পবিত্র রমজান মাসে ওমরাহ পালনের জন্য আসা মুসল্লিরা যেন নির্বিঘ্নে ও সহজে কাবা চত্বর বা মাতাফ অংশে তাওয়াফের সুযোগ পান তা নিশ্চিতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এ জন্য দর্শনার্থীসহ সাধারণ মুসল্লিদের মাতাফ অংশে প্রবেশে কড়া বিধি-নিষেধ দিয়েছে দুই পবিত্র মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ওমরাহ পালনের জন্য আগতরা ছাড়া অন্য সাধারণ মুসল্লিরা তাদের নামাজ ও ইবাদতের জন্য তাওয়াফের অংশে আসতে পারবেন না।
আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত কাবার দিকে মুখ করে লাখো মুসল্লিরা নামাজ আদায় করে থাকেন। অনেকে নামাজ শেষে সেখানেই বসে ইবাদতে মশগুল থাকেন, এতে ওমরাহ পালনে আগতরা কাবা চত্বরে ঢুকতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। এজন্য কাবা চত্বরের নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত থাকা কর্মীরা শুধু ওমরাহ পালনকারীদের চত্বরে প্রবেশের সুযোগ দেবেন।
বছরের অন্য সময়ের তুলনায় রমজান মাসে কাবায় ওমরাহ করতে আসা মুসলিমসহ দর্শণার্থী ও সাধারণ মুসল্লিদের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এতে ওমরাহ করতে আসা অনেক মুসল্লি কাবা চত্বর বা মাতাফ অংশে তাওয়াফের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। তাদের অনেক সময় বর্ধিত অংশে তাওয়াফ করতে দেখা যায়। তাই বরাবরের মতো এবারও ওমরাহ পালনের জন্য আসা মুসল্লিরা যেন নির্বিঘ্নে ও সহজে ওমরাহ করতে পারেন সেটি নিশ্চিত করতে পবিত্র কাবা চত্বরে সাধারণ মুসল্লিদের প্রবেশে বিধি-নিষেধ দিল সৌদি আরব।
পাকিস্তানে আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩২৭ এ পৌঁছেছে। গতকাল শনিবার প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) এর বরাত দিয়ে ডন অনলাইন এ তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, খাইবার পাখতুনখোয়ার বুনের জেলায় প্রাণহানির সংখ্যা বেশি। গিলগিট-বালতিস্তান এবং আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরে নজিরবিহীন বন্যায় যথাক্রমে কমপক্ষে ১২ জন এবং নয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে, পাশাপাশি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞও ঘটেছে।
গত শুক্রবার খাইবার পাখতুনখোয়ায় ভয়াবহ দৃশ্য দেখা গেছে। ভারী বৃষ্টিপাত এবং মেঘ ভাঙনের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় একদিনে দুই শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে মোহমান্দে ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানের সময় বিধ্বস্ত প্রাদেশিক সরকারের একটি হেলিকপ্টারের পাঁচজন ক্রু সদস্যও রয়েছেন।
পিডিএমএর পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুসারে, প্রদেশে গত ৪৮ ঘন্টায় ২০৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন, ১২০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ৫০ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
বুনেরে ১৮৪ জন, অ্যাবোটাবাদে শাংলায় ৩৬ জন, মানসেহরা ২৩ জন, সোয়াত ২২ জন, বাজাউরে ২১ জন, বটগ্রাম ১৫ জন, লোয়ার দিরে পাঁচজন এবং দুবেতে এক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া গিলগিট-বালতিস্তান এবং আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরে কমপক্ষে ১২ জন এবং নয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
বেসরকারি সংস্থা আল-খিদমত ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ খালিদ সিনহুয়া বলেন, ‘বন্যায় গ্রামগুলো ডুবে যাওয়ায় পুরো পরিবার ভেসে গেছে, অন্যদিকে অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট ভূমিধসের ফলে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।’
পিডিএমএ এএফপিকে জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার এবং নয়টি ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় প্রায় দুই হাজার উদ্ধারকর্মী নিয়োজিত রয়েছেন।
রেসকিউ ১১২২ এর মহাপরিচালক মুহাম্মদ তৈয়ব আবদুল্লাহ ডন ডটকমকে জানিয়েছেন, যেসব এলাকায় অভিযান ‘তীব্র অসুবিধার’ সম্মুখীন হচ্ছে, সেখানে ৮০ জনের একটি বিশেষ উদ্ধার দল গঠন করা হয়েছে।
দাফনের মতো লোকও নেই এক গ্রামে
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বেশন্ত্রি গ্রামে আকস্মিক বন্যার খবর পেয়ে মসজিদের স্থানীয় ইমাম মওলানা আব্দুল সামাদ অন্য গ্রামবাসীর মতো তার পরিবারকেও দ্রুত বাড়ি খালি করার নির্দেশ দেন।
তিনি তখন নফল নামাজ পড়ছিলেন। কিছুক্ষণ পর যখন তিনি বাড়ি ফিরে আসেন, তখন তিনি দেখতে পান আকস্মিক এই বন্যার পানির তোড়ে তার বাড়িসহ অনেকের বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
পাকিস্তানের সরকারি হিসাবে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে গত ৪৮ ঘণ্টায় বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে।
সেখানকার প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৩০৭ জন নিহত এবং ২৩ জন আহত হয়েছেন। পিডিএমএ -এর সর্বশেষ প্রতিবেদনের অনুযায়ী নিহতদের মধ্যে ২৭৯ জন পুরুষ, ১৫ জন নারী এবং ১৩ জন শিশু রয়েছে। আহতদের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ, চার জন নারী এবং দুই জন শিশু রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাত এবং আকস্মিক বন্যার কারণে এখন পর্যন্ত মোট ৭৪টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৬৩টি আংশিক এবং ১১টি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।
এমন দুর্ঘটনা প্রদেশের বিভিন্ন জেলা যেমন সোয়াত, বুনের, বাজাউর, তোরঘর, মানসেহরা, শাঙলা এবং বটগ্রাম। বন্যায় পুরো বাড়ি ভেসে যাওয়ার সময় আব্দুল সামাদের পরিবারের পাঁচজন সদস্য ছিলেন ভেতরে। তারা এখনো নিখোঁজ। কেউ তাদের খবর জানে না।
সেই সময় পীর বাবা সাহেব উপজেলার প্রাক্তন কর্মকর্তা বা তহসিল নাজিম আশফাক আহমদ ইসলামাবাদে ছিলেন। যখন তিনি তার বাড়ি থেকে খবর পান যে বিশাল বন্যা হানা দিতে পারে, তিনি তখনই তার পরিবারকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে যাওয়ার নির্দেশ দেন
কয়েক মিনিটের মধ্যে পরিবারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে গেলে কারও কোনো খোঁজ মেলেনি। এমনকি পুরো গ্রামের কাউকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এই উদ্বেগজনক অবস্থায় তিনি যখন তার গ্রামে পৌঁছান, তখন সর্বত্র কেয়ামতের দৃশ্য দেখা যায়। পুরো গ্রাম ধ্বংসপ্রাপ্ত, বাড়ি-ঘর বিনষ্ট হয়ে গেছে, আহতরা এখানে সেখানে লুটিয়ে পড়ে আছে।
দুই দেশের যৌথ সীমান্ত সংক্রান্ত নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে ভারত সফর করবেন চীনের প্রধান কূটনীতিক। একই সঙ্গে দুই দেশ পাঁচ বছর বন্ধ থাকা সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় শুরু করার সম্ভাবনাও পরীক্ষা করছে।
শনিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব কথা জানিয়েছে। বেইজিং থেকে এএফপি এ সংবাদ জানায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ১৮ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ভারত সফর করবেন এবং চীন-ভারত সীমান্ত ইস্যুতে ২৪তম বিশেষ প্রতিনিধিদলের বৈঠকে যোগ দেবেন।
শীতল ও উচ্চভূমি হিমালয় সীমান্তের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে অতীতে বাণিজ্য সাধারণত সামান্য পরিমাণে হলেও পুনরায় শুরু হওয়া তা প্রতীকী দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালে সীমান্তে সৈন্যদের মধ্যে প্রাণহানিকর সংঘর্ষের পর বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আলোচনা করতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং সোমবার নয়াদিল্লি সফরে আসবেন। গত জুলাই মাসে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্করও বেইজিং সফরে গিয়েছিলেন।
দুইটি বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে কৌশলগত প্রভাব বিস্তারে প্রতিযোগিতা করে আসছে।
তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ব্যবস্থার ফলে সৃষ্ট বিশ্ব বাণিজ্য এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে তারা আটকে থাকা সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের দিকে এগিয়ে গেছে।
কয়েক সপ্তাহে চীনা ও ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন যে দুই দেশ সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় শুরু করার বিষয়ে আলোচনা করছে।
পুনরায় সরাসরি ফ্লাইট চালু করার এবং পর্যটক ভিসা প্রদান সংক্রান্ত চুক্তিগুলো তাদের সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এয়ার কানাডার ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টরা শনিবার থেকে ধর্মঘটে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে শতাধিক ফ্লাইট বাতিল ও এক লাখেরও বেশি যাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
টরন্টো থেকে এএফপি জানায়, এমনকি এর ফলে সংস্থাটির পুরো সেবা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
এয়ার কানাডার ১০ হাজার ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টের প্রতিনিধিত্বকারী কানাডিয়ান ইউনিয়ন অফ পাবলিক এমপ্লয়িজ (সিইউপিই) বুধবার ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘটের নোটিশ দেওয়ার পর স্থানীয় সময় রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ধর্মঘটের আইনি অবস্থানে রয়েছে।
গণমাধ্যম সিবিসি জানিয়েছে, শেষ মুহূর্তে সমঝোতা না হলে শ্রমিক আন্দোলন ভোর ১টার দিকে শুরু হতে পারে।
প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার যাত্রী পরিবহনকারী এয়ার কানাডা জানিয়েছে, সম্ভাব্য ধর্মঘটের আগে তারা ধীরে ধীরে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেবে। শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত সংস্থাটি ৬২৩টি ফ্লাইট বাতিল করেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন এক লাখের বেশি যাত্রী।
ইউনিয়নের দাবি, বেতন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বোর্ডিং প্রক্রিয়াসহ সমস্ত গ্রাউন্ড কাজের জন্যও যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস-এর প্রধান রাফায়েল গোমেজ এএফপিকে বলেন, সারা বিশ্বেই সাধারণত আকাশপথে কাটানো সময়ের ভিত্তিতেই ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টদের বেতন দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ইউনিয়ন এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে একটি কার্যকর প্রচার চালিয়েছে, যা জনসাধারণের মনে এক ধরনের বৈষম্যের ধারণা তৈরি করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘একজন সাধারণ যাত্রী যিনি বিমানে যাত্রী পরিবহণের ব্যবসা নিয়ে তেমন কিছু জানেন না তিনি ভাবতে পারেন, ‘আমি বোর্ডিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছি, ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্ট সাহায্য করছে, কিন্তু তারা এই কাজে পয়সা পাচ্ছেন না। এটা অবশ্যই সবার সামনে আনার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
এয়ার কানাডা বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তাদের সর্বশেষ প্রস্তাবের বিস্তারিত জানিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে প্রস্তাবিত শর্ত অনুযায়ী ২০২৭ সালের মধ্যে একজন সিনিয়র ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট গড়ে কানাডিয়ান ৮৭ হাজার ডলার (মার্কিন ৬৫ হাজার) আয় করবেন।
সিইউপিই বলেছে, এই প্রস্তাব ‘মূল্যস্ফীতির নিচে এবং বাজারমূল্যের নিচে’।
ইউনিয়ন ফেডারেল সরকার ও এয়ার কানাডার বাকি বিষয়গুলো স্বাধীন সালিশির মাধ্যমে সমাধানের অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করেছে।
গোমেজ বলেন, যদি ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টরা ধর্মঘট করে, তবে তিনি মনে করেন না যে এটি খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে।
তিনি বলেন, এটি পিক সিজন। এয়ারলাইন শত শত মিলিয়ন ডলারের রাজস্ব হারাতে চায় না। তারা প্রায় ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টদের সঙ্গে ‘চিকেন গেম’ খেলছে।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কয়েকটি জেলায় ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যায় ধসে পড়া বাড়িগুলো থেকে আরও ৬৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। শুক্রবার রাতভর উদ্ধার অভিযানের পর চলমান প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেখানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২০ জনে।
তবে গত ২ জুন থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে প্রায় ৫৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে খাইবার পাখতুনখোয়ার প্রাদেশিক দুর্যোগ তত্ত্বাবধান কর্তৃপক্ষ। এই অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
পাকিস্তানের জরুরি সেবা দপ্তরের মুখপাত্র মোহাম্মদ সুহেইল জানিয়েছেন, শুক্রবার প্রবল বর্ষণের ফলে খাইবার পাখতুনখোয়ার বুনার জেলায় বন্যার পানি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ সময় বহু বাড়িঘর ভেসে গেছে।
বুনার জেলা প্রশাসক কাশিফ কাইয়ুম বলেন, পীর বাবা ও মালিকপুরা গ্রাম দুটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুক্রবারই এসব গ্রামে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
পীর বাবা গ্রামের ৫৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ খান বলেন, ‘কোথা থেকে হঠাৎ করে বানের পানি চলে আসল, তা আমরা বুঝতেই পারিনি। মানুষ সরে যাওয়ার মতো সুযোগ পায়নি। এত দ্রুত চারদিক পানিতে ভরে যায় যে অনেকে ঘর ছেড়ে বের হতেই পারেনি।’
বুনার সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক মোহাম্মদ তারিক জানান, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই অনেকের মৃত্যু হয়েছে। তার ভাষ্যে, ‘নিহতদের মধ্যে অনেকই পুরুষ, শিশুও ছিল কিছু। তবে নারীরা ওই সময়র জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ ও গবাদিপশু চরাতে পাহাড়ে গিয়েছিলেন বলে রক্ষা পেয়েছেন।’
প্রাদেশিক দুর্যোগ তত্ত্বাবধান কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহে শুধু খাইবার পাখতুনখোয়া ও উত্তরাঞ্চলের গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চলে বৃষ্টিজনিত দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ওই অঞ্চল থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরেও সাম্প্রতিক বন্যায় অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেখানেও শত শত মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন।
ভারতের হিমালয় অঞ্চল ও পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে এ ধরনের মেঘভাঙা বৃষ্টি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ফলে এই প্রবণতা আরও তীব্র হয়েছে।
পাকিস্তানের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে এখন পর্যন্ত সারা দেশের বন্যাকবলিত এলাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি পর্যটককে উদ্ধার করা হয়েছে। সরকার বন্যাকবলিত এলাকা এড়িয়ে চলার ব্যাপারে সতর্ক করলেও সেই সতর্কবার্তা অনেকেই উপেক্ষা করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
২০২২ সালে পাকিস্তানে ভয়াবহ মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ঘটনায় ১ হাজার ৭০০–এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। সেবার প্রায় ৪০০০ কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
পশ্চিম তীরে চার হাজারের বেশি নতুন আবাসন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েল। কট্টর ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ গত বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। আলজাজিরার খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি বসতিবিরোধী পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘পিস নাউ’ জানিয়েছে— অনুমোদিত ৪ হাজার ৩০টি আবাসন ইউনিটের মধ্যে ৭৩০টি নির্মিত হবে আরিয়েলের পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যমান বসতিতে এবং বাকি ৩ হাজার ৩০০টি স্থাপন করা হবে মা’আলে আদুমিম এলাকায়।
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী স্মোট্রিচ জানান, নতুন বসতি প্রকল্পের জন্য শিগগিরই বাড়ি নির্মাণের দরপত্র অনুমোদন করা হবে। এর লক্ষ্য জেরুজালেম ও ইসরায়েলি বসতি মা’আলে আদুমিমের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন। তিনি আরও দাবি করেন, এই উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে চিরতরে শেষ করবে। তার ভাষায়, ‘এমন কিছু নেই যা স্বীকৃতি পাবে, আর এমন কেউ নেই যাকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। আজ যদি কেউ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করে, আমরা মাটিতেই তার জবাব দেব।’
ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পরিকল্পনাকে ‘গণহত্যা, বাস্তুচ্যুতি এবং দখলদারিত্বের সম্প্রসারণ’ হিসেবে নিন্দা করেছে। তাদের মতে, এটি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ সম্পর্কিত বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই বসতিগুলো কার্যকর হলে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা তৈরি হবে। পরিকল্পিত এলাকা অধিকৃত পশ্চিম তীরকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করে দেবে, ফলে পূর্ব জেরুজালেমকে বেথলেহেম ও রামাল্লার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করে সংলগ্ন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গঠন অসম্ভব হয়ে পড়বে।
উল্লেখ্য, এর আগেও ইসরায়েল ওই এলাকায় বসতি স্থাপনের চেষ্টা করেছিল। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে পরিকল্পনা স্থগিত হয়। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থি সরকার সেখানে রাস্তা প্রশস্তকরণ প্রকল্প অনুমোদন করেছে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে।
মা’আলে আদুমিমের মেয়র গাই ইফ্রাচ নতুন বসতি পরিকল্পনার প্রশংসা করে বলেছেন, এটি জেরুজালেমের সঙ্গে মা’আলে আদুমিমের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে। তার অভিযোগ, ফিলিস্তিনিরা ওই এলাকায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা করেছিল, যা এই প্রকল্প ব্যর্থ করে দেবে।
গাজায় তীব্র গরম, চর্মরোগে ভুগছে শিশুরা
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ফিলিস্তিনিরা। তীব্র গরমে এখন চর্মরোগে ভুগছে শিশুরা।তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
আল শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া বলেন, গাজার আশ্রয়শিবিরে থাকা অনেক শিশুই বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের কাছে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জামও নেই। আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াফা নামের এক মায়ের ছেলে সারা রাত চুলকানির কারণে ঘুমাতে পারছে না। তার ছেলের শরীরে সাদা-লাল ফুসকুড়ি দেখা গেছে।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) এর গাজার মেডিকেল কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ আবু মুগাইসিব বলেন, শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, কারণ তারা শিশু এবং সেখানকার পরিবেশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঠিকমতো গোসলের জন্য পর্যাপ্ত পানিও নেই তাদের।
গাজায় একদিনে ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত
যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা আবারও ভয়াবহ হামলার মুখে পড়েছে। লাগাতার বোমাবর্ষণ ও বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, বাজার—এবং প্রতিদিন বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। স্থানীয়রা বলছেন, গাজার উত্তরাংশ এখন প্রায় ‘নিষ্প্রাণ ধ্বংসস্তূপ’। আন্তর্জাতিক মহল এই হামলা ও দখল পরিকল্পনার বিরুদ্ধে নিন্দা জানালেও পরিস্থিতি দিন দিন আরও জটিল হয়ে উঠছে।
গতকাল শুক্রবার আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইসরায়েলি বিমান হামলায় একদিনে অন্তত ৩২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১৩ জন ছিলেন ত্রাণের সন্ধানে। একই দিনে খাদ্য সংকট ও অপুষ্টিতে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞ এমন সময় ঘটছে যখন ইসরায়েল গাজা সিটিতে হামলা আরও তীব্র করেছে এবং সম্প্রতি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা শহরটি দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে লাখো ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণ গাজায় গাদাগাদি করে বসবাসে বাধ্য করা হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা সিটির একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আটজন নিহত হন এবং তুফাহ এলাকায় অন্য এক হামলায় আরও দুজন প্রাণ হারান। কয়েকটি চিকিৎসা সূত্রও এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। এদিকে উত্তর গাজার বড় অংশ এখন সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। শহরের বাসিন্দারা নতুন করে বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত, কারণ ইসরায়েল শহর ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে তাদের আরও দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
বাসিন্দা ওয়ালা সুবহ জানান, যুদ্ধ শুরুর পর তিনি উত্তরাঞ্চলের বেইত লাহিয়া থেকে গাজা সিটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখন আর কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই, আয়ও নেই—তিনি একজন বিধবা। তার ভাষায়, ‘যদি আমাদের বের করে দিতে চায়, তবে অন্তত আমাদের থাকার জায়গা দিক, তাঁবু দিক, বিশেষ করে বিধবা, শিশু আর অসুস্থদের জন্য। এখানে কয়েকজন নয়, লাখো মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হবে, যাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’
উম সাজেদ হামদান নামে আরেক নারী বলেন, তিনি পাঁচ সন্তানের মা, স্বামী বন্দি—তাই সন্তানদের নিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালানো সম্ভব নয়। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, ‘আল-মাওয়াসিতে যাওয়ার চেয়ে আমি গাজা সিটিতেই মৃত্যুর মুখোমুখি হতে রাজি।’
ভারী মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে, যার ফলে কমপক্ষে ২৩ জনের মৃত্যু আরও অনেকে আটকা পড়েছেন।
দেশটির দুর্যোগ কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে শুক্রবার পেশোয়ার থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
আঞ্চলিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগটিতে পাহাড়ি খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে কমপক্ষে ১৬ জন এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে সাত জন প্রাণ হারিয়েছেন।
ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্রদেরকে বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বৈঠকের প্রাক্কালে বৃহস্পতিবার লন্ডনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
লন্ডন থেকে এএফপি জানিয়েছে, স্টারমার ইউক্রেনের নেতা জেলেনস্কিকে তার ডাউনিং স্ট্রিট বাসভবনে উষ্ণ আলিঙ্গন ও হাত মেলানোর মাধ্যমে স্বাগত জানান।
এর কয়েক ঘণ্টা পরেই জেলেনস্কি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল ফোনালাপে অংশ নেন।
শুক্রবার আলাস্কার একটি বিমান ঘাঁটিতে ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ হতে যাচ্ছে। এতে করে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর পুতিন পশ্চিমা মাটিতে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
তবে ইউক্রেনে অব্যাহত রুশ হামলা ও জেলেনস্কিকে এই বৈঠকে আমন্ত্রণ না করায় উদ্বেগ বেড়েছে। কারণ ট্রাম্প ও পুতিন এমন একটি চুক্তি করতে পারেন, যার ফলে ইউক্রেনকে বড় কিছু ছাড় দেওয়া লাগতে পারে।
তবে স্টারমার বুধবার বলেন, ইউক্রেনে তিন বছরের বেশি যুদ্ধের পর এখন ‘একটি সম্ভাব্য’ যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের সুযোগ রয়েছে।
এদিকে শুক্রবার ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হলেও এরই মধ্যে ইউক্রেন রাশিয়ায় ডজনখানেক ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এতে তিন জন আহত হয় এবং ভোলগোগ্রাদ শহরের একটি তেল শোধনাগারে আগুন লেগে যায়।
কিয়েভ দাবি করেছে, এই হামলাগুলো মস্কোর নিত্যদিনের মিসাইল ও ড্রোন হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ন্যায্য।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি রাশিয়াকে কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেবেন না। ইউরোপীয় নেতারা আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেন, ইউক্রেনের জন্য কোনো ছাড় দেওয়া ছাড়াই মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুদ্ধবিরতির দিকে নজর দেবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করার হুমকি দেওয়ার পর বিপাকে পড়েছেন ভারতীয় রপ্তানিকারকরা। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ না করলে ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থান হ্রাস এবং রপ্তানি শিল্পে বিশাল ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এলারা সিকিউরিটিজের অর্থনীতিবিদ গরিমা কাপুর বলেন, ‘৫০ শতাংশ শুল্কে ভারতের কোনো পণ্যই প্রতিযোগিতামূলক থাকতে পারবে না।’
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জ্বালানি আমদানিকারক ভারতকে আগামী ২৭ আগস্টের মধ্যে তেল আমদানির এক-তৃতীয়াংশ রাশিয়া বাদ দিয়ে অন্য উৎস থেকে জোগাড় করতে হবে। ২০২৪ সালে ভারত যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। নতুন এই শুল্কের ফলে রত্ন ও গহনা, বস্ত্রশিল্প ও সামুদ্রিক খাদ্যসহ কম মুনাফার ও শ্রমনির্ভর খাতগুলো বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ জানিয়েছে, ২০২৫ সালে পোশাক খাতসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
মুম্বাইয়ের ‘ক্রিয়েটিভ গ্রুপয়ের’ চেয়ারম্যান বিজয় কুমার আগরওয়াল বলেন, ‘আমরা যতটা পারি, ২৭ আগস্টের আগেই পণ্য পাঠিয়ে দিচ্ছি।’ তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এটা সমস্যার সাময়িক সমাধান মাত্র, আসল সমস্যার সমাধান নয়।’
আগরওয়াল বলেন, ‘যদি দ্রুত এই বিষয়টির সমাধান না হয়, তাহলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করা ১৫ হাজার থেকে ১৬ হাজার কর্মীর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।’
এই সমস্যা ব্যবসার আওতার বাইরে, কারণ এটি নির্ভর করছে ভূরাজনীতির ওপর। ট্রাম্প গত শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন, যা ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর দুই নেতার প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ।
মস্কোর সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকায় দিল্লি এখন এক জটিল অবস্থানে রয়েছে। ট্রাম্পের হুমকির পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন, এবং ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের’ আহ্বান জানিয়েছেন।
ইতোমধ্যেই কিছু মার্কিন ক্রেতা ভারত থেকে নতুন অর্ডার বন্ধ করে দিয়েছেন, যা কয়েক মিলিয়ন ডলারের ভবিষ্যৎ ব্যবসা এবং হাজার হাজার কর্মসংস্থান হুমকির মুখে ফেলেছে।
ভারতের বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারকদের অনেকে এখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্ডার অন্য দেশে স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন। পার্ল গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিজ জানিয়েছে, কিছু মার্কিন ক্রেতা অর্ডার ভিয়েতনাম বা বাংলাদেশে তৈরি করার অনুরোধ করেছেন, যেখানেও তাদের কারখানা রয়েছে।
অপরদিকে, গোকলদাস এক্সপোর্টস জানিয়েছে, তারা ইথিওপিয়া ও কেনিয়াতে উৎপাদন বাড়ানোর কথা ভাবছে, যেখানে মাত্র ১০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। মুডিজ সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছে, ভারতের জন্য এই বিশাল শুল্ক ব্যবধান ‘গত কয়েক বছরে আকৃষ্ট হওয়া বিনিয়োগের অনেকটাই উল্টো পথে নিতে পারে।’
গত বছর ভারত ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রত্ন ও গহনা রপ্তানি করেছে, যেখানে কয়েক লাখ মানুষ কর্মরত। এখন এই শিল্প কার্যত স্থবির। ডি. নভিনচন্দ্র এক্সপোর্টসের অজেশ মেহতা বলেন, ‘এখন কিছুই হচ্ছে না, সব অর্ডার স্থগিত। আমরা আশঙ্কা করছি ১.৫ থেকে ২ লাখ শ্রমিক প্রভাবিত হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘১০ শতাংশ শুল্ক মানিয়ে নেওয়া যায়, ২৫ শতাংশ কঠিন- আর ৫০ শতাংশ একেবারে অগ্রহণযোগ্য। আমরা বিলাসবহুল পণ্যে কাজ করি, দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেলে ক্রেতারা পিছিয়ে যাবে।’
সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানিকারকরাও বলছেন, কিছু মার্কিন ক্রেতা চালান আটকে রাখতে বলছেন। তারা এখন নতুন বাজারের খোঁজ করছেন। ‘বেবি মেরিন গ্রুপের পার্টনার’ অ্যালেক্স নিনান বলেন, ‘আমরা বাজার বৈচিত্র্যের চেষ্টা করছি। যুক্তরাষ্ট্র একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা এখন চীন, জাপান এবং রাশিয়ার মতো বাজারে নজর দিচ্ছি।’ তবে নিনান বলেন, ‘এটা সহজ নয়। হঠাৎ করেই কোনো বাজার তৈরি করা যায় না।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে ফোনালাপে নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলাস্কায় বৈঠকের আগে তাদের মধ্যে এই ফোনালাপটি হলো।
বুধবার পিয়ংইয়ংয়ের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে সিউল থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে, মঙ্গলবার পুতিন ও কিম ‘উষ্ণ সহযোদ্ধাসুলভ পরিবেশে’ ফোনে কথা বলেছেন এবং ‘ভবিষ্যতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে তাদের দৃঢ় ইচ্ছা’ পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
কেসিএনএ আরও জানায়, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে উত্তর কোরিয়ার অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে পুতিন ‘কুরস্ককে মুক্ত করতে কোরিয়ান পিপলস আর্মির সেনাদের আত্মত্যাগী মনোভাবের’ প্রশংসা করেছেন।
জবাবে কিম বলেন, উত্তর কোরিয়া ‘ভবিষ্যতেও রাশিয়ার নেতৃত্বে নেওয়া সব পদক্ষেপকে পুরোপুরি সমর্থন করবে।’
ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে, ‘পুতিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আসন্ন আলোচনা প্রসঙ্গে কিম জং উনকে তথ্য দিয়েছেন।’
ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প শুক্রবার আলাস্কায় তাদের বৈঠকে রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার জন্য চাপ দেবেন।
সিউলে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ কোরিয়ান স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট ইয়াং মু-জিন এএফপিকে বলেন, দুই নেতার ফোনালাপ জনসমক্ষে আনার অর্থ হলো ‘দেশি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের ঘনিষ্ঠতা প্রদর্শন করা।’
ইয়াং আরও বলেন, যদি ট্রাম্প ও পুতিন ইউক্রেন শান্তি চুক্তিতে সম্মত হন, তবে ‘ট্রাম্পের উত্তর কোরিয়া সংক্রান্ত আগ্রহের বিষয়ে কিমের মনোভাব পুতিন ট্রাম্পকে জানাতে পারেন। এর মধ্যে শর্তসাপেক্ষ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনের বিষয়ও থাকতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘যদি রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা গতি পায়, তবে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া এবং দুই কোরিয়ার মধ্যকার সংলাপেও পড়তে পারে।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে পিয়ংইয়ং সেনা ও অস্ত্র সরবরাহ করেছে।
গত বছর পুতিনের পিয়ংইয়ং সফরের সময় দুই দেশ একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে।
উত্তর কোরিয়া এপ্রিল মাসে প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করে যে তারা রাশিয়ার সঙ্গে মিলে ইউক্রেনে তাদের একটি সৈন্যদল পাঠিয়েছে।
মালয়েশিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য দেশটির গ্র্যাজুয়েট প্লাস ভিসা চালুর সম্ভাবনা রয়েছে, যা হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েটকে সমৃদ্ধ অর্থনীতির এই দেশে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ দেবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কুয়ালালামপুরে ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়ায়, মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী জাম্ব্রি আবদুল কাদিরের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়টি উত্থাপন করেন।
‘মন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। নীতিগতভাবে তিনি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য গ্র্যাজুয়েট প্লাস ভিসা দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন। তবে নীতি কার্যকর হওয়ার আগে উভয় পক্ষকে কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে,’ বলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
বৈঠকে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। অন্য দেশের শিক্ষার্থীরা যেখানে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রবেশের সুযোগ পায়, সেখানে এতদিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল।
এর আগে বুধবার, মালয়েশিয়ার শিক্ষা মন্ত্রী ফাদলিনা বিনতি সিদেক কুয়ালালামপুরের একটি হোটেলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি বাড়ানোসহ শিক্ষায় সহযোগিতা জোরদারের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বিনিময় কর্মসূচি সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ঢাকা মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বাংলাদেশের ডিগ্রির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও চেয়েছে।
মালয়েশিয়ার মন্ত্রী অধ্যাপক ইউনূসের দীর্ঘদিনের ‘থ্রি জিরো’ প্রচারণায় গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন, যার লক্ষ্য বিশ্ব থেকে দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা।
‘আপনি যদি দারিদ্র্যহীন পৃথিবী কল্পনা না করেন, তবে তা হবে না,’ মন্তব্য করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বিশ্বনেতাদের প্রতি আত্মবিধ্বংসী নয় এমন একটি সভ্যতা গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস মালয়েশিয়ার শিক্ষা মন্ত্রীকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান, যাতে দুই দেশের মধ্যে শিক্ষা সহযোগিতা আরও জোরদার হয়।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার আসন্ন বৈঠককে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে তার ধারণাগুলো মূল্যায়নের একটি ‘অনুভূতিশীল বৈঠক’ বলে অভিহিত করেছেন। এদিকে ইউরোপীয় নেতারা কিয়েভের স্বার্থের প্রতি অটল রয়েছেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ট্রাম্প শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে আলাস্কায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে এটিই প্রথম মুখোমুখি বৈঠক। তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির আঞ্চলিক ছাড় প্রত্যাখ্যান করার সমালোচনা করেছেন।
অগ্রহণযোগ্য আপস জোরদার করার লক্ষ্যে পুতিন ট্রাম্পের সাথে জোট বাঁধবেন এই আশঙ্কায়, ইউরোপীয় নেতারা বুধবার জেলেনস্কি ও ট্রাম্প উভয়ের সাথেই আলাদাভাবে কথা বলার পরিকল্পনা করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম মাসগুলোয় ২৪ ঘন্টার মধ্যে সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারবেন বলে মন্তব্য করার পর, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু কয়েক দফা আলোচনা, ফোন কল ও কূটনৈতিক সফরের পরও কোনো প্রকার সাফল্য আসেনি।
ট্রাম্প সাধারণত তার চুক্তি সম্পন্ন করার দক্ষতা নিয়ে গর্ব করতে পছন্দ করেন। আলাস্কায় সাফল্যের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে পুতিনের সঙ্গে ‘গঠনমূলক আলোচনা’ আশা করছেন।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি সত্যিই কিছুটা অনুভূতিপ্রবণ বৈঠক।’
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা দেখব তার মনে কী আছে এবং যদি এটি একটি ন্যায্য চুক্তি হয়, তাহলে আমি এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের, ন্যাটো নেতাদের এবং প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির কাছেও প্রকাশ করব।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলতে পারি- অনেক ভাগ্য, লড়াই চালিয়ে যাও, অথবা আমি এও বলতে পারি, আমরা একটি চুক্তি সম্পাদন করতে পারি।’
জেলেনস্কি বলপ্রয়োগ করে দখল করা অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে ট্রাম্প ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের এক সভায় প্রকাশ্যে জেলেনস্কির সমালোচনা করে বলেছিলেন তিনি জেলেনস্কির অবস্থান নিয়ে কিছুটা বিরক্ত এবং অঞ্চল বিনিময়ের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘কিছু বিনিময় হবে, জমির কিছু পরিবর্তন হবে।’
তবে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি পুতিনকে এই যুদ্ধ শেষ করতে বলবেন।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎজ বুধবার ফরাসি, ব্রিটিশ ও অন্যান্য ইউরোপীয় নেতাদের এবং ইইউ ও ন্যাটো প্রধানদের ভার্চুয়াল আলোচনায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
সোমবার মের্ৎজের কার্যালয় জানিয়েছে, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন দফা আলোচনায় রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগের আরও বিকল্প, সম্ভাব্য শান্তি আলোচনার প্রস্তুতি এবং আঞ্চলিক দাবি ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।
সোমবার ব্রাসেলসে ইইউ’র পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহার সঙ্গে দেখা করেন এবং আক্রমণের পর থেকে রাশিয়ার ওপর ১৯তম নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টিও নিয়েও আলোচনা করেন।
আলোচনার পরে ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কালাস বলেন, রাশিয়া ‘পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত, আমাদের কোনও ছাড় নিয়ে আলোচনা করা উচিত নয়।’ ‘এটি অতীতে কখনও রাশিয়ার সাথে কাজ করেনি এবং আজও পুতিনের সাথে কাজ করবে না।’
এদিকে পুতিনের দাবির কাছে আত্মসমর্পণের বিরুদ্ধে আবারও সতর্ক করেছেন জেলেনস্কি ।
জেলেনস্কি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে লিখেছেন, ‘রাশিয়া হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে অস্বীকার করে, তাই কোনও পুরষ্কার বা সুবিধা গ্রহণ করা উচিত নয়। এটি কেবল একটি নৈতিক অবস্থান নয়, এটি একটি যুক্তিসঙ্গত অবস্থান।’
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে জঙ্গি হামলায় অন্তত নয়জন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন বলে মঙ্গলবার এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ওয়াশুক জেলার একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, বহু সংখ্যক জঙ্গি একটি পুলিশ স্টেশন এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ঘাঁটিতে হামলা চালায়।
গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পথে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়। সন্ত্রাসীরা নয়জন সেনাকে হত্যা করে।’
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের গাজা সিটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার এবং হামাসের অবশিষ্ট ঘাঁটিগুলোতে হামলার পরিকল্পনার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। ইসরাইলি পরিকল্পনার ব্যাপারে চরম সমালোচনা সত্ত্বেও নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘যুদ্ধ বন্ধের এটিই সর্বোত্তম উপায়’।
জেরুজালেম থেকে এএফপি জানায়, ইসরাইলি ভূখণ্ডে হামাসের নজিরবিহীন হামলার ফলে শুরু হওয়া যুদ্ধ ২২ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান রয়েছে। বর্তমানে ইসরাইল এ নিয়ে গভীর বিভাজনের মধ্যে রয়েছে—একদিকে একদল যুদ্ধের অবসান ও জিম্মিদের মুক্তির জন্য চুক্তি চায়, অন্যদিকে আরেক দল ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের চিরতরে পরাজিত দেখতে চায়।
নেতানিয়াহুর সিকিউরিটি কেবিনেট সম্প্রতি হামলার তীব্রতা বাড়ানো এবং গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা ঘোষণা করার পর বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।
নেতানিয়াহু গতকাল রোববার এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুদ্ধ শেষ করার এটাই সর্বোত্তম উপায় এবং দ্রুত শেষ করারও এটি সর্বোত্তম উপায়।’
জেরুজালেমে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নেতানিয়াহু বলেন, ‘নতুন অভিযান মোটামুটি সংক্ষিপ্ত সময়সীমার মধ্যে বাস্তবায়িত হবে।’
এই অভিযানের লক্ষ্য হবে, গাজা সিটিতে হামাসের অবশিষ্ট দুটি শক্ত ঘাঁটি ও তাদের মূল ঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়া। একই সঙ্গে বেসামরিক নাগরিকদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য নিরাপদ করিডোর ও নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘অভিযান চালিয়ে হামাসের পরাজয় নিশ্চিত করা ছাড়া ইসরাইলের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে আমরা অনেক কিছু করে ফেলেছি। গাজার ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখনো দুটি শক্ত ঘাঁটি বাকি আছে। এগুলো হলো গাজা সিটি এবং আল মাওয়াসি মূল ঘাঁটি।’