পাকিস্তানে দল ক্ষমতায় ফিরলে ফাতাহ-ই-মক্কা নীতি গ্রহণ করা হবে। অর্থাৎ সবাইকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান এ কথা বলেছেন। রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে দীর্ঘ ৩০ মিনিটের বৈঠকের পর পিটিআই নেতা আলী মুহাম্মদ খান এ কথা জানিয়েছেন।
ইমরান খান তাকে বলেছেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেব না, তবে দেশ ও জাতির উন্নয়নের স্বার্থে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
এ ব্যাপারে মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্ট করেছেন আলী মুহাম্মদ খান। তিনি ইমরান খানের বক্তব্য উদ্ধৃত করে লিখেছেন, ক্ষমতায় আসার পর আমরা কোনো রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেব না। আমরা দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য সামনে এগিয়ে নেব।
ইমরান খান কারাগার থেকে আরও বলেছেন, আমাদের ন্যায় ও ক্ষমাশীলতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। তেহরিক-ই-ইনসাফ, ক্ষমতায় আসার পর, পাকিস্তানকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাবে। কোনো প্রতিশোধ নয়। তিনি জানিয়েছেন, ইমরান খান দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়াত অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার কথা উল্লেখ করেছেন। যিনি দেশকে গড়ার জন্য একটি ন্যায় ও সমন্বয় সাধন কমিশন গঠন করেছিলেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে ২৬৫টি আসনের নির্বাচন হয়। এতে ইমরান খানের পিটিআইয়ের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৯২টি আসনে জয় পায়। নির্বাচনে নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এন (পিএমএল-এন) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৫টি আসন পেয়েছে। আর বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫৪টি আসন।
পিটিআই-পিপিপিকে সরকার গঠনের আহ্বান পিএমএল-এন নেতার
নির্বাচনের পর সরকার গঠন নিয়ে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে অনিশ্চয়তা চলার পর এ ইস্যুতে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) মধ্যে যখন সমঝোতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেই সময়ে এসে নতুন করে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন পিএমএল-এনের জ্যেষ্ঠ নেতারা। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের একাংশের ভাষ্য, পাকিস্তান এখন সার্বিকভাবে খুবই টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে এবং এখন সরকার গঠনের মানে হলো ‘স্বেচ্ছায় মাথায় কাঁটার মুকুট’ পরা। পিএমএল-এনের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা খাজা সাদ রফিক দলের এই অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে শুক্রবার খাজা সাদ রফিক বলেন, ‘পিটিআই যেহেতু সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে, তাই তাদেরই উচিত পিপিপির সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করা। দেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি, তাতে এই মুহূর্তে সরকার গঠনে নেতৃত্ব দেওয়ার মানে হলো নিজের মুকুটকে কাঁটা দিয়ে সজ্জিত করা। তাই আমরা মনে করি, পিএমএল-এনের এমন কোনো ইচ্ছে নেই।’
সাংবিধানিক বিধি অনুযায়ী, পাকিস্তানে কোনো দল বা জোট যদি সরকার গঠন করতে চায় তাহলে সেই দল বা জোটকে অবশ্যই ১৩৩টি আসনে জয়ী হতে হবে। তবে ৮ তারিখের নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, দেশটির প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দল পিটিআই, পাকিস্তান মুসলিম লিগ-এন (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে পিটিআই। মোট ৯২টি আসনে জয়ী হয়েছেন পিটিআই প্রার্থীরা।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পিএমএল-এন জয়ী হয়েছে মোট ৭৯টি আসনে এবং ৫৪টি আসন পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পিপিপি। অর্থাৎ সরকার গঠনের জন্য ন্যূনতম যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন, তা পায়নি কোনো দলই। ফলে অভূতপূর্ব এক অনিশ্চয়তা দেখা দেয় পাকিস্তানের রাজনীতিতে। এই সংকট কাটানোর সবচেয়ে উপযুক্ত সমাধান ছিল যেকোনো দুটি রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে জোট সরকার গঠন করা, কিন্তু কোন দুই দল জোট গঠন করবে, তা নিয়ে ৯ দিন ধরে পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক নাটকীয়তা পরিলক্ষিত হয়েছে। এমনকি উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে নেবে- এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছিল।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে, শুক্রবার লাহোরে পিএমএল-এনের উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শাহবাজ শরিফ, মরিয়ম নওয়াজ, ইসহাক দার, মরিয়ম আওরঙ্গজেব, খাজা সাদ রফিক, আজম নাজির তারার, আয়াজ সিদ্দিকীসহ আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা।
সেই বৈঠকে খাজা সাদ রফিকসহ কয়েকজন নেতা অভিমত দেন, পিএমএল-এনের উচিত কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের পরিবর্তে পাঞ্জাব প্রাদেশিক আইন সভায় সরকার গঠনের প্রতি মনোযোগী হওয়া। কারণ পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে নেতৃত্ব দিলে দলের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে।
শাহবাজ শরিফ, মরিয়ম নওয়াজ বা মরিয়ম আওরঙ্গজেব বৈঠকে তাৎক্ষণিকভাবে এর জোরালো বিরোধিতা করেননি। উপরন্তু, পাকিস্তানের সাবেক অর্থমন্ত্রী ইসাক দার জানিয়েছেন, পাঞ্জাবে প্রাদেশিক সরকার গঠনের জন্য পিএমএল-এন বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে শুক্রবার রাতে পাকিস্তানের দৈনিক জংকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পিএমএল-এনের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা আহসান ইকবাল বলেন, দেশকে স্থিতিশীল করতে পিএমএল-এন জোট সরকার গঠনে নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং দলের নীতির সঙ্গে কোনো প্রকার আপস না করেই এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে পিএমএল-এন।
সরকার গঠন করতে চায় না কোনো দল!
পাকিস্তানে নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কোনো দল। নির্বাচন হওয়ার ৯ দিন পেরিয়ে গেলেও কোন দল সরকার গঠন করবে, সেটি এখনো নিশ্চিত হয়নি। নির্বাচন শেষ হওয়ার পরপর সরকার গঠনের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছিল নওয়াজ শরিফের পিমএল-এন। তারা বিলাওয়াল ভু্ট্টোর পিপিপির সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা শুরু করে। তবে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পিপিপি প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টো জানান, তারা সরকারে যোগ দেবেন না। এর বদলে পিপিপি বিরোধী দল হিসেবে সংসদে যাবে। তিনি বলেন, ‘সরকার গঠন করার মতো ম্যান্ডেট আমাদের নেই।’
শুক্রবার ইমরান খান তার দল পিটিআইকে নির্দেশ দেন- জাতীয় পরিষদে যেন বিরোধী দল হিসেবে যায় তারা।
বিলাওয়াল ও ইমরানের কথায় স্পষ্ট, তারা সরকার গঠন বা সরকারে যোগ দেওয়ার পরিবর্তে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে চায়। কিন্তু শুক্রবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে আসা নতুন এক খবরে বলা হয়, নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এনের একটি অংশ ‘সরকার গঠন’ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। ওই অংশের ভাষ্য, যেহেতু তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা বা কোনো ধরনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি সেহেতু তাদের সরকার গঠন করা উচিত হবে না। তাদের আশঙ্কা, যদি তারা সরকার গঠন করেনও সেটি খুবই দুর্বল সরকার হবে এবং খুব বেশি দিন টিকতে পারবে না।
গাজার দক্ষিণে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি সংস্থার পরিচালিত নতুন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে মঙ্গলবার হাজারো ফিলিস্তিনি ভিড় করেন। এ সময় চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ইসরাইল এদিন গাজায় নতুন ত্রাণ বিতরণ পদ্ধতি কার্যকর করে।
ফিলিস্তিনের রাফা থেকে এএফপি জানায়, মাত্র কয়েকদিন আগে ইসরাইল কর্তৃক আরোপিত পূর্ণাঙ্গ ত্রাণ অবরোধ আংশিকভাবে শিথিল করার পর রাফায় এ ঘটনা ঘটেছে। ২ মার্চ থেকে আরোপিত সেই অবরোধ খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সংকট তৈরি করে।
পরে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু স্বীকার করেন যে ‘ত্রাণকেন্দ্রে এক মুহূর্তের জন্য নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলাম’। তবে এক জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা এই বিতরণকে ‘সফলতা’ হিসেবে আখ্যা দেন।
যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) জানায়, বিশৃঙ্খলা সত্ত্বেও স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে।
বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী আয়মান আবু যায়েদ এএফপিকে বলেন, তিনি কেন্দ্রে সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন, ‘হঠাৎ করেই অনেক মানুষ ধাক্কা দিয়ে এলোমেলোভাবে ঢুকে পড়তে থাকে’।
তিনি বলেন, ‘এটা হয়েছে ত্রাণের অভাব এবং বিলম্বের কারণে। মানুষ ভেতরে ঢুকে যতটুকু পারা যায় সংগ্রহের চেষ্টা করেছে।’
একপর্যায়ে ‘ইসরাইলি বাহিনী গুলি ছোড়া শুরু করে, শব্দটা খুব ভয়ের ছিল। মানুষ ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। তারপরও অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণ নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যায়।’
পরবর্তীতে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানায়, তারা ‘কেন্দ্রের বাইরের এলাকায় সতর্কতামূলক গুলি’ ছুঁড়েছে।
তারা আরও জানায়, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে, ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিকল্পনামাফিক চলবে, এবং আইডিএফ (ইসরাইলি বাহিনী)-এর সদস্যদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়নি।’
জিএইচএফ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘এসডিএস (ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র)-এ একসময় এত বেশি ভিড় হয় যে আমাদের দল পেছনে সরে গিয়ে কিছু সংখ্যক গাজাবাসীকে নিরাপদে ত্রাণ নিতে দেয় এবং ছত্রভঙ্গ হতে দেয়।’
‘স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে’, যোগ করে সংস্থাটি।
এএফপির ফুটেজে দেখা গেছে, মঙ্গলবার বিপুল সংখ্যক মানুষ ত্রাণের বাক্স, যার গায়ে ‘জিএইচএফ’ চিহ্ন ছিল, বহন করে এলাকা ত্যাগ করছে।
-‘৪,৬২,০০০ খাবারের ব্যবস্থা’-
জিএইচএফ আরও জানিয়েছে, ‘হামাসের আরোপিত অবরোধ’ তাদের একটি কেন্দ্রে কয়েক ঘণ্টার বিলম্ব সৃষ্টি করেছে।
এদিকে হামাসের সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজায় ত্রাণ বিতরণের জন্য ইসরাইলের নতুন উদ্যোগ ‘চরমভাবে ব্যর্থ’ হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যর্থতা দেখা দেয় তখন, যখন হাজার হাজার ক্ষুধার্ত মানুষ, যারা প্রায় ৯০ দিন ধরে দখলদার বাহিনীর অবরোধে খাদ্য ও ওষুধবিহীন অবস্থায় রয়েছে, দুঃখজনক ও মর্মন্তুদ দৃশ্যের মধ্যে ওইসব এলাকায় ছুটে যায়।’
মঙ্গলবারের বিবৃতিতে জিএইচএফ জানায়, এখন পর্যন্ত ‘প্রায় ৮,০০০ খাবারের বাক্স বিতরণ করা হয়েছে... যা ৪,৬২,০০০ খাবার হিসেবে গণ্য’। তারা জানায়, এর আগের দিন থেকেই কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।
এক জ্যেষ্ঠ ইসরাইলি সামরিক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘আজকের দিনটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের জন্য সফল ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘হামাস চেষ্টা করেছিল যেন সাধারণ মানুষ ভয় পেয়ে এগিয়ে না আসে। কিন্তু গাজাবাসীরা হাজার হাজার প্যাকেজ নিতে এসেছিল।’
ইসরাইল জিএইচএফ-এর ত্রাণ বিতরণ প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করছে, এবং বলছে যে তারা ত্রাণকে হামাসের হাত থেকে দূরে রাখতে চায়।
মঙ্গলবার নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা আমাদের মার্কিন বন্ধুদের সঙ্গে পরিকল্পনা করেছি, যাতে ত্রাণ বিতরণ সাইটগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় এবং একটি মার্কিন কোম্পানি ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর মধ্যে খাবার বিতরণ করে।’
‘এক মুহূর্তের জন্য নিয়ন্ত্রণ হারানো গিয়েছিল, তবে পরে তা পুনরুদ্ধার করা গেছে।’
-‘হৃদয়বিদারক দৃশ্য’-
জিএইচএফ-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তারা ইসরাইলের সামরিক লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়তা করছে, ফিলিস্তিনিদের উপেক্ষা করছে, জাতিসংঘের ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়েছে এবং মানবিক নীতিমালার সঙ্গে অসামঞ্জস্য আচরণ করছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র মঙ্গলবারের দৃশ্যকে ‘নেহায়েত হৃদয়বিদারক’ বলে উল্লেখ করেন।
স্টেফান দুজারিক বলেন, ‘গত সপ্তাহে মহাসচিব যা বলেছেন, আমরা ও আমাদের অংশীদাররা একটি সুসংহত, নীতিনির্ভর, পরিচালনাযোগ্য পরিকল্পনা তৈরি করেছি, যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন নিয়ে জরুরি মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।’
জেনেভায় গত ফেব্রুয়ারিতে নিবন্ধিত হলেও, জিএইচএফ-এর কোনো অফিস বা প্রতিনিধি নেই মানবিক বিশ্বের অঘোষিত রাজধানীতে।
সংস্থাটির সাবেক নির্বাহী পরিচালক জেক উড রোববার পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, মানবিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করা সম্ভব নয়।
কিছু মানবিক কর্মী যুক্তি দিয়েছেন যে, নিরাপদ ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র নির্ধারণের মাধ্যমে মানুষকে পুনরায় স্থানচ্যুত হতে বাধ্য করা মানবিক নীতির লঙ্ঘন।
সমালোচকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, এসব বিতরণ কেন্দ্র কোথায় হবে তা কে নির্ধারণ করেছে ু বিশেষ করে যখন ইসরাইল ‘গাজা বিজয়ের’ পরিকল্পনা করছে বলে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
জাতিসংঘ জিএইচএফ-এর পরিকল্পনায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘এটি আমাদের মৌলিক নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় নিরপেক্ষতা, স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতার মতো নীতিগুলোর সঙ্গেও না।’
২৪ মে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরাইলি কর্মকর্তাদের বরাতে বলা হয়, গাজার জন্য যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত নতুন ত্রাণ পরিকল্পনাটি ‘মূলত ইসরাইলিদের দ্বারা তৈরি ও পরিকল্পিত, এর লক্ষ্য হামাসকে দুর্বল করা।’
ইউরোপীয় অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (এসিইএ) মঙ্গলবার জানিয়েছে, চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতাদের শেয়ার বৃদ্ধি পাওয়ায় এপ্রিল মাসে ইলন মাস্কের টেসলার তৈরি গাড়ির বিক্রি অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে।
প্যারিস থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশে সামগ্রিকভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি বৃদ্ধি পেলেও, ইলন মাস্কের টেসলার শেয়ার নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে।
ইউরোপীয় অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (এসিইএ) জানিয়েছে, এপ্রিল মাসে টেসলার বিক্রি কমে ৫ হাজার ৪৭৫টি গাড়িতে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৫২.৬ শতাংশ কম।
২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে, টেসলার বিক্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬.১ শতাংশ কমে ৪১ হাজার ৬৭৭টি গাড়িতে দাঁড়িয়েছে।
জেটো ডায়নামিক্সের পরামর্শদাতাদের মতে, একসময় বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রিতে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান টেসলাকে এপ্রিল মাসে ভক্সওয়াগন, বিএমডব্লিউ, রেনল্ট এবং চীনা নির্মাতা বিওয়াইডিসহ ১০টি প্রতিদ্বন্দ্বী টেসলাকে ছাড়িয়ে গেছে।
টেসলা এপ্রিল মাসে ঘোষণা করেছিল, প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপী তাদের বিক্রয় ১৩ শতাংশ কমেছে, যা মাস্কের ওপর চাপ বাড়িয়েছে, যদিও কোম্পানিটি আংশিকভাবে মডেল ওয়াই স্ট্যান্ডার্ড-বেয়ারার আপগ্রেডের কারণে উৎপাদন হ্রাসের জন্য দায়ী করেছে।
মাস্ক তখন থেকেই ঘোষণা করেছেন, তিনি ট্রাম্পকে মার্কিন সরকারের ব্যয় কমাতে সাহায্য করার জন্য তার কাজ কমিয়ে দেবেন এবং গত সপ্তাহে বলেছিলেন টেসলার বিক্রয় ‘ভালো’ হচ্ছে।
এসিইএ তথ্য অনুসারে, এপ্রিল মাসে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি গত বছরের তুলনায় সামগ্রিকভাবে ২৬.৪ শতাংশ বেড়ে বাজারের ১৫.৩ শতাংশ অংশ দখল করেছে।
ইউরোপ জুড়ে এই বৃদ্ধি অসম কারণ বিভিন্ন সরকার এবং নির্মাতারা বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়। জার্মানি, বেলজিয়াম, ইতালি এবং স্পেনে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। তবে ফ্রান্সে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি কমেছে।
এসিইএ-এর মহাপরিচালক সিগ্রিড ডি ভ্রিস বলেন, ব্যাটারি-বৈদ্যুতিক যানবাহনের চাহিদা ধীরে ধীরে গতি পাচ্ছে, কিন্তু ইইউ দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি ক্রমবর্ধমান এবং অসম রয়ে গেছে’।
তিনি বলেন, ‘ব্যাটারি-ইলেকট্রিক যানবাহনকে মূলধারার পছন্দে পরিণত করার জন্য, সরকারগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির শর্তাবলী, যেমন ক্রয় এবং আর্থিক প্রণোদনা, রিচার্জিং অবকাঠামো এবং বিদ্যুতের দাম বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখা অপরিহার্য।’
ইউরোপীয় বাজারে এখনও ছোট বৈদ্যুতিক ব্যাটারি সহ হাইব্রিড গাড়ির বিক্রি প্রাধান্য পেয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে ২০.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে একই সময়ে কেবল পেট্রোল-চালিত গাড়ি ২০.৬ শতাংশ কমেছে।
বিওয়াইডি, এমজি, এক্সপেং এবং লিপমোটর ব্র্যান্ডগুলোর বৈদ্যুতিক এবং হাইব্রিড বিক্রয় বছরে ৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এসিইএ বিশেষজ্ঞ ফেলিপ মুনোজ বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বৈদ্যুতিক যানবাহনের মতো চীনা হাইব্রিড গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপ করে কিনা তা এখনও দেখার বিষয়।
২০৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ এবং ২০৩০ সালের এক্সপোসহ বড় বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজনের প্রস্তুতির আগে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করতে চায় সৌদি আরব। এ লক্ষ্যে ২০২৬ সালের মধ্যে ৬০০টি পর্যটন স্থানে দীর্ঘদিনের জন্য মদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এক ধাক্কায় ‘অতি-রক্ষণশীল’ দেশটি পাঁচ তারকা হোটেল, বিলাসবহুল রিসোর্ট এবং প্রবাসী-বান্ধব কম্পাউন্ডসহ লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্থানে ওয়াইন, বিয়ার এবং সাইডার বিক্রির অনুমতি দেবে। তবে জনসাধারণ, বাড়ি, দোকান এবং ফ্যান জোনে মদ্যপান নিষিদ্ধ থাকবে।
দ্য সানের প্রতিবেদন বলছে, এই নাটকীয় নীতিগত পরিবর্তন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভিশন ২০৩০’-এর অংশ। এর লক্ষ্য আন্তর্জাতিক পর্যটন বৃদ্ধি করা, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং এর ‘টিটোটাল ভাবমূর্তি’ ঝেড়ে ফেলা।
কর্মকর্তারা আশা করছেন, নিওম, সিন্দালাহ দ্বীপ এবং লোহিত সাগর প্রকল্পের মতো জমকালো এলাকায় নিয়ন্ত্রিত অ্যালকোহল বিক্রি দেশটিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের মতো উপসাগরীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সুবিধা দেবে-যেখানে পর্যটন অঞ্চলে মদ্যপান ইতোমধ্যেই বৈধ। দ্য সানের প্রতিবেদন অনুসারে, লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্থানগুলো কঠোরভাবে ‘নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার’ অধীনে পরিচালিত হবে। প্রশিক্ষিত কর্মী এবং অপব্যবহার রোধ ও দেশের ইসলামী মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার জন্য কঠোর নিয়ম থাকবে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লক্ষ্য হলো-সাংস্কৃতিক পরিচয় না হারিয়ে বিশ্বকে স্বাগত জানানো। বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে সৌদি আরবকে একটি প্রগতিশীল, অথচ সম্মানজনক খেলোয়াড় হিসেবে স্থান দেওয়া। প্রতিবেদন অনুসারে, এই পরিকল্পনাটি ২০২৬ সালে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে - বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আট বছর আগে। দেশের ভাবমূর্তি আধুনিকীকরণের ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত এসেছে।
দ্য সানের প্রতিবেদন আরও বলছে, চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঘোষণা করেছিলেন, ২০৩৪ বিশ্বকাপে মদ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হবে। এরপর এটি ইংল্যান্ডের ফুটবল ভক্তদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়।
সৌদির উপ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন বন্দর আল সৌদ গত ফেব্রুয়ারিতে এলবিসি রেডিওকে বলেছিলেন, ‘এখানে কোনো অ্যালকোহল নেই, বরং আমাদের আবহাওয়ার মতো, এটি একটি শুষ্ক দেশ। প্রত্যেকেরই নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। আমরা আমাদের সংস্কৃতির সীমানার মধ্যে থাকা মানুষকে আপন করে নিতে পেরে খুশি, কিন্তু আমরা অন্য কারও জন্য আমাদের সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে চাই না। এটি কোনো সৌদি অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি ‘বিশ্ব অনুষ্ঠান’ এবং অনেকাংশে যারা আসতে চান তাদের আমরা স্বাগত জানাব।’
এরপর বিষয়টি পশ্চিমা মহলে ক্ষোভের জন্ম দেয়। দ্য সান অনুসারে, কিন্তু এখন সৌদি অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা আশা করছেন, নতুন মদ নীতি সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দেবে এবং দেখাবে যে, দেশটি ‘পার্টি করতে প্রস্তুত’, তবে সীমাবদ্ধতার মধ্যে।
সূত্র দ্য সানকে জানায়, এই মডেলটি দুবাই এবং মানামায় সফল ‘অ্যালকোহল প্রচারণা’ থেকে অনুপ্রাণিত। যেখানে কঠোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, ফলে ঐতিহ্যকে নষ্ট না করে পর্যটন এবং ব্যবসাকে বাড়িয়ে তুলেছে। সৌদি জোর দিয়ে বলছে, কেউ আইনের অপব্যবহার করলে, ধরা পড়লে তাকে দ্রুত পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।
দ্য সান বলছে, একটি সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিক্রয় কেবলমাত্র নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে হবে, লাইসেন্সপ্রাপ্ত পরিষেবাকর্মী এবং স্পষ্ট পরিচালনামূলক নিয়মাবলী নিশ্চিত করার জন্য, যাতে অ্যালকোহল দায়িত্বশীলতা এবং সম্মানের সাথে পরিচালনা করা হয়।’ আরও জানানো হয়, ২০% এর বেশি ‘ABV’ স্পিরিট এবং হার্ড লিকার নিষিদ্ধ থাকবে। দোকান, টেকওয়ে বা হোম ব্রুয়িং থাকবে না।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বর্বরতা অব্যাহত রয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৭৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আল-জাজিরাকে স্থানীয় একটি চিকিৎসা সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদন বলছে, হামলা অব্যাহত থাকায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ছে। গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে এক পরিবারকে লক্ষ্য করে চালানো বোমাবর্ষণে প্রায় ৫০ জন নিহত বা নিখোঁজ হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। তারা অভিযোগ করেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মজা করে বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, গাজার পরিস্থিতি এখন এই ‘নিষ্ঠুর সংঘর্ষের সবচেয়ে নিষ্ঠুর পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিরা অভুক্ত থেকে মরছে, অথচ ইসরায়েল সাহায্য হিসেবে কেবল ‘এক চামচ ত্রাণ’ প্রবেশ করতে দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত অবরুদ্ধ উত্তর গাজায় কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৩ হাজার ৮২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজার ৩৮২ জন। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, মৃতের প্রকৃত সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০-এর বেশি হতে পারে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ চাপা পড়ে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খাবারে পানি মিশিয়ে বেশি দিন চালানোর চেষ্টা
দুই বছর বয়সী মেয়ার, হাসপাতালে একটি বেডে শুয়ে আছে। তার পাঁজরের হাড় বেরিয়ে এসেছে, পেট ফোলা। মেয়ের দুর্বল হাত ধরে শার্ট পরিয়ে দিচ্ছিলেন মা আসমা আল-আর্জা। বেডে শুয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে হঠাৎ চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। এই প্রথম নয়, আগেও অপুষ্টির কারণে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে গাজা উপত্যকার এই নিষ্পাপ শিশুটি। তবে এবারই টানা ১৭ দিন বাচ্চাটি হাসপাতালে রয়েছে বলে জানান তার মা।
মেয়ারের সিলিয়াক ডিজিজ নামের একটি বিশেষ রোগ রয়েছে। এ কারণে গ্লুটেনজাত খাবার খেতে পারে না সে, তার জন্য বিশেষ খাবারের দরকার হয়। কিন্তু ১৯ মাসের যুদ্ধ আর ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের কারণে গাজায় এই খাবার এখন আর নেই। সাধারণ খাবারও সে হজম করতে পারে না। মেয়ারের মা বলেন, ডায়াপারের পাশাপাশি ওর সয়ামিল্ক আর বিশেষ খাবারের দরকার। কিন্তু সীমান্ত বন্ধ থাকায় এগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও অনেক দাম, আমি কিনতে পারি না। জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর গাজায় নয় হাজারের বেশি শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। আগামী বছর এই সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইসরায়েল যদি সামরিক অভিযান বন্ধ না করে এবং গাজায় ত্রাণ প্রবেশের ওপর আরোপিত অবরোধ পুরোপুরি না তুলে নেয়, তাহলে গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে বারবার সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে গাজায় অনেক মানুষ খাবার পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের ফিলিস্তিনি অঞ্চলের প্রতিনিধি নেস্টর ওয়োমুহাঙ্গি বলেন, গাজার যেদিকে তাকাবেন, ক্ষুধার্ত মানুষ চোখে পড়বে। সবাই ইশারায় দেখান যে তারা খাবার চান। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় এখন সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি চলছে।
টানা অবরোধে টান পড়েছে ত্রাণে
সবশেষ গত ২ মার্চ গাজায় সব ধরনের খাদ্য, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় পণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইসরায়েল। প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনির বসবাস এই অঞ্চলে। একের পর এক বিমান হামলা ও স্থল অভিযানের সঙ্গে চলছে এই অবরোধ। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে গাজার মানুষ বাইরের সহায়তার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। কারণ ইসরায়েলের হামলায় স্থানীয়ভাবে খাবার উৎপাদনের প্রায় সব ব্যবস্থাই ধ্বংস হয়ে গেছে।
অবরোধের পর গাজার খাদ্যসংকট নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে প্রথমদিকে ইসরায়েল দাবি করেছিল, গাজায় পর্যাপ্ত খাবার আছে। তবে শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এরপর চলতি সপ্তাহে গাজায় সীমিত পরিসরে শিশুখাদ্যসহ মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেয় ইসরায়েল।
জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েল যেটুকু সহায়তা প্রবেশ করতে দিয়েছে, তা একেবারেই অপ্রতুল। অবরোধের আগে প্রতিদিন প্রায় ৬০০টি ত্রাণের ট্রাক গাজায় প্রবেশ করত। বর্তমানে যা প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে, তা আগের সংখ্যার ধারেকাছেও নয়।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থার সদস্য টেস ইনগ্রাম বলেন, এরই মধ্যে গাজায় শিশুরা অপুষ্টিতে মারা যেতে শুরু করেছে। যদি দ্রুত পুষ্টিকর খাবার না পৌঁছায়, তাহলে আরও অনেক শিশু প্রাণ হারাতে পারে। তাছাড়া, সামরিক নিয়মকানুন ও গাজার অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ায় সহায়তা ঠিকঠাক পৌঁছানোও কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানান, মধ্য গাজায় কয়েকটি গুদামে ১২টির বেশি ট্রাক পৌঁছেছে। অবরোধ কিছুটা শিথিল হওয়ার পর এটিই প্রথম সহায়তা, যা সরাসরি বিতরণের জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে।
এদিকে, হামাস সদস্যরা ত্রাণ আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে ইসরায়েল। যদিও তারা এই বক্তব্যের সপক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি ত্রাণ বিতরণের নতুন পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। নতুন পরিকল্পনায় হামাস যোদ্ধারা যাতে খাবার না পায়, তা নিশ্চিত করা হবে বলে জানানো হয়েছে। যদিও নেতানিয়াহুর এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘসহ অন্যান্য ত্রাণদাতা সংস্থা।
অনবরত হামলার কারণে এত এত আহত মানুষ নিয়ে চরম সংকটে পড়েছে গাজার হাসপাতালগুলো। সেখানকার খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে সবসময় রোগীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অ্যাপলের পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ার পর শুক্রবার বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে।
নিউইয়র্ক থেকে এএপি জানায়, ওয়াল স্ট্রিটের তিনটি প্রধান সূচক পুরো দিন ধরে পড়তির মধ্যেই ছিল। সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে প্রযুক্তি ভিত্তিক নাসদাক সূচক, যেখানে অ্যাপলের শেয়ার একাই ৩ শতাংশ কমে গেছে।
প্যারিস ও ফ্রাঙ্কফুর্টের বাজার প্রায় ১.৫ শতাংশ করে কমেছে, বিশেষ করে বিলাসবহুল পণ্য ও গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলোর শেয়ারমূল্য ট্রাম্পের হুমকিতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে তিনি ইইউর পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন।
লন্ডনের এফটিএসই ১০০ সূচকও প্রাথমিক বৃদ্ধি শেষে দিনের শেষে নেতিবাচক হয়ে পড়েছে।
জার্মানির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির তথ্য ইতিবাচকভাবে সংশোধন হওয়ায় দিনের শুরুতে ডিএএক্স সূচক কিছুটা বাড়লেও পরে তা পড়ে যায়।
শুল্কনীতি শাস্তিমূলক, অর্থনৈতিক নয়:
বিনিয়োগ পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান কুইল্টারের কৌশলবিদ লিন্ডসে জেমস বলেন, ‘চীনের তুলনায় ইইউ এখন বেশি শুল্কের মুখে পড়ছে—এটা কয়েক সপ্তাহ আগেও অকল্পনীয় ছিল। এতে বোঝা যাচ্ছে, এই নীতি অর্থনৈতিক যুক্তির চেয়ে শাস্তিমূলক উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।’
এদিকে তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে, যদিও দিনে তা একবার এক শতাংশের মতো পড়ে গিয়েছিল। ডলারের দাম ছিল চাপে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি এবং চীনের সঙ্গে শুল্ক স্থগিতের পর বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আশাবাদী হলেও ট্রাম্পের নতুন হুমকিতে সেই আস্থা আবারও নড়বড়ে হয়ে গেছে।
স্টোনএক্সের বাজার বিশ্লেষক ফাওয়াদ রাজাকজাদা বলেন, ‘বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে যত আশাবাদই ছিল, মূহূর্তেই সব শেষ হয়ে গেছে।
এদিকে ট্রাম্প তার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'ট্রুথ সোশ্যাল'-এ লেখেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা এগোচ্ছে না, তাই ১ জুন থেকে আমি ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সুপারিশ করছি।’
এক্সটিবি প্ল্যাটফর্মের গবেষণা পরিচালক ক্যাথলিন ব্রুকস বলেছেন, ট্রাম্পের প্রতি ইইউর নেতাদের বিশ্বাসের অভাব ও তাঁর ব্যক্তিগত অসন্তোষের কারণে দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
গত মাসে ট্রাম্প ইইউর পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেও আলোচনার সুযোগ দিতে তা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছিলেন। তবে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক এবং গাড়ি, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামে ২৫ শতাংশ শুল্ক এখনও বহাল রয়েছে।
শুক্রবার তিনি হুঁশিয়ারি দেন, অ্যাপলের আইফোন যদি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি না হয়, তবে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে।
প্রথমে শুধু অ্যাপলকে লক্ষ্য করলেও পরে তিনি বলেন, এই শুল্ক অন্য সব স্মার্টফোন নির্মাতাদেরও (যেমন স্যামসাং) প্রভাবিত করতে পারে।
এই ঘোষণাগুলোর ফলে শেয়ারবাজারে নতুন করে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। আগে থেকেই মার্কিন ঋণ ও সুদের হার বাড়ার আশঙ্কায় বাজার চাপে ছিল ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমতি বাতিল করেছে এবং বর্তমানে ভর্তি থাকা শিক্ষার্থীদের অন্যত্র স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে। অন্যথায় তারা যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অবস্থান হারাতে পারে বলে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (ডিএইচএস)। হার্ভার্ড এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ও প্রতিশোধমূলক বলে আখ্যা দিয়েছে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিব ক্রিস্টি নোয়েম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম (এসইভিপি) প্রত্যয়ন বাতিলের নির্দেশ দেন।
ডিএইচএস-এর বিবৃতিতে বলা হয়, হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে আগেই চাওয়া কিছু তথ্য সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নোয়েম বলেন, 'এই প্রশাসন হার্ভার্ডকে জবাবদিহির আওতায় আনছে—যেহেতু তারা সহিংসতা ও ইহুদিবিদ্বেষ ছড়াচ্ছে এবং ক্যাম্পাসে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সমন্বয় করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ কোনো অধিকার নয়, বরং একটি সুবিধা, যা তারা অধিক টিউশন ফি নিয়ে বহু বিলিয়ন ডলারের তহবিল ফুলিয়ে তোলার কাজে ব্যবহার করে।'
হার্ভার্ড পাল্টা বিবৃতিতে জানায়, 'সরকারের এই পদক্ষেপ অবৈধ। আমরা হার্ভার্ডে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও গবেষকদের উপস্থিতি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশ থেকে আসা এসব মানুষ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও পুরো জাতিকে অসামান্যভাবে সমৃদ্ধ করেন।'
হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।
এই সিদ্ধান্তকে ট্রাম্প প্রশাসনের হার্ভার্ড-বিরোধী অভিযানের একটি বড় ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই ম্যাসাচুসেটসের এই আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ‘বামপন্থী’ বা ‘মার্কসবাদী’ আদর্শ ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করে আসছেন।
গত মাসে হার্ভার্ড একটি ২.২ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল বরাদ্দ স্থগিতাদেশের মুখে পড়ে, কারণ তারা হোয়াইট হাউসের দেওয়া একগুচ্ছ শর্ত প্রত্যাখ্যান করে।
এসব শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কাঠামো, নিয়োগ নীতি ও ভর্তি পদ্ধতিতে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছিল, যার মধ্যে ছিল বৈচিত্র্য সংক্রান্ত দপ্তরগুলো বন্ধ করা এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্ক্রিনিংয়ে অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করা।
হার্ভার্ড পরে এই বরাদ্দ স্থগিতাদেশ ঠেকাতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করে।
পাকিস্তানে একটি স্কুলবাসে বোমা হামলার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে আটজনে দাঁড়িয়েছে। হামলায় গুরুতর তিন শিশু আজ শুক্রবার মারা যাওয়ার পর হতাহতের এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে। গত বুধবার দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেলুচিস্তান প্রদেশের খুজদার শহরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী বলেছে, এই হামলায় বিদ্রোহীদের মদদ দিয়েছে ভারত।
নিহতদের মধ্যে দুই সেনাও রয়েছেন। সেনাসদস্যরা হামলার সময় বাসে ছিলেন। পাকিস্তানের এই প্রদেশটিতে কয়েক দশক ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদীর বিদ্রোহ করে আসছে।
বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, হামলায় ৩৯ শিশুসহ মোট ৫৩ জন আহত হয়েছেন। শিশুরা তাদের আর্মি পাবলিক স্কুলে যাওয়ার সময় বোমা হামলার শিকার হন।
পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ বলেছেন, আহত শিশুদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে ভারতের নির্দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত বালুচ লিবারেশন আর্মির বিদ্রোহীরা বোমা হামলা চালিয়েছে। ভারতের পরামর্শে সংগঠনটিকে ২০১৯ সালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র।
শরিফ বলেন, পাকিস্তানের কাছে প্রমাণ আছে যে, ‘পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী হামলা’ পরিচালনা করছে ভারত। এসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর দেওয়া উচিত বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে ভারত এই অভিযোগের কোনো জবাব দেয়নি এবং পাকিস্তানও নিজের দাবির সমর্থনে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।
কোনো গোষ্ঠী এখন পর্যন্ত ওই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
চলতি মাসের শুরুতে দুই পক্ষের মধ্যে চার দিনের সীমান্ত সংঘর্ষের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখনও চরমে। এমনকি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার আগেও উভয় পক্ষই সীমান্তে গুলি চালিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার (২১ মে) সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসির ইহুদি জাদুঘরের কাছে এ ঘটনা ঘটে।
সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান ক্রিস্টি নোম। তিনি জানান, এ হামলার ঘটনা ঘটেছে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) ওয়াশিংটন কার্যালয়ের একেবারে কাছাকাছি এলাকায়।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি জানান, তিনি ওয়াশিংটনের বর্তমান অ্যাটর্নি ও সাবেক বিচারক জ্যানিন পিরোর সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন।
এদিকে, এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন। এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এ ঘটনাকে তিনি ‘একটি বর্বর ও ইহুদি-বিদ্বেষমূলক সন্ত্রাসী হামলা’ বলে উল্লেখ করেন।
তবে বুধবার রাত পর্যন্ত হামলার সঙ্গে কারা জড়িত কিংবা কী উদ্দেশ্যে এ হামলা চালানো হয়েছে, সে সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি পুলিশ।
ড্যানন বলেন, ‘আামদের বিশ্বাস, এই জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। বিশ্বের যেখানেই হোক না কেন, ইসরায়েল তার নাগরিক ও কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের সুরক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে থাকবে।’
যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিপ্টোকারেন্সি সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের আশাবাদের জেরে বিটকয়েনের দাম বুধবার নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে।
লন্ডন থেকে এএফপি জানায়, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন এদিন বেড়ে দাঁড়ায় সর্বকালের সর্বোচ্চ ১,০৯,৪৯৯.৭৬ মার্কিন ডলারে, যা আগের সর্বোচ্চ রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে। আগের রেকর্ডটি হয়েছিল ২০ জানুয়ারি, যেদিন ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন।
বিশ্লেষকদের মতে, বিটকয়েনের এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা এসেছে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ক একটি প্রস্তাবিত আইনের প্রতি ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলের সমর্থনের কারণে। ওই আইনটি মূলত ‘স্টেবলকয়েন’ নিয়ন্ত্রণে প্রণয়ন করা হচ্ছে—যেসব ডিজিটাল কয়েনের মান ডলারের সঙ্গে যুক্ত।
যদিও বিটকয়েন সরাসরি ডলারের সঙ্গে সংযুক্ত নয়, তবুও এই আইনের মধ্য দিয়ে খাতটির জন্য একটি সুস্পষ্ট নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা বিটকয়েনকেও ইতিবাচক প্রভাবিত করেছে।
এ ছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে, যা বিটকয়েনের মূল্যবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচনী প্রচারে ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি সমর্থন জানানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন।
তবে, তিনি বিশ্বজুড়ে যে নতুন শুল্ক আরোপ করেন, তা বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ন করেছিল।
চলতি বছরের ৮ মে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের পর বিটকয়েন ফের প্রতীকী ১ লাখ ডলারের সীমা অতিক্রম করে, যা এর আগে ফেব্রুয়ারিতে ছুঁয়েছিল।
ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলো শুরুর পর থেকেই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কখনো চরম দোলাচলের জন্য, কখনো আবার শিল্পখাতের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পতনের জন্য। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এফটিএক্স নামের এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মটির ধস।
বিটকয়েন তৈরি হয়—বা ‘মাইনিং’ করা হয়—যখন শক্তিশালী কম্পিউটার ব্যবহার করে জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধান করে একটি হস্তক্ষেপ-প্রতিরোধী নিবন্ধনপদ্ধতি ‘ব্লকচেইন’-এ লেনদেন যাচাই করা হয়।
চীন বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নতুন চিপ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা করেছে। একে হয়রানি ও নিপীড়ন আখ্যা দিয়ে সতর্ক করেছে যে উচ্চ প্রযুক্তির সেমিকন্ডাক্টরের ওপর চীনের প্রবেশাধিকার সীমিত করার যেকোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তারা পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। বেইজিং থেকে এএফপি এ খবর দিয়েছে।
বেইজিংয়ের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপগুলো একতরফাভাবে চাপিয়ে দেওয়া সোজাসাপটা হয়রানি ও সুরক্ষাবাদের উদাহরণ। যা বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর শিল্প ও সরবরাহ পরিস্থির স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে ।
সম্প্রতি ৪০ রোহিঙ্গাকে সাগরে ছুড়ে ফেলে মিয়ানমারে ফিরতে বাধ্য করেছে ভারতের কর্তৃপক্ষ। এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলে। ভারতের এমন ‘নিন্দনীয়’ কাজের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, এপির মতো প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলোতে। এরই মধ্যে এই অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল।
যেভাবে সাগরে ফেলা হয় রোহিঙ্গাদের
গত ৮ মে সন্ধ্যায় দিল্লির এক তরুণ রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমার থেকে একটি ফোনকল পান। ফোনের অন্যপাশে ছিলেন তার বাবা-মা। তরুণ বলেন, বাবা-মা আমাকে জানান, তাদের সমুদ্রের মাঝখানে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। মাত্র দুই দিন আগেই ওই তরুণ দেখেছিলেন, পুলিশ তাদের বাড়ি থেকে তার বাবা-মাসহ আরও ৪১ জনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর ফোনে তার বাবা-মা তাকে এক নির্মম অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন। তারা জানান, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের একটি নৌবাহিনী জাহাজ থেকে আন্দামান সাগরে নামিয়ে দেয় এবং কেবল লাইফ জ্যাকেট পরে সাঁতরে মিয়ানমারের ভূখণ্ডে পৌঁছাতে বাধ্য করে।
ভুক্তভোগীদের নির্মম অভিজ্ঞতা
গত শুক্রবার পাঁচজন রোহিঙ্গা শরণার্থী বার্তা সংস্থা এপিকে নিশ্চিত করেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা সেই দলের মধ্যে ছিলেন, যাদের ৬ মে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আটক করেছিল। ওই দলে ১৫ জন খ্রিষ্টানও ছিলেন। তাদের একটি বিমানযোগে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে ৮ মে ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের সাগরে ফেলে দেয়।
যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রোহিঙ্গারা
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পক্ষে আইনি লড়াই করা আইনজীবী দিলাওয়ার হুসেইন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে একটি আবেদন জমা দিয়েছে, যাতে তাদের ফেরত এনে আবার দিল্লিতে বসবাসের সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ভারতের নৌবাহিনী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
জাতিসংঘ কী বলছে
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের দপ্তর গত ১৫ মে এক বিবৃতিতে জানায়, অন্তত ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নয়াদিল্লিতে আটক করা হয় এবং ভারত-মিয়ানমার জলসীমার কাছে ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের সাগরে ফেলে দেয়। শরণার্থীদের মধ্যে শিশু, নারী ও বৃদ্ধও ছিলেন। তারা সাঁতরে উপকূলে পৌঁছান। তবে তারা বর্তমানে মিয়ানমারে কোথায় রয়েছেন, তা জানা যায়নি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে জাতিসংঘ জানায়, এই ঘটনাকে তারা ‘অবিবেচনাপ্রসূত, গ্রহণযোগ্য নয় এমন আচরণ’ হিসেবে অভিহিত করছে এবং তদন্তের জন্য একজন জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি ভারত সরকারকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি ‘অমানবিক ও জীবনহানিকর আচরণ’ বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক টম অ্যান্ড্রিউজ এই ঘটনাকে ‘আন্তর্জাতিক সুরক্ষার প্রয়োজন যাদের, তাদের জীবন ও নিরাপত্তার প্রতি প্রকাশ্য অবজ্ঞা’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি এটিকে ‘একটি ভয়াবহ ঘটনা’ হিসেবেও বর্ণনা করেন।
অ্যান্ড্রিউজ আরও বলেন, এমন নিষ্ঠুর কাজ মানবতাবিরোধী এবং ‘নন-রিফাউলমেন্ট’ নীতির গুরুতর লঙ্ঘন, যা একটি আন্তর্জাতিক আইনি নীতিমালা- যেখানে বলা হয়েছে, কাউকে এমন কোনো এলাকায় ফেরত পাঠানো যাবে না, যেখানে তার জীবন বা স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
ভারতের অবস্থান
ভারতের কোনো জাতীয় শরণার্থী নীতিমালা বা আইন নেই। দেশটি ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশন বা ১৯৬৭ সালের প্রটোকলের পক্ষভুক্ত নয়। তবুও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে হাজার হাজার মুসলিম রোহিঙ্গা শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ
গত সপ্তাহে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট আন্দামান সাগরে ৪০ জন রোহিঙ্গাকে ফেলে দেওয়ার ঘটনা সংক্রান্ত একটি আবেদনের শুনানি করতে অস্বীকৃতি জানান। তারা এই ঘটনাটিকে ‘চমৎকারভাবে রচিত গল্প’ বলে মন্তব্য করেন। রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন ও সমুদ্রের ফেলে দেওয়ার ঘটনায় ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের এমন অবস্থান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন আইন বিশেষজ্ঞ।
সোমবার সিভিল রাইটস সুরক্ষা সংস্থা আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, আজ সুপ্রিম কোর্ট সেই একই ভাষা ব্যবহার করছে, যা এই অমানবিক সরকার ব্যবহার করে শরণার্থীদের প্রতি। তারা বলছে, ভারত কোনো ধর্মশালা নয়।
তার কথায়, আপনারা বলেন ‘বাসুধৈব কুটুম্বকম’ (গোটা পৃথিবীই একটি পরিবার)। আপনারা জোর দিয়ে বলেন, ভারতের সংবিধান মানবিক এবং ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ নাগরিক ও অনাগরিক সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অথচ আপনারা এখন বলছেন, তারা কোনো অধিকার রাখে না, আপনি তাদের সঙ্গে যা খুশি করতে পারেন... তাদের সীমান্ত পেরিয়ে সাগরে ফেলে দিতে পারেন!’
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার শিশু মৃত্যুবরণ করতে পারে, যা মানবিক বিপর্যয়ের একটি ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক ও জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারী টম ফ্লেচার এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, গাজার দুরবস্থা চরম পর্যায়ে পৌঁছানোর ফলে যেখানে খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য জরুরি ত্রাণের অপ্রতুলতা শিশুদের জন্য বিশেষভাবে প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিবিসির রেডিও-৪-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গাজার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন টম ফ্লেচার।
টম ফ্লেচার বলেন, গাজায় মানবিক বিপর্যয় এখন এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে প্রায় ১৪ হাজার শিশু মৃত্যুর মুখে পড়বে। তার এই বক্তব্যে তিনি গাজার জনগণের জন্য ক্রমবর্ধমান সংকট এবং খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা তুলে ধরেন। ফ্লেচারের মতে, ইসরায়েল কর্তৃক গাজায় আরোপিত অবরোধ এবং ত্রাণ সরবরাহে বাধার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে, যার ফলে শিশুদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত, গাজায় খাদ্য সংকট একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত শিশুদের জন্য। ইসরায়েল গাজার সীমান্ত বন্ধ করে রাখার কারণে সেখানে জীবন রক্ষাকারী পণ্য ও ত্রাণের প্রবাহ অত্যন্ত সীমিত হয়ে গেছে। এই অবরোধের কারণে গাজার ২০ লাখের বেশি বাসিন্দার জন্য খাদ্য, পানি এবং চিকিৎসা সরবরাহ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
টম ফ্লেচার এই পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, বর্তমানে গাজার অভ্যন্তরে একটি মারাত্মক খাদ্য সংকট চলছে এবং বিশেষভাবে এটি শিশুদের জন্য ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। গত কয়েক সপ্তাহে সেখানে পানির সংকটও তীব্র হয়েছে এবং সঠিক সময় ও পুষ্টিকর খাবার না পাওয়ার কারণে অনেক শিশুর শরীরে শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। খাদ্যের অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ছে, ফলে শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে। গাজার চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার কারণে বহু শিশু জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা তাদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
এ বছর মার্চের শুরুতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার ওপর আবারও হামলা চালানো শুরু করার পর থেকে গাজার মানুষের জন্য ত্রাণ সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। তবে, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সোমবার প্রথমবারের মতো ইসরায়েল গাজায় ত্রাণের কিছু ট্রাক প্রবেশ করতে দেয়। এই ত্রাণটি ছিল অত্যন্ত সীমিত, মাত্র ৫টি ট্রাক, যেগুলোর মাধ্যমে ২০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য খাদ্য ও পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।
টম ফ্লেচার এই সীমিত ত্রাণপ্রবাহের জন্য গাজার পরিস্থিতিকে ‘সমুদ্রে পানির একটি ফোঁটা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার মতে, গাজার মানুষের জন্য এই পরিমাণ ত্রাণ কখনোই যথেষ্ট নয়। যদিও ত্রাণের ট্রাকগুলোর মধ্যে শিশুদের জন্য খাবার ও পুষ্টিকর খাদ্য ছিল, তবে এসব পণ্য গাজায় পৌঁছানোর পরও সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছানোর পথে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক সময় গাজার শহর ও গ্রামগুলোর মধ্যে ত্রাণ সরবরাহ পৌঁছানোর জন্য আরও বেশি ত্রাণ এবং নিরাপত্তা প্রয়োজন।
গাজায় চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে টম ফ্লেচার আরও বলেন, ১৯ জানুয়ারি, হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল, কিন্তু ইসরায়েল সেই চুক্তি ভঙ্গ করে গাজায় আবারও আক্রমণ শুরু করে মার্চের শুরুতে।
ইসরায়েলি হামলার কারণে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং প্রায় দেড় লাখ মানুষ আহত হয়েছেন। এই দীর্ঘস্থায়ী সহিংসতা এবং মানবিক সংকটের ফলে গাজার জনগণ প্রতিদিন আরও বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে।
যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণের কারণে গাজার সব ক্ষেত্রেই জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গাজার হাসপাতালগুলোতে তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে এবং বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকেন্দ্র তাদের সেবার পরিসর সীমিত করতে বাধ্য হয়েছে, যার ফলে অনেক রোগী জরুরি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের ত্রাণপ্রবাহে বাধা দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা বাড়ছে। বিশেষত, মানবিক অধিকার সংগঠন এবং জাতিসংঘ বারবার ইসরায়েলকে ত্রাণপ্রবাহ সহজতর করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। এই পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে কারণ গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে এবং সেখানে খোলা আকাশের নিচে হাজার হাজার মানুষ অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
গাজায় মানবিক সংকট এখন এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে, যদি ত্রাণ সরবরাহ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা দ্রুত ও যথাযথভাবে পুনরুদ্ধার না করা যায়, তবে আগামী দিনগুলোতে গাজার জনগণের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা সংস্থা গাজার জনগণের জন্য আরও ব্যাপক ত্রাণ প্রেরণের জন্য সক্রিয় চাপ দিচ্ছে, কিন্তু ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখনো ত্রাণপ্রবাহ সীমিত করে রেখেছে।
‘ইসরায়েল এখন শখের বশে গাজার শিশুদের হত্যা করছে’
ইসরায়েলের বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটসের নেতা ইয়ার গোলান গাজায় চলমান যুদ্ধ ও বর্তমান সরকার নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল এখন শখের বশে গাজার শিশুদের হত্যা করছে। ইসরায়েলি পাবলিক ব্রডকাস্টার কেএএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তিনি।
গোলান বলেন, যদি আমরা একটি সুস্থ ও বিবেকবান রাষ্ট্র হিসেবে আচরণে না ফিরি, তবে ইসরায়েল দক্ষিণ আফ্রিকার মতো একঘরে রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তিনি আরও বলেন, একটি সুস্থ রাষ্ট্র কখনো বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না, শিশুদের হত্যা করে না ও জনসংখ্যা উচ্ছেদের মতো লক্ষ্য নির্ধারণ করে না।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। রোববার দিনভর আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৫১ জন ফিলিস্তিনি। যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে এই হামলায়। গতকাল সোমবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, রোববার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দেড় শতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। গাজার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে গাজার উত্তরাঞ্চলে। সেখানে একদিনেই ৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইসরায়েলি সেনারা এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসির একটি আশ্রয়কেন্দ্রে রাতের আঁধারে বোমাবর্ষণ চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। বোমা হামলার সময় লোকজন ঘুমিয়ে ছিলেন। তারা কেউ বাস্তুহারা, কেউবা আগের হামলা থেকে বাঁচতে এই কেন্দ্রের আশ্রয়ে ছিলেন। হামলায় শিশু, নারী ও বৃদ্ধসহ কয়েক ডজন নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘অপারেশন গিডিয়ন চ্যারট’-এর অংশ হিসেবে গাজার উত্তর ও দক্ষিণে সমন্বিত স্থল হামলা শুরু করেছে। দক্ষিণ কমান্ডের নিয়মিত ও রিজার্ভ সেনারা এই অভিযানে অংশ নিচ্ছে। আইডিএফ দাবি করেছে, গত এক সপ্তাহে তারা গাজায় হামাসের ৬৭০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে রয়েছে হামাসের বিভিন্ন সামরিক সেল, সুড়ঙ্গপথ এবং ট্যাংকবিধ্বংসী অবস্থান।
তাদের দাবি অনুযায়ী, এসব অভিযানে হামাসের বহু সদস্য এবং বেশকিছু অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। পাশাপাশি গাজার বেশকিছু ‘কৌশলগত’ এলাকাও দখল করে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই দফায় হামলার তীব্রতা ও বিস্তৃতি দেখে মানবাধিকার সংস্থাগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গাজায় প্রতিদিন বাড়ছে লাশের সংখ্যা, কমছে নিরাপদ আশ্রয়ের জায়গা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতায় হতাশ ফিলিস্তিনিরা বলছেন- এই হামলা মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ছাড়া আর কিছু নয়।
গাজার মানবিক বিপর্যয় ঘনীভূত হচ্ছে দ্রুত। বোমার শব্দে ঘুম ভাঙছে শিশুদের, ধ্বংসস্তূপে হারিয়ে যাচ্ছে জীবনের স্বপ্ন। এক দিনে দেড় শতাধিক প্রাণহানি- এ যেন যুদ্ধ নয়, এক নিঃশব্দ গণহত্যা।
গাজায় হাসপাতালের রোগীর ওপর ইসরায়েলি হামলা
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের ভেতরে থাকা এক রোগীকে নিশানা করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) লক্ষ্য করেও গুলি চালানো হয়েছে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুরশ কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে এ কথা বলেছেন।
মুনির আল-বুরশ বলেন, হাসপাতালটিতে থাকা এক রোগীকে নিশানা করে ইসরায়েলি একটি যুদ্ধবিমান থেকে হামলা চালানো হয়েছে। হাসপাতালের আইসিইউতেও গুলি চালানো হয়েছে। হামলার আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কোনো ধরনের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি। এর আগে হাসপাতালটির পরিচালক বলেছিলেন, ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতালটি ঘিরে ফেলেছে। তারা হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য করেছে।
আল-জাজিরার প্রতিনিধি জানান, ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতালটির ফটকে হামলা করেছে। বুলডোজার দিয়ে হাসপাতালটির উত্তর দিকের দেয়াল গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি অভিযানের সময় হাসপাতালটির ভেতরে অন্তত ৫৫ জন আটকে পড়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ৪ জন চিকিৎসক ও ৮ জন নার্স।
এ ঘটনায় একটি বিবৃতি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে বলা হয়, হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধের অর্থ হলো, জাবালিয়া, বেইত লাহিয়া, বেইত হানুনসহ গাজার উত্তরাঞ্চলে আর কোনো সরকারি হাসপাতালই চালু রইল না। এর আগে গাজার কামাল আদওয়ান ও বেইত হানুন হাসপাতালে হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী।
‘পুরো গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবে ইসরায়েল’
গাজা উপত্যকার পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গতকাল সোমবার প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় ওই ঘোষণার সঙ্গে তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন ধরে রাখতে গাজায় মানবিক বিপর্যয় ঠেকানোর উদ্দেশ্যে সীমিত আকারে খাদ্য প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট এ খবর জানিয়েছে।
নেতানিয়াহু যখন এই খায়েশ প্রকাশ করলেন তখন গাজার উত্তর ও দক্ষিণে ব্যাপক স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। স্থল অভিযান শুরু হলো এমন এক সময়ে, যখন কাতারে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ শান্তি আলোচনা কার্যত ফলপ্রসূ হয়নি বলে দুই পক্ষের সূত্র জানিয়েছে। একই সময় গাজায় সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি এড়াতে খাদ্য সহায়তা পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তেল আবিব।
‘গাজা শাসনের ভার মিসরকে দেওয়া উচিত’
ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ আবারও গাজা শাসনে মিসরকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছেন। দেশটির সরকার-নিয়ন্ত্রিত সম্প্রচারমাধ্যম ‘কান’-এ এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি সরকারের কাছে যদি এর চেয়ে ভালো কোনো পরিকল্পনা থাকে, তবে আমরা তা শুনতে আগ্রহী।
লাপিদের এই প্রস্তাব নতুন নয়। গত কয়েক মাস ধরেই তিনি গাজার প্রশাসনিক দায়িত্ব মিসরের হাতে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তবে মিসর সরকার তার এই প্রস্তাব আগে থেকেই সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। সাক্ষাৎকারে লাপিদ আরও বলেন, গাজায় মানবিক সহায়তা বিতরণের জন্য একটি নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ থাকা প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন যে, ইসরায়েলি সরকার গাজা নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট কৌশল নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
নেতানিয়াহু সরকারের সমালোচনা করে লাপিদ বলেন, আমরা এই সরকারের কৌশলহীনতার মূল্য দিচ্ছি। কেউ কি বলতে পারে, গাজায় যুদ্ধের শেষ চিত্রটা কেমন হবে? এটা স্পষ্ট যে, গাজা ইস্যুতে সরকারের কোনো সুসংহত পরিকল্পনা নেই।