখ করে গহর বলেন, ‘পিটিআইয়ের জন্য কোনো বাধা তৈরি করা ঠিক হবে না এবং যতটা দ্রুত সম্ভব ফল ঘোষণা করা উচিত। আইন অনুযায়ী চূড়ান্ত ফল ফরম-৪৫-এ পূরণ করে প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা সব ফল পেয়েছি।’
পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনে দল-সমর্থিত বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তারা দলের প্রতি অনুগত এবং তা-ই থাকবেন। সব প্রক্রিয়া শেষে পিটিআই আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অন্তর্দলীয় নির্বাচনে যাবে। জনগণ পিটিআইকে বিশাল ম্যান্ডেট দিয়েছে। পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে করা সব মামলার অভিযোগ ভুয়া।
তিনি জানান, সংরক্ষিত আসন এবং কোন দলের সঙ্গে তাদের যোগ দেওয়া উচিত, সে বিষয়ে খুব দ্রুত তারা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন। যেসব আসনে ফলাফল এখনো স্থগিত হয়ে আছে, সেসব জায়গায় তারা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করবেন।
গহর বলেন, দলের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে, তবে সেটা হতে হবে শান্তিপূর্ণ।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়া তার অস্ত্র ও গোলাবারুদ উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে। যুদ্ধের এই সময়ে দেশটির সামরিক শিল্পখাতে উৎপাদন বেড়েছে সর্বোচ্চ ২২ গুণ।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) ক্রেমলিনে প্রতিরক্ষা শিল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে দেওয়া টেলিভিশন ভাষণে এ তথ্য জানান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
পুতিন জানান, ট্যাংক উৎপাদন বেড়েছে ২ দশমিক ২ গুণ, সামরিক বিমান উৎপাদন ৪ দশমিক ৬ গুণ, আর আঘাত হানার সক্ষম অস্ত্র ও গোলাবারুদের উৎপাদন বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে ২২ গুণ।
রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক পুতিন বলেন, বিশেষ সামরিক অভিযানে (এসএমও) অংশগ্রহণকারী সেনাদের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করছে প্রতিরক্ষা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। তিনি উল্লেখ করেন, যুদ্ধের ধরন ও কৌশল ক্রমাগত পরিবর্তিত হওয়ায় সেই অনুযায়ী সামরিক উৎপাদনেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা রিয়া নোভোস্তি-কে উদ্ধৃত করে পুতিন বলেন, ২০২২ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় সহায়তা ব্যবস্থার ফলে প্রতিরক্ষা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত তাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা জোরদার করতে পেরেছে, যার ফলে অত্যন্ত চাহিদাসম্পন্ন অস্ত্র উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
তিনি জানান, সাঁজোয়া যুদ্ধযান ও সাঁজোয়া জনবাহী যান (বিএমপি ও এপিসি) উৎপাদন বেড়েছে ৩ দশমিক ৭ গুণ, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ১২ দশমিক ৫ গুণ এবং রকেট আর্টিলারি অস্ত্র উৎপাদন বেড়েছে ৯ দশমিক ৬ গুণ।
পুতিন আরও বলেন, এটি প্রতিরক্ষা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। একই সঙ্গে পুরো অর্থনীতির উন্নয়ন ও স্থিতিশীল আর্থিক অবস্থান না থাকলে এমন অগ্রগতি সম্ভব হতো না।
তিনি জানান, বিশেষ সামরিক অভিযানের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সের একটি নতুন কাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। যুদ্ধ চলাকালে লড়াইয়ের প্রকৃতি, ধরন ও পদ্ধতিতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আসছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় উৎপাদন ব্যয় কমানোকে একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করেন পুতিন। পাশাপাশি অস্ত্র পরীক্ষাগার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সক্রিয় ব্যবহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
পুতিন বলেন, অস্ত্র খাতে মোট ব্যয়ের প্রায় অর্ধেকই ব্যয় করা হচ্ছে উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ব্যবস্থার পেছনে, যা ভবিষ্যতের সশস্ত্র বাহিনীর রূপ নির্ধারণ করবে। এর মধ্যে রয়েছে কৌশলগত পারমাণবিক বাহিনী, মহাকাশ সম্পদ, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এদিকে, রিয়া নোভোস্তি জানায়, আগামী ২০২৭-২০৩৬ মেয়াদের জন্য রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় অস্ত্র উৎপাদন কর্মসূচিতে ভবিষ্যৎ যুদ্ধ সক্ষমতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, নির্দিষ্ট সংখ্যক অস্ত্র বা সরঞ্জামের চেয়ে। এই কর্মসূচি গত ১৭ ডিসেম্বর প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলাউসভ উপস্থাপন করেন।
ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ আর চরম মানবিক সংকটের মধ্যেই রোববার মিয়ানমারে হতে যাচ্ছে সাধারণ নির্বাচন।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটি এক রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে ঠেকিয়েছে।
নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই সামরিক জান্তা ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর লড়াইয়ে বিপর্যস্ত মিয়ানমার।
এই সংঘাতের মধ্যেই চলতি বছরের মার্চে এক শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানবিক সংকট তীব্রতর হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের ৫ কোটি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে অন্তত ২ কোটি মানুষের এখন জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতি আর মুদ্রার মানের নজিরবিহীন পতনের ফলে দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে।
অভ্যুত্থান পরবর্তী এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬ হাজার ৮০০ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন ৩৬ লাখের বেশি মানুষ।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করে বলেছে, আগামী বছর মিয়ানমারে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ তীব্র ক্ষুধার মুখে পড়বে, যার মধ্যে ১০ লাখ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির খাদ্য সংকট ও ক্ষুধার তথ্য গোপন করতে গবেষক ও ত্রাণকর্মীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে জান্তা সরকার।
এরই মধ্যে জাতিসংঘ জানিয়েছে, মিয়ানমারে প্রয়োজনীয় ত্রাণের মাত্র ১২ শতাংশ তহবিল সংগৃহীত হয়েছে, যা দেশটিকে বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম ‘আন্ডার-ফান্ডেড’ বা চরম অর্থসংকটের অঞ্চলে পরিণত করেছে।
সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে শিশুরা। ডব্লিউএফপির তথ্য বলেছে, এ বছর মিয়ানমারে ৫ লাখ ৪০ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগতে পারে, যা গত বছরের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি।
এছাড়া পাঁচ বছরের কম বয়সি প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে একজনের শারীরিক বিকাশ পুষ্টির অভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।
এক সময় এ অঞ্চলের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে বিবেচিত মিয়ানমার এখন ধুঁকছে। চলতি মাসে বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশে ফিরতে পারে।
মূলত ভূমিকম্প পরবর্তী পুনর্গঠন কার্যক্রম এই প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। তবে মূল্যস্ফীতি এখনো ২০ শতাংশের উপরে।
অন্যদিকে, বিদ্যুতের তীব্র সংকটে ভুগতে থাকা মিয়ানমারে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এ পরিস্থিতির সুযোগ নিতে রাশিয়ার সঙ্গে একটি বড় বিনিয়োগ চুক্তি করেছে জান্তা সরকার, যা দেশটির জ্বালানি খাতে রুশ কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন দুয়ার খুলে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে কেনেডি সেন্টারের নাম পরিবর্তন করে ‘ট্রাম্প-কেনেডি সেন্টার’ রাখা হয়েছে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। নাম পরিবর্তনের খবর প্রকাশ হলে এই নামটি ফেডারেল আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত এবং এটি এভাবে বদলানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছিলেন কেনেডি পরিবারের সদস্য জো কেনেডি।
জন এফ কেনেডি সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টসে ট্রাম্পের নাম যুক্ত করা নিয়ে মামলা করেছেন ডেমোক্র্যাট পার্টির আইনপ্রণেতা জয়েস বিটি। মার্কিন আইনের অধীনে কেনেডি সেন্টারের বোর্ডের সদস্য হিসেবে মনোনীত কয়েক জন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতার একজন বিটি। তিনি মামলায় দাবি করেছেন, নাম পরিবর্তনের উদ্যোগটি অবৈধ। কারণ কেন্দ্রের নাম পরিবর্তনের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন। মামলায় বলা হয়েছে, নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত বোর্ড সভায় বিটি ফোনে যুক্ত হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আপত্তি জানাতে গেলে তাকে থামিয়ে দেওয়া হয়।
গত সপ্তাহে কেনেডি সেন্টারের পরিচালনা পর্ষদ ভোটের মাধ্যমে এই পারফর্মিং আর্টস কেন্দ্রটির নাম পরিবর্তন করে ‘ট্রাম্প-কেনেডি সেন্টার’ করার সিদ্ধান্ত নেয়। উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটিতে ট্রাম্পের বহু মিত্র বসে আছেন। কেনেডি সেন্টারের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, বর্তমানে বোর্ড অব ট্রাস্টিজে ট্রাম্পের নিয়োগপ্রাপ্ত ৩৪ জন সদস্য এবং আইনের মাধ্যমে মনোনীত আরো ২৩ জন সদস্য রয়েছেন। দায়িত্ব নেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কেনেডি সেন্টারের একাধিক বোর্ড সদস্যকে বরখাস্ত করে নিজের মিত্রদের নিয়োগ দেন। এরপর বোর্ড তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করে এবং তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা রিচার্ড গ্রেনেল বোর্ডের সভাপতি হন।
নতুন বছরের শুরুতেই অর্থাৎ ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসেই ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরু হতে পারে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১৩ এর বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মিডল ইস্ট মনিটর।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও আঞ্চলিক মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছে, নতুন বছরের শুরুতেই গাজা যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরু হওয়ার কথা আছে।
চ্যানেল ১৩ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) এক জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ইসরায়েল ও মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছেন যে, গাজা চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ জানুয়ারির শুরুতেই কার্যকর হবে।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানায়, গাজার নিরস্ত্রীকরণ ছাড়াই যদি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় ধাপে এগিয়ে যান, সে বিষয় নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।
মিডল ইস্ট মনিটরের তথ্যমতে, মিশর, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় এবং ট্রাম্পের পৃষ্ঠপোষকতায় গত ৯ অক্টোবর ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস দুই ধাপের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
তবে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন ও দ্বিতীয় ধাপে যেতে বিলম্বের কারণে চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৭১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭১ হাজারেরও বেশি মানুষ।
ফিলিস্তিনি যোদ্ধার হামলায় দুই ইসরায়েলি দখলদার নিহত
অধিকৃত উত্তর ফিলিস্তিনের জেনিন অঞ্চলে বেইত শা'ন এলাকায় এক ফিলিস্তিনির যোদ্ধার পরপর দুই অভিযানে অন্তত দুই দখলদার অবৈধ বসতি-স্থাপনকারী ইসরায়েলি নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছে।
ইসরায়েলি রেডিও জানিয়েছে, এক ফিলিস্তিনি যুবক গাড়ি চাপা দিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে বেইত শান এলাকায় দখলদার ইহুদিবাদী বসতি-স্থাপনকারীদের ওপর হামলা চালান।
ইসরায়েলি সংবাদ মাধ্যম বলেছে, ওই ফিলিস্তিনি যুবক জেনিন শহরের কাছে অবস্থিত কাবাতিয়া গ্রামের অধিবাসী। তিনি কয়েক দিন আগে বেইত শান এলাকায় আসতে সক্ষম হন যা তার গ্রাম থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে।
প্রথমে এই যুবক একজন ইসরায়েলিকে তার গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দেন ও তাকে মারাত্মকভাবে আহত করেন এবং পরে তিনি গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে আরেক ইসরায়েলির ওপর ছুরিকাঘাত করলে সেই দখলদার ইসরায়েলিও পরে মারা যায়।
আরও ৬ ইসরায়েলি এই ফিলিস্তিনি যোদ্ধার অভিযানে আহত হয়েছে। ইসরায়েলি পুলিশ তার ওপর গুলি চালায় ও তাকে গ্রেপ্তার করে ঘটনাস্থল থেকে।
ফিলিস্তিনের এই বীর যোদ্ধা ইসলামী জিহাদ আন্দোলনের সদস্য বলে কোনো কোনো গণমাধ্যম জানিয়েছে।
সম্প্রতি গাজা ছাড়াও ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হানাদার বাহিনী ও অবৈধ বসতি-স্থাপনাকারীদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষাপটে এই অভিযানের ঘটনাটি ঘটল।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করতে চুক্তির প্রস্তুতি নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এই বৈঠকের আগে ইউক্রেনের রাজধানী ও অন্যান্য অঞ্চলে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) এই হামলার আগে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি। যুদ্ধ থামার পর কোন পক্ষ কোন এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে এই বৈঠকে মূলত তা নিয়েই আলোচনা হবে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া তার প্রতিবেশী দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরু করলে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। প্রায় চার বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত।
রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ার হামলা প্রতিরোধ করার জন্য ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলো পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করলে কিয়েভে বিস্ফোরণ শোনা যেতে থাকে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। আর দেশটির বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়ার ড্রোনগুলো কিয়েভের পাশাপাশি দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে ও দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়েছে।
রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় হামলা অব্যাহত ছিল আর আকাশ হামলার সতর্কতা জারি ছিল। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব হামলায় অন্তত আটজন আহত হয়েছেন।
রাশিয়ার হামলার সময় পোল্যান্ড তাদের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের জেশুফ ও লুব্লিন বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে। এই দুটি শহর ইউক্রেনের পশ্চিমে। এক্স এ পোল্যান্ডের এয়ার নেভিগেশন পরিষেবা সংস্থা জানায়, এ সময় পোল্যান্ডের সশস্ত্র বাহিনী তাদের যুদ্ধবিমানগুলো আকাশে উড়িয়েছিল। রাশিয়া এইসব হামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
তীব্র লড়াইয়ের মধ্যেই চুক্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে আছে ভূখণ্ড। জেলেনস্কি সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে পরিচালিত শান্তি পরিকল্পনার ২০ দফার খসড়ার মধ্যে ৯০ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চুক্তি প্রায় প্রস্তুত।
‘নতুন বছরের আগেই অনেক সিদ্ধান্ত হতে পারে,’ সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে বলেছেন তিনি। ট্রাম্প বলেছেন, এই প্রক্রিয়ার পেছনের চালিকাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন নিউজ ওয়েবসাইট পলিটিকোকে তিনি বলেছেন, ‘আমি অনুমোদন না করা পর্যন্ত তার কিছুই নেই। তাই তার কাছে কী আছে আমরা দেখব।’
বৈঠকের আগে শনিবার ট্রাম্প ও জেলেনস্কি টেলিফোনে কথা বলবেন। তাদের এ কথোপকথনে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েন ও অন্যান্য ইউরোপীয় নেতারা যোগ দেবেন বলে কমিশনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের রাজধানীতে শক্তিশালী বিস্ফোরণ
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) একাধিক শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ সময় কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে জানায়, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকির মুখে রয়েছে রাজধানীটি।
টেলিগ্রামে বার্তা দিয়ে কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো বলেন, রাজধানীতে বিস্ফোরণ হয়েছে। আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী কাজ করছে। সবাই আশ্রয়কেন্দ্রে থাকুন।
ইউক্রেনের বিমানবাহিনী শনিবার ভোরে সারা দেশে বিমান হামলার সতর্কতা জারি করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা জানায়, রাজধানীসহ ইউক্রেনের একাধিক অঞ্চলের ওপর দিয়ে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র চলাচল করছে।
কিয়েভে থাকা এএফপির সাংবাদিকরা একাধিক বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পান। এর মধ্যে কয়েকটির সঙ্গে তীব্র আলোও দেখা যায়। এ সময় কমলা রঙের আলো দেখা যায়।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার ফ্লোরিডায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। ২০২২ সাল থেকে চলা যে সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, তা বন্ধের প্রস্তাবিত একটি পরিকল্পনা নিয়ে তাদের আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
রাশিয়া অভিযোগ করে, জেলেনস্কি ও তার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া পরিকল্পনাকে ‘ভেস্তে দেওয়ার’ চেষ্টা করছেন।
জেলেনস্কি চলতি সপ্তাহে যে তথ্য প্রকাশ করেছেন, তাতে বলা হয়েছে, সর্বসাম্প্রতিক এই পরিকল্পনাটি ২০ দফার একটি প্রস্তাব।
এতে বর্তমান ফ্রন্টলাইনেই যুদ্ধ স্থগিত করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি পূর্বাঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহারের সুযোগ রাখা হয়েছে, যেখানে নিরস্ত্রীকৃত বাফার জোন গড়ে তোলা হতে পারে।
ভূখণ্ড বিনিময়ের ইঙ্গিত পুতিনের
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে একটি সম্ভাব্য চুক্তির আওতায় দখলকৃত কিছু ভূখণ্ড বিনিময়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাজি হতে পারেন বলে খবর প্রকাশ করেছে রুশ সংবাদপত্র কমেরসান্ত। তবে বিনিময় হিসেবে পুতিন পুরো দনবাস অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছেন।
রাশিয়ার প্রথম সারির দৈনিক কমেরসান্ত-এর ক্রেমলিন সংবাদদাতা আন্দ্রেই কোলেসনিকভ জানান, ২৪ ডিসেম্বর রাতে ক্রেমলিনে এক বৈঠকে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের কাছে এই পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন পুতিন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুতিন ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেছেন যে রাশিয়া এখনো ‘অ্যাঙ্কোরেজ’ সম্মেলনে দেওয়া ছাড়গুলো মেনে নিতে প্রস্তুত। অর্থাৎ দনবাস রাশিয়ারই থাকবে—এই নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। কোলেসনিকভ লিখেছেন, দনবাসের বাইরে অন্য অঞ্চলে রুশ নিয়ন্ত্রণাধীন ভূখণ্ডের আংশিক অদলবদল বা হস্তান্তরের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি পুতিন।
এদিকে বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, গত সপ্তাহে মায়ামিতে অনুষ্ঠিত আলোচনায় ২০ দফার একটি শান্তি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার পথে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল অনেকটাই এগিয়েছে। তবে জেলেনস্কি স্পষ্ট করেছেন যে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা দনবাসের অবশিষ্ট অংশ রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো ঐকমত্য হয়নি। এ ছাড়া বর্তমানে রুশ সেনাদের দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও বিতর্ক রয়ে গেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ–পরবর্তী ইউরোপের এই রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়নে তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং জামাতা জ্যারেড কুশনার রাশিয়া, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চলতি বছরে ভারতের বিজেপি সরকার তথাকথিত ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যুতে বেশ সরব ছিল। নানা রাজনৈতিক বক্তব্যে এবং আলোচনায় তথাকথিত ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যুটিকে তুলে আনা হয়েছে। এমনকি নির্বাচনী প্রচারণার মোদ্দা হিসেবেও ব্যবহার করা হয়েছে এই তকমা। তবে ভারত সরকার সেখানেই থেকে থাকেনি। কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই তারা ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে অন্তত ২ হাজার ২০০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, তথাকথিত ‘অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযানে ২০২৫ সালে রেকর্ড সংখ্যক ২ হাজার ২০০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে দিল্লি পুলিশ।’ সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা। বৈধ অনুমতি ছাড়া দেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের শনাক্ত ও প্রত্যাবাসনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশের পরই এই তৎপরতা বৃদ্ধি পায়।
বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যানের তুলনায় এবারের অভিযানের ব্যাপকতা নজিরবিহীন। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালে ১৪ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, ২০২৩ সালে ৫ জন এবং ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫০ জন। ২০২৫ সালে এই নাটকীয় বৃদ্ধি এটাই প্রমাণ করে, জাতীয় রাজধানীর সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিতের নামে দিল্লি পুলিশ লক্ষ্যবস্তু করে তথাকথিত অভিযান চালায়।
দিল্লি পুলিশের মতে, যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তারা জাল নথিপত্র ব্যবহার করে দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছিল। তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে, এই ব্যক্তিরা স্থানীয় জনসমষ্টির সঙ্গে মিশে যেতে এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে ভুয়া আধার কার্ড, জাল ভোটার আইডি কার্ড এবং অন্যান্য জাল সরকারি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছিল।
তবে কোনো তথ্যপ্রমাণ হাজির করেনি দিল্লি পুলিশ। এমনকি দিল্লি পুলিশ বা ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো কখনোই যাদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে তাদের পরিচয়ের ব্যাপারে কোনো তথ্যপ্রমাণ দেয়নি; বরং এমনও একাধিক ঘটনা আছে, যেখানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম বাঙালিদের বাংলাদেশের ভেতরে ঠেলে পাঠানো হয়েছিল। এমনকি আসামেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে প্রমাণ আছে। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের সোনালী খাতুন এবং আসামের সকিনা বিবি ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে জোর করে ভারতীয় বাংলাভাষী মুসলিমদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ।
খোদ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যই বলছে, অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নাগরিক সোনালী খাতুন এবং তার পরিবারের পাঁচ সদস্যকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ তকমা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয় চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে। প্রায় চার মাস ধরে চরম দুর্ভোগ পোহানোর পর অবশেষে বিচারিক আদেশে তাঁদের ভারতে প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত হয়। চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি ভারতেও ফিরে যান। আদালতের আদেশ থেকে স্পষ্ট যে, দিল্লিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করা পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের এই দরিদ্র বাসিন্দাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও দিল্লি পুলিশ তাদের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছিল।
একইভাবে সকিনা বিবিকেও বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। বাংলাভাষী ভারতীয় মুসলিম এই নারী ২০১৬ সাল থেকে কোকরাঝাঁড় ডিটেনশন সেন্টারে আটক ছিলেন। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে নিয়মিতভাবে নলবাড়ি থানায় হাজিরা দিতে হতো। তিনি সর্বশেষ এই বছরের ২৫ মে থানায় হাজিরা দেন—এরপর থেকে তাঁর পরিবার তাকে খুঁজে পায়নি।
আসামের নলবাড়ি জেলার বারকুরা গ্রামের বাসিন্দা সকিনা বেগমকে গত মে মাসে তার বাড়ি থেকে হেফাজতে নেয় আসাম পুলিশ। এরপর তিনি দীর্ঘদিন নিখোঁজ ছিলেন এবং তার পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। জুনের প্রথম সপ্তাহে সকিনাকে ঢাকার মিরপুর ভাষানটেক এলাকায় রাস্তার পাশে একজন পথচারী খুঁজে পান। এরপর তিনি কাশিমপুর কারাগারে কিছুদিন বন্দী ছিলেন। পরে আদালতের হস্তক্ষেপে তার মুক্তির পথ প্রশস্ত হয়।
কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশের উপ-দূতাবাসের সামনে ফের বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি ময়মনসিংহে দিপু দাশ নামে হিন্দু যুবককে হত্যার প্রতিবাদে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে এই বিক্ষোভ হয়। এ সময় উপদূতাবাস ও আশেপাশের এলাকা কঠোর পুলিশি নিরাপত্তায় ঘিরে রাখা হয়।
কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন চত্বর থেকে গেরুয়া কাপড় পরা সাধু-সন্তদের নিয়ে একটি মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বাংলাদেশের উপ-দূতাবাসের দিকে অগ্রসর হলে বেহালা বাগান মোড়ে কলকাতা পুলিশ সেটি আটকে দেয়। তবে এদিনের মিছিল শান্তিপূর্ণ ছিল বলে জানানো হয়।
এরপর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীসহ চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রায় ৩০ মিনিট ডেপুটি হাইকমিশনের কার্যালয়ে বৈঠকের পর শুভেন্দু অধিকারী ও প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাইরে বেরিয়ে আসেন।
বৈঠক শেষে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, সোমবার থেকে বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন, সাধু-সন্ত সমাজ এবং ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এমপি ও বিধায়করা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের কাছে তাদের আপত্তি, প্রতিবাদ ও দাবি ডেপুটি হাইকমিশনের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তার পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে হিন্দুদের ওপর বেপরোয়া লাঠিচার্জ করিয়েছেন। শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, মঙ্গলবার পুলিশের লাঠিচার্জে ১০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। কারও মাথা ফেটেছে, কারও নাক ভেঙেছে, এমনকি সাধুদেরও মারধর করা হয়েছে।
তিনি জানান, এ ঘটনায় ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে আগে ৭ জন নারী জামিন পেয়েছেন ও শুক্রবার ১২ জনকে আদালতে তোলা হয়েছে।
শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেন, তারা ডেপুটি হাইকমিশনারকে জানিয়েছিলেন, দেখা না হলে ১০ হাজার মানুষ নিয়ে সেখানে অবস্থান কর্মসূচি করবেন। পরে ডেপুটি হাইকমিশনার জানান, সরকারের অনুমতি নিয়ে তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। শুভেন্দু অধিকারীর ভাষ্য অনুযায়ী, তারা জানতে চেয়েছিলেন দিপু চন্দ্র দাশের অপরাধ কী ছিল। জবাবে জানানো হয়, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত জামিন দেওয়া হবে না। ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে ডেপুটি হাইকমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিহতের পরিবারের পুরো দায়িত্ব রাষ্ট্র নিয়েছে।
এ সময় হুঁশিয়ারির সুরে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, কপিলমুনির আশ্রমে অনুষ্ঠিত গঙ্গাসাগর মেলায় কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত সাধু-সন্তরা আসেন। তিনি দাবি করেন, প্রয়োজনে পাঁচ লাখ সাধু নিয়ে আবারও উপ-দূতাবাসের সামনে আসবেন ও আন্দোলন জোরদার করবেন।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যুবক দিপু দাশের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। গত কয়েক দিন ধরে দফায় দফায় কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশের উপ-দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে ভারতের বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন। শুক্রবার ২৬ জানুয়ারি সাধু-সন্তদের নেতৃত্বে নতুন করে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
এক বছরে ইউক্রেনের প্রায় ৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিজেদের দখলে নেওয়ার দাবি করেছে রাশিয়া। ২০২৫ সালে ইউক্রেনে সামরিক সাফল্য অর্জনের অংশ হিসেবে জোরালোভাবে এই দাবি তুলে ধরলো পুতিনের দেশ।
বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, ইউক্রেনের অভ্যন্তরে সামরিক অগ্রগতির বার্তা দেওয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় প্রভাব ফেলতেই মস্কো এ ধরনের দাবি করছে।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বছরের শেষ সংবাদ সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়ার বাহিনী ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চলের সিভেরস্ক ও উত্তরাঞ্চলীয় খারকিভ অঞ্চলের ভোভচানস্ক দখল করেছে।
এছাড়া তিনি দাবি করেন, দোনেৎস্ক অঞ্চলের লাইমান ও কোস্তিয়ানতিনিভকার অন্তত অর্ধেক এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের হুলিয়াইপোলেও রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এসব শহরই সামনের সারির যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত।
তবে ইউক্রেন বিষয়ক পর্যবেক্ষকরা পুতিনের এসব দাবির সঙ্গে একমত নন। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) জানিয়েছে, উপগ্রহচিত্র ও উন্মুক্ত উৎসের দৃশ্যমান প্রমাণ পুতিনের দাবিকে সমর্থন করে না।
আইএসডব্লিউ বলেছে, সিভেরস্ক, ভোভচানস্ক কিংবা অন্য শহরগুলো পুরোপুরি দখলের কোনো প্রমাণ তারা পায়নি। বরং তারা দেখেছে, হুলিয়াইপোলের মাত্র ৭ দশমিক ৩ শতাংশ ও লাইমানের ২ দশমিক ৯ শতাংশ এলাকায় রুশ বাহিনীর উপস্থিতি রয়েছে, যা মূলত অনুপ্রবেশ বা আক্রমণমূলক অভিযানের মাধ্যমে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, কোস্তিয়ানতিনিভকার ক্ষেত্রেও রুশ অগ্রগতি ৫ শতাংশের বেশি নয়। এমনকি, রুশ সামরিক ব্লগারদের দাবিও পুতিনের বক্তব্যকে সমর্থন করে না বলে জানিয়েছে আইএসডব্লিউ। তাদের মতে, ব্লগারদের দাবি অনুযায়ী লাইমানের সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ ও কোস্তিয়ানতিনিভকার ১১ শতাংশ পর্যন্ত রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারে।
এদিকে, ক্রেমলিন খারকিভ অঞ্চলের কুপিয়ানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চলের পোক্রভস্ক পুরোপুরি দখলের দাবিও করেছে। তবে আইএসডব্লিউয়ের হিসাব অনুযায়ী, খারকিভ অঞ্চলের সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ২ শতাংশ এলাকায় রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। অন্যদিকে, ইউক্রেনের সেনাপ্রধান জানিয়েছেন, পোক্রভস্ক এলাকা থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনী ১৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে।
গত ১৮ ডিসেম্বর রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ বিদেশি সামরিক কর্মকর্তাদের কাছে বছরের শেষ প্রতিবেদন পেশ করেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, চলতি বছরে রাশিয়া ইউক্রেনের ৬ হাজার ৩০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করেছে। এর এক সপ্তাহ আগে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলউসভ ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার দখলের দাবি করেছিলেন।
তবে আইএসডব্লিউয়ের হিসাবে, রাশিয়া সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৯৮৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করেছে, যেখানে রয়েছে ১৯৬টি বসতি। অথচ রুশ কর্মকর্তারা দাবি করছেন, তারা ৩০০টিরও বেশি বসতি দখল করেছেন।
তবে পুতিন একটি দাবির ক্ষেত্রে সত্য বলছেন বলে মনে করছে আইএসডব্লিউ। সেটি হলো, পূর্বাঞ্চলীয় শহর সিভেরস্ক দখলের বিষয়টি।
জেলেনস্কির মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার কথা
এদিকে, রাশিয়ার এসব দাবি এমন এক সময়ে এলো, যখন গত দুই সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা জোরদার করেছে। ফ্লোরিডায় তিন দিনের আলোচনার পর গত সোমবার সেই প্রক্রিয়া শেষ হয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, আমরা অনুভব করছি, যুক্তরাষ্ট্র একটি চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছাতে চায়। আমাদের পক্ষ থেকেও পূর্ণ সহযোগিতা রয়েছে।
তবে বুধবার সকালে প্রকাশিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনায় দেখা যায়, সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয় ‘ভূখণ্ড’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে কোনো ঐকমত্য হয়নি।
রাশিয়া দাবি করছে, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চল পুরোপুরি ইউক্রেনকে ছেড়ে দিতে হবে, এর সঙ্গে ক্রিমিয়াও। ইউক্রেন এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। ইউরোপীয় দেশগুলো বলছে, পূর্ণ যুদ্ধবিরতির পর ভূখণ্ড নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি শীর্ষ বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ভূখণ্ড বিষয়ে যৌথ অবস্থান নির্ধারণ করা যায়।
উল্লেখযোগ্যভাবে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ন্যাটো-স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় সম্মত হয়েছে। এর অর্থ, ভবিষ্যতে রাশিয়া আবার হামলা চালালে ন্যাটো ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধে জড়াতে পারে।
এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, তারা নিকট ভবিষ্যতে ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ দেবে। এতে ইইউর পারস্পরিক প্রতিরক্ষা সুবিধাও ইউক্রেন পাবে, যার অধিকাংশ সদস্য দেশ ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত।
এই পরিকল্পনায় ইউক্রেনের পূর্ণ সামরিক সক্ষমতা বজায় রাখার সুযোগ রয়েছে এবং দখলকৃত অঞ্চলকে রাশিয়ার বলে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো শর্ত নেই, যা মস্কোর দাবি ছিল ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, ওয়াশিংটন ও কিয়েভের তৈরি ২০ দফা পরিকল্পনার বিষয়ে তারা অবগত। বুধবার সাংবাদিকদের ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, রাশিয়া শিগগিরই নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করবে ও বিদ্যমান চ্যানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে।
উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে ‘শক্তিশালী ও প্রাণঘাতী হামলা’ চালানোর কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আইএসকে ‘ঘৃণ্য সন্ত্রাসী’ বর্ণনা করে তিনি অভিযোগ করেছেন, এ গোষ্ঠী মূলত নিরীহ খ্রিস্টানদের নিশানা করছে এবং তাদের নির্মমভাবে হত্যা করছে।
ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন সেনাবাহিনী ‘একাধিক নিখুঁত হামলা’ চালিয়েছে।
পরে যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকা কমান্ড (আফ্রিকম) জানিয়েছে, নাইজেরিয়ার সঙ্গে সমন্বয় করে বৃহস্পতিবার সোকোতো রাজ্যে হামলা পরিচালনা করা হয়েছে।
নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ মাইতামা তুগার বিবিসিকে বলেন, এই যৌথ অভিযান ছিল সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে, যার সঙ্গে কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের সম্পর্ক নেই।
আরও অভিযানের সম্ভাবনা নাকচ না করে তিনি বলেছেন, সেটি নির্ভর করছে দুই দেশের নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের ওপর।
ট্রাম্প বৃহস্পতিবার রাতে ট্রুথ সোশাল পোস্টে বলেন, “আমার নেতৃত্বে আমাদের দেশ চরমপন্থি ইসলামী সন্ত্রাসবাদকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেবে না।’
বিবিসি লিখেছে, গত নভেম্বরে ট্রাম্প নাইজেরিয়ায় ইসলামপন্থি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে মোকাবিলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীকে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন তিনি কোন হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে কথা বলেছিলেন তা অস্পষ্ট ছিল।
তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ডানপন্থি মহলে নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বৃহস্পতিবার বলেন, নাইজেরিয়ান সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ।
সহিংসতা পর্যবেক্ষণকারী বিভিন্ন সংস্থা বলছে, মুসলিমদের চাইতে খ্রিস্টানরা বেশি হত্যার শিকার হচ্ছে—এমন কোনো প্রমাণ নেই। দেশটির জনসংখ্যায় এই দুই ধর্মের মানুষের সংখ্যা প্রায় সমান।
প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবুর একজন উপদেষ্টা বিবিসিকে বলেন, জিহাদিদের বিরুদ্ধে যেকোনো সামরিক পদক্ষেপ যৌথ হওয়া উচিত।
উপদেষ্টা ড্যানিয়েল বোলা বলেন, ইসলামপন্থি বিদ্রোহীদের দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাকে স্বাগত জানাচ্ছে নাইজেরিয়া, তবে এটি একটি ‘সার্বভৌম’ দেশ।
তিনি বলেছেন, জিহাদিরা কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষকে নিশানা করছে না; তারা সব ধর্মের মানুষকে, এমনকি কোনো ধর্মের অনুসারী নন—এমন লোকজনকেও হত্যা করেছে।
প্রেসিডেন্ট টিনুবু জোর দিয়ে বলেছেন, দেশে ধর্মীয় সহনশীলতা রয়েছে এবং নিরাপত্তা সংকট ‘সব ধর্ম ও অঞ্চলের মানুষকে’ প্রভাবিত করছে।
ট্রাম্প এর আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, খ্রিস্টানদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে নাইজেরিয়াকে তিনি ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। প্রমাণ ছাড়াই তিনি বলেন, হাজারো খ্রিস্টান ইতোমধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে।
কোনো দেশে ‘গুরুতর ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন’ ঘটলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ নিয়ে থাকে।
ট্রাম্পের ঘোষণার পর টিনুবু বলেছিলেন, সব মতের বিশ্বাসী মানুষের সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করতে তার সরকার বদ্ধপরিকর।
উত্তর-পূর্ব আফ্রিকায় বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রদেশের মতো জিহাদি গোষ্ঠীগুলো এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। তবে নিহতদের বেশিরভাগই মুসলমান বলে জানিয়েছে বৈশ্বিক রাজনৈতিক সহিংসতা বিশ্লেষণকারী সংস্থা অ্যাক্লেড।
মধ্য নাইজেরিয়ায় পানি ও চারণভূমির দখল নিয়ে মুসলিম পশুপালকদের সঙ্গে প্রায়ক্ষেত্রে খ্রিস্টান কৃষক গোষ্ঠীর মধ্যে ঘন ঘন সংঘর্ষ হয়।
প্রাণঘাতী হামলার চক্রে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ গেছে ঠিকই; তবে নৃশংসতায় জড়িয়েছে উভয় পক্ষই। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, কেবল খ্রিস্টানদের নিশানা করা হয়েছে—এমন কোনো প্রমাণ নেই।
গত সপ্তাহেই সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে একটি ‘ব্যাপক হামলা’ চালানোর কথা জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) জানায়, যুদ্ধবিমান, আক্রমণকারী হেলিকপ্টার ও কামান ব্যবহার করে মধ্য সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে ৭০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে। এতে জর্ডানের বিমানও অংশ নেয়।
চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই জাপানের মন্ত্রিসভা ইতিহাসে সর্বোচ্চ অঙ্কের প্রতিরক্ষা বাজেট অনুমোদন করেছে। চলতি সপ্তাহে বেইজিং টোকিওর বিরুদ্ধে ‘মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দেওয়ার’ অভিযোগ আনার প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত এল।
আগামী অর্থবছরের জন্য শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) অনুমোদন পাওয়া প্রস্তাবিত এই প্রতিরক্ষা বাজেটের পরিমাণ ৫৮ বিলিয়ন ডলার। এটি বর্তমান বাজেটের চেয়ে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। জাপানের বার্ষিক প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ২ শতাংশে উন্নীত করার জন্য যে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে, এটি তার চতুর্থ বছরের বরাদ্দ।
বাজেট পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পাল্টা আঘাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং উপকূলীয় প্রতিরক্ষা জোরদার করার ওপর। এ জন্য ভূমি থেকে সমুদ্রে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং চালকহীন সমরাস্ত্র ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, ২০২৮ সালের মার্চের মধ্যে শিল্ড নামের একটি প্রকল্পের আওতায় সমুদ্র উপকূল রক্ষায় নজরদারি ও প্রতিরক্ষার জন্য বড় আকারের চালকহীন আকাশযান, জাহাজ এবং পানির নিচে ড্রোন মোতায়েন করতে ১০০ বিলিয়ন ইয়েন ব্যয় করবে জাপান।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, চীন ও জাপান সরকারের মধ্যে বাড়তে থাকা বৈরিতার মধ্যেই এই বাজেট বৃদ্ধির ঘোষণা এলো। জাপান নিজেদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করার যেকোনো উদ্যোগ নিলেই বেইজিং তার বিরোধিতা করে আসছে।
গত নভেম্বরে এই সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়, যখন জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি মন্তব্য করেন, চীন যদি তাইওয়ান দখল করার উদ্দেশে আক্রমণ চালায়, তাহলে জাপান সম্ভবত সামরিকভাবে তাতে জড়িয়ে পড়বে।
তাকাইচির এই বক্তব্যে বেইজিং তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে শুরু করে।
চীনা কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে টোকিওর সমালোচনা করে আসছেন এবং জাপানের যেকোনো সামরিক ঘোষণা পেলে তার বিরোধিতা করছেন।
গত বৃহস্পতিবার চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, জাপানের সাম্প্রতিক মহাকাশ প্রযুক্তি উন্নয়ন, যার কিছু অংশ যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় হচ্ছে, মহাকাশকে ‘অস্ত্রসজ্জিত ও সামরিকীকরণ করছে এবং সেখানে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ইন্ধন দিচ্ছে।’
জাপানি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে টোকিও বেশ কয়েকটি রকেট উৎক্ষেপণ করেছে, যেগুলোর মাধ্যমে মহাকাশে পণ্যবাহী যান, জিপিএস সিস্টেম এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে।
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাং শিয়াওগাং গত রোববার বলেন, অতীতে জাপানি সমরবিদেরা যেভাবে অতর্কিত হামলা চালিয়েছিল এবং দেশটি বর্তমানে যেভাবে আক্রমণাত্মক মহাকাশ নীতি গ্রহণ করছে, তাতে আরও একটি পার্ল হারবার পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হওয়াটা অবাক করার মতো কিছু নয়।
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন জানিয়েছেন, আগামী পাঁচ বছর দেশটি ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) এ তথ্য জানায়।
২০২৫ সালের শেষ প্রান্তিকে দেশটির বড় বড় অস্ত্র কারখানা পরিদর্শনের সময় কিম জং উন বলেন, দেশের প্রতিরক্ষা শক্তি বজায় রাখতে ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদ উৎপাদন খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কেসিএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়, কিম জং উন অস্ত্র কারখানাগুলোর আধুনিকায়ন সংক্রান্ত কিছু খসড়া নথি অনুমোদন করেছেন। এসব নথি ২০২৬ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিতব্য ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ কংগ্রেসে উপস্থাপন করা হবে। ওই কংগ্রেসে উত্তর কোরিয়ার পরবর্তী পাঁচ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।
এর একদিন আগে উত্তর কোরিয়া জানায়, কিম জং উন তার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে একটি ৮ হাজার ৭০০ টন ওজনের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন নির্মাণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন।
একই সঙ্গে দেশটি দূরপাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষাও চালিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এসব পদক্ষেপ উত্তর কোরিয়ার সামরিক সক্ষমতা আরও শক্তিশালী করার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে রাষ্ট্রীয় তহবিল ওয়ানএমডিবি (বর্তমানে বিলুপ্ত) থেকে অর্থ লোপাটের আরেকটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেছেন কুয়ালালামপুর হাইকোর্ট। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) আদালতের রায়ে ৭২ বছর বয়সী এই রাজনীতিকের বিরুদ্ধে আনীত ক্ষমতার অপব্যবহারের চারটি এবং অর্থপাচারের ২১টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এই মামলায় তার বিরুদ্ধে বিলুপ্ত ওয়ানএমডিবি তহবিল থেকে অবৈধভাবে প্রায় ২.২ বিলিয়ন মালয়েশীয় রিঙ্গিত বা ৫৩৯ মিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ ও স্থানান্তরের অভিযোগ ছিল। আদালত পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নাজিব রাজাক রাষ্ট্রায়ত্ত এই সার্বভৌম তহবিল থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিজের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে সরিয়ে নিয়েছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষের দাখিলকৃত তথ্য অনুযায়ী, নাজিব রাজাক যখন প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং ওয়ানএমডিবির উপদেষ্টা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখন তিনি নিজের অবস্থানকে অবৈধভাবে ব্যবহার করেন। প্রায় এক দশক আগে সংঘটিত এই জালিয়াতির ঘটনায় দীর্ঘ সাত বছর ধরে বিচারপ্রক্রিয়া চলার পর আজ এই রায় ঘোষণা করা হলো। এর আগে ২০২০ সালে ওয়ানএমডিবির একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৯.৯ মিলিয়ন ডলার আত্মসাতের দায়ে তাকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যা পরবর্তীতে কমিয়ে ছয় বছর করা হয়। বর্তমান রায়ের ফলে তার আইনি জটিলতা আরও ঘনীভূত হলো।
নাজিব রাজাক ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তবে ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভরাডুবির পর তার এবং তার স্ত্রী রসমাহ মানসুরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থপাচারের ব্যাপক তদন্ত শুরু হয়। এক সময়ের প্রভাবশালী এই নেতার বিরুদ্ধে বর্তমানে মালয়েশিয়ার ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির বিচার কাজ চলছে। আদালতের আজকের এই রায়ের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার বিচার বিভাগ সুশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের কঠোর অবস্থানের বিষয়টি আবারও নিশ্চিত করল।
ভারত তার সমুদ্রসীমায় পারমাণবিক শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে এক বিশাল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বঙ্গোপসাগরে পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিঘাট থেকে অত্যন্ত শক্তিশালী কে-৪ ব্যালিস্টিক মিসাইলের সফল পরীক্ষা চালানো হয়েছে। ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রটি সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম, যা ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এক নতুন মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
বিশাখাপত্তনম উপকূলে ৬ হাজার টন ওজনের আইএনএস আরিঘাট থেকে এই পরীক্ষা চালানো হলেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে যে, সলিড-ফুয়েল চালিত এই কে-৪ মিসাইলটি প্রায় দুই টন ওজনের পরমাণু অস্ত্র বহন করতে পারে। ভারতের ‘নিউক্লিয়ার ট্রায়াড’ বা স্থল, আকাশ ও জলপথে পরমাণু হামলা চালানোর সক্ষমতা পূর্ণ করতে এই মিসাইলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে ভারতের কাছে আইএনএস অরিহন্ত ও আইএনএস আরিঘাট নামে দুটি পরমাণু সাবমেরিন রয়েছে। এর মধ্যে অরিহন্ত কেবল ৭৫০ কিলোমিটার পাল্লার মিসাইল বহন করতে পারলেও আরিঘাটের এই নতুন সক্ষমতা ভারতকে চীন ও রাশিয়ার মতো শক্তিধর দেশগুলোর কাতারে নিয়ে এল। ভারতের আগামী লক্ষ্য হলো ২০২৬ সালের মধ্যে আরও বড় এবং শক্তিশালী সাবমেরিন আইএনএস অরিধামন নৌবাহিনীতে যুক্ত করা।
যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার তুলনায় ভারতের এই সাবমেরিনগুলো আকারে ছোট, তবে কে-৪ মিসাইলের মোতায়েন ভারতের প্রতিরক্ষা দেয়ালকে আরও নিশ্ছিদ্র করবে। ভারতের ‘নো ফার্স্ট ইউজ’ বা আগে পরমাণু হামলা না করার নীতির ক্ষেত্রে এই সাবমেরিনগুলো সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ সমুদ্রের গভীর থেকে শত্রুর ওপর পাল্টা আঘাত হানার সক্ষমতা ভারতের পারমাণবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে বিশ্ব দরবারে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে।