ইসরায়েল ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র নয় ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করছে ইরানের একটি সরকারি গণমাধ্যম। আজ শুক্রবার সকালে গণমাধ্যমটি বলছে, ‘দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী কয়েকটি ড্রোন ধ্বংস করেছে। ইসরায়েলে ইরানের হামলার কয়েক দিন পরই পাল্টা হিসেবে এ হামলা হলো।’
ইসরায়েলের আজকের হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয় বলে একটি সূত্র রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে। তবে হামলার আগে বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছিল তারা।
ইরানের বার্তা সংস্থা ফারস বলছে, মধ্যাঞ্চলের শহর ইস্পাহানের একটি সেনাঘাঁটির কাছাকাছি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইরানের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছে, এটা কোনো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নয়। ইরানের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় হওয়ার কারণেই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, মধ্যরাতের একটু পরেই ‘ইস্পাহানের আকাশে তিনটি ড্রোন দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে আকাশ নিরাপত্তাব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়। আর এর ফলে ড্রোনগুলো আকাশেই ধ্বংস করে ফেলা হয়।’
ইরানের এ ভাষ্য নিয়ে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ জানায়, ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র ইরানে আঘাত হেনেছে। তবে কোথায় আঘাত হানা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য তারা দেননি। আবার ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়া অন্য কোনো যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে কি না, তা-ও জানাননি। কিন্তু ইরানের পক্ষ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা অস্বীকার করা হয়েছে।
বিশ্লেষক এবং পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের চলমান যুদ্ধ এখন পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আজকের হামলার আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তাঁদের ভূখণ্ডে কোনো হামলা হলে এর ‘চরম জবাব’ দেবে তাঁর দেশ।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর কলকাতার মানিকতলা এলাকার জেএন রায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশিদের চিকিৎসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল শুক্রবার জে এন রায় হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রতিবেশী বাংলাদেশে ভারতীয় পতাকার প্রতি অপমানজনক আচরণ ও সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর কথিত নির্যাতনের প্রতিবাদে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমস এ খবর জানিয়েছে।
ওই হাসপাতালের এক কর্মকর্তা শুভ্রাংশু ভক্ত জানিয়েছেন, ‘আমরা একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আমরা কোনো বাংলাদেশি রোগীকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করব না। বাংলাদেশিদের ভারতবিরোধী মনোভাব ও আমাদের দেশের প্রতি দেখানো অপমানের কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
প্রতিবেশী দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নির্যাতনের প্রতিবাদ হিসেবে শহরের অন্য হাসপাতালগুলোকেও একই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শুভ্রাংশু ভক্ত আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। তারপরও আমরা বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব প্রত্যক্ষ করছি। আমরা আশা করি অন্যান্য হাসপাতালও আমাদের সমর্থন করবে এবং একই ধরনের পদক্ষেপ নেবে।’
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। ‘ফেঞ্জাল’ নামের এই ঝড়টি আজ শনিবার আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি)। খবর এনডিটিভির।
সংস্থাটি বলেছে, ভারতের তামিলনাড়ু উপকূলের করাইকৈল এবং মামাল্লাপূরমের মধ্যবর্তী স্থানে শনিবার আঘাত হানতে পারে নতুন এটি। ওই সময় ঝড়টির বাতাসের গতিবেগ ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার এবং ঝড়ো বাতাসের বেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। গতকাল শুক্রবার বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ বলেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি গত ছয় ঘণ্টায় ১৩ কিলোমিটার গতিতে উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে ২৯ নভেম্বর শুক্রবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। ঝড়টি পুডুচ্চেরি থেকে ২৭০ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরপূর্ব এবং চেন্নাই থেকে ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থান করছে। এটি পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে উত্তর তামিলনাড়ু এবং পুডুচ্চেরির উপকূলের করাইকৈল এবং মামাল্লাপুরামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে ঘূর্ণিঝড় হিসেবে অতিক্রম করতে পারে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জেলেদের বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে না যেতে অনুরোধ জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে তামিলনাড়ুর বিভিন্ন জায়গায় হালকা, মাঝারি থেকে ভারী ও অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এরই মধ্যে সেখানকার কয়েকটি জায়গায় বৃষ্টিপাতের কারণে জনজীবন বিঘ্নিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হওয়া বৃষ্টির কারণে এই পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যদি কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতিরি সৃষ্টি হয় সেজন্য নৌবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বাধীন একটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিবছর দাবানলে সৃষ্ট বায়ুদূষণ বিশ্বব্যাপী ১৫ লাখেরও বেশি মৃত্যুর জন্য দায়ী, যা এই জাতীয় পরিবেশগত ঘটনাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুতর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিগুলোকে তুলে ধরে। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত মেলবোর্নের মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বার্ষিক গড়ে ১৫ লাখ ৩০ হাজার মৃত্যুর কারণ এই দাবানলে সৃষ্ট ক্ষতিকারক বায়ুদূষণ।
মৃত্যুর ঘটনাগুলোর ৯০ শতাংশ ঘটেছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। যার মধ্যে সাব-সাহারান আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব এশিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্যঝুঁকি ও আঞ্চলিক বৈষম্য
বার্ষিক মৃত্যুর মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ কার্ডিওভাসকুলার রোগে হয়েছে। ২ লাখ ২০ হাজার মৃত্যু হয়েছে শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার কারণে। দাবানলের সূক্ষ্ম বস্তুকণা হতাহতের ৭৭ দশমিক ৬ শতাংশের জন্য দায়ী। আর পৃষ্ঠের ওজোন অবশিষ্ট ২২ দশমিক ৪ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী।
গবেষণাটিতে কঠোর আঞ্চলিক বৈষম্য উঠে এসেছে। সাব-সাহারান আফ্রিকায় দাবানলের আগুন-উৎসযুক্ত বায়ুদূষণের সঙ্গে যুক্ত মৃত্যুর সর্বোচ্চ হারের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
অন্য লেখকরা উল্লেখ করেছেন, ‘উষ্ণ জলবায়ুর কারণে দাবানল ক্রমবর্ধমান ঘন ঘন এবং মারাত্মক হয়ে ওঠার পাশাপাশি জলবায়ু সম্পর্কিত মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত যথেষ্ট স্বাস্থ্যের প্রভাব এবং পরিবেশগত বিপর্যয় মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’
বৈশ্বিক সমর্থনের আহ্বান
গবেষণায় উচ্চ আয়ের দেশগুলোকে দাবানলে সৃষ্ট বায়ুদূষণের কারণে স্বাস্থ্যের প্রভাবগুলো কমাতে দুর্বল উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা হিসেবে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তার পক্ষে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এটি মৃত্যুর হারে আর্থসামাজিক বৈষম্য দূর করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেয়।
লেখকরা যুক্তি দেন, লক্ষ্যযুক্ত সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে ধনী দেশগুলো দরিদ্র অঞ্চলগুলোর কাঁধে থাকা অসামঞ্জস্যপূর্ণ বোঝা কমাতে সহায়তা করতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত জলবায়ু সম্পর্কিত স্বাস্থ্যসংকট মোকাবিলায় আরও কার্যকর পদ্ধতিতে অবদান রাখতে পারে।
এই বিস্তৃত গবেষণায় সারা বিশ্বের গবেষকরা অবদান রেখেছেন। এটি দাবানলের কারণে বায়ুদূষণের মানবিক ব্যয়কে বোঝার এবং মোকাবিলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের ক্ষেত্র তৈরি করে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর কথিত হামলার অভিযোগের বিষয়ে ভারতের সংসদ লোকসভায় শুক্রবার আলোচনা হয়েছে। এদিন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুসহ সব নাগরিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের।
লোকসভায় সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘ভারতের সরকার এসব ঘটনার বিষয় গুরুতরভাবে বিবেচনায় নিয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে দিল্লির উদ্বেগ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সাম্প্রতিক দুর্গাপূজা উৎসবের সময় মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলার খবরও প্রকাশ্যে এসেছে... এই হামলার পর বাংলাদেশ সরকার শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা উদযাপন নিশ্চিতে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েনসহ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা জারি করেছিল।’
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ‘সংখ্যালঘুসহ বাংলাদেশের সব নাগরিকের জীবন ও স্বাধীনতা রক্ষার প্রাথমিক দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের ওপর বর্তায়।’
রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) বাংলাদেশের সাবেক পুরোহিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার ও হিন্দুদের ওপর কথিত হামলা বৃদ্ধির অভিযোগ ঘিরে চলমান উত্তেজনার মাঝে পরপর দুদিন অর্থাৎ বৃহস্পতি এবং শুক্রবার ভারতের সংসদে এ বিষয়ে আলোচনা হলো।
গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপর গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের অভিযোগে হিন্দু নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা হয়। এই মামলায় সোমবার বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করেন।
পরের দিন চট্টগ্রামের একটি আদালতে চিন্ময়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার শুনানি ঘিরে আদালত চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। এ সময় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে আন্দোলনকারীদের হামলায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে চট্টগ্রামে এক আইনজীবী নিহত হন।
চিন্ময়-ইসকন ও সংখ্যালঘুদের নিয়ে নতুন করে যা বলল ভারত
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে মাতামাতি চলছে ভারতে। এ ছাড়া বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বেড়ে গেছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ঢালাওভাবে প্রচার করা হচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এ নিয়ে বিক্ষোভও হয়েছে।
এসবের মধ্যে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল শুক্রবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের বেশির ভাগই বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন করেন। এ সময় সাংবাদিকরা জয়সওয়ালের কাছে জানতে চান, বাংলাদেশে হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় ভারত কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে? জবাবে রণধীর বলেন, ‘হিন্দুদের ওপর হামলা নিয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। হিন্দুসহ অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর হুমকি এবং হামলার বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের কাছে শক্তভাবে সার্বক্ষণিক উত্থাপন করছে ভারত। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। সব সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিতের যে দায়িত্ব বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের রয়েছে, সেটি তারা পালন করবে।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রকে এক সাংবাদিক ইসকন নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ইসকনকে ‘উগ্রবাদী সংগঠন’ আখ্যা দিয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী। জবাবে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘ইসকন বৈশ্বিকভাবে প্রখ্যাত সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত। তাদের সামাজিক ক্ষেত্রে অবদান রাখার ভালো রেকর্ড রয়েছে। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে আবারও বলব, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তার নিয়ে বিবৃতি দিয়েছি। আমরা দেখেছি সেখানে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আমরা আশা করি তার বিরুদ্ধে যে আইনি প্রক্রিয়া চলছে, সেটি স্বচ্ছ ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে হবে। তার যে আইনি অধিকার রয়েছে সেটি পুরোপুরিভাবে তিনি পাবেন।’
ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য সরবরাহের বিষয়ের করা এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। এবং একইভাবে, বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে উভয় দিকেই বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে...।’
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কিয়েভের ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণ কেন্দ্রগুলো' লক্ষ্য করে রাশিয়ার তৈরি নতুন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন।
ইউক্রেনের এক বিদ্যুৎ গ্রিডের ওপর মস্কোর দফায় দফায় হামলার পরে পুতিন এ হুমকি দিলেন। ওই হামলায় ১০লাখ মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
কিয়েভ থেকে এএফপি জানায়, রাশিয়া ৯০ টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রায় ১০০টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে তার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের হামলার জবাবে তিনি এই নতুন হামলা চালিয়েছেন।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের প্রাক্কালে প্রায় তিন বছরব্যপী চলমান এ যুদ্ধের তীব্রতা সাম্প্রতিক দিনগুলোয় উভয় পক্ষের নতুন নতুন অস্ত্র ব্যবহারের কারণে মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের কথা উল্লেখ করে পুতিন কাজাখের রাজধানী আস্তানায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা কিয়েভসহ সামরিক, সামরিক-শিল্প বা সিদ্ধান্তগ্রহণ কেন্দ্রগুলোর ওপর ওরেশনিকের ব্যবহার বাতিল করিনি।'
কিয়েভের রাজধানীর এক এলাকার একাধিক সরকারি ভবনসম্বলিত একটি সরকারি এলাকা কঠোর নিরসপত্তা ও সুরক্ষিত হলেও গত সপ্তাহে সেখানেও আতঙ্ক বেড়েছে।
রাশিয়া গত সপ্তাহে ইউক্রেনে তার নতুন ওরেশনিক ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা প্রসঙ্গে পুতিন বৃহস্পতিবার জানান, একসাথে বেশ ক’টি অস্ত্র নিক্ষেপ একটি পারমাণবিক হামলার সমতুল্য।
আস্তানায় পুতিন বলেন, ওরেশনিক যে কোনো কিছুকে ‘ধুলায় পরিণত করতে পারে’ এবং ‘সূর্যপৃষ্ঠের’ মতো প্রচণ্ড উত্তাপ নিয়ে আঘাত করতে পারে।
তিনি বলেন, এটিএসিএমএস ব্যবহার করে রাশিয়ার ভূখণ্ডে কিয়েভের প্রথম হামলার পর রাশিয়াকে ‘যুদ্ধের পরিস্থিতিতে (অস্ত্র) পরীক্ষা করতে’ বাধ্য করা হয়েছে।
পুতিন বৃহস্পতিবার বলেন, ওরেশনিক ‘প্রতি সেকেন্ডে প্রায় তিন কিলোমিটার’ দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।
ক্রেমলিন প্রধান বলেন, রাতের হামলা ছিল ‘আমাদের ভূখণ্ডে (মার্কিন) এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা অব্যাহত হামলার জবাব।’ তিনি বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, আমাদের পক্ষ থেকে সব সময় জবাব আসবে।’
মস্কো গত সপ্তাহে দিনিপ্রো শহরে তার নতুন ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে পশ্চিম ও কিয়েভকে হতবাক করেছে। এদিকে রাশিয়ান কর্মকর্তারা অস্ত্রের শক্তির কথা বলেছেন।
পুতিন আরও দাবি করেন যে রাশিয়া জানে কিয়েভকে কতগুলো দূরপাল্লাার অস্ত্র দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলো ঠিক কোথায় রয়েছে।
প্রায় তিন বছরের যুদ্ধে ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত ইউক্রেনীয়রা যখন একটি কঠিন শীতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক তখন রাশিয়ার সৈন্যরা পূর্ব ইউক্রেনে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে এসব হামলা হয়।
পুতিন ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের ওপর আশাবাদ ব্যক্ত করে বৃহস্পতিবার রিপাবলিকান ট্রাম্পকে ‘বুদ্ধিমান ব্যক্তি’ অভিহিত করে স্পষ্ট কোনো কিছুর ইঙ্গিত না দিয়ে বলেন, ট্রাম্প সমাধান খুঁজে পেতে সক্ষমতা রাখেন।
রাতের বেলা দফায় দফায় হামলায় ইউক্রেনের পশ্চিম লভিভ অঞ্চলে অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার কয়েক ঘণ্টা পরে রাশিয়ান নেতা একথা বলেন।
কর্মকর্তারা জানান, পশ্চিম রিভন অঞ্চলে আরও ২ লাখ ৮০ হাজার এবং উত্তর-পশ্চিম ভলিন অঞ্চলে ২ লাখ ১৫ হাজার মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় দিনাতিপাত করছে।
ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবাগুলো বলেছে, রাশিয়ার রাতের বেলার হামলা দেশটির পশ্চিমে হার্ড হিট অঞ্চলসহ সারাদেশের ১৪ টি অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
জেলেনস্কি, রাশিয়ার ‘গুচ্ছ যুদ্ধাস্ত্র’ নিক্ষেপের উল্লেখ করে একে ‘রাশিযান সন্ত্রাসী কৌশলের অত্যন্ত জগন্য বৃদ্ধি’ বলে অভিহিত করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার বলেন এই হামলা জানুয়ারিতে ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার আগে কিয়েভকে সহায়তার অপরিহার্যতা প্রমাণ করেছে।
বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই হামলা আপত্তিকর এবং এটি ইউক্রেনের জনগণকে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরক্ষায় সহায়তার জরুরি প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বের আরেকটি স্মারক হিসাবে কাজ করবে।’
রাজধানীতে এএফপি সাংবাদিকরা রাতের বেলায় বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান এবং স্থানীয়রা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা লক্ষ্য করে রাশিয়ান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে বাঁচতে ভূগর্ভস্থ মেট্রো সিস্টেমে ভিড় করে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলেছে, এটি এই বছরের ইউক্রেনের বেসামরিক শক্তি অবকাঠামোতে রাশিয়ার এগারোতম বড় হামলা।
জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রোজমেরি ডিকার্লো এই মাসে সতর্ক করেছেন যে, ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে রাশিয়ার হামলা এই শীতকে ‘যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে কঠোর’ করতে পারে।
পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক কিয়েভে হামলার পুতিনের হুমকি একটি ‘দুর্বলতার প্রমাণ’ উল্লেখ করে বলেন, পশ্চিমারা তার কথায় নিবৃত্ত হবে না।'
হ্যাকাররা উগান্ডার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের সমপরিমাণ ৬ হাজার ২০০ কোটি উগান্ডান শিলিং চুরি করেছে। বিদেশে অবস্থানকারী হ্যাকাররা এই অর্থ চুরি করেছে বলে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র নিউ ভিশন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে। খবরে বলা হয়, চলতি মাসের আরও আগের দিকে এই ঘটনা ঘটেছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, হ্যাকাররা নিজেদের ‘ওয়েস্ট’ নামে চিহ্নিত করেছে। তারা ব্যাংক অব উগান্ডার তথ্যপ্রযুক্তি-ব্যবস্থায় ঢুকে অবৈধভাবে অর্থ সরিয়ে নেয়। এই হ্যাকার গোষ্ঠীটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াভিত্তিক বলে সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়। ব্যাংকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাতে নিউ ভিশন জানায়, চুরি করা অর্থের একটি অংশ জাপানে পাঠানো হয়েছে।
ব্যাংক অব উগান্ডার কাছে এই চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা রয়টার্সের কাছে কোনো মন্তব্য করেনি। এ ব্যাপারে উগান্ডার পুলিশও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
নিউ ভিশনের খবরে বলা হয়, চুরি যাওয়া অর্থের অর্ধেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক হ্যাকারদের কাছ থেকে সফলভাবে উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছে। অর্থ চুরির এই ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট ইউওয়েরি মুসেভেনি এ বিষয়ে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।
উগান্ডার সবচেয়ে বেশি প্রচারসংখ্যার স্বাধীন সংবাদপত্র ডেইলি মনিটর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই চুরির ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারেন।
দেশটিতে ব্যাংক, আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান এবং টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান থেকে এর আগেও হ্যাকাররা অর্থ চুরি করেছে। তবে পুলিশ বলছে, কিছু ব্যাংক বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করতে চায় না। কারণ, তাদের আশঙ্কা, এসব ঘটনা স্বীকার করলে গ্রাহকেরা তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
এর আগে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা হয়েছিল। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ৮১ মিলিয়ন বা ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হ্যাকাররা চুরি করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইতিহাসে সেটাই ছিল সবচেয়ে বড় চুরির ঘটনা, যা আলোড়ন তুলেছিল সারা বিশ্বে। ফলে দেশে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করে। তথ্য আদান-প্রদানব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার আনে সুইফট।
কিন্তু যে দেশের কষ্টার্জিত আয়ের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরি হলো, সেই বাংলাদেশে এর তদন্তই শেষ হয়নি, শাস্তিও পায়নি কেউ। বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিন পরে চুরির তথ্য জানতে পারলেও তৎকালীর গভর্নর আতিউর রহমান তা গোপন রাখেন। বিষয়টি অর্থমন্ত্রীকে বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় ঘটনা ঘটার এক মাসের বেশি সময় পরে।
পাকিস্তানে ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। পিটিআইয়ের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যা শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ সফল করতে মরিয়া ইমরান খানের দল। অন্যদিকে তাদের থামিয়ে দিতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসলামাবাদের আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে।
পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপত্তাবাহিনীর ব্যাপক বাধার মুখেও কিছু পিটিআই কর্মী এরই মধ্যে ডি-চকে পৌঁছে গেছে। সরকার ও বিরোধী দলটির মধ্যে আলোচনায়ও অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর হামলার অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। মূলত রোববার দলটির নেতাকর্মীরা রাজধানী ইসলামাবাদের দিকে যাত্রা শুরু করে। তবে সরকারি বাধায় তা থমকে যায়। পরে ইসলামাবাদের দিকে ফের যাত্রা শুরু করে তারা।
এর আগে আদিয়ালা কারাগার থেকে এক বিবৃতিতে ইমরান খান বলেছেন, ইসলামাবাদে যে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে তা স্থগিত করা হবে না। কারণ এখন পর্যন্ত তার মুক্তির ব্যাপারে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছে না। ইমরান খান বলেন, আমার দলের নেতাদের মাধ্যমে সমাবেশ বন্ধের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে নেতাদের মুক্তির বিষয়ে কোনো কথা বলা হচ্ছে না।
ইসলামাবাদের কেন্দ্রস্থলে ইমরান খানের সমর্থকরা
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকরা পুলিশ, রেঞ্জার্স এবং সেনাবাহিনীর সব বাধা অতিক্রম করে রাজধানী ইসলামাবাদের মূল কেন্দ্র ডি-চকে পৌঁছেছেন। তবে সেখানে পৌঁছানোর পর তারা আবারও তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন। সংবাদমাধ্যম দ্য ডন জানিয়েছে, ডি-চকে ইমরান খানের সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। এছাড়া সমর্থকদের অনেককে কনটেইনার বেয়ে প্রতিবন্ধকতা পেরোতে দেখা গেছে। এসময় কনটেইনারের ওপর সেনাবাহিনীর সদস্যদের অবস্থান করতেও দেখা গেছে।
রোববার ইমরানের মুক্তি এবং সরকারের পদত্যাগসহ সংবিধানের ২৬তম সংশোধনী বাতিলের দাবিতে সমর্থকরা সারা দেশ থেকে ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সমর্থকদের দাবি, এই সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের স্বাধীনতা সীমিত করা হয়েছে। ইসলামাবাদে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় শাহবাজ শরীফের সরকার সংবিধানের ২৪৫ ধারা অনুযায়ী সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে।
দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, ইমরানের স্ত্রী বুশরা বিবির নেতৃত্বে একটি বিশাল গাড়ি বহর জিরো পয়েন্টে পৌঁছেছে। তাদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হলে সমর্থকদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা যায়। ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দাবি করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় তাদের তিন সদস্য নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, সরকার জানিয়েছে, পিটিআই সমর্থকদের হামলায় রেঞ্জার্স এবং পুলিশের ছয় সদস্য নিহত হয়েছে। সব বাধা সত্ত্বেও ইমরানের সমর্থকদের থামাতে না পেরে প্রশাসন রাওয়ালপিন্ডি থেকে আরও এক হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করেছে।
দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ, ইন্টারনেটের ধীরগতি
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ডাকা ‘চূড়ান্ত বিক্ষোভে’রাজধানী ইসলামাবাদ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ইমরান সমর্থকদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু এই কঠোর নির্দেশের পরও বিক্ষোভকারীদের রাস্তায় থাকা ঠেকানো যায়নি। সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে চারজনই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।
ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ইসলামাবাদের ডি চকে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। দলের একটি অংশ ইতিমধ্যেই সেখানে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। প্রশাসন আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি জানিয়েছেন, সরকার বারবার আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে পিটিআই নেতৃত্ব আলোচনা থেকে শুধু সময় নিয়েছে এবং রাজধানীর দিকে অগ্রসর হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইসলামাবাদের আইজিকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলেছেন তিনি।
এদিকে, সংঘর্ষের মধ্যেই মুলতান, রাজনপুর, গুজরাটসহ কয়েকটি এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটছে। পাঞ্জাব প্রদেশের পুলিশ সোমবার ৪ হাজারের বেশি পিটিআই নেতাকর্মীকে আটক করেছে। তাদের মধ্যে পাঁচজন পার্লামেন্ট সদস্যও রয়েছেন। নিরাপত্তা কর্মকর্তা শাহিদ নওয়াজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ইমরান খান মাসের শুরুতে কারাগার থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ডাক দেন, যাকে তিনি ‘চূড়ান্ত ডাক’ বলে উল্লেখ করেছেন। এরপর থেকে তার সমর্থকেরা রাজধানীর দিকে অগ্রসর হন। তাদের দাবি, বন্দি নেতাদের মুক্তি এবং সরকারের পদত্যাগ।
২০২২ সালে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খান একাধিক মামলার মুখোমুখি হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদসহ ১৫০টির বেশি মামলা রয়েছে। ২০২৩ সালের মে মাসে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। তবে পিটিআই এই মামলা ও অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছে।
প্রসঙ্গত, ইমরান খানের গ্রেপ্তার ঘিরে এর আগেও দেশব্যাপী সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে। তারমুক্তি এবং দলের ওপর চাপ কমানোর দাবিতে সমর্থকেরা ফের রাস্তায় নেমেছে।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের খুররাম জেলায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮ জনে। হাসপাতাল প্রশাসন মিডিয়াকে এ খবর জানায়।
ইসলামাবাদ থেকে সিনহুয়া জানায়, গত বৃহস্পতিবার শিয়া মুসলমান বহনকারী যাত্রীবাহী কোচের একটি বহরের ওপর পারাচিনার এলাকায় অতর্কিত হামলা চালালে সহিংসতার বিপুল সংখ্যক হতাহত হয়।
এই হামলা এক পর্যায়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রুপ নিলে পরবর্তীতে একাধিক প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরও বেড়ে যায়।
প্রাদেশিক সরকারের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। উভয় সম্প্রদায় সাত দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে গড়ে প্রতিদিন ১৪০ জন নারী ও কিশোরীকে হত্যা করা হয়েছে। ভয়ংকর বিষয় হলো, নিকটাত্মীয় বা পরিবারের সদস্যদের হাতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার জাতিসংঘের দুটি সংস্থার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বব্যাপী ২০২৩ সালে আনুমানিক ৫১ হাজার ১০০ জন নারী ও কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে তার সঙ্গী বা পরিবারের সদস্যের হাতে। যা ২০২২ সালে ছিল আনুমানিক ৪৮ হাজার ৮০০ জন। ইউএস উইমেন এবং জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ দপ্তরের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধের আন্তর্জাতিক দিবসে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংখ্যার এই বৃদ্ধি মূলত বিভিন্ন দেশগুলো থেকে পাওয়া আরও তথ্যের কারণে বেড়েছে, হত্যার সংখ্যা বেড়েছে এমনটি নয়। কিন্তু জাতিসংঘের দুটি সংস্থাই জোর দিয়ে বলেছে, ‘সর্বত্র নারী ও কিশোরীরা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হচ্ছে এবং কোনো অঞ্চলই আর বাদ নেই। বাড়ি নারী ও মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান।’
২০২৩ সালে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সবচেয়ে বেশি হয়েছে আফ্রিকায়। আনুমানিক ২১ হাজার ৭০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে সেখানে। এই মহাদেশে জনসংখ্যার তুলনায় এই ধরনের মৃত্যুর হারও সবচেয়ে বেশি ছিল।
প্রতি ১ লাখে ২.৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে আফ্রিকা মহাদেশে। আমেরিকায় প্রতি ১ লাখে ১.৬ জন নারী এবং ওশেনিয়ায় প্রতি ১ লাখে ১.৫ জনকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তবে এশিয়া ও ইউরোপে মৃত্যুহার ছিল কম, এশিয়ায় প্রতি এক লাখে ০.৮ এবং ইউরোপে ০.৬ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপ ও আমেরিকায় ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে নারীদের ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হয়েছে, মূলত তাদের সঙ্গীর হতেই মৃত্যু হয়েছে। পুরুষ অথবা কিশোরদের হত্যা করা হয়েছে বাড়ি ও পরিবারের বাইরে।
এতে আরও বলা হয়, মোট হত্যার শিকার মানুষের মধ্যে পুরুষ ও কিশোররাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে পরিবারের মধ্যে প্রাণঘাতী সহিংসতার শিকার নারী ও কিশোরীরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে সব হত্যাকাণ্ডের শিকারদের মধ্যে আনুমানিক ৮০ শতাংশ পুরুষ ছিল এবং ২০ শতাংশ ছিল নারী ও কিশোরী। কিন্তু পরিবারের মধ্যে প্রাণঘাতী সহিংসতা পুরুষদের তুলনায় নারীদের অনেক বেশি ক্ষতি করে। ২০২৩ সালে ইচ্ছাকৃতভাবে ৬০ শতাংশ নারীকে হত্যা করেছিল পরিবারের সদস্য বা সঙ্গী।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশগুলোর নারী ও মেয়েদের হত্যা রোধ করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা ‘আশঙ্কাজনকভাবে উচ্চপর্যায়ে রয়েছে।’ দুটি সংস্থাই বলেছে, এগুলো প্রায়ই লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার পুনরাবৃত্তি পর্বের চূড়ান্ত পরিণতি ফল। সঠিক সময়ে ও কার্যকর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব।
সূত্র: এপি
২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য সার্বিকভাবে ৩ শতাংশ কমেছে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দুই বছরে পণ্যমূল্য কমার এই ধারা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু বিশ্ববাজারে দাম কমলেও বাংলাদেশে খাদ্যপণ্যের দাম কমা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অতীতে দাম না কমে, উল্টো দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, সঠিক তথ্য-উপাত্ত ভিত্তিক সিদ্ধান্তের অভাব, সরকারের ভুল নীতি, ভুল পদক্ষেপ এবং বাজারের উপর সরকারের কোন ধরণের নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঠেকানো যায় না।
বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে, দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে। এটি দেশে গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতির এই বিষয়টি শুধু অক্টোবর মাসের বিষয় নয়, বরং গত তিন বছর ধরে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার যে প্রবণতা শুরু হয়েছে তা আর ঠেকানো যায়নি এবং সেটাই এখন এত বড় আকার ধারণ করেছে।
বিশ্ববাজারে আগামী দুই বছর পণ্যমূল্য কমতে পারে
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২৫ সালে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য ৫ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে তা আরও ২ শতাংশ কমবে। ফলে পণ্যমূল্য ২০২০ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসবে। সব মিলিয়ে ২০২৫ সালে খাদ্যমূল্য ৯ শতাংশ এবং জ্বালানির দাম ৬ শতাংশ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে বিশ্বজুড়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধাক্কা অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা স্থিতিশীল হয়েছে। যেসব কারণে পণ্যমূল্য বাড়ছিল, সেগুলো অনেকটাই দূর হয়েছে, যেমন চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যহীনতা। যদিও এই সময় ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়েছে, বাণিজ্যে বাধা এসেছে, আবহাওয়াজনিত সরবরাহ-সংকট হয়েছে। তা সত্ত্বেও পণ্যের দাম কমেছে।
প্রতিবেদনে জ্বালানির বিষয়ে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে স্বল্প মেয়াদে এই পণ্যের দাম বাড়তে পারে। চলতি বছরের এপ্রিল এবং ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। যার কারণ ছিল ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা। তবে চাহিদা কমে যাওয়ায় পরে দাম কমেছে। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক জিডিপিতে তেলের যে ভূমিকা ছিল, তার অনুপাতও কমে আসছে। ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের গড় দাম ছিল ৮০ ডলার। বিশ্বব্যাংকের ধারণা, আগামী বছর অপরিশোধিত তেলের গড় দাম ব্যারেলপ্রতি ৭৩ ডলার এবং ২০২৬ সালে ৭২ ডলারে নেমে আসবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ ও ২০২৬ সালে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারও স্থিতিশীল থাকবে; অর্থাৎ জিডিপির এমন কোনো প্রবৃদ্ধি হবে না, যা হঠাৎ করে পণ্যের চাহিদা বাড়িয়ে দেবে এবং তাতে দামও বেড়ে যাবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রবৃদ্ধির হার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হতে পারে। তাতে সেখানে পণ্যের চাহিদা বাড়তে পারে। এদিকে চীন সরকার অর্থনীতি চাঙা করতে প্রণোদনা আরও বৃদ্ধি করলে শিল্পপণ্যের দাম বাড়তে পারে। চীনের প্রবৃদ্ধির হার বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য হ্রাস-বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যে প্রান্তিকে চীনের প্রবৃদ্ধির হার কমেছে, তখন দেশটিতে পণ্যের দামও কমে গেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যহ্রাসের কারণে সামগ্রিকভাবে বিশ্ব মূল্যস্ফীতির হারও আগামী বছর কমবে। পণ্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি কমলে বিভিন্ন দেশের নীতি সুদহারও লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে কেন কমে না?
অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। উৎপাদক স্তর থেকে ভোক্তা স্তর এবং আমদানি স্তর থেকে ভোক্তা স্তর- এই দুই পর্যায়ে যারা মধ্যস্বত্বভোগী রয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রে তাদের হাতে বাজারটা একচেটিয়াভাবে চলে গেছে। তারা বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সেটার কারণে যে মূল্যটা সেটা বাজারের প্রতিযোগিতার সক্ষমতার নিরিখে হচ্ছে না। এই মধ্যস্বত্বভোগীরাই বাজারের মূল্য নির্ধারণ করছে এবং অনেক সময় সরবরাহকে প্রভাবিত করছে।
তারা বলেন, অনেক ব্যবসায়ীরা একটা সাময়িক সরবরাহ সংকট তৈরি করে কোনো কোনো পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে ফেলে। যেটার কোনে যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। চিনি বা ভোজ্য তেলের মতো খাতে সরবরাহকারীর সংখ্যাও হাতেগোনা, মাত্র তিন-চারটি প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে বাজারকে প্রভাবিত করার প্রবণতা আছে। বাজারে অ্যান্টি-কমপিটিটিভ প্র্যাক্টিসের (প্রতিযোগিতাহীন অবস্থা) নিদর্শন পাওয়া যায়, অথচ এগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো শক্তিশালী পদক্ষেপ দেখা যায় না।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব প্রতিষ্ঠান আছে যেমন- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর বা প্রতিযোগিতা কমিশন– এসব প্রতিষ্ঠানের খবরদারিতে দুর্বলতা রয়েছে। আর এ কারণেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঠেকানো যাচ্ছে না। এসব প্রতিষ্ঠানের উচিত বাজারব্যবস্থাকে একটা নজরদারির মধ্যে নিয়ে এসে, মূল্যস্ফীতি অযৌক্তিকভাবে বাড়ছে কিনা সে বিষয়ে সতর্ক নজর রাখা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের বাজারে তথ্য-উপাত্ত ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে বড় ধরনের দুর্বলতা রয়েছে। যেমন, বাজারে চাহিদা কত, সরবরাহ কত, উৎপাদন কত, আমদানি কতটুকু করতে হবে এবং সেটা কোন সময়ে করতে হবে, সেই আমদানিটা উন্মুক্তভাবে হচ্ছে কি না– এসব তথ্যের ভিত্তিতে বেশির ভাগ সময়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। ফলে যথেচ্ছভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে খাদ্য মূল্য ঠেকানো যায় না।
জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ৩০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে ধনী দেশগুলো। জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি ও প্রতিরোধে সহায়তার জন্য এ সহায়তা দেওয়া হবে। জাতিসংঘ জলবায়ু সংস্থার প্রধান সাইমন স্টেইল বলেছেন, ‘এটা ছিল কঠিন যাত্রা। কিন্তু আমরা চুক্তিটি করতে পেরেছি।
আজারবাইজানে ওই সম্মেলন সমঝোতার জন্য অতিরিক্ত ৩৩ ঘণ্টা সময় লেগেছে। শেষ পর্যন্ত লম্বা সময় আলোচনার পর দেশগুলো এ বিষয়ে একমত হতে পারল। যদিও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার জন্য দেশসমূহের প্রতি যে আহবান গত বছর করা হয়েছিল, সে বিষয়ে কোনো চুক্তি এবারের সম্মেলনে করা যায়নি।
উন্নয়ন দেশগুলো, বিশেষ করে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো গত শনিবার নাটকীয়ভাবে আলোচনা থেকে বেরিয়ে এসেছিল।
ছোট ছোট দ্বীপ রাজ্যগুলোর যে জোট তার প্রধান সেডিরক সুসটার বলেছেন, ‘আমি এটা বাড়িয়ে বলছি না যে আমাদের দ্বীপগুলো ডুবে যাচ্ছে। একটা দুর্বল চুক্তি নিয়ে আমরা আমাদের নারী, পুরুষ ও শিশুদের কাছে ফেরত যাব, এটা আপনারা প্রত্যাশা করেন কী করে।’
পরে গতকাল রবিবার শেষ পর্যন্ত কিছু পরিবর্তন এনে চুক্তিটি চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। এ সময় করতালি ও উল্লাস করেন অনেকে। তবে ভারতীয়দের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখে বোঝা যাচ্ছিল, গভীর হতাশা থেকেই গেছে। লিলা নন্দন নামে এক ভারতীয় কর্মকর্তা বলছিলেন, ‘আমরা এটা গ্রহণ করতে পারি না...এখানে যে লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে তা আমাদের সমস্যার সমাধান করবে না। আমাদের দেশের জন্য যে পদক্ষেপ জরুরি দরকার তার জন্য এটা সহায়ক হবে না।’
এরপর সুইজারল্যান্ড, মালদ্বীপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ কিছু দেশ অসম চুক্তিটির প্রতিবাদ জানায়। তারা বলছে, জীবাশ্ম জ্বালানির বৈশ্বিক ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য চুক্তিতে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তা খুবই দুর্বল।
তবে আরো অর্থের অঙ্গীকার মানে হলো, দরিদ্র দেশগুলো যে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যায্য বোঝা বহন করে চলেছে তার প্রতি একটি স্বীকৃতি। জলবায়ু সংকটের পেছনে এসব দেশের অবদান তুলনামূলক অনেক কম। কিন্তু তারাও এর শিকার হচ্ছে।
নতুন করে এবার যে অর্থের প্রতিশ্রুতি এসেছে সেটি আসবে সরকারি মঞ্জুরি ও ব্যাংক-ব্যবসার মতো বেসরকারি খাত থেকে। তবে দেশগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যেতে আরো সহায়তা করা দরকার। ৩০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি দেশগুলো একমত হয়েছে, জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অন্তত ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার দরকার। চলতি বছরও গরম আবহাওয়ার রেকর্ড হতে যাচ্ছে। সঙ্গে নিয়মিতই দেখা গেছে দাবদাহ ও প্রাণঘাতী ঝড়।
এবারের আলোচনার শুরুতে ১১ নভেম্বর বেশি কথা হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচন নিয়ে। তিনি জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। তিনি জলবায়ু নিয়ে সন্দেহবাদী মানুষ, যিনি যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস চুক্তি থেকে সরিয়ে নিবেন বলেছিলেন। ২০১৫ সালের ওই চুক্তি জলবায়ু সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রে দেশগুলোকে একটি পথনকশা দিয়েছিল।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক জলবায়ু দরকষাকষি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোয়ানা ডেপ্লেজ বলেছেন, ‘অন্য উন্নত দাতা দেশগুলো প্রকৃত অর্থে জানেম ট্রাম্প একটি পয়সাও দেবেন না।’
তবে চুক্তিতে উপনীত হওয়ার অর্থ হলো, দেশগুলো জলবায়ু বিষয়ে এক হয়ে কাজ করতে এখনো অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশটি এর অংশ হতে চাইছে না, যা কয়েক বিলিয়ন ডলার মূল্যের লক্ষ্য অর্জনকে কঠিন করে তুলবে। যুক্তরাজ্যের জ্বালানিমন্ত্রী এড মিলিব্যান্ড বলেছেন, নতুন প্রতিশ্রুতির অর্থ এই নয় যে যুক্তরাজ্য আরো অর্থ নিয়ে এগিয়ে আসবে, তবে ব্রিটিশ ব্যবসার জন্য অন্য বাজারগুলোতে বিনিয়োগের একটি বড় সুযোগ।
তিনি আরো বলেন, ‘জলবায়ুর জন্য এটি শেষ মুহূর্তের একটি কঠিন চুক্তি। আমি বা আমরা যা চাই, তার জন্য এটাই সব নয়, তবে সবার জন্য এটি এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।’
আর বেশি অর্থের অঙ্গীকারের বিনিময়ে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশগুলো চাইছে অন্য দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে আরো জোরালো অঙ্গীকার করুক।
ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস সরকারি সফরের অংশ হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশে আসার পরিকল্পনা করছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কিছু দিনের মধ্যে তিনি বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানে সফর করতে পারেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে শরীরে ক্যানসার শনাক্ত হওয়ার পর বিদেশ সফর থেকে বিরত রয়েছেন ব্রিটিশ রাজা।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা অদূর ভবিষ্যতে ভারতীয় উপমহাদেশ সফরের পরিকল্পনা করছেন। রাজা তৃতীয় চার্লস ক্যানসার থেকে ধীরে ধীরে সেরে ওঠায় শিগগিরই এই সফরে বের হতে পারেন। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটেনের রাজার সফরের পরিকল্পনাকে তার শারীরিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতির লক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে কবে নাগাদ রাজা-রানির এই সফর শুরু হতে পারে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানায়নি ডেইলি মেইল।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তৃতীয় চার্লস সব ধরনের সফর বাতিল করতে বাধ্য হন। তবে ভারতীয় উপমহাদেশের তিন দেশ- বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তান সফরের এই পরিকল্পনার মাধ্যমে আবার তার সফর শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার পর বিশ্বে তাৎপর্যপূর্ণ অর্থনৈতিক সংযোগ প্রতিষ্ঠা করতে চায় ব্রিটেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্রিটিশ রাজা ও রানির সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সূত্রের বরাতে ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন বলছে, রাজা-রানির জন্য এই ধরনের সফরের পরিকল্পনা করাটা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের একটি সফর শুরুর কথা রয়েছে, যা বিশ্বমঞ্চে ব্রিটেনের জন্য রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ হবে। এই সময়ে ব্রিটেনের জন্য রাজা এবং রানিই জুতসই রাষ্ট্রদূত।
ডেইল মেইল বলছে, রাজার সফরের জন্য সম্ভাব্য আয়োজক দেশগুলোর সাথে আলোচনার করতে ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাদের সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তান সফরের খসড়া তৈরি করা হচ্ছে।
সাংবাদিক মাহবুবুল করীম সুয়েদ গতকাল রোববার বলেন, ব্রিটেনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ঐতিহ্য ও গভীরতার বিবেচনায় নিঃসন্দেহে এ সফর শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত রূপ পেলে তা হবে ঐতিহাসিক।
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল এবং রাজধানী বৈরুতের উপকণ্ঠে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। রাজধানী বৈরুতে দফায় দফায় বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার সকালে বৈরুতের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। খবর এএফপি এবং আল-জাজিরার।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বৈরুত এবং এর আশপাশে কমপক্ষে তিন দফা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সে সময় থেকেই হিজবুল্লাহর সঙ্গেও ইসরায়েলের সংঘাত শুরু হয়।
প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে হামাস এবং হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর লড়াইয়ে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। লেবাননে এখন পর্যন্ত ২২৬ জন মেডিকেলকর্মী ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত লেবাননে কমপক্ষে ৩ হাজার ৬৪৫ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরও ১৫ হাজার ৩৫৫ জন।
এদিকে সিরিয়ায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হিজবুল্লাহর একজন শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যা করেছে বলে জানা গেছে। মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ওই হিজবুল্লাহ কমান্ডার ২০০৭ সালে ইরাকে মার্কিন সেনাদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করতে সহায়তা করেছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এনবিসি নিউজ জানিয়েছে, আলী মুসা দাকদুক কারবালার অভিযানে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন। সে সময় হিজবুল্লাহর সদস্যরা মার্কিন নিরাপত্তা দলের ছদ্মবেশে একটি ঘাঁটিতে প্রবেশ করে গুলি চালায় এবং পাঁচ মার্কিন সেনাকে হত্যা করে। সাম্প্রতিক বিমান হামলায় আলী মুসা দাকদুক নামের ওই হিজবুল্লাহ যোদ্ধাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকণ্ঠেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শুক্রবার একটি আবাসিক ভবনে এই হামলা চালানো হয়। লেবাননের জাতীয় সংবাদ সংস্থা গতকাল সকালে জানিয়েছে, হামলায় আটতলা ভবন ধসে পড়ে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। লেবাননের আল-জাদিদ টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে অন্তত একটি ভবন বিধ্বস্ত ও এর আশপাশে বেশ কয়েকটি ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা গেছে।
হামলায় বাঙ্কার বাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। এতে গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে। হামলার কয়েক ঘণ্টা পরেও বৈরুতে বিস্ফোরকের তীব্র গন্ধ পাওয়া যায়। রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় ভোর ৪টার দিকে বিস্ফোরণে রাজধানী বৈরুত কেঁপে ওঠে। নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানিয়েছে, অন্তত চারটি বোমা ফেলা হয়েছে। বৈরুতের মধ্যাঞ্চলে চলতি সপ্তাহে এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
গত সপ্তাহের রোববার মধ্য বৈরুতের রাস আল-নাবা জেলায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর এক গণমাধ্যম কর্মকর্তা নিহত হন। বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলিতে বিমান হামলায় ইসরায়েল তার দীর্ঘদিনের শত্রু তেহরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকজন নেতাকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
গাজা যুদ্ধের কারণে প্রায় এক বছর ধরে চলা আন্তসীমান্ত শত্রুতার পর গত সেপ্টেম্বরে লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা শুরুর পর ফিলিস্তিনি মিত্র হামাসের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে হিজবুল্লাহ আক্রমণ করলে এই সংঘাত শুরু হয়।
নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করবে ইতালি
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ইতালি সফর নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটির সরকার। জানা যায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অকার্যকর বা প্রত্যাহার হওয়ার আগে যদি ইতালি সফরে যান নেতানিয়াহু, তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইদো ক্রোসেত্তো এই সতর্কবার্তা জারি করেছেন বলে জানিয়েছে তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদলু এজেন্সি।
খবরে বলা হয়, গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ত এবং হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।
এ পরোয়ানা জারির কয়েক ঘণ্টা পর সম্প্রচার সংবাদমাধ্যম আরএআই টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইতালির মন্ত্রী জানান, তিনি মনে করেন, নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্তের সঙ্গে হামাসের সামরিক শাখার প্রধানকে এক লেভেলে বিচার করা আইসিসির একটি ভুল। তবে এই পরোয়ানা প্রত্যাহার কিংবা অকার্যকর হওয়ার আগে নেতানিয়াহু কিংবা গ্যালান্ত যদি ইতালি সফরে আসেন, তাহলে বাধ্য হয়েই তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে ইতালি সরকারকে।
এর আগে গত মে মাসে নেতানিয়াহু, গ্যালান্ত ও দেইফের পাশাপাশি হামাসের তৎকালীন প্রধান ইসমাইল হানিয়া ও গাজার হামাসপ্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন আইসিসির কৌঁসুলি করিম খান। আইসিসির কৌঁসুলি বলেন, নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করা, মানবিক ত্রাণ সরবরাহ করতে না দেওয়াসহ ক্ষুধাকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার, যুদ্ধে বেসামরিক লোকজনকে ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা।