ইসরাইলের মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনের হামাস যোদ্ধারা রমজানের শুরু নাগাদ গাজায় বন্দী বাকি জিম্মিদের মুক্তি না দিলে ইসরাইলি বাহিনী আগামী মাসে রাফাহ শহরে অভিযান শুরু করবে।’ খবর এএফপির।
রোববার জেরুজালেমে আমেরিকার ইহুদি নেতাদের সম্মেলনে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক প্রধান গ্যান্টজ বলেন, ‘বিশ্ব এবং হামাস নেতাদের অবশ্যই জানানো দরকার যে রমজান নাগাদ আমাদের জিম্মিরা বাড়িতে না ফিরলে রাফাহ এলাকাসহ সর্বত্র যুদ্ধ চলবে।’
মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাস আগামী ১০ মার্চ থেকে শুরু হবে।
ইসরাইল সরকার শহরটিতে তাদের পরিকল্পিত হামলার জন্য এর আগে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা এভাবে বেধে দেয়নি। হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধে গৃহহীন হয়ে পড়া ১৭ লাখ ফিলিস্তিনের অধিকাংশ সেখানে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে, ব্যাপক হতাহতের সম্ভাবনার আশঙ্কা থেকে বিদেশি সরকার এবং দাতা সংস্থাগুলো হামলা থেকে রাফাহ শহরকে রেহাই দেয়ার জন্য ইসরাইলের প্রতি বারবার আহ্বান জানিয়েছে। চারমাস যুদ্ধ চলাকালে স্থল সেনারা শহরটিতে কোন হামলা চালায়নি। এটি হচ্ছে গাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গাজায় কমপক্ষে ৬৩ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর মধ্যে ২৪ জন শিশুও রয়েছে। চিকিৎসা সূত্রের খবরে এ কথা বলা হয়েছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শক্তিশালী হামলার নির্দেশ দেওয়ার পর গাজায় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পরে জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজায় একজন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে। এর পরেই নেতানিয়াহু হামলার নির্দেশ দেন।
এদিকে জাপান থেকে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার সময় এয়ার ফোর্স ওয়ানে গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছি, তারা একজন ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করেছে।
তাই ইসরায়েলিরা পাল্টা আক্রমণ করেছে এবং তাদের পাল্টা আক্রমণ করা উচিত। যখন এমন কিছু ঘটে, তখন তাদের পাল্টা আক্রমণ করা উচিত।’
ট্রাম্প বলেন, ‘কোনো কিছুই যুদ্ধবিরতিকে বিঘ্নিত করতে পারবে না। আপনাদের বুঝতে হবে হামাস মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির একটি খুব ছোট অংশ এবং তাদের ভালো আচরণ করতে হবে।
তবে হামাস দক্ষিণ গাজার রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর হামলার দায় অস্বীকার করেছে এবং এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ট্রাম্প বলেন, ‘যদি তারা (হামাস) ভালো হয়, তাহলে আমরা খুশি হব এবং যদি তারা ভালো না হয়, তাহলে তাদের জীবন শেষ করে দেওয়া হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কেউ জানে না নিহত ইসরায়েলি সেনার কী হয়েছিল, কিন্তু তারা (ইসরায়েল) বলেছে, স্নাইপারের গুলিতে মারা গেছে। গাজায় হামলা ছিল এর প্রতিশোধ এবং আমি মনে করি, তাদের (ইসরায়েলের) হামলা করার অধিকার আছে।’
সূত্র : আলজাজিরা।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছেন। উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হামলা চালানোর নির্দেশ দেওয়ার পর গাজার বিভিন্ন স্থানে এসব হামলার ঘটনা ঘটে।
মূলত রাফাহতে বন্দুক হামলায় এক ইসরায়েলি সৈন্য আহত হওয়ার পর হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন নেতানিয়াহু। বুধবার (২৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
এদিকে হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। এতইসঙ্গে নিখোঁজ এক বন্দির মরদেহ হস্তান্তরও স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছে হামাস।
একইসঙ্গে তারা সতর্ক করেছে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বড়সড় কোনও উস্কানি দেওয়া হলে গাজায় মৃতদেহ উদ্ধারের কার্যক্রম ব্যাহত হবে এবং বাকী ১৩ জন জিম্মির মরদেহ উদ্ধার বিলম্বিত হবে।
অবশ্য ইসরায়েলি এই হামলা সত্ত্বেও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্স দাবি করেছেন, যুদ্ধবিরতি এখনও টিকে আছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ছোটখাটো সংঘর্ষ হতে পারে। আমরা জানি গাজায় কেউ একজন (ইসরায়েলি) সৈন্যকে আঘাত করেছে। আমরা আশা করি ইসরায়েল জবাব দেবে, তবুও আমি মনে করি শান্তি স্থিতিশীল থাকবে।”
এদিকে রাফাহতে সংঘটিত ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছে হামাস।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলেছে, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর ইসরায়েল এখন পর্যন্ত অন্তত ৯৪ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং মানুষকে জরুরি ত্রাণ পৌঁছানোও কঠোরভাবে সীমিত রাখা হচ্ছে।
হামাস এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সর্বশেষ এই হামলাকে যুদ্ধবিরতির “স্পষ্ট লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করে আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানিয়েছে এবং বলেছে, তারা চুক্তি মেনে চলছে।
হামাস নেতা সুহাইল আল-হিন্দি আল জাজিরাকে বলেছেন, মরদেহ উদ্ধারে তাদের কিছু অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে এবং বাকি মরদেহ উদ্ধারে যে বিলম্ব হচ্ছে সেটির দায়ও ইসরায়েলের ওপরই বর্তায়।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত এবং গাজায় যুদ্ধের সংবাদ পরিবেশনে ‘পক্ষপাতিত্ব’ করার অভিযোগ এনে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার মতামত বিভাগে আর লিখবেন না বলে ১৫০ জনের বেশি লেখক ও কলাম লেখক এক অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।
ওই অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষরকারীরা লিখেছেন, নিউইয়র্ক টাইমস যদি তাদের পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ পরিবেশনের জন্য দায় স্বীকার না করে এবং গাজায় চালানো ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের সত্যিকারের ও নৈতিক প্রতিবেদন না দেয়, তাহলে কোনো ব্যক্তির লেখা নিবন্ধ সংবাদকক্ষ বা সম্পাদক পর্ষদের জন্য কোনো ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে কাজ করবে না। বরং তাদের এই অসদাচরণ চালিয়ে যাওয়ারই অনুমতি দেবে।
লেখকেরা আরও যোগ করেছেন, ‘আমরা কেবল আমাদের শ্রম প্রত্যাহারের মাধ্যমেই সেই প্রভাবশালী কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর চ্যালেঞ্জ জানাতে পারি, যা টাইমস দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মিথ্যাকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য ব্যবহার করে আসছে।’
চিঠিতে রিমা হাসান, চেলসি ম্যানিং, রাশিদা তালিব, স্যালি রুনি, ইলিয়া সুলেইমান, গ্রেটা থুনবার্গ, ভিয়েট থান এনগুয়েন এবং ডেভ জিরিন-এর মতো কয়েক ডজন সুপরিচিত কর্মী, শিল্পী ও মার্কিন রাজনীতিবিদ স্বাক্ষর করেছেন।
চিঠিতে লেখকেরা আরও লিখেছেন, ‘ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ও লেখকদের প্রতি আমাদের কর্তব্য হলো, নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা থেকে বিরত থাকা এবং তাদের ভুলগুলো স্বীকার করতে বাধ্য করা। যাতে গণহত্যা, নির্যাতন ও বাস্তুচ্যুতিকে তারা কখনো বৈধতা দিতে না পারে।’
নিউইয়র্ক টাইমস বর্জনে যোগ দেওয়া অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন ক্রিস হেজেস, মার্ক ল্যামন্ট হিল, নুরা ইরাকাত, বিজয় প্রশাদ, মারিয়াম কাবা, রবিন ডি জি কেলি, মোহাম্মদ আল-কুরদ, সুসান স্ট্রাইকার, জিয়া টোলেন্টিনো, ইভ এল ইউইং, ডিন স্পেড, নাইল ফোর্ট, সুসান আবুলহাওয়া এবং রশিদ খালিদি।
স্বাক্ষরকারীরা নিউইয়র্ক টাইমসের কাছে তিনটি দাবি জানিয়েছেন: ১. পত্রিকাটি যেন ‘ফিলিস্তিনবিরোধী পক্ষপাতিত্বের বিষয়ে পর্যালোচনা করে’ এবং ফিলিস্তিন কভারেজের জন্য নতুন সম্পাদকীয় মান তৈরি করে। স্বাক্ষরকারীরা নতুন সোর্সিং (উৎস যাচাই) ও রেফারেন্স পদ্ধতি, সেই সঙ্গে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের বর্ণনা দিতে পত্রিকার ব্যবহৃত শব্দভান্ডারের জন্য একটি নতুন স্টাইল গাইড চেয়েছেন। চিঠিতে এমন সাংবাদিকদের নিষিদ্ধ করারও আহ্বান জানানো হয়েছে, যারা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে কাজ করেছেন।
২. লেখকেরা নিউইয়র্ক টাইমসকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ‘Screams Without Words’ (স্ক্রিমস উইদাউট ওয়ার্ডস) শিরোনামের একটি প্রবন্ধ প্রত্যাহার করতে বলেছেন। ওই প্রবন্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল, হামাসের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় অংশ নেওয়া ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি নারীদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন করেছে।
লেখকেরা লিখেছেন, ওই প্রবন্ধটি মূলত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরায়েলি স্পেশাল ফোর্সের একজন প্যারামেডিকের সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করে লেখা হয়েছিল। অথচ প্রবন্ধটিতে যে কিবুৎসে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়, পরে সেখানকার একজন মুখপাত্র নিউইয়র্ক টাইমসের অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন।
তারা আরও লিখেছেন, ওই প্রতিবেদনের লেখকদের মধ্যে একজন আনাত শোয়ার্টজকে পরে পত্রিকাটি তদন্তের আওতায় আনে। কারণ জানা যায়, তিনি গাজাকে ‘কসাইখানায়’ পরিণত করার আহ্বান জানানো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি পোস্টে লাইক দিয়েছিলেন।
প্রবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার আগে হামলায় নিহত কথিত যৌন নিপীড়নের শিকার মেয়েদের পরিবারের সদস্যরা বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, যা গল্পের দাবিগুলোর সঙ্গে মেলেনি। তবে সেই সাক্ষাৎকারগুলোর কোনোটিই নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে ব্যবহার করা হয়নি।
৩. চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় বোর্ডকে ইসরায়েলের ওপর মার্কিন অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানানোর দাবি করেছেন।
স্বাক্ষরকারীরা বলেছেন, তাদের দাবিগুলো ‘অসম্ভব বা অযৌক্তিক’ নয়। লেখকেরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, পত্রিকাটি ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে এইডস সংকটের সময় তার স্টাইল গাইড হালনাগাদ করেছিল এবং ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাকে হামলার পর ভুল সংবাদের জন্য ক্ষমাও চেয়েছিল।
লেখকেরা চিঠিতে আরও বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক টাইমসের চেয়ে বেশি প্রভাবশালী কোনো সংবাদপত্র নেই। পশ্চিমা বিশ্বের সংবাদকক্ষগুলোতে সম্পাদক ও সাংবাদিকেরা এই পত্রিকার কভারেজ অনুসরণ করেন। এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘কাগজের দলিল’ হিসেবে গণ্য করা হয়।’
স্বাক্ষরকারীরা আরও যোগ করেছেন, ‘ইসরায়েল গাজায় জাতিগত নিধনে যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে নিউইয়র্ক টাইমস দখলদার বাহিনীর যুদ্ধাপরাধকে আড়াল করেছে, ন্যায্যতা দিয়েছে এবং সরাসরি অস্বীকার করেছে। এভাবে তারা ইসরায়েলি সরকার ও সামরিক বাহিনীর জন্য মাইক হিসেবে কাজ করার দশকব্যাপী অভ্যাস বজায় রেখেছে।’
সূত্র: মিডল ইস্ট আই
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্ভর নতুন অনলাইন বিশ্বকোষ ‘গ্রোকিপিডিয়া’ চালু করেছেন মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক।
মঙ্গলবার ‘গ্রোকিপিডিয়া’ উদ্বোধন করে মাস্ক দাবি করেছেন, এই প্ল্যাটফর্মটি উইকিপিডিয়ার তুলনায় কম পক্ষপাতদুষ্ট এবং আরও নিরপেক্ষ।
মাস্কের কোম্পানি (এক্স-এআই) এর তৈরি এই প্ল্যাটফর্মটি সম্পূর্ণ ওপেন সোর্স এবং বিনামূল্যে ব্যবহারের উপযোগী। গুগলের মতো একটি বড় সার্চবারসহ হোমপেজে ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন রঙের মোড পরিবর্তন ও নিজস্ব অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারবেন। উদ্বোধনের সময় গ্রোকিপিডিয়ায় প্রায় ৮ লাখ ৮৫ হাজার অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। কিন্তু চালুর কিছুক্ষণের মধ্যেই সাইটটি ক্র্যাশ করে। তবে কয়েক ঘণ্টা পর আবার তা সচল হয়।
মাস্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দাবি করেছেন, গ্রোকিপিডিয়ার ০.১ সংস্করণ এরই মধ্যে উইকিপিডিয়ার চেয়ে ভালো কাজ করছে। তবে উইকিপিডিয়ার মতো এখানে ব্যবহারকারীরা নিজেরা কোনো নিবন্ধ সম্পাদনা বা সংশোধন করতে পারবেন না।
গ্রোকিপিডিয়া নিয়ে মাস্ক আরও বলেছেন, এটি নিজস্ব এআইভিত্তিক ফ্যাক্ট–চেকিং ব্যবস্থা ব্যবহার করে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করবে।
উইকিমিডিয়া জার্মানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফ্রানজিসকা হেইনে বলেন, উইকিপিডিয়া কোনো কোম্পানির মালিকানাধীন নয়; হাজারো স্বেচ্ছাসেবকের অংশগ্রহণেই এটি পরিচালিত হয়, যা প্রকল্পের প্রতি বিশ্বাস তৈরি করে।
ইলন মাস্ক অভিযোগ করছেন, উইকিপিডিয়া রাজনৈতিকভাবে বামঘেঁষা। তবে উইকিমিডিয়া জানিয়েছে, গত ২৫ বছরের গবেষণায় এই দাবি প্রমাণিত হয়নি।
ইউরোপের দেশ ইতালিতে বাড়ছে বিদেশি নাগরিকদের সংখ্যা। দেশটির মোট কর্মশক্তির ১০ দশমিক ৫ শতাংশ হলেন বিদেশি নাগরিক। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও সংখ্যাটি ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। ইতালির জনমিতি বিশ্লেষণ করে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে কারিতাস-মিগ্রান্তেস ফাউন্ডেশন।
৩৪তম কারিতাস-মিগ্রান্তেস অভিবাসন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতালির মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ২ শতাংশ, অর্থাৎ, অন্তত ৫৪ লাখ মানুষ বিদেশি। গত ১৪ অক্টোবর দেশটির রাজধানী রোমে ‘বিদেশি বংশোদ্ভুত তারুণ্য: ইতালির রূপান্তর ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
ইতালিতে বসবাসরত বিদেশিদের প্রধান উৎস দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে রোমানিয়া, মরক্কো, আলবেনিয়া, ইউক্রেন এবং চীনকে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পেরু এবং বিশেষ করে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেড়েছে। মাত্র দুই বছরে বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ইতালির অর্ধেকেরও বেশি প্রদেশে নতুন ইস্যু করা রেসিডেন্স পারমিট বা বসবাসের অনুমতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশির এখন শীর্ষ তিনটি দেশের মধ্যে রয়েছেন।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ইতালিতে নিয়মিতভাবে বসবাসরত বিদেশিরা মূলত দেশটির মধ্য এবং উত্তরাঞ্চলেই থাকেন। তবে, অনিয়মিত অভিবাসীদের উপস্থিতি সারা দেশে অসমভাবে ছড়িয়ে আছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, অনিয়মিত অভিবাসীদের আবাসন পরিস্থিতি খুবই অনিশ্চিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি নির্ভর করে স্থানীয় প্রেক্ষাপট অনুযায়ী। দক্ষিণ ইতালির গ্রাম থেকে মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের শহরেও তারা বসবাস করছেন।
আবাসন নিয়ে কারিতাস ইতালি ও মিগ্রান্তেস ফাউন্ডেশনের যৌথ এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশটিতে তীব্র আবাসন সংকট বৈষম্য, দুর্দশার পাশাপাশি নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতাও তৈরি করছে। এ কারণে, ইতালিয়ান সমাজে বিদেশি নাগরিকেরা ব্যাপকভাবে পিছিয়ে পড়ছেন।
দেশটিতে নিম্নমুখী জন্মহারের মধ্যেও ২০২৪ সালে মোট তিন লাখ ৭০ হাজার শিশু জন্ম নিয়েছে। তাদের মধ্যে ২১ শতাংশের বেশি নবজাতকের অভিভাবকদের অন্তত একজন বিদেশি।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই পরিসংখ্যান জনসংখ্যার পুনর্গঠনে অভিবাসী পরিবারগুলোর গঠনমূলক অবদানের একটি স্পষ্ট সূচক।
একইভাবে, ২০২৪ সালে রেকর্ড দুই লাখ ১৭ হাজারের বেশি মানুষ ইতালির নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন। যা চলমান পরিবর্তনগুলো বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিশেষ করে ইতালির শহুরে ও গ্রামীণ জনপদে বিদেশিদের উপস্থিতি নিম্নমুখী জন্মহার ঠেকাতে সহায়তা করেছে এবং স্কুল, সেবা ও মৌলিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে সচল রেখেছে।
২৫ লাখের বেশি বিদেশি কর্মী
প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে, ইতালিতে বিভিন্নখাতে কর্মরত রয়েছেন দুই কোটি ৪০ লাখ মানুষ। এদের মধ্যে ২৫ লাখের বেশি বিদেশি কর্মী (১০ দশমিক ৫ শতাংশ)।
গত বছর দেশটিতে মোট কর্মসংস্থানের হার বেড়ে ৬১ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে (২০২৩ সালের তুলনায় ১ শতাংশ বেড়েছে)। যদিও এতে বড় ধরনের বৈষম্য রয়েছে: ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের নাগরিকদের মধ্যে এটি কমে ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশে নেমেছে। ইউরোপীয় নাগরিকদের মধ্যে এটি স্থিতিশীল অর্থাৎ ৬২ দশমিক ২ শতাংশ।
বেকারত্ব মোটের ওপর কমেছে (১৪ দশমিক ৬ শতাংশ)। এক্ষেত্রে ইটালীয়দের বেকারত্বের হার কমেছে ১৬ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের নাগরিকদের মধ্যে কমেছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এখনো তাদের মধ্যে ১০ দশমিক ২ শতাংশ বেকারত্বের মুখোমুখি। আর ইটালীয়দের মধ্যে সেটি ৬ দশমিক ১ শতাংশ।
তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশিরা ক্রমশ ভালো করছেন। ২০২৪ সালে বিদেশি নাগরিকদের অন্তর্ভুক্ত করে ২৬ লাখ ৭৩ হাজার ৬৯৬টি নতুন চাকরির চুক্তি নিবন্ধিত হয়েছে। ২০২৩ সালের তুলনায় এর পরিমাণ ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে।
এসব নিয়োগের বেশিরভাগই হয়েছে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। সেখানে বিদেশিরা কর্মশক্তির ২১ শতাংশের বেশি। দক্ষিণাঞ্চল ও দ্বীপগুলোতে অংশগ্রহণ কম (১৬ দশমিক ৬ শতাংশ) হলেও, সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি (১৩ দশমিক ৬ শতাংশ) সেখানেই দেখা গেছে।
অন্তত ১০ লাখ বিদেশি শিক্ষার্থী
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ইতালিতে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন নয় লাখ ১০ হাজার ৯৮৪ জন। সংখ্যাটি মোট শিক্ষার্থীর ১১.৫ শতাংশ।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, নতুন অভিবাসী প্রজন্ম আরও বিশ্বজনীন এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকে ধারণ করতে পারেন।
অভিবাসী শিশুদের একটি বড় অংশের জন্ম ইতালিতে, বেড়েও উঠছেন ইতালীয় সমাজে। বাস্তবিক অর্থে তিরি ইতালীয় হলেও, তাদের নাগরিকত্ব নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি আবারও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে দেখা করতে চান। তবে এখন পর্যন্ত পিয়ংইয়ংয়ের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।
দক্ষিণ কোরিয়া সফরের আগে ট্রাম্প কিমের সঙ্গে সাক্ষাতের আমন্ত্রণ কয়েকবার পাঠিয়েছেন বলে ওয়াশিংটন ও সিউলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে দুই দেশেরই কর্মকর্তারা বলেছেন, এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি বা বৈঠকের সময়সূচি নির্ধারিত হয়নি।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের আগেই উত্তর কোরিয়া দাবি করে যে তারা একটি নতুন হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক মিসাইলের পরীক্ষা চালিয়েছে।
এশিয়া সফরকালে ট্রাম্প আবারও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি কিমের সঙ্গে বৈঠক করতে প্রস্তুত—যেমনটি তিনি তার প্রথম মেয়াদে করেছিলেন।
তিনি বলেন, আমার তার (কিমের) সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। যদি সে চায়, আমি তার সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী। আমরা কোনো আনুষ্ঠানিক বার্তা পাঠাইনি, তবে সে জানে আমি সেখানে যাচ্ছি। দেখা করতে চাইলে আমি প্রস্তুত।
কিমকে আলোচনায় আনতে কী ব্যবহার করবেন এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, নিষেধাজ্ঞা—এটাই সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
২০১৮ ও ২০১৯ সালে ট্রাম্প ও কিমের মধ্যে তিন দফা বৈঠক হয়, তবে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে মতবিরোধে আলোচনা ভেঙে যায়। উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির কারণে দেশটি এখনো কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে রয়েছে।
গত মাসে কিম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র তাদের পরমাণু কর্মসূচি ত্যাগের দাবি থেকে সরে আসে, তাহলে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র আমাদের নিরস্ত্রীকরণের অযৌক্তিক দাবি বাদ দিয়ে বাস্তবতাকে মেনে নেয় এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে রাজি হয়, তাহলে বৈঠকে না বসার কোনো কারণ নেই।
তবে এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠকের প্রস্তুতির লক্ষণ দেখা যায়নি। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার সীমান্তবর্তী ডিমিলিটারাইজড জোন সফরের বিষয়টি বিবেচনা করেছিলেন, কিন্তু তা চূড়ান্ত হয়নি।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং, যিনি জুনে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, উত্তরের সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করার চেষ্টা করছেন। তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন, ট্রাম্প তার সফরকালে কিমের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিতে পারেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার একীকরণ মন্ত্রী চুং ডং-ইয়ং জানিয়েছেন, পিয়ংইয়ং মঙ্গলবার বা বুধবার ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের শান্তি আলোচনা কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়েছে, ফলে সীমান্তে সাম্প্রতিক সহিংসতার পর আবারও সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার বিষয়টির সঙ্গে জড়িত দুটি কূটনৈতিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকের লক্ষ্য ছিল দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করা। চলতি মাসে সীমান্তে সংঘর্ষে দশকের মধ্যে সর্বাধিক প্রাণহানি ঘটেছে— যেখানে পাকিস্তানি সেনা, আফগান যোদ্ধা ও সাধারণ নাগরিকসহ ডজনখানেক মানুষ নিহত হয়েছেন।
সূত্র জানায়, দোহায় ১৯ অক্টোবরের যুদ্ধবিরতির পর ইস্তাম্বুলে তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতায় দ্বিতীয় দফা আলোচনায়ও কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। উভয় পক্ষই আলোচনার ব্যর্থতার জন্য একে অপরকে দায়ী করেছে।
একজন পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, তালেবান সরকার পাকিস্তানি তালেবানকে নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজি হয়নি, অথচ এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আফগান মাটিতে নিরাপদে অবস্থান করছে বলে ইসলামাবাদ দাবি করছে।
অন্যদিকে আলোচনায় যুক্ত এক আফগান সূত্র জানায়, আলোচনায় তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়, কারণ আফগান প্রতিনিধিরা বলেন যে তারা পাকিস্তানি তালেবানের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখে না, যদিও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ওই গোষ্ঠী পাকিস্তানি সেনাদের ওপর একাধিক হামলা চালিয়েছে।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তালেবান সরকারের মুখপাত্ররা এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি।
এই মাসের শুরুতে পাকিস্তান কাবুলসহ একাধিক স্থানে বিমান হামলা চালায়, লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানি তালেবান প্রধানকে নির্মূল করা। এর জবাবে আফগান তালেবান ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তজুড়ে পাকিস্তানি সামরিক চৌকিতে পাল্টা হামলা চালায়।
শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে দোহা যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নজরে এসেছে।
গত শনিবার পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, আমরা বিশ্বাস করি আফগানিস্তান শান্তি চায়, তবে ইস্তাম্বুল আলোচনায় ব্যর্থতা মানে হবে ‘উন্মুক্ত যুদ্ধ’।
যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও গত সপ্তাহে সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষে ৫ পাকিস্তানি সেনা ও ২৫ পাকিস্তানি তালেবান সদস্য নিহত হয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, আলোচনার ভেঙে যাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে এবং পরমাণু-সক্ষম পাকিস্তান ও তালেবান-নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের সম্পর্ক নতুন করে সংকটে ফেলবে।
আফগান নীতিতে ‘কৌশলগত ধৈর্য’ বজায় রাখছে পাকিস্তান
দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সংঘাত, হস্তক্ষেপ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মঞ্চ আফগানিস্তান এখনো আঞ্চলিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে বৈশ্বিক শক্তিগুলোর ওঠানামার মধ্যেও পাকিস্তান তার নিজস্ব অবস্থান ও নীতিতে অবিচল রয়েছে—যা বিশ্লেষকদের মতে ‘কৌশলগত ধৈর্য’- এর প্রতিফলন।
পাকিস্তানের আফগানিস্তাননীতি মূলত নিরাপত্তা, ভূরাজনীতি ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার সমন্বয়ে গঠিত। দেশটির নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, পশ্চিম সীমান্তে অস্থিতিশীলতা সরাসরি প্রভাব ফেলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক অবস্থানে।
মঙ্গলবার এ নিয়ে এক নিবন্ধ প্রকাশ করেছে পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যম জিও নিউজ।
দীর্ঘমেয়াদি সম্পৃক্ততা ও ক্ষয়ক্ষতি
৯/১১–এর পর বৈশ্বিক সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে সম্মুখসারিতে থাকা পাকিস্তান প্রায় ৮০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ও ১৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। আফগানিস্তানের সংঘাত থেকে সৃষ্ট তিন মিলিয়নেরও বেশি শরণার্থীও এখনো দেশটিতে অবস্থান করছে।
ইসলামাবাদের কর্মকর্তারা দাবি করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তুলনায় পাকিস্তানই সবচেয়ে বড় মূল্য পরিশোধ করেছে, অথচ বৈশ্বিক বিশ্লেষণে সেই ভূমিকা প্রায়ই অবমূল্যায়িত হয়।
সংযম ও কূটনৈতিক ভারসাম্য
বিশ্লেষকেরা বলছেন, আফগান তালেবান সরকার গঠনের পর পাকিস্তানের সামনে একদিকে স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে টিটিপি–এর (তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান) হামলা ও সীমান্ত উত্তেজনা নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
তবুও ইসলামাবাদ সংযমের পথ বেছে নিয়েছে—একতরফা সামরিক পদক্ষেপের বদলে সংলাপ ও প্রতিরোধের সমন্বিত কৌশল নিয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এটি পাকিস্তানের ‘প্রাপ্তবয়স্ক রাষ্ট্রনীতি’ এবং ‘ধৈর্যের কূটনীতি’-র প্রকাশ।
নিরাপত্তা থেকে অর্থনীতিতে দৃষ্টিপরিবর্তন
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান আফগান নীতি পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। এখন দেশটি শুধু নিরাপত্তা–নির্ভর নয়, বরং বাণিজ্য, যোগাযোগ ও আঞ্চলিক একীভবনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
সিএএসএ-১০০০ জ্বালানি প্রকল্প ও চীন–পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি)–এর মতো উদ্যোগ ইসলামাবাদের লক্ষ্য স্পষ্ট করেছে—আফগানিস্তানকে ‘বাফার জোন’ নয়, বরং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার সংযোগসেতু হিসেবে গড়ে তোলা।
ভারতের ভূমিকা নিয়ে সতর্কতা
পাকিস্তান সরকার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা অভিযোগ করছেন, আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব ও টিটিপি–এর প্রতি সম্ভাব্য সমর্থন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে জটিল করছে। ভারত সম্প্রতি আফগান তালেবানের সঙ্গে সীমিত যোগাযোগ বাড়িয়েছে, যা ইসলামাবাদের মতে, পাকিস্তানের প্রভাবক্ষেত্র দুর্বল করার কৌশল হতে পারে।
কৌশলগত ধৈর্যের প্রতিফলন
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের ‘কৌশলগত ধৈর্য’ কোনো দুর্বলতার প্রকাশ নয়; বরং এটি দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতার প্রতিফলন। দেশটি বুঝতে পেরেছে যে আফগানিস্তানে স্থায়ী শান্তি কেবল সামরিক শক্তিতে নয়, বরং আঞ্চলিক ঐকমত্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমেই সম্ভব।
‘পাকিস্তান এখন দখল নয়, প্রভাবের মাধ্যমে ক্ষমতা সংজ্ঞায়িত করতে চায়,’ বলেন এক দক্ষিণ এশীয় পর্যবেক্ষক।
যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য শক্তি আফগানিস্তান থেকে সরে গেছে, সেখানে পাকিস্তান এখনো ভূগোল, নিরাপত্তা ও মানবিক বাস্তবতার ভার বহন করছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ধারাবাহিক সম্পৃক্ততাই ইসলামাবাদকে একটি পরিণত আঞ্চলিক অংশীদার হিসেবে তুলে ধরেছে।
পাকিস্তানের বর্তমান আফগান নীতি তাই মূলত ধৈর্য, সংযম ও বাস্তবতার সমন্বয়। দশকের পর দশক ত্যাগ ও অভিজ্ঞতা থেকে শেখা এই নীতিতে ইসলামাবাদ বিশ্বাস করে—দক্ষিণ এশিয়ার স্থায়ী শক্তি অস্ত্রে নয়, বরং শান্তিতেই নিহিত।
৯২ বছর বয়সে অষ্টমবারের জন্য ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন পল বিয়া। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের দীর্ঘমেয়াদি এবং সবচেয়ে বয়স্ক রাষ্ট্রপ্রধানের তকমা পেলেন তিনি। ১৯৮২ সালে ক্যামেরুনের ক্ষমতায় আসেন পল বিয়া। গত ৪৩ বছর ধরে শক্তিশালীভাবে দেশটির ক্ষমতা ধরে রেখেছেন তিনি।
১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল গতকাল সোমবার ঘোষণা করা হয়।। এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পল বিয়ার নাম ঘোষণা করে দেশটির সাংবিধানিক কাউন্সিল। ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্টের মেয়াদের সীমা তুলে দেওয়ার পর তিনি আর কোনও সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হননি।
সাংবিধানিক কাউন্সিলের সভাপতি ক্লেমেন্ট আতাঙ্গানা বলেন, প্রার্থী পল বিয়াকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা হলো।
এ বছর তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসা চিরোমা বাকারি। তিনি পল বিয়ার সরকারের একজন মুখপাত্র ছিলেন। এ বছরের শুরুতে বিয়ার সঙ্গে মতবিরোধের কারণে দল ছেড়ে দেন। নির্বাচনে পলের বিপক্ষে প্রচারাভিযান চালান, যা বড় জনসমাগম এবং বিরোধী দল ও নাগরিক সংগঠনগুলোর সমর্থন পায়।
এদিকে, ক্যামেরুনে জাতীয় নির্বাচনের ফল প্রকাশের আগে রাজনৈতিক সহিংসতায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। রবিবার দেশটির উত্তরাঞ্চল ও প্রধান শহর দুয়ালায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিরোধী দলের সমর্থকদের সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগেই চিরোমা দাবি করেন যে, তিনি ৫৪.৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।
আট দশক ধরে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা পাবলো পিকাসোর একটি চিত্রকর্ম ৩ কোটি ২০ লাখ ইউরোতে বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৪৫৫ কোটি টাকার বেশি (১ ইউরো সমান ১৪২ টাকা হিসেবে)। এটি বিশ্ববরেণ্য স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী পিকাসোর দীর্ঘদিনের অনুপ্রেরণা ও সঙ্গী ডোরা মারকে নিয়ে আঁকা এক রঙিন প্রতিকৃতি।
চিত্রকর্মটি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। তবে এটি নিলামে বিক্রি হওয়া পিকাসোর সবচেয়ে দামি শিল্পকর্ম নয়। ‘বাস্ট অব আ উইমেন উইথ আ ফ্লাওয়ারড হ্যাট (ডোরা মার)’ ছবিটি আঁকা হয় ১৯৪৩ সালের জুলাই মাসে।
ডোরা মার নিজেও একজন শিল্পী ও আলোকচিত্রী ছিলেন। তিনি প্রায় সাত বছর ধরে পিকাসোর সঙ্গী ও অনুপ্রেরণা ছিলেন। পিকাসো যখন ছবিটি আঁকেন, তখন তাদের সম্পর্ক একটি বেদনাদায়ক পরিসমাপ্তির পথে যাচ্ছিল।
শিল্পকর্মটি ১৯৪৪ সালে বিক্রি হয়। এরপর এটিকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। চিত্রকর্মটি এত দিন একটি পারিবারিক সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত ছিল। চিত্রকর্মটি পিকাসোর ‘উইমেন ইন আ হ্যাট’ সিরিজের অংশ।
প্যারিসের একটি নিলাম হাউসে ছবিটি বিক্রি হয়। নিলামকক্ষে উপস্থিত এক ব্যক্তি সেটি কিনে নেন। চিত্রকর্মটি বিক্রির পর নিলামকারী ক্রিস্টোফ লুসিয়ঁ বলেন, ‘এটি একটি অসাধারণ সাফল্য।’
এ বছর এখন পর্যন্ত ফ্রান্সে নিলামে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া কোনো শিল্পকর্ম হচ্ছে এটি। লুসিয়ঁ চিত্রকর্মটিকে ‘ভালোবাসার গল্পের ছোট্ট একটি টুকরো’ বলে বর্ণনা করেন।
পিকাসোর সঙ্গে ডোরা মারের যখন পরিচয় হয়, তখন তার বয়স ২৯ বছর। দ্রুতই এই তরুণী শিল্পীর প্রেমে পড়েন এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
পরে আরেক তরুণী ফ্রাঁসোয়া জিলোর জন্য ডোরা মারকে ছেড়ে যান পিকাসো। পিকাসো ছেড়ে যাওয়ার পর ডোরা অন্তরালের জীবন বেছে নেন। তিনি ৮৯ বছর বয়সে মারা যান।
লুসিয়ঁ বলেন, ‘তাদের গল্প খুব সাধারণ ছিল না। আপনি চিত্রকর্মটির দিকে তাকালে তার চোখে পানি দেখতে পাবেন। কারণ, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, পিকাসো তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।’
নিলাম শুরুর আগে নিলামকারী লুসিয়ঁ বলেছিলেন, বিশ্বজুড়ে এই চিত্রকর্ম নিয়ে বিপুল আগ্রহ আছে।
নিলামে বিক্রি হওয়া পিকাসোর সবচেয়ে দামি চিত্রকর্মটি হলো ‘লেস ফেমিস ডি’আলজার’ (উইমেন অব আলজিয়ার্স)। ২০১৫ সালে নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ক্রিস্টি ১৭ কোটি ৯৩ লাখ ডলারে ওই চিত্রকর্ম বিক্রি করেছিল।
১৯৩২ সালে পিকাসোর আঁকা ‘উইমেন উইথ আ ওয়াচ’ চিত্রকর্মটি ২০২৩ সালে নিলামে ১৩ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলারে (১ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা) বিক্রি হয়েছিল। এটি পিকাসোর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হওয়া কোনো চিত্রকর্ম বলে জানিয়েছিল ব্রিটিশ নিলামকারী প্রতিষ্ঠান সদবি’স।
পিকাসো ১৮৮১ সালে স্পেনের মালাগায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বড় হয়েছেন বার্সেলোনায়। পরে পিকাসো ১৯০৪ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে যান। সেখানেই তিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা চিত্রশিল্পী হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেন।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার তার দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বাধাচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম যুদ্ধজাহাজটি দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির দিকে পাঠানোয় উত্তেজনা বেড়েছে। এ অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বাড়ছে। নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জল্পনা শুরু হয়েছে।
মাদুরো বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন নতুন যুদ্ধ শুরু করছে। ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড নামের রণতরীতে ৯০টি পর্যন্ত যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার থাকতে পারে। ট্রাম্প মাদুরোকে কোনো প্রমাণ ছাড়াই সংগঠিত অপরাধী চক্র ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’র নেতা বলে অভিযুক্ত করেছেন। মাদুরো এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ভেনেজুয়েলায় কোকেন পাতা উৎপাদন হয় না। ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ চুক্তিবদ্ধ খুন, চাঁদাবাজি এবং মানব পাচারের জন্য পরিচিত।
নিকোলাস মাদুরো ২০১৩ সাল থেকে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় রয়েছেন। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালের এপ্রিলে বিশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ওই বছরের ১৯ এপ্রিল শপথ নেন। সব মিলিয়ে তিনি প্রায় ১২ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। সর্বশেষ গত বছরের জুলাইয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করে তিনি তার তৃতীয় মেয়াদ শুরু করেছেন। এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে মাদুরোর পদত্যাগ দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ। ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় সিআইএর অভিযানের অনুমোদন দিয়েছেন। তিনি দেশটিতে মাদক চক্রের বিরুদ্ধে স্থল হামলার কথাও ভাবছেন। গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে মার্কিন বাহিনী মাদক পাচারের অভিযোগে ১০টি নৌকায় বোমা হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় অন্তত ৪৩ জন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক আইনের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ হামলাগুলো আইন লঙ্ঘন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শামিল।
এর জবাবে ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির প্যাদ্রিনো লোপেজ উপকূল রক্ষায় সামরিক মহড়া শুরু করেছেন। তিনি বলেছেন, এই মহড়া বড় আকারের সামরিক হুমকি এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার গোপন অভিযান থেকে রক্ষা করবে। ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন উপকূলীয় রাজ্যগুলোতে সামরিক সদস্য মোতায়েনের দৃশ্য দেখিয়েছে।
ওয়াশিংটন গত আগস্ট থেকে মাদকবিরোধী অভিযানের জন্য নৌবাহিনীর আটটি জাহাজ এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে। কারাকাস মনে করে, এর আড়ালে মাদুরো সরকারকে উৎখাত করার পরিকল্পনা রয়েছে। মাদুরো বিরোধীদলীয় নেতা লিওপোল্ডো লোপেজের নাগরিকত্ব বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। লোপেজ আক্রমণের উস্কানি দিচ্ছেন বলে মাদুরোর অভিযোগ। লোপেজ ২০২০ সাল থেকে স্পেনে নির্বাসিত। তিনি ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন রণতরী মোতায়েন সমর্থন করেছেন। এদিকে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো এবং তাঁর পরিবারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সেনা পাঠানোর বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নিতে পারে পাকিস্তান। দেশটির সরকারি ও সামরিক সূত্র জানাচ্ছে, সেনা পাঠানোর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের দিকেই এগোচ্ছে ইসলামাবাদ।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজায় শান্তি ও পুনর্গঠনের জন্য গঠিত ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্সে (আইএসএফ) পাকিস্তান সেনা পাঠাবে কি না, সে বিষয়ে ইসলামাবাদ শিগগিরই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারে।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে এবং সেনা নেতৃত্বের মধ্যে আলোচনা “চূড়ান্ত পর্যায়ে” পৌঁছেছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্র জানায়, পাকিস্তান গাজা মিশনে অংশ নেওয়ার দিকেই ঝুঁকছে বলে অভ্যন্তরীণ আলোচনার ধরণ থেকে বোঝা যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে গঠিত গাজা শান্তিচুক্তির অন্যতম মূল দিক হলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সেনা নিয়ে গঠিত এই আন্তর্জাতিক বাহিনী। বাহিনীর দায়িত্বের মধ্যে গাজার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখা, হামাসকে নিরস্ত্র করা, সীমান্ত পারাপার নিয়ন্ত্রণ করা এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে মানবিক ত্রাণ ও পুনর্গঠন কার্যক্রম পরিচালনা করার মতো বিষয়গুলো থাকবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গাজায় মার্কিন সেনা না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেও ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, কাতার, তুরস্ক ও আজারবাইজানসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যাতে তারা এই বহুজাতিক বাহিনীতে অংশ নেয়।
তবে সোমবার ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডন সার স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের “ইসরায়েলবিরোধী মনোভাবের” কারণে তুরস্কের সেনাকে এই বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা করেন তিনি।
এর আগে গত রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, গাজায় কোন কোন বিদেশি বাহিনী প্রবেশ করতে পারবে তা ইসরায়েলই নির্ধারণ করবে।
এদিকে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়া, আজারবাইজান ও পাকিস্তানের সেনা নিয়ে গঠিত এই বাহিনী গাজায় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবে বলে ইসরায়েলি পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির সদস্যদের জানানো হয়েছে।
এছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অস্ত্র চোরাচালান রোধের দায়িত্বও আন্তর্জাতিক এই বাহিনী পালন করবে বলে জানানো হয়েছে সংবাদমাধ্যমের খবরে।
রাশিয়া যদি বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, তবে পাল্টা হামলা চালিয়ে মস্কোকে “মানচিত্র থেকে মুছে দেবে” ন্যাটো। এমন কড়া হুঁশিয়ারিই দিয়েছেন বেলজিয়ামের প্রতিরক্ষামন্ত্রী থিও ফ্রাঙ্কেন।
একইসঙ্গে ইউরোপে ৬০০টি এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েনের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
সোমবার বেলজিয়ান দৈনিক ডি মর্গেন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফ্রাঙ্কেন বলেন, “যদি (রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির) পুতিন ব্রাসেলসের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে, আমরা মস্কোকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলব।”
ন্যাটোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ইউরোপে যেসব সংশয় দেখা দিয়েছে, তা তিনি গুরুত্বহীন বলে মন্তব্য করেন।
ফ্রাঙ্কেন বলেন, “ইউরোপে আমেরিকান সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাত এতটাই প্রবল যে সেটা অবিশ্বাস্য। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র শতভাগ ন্যাটো মিত্রদের পাশে থাকবে। ব্রাসেলসে ক্রুজ মিসাইল হামলা? এটা তো বোঝাই যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে কেউই দ্বিধা করবে না। পুতিনও এটা জানেন।”
তবে তিনি সতর্ক করে দেন, রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতাকে ছোট করে দেখার ভুল যেন কেউ না করে।
তার ভাষায়, “রাশিয়া এখন তার সামরিক সক্ষমতা অনেক বাড়িয়েছে। তাদের যুদ্ধ অর্থনীতি এখন ন্যাটোর সব দেশ মিলে যত গোলাবারুদ তৈরি করে, তার চারগুণ উৎপাদন করছে। অথচ ইউরোপের এখনো কোনো কেন্দ্রীয় সামরিক কমান্ড নেই।”
ফ্রাঙ্কেন বলেন, “রাশিয়া ইউক্রেনে সমস্যায় পড়েছে কারণ তারা পুরো পশ্চিমা বিশ্বের বিপক্ষে লড়ছে। ইউক্রেনীয়রা আমাদের অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অর্থ দিয়েই যুদ্ধ চালাচ্ছে, নইলে অনেক আগেই তারা পরাজিত হতো।”
আগামীদিনের পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ফ্রাঙ্কেন বলেন, পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে রাশিয়া ও চীনের যৌথ চ্যালেঞ্জের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তিনি বলেন, “চীন চায় ইউক্রেনের যুদ্ধ যতদিন সম্ভব চলুক, কারণ এতে পশ্চিমা বিশ্ব দুর্বল হবে। চীন বিপুল পরিমাণে রাশিয়ার কাঁচামাল কিনছে, অস্ত্র সরবরাহ করছে, আর রাশিয়ায় উত্তর কোরীয় সৈন্য পাঠানোকেও তারা ভালো চোখে দেখছে।”
ফ্রাঙ্কেন আরও বলেন, “রাশিয়া নিকট ভবিষ্যতে বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোতে বড় আক্রমণ করবে বলে মনে হয় না। কারণ, সেগুলো ন্যাটো সদস্য। খুব শিগগিরই ইউরোপে ৬০০টি এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েন হবে। রাশিয়ানরা এগুলোকে ভয় পায়, কারণ তাদের পক্ষে এগুলো শনাক্ত করা সম্ভব নয়।”
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, তিনি এখনো রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাননি। আবারও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ার কথা বিবেচনা করছেন।
দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা ২০২৮ সালে। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হ্যারিস বলেন, তিনি এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। তবে বিশ্বাস করেন, হোয়াইট হাউস একদিন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ডেমোক্র্যাটিক দলের মনোনয়ন নিয়ে পরিচালিত এক জরিপে হ্যারিস হলিউড অভিনেতা ডোয়াইন জনসনের থেকেও পিছিয়ে আছেন। জনসন ‘দ্য রক’ নামে বেশি পরিচিত। তবে হ্যারিস বলছেন, ‘যদি আমি জরিপে গুরুত্ব দিতাম তাহলে এতদূর আসতে পারতাম না।’
সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে কমলা হ্যারিস বলেন, গত নির্বাচনী প্রচারের সময়ই তাকে ফ্যাসিস্ট বলে সতর্ক করেছিলাম। সেটি এখন সঠিক বলে প্রমাণ হয়েছে।
জো বাইডেন প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন হ্যারিস। গত নির্বাচনে তিনি ডেমোক্র্যাটিক দলের মনোনয়ন নিয়ে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তবে নির্বাচনে হেরে যান।
বর্তমানে ‘১০৭ দিন’ নামে নিজের লেখা একটি বইয়ের প্রচার করছেন হ্যারিস। বইটি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা।