৩০ বছরের সফরকালে ‘সি ওয়াইজ জায়ান্ট’-এর ছিল একাধিক নাম। ‘পৃথিবীর বৃহত্তম জাহাজ’, ‘সবচেয়ে বড় মানবসৃষ্ট জাহাজ’, ‘তেল বহনের সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ’-এমন অনেক নামেই ডাকা হতো তাকে। এখানেই শেষ নয়, নামের তালিকায় ছিল ‘হ্যাপি জায়ান্ট’, ‘জাহরে ভাইকিং’, ‘নোক নোভিস’ এবং ‘মন্ট’ও। বিশ্বের এই বৃহত্তম জাহাজকে ডাকা হতো ‘সুপার ট্যাঙ্কার’ বলেও।
একদিকে যেমন এই জাহাজের লাখ লাখ লিটার তেল বহনের ক্ষমতা ছিল, তেমনই আকারে প্রকাণ্ড হওয়ার জন্য অনেক বন্দরে প্রবেশ করতে পারত না। এই বিশাল আয়তনের কারণে সুয়েজ খাল এবং পানামা খালের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র পথ এই জাহাজের পক্ষে অতিক্রম করা সম্ভব ছিল না।
ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বাহিনী আক্রমণ করে আগুন ধরিয়ে দেয় ওই জাহাজে। এর ফলে ডুবে যায় জাহাজটা। কিন্তু মহাসমুদ্রের অন্যান্য গল্পের মতো এই ধ্বংসলীলা সেই জাহাজের শেষ গল্প ছিল না।
শুরুর দিকে, এই সুপার ট্যাঙ্কারটা ১৯৭৯ সালে প্রাথমিকভাবে তৈরি হয়েছিল জাপানের ওপামার ‘সুমিতোমো হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ শিপইয়ার্ডে’। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, এই জাহাজটি নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন এক গ্রিক ব্যবসায়ী। কিন্তু তৈরি হওয়ার পর সেই জাহাজ তিনি কেনেননি। শেষপর্যন্ত ১৯৮১ সালে টিং চাও ইং নামে হংকংয়ের একজন ব্যবসায়ী এটা কেনেন। তিনি ছিলেন সামুদ্রিক শিপিং কোম্পানি ওরিয়েন্ট ওভারসিজ কন্টেইনার লাইনের মালিক।
হংকংয়ের মেরিটাইম মিউজিয়ামের তথ্যানুসারে, কেনার পর নতুন মালিক মনে করেছিলেন জাহাজের আয়তন হওয়া উচিত আরও বড়। তাই নতুন অংশ যোগ করে জাহাজের আয়তন আরও বাড়ানো হয়। এরপর এর তেল বহনের ক্ষমতা ১ লাখ ৪০ হাজার টন বেড়ে যায়। এই সুপার ট্যাঙ্কারের দৈর্ঘ্য ছিল রেকর্ড ৪৫৮.৪৫ মিটার। মালয়েশিয়ার ‘পেট্রোনাস টাওয়ার’ এবং নিউইয়র্কের অ্যাম্পায়ার এস্টেট বিল্ডিংয়ের উচ্চতার চেয়েও লম্বা ছিল ‘সি ওয়াইজ জায়ান্ট’।
প্রায় চার কোটি ব্যারেল তেল বহনের ক্ষমতা রাখত এই জাহাজ। একটি সাধারণ যানের ১০ বার সূর্য পর্যন্ত গিয়ে ফিরে আসার জন্য যথেষ্ট ওই ইন্ধন। বর্তমানের বৃহত্তম ক্রুজ ‘আইকন অফ দ্য সি’-এর থেকে প্রায় ১০০ মিটার বেশি দীর্ঘ ছিল ওই জাহাজ। শুধু তাই নয়, বিখ্যাত টাইটানিকের চেয়েও ২০০ মিটার বেশি দীর্ঘ সেটা।
পুরো ভরে গেলে জাহাজের ওজন দাঁড়াত ৬ লাখ ৫৭ হাজার টন। আর এত ভারী জাহাজ চালাতে দিনে প্রয়োজন হতো ২২০ টন জ্বালানির।
বিবিসি ১৯৯৮ সালে যখন এই জাহাজটি পরিদর্শন করে তখন জাহাজের ক্যাপ্টেন সুরেন্দ্র কুমার মোহন বলেছিলেন আনুমানিক ১৬ টন বা প্রায় ৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে চলতে পারে জাহাজটা।
বিপুলায়তন এই জাহাজের চলাচলের বিষয়টি সহজ ছিল না। জাহাজের ক্যাপ্টেন জানিয়েছিলেন, যেকোনো জায়গায় থামাতে হলে অন্তত আট কিলোমিটার আগে ব্রেক কষতে হতো। উল্টোদিকে বাঁকানোও ছিল কঠিন কাজ। এর জন্য তিন কিলোমিটার জায়গার প্রয়োজন ছিল।
বিবিসি যে জাহাজ পরিদর্শন করেছে সেটি কিন্তু মেরামত এবং পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। যখন মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিমের মধ্যে তেলের ব্যবসা সর্বোচ্চ ছিল, সে সময়ে এই সুপার ট্যাঙ্কারটি গোটা বিশ্বে শুধু তেলই বহন করেনি বিশালাকায় ভাসমান গুদাম হিসাবেও কাজ করেছে।
এই জাহাজের শেষ সমুদ্রযাত্রা ছিল ১৯৮৮ সালে। ইরানের লার্ক দ্বীপে নোঙর ফেলেছিল ওই জাহাজ। সে সময় উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরাক ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল।
সাদ্দাম হোসেনের বাহিনী এই জাহাজ হঠাৎই আক্রমণ করে কোনোরকম সতর্কবার্তা ছাড়াই। ক্রমাগত বোমা হামলায় আগুন ধরে যায় ওই জাহাজে। ডুবে যায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজ। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নরওয়ের একটি সংস্থা ‘নরম্যান ইন্টারন্যাশনাল’ জাহাজটি বাঁচানোর বিষয়ে আগ্রহ দেখায়। এরপর ১৯৯১ সালে, ৩৭০০ টন ইস্পাত ব্যবহার করে মেরামত করা হয়েছিল। এমন অবস্থায় আনা হয়েছিল যাতে সেটি আবার ভাসতে পারে। কিন্তু এখন আর তার নাম ‘সি ওয়াইজ জায়ান্ট’ নয়। এখন এই জাহাজের নাম ‘হ্যাপি জায়ান্ট’।
মেরামতের পরে এই সুপার ট্যাঙ্কারটি আবার পরিষেবাযোগ্য হয়ে উঠলেও তা ব্যবসায়ী পরিবহন সংস্থা কেএসের সম্পত্তিতে পরিণত হয় এবং তার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘জাহরে ভাইকিং’ করা হয়েছে। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে শিপিং শিল্পে কম জ্বালানি খরচকারী ট্যাঙ্কারের ব্যবহার বাড়তে থাকে এবং তাই এই জাহাজটিকে ব্যবহারের প্রতি আগ্রহ কমে আসে।
দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলবর্তী এলাকায় ৬০ হাজারের বেশি পেঙ্গুইন খাদ্যের অভাবে মারা গেছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। আফ্রিকান পেঙ্গুইনদের অন্যতম প্রধান খাদ্য সার্ডিন মাছ কমে যাওয়ায় এ বিপর্যয় ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়, ২০০৪ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে আফ্রিকান পেঙ্গুইনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজননস্থল ডাসেন দ্বীপ ও রবিন আইল্যান্ডে ৯৫ শতাংশেরও বেশি পেঙ্গুইন বিলুপ্ত হয়ে যায়। মোল্টিং বা পালক পরিবর্তনের সময় প্রয়োজনীয় খাদ্যের অভাবে তারা মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জলবায়ু সংকট ও অতিমাত্রায় মাছ শিকারকে এই হ্রাসের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ওস্ট্রিচ: জার্নাল অব আফ্রিকান ওরনিথোলজি-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়, এ বিপর্যয় বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটারের সেন্টার ফর ইকোলজি অ্যান্ড কনজারভেশনের শিক্ষক ড. রিচার্ড শার্লি জানান, ‘অন্যান্য স্থানেও একইভাবে পেঙ্গুইন কমে যাচ্ছে।’
গত ৩০ বছরে আফ্রিকান পেঙ্গুইন প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে। আফ্রিকান পেঙ্গুইনরা প্রতি বছর পুরনো পালক ফেলে নতুন পালক গজায়, যাতে তাদের শরীরের তাপরোধ ও জলরোধী ক্ষমতা বজায় থাকে। তবে প্রায় ২১ দিনের এই মোল্টিং পর্বে তাদের স্থলে অবস্থান করতে হয় এবং এ প্রক্রিয়ার জন্য আগে থেকেই শরীরে পর্যাপ্ত চর্বির মজুত থাকা জরুরি।
ড. শার্লি বলেন, ‘মোল্টিংয়ের আগে বা পরে যদি পর্যাপ্ত খাদ্য না পায়, তাহলে তারা উপবাসের সময়টায় টিকতে পারে না। আমরা হয়ত অনেক পেঙ্গুইনের মৃতদেহ ভেসে থাকতে দেখি না, কারণ তারা সমুদ্রেই মারা যায়।’
গবেষণায় আরও বলা হয়, ২০০৪ সালের পর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে সার্ডিন মাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে কমে যাচ্ছে। এই সার্ডিনই আফ্রিকান পেঙ্গুইনের প্রধান খাদ্য। উপকূলীয় পানির তাপমাত্রা ও লবণাক্ততার পরিবর্তনে মাছের ডিম ছাড়া কমে গেছে, কিন্তু মাছ শিকার বেড়েছে।
২০২৪ সালে আফ্রিকান পেঙ্গুইনকে ‘অতিসংকটাপন্ন’ প্রজাতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়, এবং বর্তমানে প্রজননক্ষম জোড়ার সংখ্যা ১০ হাজারেরও কম।
মাত্র তিন বছর বাদে প্রতি বছরে দক্ষিণ আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে সার্ডিন প্রজাতির প্রাচুর্য সর্বোচ্চ মাত্রার মাত্র ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
সমুদ্রের তাপমাত্রা ও লবণাক্ততার পরিবর্তনে সার্ডিনের ডিম ছাড়ার সাফল্য কমেছে,অতিরিক্ত মাছ ধরা অব্যাহত রয়েছে। ফলে খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ায় এমন পরিস্থিতি হয়েছে। সার্ডিন পেঙ্গুইনের প্রধান খাদ্য হওয়ায় তাদের অনাহার বেড়েছে।
পেঙ্গুইন বছরে ২১ দিনের মতো সময় ভূমিতে অবস্থান করে পুরনো পালক ঝরিয়ে নতুন পালক নিয়ে পানিতে নামে। এ সময়ে তারা খেতে পারে না। তাই আগে থেকে শরীরে যথেষ্ট চর্বি জমাতে না পারলে উপবাস অবস্থায় বেঁচে থাকা সম্ভব হয় না।
অবৈধভাবে ইউরোপ যাওয়ার উদ্দেশে লিবিয়ায় যাওয়া ৩১০ জন দেশে ফিরেছেন। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে করে তারা ফেরেন।
লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে লিবিয়া সরকার ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সহযোগিতায় তাদের ফিরিয়ে আনা হয়।
ফেরত আসা বাংলাদেশিদের বেশির ভাগই সমুদ্রপথে অবৈধভাবে ইউরোপ যাওয়ার উদ্দেশে মানবপাচারকারীদের প্ররোচনায় ও সহযোগিতায় লিবিয়ায় অনুপ্রবেশ করে বলে জানা যায়। তাদের অনেকে লিবিয়ায় বিভিন্ন সময়ে অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার কর্মকর্তারা প্রত্যবসিত বাংলাদেশি নাগরিকদের বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান।
জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাদের এই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা সম্ভাব্য সবার সঙ্গে বিনিময় করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের অনুরোধ জানানো হয়। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার পক্ষ থেকে প্রত্যাবাসনকৃত প্রত্যেককে পথখরচা, কিছু খাদ্যসামগ্রী এবং প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এর আগে, সোমবার ১৭৩ বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
বিদেশি শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের ওয়ার্ক পারমিট বা এমপ্লয়মেন্ট অথরাইজেশন ডকুমেন্টস (ইএডি)-এর মেয়াদ হ্রাস করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আগে ইএডির মেয়াদ ছিল ৫ বছর, এখন তা নামিয়ে আনা হয়েছে দেড় বছর বা ১৮ মাসে।
ইএডি একপ্রকার সরকারি নথি, যা সাধারণভাবে ‘ওয়ার্ক পারমিট’ নামে পরিচিত। আগে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিদেশি নাগরিকরা ইএডি লাভ করলে তা ৫ বছর পরপর নবায়ন করতে হতো। এখন প্রতি ১৮ মাস অন্তর নবায়ন করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (হোমল্যান্ড সিকিউরিটি) অধীন সংস্থা কাস্টমস অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস (ইউএসসিআইএস) বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত শরণার্থী, আশ্রয়ের জন্য আবেদনকারী, নিজ দেশে ফেরত পাঠানো থেকে বেঁচে যাওয়া অভিবাসীসহ ১৯ ক্যাটাগরির বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
২০২৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনের সময়েই ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন যে ক্ষমতায় গেলে অবৈধ অভিবাসী ও অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর পদক্ষেপ নেবেন তিনি।
সেই অনুযায়ী শপথ গ্রহণের পর এ সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। তার সেই স্বাক্ষরের পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অভিবাসীদের প্রবেশ কমাতেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সেসবের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যটি হলো এইচ-১বি ভিসার ফি বৃদ্ধি করা। এই ভিসার মাধ্যমে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কর্মী হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের যুক্তরাষ্ট্রে আনতে পারে। গত সেপ্টেম্বরে এই ভিসার বাৎসরিক ফি ১ হাজার ৫০০ ডলার থেকে ১ লাখ ডলারে উন্নীত করে ট্রাম্প প্রশাসন।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে এক আফগান শরণার্থীর গুলিতে নিহত হন যুক্তরাষ্ট্রের আধাসামরিক বাহিনী ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্য। এই ঘটনার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ১৯টি দেশের নাগরিকদের অভিবাসন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এই ১৯টি দেশ হলো আফগানিস্তান, মিয়ানমার, বুরুন্ডি, শাদ, কিউবা, রিপাবলিক অব কঙ্গো, ইকুয়াটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লাওস, লিবিয়া, সিয়েরা লিওন, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, টোগো, তুর্কমেনিস্তান, ভেনিজুয়েলা এবং ইয়েমেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম বলেছেন, বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি)।
আন্তর্জাতিক বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) স্পট মার্কেটে সোনার দাম শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ২২৫ দশমিক ১১ ডলারে দাঁড়ায়। তবে সাপ্তাহিক হিসাবে এটি এখনো শূন্য দশমিক ১ শতাংশ নিম্নমুখী। (১ আউন্স= প্রায় ২ দশমিক ৪৩ ভরি)
এদিকে, ফেব্রুয়ারির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফিউচার মার্কেটে সোনার দাম শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ২৫৫ দশমিক ৯০ ডলারে পৌঁছেছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে, মার্কিন ডলারের দুর্বলতা ও যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমানোর জোরালো সম্ভাবনায় সোনার দামে এই বৃদ্ধি দেখা দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সভার আগে বিনিয়োগকারীরা এখন অপেক্ষা করছেন গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রাস্ফীতি-সংক্রান্ত তথ্যের জন্য। ডলার সূচক বড় মুদ্রাগুলোর বিপরীতে পাঁচ সপ্তাহের নিম্নমুখী অবস্থানে থাকায় অন্যান্য মুদ্রাধারীদের জন্য সোনা কেনা তুলনামূলক সাশ্রয়ী হয়েছে।
এফএক্সটিএমের সিনিয়র গবেষণা বিশ্লেষক লুকমান ওতুনুগা বলেন, ফেড আগামী সপ্তাহে সুদের হার কমাতে পারে- এমন বাজার প্রত্যাশা ও ডলারের দুর্বলতা সোনার বাজার উত্থানে সমর্থন দিচ্ছে।
এদিকে দেশের বাজারে শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সোনা ভরিতে ২ লাখ ১১ হাজার ৯৫ টাকা বিক্রি হবে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা কমিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পিওর গোল্ড) দাম কমেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী, দেশের বাজারে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের সোনার দাম পড়বে ২ লাখ ১১ হাজার ৯৫ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ লাখ ১ হাজার ৪৯৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৭২ হাজার ৭০৯ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি) বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) মার্কিন সম্প্রচার সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে নোয়েম বলেন, “আমি কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করব না, তবে (ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার) তালিকায় থাকা দেশগুলোর সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। প্রেসিডেন্ট নিজে নিয়মিত এই দেশগুলোর অবস্থা পর্যালোচনা করছেন।”
নোয়েমকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যেসব দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর সংখ্যা ট্রাম্প প্রশাসন ৩২-এ উন্নীত করবে কি না। তার জবাবে এই উত্তর দিয়েছেন নোয়েম।
সাক্ষাৎকারে নোয়েম অবশ্য কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, “যদি কোনো দেশ একটি স্থিতিশীল সরকার গঠন করতে না পারে, যদি কোনো দেশ আমাদের কিংবা অন্য কারো সহায়তা ব্যতীত টিকে থাকতে না পারে— সেক্ষেত্রে সেসব দেশের নাগরিকদের কী কারণে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেবো? আমাদের নাগরিকরাই বা কেন সেসব দেশে যাবে?”
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে এক আফগান শরণার্থীর গুলিতে নিহত হন যুক্তরাষ্ট্রের আধাসামরিক বাহিনী ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্য। এই ঘটনার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ১৯টি দেশের নাগরিকদের অভিবাসন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এই ১৯টি দেশ হলো আফগানিস্তান, মিয়ানমার, বুরুন্ডি, শাদ, কিউবা, রিপাবলিক অব কঙ্গো, ইকুয়াটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লাওস, লিবিয়া, সিয়েরা লিওন, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, টোগো, তুর্কমেনিস্তান, ভেনেজুয়েলা এবং ইয়েমেন।
গাজা পুনর্গঠন ও মানবিক সংকট লাঘবের জন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে ১০ কোটি ডলার সহায়তা দেবে চীন।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছে ফিলিস্তিন অথরিটি (পিএ)।
মানবিক সহায়তার জন্য চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে চিঠি পাঠিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা বলছে, চিঠিতে ফিলিস্তিনের ন্যায্য অধিকার সমর্থন এবং পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরাইলি দখলদারিত্ব কমাতে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরেন তিনি। বেইজিংয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অনুদানের ঘোষণা দেন শি।
সিনহুয়া জানায়, ফিলিস্তিনি ইস্যুর একটি সর্বসম্মত, ন্যায়সংগত ও টেকসই সমাধান নিশ্চিত ফ্রান্সের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি। বৈশ্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের মধ্যেও দুই দেশের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি, পারস্পরিক সহায়তা ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তি অটুট রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
গত সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহানের সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে সহ-সভাপতিত্ব করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। দ্বিরাষ্ট্র সমাধান এবং একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোরদার করার লক্ষ্য সে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা থেকে পাকিস্তানের করাচিতে সপ্তাহে তিন দিন ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ইকবাল হুসেইন খান।
পাক সংবাদমাধ্যম জিও টিভি জানিয়েছে, গত বুধবার দেশটির ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বক্তব্যের ফাঁকে দ্য নিউজকে এ তথ্য জানান বাংলাদেশি দূত।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চলার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট শুরু করছি। আমাদের জাতীয় এয়ারলাইন্স করাচিতে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করবে।’
ভারতের আকাশসীমা ব্যবহার করে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ফ্লাইট পরিচালিত হবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, ‘যেমনটা ভারতীয় প্লেন বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারে। বিমানের ফ্লাইটও তেমনিভাবে ভারতের ওপর দিয়ে উড়বে।’
জিও টিভি জানিয়েছে, একটি সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে, পাকিস্তানের ওপর যেহেতু ভারত তাদের আকাশসীমা ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে, তাই এ মুহূর্তে পাকিস্তানের কোনো বিমান সংস্থার ঢাকায় ফ্লাইট পরিচালনার খুব বেশি একটা সম্ভাবনা নেই।
পাকিস্তানের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বক্তব্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য, সংযোগ এবং সহযোগিতার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সীমিত প্রবেশাধিকার, সীমান্ত-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ এবং আঞ্চলিক রাজনীতি এখনো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারে, কিন্তু প্রবেশাধিকারর অভাব এ ক্ষেত্রে এখনো সবচেয়ে বড় বাধা হয়েছে।’
আগে রেলপথের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সহজে বাণিজ্য হতো উল্লেখ করে বাংলাদেশি দূত বলেন, ‘এখন পাকিস্তানের খেজুর দুবাই হয়ে আঞ্চলিক বাজারে পৌঁছায়।’
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) জানিয়েছে, আরব অঞ্চল ২০২৪ সালে রেকর্ডতম উষ্ণতম বছরের মুখোমুখি হয়েছিল। অঞ্চলটিতে বৈশ্বিক গড়ের দ্বিগুণ হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। চরম আবহাওয়ার কারণে ব্যাঘাত ঘটছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ডব্লিউএমওর মহাসচিব সেলেস্তে সাউলো বলেন, ‘২০২৪ সাল আরব অঞ্চলের জন্য রেকর্ডের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ বছর ছিল - দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতার ধারাবাহিকতা। তাপমাত্রা বিশ্বব্যাপী গড়ের দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মানব স্বাস্থ্য, বাস্তুতন্ত্র এবং অর্থনীতি ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না- এটি সামলানো খুব বেশি কষ্ট।’
আরব অঞ্চলের জলবায়ু পরিস্থিতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে উষ্ণায়নের হার ত্বরান্বিত হয়েছে। এর ফলে দীর্ঘ ও তীব্র তাপপ্রবাহ, তীব্র খরা ও ধ্বংসাত্মক বৃষ্টিপাতের ঘটনা ঘটেছে।
২০২৪ সালে আরব অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা ১৯৯১-২০২০ সালের গড় তাপমাত্রার চেয়ে ১.০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। একই বছর বেশ কয়েকটি দেশে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ছয়টি ব্যর্থ বর্ষা মৌসুমের পর পশ্চিম উত্তর আফ্রিকাজুড়ে খরা আরও গভীর হয়েছে। সৌদি আরব, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ শুষ্ক অঞ্চলগুলোতে চরম বৃষ্টিপাত এবং আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে আরব অঞ্চলে প্রায় ৩৮ লাখ মানুষ চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হন। মূলত তাপপ্রবাহ এবং বন্যার কারণে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যায়।
৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় দেউলিয়া হওয়ার সতর্কবার্তা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিরক্ষা তহবিলে যোগদানের জন্য আলোচনা ব্যর্থ হওয়া এবং একটি নতুন বামপন্থি দলের জন্ম- মূলত এই তিন কারণেই ঝুঁকিপূর্ণ দিন পার করছে ব্রিটেন।
গত সপ্তাহে ব্রিটেনের ঘটনাবলি এমন একটি চিত্র তুলে ধরে যা দেশটিকে অর্থনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে গভীর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে। অভূতপূর্ব আর্থিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ইউরোপের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্কে বাধার সম্মুখীন বিদেশি সম্পর্ক এবং বিপ্লবী স্লোগানসহ দেশীয় রাজনৈতিক দৃশ্য একটি নতুন শক্তির উত্থানের সাক্ষ্য বহন করে।
আপাতদৃষ্টিতে এই তিনটি পৃথক ঘটনা প্রমাণ করে জটিল পথ বেছে নিয়েছে লন্ডন।
সম্প্রতি ইউকে অফিস ফর স্টুডেন্টসের (ওএফএস) সরকারি সতর্কতা দেশটির উচ্চশিক্ষা খাতের জন্য শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে, আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। যার মধ্যে ২৪টি সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাবদ্ধ।
ওএফএসের প্রধান নির্বাহী যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্স শিক্ষা কমিটিকে পরিস্থিতি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপের ৭টি-সহ প্রায় ২০টি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় গুরুতর আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন।
আর এ আর্থিক সংকটের মূল কারণ হিসেবে বছরের পর বছর ধরে ‘ফি জমে যাওয়া’ এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা তীব্র হারে কমে যাওয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে তাদের খরচ মেটাতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উচ্চ ফির ওপর নির্ভর করেছে এবং এখন বাজেট ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে।
এ নিয়ে অফিস ফর স্টুডেন্টস সতর্ক করে বলেছে, শতকরা ৪৫ ভাগ প্রতিষ্ঠান এ বছর বাজেট ঘাটতির সম্মুখীন হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই করে, কম পারফর্মিং কোর্স (এমনকি নটিংহ্যামের মতো শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও) কেটে ফেলে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে একীভূত করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
জবাবে যুক্তরাজ্যের শিক্ষা বিভাগ টিউশন ফির ওপর সীমা নির্ধারণসহ সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
নিরাপত্তা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। ব্রিটেনকে ইইউর এসএএফই নামে পরিচিত ১৫০ বিলিয়ন ইউরোর প্রতিরক্ষা তহবিলে যোগদানের অনুমতি দেওয়ার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। হুমকির বিরুদ্ধে ইউরোপকে সশস্ত্র করার পরিকল্পনার অংশ এই তহবিল।
আলোচনার ব্যর্থতা মূলত প্রবেশ ফি নিয়ে বিরোধের কারণে। ইউরোপীয় কর্মকর্তারা ৬ বিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যেখানে লন্ডন অনেক কম অর্থ দিতে ইচ্ছুক ছিল।
ইইউ সেক্রেটারি অব স্টেট নিক থমাস-সাইমন্ডস এই ফলাফলকে ‘হতাশাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা শিল্প এখনো ‘তৃতীয় দেশ’ শর্তে প্রকল্পগুলোতে অবদান রাখতে পারে। এই পরাজয় ব্রাসেলসের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘নতুন যুগের’ সূচনা করার লেবার সরকারের দাবির ওপর একটি আঘাত এবং ব্রেক্সিট কৌশলগত সহযোগিতার ওপর ভারি ছায়া ফেলার প্রমাণ।
এমন দৃশ্যপটে ব্রিটেনে প্রাক্তন লেবার নেতা জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে ‘ইওর পার্টি’ নামে একটি নতুন দলের জন্ম হয়েছে। দলটি ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির বামপন্থি বিকল্প হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করে এবং শুরু থেকেই এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিভাজনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
করবিন ঐতিহ্যবাহী বামপন্থিদের ওপর ভিত্তি করে আরও একটি প্রচলিত দল চান। তবে সহপ্রতিষ্ঠাতা জাহরা সুলতানা একটি উগ্র ইহুদিবিরোধী লাইন, ন্যাটো থেকে প্রত্যাহার এবং এমনকি রাজতন্ত্রের বিলুপ্তির ওপর জোর দেন।
দলটির ৫৫ হাজার সদস্য রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। যার অর্থ দাঁড়ায় ১৯৪০ সাল থেকে এই দলটি ব্রিটেনের বৃহৎ সমাজতান্ত্রিক দলে পরিণত হয়েছে। ডানপন্থি মিডিয়া এটিকে ‘অপ্রাসঙ্গিকতার পথে একটি আন্দোলন’ হিসেবে উপহাস করেছে। দলের জন্ম বামপন্থিদের মধ্যে বিভক্তি এবং স্টারমারের নীতির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে, রাজনৈতিক সমীকরণের ওপর এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে।
এই তিনটি ঘটনা আজ ব্রিটেনকে এক জটিল মোড়ে ফেলে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংকট দেশে শিক্ষা এবং গবেষণার মানের ভবিষ্যত নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করে। ইউরোপীয় আলোচনার ব্যর্থতা ব্রেক্সিট-পরবর্তী সহযোগিতার ব্যবহারিক সীমা উন্মোচিত করে এবং একটি নতুন বামপন্থি দলের উত্থান সমাজের রাজনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত দেয়।
এই তিন চ্যালেঞ্জের প্রতি স্টারমার সরকারের প্রতিক্রিয়া দেশের ভবিষ্যত রূপরেখা তৈরি করবে।
নির্বাচিত হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানা মেনে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন নিউইয়র্ক সিটির নতুন মেয়র জোহরান মামদানি। তবে এই সতর্কতা সত্ত্বেও নিউইয়র্কে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নেতানিয়াহু।
বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যমে একটি ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি নিউইয়র্কে আসব।’
মামদানির সঙ্গে কথা বলবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এ দখলদার বলেন, ‘যদি মামদানি তার চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন এবং বলেন যে ইসরায়েলেরও অস্তিত্বের অধিকার আছে, তাহলে এটি আলোচনা করার জন্য একটি ভালো শুরু হবে।’
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে জোহরান মামদানি ঘোষণা দেন, তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই নগরে এলে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগকে (এনওয়াইপিডি) তাকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেবেন।
গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মামদানি বলেন, ‘নেতানিয়াহু যুদ্ধাপরাধী এবং তিনি গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রতি সম্মান জানিয়ে তাকে বিমানবন্দরেই আটক করার নির্দেশ দেব।’
আর গত মাসে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ৩৪ বছর বয়সি এই মুসলিম যুবক রীতি মতো ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে ইতিহাস গড়ে প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশিয়ার বংশোদ্ভূত কোন ব্যক্তি হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের নভেম্বরে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযানের নির্দেশ এবং উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূলের নামে ৬০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নারী-পুরুষ-শিশুর হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে নেতানিয়াহুকে দোষী সাব্যস্ত করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি), যা এখনও কার্যকর আছে।
তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য নয় এবং নিউইয়র্ক পুলিশের পক্ষে এমন গ্রেফতার কার্যত অসম্ভব। এতে ফেডারেল আইনেরও লঙ্ঘন হতে পারে। এছাড়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সরাসরি নেতানিয়াহুর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে চাইলেও মামদানি নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন কি না এ নিয়ে শঙ্কা আছে।
হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গত বছর জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় হত্যাকাণ্ডের কারণে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তবে ইসরায়েল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ঐতিহাসিক সফরে ভারত আসছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দু’দিনের সফরে তিনি নয়া দিল্লিতে পা রাখবেন। ২০২১ সালে শেষ ভারতে এসেছিলেন পুতিন। আর এই বছরই রয়েছে ভারত-রাশিয়া কৌশলগত অংশীদারত্বের ২৫তম বার্ষিকী। সেই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দেশের ২৩তম দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলনও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন, সফরের শুরুতেই অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারি বাসভবনে হবে দুই নেতার ব্যক্তিগত নৈশভোজ। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং পুতিন আঞ্চলিক ও বিশ্বের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করার সুযোগ পাবেন। গত বছর প্রধানমন্ত্রী মোদির মস্কো সফরের সময় পুতিনও তাকে ব্যক্তিগত ডিনারে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তারই প্রতিদান হিসেবে এই কর্মসূচি রাখা হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকালে পুতিনকে রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হবে ত্রিপক্ষীয় গার্ড অব অনার প্রদানের মাধ্যমে। এরপর তিনি রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধির স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানাবেন। আর তারপরই হায়দরাবাদ হাউসে শুরু হবে ২৩তম ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলন।
প্রধানমন্ত্রী মোদি ও রুশ প্রেসিডেন্টের এই বৈঠকে কোনো বড় ধরনের ঘোষণা বা চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, ও জ্বালানিসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো দুই রাষ্ট্রনেতার আলোচনায় উঠে আসবে বলেই খবর।
সূত্র জানিয়েছে, এই বৈঠকে ভারতীয় কর্মীদের রাশিয়ায় কাজের সুযোগ বাড়াতে বিশেষ চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। এছাড়া প্রতিরক্ষা সহযোগিতার অংশ হিসেবে লজিস্টিক সাপোর্ট চুক্তিও হতে পারে। বাণিজ্য ক্ষেত্রে নতুন সহযোগিতা বিশেষ করে ওষুধ, কৃষি, খাদ্যপণ্য ও ভোক্তা সামগ্রী রপ্তানি বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হবে।
তবে দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে চলেছে প্রতিরক্ষা। আরও উন্নত পর্যায়ের ব্রহ্মোস নিয়ে কথা বলতে পারেন তারা। সেই সঙ্গে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০-এর বাকি দুটি ইউনিট সরবরাহের বিষয়ে স্পষ্টতা চাইবে ভারত।
আজ শুক্রবার মধ্যাহ্নভোজের পর পুতিন অংশ নেবেন ইন্ডিয়া–রাশিয়া বিজনেস ফোরামের অনুষ্ঠানে। এখানে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য পুনরুজ্জীবিত করা নিয়ে আলোচনা হবে। এই পর্যায়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সাম্প্রতিক কয়েক বছরে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে ভারতের রাশিয়া থেকে বার্ষিক আমদানি প্রায় ৬৫ বিলিয়ন ডলার, আর রাশিয়ার ভারতীয় আমদানি মাত্র ৫ বিলিয়ন ডলার, ফলে বড় বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সার খাতে সহযোগিতা বাড়ানোও আলোচনার এজেন্ডায় রয়েছে, কারণ রাশিয়া প্রতি বছর ভারতকে ৩-৪ মিলিয়ন টন সার সরবরাহ করে।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মুর্মু পুতিনের সম্মানে বিশেষ নৈশভোজ আয়োজন করবেন। একই দিনে তিনি ভারতে রুশ রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারক নতুন ভারত চ্যানেল উদ্বোধন করবেন। রুশ প্রেসিডেন্টের সফর প্রায় ২৮ ঘণ্টা চলবে। এদিন রাত ৯টায় তার ভারতে সফরের সমাপ্তি ঘটবে।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের পদ্ধতিতে ‘মৌলিক ত্রুটি’ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। গত বুধবার রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে বিশ্বাস করার ‘জোরালো কারণ’ রয়েছে।
নিউ ইয়র্কে রয়টার্স নেক্সট সম্মেলনে গুতেরেস বলেন, ইসরায়েলি অভিযান যেভাবে পরিচালিত হয়েছে, তাতে বেসামরিক মানুষের মৃত্যু এবং গাজা ধ্বংসের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে- এতে মৌলিক কিছু ভুল ছিল।
তিনি বলেন, তাদের নাকি লক্ষ্য ছিল হামাসকে ধ্বংস করা। অথচ গাজা ধ্বংস হলেও, হামাস এখনও নিশ্চিহ্ন হয়নি। সুতরাং এই অভিযানের প্রকৃতিতে মৌলিক সমস্যা রয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েল-হামাস সংঘাতে ৭০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। যুদ্ধের সূত্রপাত হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায়, যেখানে ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫১ জন জিম্মি হয়েছিলেন।
গাজায় যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে গুতেরেস বলেন, সে সম্ভাবনা আছে বলে বিশ্বাস করার শক্তিশালী কারণ রয়েছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘে ইসরায়েলের প্রতিনিধি ড্যানি ড্যানন বলেন, একমাত্র অপরাধ হলো- ৭ অক্টোবরের নৃশংস হামলার দুই বছরের বেশি সময় পরও জাতিসংঘ মহাসচিব ইসরায়েল সফর করেননি, বরং তিনি তার পদ ব্যবহার করে প্রতিটি সুযোগে ইসরায়েলকে আক্রমণ ও নিন্দা করেছেন।
তবে গত বছরের অক্টোবরে তৎকালীন ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী (বর্তমানে প্রতিরক্ষামন্ত্রী) ইসরায়েল কাটজ জানিয়েছিলেন, তিনি গুতেরেসের দেশটিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিলেন।
১০ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলে ও হামাসের মধ্যে নাজুক এক যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে, তবে ইসরায়েল এখনও গাজায় হামলা চালাচ্ছে এবং তাদের দাবি অনুযায়ী, হামাসের অবকাঠামো ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে।
গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রশংসা করেন গুতেরেস। আগস্টে বৈশ্বিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছিল, গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, মানবিক সহায়তার বিষয়ে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া রয়েছে। আশা করি এটি বজায় থাকবে এবং আরও উন্নত হবে।
গাজায় সহায়তা সরবরাহে দীর্ঘদিন ধরে বাধার অভিযোগ করে আসছে জাতিসংঘ- যার দায় তারা ইসরায়েলের ওপর চাপায়। অন্যদিকে, জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন ত্রাণ কার্যক্রমের সমালোচনা করে ইসরায়েল বলেছে, হামাস ত্রাণ লুট করে- যা গোষ্ঠীটি অস্বীকার করে আসছে।
ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসান চান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন-এমনটাই জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, পুতিন এখনো চান ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হোক।
গত বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তার বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ ও জামাতা তথা অনানুষ্ঠানিক উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারের বৈঠকের পর তার এ ধারণা হয়েছে। তার ভাষায়, ‘তাদের ধারণা খুব স্পষ্ট- পুতিন যুদ্ধ শেষ করতে চান, তিনি একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে চান।’
গত মঙ্গলবার মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে উইটকফ ও কুশনারের বৈঠক হয়। এর পরদিন ট্রাম্প এ মন্তব্য করলেন। পুতিনের সঙ্গে সেই বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে ওয়াশিংটনের সংশোধিত খসড়া শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। ট্রাম্প জানান, তিনি গত মঙ্গলবার রাতেই কুশনার ও উইটকফের সঙ্গে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘তারা পুতিনের সঙ্গে যথেষ্ট ভালো একটি বৈঠক করেছেন। এরপর কী হয়, তা আমরা দেখব’। ট্রাম্প আবারও দাবি করেন, তিনি প্রেসিডেন্ট থাকলে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুই হতো না।
তার ভাষায়, ‘পুতিনের সঙ্গে জ্যারেড কুশনার ও স্টিভ উইটকফের খুব ভালো বৈঠক হয়েছে। তবে এটা দুপক্ষের ব্যাপার সমঝোতা হলে দুপক্ষকেই রাজি হতে হবে।’
অন্যদিকে গত বুধবার রুশ প্রেসিডেন্টের সহযোগী ইউরি উশাকভ বলেন, ইউক্রেন সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে রাশিয়ার মতামত বিবেচনায় নিতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিবেশ ইতিবাচক। মার্কিনরা দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে পৌঁছাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে প্রস্তুত- এমন সমাধান, যা আমাদের লক্ষ্য পূরণেও সহায়তা করে।’
এর আগে গত বুধবার এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক জানায়, ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি নিয়ে ৫ ঘণ্টার বৈঠকের পরও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোন সমঝোতা হয়নি বলে রাশিয়া জানিয়েছে। মস্কোর ক্রেমলিনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ দূতদের আলোচনার পর গত বুধবার এ তথ্য জানানো হয়।