পাকিস্তানে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এ নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি। সরকার গঠন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি আসনে জয় পেয়েছে ইমরান সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। দেশটিতে সরকার গঠন কারা করবে এ নিয়ে গোলকধাঁধার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে মোট আসন ৩৩৬টি। এর মধ্যে ৭০টি নারী ও সংখ্যালঘুদের সংরক্ষিত। সরাসরি নির্বাচন হয় ২৬৬টি আসনে। তবে একটি আসনে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় এবার ২৬৫টি আসনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে দলগুলোকে। ভোট গণনা প্রায় শেষের দিকে। দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিশন ইসিপি এখনো সব আসনের ফলাফল জানায়নি। এককভাবে সরকার গঠন করতে কোনো দলকে জিততে হবে ১৩৪টি আসনে। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানে নির্বাচনে কোনো দলই এই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। সব আসনের ফল প্রকাশের পর তাই বেশ কয়েকটি চিত্র সামনে আসছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বলছে, এককভাবে কোনো দলের সরকার গঠনের আর সুযোগ নেই। পাকিস্তানি বিশ্লেষক জাইঘাম খান বলেছেন, সব আসনের ফল প্রাথমিকভাবে প্রকাশের পর দুটি চিত্র সামনে আসতে পারে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাবন্দি ইমরান খানের দলের জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাদ দিয়ে বাকি দলগুলোর একটি জোট করে সরকার গঠন। এভাবে সরকার গঠন করলে বিলাওয়াল ভুট্টোর দল পিপিপি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন ছাড়াও জোটে আসবে এমকিউএম, জামাত-ই-ইসলামী ও বাকিরা।
জাইঘাম খান বলেন, দ্বিতীয় আরেকটি চিত্র আছে। তবে সেটি হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। এ ক্ষেত্রে পিপিপিকে পিটিআইয়ের সঙ্গে হাত মেলাতে হবে। কেননা এ পর্যন্ত ঘোষিত আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসনে জিতেছে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে যেভাবেই সরকার গঠন করা হোক না কেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পাকিস্তানে অচিরেই আসছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষক জাইঘাম খান।
এদিকে, পিটিআই জানিয়েছে, তারা সব স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, ভোটের ফল প্রকাশ শেষ হওয়ার আগেই দেশবাসীকে বিশেষ বার্তা দেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে কোনো ধরনের অরাজকতা ও মেরুকরণ না করার তাগিদ দেন তিনি।
ডন বলছে, প্রকাশিত ২৫৩ আসনের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন ৯২টি আসনে। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী পিএমএল-এন জিতেছে ৭১টিতে। ৫৪টি আসন পাওয়া পিপিপির সঙ্গে তারা জোটে রাজি হয়েছে বলে জানায়। এই জোট নিয়েই এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন (৭১) ও বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপি (৫৪) জোটে রাজি হলেও এখনো তারা মিলে ১৩৪টি আসনে জিততে পারেনি। মোট জিতেছে ১২৫টিতে। আরও ১২টি আসনের ফল বাকি। একটিতে ভোটগ্রহণ বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে কারাগারে থেকে ইমরান বলেছেন, তিনি জয়ী হয়েছেন। তার দলও দাবি করছে, জোট বানিয়ে সরকার গঠন করবে পিটিআই। আবার পিএমএল-এনের নেতা নওয়াজ শরিফ রীতিমতো জনসভা করে বিজয় ঘোষণা করেছেন। সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করবেন বলে জানান তিনি। তাকে সেনাবাহিনী সমর্থন দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী কোনো দল যদি এককভাবে সরকার গঠন করতে চায় তাহলে সংরক্ষিত আসন ছাড়াই অন্তত ১৩৪টি আসনে জয় পেতে হবে এবং সংরক্ষিত আসনসহ পেতে হবে ১৬৯টি।
স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, নিবন্ধিত দল হিসেবে অংশ নেওয়া নওয়াজ ও বিলওয়াল ভুট্টোর দল এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে না। তাই এরই মধ্যে জোট সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা করেছেন তারা। দুই দল যদি জোট গঠনে একমত হতে পারে তাহলে সংরক্ষিত আসনসহ সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে তারা। তবে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন পেয়েও বিপাকে ইমরান সমর্থিত জয়ী প্রার্থীরা। কারণ দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় সংরক্ষিত আসনও পাবে না তারা। ফলে তাদের পক্ষে সরকার গঠন করা প্রায় অনিশ্চিত। কারণ পিপিপি ও পাকিস্তান মুসলিম লীগের সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে তেহরিক-ইনসাফ।
প্রশ্ন উঠছে, এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীদের করণীয় কী? পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, তিন দিনের মধ্যে তারা অন্য কোনো দলে যোগ দিয়ে সরকার বা বিরোধী দল গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে।
জোট সরকার গঠন নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা হয়নি: বিলাওয়াল
পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন, পিপিপিকে ছাড়া কেন্দ্রীয় এবং পাঞ্জাব ও বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক সরকার গঠন করা যাবে না। শনিবার জিও নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বিলাওয়াল বলেন, পিপিপি প্রতিটি প্রদেশে প্রতিনিধিত্ব করছে। কে সরকার গঠন করবে, সে বিষয়ে এখনো কথা বলার সময় আসেনি।
পিপিপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা এখনো ভোটের পুরো ফল জানি না, বিজয়ী স্বতন্ত্র পার্লামেন্ট সদস্যরা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বা নিচ্ছেন, সেটাও আমরা জানি না। পিএমএল-এন, পিটিআই বা অন্যদের সঙ্গে জোট সরকার গঠনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি।’
বিলাওয়াল আরও বলেন, রাজনৈতিক হিংসা-বিদ্বেষ কেন, সেটা চিহ্নিত করা ছাড়া কোনো সরকারই জনগণের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। পিপিপির চেয়ারম্যান জানান, তিনি মনে করেন, সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে যদি ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে দেশের জন্য সেটা কল্যাণকর হবে।
বিলাওয়াল বলেন, ‘পিপিপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার নাম প্রস্তাব করেছে। এখন আমাদের যদি সেটা পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে আরেকটি বৈঠক করতে হবে এবং সেই বৈঠকে আমরা কীভাবে এগোব, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
সরকার গঠন নিয়ে যা বললেন পিটিআই চেয়ারম্যান
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যান গহর আলী খান দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি সরকার গঠনের জন্য তার দলকে আমন্ত্রণ জানাবেন। কারণ, জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়েছেন। ইসলামাবাদে গতকাল শনিবার গণমাধ্যমের উদ্দেশে গহর আলী বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই না। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যাবো এবং সরকার গঠন করব।’
পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান বলেন, জনগণ অবাধে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা ভোট গণনা করে ফরম-৪৫ পূরণ করেছেন।
ইমরান খানের দলের চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের কণ্ঠ এবং কাঙ্ক্ষিত সরকার গঠনের উদ্যোগকে দমন করা হলে অর্থনীতি তার ধাক্কা সইতে পারবে না।
পূর্ণ ফলাফল দ্রুত ঘোষণা করা উচিত উল্লেখ করে গহর বলেন, ‘পিটিআইয়ের জন্য কোনো বাধা তৈরি করা ঠিক হবে না এবং যতটা দ্রুত সম্ভব ফল ঘোষণা করা উচিত। আইন অনুযায়ী চূড়ান্ত ফল ফরম-৪৫-এ পূরণ করে প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা সব ফল পেয়েছি।’
পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনে দল-সমর্থিত বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তারা দলের প্রতি অনুগত এবং তা-ই থাকবেন। সব প্রক্রিয়া শেষে পিটিআই আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অন্তর্দলীয় নির্বাচনে যাবে। জনগণ পিটিআইকে বিশাল ম্যান্ডেট দিয়েছে। পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে করা সব মামলার অভিযোগ ভুয়া।
তিনি জানান, সংরক্ষিত আসন এবং কোন দলের সঙ্গে তাদের যোগ দেওয়া উচিত, সে বিষয়ে খুব দ্রুত তারা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন। যেসব আসনে ফলাফল এখনো স্থগিত হয়ে আছে, সেসব জায়গায় তারা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করবেন।
গহর বলেন, দলের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে, তবে সেটা হতে হবে শান্তিপূর্ণ।
সুদানে ‘গণহত্যা’র তথ্য লুকাতে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলছে দেশটির আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। দেশটির একটি চিকিৎসা সংস্থা দারফুরে গণহত্যার প্রমাণ গোপন করার জন্য মৃতদেহ পুড়িয়ে বা গণকবরে পুঁতে ফেলার ‘মরিয়া প্রচেষ্টা’করছে বলে আরএসএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। খবর আল জাজিরার।
সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, গত ২৬ অক্টোবর রক্তাক্ত হামলার পর শহর দখলের পর আধাসামরিক বাহিনী সুদানের পশ্চিম দারফুর অঞ্চলের এল-ফাশেরের রাস্তা থেকে ‘শত শত মৃতদেহ’ তুলে নিয়ে গেছে। সংস্থাটি বলছে, সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর অপরাধ গোপন বা পুড়িয়ে মুছে ফেলা যাবে না।
এল-ফাশেরে যা ঘটেছে তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং আরএসএফের একটি পূর্ণাঙ্গ গণহত্যার আরেকটি অধ্যায়। মৃতদেহ বিকৃত করা, পুড়িয়ে ফেলা বা গণকবর দেওয়া আন্তর্জাতিক ও ধর্মীয় রীতিনীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ধারণা, আরএসএফ এই অঞ্চলের শেষ সুদানি সামরিক ঘাঁটিটি দখল করার পর, এল-ফাশেরে আড়াই লাখের বেশি জনসংখ্যার মধ্যে ৮২ হাজার মানুষই পালিয়ে গেছে। সেখানে গণহত্যা, ধর্ষণ এবং নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে। অনেক বাসিন্দা এখনও আটকা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সুদানের রাজধানী খার্তুম থেকে আল জাজিরার হিবা মরগান জানিয়েছেন, আল-ফাশের থেকে উত্তরে আল দাব্বার উদ্দেশে পালিয়ে আসা অনেক লোক রাস্তায় মারা গেছে। কারণ, তাদের কাছে খাবার বা পানি ছিল না, অথবা গুলিবর্ষণের কারণে তারা আহত হয়েছিল।
মরগান বলেছেন, পালিয়ে আসা লোকজন আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, তারা আরএসএফ যোদ্ধাদের পোস্ট করা সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিও থেকে তাদের স্বজনদের মৃত্যুর কথা জানতে পেরেছেন। এই গোষ্ঠীটি শহর দখল করার পর থেকে চরম সহিংসতার বেশ কয়েকটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
জাতিগত হত্যাকাণ্ড
মরগান রিপোর্ট করেছেন, শহরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেকেই জানতেন না যে তাদের পরিবারের সদস্যদের কী হয়েছে। তারা বিশ্বাস করেন যে, যদি তাদের আত্মীয়রা এখনও এল-ফাশেরের ভেতরে বেঁচে থাকে, তাহলে তারা হয়তো বেশিদিন সেখানে থাকবে না কারণ খাবার ও পানির অভাব... অথবা আরএসএফ তাদের জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষকে লক্ষ্য করে আসছে।
আরএসএফ, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে, এর উৎপত্তি মূলত আরব, সরকার-সমর্থিত মিলিশিয়া জানজাউইদ থেকে, যাদের বিরুদ্ধে দুই দশক আগে দারফুরে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০০৩ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে জাতিগত সহিংসতার প্রচারণায় আনুমানিক তিন লাখ মানুষ নিহত হয়েছে এবং প্রায় ২৭ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের সিলভাইন পেনিকাড এল-ফাশের থেকে পালিয়ে তাওইলা শহরে আসা বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, পালিয়ে আসা অনেকেই বলেছেন যে, তাদের গায়ের রঙের কারণে হামলা চালানো হয়েছে।
পেনিকাড বলেন, আমার কাছে, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অংশ ছিল লোকজন যখন তাদের জীবন বাঁচাতে দৌঁড়াচ্ছিলেন তখন তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। কেবল কালো হওয়ার কারণে তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়। এল-ফাশেরের প্রভাবশালী জাতিগত গোষ্ঠী জাঘাওয়া ২০২৩ সালের শেষের দিক থেকে সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই করে আসছে।
এল-ফাশেরের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাসান ওসমান বলেন, কালো ত্বকের বাসিন্দারা, বিশেষ করে জাঘাওয়ার বেসামরিক নাগরিকরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ‘জাতিগত অবমাননা এবং শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, যদি আপনার ত্বক ফর্সা হয়, তাহলে তারা আপনাকে ছেড়ে দিতে পারে। এটি সম্পূর্ণরূপে জাতিগত।
সুদানের ‘অকল্পনীয় নৃশংসতা’ চলছে: জাতিসংঘ
গত মাসে সরকারি সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে সুদানের পশ্চিমে দারফুর রাজ্যের এল-ফাশের শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)।
এরপর থেকেই জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করছে—গণহত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ক্রমেই বাড়ছে। এল-ফাশেরের পতনের ১০ দিন পরও থামছে না এসব অভিযোগ। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয় হুশিয়ারি দিয়েছে, ওই অঞ্চলে 'সহিংস হামলার' সংখ্যা এখনো বাড়ছে।
অকল্পনীয় নৃশংসতা
গত শনিবার সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে সুদানে নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রতিনিধি লি ফুং এক ভিডিওতে বলেন, ‘গত ১০ দিনে এল-ফাশেরে সহিংসতার মাত্রা অনেক বেড়েছে। এটি এখন একটি দুঃখ-দুর্দশার নগরী।’
‘যেসব বেসামরিক মানুষ কোনোমতে গত ১৮ মাসের নিরবচ্ছিন্ন হামলা ও বৈরি পরিবেশের মধ্যে টিকে ছিলেন, তারা এখন অকল্পনীয় মাত্রার নৃশংসতা সহ্য করছেন’, যোগ করেন লি।
তিনি আরও বলেন, ‘নারী, শিশু ও আহতসহ হাজারো মানুষ নিহত হয়েছেন। তারা হাসপাতাল ও স্কুলে আশ্রয় নিয়েও প্রাণে বাঁচতে পারেননি। হামলা থেকে পালাতে গিয়ে অনেক পরিবারের সব সদস্য নিহত হয়েছেন। অনেক মানুষের কোনো চিহ্নই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
এমন সময় এই হুশিয়ারি এলো, যখন ত্রাণসংস্থাগুলো বলছে রাজ্যের রাজধানী আল-ফাশের ছেড়ে তাউইলা শহরে পালিয়ে আসা হাজারো মানুষ চরম বৈরি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বেঁচে আছেন।
সুদানস আইডিপি অ্যান্ড রিফিউজি ক্যাম্প নামের মানবাধিকার সংস্থার মুখপাত্র আদম রোজাল বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, এল-ফাশের থেকে পালিয়ে ১৬ হাজারেরও বেশি মানুষ তাউইলায় এসেছেন।
তাদের অনেকের খাবার, ওষুধ, তাঁবু, কম্বল ও মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা প্রয়োজন। ত্রাণসংস্থাটির প্রকাশ করা ভিডিওতে দেখা যায়, অনেক বাস্তুচ্যুত মানুষ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। কিছু পরিবার ছেঁড়া কাপড়, বিছানার চাদর ও অন্যায় উপকরণ জোড়াতালি দিয়ে তাঁবু বানিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু সেগুলোর অবস্থাও খুবই জীর্ণ।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের জন্য গত শনিবার
যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। এটি ১৯৪৬ সালে সিরিয়ার স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো কোনো প্রেসিডেন্টের যুক্তরাষ্ট্র সফর।
ওয়াশিংটনের ‘সন্ত্রাসবাদের কালো তালিকা’ শারার নাম বাদ দেওয়ার একদিন পর এই সফরটি হলো। ১০ নভেম্বর হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে তার দেখা হবে।
স্কাই নিউজ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সিরিয়ার নেতা শীর্ষ মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাস্কেটবল খেলেছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে ‘ঐতিহাসিক’ বৈঠকের আগে সিরিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল শাইবানি বাস্কেটবল খেলার ভিডিও ক্লিপটি অনলাইনে শেয়ার করেন।
গত বছর শারার নেতৃত্বে বিদ্রোহী যোদ্ধারা দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শারার সরকারের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে থাকে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র টমি পিগট বলেছেন, আল-শারা সরকার যুক্তরাষ্ট্রের দাবি পূরণ করছে। এর মধ্যে নিখোঁজ আমেরিকানদের খুঁজে বের করার জন্য কাজ করা এবং অবশিষ্ট রাসায়নিক অস্ত্র নির্মূল করা অন্তর্ভুক্ত।
পিগট বলেন, ‘বাশার আল-আসাদের বিদায়ের পর এবং আসাদ সরকারের অধীনে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দমন-পীড়নের পর সিরিয়ার নেতৃত্বের অগ্রগতির স্বীকৃতিস্বরূপ এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত এক প্রোগ্রামের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চোখ বন্ধ অবস্থার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তুলেছে। অনেকে দাবি করছেন, ট্রাম্প হয়তো অনুষ্ঠানের মাঝেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।
ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার, জনপ্রিয় ওজন কমানোর ওষুধের দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়ার অনুষ্ঠানে।
ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, ট্রাম্প কয়েক মুহূর্তের জন্য চোখ বন্ধ করে আছেন, কখনো আবার চোখ খোলা রাখতে কষ্ট পাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। মাঝে মাঝে তিনি চোখও ঘষছিলেন।
এই দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ট্রাম্পবিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে নানা মন্তব্য করেন। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসোমের প্রেস অফিস তাদের এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্টে ছবি পোস্ট করে লিখেছে, ডজি ডন ইজ ব্যাক (ঘুমন্ত ডন ফিরে এসেছে)।
তবে হোয়াইট হাউস এ দাবিকে ‘পুরোপুরি ভিত্তিহীন’ বলে নাকচ করেছে। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র টেলর রজার্স বলেন, প্রেসিডেন্ট ঘুমাচ্ছিলেন না। তিনি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন এবং সাংবাদিকদের বহু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। এই ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও স্থূলতায় ভোগা লাখো মানুষের ওষুধের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাবে।
রজার্স আরও বলেন, এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের বদলে ব্যর্থ উদারপন্থি গণমাধ্যম আবারও মিথ্যা গল্প ছড়াচ্ছে।
ট্রাম্প নিয়মিত জনসমক্ষে হাজির হন এবং প্রায়ই সাংবাদিকদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেন। তার সহযোগীরা বলেন, তিনি রাতদিন কাজ করেন এবং বিভিন্ন সময়ে ফোনকল বা বার্তা পাঠান।
ঘটনার একদিন আগে ট্রাম্প মায়ামিতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অর্থনৈতিক বক্তৃতা দেন এবং মাসের শেষে তিনি এশিয়া সফর শেষে তিনটি দেশ ঘুরে আসেন।
তবুও ট্রাম্পের স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন বারবার উঠছে। ৭৯ বছর বয়সি এই প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি ওয়াল্টার রিড মেডিকেল সেন্টারে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় একটি এমআরআই করিয়েছেন, যদিও কেন তা করেছেন, তা প্রকাশ করা হয়নি।
গ্রীষ্মে হোয়াইট হাউস জানিয়েছিল, চিকিৎসকরা ট্রাম্পের পায়ে ফোলাভাব পরীক্ষা করে দেখেন এবং তার ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিশিয়েন্সি ধরা পড়ে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ক্লান্তির মুহূর্ত সব প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। তুলনামূলকভাবে তরুণ বারাক ওবামাকেও কখনো দীর্ঘ বৈঠকে চোখ ঘষতে দেখা গিয়েছিল।
বিদ্রূপের বিষয় হলো, ট্রাম্প নিজেই ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনকে স্লিপি জো বলে ব্যঙ্গ করেছিলেন।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে হামলা চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। যার ফলে উপত্যকাটিতে বেড়ে চলেছে মৃতের সংখ্যা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলা ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯ হাজার ১৬৯ জনে পৌঁছেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। খবর আল জাজিরার।
মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, গত মাসে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২৪০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শনিবার ইসরায়েলি হামলায় আরও দুই ফিলিস্তিনির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরের পরও নানা অজুহাতে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। গাজার উত্তর সীমান্তে ‘ইয়েলো লাইন’ অতিক্রম করার অভিযোগ তুলে হত্যা করেছে আরও কয়েকজনকে।
স্থানীয়দের দাবি, যুদ্ধবিরতির পর নির্ধারিত এই ‘ইয়েলো লাইন’ আসলে অদৃশ্য এক সীমা, যা কোথায় রয়েছে কেউ জানে না। এতে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। হামলা চলছে অন্যান্য এলাকাতেও। নেতানিয়াহু বাহিনীর পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরিত হয়ে প্রাণ গেছে শিশুরও।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েল প্রায় দুই লাখ টন বোমা ফেলেছে গাজায়, যার মধ্যে ৭০ হাজার টন এখনো নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে।
গাজার শেখ রাদওয়ান এলাকায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ দূষিত পানির সংকট। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার পুকুরে জমে আছে ময়লা-আবর্জনা। ইসরায়েলি হামলায় পাম্প স্টেশন ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় ওই পানি ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের বসতি ও আশ্রয়শিবিরে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, পানির স্তর ৬ মিটার পর্যন্ত বেড়ে গেছে, যা দুর্গন্ধ, মশা ও সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার ভূগর্ভস্থ পানির বেশিরভাগ অংশই এখন মারাত্মকভাবে দূষিত।
এদিকে, পশ্চিম তীরেও বাড়ছে সহিংসতা। জেনিনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের রাবা গ্রামে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘরে হামলা চালায় ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা। তাদের সহায়তা করছে সেনারা। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর থেকে পশ্চিম তীরে ৭০টি গ্রামে ১২৬টি সহিংস হামলা হয়েছে। পুড়ে গেছে চার হাজারেরও বেশি জলপাই গাছ।
গাজার মাটি-পানিও বিষাক্ত হয়ে গেছে, সংকটে ফিলিস্তিনিরা
ইসরায়েলের হামলায় গাজায় পুরো এলাকা ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবারগুলো বহুবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো তছনছ হয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রভাব দেখা দিয়েছে মাটির ও পানির উপর, যা স্থানীয়দের জীবনধারার প্রধান উৎস।
চার সপ্তাহের এক ভঙ্গুর স্থগিত যুদ্ধের পর পরিবেশগত ক্ষতির চিত্র ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যদিও ইসরায়েল প্রতিদিন এই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে।
গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান এলাকায় আগে যেখানে এক জীবনোজ্জ্বল সম্প্রদায় বসবাস করত, আজ সেখানে ধ্বংসস্তূপ আর দূষিত জল ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। একসময় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য তৈরি পুকুরটি এখন ময়লা ও ফ্লুয়ের পানিতে ভরা। বহু পরিবার এই পুকুরকে বাড়ি হিসেবে ব্যবহার করলেও এটি জীবন বিপন্ন করছে।
প্রসূত মহিলা উম্ম হিশাম তার সন্তানদের সঙ্গে দূষিত পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। তিনি জানান, ‘আমরা শেখ রাদওয়ান পুকুরের আশেপাশে আশ্রয় নিয়েছি। মশা, দূষিত পানি, চারপাশের ধ্বংস—সবই আমাদের জীবন ও সন্তানদের জীবনের জন্য বিপজ্জনক।’
পুকুরটি মূলত বৃষ্টির পানি সংগ্রহ এবং সাগরে ছাড়ার জন্য তৈরি হয়েছিল। তবে ইসরায়েলের বিমান হামলায় পাম্পগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় এখন সেখানে কাঁচা ময়লা ও ময়লা পানি জমছে। বিদ্যুৎ ও নিকাশি ব্যবস্থাও ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ায় পানির স্তর ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে এবং আশেপাশের ঘর ও টেন্ট ডুবতে পারে।
গাজা সিটি মিউনিসিপ্যাল কর্মকর্তা মাহের সালেম জানান, ‘দূষিত পানি ছড়িয়ে দিচ্ছে দুর্গন্ধ, পোকামাকড় ও মশা। পানি ৬ মিটার পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, বেড়া ধ্বংসপ্রাপ্ত। কোনো শিশু, নারী বা বৃদ্ধও পুকুরে পড়ে যেতে পারে।’
স্থানীয় কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, স্থির জল সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে। তবু অনেকের কাছে বিকল্প নেই। আল জাজিরার হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, ‘পরিবারগুলো জানে যে কূপ, জলবাহী ট্রাক বা পাত্রের পানি দূষিত, কিন্তু অন্য কোনো বিকল্প নেই।’
পানির অব্যবস্থাপনা ও ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামোতে আরও একটি উদ্বেগজনক বিষয় যোগ হয়েছে। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত COP30 জলবায়ু সম্মেলনে প্যালেস্টাইন দূত ইব্রাহিম আল-জেবেন বলেন, ‘গাজায় পরিবেশগত দুর্যোগ চলছে, যা ইসরায়েলের গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত। প্রায় ২.৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ ৬১ মিলিয়ন টনের বেশি, যার অনেক অংশে হুমকিস্বরূপ বর্জ্য রয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ‘স্যানিটেশন ও পানির নেটওয়ার্ক ধ্বংস হওয়ায় ভূ-জল ও উপকূলীয় পানি দূষিত হয়েছে। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকি বেড়ে গেছে।’ ইসরায়েলের হামলায় গাজার কৃষিজমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা সেখানে খাদ্য নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।
একই সময়, জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় মিঠাপানি সরবরাহ সীমিত এবং বাকি অনেকটাই দূষিত’। স্যানিটেশন অবকাঠামোর ধ্বংস ও পাইপের ব্যবস্থার ক্ষতিসাধন ভূ-গভীর পানি দূষণে প্রভাব ফেলেছে।
এদিকে, শেখ রাদওয়ানে ফিরে দেখা যায়, বাতাসে ঘোর বিষাদ ও দুর্গন্ধ ভাসছে। আল জাজিরার মাহমুদ বলেন, ‘প্রতিদিন পানি, খাবার ও রুটি খুঁজে বের করার জন্য লড়াই করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা দ্বিতীয় পর্যায়ে চলে আসে।’
ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে আটক শিশুসহ তিন বাংলাদেশিকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
রবিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা ও ভারতের ফুলবাড়ি সীমান্তের জিরো লাইনে উভয় দেশের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকে এ হস্তান্তর সম্পন্ন হয়।
ফেরত আসা তিনজন হলেন- সিরাজগঞ্জের কালীদাসঘাটি গ্রামের মৃত বীরেন্দ্র কুমার ভৌমিকের ছেলে অনন্ত কুমার ভৌমিক (২৮), তার স্ত্রী চৈতি রানী (২৩) ও ছেলে অরন্য কুমার ভৌমিক (৩)।
বিজিবি জানায়, গত ৮ নভেম্বর বিএসএফ তাদের আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেন, এক বছর আগে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। পরে বিএসএফ ফুলবাড়ী কোম্পানি কমান্ডার মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বাংলাবান্ধা বিজিবি কোম্পানি কমান্ডারকে বিষয়টি জানায়। পরিচয় যাচাই শেষে বিজিবি তাদের বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে নিশ্চিত করে।
বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনজনকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পঞ্চগড়-১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনিরুল ইসলাম বলেন, বিএসএফের অনুরোধে তাদের পরিচয় যাচাই করে গ্রহণ করা হয়েছে। পরে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় জিডির মাধ্যমে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ওসি মুসা মিয়া জানান, বিজিবি আটক তিনজনকে থানায় হস্তান্তর করে। পরিচয় যাচাই শেষে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি উপেক্ষা করে লেবাননে ফের হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দক্ষিণ লেবাননে চালানো সর্বশেষ এই হামলায় অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন।
২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইসরায়েলের এই হামলা নতুন করে ক্ষোভ বাড়িয়েছে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
রোববার এক বিবৃতিতে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বিনত জবাইল অঞ্চলের আল-সাওয়ানে ও খিরবেত সেলেম এলাকার মাঝামাঝি স্থানে এক হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এনএনএ জানায়, ওই এলাকায় একটি পিকআপ ট্রাক লক্ষ্য করে ইসরায়েলি ড্রোন তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
এছাড়া নাবাতিয়ের ইকলিম আল-তুফাহ অঞ্চলে হুমাইন আল-ফাওকা–হামিলা সড়কে এক গাড়িতে হামলায় আরেক ব্যক্তি নিহত হন বলে জানিয়েছে একই সংস্থা।
এনএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি ড্রোন টায়ার জেলা ও আশপাশের অঞ্চল, নাবাতিয়ে প্রদেশ, ইকলিম আল-তুফাহ এবং বিনত জবাইল এলাকায় খুব নিচু দিয়ে উড্ডয়ন করছে এবং টহল দিচ্ছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
মূলত গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দক্ষিণ লেবাননে উত্তেজনা ক্রমেই তীব্র আকার ধারণ করছে, ইসরায়েলি সেনারা প্রায় প্রতিদিনই লেবাননের ভেতরে বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া ইসরায়েলের এই অভিযান ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পূর্ণাঙ্গ সামরিক হামলায় রূপ নেয়। এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ১৭ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
জাপানের ইওয়াতের উপকূলীয় এলাকার কাছাকাছি স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পের পর প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তরে জাপানের উপকূলীয় এলাকায় হালকা মাত্রার সুনামি আঘাত হেনেছে। জাপানের স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যার দিকে ভূমিকম্পের পর ওই সুনামি আঘাত হেনেছে। খবর এনএইচকে ও ইউরো নিউজের।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ) বলেছে, জাপানের ইওয়াতে প্রদেশের মিয়াকোতে স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ৩৭ মিনিটে প্রথম সুনামি আঘাত হেনেছে।
তবে সুনামির ঢেউ অনেক ছোট হওয়ায় এর উচ্চতা পরিমাপ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
জেএমএ বলেছে, প্রথম সুনামি আঘাত হানার দুই মিনিট পর দেশটির ওফুনাতো উপকূলে ১০ সেন্টিমিটার উচ্চতার ঢেউ আঘাত হানে।
ইওয়াতে উপকূলের কাছাকাছি এলাকায় রোববার বিকেল ৫টা ৩ মিনিটের দিকে ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের পরপরই ১ মিটার উচ্চতার সুনামি আঘাত হানতে পারে বলে সতর্কতা জারি করে জেএমএ।
তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জাপানের ইওয়াতে উপকূলে আঘাত হানা ভূমিকম্পের মাত্রা ৬ দশমিক ৮ ছিল বলে জানিয়েছে।
জেএমএ বলেছে, ইওয়াতে উপকূলে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। যে যেকোনো মুহূর্তে ঢেউ উপকূলে পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাষ দিয়েছে সংস্থাটি।
জেএমএ বলেছে, প্রথম ভূমিকম্প আঘাত হানার পর ৫ দশমিক ৩ থেকে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার কয়েকটি পরাঘাত (আফটারশক) অনুভূত হয়েছে। জাপানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের সরাসরি সম্প্রচারে সমুদ্রের শান্ত দৃশ্য দেখা গেছে।
একই অঞ্চলের উপকূলের কাছাকাছি এলাকায় রোববার সকালের দিকেও অন্তত ছয়টি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এসব ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৮ থেকে ৫ দশমিক ৮ এর মধ্যে। তবে ভূমিকম্প স্থলে খুব একটা অনুভূত হয়নি এবং সুনামি সতর্কতাও জারি করা হয়নি।
২০১১ সালে জাপানের ওই অঞ্চল সমুদ্রতলের ৯ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামির শিকার হয়েছিল। সেই সময় দেশটিতে প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত কিংবা নিখোঁজ হয়।
সুনামিতে ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি রিঅ্যাক্টরে গলে যায়। জাপানের যুদ্ধ-পরবর্তী সবচেয়ে বড় দুর্যোগ এবং চেরনোবিলের পর বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনা ডেকে আনে ওই সুনামি।
জাপান প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে চারটি প্রধান ভূ-তাত্ত্বিক ফলকের সংযোগস্থলে অবস্থিত। বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশও জাপান।
প্রায় ১২ কোটি ৫০ লাখ মানুষের এই দ্বীপদেশে প্রতিবছর অন্তত দেড় হাজার ভূমিকম্প হয়। এর বেশিরভাগই হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার হয়ে থাকে। যদিও ক্ষতির পরিমাণ নির্ভর করে ভূমিকম্পের অবস্থান ও ভূগর্ভের গভীরতার ওপর।
ইসরায়েল গাজা উপত্যকা ও দক্ষিণ লেবাননে নতুন করে হামলা চালিয়েছে। এতে আরও বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র।
দক্ষিণ লেবাননের টুরা গ্রামে ইসরায়েলি বিমান হামলায় বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে লেবাননের সেনা ও স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হামলা যুদ্ধবিরতির বড় ধরনের লঙ্ঘন এবং নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
গাজায় প্রতিদিন মাত্র ১০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করছে, যা যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার মানুষের জন্য একেবারেই অপ্রতুল বলে জানিয়েছে একাধিক মানবিক সংস্থা। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েল কার্যত এনজিওগুলোর ত্রাণ বিতরণে বাধা দিচ্ছে।
এদিকে আলজাজিরা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে একটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করেছে। এতে ‘বোর্ড অব পিস’ গঠন ও গাজায় আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব রয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৮ হাজার ৮৭৫ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত ও প্রায় ২০০ জনকে আটক করা হয়েছিল। যুদ্ধবিরতির পর থেকে হামাস ২০ জন ইসরায়েলিকে জীবিত মুক্তি দিয়েছে এবং আরও ২২ জনের মরদেহ হস্তান্তর করেছে।
গাজায় সাহায্যপণ্য সরবরাহে ইসরায়েলের বিধিনিষেধ
ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজা এখন ক্ষুধায় জর্জরিত। সম্প্রতি খাদ্যপণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে কিছুটা উন্নতি হলেও ইসরায়েলি বিধিনিষেধের কারণে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জাতিসংঘ বলেছে, সেখানে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য সরবরাহ পৌঁছাতে হবে কেননা এখন যে হারে সরবরাহ হচ্ছে তা প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রতুল। খবর আলজাজিরার।
গত শুক্রবার জাতিসংঘের মুখপাত্র ফারহান হক সাংবাদিকদের বলেন, জাতিসংঘ ও তার সহযোগী সংস্থাগুলো ১০ অক্টোবরের পর থেকে ৩৭ হাজার মেট্রিক টন সাহায্যপণ্য সংগ্রহ করেছে যার মধ্যে বেশিরভাগই খাদ্যপণ্য। তবে এই পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে কম এবং জরুরি ভিত্তিতে আরও পণ্য সরবরাহ করা প্রয়োজন।
জাতিসংঘের মানবিক সেবা সংস্থা ওসিএইচএর প্রতিবেদন তুলে ধরে ফারহান হক বলেন, ‘মানবিক সাহায্য সরবরাহে কিছুটা উন্নতি হলেও যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরায়েলি বিধিনিষেধগুলো থেকে যাওয়ায় জনগণের বিশাল চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।’
ইসরায়েলের সমালোচনা করে ফারহান হক জানান, আল-কারারা (কিসুফিম) এবং কারেম আবু সালেম (কেরেম সালোম) ক্রসিং দিয়ে এখনো সীমিত আকারে মানবিক সাহায্যপণ্য প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।
ইসরায়েল থেকে উত্তর গাজায় অথবা মিশর থেকে দক্ষিণ গাজায় সরাসরি প্রবেশে কোনো পথ এখন খোলা নেই এবং বেসরকারি সাহায্য সংস্থাগুলোকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হচ্ছে না।
এ সপ্তাহের শুরুতে জাতিসংঘ জানিয়েছিল, হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর তারা গাজায় ১০ লাখ মানুষের জন্য খাবারের পার্সেল বিতরণ করেছে। তবে সেখানকার সব মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য সাহায্যের এই পরিমাণ নিতান্তই কম।
জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি গাজায় প্রবেশের জন্য সব সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেছে, ভূখণ্ডটির উত্তরের ক্রসিং কেন বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল তার কোনো কারণ জানা যায়নি।
ইসরায়েলি বিধিনিষেধের কারণে গাজার ফিলিস্তিনি নাগরিকরা এখনো খাবার, পানি, ওষুধ ও অন্যান্য জরুরি পণ্যের সঙ্কটে ভুগছে। বেশিরভাগ মানুষেরই থাকার মতো কোনো ঘর নেই। গত দুই বছর ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর ক্রমাগত বোমাবর্ষণে গাজার বসতভিটাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
দোয়া-মোনাজাত ও তাকবির ধ্বনিতে মুখর ফিলিস্তিনের মসজিদগুলো
যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর ধ্বংসস্তূপ ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদে দাঁড়িয়ে চতুর্থ জুমার নামাজ আদায় করেছেন ফিলিস্তিনিরা।
৯ অক্টোবর যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার পর এ নিয়ে চতুর্থ জুমা পালিত হলো। মধ্য গাজার নুসাইরাত, দেইর আল-বালাহ, উত্তর গাজার শহরাঞ্চল এবং দক্ষিণের খান ইউনুস থেকে আল-জাজিরা মুবাশিরের ক্যামেরা গাজার জুমা আদায়ের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করেছে। প্রত্যেক মসজিদেই মুসল্লিরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং দোয়ায় আবেগভরে চোখের পানি ফেলেছেন।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল এখন পর্যন্ত ৮৩৫টি মসজিদ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে। আরও ১৮০টির বেশি মসজিদ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ইসরায়েলি বোমা হামলা থেকে গাজার কোনো এলাকা, এমনকি মসজিদ ও উপাসনালয়ও রক্ষা পায়নি।
দুই বছরব্যাপী চালানো হত্যাযজ্ঞে ধ্বংসস্তুপে পরিণত গাজা এখনো শোকার্ত, তবে শুক্রবারের জুমায় সেই ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়েই তাকবির ধ্বনিতে নতুন আশা দেখছেন গাজাবাসী।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করল তুরস্ক
গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সরকারের ঊর্ধ্বতনদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কথা জানিয়েছে তুরস্ক।
যে ৩৭ সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে এ পরোয়ানা জারি হয়েছে তাদের মধ্যে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ, জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির, সেনাপ্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল ইআয়াল জামিরও আছে। ইস্তাম্বুলের কৌঁসুলির কার্যালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে আল-জাজিরা।
তবে পরোয়ানাভুক্ত সবার নাম প্রকাশ করেনি তারা। তুরস্ক এ ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘পরিকল্পিত ও ধারাবাহিকভাবে’ গাজায় ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ’ চালানোর অভিযোগ এনেছে।
মার্চে গাজা ভূখণ্ডে ‘তুর্কি-ফিলিস্তিনি মৈত্রী হাসপাতালে’ বোমাবর্ষণসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানি, চিকিৎসা সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতি, অবরোধ ও গাজাবাসীর জন্য মানবিক সহায়তা আটকে দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ডকে অভিযগের পক্ষে যুক্তি হিসেবে হাজির করেছে আঙ্কারা।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) যে মামলা করেছে তুরস্ক গত বছর তাতেও শামিল হয়েছে।
মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে ৯০ জন অবৈধ অভিবাসী বহনকারী একটি নৌকা ডুবে গেছে। সমুদ্রে ভাসতে থাকা এক রোহিঙ্গা নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া আরো ছয়জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। শনিবার রাতে নৌকা ডুবির এ ঘটনা ঘটে। খবর ফ্রি মালয়েশিয়া টুডের।
কেদাহ পুলিশ প্রধান আবু শাহ জানিয়েছে, অভিবাসীরা প্রায় ৩০০ জনের একটি বড় দলের অংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিন দিন আগে যখন তারা মালয়েশিয়ার জলসীমার কাছে আসছিল, তখন সিন্ডিকেট তাদের তিনটি ছোট নৌকায় ভাগ করে দেয়, প্রতিটি নৌকায় প্রায় ৯০ জন করে ছিলেন।
তিনি জানান, ‘৯০ জন যাত্রী বহনকারী একটি নৌকা ডুবে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্য দুটি নৌকা এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
তিনি আরো বলেন, উদ্ধারকৃত ছয়জন মিয়ানমারের নাগরিক, যাদের মধ্যে রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশিরাও রয়েছেন।
আবু শাহ জানান, ‘নৌকা ডুবির শিকার অন্যদের এবং বাকী দুটি নৌকা খুঁজে বের করার জন্য মালয়েশিয়ান মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি এবং মেরিন পুলিশের সহায়তায় অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চলছে।’
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার এক মাস পরও ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আরও মৃতদেহ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েই চলেছে নিহতের সংখ্যা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে পশ্চিম তীরজুড়ে বসতি স্থাপনকারীদের হামলা আরও তীব্র আকার নিয়েছে। রোববার (৯ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ১৬৯ জনে। নতুনভাবে উদ্ধার ও শনাক্ত হওয়া লাশের কারণে এই সংখ্যা বেড়েছে।
মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, গত মাসে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এদিকে শনিবারও নতুন করে হত্যার খবর এসেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, উত্তর গাজায় তাদের অবস্থানরত সেনাদের দিকে অগ্রসর হওয়া এক ফিলিস্তিনিকে তারা গুলি করে হত্যা করেছে। ওই ব্যক্তি ‘ইয়েলো লাইন’ নামে পরিচিত সীমারেখা অতিক্রম করেছিলেন।
এই ‘ইয়েলো লাইন’ হলো যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েলি বাহিনী যে সীমারেখা পর্যন্ত পিছু হটার কথা, সেই এলাকা। ইসরায়েলি সেনারা জানায়, দক্ষিণ গাজাতেও একইভাবে সীমারেখা অতিক্রম করা আরেক ফিলিস্তিনিকে তারা হত্যা করেছে। তিনি নাকি সৈন্যদের জন্য “তাৎক্ষণিক হুমকি” সৃষ্টি করেছিলেন।
এমনকি ওই সীমারেখার কাছে আসা পরিবারগুলোর ওপরও ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে খান ইউনিসে ইসরায়েলি বাহিনীর ফেলে যাওয়া বিস্ফোরকের কারণে এক ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে নাসের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এমন অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন এমন ব্যক্তিদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য গাজা ও মিসরের মধ্যে রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং পুনরায় খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ফিলিস্তিনি রোগী রাফাহ সীমান্ত দিয়ে মিসর ও অন্য দেশে চিকিৎসার জন্য গেছেন। তবে আরও ১৬ হাজার ৫০০ জন বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
অন্যদিকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা অভিযান ও বসতি স্থাপনকারীদের হামলা বেড়েছে। এসব হামলা ফিলিস্তিনিদের নিজেদের জমি থেকে উচ্ছেদ করার পরিকল্পনার অংশ বলেও অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার দক্ষিণ নাবলুসের বেইতা শহরে জলপাই সংগ্রহে ব্যস্ত ফিলিস্তিনি গ্রামবাসী, কর্মী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা।
ইসরায়েলি মানবাধিকারকর্মী জোনাথন পোলাক আল জাজিরাকে বলেন, মুখোশধারী ডজনখানেক বসতি স্থাপনকারী লাঠি ও বড় পাথর নিয়ে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা পাহাড় থেকে নেমে আমাদের দিকে বিশাল পাথর ছুড়তে শুরু করে, আমাদের পালাতে হয়।
এই হামলায় অন্তত ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছেন এবং তাদের অনেককে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজন সাংবাদিক এবং এক ৭০ বছর বয়সী কর্মী রয়েছেন বলেও জানা গেছে।
প্যালেস্টাইন জার্নালিস্টস সিন্ডিকেট জানিয়েছে, হামলায় তাদের পাঁচ সাংবাদিক — রানিন সাওয়াফতে, মোহাম্মদ আল-আত্রাশ, লুয়াই সাঈদ, নাসের ইশতাইয়েহ ও নাঈল বুয়াইতেল — আহত হয়েছেন। তারা এ ঘটনাকে “সাংবাদিক হত্যার উদ্দেশ্যে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ” বলে নিন্দা জানায়।
রয়টার্সও নিশ্চিত করেছে, তাদের দুই কর্মী — এক সাংবাদিক ও তার নিরাপত্তা পরামর্শক — হামলায় আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর থেকে অন্তত ৭০টি শহর ও গ্রামে ১২৬টি হামলা চালানো হয়েছে। এসব হামলায় ৪ হাজারেরও বেশি জলপাই গাছ ধ্বংস বা উপড়ে ফেলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪ কোটি ২০ লাখ দরিদ্র আমেরিকান অর্থাৎ প্রতি আটজনে একজন স্ন্যাপ (সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম) কর্মসূচির সুবিধাভোগী। প্রতি মাসে এই কর্মসূচিতে সরকারের ব্যয় প্রায় ৯০০ কোটি ডলার।
দেশটিতে চলমান শাটডাউনের কারণে সরকারের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। এ কারণে বর্তমানে এ খাতে বরাদ্দ দিতে পারছে না ট্রাম্প প্রশাসন। তাই তারা এটি বন্ধ রাখতে চেয়েছিল, তবে সম্প্রতি দেশটির নিম্ন আদালত রায় দিয়েছিল যে স্ন্যাপ বা ‘ফুড স্ট্যাম্প’ কর্মসূচি চালু রাখতে হবে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট জরুরি আদেশে আবার ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে রায় দিলেন। আদালত বলেছে, নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থ প্রশাসন অস্থায়ীভাবে আটকে রাখতে পারবে।
সুপ্রিম কোর্টের শুক্রবারের আদেশ অনুযায়ী, ৪০০ কোটি ডলার (প্রায় ৩.০৪ বিলিয়ন পাউন্ড) আপাতত আটকে রাখা যাবে, পরবর্তী আইনি শুনানি না হওয়া পর্যন্ত।
রোড আইল্যান্ডের এক বিচারক, জন ম্যাককনেল, বৃহস্পতিবার ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন, তারা রাজনৈতিক কারণে খাদ্য সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি সতর্ক করে দেন, সহায়তা না পেলে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ শিশু তাৎক্ষণিকভাবে অনাহারের ঝুঁকিতে পড়বে।
তিনি প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করতে। এর আগে আরেকটি আদালত অন্তত আংশিক অর্থ ছাড়ের নির্দেশ দিয়েছিল।
এই জটিল আইনি লড়াই শুরু হয় যখন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) ঘোষণা দেয় যে, সরকারি অর্থের অভাবে নভেম্বরে ফুড স্ট্যাম্প সুবিধা স্থগিত করা হবে।
সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপের আগে ইউএসডিএ জানায়, তারা বিভিন্ন আদালতের নির্দেশনা মেনে পূর্ণ অর্থ প্রদানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
শুক্রবার রাতে বিচারপতি কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসন ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্টে’ জারি করে নিম্ন আদালতের রায় দুই দিনের জন্য স্থগিত করেন, যাতে সরকার আপিলের সুযোগ পায়।
খাদ্য সহায়তার অর্থায়ন নিয়ে এ বিরোধ মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সরকার বন্ধের সময়ের অন্যতম তীব্র রাজনৈতিক সংকটে পরিণত হয়েছে।
সরকারি কর্মীরা এক মাসের বেশি সময় ধরে বেতনহীন, বিমান চলাচলে বিশৃঙ্খলা, আর ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দল এখনো সরকারি বাজেট নিয়ে একমত হতে পারেনি।
কিছু অঙ্গরাজ্য নিজস্ব তহবিল থেকে সহায়তা চালিয়ে গেলেও অনেকে জানাচ্ছে, ফেডারেল সরকার অর্থ না দিলে তারা আর সহায়তা দিতে পারবে না।
এক মাসে লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন ৯২৮ জন বাংলাদেশি। তিন দফায় এসব বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখনো সেখান থেকে অনেক বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দূতাবাস।
লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে তিন দফায় ৯২৮ বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। গত ৯ অক্টোবর প্রথম ফ্লাইটে ৩০৯ জন, ২৩ অক্টোবর দ্বিতীয় ফ্লাইটে ৩০৯ জন, ও ৩০ অক্টোবর তৃতীয় ফ্লাইটে ৩১০ জন বাংলাদেশিকে লিবিয়া সরকারের সহযোগিতায় দেশে ফেরত আনা হয়।
বর্তমানে লিবিয়ার ত্রিপলির তাজুইরা ও বেনগাজীর গানফুদা ডিটেনশন সেন্টারে অনেক বাংলাদেশি আটক রয়েছেন। এসব বাংলাদেশিদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য দূতাবাস কাজ করছে।
লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার জানিয়েছেন, লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা, অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় বাংলাদেশ দূতাবাস নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিপদগ্রস্ত ও অনিয়মিত অবস্থায় থাকা অভিবাসীদের মধ্য থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুকদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে দূতাবাস সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও সহানুভূতির সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
দূতাবাসের সক্রিয় উদ্যোগের ফলে এই অভিবাসীদের জেল-জরিমানা মওকুফ করে নিরাপদে দেশে পাঠানো সম্ভব হয়েছে।
চলতি মাসে মালদ্বীপ এক যুগান্তকারী তামাকবিরোধী আইন কার্যকর করেছে। যার মাধ্যমে দেশটিতে ২০০৬ সালের পর জন্ম নেওয়া যে কারো জন্য ধূমপান সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো দ্বীপরাষ্ট্রটিকে ধীরে ধীরে একটি ‘তামাকমুক্ত প্রজন্ম’-এর দিকে নিয়ে যাওয়া।
নতুন আইনের অনুযায়ী, ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা এর পর জন্মগ্রহণকারী কোনো ব্যক্তি মালদ্বীপে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার, ক্রয় বা বিক্রয় করতে পারবে না। এই নিয়ম কেবল মালদ্বীপের নাগরিকদের জন্যই নয় বরং বিদেশি পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। পুরো দেশে যাতে একইভাবে আইনটি কার্যকর থাকে এ বিষয়ে কঠোর পর্যবেক্ষণ করবে দেশটির প্রশাসন।
আইন অনুযায়ী, তামাক বিক্রির আগে বিক্রেতাদের ক্রেতার বয়স ও জন্মতারিখ যাচাই করতে হবে। নিয়ম ভঙ্গ করলেই বিক্রেতাদের জরিমানা ও শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
সরকার জানিয়েছে, ২০০৬ সালের পর জন্ম নেওয়া কেউ কখনো আইনত তামাকজাত দ্রব্য পাবে না। এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে।
এই নতুন আইনের অংশ হিসেবে সরকার ই-সিগারেট ও ভেপিং ডিভাইসের ওপরও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তরুণদের মধ্যে এসব ডিভাইসের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার রোধ ও নিকোটিন আসক্তি কমানোই এ পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য।