আগামীকাল শুক্রবার ভারতে শুরু হচ্ছে আঠারোতম লোকসভার নির্বাচন। সাত দফায় এবার লোকসভার ৫৪৩টি আসনে ভোট গ্রহণ হবে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের রয়েছে ৪২টি আসন। কাল পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার নির্বাচন হবে লোকসভার তিনটি আসনে। আসন তিনটি হলো-কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার আসন। আর বাকি ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে কাল নির্বাচন হচ্ছে ১৭টি রাজ্য ও ৪টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি আসনে। একই সঙ্গে কাল নির্বাচন হবে অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যের বিধানসভার ৬০টি এবং সিকিমের ৩২টি আসনে।
রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো হলো পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, ত্রিপুরা, তামিলনাড়ু, সিকিম, রাজস্থান, পদুচেরি, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয়, মণিপুর, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, লাক্ষাদ্বীপ, জম্মু ও কাশ্মীর, ছত্রিশগড়, আসাম, অরুণাচল প্রদেশ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে।
পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া, বিজেপির নিশীথ প্রামাণিক, কংগ্রেসের পিয়া রায় চৌধুরী এবং বামফ্রন্টের শরিক ফরোয়ার্ড ব্লকের নীতীশ চন্দ্র রায়। রয়েছে অন্য ছোটখাটো দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। জলপাইগুড়ি আসনে লড়ছেন তৃণমূলের নির্মল চন্দ্র রায়, বিজেপির জয়ন্ত কুমার রায়, বামফ্রন্টের সিপিএম প্রার্থী দেবরাজ বর্মণ। রয়েছে অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। আলিপুরদুয়ার আসনে লড়ছেন তৃণমূলের প্রকাশ চিক বরাইক, বিজেপির মনোজ টিগ্গা, বামফ্রন্টের মিলি ওঁরাওসহ অন্যান্য ছোট দল স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
২০১৯ সালের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জিতেছিল ২২, বিজেপি ১৮ এবং কংগ্রেস ২টি আসনে। বামফ্রন্ট ছিল শূন্য। আর গোটা দেশের ৫৪৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ৩০৩টি, কংগ্রেস ৫২টি, সমাজবাদী পার্টি ৫টি, বহুজন সমাজ পার্টি ১০, তৃণমূল ২২, ডিএমকে ২৩, ওয়াইএসআর কংগ্রেস ২২ এবং টিডিপি ২টি আসনে জিতেছিল।
গত নির্বাচনে গোটা দেশে নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিজেপির ৪০ জন, তৃণমূলের ৯ জন, কংগ্রেসের ৬ জন, ওডিশার বিজেডির ৫ জন মিলিয়ে সর্বমোট ৭৮ জন। আর এ বছর ভারতে প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন (১৮-১৯ বছর) ১ কোটি ৮০ লাখ ভোটার।
পশ্চিমবঙ্গে এবার ভোট দেবেন ৭ কোটি ৬৯ লাখ ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৩০ হাজার ৯৮১ জন। নারী ৩ কোটি ৭৩ লাখ ৪ হাজার ৯৬০ জন। রাজ্যে ট্রান্সজেন্ডার ভোটার ১ হাজার ৮৩৭ জন। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন কমিশন ভোট নির্বিঘ্ন করতে সব ভোটকেন্দ্রের জন্য ২৬৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করেছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। আরও থাকছে ১১ হাজার রাজ্য পুলিশ। নির্বচন কমিশন এই রাজ্যের কোচবিহার আসনের ২ হাজার ৪৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৯৬টি কেন্দ্র, আলিপুরদুয়ারের ১ হাজার ৮৬৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৫৯টি এবং জলপাইগুড়ির ১ হাজার ৯০৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৯১টি ভোটকেন্দ্রকে স্পর্শকাতর কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
প্রথম দফার এই তিন আসনের নির্বাচনে ২০১৯ সালে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপির প্রার্থীরা। কোচবিহারে নিশীথ প্রামাণিক, জলপাইগুড়িতে জয়ন্ত রায় এবং আলিপুরদুয়ারে জন বারলা। বিজেপি এবার জন বারলাকে মনোনয়ন না দিয়ে রাজ্য বিধানসভার বিজেপির চিফ হুইপ মনোজ টিগ্গাকে মনোনয়ন দিয়েছে। গত নির্বাচনে এই তিনটি আসনে বিজেপি তৃণমূল প্রার্থীদের পরাজিত করেছিল বিপুল ভোটের ব্যবধানে। এবারও বিজেপি আশাবাদী, এই তিনটি আসনেই আবার তারা জিততে চলেছে। কারণ, এখনো পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ এলাকায় বিজেপি শক্তিশালী।
রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে ভারত, আবারও এমন দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ট্রাম্প সতর্ক করেছেন, যদি ভারত তা না করে, তাহলে ‘বিপুল’ শুল্ক দেওয়া থেকে নিস্তার নেই।
‘আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেন, রুশ তেল কেনার বিষয়টি আর থাকবে না।’ মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানে বসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ট্রাম্প।
ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে এ ধরনের কথোপকথন সম্পর্কে তারা অবগত নয়। এর জবাবে ট্রাম্প বলেন, তারা যদি সেটি বলতে চায়, তাহলে বিপুল হারে শুল্ক দিতে হবে, যেটা তারা নিশ্চয়ই দিতে চাইবে না।
মার্কিন-ভারত বাণিজ্য চুক্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাশিয়ার তেল। ট্রাম্পের অভিযোগ, ভারত-রাশিয়ার তেল কিনে ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থায়ন করছে। ভারতের পণ্যে ট্রাম্প যে ৫০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন, তার অর্ধেকই এই তেল কেনার শাস্তি।
২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর পশ্চিমা দেশগুলো রুশ তেল কেনা বন্ধ করে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে রাশিয়া অনেক ছাড় দিয়ে তেল বিক্রি শুরু করে। সমুদ্রপথে রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হয়ে ওঠে ভারত।
গত বুধবার ট্রাম্প বলেন, মোদি তাকে আশ্বস্ত করেছেন, ভারত রুশ তেল কেনা বন্ধ করবে। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সেদিন দুই নেতার মধ্যে কোনো টেলিফোন আলাপের বিষয়ে তারা অবগত নয়। মন্ত্রণালয় জানায়, ভারতের প্রধান উদ্বেগ হলো- ‘দেশের ভোক্তা স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা।’
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার জানান, রাশিয়ার তেল কেনা অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে ভারত; কিন্তু ভারতীয় সূত্রগুলো বলছে, তাতক্ষণিকভাবে রাশিয়ার তেল কেনায় কমতি দেখা যায়নি।
ভারতের সূত্র জানিয়েছে, দেশটির তেল পরিশোধনাগারগুলো ইতোমধ্যে নভেম্বর মাসের জন্য কার্যাদেশ দিয়েছে, যার মধ্যে কিছু তেল ডিসেম্বর মাসেও আসবে। ফলে ডিসেম্বর বা জানুয়ারির হিসাবে তেল আমদানি কমতে পারে।
পণ্যবিষয়ক তথ্যপ্রতিষ্ঠান কেপলারের হিসাব অনুযায়ী, চলতি মাসে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি ২০ শতাংশ বাড়তে পারে। ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় রুশ তেল শোধনাগার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর রাশিয়া রপ্তানি বাড়িয়েছে। সে কারণে এই বৃদ্ধির সম্ভাবনা। তাতে এ মাসে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি দৈনিক ১৯ লাখ ব্যারেলে পৌঁছাবে।
যুদ্ধবিরতি শুরুর পর ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলিদের নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত ৯৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ২৩০ জন। হামাস–নিয়ন্ত্রিত গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে। গাজার গণমাধ্যম দপ্তর আরও বলেছে, ইসরায়েলিরা এখন পর্যন্ত ৮০ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ইসরায়েলের দাবি, এতে ১ হাজার ১০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। এছাড়া প্রায় আড়াইশ মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নেওয়া হয়।
জবাবে ওই দিনই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। দুই বছরের হামলায় গাজায় নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যা ৬৮ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
সম্প্রতি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা মেনে যুদ্ধবিরতি কার্যকরও হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির আওতায় ইসরায়েলি বাহিনীর গাজায় অভিযান বন্ধ করার কথা। বিনিময়ে গাজায় জিম্মি থাকা ব্যক্তিদের (জীবিত ও মৃত) ছেড়ে দেবে হামাস। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের আওতায় জটিল এ প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা হামাস বাহিনীর বিরুদ্ধে চালানো হামলার জবাবে অঞ্চলটির দক্ষিণে বিমান হামলা শুরু করেছে। তবে হামাস দাবি করেছে, তারা যুদ্ধবিরতি মেনে চলছে। একজন কর্মকর্তা ইসরায়েলকে তাদের নিজস্ব আক্রমণ পুনরায় শুরু করার জন্য ‘অজুহাত’ তৈরি করার অভিযোগ করেছেন।
হামাসকে ‘যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের’ অভিযোগ এনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে নিরাপত্তা বাহিনীকে ‘গাজা উপত্যকায় ‘সন্ত্রাসী স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার’ নির্দেশ দিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অস্বস্তিকর যুদ্ধবিরতি ১০ অক্টোবর কার্যকর হয়। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ধ্বংসাত্মক যুদ্ধবিরতি বন্ধ করে দেয়। এই চুক্তিতে জিম্মি ও বন্দি বিনিময়ের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছিল এবং গাজার ভবিষ্যতের জন্য একটি উচ্ছাকাঙ্ক্ষী রোডম্যাপের পাশাপাশি প্রস্তাবিত হয়েছিল; কিন্ত তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।
সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আজকের (সোমবার) প্রথম দিকে সন্ত্রাসীরা চুক্তির শর্তাবলি অনুসারে রাফাহ এলাকায় সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস করতে পরিচালিত আইডিএফ (সেনা) বাহিনীর ওপর ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে এবং গুলি চালায়’।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আইডিএফ রাফাহ এলাকা লক্ষ্য করে যুদ্ধবিমান এবং কামানের গোলাবর্ষণের মাধ্যমে বিমান হামলার জবাব দিয়েছে’।
এর আগে, একজন ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তা বলেছিলেন, হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে সৈন্যদের ওপর ‘একাধিক আক্রমণ’ চালিয়েছে।
ফিলিস্তিনি এক প্রত্যক্ষদর্শীরা এএফপিকে জানিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। ইসরায়েল এখনো এই অঞ্চলটি দখল করে আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩৮ বছর বয়সি এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, হামাস স্থানীয় ফিলিস্তিনি দল আবু শাবাবের সাথে লড়াই করছিল; কিন্ত হামাস যোদ্ধরা ‘সেনা ট্যাংকের উপস্থিতি দেখে অবাক’।
তিনি বলেছেন, ‘বিমান বাহিনী আকাশ থেকে দুটি হামলা চালায়।’
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করছিলেন, তখন সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর কিছু মন্ত্রী ইসরায়েলি বাহিনীকে ফিলিস্তিনি হামাসের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার আহ্বান জানান।
এর আগে জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী এবং ডানপন্থি ফায়ারব্র্যান্ড ইতামার বেন গভির সেনাবাহিনীকে ‘সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ইসরায়েলি উপত্যকায় যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার’ আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেছেন, ‘হামাস অনুতপ্ত হবে এমনকি তারা যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে তা মেনে চলবে।
তিনি বলেছেন, ‘হামাস আমাদের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক’। হামাসকে ‘সম্পূর্ণরূপে নির্মূল’ করার আহ্বান জানান।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইজ্জত আল-রিশকের এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুদ্ধবিরতির প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, ইসরায়েল ‘চুক্তি লঙ্ঘন করে চলেছে এবং তাদের অপরাধকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য তুচ্ছ অজুহাত তৈরি করছে।’
হামাসের সশস্ত্র শাখা গত রোববার জোর দিয়ে বলেছে, তারা ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলছে এবং রাফায় কোনো সংঘর্ষের ‘কোনা ঘটনা ঘটেনি’।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে মার্কিন শান্তি দূত স্টিভ উইটকফ আগামী সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের ২০-দফা পরিকল্পনার অধীনে ইসরায়েলি বাহিনী তথাকথিত হলুদ রেখা অতিক্রম করে সৈন্য প্রত্যাহার করেছে। যার ফলে গাজার প্রায় অর্ধেক অংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে অঞ্চলের সীমানা কিন্ত এর প্রধান শহরগুলো নয়।
হামাস ২০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে এবং নিহতদের অবশিষ্ট মরদেহ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
৭ অক্টোবর, ২০২৩ সালে ইসরায়েলের ওপর হামাসের আক্রমণের ফলে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে গাজায় কমপক্ষে ৬৮,১৫৯ জন নিহত হয়েছে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, জাতিসংঘ মনে করে বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে মৃতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী এবং শিশু।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের সরকারি পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এএফপির হিসাব অনুসারে, ২০২৩ সালে ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলায় ১,২২১ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক।
ইসরায়েল গত রোববার ১৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ গাজায় ফিরিয়ে দিয়েছে। ফলে হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মোট হস্তান্তরের সংখ্যা ১৫০ জনে দাঁড়িয়েছে।
গাজায় এখনো জিম্মি মরদেহের বিষয়টি যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে একটি জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েল মূল গেটটি পুনরায় খোলার সাথে যুক্ত করেছে। নিহতদের সকলকে উদ্ধারের জন্য এই অঞ্চলে পাঠানো হবে।
ত্রাণ সংস্থাগুলো খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধের প্রবাহ দ্রুততর করার জন্য মিসর থেকে রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং পুনরায় খোলার আহ্বান জানিয়েছে।
হামাস এখন পর্যন্ত নিরস্ত্রীকরণ প্রতিরোধ করেছে এবং যুদ্ধ বিরতির পর থেকে গাজার ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ পুনরায় প্রতিষ্ঠার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে।
দলটি বলেছে, গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে অবশিষ্ট মৃরদেহগুলো উদ্ধারের জন্য তাদের সময় এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, তিনি ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাফাহ ক্রসিং বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।’
এতে বলা হয়েছে, ‘জিম্মি এবং নিহতদের মরদেহ ফিরিয়ে আনা এবং কাঠামো বাস্তবায়নে হামাস কীভাবে তার ভূমিকা পালন করে তার ওপর ভিত্তি করে এটি পুনরায় খোলার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
গত শনিবার রাতে হামাস সতর্ক করে দিয়েছিল, রাফাহ ক্রসিং বন্ধ করার ফলে ‘অবশেষ উদ্ধার এবং স্থানান্তরে উল্লেখযোগ্য বিলম্ব’ হবে।
কানাডা থেকে রেকর্ডসংখ্যক ভারতীয় নাগরিককে ‘জোরপূর্বক ফেরত’ পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। দেশটির সীমান্তসেবা সংস্থা কানাডিয়ান বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির (সিবিএসএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে এ সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস তাদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের ২৮ জুলাই পর্যন্ত কানাডা থেকে ১ হাজার ৮৯১ জন ভারতীয়কে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ২০২৪ সালে পুরো বছর মিলিয়ে এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯৯৭ জন। ২০১৯ সালে সংখ্যাটি ছিল মাত্র ৬২৫ জন। অর্থাৎ, গত কয়েক বছরে কানাডা থেকে ভারতীয়দের ফেরত পাঠানোর হার কয়েক গুণ বেড়েছে।
মেক্সিকানদের পর এবার ভারতীয়রাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক নাগরিক, যারা কানাডা থেকে জোরপূর্বক দেশে ফিরছেন। ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত মেক্সিকান ফেরত পাঠানো হয়েছে ২ হাজার ৬৭৮ জনকে আর ভারতীয়দের পর তৃতীয় স্থানে আছে কলম্বিয়ার নাগরিকেরা, যাদের সংখ্যা ৯৮১।
কেন বাড়ছে ফেরত পাঠানো ভারতীয়দের সংখ্যা?
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি সম্প্রতি টরন্টোতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তার সরকার বিদেশি অপরাধীদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শক্তিশালী করছে।
মার্ক কার্নি বলেন, ‘আমরা অভিবাসনব্যবস্থায় একাধিক সংস্কার আনছি। অপরাধী বিদেশিদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও দ্রুত, কার্যকর ও নজরদারিমূলক করতে কাজ চলছে।’
এদিকে কার্নির এ মন্তব্য এমন সময়ে এল, যখন কানাডায় অভিবাসনবিরোধী মনোভাব ক্রমেই বাড়ছে।
১০ অক্টোবর পিল রিজিয়নাল পুলিশ (পিআরপি) এক বিবৃতিতে জানায়, তারা প্রথমবারের মতো পিল ক্রাউন অ্যাটর্নি অফিস ও কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির সঙ্গে মিলে বিদেশি অপরাধীদের কানাডা থেকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি বিচারপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিবেচনা করছে।
এ ঘোষণা আসে কানাডায় মেইল (ডাক চিঠি) চুরির অভিযোগে আট ভারতীয় নাগরিকের গ্রেপ্তারের পর। তাদের বিরুদ্ধে ৪৫০টি মেইল চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৪ লাখ কানাডীয় ডলার।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন সুমনপ্রীত সিং, গুরদীপ চাঠা, জশানদীপ জাট্টানা, হারমান সিং, জাসানপ্রীত সিং, মানরূপ সিং, রাজবীর সিং ও উপিন্দরজিৎ সিং। তাদের বিরুদ্ধে ৩৪৪টি অভিযোগ আনা হয়েছে।
ফেরত পাঠানোর অপেক্ষায় আরও হাজারো ভারতীয়
সিবিএস এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কানাডা থেকে ফেরত পাঠানোর তালিকায় ভারতীয়দের সংখ্যা সর্বোচ্চ—প্রায় ৬ হাজার ৮৩৭ জন। এরপর মেক্সিকোর ৫ হাজার ১৭০ জন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ১ হাজার ৭৩৪ নাগরিক রয়েছেন।
মোট ৩০ হাজার ৭৩৩ জনের ফেরতপ্রক্রিয়া চলছে, যার মধ্যে প্রায় ২৭ হাজারই আশ্রয়প্রার্থী। আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যেও ভারতীয় নাগরিকেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
২০১৯ সাল থেকে কানাডায় ভারতীয়দের অভিবাসনের সংখ্যা বাড়লেও আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যান ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ফেরত পাঠানোর ঘটনাও বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, অভিবাসননীতিতে কঠোরতা ও রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল ‘বিদেশি অপরাধী’ ইস্যু এখন সরকারের নতুন অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘের নীতিবিষয়ক এক হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রুত বেড়ে ওঠা জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং ডিজিটালাইজেশনের বিস্তারে নারী ও পুরুষ উভয়েই চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তবে নারীরা এর প্রভাব বেশি ভোগ করবেন। এটি কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য আরও বাড়াতে পারে।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক–বিষয়ক দপ্তরের (ডিইএসএ) প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী নারীদের হাতে থাকা চাকরির ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ জেনারেটিভ এআইয়ের কারণে স্বয়ংক্রিয় হয়ে যেতে পারে বা বড় পরিবর্তনের মুখে পড়তে পারে। অন্যদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে এ হার ২১ দশমিক ১ শতাংশ।
এ ঝুঁকির মূল কারণ, কাঠামোগত বৈষম্য, প্রযুক্তিতে লিঙ্গভিত্তিক পক্ষপাত ও ডিজিটাল উপকরণে নারীদের অসম প্রবেশাধিকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ ও উচ্চমধ্যম আয়ের দেশগুলোয় এ প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হবে। কারণ, এসব দেশে নারীরা মূলত অফিস সহকারী, শিক্ষা ও জনপ্রশাসনের মতো খাতে বেশি কাজ করেন। এসব খাতে জেনারেটিভ এআইয়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি।
এ প্রবণতা নতুন নয়। ডিজিটাল রূপান্তরের আগের ধাপগুলোতেও একই রকম চিত্র দেখা গেছে। তখন যেসব প্রযুক্তি মূলত রুটিন বা হাতের কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করত, সেসবও নারীদের ওপর বেশি প্রভাব ফেলেছিল।
২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ লাখ নারী তাদের প্রশাসনিক সহায়তা (যেমন অফিস সহকারী, রিসেপশনিস্ট, ডেটা এন্ট্রি ক্লার্ক, ক্যালেন্ডার বা ফাইল ম্যানেজমেন্টের কাজ) কিংবা অ্যাসেম্বলি লাইনের চাকরি হারান। একই সময় পুরুষদের এমন চাকরি হারানোর সংখ্যা ছিল ১০ লাখ।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘চাকরি হারানো এখন অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ।’ এতে আরও বলা হয়, ‘আগের স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তিগুলো মূলত স্বল্প দক্ষ কাজকে প্রভাবিত করেছিল। কিন্তু জেনারেটিভ এআই বিভিন্ন দক্ষতার স্তরের কাজকে স্বয়ংক্রিয় করে আরও বিস্তৃত প্রভাব ফেলতে পারে।’
চাকরি হারানোর ঝুঁকির এ সমস্যাকে আরও জটিল করছে প্রযুক্তি খাতে নারীদের স্বল্প উপস্থিতি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (এসটিইএম) বিষয়ে নারীদের কম অংশগ্রহণ ‘লিঙ্গবৈষম্যকে আরও গভীর করতে পারে’। ৭৩টি দেশের একটি নমুনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এসব ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ এক-তৃতীয়াংশের কম।
নারীদের অংশগ্রহণের এ ব্যবধান শুধু বর্তমান চাকরির ক্ষেত্রেই নয়, ভবিষ্যতের জন্যও উদ্বেগজনক। কারণ, পক্ষপাতদুষ্ট তথ্য দিয়ে প্রশিক্ষিত এআই ব্যবস্থাগুলো ‘চাকরির নিয়োগ ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বৈষম্যকে স্থায়ী এবং আরও তীব্র করতে পারে’ বলে সতর্ক করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এ পরিস্থিতিতে প্রযুক্তি খাতে কর্মীদের মধ্যে বৈচিত্র্য বাড়ানো সংকটের সম্পূর্ণ সমাধান না হলেও বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এটি পক্ষপাতপূর্ণ প্রযুক্তির ঝুঁকি চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণে তুলনামূলকভাবে বেশি সক্ষম।
তবে ঝুঁকির পাশাপাশি ডিজিটালাইজেশন নারীদের জন্য নতুন অর্থনৈতিক সুযোগও তৈরি করছে। যেমন দূর থেকে বা অনলাইনে কাজ করা ও গিগ ইকোনমির (স্বল্পমেয়াদি কাজের মাধ্যমে উপার্জন) মতো নতুন কর্মপদ্ধতি নারীদের জন্য এমন সুযোগ তৈরি করছে, যাতে তারা সময়ের কড়াকড়ি বা পরিবারের দায়িত্বের মতো প্রচলিত বাধাগুলো এড়িয়ে কাজ করতে পারেন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ডিজিটালাইজেশন আরও নমনীয় ও উদ্ভাবনী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে নারীদের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়নের পথ খুলে দিতে পারে।’
উন্নয়নশীল দেশগুলোয় অনেক নারী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও ই-কমার্সের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন। তবে এখনো এক স্থায়ী ‘ডিজিটাল লিঙ্গ ব্যবধান’ অনেক নারীকে এ সুযোগ থেকে দূরে রাখছে।
এ ঝুঁকি মোকাবিলা ও সুযোগ কাজে লাগাতে জাতিসংঘ সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা নারীদের জন্য সাশ্রয়ী ইন্টারনেট–সুবিধা বাড়িয়ে, ডিজিটাল দক্ষতার প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং প্রযুক্তি খাতে নারীদের কর্মসংস্থান ও নেতৃত্বে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে ডিজিটাল লিঙ্গ ব্যবধান দূর করার বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়।
ফ্রান্সের সংস্কৃতি মন্ত্রী রাশিদা দাতি জানিয়েছেন, বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত শিল্পকলা জাদুঘর ল্যুভর মিউজিয়ামে রোববার সকালে একটি ডাকাতির ঘটনার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ লিখেছেন, জাদুঘরটি খোলার ঠিক পরেই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। আমি বর্তমানে ঘটনাস্থলে আছি, পুলিশ তদন্ত করছে।
ল্যুভর কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিশেষ কারণবশত আজকের জন্য জাদুঘরটি বন্ধ থাকবে। তবে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
ফরাসি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, লুট হওয়া বস্তুগুলোর মধ্যে মূল্যবান গয়নাও থাকতে পারে।
প্যারিসের ল্যুভর জাদুঘর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিদর্শিত জাদুঘরগুলোর একটি। এখানে সংরক্ষিত রয়েছে বহু ঐতিহাসিক ও বিখ্যাত শিল্পকর্ম, যার মধ্যে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসা অন্যতম।
পুলিশ সূত্রে এএফপি জানিয়েছে, একদল অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতকারী স্কুটারে করে এসে জাদুঘরে প্রবেশ করে।
ঘটনাস্থলে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং সংস্কৃতি মন্ত্রী রাশিদা দাতি নিজেও জাদুঘরে উপস্থিত আছেন।
ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে সোনার ৯ আইটেম নিয়ে গেছে ডাকাতরা
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়ামে রোববার সকালে এক অবিশ্বাস্য ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
ফরাসি গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, তিনজন মুখোশধারী মিউজিয়াম খোলার কিছু পরেই ভেতরে প্রবেশ করে। তারা সেন নদীমুখী দিকের অ্যাপোলো গ্যালারিতে পৌঁছাতে একটি মালবাহী লিফট ব্যবহার করে, যেখানে ফ্রান্সের রাজকীয় গয়নার সংগ্রহ রাখা আছে।
ডাকাতরা কাচ ভেঙে গ্যালারিতে ঢোকে এবং নয়টি মূল্যবান সোনার আইটেম নিয়ে পালিয়ে যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তারা একটি মোটর-স্কুটারে করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়েছে।
এখনো লুট হওয়া গয়নার মূল্য নির্ধারণের কাজ চলছে, তবে ধারণা করা হচ্ছে এগুলোর ঐতিহাসিক ও আর্থিক মূল্য দুটোই বিপুল।
জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এক্স-এ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিশেষ কারণে ল্যুভর জাদুঘর বন্ধ রাখা হয়েছে।
ফরাসি সংস্কৃতি মন্ত্রী রাশিদা দাতি জানিয়েছেন, ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, ল্যুভর মিউজিয়াম বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দর্শকপ্রিয় জাদুঘর, যেখানে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসাসহ অমূল্য শিল্পকর্ম ও ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে।
পাকিস্তান দেশটির নারীদের জন্য বিশেষভাবে গঠিত রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংক সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। গত শুক্রবার ফার্স্ট উইমেন ব্যাংক লিমিটেড (এফডব্লিউবিএল) আরব আমিরাতের ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং কোম্পানির (আইএইচসি) কাছে বিক্রি করে দেয়। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আবুধাবিভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং কোম্পানির (আইএইচসি) কাছে পাকিস্তানি ব্যাংকটির মালিকানা হস্তান্তরকে পাকিস্তান–সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনৈতিক সম্পর্কের এক মাইলফলক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে আরও যৌথ উদ্যোগ ও অংশীদারত্বের পথ খুলে দেবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই লেনদেনকে তিনি ‘বৃষ্টির প্রথম ফোঁটা’ হিসেবে দেখছেন—যা পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে আরও গভীর অর্থনৈতিক সহযোগিতার সূচনা করবে।
এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সরকার–থেকে–সরকার (জি–টু–জি) কাঠামোর আওতায় এফডব্লিউবিএলের বেশির ভাগ শেয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে আইএইচসির হাতে হস্তান্তর করা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দেন টু–পয়েন্ট জিরো–এর চেয়ারম্যান শেখ জায়েদ বিন হামদান বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।
এর আগে, পাকিস্তানের ফেডারেল ক্যাবিনেট ব্যাংকটির সরকারি মালিকানাধীন পুরো শেয়ার বিক্রির অনুমোদন দেয়। এর বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি ৪৬ লাখ ডলার (প্রায় ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন রুপি) বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো মূল্য প্রকাশ করা হয়নি।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ব্যাংক অধিগ্রহণের পাশাপাশি আইএইচসি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মোট ন্যূনতম ১০ বিলিয়ন রুপি মূলধন সরবরাহ করবে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এফডব্লিউবিএলের ইক্যুইটির পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন রুপি। নতুন বিনিয়োগকারী বাকি ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন রুপি যোগ করে ঘাটতি পূরণ করবে।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ বলেন, এই চুক্তি সফলভাবে সম্পন্ন করতে উপ–প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার ও বেসরকারীকরণবিষয়ক উপদেষ্টা মোহাম্মদ আলির ‘দৃঢ় ও মনোযোগী নেতৃত্ব’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন ও বেসরকারি খাতনির্ভর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শাহবাজ শরিফ আরও জানান, নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার যে লক্ষ্য নিয়ে ফার্স্ট উইমেন ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা শুধু বজায় থাকবে না—বরং পেশাদার ব্যবস্থাপনা ও কৃষি ও শিল্প খাতে লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হবে।
আইএইচসির প্রধান নির্বাহী সৈয়দ বাসার শুয়াইব বলেন, পাকিস্তানের ব্যাংকিং খাতে এই বিনিয়োগ আমাদের আস্থার প্রতিফলন এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। তিনি বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানের আর্থিক খাতে বড় সম্ভাবনা দেখছি। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংককে আধুনিকীকরণ, স্বয়ংক্রিয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক আর্থিক সিদ্ধান্তে অগ্রগতি আনতে আমরা কাজ করব।’
সরকারি এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ইন্টার–গভর্নমেন্টাল কমার্শিয়াল ট্রানজ্যাকশন অ্যাক্ট ২০২২–এর আওতায় এটিই প্রথম ব্যাংক বেসরকারীকরণ। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ফার্স্ট উইমেন ব্যাংক বর্তমানে পাকিস্তানজুড়ে ৪২টি শাখা পরিচালনা করছে, যেখানে খুচরা, এসএমই ও করপোরেট গ্রাহকদের সেবা দেওয়া হয়।
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) এবং ছোট ডানঘেঁষা দল জাপান ইনোভেশন পার্টি (জেআইপি বা ইশিন) একত্রে জোট সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যার মধ্য দিয়ে সানায়ে তাকাইচির দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পথ খুলে যাচ্ছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।
কিয়োদো সংবাদ সংস্থা রোববার জানিয়েছে, এলডিপির নবনির্বাচিত নেতা সানায়ে তাকাইচি ও জেআইপি প্রধান হিরোফুমি ইয়োশিমুরা কাল সোমবার জোট সরকার গঠনের চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছেন।
এ মাসের শুরুতে তাকাইচি ক্ষমতাসীন দল এলডিপির নেতা নির্বাচিত হন, কিন্তু তার নেতৃত্বাধীন পূর্বের জোট সরকার ভেঙে পড়লে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। এর পর থেকে এলডিপি নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা চালিয়ে আসছে, যা তাকাইচির প্রধানমন্ত্রিত্বের সম্ভাবনাকে আবারও জোরদার করেছে। এলডিপি তাকাইচিকে জোট গঠনের দায়িত্ব দিয়েছে।
জাপানের প্রভাবশালী দৈনিক ইয়োমিউরি শিমবুনও জানিয়েছে, সোমবার বৈঠকের পর তাকাইচি ও ইয়োশিমুরা সম্ভবত জোট সরকার গঠনের চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন। অন্যদিকে, জেআইপি আজ ওসাকায় নির্বাহী বোর্ডের বৈঠক করবে এবং একই দিন পার্লামেন্ট সদস্যদের পূর্ণাঙ্গ সভায় এলডিপির সঙ্গে চুক্তির চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।
এলডিপির দীর্ঘদিনের সহযোগী দল কোমেইতো ২৬ বছর পর সরকার থেকে সরে দাঁড়ালে নতুন জোট সরকার গঠনের আলোচনা শুরু হয় এবং জাপান রাজনৈতিক অচলাবস্থায় পড়ে। এলডিপি ও জেআইপি যদি আনুষ্ঠানিকভাবে জোট বাঁধে, তবে তাকাইচি মঙ্গলবারই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে পারেন।
তবে, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের ক্ষেত্রে দুই দল মিলে এখনো দুটি আসনের ঘাটতি রয়েছে। যদি ভোট দ্বিতীয় দফায় গড়ায়, তাহলে তাকাইচিকে শুধু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে বেশি পার্লামেন্ট সদস্যের সমর্থন পেতে হবে।
এই জোট সরকার গঠনের প্রস্তুতি এমন সময় চলছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাপান সফরের মাত্র কয়েক দিন বাকি। ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ায় বার্ষিক এশিয়া–প্যাসিফিক ইকোনমিক কো–অপারেশন (অ্যাপেক) সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে জাপান সফরে যাবেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, মায়ামি ও লস এঞ্জেলসসহ বিভিন্ন শহরে এই বিক্ষোভ হয়েছে। নিউইয়র্কে টাইম স্কোয়ারের সামনের সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে।
সড়ক ও পাতাল রেলেও প্রবেশপথগুলো লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়েছিল। তারা ‘রাজতন্ত্র নয়, গণতন্ত্র’ এবং ‘সংবিধান বিকল্প কিছু নয়’- এমন শ্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেছেন।
এই বিক্ষোভের আগে ট্রাম্পের সহযোগীরা অভিযোগ করেছেন যে, এর সাথে বামপন্থি অ্যান্টিফা আন্দোলনের যোগসূত্র আছে এবং এর নিন্দা করে তারা এই বিক্ষোভের নাম দিয়েছেন ‘হেইট আমেরিকা র্যালি’ বা ‘আমেরিকাকে ঘৃণা সমাবেশ’।
এদিকে আয়োজক ও বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, শনিবার তাদের বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ। ‘নো কিংস’ কর্মসূচির মূল নীতিকে অহিংস বলে আয়োজক গোষ্ঠী তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে। তারা অংশগ্রহণকারীদের সম্ভাব্য যেকোনো উত্তেজনা পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন। নিউইয়র্কে বিক্ষোভকারীরা ড্রামসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে ‘গণতন্ত্র দেখতে এমনই’ এমন শ্লোগান দিচ্ছিলেন।
বিক্ষোভের সময় আকাশে হেলিকপ্টার ড্রোন উড়তে দেখা গেছে এবং পাশে পুলিশ অবস্থান করছিল। নিউইয়র্কের পুলিশ জানিয়েছে, ১ লাখেরও বেশি মানুষ ওই শহরে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে।
টাইম স্কোয়ারেই কুড়ি হাজারের বেশি মানুষের অংশ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার একজন পুলিশ কর্মকর্তা। ফ্রি ল্যান্স লেখক ও সম্পাদক বেথ জেসলফ বলছেন, তিনি এই প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন কারণ তার মনে হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন ‘ফ্যাসিজমের দিকে যাচ্ছে এবং এটি একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার’।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ব্যবহারের একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন। তিনি কংগ্রেসের অনুমোদন করা তহবিল ছাড় করাতে নির্বাহী আদেশ ব্যবহার করেছেন। ফেডারেল সরকারের একাংশ ভেঙে দিয়েছেন এবং অনেক দেশের ওপর ব্যাপক শুল্কারোপ করেছেন। বিভিন্ন রাজ্য গভর্নরের আপত্তি সত্ত্বেও ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন।
প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তার পদক্ষেপ দেশ পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। তিনি স্বৈরশাসক বা ফ্যাসিবাদী হওয়ার অভিযোগকে উন্মাদনা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তার সমালোচকরা অবশ্য বলছেন, তার কিছু পদক্ষেপ অসাংবিধানিক, যা আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।
মাসিমো মাসকলি নিউজার্সির একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী। তিনি বেড়ে উঠেছেন ইতালিতে। তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কারণ তার মতে আমেরিকা এখন যেই পথ অনুসরণ করছে, তা তার দেশ ইটালি করেছিল গত শতাব্দীতে।
‘আমি একজন ইতালিয়ান বীরের ভাতিজা। তিনি মুসোলিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধে অংশ নিয়ে ফ্যাসিস্টদের হাতে মারা গিয়েছিলেন। ৮০ বছর পর আমেরিকাতে আবার সেই ফ্যাসিজম আমি আশা করি না,’ বলেছেন তিনি।
সিনেটে সংখ্যালঘু দলের নেতা ও নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমারও এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। ‘আমেরিকায় আমাদের কোনো স্বৈরশাসক নেই এবং আমরা ট্রাম্পকে আমাদের গণতন্ত্র ধ্বংস করতে দেব না,’ শুমার লিখেছেন সামাজিক মাধ্যম এক্সে।
ওয়াশিংটন ডিসির বিক্ষোভে বক্তব্য দিয়েছেন ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। ‘ঘৃণা নয়, বরং আমরা আমেরিকাকে ভালোবাসি বলেই আমরা এখানে,’ হাজার হাজার মানুষের এক সমাবেশে বলেছেন তিনি।
ওয়াশিংটন ডিসির এই মিছিল সমাবেশে ট্রাম্পের ‘আমেরিকাকে মহান করুন’ শ্লোগান লেখা টুপি পড়ে এক ব্যক্তিকেও যোগ দিতে দেখেছে বিবিসি। তিনি বলেছেন, তিনি বিক্ষোভটি দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
ওদিকে বিক্ষোভ হয়েছে ইউরোপেও। বার্লিন, মাদ্রিদ ও রোমে আমেরিকার বিক্ষোভের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাস্তায় এসেছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। লন্ডনে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সামনেও কয়েকশত মানুষ জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করেছেন। টরেন্টোতে যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেটের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে।
ফক্স নিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বিদ্রূপ করে বলেছেন, সামনের সমাবেশগুলোতে তিনি ভাষণ দেবেন বলে তার কাছে মনে হচ্ছে। ‘কিং! এটা অভিনয় নয়,’ ট্রাম্প সাক্ষাৎকারটিতে বলেছেন। ‘আপনি জানেন তারা আমাকে রাজা বলছে। আমি রাজা নই’।
কানসাসের গভর্নর রজার মার্শাল সমাবেশের আগে সিএনএনকে বলেছেন ‘আমাদের ন্যাশনাল গার্ড বের করে আনতে হবে। আশা করি এটি শান্তিপূর্ণ হবে। আমার সন্দেহ আছে।’
বিভিন্ন রাজ্যে রিপাবলিকান গভর্নররা কয়েকটি রাজ্যে ন্যাশনাল গার্ডকে প্রস্তুত রেখেছিলেন। বিক্ষোভকে সামনে রেখে টেক্সাস গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট গত বৃহস্পতিবার রাজ্যে ন্যাশনাল গার্ডকে সক্রিয় করেছিলেন।
তিনি বলেছেন, ‘পরিকল্পিত অ্যান্টিফা-লিংকড বিক্ষোবের’ জন্য ট্রুপস দরকার হবে।
ডেমোক্র্যাটরা এসব পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন। রাজ্যের শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতা গিনি উ বলেছেন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে সশস্ত্র সৈন্য পাঠানোর মতো কাজই স্বৈরশাসক ও রাজা করে ‘এবং গ্রেগ অ্যাবোট নিজেকে তাদেরই একজন প্রমাণ করেছেন।’
ভার্জিনিয়ার রিপাবলিকান গভর্নর গ্লেন ইয়ংকিনও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। ট্রাম্পের অনুরোধে ওয়াশিংটন ডিসিতেও ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন রয়েছে গত অগাস্ট থেকেই। তবে তাদের এবারের বিক্ষোভে চোখে পড়েনি। স্থানীয় পুলিশ অবশ্য রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের মধ্যে ট্রাম্পকে কেন্দ্র করে মারাত্মক বিভাজন রয়েছে। রয়টার্স ও ইপসসের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে ৪০ শতাংশ তার পক্ষে আর ৫৮ শতাংশ তার বিপক্ষে। তবে সাধারণত দায়িত্ব পালনের সময় প্রেসিডেন্টদের জনপ্রিয়তা কিছুটা কমতে থাকে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তাদের দাবি হামাসও যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় নতুন করে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র দাবি করেন, হামাস যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন করে ‘ইয়েলো লাইন’-এর ওপারে ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর একাধিক হামলা চালিয়েছে।
সেনাবাহিনীর দাবি, এই ‘ইয়েলো লাইন’ হচ্ছে সেই সীমারেখা, যার বাইরে ইসরায়েলি বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ অনুযায়ী নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল।
অন্যদিকে হামাস জানিয়েছে, তারা এখনো যুদ্ধবিরতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং বরং ইসরায়েলই একাধিকবার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছে।
বার বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসের শুরুতে কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ৪৭ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ফলে ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৪৩ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েলি সরকার বলছে, গাজা ও মিসরের মধ্যবর্তী রাফা সীমান্ত ক্রসিং ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ বন্ধ থাকবে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
৪৭ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল
বার বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসের শুরুতে কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ৪৭ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
হামাস এরই মধ্যে আরও দুই জিম্মির মরদেহ ফেরত দিয়েছে। হামাস বলছে, নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি চুক্তি ‘ব্যাহত করার জন্য তুচ্ছ অজুহাত’ কাজে লাগাতে চাচ্ছেন।
শনিবার রাতে হামাস জানিয়েছে, রাফা ক্রসিং বন্ধ থাকায় মৃতদেহ উদ্ধার ও স্থানান্তরে উল্লেখযোগ্য বিলম্ব হবে। গাজার মধ্যে এখনো বন্দি ও মৃতদেহ ফেরতের বিষয়টি যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়নের অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাফাহ ক্রসিং পুনরায় খোলার সঙ্গে সব মৃতদেহ পুনরুদ্ধারের বিষয়টি যুক্ত করেছে ইসরায়েল।
২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া সংঘাতে গাজায় কমপক্ষে ৬৮ হাজার ১১৬ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ২০০ জন আহত হয়েছে। অপরদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়।
যুদ্ধবিরতির পরেও বন্ধ গাজার ‘লাইফলাইন’ রাফা ক্রসিং
যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার, তুরস্কের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও এখনো বন্ধ রয়েছে ‘লাইফলাইন’ খ্যাত রাফা ক্রসিং। গাজার শহর থেকে প্রায় ৩০-৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে মিসর সীমান্তে অবস্থিত এ চেকপোস্টটি মাত্র ৩০০ মিটারের একটি রাস্তা। তবে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ এবং ত্রাণ পৌছানোর প্রধান আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বার এ রাফা ক্রসিং।
হামাসের ওপর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে ফিলিস্তিনিদের জীবন বাঁচানোর এ পথটি বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে রাফা ক্রসিং।
কার্যালয়ের বরাত দিয়ে দ্য নাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রসিং পুনরায় খোলার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে হামাস কতটা তাদের দায়িত্ব পালন করছে তার ওপর। বন্দিদের ফিরানো এবং মৃতদেহ হস্তান্তরসহ সম্মত ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়ন করছে কিনা সে বিষয় বিবেচনা করে রাফা ক্রসিং খোলা হবে।
গাজার মধ্যে এখনও বন্দি ও মৃতদেহ ফেরতের বিষয়টি যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়নের অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাফা ক্রসিং পুনরায় খোলার সঙ্গে সব মৃতদেহের পুনরুদ্ধারের বিষয়টি যুক্ত করেছে ইসরায়েল।
এর আগে নয় মাস পর গত ফেব্রুয়ারিতে সীমিত সময়ের জন্য রাফা ক্রসিং খুলে দেওয়া হয়েছে। তখন যে পরিমান ত্রাণ প্রবেশের কথা ছিল তা হটে দেয়নি ইসরায়েল। এছাড়া তখন ছয় হাজারের বেশি রোগীকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে তা করতে দেয়নি ইসরাইয়েল। ফলে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচার হামলা ও গণহত্যার কারণে গাজায় মানব সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ শুরু হয়।
গাজায় ফের হামলা শুরু করতে বললেন ইসরায়েলি মন্ত্রীরা
ইসরায়েলের অতি-ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরসহ একাধিক মন্ত্রী গাজায় আবারও আক্রমণ শুরু করার জন্য নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার আল জাজিরা জানিয়েছে, বেন-গভির এক্স-পোস্টে বলেন, তিনি চান ইসরায়েলি বাহিনী ‘সর্বোচ্চ শক্তির সঙ্গে গাজা উপত্যকায় সম্পূর্ণরূপে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করুক’।
আল জাজিরা জানিয়েছে, আজ সকালে গাজাজুড়ে বেশ কয়েকটি বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর মন্ত্রীদের এ বক্তব্য এলো।
ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এক্স-পোস্টে একটি শব্দ লিখে একই ইঙ্গিত দিছেন: ‘যুদ্ধ!’
প্রবাসীবিষয়ক মন্ত্রী আমিচাই চিকলি বলেন, ‘যতদিন হামাস থাকবে, যুদ্ধ থাকবেই।’
নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার আরেক সদস্য আভি ডিচটার পরিস্থিতিকে ‘কঠিন ও জটিল’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং হামাসকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনে অভিযুক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, সমস্ত জীবিত জিম্মিরা আমাদের হাতে, পরিস্থিতি বদলে গেছে। ইসরায়েল হামাসকে নিরস্ত্র করার ক্ষেত্রে হাল ছাড়বে না।
দীর্ঘদিনের গণহত্যা ও দুর্ভিক্ষের মাঝে কয়েকদিন আগে মার্কিন মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করে হামাস ও ইসরায়েল। তবে কয়েকদিন না গড়াতেই ইসরায়েলি মন্ত্রীদের এসব মন্তব্য তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ বাড়িয়ে দেয়।
ক্যারিবীয় সাগরে একটি মাদকবাহী সাবমেরিন ধ্বংস করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সাবমেরিনটি যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এদিকে মার্কিন হামলায় দুজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরও দুজন বেঁচে গেছেন। বেঁচে যাওয়া ওই দুজনকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র। রোববার (১৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী একটি “মাদকবাহী” সাবমেরিন ধ্বংস করেছে। সাবমেরিনটি “মাদক চোরাচালান পথ” ধরে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে আসছিল।
শনিবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশালে মার্কিন রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, “আমার জন্য এটা এক বিরাট সম্মান, আমরা একটি বিশাল মাদকবাহী সাবমেরিন ধ্বংস করতে পেরেছি, যা মাদক পাচারপথ ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল।”
তিনি জানান, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চিত করেছে যে সাবমেরিনটিতে মূলত ফেন্টানিলসহ বিপুল পরিমাণ অবৈধ মাদক ছিল। ট্রাম্প বলেন, “নৌযানটিতে চারজন ‘নার্কো-টেররিস্ট’ ছিলেন। তাদের মধ্যে দুইজন নিহত হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, অভিযানে যুক্ত কোনো মার্কিন বাহিনীর ক্ষতি বা কোনো সেনা আহত হয়নি।
ট্রাম্প দাবি করেন, “আমি যদি এই সাবমেরিনকে উপকূলে পৌঁছাতে দিতাম, তাহলে অন্তত ২৫ হাজার আমেরিকান মারা যেতেন। বেঁচে থাকা দুই সন্ত্রাসীকে তাদের নিজ নিজ দেশ ইকুয়েডর ও কলম্বিয়ায় ফেরত পাঠানো হচ্ছে, সেখানে তাদের আটক রাখার পাশাপাশি বিচার করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র স্থল বা সমুদ্র, কোনও পথেই মাদকবাহী সন্ত্রাসীদের সহ্য করবে না।”
সংবাদমাধ্যম বলছে, গত মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় সাগরে অন্তত ছয়টি অভিযান চালিয়েছে। সেখানে মূলত আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবৈধ মাদকবাহী জাহাজ লক্ষ্য করে দেশটি এসব হামলা চালাচ্ছে। যদিও এসব অভিযান ভেনেজুয়েলার উপকূলের অনেকটা কাছাকাছিই সংঘটিত হচ্ছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ক্যারিবীয় অঞ্চলে নৌবাহিনীর একটি বহর মোতায়েন করার পর পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়। ওয়াশিংটনের দাবি, মার্কিন এই নৌবহর অপরাধী চক্র ও মাদক পাচার রোধে কাজ করছে।
এর আগে গত শুক্রবার মার্কিন প্রকিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের প্রধান পিট হেগসেথ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন কমান্ড অঞ্চলে মাদক চোরাচালানকারী সংগঠনগুলোকে লক্ষ্য করে একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে গাজায় একই পরিবারের ১১ জন সদস্যকে হত্যা করেছে ইসরাইল। আট দিন আগে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ চুক্তি লঙ্ঘনের ঘটনা। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় গাজা সিটিতে একটি গাড়িতে হামলা চালায় ইসরাইল। খবর আল জাজিরার।
শুক্রবার সন্ধ্যায় গাজা সিটির জেইতুন পাড়ায় একটি বেসামরিক গাড়ি লক্ষ্য করে ট্যাঙ্কের শেল নিক্ষেপ করে ইসরাইলি বাহিনী। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এক বিবৃতিতে জানান, পরিবারটি যখন তাদের বাড়িতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল, তখন ইসরাইলি সেনাবাহিনী তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। নিহতদের মধ্যে সাত শিশু এবং তিনজন নারী ছিলেন।
তিনি আরো বলেন ‘যা ঘটেছে তা নিশ্চিত করে যে দখলদাররা এখনো রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষ চালাতে চায়।’
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিসের সঙ্গে সমন্বয় করে এখন পর্যন্ত নয়জনের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
হামাস এ হামলাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করে এর নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলছে, কোনো যুক্তি ছাড়াই পরিবারটিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মধ্যস্থতাকারীদের কাছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলার জন্য ইসরাইলকে চাপ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে হামাস।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরও গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
হামাস এই হামলাগুলোকে যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যাতে তারা ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে চুক্তি মেনে চলতে বাধ্য করে।
হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা যুদ্ধবিরতির বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। মধ্যস্থতাকারীরা যদি নীরব থাকে, তবে এটি আরও রক্তপাতের পথ খুলে দেবে।
হামাস জানিয়েছে, তারা রেড ক্রসের মাধ্যমে এক নিহত ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দিয়েছে।
এদিকে, গাজার মানবিক পরিস্থিতি এখনও অত্যন্ত ভয়াবহ। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আহ্বান সত্ত্বেও বড় পরিসরে ত্রাণ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ইসরায়েলের আরোপিত বিধিনিষেধের কারণে। ফলে স্থানীয় মানুষ এখনো খাবার, পানি ও চিকিৎসা সংকটে ভুগছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত ৬৭ হাজার ৯৬৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ১৭৯ জন আহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
নতুন করে এই হামলাগুলোর ফলে যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বেড়েছে এবং পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, সংঘাত পুনরায় তীব্র রূপ নিতে পারে যদি ইসরায়েলি অভিযান বন্ধ না হয়।
ইসরায়েলি হামলায় একই পরিবারের ১১ জন নিহত
যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজা শহরের পূর্ব আল-জেইতুন এলাকায় কোনো সতর্কতা ছাড়াই একটি গাড়ি লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় একই পরিবারের ১১ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। গাজার ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স শুক্রবার রাতে এ তথ্য জানিয়েছে।
সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, পরিবারের ১১ জন সদস্যকে বহনকারী গাড়িটি ‘হলুদ রেখা’ অতিক্রম করলে বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। আক্রমণটি কোনো সতর্কতা ছাড়াই হয়েছিল। নিহতদের মধ্যে মধ্যে সাত শিশু এবং দুই নারী ছিলেন।
‘হলুদ রেখা’ হলো একটি সীমানা - যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলি বাহিনী যেখানে অবস্থান করছে সেই জায়গা। এই রেখা টেনে গাজার মধ্যে ফিলিস্তিনিদের চলাচলের অনুমতিপ্রাপ্ত এলাকাগুলোকে পৃথক করা হয়েছে।
বাসাল বলেন, ‘তাদের সতর্ক করা বা তাদের সঙ্গে এমনভাবে আচরণ করা সম্ভব ছিল, যাতে মৃত্যু না ঘটে। কিন্তু যা ঘটেছে তা নিশ্চিত করে যে, দখলদাররা এখনো রক্তপিপাসু এবং নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
গত ১০ অক্টোবর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়িত হয়। চুক্তির আওতায় গাজার প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলি সেনাদের আংশিক প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৬৮ হাজার জনে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি বেশি মানুষ আহত হয়েছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।
ফিলিস্তিনি বন্দিদের অবস্থা অবমূল্যায়ন করা হয়েছে
যুদ্ধের সময় গাজা এবং পশ্চিম তীর থেকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরায়েল। কিন্তু মুক্তির সময় তারা যে অবস্থায় ফিরেছে, সেদিকে আন্তর্জাতিকভাবে খুব কম মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, হাতে গোনা কয়েকজন ইসরায়েলি বন্দিকে নিয়ে অনেকটা হৈ চৈ পড়ে গেছে, বিশেষ করে পশ্চিমা মিডিয়াগুলোতে।
শনিবার লন্ডনভিত্তিক কাউন্সিল ফর আরব-ব্রিটিশ আন্ডারস্ট্যান্ডিং (CAABU) এর পরিচালক ক্রিস ডয়েল আল জাজিরাকে এমনটাই বলেছেন।
ডয়েল বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইসরায়েলি বন্দিদের ওপর এত বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে, যা বোধগম্য; কিন্তু এই ফিলিস্তিনি বন্দি ও আটক ব্যক্তিদের, মুক্তি দেওয়ার সময় তাদের অবস্থা সম্পর্কে কোনো খবরই পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, তাদের কোথায় রাখা হয়েছিল? নির্যাতন, এমনকি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ... এই সবকিছুই খুব বেশি অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে।
ক্রিস ডয়েলের মতে, অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের জন্য এটি অত্যন্ত বাস্তব, খুবই বেদনাদায়ক। এটি দেখায় যে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অন্যান্য দেশে কভারেজ এবং রাজনৈতিক বিতর্ক এতটাই এগিয়ে গেছে যে, সর্বদা ইসরায়েলিদের সঙ্গে কী ঘটে তার ওপর ফোকাস থাকে। ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে কী ঘটে, তার ওপর ফোকাস কম।
ডয়েল আরও বলেন, ট্রাম্পের ২০-দফা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সবকিছুর জন্য কে দায়ী, তা নির্ধারণ করার জন্য একটি ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। ২০-দফা পরিকল্পনা চুক্তিতে তা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত, ইচ্ছাকৃতভাবে এটি রাখা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল কোনো বিচারিক ব্যবস্থা অনুমোদন করতে চাইবে না, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ইসরায়েলি গণহত্যা
টানা দুই বছরের গণহত্যা যুদ্ধের অবসানে সম্প্রতি মার্কিন-সমর্থিত চুক্তির পর হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজারেরও বেশি। একই সময়ে ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি বেশি মানুষ আহত হয়েছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
চলতি বছরের শুরুতেও একটি যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ইসরায়েল গত ২৭ মে থেকে গাজায় পৃথক সাহায্য বিতরণ উদ্যোগ শুরু করে। এতে সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই পদক্ষেপের পর অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষ প্রকট হয়ে ওঠে।
ইসরায়েলি বাহিনী খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও গুলি চালিয়ে যায়। এর ফলে শত শত মানুষ নিহত হয়। সেই সঙ্গে দুর্ভিক্ষে শিশুসহ বহু মানুষের মৃত্যু হয়।
মেক্সিকান ন্যাশনাল গার্ড বৃহস্পতিবার বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ত্রাণ-সামগ্রী পাঠিয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ৭০ জন নিহত এবং কয়েক ডজন নিখোঁজ হয়েছে।
মেক্সিকোর জোচিকোআটলান থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
সামরিক বাহিনী পরিচালিত এই সংস্থাটি হিডালগোর রাজধানী পাচুকা থেকে তিয়ানগুইস্টেঙ্গো এবং জালাকাহুয়ানতলাসহ বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।
জোচিকোআটলানে টেক্সকাকো সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা একটি বিমান অবতরণের পর তার কাছে লাইনে দাঁড়িয়েছিল এবং বেশ কয়েকজন শিশু কৌতূহলীভাবে সৈন্যদের মালামাল নামানো এবং ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণ করার সময় তা দেখছিল।
জোচিকোআটলানের ৩৭ বছর বয়সী বাসিন্দা মেরিলিন কর্টেস এএফপি’কে বলেছেন, ‘আমাদের দোকানে কেনার মতো কিছুই অবশিষ্ট নেই।’
‘সত্যি বলতে, এই ত্রাণ-সামগ্রী আমাদের জন্য খুবই সহায়ক হবে। আমাদের সত্যিই এটির প্রয়োজন। এটি ইতোমধ্যেই আমাদের জন্য আশার আলো।’
ত্রাণ-সামগ্রীর মধ্যে টুনা, দুধ, ওটমিল, টয়লেট পেপার এবং সাবানসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল।
ত্রাণ-সামগ্রী বিতরনের পাশাপাশি ন্যাশনাল গার্ড আহতদের হাসপাতালে স্থানান্তরও করছে।
বিমান বাহিনীর ক্যাপ্টেন ইরাক আলেজান্দ্রো মার্টিনেজ বলেছেন, ‘যদি আহত ব্যক্তি বা এমন কেউ থাকে যার ওষুধ বা অতিরিক্ত সাহায্যের প্রয়োজন হয় - হাসপাতালের প্রয়োজন হয়, আমরা তাদের বিমানে পরিবহন করি’।
গত সপ্তাহে কয়েকদিন ধরে প্রবল বৃষ্টিপাতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই দুর্যোগে দেশের মধ্য এবং পূর্বে রাস্তা এবং মহাসড়ক ডুবে বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর ১৬০টি এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
মেক্সিকো সিটির প্রতিবেশী হিডালগোতে ৮৪টি বিচ্ছিন্ন পৌরসভা রয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলো পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত যেখানে ভূমিধসের কারণে প্রবেশপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সূত্র: বাসস