মেক্সিকোর মন্টেরে শহরের ম্যান ওয়াহ ফার্নিচার ফ্যাক্টরিতে যেসব বিলাসবহুল ও আরামদায়ক সোফা তৈরি হয়, সেখানে লিখা রয়েছে ‘মেইড ইন মেক্সিকো’। সেখান থেকে তাদের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালমার্ট ও কস্টকোর মতো বড় বিপণিগুলো। কিন্তু এই কোম্পানিটি চীনের মালিকানাধীন এবং মেক্সিকোয় উৎপাদন কারখানাও তৈরি হয়েছে চীনা অর্থে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও মেক্সিকোর মধ্যকার এই ত্রিমুখী সম্পর্ক একটি নতুন শব্দে পরিচিত হয়ে উঠেছে; সেটি হলো ‘নিয়ারশোরিং’- অফশোরিংয়ের সঙ্গে মিলিয়ে এমন নাম। ম্যান ওয়াহ কয়েক ডজন চীনা কোম্পানির মধ্যে একটি, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তর মেক্সিকোর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে অবস্থান নিয়েছে। এতে পরিবহন খরচ কমে যাওয়া ছাড়াও চূড়ান্ত যে পণ্য প্রস্তুত হলো, তা পুরোপুরি মেক্সিকান। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধে ওয়াশিংটন চীনা কোম্পানিগুলোর ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ও কর আরোপ করেছে, সেটি এড়ানো সম্ভব হয়।
ম্যান ওয়াহর জেনারেল ম্যানেজার ইয়ু কেন ওয়েই বলেন, অর্থনৈতিক ও লজিস্টিক্যাল দিক চিন্তা করেই তারা মেক্সিকোতে তাদের কারখানা সরিয়ে এনেছেন। তিনি বলেন, আমাদের মেক্সিকোয় আসার উদ্দেশ্য হলো, ভিয়েতনামে আমরা যে পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করি, সেই পরিমাণ এখানেও উৎপাদন করা। কোম্পানিটি মাত্র ২০২২ সালে মন্টেরে আসে এবং এরই মধ্যে মেক্সিকোতে ৪৫০ জন কর্মী নিয়োগ দিয়েছে তারা। জেনারেল ম্যানেজার জানান, তাদের লক্ষ্য ১২০০র ওপর কর্মীকে কাজে লাগানো, যাতে আসন্ন বছরগুলোতে কয়েক ধাপের অপারেশন এখানে চালু করা যায়।
বাণিজ্য বেড়েছে মেক্সিকোর
নিয়ারশোরিং মেক্সিকান অর্থনীতিতে দারুণ ভূমিকা রাখছে। গত বছরের জুন পর্যন্ত মেক্সিকোর মোট রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে, যার অর্থমূল্য প্রায় ৫ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। আর এই ধারা কমার কোনও লক্ষণ নেই। এ বছরের প্রথম দুই মাসেই মেক্সিকোতে যে পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগের ঘোষণা এসেছে, তা ২০২০ সালের মোট বিনিয়োগের প্রায় অর্ধেকের সমান। ম্যান ওয়াহ ফ্যাক্টরির অবস্থান মন্টেরের বাইরে চাইনিজ-মেক্সিকান ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক হফুসানে। সেখানে প্লটের চাহিদা আকাশ ছুঁয়েছে, অবিক্রিত কোনো জায়গা নেই। শুধু তাই নয়, মেক্সিকোর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক অ্যাসোসিয়েশন (এএমপিআইপি) জানিয়েছে, ২০২৭ সাল পর্যন্ত নির্মাণাধীন মেক্সিকোর সব সাইট এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। অনেক মেক্সিকান অর্থনীতিবিদ ঘোষণা দিয়েছেন, দেশটিতে চীনের এই আগ্রহ সাময়িক কোনো বিষয় নয়।
মেক্সিকোর সাবেক ফরেন ট্রেড ভাইস মিনিস্টার হুয়ান কার্লোস বাকের পিনেদা বলেন, যেসব কাঠামোগত কারণে মেক্সিকোতে বিনিয়োগ আসছে তার পরিবর্তন হবে না। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য সংঘাত খুব সহসা মিটে যাওয়ার কোনো লক্ষণ আমি দেখি না। তিনি বলেন, যদিও এসব চীনা বিনিয়োগ মেক্সিকোতে ঢোকা হয়তো কিছু দেশের জন্য অস্বস্তিকর। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি অনুযায়ী, এই পণ্যগুলো সব দিক দিয়েই পুরোপুরি মেক্সিকান। বস্তুত এই পরিস্থিতি মেক্সিকোকে দুই সুপারপাওয়ারের মধ্যে কৌশলগত ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিয়েছে। মেক্সিকো সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জায়গায় চীনকে তাদের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার বানিয়েছে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও একটা প্রতীকী বদল বলে মনে করা হচ্ছে। তবে মেক্সিকোর কিছু অংশে আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যার অন্যতম কারণ নিয়ারশোরিং বলে মনে করা হচ্ছে।
পরিণতি নিয়ে সংশয়
এভাবে চীনা বিনিয়োগ আসার বিষয়ে অনেকেই মেক্সিকোকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ ভূরাজনৈতিকভাবে এতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে পড়ে যেতে পারে তারা। উদাহরণ দিয়ে ন্যাশনাল অটোনমাস ইউনিভার্সিটি অব মেক্সিকোর সেন্টার ফর চায়না-মেক্সিকো স্টাডিজের অধ্যাপক এনরিক দুসেল বলেন, শহরের পুরোনো ধনী যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যা দেখা যাচ্ছে শহরের নতুন ধনী চীনের সঙ্গে; কিন্তু মেক্সিকোর আগের সরকার বা বর্তমান সরকারের কোনো কৌশল দেখা যাচ্ছে না এই ত্রিমাত্রিক সম্পর্কের ব্যাপারে।
পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের অন্তত ছয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ১৩ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী।
তিনি জানান, ভারত মোট ২৪টি হামলা চালিয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা ঘটেছে (পাকিস্তানের) পাঞ্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালপুরের কাছে আহমেদপুর শারকিয়ায়। সেখানে একটি মসজিদ প্রাঙ্গণে হামলায় এক শিশুকন্যাসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন।
এছাড়া পাঞ্জাবের মুরিদকে শহর, শিয়ালকোটের কাছে একটি গ্রাম এবং শাকরগড়েও হামলা চালানো হয়েছে। পাশাপাশি পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদ ও কোটলিতেও হামলা হয়েছে। সেখানের হামলায় দুটি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে। তাছাড়া এই হামলায় ১৬ বছর বয়সী এক তরুণী ও ১৮ বছর বয়সী এক তরুণও নিহত হয়েছে বলে জানান আহমেদ শরীফ।
গত ২২শে এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে কয়েকদিন ধরে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই এ হামলা চালানো হলো। শুরু থেকেই হামলার জন্য পাকিস্তানতে দায়ী করে আসছিল ভারত। যদিও পাকিস্থান এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল।
এদিকে, ভারতের এই হামলার জবাবে হুমকি দিয়েছে পাকিস্তান। এই ঘটনায় পরমাণু শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বুধবার (৭ মে) সকালে জানিয়েছেন, পাকিস্তানের সেনারা ভারতের ৫টি বিমান ভূপাতিত করেছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের খবরে এমন বলা হয়েছে।
এছাড়া অধিকৃত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর ভারতীয় সেনাদের ওপর পাল্টা হামলার কথা জানিয়েছে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহতের ঘটনায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। রোববার রাতেও ভারত এবং পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে কাশ্মীর সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটির মধ্যে এমন উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যেই গত শনিবার করাচির বন্দরে ভিড়েছে তুরস্কের নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ। খবর আরব নিউজের।
পাকিস্তানের নৌবাহিনীর পক্ষ রোববার এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, দুই দেশের সহযোগিতা জোরদার করতে তুরস্কের যুদ্ধজাহাজ টিসিজি বুয়ুকডা পাকিস্তানে পৌঁছেছে।
এদিকে, এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন ভারত বড় ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাচ্ছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ভারতের প্রত্যাঘাত সামাল দিতে বন্ধু দেশগুলোর সাহায্য চেয়েছে পাকিস্তান। তাদের বন্ধু তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে চীন ও তুরস্ক।
সামরিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের অন্যতম বড় সাহায্যকারী দেশ তুরস্ক। আগেও পাকিস্তানকে আগোস্টা ৯০বি ক্লাস সাবমেরিনের আধুনিকীকরণ, ড্রোনসহ অন্য যুদ্ধাস্ত্র দিয়েছে তুরস্ক। এ ছাড়া প্রায়ই যৌথ মহড়ায় অংশ নেয় দুই দেশের সেনা। তবে এবার ভারতে যুদ্ধ পরিস্থিতির মাঝে তুরস্কের যুদ্ধজাহাজের করাচি আগমন মোটেই সহজভাবে দেখছে না ভারতের বিশেষজ্ঞমহল।
যদিও পাকিস্তানের নৌবাহিনীর দাবি, করাচিতে থাকাকালীন তুরস্কের যুদ্ধজাহাজ পাকিস্তানের নৌবাহিনীর সঙ্গে সামরিক ক্ষেত্রে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।
এই সফরের লক্ষ্য দুই নৌবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি ও সমুদ্রে সহযোগিতা বাড়ানো। তবে ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের দাবি, বর্তমান পরিস্থিতিতে তুরস্কের যুদ্ধ জাহাজের আগমন সাধারণ বিষয় নয়।
পাকিস্তান সফরে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয় সফরে গেলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। ইসলামাবাদে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পশ্চিম এশিয়া) সৈয়দ আসাদ গিলানি, পাকিস্তানে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত এবং অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। খবর ইরনার।
সফরকালে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক কারের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন বলে জানানো হয়েছে। এই সফরের সময় দুই দেশের প্রতিনিধিরা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়েও মতবিনিময় করবেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই উচ্চপর্যায়ের সফর ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতিফলন। পাশাপাশি দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর অঙ্গীকারও এতে ফুটে উঠেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঘচির এই সফরের মাধ্যমে পাকিস্তান-ইরান সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নতুন মাত্রা পাবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই এ প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে জানান, আরাঘচির সফরে ইরান-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ছাড়াও ইসরায়েলি হুমকি মোকাবিলার সম্ভাব্য কৌশল নিয়েও আলোচনা হবে।
সোমবার আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) জানিয়েছে, গাজার অবরুদ্ধ বাসিন্দাদের কাছে অবিলম্বে মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে হবে এবং এটিকে রাজনীতিকরণ করা উচিত নয়।
জেনেভা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ইসরাইলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ‘অধিকাংশ জনসংখ্যাকে স্থানান্তর’সহ সামরিক হামলা বৃদ্ধির পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে।
জেনেভায় আইসিআরসির মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান কার্ডন এএফপিকে বলেন, ‘মানবিক সাহায্যের রাজনীতিকরণ করা উচিত নয়। গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে এই মুহূর্তে চাহিদার মাত্রা অপ্রতিরোধ্য, এবং অবিলম্বে সাহায্য পৌঁছানো প্রয়োজন’।
তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে, ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণাধীন বেসামরিক জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করার জন্য উপলব্ধ সমস্ত উপায় ব্যবহার করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ইসরাইল হামাসের বিরুদ্ধে মানবিক সাহায্যের অপব্যবহারের অভিযোগ এনেছে। হামাস এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য তাদের অবরোধ প্রয়োজন ছিল।
কার্ডন বলেন, আইসিআরসি সরাসরি অথবা আমাদের অংশীদারদের সাথে একসাথে মানবিক সরবরাহ পরিচালনা ও বিতরণ করে। তাই আমরা দেখি সেই জিনিসগুলো কোথায় যায়।
তিনি বলেন, গাজায় আমাদের ত্রাণ সরবরাহ সকল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে।
আমরা নিরাপত্তার উদ্বেগ স্বীকার করি, তবে মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে আমরা জরুরি ভিত্তিতে জোর দিচ্ছি। কর্তৃপক্ষ গাজার মানুষের কাছে জীবন রক্ষাকারী ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়াটি দ্রুততর করুক এবং সরবরাহের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করুক।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান সম্প্রসারণ এবং ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল সোমবার আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতভাবে এ পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছে। এই পরিকল্পনার আওতায় রিজার্ভ সেনাদের ডাক দেওয়া হবে এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সরাসরি ২৩ লাখ জনসংখ্যার গাজা অঞ্চলে খাদ্য ও জরুরি ত্রাণ সরবরাহ পরিচালনা করবে। এই জনগণ ইসরায়েলের অবরোধের কারণে দীর্ঘদিন ধরে মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, নতুন পরিকল্পনার আওতায় ইসরায়েল গাজা পুরোপুরি দখলে নিতে পারে। এএফপির এক সূত্র বলেছে, পরিকল্পনায় গাজা দখল, সেখানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং বাসিন্দাদের দক্ষিণে স্থানান্তরের বিষয় রয়েছে, যাতে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখনো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই পরিকল্পনাকেই এগিয়ে নিচ্ছেন, যেখানে গাজার ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের প্রস্তাব রয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজায় আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেসরকারি নিরাপত্তা কোম্পানিগুলো ত্রাণ বিতরণে নিয়োজিত থাকবে। এসব সংস্থাকে বাইরের নিরাপত্তা দেবে ইসরায়েলি সেনারা, যাতে ত্রাণ বিতরণ নিরাপদভাবে পরিচালিত হয়।
এর আগে মানবিক সংস্থাগুলো সতর্ক করেছিল, গাজায় দুর্ভিক্ষ ঘনিয়ে আসছে। তবে ইসরায়েল সে দাবি অস্বীকার করে এবং মার্চের ২ তারিখ থেকে ১৬ দিন পর্যন্ত সব ধরনের ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ রাখে।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সম্ভাব্য পূর্ণ দখল এবং ত্রাণ ব্যবস্থার সামরিকীকরণ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এটি শুধু মানবিক সংকটকেই বাড়াবে না, বরং যুদ্ধাপরাধের আশঙ্কাও উসকে দিচ্ছে। বর্তমানে গাজার অবস্থা চরম মানবিক বিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছে। খাদ্য, পানি, ওষুধের অভাবে প্রতিদিন মৃত্যুবরণ করছেন সাধারণ মানুষ, যার অধিকাংশই শিশু ও নারী।
কোথায় আশ্রয় নেবে ফিলিস্তিনিরা?
গাজার এমন কোনো স্থান বাকি নেই যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালায়নি। পুরো গাজাকে এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে দখলদার বাহিনী। ফিলিস্তিনিরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন পার করছেন। তাদের আশ্রয় নেওয়ার মতো নিরাপদ কোনো জায়গা নেই। এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালাচ্ছে না বা এমন কোনো মানবিক অঞ্চল নেই যেখানে তারা আশ্রয় নিতে পারে। ভয়াবহ দুর্বিষহ জীবন পার করছে ফিলিস্তিনি নারী, পুরুষ এবং শিশুরা।
গাজার বেশিরভাগ জনগোষ্ঠীই মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ইসরায়েলি বাহিনী রাফাহ দখল করার পর গাজার বিভিন্ন এলাকায় লোকজন আটকা পড়েছে। তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানেও যেতে পারছেন না। উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণ গাজায় যাওয়ার স্বাধীনতাও পাচ্ছেন না তারা।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান আরও জোরদার ও বিস্তারের লক্ষ্যে হাজার হাজার রিজার্ভ সৈন্য ডাকতে শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত চাপ সৃষ্টি এবং বন্দিদের ফিরিয়ে আনাই তাদের লক্ষ্য।
ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। প্রায় ৪৭০ দিন ধরে চলা যুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা বাড়ি-ঘর, প্রিয়জন সবকিছু হারিয়েছেন। তাদের মাথার ওপর আশ্রয় নেওয়ার মতো শেষ অবলম্বনটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বোমা হামলায় চোখের সামনে বাবা-ভাই বা সন্তানের মৃত্যু দেখছেন তারা।
এরই মধ্যে নতুন পরিকল্পনার আওতায়, গাজায় ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠের সব ধরনের অবকাঠামো ধ্বংস করার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে সমালোচকরা বলছেন, দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবারও শুরু হওয়া এই অভিযান বন্দিমুক্তির নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজায় অভিযান ফের সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান শুরু হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বর্তমানে হামাসের হাতে ৫৯ জন জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৪ জনের জীবিত বলে বিশ্বাস করা হয়। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে নতুন করে হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে আর কোনো ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি পায়নি।
এই সময়ের মধ্যে গাজার বিশাল এলাকা দখলে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে আবারও লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। একই সঙ্গে গাজায় প্রায় দুই মাস ধরে চলছে মানবিক সহায়তার ওপর কঠোর অবরোধ।
গাজায় নিহত আরও ৪০ ফিলিস্তিনি
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হামাস উৎখাত আর তাদের কবল থেকে জিম্মি উদ্ধারের নামে ইসরায়েলের নির্বিচার গণহত্যা চলছেই। প্রতিদিনই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা; দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে লাশের মিছিল। নিরাপদ বলে কোনো স্থান বাকি নেই গাজাবাসীর জন্য। একদিকে আকাশ ও স্থল অভিযান, অন্যদিকে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ; গাজা যেন সাক্ষাৎ নরক হয়ে উঠেছে তার বাসিন্দাদের জন্য। এরই মধ্যে গাজায় সামরিক অভিযানের মাত্রা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন।
এদিকে সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় গাজায় আরও অন্তত ৪০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে দখলদার বাহিনী। এতে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৫২ হাজার ৫৪০ ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ২৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
ষাট বছরেরও বেশি সময় আগে বন্ধ হওয়া একটি কুখ্যাত কারাগার নতুন করে চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকোর দুর্গম দ্বীপ আলকাট্রাজে ১৯৩৪ সালে এই কারাগারটি স্থাপন করা হয়েছিল। পরে ১৯৬৩ সালে সেটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এবার কারাগারটি কেবল চালু করাই না, এটিকে আরও বড় করে পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। রবিবার (৪ মে) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘এক সময় আমেরিকার জনগণকে রক্ষায় দেশটির বিপজ্জনক অপরাধীদের আলকাট্রাজ কারাগারে আটকে রাখা হতো। সেই কারাগারটিই আবার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্পের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই আমেরিকা হিংস্র ও সহিংস অপরাধীদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। এমনকি কিছু কিছু অপরাধী বারবারই সহিংস কার্যকলাপ করে দেশটির ক্ষতি করে আসছেন। আমি বিচার বিভাগ, ফেডারেল ব্যুরো অব আমেরিকা (এফবিআই) ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সঙ্গে কারাগার ব্যুরোকে একীভূত করে আলকাট্রাজ কারাগারটি ফের চালু ও সম্প্রসারণের নির্দেশ দিয়েছি। সেখানে আমেরিকার সবচেয়ে নিষ্ঠুর ও সহিংস অপরাধীদের রাখা হবে।’
এ বিষয়ে ফ্লোরিডা থেকে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘কারাগারটির একটি দীর্ঘ ইতিহাস আছে। এটি আইন ও শৃঙ্খলার প্রতীক।’
প্রসঙ্গত, সান ফ্রান্সিসকো উপসাগরে অবস্থিত আলকাট্রাজ কারাগারটি ৬৩ বছর ধরে বন্ধ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ প্রিজনসের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, ভঙ্গুর অবকাঠামো ও উচ্চব্যয়ের কারণে ১৯৬৩ সালে কারাগারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। দ্বীপে অবস্থিত হওয়ার কারণে এটি পরিচালনার খরচ ছিল অন্য যেকোনও ফেডারেল কারাগারের তুলনায় প্রায় তিনগুণ।
এছাড়া দ্বীপের অবস্থান, তীব্র স্রোত এবং বরফ শীতল পানির কারণে আলকাট্রাজকে আমেরিকার সবচেয়ে নিরাপদ কারাগার হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে এ কারাগার থেকে কোনো বন্দির পালানোর রেকর্ডও নেই। এফবিআইয়ের তথ্যমতে, কারাগারটি চালু থাকাকালীন ৩৬ জন আসামি অন্তত ১৪ বার পালানোর চেষ্টা করেও সফল হননি। সবাই কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়েছেন। এটি বর্তমানে সান ফ্রান্সিসকোর অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ।
এদিকে, ট্রাম্পের ঘোষণার পর থেকেই নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করেছেন সাবেক হাউস স্পিকার ও ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতা ন্যান্সি পেলোসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া পোস্টে তিনি বলেন, ‘ষাট বছরেরও বেশি সময় আগে আলকাট্রাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এটি এখন অত্যন্ত জনপ্রিয় জাতীয় উদ্যান এবং প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। ট্রাম্পের প্রস্তাবটি যথোচিত নয়।’
শুরুতে আলকাট্রাজ একটি নৌ প্রতিরক্ষা দুর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ২০ শতকের প্রথম দিকে এটিকে একটি সামরিক কারাগারে রূপান্তর করা হয়। ১৯৩০-এর দশকে বিচার বিভাগের অধীনে নেওয়া হয় এই কারাগারটি। এরপর থেকে ফেডারেল বন্দিদের এ কারাগারে পাঠানো শুরু করা হয়।
এখানে রাখা কয়েদিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কুখ্যাত গ্যাংস্টার আল কাপোন, মিকি কোহেন এবং জর্জ মেশিন গান কেলি।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ১৯৬২ সালে বার্ট ল্যাঙ্কাস্টার অভিনিত ‘বার্ডম্যান অফ আলকাট্রাজ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমেও বিখ্যাত হয়েছিল কারাগারটি। এছাড়াও ১৯৯৬ সালের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘দ্যা রকে’র শুটিংও হয় এই দ্বীপে। ওই মুভিতে বিখ্যাত অভিনেতা শন কনারি ও নিকোলাস কেজ অভিনয় করেন।
রাশিয়ায় নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ খালিদ জামালি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি ভারত পাকিস্তানে হামলা চালায় অথবা সিন্ধু নদের পানির সরবরাহে বাধা দেয়, তবে ইসলামাবাদ তার সামরিক শক্তির পুরোটা ব্যবহার করবে। এমনকি, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পথও বেছে নেবে। রুশ সম্প্রচারমাধ্যম আরটি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত জানান, ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানে সামরিক হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে তাদের কাছে নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। তিনি বলেন, ফাঁস হওয়া কিছু নথিতে দেখা গেছে, পাকিস্তানের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। এতে আমাদের মনে হচ্ছে হামলা আসন্ন। এমনটি হলে আমরা আমাদের সম্পূর্ণ শক্তি- সাধারণ এবং পারমাণবিক উভয়ই ব্যবহার করব।
এদিকে, ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের বিষয়ের জামালি বলেন, নিম্ন অববাহিকায় পানির প্রবাহ আটকে দেওয়া, দিক পরিবর্তন কিংবা আত্মসাৎ করার যেকোনো চেষ্টাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য। আমরা পূর্ণ শক্তি দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাব।
এর আগে, পাকিস্তানের মন্ত্রী হানিফ আব্বাসি প্রকাশ্যে ভারতকে পারমাণবিক প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, পাকিস্তানের অস্ত্রাগার- ঘোরি, শাহিন ও গজনবী ক্ষেপণাস্ত্রসহ ১৩০টি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রে বলীয়ান। যেগুলো শুধু ভারতের জন্য ও তাদের দিকেই তাক করা রয়েছে। এ ছাড়া আব্বাসি বলেছিলেন, যদি ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে পাকিস্তানের প্রাপ্য পানি সরবরাহ বন্ধ করার সাহস করে, তাহলে তাদের পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়া উচিত।
এর আগে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিলেন, ভারতের সামরিক অনুপ্রবেশ আসন্ন এবং পাকিস্তান সে বিষয়ে সতর্ক। নিজেদের অস্তিত্বের জন্য সরাসরি হুমকি থাকলে ভারতের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকেই দায়ী করেছে। যদিও পাকিস্তান এতে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
‘ভারতের সঙ্গে বড় যুদ্ধের শঙ্কা নেই’
পাকিস্তানের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুঈদ ইউসুফ বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা নেই, তবে সম্ভাব্য যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক বন্দুক হামলার প্রেক্ষাপটে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেন তিনি।
ইউসুফ বলেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কোনো কার্যকর দ্বিপাক্ষিক সংকট ব্যবস্থাপনা কাঠামো নেই। উভয় দেশই তৃতীয় পক্ষের ওপর নির্ভর করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল অনুসরণ করে থাকে। এখন যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে, তা পূর্ববর্তী সংকটগুলোর তুলনায় আরও কঠোর। উদাহরণ হিসেবে ভারত সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ নয়।
আসন্ন যুদ্ধে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ইউসুফ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বড় যুদ্ধের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা কম। তবে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যেতে পারে, আর একটি ছোট ভুলও বড় সংঘর্ষে পরিণত হতে পারে। আমরা নিশ্চিত নই কী হতে যাচ্ছে। কিন্তু সব আশঙ্কার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
সিঙ্গাপুরের পার্লামেন্ট নির্বাচনে আবারও জয় পেয়েছে পিপলস অ্যাকশন পার্টি (পিএপি)। এর মধ্য দিয়ে টানা ৬৬ বছরের মতো দেশটির ক্ষমতায় টিকে থাকল দলটি। এই জয়কে প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওয়াংয়ের একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। এক বছর আগে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন তিনি।
শনিবার (৩ মে) অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী, দেশটির পার্লামেন্টের ৯৭টি আসনের মধ্যে ৮৭টি পেয়েছে পিএপি। এছাড়া ৩৩টি নির্বাচনি এলাকার বেশিরভাগেই বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে দলটি।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে পিএপি। এর আগে ২০২০ সালের নির্বাচনে ৬১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তারা। ফলাফল ঘোষণার পরপরই পতাকা নেড়ে ও আনন্দ করে বিজয় উদযাপন করেন পিএপির সমর্থকরা।
১৯৫৯ সাল থেকে সিঙ্গাপুরের শাসনক্ষমতায় রয়েছে এই দলটি।
নির্বাচনে জয় পেয়ে সিঙ্গাপুরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওয়াং। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন অর্থনীতিবিদ।
দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরে একের পর এক শুল্কারোপের ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার ওই তালিকা থেকে বাদ যায়নি সিঙ্গাপুরও। এ কারণে নির্বাচনি প্রচারের সময় এই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বাণিজ্যনির্ভর দেশটি পরিচালনার জন্য জনগণের সমর্থন চেয়েছিলেন লরেন্স।
এবার নির্বাচন জিতে তিনি বলেন, ‘এই ফলাফল সিঙ্গাপুরকে বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যে আরও ভালো অবস্থানে রাখবে।’
সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন অধ্যাপক ইউজিন তান বলেন, ২০২০ সালের পর বিরোধীদের কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়াটা বিস্ময়কর। তবে দীর্ঘদিন ধরে যারা সেবা দিয়ে আসছে, জনগণ তাদের প্রতিই আস্থা রেখেছেন বলেন মন্তব্য করেন তিনি।
গত বছর সিঙ্গাপুরের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন লরেন্স ওয়াং। এর আগে দুই দশক ধরে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী ছিলে লি হসিং লুং। তিনি আধুনিক সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা লি কুয়ান ইয়েওয়ের ছেলে। লিয়ের পদত্যাগের মাধ্যমে লি কুয়ান ইউয়ের শুরু করা পারিবারিক রাজনীতির অবসান ঘটে।
গতকালের ফলাফল অনুযায়ী, নির্বাচনে মূল বিরোধী দল ওয়ার্কার্স পার্টি ১০টি আসনে জয় পেয়েছে। গত নির্বাচনেও তারা ১০টি আসন পেয়েছিল। সিঙ্গাপুরে কোনো বিরোধী দলের এটি সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়ার ঘটনা।
বিশ্লেষকদের ধারণা, কঠোর সরকারি নিয়ন্ত্রণ, জীবিকার উচ্চ ব্যয়, আয় বৈষম্য, নাগালের বাইরে চলে যাওয়া আবাসন ব্যবস্থা ও মত প্রকাশের সীমাবদ্ধতা—এসব বিষয় বিশেষত তরুণদের মধ্যে পিএপির জনপ্রিয়তায় প্রভাব ফেলেছে।
বিরোধীদলগুলো জানিয়েছে, পার্লামেন্টে তাদের শক্তিশালী উপস্থিতি একটি আরও ভারসাম্যপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। তবে অনেক সময় সম্পদের অভাব, বিভক্ত সমর্থন ও দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের ঘাটতির কারণে তাদের পিছিয়ে থাকতে হয় বলে মন্তব্য করেন তারা। তাছাড়া, নির্বাচনি এলাকার সীমার পুনর্বিন্যাস পিএপিকে বাড়তি সুবিধা দেয় বলেও অভিযোগ করেন অনেকে।
ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা প্রীতম সিং জানান, তারা আরও ভারসাম্যপূর্ণ পার্লামেন্টের জন্য লড়াই অব্যাহত রাখবেন। তিনি বলেন, ‘ফলাফল যা হয়েছে তা ভুলে আমরা আগামীকাল থেকেই আবার কাজ শুরু করব।’
ওয়ার্কার্স পার্টি তাদের সংসদীয় উপস্থিতি বাড়াতে না পারলেও কিছু এলাকায় শেয়ার ভোট বাড়িয়ে নিজেদের সমর্থন আরও সুসংহত করেছে বলে করেন মন্তব্য করেন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রাজনীতি বিশ্লেষক ব্রিজেট ওয়েলশ। তবে অন্য ছোট বিরোধী দলগুলো উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি বলে মনে করেন তিনি।
ওয়েলশের মতে, ‘বৈশ্বিক অস্থিরতা ও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সিঙ্গাপুরের ভোটাররা স্থিতিশীলতাকে বেছে নিয়েছেন। তরুণদের সঙ্গে ওয়াংয়ের সহজ-সরল বোঝাপড়া এবং পিএপিতে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নতুন মুখ নিয়ে আসাও ভোটে প্রভাব ফেলেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি এই ফলাফলকে বলি, লরেন্স ও ট্রাম্পের প্রভাব। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ লরেন্সের ম্যান্ডেটকে আরও শক্তিশালী করেছে।’
এদিকে, সিঙ্গাপুর ও লরেন্স ওয়াংকে এই বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুর প্রায় ৬০ বছর ধরে একটি শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী কৌশলগত অংশীদারত্বের সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
নবনির্বাচিত সরকার ও প্রধানমন্ত্রী ওয়াংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় গুরু পোপ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশের কয়েকদিন পর, পোপের পোশাক পরিহিত একটি ছবি শেয়ার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি ছবিটি নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
গতকাল শনিবার মাকিন সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াশিংটন টাইমস’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাইরাল হওয়া ছবিটি পরে হোয়াইট হাউসের এক্স অ্যাকাউন্টেও শেয়ার করা হয়েছে।
পোপের বেশে প্রকাশ করা ছবিটিতে দেখা যায়, পোপের পোশাকে গম্ভীর মুখে চেয়ারে বসে আছেন ট্রাম্প। উঁচিয়ে আছেন ডান হাতের তর্জনী।
ট্রাম্পের এই ছবিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চটেছেন অনেকে। অনেকে ট্রাম্পকে পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যু নিয়ে উপহাস করার অভিযোগ করেছেন।
গত ২১ এপ্রিল ৮৮ বছর বয়সে মারা যান পোপ ফ্রান্সিস। এরপর গত ২৬ এপ্রিল সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর তাকে রোমের ব্যাসিলিকা ডি সান্তা মারিয়া ম্যাগিওরে সমাহিত করা হয়। পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পও।
ভ্যাটিকানে কার্ডিনালরা সমবেত হয়ে নির্ধারণ কররেন ক্যাথলিক চার্চের ২৬৭তম ধর্মগুরু। এক প্রতিবেদন মতে, ২৯ এপ্রিল ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, পরবর্তী পোপ হিসেবে তিনি কাকে দেখতে চান? এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্পের মজার উত্তর, আমি নিজেই পরবর্তী পোপ হতে চাই। এটা এখন আমার এক নম্বর পছন্দ।
রসিকতা করার পরপরই অবশ্য কে আসলে এই দায়িত্ব পেতে পারেন, সে বিষয়ে নিজের মতামত জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি কে হওয়া উচিত, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার কোনো পছন্দ নেই। তবে আমাকে বলতেই হচ্ছে, আমাদের একজন কার্ডিনাল আছেন যিনি নিউইয়র্কের একটি এলাকা থেকে এসেছেন। তিনি খুবই ভালো। দেখা যাক কী হয়।’
গাজা সিটির পশ্চিমাঞ্চলের রান্তিসি হাসপাতালে ক্ষুধা, অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় সালেহ আল-সাকাফি নামে এক শিশুকন্যার মৃত্যু হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, এ নিয়ে এখন পর্যন্ত অপুষ্টিজনিত কারণে ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, ইসরায়েলের হামলায় গত ৪৮ ঘণ্টায় অন্তত ৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
আল জাজিরার তথ্যানুসারে, ইসরায়েল গত ২ মার্চ থেকে গাজায় সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে। এর ফলে উপত্যকাটিতে কোনো খাদ্য, পানি বা চিকিৎসা সহায়তা প্রবেশ করতে পারেনি। আর তারই জেরে এখানকার নারী ও শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি চরম আকার ধারণ করেছে।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ আগেই সতর্ক করে বলেছিল, গাজায় ৫ বছরের কম বয়সি ৩,৩৫,০০০ শিশু তীব্র অপুষ্টির কারণে মৃত্যুর চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দখলদার ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গত ৪৮ ঘণ্টায় অন্তত ৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ২৭৫ জন আহত হয়েছেন। সেই সঙ্গে এ সময়ে আগের ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও ৭টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় অন্তত ৩০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে বিকেলে গাজা শহরের দারাজ এলাকায় ড্রোন হামলায় ২ জন এবং খান ইউনিস শহরের দক্ষিণে আরেকটি হামলায় ১ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরের ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৩৯৬ জনে, আহত ৬,৩২৫ জন।
অন্যদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫২,৪৯৫ জন নিহত এবং ১,১৮,৩৬৬ জন আহত হয়েছেন।
গাজার উদ্দেশে রওনা হওয়া জাহাজে বোমা হামলা : মানবিক সহায়তা নিয়ে ফিলিস্তিনের গাজার উদ্দেশে রওনা হওয়া একটি জাহাজে ড্রোন দিয়ে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। শুক্রবার ভোরে মাল্টা উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় এ হামলায় জাহাজটি বিকল হয়ে গেছে বলে রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
আয়োজক সংগঠন ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) এক বিবৃতিতে ইসরায়েলকে হামলার জন্য দায়ী করেছে। এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলেও ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করেনি।
মাল্টার সরকার জানিয়েছে, জাহাজ এবং ক্রুদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঘটনার সময় তুর্কি নাগরিকরা জাহাজে ছিলেন এবং তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে তারা মাল্টার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছেন।
‘আমরা এই বেসামরিক জাহাজে হামলার তীব্র নিন্দা জানাই,’ বলা হয়েছে বিবৃতিতে। এতে আরও বলা হয়, ‘যত দ্রুত সম্ভব হামলার বিস্তারিত তথ্য উদ্ঘাটন এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় সব প্রচেষ্টা চালানো হবে।’
সুইডিশ অ্যাক্টিভিস্ট গ্রেটা থানবার্গ রয়টার্সকে বলেছেন, তিনি মাল্টায় ছিলেন এবং ইসরায়েলের অবরোধ ও বোমা হামলার শিকার গাজার সমর্থনে ফ্রিডম ফ্লোটিলার পরিকল্পিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তার জাহাজটিতে ওঠার কথা ছিল।
এনজিওটি অন্ধকারে ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে, যেখানে তাদের একটি জাহাজ, কনসায়েন্সে আগুন দেখা যাচ্ছে। ফুটেজে জাহাজের সামনে আকাশে আলো এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন; যার মধ্যে গাজার চলমান অবরোধ এবং আন্তর্জাতিক জলসীমায় আমাদের বেসামরিক জাহাজে বোমা হামলার বিষয়ে জবাবদিহি করতে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতদের তলব করা উচিত।’
জাহাজে ১২ জন নাবিক ও চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন জানিয়ে মাল্টা সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা সবাই সুস্থ আছেন। জাহাজটিকে সহায়তা করতে কাছাকাছি থাকা একটি টাগ বোটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও মাল্টা সরকারের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এনজিওর মুখপাত্র কাওইমে বাটারলি বলেছেন, যখন জাহাজটি অন্য একটি জাহাজ থেকে কর্মীদের তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন হামলা হয়। তিনি বলেন, আমলাতান্ত্রিক কারণে জাহাজটি বন্দরে যাওয়ার পরিবর্তে সমুদ্রেই স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। থানবার্গ বলেছেন, ‘হামলায় জাহাজে একটি বিস্ফোরণ ও বড় ধরনের ক্ষতি করেছে, যার ফলে মিশন চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’
পেহেলগাম হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। দেশ দুটি একে অপরের বিরুদ্ধে বেসামরিক নানা বিধিনিষেধ ঘোষণার পরও কাশ্মীরের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন, পরিস্থিতি হয়তো এর চেয়ে খারাপ হবে না। কিন্তু গত সপ্তাহে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গুলি বিনিময়ের কারণে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন কাছাকাছি বসবাসকারী মানুষরা। এদিকে যুদ্ধের আশঙ্কায় বাঙ্কার তৈরির কাজ শুরু করেছেন আজাদ কাশ্মীরের কিছু বাসিন্দা।
ভারতশাসিত কাশ্মীরের উরি সেক্টরের তুতমার গলি পোস্ট এবং পাকিস্তান শাসিত লিপা সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গত সপ্তাহে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। তবে এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এহসান-উল-হক শামি পাকিস্তান শাসিত লিপা উপত্যকার বাসিন্দা। ওই অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার এবং সেখানকার বেশিরভাগ মানুষই আইন মেনে চলেন। নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাড়ি শামির। ভারতীয় এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গুলি বিনিময়ে ২০১৯ সালে তার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি জানিয়েছেন, একইভাবে ২০০২ ও ১৯৯৮ সালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তার বাড়ি।
পেশায় আইনজীবী এহসান-উল-হক শামি বলেন, পেহেলগামের ঘটনার পর গত শুক্রবার ও শনিবার পাকিস্তান ও ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। শুক্রবার ও শনিবারের মধ্যবর্তী রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি চলে। এরপর শনিবার রাতে ফের গোলাগুলি শুরু হয়। ওই দিন রাত ১০টায় গোলাগুলি শুরু হয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত চললেও সাধারণ মানুষকে কিন্তু নিশানা হতে হয়নি।
ভারতশাসিত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সবচেয়ে স্পর্শকাতর এলাকা উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়ারা ও বারামুল্লা জেলায় অবস্থিত। গত শুক্রবার কুপওয়ারার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একটা নির্দেশ জারি করে জানিয়েছিলেন, কুপওয়ারার নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন অঞ্চলে যেতে হলে আগাম অনুমতি নিতে হবে।
আতঙ্কে সাধারণ মানুষ : কুপওয়ারায় এখন পর্যন্ত সীমান্তে গুলি বিনিময়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে নিয়ন্ত্রণরেখার খুব কাছাকাছি যারা বাস করেন, তাদের মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। কুপওয়ারার কারনাহ সেক্টরের বাসিন্দারা ব্যক্তিগত ব্যয়ে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার তৈরির কাজ শুরু করেছেন বা সেগুলো পুনর্নির্মাণ করছেন। পেহেলগামের ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ির নিচে বাঙ্কার তৈরির কাজ যারা শুরু করেছেন, তাদেরই একজন পীরজাদা সৈয়দ।
তিনি বলেন, সীমান্তে গোলাগুলির পরিণতি আমরা এরই মধ্যে দেখেছি। জীবনহানি হয়েছে, অতীতে কৃষিকাজের অভাবের কারণে মানুষও অনাহারে মারা গেছে। আল্লাহ করুন যেন কিছু না হয়, কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে যেকোনো সময় কিছু একটা ঘটে যেতে পারে। সে কারণেই আমরা ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার বানাচ্ছি যাতে কিছু হলে আমরা সেখানে আশ্রয় নিতে পারি।
কুপওয়ারার একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত সামরিক তৎপরতা এবং রাতের আকাশে জেট বোমারু বিমানের আওয়াজ তাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। কুপওয়ারার নিয়ন্ত্রণ রেখার জিরো লাইনে অবস্থিত টোড গ্রামের এক বাসিন্দার কথায়, ২০১৭ সালে যখন গোলাবর্ষণ হচ্ছিল, তখন আমাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে একটা শেল এসে পড়েছিল এবং তার মৃত্যু হয়।
কিন্তু ২০২১ সালে যখন ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কঠোরভাবে অস্ত্রবিরতি মেনে চলতে রাজি হয়। তারপর গত চার বছর জীবন শান্তিপূর্ণ ছিল। এখানে কৃষিকাজ হয়েছে, বাচ্চারা স্কুলে গিয়েছে, ব্যবসা হয়েছে। কিন্তু এখন আশঙ্কা হচ্ছে, আগের মতো পরিস্থিতি হয়ত ফিরে আসতে পারে।’
পীরজাদা সৈয়দ বলেন, দুদিন আগে নামবরদার এসে এখানকার বাসিন্দাদের বাঙ্কার পরিষ্কার করতে এবং তার চারপাশের আগাছা বা কাঠের জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলতে বলেছিলেন। এই ঘোষণার কারণে সবাই হতবাক হয়েছে। কিন্তু বাঁচতে হবে তাই সকলে বাঙ্কার পরিষ্কার করতে বা সেগুলো পুনর্নির্মাণ করতে শুরু করে দিয়েছে।
‘সারারাত ঘুমাতে পারিনি’
এহসান-উল-হক শামি জানান, তার এলাকায় প্রায় প্রতিটা বাড়িতেই ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার রয়েছে। বাড়ির কাজে এই বাঙ্কার ব্যবহার করা হয়। বাঙ্কারগুলো এমনিতে মজবুত কিন্তু সব ধরনের বিপদ এড়াতে সক্ষম নয়। তিনি বলেন, বাঙ্কারগুলো বেশ মজবুত। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এটি বুলেট বা গোলা থেকে রক্ষা করতে পারলেও ভারী অস্ত্রের শেল সরাসরি বাঙ্কারে পড়লে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
‘আমরা যে বাড়িতে থাকি সেটি ২০০২ এবং ১৯৯৯ সালেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আমরা নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর আছি। এই কারণে আশঙ্কা থেকে যায় যে, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেই পারি। অবশ্য এমনিতেই গুলি চললে কারও পক্ষে ঘুমানো সম্ভব নয়।’
শামির মতো ওই অঞ্চলের অন্য বাসিন্দারাও বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন। তার কথায়, প্রায় পুরো এলাকার মানুষই গোটা রাত জেগে ছিল। তারা একে অপরের মঙ্গল কামনা করেছে। তবে আমাদের কাছে তথ্য আছে যে এখন পর্যন্ত এই গোলাগুলিতে বেসামরিক জনগণের কোনো ক্ষতি হয়নি।’
‘বাঙ্কারগুলো অবস্থান করার মতো যোগ্য নয়’ : উরি সেক্টরেও নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন মানুষ। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এই সেক্টরের ভাটগ্রান ও চরন্দা এলাকায় ১৬টি বাঙ্কার নির্মাণ করা হলেও স্থানীয়দের অভিযোগ, সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ ও পানির ব্যবস্থা নেই। ভাটগ্রানের বাসিন্দা মোহাম্মদ কুদ্দুস বলেন, কেউ কেউ নিজের খরচে বাঙ্কার তৈরি করেছেন, কিন্তু দরিদ্র মানুষরা যাবে কোথায়। এখন আমরা এই একই বাঙ্কারগুলোই পরিষ্কার করব।
‘আল্লাহ দয়া করুন, যাতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সমস্ত কিছু ঠিক থাকে আর গুলিবিনিময় বন্ধ হওয়ার পর জীবনযাত্রা আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়,’ বলেন কুদ্দুস।
অধিকৃত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এ পরিস্থিতিকে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘে দেশটির স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখার আহমদ।
শুক্রবার (২ মে) নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন।
আসিম ইফতিখার জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব, সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সাম্প্রতিক আঞ্চলিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছে পাকিস্তান। পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গেও দেশটি তাদের উদ্বেগ ও কূটনৈতিক অবস্থান নিয়ে আলোচনা করেছে।
উত্তেজনা এড়াতে পাকিস্তানের সদিচ্ছার কথা উল্লেখ তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষায় পাকিস্তান পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।’
পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের সমালোচনা করে আসিম বলেন, ‘নিরাপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’
এ সময় পাকিস্তানের শান্তিপূর্ণ, সহযোগিতামূলক ও সুসম্পর্কপূর্ণ প্রতিবেশী নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
আসিম বলেন, ‘পারস্পরিক সম্মান ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে যেকোনো বিরোধ নিষ্পত্তি করতে চায় পাকিস্তান। এমনকি ভারতের সঙ্গেও একই নীতি অনুসরণ করতে চায় দেশটি।’
তিনি বলেন, ‘২২ এপ্রিল পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার পর থেকে ভারত-পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতি বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করছে।’
চলমান পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে উত্তেজনা নিরসন প্রয়োজন বলে মনে করেন আসিম। এ লক্ষ্যে একতরফা যেকোনো পদক্ষেপ ও উস্কানিমূলক বক্তব্য থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান তিনি।
এ সময় জাতিসংঘ মহাসচিব ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোকে আলোচনা ও উত্তেজনা কমানের পক্ষে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান আসিম। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে যেকেনো সংঘাত এড়াতে এ ধরনের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা উচিত বলে মন্তব্য করেন পাকিস্তানের এই রাষ্ট্রদূত।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়ের একটি আদালত ছয় বছরের এক ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে শুক্রবার ৭৩ বছর বয়সী জোসেফ জুবাকে ৫৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। ইসরাইল-গাজা যুদ্ধ শুরুর এক সপ্তাহ পর সংঘটিত এই বর্বর হামলাটি ঘৃণা-অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মুসলিম ও ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত নাগরিকদের ,প্রতি বৈরিতা বেড়ে যাওয়ার মধ্যেই এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে।
দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি জোসেফ জুবা নিহত শিশু ওয়াদেয়া আল-ফাউমি ও তার মা হানান শাহিনের বাসার বাড়িওয়ালা ছিলেন। শিশুটিকে তি,নি ২৬ বার ছুরিকাঘাত করেন। ময়নাতদন্তে শিশুটির পেট থেকে ছয় ইঞ্চি লম্বা একটি সামরিক ধাঁচের ধারালো ছুরি বের করা হয়।
শিশুটির মা শাহিন এবং জুবার সাবেক স্ত্রী মেরি আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, গাজা সংঘাত নিয়ে ক্ষোভ থেকে জুবা মুসলিম পরিবারটির ওপর হামলা চালিয়েছিলেন।
ঘটনার দিন জুবা জোর করে শাহিনের শয়নকক্ষে ঢুকে তাকে বারবার ছুরিকাঘাত করেন। শাহিন কোনোভাবে বাথরুমে আশ্রয় নিয়ে দরজা বন্ধ করে পুলিশে ফোন করেন। এ সময়েই জুবা ছুটে গিয়ে তার ছেলেকে নির্মমভাবে আঘাত করেন।
শাহিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও সন্তানকে আর রক্ষা করতে পারেননি।
মামলার সরকারি কৌঁসুলি জেমস গ্লাসগো বলেন, 'একজন নিরপরাধ শিশু ও তার মায়ের ওপর এমন নির্মমতা—এই অপরাধীর নৈতিক অধঃপতনের মাত্রা কল্পনাতীত। এই ঘটনা শুধু একটি পরিবার নয়, সমগ্র মানবতার বিরুদ্ধে সহিংসতা।'
মামলায় জুরি মাত্র এক ঘণ্টা আলোচনার পর জোসেফ জুবাকে প্রথম ডিগ্রির হত্যাকাণ্ড, হত্যাচেষ্টা ও দুটি ঘৃণা-অপরাধের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন।
বিচারক অ্যামি বার্তানি-টমচ্যাক রায়ে বলেন, ওয়াদেয়ার হত্যার দায়ে ৩০ বছর, তার মায়ের ওপর হামলার জন্য ২০ বছর এবং ঘৃণা-অপরাধের জন্য ৩ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে—যা একটির পর একটি ধারাবাহিকভাবে ভোগ করতে হবে জুবাকে। অর্থাৎ মোট ৫৩ বছর কারাবাস।
রায় ঘোষণার সময় শিশুটির নানা মাহমুদ ইউসুফ আবেগ জড়িত কণ্ঠে বিচারকের উদ্দেশে বলেন, 'আমরা জানতে চাই—কেন? কীভাবে একজন মানুষ এমন কাজ করতে পারে?'
তবে আদালতে জোসেফ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি বা কোনো উত্তর দেননি।
উইল কাউন্টি শেরিফের অফিস থেকে জানানো হয়েছে, হামলাটি ‘শুধু ধর্মীয় পরিচয়—মুসলিম হওয়ার কারণে এবং মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাতকে কেন্দ্র করে’ সংঘটিত হয়েছিল।
ঘটনার পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে এই হত্যাকাণ্ডকে ‘ঘৃণ্য বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, 'আমেরিকায় এমন সহিংসতার কোনো স্থান নেই।”
সম্প্রতি ভারতীয় কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুটি দেশই সীমিত পরিসরে সামরিক হামলার আভাস দিচ্ছে। এতে ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধাবস্থার মধ্যে এশিয়াতেও একই পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে কোনোমতেই আরেকটি যুদ্ধ চাইছে না আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ও মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে বেশির ভাগই ভারতীয় পর্যটক ছিলেন। এ ঘটনায় পাকিস্তান জড়িত বলে অভিযোগ করেছে চিরবৈরী ভারত। যদিও হামলার সঙ্গে কোনোরকম সংশ্লিষ্টতার দায় অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। এ হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অব কন্ট্রোল) বরাবর সপ্তম দিনের মতো দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাবিনিময় হয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিবেশী এই দুটি দেশই সীমিত পরিসরে হামলার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এ ছাড়াও পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে উভয় পক্ষ। তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
২০১৯ সালে কাশ্মীরে আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলায় ৪০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে এবারই দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক সব থেকে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে। তবে দেশ দুটি যে যুদ্ধংদেহী অবস্থানে রয়েছে; তার ভবিষ্যৎ আসলে কী এই নিয়ে একটু আলোকপাত করা যাক।
ভারত ও পাকিস্তান বহু বছর ধরেই পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার গড়ে তুলেছে। তবে দুই দেশেরই দাবি তাদের অস্ত্রগুলোর উদ্দেশ্য যুদ্ধ শুরু করা নয়; বরং প্রতিরোধ করা। এক্ষেত্রে ভারতের নীতি হলো ‘প্রথমে ব্যবহার না করা’। তার মানে, ভারত কেবল তখনই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে, যখন তাদের সেনাদের ওপর বা ভারতের ভূখণ্ডের ওপর পারমাণবিক হামলা হবে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের নীতি হলো ‘ফুল স্পেকট্রাম ডিটারেন্স’ বা সম্পূর্ণ পরিসরে প্রতিরোধ কৌশল। ভারতের মতো বড়, শক্তিশালী ও ধনী আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীর পারমাণবিক বা গতানুগতিক সামরিক হামলার মোকাবিলায় পাকিস্তানের এই প্রস্তুতি।
তবে প্রথমে ব্যবহার না করার নীতিতে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে পাকিস্তানে। দেশটি মনে করে, তার অস্তিত্ব হুমকির মুখে, সেক্ষেত্রে তারা প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের শঙ্কা উড়িয়ে দেয়নি। এপির প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের তুলনায় কম সামরিক শক্তির কারণে পাকিস্তান বাস্তবিক অর্থে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু করার ক্ষমতা রাখে না বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
তবে এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, ভারত কিংবা পাকিস্তান কোনো দেশই কিন্তু নিশ্চিতভাবে জানে না অপর দেশের কাছে ঠিক কি পরিমাণ বা কী ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। ১৯৭৪ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ভারত। এদিকে, পাকিস্তান প্রথম পরীক্ষা করে ১৯৮৮ সালে।
বিভিন্ন থিংকট্যাংকের মতে, পাকিস্তানের কাছে প্রায় ১৭০টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে, আর ভারতের প্রায় ১৭২টি। অবশ্য কিছু বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের অস্ত্রসংখ্যা আরও বেশি হতে পারে, প্রায় ২০০টি হতে পারে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেশী এই দেশ দুটির মধ্যে বৈরিতা থাকা স্বত্ত্বেও দুই দেশের পারমাণবিক স্থাপনা ও অবকাঠামোগুলোতে হামলা পরিচালনা না করার জন্য তারা ১৯৮৮ সালে একটি চুক্তি করে। ১৯৯১ সালে এ চুক্তি কার্যকর হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশ প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে পরস্পরকে তাদের পারমাণবিক স্থাপনার তথ্য সরবরাহ করবে। ১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দুই দেশের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের প্রথা শুরু হয়। এরপর থেকে তারা টানা ৩৪ বছর ধরে এই তালিকা বিনিময় করেছে। তবে, ভারত-পাকিস্তান কেউই আন্তর্জাতিক পারমাণবিক অস্ত্র সম্প্রসারণ প্রতিরোধ চুক্তিতে সই করেনি। এই চুক্তিটি বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র ও প্রযুক্তির বিস্তার ঠেকানোর উদ্দেশ্যে গঠিত।
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে থাকে। তবে দুই দেশের সেনারাই নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতেই হামলা চালায়। আরেক পক্ষ আবার পাল্টা হামলা করে। এ ধরনের হামলাগুলোর উদ্দেশ্য হলো, প্রতিপক্ষ যেন পিছু হটার সুযোগ পায়, পাশাপাশি উত্তেজনা কমানোর জন্য সময় পাওয়া যায়।
২২ এপ্রিলের পেহেলগামের ঘটনা ছিল ভিন্ন। নিহত ২৬ জনের মধ্যে বেশির ভাগই ভারতীয় হওয়ায় এই হামলার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য ভারত সরকারের ওপর অভ্যন্তরীণ চাপ রয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলার পর পাকিস্তানের একটি ক্যাম্পে বিমান হামলা চালিয়েছিল ভারত। ভারতের দাবি সেটি ছিল একটি সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণ শিবির।
উত্তেজনার মধ্যেই সামরিক মহড়া চালাচ্ছে পাকিস্তান
ভারতের সঙ্গে চরম উত্তেজনার মধ্যেই সামরিক মহড়া চালাচ্ছে পাকিস্তান। এই মহড়ায় দেশটি অত্যাধুনিক অস্ত্রের পাশাপাশি যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিও প্রদর্শন করছে। নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ গতকাল শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে। পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো এই মহড়ায় হালকা ও ভারী দুই ধরনের অস্ত্রেরই ব্যবহার করা হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে ট্যাঙ্ক, আর্টিলারি ও পদাতিক ইউনিট।
নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই মহড়ার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যে কোনো সম্ভাব্য আগ্রাসনের উপযুক্ত এবং চূড়ান্ত জবাব দেওয়ার ক্ষমতা নিশ্চিত করা, যাতে তারা দেশের সীমান্ত রক্ষা করতে পারে।