মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশটিতে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে, সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায়, ভোগান্তি কমেনি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রীদের। এদিকে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান।
রেকর্ড ভাঙা ভারী বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। মরুভূমির দেশটিতে এক বছরের গড় বৃষ্টিপাত হয় ৯৪ মিলিমিটার। সেখানে দুই দিনে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৫৯ দশমিক ৫ মিলিমিটার। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যায় তলিয়ে যায় বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম দুবাই বিমানবন্দর। ব্যাহত হয়েছে কয়েক শ ফ্লাইট।
বন্যায় প্লাবিত হয়েছে রাজধানী আবুধাবিতে প্রবেশের সব সড়ক। এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে অনেকে। পানির কারণে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায়, থমকে আছে বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকা। এমন অবস্থায় বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারছে না অনেক যাত্রী। আটকে থাকা যাত্রীদের খাবার দিতে পারছে না বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। পানি জমে থাকায়, অনেক সড়কে এখনো স্বাভাবিক হয়নি যান চলাচল। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে যাত্রী ও কর্তৃপক্ষের।
তবে বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরইমধ্যে সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচল। তবে এখনো বিলম্বিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। বুকিং নিশ্চিত যাত্রীদের চেক-ইন করার নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এমিরাটস এয়ারলাইন দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩নং টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবে বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সহায়তার নির্দেশ দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান।
দুবাই বিমানবন্দরে চরম বিশৃঙ্খলা
ভারী বৃষ্টি ও তীব্র জলাবদ্ধতার কারণে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক শহরগুলোর অন্যতম দুবাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শহরটির বহু বাড়ি ও শপিং মল হাঁটু পর্যন্ত তলিয়ে গেছে। দুবাইয়ের মতো শহরে এ ধরনের চিত্র অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা বিমানবন্দরের পরে দুবাই বিমানবন্দরই হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। গত বছর এই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করেছে আট কোটি যাত্রী। দুবাই বিমানবন্দর তলিয়ে যাওয়ায় বাতিল করতে হয়েছে শতশত ফ্লাইট। বিমানবন্দরের ভেতরে চরম এক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। দুবাই বিমানবন্দর যেভাবে তলিয়ে গেছে সেটি দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন।
বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে বিমানবন্দরটি প্লাবিত হওয়ায় দুবাইগামী ও দুবাই ছেড়ে আসা ফ্লাইট কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। যদিও বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
প্রসূন রায় নামের এক ব্যক্তি জানান, গত তিন দিন ধরে দুবাই বিমানবন্দরে আটকে আছেন তিনি। দুবাই থেকে মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে ফ্লাইট ছিল প্রসূন রায়ের। মঙ্গলবার দুপুরে বিমানবন্দরে যাওয়ার পর তিনি ১৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন; কিন্তু তিনি বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফ্লাইটে উঠতে পারেননি।
তিনি বলেন, আটবার তার ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ফ্লাইট কখন ছেড়ে যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ফ্লাইটের কোনো নিশ্চয়তা না পেয়ে এন্ট্রি ভিসা নিয়ে শহরের ভেতরে এসেছি। কারণ, এয়ারপোর্টের ভেতরে কোনো হোটেলে কক্ষ খালি নেই।
তার বর্ণনা অনুযায়ী, হাজার হাজার যাত্রী দুবাই এয়ারপোর্টের ভেতরে আটকা পড়ে আছে। অনেকে স্লোগান দিচ্ছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ রাত-দিন কাজ করেও কূলকিনারা করতে পারছে না। পুরো ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। গাড়িগুলোতে পানি ঢুকে যাওয়ায় সেগুলোর ব্রেক কাজ করছিল না। ফলে একটি গাড়ি গিয়ে আরেকটি গাড়িকে ধাক্কা মেরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। অনেক গাড়ি রাস্তায় পানির মধ্যে ডুবে ছিল।
ট্রানজিট যাত্রী হিসেবে যারা বুধবার দুবাইতে অবতরণ করেছেন তাদের অভিজ্ঞতা ছিল দুর্বিষহ। অবতরণ করার জন্য বিমানগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা আকাশে চক্কর দিলেও অবতরণের অনুমতি পাচ্ছিল না। বিমানবন্দরের বাইরে শতশত গাড়ি বিকল অবস্থায় পড়ে ছিল।
রেজাউল করিম নামে এক ব্যক্তি বলেন, অনেকবার ফ্লাইট বাতিল হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত তিনি ঢাকা থেকে দুবাই পৌঁছেছেন। ঢাকায় তিনি ৩৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর দুবাইয়ের উদ্দেশে প্লেন ছেড়ে যায়। দুবাইতে সিনেমার মতো যাত্রা। এক ঘণ্টা পঞ্চাশ মিনিট প্লেনের ভেতরে বসে আছি। কারণ, কোনো গ্রাউন্ড সার্ভিস নেই।
তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী আকিব ইরফানের। তার স্ত্রী দুবাই থেকে ঢাকা আসার কথা ছিল। এক দিন অপেক্ষা করার পর শেষপর্যন্ত তিনি ঢাকার উদ্দেশে বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইটে উঠতে পেরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ফ্লাইট কনফার্ম না হলে কাউকে বিমানবন্দরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, ভেতরে যাত্রীদের এত বেশি চাপ তৈরি হয়েছে যে আর যাত্রী ভেতরে নেওয়া সম্ভব ছিল না।
দুবাই বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন ব্রিটিশ ট্যুরিস্ট অ্যান উইং, তার স্বামী ও তিন সন্তান। তারা লন্ডনের হিথ্রোতে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। অ্যান উইং বলেন, এটা খুব ভয়াবহ পরিস্থিতি। আমাদের পশুর মতো করে রাখা হয়েছে। এটা খুবই অমানবিক। আমার পরিবারের সদস্যদের কাছে কোনো খাবার নেই।
ফ্রান্সের সংস্কৃতি মন্ত্রী রাশিদা দাতি জানিয়েছেন, বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত শিল্পকলা জাদুঘর ল্যুভর মিউজিয়ামে রোববার সকালে একটি ডাকাতির ঘটনার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ লিখেছেন, জাদুঘরটি খোলার ঠিক পরেই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। আমি বর্তমানে ঘটনাস্থলে আছি, পুলিশ তদন্ত করছে।
ল্যুভর কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিশেষ কারণবশত আজকের জন্য জাদুঘরটি বন্ধ থাকবে। তবে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
ফরাসি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, লুট হওয়া বস্তুগুলোর মধ্যে মূল্যবান গয়নাও থাকতে পারে।
প্যারিসের ল্যুভর জাদুঘর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিদর্শিত জাদুঘরগুলোর একটি। এখানে সংরক্ষিত রয়েছে বহু ঐতিহাসিক ও বিখ্যাত শিল্পকর্ম, যার মধ্যে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসা অন্যতম।
পুলিশ সূত্রে এএফপি জানিয়েছে, একদল অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতকারী স্কুটারে করে এসে জাদুঘরে প্রবেশ করে।
ঘটনাস্থলে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং সংস্কৃতি মন্ত্রী রাশিদা দাতি নিজেও জাদুঘরে উপস্থিত আছেন।
ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে সোনার ৯ আইটেম নিয়ে গেছে ডাকাতরা
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়ামে রোববার সকালে এক অবিশ্বাস্য ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
ফরাসি গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, তিনজন মুখোশধারী মিউজিয়াম খোলার কিছু পরেই ভেতরে প্রবেশ করে। তারা সেন নদীমুখী দিকের অ্যাপোলো গ্যালারিতে পৌঁছাতে একটি মালবাহী লিফট ব্যবহার করে, যেখানে ফ্রান্সের রাজকীয় গয়নার সংগ্রহ রাখা আছে।
ডাকাতরা কাচ ভেঙে গ্যালারিতে ঢোকে এবং নয়টি মূল্যবান সোনার আইটেম নিয়ে পালিয়ে যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তারা একটি মোটর-স্কুটারে করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়েছে।
এখনো লুট হওয়া গয়নার মূল্য নির্ধারণের কাজ চলছে, তবে ধারণা করা হচ্ছে এগুলোর ঐতিহাসিক ও আর্থিক মূল্য দুটোই বিপুল।
জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এক্স-এ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিশেষ কারণে ল্যুভর জাদুঘর বন্ধ রাখা হয়েছে।
ফরাসি সংস্কৃতি মন্ত্রী রাশিদা দাতি জানিয়েছেন, ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, ল্যুভর মিউজিয়াম বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দর্শকপ্রিয় জাদুঘর, যেখানে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসাসহ অমূল্য শিল্পকর্ম ও ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে।
পাকিস্তান দেশটির নারীদের জন্য বিশেষভাবে গঠিত রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংক সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। গত শুক্রবার ফার্স্ট উইমেন ব্যাংক লিমিটেড (এফডব্লিউবিএল) আরব আমিরাতের ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং কোম্পানির (আইএইচসি) কাছে বিক্রি করে দেয়। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আবুধাবিভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং কোম্পানির (আইএইচসি) কাছে পাকিস্তানি ব্যাংকটির মালিকানা হস্তান্তরকে পাকিস্তান–সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনৈতিক সম্পর্কের এক মাইলফলক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে আরও যৌথ উদ্যোগ ও অংশীদারত্বের পথ খুলে দেবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই লেনদেনকে তিনি ‘বৃষ্টির প্রথম ফোঁটা’ হিসেবে দেখছেন—যা পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে আরও গভীর অর্থনৈতিক সহযোগিতার সূচনা করবে।
এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সরকার–থেকে–সরকার (জি–টু–জি) কাঠামোর আওতায় এফডব্লিউবিএলের বেশির ভাগ শেয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে আইএইচসির হাতে হস্তান্তর করা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দেন টু–পয়েন্ট জিরো–এর চেয়ারম্যান শেখ জায়েদ বিন হামদান বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।
এর আগে, পাকিস্তানের ফেডারেল ক্যাবিনেট ব্যাংকটির সরকারি মালিকানাধীন পুরো শেয়ার বিক্রির অনুমোদন দেয়। এর বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি ৪৬ লাখ ডলার (প্রায় ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন রুপি) বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো মূল্য প্রকাশ করা হয়নি।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ব্যাংক অধিগ্রহণের পাশাপাশি আইএইচসি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মোট ন্যূনতম ১০ বিলিয়ন রুপি মূলধন সরবরাহ করবে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এফডব্লিউবিএলের ইক্যুইটির পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন রুপি। নতুন বিনিয়োগকারী বাকি ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন রুপি যোগ করে ঘাটতি পূরণ করবে।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ বলেন, এই চুক্তি সফলভাবে সম্পন্ন করতে উপ–প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার ও বেসরকারীকরণবিষয়ক উপদেষ্টা মোহাম্মদ আলির ‘দৃঢ় ও মনোযোগী নেতৃত্ব’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন ও বেসরকারি খাতনির্ভর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শাহবাজ শরিফ আরও জানান, নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার যে লক্ষ্য নিয়ে ফার্স্ট উইমেন ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা শুধু বজায় থাকবে না—বরং পেশাদার ব্যবস্থাপনা ও কৃষি ও শিল্প খাতে লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হবে।
আইএইচসির প্রধান নির্বাহী সৈয়দ বাসার শুয়াইব বলেন, পাকিস্তানের ব্যাংকিং খাতে এই বিনিয়োগ আমাদের আস্থার প্রতিফলন এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। তিনি বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানের আর্থিক খাতে বড় সম্ভাবনা দেখছি। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংককে আধুনিকীকরণ, স্বয়ংক্রিয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক আর্থিক সিদ্ধান্তে অগ্রগতি আনতে আমরা কাজ করব।’
সরকারি এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ইন্টার–গভর্নমেন্টাল কমার্শিয়াল ট্রানজ্যাকশন অ্যাক্ট ২০২২–এর আওতায় এটিই প্রথম ব্যাংক বেসরকারীকরণ। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ফার্স্ট উইমেন ব্যাংক বর্তমানে পাকিস্তানজুড়ে ৪২টি শাখা পরিচালনা করছে, যেখানে খুচরা, এসএমই ও করপোরেট গ্রাহকদের সেবা দেওয়া হয়।
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) এবং ছোট ডানঘেঁষা দল জাপান ইনোভেশন পার্টি (জেআইপি বা ইশিন) একত্রে জোট সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যার মধ্য দিয়ে সানায়ে তাকাইচির দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পথ খুলে যাচ্ছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।
কিয়োদো সংবাদ সংস্থা রোববার জানিয়েছে, এলডিপির নবনির্বাচিত নেতা সানায়ে তাকাইচি ও জেআইপি প্রধান হিরোফুমি ইয়োশিমুরা কাল সোমবার জোট সরকার গঠনের চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছেন।
এ মাসের শুরুতে তাকাইচি ক্ষমতাসীন দল এলডিপির নেতা নির্বাচিত হন, কিন্তু তার নেতৃত্বাধীন পূর্বের জোট সরকার ভেঙে পড়লে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। এর পর থেকে এলডিপি নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা চালিয়ে আসছে, যা তাকাইচির প্রধানমন্ত্রিত্বের সম্ভাবনাকে আবারও জোরদার করেছে। এলডিপি তাকাইচিকে জোট গঠনের দায়িত্ব দিয়েছে।
জাপানের প্রভাবশালী দৈনিক ইয়োমিউরি শিমবুনও জানিয়েছে, সোমবার বৈঠকের পর তাকাইচি ও ইয়োশিমুরা সম্ভবত জোট সরকার গঠনের চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন। অন্যদিকে, জেআইপি আজ ওসাকায় নির্বাহী বোর্ডের বৈঠক করবে এবং একই দিন পার্লামেন্ট সদস্যদের পূর্ণাঙ্গ সভায় এলডিপির সঙ্গে চুক্তির চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।
এলডিপির দীর্ঘদিনের সহযোগী দল কোমেইতো ২৬ বছর পর সরকার থেকে সরে দাঁড়ালে নতুন জোট সরকার গঠনের আলোচনা শুরু হয় এবং জাপান রাজনৈতিক অচলাবস্থায় পড়ে। এলডিপি ও জেআইপি যদি আনুষ্ঠানিকভাবে জোট বাঁধে, তবে তাকাইচি মঙ্গলবারই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে পারেন।
তবে, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের ক্ষেত্রে দুই দল মিলে এখনো দুটি আসনের ঘাটতি রয়েছে। যদি ভোট দ্বিতীয় দফায় গড়ায়, তাহলে তাকাইচিকে শুধু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে বেশি পার্লামেন্ট সদস্যের সমর্থন পেতে হবে।
এই জোট সরকার গঠনের প্রস্তুতি এমন সময় চলছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাপান সফরের মাত্র কয়েক দিন বাকি। ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ায় বার্ষিক এশিয়া–প্যাসিফিক ইকোনমিক কো–অপারেশন (অ্যাপেক) সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে জাপান সফরে যাবেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, মায়ামি ও লস এঞ্জেলসসহ বিভিন্ন শহরে এই বিক্ষোভ হয়েছে। নিউইয়র্কে টাইম স্কোয়ারের সামনের সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে।
সড়ক ও পাতাল রেলেও প্রবেশপথগুলো লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়েছিল। তারা ‘রাজতন্ত্র নয়, গণতন্ত্র’ এবং ‘সংবিধান বিকল্প কিছু নয়’- এমন শ্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেছেন।
এই বিক্ষোভের আগে ট্রাম্পের সহযোগীরা অভিযোগ করেছেন যে, এর সাথে বামপন্থি অ্যান্টিফা আন্দোলনের যোগসূত্র আছে এবং এর নিন্দা করে তারা এই বিক্ষোভের নাম দিয়েছেন ‘হেইট আমেরিকা র্যালি’ বা ‘আমেরিকাকে ঘৃণা সমাবেশ’।
এদিকে আয়োজক ও বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, শনিবার তাদের বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ। ‘নো কিংস’ কর্মসূচির মূল নীতিকে অহিংস বলে আয়োজক গোষ্ঠী তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে। তারা অংশগ্রহণকারীদের সম্ভাব্য যেকোনো উত্তেজনা পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন। নিউইয়র্কে বিক্ষোভকারীরা ড্রামসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে ‘গণতন্ত্র দেখতে এমনই’ এমন শ্লোগান দিচ্ছিলেন।
বিক্ষোভের সময় আকাশে হেলিকপ্টার ড্রোন উড়তে দেখা গেছে এবং পাশে পুলিশ অবস্থান করছিল। নিউইয়র্কের পুলিশ জানিয়েছে, ১ লাখেরও বেশি মানুষ ওই শহরে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে।
টাইম স্কোয়ারেই কুড়ি হাজারের বেশি মানুষের অংশ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার একজন পুলিশ কর্মকর্তা। ফ্রি ল্যান্স লেখক ও সম্পাদক বেথ জেসলফ বলছেন, তিনি এই প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন কারণ তার মনে হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন ‘ফ্যাসিজমের দিকে যাচ্ছে এবং এটি একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার’।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ব্যবহারের একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন। তিনি কংগ্রেসের অনুমোদন করা তহবিল ছাড় করাতে নির্বাহী আদেশ ব্যবহার করেছেন। ফেডারেল সরকারের একাংশ ভেঙে দিয়েছেন এবং অনেক দেশের ওপর ব্যাপক শুল্কারোপ করেছেন। বিভিন্ন রাজ্য গভর্নরের আপত্তি সত্ত্বেও ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন।
প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তার পদক্ষেপ দেশ পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। তিনি স্বৈরশাসক বা ফ্যাসিবাদী হওয়ার অভিযোগকে উন্মাদনা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তার সমালোচকরা অবশ্য বলছেন, তার কিছু পদক্ষেপ অসাংবিধানিক, যা আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।
মাসিমো মাসকলি নিউজার্সির একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী। তিনি বেড়ে উঠেছেন ইতালিতে। তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কারণ তার মতে আমেরিকা এখন যেই পথ অনুসরণ করছে, তা তার দেশ ইটালি করেছিল গত শতাব্দীতে।
‘আমি একজন ইতালিয়ান বীরের ভাতিজা। তিনি মুসোলিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধে অংশ নিয়ে ফ্যাসিস্টদের হাতে মারা গিয়েছিলেন। ৮০ বছর পর আমেরিকাতে আবার সেই ফ্যাসিজম আমি আশা করি না,’ বলেছেন তিনি।
সিনেটে সংখ্যালঘু দলের নেতা ও নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমারও এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। ‘আমেরিকায় আমাদের কোনো স্বৈরশাসক নেই এবং আমরা ট্রাম্পকে আমাদের গণতন্ত্র ধ্বংস করতে দেব না,’ শুমার লিখেছেন সামাজিক মাধ্যম এক্সে।
ওয়াশিংটন ডিসির বিক্ষোভে বক্তব্য দিয়েছেন ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। ‘ঘৃণা নয়, বরং আমরা আমেরিকাকে ভালোবাসি বলেই আমরা এখানে,’ হাজার হাজার মানুষের এক সমাবেশে বলেছেন তিনি।
ওয়াশিংটন ডিসির এই মিছিল সমাবেশে ট্রাম্পের ‘আমেরিকাকে মহান করুন’ শ্লোগান লেখা টুপি পড়ে এক ব্যক্তিকেও যোগ দিতে দেখেছে বিবিসি। তিনি বলেছেন, তিনি বিক্ষোভটি দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
ওদিকে বিক্ষোভ হয়েছে ইউরোপেও। বার্লিন, মাদ্রিদ ও রোমে আমেরিকার বিক্ষোভের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাস্তায় এসেছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। লন্ডনে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সামনেও কয়েকশত মানুষ জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করেছেন। টরেন্টোতে যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেটের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে।
ফক্স নিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বিদ্রূপ করে বলেছেন, সামনের সমাবেশগুলোতে তিনি ভাষণ দেবেন বলে তার কাছে মনে হচ্ছে। ‘কিং! এটা অভিনয় নয়,’ ট্রাম্প সাক্ষাৎকারটিতে বলেছেন। ‘আপনি জানেন তারা আমাকে রাজা বলছে। আমি রাজা নই’।
কানসাসের গভর্নর রজার মার্শাল সমাবেশের আগে সিএনএনকে বলেছেন ‘আমাদের ন্যাশনাল গার্ড বের করে আনতে হবে। আশা করি এটি শান্তিপূর্ণ হবে। আমার সন্দেহ আছে।’
বিভিন্ন রাজ্যে রিপাবলিকান গভর্নররা কয়েকটি রাজ্যে ন্যাশনাল গার্ডকে প্রস্তুত রেখেছিলেন। বিক্ষোভকে সামনে রেখে টেক্সাস গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট গত বৃহস্পতিবার রাজ্যে ন্যাশনাল গার্ডকে সক্রিয় করেছিলেন।
তিনি বলেছেন, ‘পরিকল্পিত অ্যান্টিফা-লিংকড বিক্ষোবের’ জন্য ট্রুপস দরকার হবে।
ডেমোক্র্যাটরা এসব পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন। রাজ্যের শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতা গিনি উ বলেছেন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে সশস্ত্র সৈন্য পাঠানোর মতো কাজই স্বৈরশাসক ও রাজা করে ‘এবং গ্রেগ অ্যাবোট নিজেকে তাদেরই একজন প্রমাণ করেছেন।’
ভার্জিনিয়ার রিপাবলিকান গভর্নর গ্লেন ইয়ংকিনও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। ট্রাম্পের অনুরোধে ওয়াশিংটন ডিসিতেও ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন রয়েছে গত অগাস্ট থেকেই। তবে তাদের এবারের বিক্ষোভে চোখে পড়েনি। স্থানীয় পুলিশ অবশ্য রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের মধ্যে ট্রাম্পকে কেন্দ্র করে মারাত্মক বিভাজন রয়েছে। রয়টার্স ও ইপসসের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে ৪০ শতাংশ তার পক্ষে আর ৫৮ শতাংশ তার বিপক্ষে। তবে সাধারণত দায়িত্ব পালনের সময় প্রেসিডেন্টদের জনপ্রিয়তা কিছুটা কমতে থাকে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তাদের দাবি হামাসও যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় নতুন করে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র দাবি করেন, হামাস যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন করে ‘ইয়েলো লাইন’-এর ওপারে ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর একাধিক হামলা চালিয়েছে।
সেনাবাহিনীর দাবি, এই ‘ইয়েলো লাইন’ হচ্ছে সেই সীমারেখা, যার বাইরে ইসরায়েলি বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ অনুযায়ী নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল।
অন্যদিকে হামাস জানিয়েছে, তারা এখনো যুদ্ধবিরতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং বরং ইসরায়েলই একাধিকবার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছে।
বার বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসের শুরুতে কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ৪৭ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ফলে ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৪৩ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েলি সরকার বলছে, গাজা ও মিসরের মধ্যবর্তী রাফা সীমান্ত ক্রসিং ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ বন্ধ থাকবে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
৪৭ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল
বার বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসের শুরুতে কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ৪৭ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
হামাস এরই মধ্যে আরও দুই জিম্মির মরদেহ ফেরত দিয়েছে। হামাস বলছে, নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি চুক্তি ‘ব্যাহত করার জন্য তুচ্ছ অজুহাত’ কাজে লাগাতে চাচ্ছেন।
শনিবার রাতে হামাস জানিয়েছে, রাফা ক্রসিং বন্ধ থাকায় মৃতদেহ উদ্ধার ও স্থানান্তরে উল্লেখযোগ্য বিলম্ব হবে। গাজার মধ্যে এখনো বন্দি ও মৃতদেহ ফেরতের বিষয়টি যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়নের অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাফাহ ক্রসিং পুনরায় খোলার সঙ্গে সব মৃতদেহ পুনরুদ্ধারের বিষয়টি যুক্ত করেছে ইসরায়েল।
২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া সংঘাতে গাজায় কমপক্ষে ৬৮ হাজার ১১৬ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ২০০ জন আহত হয়েছে। অপরদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়।
যুদ্ধবিরতির পরেও বন্ধ গাজার ‘লাইফলাইন’ রাফা ক্রসিং
যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার, তুরস্কের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও এখনো বন্ধ রয়েছে ‘লাইফলাইন’ খ্যাত রাফা ক্রসিং। গাজার শহর থেকে প্রায় ৩০-৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে মিসর সীমান্তে অবস্থিত এ চেকপোস্টটি মাত্র ৩০০ মিটারের একটি রাস্তা। তবে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ এবং ত্রাণ পৌছানোর প্রধান আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বার এ রাফা ক্রসিং।
হামাসের ওপর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে ফিলিস্তিনিদের জীবন বাঁচানোর এ পথটি বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে রাফা ক্রসিং।
কার্যালয়ের বরাত দিয়ে দ্য নাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রসিং পুনরায় খোলার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে হামাস কতটা তাদের দায়িত্ব পালন করছে তার ওপর। বন্দিদের ফিরানো এবং মৃতদেহ হস্তান্তরসহ সম্মত ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়ন করছে কিনা সে বিষয় বিবেচনা করে রাফা ক্রসিং খোলা হবে।
গাজার মধ্যে এখনও বন্দি ও মৃতদেহ ফেরতের বিষয়টি যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়নের অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাফা ক্রসিং পুনরায় খোলার সঙ্গে সব মৃতদেহের পুনরুদ্ধারের বিষয়টি যুক্ত করেছে ইসরায়েল।
এর আগে নয় মাস পর গত ফেব্রুয়ারিতে সীমিত সময়ের জন্য রাফা ক্রসিং খুলে দেওয়া হয়েছে। তখন যে পরিমান ত্রাণ প্রবেশের কথা ছিল তা হটে দেয়নি ইসরায়েল। এছাড়া তখন ছয় হাজারের বেশি রোগীকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে তা করতে দেয়নি ইসরাইয়েল। ফলে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচার হামলা ও গণহত্যার কারণে গাজায় মানব সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ শুরু হয়।
গাজায় ফের হামলা শুরু করতে বললেন ইসরায়েলি মন্ত্রীরা
ইসরায়েলের অতি-ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরসহ একাধিক মন্ত্রী গাজায় আবারও আক্রমণ শুরু করার জন্য নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার আল জাজিরা জানিয়েছে, বেন-গভির এক্স-পোস্টে বলেন, তিনি চান ইসরায়েলি বাহিনী ‘সর্বোচ্চ শক্তির সঙ্গে গাজা উপত্যকায় সম্পূর্ণরূপে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করুক’।
আল জাজিরা জানিয়েছে, আজ সকালে গাজাজুড়ে বেশ কয়েকটি বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর মন্ত্রীদের এ বক্তব্য এলো।
ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এক্স-পোস্টে একটি শব্দ লিখে একই ইঙ্গিত দিছেন: ‘যুদ্ধ!’
প্রবাসীবিষয়ক মন্ত্রী আমিচাই চিকলি বলেন, ‘যতদিন হামাস থাকবে, যুদ্ধ থাকবেই।’
নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার আরেক সদস্য আভি ডিচটার পরিস্থিতিকে ‘কঠিন ও জটিল’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং হামাসকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনে অভিযুক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, সমস্ত জীবিত জিম্মিরা আমাদের হাতে, পরিস্থিতি বদলে গেছে। ইসরায়েল হামাসকে নিরস্ত্র করার ক্ষেত্রে হাল ছাড়বে না।
দীর্ঘদিনের গণহত্যা ও দুর্ভিক্ষের মাঝে কয়েকদিন আগে মার্কিন মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করে হামাস ও ইসরায়েল। তবে কয়েকদিন না গড়াতেই ইসরায়েলি মন্ত্রীদের এসব মন্তব্য তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ বাড়িয়ে দেয়।
ক্যারিবীয় সাগরে একটি মাদকবাহী সাবমেরিন ধ্বংস করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সাবমেরিনটি যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এদিকে মার্কিন হামলায় দুজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরও দুজন বেঁচে গেছেন। বেঁচে যাওয়া ওই দুজনকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র। রোববার (১৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী একটি “মাদকবাহী” সাবমেরিন ধ্বংস করেছে। সাবমেরিনটি “মাদক চোরাচালান পথ” ধরে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে আসছিল।
শনিবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশালে মার্কিন রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, “আমার জন্য এটা এক বিরাট সম্মান, আমরা একটি বিশাল মাদকবাহী সাবমেরিন ধ্বংস করতে পেরেছি, যা মাদক পাচারপথ ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল।”
তিনি জানান, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চিত করেছে যে সাবমেরিনটিতে মূলত ফেন্টানিলসহ বিপুল পরিমাণ অবৈধ মাদক ছিল। ট্রাম্প বলেন, “নৌযানটিতে চারজন ‘নার্কো-টেররিস্ট’ ছিলেন। তাদের মধ্যে দুইজন নিহত হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, অভিযানে যুক্ত কোনো মার্কিন বাহিনীর ক্ষতি বা কোনো সেনা আহত হয়নি।
ট্রাম্প দাবি করেন, “আমি যদি এই সাবমেরিনকে উপকূলে পৌঁছাতে দিতাম, তাহলে অন্তত ২৫ হাজার আমেরিকান মারা যেতেন। বেঁচে থাকা দুই সন্ত্রাসীকে তাদের নিজ নিজ দেশ ইকুয়েডর ও কলম্বিয়ায় ফেরত পাঠানো হচ্ছে, সেখানে তাদের আটক রাখার পাশাপাশি বিচার করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র স্থল বা সমুদ্র, কোনও পথেই মাদকবাহী সন্ত্রাসীদের সহ্য করবে না।”
সংবাদমাধ্যম বলছে, গত মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় সাগরে অন্তত ছয়টি অভিযান চালিয়েছে। সেখানে মূলত আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবৈধ মাদকবাহী জাহাজ লক্ষ্য করে দেশটি এসব হামলা চালাচ্ছে। যদিও এসব অভিযান ভেনেজুয়েলার উপকূলের অনেকটা কাছাকাছিই সংঘটিত হচ্ছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ক্যারিবীয় অঞ্চলে নৌবাহিনীর একটি বহর মোতায়েন করার পর পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়। ওয়াশিংটনের দাবি, মার্কিন এই নৌবহর অপরাধী চক্র ও মাদক পাচার রোধে কাজ করছে।
এর আগে গত শুক্রবার মার্কিন প্রকিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের প্রধান পিট হেগসেথ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন কমান্ড অঞ্চলে মাদক চোরাচালানকারী সংগঠনগুলোকে লক্ষ্য করে একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে গাজায় একই পরিবারের ১১ জন সদস্যকে হত্যা করেছে ইসরাইল। আট দিন আগে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ চুক্তি লঙ্ঘনের ঘটনা। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় গাজা সিটিতে একটি গাড়িতে হামলা চালায় ইসরাইল। খবর আল জাজিরার।
শুক্রবার সন্ধ্যায় গাজা সিটির জেইতুন পাড়ায় একটি বেসামরিক গাড়ি লক্ষ্য করে ট্যাঙ্কের শেল নিক্ষেপ করে ইসরাইলি বাহিনী। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এক বিবৃতিতে জানান, পরিবারটি যখন তাদের বাড়িতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল, তখন ইসরাইলি সেনাবাহিনী তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। নিহতদের মধ্যে সাত শিশু এবং তিনজন নারী ছিলেন।
তিনি আরো বলেন ‘যা ঘটেছে তা নিশ্চিত করে যে দখলদাররা এখনো রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষ চালাতে চায়।’
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিসের সঙ্গে সমন্বয় করে এখন পর্যন্ত নয়জনের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
হামাস এ হামলাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করে এর নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলছে, কোনো যুক্তি ছাড়াই পরিবারটিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মধ্যস্থতাকারীদের কাছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলার জন্য ইসরাইলকে চাপ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে হামাস।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরও গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
হামাস এই হামলাগুলোকে যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যাতে তারা ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে চুক্তি মেনে চলতে বাধ্য করে।
হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা যুদ্ধবিরতির বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। মধ্যস্থতাকারীরা যদি নীরব থাকে, তবে এটি আরও রক্তপাতের পথ খুলে দেবে।
হামাস জানিয়েছে, তারা রেড ক্রসের মাধ্যমে এক নিহত ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দিয়েছে।
এদিকে, গাজার মানবিক পরিস্থিতি এখনও অত্যন্ত ভয়াবহ। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আহ্বান সত্ত্বেও বড় পরিসরে ত্রাণ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ইসরায়েলের আরোপিত বিধিনিষেধের কারণে। ফলে স্থানীয় মানুষ এখনো খাবার, পানি ও চিকিৎসা সংকটে ভুগছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত ৬৭ হাজার ৯৬৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ১৭৯ জন আহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
নতুন করে এই হামলাগুলোর ফলে যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বেড়েছে এবং পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, সংঘাত পুনরায় তীব্র রূপ নিতে পারে যদি ইসরায়েলি অভিযান বন্ধ না হয়।
ইসরায়েলি হামলায় একই পরিবারের ১১ জন নিহত
যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজা শহরের পূর্ব আল-জেইতুন এলাকায় কোনো সতর্কতা ছাড়াই একটি গাড়ি লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় একই পরিবারের ১১ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। গাজার ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স শুক্রবার রাতে এ তথ্য জানিয়েছে।
সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, পরিবারের ১১ জন সদস্যকে বহনকারী গাড়িটি ‘হলুদ রেখা’ অতিক্রম করলে বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। আক্রমণটি কোনো সতর্কতা ছাড়াই হয়েছিল। নিহতদের মধ্যে মধ্যে সাত শিশু এবং দুই নারী ছিলেন।
‘হলুদ রেখা’ হলো একটি সীমানা - যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলি বাহিনী যেখানে অবস্থান করছে সেই জায়গা। এই রেখা টেনে গাজার মধ্যে ফিলিস্তিনিদের চলাচলের অনুমতিপ্রাপ্ত এলাকাগুলোকে পৃথক করা হয়েছে।
বাসাল বলেন, ‘তাদের সতর্ক করা বা তাদের সঙ্গে এমনভাবে আচরণ করা সম্ভব ছিল, যাতে মৃত্যু না ঘটে। কিন্তু যা ঘটেছে তা নিশ্চিত করে যে, দখলদাররা এখনো রক্তপিপাসু এবং নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
গত ১০ অক্টোবর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়িত হয়। চুক্তির আওতায় গাজার প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলি সেনাদের আংশিক প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৬৮ হাজার জনে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি বেশি মানুষ আহত হয়েছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।
ফিলিস্তিনি বন্দিদের অবস্থা অবমূল্যায়ন করা হয়েছে
যুদ্ধের সময় গাজা এবং পশ্চিম তীর থেকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরায়েল। কিন্তু মুক্তির সময় তারা যে অবস্থায় ফিরেছে, সেদিকে আন্তর্জাতিকভাবে খুব কম মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, হাতে গোনা কয়েকজন ইসরায়েলি বন্দিকে নিয়ে অনেকটা হৈ চৈ পড়ে গেছে, বিশেষ করে পশ্চিমা মিডিয়াগুলোতে।
শনিবার লন্ডনভিত্তিক কাউন্সিল ফর আরব-ব্রিটিশ আন্ডারস্ট্যান্ডিং (CAABU) এর পরিচালক ক্রিস ডয়েল আল জাজিরাকে এমনটাই বলেছেন।
ডয়েল বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইসরায়েলি বন্দিদের ওপর এত বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে, যা বোধগম্য; কিন্তু এই ফিলিস্তিনি বন্দি ও আটক ব্যক্তিদের, মুক্তি দেওয়ার সময় তাদের অবস্থা সম্পর্কে কোনো খবরই পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, তাদের কোথায় রাখা হয়েছিল? নির্যাতন, এমনকি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ... এই সবকিছুই খুব বেশি অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে।
ক্রিস ডয়েলের মতে, অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের জন্য এটি অত্যন্ত বাস্তব, খুবই বেদনাদায়ক। এটি দেখায় যে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অন্যান্য দেশে কভারেজ এবং রাজনৈতিক বিতর্ক এতটাই এগিয়ে গেছে যে, সর্বদা ইসরায়েলিদের সঙ্গে কী ঘটে তার ওপর ফোকাস থাকে। ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে কী ঘটে, তার ওপর ফোকাস কম।
ডয়েল আরও বলেন, ট্রাম্পের ২০-দফা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সবকিছুর জন্য কে দায়ী, তা নির্ধারণ করার জন্য একটি ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। ২০-দফা পরিকল্পনা চুক্তিতে তা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত, ইচ্ছাকৃতভাবে এটি রাখা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল কোনো বিচারিক ব্যবস্থা অনুমোদন করতে চাইবে না, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ইসরায়েলি গণহত্যা
টানা দুই বছরের গণহত্যা যুদ্ধের অবসানে সম্প্রতি মার্কিন-সমর্থিত চুক্তির পর হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজারেরও বেশি। একই সময়ে ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি বেশি মানুষ আহত হয়েছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
চলতি বছরের শুরুতেও একটি যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ইসরায়েল গত ২৭ মে থেকে গাজায় পৃথক সাহায্য বিতরণ উদ্যোগ শুরু করে। এতে সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই পদক্ষেপের পর অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষ প্রকট হয়ে ওঠে।
ইসরায়েলি বাহিনী খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও গুলি চালিয়ে যায়। এর ফলে শত শত মানুষ নিহত হয়। সেই সঙ্গে দুর্ভিক্ষে শিশুসহ বহু মানুষের মৃত্যু হয়।
মেক্সিকান ন্যাশনাল গার্ড বৃহস্পতিবার বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ত্রাণ-সামগ্রী পাঠিয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ৭০ জন নিহত এবং কয়েক ডজন নিখোঁজ হয়েছে।
মেক্সিকোর জোচিকোআটলান থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
সামরিক বাহিনী পরিচালিত এই সংস্থাটি হিডালগোর রাজধানী পাচুকা থেকে তিয়ানগুইস্টেঙ্গো এবং জালাকাহুয়ানতলাসহ বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।
জোচিকোআটলানে টেক্সকাকো সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা একটি বিমান অবতরণের পর তার কাছে লাইনে দাঁড়িয়েছিল এবং বেশ কয়েকজন শিশু কৌতূহলীভাবে সৈন্যদের মালামাল নামানো এবং ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণ করার সময় তা দেখছিল।
জোচিকোআটলানের ৩৭ বছর বয়সী বাসিন্দা মেরিলিন কর্টেস এএফপি’কে বলেছেন, ‘আমাদের দোকানে কেনার মতো কিছুই অবশিষ্ট নেই।’
‘সত্যি বলতে, এই ত্রাণ-সামগ্রী আমাদের জন্য খুবই সহায়ক হবে। আমাদের সত্যিই এটির প্রয়োজন। এটি ইতোমধ্যেই আমাদের জন্য আশার আলো।’
ত্রাণ-সামগ্রীর মধ্যে টুনা, দুধ, ওটমিল, টয়লেট পেপার এবং সাবানসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল।
ত্রাণ-সামগ্রী বিতরনের পাশাপাশি ন্যাশনাল গার্ড আহতদের হাসপাতালে স্থানান্তরও করছে।
বিমান বাহিনীর ক্যাপ্টেন ইরাক আলেজান্দ্রো মার্টিনেজ বলেছেন, ‘যদি আহত ব্যক্তি বা এমন কেউ থাকে যার ওষুধ বা অতিরিক্ত সাহায্যের প্রয়োজন হয় - হাসপাতালের প্রয়োজন হয়, আমরা তাদের বিমানে পরিবহন করি’।
গত সপ্তাহে কয়েকদিন ধরে প্রবল বৃষ্টিপাতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই দুর্যোগে দেশের মধ্য এবং পূর্বে রাস্তা এবং মহাসড়ক ডুবে বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর ১৬০টি এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
মেক্সিকো সিটির প্রতিবেশী হিডালগোতে ৮৪টি বিচ্ছিন্ন পৌরসভা রয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলো পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত যেখানে ভূমিধসের কারণে প্রবেশপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সূত্র: বাসস
দূরপাল্লার টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে ওয়াশিংটনে গেলেও শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কোনো প্রতিশ্রুতি পাননি ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো ইউক্রেইনে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর বিষয়ে প্রস্তুত নয়।
হোয়াইট হাউসে শুক্রবার জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, “আশা করি ইউক্রেইনের টমাহক লাগবে না। এই ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াই আমরা যুদ্ধ শেষ করতে পারবো বলে আশা করছি।” তিনি আরও বলেন, এ ধরনের অস্ত্র সরবরাহ করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে।
জেলেনস্কি বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে আলোচনা হলেও তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কারণ যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা বাড়াতে চায় না। তিনি দাবি করেন, রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালানোর জন্য টমাহক অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।
ট্রাম্প এর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। সেই আলাপের পরদিনই হলো জেলেনস্কির সঙ্গে এই বৈঠক। জানা গেছে, শিগগিরই ট্রাম্প ও পুতিন হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে মুখোমুখি আলোচনায় বসবেন।
বৈঠকে জেলেনস্কি প্রস্তাব দেন, যুক্তরাষ্ট্র টমাহক দিলে এর বদলে ইউক্রেইন ড্রোন সরবরাহ করতে পারে। ট্রাম্প প্রস্তাবে সরাসরি সম্মতি না দিলেও আগ্রহ দেখান বলে জানা গেছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রাথমিক ধাপ নিশ্চিত করার ভূমিকার জন্য ট্রাম্পের প্রশংসা করেন জেলেনস্কি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, একই কৌশল প্রয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেইন যুদ্ধে শান্তির পথ তৈরি করবে।
টমাহক না পেলেও এটি পাওয়ার সম্ভাবনা রাশিয়াকে উদ্বিগ্ন করেছে বলে দাবি করেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, “টমাহক শক্তিশালী অস্ত্র—এ কারণেই রাশিয়া এ নিয়ে শঙ্কিত।” তবে তিনি জানান, “আমি বাস্তববাদী, প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তব ফল চাই।”
পবিত্র নগরী মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদকে কেন্দ্র করে সৌদি আরব এক নতুন মেগা উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণা করেছে। এই প্রকল্পের অধীনে গ্র্যান্ড মসজিদের কাছাকাছি আকাশচুম্বী অট্টালিকা নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হলো মক্কা নগরীতে আগত বিশ্বের মুসলিমদের জন্য থাকার ব্যবস্থা, আতিথেয়তা এবং নামাজ আদায়ের সুবিধা নিশ্চিত করা।
নতুন এই উন্নয়ন প্রকল্পের নামকরণ করা হয়েছে ‘কিং সালমান গেট’। এটি আগামী বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ১২ মিলিয়ন স্কয়ার মিটার এলাকাজুড়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবেন।
প্রকল্পে থাকবে আবাসিক, বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক ও হোটেল সুবিধা। এছাড়াও, ইনডোর ও আউটডোর মিলিয়ে একসঙ্গে প্রায় ৯ লাখ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি ভিডিওতে দেখা গেছে, মক্কা নগরীর পাশ দিয়ে বিশাল উঁচু ভবনগুলো দাঁড়ানো এবং তার ওপরে শান্তির পায়রা উড়ছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে রুয়া আলহারাম আলমাক্কি প্রতিষ্ঠান। নতুন এই উদ্যোগে আনুমানিক ৩ লাখ মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সৌদি আরবের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে মক্কায় ৩ কোটি হজ যাত্রীকে স্বাগত জানানো হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মক্কা-মদিনা অঞ্চলে মুসলিম সম্প্রদায়ের আকর্ষণ আরও বৃদ্ধি পাবে।
পর্তুগালের বেশির ভাগ উন্মুক্ত স্থানে ‘লিঙ্গ বা ধর্মীয় উদ্দেশ্য’ পূরণে নিকাব ব্যবহার নিষিদ্ধের একটি বিল পার্লামেন্টে পাস হয়েছে। দেশটির কট্টর ডানপন্থি চেগা প্রস্তাবিত বিলটিতে মূলত মুসলিম নারীদের বোরকা ও নিকাব পরাকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে।
শুক্রবার পাস হওয়া বিলটিতে জনসমক্ষে মুখ ঢাকা পোশাক পরার জন্য ২০০ থেকে ৪ হাজার ইউরো জরিমানার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কাউকে নিকাব পরতে বাধ্য করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। তবে উড়োজাহাজ ভ্রমণ, কূটনৈতিক প্রাঙ্গণ এবং উপাসনালয়ে মুখ ঢাকা পোশাক পরা যাবে। খবর আল জাজিরার।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, বিলটি নিয়ে এখন সাংবিধানিক বিষয়, অধিকার, স্বাধীনতা ও নিশ্চয়তা সম্পর্কিত আইন পর্যালোচনার দায়িত্বে থাকা সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা করা হবে।
এর আগে ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসের মতো ইউরোপীয় দেশ নিকাব আংশিক বা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে। বিলটি আইনে পরিণত হলে পর্তুগালও সেই তালিকায় নাম লেখাবে।
প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো ডি সুজা এখনও বিলটিতে ভেটো দিতে পারেন কিংবা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সাংবিধানিক আদালতে পাঠাতে পারেন।
শুক্রবারের পার্লামেন্ট অধিবেশন চলাকালে বামপন্থী দলগুলোর বেশ কয়েকজন নারী আইনপ্রণেতা বিলটির বিরোধিতা করেন। তবে মধ্য-ডানপন্থি জোটের সমর্থনে বিলটি পাস হয়।
কট্টর ডানপন্থি দল চেগার নেতা আন্দ্রে ভেনচুরা বলেন, ‘আমরা আজ পার্লামেন্টের নারী সদস্য, আপনার মেয়ে, আমাদের মেয়েদের এই দেশে একদিন বোরকা পরার হাত থেকে রক্ষা করছি।’
এক্স বার্তায় তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের গণতন্ত্র এবং আমাদের মূল্যবোধ, পরিচয় ও নারীর অধিকার রক্ষার এক ঐতিহাসিক দিন।’
ক্ষমতাসীন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আইনপ্রণেতা আন্দ্রেয়া নেতো ভোটের আগে বলেছিলেন, ‘এটি পুরুষ ও নারীর মধ্যে সমতা নিয়ে বিতর্ক। কোনো নারীকে তার মুখ ঢাকতে বাধ্য করা উচিত নয়।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পার্লামেন্টে ১০টি দলের মধ্যে দুটি দল ভোটদানে বিরত ছিল। পিপল-অ্যানিম্যালস-নেচার পার্টি এবং টুগেদার ফর দ্য পিপল পার্টি বলেছে, এই প্রস্তাব বৈষম্যকে উসকে দিচ্ছে।
ইউরোপে খুবই অল্পসংখ্যক মুসলিম নারী তাদের মুখ ঢেকে রাখেন এবং পর্তুগালে এটা খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু নিকাব ও বোরকা ইউরোপজুড়ে একটি মেরূকরণের বিষয় হয়ে উঠেছে। কারো কারো যুক্তি, এগুলো লিঙ্গ বৈষম্যের প্রতীক, যা নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তাই এগুলো নিষিদ্ধ করা উচিত।
অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশের স্পিন বোলদাক শহরে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের বিমান বাহিনী। এতে নিহত হয়েছেন ৪০ জন এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৭৯ জন।
স্পিন বোলদাক শহরটির অবস্থান আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে। স্পিন বোলদাকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা করিমুল্লাহ জুবাইর আগা-এর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে আফগান সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজ জানিয়েছে, নিহত এবং আহতদের সবাই বেসমারিক এবং একটি বড় অংশই নারী ও শিশু।
সীমান্তে গত ১১ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত সংঘাত, হামলা-পাল্টা হামলার পর ১৫ অক্টোবর থেকে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে যায় দুই প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সেনাবাহিনী। সেই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হয়েছে গতকাল ১৭ অক্টোবর শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১ টার দিকে।
বিরতি শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। যারা বেঁচে গেছেন, তারা সবাই নিন্দা জানিয়েছেন এ হামলার।
হামলার শিকার এবং আহত হাজি বাহরাম নামের এক ব্যক্তি তোলো নিউজকে বলেন, “আমি ইতিহাসে কখনও এমন অবিচার দেখিনি। একটি দেশ, যারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করে— তারা এখানে নারী, শিশু ও বেসামরিক লোকজনের ওপরে হামলা করল।”
বিমান বাহিনীর অভিযানের পাশপাশি স্পিন বোলদাক শহরের নোকলি, হাজি হাসান কেলাই, ওয়ার্দাক, কুচিয়ান, শহীদ ও শোরবাকে একের পর এক আর্টিলারি গোলা নিক্ষেপ করেছে পাকিস্তানি স্থলবাহিনী। এতে বেশ কিছু বাড়িঘর, দোকান ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে হতাহতও হয়েছেন অনেকে।
প্রসঙ্গত, আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাতের মূলে রয়েছে পাকিস্তানের তালেবানপন্থি সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালেবান (টিটিপি)। বেশ কয়েক বছর আগে পাকিস্তানের সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়া এই গোষ্ঠীটি পাকিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য দিনকে দিন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
আফগাস্তানের সীমান্তবর্তী পাকিস্তানি প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়া টিটিপির প্রধা ঘাঁটি। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গোষ্ঠীটি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানের অভিযোগ—আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের মদত ও আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছে টিটিপি। তবে কাবুল বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
গত ৯ অক্টোবর আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে হামলা চালিয়ে টিটিপির শীর্ষ নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদকে হত্যা করে পাকিস্তানের বিমান বাহিনী। হামলার দু’দিন পর ১১ অক্টোবর আফগানিস্তানের সঙ্গে লাগোয়া খাইবার পাখতুনখোয়ার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে তীব্র সংঘাত শুরু হয় পাক-আফগান সেনাবাহিনীর মধ্যে।
চার দিন সংঘাত চলার পর ১৫ অক্টোবর ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি হয় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে। সেই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হয়েছে আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১ টায়। মির আলী সেনা ক্যাম্পে হামলাও ঘটেছে দুপুর ১ টার দিকেই।
সূত্র : তোলো নিউজ