শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
৭ আষাঢ় ১৪৩২

কিম জং উনের উদ্দেশ্য কী

কিম জং উন
আপডেটেড
২৭ অক্টোবর, ২০২২ ১৪:৫৩
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত : ২৭ অক্টোবর, ২০২২ ১৪:৫৩

পূর্ব এশিয়ার কোরীয় উপদ্বীপে প্রায় সময় উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করে আসছে উত্তর কোরিয়া। দুই প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়া ও উত্তর কোরিয়ার বিরোধ অনেকটা স্তিমিত হয়ে এলেও পিয়ংইয়ং যেন গোটা বিশ্বের কাছে নিজেদের শক্তিমত্তার প্রদর্শন করতেই মরিয়া। কোরীয় উপদ্বীপ এখন গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার শীর্ষনেতা কিম জং উনের সাম্প্রতিক তৎপরতায় পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিবিসি জানায়, উত্তর কোরিয়া গত মাসে জাপানের ওপর দিয়ে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এতে করে জরুরি ভিত্তিতে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বাধ্য হয় জাপানিরা। পিয়ংইয়ংয়ের এমন কাজ নিঃসন্দেহে শত্রুতাপূর্ণ ও উসকানিমূলক। কেবল জাপানে নয়, দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় যুদ্ধবিমান ওড়ানো, সাগরে ক্ষেপণাস্ত্র ও কামানের গোলা ছুড়েছে উত্তর কোরিয়া। কিছু গোলা ও ক্ষেপণাস্ত্র নিরাপদ অঞ্চল বা বাফার জোনেও পড়েছে। শান্তি বজায় রাখতে ২০১৮ সালে দুই দেশ এই বাফার জোন নির্ধারণ করেছিল। সরাসরি সংঘাতে না জড়ালেও উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া এখনো কৌশলগত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ এই নেতার এমন কার্যকলাপের পেছনে কয়েকটি কারণ বিশ্লেষণ করে বিবিসি গতকাল বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তিনটি ব্যাখ্যা দিয়েছে। সেগুলো হলো: পিয়ংইয়ং নিজেদের প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি অস্ত্রের পরীক্ষা ও সেগুলোর মানোন্নয়ন করতে চায়, বিশ্বকে একটি রাজনৈতিক বার্তা দিতে চায় এবং জনগণকে প্রভাবিত করে ও তার প্রতি আনুগত্য আদায় করতে চায়।

তবে সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিষয়ে কিম জং উনের বক্তব্য অন্যরকম। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের যৌথ সামরিক মহড়ার জবাব বা প্রতিক্রিয়ায় উত্তর কোরিয়া এসব ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য শত্রুদের দায়ী করেছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বক্তব্যও অভিন্ন। তারা বলছে, শত্রুদের থামাতেই সতর্কবার্তা হিসেবে পিয়ংইয়ং ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।

উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হামলার প্রতিক্রিয়ায় কতটুকু প্রস্তুতি রয়েছে, তা দেখানোর জন্য গত দুই মাস ধরে কখনো একা, কখনো যৌথ উদ্যোগে সামরিক মহড়া চালিয়েছে ওয়াশিংটন, সিউল ও টোকিও। আর কিম জং উন বরাবরই এ ধরনের সামরিক মহড়াকে প্রতিপক্ষের আক্রমণের লক্ষণ হিসেবে দেখেন। আর এর জেরেই নিজের শক্তি-সামর্থ্য দেখাতে চান তিনি।

পিয়ংইয়ং দাবি করে, আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করেছে উত্তর কোরিয়া। তবে বাস্তবতা হলো, শুধু আত্মরক্ষার্থে নয়, বরং প্রতিপক্ষের ওপর চাপ বাড়াতেও এই অস্ত্রকে ব্যবহার করছে পিয়ংইয়ং। এ ছাড়া গত বছরই নতুন নতুন সমরাস্ত্র তৈরির ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন কিম। ওই সময় সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে পাঁচ বছরের একটি পরিকল্পনার ঘোষণা দেন তিনি, যার মধ্যে ছিল ছোট আকারের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি। এরপরই তিনি পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি এগিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পিয়ংইয়ংয়ের সাম্প্রতিক পরীক্ষাগুলো কিমে প্রতিশ্রুতির একটি অংশ।

অস্ত্র পরীক্ষার জেরে উত্তর কোরিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে পশ্চিমারা। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কমেনি দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা। নিষেধাজ্ঞাগুলো কমাতে আলোচনা করে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। তবে এতে কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং আলোচনা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। বৈশ্বিক বিভিন্ন যৌথ কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে পড়ছে পিয়ংইয়ং।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলছেন, উত্তর কোরিয়ার ওপর অর্পিত নিষেধাজ্ঞাগুলো তখনই শিথিল করা হবে, যখন তারা সব পারমাণবিক অস্ত্র পরিত্যাগে রাজি হবে। ইতিমধ্যে ওয়াশিংটন ও সিউল কোরীয় উপদ্বীপে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধির বিষয়ে একযোগে কাজ করতে একমত হয়েছে। তারা গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে সামরিক মহড়াও চালাচ্ছে। তবে এই মহড়ার সমালোচনা করে পিয়ংইয়ং উল্টো নিজেদের শক্তি দেখিয়ে উসকানি তৈরি করছে। উত্তর কোরিয়া গত মাসে নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে একটি আইন পাস করেছে। দেশটির শীর্ষনেতা কিম এ সিদ্ধান্তকে ‘অপরিবর্তনযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন এবং পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে কোনো আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া মনে করে, উত্তর কোরিয়া নিজেদের সপ্তম পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছে। এটি পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত রাজনৈতিক মুহূর্তের খোঁজে রয়েছে তারা। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের সময় তারা এ পরীক্ষা চালাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিষয়:

সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে তুরস্ক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ‘সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতির’ জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তুরস্ক। এছাড়া তুরস্ক ইরানের সঙ্গে সীমান্তের নিরাপত্তা বাড়িয়েছে দেশটি। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি গোপন সূত্রের বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, এরই মধ্যে তুরস্ক-ইরান সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ইরান থেকে তুরস্কে শরণার্থীদের ‘অস্বাভাবিক’ প্রবাহ দেখা যায়নি।

রয়টার্সকে একটি সূত্র জানিয়েছে, তুরস্ক স্থানীয়ভাবে বহুস্তর বিশিষ্ট উৎপাদিত রাডার ও অস্ত্রব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্য দিয়ে সমন্বিত বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তৈরি করছে দেশটি; যেন সম্ভাব্য যুদ্ধ প্রস্তুতি উচ্চ স্তরে রাখা।

সূত্র আরও জানায়, গত শুক্রবার ইরানে যখন ইসরায়েল আক্রমণ শুরু করে, তখন তুরস্কের ‘দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল’ বিমানগুলো আকাশে টহল দিয়েছিল। কারণ, যদি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান আকাশসীমা লঙ্ঘন করে, সঙ্গে সঙ্গে যেন জবাব দেওয়া যায়।

ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর তুরস্ক এখন পর্যন্ত সরাসরি জড়ায়নি। তবে আঙ্কারা আগেই জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে যেকোনো যুদ্ধ তাদের নিরাপত্তা ও অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। এ কারণে সীমান্ত নজরদারি ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে।

চলমান উত্তেজনায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। এই যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির প্রতিনের সঙ্গে ফোনে আলোচনা করেছেন।


ইসরায়েলের সেনা ও গোয়েন্দা স্থাপনা ছিল হামলার লক্ষ্য

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ইরান ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে। এ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইসরায়েলের সরোকা ইসরায়েলের দাবি, ইরান ইসরায়েলের হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের এমন দাবির জবাব দিয়েছে ইরান। গতকাল বৃহস্পতিবার তেহরান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানি কর্মকর্তা ও মিডিয়া সূত্র দক্ষিণ ইসরায়েলের একটি হাসপাতালে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি অস্বীকার করেছে। ইসরায়েলি মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের জবাবে ইরান এ দাবি করেছে। ইসরায়েলের দাবি, ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েল-অধিকৃত অঞ্চলের বিয়েরশেবায় অবস্থিত সরোকা মেডিকেল সেন্টারে আঘাত হেনেছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরোকা হাসপাতালটি গাজায় অভিযানের সময় আহত ইসরায়েলি সৈন্যদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে ইরানি সূত্রগুলো জানিয়েছে, হাসপাতালটি হামলার লক্ষ্য ছিল না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরোকা হাসপাতালটি ইসরায়েলের দুটি প্রধান সামরিক স্থাপনার মাঝে অবস্থিত। এগুলো হলো আইডিএফের প্রধান গোয়েন্দা সদর দপ্তর এবং সেন্ট্রাল কমান্ড সেন্টার। এ দুটি স্থাপনায় গাভ-ইয়াম প্রযুক্তি পার্কে অবস্থিত। এই স্থাপনাগুলো ইসরায়েলের সাইবার অপারেশন, ডিজিটাল কমান্ড সিস্টেম এবং সামরিক গোয়েন্দা অবকাঠামোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।

ইরানি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাছাকাছি বিস্ফোরণের শকওয়েভ থেকে হাসপাতালটি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এটি সরাসরি আঘাতপ্রাপ্ত হয়নি। ইরানের দাবি, সামরিক কমান্ড নেটওয়ার্কের ক্ষতি থেকে দৃষ্টি সরাতে এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে বেসামরিক অবকাঠামোর সঙ্গে মিথ্যাভাবে যুক্ত করে মানসিক যুদ্ধে চালনায় লিপ্ত রয়েছে ইসরায়েল।

ইরানি সূত্রগুলো বলেছে, এই মিথ্যা বর্ণনা একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রচারণার অংশ, যার লক্ষ্য ইসরায়েলের সামরিক ইমেজ পরিশুদ্ধ করা এবং এর গোয়েন্দা অবকাঠামোর ওপর আঘাতের মাত্রা গোপন করা।

ইসরায়েলের হাসপাতালে ইরানের হামলায় আহত ৬৫

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) অভিযোগ, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অন্তত ‘কয়েক ডজন’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। তার মধ্যে কয়েকটি সাধারণ নাগরিকদের বসতিতেও পড়েছে বলে অভিযোগ ইসরায়েলের। ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত অন্তত ৬৫ জন আহত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ইরান-ইসরায়েল সংঘাত গড়িয়েছে সপ্তম দিনে। বৃহস্পতিবার সকালে ইরানের আরেক পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। প্রত্যুত্তরে এবার ইসরায়েলের দিকেও ধেয়ে এল একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত অন্তত ৬৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ইরানের আরাক পরমাণুকেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী। এরপর থেকেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লাগাতার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে ইরান। ইসরায়েলের দক্ষিণে বেরশেবা শহরের অন্যতম প্রধান হাসপাতাল ‘সোরোকা’-য় হামলা চালিয়েছে ইরান। সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানায়, হামলা হয়েছে তেলআবিবের স্টক এক্সচেঞ্চের বহুতল ভবনেও।

এছাড়াও, দেশের ঠিক মধ্যভাগে জনবসতি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, সকালে ইরান বেরশেবার সোরোকা হাসপাতাল লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। হামলা হয়েছে লোকালয় লক্ষ্য করেও। ওদের কড়া জবাব দেব। তেহরানকে এর মূল্য চোকাতেই হবে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) অভিযোগ, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অন্তত ‘কয়েক ডজন’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। তার মধ্যে কয়েকটি সাধারণ নাগরিকদের বসতি এলাকাতেও পড়েছে বলে অভিযোগ ইসরায়েলের।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, সকাল থেকেই তেলআবিবে আছড়ে পড়তে শুরু করে ইরানের একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র। সোরোকার হাসপাতালে হামলারও বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে বিস্ফোরণের পর গলগল করে কালো ধোঁয়া বেরোতে দেখা গিয়েছে হাসপাতাল থেকে। ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা বিভাগ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় অন্তত ৬৫ জন আহত হয়েছে।

যদিও ইরানের সংবাদ সংস্থা আইএনআরএর দাবি, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ইসরায়েলি সেনার কমান্ড অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স (আইডিএফ সি৪আই) সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছে ইরানি বাহিনী। গাভ-ইয়ামে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দাদের একটি দফতরেও হামলা হয়েছে। তবে যে হাসপাতালে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ, তাতে সামান্যই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মূলত সামরিক ও গোয়েন্দা দপ্তর লক্ষ্য করে হামলা চালানো।

খামেনিকে নির্মূল করাই যুদ্ধের মূল লক্ষ্য

ইরানের হামলার মূল লক্ষ্য জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটি জানিয়েছে, এ যুদ্ধের মূল লক্ষ্য ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে নির্মূল করা। গতকাল বৃহস্পতিবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে সরাসরি হত্যার কথা উল্লেখ করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। তিনি বলেন, (খামেনি)র মতো একজন ব্যক্তি সবসময় তার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ইসরায়েলকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে কাজ করে এসেছেন। যে ব্যক্তি আমাদের ওপর হামলা করতে প্রস্তুত, তাকে বেঁচে থাকতে দেওয়া উচিত নয়।

কাটজ বলেন, এই ব্যক্তিকে থামানো, তাকে নির্মূল করার বিষয়টি এই প্রচারণার অংশ। আমরা এখন তার ভূমিকা বুঝতে পেরেছি, কারণ আগে তিনি ইসরায়েলের ধ্বংসের কথা বলতেন। এর আগে গত শুক্রবার ইরানে হামলা শুরুর পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটি ইংরেজি ভিডিওতে ইরানি জনগণের উদ্দেশে বলেন, তিনি আশা করেন এই সামরিক অভিযান ‘আপনাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথ প্রশস্ত করবে।’

গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খামেনির কথা উল্লেখ করে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে করেন। সেখানে তিনি বলেন, আমরা তাকে (হত্যা!) করতে যাচ্ছি না, অন্তত এখন নয়… আমাদের ধৈর্য ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।


যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে ‘হতাশ’ মালালা, ক্ষোভ প্রকাশ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

পাকিস্তানের নোবেলবিজয়ী অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাই গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে বিপুল প্রভাব ও ক্ষমতা রয়েছে, তা তারা মানব জীবন রক্ষা, শান্তি আনার কিংবা স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ব্যবহার করেনি — এটা অত্যন্ত হতাশাজনক। ‘ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস উইমেন ইন বিজনেস সামিটে’ তিনি এসব কথা বলেন।

গাজায় চলমান সহিংসতা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরও জোরাল ভূমিকার আহ্বান জানিয়ে মালালা বলেন, আমি আশা করি যুক্তরাষ্ট্র গাজায় সংঘটিত গণহত্যা বন্ধে, যুদ্ধবিরতির পক্ষে এবং মানবিক সহায়তা প্রবাহ নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

গাজা ইস্যুতে দীর্ঘদিন চুপ থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে মালালা বলেন, এ অভিযোগগুলো তথ্যভিত্তিক নয়। জনসমক্ষে থাকা ব্যক্তিদের সবসময়ই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য যাচাই না করে অভিযোগ তোলেন।

তিনি জানান, আমি ২০১৪ সাল থেকে গাজা বিষয়ে কথা বলে আসছি। আমি বিভিন্ন সময় এই সংকট নিয়ে সোচ্চার হয়েছি, মানবিক সহায়তায় কাজ করেছি।

মালালা জানান, তিনি ২০১৪, ২০২১ এবং ২০২৩ সালে গাজার শিশুদের জন্য স্কুল নির্মাণে অনুদান দিয়েছেন এবং বর্তমানে শিশুদের সহায়তা করা অনেক সংগঠনকে জরুরি অনুদান দিয়েছেন।

তালেবান-শাসিত আফগানিস্তানে নারীদের প্রতি নির্যাতন নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মালালা বলেন, আফগান নারীরা যে দুঃসহ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তা অমানবিক। আমি যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানাই, তারা যেন নারীদের অধিকারে আরও সোচ্চার হয় এবং তালেবান সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ায়।

সামিটে বক্তব্যের শেষভাগে মালালা বলেন, আমরা সবাই একই কণ্ঠস্বর — মানবাধিকারের, শান্তির এবং ন্যায়ের পক্ষে। আমরা সবাই একই লক্ষ্যের জন্য লড়ছি।


আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে সশস্ত্র রোহিঙ্গারা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

মিয়ানমারের আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কক্সবাজারের আশ্রয় শিবির থেকে সদস্য সংগ্রহ করছে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। এই পথের আগালে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে পড়বে।

গতকাল বুধবার প্রকাশিত আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের একটি প্রতিবেদনে এসব কথা ওঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার রোহিঙ্গা বিদ্রোহের ঝুঁকি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে শরণার্থীদের মধ্যে থেকে সশস্ত্র গোষ্ঠীর জন্য সদস্য সংগ্রহের ঝুঁকি এবং তা প্রশমনে পরামর্শ তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে আরাকান আর্মির ক্রমাগত অগ্রগতির প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সশস্ত্র সংগঠনগুলো নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে সহিংসতায় জড়িত থাকা এই গোষ্ঠীগুলো গত নভেম্বরে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে একযোগে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। সহিংসতা কিছুটা কমলেও সদস্য সংগ্রহ বেড়েছে, বিশেষ করে ধর্মীয় আহ্বানকে কেন্দ্র করে, যেহেতু আরাকান আর্মির পেছনে রাখাইনের বৌদ্ধ জনগণের সমর্থন রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত প্রায় পুরোই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার প্রচেষ্টা নিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। তবে রোহিঙ্গারা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনে নামলে আলোচনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে বাড়তি অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের নিজেদের পক্ষে কাজে লাগাতে চেয়েছিল। যদিও অতীতে এই গোষ্ঠীগুলো সেনাবাহিনীর বিরোধিতা করেছিল, এবার আরাকান আর্মিকে ঠেকাতে তারা ভিন্ন অবস্থান নেয়। তবে সেনাবাহিনীর এই কৌশল শেষ পর্যন্ত বড় কোনো সাফল্য বয়ে আনতে পারেনি।

বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। শরণার্থী শিবিরে সহিংসতা হ্রাস করে ঐক্য প্রচেষ্টায় সমর্থন রয়েছে বাংলাদেশের। পাশাপাশি, রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে তাদের প্রত্যাবাসনে আরাকান আর্মির ওপর চাপ প্রয়োগের পরিকল্পনা আছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে যে এলাকাগুলো থেকে রোহিঙ্গাদের উৎখাত করা হয়েছিল, সে স্থানগুলো এখন আরাকান আর্মির দখলে রয়েছে। এদিকে জান্তা সরকারের বিরোধিতার জন্য সাধারণ জনগণের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে আরাকান আর্মির পিছে। রোহিঙ্গারা তাদের বিরোধিতা করলে বরং শরণার্থীদের প্রতি মিয়ানমারে আরও বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে। ক্রাইসিস গ্রুপের মতে, বাংলাদেশের উচিত আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো, রাখাইনে বাণিজ্য ও সহায়তা জোরদার করা এবং শিবিরে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব কমানো। এতে সীমান্তে স্থিতিশীলতা আসবে এবং রোহিঙ্গা নাগরিক সমাজ গড়ে উঠবে। আরাকান আর্মির উচিত রোহিঙ্গাদের আস্থায় আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং প্রমাণ করা যে তারা সবাইকে নিয়ে শাসন চালাতে সক্ষম। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র তাদের বৈদেশিক সহায়তা কমাচ্ছে, তাই আন্তর্জাতিক দাতাদের উচিত বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবিরে সহায়তা আরও বাড়ানো।


প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র সংকটে ইসরায়েল

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
    * ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ চান ট্রাম্প * আত্মসমর্পণ করবে না ইরান, চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ বা শান্তি মানবে না: খামেনি * তেহরানের কাছে মোসাদের গোপন ঘাঁটি ধ্বংসের দাবি * ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা না করতে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করল রাশিয়া

ইসরায়েল বর্তমানে প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ‘অ্যারো ইন্টারসেপ্টর’-এর সংকটে রয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। গতকাল বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ইরান থেকে নিক্ষিপ্ত দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার সক্ষমতা এতে হুমকির মুখে পড়তে পারে।

পত্রিকাটি যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানায়, ওয়াশিংটন বেশ কয়েক মাস ধরেই ইসরায়েলের এই সক্ষমতা সংকট সম্পর্কে অবগত। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথে অতিরিক্ত প্রতিরক্ষাপ্রণালী মোতায়েন করছে।

তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাদের গোলাবারুদ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলের দিকে ‘হাইপারসনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র ফাত্তাহ-১ নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)।

এক বিবৃতিতে আইআরজিসি বলেছে, ‘তাদের শক্তিশালী ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ঢাল ভেঙে দেশটির আকাশের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হয়েছে।’

গত শুক্রবার ভোররাতে ইসরায়েল হঠাৎ ইরানে হামলা চালায়। ওই হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হন। এ ছাড়া নারী–শিশুসহ বহু সাধারণ মানুষ নিহত হন।

ইসরায়েলি আগ্রাসনের জবাবে ইরান আত্মরক্ষার্থে বড় পরিসরের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। এসব হামলার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড।

তেহরান, হাইফা ও অন্যান্য শহরে থাকা সামরিক ও শিল্প স্থাপনায় এ হামলা চালানো হয়।

সিএনএন জানিয়েছে, ইরানের আধা-সরকারি মেহের সংবাদ সংস্থা দাবি করেছে- ইরান ইসরায়েলের দিকে ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তবে এই দাবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি।

২০২৩ সালে ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করে ইরান। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ক্ষেপণাস্ত্রটির নামকরণ করেন।

আইআরজিসি এই ক্ষেপণাস্ত্রকে ‘ইসরায়েল বিধ্বংসী’ বলে উল্লেখ করেছে। এটি উন্মোচনের সময় ইরানের রাজধানী তেহরানে একটি বিশাল ব্যানার টাঙানো হয়েছিল, যেখানে হিব্রু ভাষায় লেখা ছিল: ‘৪০০ সেকেন্ডে তেল আবিবে।’

অন্যদিকে গত কয়েক ঘণ্টায় দেশটির বিমানবাহিনীর ৫০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান ইরানের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ— ‘সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র’ এবং দেশটির ‘বেশ কয়েকটি অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র’ লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৫ দিনে ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর গোলাবর্ষণ এবং ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৫৮৫ জন। এছাড়াও এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৩২৬ জন নাগরিক।

এদিকে গতকাল বুধবার ইরানের রাজধানী তেহরানে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তেহরান থেকে এএফপির সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, তেহরানের পূর্বাঞ্চলে কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে।

তেহরানের কাছে মোসাদের গোপন ঘাঁটি ধ্বংসের দাবি

ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী তেহরানের উপকণ্ঠে একটি তিন তলা বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ইসরায়েলের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ পরিচালিত একটি গোপন ড্রোন ও বিস্ফোরক তৈরির কারখানার খোঁজ পেয়েছে।

ইরানের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল প্রেস টিভির এক খবরে এমনটা দাবি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, গত রোববার ইরানি পুলিশ একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, সেখানে ড্রোনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, যেমন পাখা ও কাঠামোর অংশ আর ধাতব সরঞ্জাম রয়েছে। এসব যন্ত্রাংশ ড্রোন তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।

ইরানের সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, ওই বাড়ির ভেতরেই ড্রোন তৈরি হচ্ছিল। সেখানে যন্ত্রাংশ তৈরির সরঞ্জামও জব্দ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ড্রোন কারখানার সন্ধান পাওয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের আগের একটি স্বীকারোক্তি মিলে যায়।

পশ্চিমা গণমাধ্যম অ্যাক্সিওসের এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল, মোসাদ কর্মকর্তারা আট মাস ধরে ইরানে ড্রোন পাচার করছিলেন, যাতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনাগুলোয় হামলা চালানো যায়।

ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ চান ট্রাম্প

ইরানে হামলায় ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি তা বলতে পারি না।’ পরে আবার তিনি বলেন, ‘আমি করতেও পারি, না-ও করতে পারি। কেউ জানে না আমি কী করতে চাই’। গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। খবর বিবিসির

ট্রাম্প বলেন, ইরানের আলোচকরা হোয়াইট হাউসে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে এটা কঠিন। আমি নিশ্চিত নই যে সংঘাত কতটা দীর্ঘ হবে, কারণ ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ধ্বংস হয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘দুটি খুব সাধারণ শব্দ- নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’। ট্রাম্পের দাবি, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির উদ্দেশ্য খারাপ।

এর আগে ট্রাম্প তেহরানের কাছ থেকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের’ দাবি করেছেন। এই মন্তব্যের ফলে ওয়াশিংটন ইসরায়েলের হামলায় যোগ দেবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও জোর দিয়ে বলা হয়েছে এই অভিযানে তাদের কোনও হাত নেই।

সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গত মঙ্গলবার পশ্চিম ইরানে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে কমপক্ষে দুটি হামলা চালিয়েছে।

এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তার বক্তব্যের কয়েকদিন পর, ট্রাম্প ইসরায়েলকে শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বলেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার পথ পরিবর্তন করেছেন বলে মনে হচ্ছে।

ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ধৈর্য কমে আসছে, তবে ‘আপাতত’ ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যার কোনো উদ্দেশ্য তাদের নেই। তিনি ইরানের প্রতি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। খামেনি ইরানের কোথায় আছেন সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তথ্য আছে বলেও জানান ট্রাম্প। প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, খামেনি ‘আপাতত’ নিরাপদ আছেন।

ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে আরো বলেছেন, ‘আমরা চাই না, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর কিংবা আমেরিকার সেনাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হোক।

আত্মসমর্পণ করবে না ইরান: খামেনি

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেবে ইরান। দেশটি দৃঢ় থাকবে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া শান্তির বিরুদ্ধেও। তিনি আরও বলেন, ইরান কারও কাছে আত্মসমর্পণ করবে না।

গতকাল বুধবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত দেওয়া ভাষণে খামেনি এ কথা বলেন। দেশটির সংবাদ সংস্থা তাসনিমের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা এ কথা জানিয়েছে।

খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের কথাও উল্লেখ করে বলেন, যারা ইরান ও এর ইতিহাস জানে তারা জানে, ইরানিরা হুমকির ভাষার প্রতি ভালো সাড়া দেয় না। আর আমেরিকানদের জানা উচিত, যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ নিঃসন্দেহে অপ্রতিরোধ্য পরিণতি বয়ে আনবে।

ট্রাম্পকে সতর্ক করে তিনি বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলি হামলায় অংশ নেয়, তাহলে ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ হবে।

ইসরায়েলকে সহায়তা না করতে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করল রাশিয়া

বিশ্ব এখন ‘বিপর্যয় থেকে মাত্র কয়েক মিলিমিটার দূরে রয়েছে’ সতর্ক করে দিয়েছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বুধবার মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এই সতর্কতা উচ্চারণ করেন।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রসঙ্গ টেনে মারিয়া জাখারোভা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘বিশ্ব এখন বিপর্যয়ের কিনারায় রয়েছে। ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোয় ইসরায়েলের প্রতিদিনকার হামলার কারণে বিশ্ব এখন ‘বিপর্যয়’ থেকে মাত্র কয়েক মিলিমিটার দূরে রয়েছে।’

এদিকে ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা না দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে রাশিয়া। এমনকি অন্য কোনোভাবেও যেন সহায়তা না করা হয়, সে বিষয়ে জোর দিয়েছে মস্কো।

রাশিয়ার ইন্টারফ্যাক্স সংবাদ সংস্থা অনুসারে, গতকাল বুধবার রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ ইসরায়েলকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দেওয়া বা এমনকি এই ধরনের ‘অনুমানমূলক বিকল্প’ বিবেচনা করার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেন।

তিনি বলেছেন, ‘এটি এমন একটি পদক্ষেপ হবে, যা পুরো পরিস্থিতিকে আমূল অস্থিতিশীল করে তুলবে।’

তেল আবিব ও জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস বন্ধ ঘোষণা

ইসরায়েলের জেরুজালেমে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস গতকাল বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত তিন দিন বন্ধ থাকবে। একই সময় দেশটির রাজধানী তেল আবিবে দূতাবাসের কনস্যুলার কার্যক্রমও স্থগিত থাকবে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

এক বিবৃতিতে মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতের ফলে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি সব মার্কিন কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা তাদের বাসস্থানের ভেতরে এবং কাছাকাছি স্থানে আশ্রয় নেবেন।

তবে ইসরায়েল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার জন্য মার্কিন নাগরিকদের সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে এখনই কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। এদিকে দূতাবাস আরও জানায়, ইসরায়েলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরগুলো বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

এদিকে ইসরায়েলের তেল আবিবের আশেপাশের এলাকাগুলো খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইরানের রেভুলিউশনারি গার্ড।


কাশ্মীর ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের দালালি মানবে না ভারত, ট্রাম্পকে মোদি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

গত মে মাসে চার দিনের সংঘাতের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার ‘কাশ্মীর সমস্যা’ সমাধানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের সঙ্গে তৃতীয় কোনো পক্ষের দালালি কখনোই মানবে না। দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি গত মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বিক্রম মিশ্রি জানান, গত মঙ্গলবার মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে ফোনে কথা হয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী মোদি কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের দীর্ঘদিনের অবস্থান আবারও ট্রাম্পকে মনে করিয়ে দিয়েছেন। তবে ভারতের এমন বক্তব্য নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি হোয়াইট হাউস।

বিক্রম মিশ্রি বলেন, মোদি ট্রাম্পকে ‘পরিষ্কারভাবে’ জানিয়েছেন, সংঘাত চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য চুক্তি বা যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা নিয়ে কোনো পর্যায়েই কোনো আলোচনা হয়নি।

এদিকে ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির পর ভারত ও পাকিস্তান সংঘাত বন্ধ করেছে। তার দাবি, তিনি বাণিজ্য চুক্তিকে চাপ হিসেবে ব্যবহার করে তাদের রাজি করিয়েছেন। তবে পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির বিষয়ে মার্কিন মধ্যস্থতার দাবিকে সমর্থন করলেও ভারত তা অস্বীকার করেছে।

মিশ্রি বলেন, যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনা সরাসরি ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান চ্যানেলের মাধ্যমে হয়েছিল।

এর আগে গত মাসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমি তাদের (ভারত ও পাকিস্তান) বলেছিলাম, আসো, আমরা তোমাদের সঙ্গে ব্যবসা করব। যুদ্ধ বন্ধ করো। যুদ্ধ বন্ধ করো। যদি তোমরা যুদ্ধ বন্ধ করো, আমরা ব্যবসা করব। যদি না করো, আমরা তোমাদের সঙ্গে কোনো ব্যবসা করব না।’

কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। উভয় দেশই পুরো অঞ্চলের দাবি করে, তবে আংশিকভাবে এটি শাসন করে। ভারত কাশ্মীরকে তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। কাশ্মীর ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আলোচনাও বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। ফলে কয়েক দশক ধরে একাধিক দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হলেও কাশ্মীর ইস্যুতে কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি প্রতিবেশী দুই দেশ।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে মার্কিন মধ্যস্থতা ছিল না, ট্রাম্পকে জানিয়েছেন মোদিভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে মার্কিন মধ্যস্থতা ছিল না, ট্রাম্পকে জানিয়েছেন মোদি।

গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে কাশ্মীর ইস্যু। ওই হামলায় ২৫ পর্যটক ও একজন স্থানীয় গাইড নিহত হন। একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে তারা অস্বীকার করে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে; ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে। এর পর থেকে দেশ দুটি একের পর এক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। প্রথমে এটি কূটনৈতিক পর্যায়ে থাকলেও দ্রুত সামরিক সংঘাতের দিকে মোড় নেয়।

পেহেলগাম হামলার জেরে ৬-৭ মে রাতে অপারেশন সিঁদুর নামে একটি অভিযান পরিচালনা করে ভারত। ৭ মে রাতে ভারতের হামলার জবাবে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় পাকিস্তান। ভারতের দাবি, এই অভিযানে তারা পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধ্যুষিত আজাদ কাশ্মীরের ভেতরে ৯টি সন্ত্রাসী আস্তানা লক্ষ্য করে হামলা চালায়, যার মধ্যে লস্কর-ই-তাইয়েবার সদর দপ্তরও ছিল।

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চলমান চার দিনের সংঘাত যখন ভয়াবহ মোড় নিচ্ছিল, তখন আকস্মিকভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০ মে ঘোষণা দেন, পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতির পরই উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘাত বন্ধ হয়।

প্রয়োজনে পাকিস্তানের আরও ভেতরে ঢুকে হামলা চালাবে ভারত।

ট্রুথ সোশ্যালের একটি পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমি তোমাদের দুজনের সঙ্গেই কাজ করব। দেখব হাজার বছরের কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে কোনো সমাধানে আসা যায় কি না।’ প্রসঙ্গত, কাশ্মীর সমস্যা হাজার বছরের নয়। এই সমস্যার শুরু ১৯৪৭ সাল থেকে।

ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছিলেন, এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে হয়েছে এবং প্রায় ‘তিন ডজন দেশ’ এতে জড়িত ছিল। তবে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ভারত বরাবরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ অস্বীকার করেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব নিয়ে ট্রাম্পের প্রকাশ্য বিবৃতি দিল্লির ‘রেড লাইন’ পরীক্ষা করেছে। দিল্লি সব সময় তার পশ্চিমা অংশীদারদের কাছে দাবি করে এসেছে তারা যেন ভারত ও পাকিস্তানকে সমানভাবে বিবেচনা না করে। তারা পশ্চিমা নেতাদের একই সময়ে ভারত ও পাকিস্তান সফর করা থেকেও নিরুৎসাহিত করে। কিন্তু ট্রাম্পের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টে প্রায়শই ভারত ও পাকিস্তানকে সমানভাবে দেখা যায়। অনেকের ধারণা, এটি দিল্লির কূটনৈতিক মহলে কিছুটা অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ওয়াশিংটন ও দিল্লির মধ্যে চলমান বাণিজ্য চুক্তি আলোচনাকে এটি প্রভাবিত করবে কি না, তা বলার সময় এখনো আসেনি।


গুজরাটে বৃষ্টিপাতে ১৮ জনের মৃত্যু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের কিছু অংশে সোমবার থেকে মুষলধারে বৃষ্টিপাতে কমপক্ষে ১৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে। রাজ্যের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আহমেদাবাদ থেকে এএফপি জানায়, রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে বাসিন্দাদের সাহায্য করার জন্য দুর্যোগ সহায়তা দল মোতায়েন করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার রাতে রাজ্য সরকার জানায়, ‘বৃষ্টির কারণে ১৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন, এবং দুর্যোগ সহায়তা দলগুলো নিম্নাঞ্চল থেকে কয়েক ডজন মানুষ উদ্ধার করেছে।’

ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত পালিতানা ও জেসার শহরে গত ২৪ ঘন্টায় ৮৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

রাজ্যের ত্রাণ কমিশনার অলোক কুমার পান্ডে বলেন, ঝড়, বজ্রপাত, প্রতিকূল আবহাওয়া ও কাঠামোগত ধসে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

পান্ডে বলেন, ‘পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত, এবং দ্রুত ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান নিশ্চিত করার জন্য আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয় জোরদার করা হচ্ছে।’

উদ্ধারকৃতদের মধ্যে রয়েছে গাধাদা এলাকার আম বাগানে আটকা পড়া ১৮ জন কৃষি শ্রমিক এবং সুরেন্দ্রনগর জেলার ২২ জন, যেখানে নদীর পানি উপচে পড়ায় তাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে।

১.৪ বিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ ভারত জুড়ে প্রতি বছর বর্ষাকালে আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের কারণে বিপূল সংখ্যক মানুষ প্রাণ হারায়।


ইসরায়েলের পর সবচেয়ে বেশি ইহুদি ইরানে

তাদের নিয়ে ভাবছে না নেতানিয়াহু
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল দাবি করে, ইহুদিদের ব্যাপারে তারা সব সময় অন্তর্ভুক্তিমূলক। দেশটিতে নাগরিকত্ববিষয়ক বিধিবিধানের দুটি প্রধান আইন রয়েছে- ১৯৫০ সালের ‘রিটার্ন-ল’ এবং ১৯৫২ সালের ‘নাগরিকত্ব আইন’।

রিটার্ন-ল অনুযায়ী, বিশ্বের যেকোনো ইহুদি বিনা শর্তে ইসরায়েলে অভিবাসনের অধিকার রাখেন এবং তাৎক্ষণিক ইসরায়েলের নাগরিকত্ব লাভ করতে পারেন। অথচ, ইসরায়েলের পর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ইহুদির বাস যেসব দেশে তার মধ্যে অন্যতম ইরানে। এই দেশেই এখনো নির্বিচারে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি নেতানিয়াহু সরকার।

ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতের উত্তাপে যখন পুরো মধ্যপ্রাচ্য অস্থির, তখন সব মনযোগ ও আলোচনা থেকে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছেন ইরানে বসবাসরত ইহুদিরা। প্রায় ২ হাজার ৭০০ বছরের পুরোনো ইতিহাসের ধারক এই সম্প্রদায়টি আজও টিকে আছে ইরানের মূলধারার সমাজে। অথচ বর্তমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় তাদের অবস্থান ও উদ্বেগ প্রায় অনুপস্থিত।

বর্তমানে আনুমানিক ১৭ হাজার থেকে ২৫ হাজার ইহুদি নাগরিক ইরানে বাস করছেন, যাদের অধিকাংশের বসবাস তেহরান, ইস্পাহান, শিরাজ, হামেদান ও তাবরিজের মতো শহরে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের বাইরে সবচেয়ে বেশি ইহুদি জনগোষ্ঠী রয়েছে ইরানেই। দেশটির জাতীয় সংসদ ‘মজলিশে’ এই সম্প্রদায়ের জন্য একটি আসন সংরক্ষিত আছে।

ইহুদিদের ধর্মীয় ও সামাজিক অবকাঠামোর উপস্থিতিও ইরানে সুপ্রতিষ্ঠিত। রাজধানী তেহরানে ছড়িয়ে রয়েছে অন্তত ৫০টি সিনাগগ (ইহুদিদের প্রার্থনাগৃহ)। ইস্পাহানে আল-আকসা নামে একটি মসজিদের পাশেই রয়েছে একটি বিখ্যাত সিনাগগ। ইরানে ইসলাম ও ইহুদি সম্প্রদায়ের দুই ধর্মীয় স্থাপনার পাশাপাশি অবস্থানকে ধর্মীয় সহাবস্থানের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। তেহরানে ইহুদি সম্প্রদায়ের পরিচালিত একটি হাসপাতালও রয়েছে, যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকেন।

ইরানের আবরিশামি সিনাগগের প্রবীণ রাব্বি ইয়োনেস হামামি লালেহজার এক সাক্ষাৎকারে আল-জাজিরাকে বলেছিলেন, ‘আমরা ২ হাজার ৭০০ বছর ধরে ইরানে বসবাস করছি। পারস্য রাজবংশের সময় থেকেই আমাদের ইতিহাস এই ভূখণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।’

পশ্চিম ইরানের হামেদান শহরে আজও বিদ্যমান রয়েছে এসথার ও তার চাচা মরদখাইয়ের সমাধি, যারা ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক বর্ণনায় পারস্য সম্রাট জার্শিসের (জেরেক্সেস) রাজত্বকালের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। ইতিহাসের বিভিন্ন সন্ধিক্ষণে ইরান ছিল ইহুদিদের নিরাপদ আশ্রয়। স্পেনের ‘ইনকুইজিশন’ বা ধর্মীয় নিপীড়নের সময় বহু ইহুদি ইরানে আশ্রয় পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর তাণ্ডব থেকে পলায়নরত বহু ইহুদি আশ্রয় নিয়েছিলেন তেহরানে।

তবে ইরানে ইহুদিদের ইতিহাস শুধু নিরাপদ সহাবস্থান আর ধর্মীয় সহনশীলতার গল্প নয়- এর মধ্যে রয়েছে কিছু কঠিন অধ্যায়ও। সাফাভি (১৬-১৮শ শতক) ও কাজার (১৯শ শতক) শাসনামলে বহু ইহুদিকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত হওয়ার চাপের মুখে পড়তে হয়েছিল। এই সময়গুলোতে ধর্মীয় স্বাধীনতা অনেকাংশেই সংকুচিত ছিল। আর ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর রাজনৈতিক পরিবেশের আমূল পরিবর্তনে ইরানে ইহুদিদের অবস্থান আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তখন নিরাপত্তা, পরিচয় ও ধর্মীয় অধিকার নিয়ে উদ্বেগ বাড়ে, ফলে বহু ইরানি ইহুদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মতো দেশে স্থানান্তরিত হন।


ইসরায়েলের ‘পক্ষ’ নিল জি-৭ জোটের নেতারা

জি-৭ জোটের নেতারা, সঙ্গে রয়েছেন ইউরোপীয়ান কাউন্সিল ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে তুমুল সংঘাত চলছে। এই ইস্যুতে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্বের উন্নত সাত দেশের জোট জি–৭। কানাডায় চলমান জি-৭ সম্মেলনে জোটটির নেতারা কার্যত ইসরায়েলের পক্ষই নিয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

বিবৃতিতে জোটের নেতারা ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে’ বলে মত দিয়েছেন এবং বলেছেন, আমরা ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি আমাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি। সেইসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরান ‘আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা এবং সন্ত্রাসের প্রধান উৎস’।

বিবৃতিতে জি-৭ এর নেতারা আরও বলেছেন, আমরা ধারাবাহিকভাবে স্পষ্ট করে বলেছি যে ইরান কখনই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে পারবে না। পাশাপাশি ইরান সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন নেতারা।

অর্থনীতিতে শীর্ষ শক্তিধর এই জোটটির সদস্য রাষ্ট্রগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা ও ইতালি। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে। যেকোনো সময় এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।

এদিকে, বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সোমবার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে কিছুক্ষণের জন্য টেলিভিশনটির সম্প্রচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলেও পরে সেটি পুনরায় চালু হয়। হামলায় কর্মীদের অনেকেই নিহত ও আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গত শুক্রবার ভোরে ইরানে আকস্মিক ভয়াবহ হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এর জবাবে ইরানও ইসরায়েলে হামলা চালায়। এরপর থেকে দেশ দুইটির মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। ইসরায়েলি হামলায় ইরানে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দুই শতাধিক। নিহতদের মধ্যে দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, কমান্ডার ও অন্তত ১১ জন পরমাণুবিজ্ঞানী রয়েছেন। অন্যদিকে ইরানি হামলায় ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ২০ ছাড়িয়েছে।

’ইরানের পরমাণু অগ্রগতি নিয়ে ইসরায়েলের দাবি সত্য নয়’

ইরানের পরমাণু অগ্রগতি নিয়ে ইসরায়েলের দাবি সত্য নয় বলে গোয়েন্দা তথ্য মূল্যায়নে জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইরান-ইসরায়েল চরম সংঘাতের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের এই গোয়েন্দা মূল্যায়ন প্রকাশ্যে এসেছে।

ইসরায়েলের দাবি, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছিল, এটি থামাতেই তারা হামলা চালিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান এখনও পারমাণবিক বোমা বানানোর সক্ষমতা অর্জন থেকে অন্তত তিন বছর দূরে আছে। চারটি স্বতন্ত্র সূত্রের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান এখনও সক্রিয়ভাবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে নেই। বরং তারা মূলত পারমাণবিক গবেষণা ও জ্বালানিভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইসরায়েল সম্প্রতি ইরানের নাতাঞ্জ পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়ে কিছুটা ক্ষতি করলেও তেহরানের মূল ফোর্ডো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র এখনো অক্ষত রয়ে গেছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, ফোর্ডোর মতো সুসংরক্ষিত ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানার জন্য ইসরায়েলের পর্যাপ্ত সামর্থ্য নেই—এর জন্য প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বোমা ও বি-২ বোমারু বিমান।

এ প্রসঙ্গে মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য নীতির সাবেক কূটনীতিক ব্রেট ম্যাকগার্ক বলেন, ইসরায়েল এসব স্থাপনা অকার্যকর করতে পারে, তবে পুরোপুরি ধ্বংস করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিকভাবে জড়াতে হবে বা কূটনৈতিকভাবে কোনও সমঝোতা করতে হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। তিনি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা এতে জড়িত নই। জড়াতে হতে পারে, তবে এই মুহূর্তে নই। তিনি জি-৭ সম্মেলনে থাকা অবস্থায় বলেন, দেরি হওয়ার আগেই ইসরায়েল ও ইরানের উচিত সংলাপে বসা।

সামরিক প্রস্তুতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএস নিমিটজ ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ দ্রুত মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করা হচ্ছে। এছাড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সক্ষম কয়েকটি নৌবাহিনীর জাহাজ পূর্ব ভূমধ্যসাগরের দিকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

তবে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ভিন্ন মূল্যায়নের বিষয়টি নতুন নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ ও বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা বহু বছর ধরে ইসরায়েলের সঙ্গে তথ্য ভাগাভাগি করলেও তথ্য বিশ্লেষণে তারা প্রায়ই ভিন্নমত পোষণ করে।

ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড গত মার্চে কংগ্রেসে বলেছিলেন, আমাদের মূল্যায়নে এখনও মনে হয় না যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে বা সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই প্রশ্নে চাপের মুখে পড়া ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফক্স নিউজে বলেন, আমরা যে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছি, তা খুব পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে—ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ইরান অস্ত্র-উপযুক্ততার কাছাকাছি ইউরেনিয়াম মজুত করেছে, যা দিয়ে নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা যেতে পারে। তবে অস্ত্র তৈরির পাশাপাশি ডেলিভারি সিস্টেম বা বহনের প্রযুক্তি তৈরি করাও দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল প্রক্রিয়া।

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ইসরায়েলি হামলা যদি ইরানকে সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত করে, তবে তা হয়তো ইরানকে ভবিষ্যতে অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে—যা এতদিনে তারা নেয়নি। তবে সাম্প্রতিক আঘাতে ইরানের সক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত কাঠামো কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।


ইরানের নাগরিকদের হোয়াটসঅ্যাপ মুছে ফেলার আহ্বান

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

ইরানের নাগরিকদের তাদের স্মার্টফোন থেকে মেসেজিং ও ফোন অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ মুছে ফেলার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার। তেহরানের অভিযোগ, এই অ্যাপ ইসরায়েলে তথ্য পাঠানোর জন্য ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করছে।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিকালে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে নাগরিকদের হোয়াটসঅ্যাপ মুছে ফেলার আহ্বান জানানো হয়। তবে নিজেদের অভিযোগের সপক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থান করেনি তেহরান কর্তৃপক্ষ।

তবে ইরানের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ।

এ ছাড়া ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ওই বার্তা সম্প্রচার হওয়ার পরপরই এক বিবৃতিতে হোয়াটসঅ্যাপ জানায়, যে সময়ে মানুষের এই ধরনের সেবা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, ঠিক সেই সময়ে এ ধরনের ভুয়া প্রতিবেদনের তথ্যকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে আমাদের সেবা বন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

তাদের দাবি, হোয়াটসঅ্যাপে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহৃত হয়। এর মানে হলো কোনো মধ্যবর্তী সেবা প্রদানকারী বার্তাগুলো পড়তে পারে না।

বিবৃতিতে হোয়াটসঅ্যাপ আরও জানায়, তারা ব্যবহারকারীদের সুনির্দিষ্ট অবস্থান অনুসরণ করে না; কাদের মধ্যে বার্তা আদান-প্রদান চলছে, তার তথ্যও রাখে না এবং ব্যক্তিগত বার্তাগুলোও অনুসরণ করে না। কোনো সরকারের কাছে গণহারে তথ্য সরবরাহ করে না বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে হোয়াটস্যাপ।

এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের অর্থ হচ্ছে, বার্তাগুলো এমনভাবে গোপন করা হয় যে কেবল প্রেরক ও প্রাপকই তা পড়তে পারে। কেউ যদি বার্তাটি মাঝপথে ধরে ফেলে, তবে তারা কেবল একটি অসংগঠিত অক্ষরের ঝাঁক দেখতে পাবে যা সঠিক নিরাপত্তা চাবি (Security Key) ছাড়া উদ্ধার (Decode) করা সম্ভব নয়।

তবে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ গ্রেগরি ফ্যালকো বলেন, ‘হোয়াটসঅ্যাপে এমন কিছু মেটাডেটা বোঝা সম্ভব যা এনক্রিপ্ট করা হয় না, এটি ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। এতে বোঝা যায়, মানুষ কীভাবে অ্যাপটি ব্যবহার করছে। এই সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। এ কারণে অনেকেই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে আগ্রহী হন না।’

গ্রেগরি আরও বলেন, “আরেকটি সমস্যা হলো ‘ডেটা সার্বভৌমত্ব’, যেখানে কোনো নির্দিষ্ট দেশের হোয়াটসঅ্যাপের তথ্য হোস্ট করা ডেটা সেন্টারগুলো প্রায়ই সেই দেশে থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, এটি পুরোপুরি সম্ভব যে ইরানের হোয়াটসঅ্যাপ তথ্য ইরানে হোস্ট করা হচ্ছে না।”

প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব অ্যালগরিদম ব্যবহার করে তাদের তথ্য দেশেই সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করা উচিত বলে পরামর্শ দেন তিনি। বৈশ্বিক তথ্য অবকাঠামোর ওপর বিশ্বাস রাখা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে বলেও মন্তব্য করেন এই বিশেষজ্ঞ।

হোয়াটসঅ্যাপের মালিক মেটা, যেটি ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মূল কোম্পানি। ইরানে ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপ অন্যতম জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ ছিল।

এর আগেও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইরান। তবে দেশটির অনেকেই এখনো প্রক্সি ও ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে সেগুলো ব্যবহার করে থাকেন।

২০২২ সালে দেশটিতে নীতি পুলিশের হেফাজতে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ চলাকালে হোয়াটসঅ্যাপ ও গুগল প্লে নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও এই নিষেধাজ্ঞা গত বছরের শেষ দিকে তুলে নেওয়া হয়।


তেহরান থেকে বাংলাদেশিদের স্থানান্তর করা হচ্ছে: পররাষ্ট্র সচিব

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইরানের রাজধানীর পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তাসহ বাংলাদেশিদের তেহরানের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে, ইরান ছেড়ে (বিমানপথে) যাওয়ার কোনো উপায় নেই। আমরা তাদের (বাংলাদেশিদের) নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের নির্দেশনা দিয়েছি।’

মিশনের কাছে থাকা তহবিল দিয়ে স্থানান্তর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তারা তেহরানে ৪০০ বাংলাদেশি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন, কারণ তারা মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছেন।

তবে সিদ্দিক বলেন, প্রত্যাবাসন ও স্থানান্তরের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আর্থিক সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং ইরানের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় আর্থিক সহায়তা পাঠানোর ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধাও রয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এই কারণেই প্রত্যাবাসন ও স্থানান্তরে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

সিদ্দিক বলেন, নিরাপত্তার বিষয়গুলো বিবেচনা করে ইরানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইতোমধ্যেই তার বাসস্থান ছেড়ে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তেহরানে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি রয়েছেন। এর মধ্যে ১০০ জন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

সিদ্দিক বলেন, নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া এবং আবাসনের খরচ তাদের সরকার বহন করবে। এছাড়া যদি কেউ স্থলপথে ইরান ছাড়তে চায় সেক্ষেত্রে তাদের পাকিস্তান বা তুরস্ক হয়ে বাইরে পাঠানো যাবে কিনা তা তারা খতিয়ে দেখবে। তেহরানে বাংলাদেশ মিশনে ৪০ জন কর্মী রয়েছেন।

ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা সকল উপায় অনুসন্ধান করছি।’ তারা ইরানসহ বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সহায়তা চাইছেন। এই বিষয়ে মিশন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

চ্যান্সেরিটি নিরাপদ নয় এবং এর এক কিলোমিটারের মধ্যে সংবেদনশীল অবকাঠামো (তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র) অবস্থিত। গত কয়েকদিনে এটি ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

তেহরানের দুটি যোগাযোগ (ইন্টারনেট) কেন্দ্রের মধ্যে একটি চ্যান্সারির খুব কাছে অবস্থিত।

দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, এই অবকাঠামোগুলোতে যেকোনো আক্রমণের ফলে ক্ষতি হতে পারে।

এদিকে, ইরানে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিক ও বাংলাদেশে তাদের আত্মীয়স্বজনদের জানানো হয়েছে যে, তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরি যোগাযোগের জন্য একটি হটলাইন চালু করেছে।

ইরানে বসবাসকারী সব বাংলাদেশি নাগরিক ও বাংলাদেশে তাদের আত্মীয়স্বজন জরুরি পরিস্থিতিতে দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিম্নলিখিত মোবাইল ফোন নম্বরগুলিতে (হোয়াটসঅ্যাপ সহ) সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। বাংলাদেশ দূতাবাস, তেহরান হটলাইন: +৯৮৯৯০৮৫৭৭৩৬৮ ও +৯৮৯১২২০৬৫৭৪৫ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা হটলাইন: +৮৮০১৭১২০১২৮৪৭

ইরানে বসবাসকারী বাংলাদেশির সংখ্যা ২০০০ এরও কম এবং তাদের অনেকেই সেখানে বিয়ে করেছেন।


ইসরায়েল-ইরান সংঘাত তীব্রতর হচ্ছে পাল্টাপাল্টি আঘাত

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের ভবনে আগুন। কাজ করছে দমকল বাহিনী ও উদ্ধারকর্মীরা।  ছবি: সংগৃহীত 
আপডেটেড ১৭ জুন, ২০২৫ ১৩:৪৫
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘাত ক্রমশই তীব্রতর হচ্ছে। হামলা ও পাল্টা হামলা যেন এক মুহূর্তের জন্যও থেমে নেই। রাতভর দুই পক্ষই নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে থাকে। এতে বেসামরিক লোকজন নিহত ও আহত হচ্ছেন।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরএনএ জানিয়েছে, পশ্চিম ইরানের কেরমানশাহ শহরে ফারাবি হাসপাতাল ও মেডিকেল সেন্টারকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এর ফলে হাসপাতালটি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে আইআরএনএ জানায়, স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে ইহুদিবাদী সরকার ফারাবি হাসপাতাল ও মেডিকেল সেন্টার এবং আশেপাশের ভবনগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই হামলার পর ফারাবি হাসপাতালের বিভিন্ন অংশে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।

ছবিতে দেখা গেছে, হাসপাতালের ভেতরে রক্তাক্ত মেঝেতে ভাঙা কাঁচ এবং ধ্বংসাবশেষে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

এছাড়া ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। কিছুক্ষণ আগে এই হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সংক্ষেপে প্রচারিত ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বর্তমানে ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু।’ হামলার বিস্তারিত বা ক্ষয়ক্ষতির তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ধ্বংস করার ঘোষণা দিয়ে ইসরায়েল যে হামলাগুলো চালাচ্ছে, তার ফলে চার দিনে তেহরানে কমপক্ষে ২২৪ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৯০ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক।

এদিকে গতকাল সোমবার ইরান ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালিয়েছে। গতকাল সকালে চালানো ইরানের হামলাকে বলা হচ্ছে এ পর্যন্ত চালানো হামলার মধ্যে সবচেয়ে তীব্র এবং বড় আকারের। ইরানের সর্বশেষ এ হামলায় অন্তত ৮ জন নিহত এবং বহু আহত হয়েছেন।

চলমান পরিস্থিতি ‘নিরাপদে’ থাকতে অভ্যস্ত তেল আবিবের বাসিন্দাদের এক নজিরবিহীন আতঙ্ক ও উদ্বেগে দিন কাটাতে বাধ্য করেছে। গতকাল সিএনএনের প্রতিবেদনে ইসরায়েলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর তেল আবিবের এই চিত্র ফুটে উঠেছে।

সর্বত্র বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি লক্ষ্য করেন সিএনএনের জেরুজালেম সংবাদদাতা জেরেমি ডায়মন্ড। জেরেমি জানান, তিনি তেল আবিবের রাস্তাগুলোতে ভেঙে পড়া স্থাপনা ও অন্যান্য আবর্জনা দেখতে পেয়েছেন। একটি অবস্থানে চারটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পর সেখানে উদ্ধারকারী দল ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ধ্বংসস্তূপের ভেতর আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে ব্যস্ত ছিলেন।

এ সময় এক নারী জানান, ঘরের বেসমেন্টে লুকিয়ে থেকে প্রাণে বেঁচে গেছেন তিনি ও তার পরিবার। তবে মাটির নিচের বেসমেন্টে থেকেও ‘ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রভাব’ টের পাওয়ার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন ওই নারী।

তিনি আরও বলেন, ‘পোড়া ধোঁয়ার গন্ধ পাচ্ছিলাম…আমি টি-শার্ট দিয়ে নিজের নাক ঢেকে রাখতে বাধ্য হই। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে খেয়াল রাখছিলাম যাতে নিঃশ্বাসের সঙ্গে ওই ধোঁয়া ফুসফুসে ঢুকে না যায়।’

জানা গেছে, ইসরায়েলের উপর সর্বশেষ ইরানি হামলায় নিহত আটজনের মধ্যে দুইজন নারী। তিনজন পুরুষ এবং উত্তরাঞ্চলীয় হাইফা শহরে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আরও তিনজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, সোমবার ইরানের সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের কয়েকটি স্থান ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার দমকল বাহিনী জানিয়েছে, ভূমধ্যসাগর উপকূলে একটি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

সাধারণ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার ঠিক পরপরই সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, হোমফ্রন্ট কমান্ড সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিমগুলোকে ইসরায়েলের এসব ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে পাঠানো হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস বলেছে, উদ্ধারকর্মীরা উপকূলবর্তী একটি ভবনের দিকে যাচ্ছেন, যেটি সরাসরি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।

ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা, মাগেন ডেভিড আদম- এমডিএ একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে তাদের দল উপকূলীয় শহর হাইফাতে মোতায়েন রয়েছে এবং সেখানে কয়েকটি গাড়িতে আগুন লেগেছে এবং একটি আবাসিক ভবনের সামনের অংশ বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।

ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ডস কর্পসের (আইআরজিসি) একজন সিনিয়র কমান্ডার বলেছেন, অপারেশন ‘ট্রু প্রমিজ ৩’-এর মাধ্যমে ইসরায়েলি শাসনব্যবস্থার ওপর যে ক্ষতি হয়েছে, তা শাসকগোষ্ঠীর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি।

গতকাল সোমবার মেহের নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, এক সাক্ষাৎকারে আইআরজিসির রাজনৈতিকবিষয়ক ডেপুটি কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াদোল্লাহ জাভানি বলেন, শত্রুদের প্রাথমিক আক্রমণের প্রায় ২০ ঘণ্টা পর অপারেশন ‘ট্রু প্রমিজ ৩’ পরিচালিত হয়, যখন ইহুদিবাদী সরকার প্রতিরক্ষামূলক প্রস্তুতির শীর্ষে ছিল। ইরানের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার পূর্বাভাস পেয়ে তারা তাদের সমস্ত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করে এবং এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে।

সংঘাত বন্ধে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত পুতিন-এরদোয়ান

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি বন্ধে মধ্যস্থতা করার আগ্রহ দেখিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইপ এরদোয়ান। উভয়ই আলাদাভাবে জানিয়েছেন, সংঘাত বন্ধের লক্ষ্যে তারা মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত রয়েছেন।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‌‘সংঘাত নিরসনের জন্য রাশিয়ার আগের প্রস্তাব এখনও বহাল রয়েছে। যদিও পরিস্থিতি এখন আরও জটিল হয়ে পড়েছে।’

সমস্যার সমাধানে রাশিয়া বিবাদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলেও জানিয়েছে ক্রেমলিন।

এদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল সোমবার রেচেপ তাইপ এরদোয়ান ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন।

ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের অবসান ঘটাতে তুরস্ক মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনে প্রস্তুত বলে ইরানকে জানিয়েছেন এরদোয়ান।

তেহরান থেকে সরে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ

দখলদার ইসরায়েলের হামলার জেরে ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে সরে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, তেহরানের পেট্রোল স্টেশনগুলোতে লম্বা লাইন তৈরি হয়েছে। অনেক মানুষ শহর ছেড়ে আরও প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

কিন্তু তেহরান থেকে বের হওয়ার রাস্তায় ব্যাপক ট্রাফিক জ্যাম থাকায় অনেকেই যেতে পারেননি।

তেহরান থেকে অন্য একটি প্রদেশে চলে যাওয়া এক ব্যক্তি বিবিসি পার্সিয়ানকে বলেছেন, ‘আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না আমি এখন যুদ্ধক্ষেত্রে আছি। আমি জানি না কখন আমি এর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই যুদ্ধ আমার যুদ্ধ নয়। আমি অন্য পক্ষেরও না। আমি শুধুমাত্র আমার পরিবারকে নিয়ে বাঁচতে চাই।’

অপর একজন বলেছেন, ‘কোনো না কোনোভাবে সবাই তেহরান থেকে পালানোর চেষ্টা করছে।’

আরেকজন বলেছেন, ‘তেহরান সত্যিই নিরাপদ নয়। ইসরায়েলি হামলা সম্পর্কে আমরা সরকার থেকে কোনো সতর্কতা বা বার্তা পাই না। আমরা শুধুমাত্র বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই এবং আশা করতে থাকি যেন আমাদের জায়গায় যেন কোনো হামলা না হয়। কিন্তু আমরা কোথায় যাব? কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়।’

বিবিসি পার্সিয়ানের সাংবাদিক গোনচেহ হাবিবিয়াজাদ জানিয়েছেন, তেহরানের বাসিন্দারা বিভিন্ন ম্যাসেজিং অ্যাপে গ্রুপ খুলেছেন। তারা একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় করে রাজধানী ছাড়ার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেছেন, যারা তেহরান ছাড়ার চেষ্টা করছেন তাদের ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলা সম্পর্কেও এসব গ্রুপে সতর্ক করা হচ্ছে।

তেহরানের আকাশসীমা পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের দাবি ইসরায়েলের

ইরানের রাজধানী তেহরানের আকাশসীমায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইডিএফ মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন এই দাবি করেন।

আইডিএফ মুখপাত্র বলেন, আমরা তেহরানের ওপর পূর্ণ বিমান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছি। ইরানের এক-তৃতীয়াংশ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করে দিয়েছি। তাদের বড় অংশের হামলা ব্যাহত করা সম্ভব হয়েছে।

ডেফরিন জানান, গত রোববার রাত ও সোমবার ভোরে ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে দুই ধাপে ৬৫টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ডজনখানেক ড্রোন ছোড়া হয়। এর বেশিরভাগই মাঝপথে ভূপাতিত হলেও তিনটির আঘাতে আটজন নিহত হন।

আইডিএফ মুখপাত্রের দাবি, ইরান ওই রাতে এর দ্বিগুণ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পরিকল্পনা করেছিল। তবে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী আগেভাগেই ইরানের অভ্যন্তরে ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্য করে হামলা চালায়। সেগুলো তখনও ছোড়া হয়নি।

আইডিএফ আরও জানায়, প্রায় ৫০টি যুদ্ধবিমান ও ড্রোন একযোগে অভিযান চালিয়ে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র গুদাম, নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র ও সেনাদের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এর মধ্যে অনেকগুলো নিশানা ছিল ইরানের ইস্পাহান শহরে। সেখানেও শতাধিক সামরিক স্থাপনায় হামলা হয়েছে বলে জানায় ইসরায়েলি বাহিনী।


ইরানে হামলা নিয়ে ট্রাম্প শিবিরে বিভক্তি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

দ্বিতীয় মেয়াদে গত জানুয়ারিতে শপথ নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ‘সব যুদ্ধ বন্ধের’ পক্ষে থাকবেন এবং একজন ‘শান্তির দূত ও ঐক্য প্রতিষ্ঠাকারী’ হিসেবে নিজের উত্তরাধিকার রেখে যাবেন।

কিন্তু মাত্র ছয় মাসের মাথায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছোড়া শুরু হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র। গত শুক্রবার ভোরে ইরানে ইসরায়েলি হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে—এমন এক সর্বাত্মক যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আর শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকেও এটি সংঘাতে টেনে নিতে পারে।

ইসরায়েলের ওই হামলাকে ট্রাম্প প্রায় প্রকাশ্যেই সমর্থন জানিয়েছেন। ফলে নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার তার প্রতিশ্রুতিই এখন সবচেয়ে বড় পরীক্ষার সম্মুখীন।

ট্রাম্পের এ সমর্থন তার অনুগত রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে, যাদের অনেকে ডানপিন্থি রাজনীতিক ও ভাষ্যকার, বিভক্ত করে ফেলেছে। তারা মনে করছেন, ইসরায়েলকে বিনা প্রশ্নে সমর্থন দেওয়া প্রকৃতপক্ষে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির পরিপন্থি। অথচ ট্রাম্পের মূল নির্বাচনী স্লোগান ছিল এটি।

আন্তর্জাতিক কূটনীতিবিষয়ক মার্কিন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কুইন্সি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী সহসভাপতি ত্রিতা পারসি বলেন, ‘আমেরিকা ফার্স্ট ঘাঁটির (এ নীতির সমর্থক গোষ্ঠী) অনেক অংশে এখন প্রবল ক্ষোভ ও বিশ্বাসঘাতকতার অনুভূতি বিরাজ করছে। কারণ, তারা সত্যিকার অর্থেই যুক্তরাষ্ট্রকে আর কোনো যুদ্ধে জড়িয় পড়া বা তাতে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি দেখতে চায় না।’

ত্রিতা পারসি আরও বলেন, ‘তারা (এ গোষ্ঠী) এখন ইসরায়েল নিয়ে ব্যাপক সংশয়ের মধ্যে পড়েছে। তারা মনে করে, এ ধরনের যুদ্ধই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টদের ব্যর্থ ও তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ অগ্রাধিকারগুলো ক্ষুণ্ন করেছে।’

ইরানে গত শুক্রবার ইসরায়েলি হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন রক্ষণশীল নেতাও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যেন এমন কোনো যুদ্ধে না জড়ায়, যা তার স্বার্থ রক্ষা করবে না।

ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ (এমএজিএ) আন্দোলনের বড় মুখ ও প্রভাবশালী রক্ষণশীল ভাষ্যকার টাকার কার্লসন বলেন, ইসরায়েলের বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘যুদ্ধপিপাসু সরকার’কে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন দেওয়া উচিত নয়।

‘ইসরায়েল চাইলে যুদ্ধ করতেই পারে। ওটা স্বাধীন রাষ্ট্র। তারা যা খুশি করতে পারে। কিন্তু সেটা যেন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে না হয়,’ গত শুক্রবার ‘টাকার কার্লসন নেটওয়ার্ক’–এর সকালের নিউজলেটারে লেখা হয়।

নিউজলেটারে আরও বলা হয়, ইরানের সঙ্গে (যুক্তরাষ্ট্রের) যুদ্ধ হলে তা ‘পরবর্তী প্রজন্মের সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিতে পারে’ কিংবা একটি বিদেশি এজেন্ডার নামে হাজার হাজার মার্কিনের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।

‘এ কথা বলাই বাহুল্য যে এ ধরনের কোনো সম্ভাবনাই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক হবে না। কিন্তু অন্য একটি পথও আছে: ইসরায়েলকে বাদ দাও। ওরা নিজেরা যুদ্ধ করুক,’ লেখা হয় নিউজলেটারে।

রিপাবলিকান সিনেটর র‍্যান্ড পলও ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো নিয়ে সতর্ক করেছেন এবং ওয়াশিংটনের যুদ্ধ–সমর্থক রক্ষণশীলদের কঠোর সমালোচনা করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে র‍্যান্ড পল লিখেছেন, ‘মার্কিন জনগণ যে যুদ্ধের শেষ নেই, তার ঘোরবিরোধী এবং ২০২৪ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিয়ে তাঁরা সেটাই দেখিয়েছেন।’

‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অনুরোধ করব যেন তিনি তার অবস্থানে অটল থাকেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকার দেন এবং অন্য দেশের মধ্যে চলা কোনো যুদ্ধে জড়িত না হন,’ বলেন র‍্যান্ড পল।

ডানপন্থী কংগ্রেস সদস্য মারজোরি টেলর গ্রিনও একটি বার্তায় ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি হামলার পক্ষে নন। এর আগেও তিনি ট্রাম্পকে সতর্ক করেছিলেন, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হচ্ছে—এমন ইসরায়েলি অভিযোগের ভিত্তিতে যেন ইরানে হামলা চালানো না হয়।

মারজোরি টেলর এক্সে লেখেন, ‘আমি শান্তির জন্য প্রার্থনা করছি। শান্তি। এটাই আমার আনুষ্ঠানিক অবস্থান।’

যদিও ইসরায়েলের সমর্থকেরা ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকির কথা উল্লেখ করে দেশটিতে হামলাকে যৌক্তিক বলে দাবি করছেন; তেহরান বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এমনকি ট্রাম্পের গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ডও গত মার্চে এক সাক্ষ্যে বলেছেন, ‘আমাদের মূল্যায়ন অনুযায়ী, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না।’

ইসরায়েলের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত রিপাবলিকান কর্মী ও ভাষ্যকার চার্লি কার্কও ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

নিজ পডকাস্টে কার্ক বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমাদের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ ঘাঁটি কোনো যুদ্ধই চায় না। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা চায় না (ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে)। তারা চায় না যুক্তরাষ্ট্র এতে জড়িয়ে পড়ুক।’

গত শুক্রবার ইসরায়েল যখন ইরানের সামরিক ঘাঁটি, পারমাণবিক স্থাপনা ও আবাসিক এলাকায় বোমাবর্ষণ শুরু করে, তার কয়েক ঘণ্টা আগেই ট্রাম্প বলেছিলেন, তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছাতে তিনি আগ্রহী।

গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘বিষয়টা খুবই সহজ। জটিল কিছু না। ইরান পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারে না—এই একটাই কথা। তার বাইরে আমি চাই, তারা সফল হোক। আমরা সাহায্য করব।’

গতকাল রোববার ওমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে ষষ্ঠ দফা আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।

তবে শুক্রবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি আগেই ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে জানতেন। অবশ্য তিনি হামলা চালাতে ইসরায়েলকে নিষেধ করেছিলেন কি না, তা বলেননি। যদিও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইসরায়েলের হামলাকে ‘একতরফা’ বলেই উল্লেখ করেছেন।

অথচ ট্রাম্প ইরানের ওপর হামলার দায় চাপিয়ে বলেন, দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য তার আহ্বানে ইরানের কর্মকর্তাদের সাড়া দেওয়া উচিত ছিল।

ট্রাম্প পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম, তাদের জন্য এটা হবে এমন কিছু, যা তারা কল্পনাও করতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্র তৈরি করে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও জীবনঘাতী সামরিক সরঞ্জাম—অনেক অনেক বেশি। আর ইসরায়েলের কাছে এর অনেক কিছুই আছে, আরও আসছে।’

ত্রিতা পারসি বলেন, শুরুতে ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে সমঝোতা চেয়েছিলেন, কিন্তু তার চরম শর্ত—ইরানকে সম্পূর্ণভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে হবে—আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি করে।

‘এটা অনুমেয় ছিল যে এ চূড়ান্ত দাবির ফলে আলোচনা ব্যর্থ হবে। ইসরায়েল সেই ব্যর্থতাকে কাজে লাগিয়ে ট্রাম্পকে সামরিক পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে,’ বলেন ত্রিতা পারসি।

পারসি আরও বলেন, ‘গত সপ্তাহজুড়ে ট্রাম্প কূটনৈতিক উদ্যোগের পক্ষে কথা বললেও, তিনি জানতেন ইসরায়েলের হামলা আসন্ন। এভাবে তিনি সবাইকে ভুল বার্তা দিয়েছেন যে হামলা হবে আলোচনার পরে। অথচ সেটা আগেই হয়েছে।’

ইসরায়েলের হামলার পর কংগ্রেসে কিছুটা সমালোচনা হলেও বহু রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট এই হামলার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্পের ঘাঁটির একটি বড় অংশ, বিশেষ করে তরুণ ডানপনন্থিরা, ইসরায়েলকে অন্ধ সমর্থনের বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাটো ইনস্টিটিউটের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক জন হফম্যান বলেন, ‘তারা (ডানপন্থিরা) রিপাবলিকান পার্টির একটি উল্লেখযোগ্য অংশের প্রতিনিধিত্ব করে, বিশেষত তরুণদের মধ্যে।’

হফম্যান আরও বলেন, ‘পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপ বলছে, ৫০ বছরের নিচের অর্ধেক রিপাবলিকানই এখন ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এই নিরন্তর যুদ্ধক্লান্তির মধ্যে হাঁপিয়ে উঠেছেন।’

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানে ইসরায়েলি হামলার প্রতি ট্রাম্পের নমনীয় অবস্থান তাঁকে আবারও এমন একটি সংকটের মুখে ফেলেছে, যেটা একসময় বুশ প্রশাসনকে ফেলেছিল।

হফম্যান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং রিপাবলিকান পার্টির অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কামনা করা প্রভাবশালীদের উপস্থিতি, যেমন লিন্ডসে গ্রাহাম—এসবই বড় ঝুঁকির সৃষ্টি করছে।’

‘এ পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলার আশঙ্কা অনেক বেশি,’ বলেন হফম্যান।

সূত্র: আল জাজিরা


banner close