বিদ্রোহীদের সঙ্গে দেশের ভেতরে যুদ্ধে লেজে-গোবরে অবস্থা এখন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর। এ অবস্থায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ও দেশের ভেতরে কোণঠাসা হয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য বিশেষ প্রস্তাব দিয়েছে দেশটির জান্তা সরকার। বলা হচ্ছে, বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সেনাবাহিনীতে যোগ দিলে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে থাইল্যান্ড থেকে পরিচালিত দেশটির ইংরেজি সংবাদমাধ্যম ইরাবতি।
রাখাইনের অধিকারকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, জান্তা বাহিনী জানিয়েছে, যেসব রোহিঙ্গা পুরুষ সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন তাদের এক বস্তা চাল, নাগরিকত্বের একটি পরিচয়পত্র এবং মাসিক ১ লাখ ১৫ হাজার কিয়াট বেতন দেওয়া হবে। যা বাংলাদেশি অর্থে সাড়ে চার হাজার টাকার সমান।
তবে সাধারণ রোহিঙ্গাদের প্রলুব্ধ করতে না পেরে এখন জোরপূর্বক তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। যাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাদের রাজধানী সিত্তেতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং সেখানে দুই সপ্তাহের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের ধরে নিয়ে যেতে বিভিন্ন গ্রাম এবং শরণার্থী ক্যাম্পে হানা দিচ্ছে জান্তা বাহিনী। গ্রামবাসী ও অন্যদের আশঙ্কা, তাদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০ রোহিঙ্গা পুরুষকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তাদের দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।
ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নে সান বলেছেন, ‘প্রশিক্ষণের সময় মাত্র দুই সপ্তাহ। যাদের দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে তাদের জান্তা বাহিনী শুধু মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।’
এর মধ্যে সিত্তের এবং বুচিডংয়ের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ৪০০ জনকে প্রশিক্ষণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী সব নারী-পুরুষকে সামরিক বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করে। এর পরই রোহিঙ্গা পুরুষদের সামরিক বাহিনীতে যুক্ত করার কার্যক্রম শুরু করে জান্তা।
সংবাদমাধ্যম ইরাবতি জানিয়েছে, জান্তা বাহিনী ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী সবার তালিকা তৈরির জন্য বুচিডং, মংডু এবং সিত্তের গ্রাম প্রশাসক ও নেতাদের চাপ দিয়েছে।
এর মধ্যে ছোট গ্রাম থেকে অন্তত ৫০ জন, বড় গ্রাম ও প্রতিটি শরণার্থী ক্যাম্প থেকে অন্তত ১০০ জনের তালিকা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নে সান আরও বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি বুধবার পর্যন্ত সিত্তের শরণার্থী ক্যাম্প থেকে ৩০০ জনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তারা এখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।’
এর আগে বুচিডং থেকে গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি শতাধিক মুসলিম রোহিঙ্গা পুরুষকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তাদের সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
যদিও আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগদানের বিষয়টি শুধু মিয়ানমারের নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও এখন তাদের সেনাবাহিনীতে যুক্ত করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, যাদের জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে; তাদের জন্য তারা সবাই চিন্তিত। তারা আরও চিন্তিত কারণ, যেকোনো সময় তাদেরও প্রশিক্ষণের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে।’
এদিকে গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু করে আরাকান আর্মির যোদ্ধারা। তাদের হামলায় অনেক ঘাঁটি ও ক্যাম্প থেকে পালিয়ে গেছে জান্তা সেনারা। এখন আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য রোহিঙ্গাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। সূত্র: ইরাবতি
গাজা যুদ্ধের ‘ভয়াবহ সংকট’ অবসানে চুক্তিতে পৌঁছাতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়িয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুজনের মধ্যে দ্বিতীয় দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানিয়েছে, দোহায় কাতারের মধ্যস্থতায় চলমান আলোচনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে নেতানিয়াহু মঙ্গলবার আবার হোয়াইট হাউসে যান। কাতার সতর্ক করে বলেছে, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে সময় লাগবে।
হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহুর ফেরার ঘোষণার সময় ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এটা এক দুঃখজনক পরিস্থিতি। তিনি (নেতানিয়াহু) এর সমাধান চান, আমিও চাই এবং আমার মনে হয় অন্য পক্ষও সেটা চায়।’
ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই সপ্তাহের শেষ নাগাদ একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারব বলে আমরা আশা করছি, যা ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির পথ খুলে দেবে।’
চুক্তির আওতায় হামাসের হাতে আটকে থাকা ১০ জীবিত ও ৯ মৃত বন্দিকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে জানান তিনি।
সোমবার রাতে ট্রাম্পের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেওয়ার পর নেতানিয়াহু মঙ্গলবার আবার হোয়াইট হাউসে আলোচনায় বসেন। এই বৈঠকে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশাধিকার ছিল না।
এর আগে মার্কিন কংগ্রেসের হাউস স্পিকার মাইক জনসনের সঙ্গে এক বৈঠকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা শিগগিরই আসবে কি না জানতে চাইলে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা অবশ্যই এটা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’
ট্রাম্প ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় থেকে ইসরাইলের প্রতি জোরালো সমর্থন বজায় রেখেছেন। তবে একইসঙ্গে গাজায় চলমান সংঘর্ষকে ‘নরক’ আখ্যায়িত করে তা বন্ধে চাপও বাড়াচ্ছেন।
এদিকে কাতার জানায়, দোহায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা তৃতীয় দিনে গড়ালেও এখনো কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
এদিকে, কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে কোনো সময়সীমা দেওয়া সম্ভব না, তবে এটুকু বলতে পারি যে, এর জন্য আমাদের সময় লাগবে।’
যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরের পাশাপাশি কাতারও এই আলোচনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে। তারা জানিয়েছে, দোহায় চলা বৈঠকে মূলত আলোচনা চালানোর নিয়মকানুন ঠিক করা হচ্ছে।
তবে আলোচনায় থাকা এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কোনো বড় অগ্রগতি হয়নি।
অন্যদিকে, ময়দানে সংঘাত চলছেই। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, মঙ্গলবার ইসরাইলি হামলায় ২৯ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে তিন শিশু রয়েছে।
উত্তর গাজায় সংঘর্ষে পাঁচ ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে। এই বছর ফিলিস্তিনি এলাকায় ইসরাইলি বাহিনীর জন্য এটি সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিনের মধ্যে একটি। তাদের মৃত্যু হয় বেইত হানুন এলাকার কাছে পুঁতে রাখা বোমার বিস্ফোরণে।
নেতানিয়াহু সেনাদের মৃত্যুকে ‘কষ্টকর সকাল’ বলে মন্তব্য করেছেন।
লেবানন জানিয়েছে, মঙ্গলবার ত্রিপোলির কাছে এক হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ওই হামলার লক্ষ্য ছিলেন এক হামাস যোদ্ধা। এটি ওই এলাকায় হিজবুল্লাহর সঙ্গে গত নভেম্বরের যুদ্ধবিরতির পর প্রথম হামলা।
ইরান-ইসরাইলের সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতিকে কাজে লাগিয়ে গাজা সংকটের নিষ্পত্তি চাচ্ছেন ট্রাম্প।
এদিকে ফ্রান্সের গোয়েন্দা প্রধানও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের যৌথ হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘গভীরভাবে ব্যাহত’ হয়েছে। এই মন্তব্যের মাধ্যমে হামলায় আসলে কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে
চলমান বিতর্কে তিনি সরাসরি যুক্ত হলেন।
ইসরাইল ও হামাস রোববার থেকে নতুন দফার আলোচনায় বসেছে। যদিও একই ভবনের ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে বসে অংশ নিচ্ছেন দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা।
ওয়াশিংটনে নেতানিয়াহুর সফরসঙ্গী এক ইসরাইলি কর্মকর্তা বলেছেন, আলোচনায় যে প্রস্তাব উঠেছে তা ‘ইসরাইলের ৮০-৯০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে।’
তবে ইসরাইলের কট্টর ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির হামাসের সঙ্গে আলোচনার বিরোধিতা করে বলেন, ‘আমাদের সেনাদের হত্যাকারীদের সঙ্গে আলোচনার কোন দরকার নেই, তাদের ছিন্নভিন্ন করে দিতে হবে।’
গাজায় চলমান যুদ্ধ ২০ লাখের বেশি মানুষের জন্য ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরাইলে ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিল সাধারণ জনগণ। ওই ঘটনায় হামাস ২৫১ জনকে ইসরাইলিকে বন্দি করে। এখনো তাদের হাতে ৪৯ জন বন্দি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৭ জন মারা গেছে বলে ইসরাইল দাবি করেছে।
অন্যদিকে, ইসরাইলের পাল্টা অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৭ হাজার ৫৭৫ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই সাধারণ ফিলিস্তিনি নাগরিক বলে জানায় হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘ ওই সংখ্যা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে।
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বৈরী দুটি দেশ ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষের স্বাক্ষী হয়েছে বিশ্ব। ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্ততায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে দেশ দুটি। তবে এই যুদ্ধবিরতিতে ভরসা করতে পারছে না ইরান। তেহরানের আশঙ্কা, যে কোনো সময় আবারো হামলা করতে পারে ইসরায়েল। আর সেই আশঙ্কা থেকেই এবার জোরকদমে পূর্বপ্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে খামেনি প্রশাসন।
জানা গেছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরপরই চীন থেকে অত্যাধুনিক সারফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের (এসএএম) বিশাল চালান হাতে পেয়েছে ইরান। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা এতটাই শক্তিশালী, ইরানের আকাশসীমার ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান প্রবেশ করাই কঠিন হয়ে পড়বে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন একাধিক আরব গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তারা জানান, ২৪ জুন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরই চীনা এসএএম HQ-9 বা HQ-16 এর এসব ব্যাটারি ইরানে পৌঁছায়। যুদ্ধের সময় ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হওয়া প্রতিরক্ষা কাঠামো পুনর্গঠনের অংশ হিসেবেই এই সরঞ্জাম হস্তান্তর হয়েছে।
আরেক আরব কর্মকর্তা জানান, ইরান তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে তীব্র গতিতে কাজ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকেও এ অগ্রগতির বিষয়ে অবহিত রাখা হয়েছে। জানা গেছে, চীন থেকে এসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার বিনিময়ে ইরান বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল সরবরাহ করছে।
চীন বর্তমানে ইরানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তৃতীয় দেশের মাধ্যমে চীন নিয়মিতভাবে ইরানি তেল আমদানি করছে, যা দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্ককে আরও মজবুত করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চীনা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইরানের আকাশে ইসরায়েলি আধিপত্যের সমাপ্তি ঘটাতে পারে। কারণ, সম্প্রতি ইসরায়েল ইরানের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ও সামরিক বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে ধ্বংসাত্মক হামলা চালায়।
তবে পাল্টা হামলায় ইরানও ইসরায়েলের তেলআবিব ও হাইফার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়।
বর্তমানে ইরান রাশিয়ার এস-৩০০ ছাড়াও দেশীয় প্রযুক্তির খোরদাদ ও বাভার-৩৭৩ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা পরিচালনা করছে, যদিও সেগুলো মার্কিন স্টেলথ ফাইটার F-35 প্রতিরোধে পুরোপুরি কার্যকর নয়। তাই চীনা HQ-9 বা HQ-16 এর মতো আধুনিক এসএএম সিস্টেম ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারে।
চীন ইতোমধ্যেই পাকিস্তান ও মিসরের মতো মিত্রদের কাছে এসব ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করেছে। এবার ইরানেও তা হস্তান্তর, মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির ভারসাম্যে এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সোমবার বলেছেন, তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মনোনীত করেছেন এবং পুরস্কার কমিটির কাছে পাঠানো চিঠির একটি কপি তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে উপহার দেন।
ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
সোমবার রাতে হোয়াইট হাউসের নৈশভোজে অংশ নিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, ‘তিনি আমাদের কথা অনুসারে, একের পর এক দেশে, একের পর এক অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করছেন’।
ট্রাম্প বছরের পর বছর ধরে সমর্থক এবং অনুগত আইন প্রণেতাদের কাছ থেকে একাধিক বার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন এবং মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কারটি বারবার হাতছাড়া হওয়ার কারণে তিনি তার বিরক্তির কথা গোপন করেননি।
এই রিপাবলিকান অভিযোগ করেছেন, ভারত ও পাকিস্তান, সেইসাথে সার্বিয়া ও কসোভোর মধ্যে সংঘাতে মধ্যস্থতার ভূমিকার জন্য নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি তাকে উপেক্ষা করেছে।
তিনি মিশর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে ‘শান্তি বজায় রাখার’ জন্য এবং ইব্রাহিম চুক্তির মধ্যস্থতার জন্যও কৃতিত্ব দাবি করেছেন, যা ইসরাইল এবং বেশ কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে একটি ধারাবাহিক চুক্তি।
ট্রাম্প নিজেকে একজন ‘শান্তি প্রতিষ্ঠাতা’ হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তিনি ইউক্রেন এবং গাজায় দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য তার আলোচনার দক্ষতা ব্যবহার করবেন, যদিও তার প্রেসিডেন্ট হিসাবে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে উভয় সংঘাত এখনও তীব্র।
ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এর একজন উপদেষ্টা বলেছেন, ইরানের এখনো দুই বছর ধরে প্রতিদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর মতো পর্যাপ্ত সামরিক সক্ষমতা রয়েছে।
সোমবার (০৭ জুলাই) মেজর জেনারেল ইব্রাহিম জাব্বারি আধা-সরকারি মেহের নিউজ এজেন্সিকে বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তাদের প্রস্তুতির শীর্ষে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে, আমাদের গুদাম, ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি এবং সুযোগ-সুবিধা এত বিশাল যে, আমরা এখনো আমাদের বেশিরভাগ প্রতিরক্ষা ক্ষমতা এবং কার্যকর ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করতে পারিনি।’
আইআরজিসি উপদেষ্টার ভাষ্য, ‘ইসরায়েল এবং আমেরিকার সঙ্গে যুদ্ধের ক্ষেত্রে, আমরা যদি দুই বছর ধরে প্রতিদিন তাদের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে মারি, তবুও আমাদের স্থাপনাগুলো খালি হবে না।’
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুন ভোরে ইসরায়েল ইরানের মাটিতে বিমান হামলা চালিয়ে আগ্রাসন শুরু করে। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ইরান প্রতিশোধ নেয়।
এরপর নয় দিন ধরে ইসরায়েলি হামলার জবাবে পাল্টা হামলা চালিয়ে যায় ইরান। ২২ জুন ভোরে মার্কিন ভারী বোমারু বিমানগুলো তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ করে এবং সংঘর্ষে প্রবেশ করে।
পরের দিন সন্ধ্যায় তেহরান কাতারে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক বিমানঘাঁটি আল উদেইদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। মার্কিন কর্তৃপক্ষের মতে, কোনো হতাহত বা উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়নি।
এরপর ২৪ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইসরায়েল এবং ইরান সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষও জানায়, তারা মার্কিন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং ইরানের বিরুদ্ধে তাদের অভিযানের সমস্ত উদ্দেশ্য সম্পন্ন করেছে। পরিবর্তে তেহরান বলেছে, তারা আগ্রাসন বন্ধ করতে বাধ্য করে তেল আবিবের ওপর বিজয় অর্জন করেছে।
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম সোমবার জানিয়েছে, তেহরান ৬ জুলাইয়ের মধ্যে কাগজ পত্রবিহীনদের ইরান ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর জুনের শুরু থেকে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার আফগান নাগরিক ইরান থেকে নিজ দেশে ফিরেছেন।
কাবুল থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
তেহরান মে মাসের শেষের দিকে ৬ জুলাইয়ের মধ্যে কাগজপত্রবিহীন আফগানদের দেশত্যাগ করার নির্দেশ দেয়।
এই ঘোষণা ইরানে বাসবাসরত প্রায় ষাট লাখ আফগানের মধ্যে চল্লিশ লাখ আফগানের ওপর এর প্রভাব ফেলছে।
জাতিসংঘের সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গত জুনের মাঝামাঝি থেকে সীমান্ত অতিক্রমকারী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। কিছু দিন ধরে পশ্চিম হেরাত প্রদেশের ইসলাম কালা দিয়ে প্রায় ৪০হাজার লোক পার হতে দেখা গেছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার এক মুখপাত্র এএফপিকে জানিয়েছেন, গত ১ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত ৪ লাখ ৪৯ হাজার ২১৮ জন আফগান ইরান থেকে নিজ দেশে ফিরে গেছে।
তিনি আরো বলেন, এ বছর এখন পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ৬ হাজার ৩শ’ ২৬ জন আফগান ইরান ছেড়েছেন।
অনেকেই কর্তৃপক্ষের চাপ, গ্রেপ্তার ও নির্বাসন এবং দ্রুত দেশত্যাগের তাড়াহুড়োয় ইতিমধ্যেই কিছু অর্থ হারানোর কথা জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক বেসরকারি গোষ্ঠী ও তালেবান কর্মকর্তারা ইরান প্রত্যাবর্তনকারী আফগানদের সহায়তার জন্য আরো তহবিলের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, এই অনুপ্রবেশ ইতোমধ্যেই দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত ধাক্কায় জর্জরিত আফগানিস্তানকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
জোরপূর্বক আফগানদের ফেরত না পাঠানোর জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর শুক্রবার (০৪ জুলাই ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আফগানদের ফিরে যেতে বাধ্য করা বা চাপ দেওয়া, এই অঞ্চলে আরো অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে এবং আফগানদের ইউরোপের দিকে অগ্রসর হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে।’
কোনো অগ্রগতি ছাড়াই ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার সর্বশেষ পরোক্ষ যুদ্ধবিরতি আলোচনা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন আলোচনা সংশ্লিষ্ট এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা। স্থানীয় সময় রবিবার (৬ জুলাই) কাতারের দোহায় দুটি আলাদা ভবনে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, আলোচনা প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলে। কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে দুপক্ষের মধ্যে বার্তা ও ব্যাখ্যা বিনিময় হয়, তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আলোচনার পরবর্তী ধাপ সোমবার (৭ জুলাই) আবার শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। দুপক্ষের মধ্যকার বাধাগুলো দূর করে সমঝোতার পথ খুঁজতে মধ্যস্থতাকারীরা উভয়পক্ষের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করবেন।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে দুই ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার বক্তব্য জানিয়েছে বিবিসি। এতে বলা হয়, ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন—হামাসের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ইসরায়েলি প্রতিনিধি দল ‘যথেষ্ট ক্ষমতাসম্পন্ন’ ছিল না, কারণ তাদের কাছে ‘বাস্তবিক কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা’ ছিল না।
এমন এক সময় এ আলোচনা চলছে, যখন ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার বৈঠকটি যুদ্ধবিরতি ও গাজায় আটক অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে অগ্রগতির ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে তিনি আশা করেন। তিনি আরও জানান, যুদ্ধবিরতি চুক্তি অর্জনের জন্য তিনি তার আলোচকদের ‘পরিষ্কার নির্দেশনা’ দিয়েছেন, যা ইসরায়েলের পক্ষে গ্রহণযোগ্য।
এদিকে, সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক মনোভাব’ দেখানোর দাবি করেছে হামাস। তবে এখনও দুপক্ষের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, যা দূর না হলে চুক্তি সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে তারা।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য হামাসের অন্যতম প্রধান শর্ত হলো—যেকোনো সমঝোতার শেষে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা। এ অবস্থানে তারা এখনও অনড়।
তবে নেতানিয়াহুর সরকার এর আগেও এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এখনও ইসরায়েলি অবস্থানে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রে রওনা হওয়ার আগে নেতানিয়াহু বলেন, তিনি এখনো তিনটি লক্ষ্যেই অটল—‘সব জিম্মি, জীবিত ও মৃতদের মুক্তি ও প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা; হামাসের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করে গাজা থেকে উৎখাত করা; এবং গাজা যেন আর কখনোই ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হয়, তা নিশ্চিত করা।’
কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের জন্য এই পরোক্ষ আলোচনা সহজ হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত মার্চের আগের যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে এ ধরনের নানা উদ্যোগ একই জায়গায় এসে আটকে গেছে।
সেই সময় থেকে ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে তীব্র সামরিক অভিযান শুরু করেছে। পাশাপাশি গাজায় ত্রাণ প্রবেশের ওপর ১১ সপ্তাহের অবরোধও আরোপ করে, যা কয়েক সপ্তাহ আগে আংশিকভাবে শিথিল করা হয়।
ইসরায়েলি সরকার বলছে, এসব পদক্ষেপ হামাসকে আরও দুর্বল করা এবং তাদেরকে আলোচনায় বসতে ও জিম্মিদের মুক্তি দিতে বাধ্য করতেই নেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা হামাসের ১৩০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে এবং বেশ কয়েকজন হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।
তবে গাজায় বেসামরিক প্রাণহানির সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলায় রবিবার অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হলো— কাতারে চলমান এই আলোচনা কি সত্যিই দুপক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবে? আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি নেতানিয়াহুকে রাজি করাতে পারবেন যে, এই যুদ্ধের ইতি টানতে হবে?
ইসরায়েলের অনেকেই মনে করছেন, অবশিষ্ট জিম্মিদের বাঁচাতে যুদ্ধ বন্ধের মূল্য দেওয়ার এখনই সময়।
শনিবার রাতেও তারা জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছিল। এ সময় দ্রুত চুক্তি করে জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানান তারা।
ইয়েমেনের হুদাইদা বন্দরনগরীসহ হুথি বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন এলাকায় একযোগে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। সোমবার ভোরে দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে।
জেরুজালেম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
টেলিগ্রামে দেওয়া বিবৃতিতে ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইয়েমেন থেকে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। যদিও সেনাবাহিনীর দাবি, তারা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিহত করার চেষ্টা করছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, হুথিদের সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। টার্গেটগুলোর মধ্যে ছিল হুদাইদা, রাস ইসা ও সালিফ বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইসরাইল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হুথিদের বারবার হামলার জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে।
হামলার আগে হুথি নিয়ন্ত্রিত আল-মাসিরাহ টেলিভিশন রোববার জানায়, ইসরাইলি শত্রুরা হোদেইদা বন্দর লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। এছাড়া রাস ইসা ও সালিফ বন্দরের পাশাপাশি রাস আল-কাথিব বিদ্যুৎকেন্দ্রেও হামলা হয়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই স্থানগুলোতে সম্ভাব্য হামলার সতর্ক করার আধ ঘন্টা পরেই হামলা চালানো হয়।
২০২৩ সালে অক্টোবরে হামাসের ইসরাইল আক্রমণের পর গাজা যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর থেকেই ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করছে হুথি বিদ্রোহীরা। গত মার্চে দু’মাসের যুদ্ধবিরতি শেষ হলে গাজায় আবারো সামরিক অভিযান শুরু করে তেল আবিব। তখন থেকে ফের হামলা শুরু করে হুথিরাও।
হুথি বিদ্রোহীদের দাবি, তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে এ হামলা চালাচ্ছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে তারা লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিপিং জাহাজগুলোতেও আক্রমণ করছে।
ইসরাইল বলছে, হুথিদের দখলে থাকা ‘গ্যালাক্সি লিডার’ কার্গো জাহাজেও হামলা চালানো হয়েছে। জাহাজটি ২০২৩ সালের নভেম্বরে হুথি বিদ্রোহীরা দখলে নেয়। এরপরে রেড সিতে শিপিং ট্র্যাক করার জন্য সেটিতে রাডার ব্যবস্থাও বসায়।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে লোহিত সাগরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে হুথিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করলে লক্ষ্যবস্তুতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের জাহাজগুলোকেও যুক্ত করে বিদ্রোহীরা।
গত মে মাসে হুথিরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে। যার ফলে তাদের বিরুদ্ধে চলা তীব্র মার্কিন হামলার অবসান ঘটে। কিন্তু ইসরাইলি জাহাজগুলোতে হামলা অব্যাহত রাখে হুথিরা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপক কর ছাড় আইনের জবাবে ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের হুমকি এবার বাস্তবায়ন করার কথা জানিয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। তার এই সিদ্ধান্তকে ‘হাস্যকর’ বলে অভিহিত করেছেন ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় শনিবার (৫ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মাস্ক লিখেছিলেন, ‘দেশকে দেউলিয়া করার এই অপচয় ও দুর্নীতির খেলায় আমাদের এখানে আসলে একদলীয় শাসন চলছে, গণতন্ত্র নয়। আজ আপনাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে আমেরিকা পার্টি গঠন করা হল।’
একসময় ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত মাস্ক ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ (ডিওইজি) নামে পরিচিত সরকারের খরচ কমানো সংস্থার প্রধান ছিলেন। তবে প্রেসিডেন্টের এই কর ছাড় আইন নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেন। শুক্রবার এই আইনটি চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষরিত হয়।
আইনটি কংগ্রেসে পাস হওয়ার পথে থাকতেই মাস্ক হুমকি দেন, ‘যদি এই বেসামাল খরচের বিল পাস হয়, তাহলে আমি আমেরিকা পার্টি গঠন করব।’
যদিও হোয়াইট হাউসে তার শেষ দিকে মাস্ক বলেছিলেন— ভবিষ্যতে তিনি রাজনীতিতে ‘অনেক কম’ অর্থ ব্যয় করবেন।ি
এদিকে, রবিবার (৬ জুলাই) নিউ জার্সির নিজ বাসা থেকে ওয়াশিংটনে ফেরার আগে মাস্কের এই উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘মাস্কের এই উদ্যোগ পুরোপুরি হাস্যকর।’
তিনি আরও বলেন, ‘রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গে আমরা দারুণ সাফল্য অর্জন করেছি। তাছাড়া, ডেমোক্রেটরা তাদের পথ হারিয়েছে, কিন্তু এটা বরাবরই দ্বিদলীয় ব্যবস্থা ছিল। আমার মনে হয় তৃতীয় দল গঠন শুধু বিভ্রান্তিই সৃষ্টি করবে। এটা মূলত দুই দলের জন্যই তৈরি ব্যবস্থা।’
এ ছাড়া, তৃতীয় দলগুলো কখনোই কার্যকর হয়নি বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠন অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে নতুন নয়, তবে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট পার্টির কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য সমর্থন টেনে নেওয়া সাধারণত কঠিন। তবে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মাস্ক, যিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের পেছনে অন্তত ২৫ কোটি ডলার খরচ করেছিলেন।
যদি তিনি ২০২৬ সালের কংগ্রেস নিয়ন্ত্রণ নির্ধারণকারী নির্বাচনে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করেন, তবে ভোটের সমীকরণে বড় প্রভাব ফেলতে পারেন বলে মনে করেন অনেকে।
তবে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার পুনরায় শুরু হওয়া দ্বন্দ্ব মাস্কের জন্য আর্থিকভাবে বিপর্যয়করও হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ সরকার থেকে কোটি কোটি ডলারের চুক্তির ওপর নির্ভরশীল তার ব্যবসা এবং তার কোম্পানি টেসলা ইতোমধ্যেই শেয়ারবাজারে ধাক্কা খেয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে মাস্ক আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন করেছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। রবিবার মাস্ক বা তার রাজনৈতিক কমিটি আমেরিকা পিএসির পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
যদিও রবিবার সকালে মাস্ক এক্স পোস্টের মাধ্যমে পার্টি নিয়ে ব্যবহারকারীদের মতামত নিচ্ছিলেন এবং এই দল ব্যবহার করে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে সক্রিয় হবেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
গত মাসেও ট্রাম্পের বিলের পক্ষে ভোট দেওয়া প্রতিটি কংগ্রেস সদস্যকে তিনি নির্বাচনে পরাজিত করার চেষ্টা করবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন। ওই বিলে ফেডারেল ঘাটতি আরও বাড়াবে বলে সতর্ক করেছিলেন।
এদিকে, রবিবার সিএনএনর ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘ডিওজিউয়ের নীতিগুলো জনপ্রিয় হলেও, ইলন মাস্ক মোটেও জনপ্রিয় ছিলেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, তার পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা কালকের (শনিবার) ঘোষণায় মোটেই খুশি হননি এবং তাকে তার ব্যবসায় মনোযোগ দিতে উৎসাহিত করবেন, রাজনীতিতে নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যায় অন্তত ১৫টি শিশুসহ নিহতের সংখ্যা ৫১ ছাড়িয়েছে। স্থানীয় গোয়াডালুপ নদীর উচ্চপ্রবাহের কারণে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এখনও ২৭ কিশোরীসহ বহু মানুষের সন্ধান মেলেনি। নিখোঁজদের উদ্ধারে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো।
ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান ও এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবরে এসব তথ্য জানা যায়। স্থানীয়রা জানান, নদীর পানি ৪৫ মিনিটের মধ্যে ২৬ ফুট বেড়ে গিয়ে মৃত্যু ও বিপর্যয়ের মুখে পড়েন তারা। মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বহু ঘরবাড়ি, গাড়ি ভেসে গেছে।
শুক্রবার (৪ জুলাই) ভোরে টেক্সাসের কেরি কাউন্টিতে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতে নদীর পানি বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেছে। এতে ওই এলাকায় ৪৩ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া, এর আশপাশের বিভিন্ন জেলায় আরও অন্তত ৮ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা (এনডব্লিউ) কেরি কাউন্টির বিভিন্ন এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি রেখেছে।
গার্ডিয়ান জানায়, গোয়াডালুপ নদীর তীরে ক্যাম্প মিস্টিক নামের খ্রিস্টান মেয়েদের গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে ৭৫০টির বেশি শিশু অবস্থান করছিল। ওই ক্যাম্পের ২৭ কিশোরি এখনও নিখোঁজ রয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনের জানিয়েছে, বন্যার প্রবল ঢলে ভেসে যাওয়াদের উদ্ধারে হেলিকপ্টার ও ড্রোনের মাধ্যমে উদ্ধার অভিযান চলছে। এখন পর্যন্ত ৮৫০ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ১২ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও ৫টি শিশুর পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।
টেক্সাস রাজ্যের জরুরি বিভাগের প্রধান নিম কিড বলেন, ‘প্রতিটি নিখোঁজ ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধারের তৎপরতা চলছে।’
এদিকে, টেক্সাসের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ড্যান প্যাট্রিক বলেন, ‘নিখোঁজদের কেউ কেউ গাছের ডালে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন। আমরা তাদের জীবিত উদ্ধারের জন্য কার্যক্রম চালাচ্ছি।’
নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে কাজ করছে বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টার, কয়েকশত উদ্ধারকারী দল ও দেশটির সেনাসদস্যরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিবারগুলো নিখোঁজ স্বজনদের ছবি দিয়ে সাহায্য চাচ্ছেন।
এদিকে, এত ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির জন্য অনেকেই ট্রাম্প প্রশাসনকে দোষারোপ করছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প প্রশাসন আবহাওয়া বিভাগসহ বিভিন্ন সংস্থায় বাজেট ও কর্মী সংখ্যা ব্যাপক কমিয়েছে।
অনেকের অভিযোগ, এর কারণেই পূর্বাভাস ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে সঠিক সময়ে মানুষের কাছে সকর্তবার্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে, স্থানীয় কর্মকর্তারা অভিযোগ করে জানান, তারা এমন ভয়াবহ বন্যার পূর্বাভাস পাননি।
তবে এই অভিযোগ উড়িয়ে স্থানীয় আবহাওয়া বিভাগের কর্মকর্তা অ্যাভেরি তোমাসকো দাবি করেন, ‘বিপর্যয়ের ১২ ঘণ্টা আগেই কেরি কাউন্টিতে বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।’
দেশটির জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা (এনডব্লিউ) বলছে, শুক্রবার রাতেই অন্তত ৩০ হাজার মানুষের জন্য বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। তবে, স্থানীয়রা জানান, রাতের আঁধারে পরিস্থিতি এত দ্রুত খারাপের দিকে যাবে, সেটি অনেকেই বুঝে উঠতে পারেননি।
উদ্ধার অভিযান চলতে থাকলেও নিখোঁজ শিশুদের ভাগ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে পরিবারগুলোর। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আমরা রাষ্ট্রীয় ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করছি। বন্যাদুর্গতদের পরিবারের প্রতি আমাদের প্রার্থনা ও সমবেদনা রইল।’
টেক্সাসের হিল কান্ট্রি অঞ্চলের অর্থনীতিতে নদী পর্যটনের বড় ভূমিকা রয়েছে। শতবর্ষ পুরনো গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্প ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে প্রতিবছর হাজার হাজার শিশু ও পর্যটক বেড়াতে আসেন।
বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ও টেসলা-স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। শনিবার নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্স (সাবেক টুইটার) এ তিনি 'আমেরিকা পার্টি' নামে এই নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার কথা জানান।
মাস্কের এই ঘোষণা এসেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার সাম্প্রতিক বিরোধের প্রেক্ষাপটে। গত সপ্তাহে তিনি ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিকে "অমানবিক" বলে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছিলেন, যা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিবাদই মাস্ককে বিকল্প রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
'আমেরিকা পার্টি'র মূল লক্ষ্য হিসেবে মাস্ক তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন:
১. প্রযুক্তি বান্ধব নীতি
২. অভিবাসন সংস্কার
৩. অর্থনৈতিক স্বাধীনতা
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে "অকার্যকর ও অতিমাত্রায় বিভাজনমূলক" বলে অভিহিত করেছেন। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, মাস্কের এই নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের দুই-দলীয় ব্যবস্থায় এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।রাজনৈতিক মহলে এই ঘোষণা মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। রিপাবলিকান নেতারা একে "অভিজাত শ্রেণীর রাজনৈতিক অভিযান" বলে আখ্যায়িত করলেও কিছু প্রগতিশীল নেতা এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। উল্লেখ্য, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৪২% ভোটার নিজেদের স্বতন্ত্র হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
ঘোষণার পরপরই 'আমেরিকা পার্টি'র ওয়েবসাইটে স্বেচ্ছাসেবক নিবন্ধন শুরু হয়েছে। মাস্ক আগামী সপ্তাহে দলের বিস্তারিত কর্মসূচি ও কাঠামো প্রকাশ করার কথা জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সারা উইলিয়ামস বলেন, "মাস্কের জনপ্রিয়তা ও প্রযুক্তি খাতে প্রভাব নতুন দলটিকে প্রাথমিক সুবিধা দিলেও, স্থানীয় পর্যায়ে শক্ত ভিত্তি গড়ে তোলা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া কঠিন হবে।"
এদিকে, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "মাস্কের এই উদ্যোগ রিপাবলিকান ভোট বিভাজনের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে, যা ২০২৪ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের জন্য সহায়ক হতে পারে।"
প্রসঙ্গত, ইলন মাস্ক ২০২২ সালে এক্স (সাবেক টুইটার) ৪৪ বিলিয়ন ডলারে কিনে নেন। তারপর থেকে তিনি এই প্ল্যাটফর্মটিকে তার রাজনৈতিক মতামত ও বার্তা প্রচারের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। তার এই নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ মার্কিন রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে, সে বিষয়ে বিশ্লেষকগণ সতর্ক পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন।
গাজা উপত্যকা, মধ্যপ্রাচ্যের এমন এক টুকরো ভূমি যেখানে জন্মই যেন হয়ে উঠেছে আজন্ম পাপ। শিশুরা তো পৃথিবীতে আসে প্রকৃতির নিয়মে। তার জন্মে পরিবারে নেমে আসে খুশির ছটা। কিন্তু গাজায় একটি শিশু জন্মালে প্রথমেই তার বাবা-মাকে চিন্তা করতে হয়— এই শিশুটিকে কী খাওয়াব? কখন যেন বোমার আঘাতে মারা যায় শিশুটি—সেই দুশ্চিন্তায় তটস্থ হয়ে থাকে তাদের মন।
টানা যুদ্ধে গাজার প্রাণহানি তো বিশ্ববাসীর চোখ তো এড়ায়নি। তবে আগ্রাসনের নতুন কৌশল হিসেবে ইসরায়েল যখন গাজায় খাবারসহ মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়, তখন বিশেষজ্ঞরা বারবার যে দুর্ভিক্ষের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন, আজ তা বাস্তব। শুধু তা-ই নয়, গাজার ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে খাবারকে মানুষ মারার কৌশল হিসেবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এর এসবের মধ্যে সবচেয়ে করুণ দশায় রয়েছে একেকটি নতুন প্রাণ। সেখানকার শিশুদের অবস্থার ভয়বহতা বর্ণনা করতে গিয়ে এক ডাক্তার বলেন, ‘ওরা শুধু চামড়া ও হাড্ডিসার হয়ে গেছে।’
বর্তমানেও উপত্যকায় মানবিক সহায়তার প্রবেশ সীমিত করে রেখেছে ইসরায়েল। ফলে খাদ্যের মারাত্মক ঘাটতির কারণে শত শত শিশু মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন গাজার চিকিৎসকরা।
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. আহমদ আল-ফাররা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, তার ওয়ার্ডে মাত্র সপ্তাহখানেকের শিশুখাদ্য অবশিষ্ট আছে। ইতোমধ্যেই প্রি-ম্যাচিউর (অকালে জন্মানো) শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট করা বিশেষ ফর্মুলা (খাবার) শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে নবজাতকদের জন্য বাধ্য হয়ে সাধারণ শিশুখাদ্যই ব্যবহার করছেন তারা।
তিনি বলেন, ‘কী ভয়াবহ পরিস্থিতি তা বর্ণনা করার ভাষা আমার নেই। এই মুহূর্তে আমাদের হাতে প্রায় এক সপ্তাহের মতো ফর্মুলা (শিশুখাদ্য) আছে। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের বাইরেও অনেক শিশু আছে, যাদের জন্য কোনো দুধই নেই। ভয়াবহ ব্যাপার চলছে এখানে।’
ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে প্রায় সম্পূর্ণভাবে সহায়তা বন্ধ করে রাখায় গাজায় শিশুখাদ্যের মজুদ ক্রমেই কমছে। যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সমর্থিত বিতর্কিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গাজা হিউম্যানেটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) সীমিত পরিসরে খাদ্য সহায়তা দিলেও তাতে শিশুখাদ্য থাকে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
পাঁচ সন্তানের জননী ২৭ বছর বয়সী হানাআ আল-তাওয়িল বর্তমানে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে বাস করছেন। এই নারী জানান, তিনি নিজেই পর্যাপ্ত খাবার পান না। তাই নিজের সন্তানের জন্য বুকের দুধও তৈরি হচ্ছে না। ১৩ মাস বয়সী সন্তানের জন্য তাই শিশুখাদ্য খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে যাচ্ছেন এই মা।
হানাআ বলেন, ‘ছেলের জন্মের পর থেকেই দুধের সমস্যা শুরু হয়। আমার অপুষ্টি ও শারীরিক দুর্বলতার কারণে জন্মের পর থেকেই আমি ওকে ঠিকমতো স্তন্যদান করতে পারিনি।’
অপুষ্টির কারণে তার ছেলের বিকাশ পিছিয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তিনি নিজেও লক্ষ করেছেন, তার অন্য সন্তানরা এই বয়সে হাঁটতে ও কথা বলতে শুরু করলেও এই শিশুটি তা করতে পারছে না।
একরাশ হতাশা ও কষ্ট নিয়ে হানাআ বলেন, ‘যখন সে ঘুমায়, পাশে এক টুকরো রুটি রেখে দিই। কারণ প্রায়ই সে রাতে জেগে উঠে খাবারের জন্য কাঁদে। সারাক্ষণ অসহনীয় দুঃখ ও আশঙ্কা আমার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়। ভাবি—আমার সন্তানরা ক্ষুধা-তৃষ্ণায় শেষ পর্যন্ত মারা যাবে না তো!’
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৬ ফিলিস্তিনি শিশু অনাহারে মারা গেছে।
ইসরায়েল গাজায় বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষুধাকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এটি ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালানোর একটি কৌশল বলে দাবি করেছে সংস্থাটি।
গাজায় মানবিক সহায়তা সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ কগাটের দাবি, তারা গাজায় শিশুখাদ্য, ফর্মুলা ইত্যাদি প্রবেশে কোনো বাধা দিচ্ছে না। সংস্থাটি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ১ হাজার ৪০০ টনের বেশি শিশুখাদ্য গাজায় পাঠানো হয়েছে।
তাদের অভিযোগ, চিকিৎসকরা গাজায় প্রবেশের সময় তাদের ব্যক্তিগত ব্যাগে শিশুখাদ্যের কৌটা ভরে নিয়ে যাচ্ছেন। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এক মার্কিন চিকিৎসকের ব্যাগ থেকে একবার ১০টি শিশুখাদ্যের কৌটা জব্দ করে বলেও জানায় সংস্থাটি।
এক ফিলিস্তিনি-জার্মান চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. ডায়ানা নাজ্জাল, যিনি মার্কিন চিকিৎসকের ব্যাগ এমনভাবে গুছিয়ে দিতে সাহায্য করেছিলেন যাতে তা ইসরায়েলি সীমান্ত কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। তিনি বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত তারা সব কৌটা জব্দ করল, যেগুলো অকালে জন্মানো শিশুদের জন্য বিশেষ ফর্মুলা ছিল। শিশুখাদ্য দিয়ে ইসরায়েলের নিরাপত্তার কী ক্ষতি হতে পারে?’
নাজ্জাল আরও জানান, অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী গাজায় প্রবেশের সময় ওষুধের বদলে প্রোটিন বার ও বাদামজাতীয় উচ্চ-ক্যালরির খাবারে তাদের ব্যাগ ভরছেন।
ইসরায়েলের এই আগ্রাসনের কারণে গাজায় ক্ষুধা সংকট তীব্র হওয়ায় শিশুখাদ্যের প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়েছে। প্রায় ৫ লাখ মানুষ চরম ক্ষুধার্ত অবস্থায় আছেন, বাকি জনগণও রয়েছেন তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে। যেসব মায়েরা নিজেরাই তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছেন অথবা মারা গেছেন, তারা শিশুকে স্তন্যপান করতে পারছেন না। এই কারণে ফর্মুলার প্রয়োজন আরও বেড়েছে।
এদিকে, বাজারে সামান্য যে ফর্মুলার সরবরাহ আছে, তার দাম আাকশছোঁয়া। এক কৌটা ফর্মুলা কিনতে প্রায় ৫০ ডলার লাগছে—যা স্বাভাবিকের চেয়ে দশগুণ বেশি।
খান ইউনিসে আশ্রয় নেওয়া ২৫ বছর বয়সী তিন সন্তানের জননী নূরহান বারাকাত বলেন, ‘আমি এক মাসের মতো স্বাভাবিকভাবে স্তন্যদান করতে পেরেছিলাম, কিন্তু খাবারের অভাবে আর তা চালিয়ে যেতে পারিনি।’
বুকভরা কষ্ট নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি জানি, স্তন্যদান মা-সন্তানের বন্ধন মজবুত করে, কিন্তু আমি আর কী করতে পারি?’
পুতিনের সঙ্গে গত ৩ জুলাইয়ের টেলিফোন কথোপকথনের কথা স্মরণ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি মনে করি ইরানের চেয়ে রাশিয়ায় আমি আরও কঠোর।’ ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার কয়েক ঘণ্টা পরেই কিয়েভে সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালায় মস্কো।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে অনেক কথা বলেছি। পুতিন নিষেধাজ্ঞাগুলো সামাল দিতে করতে সক্ষম হয়েছেন। ইউক্রেনের সংঘাতের সঙ্গে সম্পর্কিত নতুন রাশিয়াবিরোধী নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন আমরা নিষেধাজ্ঞাগুলো নিয়ে অনেক কথা বলি। কিন্তু পুতিন বুঝতে পারেন যে, এটি আসতে পারে। তিনি একজন পেশাদার। তিনি এই সম্ভাবনা নিয়ে উত্তেজিত নন।
৩ জুলাই পুতিন এবং ট্রাম্প ফোনে কথা বলেন। এটি ছিল দেড় মাসের মধ্যে তাদের চতুর্থ এবং বছরের শুরু থেকে ষষ্ঠ কথোপকথন। ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভ সাংবাদিকদের জানান, রাশিয়ান এবং মার্কিন নেতাদের মধ্যে টেলিফোনে কথাবার্তা প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল। দুই নেতা ইউক্রেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি, অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
সিরিয়ার উপকূলীয় লাতাকিয়া প্রদেশে বড় ধরনের দাবানলের কারণে আবাসিক এলাকাগুলো থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
সিরিয়ার বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় কয়েক দিন ধরে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। দমকল কর্মীরা প্রবল বাতাস এবং তীব্র খরার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছেন।
দামেস্ক থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, লাতাকিয়া প্রদেশের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক আব্দুল কাফি কায়্যাল রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানাকে বলেন, কাস্তাল মা’আফ এলাকায় ছড়িয়ে পড়া দাবানল আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা এসব এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিচ্ছেন।
সিরিয়ার সিভিল ডিফেন্স (যা হোয়াইট হেলমেটস নামেও পরিচিত) জানিয়েছে, ‘উঠে আসা ধোঁয়ার বিস্তার উপকূলীয় পর্বতমালার উত্তরাংশ, হামা শহর ও তার আশপাশ এবং দক্ষিণ ইদলিব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।’
তারা আরও জানায়, ‘লাতাকিয়ার গ্রামীণ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়া দাবানলের কারণে অনেক বাগানের ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে।’
নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে যে, কেউ যদি সন্দেহভাজনভাবে আগুন লাগানোর সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে তার সম্পর্কে যেন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে খরা ও দাবানলের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিরিয়াও এর ব্যতিক্রম নয়— সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি তীব্র তাপপ্রবাহ, কম বৃষ্টিপাত এবং বড় বড় দাবানলের সম্মুখীন হচ্ছে।
গত জুনে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এএফপিকে জানায়, সিরিয়া গত ৬০ বছরে এমন খারাপ জলবায়ু পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি।
সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, নজিরবিহীন খরার কারণে ১ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে পারে।
দেশটি একইসঙ্গে এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধের ধকলেও বিপর্যস্ত। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনের অবসানের পরবর্তী রূপান্তরও এখনো চলমান রয়েছে।
কায়্যাল বলেন, ওই অঞ্চলে আগের যুদ্ধের রেখে যাওয়া মাইন ও অবিস্ফোরিত বিস্ফোরক পদার্থ উদ্ধারকাজকে ব্যাহত করছে। পাশাপাশি প্রবল বাতাস আগুন ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করছে।