যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ইসরায়েলকে নতুন করে একশ’ কোটি ডলারের অস্ত্র দেয়ার পরিকল্পনার কথা কংগ্রেসকে জানিয়েছে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় হামলা চালালে কিছু অস্ত্রের চালান বন্ধ করে দেয়া হবে বলে বাইডেনের হুমকির এক সপ্তাহের মধ্যে এ পরিকল্পনার কথা জানাল তার প্রশাসন।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রশাসন মঙ্গলবার কংগ্রেসকে অনানুষ্ঠানিকভাবে এ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কংগ্রেসের এক সহকারি জানিয়েছেন, মার্কিন অস্ত্র প্রস্তুতকারীদের কাছ থেকে যে অস্ত্র নেয়া হবে তা একশ’ কোটি ডলার মূল্যের।
এরআগে মার্কিন কংগ্রেস ইউক্রেন, ইসরায়েল ও তাইওয়ানের জন্যে নয় হাজার পাঁচশো’ কোটি ডলারের একটি প্যাকেজ অনুমোদন করে।
এদিকে নতুন করে অস্ত্র দেয়ার পরিকল্পনার কথা এমন এক সময়ে আসলো যখন কেবল সপ্তাহ খানেক আগে বাইডেন ইসরায়েলকে হুঁশিয়ার করে বলেছিল, রাফায় স্থল হামলা চালানো হলে যুক্তরাষ্ট্র বোমা ও কামানের গোলা সরবরাহ বন্ধ করে দেবে।
যদিও বাইডেনের এ হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করেই ইসরায়েল রাফায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে এবং রাফা ক্রসিংয়ে সৈন্য ও ট্যাংক জড়ো করেছে।
ইসরায়েলের কাছে নতুন করে অস্ত্র বিক্রির খবরটি প্রথম প্রকাশ করে ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’। জার্নালের খবরে বলা হয়েছে, এতে সম্ভবত ৭০ কোটি ডলারের ট্যাংক গোলাবারুদ এবং ৫০ কোটি ডলারের কৌশগলগত যানবাহন রয়েছে।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনী সংগঠন হামাস গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক বড়ো ধরনের হামলা চালায়। এ সময়ে তারা প্রায় এক হাজার ১৭০ ইসরায়েলীকে হত্যা এবং ২৫০ জিম্মিকে আটক করে। এখনও তাদের কাছে ১২৮ জিম্মি আটক রয়েছে।
এদিকে ৭ অক্টোবর ইসরায়েল গাজায় প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা শুরু করে যা এখনও চলছে। গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত এ হামলায় ৩৫ হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এদের অধিকাংশ নারী ও শিশু।
বড়দিন উপলক্ষে নিজ দেশের মানুষের উদ্দেশে দেওয়া বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যু কামনা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
তিনি তার শুভেচ্ছা বার্তায় বলেছেন, ‘আমাদের জন্য রাশিয়া এতে দুর্ভোগ বইয়ে আনলেও, তারা আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস দখল ও সেখানে বোমা হামলা করতে পারেনি। তা হলো— ইউক্রেনীয়দের মন, একে-অপরের প্রতি বিশ্বাস এবং ঐক্য।’
সরাসরি নাম উচ্চারণ না করে পুতিনের মৃত্যু কামনা করে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আজ, আমরা সবাই একটি স্বপ্নই দেখি, সবার জন্য আমাদের একটাই প্রত্যাশা, ‘তার ধ্বংস (মৃত্যু) হোক’।
বড়দিনের আগ মুহূর্তে ইউক্রেনের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালায় রাশিয়া। এতে তিনজন নিহত ও বেশিরভাগ অঞ্চল বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
বড়দিনের আগে এমন হামলার নিন্দা জানিয়ে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘ক্রিসমাসের আগের সন্ধ্যায়, রাশিয়া আবারও দেখিয়েছে সত্যিকার অর্থে তারা কারা। রাশিয়া ব্যাপক বোমাবর্ষণ করেছে। শত শত শহীদ ড্রোন, ব্যালিস্টিক মিসাইল, কিনঝাল মিসাইল দিয়ে হামলা চালিয়ছে- সবকিছু ব্যবহার করেছে। ধর্মহীনরা এভাবেই আঘাত হানে।’
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক হামলা চালানোর নির্দেশ দেন পুতিন। এরপর প্রায় তিন বছর ধরে ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে তার সেনারা। এই সময়ে ইউক্রেনের ২০ শতাংশ অঞ্চল দখল করেছে রাশিয়া।
প্রথম পারমাণবিক সাবমেরিন বলে দাবি করে একটি বিশাল সাবমেরিনের নতুন ছবি প্রকাশ করেছে উত্তর কোরিয়া। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব ছবিতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর কিছু অ্যাটাক সাবমেরিনের সমান আকারের এই জাহাজটি পরিদর্শন করছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট কিম জং উন।
ছবিগুলোতে দেখা গেছে, গাইডেড-মিসাইল সাবমেরিনটি একটি ইনডোর নির্মাণকেন্দ্রে রাখা হয়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে সাবমেরিনটি এখনো পানিতে নামানো হয়নি। পারমাণবিকচালিত সাবমেরিন নির্মাণ দীর্ঘদিন ধরেই কিম জং উনের একটি লক্ষ্য ছিল, যা তিনি প্রথম ২০২১ সালে ক্ষমতাসীন দলের কংগ্রেসে প্রকাশ্যে তুলে ধরেন। বিশ্লেষকদের মতে, সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে দক্ষিণ কোরিয়াকে নিজস্ব পারমাণবিকচালিত সাবমেরিন নির্মাণের অনুমোদন দেয়ায় পিয়ংইয়ংয়ের এই প্রকল্পে নতুন করে গতি এসেছে।
পারমাণবিকচালিত সাবমেরিনের বেশ কিছু কৌশলগত সুবিধা রয়েছে। পর্যাপ্ত রসদ থাকলে এসব সাবমেরিন বছরের পর বছর পানির নিচে থাকতে পারে, যেখানে প্রচলিত সাবমেরিনগুলোকে ডিজেল ইঞ্জিন চালাতে ও ব্যাটারি চার্জ করতে নিয়মিত ভেসে উঠতে হয়। এ ছাড়া এসব সাবমেরিন সাধারণত আরও দ্রুতগামী এবং অনেক ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে নীরব। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও ভারত এই প্রযুক্তির অধিকারী।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) প্রকাশিত ছবিগুলোতে সাবমেরিনটির নির্মাণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা গেছে। এর অস্তিত্ব প্রথম প্রকাশ করা হয় চলতি বছরের মার্চে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সাবমেরিনটির ডিসপ্লেসমেন্ট ৮ হাজার ৭০০ টন, যা যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর অধিকাংশ ভার্জিনিয়া-শ্রেণির পারমাণবিকচালিত অ্যাটাক সাবমেরিনের সমতুল্য।
কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানায়, কিম জং উন আবারও এই ধরনের জাহাজের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘পিয়ংইয়ংয়ের প্রতিরক্ষা নীতি আক্ষরিক অর্থেই সর্বশক্তিশালী আক্রমণাত্মক সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা। আমরা সশস্ত্র বাহিনী উন্নয়নে সুপার-শক্তিশালী আক্রমণাত্মক সক্ষমতাকেই জাতীয় নিরাপত্তার সর্বোত্তম ঢাল হিসেবে বিবেচনা করি।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে দক্ষিণ কোরিয়ার পারমাণবিকচালিত সাবমেরিন নির্মাণকে উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন কিম, যা মোকাবিলা করা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তবে সিউলের ইহওয়া উইমেন্স ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক লেইফ-এরিক ইজলি বলেন, কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য মূলত পিয়ংইয়ং নিজেই দায়ী। তার মতে, ‘পারমাণবিকচালিত সাবমেরিনের সংখ্যা বাড়লে অস্থিরতা বাড়তে পারে। এ বিষয়ে কিম হয়তো সঠিক, কিন্তু এই অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্য তাকেই দায় নিতে হবে।’
২০২১ সালে ঘোষিত পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কিম জং উন দেশের সামরিক সক্ষমতা ব্যাপকভাবে বাড়ানোর তদারকি করছেন। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছাতে সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পারে এমন হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল এবং নৌবাহিনীর জন্য দুটি নতুন গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার।
চলতি বছর দ্বিতীয় ডেস্ট্রয়ারটি উদ্বোধনের সময় উল্টে যাওয়ার ঘটনায় আলোচনায় আসে। পরে জাহাজটি আবার ভাসানো হয় এবং মেরামত করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। নতুন সাবমেরিন পরিদর্শনের সময় কিম বলেন, ‘ডেস্ট্রয়ার ও পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণ আমাদের নৌবহরের যুদ্ধক্ষমতা জোরদারে এক বিশাল অগ্রগতি।’
নির্বাসন কিংবা দীর্ঘ কারাবাসই রাজনৈতিক জীবনের ইতি নয়। ইতিহাসে এমন বহু উদাহরণ রয়েছে, যেখানে কঠিন দমন–পীড়ন ও নির্বাসনের পর নিজ দেশে ফিরে ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছেছেন বিশ্বনেতারা। জনগণের সমর্থন, আদর্শিক দৃঢ়তা ও দীর্ঘ সংগ্রামের শক্তিতে তারা রচনা করেছেন নতুন ইতিহাস। এমনই চারজন বিশ্বনেতার ফিরে আসার গল্প তুলে ধরা হলো:
বেনজির ভুট্টো (পাকিস্তান): পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হকের শাসনামলে রাজনৈতিক নিপীড়নের মুখে আশির দশকে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন বেনজির ভুট্টো। যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত অবস্থাতেও তিনি পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতৃত্ব দেন এবং রাজনৈতিক আন্দোলন চালিয়ে যান। জিয়াউল হকের পতনের পর দেশে ফিরে ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মুসলিম বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইতিহাস গড়েন। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালেও তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
রুহুল্লাহ খোমেনি (ইরান): ইরানের শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির স্বৈরশাসনের বিরোধিতা করায় ১৯৬৪ সালে দেশত্যাগে বাধ্য হন আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি। তুরস্ক, ইরাক ও ফ্রান্সে নির্বাসিত জীবন কাটালেও সেখান থেকেই তিনি ইরানে বিপ্লবী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৯ সালে শাহের পতনের পর দেশে ফিরে ইসলামী বিপ্লবের নেতৃত্ব দেন এবং ইরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
ভ্লাদিমির লেনিন (রাশিয়া): রাশিয়ার জার শাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের কারণে একাধিকবার গ্রেপ্তার ও নির্বাসনের শিকার হন ভ্লাদিমির লেনিন। সাইবেরিয়া ও ইউরোপে নির্বাসিত অবস্থায় তিনি বলশেভিক মতাদর্শ বিকশিত করেন। ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় ফিরে এসে অক্টোবরে বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন এবং পরবর্তীতে সোভিয়েত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
নেলসন ম্যান্ডেলা (দক্ষিণ আফ্রিকা): দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে ১৯৬৪ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। টানা ২৭ বছর কারাভোগের পর ১৯৯০ সালে মুক্তি পান তিনি। মুক্তির পর শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে বর্ণবাদী শাসনের অবসান ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৯৪ সালে দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়ে নতুন যুগের সূচনা করেন ম্যান্ডেলা।
নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি আগামী ১ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের পর ‘ইসলামোফোবিয়া এবং ফিলিস্তিনবিরোধী বর্ণবাদের বিরুদ্ধে’ ধারাবাহিকভাবে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার নিউইয়র্ক সময় রাতের দিকে এক্স-পোস্টে তিনি বলেন, ‘মেয়র হিসেবে... আমি সকল নিউইয়র্কবাসীকে লালন করা, সুরক্ষা দেওয়া এবং প্রতিটি কোণে ইসলামোফোবিয়া ও ফিলিস্তিনি-বিরোধী বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করাকে আমার দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করব।’
মামদানি ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত ২১ বছর বয়সি ফিলিস্তিনি-আমেরিকান ছাত্র মুস্তাফা খারবুচের সঙ্গে তার কথোপকথনের বর্ণনা দেন। সম্প্রতি ব্রাউন ইউনিভার্সিটি গুলি চালানোর ঘটনায় তাকে মিথ্যাভাবে দোষারোপ করা হয়। এরপর তাকে অনলাইনে হয়রানি এবং মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হয়েছিলেন।
আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, অতি-ডানপন্থি সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট এবং ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকরা আরবের ঐতিহ্যবাহী ‘কেফিয়া’ পরা মুস্তাফার একটি ছবি ভাইরাল করে দেয়। পোস্টে তারা ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা চালায় যে, এসব সন্ত্রাসী ঘটনা ফিলিস্তিন কিংবা সংশ্লিষ্ট মুসলিমরাই ঘটায়। ঘটনার সঙ্গে ওই ছাত্রের সম্পর্ক থাকার কোনোরকম প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও এসব প্রচারণা চলে।
যদিও পর প্রকৃত সন্দেহভাজনকে আলাদাভাবে গ্রেপ্তার করা হয়। মামদানি এই ঘটনাটিকে ‘ইসলামফোবিয়া এবং ফিলিস্তিনি-বিরোধী বর্ণবাদের কারণে বাস্তব জগতের ক্ষতির একটি স্পষ্ট উদাহরণ' হিসাবে বর্ণনা করেছেন।’
২০২২ সালের শুরুতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তুরস্কের সামনে আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম জটিল কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হাজির করে। এমন এক সময়ে যুদ্ধ শুরু হয়, যখন একদিকে পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে এবং অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে আঙ্কারার সম্পর্ক একসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল ছিল।
যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানির দাম বেড়ে যায়, বৈশ্বিক আর্থিক পরিস্থিতি কঠোর হয় এবং রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তুরস্ককে কঠিন অবস্থানে ফেলে। ন্যাটোর সদস্য হয়েও মস্কোর সঙ্গে গভীর অর্থনৈতিক, জ্বালানি ও পর্যটন সম্পর্ক বজায় রাখা তুরস্কের জন্য সহজ ছিল না। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, আঙ্কারাকে হয় পশ্চিম নয় রাশিয়া—এই দুইয়ের একটিকে বেছে নিতে হবে।
চার বছর পর সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বরং তুরস্ক কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রেখে এই সংকটকে সুযোগে রূপান্তর করেছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধ ও এর বৈশ্বিক প্রভাব মোকাবিলায় দক্ষ ভূরাজনৈতিক খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধে মধ্যস্থতার ভূমিকা: ইউক্রেন যুদ্ধে প্রথমে আনতালিয়া শান্তি আলোচনা, এরপর কৃষ্ণসাগর শস্যচুক্তি, বন্দিবিনিময় এবং সাম্প্রতিক ইস্তাম্বুল শান্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তুরস্ক নিজেকে কার্যকর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। এর ফলে পশ্চিমা দেশ ও রাশিয়া—উভয়ের কাছেই আঙ্কারা কিছুটা ছাড় আদায় করতে পেরেছে।
এই কূটনৈতিক অবস্থান তুরস্ককে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সীমার মধ্যে থেকেও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। একইসঙ্গে তুরস্ক ইউক্রেনকে বায়রাকতার টিবি-২ ড্রোনসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সহায়তা দিয়েছে, যা কিয়েভ রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখে।
ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন ও তুরস্কের লাভ: ইউক্রেন যুদ্ধ দক্ষিণ ককেশাসেও বড় পরিবর্তন আনে। রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যস্ত থাকায় আজারবাইজান নাগোর্নো-কারাবাখে সামরিক সাফল্য অর্জন করে, যেখানে তুরস্কের ড্রোন প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে তুরস্কের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বৈশ্বিকভাবে নতুন পরিচিতি পায়।
একই সঙ্গে আর্মেনিয়া–আজারবাইজান শান্তিচুক্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা তুরস্ক–আর্মেনিয়া সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথ খুলে দিতে পারে। সীমান্ত খুললে মধ্য এশিয়া ও চীনের সঙ্গে তুরস্কের বাণিজ্যিক যোগাযোগ আরও শক্তিশালী হবে।
সিরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব: ইউক্রেনে রাশিয়ার জড়িয়ে পড়া এবং সিরিয়ায় ইরান ও হিজবুল্লাহর দুর্বলতা বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনে ভূমিকা রাখে। তুরস্কের সামরিক ও কৌশলগত সহায়তায় বিরোধী শক্তিরা দামেস্ক দখলে সক্ষম হয়।
সিরিয়া নিষেধাজ্ঞামুক্ত হয়ে পুনর্গঠনের পথে গেলে তুর্কি নির্মাণ ও উৎপাদন খাত বড় সুবিধা পেতে পারে। একই সঙ্গে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া এগোলে তা তুরস্কের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি ও ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হবে।
ইউরোপ ও বৈশ্বিক সম্পর্ক: ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপের নিরাপত্তা ভাবনাকে নতুন করে সামনে এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা দুর্বল হওয়ায় ইউরোপ বিকল্প প্রতিরক্ষা অংশীদার খুঁজছে। এই প্রেক্ষাপটে শক্তিশালী সেনাবাহিনী ও উন্নত প্রতিরক্ষা শিল্পের কারণে তুরস্ক বড় লাভবান হতে পারে।
ইতোমধ্যে বায়কার–পিয়াজিও এবং লিওনার্দোর মতো চুক্তি ইউরোপ–তুরস্ক প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ইঙ্গিত দিয়েছে। একই সঙ্গে কাস্টমস ইউনিয়ন সম্প্রসারণের মাধ্যমে তুরস্কের ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্তির আলোচনাও নতুন গতি পেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যে নতুন অবস্থান: গাজা শান্তি প্রক্রিয়ায় গ্যারান্টর হিসেবে তুরস্কের ভূমিকা ওয়াশিংটনে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। শান্তি রক্ষায় সেনা পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে আঙ্কারা বাস্তবভিত্তিক অবস্থান দেখিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। এর ফলে এফ-৩৫ কর্মসূচিতে তুরস্কের প্রত্যাবর্তন ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।
একই সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং এমনকি চীনের সঙ্গেও তুরস্কের সম্পর্ক উন্নতির পথে। সব মিলিয়ে, ২০২৫ সাল তুরস্কের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত ধৈর্যের ফলপ্রসূ বছর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জটিল বৈশ্বিক সংকটকে কাজে লাগিয়ে তুরস্ক তার কূটনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করেছে। উন্নত বৈদেশিক সম্পর্কের পাশাপাশি এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতেও।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দি আছেন। তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের করার অভিযোগ করেছেন দলের অন্য নেতারা। গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর পর থেকেই তার সঙ্গে দেখা করা নিয়ে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে এসেছে দেশটির সরকার। এতে ইমরানের পরিবার ও দল তার শারীরিক অবস্থা এবং কারাবন্দিত্বের পরিবেশ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এদিকে আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কারাগারে সাক্ষাৎ বন্ধ থাকার মধ্যেই দেশটির সংসদবিষয়ক মন্ত্রী তারিক ফজল চৌধুরী গত সোমবার জানান, ইমরানের সঙ্গে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কেউ সাক্ষাৎ করতে পারবেন না।
দেশটির গণমাধ্যম জিও নিউজের ‘ক্যাপিটাল টক’ নামের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
তবে মন্ত্রী তারিক ফজল চৌধুরী দাবি করেন, কারাগার কোনো ‘রাজনৈতিক দলের সদর দপ্তর নয়’। পিটিআই ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও এর প্রধানদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছে’ বলেও সমালোচনা করেন তিনি।
পিএমএল-এন-এর এই নেতা আরও বলেন, অতীতে আদিয়ালা কারাগারে পিটিআই নেতারা তাদের প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে নিয়মিত দেখা করেছেন এবং তাতে সরকারের কোনো আপত্তি ছিল না।
কিন্তু তার অভিযোগ, সেসব সাক্ষাৎ পরবর্তী সময়ে কারাগারের বাইরে রাজনৈতিক সংবাদ সম্মেলনে রূপ নেয় এবং এমন সব বয়ান তৈরি করা হয়, যা ‘ভারতীয় গণমাধ্যম লুফে নেয়’।
মন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পিটিআই নেতা আলী জাফর বলেন, দেশের সংবিধান অনুযায়ী ‘নির্জন কারাবাস’ নির্যাতনের শামিল।
তিনি আরও যোগ করেন, তারিক ফজলের এই বক্তব্য মানবাধিকার এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি।
গত সপ্তাহে আদিয়ালা কারাগারের সামনে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে তার বোন, দলীয় নেতা ও কর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় জলকামান ব্যবহার করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
অধিকৃত পশ্চিম তীরে চলমান ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসন ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা ফিলিস্তিনিদের মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। আরো গভীর হচ্ছে মানবিক সংকট। বাড়ছে ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজনীয়তা। ত্রাণ প্রবেশে ইসরায়েলের বাধার কারণে গাজায় ক্রমবর্ধমান চাহিদা পুরণ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। খবর টিআরটি ওয়ার্ল্ডের।
এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের কোঅর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স জানায়, গত ৯ থেকে ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে ছয়জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে পাঁচজন ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে এবং একজন ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীর হামলায় মারা যায়। নিহতদের মধ্যে চারজই শিশু।
বিবৃতিতে অধিকৃত পশ্চিম তীর জুড়ে অব্যাহত বাস্তুচ্যুতির বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, গত দুই সপ্তাহে বাড়িঘর ধ্বংস ও উচ্ছেদের কারণে ১০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যার মধ্যে ৬৩ জন পূর্ব জেরুজালেমে এবং বাকিরা এরিয়া সি-তে।
ফিলিস্তিনের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় পূর্ব জেরুজালেমসহ অধিকৃত পশ্চিম তীরে কমপক্ষে এক হাজার ১০২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ১১ হাজার এবং প্রায় ২১ হাজার ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে ত্রাণ প্রবেশে ইসরায়েলের বাধার কারণে গাজায় ক্রমবর্ধমান চাহিদা পুরণ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে গাজার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে।
পানি চাই—পানি। পানির অপর নাম জীবন। তাই ‘তরল সোনা’ বলে খ্যাতি আছে যে তেলের তার বিনিময়ে হলেও পানি চাই—পানি। এমন আর্তি দীর্ঘ খরাপীড়িত ইরাকের। মধ্যপ্রাচ্যের এই ইতিহাস-শিল্প-সাহিত্য ও প্রাকৃতিক খনিজসমৃদ্ধ দেশটি গত এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক খরার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে এখন পানির জন্য হাহাকার।
গত ২১ ডিসেম্বর সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়—গ্রিক ভাষায় ‘মেসোপটেমিয়া’ বা আজকের ইরাক যা ঐতিহাসিকভাবে ‘দুই নদীর মধ্যবর্তী দেশ’ হিসেবে পরিচিত, তা গত কয়েক দশকের মধ্যে পানির তীব্র সংকটে ভুগছে।
কারণ—যে দুই বিখ্যাত নদীর দেশ হিসেবে ইরাকের পরিচিতি সেই নদী দুটিই আজ মরতে বসেছে। অর্থাৎ, বিশ্বখ্যাত দজলা ও ফোরাত নদীর অস্তিত্ব বিলীনপ্রায়।
গত ২০ ডিসেম্বর ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাকৃতিকভাবেই খরার কারণে শুকিয়ে যাচ্ছে দেশটির একদা প্রমত্ত দুই নদী—দজলা ও ফোরাত। তবে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মানবসৃষ্ট কারণও— নদীগুলোর উজানে বাঁধের পর বাঁধ। যে দুই নদীর কল্যাণে একদিন ‘সভ্যতার আঁতুড়ঘর’ হয়েছিল আজকের ইরাক, বাঁধ দিয়ে সেই নদী দুটির প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করতে দ্বিধা করেনি কেউ।
ফোরাত তীরের কান্না: সিএনএন-এর সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়—একসময় প্রাচুর্যের প্রতীক ছিল যে দজলা ও ফোরাত তা বাঁচিয়ে রাখতে ইরাক সরকার এখন মরিয়া। এই দুই নদীর উৎস আজকের তুরস্কে। তাই তেলের ঘাটতিতে থাকা তুরস্ককে পানির ঘাটতিতে থাকা ইরাক যে প্রস্তাব দিতে চায় তা হচ্ছে—‘তেলের বিনিময়ে পানি’। কিন্তু, কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হলো তা জানতে তাকাতে হবে ফোরাতের শীর্ণদশার দিকে। প্রতিবেদন অনুসারে, এই নদীর ওপর তুরস্ক ও সিরিয়া একাধিক বাঁধ দিয়েছে।
শুধু তাই নয়, ইরাকে দীর্ঘ যুদ্ধের কারণে সেচ ব্যবস্থাগুলো অনেকটাই অকেজো। সরকারের অব্যবস্থাপনা ও অক্ষমতার কারণে সেগুলো এখন গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কারণে ইরাকের ৪ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষ যখন পানির চরম সংকটে তখন নেমে এসেছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত খরা। এই খরা এতই তীব্র যে গত এক শ বছরে এমনটি দেখা যায়নি।
ইরাকি পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও ইরাকি গ্রিন ক্লাইমেট অর্গানাইজেশনের প্রধান মুখতার খামিস সিএনএনকে জানান, তুরস্কে নদী দুটির উজানে নির্মিত বাঁধগুলো ইরাকে পানির প্রবাহ ব্যাপকহারে কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে ইরাকে পানির চলমান সংকট আরও বেড়েছে।
দেশটির মধ্যাঞ্চলে বাবেল প্রদেশের আহমেদ আল-জাশামি একসময় কৃষি কাজ করতেন। এখন তিনি নির্মাণসামগ্রীর দোকানে কাজ করেন।
সংবাদমাধ্যমটিকে আল-জাশামি বলেন, ‘আমরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে কৃষিকাজ করতাম। কখনোই ভাবিনি, (পানির অভাবে) আমাদের কৃষিজমি নষ্ট হয়ে যাবে। ফলের বাগান মরে যাবে।’
একই ঘটনা ঘটেছে হুশাম আনিজানেরও জীবনে। তিনি থাকেন বাগদাদের পশ্চিমের শহর ফাজুল্লায়। পানির অভাবে তার ৫ একরের কমলার বাগান শুকিয়ে গেছে। পরে, টাকার অভাবে তিনি বাগানটি বিক্রি করতে বাধ্য হন। এখন তিনি হয়েছেন ট্যাক্সিচালক। আর সেই বাগানে উঠেছে ঘরবাড়ি। সিএনএন-কে তিনি বলেন, ‘সেচের পানি পাওয়া অসম্ভব।’
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হিসেবে আগামী ১ জানুয়ারি শপথ নিচ্ছেন জোহরান মামদানি। তার এই অভাবনীয় উত্থানের সাক্ষী যুক্তরাষ্ট্রের ভারমন্টের স্বতন্ত্র সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। মামদানির রাজনৈতিক যাত্রায় শুরু থেকেই তার পাশে ছিলেন এই প্রবীণ নেতা। শপথ গ্রহণের দিনও মামদানির পাশে দেখা যাবে স্যান্ডার্সকে। সিটি হলের কাছে আয়োজিত গণশপথ অনুষ্ঠানে এই দুই ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট নেতা একমঞ্চে থাকবেন। মামদানির দলের ধারণা,তার এই শপথ অনুষ্ঠানে প্রায় ৪০ হাজার সমর্থকের বিপুল সমাগম ঘটবে।
উন্মুক্ত এই আয়োজনের প্রায় ১৩ ঘণ্টা আগেই অবশ্য মামদানির আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ সম্পন্ন হবে। সেটি হবে একান্তই ঘরোয়া আয়োজন। তবে এই শপথ কোথায় হবে, সেই স্থানটি এখনো গোপন রাখা হয়েছে।
খ্রিষ্টীয় নববর্ষের ঠিক আগ মুহূর্তে বা মধ্যরাতে মামদানিকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশা জেমস। সেখানে নির্বাচিত মেয়র হিসেবে মামদানি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সংবিধান ও নিউইয়র্ক সিটির সনদ সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করবেন। একই সঙ্গে তিনি মেয়রের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের শপথ নেবেন।
সোমবার এক সাক্ষাৎকারে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বলেছেন, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পেলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের ‘পিছু হটা’ বা সংকোচনের বিষয়টি তুলে ধরবেন। তিনি বলেন, ‘শ্রমজীবী মানুষ’ সঠিকভাবেই মনে করে যে সরকার এখন আর তাদের জন্য কাজ করছে না; বরং সরকার কাজ করছে নির্বাচনী প্রচারণায় অর্থ জোগানদাতা ধনী ব্যক্তি এবং অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণকারী শতকোটিপতি শ্রেণির জন্য।
স্যান্ডার্স আরও বলেন, ‘জোহরানের কাঁধে এখন এক অত্যন্ত কঠিন দায়িত্ব। তাকে প্রমাণ করতে হবে যে সরকার কেবল ধনীদের জন্য নয়, বরং শ্রমজীবী পরিবারগুলোর জন্যও সুফল বয়ে আনতে পারে।’
বিশ্ববাজারে নতুন রেকর্ড গড়েছে স্বর্ণের দাম। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৪,৫০০ ডলার ছাড়িয়েছে। একই সঙ্গে রুপা ও প্লাটিনামও নতুন রেকর্ড দামে পৌঁছেছে।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। কয়েকটি কারণে স্বর্ণের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে ভূরাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক ঝুঁকি রয়েছে। এর পাশাপাশি ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুদহার আরও কমতে পারে—এই প্রত্যাশায় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে মূল্যবান ধাতুর দিকে ঝুঁকছেন।
স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম ০ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৪ হাজার ৪৯৫ দশমিক ৩৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর আগে লেনদেনের একপর্যায়ে স্বর্ণ সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৫২৫ দশমিক ১৯ ডলারে পৌঁছেছে। ফেব্রুয়ারি ডেলিভারির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণ ফিউচার্সের দাম ০ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ৪ হাজার ৫২২ দশমিক ১০ ডলারে উঠেছে।
রুপার দাম ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৭২ দশমিক ১৬ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর আগে এটি সর্বকালের সর্বোচ্চ ৭২ দশমিক ৭০ ডলার স্পর্শ করে। প্লাটিনামের দাম ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৩৩৩ দশমিক ৮০ ডলারে পৌঁছায়, যা লেনদেনের একপর্যায়ে ২ হাজার ৩৭৭ দশমিক ৫০ ডলারে উঠেছিল।
পাশাপাশি প্যালাডিয়ামের দাম প্রায় ৩ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৯১৬ দশমিক ৬৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এটি গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
চলতি বছরে স্বর্ণের দাম ৭০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, যা ১৯৭৯ সালের পর সবচেয়ে বড় বার্ষিক উত্থান। নিরাপদ বিনিয়োগ চাহিদা, যুক্তরাষ্ট্রের সুদহার কমার প্রত্যাশা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ব্যাপক ক্রয়, ডি-ডলারাইজেশন প্রবণতা এবং ইটিএফে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে এই উত্থান ঘটেছে। বাজারে ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র দুই দফা সুদহার কমাতে পারে।
একই সময়ে রুপার দাম ১৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, যা স্বর্ণকেও ছাড়িয়ে গেছে। শক্তিশালী বিনিয়োগ চাহিদা, যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ তালিকায় রুপার অন্তর্ভুক্তি এবং গতিনির্ভর কেনাকাটা এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের সামনে ভাঙচুর এবং উগ্রপন্থি গোষ্ঠীর বিক্ষোভ উন্মত্ততায় রূপ নিয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ ও দিপু দাস হত্যার প্রতিবাদে দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে এবং কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্য ও সমর্থকরা। তারা বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হুমকি, ধর্মীয় স্থান ভাঙচুর ও নিপীড়নের অভিযোগে প্রতিবাদ জানান। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে দিল্লি পুলিশ হাইকমিশনের বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করলেও ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভকারীরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়ায় তারা। পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় বিক্ষোভকারীদের। প্রতিবাদকারীরা দুটি বাধা অতিক্রম করে কূটনৈতিক ভবনের দিকে এগিয়ে যায়। সেখান থেকে কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ।
কলকাতার বেকবাগানে বাংলাদেশের উপদূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গত সোমবার তারা বিক্ষোভ করলেও মঙ্গলবার উন্মত্ত হয়ে ওঠে। এদিন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, এভিবিপি, হিন্দু জাগরণ মঞ্চসহ সঙ্ঘ পরিবারের একাধিক সংগঠনের ডাকে কলকাতায় বাংলাদেশের উপদূতাবাস অভিযানে জড়ো হন অনেকে। মিছিল করে তারা পৌঁছান বেকবাগান এলাকায়। তবে উপদূতাবাসের সামনে পৌঁছোনোর আগেই বিক্ষোভকারীদের আটকে দেয় পুলিশ। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের আটকাতেই রণক্ষেত্রের চেহারায় রূপ নেয় বেকবাগান এলাকা। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে, স্থানীয় এক কর্মকর্তার বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, বিক্ষোভকারীদের হাইকমিশন ভবন থেকে ৮০০ মিটার দূরে আটকে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে ১৫ হাজার পুলিশ সদস্যের ‘শক্তিশালী ফোর্স’ মোতায়েন করা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের হাইকমিশনে প্রবেশের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করার জন্য সরকারি বেশ কয়েকটি বাস ‘বাধা হিসেবে’ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।
এনডিটিভি জানায়, বিক্ষোভের খবরে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে ছিল এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ভবনের বাইরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। এলাকাটি তিন স্তরের ব্যারিকেডিং দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছে। এছাড়া ভিড় নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীর সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও, বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে ব্যারিকেড ভেঙে কূটনৈতিক প্রতিষ্ঠানটির দিকে এগিয়ে যেতে দেখা গেছে।
এনডিটিভি বলছে, পুলিশের সঙ্গে প্রতিবাদকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। প্রতিবাদকারীরা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার ধরে দিপু চন্দ্র দাসের জন্য ন্যায়বিচারের দাবি জানান।
এর আগে সোমবার শিলিগুড়ির বাংলাদেশের ভিসা সেন্টারের সামনেও হিন্দুত্ববাদীরা বিক্ষোভ দেখায়। ভিসা সেন্টার বন্ধের দাবি জানানো হয়।
এরআগে গত শনি ও রোববারও দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে পরপর দুদিনই বিক্ষোভ করা হয়। এর মধ্যে রোববার বিকেলে প্রায় দুই শতাধিক দুষ্কৃতিকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বাংলাদেশবিরোধী নানা স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে তারা সংঘবদ্ধভাবে হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ করে।
দুই দফা বিক্ষোভের জেরে ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে দেওয়া সব ধরনের সেবা ও ভিসা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ধরনের সহিংস ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে হাইকমিশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
এদিকে দিল্লিতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের সামনে উগ্রপন্থি গোষ্ঠীর বিক্ষোভ উন্মত্ততায় ভারতকে হুঁশিয়ারি শুনিয়েছেন পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) এক নেতা। খবর ইন্ডিয়া টুডের।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) এক ভিডিও বার্তায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএমএল) যুব শাখার নেতা কামরান সাঈদ উসমানি ভারতকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের ওপর যেকোনো আক্রমণের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং ক্ষেপণাস্ত্রগুলো জবাব দেবে। একই সঙ্গে অবিলম্বে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি সামরিক জোট গঠনেরও আহ্বান জানান তিনি।
কামরান সাঈদ উসমানি বলেন, যদি ভারত বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসনের ওপর আক্রমণ করে, খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশের দিকে তাকানোর সাহস করে, তাহলে মনে রাখবেন যে পাকিস্তানের জনগণ, পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র খুব বেশি দূরে নয়।
ভারতের ‘অখণ্ড ভারত আদর্শ’ বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টাকে পাকিস্তান সহ্য করবে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান বাংলাদেশকে ভারতের আদর্শিক আধিপত্যের দিকে ঠেলে দেওয়া মেনে নেয় না।
উসমানি দাবি করেন, পাকিস্তান অতীতে ভারতকে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছিল এবং প্রয়োজনে আবারও তা করতে পারে।
তিনি অভিযোগ করেন, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশকে বিরক্ত করছে এবং ভারত অখণ্ড ভারত আদর্শের অধীনে একটি হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে।
পৃথক ভিডিওতে, উসমানি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক সামরিক জোটের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তাব হলো পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের একটি সামরিক জোট গঠন করা উচিত - পাকিস্তানের বাংলাদেশে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করা উচিত, এবং বাংলাদেশেরও পাকিস্তানে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করা উচিত।
পিলএমএলের এই নেতা আরও প্রস্তাব করেন- পাকিস্তান ও বাংলাদেশের উচিত একে অপরকে তাদের নিজ নিজ ভূখণ্ডে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দেওয়া। তার মতে, এই ধরনের ব্যবস্থা কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ জোরদার করবে, যা চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর ( সিপিইসি) কে বাংলাদেশের বন্দরগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
উসমানি আরো যুক্তি দেন, পাকিস্তান-বাংলাদেশ সামরিক অংশীদারিত্ব আঞ্চলিক শক্তির গতিশীলতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করবে।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয় এবং ছায়ানট ভবনে হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন জাতিসংঘের মতামত ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান। এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বাংলাদেশে শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ‘মব’ হামলা (উচ্ছৃঙ্খল জনতার হামলা) অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সরকারকে অবশ্যই দ্রুত ও কার্যকরভাবে এসব হামলার তদন্ত করতে হবে এবং কালবিলম্ব না করে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের প্রখ্যাত তরুণ নেতা শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর (প্রকাশ্য দিবালোকে আততায়ীর গুলিতে আহত হয়ে তার মৃত্যু হয়) পর দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হলে দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো কার্যালয় এবং ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো হয়। এ ছাড়া নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপরও হামলা চালানো হয়।
জাতিসংঘের মতামত ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান বলেন, ‘আমি একজন অনুপ্রেরণাদায়ী নেতার পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে তার মৃত্যুর ঘোষণা আসার পর স্বাধীন সাংবাদিক ও শিল্পীদের ওপর যে পরিকল্পিত মব সহিংসতা চালানো হয়েছে, তারও কঠোর নিন্দা জানাচ্ছি।’
আইরিন খান আরও বলেন, ‘জনরোষকে সাংবাদিক ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যেকোনো সময়ের জন্যই বিপজ্জনক, বিশেষ করে এখন যেহেতু দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সংখ্যালঘুদের কণ্ঠস্বর ও ভিন্নমতের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনবে।’
আইরিন খান বলেন, ‘এই মব আক্রমণগুলো হাওয়া থেকে ঘটেনি, বরং বিচারহীনতা দূর করা এবং সংবাদমাধ্যম ও শিল্প-সাহিত্যের স্বাধীনতা বজায় রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার কারণেই এগুলো ঘটেছে।’ তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিশেষ করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় উভয় পক্ষের মাধ্যমেই অনলাইন ও অফলাইনে ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছে।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কয়েকশ সাংবাদিককে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং হত্যা, সন্ত্রাস ও অন্যান্য গুরুতর অপরাধের অস্পষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকের ক্ষেত্রেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দীর্ঘ সময় নিবর্তনমূলকভাবে আটকে রাখার ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, যার সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে গত সপ্তাহে। অন্তর্বর্তী সরকার মূলত বিচারহীনতার পুরোনো ধারাই অনুসরণ করেছে, জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে হামলা বা হুমকির বিষয়গুলোকে স্বাভাবিক হিসেবে গণ্য করছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় ও ভারি বৃষ্টির কবলে দেশটির জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় প্রধান শহরগুলোর রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে এবং কয়েক ডজন ফ্লাইট বাতিল ও বিলম্বিত হয়েছে।
সংবাদমাদ্যম ‘এরাবিয়া ইংলিশ’ লিখেছে, দুবাইয়ের এমিরেটস এয়ারলাইন তাদের ১৩টি ফ্লাইট বাতিল করেছে।
তাছাড়া, পার্শ্ববর্তী শারজাহ বিমানবন্দরেও অসংখ্য ফ্লাইট বাতিল ও সময় পরিবর্তনের খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাত থেকেই বজ্রবিদ্যুৎসহ শুরু হওয়া ভারি বৃষ্টিতে অনেক বাসিন্দার ঘুম ভেঙে যায়।
শুক্রবার সকালে শারজাহর প্রধান সড়কগুলো সম্পূর্ণভাবে পানির নিচে তলিয়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেক বাসিন্দাকে খালি পায়ে পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যায়।
পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তায় একটি সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে সাইকেলের চাকা প্রায় পুরোটা পানির নিচে ছিল।
এই দৃশ্য ২০২৪ সালের এপ্রিলের সেই ভয়াবহ বন্যার স্মৃতিই মনে করিয়ে দিয়েছে, যখন রেকর্ড বৃষ্টিতে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছিল।
বৃষ্টির পূর্বাভাস পেয়ে বৃহস্পতিবারই দুবাই পুলিশ বাসিন্দাদের ‘অত্যন্ত জরুরি’ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে অনুরোধ করেছিল। শুক্রবার সকাল থেকেই দুবাইয়ের রাস্তায় আটকে পড়া পানি সরানোর জন্য পাম্পিং ট্রাক নামাতে দেখা গেছে।
দুবাই বিমানবন্দরের ওয়েবসাইটে কয়েক ডজন ফ্লাইটে বিলম্ব হতে দেখা যায়। বিমানবন্দরের এক মুখপাত্র জানান, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বেশ কিছু ফ্লাইট বাতিল ও বিলম্বিত হয়েছে।
আমিরাতের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত দুবাই ও রাজধানী আবুধাবিসহ সারাদেশে বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছিল।
আমিরাতের পাশাপাশি পারস্য উপসাগরীয় অন্য দেশগুলোতেও ভারি বৃষ্টি হয়েছে। কাতারে বৃষ্টির কারণে বৃহস্পতিবার সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যকার ‘আরব কাপ’ ফুটবলের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটি স্থগিত ও পরবর্তীতে বাতিল ঘোষণা করা হয়।
আমিরাতের পাশাপাশি পারস্য উপসাগরীয় অন্য দেশগুলোতেও ভারি বৃষ্টি হয়েছে। কাতারে বৃষ্টির কারণে বৃহস্পতিবার সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যকার ‘আরব কাপ’ ফুটবলের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটি স্থগিত ও পরবর্তীতে বাতিল ঘোষণা করা হয়।
গত বছর আমিরাতে ৭৬ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছিল, যাতে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয় এবং কয়েক দিন ধরে দুবাই অচল হয়ে পড়েছিল।
‘ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন’ গ্রুপের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জীবাশ্ম জ্বালানি নিঃসরণের ফলে সৃষ্ট বিশ্ব উষ্ণায়ন সম্ভবত এই চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।