পাকিস্তানে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এ নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি। সরকার গঠন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি আসনে জয় পেয়েছে ইমরান সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। দেশটিতে সরকার গঠন কারা করবে এ নিয়ে গোলকধাঁধার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে মোট আসন ৩৩৬টি। এর মধ্যে ৭০টি নারী ও সংখ্যালঘুদের সংরক্ষিত। সরাসরি নির্বাচন হয় ২৬৬টি আসনে। তবে একটি আসনে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় এবার ২৬৫টি আসনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে দলগুলোকে। ভোট গণনা প্রায় শেষের দিকে। দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিশন ইসিপি এখনো সব আসনের ফলাফল জানায়নি। এককভাবে সরকার গঠন করতে কোনো দলকে জিততে হবে ১৩৪টি আসনে। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানে নির্বাচনে কোনো দলই এই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। সব আসনের ফল প্রকাশের পর তাই বেশ কয়েকটি চিত্র সামনে আসছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বলছে, এককভাবে কোনো দলের সরকার গঠনের আর সুযোগ নেই। পাকিস্তানি বিশ্লেষক জাইঘাম খান বলেছেন, সব আসনের ফল প্রাথমিকভাবে প্রকাশের পর দুটি চিত্র সামনে আসতে পারে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাবন্দি ইমরান খানের দলের জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাদ দিয়ে বাকি দলগুলোর একটি জোট করে সরকার গঠন। এভাবে সরকার গঠন করলে বিলাওয়াল ভুট্টোর দল পিপিপি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন ছাড়াও জোটে আসবে এমকিউএম, জামাত-ই-ইসলামী ও বাকিরা।
জাইঘাম খান বলেন, দ্বিতীয় আরেকটি চিত্র আছে। তবে সেটি হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। এ ক্ষেত্রে পিপিপিকে পিটিআইয়ের সঙ্গে হাত মেলাতে হবে। কেননা এ পর্যন্ত ঘোষিত আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসনে জিতেছে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে যেভাবেই সরকার গঠন করা হোক না কেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পাকিস্তানে অচিরেই আসছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষক জাইঘাম খান।
এদিকে, পিটিআই জানিয়েছে, তারা সব স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, ভোটের ফল প্রকাশ শেষ হওয়ার আগেই দেশবাসীকে বিশেষ বার্তা দেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে কোনো ধরনের অরাজকতা ও মেরুকরণ না করার তাগিদ দেন তিনি।
ডন বলছে, প্রকাশিত ২৫৩ আসনের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন ৯২টি আসনে। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী পিএমএল-এন জিতেছে ৭১টিতে। ৫৪টি আসন পাওয়া পিপিপির সঙ্গে তারা জোটে রাজি হয়েছে বলে জানায়। এই জোট নিয়েই এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন (৭১) ও বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপি (৫৪) জোটে রাজি হলেও এখনো তারা মিলে ১৩৪টি আসনে জিততে পারেনি। মোট জিতেছে ১২৫টিতে। আরও ১২টি আসনের ফল বাকি। একটিতে ভোটগ্রহণ বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে কারাগারে থেকে ইমরান বলেছেন, তিনি জয়ী হয়েছেন। তার দলও দাবি করছে, জোট বানিয়ে সরকার গঠন করবে পিটিআই। আবার পিএমএল-এনের নেতা নওয়াজ শরিফ রীতিমতো জনসভা করে বিজয় ঘোষণা করেছেন। সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করবেন বলে জানান তিনি। তাকে সেনাবাহিনী সমর্থন দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী কোনো দল যদি এককভাবে সরকার গঠন করতে চায় তাহলে সংরক্ষিত আসন ছাড়াই অন্তত ১৩৪টি আসনে জয় পেতে হবে এবং সংরক্ষিত আসনসহ পেতে হবে ১৬৯টি।
স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, নিবন্ধিত দল হিসেবে অংশ নেওয়া নওয়াজ ও বিলওয়াল ভুট্টোর দল এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে না। তাই এরই মধ্যে জোট সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা করেছেন তারা। দুই দল যদি জোট গঠনে একমত হতে পারে তাহলে সংরক্ষিত আসনসহ সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে তারা। তবে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন পেয়েও বিপাকে ইমরান সমর্থিত জয়ী প্রার্থীরা। কারণ দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় সংরক্ষিত আসনও পাবে না তারা। ফলে তাদের পক্ষে সরকার গঠন করা প্রায় অনিশ্চিত। কারণ পিপিপি ও পাকিস্তান মুসলিম লীগের সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে তেহরিক-ইনসাফ।
প্রশ্ন উঠছে, এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীদের করণীয় কী? পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, তিন দিনের মধ্যে তারা অন্য কোনো দলে যোগ দিয়ে সরকার বা বিরোধী দল গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে।
জোট সরকার গঠন নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা হয়নি: বিলাওয়াল
পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন, পিপিপিকে ছাড়া কেন্দ্রীয় এবং পাঞ্জাব ও বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক সরকার গঠন করা যাবে না। গতকাল শনিবার জিও নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বিলাওয়াল বলেন, পিপিপি প্রতিটি প্রদেশে প্রতিনিধিত্ব করছে। কে সরকার গঠন করবে, সে বিষয়ে এখনো কথা বলার সময় আসেনি।
পিপিপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা এখনো ভোটের পুরো ফল জানি না, বিজয়ী স্বতন্ত্র পার্লামেন্ট সদস্যরা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বা নিচ্ছেন, সেটাও আমরা জানি না। পিএমএল-এন, পিটিআই বা অন্যদের সঙ্গে জোট সরকার গঠনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি।’
বিলাওয়াল আরও বলেন, রাজনৈতিক হিংসা-বিদ্বেষ কেন, সেটা চিহ্নিত করা ছাড়া কোনো সরকারই জনগণের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। পিপিপির চেয়ারম্যান জানান, তিনি মনে করেন, সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে যদি ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে দেশের জন্য সেটা কল্যাণকর হবে।
বিলাওয়াল বলেন, ‘পিপিপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার নাম প্রস্তাব করেছে। এখন আমাদের যদি সেটা পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে আরেকটি বৈঠক করতে হবে এবং সেই বৈঠকে আমরা কীভাবে এগোব, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
সরকার গঠন নিয়ে যা বললেন পিটিআই চেয়ারম্যান
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যান গহর আলী খান দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি সরকার গঠনের জন্য তার দলকে আমন্ত্রণ জানাবেন। কারণ, জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়েছেন। ইসলামাবাদে গতকাল শনিবার গণমাধ্যমের উদ্দেশে গহর আলী বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই না। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যাবো এবং সরকার গঠন করব।’
পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান বলেন, জনগণ অবাধে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা ভোট গণনা করে ফরম-৪৫ পূরণ করেছেন।
ইমরান খানের দলের চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের কণ্ঠ এবং কাঙ্ক্ষিত সরকার গঠনের উদ্যোগকে দমন করা হলে অর্থনীতি তার ধাক্কা সইতে পারবে না।
পূর্ণ ফলাফল দ্রুত ঘোষণা করা উচিত উল্লেখ করে গহর বলেন, ‘পিটিআইয়ের জন্য কোনো বাধা তৈরি করা ঠিক হবে না এবং যতটা দ্রুত সম্ভব ফল ঘোষণা করা উচিত। আইন অনুযায়ী চূড়ান্ত ফল ফরম-৪৫-এ পূরণ করে প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা সব ফল পেয়েছি।’
পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনে দল-সমর্থিত বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তারা দলের প্রতি অনুগত এবং তা-ই থাকবেন। সব প্রক্রিয়া শেষে পিটিআই আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অন্তর্দলীয় নির্বাচনে যাবে। জনগণ পিটিআইকে বিশাল ম্যান্ডেট দিয়েছে। পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে করা সব মামলার অভিযোগ ভুয়া।
তিনি জানান, সংরক্ষিত আসন এবং কোন দলের সঙ্গে তাদের যোগ দেওয়া উচিত, সে বিষয়ে খুব দ্রুত তারা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন। যেসব আসনে ফলাফল এখনো স্থগিত হয়ে আছে, সেসব জায়গায় তারা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করবেন।
গহর বলেন, দলের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে, তবে সেটা হতে হবে শান্তিপূর্ণ।
ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসান চান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন-এমনটাই জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, পুতিন এখনো চান ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হোক।
গত বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তার বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ ও জামাতা তথা অনানুষ্ঠানিক উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারের বৈঠকের পর তার এ ধারণা হয়েছে। তার ভাষায়, ‘তাদের ধারণা খুব স্পষ্ট- পুতিন যুদ্ধ শেষ করতে চান, তিনি একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে চান।’
গত মঙ্গলবার মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে উইটকফ ও কুশনারের বৈঠক হয়। এর পরদিন ট্রাম্প এ মন্তব্য করলেন। পুতিনের সঙ্গে সেই বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে ওয়াশিংটনের সংশোধিত খসড়া শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। ট্রাম্প জানান, তিনি গত মঙ্গলবার রাতেই কুশনার ও উইটকফের সঙ্গে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘তারা পুতিনের সঙ্গে যথেষ্ট ভালো একটি বৈঠক করেছেন। এরপর কী হয়, তা আমরা দেখব’। ট্রাম্প আবারও দাবি করেন, তিনি প্রেসিডেন্ট থাকলে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুই হতো না।
তার ভাষায়, ‘পুতিনের সঙ্গে জ্যারেড কুশনার ও স্টিভ উইটকফের খুব ভালো বৈঠক হয়েছে। তবে এটা দুপক্ষের ব্যাপার সমঝোতা হলে দুপক্ষকেই রাজি হতে হবে।’
অন্যদিকে গত বুধবার রুশ প্রেসিডেন্টের সহযোগী ইউরি উশাকভ বলেন, ইউক্রেন সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে রাশিয়ার মতামত বিবেচনায় নিতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিবেশ ইতিবাচক। মার্কিনরা দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে পৌঁছাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে প্রস্তুত- এমন সমাধান, যা আমাদের লক্ষ্য পূরণেও সহায়তা করে।’
এর আগে গত বুধবার এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক জানায়, ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি নিয়ে ৫ ঘণ্টার বৈঠকের পরও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোন সমঝোতা হয়নি বলে রাশিয়া জানিয়েছে। মস্কোর ক্রেমলিনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ দূতদের আলোচনার পর গত বুধবার এ তথ্য জানানো হয়।
ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় ২ শিশুসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের গত বুধবারের এ হত্যাকাণ্ড গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় চলা যুদ্ধবিরতির সর্বশেষ লঙ্ঘন। ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী ভূখণ্ডটিতে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা বন্ধ করেনি ইসরায়েলি বাহিনী।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গাজার মিশর সীমান্তের কাছে হামাসের যোদ্ধাদের হামলায় তাদের চার সেনা আহত হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে।
গাজার চিকিৎসা কর্মীদের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, ভূখণ্ডটির দক্ষিণাঞ্চলের আল-মাওয়াসি শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হন। এখানে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর আগুন ধরে যায় আর তাতে শিবিরের বেশ কয়েকটি তাঁবু পুড়ে যায়।
গাজার দমকল বাহিনীর মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, ‘ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ২ শিশুসহ ৫ নাগরিক নিহত ও অন্যরা আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের আঘাত গুরুতর।’
গাজার কুয়েতি হাসপাতালের সূত্রগুলো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, নিহত শিশুদের বয়স ৮ ও ১০ বছর আর এ হামলার ঘটনায় আরও ৩২ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনি গণমাধ্যম জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে কয়েকজন মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়েছেন।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস আল-মাওয়াসিতে হওয়া হামলার নিন্দা জানিয়েছে। এই হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে বর্ণনা করে এর মাধ্যমে ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি ইসরায়েলের অবজ্ঞা’ প্রদর্শিত হয়েছে বলে অভিযোগ হামাসের।
আল-মাওয়াসি শিবিরের পাশাপাশি গাজার উত্তরাঞ্চলে গাজা সিটির জেইতুন এলাকায় ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে আরও দুই ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজার কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী অন্তত ৫৯১ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ৩৬০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা ও আরও ৯২২ জনকে আহত করেছে।
এদিকে গত বুধবার হামাস বলেছে, তারা তাদের হাতে থাকা শেষ দুই জিম্মির একজনের মরদেহ ইসরায়েলকে ফেরত দিয়েছে। রেডক্রসের মাধ্যমে এই ‘সম্ভাব্য জিম্মির’ দেহাবশেষ গ্রহণ করার কথা নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
ইসরায়েল জানিয়েছে, সব জিম্মির মৃতদেহ ফিরে পাওয়া মাত্রই গাজার মিশর সীমান্তবর্তী রাফা ক্রসিং খুলে দেবে তারা।
হামাস এর আগেও গত মঙ্গলবার একটি মরদেহ হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু পরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর জানায়, দেহাবশেষটি কোন জিম্মির নয়, অন্য কারো।
গাজায় নড়বড়ে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে হামাস এ পর্যন্ত ২০ জন জীবিত ও ২৬ জন মৃত জিম্মির দেহাবশেষ ইসরায়েলকে ফেরত দিয়েছে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় ২০০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় আশার আলো
একে অপরের হাতে হাত রেখে হাঁটছেন দম্পতিরা। কনেরা পরেছেন লাল ফিতায় সজ্জিত ঐতিহ্যবাহী ফিলিস্তিনি সাদা ও লাল পোশাক। বরদের পরণে কালো স্যুট এবং টাই। পাশাপাশি হাঁটলেও তাদের এই বিয়ের পটভূমি বলছিল অন্য গল্প- জীর্ণ ভবন, কংক্রিটের স্তূপ আর ধ্বংসাবশেষ; যা গাজা উপত্যকার দুই বছরের সংঘাতের ক্ষতচিহ্ন।
গত মঙ্গলবার ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার দক্ষিণের খান ইউনিসে ৫৪ দম্পতি এক গণবিবাহ অনুষ্ঠানে একসূত্রে বাঁধা পড়েছে। যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের মাঝেই জীবনের এক সাহসী উদযাপন বলা যায় এই আয়োজনকে।
কারাম মুসায়েদ নামের এক বর বলেন, ‘আমাদের এমন একটি সুখের মুহূর্ত দরকার ছিল; যা আমাদের হৃদয়কে আবার জীবন্ত করে তুলতে পারে।’
ধ্বংসস্তূপে বিছানো লাল কার্পেটের ওপর ঢাক-ঢোলের তালে তালে দম্পতিরা এগিয়ে গিয়ে উঠছিলেন অস্থায়ী মঞ্চে। কনে হাতে ধরেছিলেন লাল, সাদা ও সবুজ রঙের ফিলিস্তিনি পতাকা আর সাজানো ফুলের তোড়া। বররা পাশে হাঁটছিলেন ছোট ছোট পতাকা হাতে। ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত আর নাচে-বাজনায় সাজানো এই গণবিবাহের আয়োজন শহরের এক স্কয়ারে শত শত দর্শকের হৃদয় কেড়েছে।
অনেকে চত্বরে দাঁড়িয়েছিলেন। কেউ আবার ঝুঁকি নিয়ে পাশের ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনের ওপর উঠে অনুষ্ঠান দেখছিলেন। দুবছর যুদ্ধ ও মানবিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর নবদম্পতিরা জানিয়ে দিলেন সতর্ক আশাবাদ।
মুসায়েদ নামক এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমাদের আজকের অনুভূতিটা অনেক সুন্দর। এত ভোগান্তির পর আমরা সত্যিই এই আনন্দের প্রাপ্য ছিলাম। কঠিন জীবন আর যে ক্ষুধা সহ্য করেছি, বন্ধু-স্বজন হারানোর পর।’
হিকমত উসামা নামের আরেকজন বলেন, ‘এই সব যুদ্ধ, ধ্বংস আর যা যা আমরা পার করেছি- তারপর আবার আনন্দে ফিরতে পারা, নতুন জীবন শুরু করা; এ এক অতুলনীয় অনুভূতি। আল্লাহর শুকরিয়া, ইনশাল্লাহ সামনে আরও ভালো দিন আসবে।’
গাজায় এই গণবিয়ের আয়োজন করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক দাতব্য সংগঠন আল-ফারিস আল-শাহিম ফাউন্ডেশন। যারা যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় দীর্ঘদিন ধরে ত্রাণ সহায়তা দিয়ে আসছে।
সংগঠনটির গণমাধ্যমবিষয়ক কর্মকর্তা শরিফ আল-নাইরাব আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে এই ধ্বংসস্তূপের মাঝেই জায়গাটি বেছে নিয়েছি এই বার্তা দেওয়ার জন্য ‘আনন্দের পোশাক’ আবারও শরীরে উঠবে।
‘গাজার মানুষ আবারও ধ্বংসাবশেষ থেকে উঠে দাঁড়াবে, গাজা আবার আনন্দে ভরে যাবে। ইনশাল্লাহ আমরা গাজার ভবিষ্যৎ পুনর্গঠন করব।’
যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যস্থতায় গত ১০ অক্টোবর ইসরায়েল এবং হামাসের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় মানুষ ধীরে ধীরে তাদের জীবন পুনরায় শুরু করেছে। যুদ্ধবিরতি বেশিরভাগ সময় ধরে বজায় থাকলেও মাঝে মাঝে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
বন্যা কবলিত শ্রীলঙ্কা এবং ইন্দোনেশিয়ায় নতুন করে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসে দেশগুলোর ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে। ইতোমধ্যেই দেশ দুটি বন্যা কবলিত অবস্থায় আছে। এর আগে, চারটি দেশে এই বন্যায় ১ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে। -খবর বার্তা সংস্থা এএফপির।
ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া সংস্থা বৃহস্পতিবার সতর্ক করে দিয়েছে যে সুমাত্রা দ্বীপের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি প্রদেশে বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবারের মধ্যে ‘মাঝারি থেকে ভারী’ বৃষ্টিপাত হতে পারে।
রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হলেও, তা এখনও গত সপ্তাহের ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের মতো মারাত্মক আকার ধারণ করেনি।
৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা ৭৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃতের এই সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কম। যদিও দূরবর্তী এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায়, এখনও মৃত মানুষের সকল তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বন্যায় ৫৬০ জনের বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছে।
এছাড়া দুর্যোগ পরবর্তী যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় এখন সকলের অবস্থান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। উত্তর সুমাত্রার পান্ডানের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫৪ বছর বয়সী সাবান্দি এএফপিকে বলেন, গত সপ্তাহে বন্যার কারণে তার বাড়ি কাদাপানিতে ভেসে যাওয়ায় তিনি এখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
নতুন করে ফের বৃষ্টিপাত হলে পারে— এই পূর্বাভাস সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা আবার নতুন করে ভয় পাচ্ছি।’
সাবান্দি বলেন, ‘আমরা এই ভয় পাচ্ছি যে হঠাৎ করে ফের ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হলে, আবারও বন্যা হবে।’ এই পৌঢ় খাবার বা পানি ছাড়াই তার ছাদে দুই দিন ধরে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। বন্যার আগে তিনি নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পারেননি বলে জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ঘর কাদাপানিতে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। কাদা এত বেশি ছিল যে আমরা ঘরে ঢুকতেও পারিনি।’ যদিও এশিয়া জুড়ে মৌসুমি বর্ষা বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। জলবায়ু পরিবর্তন এই ঘটনাকে আরও অনিয়মিত, অপ্রত্যাশিত ও মারাত্মক করে তুলছে।
গত সপ্তাহে বড় ধরনের দুটি পৃথক ঝড় শ্রীলঙ্কা, সুমাত্রা, দক্ষিণ থাইল্যান্ডের কিছু অংশ ও উত্তর মালয়েশিয়ায় ব্যাপক বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করেছে। দুর্যোগের এই মাত্রা ত্রাণ প্রচেষ্টাকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে।
ইন্দোনেশিয়ার বান্দা আচেহ-তে এএফপি’র একজন প্রতিবেদক বলেছেন যে একটি গ্যাস স্টেশনে জ্বালানির জন্য লাইন প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ হয়েছে। অন্যত্র, বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা খাদ্য ঘাটতি, মূল্যবৃদ্ধি ও লুটপাটের খবরও পেয়েছেন।
শ্রীলঙ্কায়, আবহাওয়া পূর্বাভাসকারীরা জানিয়েছেন যে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। মধ্য অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকায় ভূমিধসের সতর্কতা পুনর্নবীকরণ করা হয়েছে এবং বাসিন্দাদের বাড়ি ফিরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ, আরও বৃষ্টিপাতের ফলে ইতোমধ্যেই ভিজে নরম হয়ে যাওয়া ঢালগুলো ধসে পড়তে পারে।
কলম্বো থেকে ক্যান্ডি পর্যন্ত ১১৫ কিলোমিটার (৭১ মাইল) প্রধান মহাসড়কটি প্রতিদিন ১৫ ঘন্টার জন্য পুনরায় খোলা হয়েছে, কারণ শ্রমিকরা মাটি ও পাথরের ঢিবি অপসারণ করেছে। অনেক স্থানে গাড়ি ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা পেরোতে বাধ্য হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কায় কমপক্ষে ৪৭৯ জন মারা গেছে এবং এখনও পর্যন্ত আরও শত শত লোক নিখোঁজ রয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন করেছেন।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে ৭ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। মাত্র তিন বছর আগের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে থাকা এই দেশের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের নতুন গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। যারা মানবিক সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হন তাদের বুলডোজার দিয়ে বালি চাপা দিয়েছে দখলদার ইসরাইল বাহিনী। সম্প্রতি এক অনুসন্ধানে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন। এতে বলা হয়, উপত্যকার জিকিম ক্রসিংয়ের কাছে সহায়তা নিতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ এবং নিহতদের মৃতদেহ বুলডোজার দিয়ে বালিতে চাপা দেওয়ার প্রমাণ সামনে এসেছে।
জুনে পরিবারের জন্য আটা আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন গাজার বাসিন্দা আম্মার ওয়াদি। যাওয়ার আগেই ফোনের স্ক্রিনে লিখে রেখেছিলেন- আমার কিছু হলে আমায় ক্ষমা করে দিয়ো মা। আমার ফোন যিনি পাবেন, পরিবারকে জানাবেন আমি মাকে খুব ভালোবাসি। পরে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি সেই ফোনটি খুঁজে পেয়ে বার্তাটি তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন। যা ছিল তাদের শেষ খবর। সিএনএন জানিয়েছে, জিকিম সীমান্তের আশপাশে গুলিবর্ষণে নিহতদের দেহ অনেক ক্ষেত্রেই মিলিটারি জোনে ফেলে রাখা হয়। অনেক সময় বুলডোজার চালিয়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়, আর অনেক দেহ উদ্ধার না হওয়ায় খোলা জায়গায় পচে-গলে পড়ে থাকে। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃতদেহ এভাবে পরিচালনা করা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে- গ্রীষ্মজুড়ে জিকিম এলাকায় ব্যাপক বুলডোজার কার্যক্রম চালানো হয়েছে। জুনে ঘটে যাওয়া এক হামলার পরের ভিডিওতে দেখা যায় উল্টে যাওয়া একটি ত্রাণ ট্রাকের চারপাশে আংশিক মাটিচাপা পড়ে থাকা দেহ। সাবেক দুই আইডিএফ সদস্য সিএনএনকে জানিয়েছেন, গাজার অন্যান্য অঞ্চলেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তারা বর্ণনা করেছেন কিভাবে যুদ্ধের সময় ফিলিস্তিনিদের মৃতদেহ অগভীর কবরস্থানে বুলডোজার দিয়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আইডিএফ দাবি করেছে- তারা মৃতদেহ সরানোর জন্য বুলডোজার ব্যবহার করেনি। তবে তা দিয়ে কবর দেওয়া হয়েছিল কি না সে প্রশ্নের উত্তর তারা এড়িয়ে গেছে। আইডিএফ বলেছে, এলাকা সুরক্ষা, বিস্ফোরকের ঝুঁকি মোকাবিলা কিংবা রুটিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য বুলডোজার ব্যবহৃত হয়।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের বিশেষজ্ঞ জানিনা ডিল বলেন, যুদ্ধরত পক্ষগুলোর দায়িত্ব নিহতদের এমনভাবে কবর দেওয়া যাতে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়। মৃতদেহ বিকৃত করা বা অসম্মানজনকভাবে কবরস্থ করা জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধ। জিকিম এলাকায় গুলির মাঝে ত্রাণ বহনকারী ফিলিস্তিনিদের ছুটে আসার একাধিক ভিডিও সিএনএন যাচাই করেছে। এক ভিডিওতে দেখা যায়- একজন ত্রাণ বহনকারীকে পিছন থেকে গুলি করা হচ্ছে। আরেকটিতে আহতদের উদ্ধার করতে গিয়ে আবার গুলি চলছে। এক ত্রাণ ট্রাক চালক বলেন, জিকিম দিয়ে গেলে প্রতিবারই লাশ দেখতে পাই। ইসরাইলি বুলডোজারগুলোকে মৃতদেহ মাটিচাপা দিতে দেখেছি। আরেকজন বলেন- এটা যেন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। সেখানে কী ঘটে কেউ জানে না।
জুনের মাঝামাঝি এক ঘটনায় একটি ত্রাণ ট্রাক ঘিরে ধরেন ক্ষুধার্ত মানুষজন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তখনই আইডিএফ গুলি চালায় এবং বহু মানুষ ট্রাকের নিচে পড়ে মারা যান। কয়েক দিন পর সিভিল ডিফেন্সের অ্যাম্বুলেন্স গিয়ে ১৫টি লাশ উদ্ধার করতে পারে, কিন্তু প্রায় ২০টি দেহ উদ্ধার না করেই ফিরে আসতে হয়। কারণ অ্যাম্বুলেন্স ভর্তি হয়ে গিয়েছিল।
এক আইডিএফ সদস্য জানান, ২০২৪ সালের শুরুতে তাদের ঘাঁটির পাশে দুদিন ধরে পড়ে থাকা নয়টি মৃতদেহ বুলডোজার দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়। তিনি বলেন, কুকুরগুলো লাশ টেনে খাচ্ছিল। যে দৃশ্য দেখা ছিল অসহনীয়। মৃতদেহের পরিচয় নথিভুক্ত করার মতো কোনো চেষ্টা হয়নি। ইসরায়েলি সৈন্যদের বয়ান সংগ্রহকারী সংগঠন ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স’-ও জানিয়েছে- এ ধরনের আরও অনেক সাক্ষ্য তাদের কাছে এসেছে।
আম্মার ওয়াদির পরিবার এখনো তার খোঁজ পায়নি। তার মা নাওয়াল মুসলেহ বলেন, ছেলের কথা মনে পড়লেই চোখের পানি থামে না। আমরা যা-ই হোক মেনে নেব। শুধু জানতে চাই, তার কী হয়েছিল। গাজার সীমান্তবর্তী এই অঞ্চল এখন নিখোঁজদের কবরস্থান হয়ে উঠেছে। যেখানে বহু মানুষ যে পথ ধরে ত্রাণ নিতে গিয়েছিলেন, সেই পথই তাদের শেষ যাত্রাপথ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দিল্লির বিষাক্ত বায়ু জনজীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। ভারত সরকার জানিয়েছে, ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দিল্লির ছয়টি সরকারি হাসপাতালে তীব্র শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ৩০ হাজারের বেশি রোগীকে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
এতে বলা হয়, শীত আসলেই দিল্লি ও তার উপশহরগুলোতে বায়ুদূষণের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নেয়। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই দিল্লির বায়ুর মান ইনডেক্স (একিউআই) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্রহণযোগ্য সীমার চেয়ে ২০ গুণ বেশিতে অবস্থান করছে। বিশেষ করে পিএম ২.৫ কণার মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। যা সরাসরি শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করে ফুসফুসে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
দূষণের পেছনে একক কোনো কারণ নেই। শিল্পকারখানার নির্গমন, যানবাহনের ধোঁয়া, তাপমাত্রা হ্রাস, বাতাসের গতি কমে যাওয়া এবং আশপাশের রাজ্যগুলোতে কৃষিজমির খড় পোড়ানোর মতো নানা কারণে পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে।
সরকারি তথ্যানুযায়ী, দিল্লির ছয়টি প্রধান হাসপাতালে ২০২২ সালে ৬৭ হাজার ৫৪টি, ২০২৩ সালে ৬৯ হাজার ২৯৩টি এবং ২০২৪ সালে ৬৮ হাজার ৪১১টি শ্বাসকষ্টের মামলা নথিভুক্ত হয়। সরকারের ভাষ্য, দূষণের মাত্রা বাড়ার সঙ্গে জরুরি বিভাগে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির একটি সম্পর্ক দেখা গেছে, তবে এটি সরাসরি প্রমাণ হিসেবে দেখানো সম্ভব নয়।
গত এক দশকে বেশ কয়েকবার দিল্লির গড় একিউআই ‘গুরুতর’ ৪০০-এর উপরে উঠেছে। যা সুস্থ মানুষদের জন্যও ক্ষতিকর এবং অসুস্থদের জন্য বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ। বুধবার সকালে সরকারি সমর্থিত ‘সফর’ অ্যাপ জানায়, দিল্লির গড় একিউআই ছিল প্রায় ৩৮০।
গত সপ্তাহে বিবিসি জানিয়েছে, দিল্লি ও আশপাশের হাসপাতালগুলোতে দূষিত বায়ুর কারণে অসুস্থ হয়ে পড়া শিশুদের ভিড় বাড়ছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপের দাবিতে দায়ের করা এক পিটিশনের শুনানি বুধবার দিল্লি হাইকোর্টে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। একই সঙ্গে দেশটির সুপ্রিম কোর্টও গত কয়েক বছর ধরে দিল্লির অবনতিশীল বায়ুমান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।
লেবানন সফরের সময় হিজবুল্লাহকে অস্ত্র ত্যাগ করে জাতীয় সংলাপে বসা পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ক্যাথলিক খিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ লিও। তবে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে লেবাননে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার নিন্দা জানানোর অনুরোধ করা হলেও সে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।
লেবাননের সফরের শেষ দিন গত মঙ্গলবার স্কাই নিউজ আরাবিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পোপ বলেন, ভ্যাটিকান ‘সব পক্ষকে সহিংসতা ত্যাগ করে সংলাপের টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে। চার্চ ‘হিজবুল্লাহকে অস্ত্র রেখে সংলাপে যোগদানের প্রস্তাব দিয়েছে।’
পোপ জানান, বৈরুতে তার রাজনৈতিক সভাগুলো মিডিয়া থেকে দূরে হয়েছিল এবং অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক বিরোধগুলো হ্রাস করার ওপর কেন্দ্রীভূত ছিল। তার লেবানন সফর শুরুর আগে হিজবুল্লাহর পাঠানো এক চিঠি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে পোপ জবাবে বলেন, ‘আমি হিজবুল্লাহর চিঠি পর্যালোচনা করেছি এবং এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাইছি না।’
গত শনিবার পোপ লিওকে একটি চিঠি পাঠায় হিজবুল্লাহ। তাতে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে লেবাননে অব্যাহত ইসরাইলি হামলার প্রকাশ্যে নিন্দার আহ্বান জানায় গোষ্ঠীটি। চিঠিতে তারা বলেন, ‘পোপের এ শুভ সফরকে সামনে রেখে আমরা আবারও আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করছি যে, লেবাননের বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আমাদের মূলনীতি। দেশের সেনাবাহিনী ও জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে যেকোনো আগ্রাসন ও দখলদারির বিরুদ্ধে লড়াই আমাদের অঙ্গীকার।’
হিজবুল্লাহ বার্তায় উল্লেখ করা হয়, ইসরাইল যে আচরণ করছে তা অগ্রহণযোগ্য। তারা আশা প্রকাশ করে যে, পোপ লিও লেবাননের জনগণের ওপর অবিচার ও হামলার বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত কথা বলবেন।
এর আগে এক বক্তব্যে হিজবুল্লাহর মহাসচিব শেখ নাইম কাসেম পোপের সফরকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি চিঠি পোপের কাছে হস্তান্তরের জন্য সদস্যদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এবং তা প্রকাশেও কোনো গোপনীয়তা থাকবে না।
তিনি আরও জানান, তাদের পক্ষ থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বরে যুদ্ধবিরতি চুক্তি পুরোপুরি মেনে চলা হয়েছে, কিন্তু ইসরাইল ধারাবাহিকভাবে লেবাননের ভেতরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। শেখ কাসেম আশা প্রকাশ করেন, এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পোপের উপস্থিতি লেবাননে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, আমরা দৃঢ় আশা করি, তিনি লেবাননকে আগ্রাসন থেকে মুক্ত করতে এবং শান্তি স্থাপনে সহায়তা করবেন।
২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ইসরায়েলকে লেবাননের সব এলাকা থেকে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার করতে বলা হয়। কিন্তু এখনো পাঁচটি স্থানে তাদের সেনা অবস্থান করছে, যা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। এরপর থেকে ইসরায়েল বারবার লেবাননের ভেতরে হামলা চালাচ্ছে, যা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে সতর্ক করেছে লেবানন সরকার।
হারিয়ে যাওয়া এমএইচ ৩৭০ উড়োজাহাজের ছবি সংবলিত একটি বোর্ডে সই করছেন এক নারী। ফাইল ছবি: রয়টার্স
১১ বছরেরও বেশি সময় আগে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৭৭৭ ফ্লাইট ২৩৯ আরোহীসহ ‘উধাও’ হয়ে যায়। কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং অভিমুখে যাত্রা করা এমএইচ৩৭০ ফ্লাইটের অন্তর্ধানকে বৈশ্বিক উড্ডয়ন ইতিহাসের সবচেয়ে রহস্যময় ঘটনার অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০১৪ সালের ৮ মার্চ রাডার থেকে অদৃশ্য হওয়ার পর ওই উড়োজাহাজটি খুঁজে পেতে ব্যাপক খোঁজাখুঁজি ও উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। কিন্তু বড় আকারে পরিচালিত ওই অভিযানে ফল মেলেনি। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও উড়োজাহাজটি খোঁজার অভিযান শুরু করেছে মালয়েশিয়া। বুধবার বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এ বিষয়টি জানা গেছে।
ওই উড়োজাহাজের যাত্রীদের দুই তৃতীয়াংশই ছিলেন চীনের নাগরিক। বাকিদের মধ্যে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্সের নাগরিকও ছিলেন।
নতুন করে উদ্ধারকাজ শুরু: এক বিবৃতিতে কুয়ালালামপুর জানায়, ২০২৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ ফ্লাইটের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেতে গভীর সাগরে আবারও অভিযান চালানো হবে। এই উদ্ধার কাজের দায়িত্বে থাকবে ওশান ইনফিনিটি নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘সমুদ্রের যে অংশে উড়োজাহাজটি খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে উজ্জ্বল, সেখানে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে অভিযান চালানো হবে।’
প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে গত এপ্রিলে দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেও তা শিগগির স্থগিত করা হয়। এখন আবারও একই প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে নতুন করে অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে।
‘(উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ) খুঁজে না পেলে কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হবে না', এই শর্তে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওশান ইনফিনিটির সঙ্গে মালয়েশিয়া সরকার চুক্তি করেছে।
২০১৮ সালেও একই কায়দায় অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয় ওশান ইনফিনিটি।
এর আগে, দুর্ঘটনার পর অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বে ভারত মহাসাগরের এক লাখ ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে উদ্ধার ও খোঁজ অভিযান চালানো হয়। তিন বছরের ওই অভিযানে প্রত্যাশিত ফল মেলেনি।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই মর্মান্তিক ঘটনায় যেসব পরিবার প্রভাবিত হয়েছে, তাদের মনে কিছুটা হলেও শান্তি এনে দিতে হারিয়ে যাওয়া উড়োজাহাজের হদিস জানা প্রয়োজন এবং এ বিষয়টির প্রতি তারা অঙ্গীকারবদ্ধ।
ফেব্রুয়ারিতে উড়োজাহাজের সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া যাত্রীদের পরিবারের সদস্যরা আশাবাদ প্রকাশ করেন, নতুন উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হলে অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে।
উড্ডয়ন খাতের রহস্য: উড়োজাহাজটি হারিয়ে যাওয়া নিয়ে অনেক তত্ত্ব চালু আছে। তবে প্রকৃত সত্য এখনো উদ্ঘাটন হয়নি। কেউ কেউ বলেন, অভিজ্ঞ পাইলট জাহারি আহমাদ শাহ বিপথগামী হয়েছিলেন। তিনি অন্য কারো প্ররোচনায় এই কাজ করেছেন।
২০১৮ সালে প্রকাশিত চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ঘটনার জয় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের ব্যর্থতা দায়ী এবং সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়, পাইলট নিজে উড়োজাহাজের কোর্স বদলেছিলেন।
৪৯৫ পাতার প্রতিবেদনে তদন্তকারীরা স্বীকার করেন, তারা এখনো জানেন না কীভাবে উড়োজাহাজটি উধাও হল। এই ঘটনায় পাইলট ছাড়া অন্য কারও দায় আছে কি না, সেটাও তারা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
ফ্লাইটটি হারিয়ে যাওয়ার ১১তম বার্ষিকীতে বেইজিংয়ের সরকারি কার্যালয় ও মালয়েশিয়ার দূতাবাসের বাইরে ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করেন। তাদের হাতে ছিল, ‘আমাদের প্রিয়জনদের ফিরিয়ে দাও’ ও ‘১১ বছরের অপেক্ষার অবসান কবে হবে?’ লেখা ব্যানার।
ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় দিতওয়ার পর শ্রীলঙ্কায় মানবিক সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তান শ্রীলঙ্কার জন্য ২০০ টন মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে সমুদ্রপথে। পাকিস্তানের উদ্দেশ্য ছিল আকাশপথে দ্রুত ত্রাণ পৌঁছানো, তবে ভারত আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি না দেওয়ায় দেশটিকে দীর্ঘ পথ ঘুরে সমুদ্রপথে ত্রাণ পাঠাতে হয়েছে।
গত সপ্তাহের ঘূর্ণিঝড়ে শ্রীলঙ্কায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৬৫ জন নিহত এবং ৩৬৬ জন নিখোঁজ বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দেশটির প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিসানায়েকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসলামাবাদে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ত্রাণবাহী সমুদ্রযানটিকে বিদায় জানানো হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের অর্থ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বিলাল আজহার কায়ানি এবং পাকিস্তানে নিযুক্ত শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার অ্যাডমিরাল রভীন্দ্র সি উইজেগুনারত্নে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ টেলিফোনে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টকে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, দুঃসময়ে প্রতিবেশী ও ভাইপ্রতিম দেশ হিসেবে পাকিস্তান শ্রীলঙ্কার পাশে রয়েছে।
শ্রীলঙ্কার উদ্ধারকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা এলাকাগুলোতে প্রবেশের পর মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র জানিয়েছে, ১৫ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তৃত অঞ্চলে—ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা, থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চল ও মালয়েশিয়ার উত্তর অংশসহ—একই সময়ে প্রবল মৌসুমি বৃষ্টি এবং দুইটি পৃথক উষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ডেকে এনেছে। চার দেশে মিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১,৩০০ ছাড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বায়ুমণ্ডলের উত্তাপ ও সমুদ্রের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া বড় ঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাতকে আরও তীব্র করে তুলছে। খবর জিও নিউজের।
দীর্ঘ দুই বছরের সংঘাত ও ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও আশার আলো দেখিয়েছে গাজা উপত্যকা। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরে একসঙ্গে ৫৪ দম্পতির গণবিয়ে হয়েছে। তুরস্কের আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, আবুধাবির সহযোগিতায় আয়োজিত এই উৎসবটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৫৪তম ইউনিয়ন দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে পালিত হয়েছে।
খবরে আরও বলা হয়, হামাদ আবাসিক এলাকায় ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনগুলোর মাঝে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘গ্যালান্ট নাইট ৩’ মানবিক অভিযানের অধীনে সংগঠিত হয়েছে। থাওব আল-ফারাহ’ (আনন্দের পোশাক) নামের বিয়ের মঞ্চটি ইসরাইলের গণহত্যা থেকে সৃষ্ট ধ্বংসের মধ্যেও জীবনের প্রতি অটলতা ও জীবনযাপনের আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
গত মঙ্গলবার ফিলিস্তিনি পতাকা, ফুল এবং ঐতিহ্যবাহী গানে ভরে উঠেছিল অনুষ্ঠানস্থল; পরিবারের সদস্য ও সম্প্রদায়ের নেতারা জড়ো হয়ে নবদম্পতিদের শোভাযাত্রায় হেঁটে আসা দেখছিলেন।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, পুরো উপত্যকাজুড়ে প্রায় দুই হাজার ৬৫১ জন আবেদনকারীর মধ্যে লটারির মাধ্যমে এই দম্পতিদের নির্বাচন করা হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদের নির্দেশে ‘গ্যালান্ট নাইট ৩’ অভিযান ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর শুরু হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল, গাজার সবচেয়ে বিপর্যস্ত এলাকাগুলোতে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।
আনাদোলুর খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ইসরাইল চুক্তি লঙ্ঘন করে চলেছে এবং নির্ধারিত প্রত্যাহার অঞ্চলের বাইরে ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে হামলা অব্যাহত রেখেছে, যার ফলে মৃত্যু ও আহতের ঘটনা ঘটছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজায় ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, যাদের অধিকাংশই মহিলা ও শিশু। আহত হয়েছেন এক লাখ ৭১ হাজারেরও বেশি মানুষ।
বিশ্বে মনুষ্যবিহীন প্রথম যুদ্ধবিমান ‘বায়রাক্টর কিজিলেলমা’ তৈরি করেছে তুরস্ক। এটি আকাশ থেকে আকাশে এবং আকাশ থেকে মাটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে। তুরস্কের প্রতিরক্ষা সংস্থা এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিমানের ইতিহাস রচনা করেছে তারা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডেইলি সাবাহ। এতে বলা হয়, তুরস্কের প্রথম মানববিহীন যুদ্ধবিমান বায়রাক্টর কিজিলেলমা নতুন এক মাইলফলক অর্জন করেছে। এটি দৃষ্টিসীমার বাইরে থেকে (বিভিআর) একটি জেটচালিত লক্ষ্যবিমানকে আকাশ থেকে আকাশে হামলার জন্য ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সফলভাবে আঘাত করেছে। এ ঘটনা বিশ্বের জন্য প্রথম বলে গত রোববার জানিয়েছে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বায়কার।
বায়কার তুরস্কের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এনসোশ্যালে জানিয়েছে, বিশ্বে প্রথমবারের মতো একটি মানববিহীন যুদ্ধবিমান দৃষ্টিসীমার বাইরে থেকে আকাশে একটি লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করেছে। বায়কারের বিবৃতি অনুযায়ী, কিজিলেলমা দেশীয়ভাবে তৈরি গোকদোয়ান আকাশ থেকে আকাশে হামলার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে উচ্চগতির লক্ষ্যবস্তু জেটকে নিখুঁতভাবে আঘাত করেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ডানার নিচে বহন করা অবস্থায় নিক্ষেপ করা হয়, যখন লক্ষ্যবস্তুকে শনাক্ত ও অনুসরণ করে আসেলসানের দেশীয়ভাবে তৈরি মুরাদ এইএসএ রাডার। এটি ছিল তুর্কি বিমান চলাচলের ইতিহাসে প্রথমবার যখন একটি জাতীয় বিমান, দেশীয় রাডারের নির্দেশনায় দেশীয়ভাবে তৈরি আকাশ থেকে আকাশে হামলার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আকাশের লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করল। এই সফল হামলা কিজিলেলমাকে বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র প্রমাণিত আকাশ থেকে আকাশ যুদ্ধক্ষমতাসম্পন্ন মানববিহীন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। এটি ছিল কিজিলেলমার এই মাসে করা বহু পরীক্ষার আরেকটি ধাপ। এর মধ্যে কয়েকদিন আগে একটি এফ-১৬-কে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে লক করার ঘটনাও ছিল।
একটি বায়রাক্টর আকিঞ্জি মনুষ্যবিহীন আকাশযান (ইউএভি) আকাশ থেকে পুরো ঘটনাটি ধারণ করে বলে জানিয়েছে আনাদোলু এজেন্সি। তুরস্কের বিখ্যাত প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান বায়কারের প্রধান ফ্ল্যাগশিপ বিমান হলো বায়রাক্টর কিজিলেলমা ড্রোনের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। কিজিলেলমার নিজে রাডারে ধরা না পড়ে কম রাডার দৃশ্যমানতা এবং উন্নত সেন্সর প্রযুক্তি শত্রু বিমানকে অনেক দূর থেকে শনাক্ত করতে পারে। এটি মুরাত এইএসএ রাডার, টয়গুন টার্গেটিং সিস্টেমসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং দেশীয়ভাবে তৈরি বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ বহন করতে পারে। পূর্বের পরীক্ষায় এটি টোলুন এবং টেবার-৮২ বোমায় সরাসরি আঘাত করেছে। সর্বশেষ আকাশ থেকে আকাশে হামলা কিজিলেলমার আকাশ থেকে মাটি ও আকাশ থেকে আকাশ দুই ধরনের মিশনে পূর্ণ সক্ষমতাকে প্রমাণ করে এবং তুরস্কের প্রতিরক্ষা কৌশলে এর ভূমিকাকে আরও বিস্তৃত করে।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু প্রযুক্তিগত সাফল্য নয়; বরং তুরস্কের স্বয়ংক্রিয় আকাশযুদ্ধ ক্ষমতার দিকে বড় পদক্ষেপ।
বায়কারের চেয়ারম্যান ও সিটিও সেলচুক বায়রাক্টর এক ভিডিওতে বলেন, ‘আমরা বিমান চলাচলের ইতিহাসে নতুন এক যুগের দরজা খুলেছি। বিশ্বে প্রথম মানববিহীন যুদ্ধবিমান রাডার নির্দেশনায় আকাশ থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত হেনেছে।’
ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে আলোচনার পথ খোলা রাখলো রাশিয়া। ক্রেমলিন বুধবার জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া কিছু প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন এবং অন্য কিছু প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। একই সঙ্গে রাশিয়া এই বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে মার্কিন আলোচকদের সঙ্গে যতবার প্রয়োজন ততবার বৈঠকে বসতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছে ক্রেমলিন।
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং জামাতা জ্যারেড কুশনারের বৈঠকের পর এমন ঘোষণা হলো। গত মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত চলে এই আলোচনা।
বৈঠকের পর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, পুতিন মার্কিন প্রস্তাবগুলো পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছেন, এমনটা বলা সঠিক হবে না। তিনি উল্লেখ করেন, প্রস্তাবগুলো নিয়ে এটি ছিল প্রথম মুখোমুখি মতবিনিময়। পেসকভ বলেন, এটি একটি স্বাভাবিক আলোচনা প্রক্রিয়া, যেখানে পুতিন কিছু প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন এবং কিছু প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ক্রেমলিনে পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী আলোচনার বিস্তারিত জানাতে অস্বীকার করেন পেসকভ। তিনি বলেন, এই আলোচনার পরিবেশ যত শান্ত থাকবে, তত বেশি ফলপ্রসূ হবে- এই বিষয়ে একটি বোঝাপড়া রয়েছে। আমরা এই নীতিতে অটল থাকব এবং আশা করছি আমাদের আমেরিকান সহকর্মীরাও তাই করবেন।
আলোচনার পর ক্রেমলিনের এক সহযোগী বলেন, এখনো পর্যন্ত কোনো আপোস খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, রাশিয়া আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত বলে ক্রেমলিন থেকে বার্তা দেয়ায় দুদেশের মধ্যে ইউক্রেন ইস্যুতে কূটনৈতিক তৎপরতা বজায় থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে একাধিক গণমাধ্যম সূত্রে খবর এসেছে যে, আমেরিকানরা নাকি রাশিয়ার পক্ষ থেকে তৈরি করা একটি চাহিদাপত্রকে নিজেদের ‘শান্তি পরিকল্পনা’ হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র যে রাশিয়ার সঙ্গে গোপন ব্যবসায়িক আলোচনায় জড়িত এবং উইটকফ রুশদের ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে কীভাবে পৌঁছাতে হবে সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন, এমন খবরও ফাঁস হয়েছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই দেয় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এখনো যুদ্ধবিরতি চালু আছে এবং উভয় পক্ষ তা মেনেও নিচ্ছে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন।
যুদ্ধবিরতির প্রথম ৫০ দিনের পুরোটা সময়জুড়ে ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত ছিল। এসব হামলায় নিহত হয়েছেন ৩৫৭ জন ফিলিস্তিনি। যার ফলে, এই সংঘাতে মোট নিহতের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে হয়েছে। বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।
৫০ দিনে অন্তত ৫৯১ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল। এসবের মধ্যে বিমান হামলা, কামানের গোলাবর্ষণ ও সরাসরি গুলি চালানোর মতো ঘটনা অন্তর্ভুক্ত।
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছে গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১০ অক্টোবর থেকে শুরু করে যুদ্ধবিরতির প্রথম ৫০ দিনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বেসামরিক মানুষের দিকে ১৬৪ বার গুলি চালিয়েছে। গাজা থেকে ৩৫ জন ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে। ‘হলুদ লাইনের’ বাইরে থাকা আবাসিক এলাকায় ২৫ বার অভিযান চালিয়েছে। ১১৮ বার এক বা একাধিক অবকাঠামোগত সম্পদ ধ্বংস করেছে। পাশাপাশি, ইসরায়েল মানবিক ত্রাণের প্রবাহ রোধ করেছে এবং গাজা উপত্যকাজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও বাড়িঘর ধ্বংস অব্যাহত রেখেছে।
১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি চালুর পরদিন থেকেই লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটতে থাকে। অক্টোবরে ১৬ দিন, নভেম্বরে ২৫ দিন ও ডিসেম্বরে ২ দিন এক বা একাধিকবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে তেল আবিব। তা সত্ত্বেও ওয়াশিংটনের দাবি, যুদ্ধবিরতি এখনো বহাল তবিয়তে কার্যকর আছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাস হামলা চালালে এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত ও ২৫০ জন জিম্মি হন। সেদিনই প্রতিশোধমূলক গণহত্যা শুরু করে ইসরায়েল।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৭০ হাজার ১১২। পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও এক লাখ ৭০ হাজার ৯৬৮ জন ফিলিস্তিনি।
ইরান তাদের অন্যতম বৃহৎ স্বর্ণখনিতে বিশাল নতুন স্বর্ণভাণ্ডার আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। গত সোমবার স্থানীয় গণমাধ্যমে এই খবর প্রকাশ হয়েছে।
পূর্বাঞ্চলীয় দক্ষিণ খোরাসান প্রদেশে অবস্থিত বেসরকারি মালিকানাধীন শাদান স্বর্ণখনিতে নতুন এই শিরা কাঠামো পাওয়া গেছে। ফার্স নিউজ এজেন্সি একে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খনিগুলোর একটি হিসেবে বর্ণনা করেছে। এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন মজুদগুলো শিল্প, খনি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে যাচাই করেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত শাদান স্বর্ণখনির প্রমাণিত মজুত বিশাল স্বর্ণশিরা আবিষ্কারের পর উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সেখানে রয়েছে ৭.৯৫ মিলিয়ন টন অক্সাইড স্বর্ণ আকরিক এবং ৫৩.১ মিলিয়ন টন সালফাইড স্বর্ণ আকরিক। অক্সাইড আকরিক সাধারণত উত্তোলন করা তুলনামূলকভাবে সহজ ও কম ব্যয়বহুল।
ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে তার জাতীয় স্বর্ণের মজুতের পরিমাণ প্রকাশ করেনি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বর্ণ কেনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে বলে দাবি করে তারা। গত সেপ্টেম্বর ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মোহাম্মদর রেজা ফারজিন বলেন, ২০২৩-২০২৪ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশ্বে সর্বাধিক স্বর্ণক্রয়কারী পাঁচ ব্যাংকের একটি ছিল।
স্থানীয় গণমাধ্যম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা ইয়েকতা আশরাফির উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার চাপের মধ্যে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে স্বর্ণের মজুত বাড়ানো সহায়ক হবে।
ইরানে মোট ১৫টি স্বর্ণখনি রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড়টি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জারশোরান খনি। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো তেহরানের বিরুদ্ধে পরমাণু কর্মসূচির সামরিকীকরণের অভিযোগ আনার পর আরোপিত নিষেধাজ্ঞায় ইরানের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়াও, ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলার পর শুরু হওয়া ১২ দিনের যুদ্ধে, যুক্তরাষ্ট্র সাময়িকভাবে ইসরায়েলের সাথে ইরানের পরমাণু স্থাপনা লক্ষ্য করায় দেশের অর্থনৈতিক সংকট আরও গভীর হয়েছে। অত্যধিক মুদ্রাস্ফীতি এবং রিয়ালের অবমূল্যায়নের কারণে ক্রমাগত ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় অনেক ইরানির কাছে স্বর্ণ একটি নিরাপদ সম্পদ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ডলার অনানুষ্ঠানিক বাজারে প্রায় ১১.৭ লাখ রিয়াল এবং ইউরো প্রায় ১৩.৬ লাখ রিয়ালে লেনদেন হয়েছে বলে বিনিময় হার পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট বোনবাস্ট ও আলানচান্ড তথ্য দিয়েছে।