আফগানিস্তানে ভূমিধসের ঘটনায় ২৫ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও আটজন। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় নুরিস্তান প্রদেশে ভূমিধস আঘাত হেনেছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে। খবর এএফপির।
আজ সোমবার সামাজিক মাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সায়েক বলেন, ভূমিধসের কারণে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আটজন আহত হয়েছে।
সায়েক জানিয়েছেন, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। পাকিস্তান সীমান্তের কাছে অবস্থিত নুরিস্তান প্রদেশের বেশির ভাগই পাহাড়ী বন দ্বারা আচ্ছাদিত। এটি হিন্দুকুশ পর্বতশ্রেণির দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত। প্রাদেশিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বরফের কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে।
প্রদেশের গণপূর্ত বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ নবী আদেল বলেন, মেঘলা আকাশ এবং বৃষ্টির কারণে নুরিস্তান শহরে হেলিকপ্টারও অবতরণ করতে পারছে না। তিনি বলেন, প্রদেশের প্রধান সড়কটি বরফের কারণে ঢাকা পড়েছে। ফলে উদ্ধারকাজ কঠিন হয়ে পড়েছে।
প্রদেশের তথ্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক প্রধান জামিউল্লাহ হাশিমি এএফপিকে বলেন, প্রায় ২০টি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে বা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, এখনো তুষারপাত হচ্ছে। এর মধ্যেই উদ্ধারকাজ চলছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে আফগানিস্তানের বেশির ভাগ এলাকাতেই চলতি বছর তুষারপাত দেরিতে শুরু হয়েছে।
জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি এখন আফগানিস্তান। ইতোমধ্যেই টানা তিন বছর ধরে দেশটি খরার কারণে প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর নুরিস্তান প্রদেশে তুলনামূলক কম তুষারপাত হয়েছে। মোহাম্মদ নবী আদেল বলেন, চলতি বছর আগের বছরগুলোর মতো তুষারপাত হয়নি এবং এটা বেশি দিন স্থায়ীও হচ্ছে না। কয়েক দশক ধরে চলা যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশে পরিণত হয়েছে আফগানিস্তান। দুর্যোগপ্রবণ আবহাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
আফগানিস্তানে তালেবান কর্তৃপক্ষ খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলে গারদেশ শহরের একটি স্টেডিয়ামে বুধবার গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তালেবানদের ফের ক্ষমতায় ফেরার পর এটি ষষ্ঠ প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড। এএফপির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এএফপির এক সাংবাদিক জানান, পাক্তিয়া প্রদেশের রাজধানী গারদেশে হাজারো দর্শকের সামনে ভুক্তভোগী পরিবারের একজন সদস্য সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির বুকে তিনটি গুলি করেন। মৃত্যুদণ্ডের আগের সন্ধ্যায় গভর্নরের অফিস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘এই ঘটনায় উপস্থিত থাকতে’ কর্মকর্তাদের ও সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানায়।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর আফগানিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট বিবৃতিতে বলেন, ‘এক খুনিকে প্রতিশোধমূলক শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।’ বিবৃতিতে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আয়াজ আসাদ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার অনুমোদনে এ মৃত্যুদণ্ডের আদেশ জারি করা হয় বলে আদালত জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, তালেবান ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই দণ্ডিত ব্যক্তি আটক ছিলেন। তিনি হাবিবুল্লাহ সাইফ-উল-কাতাল নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন। মামলাটি তিনটি সামরিক আদালতে অত্যন্ত সঠিকভাবে ও একাধিকবার পর্যালোচনা করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারকে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, তবে তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানি উপস্থিত ছিলেন।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান শাসনকালে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড ছিল সাধারণ ঘটনা। তবে এএফপির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান আবারও ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রকাশ্য মাত্র কয়েকটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ২০২২ সালে আখুন্দজাদা তালেবান সরকারের ইসলামী আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী বিচারকদের শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দেন। এতে ‘চোখের বদলে চোখ’ নামে পরিচিত প্রতিশোধমূলক শাস্তি ‘কিসাস’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা হত্যার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান দেয়।
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিনটি প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। পূর্বাঞ্চলীয় গজনি শহরে দুই ব্যক্তিকে পিঠে একাধিক গুলি করা হয় এবং এর কয়েক দিন পর উত্তরাঞ্চলীয় জওজান প্রদেশে অনুরূপ একটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তালেবান শাসনাধীন আফগানিস্তানে চুরির অপরাধ, ব্যভিচার ও মদ্যপানের ক্ষেত্রে মূলত দণ্ড হিসেবে বেত্রাঘাত প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন তালেবান সরকারের শারীরিক শাস্তি ও মৃত্যুদণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। অ্যামনেস্টির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে মৃত্যুদণ্ডের প্রচলনে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল চীন, ইরান, সৌদি আরব, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনে বড় দায়িত্ব পেতে চলেছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ব্যাপক সংস্কার করার জন্য একটি নতুন বিভাগের নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
ভোটের আগেই ইলন মাস্ক বলেছিলেন, নতুন গঠিত ‘সরকারি দক্ষতা বিভাগ’ কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটে দুই লাখ কোটি ডলার সাশ্রয়ের জন্য কাজ করবেন। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রতিশ্রুতি খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী, তবে তিনি নিজেও ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রচণ্ড রকমের উচ্চাকাঙ্ক্ষী, যা তাঁর সম্পদ বাড়িয়েই চলেছে।
নতুন বিভাগের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু এখনো জানানো হয়নি। তবে প্রশ্ন উঠেছে, এই সরকারি সংস্থার নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি মাস্ক কীভাবে নিজের ব্যবসা চালাবেন। স্পেসএক্স বা টেসলার মতো বিশাল কোম্পানি তাঁকে ব্যবস্থাপনা করতে হয়। আরও আছে এক্সসহ অন্যান্য ব্যবসা।
অন্যদিকে মাস্কের সব ব্যবসা কোনো না কোনোভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সুতরাং এই উদ্বেগও দানা বাঁধছে যে সম্ভাব্য স্বার্থের সংঘাত তিনি কীভাবে সামাল দেবেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প এক ঘোষণায় বলেছেন, মাস্ক ও তাঁর আরেক ধনী সহযোগী বিবেক রামাস্বামী নতুন বিভাগে যৌথ নেতৃত্ব দেবেন। এই দুজন ‘সরকারের বাইরে থেকে উপদেশ ও পথনির্দেশ দেবেন’।
একজন রিপাবলিকান প্রার্থীকে সমর্থন করা এবং তাকে জিততে সাহায্য করা ইলন মাস্কের জন্য একটি রাজনৈতিক বিবর্তন। দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম গ্রহণকারী ৫৩ বছর বয়স্ক এই উদ্যোক্তা ছিলেন হাঁটি হাঁটি পা পা করা ইলেকট্রিক গাড়িশিল্পের মুখচ্ছবি। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তিনি প্রায়ই সোচ্চার হয়েছেন।
২০১৭ সালে ট্রাম্প যখন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে আসেন, তখন প্রতিবাদ জানিয়ে মাস্ক প্রেসিডেন্টের দুটি পরামর্শক পরিষদ থেকে পদত্যাগও করেছিলেন। তবে ওই ঘটনার কয়েক বছর পর এখন তিনি ট্রাম্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেলিব্রিটি সমর্থনকারী। তাকে ও তার ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ প্রচারণাকে হোয়াইট হাউসে ফিরিয়ে আনতে মাস্ক কাজ করেছেন।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জেতানোর জন্য ইলন মাস্ক ১০ কোটি ডলারের বেশি খরচ করেছেন। এটি বেশ বড় পরিমাণ অর্থ। তবে তাঁর ৩০ হাজার কোটি ডলারের সম্পদের তুলনায় তা অবশ্য খুবই সামান্য।
ইলন মাস্ক এক্সে তার প্রভাবকেও কাজে লাগিয়েছেন। এক্সে তার অনুসারীর সংখ্যা ২০ কোটি। তাঁদের কাছে তিনি ট্রাম্পের পক্ষে মেসেজ পৌঁছে দিয়েছেন। পাশাপাশি দিয়েছেন অবৈধ অভিবাসী ও ভোট নিয়ে বিভিন্ন অপতথ্য। তবে এখন দেখার বিষয় মাস্ক ও ট্রাম্পের মতো দুজন আত্মশ্লাঘাপূর্ণ ব্যক্তিত্ব কত দিন একসঙ্গে কাজ করতে পারেন।
অবৈধ অভিবাসন: ইলন মাস্কের জন্ম ১৯৭১ সালের ২৮ জুন প্রিটোরিয়ায়। পিতা ছিলেন একজন প্রকৌশলী, মা কানাডায় জন্ম নেওয়া একজন মডেল। কিশোর বয়সের শেষের দিকে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে অন্টারিও চলে আসেন কুইনস ইউনির্ভাসিটিতে পড়ার জন্য। দুই বছর পর তিনি ইউনির্ভাসিটি অব পেনসিলভানিয়াতে চলে আসেন এবং পদার্থবিদ্যা ও ব্যবসায় স্নাতক করেন।
এরপর ক্যালিফোর্নিয়ায় স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়া বাদ দিয়ে মাস্ক জিপ২ নামের একটি কোম্পানি খোলেন, যারা গণমাধ্যমশিল্পের জন্য অনলাইন প্রকাশনা সফটওয়্যার তৈরি করত। ১৯৯৯ সালে এই কোম্পানি তিনি ৩০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যে বিক্রি করেন। ফলে ৩০ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি মিলিয়নিয়ার হন।
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান ইস্যু ছিল অবৈধ অভিবাসন। এ সময় খবর বের হয় যে মাস্ক যখন স্ট্যানফোর্ড ছাড়েন, তখন সম্ভবত তিনি ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করেছিলেন।
মাস্কের পরের কোম্পানি ছিল এক্স ডটকম। এটি পরে পেপালের সঙ্গে একত্র হয়। ২০০২ সালে ১৫০ কোটি ডলারের বিনিময়ে এই কোম্পানি কিনে নেয় ইবে। পেপাল ছাড়ার পর মাস্ক আরও কিছু উচ্চাভিলাষী উদ্যোগের সঙ্গে নিজেকে জড়ান।
২০০২ সালেই তিনি স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানে তিনি এখন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা। ২০০৪ সালে তিনি টেসলার চেয়ারম্যান হন। মাস্কের ইচ্ছা মঙ্গল গ্রহে মানুষের কলোনি হবে। এ লক্ষ্যে তিনি স্টারশিপ বানাচ্ছেন, যা মানুষ ও মালামাল নিয়ে চাঁদ, মঙ্গল গ্রহ ও তার চেয়ে বেশি দূরে যাবে।
ইলন মাস্কের মার্কিন, কানাডিয়ান ও দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিকত্ব রয়েছে। তিনবার বিয়ে করে তিনি বিবাহবিচ্ছেদ করেছেন। কানাডীয় লেখক জাস্টিন উইলসনকে একবার ও ব্রিটিশ অভিনেত্রী টালুলাহ রাইলিকে তিনি দুবার বিয়ে করেছিলেন। শিল্পী ও গায়িকা গ্রিমসের সঙ্গে প্রেম করেছেন। মাস্কের সন্তানের সংখ্যা ১২, যার মধ্যে একজন শিশু অবস্থায় মারা গেছে।
কমলা হ্যারিস নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প-যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন, সেই সিদ্ধান্ত হতে আর বেশি দেরি নেই। ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে মার্কিন নির্বাচন। হোয়াইট হাউসের জন্য দৌড় এখন খুব উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এদিকে শনিবার ‘স্যাটারডে নাইট লাইভ’ টিভি কমেডি শোতে উপস্থিত হয়েছেন ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। অন্যদিকে নর্থ ক্যারোলিনায় সমাবেশ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সমাবেশে আমেরিকান স্বপ্ন ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে। ৬০তম মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্প না হ্যারিস, কে জিতবেন তা সাতটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের ওপর নির্ভর করছে বলে জানাচ্ছে মার্কিন গণমাধ্যম ও নির্বাচনী বিশ্লেষকরা। এই সাতটি অঙ্গরাজ্যের একটি নর্থ ক্যারোলিনা। শেষ মুহূর্তের প্রচারে শনিবার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য নর্থ ক্যারোলিনায় যান ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এ নিয়ে টানা চারদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একই দিন একই অঙ্গরাজ্যে প্রচার চালাতে গেলেন। নর্থ ক্যারোলিনায় শেষ মুহূর্তে প্রচারে নিজ নিজ জনসমর্থন আরও কিছুটা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন দুই প্রার্থী। প্রায় সব জনমত জরিপে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকশন ল্যাবের তথ্যের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, সাত কোটিরও বেশি আমেরিকান ইতোমধ্যে তাদের আগাম ভোট দিয়েছেন। এর আগেরবার ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে পড়া রেকর্ড আগাম ভোটের চেয়ে এটি কম হলেও এতে নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের উদ্দীপনা লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
শনিবার ছিল নর্থ ক্যারোলিনায় আগাম ভোট দেওয়ার শেষ দিন। অঙ্গরাজ্যটিতে এ পর্যন্ত ৩৮ লাখেরও বেশি ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। যদিও অঙ্গরাজ্যটির পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকাগুলো এখনো হারিকেন হেলেনের প্রভাবে সৃষ্ট প্রাণঘাতী বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে পেনসিলভানিয়ার পর সবচেয়ে বেশি ইলেকটোরাল ভোট নর্থ ক্যারোলিনা ও জর্জিয়ায়, ১৬টি করে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে একজন প্রার্থীকে অন্তত ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হবে।
এদিকে, শনিবার ‘স্যাটারডে নাইট লাইভ’ টিভি কমেডি শোতে উপস্থিত হয়েছেন ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। শোতে তাকে অভিনেত্রী মায়া রুডলফের বিপরীতে নিজেই নিজের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে। এ সময় নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রকে শান্ত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন কমলা।
শোতে অভিনেত্রী মায়া রুডলফের বিপরীতে একটি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে কমলাকে। একই ধরনের কালো স্যুট ও মুক্তোর মালা পরে দুজনেই হ্যারিসের প্রথম নাম নিয়ে মজার ছলে নানা রকম কথা বলেন এ সময়। এই শোতে এটি ছিল হ্যারিসের প্রথম উপস্থিতি। শোতে অন্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরাও দীর্ঘদিন ধরে উপস্থিত হয়েছেন। ২০১৫ সালে প্রথম নির্বাচনী প্রচারণার সময় এই শোতে উপস্থিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। এবারে ট্রাম্পকে শোতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কি না তা জানেন না বলে জানিয়েছেন তার এক সহকারী।
অন্যদিকে শনিবার নর্থ ক্যারোলিনার গ্রিনসবোরো শহরে সমাবেশ করেন ট্রাম্প। ৯০ মিনিটের ভাষণে কমলা হ্যারিসকে মিথ্যাবাদী বলেন ও ভুয়া খবরকে সামনে আনেন ট্রাম্প। তিনি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমাবেশ করার দাবি করে আমেরিকান স্বপ্ন ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রকে একটি ‘অধিকৃত দেশ’ হিসেবে বর্ণনা করতে গিয়ে মঙ্গলবারের নির্বাচনের দিনটিকে ‘আমেরিকার মুক্তি দিবস’ হিসেবে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন একটি দখলকৃত দেশ’, কিন্তু এটি শিগগিরই একটি অধিকৃত দেশ থাকবে না। ৫ নভেম্বরের নির্বাচন ‘আমেরিকাতে মুক্তি দিবস’ হবে, এটি মুক্তি হতে চলেছে।’ যোগ করেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি কঠোর পরিশ্রম করছি, কারণ আমাদের জিততে হবে।’ ট্রাম্প প্রায় ৯০ মিনিট বক্তৃতা দেন, যা তার সমাবেশের জন্য মোটামুটি সাধারণ। তারা প্রায়ই অতিথি বক্তাদের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয় এবং ট্রাম্প নিজে নিয়মিত দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কথা বলেন।
এদিকে, এবিসি নিউজের সাম্প্রতিক তথ্যানুসারে, জুলাইয়ের শেষের দিকে দৌড়ে প্রবেশের পর থেকে হ্যারিস জাতীয় ভোটদানের গড়ে ট্রাম্পের চেয়ে একটি ছোট লিড পেয়েছেন। তিনি ৪৮ থেকে ৪৭ শতাংশে এগিয়ে রয়েছেন। যদিও জাতীয় নির্বাচনগুলো সারা দেশে একজন প্রার্থী কতটা জনপ্রিয় তার জন্য একটি দরকারি নির্দেশিকা, তবে নির্বাচনের ফলাফলের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য জরিপ সেরা উপায় নয়।
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনী ল্যাব অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৭৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ইতোমধ্যে তাদের ভোট দিয়েছেন। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, এতে প্রায় ৪১ মিলিয়ন ব্যক্তিগত প্রাথমিক ভোট এবং ৩৪ মিলিয়নেরও বেশি পোস্টাল ব্যালট রয়েছে।
ফিলিস্তিনের সর্বাধিক প্রচারিত ‘দৈনিক ফেলেস্টিন’ জানিয়েছে, বিশ্ব সেরা সন্ত্রাসী নেতানিয়াহুর বাহিনী শনিবার ভোরে আবারও গাজায় হামলা চালিয়ে ৫০ শিশুসহ ৮৪ জনকে হত্যা করেছে। নেতানিয়াহুর বাহিনী দু’টি আবাসিক বহুতল ভবনে এ হামলা চালায়। ভবন দু’টিতে ১শ’ ৭০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলো।
নেতানিয়াহুর বাহিনী আবাসিক ভবনে হামলা চালিয়ে ৮৪ জনকে হত্যার ঘটনাকে ‘নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ বলে মন্তব্য করেছে গাজার সরকারি গণমাধ্যম ‘দৈনিক ফেলেস্টিন’।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই এলাকাটি অবরুদ্ধ করে ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত বোমা হামলার কারণে সেখানে উদ্ধারকর্মীরা যেতে পারছেন না। ওই এলাকায় কোনো ধরনের স্বাস্থ্য পরিষেবা কিংবা ত্রাণ সহায়তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সরকারের পক্ষ থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে কাতার ভিত্তিক আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির বালবেক-হেরমেল এলাকায় শনিবার ভোরে ইসরাইল বাহিনীর হামলায় ৫২ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন ৭২ জন। এ নিয়ে লেবাননে ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
এদিকে গাজা ও লেবাননে যুদ্ধবিরতি নিয়ে গুঞ্জন উঠলেও নেতানিয়াহু বাহিনীর ‘অমানবিক আগ্রাসন’ আরও বেড়েছে। এই অবস্থায় নেতানিয়াহুর প্রস্তাবিত স্বল্প মেয়াদি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মানবে না স্বাধীনতাকামী হামাস যোদ্ধারা। হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি শনিবার সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরাকে একথা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, বন্দিদের মুক্ত করার জন্য স্বল্প মেয়াদ এ চুক্তি ইসরাইলের এক ‘নয়া চল-চাতুরি।’ হামাসের মুখপাত্র আরও জানিয়েছেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ না করেই বন্দিদেও ফেরত চাওয়ার বিষয়টিকে ও হামাস প্রত্যাখ্যান দিয়েছে। স্বাধীনতাকামী হামাস জানিয়েছে, বন্দিদের মুক্তি দিলেও নেতানিয়াহু বাহিনী আবারও বোমা হামলা শুরু করতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এ নির্বাচনের আগে ব্যাপক সহিংসতা, ফল পাল্টানোর চেষ্টা, রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে দেশটির ভোটাররা শঙ্কায় রয়েছেন। হঠাৎ করেই রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে সাধারণ ভোটাররা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার ও রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে ভোটারদের মধ্যে দেশের গণতন্ত্র নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চের এক জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, আমেরিকার নিবন্ধিত ভোটারদের ৪০ ভাগই বলেছেন, তারা নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার চেষ্টায় সহিংসতা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে। রিপাবলিকানপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করে আসছেন-কেবলমাত্র নির্বাচনে কারচুপি হলে তিনি পরাজিত হবেন। এসব আগাম অভিযোগ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে ক্রমেই উদ্বেগ বাড়ছে। নিবন্ধিত ভোটারদের ৯০ ভাগই মনে করেন, প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যে ভোট গণনা শেষ করে এবং অভিযোগের চ্যালেঞ্জগুলো আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে সমাধান করলে নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীকে তা অবশ্যই মেনে নেওয়া উচিত। ভোটারদের এক-তৃতীয়াংশ মনে করেন, রিপাবলিকানপ্রার্থী ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে গেলে তিনি পরাজয় মেনে নিবেন। এদিকে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন ট্রাম্পের পরাজয় মেনে নেওয়ার বিষয়ে একমত প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্প প্রতিশোধের বন্যা বয়ে দেবেন: কমলা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি। এরই মধ্যে ভোটারদের উদ্দেশে সমাপনী বক্তব্য দিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। কমলা হ্যারিস তার বক্তব্য এমন স্থানে দিয়েছেন, যেখানে প্রায় চার বছর আগে ক্যাপিটল দাঙ্গার ঠিক আগে আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্টপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পও বক্তব্য রেখেছিলেন। সেই ওয়াশিংটনে নিজের শেষদিকের নির্বাচনি প্রচারে কমলা বলেছেন, রিপাবলিকানপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় গেলে প্রতিশোধের বন্যা বয়ে দেবেন। তিনি শত্রুর তালিকা নিয়ে হোয়াইট হাউসে যাবেন। আর আমি দেশের কল্যাণে কী করা যায় সেই পরিকল্পনার তালিকা নিয়ে যাব। কমলা হ্যারিস মার্কিনিদের সতর্ক করে বলেন, ট্রাম্প নির্বাচিত হলে কেবল তার শত্রুকেই ঘায়েল করবেন না, সাধারণ মানুষের ওপরও তিনি প্রতিশোধ নেবেন।
কমলা হ্যারিস বলেন, ৯০ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে আমি অথবা ট্রাম্প ওভাল অফিসে যাব। কিন্তু দুই জনের পরিকল্পনায় তফাত্ রয়েছে। তিনি শত্রুকে শেষ করার জন্য কাজ করবেন। আর আমি দেশের মঙ্গলের জন্য অগ্রাধিকার ইস্যুগুলো বাস্তবায়ন করব। ভাইস প্রসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, এই নির্বাচন সম্ভবত আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। স্বাধীনতা ও বিশৃঙ্খলার মধ্য থেকে যে কোনো একটিকে বেছে নেওয়ার এখনই সময়। এর মাধ্যমে আপনারা জীবনের সবচেয়ে অসাধারণ কাহিনির পরবর্তী অধ্যায়টি লিখতে পারবেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প ভারসাম্যহীন, প্রতিশোধপরায়ণ এবং ক্ষুব্ধ একজন ব্যক্তি। বাইডেনের কাছে পরাজয় মেনে নিতে পারেননি রিপাবলিকান প্রার্থী, তাই সশস্ত্র জনতা দিয়ে ইউএস ক্যাপিটলে হামলা চালিয়ে নির্বাচনের ফল উল্টে দিতে চেয়েছিলেন তিনি।
দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ে কমলা বলেন, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো খরচ কমানো, যা করোনা মহামারির আগ থেকে বাড়ছিল এবং এখনো অনেক বেশি। সব ভেদাভেদ ভুলে দেশের জন্য মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে হ্যারিস বলেন, পরস্পরকে দোষারোপ করা বন্ধ করে আমাদের উচিত হাতে হাত রেখে দাঁড়ানো। নারীদের গর্ভপাতের অধিকার নিয়েও কথা বলেছেন কমলা। তিনি বলেন, নিজের শরীরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মৌলিক স্বাধীনতা মানুষের থাকা দরকার। অথচ ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে আমেরিকার নারীদের গর্ভধারণ করতে বাধ্য করবেন। বিশ্বাস না হলে আপনারা প্রজেক্ট-২০২৫ গুগল করুন।
লেবাননে শান্তি ফেরাতে মুসলিমদের ভোট চাইলেন ট্রাম্প
মর্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এতে অংশগ্রহণ করছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। লেবাননে শান্তি ফেরাতে মুসলিম ভোটারদের কাছে সামাজিকমাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরাতে চান এবং লেবাননে ধ্বংস এবং দুভোর্গ কমিয়ে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চান। এক্স হ্যান্ডলে ট্রাম্প জানান, তার প্রশাসনের সময়, তারা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পেয়েছেন এবং খুব শিগগিরই তারা আবার শান্তি পাবে। তিনি কমলা হ্যারিস এবং জো বাইডেনের কারণে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান এবং লেবাননে দুর্ভোগ ও ধ্বংস বন্ধ করবেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে প্রকৃত শান্তি দেখতে চান। সেখানে একটি স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে। যাতে এটি প্রতি ৫ বা ১০ বছরে পর যেন পুনরাবৃত্তি না হয়।
ট্রাম্প আরও জানান, তিনি সমস্ত লেবাননের সম্প্রদায়ের মধ্যে সমান অংশীদারত্ব রক্ষা করবেন। লেবাননে তাদের বন্ধুবান্ধব এবং পরিবার তাদের প্রতিবেশীদের সাথে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করার যোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে চান। তিনি আশাবাদী লেবাননের মহান জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন। এ সময় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত লেবানিজ সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করে শান্তির জন্য তাকে ভোট দেওয়ার আহ্বান করেন। প্রসঙ্গত, গত ১ বছর ধরে গাজায় চলছে ইসরায়েলের অবর্ণনীয় নিষ্ঠুরতা। এমন পরিস্থিতিতে মুসলিম ভোটাররা হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে পারে। আর তাই মুসলিম ভোটারদের টানতে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ট্রাম্প ও কমলা।
পুরো বিশ্বের নজর এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে। এই নির্বাচনের প্রায় এক সপ্তাহ বাকি। ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষ ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস। তিনি বর্তমান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প ও কমলার মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এবার ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে দেশ-বিদেশে কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে চারদিকে বিস্তর আলোচনা চলছে। এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার কমতি নেই। ফলাফল উল্টো হলে; অর্থাৎ নির্বাচনে ট্রাম্প হেরে গেলে পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে, বিশেষ করে অনেক মার্কিনের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে।
২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে ২০২০ সালের নির্বাচনে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হন। তবে এই নির্বাচনে নিজের পরাজয়ের বিষয়টি এখন পর্যন্ত মেনে নেননি ট্রাম্প। পরাজয় মেনে নিতে ট্রাম্পের এই অস্বীকৃতি মার্কিন জনগণের মধ্যে ব্যাপক বিভক্তি তৈরি করে। ট্রাম্পের আহ্বানে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি তার উগ্র সমর্থকরা মার্কিন কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল হিল) হামলা চালান। এই সহিংস হামলার উদ্দেশ্য ছিল, কংগ্রেসে বাইডেনের জয়ের সত্যায়ন ঠেকানো।
মার্কিন গণতন্ত্রে অবিশ্বাসের বীজ বপনের বিষয়ে ট্রাম্পের অব্যাহত চেষ্টা দেশটির ভোটারদের মনে আশঙ্কা জাগাচ্ছে। আর সেই আশঙ্কা হলো, আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্প পরাজিত হলে ক্যাপিটল হিলে সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের বিংহামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডোনাল্ড নেইম্যান বলেন, এবার যদি তিনি (ট্রাম্প) হেরে যান, তাহলে আবার যে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলবেন, সে বিষয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই। আর ভোটের ফলাফল পাল্টে দিতে এমন কোনো চেষ্টা নেই, যা তিনি করবেন না। এ ছাড়া কমলা হ্যারিসের অভিষেক অনুষ্ঠানেও তিনি অংশ নেবেন না। তিনি এমন এক ব্যক্তি, যিনি কখনোই পরাজয় মেনে নেবেন না।
ট্রাম্পের অতীত কর্মকাণ্ডের যে ইতিহাস তা বলছে, আসন্ন নির্বাচনে তার প্রতারণার চেষ্টা করা কোনো অমূলক বিষয় নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দিতে ট্রাম্প ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছিলেন। এই ষড়যন্ত্রের পথ ধরেই তিনি নানা অপচেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
প্রাণঘাতী দাঙ্গা : ট্রাম্পের সমালোচকরা ২০২১ সালে ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন। সে সময় ট্রাম্প ভোট জালিয়াতির ভুয়া অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি তার সমর্থকদের কংগ্রেস ভবনে যেতে বলেছিলেন। ট্রাম্পের ডাকে সাড়া দিয়ে তার উগ্র সমর্থকরা ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো হয়েছিলেন। তারা ক্যাপিটল হিলে প্রাণঘাতী দাঙ্গায় জড়িয়েছিলেন।
সমালোচকদের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কেননা, গত মাসেই মিশিগানে এক নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি যদি হেরে যান, তাহলে তাদের (ডেমোক্র্যাটদের) প্রতারণার কারণেই হারবেন। প্রতারণা ছাড়া তাকে কোনোভাবেই হারানো যাবে না। ট্রাম্প ও তার সহযোগীরা আইনি উপায় ব্যবহার করেও ২০২১ সালে দাঙ্গার ক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন। ওই সময় তারা ৬০টির বেশি মামলা করেছিলেন। এসব মামলায় এমন অভিযোগও করা হয় যে, মহামারির অজুহাতে ভোটের নিয়ম পরিবর্তন করেছে স্থানীয় নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ। এসব মামলা ধোপে টেকেনি। প্রতিটি মামলায় হেরে যায় ট্রাম্প শিবির। ভোট গ্রহণের আগেই নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা উচিত ছিল বলে রায় দেন বিচারক।
এ জন্য এবার আগেই মাঠে নেমেছেন রিপাবলিকানরা। আগাম ভোট শুরুর আগে তারা ১০০টির বেশি মামলা করেছেন। এসব মামলায় মার্কিনরা কীভাবে নিবন্ধিত হন, কীভাবে ভোট দেন, কারা ভোট দিতে পারেন- এ ধরনের নির্বাচন-সংক্রান্ত নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিক্ষিপ্ত সহিংসতা : যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ-ভিত্তিক পিআর প্রতিষ্ঠান ক্রোনাস কমিউনিকেশনসের প্রতিষ্ঠাতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যাড্রিয়েন উথে বলেন, ট্রাম্প হেরে গেলে আইনি লড়াই সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে চলতে পারে। এর তীব্রতার ওপর ভিত্তি করে কিছু কিছু এলাকায় বিক্ষোভ, এমনকি বিক্ষিপ্ত সহিংসতাও হতে পারে। স্ক্রিপস নিউজ/ইপসোস জরিপে দেখা গেছে, এবার নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার বিষয়ে আশঙ্কা করছেন প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অংশগ্রহণকারী (জরিপে)। আর আগামী ৫ নভেম্বর ভোট গ্রহণ শুরুর পর সম্ভাব্য অস্থিরতা দমনে বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারী সামরিক বাহিনী ব্যবহারে পক্ষে মত দিয়েছেন।
ইউগভের নতুন একটি জরিপে দেখা গেছে, এক-চতুর্থাংশের বেশি অংশগ্রহণকারী মনে করছেন, নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। ১২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, তারা এমন ব্যক্তিদের চেনেন, যারা ট্রাম্প প্রতারিত হয়েছেন বলে মনে করলে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে পারেন।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকের দপ্তর থেকে আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে বিদেশি ক্রীড়নকের হুমকির ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সম্ভাব্য রক্তপাতের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশি ক্রীড়নকের মাধ্যমে বা ইন্ধনে হিংসাত্মক প্রতিবাদ, সহিংসতা বা প্রত্যক্ষ হুমকির কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন।
কমলার আইকিউ কম : ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে রোববার নির্বাচনী সমাবেশ করেছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সমাবেশের শুরুতে ট্রাম্পের মিত্ররা বেশ কিছু অশ্লীল ও বর্ণবাদী মন্তব্য করেন। বক্তব্যের শুরুতে ট্রাম্প সমবেত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘চার বছর আগের চেয়ে কি এখন আপনারা ভালো আছেন?’ এ সময় জনতা সমস্বরে বলে ওঠে, ‘না।’ ৫ নভেম্বরের ভোটে জয়ী হলে অপরাধীদের হামলা থেমে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস খুবই কম আইকিউসম্পন্ন (বুদ্ধির সূচক)।’
অস্ত্র বহন আর মত প্রকাশের স্বাধীনতায় সমর্থন দিতে হবে। তাহলেই কপালে জুটতে পারে ১০ লাখ মার্কিন ডলার। শনিবার পেনসিলভানিয়ায় এমন এক প্রতিযোগিতার ঘোষণা করেছেন মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
আসন্ন মার্কিন নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে আলোচনায় এলেন মাস্ক। ৫ নভেম্বর নির্বাচনের আগ পর্যন্ত নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে প্রতিদিন একজনকে ১০ লাখ মার্কিন ডলার প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। রিপাবলিকান প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে যেন কোমর বেঁধে নেমেছেন টেসলা ও স্পেস এক্স মালিক। তবে তার সর্বশেষ কাজে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। এই লটারির বৈধতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লটারিতে অংশগ্রহণের নিয়মকানুন ব্যাখ্যা করেছেন মাস্ক। ‘বাকস্বাধীনতা ও অস্ত্র বহনের সমর্থনে’ একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করতে হবে অংশগ্রহণকারীদের। আর পিটিশনে স্বাক্ষর করতে হলে অবশ্যই ‘সুইং স্টেটের’ নিবন্ধিত ভোটার হতে হবে।
মার্কিন নির্বাচনে ৭টি ‘দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের’(সুইং স্টেট) একটি হচ্ছে পেনসিলভানিয়া। এই অঙ্গরাজ্যগুলোতে সমর্থকদের পাল্লা আকস্মিকভাবে যেকোনো দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা অনেক বেশি। আর এই রাজ্যগুলোর ভোট অনেকাংশেই নির্ধারণ করে ওভাল অফিসের পরবর্তী প্রধান কে হবেন। ফলে এখানে প্রচারণার ওপরই অনেকটা নির্ভর করবে হ্যারিস বা ট্রাম্পের ভোট ভাগ্য।
বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের শিবির থেকে এখন পর্যন্ত মাস্কের কর্মকাণ্ড নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে পেনসিলভানিয়ার ডেমোক্র্যাট গভর্নর জশ শাপিরো মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসিকে বলেছেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত মাস্কের বিষয়টি খতিয়ে দেখা।’
নির্বাচনী আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ ও জর্জটাউন ল’স্কুলের অধ্যাপক ড্যানিয়েলে ল্যাং এএফপিকে বলেছেন, ‘ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের আওতায় মাস্কের প্রতিযোগিতা দেওয়ানি বা ফৌজদারি আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। কারণ নিবন্ধিত ভোটার হওয়ার শর্তে অর্থ প্রদান একেবারেই অবৈধ।’
প্রায় একই কথা বলেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক রিক হ্যাসেন। নির্বাচন সংক্রান্ত নির্দিষ্ট আইন উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে অর্থ গ্রহণ ও প্রদান উভয়ই আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ। আইন লঙ্ঘনের শাস্তি হতে পারে ১০ হাজার মার্কিন ডলার অর্থদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।
কয়েকজন অবশ্য ভিন্ন সুরে কথা বলছেন। তাদের একজন হলেন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ব্র্যাড স্মিথ।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে স্মিথ বলেছেন, ‘মাস্ক আইনের ধূসর একটা জায়গা থেকে কাজ করছেন। কারণ তিনি ভোটের জন্য অর্থ দিচ্ছেন না। বরং পিটিশনে স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করাচ্ছেন।’
এদিকে, নিজের সাফাই গেয়ে মাস্ক বলেছেন, তিনি কেবল মানুষকে ভোট দিতে উৎসাহিত করতে চাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, ‘কথা বলুন। বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সদস্য সবাইকে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করুন। আমরা চাই সুইং স্টেটের সবার কাছে আমাদের বার্তা পৌঁছাক। আমি ধারণা করি এর মাধ্যমে (১০ লাখ ডলার পুরস্কার) তা নিশ্চিত হলো।’
শেষ কয়েক মাস ধরে, রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন বৃদ্ধি করতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন মাস্ক। ট্রাম্প শিবিরে এখন পর্যন্ত সাড়ে সাত কোটি মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছেন তিনি।
অধ্যাপক ল্যাং বলেছেন, প্রতি নির্বাচনেই এসব ফন্দিফিকির দেখা যায়। নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেই অনেক প্রশ্নবিদ্ধ কাজ করতে দেখা গেছে। যেমন ‘আমি ভোট দিয়েছি’ (আই ভোটেড) স্টিকার দেখালে কোনো একটি পণ্য উপহার হিসেবে দেওয়া। তবে অর্থের পরিমাণের কারণে মাস্কের আয়োজিত প্রতিযোগিতার ব্যাপ্তি ও প্রভাব অনেক বেশি বিস্তৃত।
বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির মতে, শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলো বাণিজ্য যুদ্ধে জড়ালে বৈশ্বিক জিডিপি ৭ ভাগ পর্যন্ত কমতে পারে। এতে বড় সংকট তৈরি হবে বিশ্ব অর্থনীতিতে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের যৌথ বৈঠকে উঠে এসেছে এই সতর্কবার্তা।
করোনাভাইরাসের মহামারিতে অর্থনীতির স্থবিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সুদহার, ভোক্তা ব্যয় পতনসহ বিভিন্ন সংকট দেখেছে বিশ্ব। এর সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও বাণিজ্য সুরক্ষানীতি। বিশ্বে জোটবদ্ধভাবে বাণিজ্যে বিধিনিষেধ আরোপে প্রধান বাধা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শুল্ক আরোপ।
এ অবস্থায় বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি বলছে, বড় অর্থনীতির দেশগুলো বাণিজ্যযুদ্ধে জড়ালে বৈশ্বিক জিডিপি সংকোচন হতে পারে। এই সংকোচনের পরিমাণ হতে পারে ফ্রান্স ও জার্মানির সম্মিলিত জিডিপির সমান।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলে আমদানিতে ২০ ভাগ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সপ্তাহে তিনি এক বক্তৃতায় বলেন, ‘ডিকশনারিতে শুল্ক হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর শব্দ।’ বিপরীতে পাল্টা শুল্কের সতর্কতা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)।
এ ধরনের পাল্টাপাল্টি পরিকল্পনায় বিশ্ব অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্তের আশঙ্কায় আইএমএফ। সংস্থাটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গীতা গোপীনাথ বিবিসিকে বলেন, শুল্কের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হলে বৈশ্বিক জিডিপি প্রায় ৭ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন টিমে দায়িত্ব পালনের জন্য আরও পাঁচজন প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর কার্যালয় থেকে উপ-সলিসিটর সানা মো. মাহরুফ হোসাইন (জিপি-পিপি) স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নিয়োগ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এর সেকশন ৭(১) অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনার জন্য পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত পাঁচজনকে প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
নিয়োগ পাওয়া পাঁচ প্রসিকিউটর হলেন- সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম মঈনুল করিম ও মো. নুরে এরশাদ সিদ্দিকী ডেপুটি এটর্নি জেনারেল পদমর্যাদার, শাইখ মাহদী, তারেক আব্দুল্লাহ, তানভীর হাসান জোহা (ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ) এই তিনজন সহকারী এটর্নি জেনারেল পদমর্যাদার সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত হবেন।
এর আগে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও অপর চার প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হয়।
নারী ও শিশুসহ দেড়শ’র ও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ইন্দোনেশিয়ার উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। কয়েকদিন ধরে সমুদ্রে একটি নৌকা নোঙর করে রাখার পর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এসব শরণার্থীদের উপকূলে নিয়ে আসা হয়।
আজ শুক্রবার জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা একথা জানায়। ইউএনএইচসিআর-এর উদ্ধৃতি দিয়ে আজ ইন্দোনেশিয়ার বান্দা আচেহ থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
বেশিরভাগ জাতিগত রোহিঙ্গা মুসলমান মিয়ানমারে ব্যাপকভাবে নির্যাতিত হয়ে প্রতি বছর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছানোর জন্য দীর্ঘ ও বিপজ্জনক সমুদ্রে যাত্রা করে।
১৫২ জনকে বহনকারী নৌকাটি কয়েকদিন ধরে দক্ষিণ আচেহ জেলার উপকূল থেকে ১.৬ কিলোমিটার দূরে নোঙর করা হয়। কর্মকর্তারা তাদের নামতে দেবেন কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে তাদের উপকূলে নিয়ে আসা হয়।
ইউএনএইচসিআর-এর ফয়সাল রহমান শুক্রবার এএফপি’কে বলেছেন, ‘মানবিক মনোভাব ও জীবন রক্ষার পাশাপাশি প্রায় ১৫২ শরণার্থীকে অবতরণের অনুমতি দেওয়ার জন্য ইউএনএইচসিআর কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘নৌকায় যারা ছিল তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল অরক্ষিত নারী ও শিশু, মানব পাচারের শিকার।’ ইউএনএইচসিআর ও অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলো এখন শরণার্থীদের সহায়তা করছে।
ইন্দোনেশিয়ায় রোহিঙ্গাদের আগমনের প্রবণতা এক ধরনের চক্রাকার কৌশল অনুসরণ করে। ঝড়ের মাসগুলোতে হ্রাস পায়। সমুদ্র শান্ত হলে বেড়ে যায়।সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় আগমন বেড়েছে। ১৪০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর আরেকটি দল বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় সুমাত্রা প্রদেশে পৌঁছেছে।
ইন্দোনেশিয়া জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। দেশটি বলেছে, মিয়ানমার থেকে শরণার্থীদের নিতে বাধ্য করা যাবে না। প্রতিবেশি দেশগুলোকে রোহিঙ্গাদের বোঝা ভাগ করে নেওয়ার এবং তার উপকূলে আসা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য বাকি আর মাত্র দুই সপ্তাহ। দুই প্রার্থী বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রচারণায় ব্যস্ত। উভয় প্রার্থীই প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আর এর মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলে মন্তব্য করেছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটপ্রার্থী কমলা হ্যারিস। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার অযোগ্য ফ্যাসিস্ট ট্রাম্প। স্থানীয় সময় বুধবার বিকেলে ওয়াশিংটন ডিসিতে ভাইস-প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি রিপাবলিকান প্রার্থীর প্রতি এমন আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছেন।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক চিফ অব স্টাফ জন কেলিকে উদ্ধৃত করে কমলা হ্যারিস ট্রাম্পকে মানসিক ভারসাম্যহীন ও অস্থির বলেও অভিহিত করেন। জন কেলি নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে ‘ফ্যাসিস্ট’র সঙ্গে তুলনা করেছেন। কমলা হ্যারিস জন কেলিকে উদ্ধৃত করে আরও বলেন, সাবেক এই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফ্যাসিস্টের সাধারণ সংজ্ঞা খাপ খায়।
কমলা হ্যারিস অভিযোগ করেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের হিটলারপ্রীতি রয়েছে। তিনি বলেন, তার এই প্রতিদ্বন্দ্বী ‘একচেটিয়া ক্ষমতা’ চেয়েছিলেন। পরে তাকে আবারও জিজ্ঞেস করা হয় যে ট্রাম্প ফ্যাসিবাদী, এটা তিনি বিশ্বাস করেন কি না, জবাবে তিনি ‘হ্যাঁ’ সূচক উত্তর দেন। এদিকে কমলা হ্যারিসের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে লিখেছেন, তিনি (কমলা) বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথা বলেই যাচ্ছেন। আমাকে অ্যাডলফ হিটলার এবং তার মনে মনে আরও যা যা কিছু আছে তাই বলে ডাকতে চাচ্ছেন। এ সময় তিনি কমলা হ্যারিসকে কমরেড কমলা হ্যারিস হিসেবেও সম্বোধন করেন।
তবে তিনি কমলা হ্যারিসকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ হিসেবেও বর্ণনা করেছেন। এদিকে ট্রাম্পের প্রচারণা দল ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ এনেছে। প্রচারণা দলের মুখপাত্র স্টিভেন চেয়াং বলেন, কমলা হ্যারিস ক্রমশ মরিয়া হয়ে উঠছেন। কারণ তিনি নড়বড়ে হয়ে পড়েছেন এবং তার প্রচারণা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ অবস্থায় এক পক্ষ আরেক পক্ষের নামে বিষোদগার করবে, এটা এক রকম স্বাভাবিক প্রবণতা।
এ ধরনের বাকযুদ্ধের মূল লক্ষ্য থাকে সমর্থকদের ভোট দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করা ও প্রতিপক্ষের প্রচারাভিযানকে ব্যাহত করা। ডেমোক্র্যাট গ্রুপ থার্ড ওয়ে’র পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজিস্ট ম্যাট বেনেটের মতে, কমলা হ্যারিস কেন জন কেলির বক্তব্যকে ধরে মন্তব্য করেছেন, সে বিষয়টি স্পষ্ট। কমলা হ্যারিসকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, তিনি এখন যা করছেন, তা কৌশলগত।
তার এটা নিশ্চিত করা দরকার ছিল যে, জন কেলি যা বলেছেন, ভোটাররা যেন তা জানতে পারেন এবং সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টের এই সর্বশেষ মন্তব্যটিকে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা প্রচারণা কৌশলও বলা যেতে পারে, যাতে করে দ্বিধাদ্বন্দে থাকা রিপাবলিকান সমর্থকরা ডেমোক্র্যাট প্রার্থীকে ভোট দেয়। নির্বাচন নিয়ে করা বিভিন্ন জরিপে এটাই দেখা যাচ্ছে যে, এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে। দেশটির বড় বড় শহরগুলোর আশপাশে ফিলাডেলফিয়া, ডেট্রয়েট, ফিনিক্সের মতো ছোট শহর আছে। সেসব শহরতলিতে শিক্ষিত কর্মজীবীদের বসবাস। তারা বরাবরই রিপাবলিকানের পক্ষে ভোট দিয়েছে। কিন্তু এবার জরিপগুলো থেকে সেসব স্থানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তার ঘাটতি টের পাওয়া গেছে। বেনেট বলেন, অসন্তুষ্ট রিপাবলিকানদের বিশেষ করে যারা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেবেন কী দেবেন না তা নিয়ে সংশয়ে আছেন তাদের দলে চানতে চাইছেন কমলা হ্যারিস।
নেব্রাস্কার ডেভিন ডেভেলাসকো নামের একজন বরাবরই ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পদে অযোগ্য। যদিও তিনি মনে করেন, কিছু রিপাবলিকান আছেন যারা তার মতো কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দেবেন। তবে, তিনি এও বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট সম্বন্ধে করা দাবিগুলো একঘেয়ে। জন কেলির মন্তব্যকে ইঙ্গিত করে তিনি বিবিসিকে বলেন, এই প্রতিবেদন যখন প্রকাশ হলো আমি এতে হতবাক হইনি। এতে খুব বেশি পরিবর্তন নেই।
রিপাবলিকান স্ট্র্যাটেজিস্ট ডেনিস গ্রেস গিটশাম বলেন, ভোটাররা ২০১৬ সাল থেকে ট্রাম্প সম্পর্কে একই ধরনের বক্তব্য শুনে আসছেন। তাই মোড় ঘোরাতে হলে নতুন কোনো বিতর্ক লাগবে। তিনি বিবিসিকে বলেন, আপনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিত্ব পছন্দ করেন না বলে যদি তার বিরুদ্ধে ভোট দেন, তাহলে আপনি একজন নির্ধারিত ভোটার। কিন্তু আপনি যদি এমন কেউ হন যিনি তার নীতিগুলো দেখছেন এবং তা আপনার কাছে ভাইভ বা ব্যক্তিত্বের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় তবে আপনি সেই ব্যক্তির সঙ্গে হাঁটতে যাচ্ছেন যিনি হোয়াইট হাউসে থাকাকালে সবচেয়ে ভালো করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে আর দুই সপ্তাহ পরই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শেষ মুহূর্তে এসে দেখা যাচ্ছে, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে আরও এগিয়েছেন।
রয়টার্স ও ইপসোসের করা এক জরিপে এমন ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ ওই জরিপে উঠে এসেছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা তিন পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন।
গত সোমবার শেষ হওয়া রয়টার্স/ইপসোস জরিপ অনুযায়ী, জরিপে অংশগ্রহণকারী নিবন্ধিত ভোটারদের ৪৬ শতাংশ বলেছেন, তারা কমলা হ্যারিসকে ভোট দেবেন। এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন ৪৩ শতাংশ ভোটার। এর আগে গত সপ্তাহে করা রয়টার্স/ইপসোস জরিপে কমলা হ্যারিসকে ৪৫ শতাংশ ভোটার এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ৪২ শতাংশ ভোটার সমর্থন দিয়েছিলেন।
রয়টার্স ও ইপসোসের সর্বশেষ দুই জরিপেই দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি ও অভিবাসন নিয়ে ভোটাররা অখুশি। এসব বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থানের পক্ষে ভোটাররা।
জরিপে দেখা গেছে, নিবন্ধিত ৭০ শতাংশ ভোটার জীবনযাপনের ব্যয় ভুল পথে যাচ্ছে বলে মনে করেন। অর্থনীতি ভুল পথে যাচ্ছে মনে করেন ৬০ শতাংশ ভোটার। অভিবাসন নীতি নিয়ে এই অবস্থান ৬৫ শতাংশের।
ভোটাররা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এখন প্রধান তিনটি সমস্যা- অর্থনীতি, অভিবাসন ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। এসব বিষয়ে কোন প্রার্থীর অবস্থান ভালো, এমন প্রশ্নে ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন বেশি পড়েছে। জরিপে উঠে এসেছে, অর্থনীতি নিয়ে ট্রাম্পের পক্ষে ৪৬ শতাংশ ও কমলার পক্ষে ৩৮ শতাংশের সমর্থন রয়েছে। এদিকে অভিবাসনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প ও কমলার পক্ষে সমর্থনের এ হার ৪৮ ও ৩৫ শতাংশ।
তবে রাজনৈতিক চরমপন্থা ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি মোকাবিলার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের চেয়ে হ্যারিসের ওপর ভরসা বেশি রাখছেন মার্কিন ভোটাররা। জরিপে দেখা গেছে, রাজনৈতিক চরমপন্থা ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি মোকাবিলায় কমলা হ্যারিসের প্রতি সমর্থন রয়েছে ৪২ শতাংশ ভোটারের। অন্যদিকে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন আছে ৩৫ শতাংশের। গর্ভপাত ও স্বাস্থ্যসেবা নীতিতে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে কমলা।
পরবর্তী প্রেসিডেন্টের মেয়াদের প্রথম ১০০ দিনে কোন বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের এমন প্রশ্ন করে দেখা গেছে অভিবাসনের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পেয়েছে। ভোটারদের ৩৫ শতাংশ মনে করেন, নতুন প্রেসিডেন্টকে সবার আগে অভিবাসনে নজর দেওয়া উচিত। আর ১১ শতাংশ ভোটার আয়বৈষম্য এবং ১০ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা ও করের কথা বলেন।
‘ট্রাম্প জিতলে রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের পতন বাধ্য’
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রচারে ব্যস্ত। এর মধ্যেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে নতুন মামলা। কমলা হ্যারিস প্রচার করেছেন পেনসিলভানিয়া, উইসকন এবং মিশিগানে। তার সঙ্গে ছিলেন লিজ চেনি। লিজ হলেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির মেয়ে। বাবা, মেয়ে দুজনেই রিপাবলিকান নেতা, কিন্তু তারা প্রকাশ্যে কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করেছেন।
রিপাবলিকানদের দিকে ঝুঁকে থাকা ভোট যাতে তার দিকে আসে, লিজকে নিয়ে সেই চেষ্টা করলেন হ্যারিস। ২০১৬ সালে তিনটি অঙ্গরাজ্যেই ট্রাম্প সেই সময়ের ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের থেকে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু ২০২০ সালে বাইডেন এই তিনটি রাজ্যে জিতেছিলেন। সেজন্যই হ্যারিস এই তিন সুইং স্টেটকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন। এই তিন রাজ্যে এগিয়ে থাকতে পারলে প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে যাবেন হ্যারিস।
যুক্তরাষ্ট্রে কিছু অঙ্গরাজ্য আছে, যেখানে ডেমোক্র্যাটরা সাধারণত জেতে, কিছু রাজ্যে রিপাবলিকানরা। কিছু রাজ্য আছে, যা কখনও ডেমোক্র্যাট, কখনও রিপাবলিকান প্রার্থীরা জেতেন। সেগুলোকেই সুইং স্টেট বলা হয়। এই রাজ্যগুলোই ভোটের ফল নির্ধারণ করে। চেনির সঙ্গে তিনটি টাউন হল ইভেন্ট করেছেন হ্যারিস। পেনসিলভানিয়ায় রক্ষণশীল রেডিও হোস্ট ম্যালবার্ন মডারেটর ছিলেন। হ্যারিস সেখানে ট্রাম্পের মানসিক স্থিতি এবং প্রেসিডেন্টের পদে বসার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
হ্যারিস বলেন, অনেক ভাবেই ট্রাম্প সিরিয়াস মানুষ নন। কিন্তু তিনি যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে তা গুরুতর হতে বাধ্য। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প যদি নভেম্বরের নির্বাচনে জেতেন, তাহলে রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের পতন হতে বাধ্য। পররাষ্ট্রনীতির প্রসঙ্গে চেনিও বহুবার ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন।
চেনি মিশিগানের ইভেন্টে বলেছেন, তিনি অনেক রিপাবলিকানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারাও ট্রাম্পকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, কী কথা হয়েছে, তা তিনি প্রকাশ্যে জানাতে পারবেন না। তবে তারা যে ঠিক কাজটা করবেন, তা নিয়ে চেনির মনে কোনো সংশয় নেই।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা
ট্রাম্প গত মাসে বিতর্কের সময় সেন্ট্রাল পার্কে ১৯৮৯ সালের একটি হত্যা নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন। এই অভিযুক্তদের বলা হয় সেন্ট্রাল পার্ক ফাইভ। প্রথমে তাদের পাঁচ থেকে ১৩ বছরের জেল হয়। তবে আরেকজনের সাক্ষ্য ও ডিএনএ তথ্যের ভিত্তিতে তারা ছাড়া পায়। ট্রাম্প প্রচারে বলেছিলেন, তারা একজনকে খুন করেছিল এবং দোষ স্বীকারও করেছিল। তদন্তের প্রথম দিকে পাঁচ কিশোর অপরাধ স্বীকার করে। তারপরই তারা জানায়, তারা চাপের মুখে এই কথা বলেছিল এবং বিচারের সময় তারা বলে, তারা নির্দোষ। এই বিষয়টি নিয়েই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হয়েছে।
হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত চীন ও ভারতের মধ্যকার বিতর্কিত সীমান্তে টহলের বিষয়ে একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করে, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে ২০২০ সালে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘাতকে কেন্দ্র করে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা দূর করা সম্ভব হবে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়টি জানিয়েছে। এই চুক্তির বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি সোমবার নয়া দিল্লিতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতীয় ও চীনা কূটনীতিক এবং সামরিক কর্মকর্তারা একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন এবং এই আলোচনার ফলস্বরূপ ভারত-চীন সীমান্তে এলএসি বরাবর টহল দেওয়ার বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছে। যা ২০২০ সালে উত্থাপিত সমস্যাগুলোর সমাধানের দিকে নিয়ে গেছে।’
এলএসি বা ‘লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ বাংলায় যাকে বলা হয়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা-মূলত ভারত ও চীনের মধ্যকার সীমান্তকে নির্দেশ করে। ভারতের উত্তর-পশ্চিমের লাদাখ থেকে পূর্বদিকের অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত চীন-ভারতের মধ্যে ৩ হাজার ৪৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত আছে। এই সীমান্ত ইস্যুতে ১৯৬২ সালে দুই দেশের মধ্যে একদফা যুদ্ধ হয়েছে। একাধিকবার চীনা সেনারা এই সীমানা অতিক্রম করে ভারতে অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছে বলে বিভিন্ন সময়ে নয়া দিল্লি অভিযোগ করেছে।
চুক্তির কথা বললেও এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি মিশ্রি। বিশেষ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে লাদাখের উত্তরে মোতায়েনকৃত হাজার হাজার অতিরিক্ত সেনা প্রত্যাহার করা হবে কি না সে বিষয়টি জানাননি তিনি।
এই ঘোষণা এমন এক সময়ে দেওয়া হলো যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ায় শুরু হওয়া ব্রিকস জোটের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারত ছাড়ছেন। এই শীর্ষ সম্মেলনে চীনও অংশগ্রহণ করছে। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, ব্রিকস সম্মেলনের সাইডলাইনে মোদি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।
এদিকে, এই চুক্তির বিষয়টি গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেছেন, ‘সম্প্রতি, চীন এবং ভারত দুই দেশের সীমান্তের বিষয়গুলো নিয়ে কূটনৈতিক এবং সামরিক চ্যানেলে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করেছে। এখন দুই পক্ষ বিষয়গুলোর সমাধানে পৌঁছেছে, যা নিয়ে চীন অত্যন্ত সন্তুষ্ট।’
এর আগে, ২০২০ সালের জুলাইয়ে লাদাখের গালওয়ানে চীন-ভারতের সামরিক বাহিনীর মধ্যকার সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ ভারতীয় ও ৪ জন চীনা সেনা নিহত হয়। সেই ঘটনার পর ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। সেই ঘটনার পর দুই পক্ষই পার্বত্য অঞ্চলটি হাজার হাজার সেনা, আর্টিলারি, ট্যাংক এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েন করে।
চীন-ভারতের চুক্তির বিষয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণম জয়শংকর বলেন, এই চুক্তি অত্যন্ত ধৈর্যশীল ও অবিচলিত কূটনীতির ফল। এর ফলে ভারত ২০২০ সালের সংঘর্ষের আগে যেভাবে সামরিক পেট্রলিং শুরু হয়েছিল ঠিক সেভাবেই চালিয়ে যেতে পারবে। তিনি বলেন, ‘আশা করছি, আমরা শান্তিতে ফিরতে পারব।’
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ভারত-চীন বিশেষজ্ঞ এবং কলিঙ্গ ইনস্টিটিউটের ইন্দো-প্যাসিফিক স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক চিন্তামণি মহাপাত্র বলেছেন, ‘এটা একটা ইতিবাচক সূচনা। কারণ গত কয়েক মাসে কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে যে আলোচনা হয়েছে তার ফলেই (দুই দেশের মধ্যে) উত্তেজনা হ্রাস সংক্রান্ত সমঝোতা হয়েছে। তবে একটা চুক্তি দুই দেশের মধ্যে সব ধরনের উত্তেজনার অবসান ঘটাতে সক্ষম হবে এমনটা নয়। তবে একে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।’
সমঝোতার বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছেন অধ্যাপক মহাপাত্র। তার কথায়, ‘এই সমঝোতা ডিসএনগেজমেন্ট সংক্রান্ত। এটা কিছু এলাকায় ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং কিছু অঞ্চলে এখনো বাকি আছে। গত মাসে ভারতীয় সেনাপ্রধানও বলেছিলেন, সহজ সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে গিয়েছে এবং আগামী সময়ে কঠিন বিষয়গুলোর সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
কিছু বিশেষজ্ঞ আবার এলএসি সম্পর্কিত সাম্প্রতিক ঘোষণাকে ‘সতর্কতার’ সঙ্গে পর্যবেক্ষণের কথা বলেছেন। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো তনভি মদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটারে)-এ লিখেছেন, ‘২০১৭ সালের ডোকলাম সংকটও ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের আগেই সমাধান হয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির চীন সফরের পথ প্রশস্ত হয়েছিল।’