ভারতের গুজরাট রাজ্যে একটি ঝুলন্ত সেতু ধসে পড়ে অন্তত ৯১ জন নিহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও প্রায় একশ জন।
আজ রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে রাজ্যের মরবি শহরের সেতুটি ধসে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এ খবর দিয়েছে।
মাচ্ছু নদীর ওপর নির্মিত শত বছরের পুরনো ঝুলন্ত (ক্যাবল) সেতুটি পর্যটন স্পট হিসেবে জনপ্রিয়। সম্প্রতিই এটির সংস্কার করে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সেতুটিতে যান চলাচল করতে পারে না।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, দুর্ঘটনার সময় সেতুটিতে প্রায় ৫০০ লোক ছিলেন। এখন পর্যন্ত ৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে প্রায় একশ জনের মতো লোক এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের খোঁজে নদীতে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে। হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এনডিটিভি জানায়, ছট পূজা সংক্রান্ত একটি আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দিতে প্রায় ৫০০ পূণ্যার্থী সেতুটিতে উঠেছিলেন। দিনের বেলায় ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, অতিরিক্ত লোকের ভারে সেতুটি তখনই বিপজ্জনকভাবে দুলছিল।
দুর্ঘটনার পর ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, সেতুটি ধসে পড়ার পর অনেকে নদীতে তলিয়ে যান। অনেকে ধসে পড়া সেতুর কিছু অংশে ঝুলে বাঁচতে চাইছিলেন। কেউ কেউ তীরে ভিড়তে পারলেও অনেকে নদীতেই পড়ে যান।
গুজরাটের শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী ব্রিজেশ মের্জা বলেন, ব্রিটিশ আমলের সেতুটি গত সপ্তাহেই সংস্কার করা হয়েছিল। দুর্ঘটনায় আমরা শোকাহত। ঘটনার মূল কারণ খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে। সরকার এই ট্র্যাজেডির দায়ভার নিচ্ছে।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভুপেন্দ্রভাই প্যাটেলের সঙ্গে কথা বলেছেন। সরকারের সব শীর্ষ কর্মকর্তা এই ঘটনায় তৎপর রয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী ভুপেন্দ্রভাই প্যাটেল এই ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে চার লাখ রুপি করে এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের ৫০ হাজার রুপি করে দেয়া হবে।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকেও নিহতদের পরিবারকে দুই লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র শান্তিপূর্ণ সমাধান হলো তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংকট নিরসনে সাত দফা পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন। তিনি বলেন, ‘অর্থায়ন কমে আসছে। একমাত্র শান্তিপূর্ণ পথ হচ্ছে তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা।’
গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা এই প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, ‘গণহত্যা শুরুর আট বছর পরও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা অব্যাহত রয়েছে। সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেই। আন্তর্জাতিক অর্থায়নও মারাত্মক ঘাটতিতে ভুগছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং সমাধানও সেখানেই নিহিত।
রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ এবং দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, ‘এটাই সংকটের একমাত্র সমাধান। মিয়ানমারের সার্বিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় জিম্মি করে রাখা উচিত নয়।’
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সুরক্ষা অব্যাহত রাখার তুলনায় প্রত্যাবাসনে অনেক কম সম্পদের প্রয়োজন হবে। রোহিঙ্গারা বরাবরই নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে চেয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সাম্প্রতিক সংঘাত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে প্রত্যাবাসনের সুযোগ দিতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ সংকটের শিকার। আমাদের সামাজিক, পরিবেশগত ও আর্থিকভাবে বিপুল চাপ সহ্য করতে হচ্ছে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে মাদক পাচারসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলছে। আমাদের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ—যেমন বেকারত্ব ও দারিদ্র্য—বিবেচনায় দেশে রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়।’
টেকসই সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাত দফা পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দেন—
প্রথমত, রাখাইন অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন।
দ্বিতীয়ত, মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধ এবং সম্প্রতি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু।
তৃতীয়ত, রাখাইনে স্থিতিশীলতা আনতে আন্তর্জাতিক সহায়তা জোগাড় এবং তা পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
চতুর্থত, রোহিঙ্গাদের রাখাইন সমাজ ও শাসনব্যবস্থায় স্থায়ী অন্তর্ভুক্তির জন্য আস্থা গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ।
পঞ্চমত, যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনায় (Joint Response Plan) অর্থদাতাদের পূর্ণ সহায়তা নিশ্চিত করা।
ষষ্ঠত, জবাবদিহি ও পুনর্বাসনমূলক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
সপ্তম, মাদক অর্থনীতি ভেঙে দেওয়া এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন করা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্ব আর রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফেরার জন্য অপেক্ষায় রাখার সামর্থ্য রাখে না।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের সংকট সমাধানে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করতে হবে। বাংলাদেশ এ লক্ষ্যে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।’
সূত্র : বাসস
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
গত সসোমবার হোয়াইট হাউস থেকে এ প্রস্তাব প্রকাশ করা হয়। এটি গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ তাৎক্ষণিকভাবে থামাতে পারে বলে দাবি করেছে হোয়াইট হাউস।
যদি উভয় পক্ষ এই পরিকল্পনা বা প্রস্তাব গ্রহণ করে, তবে যুদ্ধ তাৎক্ষণিক শেষ হবে। এর ফলে গাজায় বন্দি থাকা জীবিত ও নিহতদের মরদেহ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হবে এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এছাড়া গাজা অস্থায়ীভাবে একটি ফিলিস্তিনি সরকার দ্বারা পরিচালিত হবে, যেখানে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। ইসরায়েল গাজাকে অধিগ্রহণ করবে না।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের প্রস্তাব গ্রহণ করলেও এখনো আনুষ্ঠানিক কিছু জানায়নি হামাস। হামাসের কর্মকর্তা মাহমুদ মারদাউই আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, গাজায় শান্তি পরিকল্পনার ট্রাম্পের লিখিত প্রস্তাব তারা এখনো পাননি।
ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাব-
১. গাজা উগ্রবাদমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত এলাকা হবে, যা এর প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি তৈরি করবে না।
২. গাজার জনগণের কল্যাণের জন্য গাজা পুনর্গঠিত হবে, যারা যথেষ্ট কষ্ট ভোগ করেছেন।
৩. যদি উভয় পক্ষ এই প্রস্তাবে সম্মত হয়, তবে যুদ্ধ তাৎক্ষণিক শেষ হবে। ইসরায়েলি বাহিনী বন্দি মুক্তির প্রস্তুতির জন্য নির্ধারিত সীমান্তে প্রত্যাহার করবে। এই সময়ে সব সামরিক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে, যার মধ্যে রয়েছে বায়ু ও আর্টিলারি হামলা।
৪. এই চুক্তি গ্রহণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলের সব বন্দি, জীবিত ও মৃতদেহ ফেরত পাঠাতে হবে।
৫. সব বন্দি মুক্তি পাওয়ার পর ইসরায়েল ২৫০ জন বন্দিসহ এক হাজার ৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে, যারা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পরে আটক হন। এর মধ্যে নারী ও শিশু অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রতিটি ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দিলে ইসরায়েল ১৫ জন মৃত গাজাবাসীর মরদেহ ফিরিয়ে দেবে।
৬. বন্দিদের ফেরত দেওয়ার পর হামাসের যারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং অস্ত্র সমর্পণ করতে রাজি হবে তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হবে। এছাড়া হামাসের যেসব সদস্য গাজা ছাড়তে চান তাদের নিরাপদভাবে গন্তব্য দেশে যেতে দেওয়া হবে।
৭. এই চুক্তি গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে গাজায় পূর্ণ সাহায্য অবিলম্বে পাঠানো হবে। যার মধ্যে রয়েছে অবকাঠামোর পুনর্বাসন, হাসপাতাল ও বেকারি পুনর্গঠন, ধ্বংসাবশেষ অপসারণ এবং রাস্তা খোলার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রবেশের ব্যবস্থা।
৮. গাজায় মানবিক সহায়তা জাতিসংঘ, রেড ক্রিসেন্ট ও অন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হবে, যেগুলো উভয় পক্ষের সঙ্গে কোনোভাবে সম্পর্কিত নয়। রাফাহ ক্রসিং খোলা থাকবে, যে বিষয়ে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি চুক্তি হয়েছিল।
৯. গাজা একটি প্রযুক্তিনির্ভর, অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটির অস্থায়ী শাসনের অধীনে পরিচালিত হবে। গাজার জনগণের দৈনন্দিন জনসেবা ও পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে তারা। এই কমিটিতে যোগ্য ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। এর তদারকি ও নজরদারি করবে একটি নতুন আন্তর্জাতিক অস্থায়ী প্রতিষ্ঠান ‘পিস বোর্ড’, যার নেতৃত্ব ও সভাপতিত্ব করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যান্য সদস্য ও রাষ্ট্রপ্রধানদের নাম পরে ঘোষণা করা হবে, এর মধ্যে থাকবেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার।
১০. গাজা পুনর্গঠনে একটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। এতে এমন বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল গঠন করা হবে যারা মধ্যপ্রাচ্যের কিছু উন্নত ও সমৃদ্ধ শহরের সূচনা করেছিলেন।
১১. গাজায় একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে আগ্রহী দেশগুলোর সঙ্গে শুল্ক ও প্রবেশাধিকার হার নিয়ে আলোচনা ও চুক্তি করা হবে।
১২. গাজা থেকে কাউকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হবে না। তবে যারা যেতে চান তারা নিজের ইচ্ছায় যেতে পারবেন এবং ফিরে আসতেও পারবেন।
১৩. হামাস এবং অন্যান্য গোষ্ঠী গাজার শাসনে সরাসরি, পরোক্ষভাবে বা কোনোভাবে অংশ নেবে না বলে সম্মত হয়েছে। সব সামরিক, সন্ত্রাস ও আক্রমণাত্মক অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে, যার মধ্যে সুড়ঙ্গ এবং অস্ত্র উৎপাদন সুবিধা অন্তর্ভুক্ত। নতুন গাজা সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলায় এবং তাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।
১৪. আঞ্চলিক অংশীদাররা এ বিষয় নিশ্চিত করবে যে, হামাস এবং অন্যান্য গোষ্ঠী প্রতিবেশী দেশ বা তার জনগণের জন্য কোনো হুমকি তৈরি করবে না।
১৫. যুক্তরাষ্ট্র আরব ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গড়ে তোলার জন্য, যা অবিলম্বে গাজায় মোতায়েন হবে। আইএসএফ গাজার ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীর প্রশিক্ষণ দেবে এবং তাদের সহায়তা করবে। এই বাহিনী গাজায় দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় কাজ করবে। ইসরায়েল ও মিসরের সঙ্গে মিলিতভাবে সীমান্ত এলাকায়ও কাজ করবে এই বাহিনী।
১৬. ইসরায়েল গাজা দখল বা অধিগ্রহণ করবে না। আইএসএফ যখন নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করবে, তখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হবে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের দখল করা গাজা এলাকা ধাপে ধাপে আইএসএফের কাছে হস্তান্তর করবে।
১৭. যদি হামাস এই প্রস্তাব বিলম্বিত বা প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো সেই এলাকায় বাস্তবায়িত হবে- যা ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইএসএফের কাছে হস্তান্তর করেছে।
১৮. ধৈর্য ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তিতে একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপ প্রক্রিয়া গড়ে তোলা হবে, যাতে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মানসিকতার পরিবর্তনের চেষ্টা করা যায়।
১৯. এসব উদ্যোগে ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদার জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ তৈরি হতে পারে। ফিলিস্তিনের জনগণের আকাঙ্ক্ষা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যা স্বীকৃতি দেয়।
২০. শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সহাবস্থানের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছাতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংলাপের আয়োজন করবে যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনাকে স্বাগত জানালেন মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় নেতারা
ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনাকে স্বাগত জানালেন মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় নেতারা। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, হামাস এ পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমঝোতায় তৈরি এই পরিকল্পনায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, হামাসের হাতে আটক ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি ও অন্তত দুই ডজন নিহত জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়া এবং এর বিনিময়ে শত শত বন্দি ফিলিস্তিনিকে মুক্তির প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামাস গাজার শাসন থেকে সম্পূর্ণভাবে দূরে থাকবে। এতে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ আছে, যদিও নেতানিয়াহু পরবর্তীতে তা নাকচ করেছেন।
হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প একে ‘ঐতিহাসিক শান্তির দিন’ বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, হামাস পরিকল্পনা না মানলে যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে ধ্বংস করার ব্যাপারে ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দেবে।
নেতানিয়াহুও বলেন, হামাস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ইসরায়েল ‘শেষ পর্যন্ত লড়বে’। পরে ভিডিওবার্তায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, তিনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিরোধী। যদিও পরিকল্পনায় ইসরায়েলি সেনাদের গাজা থেকে ধাপে ধাপে সরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে ‘আন্তরিক ও দৃঢ়’ আখ্যা দিয়েছে। তাদের সরকারি বার্তা সংস্থা ‘ওয়াফা’ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রসহ আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে যুদ্ধের অবসান, গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এবং বন্দি বিনিময়ে তারা কাজ চালিয়ে যাবে।
এছাড়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, মিশর, জর্ডান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে ট্রাম্পের নেতৃত্ব ও আন্তরিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানান। তারা বলেন, এই চুক্তি ‘দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথ তৈরি করবে, যেখানে গাজা ও পশ্চিম তীর মিলিত হয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করবে।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা বলেন, নেতানিয়াহুর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তাকে উৎসাহিত করেছে। তিনি সব পক্ষকে এই সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার বলেছেন, সব পক্ষকে একসঙ্গে বসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করে এ চুক্তিকে বাস্তবায়ন করতে হবে। হামাস এখনই অস্ত্র ফেলে সব জিম্মিকে মুক্তি দিয়ে কষ্টের অবসান ঘটানো উচিত।
মার্কিন হামলার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। গত সোমবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রেসিডেন্ট মাদুরো বলেন, ‘যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলায় সামরিক হামলা চালায়, তবে আমাদের জনগণ, শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য আমি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবো।’
মাদকবিরোধী অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে প্রেসিডেন্ট মাদুরো বলেন, ‘তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘ঐতিহাসিক ও শান্তিপূর্ণ’ সম্পর্ক চান।’
এর আগে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেলসি রদ্রিগেজ জানান, ‘প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন। যাতে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ে বিশেষ ক্ষমতা গ্রহণের কথা উল্লেখ আছে। এ ক্ষমতা দিয়ে তিনি সারাদেশে সেনা মোতায়েন এবং সরকারি সেবা ও তেল শিল্পের ওপর সামরিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। মাদুরোর স্বাক্ষরিত ডিক্রির আওতায় প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতা ৯০ দিনের জন্য বলবত থাকবে এবং সংবিধান অনুযায়ী আরও ৯০ দিন নবায়নযোগ্য ।’
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় সাগরে আটটি যুদ্ধজাহাজ, একটি পারমাণবিক সাবমেরিন এবং এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। ফলে ওই অঞ্চলে মার্কিন নৌবাহিনীর অন্যতম বৃহত্তম মোতায়েন বলে মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন বাহিনী ভেনিজুয়েলার আন্তর্জাতিক জলসীমায় অন্তত তিনটি বোটে হামলা চালিয়েছে। বোটের মাধ্যমে মাদক পরিবহনের অভিযোগের দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র। এসব হামলায় অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছে। ভেনেজুয়েলা একে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করেছে। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব অভিযান মাদকবিরোধী প্রচেষ্টার অংশ। জাতিসংঘ ও মার্কিন তথ্য অনুসারে, ‘ভেনিজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রে কোকেন সরবরাহের প্রধান উৎস নয়।’
ভেনিজুয়েলায় মার্কিন আগ্রাসনের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা মার্কিন এই হামলাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। অন্যদিকে এনবিসি নিউজের বরাতে জানা গেছে, হোয়াইট হাউস ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরে বিমান হামলার পরিকল্পনা করছে।
কাতারে বিমান হামলার জন্য অনুতপ্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মেদ বিন আবদুল রহমান আল থানির কাছে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে কাতারে আর কখনও হামলা করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি নেতানিয়াহুর এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। খবর আনাদোলু এজেন্সি
গত সোমবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। সেখানে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের সময় তার উপস্থিতিতে কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয় নেতানিয়াহুর। সে সময় কাতারে হামলার জন্য ক্ষমা চান নেতানিয়াহু।
‘কাতারে হামাসকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হামলায় কাতারি নিরাপত্তাকর্মী নিহতের ঘটনায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানির কাছে গভীর শোক প্রকাশ ও ক্ষমা চেয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এছাড়া ইসরায়েলি জিম্মিদের হামাসের আলোচনা চলার সময় পরিচালিত এই হামলার মাধ্যমে কাতারের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের জন্য অনুতাপও প্রকাশ করেছেন তিনি।’
‘কাতারের প্রধানমন্ত্রী আল থানি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে বলেছেন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য অর্থপূর্ণ ভূমিকা রাখতে কাতার সবসময়েই প্রস্তুত।’
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও গত সোমবার এক বার্তায় টেলিফোনে আল থানি ও নেতানিয়াহুর ফোনালাপের তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত ৯ অক্টোবর বিকেলের দিকে কাতারের রাজধানী দোহায় একটি আবাসিক ভবনে বিমান অভিযান পরিচালনা করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ওই ভবনটিতে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের বর্তমান শীর্ষ নেতা খলিল আল হায়া এবং গোষ্ঠীটির অন্যান্য নেতারা গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত ট্রাম্পের খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
খলিল আল হায়া এবং হামাসের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের হত্যার উদ্দেশে এ হামলা চালিয়েছিল আইডিএফ। হামলায় ৬ জন নিহত হয়েছেন এবং নিহতদের মধ্যে একজন কাতারি নিরাপত্তারক্ষীও ছিলেন। তবে খলিল কিংবা হামাসের অন্য কোনো জ্যেষ্ঠ নেতার কোনো ক্ষতি হয়নি।
পাকিস্তানকে কাছে টানছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত কেবল তাকিয়েই দেখছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক দ্রুত ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। আর তাতে ভারতের ওপর কূটনৈতিকভাবে চাপ বাড়ছে।
সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ও সেনাপ্রধান আসিম মুনির ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জ্বালানি, খনিজ ও কৃষি খাতে বিনিয়োগসহ কৌশলগত
হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, মুনির ট্রাম্পকে বিরল খনিজে ভরা একটি বাক্স উপহার দেন।
এর আগে জুলাইতে পাকিস্তানের জন্য শুল্ক কমানোর চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র, যার প্রশংসা করেন শাহবাজ। তিনি ট্রাম্পকে ‘শান্তির মানুষ’ আখ্যা দিয়ে গত মে মাসের ভারত-পাকিস্তান সংঘাত থামাতে ভূমিকা রাখার কৃতিত্বও দেন। মুনির তো ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য বলেও মন্তব্য করেছেন।
তবে ভারত এসব দাবি অস্বীকার করে বলেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্প কোনো ভূমিকা রাখেননি। বরং ট্রাম্প ওই সময় ভারতের উদ্দেশে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘একদিন হয়তো ভারত পাকিস্তানের তেল কিনবে।’ এতে নয়াদিল্লি আরও অস্বস্তিতে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে ভাটা
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখা গেলেও এবার সম্পর্ক তলানিতে। ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে রাশিয়ার তেল আমদানির কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এতে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ওয়াশিংটনের প্রতি ভারতের আস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
ভারতীয় বিশ্লেষক হর্ষ পন্ত মনে করেন, মার্কিন কৌশল যদি পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে এগোয়, তবে ভারত তার ইন্দো-প্যাসিফিক নীতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনতে বাধ্য হবে। এতে কোয়াডের মতো মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সহযোগিতাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
পাকিস্তানের নতুন সমীকরণ
সম্প্রতি পাকিস্তান সৌদি আরবের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘যেকোনো এক দেশের ওপর আক্রমণ মানেই উভয়ের ওপর আক্রমণ।’
এটি ভারতের জন্য একটি বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত পাকিস্তান কেবল অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে তাৎক্ষণিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে।
ট্রাম্পের লেনদেনভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি
ভারতের সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মীরা শংকর বলেন, ট্রাম্প ভারত ও পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক লেনদেনের চোখে দেখেন, কৌশলগত মিত্র হিসেবে নয়। পাকিস্তান ছোটোখাটো ছাড় দিয়ে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে, তবে এ সম্পর্ক অস্থায়ী এবং অবিশ্বস্ত।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমিতাভ মট্টুর মতে, ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের ঘনিষ্ঠতা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে চক্রাকারে ঘটে। স্নায়ুযুদ্ধ, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের পর এখন আবার পশ্চিম এশিয়া–মধ্য এশিয়ার অস্থিরতায় পাকিস্তানকে কাজে লাগাতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এবার তারা পাকিস্তানের দ্বিচারিতা সম্পর্কে বেশি সচেতন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে ভারতের প্রতি বিনিয়োগ আগের চেয়ে গভীর।
হামাস মঙ্গলবার গাজা নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিষয়ে এখনো কোনো সাড়া দেয়নি অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সমর্থন দেওয়ার পর ইসরাইলি সেনাবাহিনী বেশিরভাগ ভূখণ্ডে অবস্থান করবে।
এই পরিকল্পনায় যুদ্ধবিরতি ৭২ ঘন্টার মধ্যে হামাস কর্তৃক জিম্মিদের মুক্তি, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজা থেকে ধীরে ধীরে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। পরে ট্রাম্পের নেতৃত্বে একটি যুদ্ধ-পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে।
জেরুজালেম থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
সোমবার হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, তাদের দল এখনো ২০-দফা পরিকল্পনাটি পায়নি, তবে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত একজন কর্মকর্তা পরে এএফপি’কে বলেছেন, কাতারি এবং মিশরীয় মধ্যস্থতাকারীরা হামাসের সাথে দেখা করে তাদের নথিটি সরবরাহ করেছেন।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি এবং মিশরের গোয়েন্দা প্রধান হাসান মাহমুদ রাশাদ ‘হামাসের আলোচকদের সাথে দেখা করেছেন এবং ২০-দফা পরিকল্পনা ভাগ করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রটি জানিয়েছে, হামাসের আলোচকরা বলেছেন, তারা সরল বিশ্বাসে এটি পর্যালোচনা করবেন এবং একটি প্রতিক্রিয়া জানাবেন’।
ট্রাম্পের সাথে যৌথ সংবাদ সম্মেলনের পর তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা একটি ভিডিও বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজার বেশিরভাগ অংশে সেনাবাহিনী থাকবে এবং ট্রাম্পের সাথে আলোচনার সময় তিনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সাথে একমত নন বলেও জানান।
তিনি বলেছেন, যখন ইসরাইলি সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ অংশে থাকবে, ‘আমরা আমাদের সকল জিম্মিকে জীবিত এবং সুস্থভাবে উদ্ধার করব’।
তবুও, নেতানিয়াহুর জোট সরকারের সদস্য, ইসরাইলের অতি-ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এই পরিকল্পনাকে ‘মারাত্মক কূটনৈতিক ব্যর্থতা’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমার ধারণা, এর সমাপ্তি কান্নায় হবে। আমাদের সন্তানরা আবার গাজায় যুদ্ধ করতে বাধ্য হবে’।
‘পূর্ণ সমর্থন’
সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন, যে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ‘খুব কাছাকাছি’ এবং ঘোষণাটিকে ‘একটি সুন্দর দিন - সম্ভাব্যভাবে সভ্যতার সর্বকালের সেরা দিনগুলোর মধ্যে একটি’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
তার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে একটি ‘অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী’ মোতায়েন করা এবং ট্রাম্পের নেতৃত্বে এবং সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ একটি অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষ তৈরি করা।
২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধে তার ভূমিকার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে এখনো ব্যাপকভাবে ঘৃণিত ব্লেয়ার ‘সাহসী এবং বুদ্ধিমান’ পরিকল্পনার প্রশংসা করেছেন।
এই চুক্তিতে হামাস যোদ্ধাদের সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ এবং ভবিষ্যতে সরকারে ভূমিকা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি করা হবে, তবে যারা ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে’ সম্মত হবেন তাদের সাধারণ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু সন্দেহ প্রকাশ করেন, অধিকৃত পশ্চিম তীর নামমাত্রভাবে পরিচালিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে গাজার শাসনব্যবস্থায় ভূমিকা রাখার অনুমতি দেওয়া হবে কি-না।
ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন, তাদের বৈঠকে নেতানিয়াহু যেকোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন যাতে মার্কিন পরিকল্পনায় স্থান পেয়েছে।
নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আপনার পরিকল্পনাকে আমি সমর্থন করি, যা আমাদের যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন করবে’।
নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেছেন, মিঃ প্রেসিডেন্ট, ‘যদি হামাস আপনার পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে অথবা যদি তারা এটি গ্রহণ করে এবং তারপর মূলত এটির বিরুদ্ধে সবকিছু করে, তাহলে ইসরাইল নিজেই কাজটি শেষ করবে।’
ট্রাম্প বলেছেন, হামাস যদি চুক্তিটি মেনে না নেয়, তাহলে ইসরাইলের প্রতি তার ‘পূর্ণ সমর্থন’ থাকবে।
বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া ছিল দ্রুত এবং দ্রুত। মধ্যস্থতাকারী মিশর এবং কাতারসহ গুরুত্বপূর্ণ আরব ও মুসলিম দেশগুলো গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সাথে তাদের নিজস্ব আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে চুক্তির ‘আন্তরিক প্রচেষ্টার’ প্রশংসা করেছে।
ওয়াশিংটনের ইউরোপীয় মিত্ররা তাৎক্ষণিকভাবে সমর্থন জানায়, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইতালির নেতারা এই পরিকল্পনার প্রতি জোরালো সমর্থন প্রকাশ করেন।
এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান আন্তোনিও কস্তা সকল পক্ষকে ‘শান্তির জন্য একটি প্রকৃত সুযোগ দেওয়ার জন্য এই মুহূর্তটিকে কাজে লাগানোর’ আহ্বান জানিয়েছেন।
‘অবাস্তব’
কিন্তু গাজায় মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
দক্ষিণ গাজার তথাকথিত মানবিক অঞ্চল আল-মাওয়াসিতে আশ্রয়স্থল থেকে ৩৯ বছর বয়সী ইব্রাহিম জুদেহ এএফপি’কে বলেছেন, ‘এটা স্পষ্ট যে এই পরিকল্পনাটি অবাস্তব’।
মে মাসে শুরু হওয়া সামরিক অভিযানে বিধ্বস্ত দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহ থেকে আসা এই কম্পিউটার প্রোগ্রামার বলেছেন, ‘এটি এমন শর্ত দিয়ে তৈরি করা হয়েছে যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল জানে হামাস কখনই মেনে নেবে না। আমাদের জন্য এর অর্থ হল যুদ্ধ এবং দুর্ভোগ অব্যাহত থাকবে’।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মঙ্গলবারও গাজা জুড়ে ইসরাইলি বিমান হামলা এবং গোলাবর্ষণ অব্যাহত ছিল।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের বাহিনী সমগ্র অঞ্চল জুড়ে অভিযান চালাচ্ছে বিশেষ করে গাজা সিটিতে, যেখানে তারা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে একটি বড় আক্রমণ চালিয়েছে।
সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘গত দিনে, আইএএফ (বিমান বাহিনী) গাজা উপত্যকা জুড়ে ১৬০ টিরও বেশি সন্ত্রাসী স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাসী, অস্ত্র সংরক্ষণের সুযোগ, পর্যবেক্ষণ পোস্ট এবং সন্ত্রাসী অবকাঠামোগত স্থান’।
পশ্চিম তীরে অবস্থিত কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা সরকারে ভূমিকা রাখার জন্য নির্ধারিত হতে পারে এমন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের ‘আন্তরিক এবং দৃঢ় প্রচেষ্টা’কে স্বাগত জানিয়েছে।
অন্যদিকে, হামাসের মিত্র ইসলামিক জিহাদ বলেছে, এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আরো আগ্রাসনকে ইন্ধন জোগাবে।
গ্রুপটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এর মাধ্যমে, ইসরাইল-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে যুদ্ধের মাধ্যমে যা অর্জন করতে পারেনি তা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে’।
এএফপি’র ইসরাইলি সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরাইলে আক্রমণের ফলে গাজা যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এই আক্রমণে ১,২১৯ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
জাতিসংঘের বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করা হামাস-নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, ইসরাইলি আক্রমণের ফলে গাজার বেশিরভাগ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং ৬৬,০৫৫ জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সাধারণ পরিষদ হলে আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, সম্মেলনে অন্তত ৭৫টি দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধির অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানও রয়েছেন।
নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা) শুরু হবে এই সম্মেলন।
জাতিসংঘ আয়োজিত এ সম্মেলনের লক্ষ্য রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি রাজনৈতিক সমর্থন জোরদার করা, আন্তর্জাতিক মনোযোগ ধরে রাখা, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং মানবাধিকারসহ সংকটের মূল কারণগুলো মোকাবিলায় উদ্যোগ গ্রহণ।
সম্মেলনে মিয়ানমারের বাস্তব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে একটি সার্বিক, সুনির্দিষ্ট ও সময়সীমাবদ্ধ পরিকল্পনা প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা হবে। অগ্রাধিকার পাবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিরাপদ, স্বেচ্ছা ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের বিষয়টি।
উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতা করবেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
এ সম্মেলনে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) প্রতিনিধিত্ব করবে তুরস্ক এবং উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) প্রতিনিধিত্ব করবে কুয়েত।
সম্মেলনের আগে সোমবার হোটেলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি, মিয়ানমার বিষয়ক মহাসচিবের বিশেষ দূত জুলি বিশপ এবং ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল। বৈঠকগুলোতে রোহিঙ্গা সংকটের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
পরে হোটেলে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, আলোচনায় রাখাইন রাজ্যের গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পথনকশা, শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থায়ন বৃদ্ধি এবং রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে হামলার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থগিত করাকে কেন্দ্র করে মামলার নিষ্পত্তিতে ২ কোটি ৪৫ লাখ ডলার দিতে সম্মত হয়েছে ইউটিউব। গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালতে এ-সংক্রান্ত নথি দাখিল করা হয়েছে।
২০২১ সালে ইউটিউব ও আলফাবেটের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন ট্রাম্প। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, ইউটিউব ‘অভূতপূর্ব ক্ষমতা, বাজার দখল এবং জাতীয় জনমত নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা’ অর্জন করেছে। ইউটিউব জানিয়েছিল, তাদের প্ল্যাটফর্মে সহিংসতা উসকে দেওয়ার নীতিমালা লঙ্ঘনের কারণে ট্রাম্পের চ্যানেল স্থগিত করা হয়েছিল।
মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় এটি এখন আনুষ্ঠানিকভাবে খারিজ হয়েছে। তবে গুগলের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য জানানো হয়নি।
এদিকে মাত্র এক সপ্তাহ আগেই ইউটিউব ঘোষণা দেয়, যারা কোভিড-১৯ এবং ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তথ্য বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন, তাদের চ্যানেল পুনরায় চালু করার সুযোগ দেওয়া হবে। সে সময় ইউটিউব জানিয়েছিল, তারা রক্ষণশীল কণ্ঠকে স্বাগত জানায় এবং অ্যাকাউন্ট স্থগিত করার সিদ্ধান্তটি মূলত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের চাপের ফল।
এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফেসবুক-মালিক মেটা একই ধরনের আরেকটি মামলায় ট্রাম্পকে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়। আর ফেব্রুয়ারিতে এক্স (সাবেক টুইটার) ১ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করে। মেটার দেওয়া অর্থের বেশির ভাগই ট্রাম্পের প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরি তহবিলে যাবে। আর ইউটিউবের দেওয়া ২ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের মধ্যে ২ কোটি ২০ লাখ ডলার যাবে ন্যাশনাল মল সংরক্ষণ এবং হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ কোটি মিলিয়ন ডলারের বলরুম নির্মাণ প্রকল্পে।
এই তিনটি মামলাই প্রথম দায়ের করেন ট্রাম্পের আইনজীবী ও রাজনৈতিক মিত্র জন কোয়েল। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বরাতে জানা যায়, ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন এসব নিষ্পত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কোয়েল বলেন, ‘যদি তিনি (ট্রাম্প) পুনর্নির্বাচিত না হতেন, আমরা হাজার বছর ধরে আদালতেই পড়ে থাকতাম।’
বর্তমানে ইউক্রেন ও বেলারুশে ট্রাম্পের ডেপুটি স্পেশাল এনভয় হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কোয়েল।
গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক ইমেইলে কোয়েল ট্রাম্পকে ‘আদর্শ মক্কেল’ বলে আখ্যা দেন। তিনি আরও লেখেন, ‘২০২১ সালের জুলাইয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে আমি যে মামলাগুলো করেছিলাম, সেগুলো সব মিলিয়ে ৬০ মিলিয়ন ডলারে নিষ্পত্তি হয়েছে। আমরা কেবল অর্থ পাইনি, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর আচরণও বদলাতে বাধ্য করেছি।’
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে মামলাটি বন্ধ হয়ে গেলেও ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ের পর তাঁর আইনজীবীরা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন করেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগপর্যন্ত সব মামলাই ছিল কঠিন আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে। ২০২২ সালে এক ফেডারেল বিচারক টুইটারের বিরুদ্ধে করা মামলা খারিজ করে দেন। মেটা ও ইউটিউবের মামলাগুলো তখন স্থগিত ছিল। পরে ট্রাম্পের আইনজীবীরা আপিল করে মামলাগুলো পুনরায় চালুর চেষ্টা করেন।
২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি ইউটিউব প্রথম ট্রাম্পের চ্যানেল সাত দিনের জন্য স্থগিত করে। সে সময় তিনি একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন, যেখানে ৬ জানুয়ারির ভাষণকে তিনি ‘সম্পূর্ণ উপযুক্ত’ বলে দাবি করেছিলেন। ইউটিউব জানায়, ‘সহিংসতা ছড়ানোর সম্ভাবনা’ থাকার কারণে চ্যানেলটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়।
অবশেষে ২০২৩ সালের মার্চে ট্রাম্প পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেওয়ার পর ইউটিউব তার চ্যানেল পুনরায় চালু করে। ইউটিউব এক বিবৃতিতে জানায়, ‘বাস্তব জগতের সহিংসতার ঝুঁকি ও জনগণের নির্বাচনের আগে প্রধান প্রার্থীদের কথা শোনার অধিকারের ভারসাম্য রক্ষা করে’ সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে।
চ্যানেল ফিরে পেয়েই ট্রাম্প একটি পোস্ট করেন। সেই পোস্টে লেখেন ‘আই অ্যাম ব্যাক’ (আমি ফিরে এসেছি)। এর সঙ্গে ছিল ১১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে দখলদার ইসরায়েল। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) গাজা যুদ্ধ বন্ধ ও জিম্মিদের মুক্তি সংক্রান্ত ২০ দফা প্রস্তাব প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে সম্মতি জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
এখন সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করা হবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, হামাস এতে সম্মতি জানালে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ও মৃত সব জিম্মি মুক্তি পাবেন।
অপরদিকে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেবে। সেখানে আমেরিকান, ইউরোপ ও আরব দেশগুলো নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন করা হবে, যেটির মূল দায়িত্বে থাকবেন ট্রাম্প।
এ ছাড়া গাজার মানুষ গাজাতেই থাকবেন। তাদের অন্য কোনো দেশে জোরপূর্বক পাঠানোর চেষ্টা করা হবে না।
হামাসের ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির মাধ্যমে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি শুরু হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, গাজা ও হামাসকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্রকরণ করা হবে। আর এ কাজে সহায়তা করবে আরব দেশগুলো। তারা হামাসকে নিরস্ত্রকরণে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন তিনি। এ ছাড়া সুড়ঙ্গসহ হামাসের সব অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে।
গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ৮ মুসলিম দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। ওই সময় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, আরব দেশগুলো যদি হামাস ও গাজাকে নিরস্ত্র করতে ব্যর্থ হয় তাহলে ইসরায়েল যে কাজ করবে, যেটিতে যুক্তরাষ্ট্র পূর্ণ সমর্থন দেবে।
হামাসকে হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, তারা যদি আজকের প্রস্তাব গ্রহণ না করে এবং গ্রহণ করেও যদি আবার এ থেকে সরে যায় অর্থাৎ নিজেদের পুনর্গঠনের চেষ্টা করে তাহলে ইসরায়েল তাদের নির্মূলের কাজ শেষ করবে।
ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল করবে। এটি সহজ উপায়ে করা যাবে। আবার কঠিন উপায়ে করা যাবে। তবে এটি করতে হবে। আমরা সহজ উপায়কে প্রাধান্য দেব।’
২০২৬ সালে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছে। গত শনিবার কারুর রোড মহাসড়কের ভেলুসামাইপুরামে তেমনই একটি জনসভার আয়োজন করেছিল তামিলাগা ভেত্রি কাজাগম (টিভিকে) নামের নতুন দলটি। ওই সমাবেশ চলাকালে পদদলিত হয়ে ৪০ জন নিহত হন। তামিল চলচ্চিত্র অভিনেতা থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া থালাপতি বিজয় ওই জনসভায় উপস্থিত ছিলেন।
থালাপতি বিজয় তামিল চলচ্চিত্রের অন্যতম বড় তারকা। তার পারিবারিক নাম জোসেফ বিজয় চন্দ্রশেখর। ভক্তদের কাছে তিনি থালাপতি নামে বেশি পরিচিত। তামিল ভাষায় থালাপতি শব্দটির অর্থ ‘কমান্ডার’। অর্থাৎ ভক্তদের কাছে তার নেতৃত্বের গুরুত্ব কতটুকু, তা এ থালাপতি নামের মধ্য দিয়েই বোঝা যায়।
বিজয়ের জন্ম ১৯৭৪ সালের ২২ জুন, চেন্নাইয়ে। তার বাবা এস এ চন্দ্রশেখর একজন পরিচালক। আর মা শোভা চন্দ্রশেখর একজন প্লেব্যাক শিল্পী। বিজয়ের স্ত্রীর নাম সংগীতা স্বর্ণালিঙ্গম। বিজয় চেন্নাইয়ের লয়োলা কলেজ থেকে ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশনে স্নাতক করেছেন।
থালাপতি বিজয় ভারতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেতাদের একজন। তিন দশক ধরে ৬৮টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এ তারকা। দাতব্য কার্যক্রম ও সামাজিক কল্যাণমূলক উদ্যোগগুলোর জন্যও সুপরিচিত তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ছোট বেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল বিজয়ের। ১৯৮৪ সালে পি এস ভীরাপ্পা প্রযোজিত তামিল চলচ্চিত্র ভেত্রিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে পা রাখেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর।
বিজয় শিশুশিল্পী হিসেবে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘নান সিগাপ্পু মানবন’ ছবিতে রজনীকান্তের সঙ্গে শিশুশিল্পী হিসেবে পর্দা ভাগাভাগি করেন।
বিজয় তার ১৮ বছর বয়সে ‘নালাইয়া থির্পু’ ছবিতে প্রথমবারের মতো মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৯২ সালে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। এরপর তিনি অভিনয় করেন ‘সেন্থুরাপান্ডি’, ‘রাসিগান’, ‘দেবা’ ও ‘কোয়েম্বাটুর মাপ্পিল্লাই’ ছবিতে। এগুলোর সবই ব্যবসা সফল।
২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সময়ে বিজয় দৃঢ়ভাবে নিজেকে তামিল চলচ্চিত্রের প্রধান নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ২০০৩ সালে তার অভিনীত ‘তিরুমালাই’ ছবিটি বিরাট সাফল্য পেয়েছিল। এটি ছিল প্রথম তামিল ছবি, যা ঘরোয়া বক্স অফিসে ৫০ কোটি রুপির বেশি আয় করে। একই সঙ্গে এটি মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই সর্বাধিক দর্শক পাওয়ার রেকর্ড গড়ে।
ক্রমেই বিজয় আকাশছোঁয়া তারকাখ্যাতি পান। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের টিকিট কিনতে ভক্তরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিতে থাকেন। থালাপতি বিজয়ই ভারতের প্রথম কোনো অভিনেতা, যিনি একটি চলচ্চিত্রের জন্য ২০০ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়েছেন।
একবার এক সাক্ষাৎকারে প্রযোজক অর্চনা কালপাঠি জানান, ‘দ্য গ্রেটেস্ট অব অল টাইম’ ছবিতে থালাপতি বিজয়ের পারিশ্রমিক ছিল ২০০ কোটি রুপি। এর মধ্য দিয়ে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পারিশ্রমিকের দিক দিয়ে শাহরুখ খান, সালমান খান, প্রভাস, আল্লু অর্জুন, রজনীকান্ত ও আমির খানকেও পেছনে ফেলে দেন তিনি।
তবে এরই মধ্যে আস্তে আস্তে বিজয়ের রাজনীতির প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। তিনি চলচ্চিত্রজগৎকে বিদায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। থালাপতি বিজয়ের শেষ ছবি হলো ‘জনা নায়াগন’। ছবিটি ২০২৬ সালে পোঙ্গল উৎসবের সময় বড় পর্দায় মুক্তি পাবে।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিজয় আনুষ্ঠানিকভাবে চলচ্চিত্র থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। এরপর তামিলাগা ভেত্রি কাজাগম নামের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। দলের সদর দপ্তরের অবস্থান চেন্নাইতে। দলটি ২০২৬ সালে অনুষ্ঠেয় তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছে আর দলটির নেতা বিজয় হবেন মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী।
ধর্মনিরপেক্ষ সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাটাই টিভিকে দলের ভাবাদর্শের ভিত্তি, যা আম্বেদকারবাদ, পেরিয়ারবাদ ও মার্কসবাদ দ্বারা অনুপ্রাণিত।
রাজনীতিতে পা রাখার পর ২০২৪ সালের অক্টোবরে বিজয় প্রথম সমাবেশটি করেন। সেখানে আট লাখের বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন। বিজয় বিজেপি দলটিকে তার টিভিকে দলের মতাদর্শগত শত্রু এবং ডিএমকে–কে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বলে ঘোষণা করেন। তিনি পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ওয়ান ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, টিভিকে গঠনের পর থেকেই থালাপতি বিজয় সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নামেন। অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, তরুণ ও নানা পেশাজীবীকে তিনি নেতৃত্বের ভূমিকায় নিয়ে আসেন। ২০২৬ সালের নির্বাচন সামনে রেখে দলটি ইতোমধ্যেই ৭০ হাজার বুথ এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছে, যা শক্তিশালী সাংগঠনিক প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়।
তামিলনাড়ু যখন ২০২৬ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, তখন বিজয়ের দল টিভিকে–কে ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ভক্তদের অগাধ ভালোবাসাকে তিনি রাজনৈতিক শক্তিতে রূপ দিতে পারবেন কি না, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। যদি সফল হন, তবে বিজয় হয়তো কিংবদন্তি এম জি রামাচন্দ্রন (এমজিআর) ও জয়ললিতার পথ অনুসরণ করে তামিলনাড়ুর রাজনীতির ভবিষ্যৎ নতুনভাবে গড়ে তুলতে পারেন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিতাড়নের পর দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের গ্রাম ও মসজিদ ধ্বংস করেছে। রোহিঙ্গাদের জায়গা দখল করে সেখানে নিরাপত্তাচৌকি তৈরি করেছে তারা। জাতিসংঘের উদ্যোগে পরিচালিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল সোমবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
রাখাইনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চৌকিতে হামলার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী দমন অভিযান শুরু করলে ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক সহিংসতা হয়। উপকূলীয় রাজ্যটি থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়।
এর পর থেকে বাংলাদেশের জনাকীর্ণ শরণার্থীশিবিরগুলোতে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওই দমন অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনের আদর্শ উদাহরণ’ হিসেবে বর্ণনা করে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের উদ্যোগে ২০১৮ সালে গঠিত ইনডিপেনডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম ফর মিয়ানমারের (আইআইএমএম) ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের গ্রাম, মসজিদ, কবরস্থান ও কৃষি জমি ধ্বংস করেছে। তারা সরকারি নথির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জমির অধিকার ও মালিকানা সম্পর্কে অবগত ছিল।’
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মিয়ানমারে ২০১১ সাল থেকে সংঘটিত গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধ সম্পর্কে অনুসন্ধান চালানোর জন্য ২০১৮ সালে আইআইএমএম গঠন করে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ।
প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য, স্যাটেলাইট ছবি, ভিডিও ফুটেজ ও সরকারি নথির ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে আইআইএমএম। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্রের কাছে প্রতিবেদনটি সম্পর্কে বক্তব্য জানতে চেয়েছিল রয়টার্স। তবে তিনি তাতে সাড়া দেননি।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এর আগে বলেছিল, ২০১৭ সালের অভিযানে তারা রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালায়নি। তবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের আগের দিন এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে ক্রমবর্ধমান সংকট এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়ার অচলাবস্থা নিয়ে আলোচনা হবে।
আইআইএমএমের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যন্ত্রপাতি ও শ্রমিক সরবরাহ করার মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনে ইন দিন গ্রামের কথা বলা হয়েছে। সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনী নতুন স্থাপনা তৈরি করতে বসতি ধ্বংস করেছে। ২০১৮ সালে গ্রামটিতে ১০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যার খবর প্রকাশ করেছিল রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইন দিনের মতো গ্রামগুলোতে ধ্বংসাবশেষের ওপর ঘাঁটি গড়ে তোলা হয়। সেখানে জমি খালি করে সেসব জায়গায় নতুন সড়ক, স্থায়ী ভবন, সুরক্ষিত কম্পাউন্ড ও দুটি হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়।’
মিয়ানমারে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনী নোবেলজয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। এরপর শুরু হয় গৃহযুদ্ধ।
বর্তমানে রাখাইন রাজ্যে সংঘাত তীব্র হওয়ায় রোহিঙ্গারা আবারও সহিংসতা ও বাস্তুচ্যুত হওয়ার হুমকির মুখে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু এই সম্প্রদায়ের কিছু সদস্য অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছেন।
সূত্র: রয়টার্স
ভবিষ্যতে চীনের সাথে সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকা কম অস্ত্রের মজুত নিয়ে শঙ্কিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন। এ কারণে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের ওপর জোর দিয়ে উৎপাদন হার দ্বিগুণ বা এমনকি চারগুণ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, বিশেষ করে ক্ষেপণাস্ত্র। গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ব্যক্তিদের বরাতে ওয়াল স্টিট জার্নাল এমনটাই জানিয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, সর্বোচ্চ চাহিদাসম্পন্ন গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের উৎপাদন দ্রুত ত্বরান্বিত করার জন্য পেন্টাগনের নেতারা এবং বেশ কয়েকটি মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিদের মধ্যে উচ্চ-স্তরের বৈঠকের মাধ্যমে উদ্যোগটি কার্যকর হয়েছে।
ওয়াল স্টিট জার্নাল জানায়, এই প্রচেষ্টা শুরু করার জন্য জুন মাসে পেন্টাগনে এক গোলটেবিল বৈঠকে শীর্ষ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহকারীদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। যুদ্ধমন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন এতে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বেশ কয়েকটি অস্ত্র নির্মাতা, আন্দুরিল ইন্ডাস্ট্রিজের মতো বাজারে নতুন প্রবেশকারী এবং রকেট প্রোপেলান্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের সরবরাহকারীদের নির্বাহীরাও উপস্থিত ছিলেন।
পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেলকে এই প্রচেষ্টা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং যুদ্ধমন্ত্রী হেগসেথ আমাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও যুদ্ধাস্ত্র উৎপাদন ত্বরান্বিত করার জন্য অসাধারণ উপায়গুলো অন্বেষণ করছেন। এই প্রচেষ্টা প্রতিরক্ষা শিল্পের নেতা এবং পেন্টাগনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।’
সরকারের ভেতরে এবং বাইরে এই প্রচেষ্টার সাথে জড়িত কিছু ব্যক্তি উদ্বিগ্ন যে, সরকারের লক্ষ্যগুলো বাস্তবসম্মত নয়। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সম্পূর্ণরূপে একত্র হতে দুই বছর সময় লাগতে পারে। নতুন সরবরাহকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অস্ত্রগুলো মার্কিন পরিষেবায় ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য কি না, তা পরীক্ষা করতে হবে।
উৎপাদন ত্বরান্বিত করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ নিয়েও প্রশ্ন আছে। গত জুলাই মাসে সই করা ট্রাম্প প্রশাসনের বিগ বিউটিফুল বিলটিতে পাঁচ বছরের জন্য অতিরিক্ত ২৫ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র তহবিল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, পেন্টাগনের আরও কয়েক বিলিয়ন ডলার বেশি খরচ করতে হবে।
ওয়াল স্টিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুসারে, রাশিয়ার তীব্র বোমাবর্ষণ থেকে ইউক্রেনকে রক্ষা করার জন্য প্যাট্রিয়টসহ ব্যয়বহুল ইন্টারসেপ্টরের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের সাথে তাল মিলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। অর্থাৎ শেষ হওয়ার পরও নতুন ক্ষেপণাস্ত্র অর্ডার ব্যর্থ হয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আশেপাশের ঘাঁটি এবং মিত্রদের সুরক্ষার জন্য এই ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর আরও বেশি ব্যবহার চান। জুনের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন আরও আক্রমণাত্মক উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। এরপর ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ১২ দিনের সংঘর্ষের সময় আমেরিকা শত শত উচ্চমানের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, ফলে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার আরও কমে যায়।
মার্কিন সংবাদপত্রিটি আরও জানায়, চীনের সাথে সম্ভাব্য সংঘর্ষের জন্য পেন্টাগন যে ১২টি অস্ত্রের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করছে, তার মধ্যে রয়েছে: প্যাট্রিয়ট ইন্টারসেপ্টর, লং রেঞ্জ অ্যান্টি-শিপ মিসাইল, স্ট্যান্ডার্ড মিসাইল-৬, প্রিসিশন স্ট্রাইক মিসাইল এবং জয়েন্ট এয়ার-সারফেস স্ট্যান্ডঅব মিসাইল। এর মধ্যে প্যাট্রিয়ট একটি বিশেষ অগ্রাধিকার।
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির পক্ষে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। একইসঙ্গে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি।
সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওবামার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গাজায় যে মানবিক সংকট চলছে, তা উপেক্ষা করা অগ্রহণযোগ্য। উভয়পক্ষকে এমন একটি সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে, যেখানে একটি নিরাপদ ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র এবং স্বায়ত্তশাসন বিদ্যমান থাকবে।’
গাজা যুদ্ধ নিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরল মন্তব্য এমন সময় এলো, যখন নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন এই ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
সাবেক এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ আমরা যারা সহিংসতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নই তাদের এটা বলা, এই মুহূর্তে শিশুদের অনাহারে থাকতে দেওয়া যেতে পারে না। এরই মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজা উপত্যকাকে আরও গুঁড়িয়ে দেওয়ার কোনো সামরিক যুক্তি নেই।’
শুক্রবার আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে এক অনুষ্ঠানে ওবামা বলেন, ইসরায়েলের সব নীতিতে একমত না হওয়ায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হতে পারিনি।
জাতিসংঘের অধিবেশনে শুক্রবার নেতানিয়াহুর ভাষণের শুরুতে অনেক দেশের প্রতিনিধি প্রতিবাদ জানিয়ে অধিবেশন কক্ষ বর্জন করেন। বক্তব্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ায় কড়া প্রতিক্রিয়া দেখান নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জটিল সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে ওবামা বলেন, আমরা সব সময় সব বিষয়ে একমত ছিলাম না। দুঃখজনকভাবে, অনেক সময় নেতৃত্ব এবং রাজনীতিবিদরা এমন একটি স্বার্থপর সম্পর্ক বজায় রাখেন এটা শুধু ‘আমরা বনাম তারা’। কারণ, এতে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকা সহজ হয়। এটা একটি প্রলোভনমূলক খেলা। আমি আমার প্রেসিডেন্সির সময় লক্ষ্য করেছি, আমি ওই অঞ্চলে জনপ্রিয় ছিলাম না। কারণ, আমি তাদের এ ব্যাপারে সমালোচনা করতাম। ফলে আমি এবং ইসরায়েলের তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম না।
এর আগেও ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ‘প্রতিরোধযোগ্য’ দুর্ভিক্ষ বন্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান ওবামা।
তিনি বলেন, যদিও গাজা সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য সব জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়া এবং ইসরায়েলি সামরিক অভিযান বন্ধ করা আবশ্যক। এই নিবন্ধগুলো নিরীহ মানুষের মৃত্যু রোধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে আন্ডারস্কোর করে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, গাজা উপত্যকার মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছানোর ‘অনুমতি দিতে হবে’।
সাবেক এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘বেসামরিক মানুষদের থেকে খাবার এবং পানি দূরে রাখার কোনো যুক্তি নেই।’