ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে গতকাল রোববার হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদোল্লাহিয়ানসহ সব আরোহী।
ইসলামি প্রজাতন্ত্রটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে আজ সোমবার প্রেসিডেন্টসহ অন্য আরোহীদের মৃত ঘোষণার খবরটি জানানো হয়। এমন বাস্তবতায় ইরানের অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবের দায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানিয়েছে প্রেস টিভি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় খুজেস্তান প্রদেশের দেজফুল শহরে ১৯৫৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন মোখবের। আন্তর্জাতিক আইনের ওপর পিএইডি ডিগ্রি আছে তার।
এর আগে আল জাজিরা জানায়, হেলিকপ্টার দুর্ঘটনাস্থলে ইরানের উদ্ধারকারীদের তৎপরতাদের মধ্যে অনেকের নজর ছিল ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবেরের দিকে।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের প্রাণহানি কিংবা দায়িত্ব পালনে অক্ষমতার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হয়। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট।
ভারতের বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে বড় ধরনের বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, রাজ্যে ভোটার তালিকা থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলিম এবং বিজেপিবিরোধী ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলগুলো বলছে, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি নির্বাচনের ফল নিজেদের অনুকূলে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় প্রায় ৬৫ লাখ ভোটারের নাম বাদ গেছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, এদের এক–তৃতীয়াংশ মৃত, বাকিরা অন্যত্র সরে গেছেন বা একাধিকবার তালিকাভুক্ত ছিলেন। তবে বিরোধীরা দাবি করছে, কমিশনের এই ব্যাখ্যা অসত্য। প্রমাণ হিসেবে তারা রাজধানী নয়াদিল্লিতে কয়েকজন জীবিত ব্যক্তিকে হাজির করেছে, যাদের তালিকায় মৃত দেখানো হয়েছিল।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বিষয়টিকে ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘আমি তো শুনলাম, আপনারা বেঁচে নেই?’
বিরোধীদের অভিযোগ, বাদ যাওয়া ভোটারদের বড় অংশই মুসলিম এবং বিজেপিবিরোধী ভোটার। বিহারের বিরোধী নেতা তেজস্বী যাদবও বলেছেন, অনুমানের ভিত্তিতে প্রতিটি আসনে ২৫–৩০ হাজার ভোটারের নাম কেটে ফেলা হয়েছে।
নিরপেক্ষ হিসাব অনুযায়ী দেখা গেছে, রাজ্যের দুই–তৃতীয়াংশ আসনে বাদ পড়া ভোটারের সংখ্যা গত নির্বাচনে বিজয়ের ব্যবধানের চেয়েও বেশি। তার ভাষায়, ‘আপনি কল্পনা করতে পারেন, জয়ের ব্যবধান খুবই কম ছিল।’
ভোটার তালিকা যাচাইয়ের প্রক্রিয়াতেও বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। পরিচয় প্রমাণে ১১ ধরনের নথি গ্রহণ করা হলেও প্রথমে সবচেয়ে প্রচলিত ভোটার আইডি কার্ড ও আধার কার্ডকে গ্রহণ করা হয়নি। অথচ মোদি সরকার গত এক দশকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে মোবাইল সিম কেনাসহ সবকিছুতেই আধার কার্ডকে অপরিহার্য করেছে। পরে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন বাধ্য হয় আধারকে বৈধ নথি হিসেবে যুক্ত করতে।
এত কিছুর মধ্যেও মাঠপর্যায়ে বহু কর্মকর্তা বলছেন, তাদের শুরু থেকেই আধার কার্ড নিতে হয়েছে, কারণ বহু মানুষের কাছে তালিকাভুক্ত অন্য নথি ছিল না। তাছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করলে শাস্তির মুখে পড়তে হতো। ফলে কিছু কর্মকর্তা অনুমানের ভিত্তিতে পারিবারিক বৃক্ষের ছবি বা পুরোনো তালিকা ধরে ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এতে করে পুরো প্রক্রিয়া আরও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, এই দ্রুত ও তড়িঘড়ি করা প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো মুসলিম ও বিজেপিবিরোধী ভোটারদের ভোটাধিকার খর্ব করা। রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকসহ বিভিন্ন রাজ্যের সাম্প্রতিক নির্বাচনে বিরোধী জোটের অপ্রত্যাশিত পরাজয়ও এই ধরনের অনিয়মের ফল।
অন্যদিকে বিজেপি এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে। দলের নেতা অনুরাগ ঠাকুর বলেছেন, আসলে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলো ভুয়া ভোটার যুক্ত করেছে। তিনি দাবি করেন, বিরোধীরা তাদের ‘অনুপ্রবেশকারীদের ভোটব্যাংক’ রক্ষা করতে চাইছে।
সাধারণ ভোটারদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। যারা রাজ্যের বাইরে কাজ করেন, যাদের ডিজিটাল জ্ঞান নেই বা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ সীমিত, তাদের পক্ষে নাম বাদ যাওয়ার অভিযোগ জানানো প্রায় অসম্ভব।
পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার বলেন, কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই তার স্ত্রীর নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি সংশোধনের চেষ্টা করছেন, কিন্তু আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন—অসচ্ছল মানুষদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ভুল সংশোধন সম্ভব হবে না।
নির্বাচন কমিশনের হিসাবে আগস্টের শেষ নাগাদ ৭ কোটি ২০ লাখ ভোটারের মধ্যে ৯৮ শতাংশ নথি জমা দিয়েছেন। কিন্তু যাচাইয়ের ক্ষেত্রে কোন নথি গ্রহণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে কমিশনের কর্মকর্তারা স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দেননি। বিরোধীদের অভিযোগ নিষ্পত্তি নিয়ে ইতিমধ্যে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট শুনানি শুরু করেছে এবং নভেম্বরে নির্বাচনের আগে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। তবে বিরোধীরা আশঙ্কা করছে, তত দিনে বিপুলসংখ্যক মুসলিম ও বিজেপিবিরোধী ভোটারের ভোটাধিকার খর্ব হয়ে যাবে।
ইসরায়েলের হামলা তীব্রতর হওয়ায় প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ গাজা শহর থেকে পালিয়ে গেছে। নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ইসরায়েলের আর্মি রেডিও একথা জানিয়েছে। গত রোববার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মূলত উত্তর গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে ৬৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৩৪৬ জন আহত হয়েছে। জেরুজালেম থেকে সিনহুয়া এই খবর জানিয়েছে।
এই হামলায় গাজা সিটিতে কমপক্ষে দু’টি বহুতল ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে, যার মধ্যে একটি ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনও রয়েছে। সেখানে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। এতে দেখা যাচ্ছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় ভবনটি বোমা হামলার শিকার হচ্ছে এবং ধসে পড়ছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে, তারা দু’টি বহুতল ভবনে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাস গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং নজরদারির জন্য এগুলো ব্যবহার করেছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা গাজা শহর দখল করার পরিকল্পনা করছে। হামাসকে ভেঙে ফেলা এবং এই গোষ্ঠীর হাতে আটক প্রায় ৫০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে সেখানে আক্রমণ শুরু হওয়ার আগে প্রায় দশ লাখ মানুষ বাস করত এবং আশ্রয় নিয়েছিল।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও রোববার জেরুজালেমে পৌঁছেছেন এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে পশ্চিম প্রাচীর পরিদর্শন করেছেন। দুজনের মধ্যে আলোচনার রয়েছে।
নেতানিয়াহু রুবিওকে ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রের একজন অসাধারণ বন্ধু’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, তার সফর ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের মধ্যে জোটের স্থিতিস্থাপকতা’ প্রদর্শন করেছে।
নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওর অধীনে এই জোট আগের চেয়েও শক্তিশালী’।
ইসরাইলের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে রুবিও বলেছেন, মঙ্গলবার কাতারে ইসরায়েলি হামলায় ট্রাম্প ‘খুশি নন’ তবে এটি ‘ইসরায়েলিদের সাথে আমাদের সম্পর্কের প্রকৃতি পরিবর্তন করবে না।’ তিনি আরো বলেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনার উপর কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে দুই দেশকে ‘আলোচনা করতে হবে’।
সোমবার রুবিওর পূর্ব জেরুজালেমের সিলওয়ানের ফিলিস্তিনি পাড়ায় বসতি স্থাপনকারীপন্থি এলাদ সংগঠন দ্বারা পরিচালিত একটি বসতি খনন স্থান পরিদর্শন করার কথা রয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাযেলি সামরিক অভিযানে ৬৪ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। যার ফলে ছিটমহলের বেশিরভাগ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।
ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, রোববারও ইসরাইল পশ্চিম গাজা শহরের আশপাশের এলাকায় তীব্র বিমান হামলা চালিয়েছে, যাতে কমপক্ষে সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা সিনহুয়াকে জানিয়েছে, বিমান হামলায় আল-কাওথার টাওয়ার, মুহান্না টাওয়ারের উপরের তলা এবং বেশ কয়েকটি বহুতল আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা আরো জানান, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য ‘ফালাস্তানা’ শিবিরকেও টার্গেট করেছে, যেখানে কয়েক ডজন তাঁবু, আশেপাশের বাড়ি এবং সুযোগ-সুবিধা, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, তেল আল-হাওয়া পাড়ার কমিউনিটি কলেজ এবং আশেপাশের আবাসিক ব্লক রয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সূত্র জানিয়েছে, তেল আল-হাওয়ার বার্সেলোনা পার্কের কাছে একটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলায় সাত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সিভিল ডিফেন্স দল ধ্বংসস্তূপ থেকে লোকজনকে উদ্ধারের জন্য কাজ করার সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনগুলোর ওপর দিয়ে ধোঁয়ার ঘন কুণ্ডলী উড়ে যাচ্ছে।
এক প্রেস বিবৃতিতে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের যুদ্ধবিমানগুলো ‘সামরিক অভিযান এবং গোয়েন্দা উদ্দেশে হামাস দ্বারা ব্যবহৃত স্থানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে’। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু হামলার আগে বাসিন্দাদের সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।
গাজায় হামাস-পরিচালিত সরকারি মিডিয়া অফিস ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার’ লক্ষ্যে আবাসিক টাওয়ার, স্কুল এবং বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ‘পরিকল্পিত বোমাবর্ষণ’ করার অভিযোগ করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
গত সপ্তাহে কাতারের রাজধানী দোহায় তাদের আলোচক প্রতিনিধি দলকে লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ এনে রোববার হামাস জানিয়েছে, তারা ইসরাইলের সাথে বন্দী বিনিময় আলোচনা স্থগিত করেছে।
হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাহির আল-নোনো এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যদি দেশের ভেতরে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি দলের ওপর হামলা করা হয়, তাহলে আলোচনা আর এগোতে পারবে না।’
হামাস জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার দোহার আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলা চালানো হয়, যখন তারা মার্কিন-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিলেন। হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা খলিল আল-হাইয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি বেঁচে গেলেও হামাসের পাঁচ সদস্য এবং একজন কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস।
আল-নোনো নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় উভয় প্রচেষ্টায় বাধা দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, গাজার আবাসিক টাওয়ারগুলোতে ইসরায়েলি হামলা তীব্রতর হলে সেখানে বন্দি ইসরায়েলিদের বিপদ হতে পারে।
তিনি বলেছেন, ‘একমাত্র যৌক্তিক সমাধান হল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই যুদ্ধ বন্ধের জন্য একটি সিদ্ধান্ত জারি করা এবং তা কার্যকর করা’।
গত রোববার রুবিওর ইসরাইল সফরের খবরও উড়িয়ে দিয়েছেন আল-নোনো। তিনি বলেছেন, হামাস ইসরায়েলের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন আশা করেনি।
কাতার নিউজ এজেন্সি (কিউএনএ) জানিয়েছে, কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল-থানি রোববার দোহায় বলেছেন, দোহায় ইসরাইলের সাম্প্রতিক আক্রমণ কাতার, মিসর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে তাদের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে বাধা দেবে না।
কিউএনএ জানিয়েছে, কাতারের প্রধানমন্ত্রী আরব ও ইসলামী দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে একটি প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে এই মন্তব্য করেন, যা জরুরি আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনের আগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মঙ্গলবার দোহায় ইসরাইলের হামলার বিষয়ে একটি খসড়া বিবৃতি নিয়ে আলোচনা করেন।
আল-থানি তার বক্তৃতায় জোর দিয়ে বলেছেন, ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের বৈধ অধিকার না পেলে এই অঞ্চলটি ব্যাপক শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জন করতে পারবে না।
এদিকে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের অবরোধ ভেঙে মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক কনভয় গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা (জিএসএফ) এর অংশ গ্রীক পালতোলা জাহাজ অক্সিগোনো (অক্সিজেন) রোববার সাইরোস দ্বীপ থেকে যাত্রা শুরু করেছে।
গ্রীক সংবাদপত্র এপোচি (এরা) এর সাংবাদিক এবং গ্রিক মিশনের সদস্য ভ্যাসিলিস রোগাস বলেন, এই মিশনের লক্ষ্য ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্দশা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং প্রায় দুই বছর আগে শুরু হওয়া সংঘাতের অবসান ঘটাতে সহায়তা করা।
জিএসএফ আয়োজকদের মতে, বিভিন্ন বয়স এবং পেশার গ্রিক কর্মীরা এরমোপোলিস বন্দর থেকে ভূমধ্যসাগরীয় আন্তর্জাতিক জলসীমায় প্রায় ৬০টি জাহাজে চড়ে গাজা অভিমুখে ৪০টিরও বেশি দেশের প্রায় ১,০০০ অন্যান্য কর্মীর সাথে যোগ দিতে রওনা হন।
আইভরি কোস্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন সাবেক ফার্স্ট লেডি সিমিওনি বাগবো। ‘লৌহমানবী’খ্যাত ৭৬ বছর বয়সী বিতর্কিত এই নারীনেত্রী তার সাবেক স্বামীর সঙ্গে একবার পালিয়ে বাংকারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। খেটেছেন জেলও। এত কিছুর পরও স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে। বিচ্ছেদের পর গড়ে তোলেন নতুন দল। আগামী ২৫ অক্টোবরের নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আলাসানে উয়াতারার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হচ্ছে তাকে।
২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন সিমিওনি বাগবোর সাবেক স্বামী লরেন বাগবো। কঠোর ব্যক্তিত্বের কারণে তখন থেকেই সিমিওনি ‘আয়রন লেডি’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সমর্থকেরা ‘মমতাময়ী’ বললেও অন্যদের কাছে তিনি ছিলেন ভয়ংকর এক কর্তৃত্বের প্রতীক।
সত্তরের দশকে শিক্ষকতা করতেন সিমিওনি। ইতিহাস ও ভাষাতত্ত্বে স্নাতক এই নারী সক্রিয় ছিলেন দেশটির শ্রমিক আন্দোলনে। সেই সূত্রেই পরিচয় লরেনের সঙ্গে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স হউফুয়ের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে একাধিকবার কারাবন্দিও হয়েছিলেন তারা।
১৯৮২ সালে লরেন বাগবোর সঙ্গে যৌথভাবে আইভরিয়ান পপুলার ফ্রন্ট (এফপিআই) নামে একটি দল গঠন করেন সিমিওনি। ২০০০ সালে লরেন বাগবো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে সিমিওনি হয়ে ওঠেন রাষ্ট্রক্ষমতার অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক।
বাগবো দম্পতির শাসনকালে দেশটিতে বিভাজন প্রকট হতে থাকে। শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। বিদ্রোহীদের দমন, নির্বাচনী জালিয়াতি, বিরোধী মত দমন—সবকিছুতেই সিমিওনির প্রভাব ছিল স্পষ্ট। ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে নানাভাবে চেষ্টা চালান লরেন বাগবো। নানা অজুহাতে নির্বাচন পিছিয়ে শেষে ২০১০ সালে নির্বাচন দেন। পরাজিত হয়েও ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানালে শুরু হয় ভয়াবহ সংঘাত। প্রাণ হারান তিন হাজার মানুষ।
উয়াতারার সমর্থকেরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ঘিরে ফেললে স্বামীর সঙ্গে বাংকারে আশ্রয় নেন সিমিওনি। সেখান থেকেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ২০ বছরের কারাদণ্ড হয় সিমিওনির। তবে ২০১৩ সালে ‘জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে’ প্রেসিডেন্ট উয়াতারা তাকে সাধারণ ক্ষমা করে দিলে মুক্ত হন।
গৃহযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ২০১২ সালে বাগবো দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি)। সিমিওনির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করা হলেও লরেনকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত এই আদালতের হেফাজতে কাটাতে হয় সাত বছর। ২০২১ সালে লরেন দেশে ফিরেই সিমিওনির সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা দেন।
বিচ্ছেদের পরও সিমিওনি দমে যাননি। নিজের একটি রাজনৈতিক দল গঠনে কাজ শুরু করেন। সাবেক স্বামীর দল এফপিআই থেকে আলাদা হয়ে গড়ে তোলেন মুভমেন্ট অব ক্যাপাবল জেনারেশনস (এমজিসি) নামের নতুন দল। এবার সেই দল থেকেই তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন। তবে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় লরেন বাগবো এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। মনে করা হচ্ছে, সাবেক স্বামীর সমর্থকদের বড় অংশের ভোট পেতে পারেন সিমিওনি। জয়ী হলে তিনিই হবেন আইভরি কোস্টের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট।
লন্ডনের সেন্ট্রাল এলাকায় অনুষ্ঠিত এক বিশাল অভিবাসনবিরোধী সমাবেশে অংশ নিয়েছেন এক লাখেরও বেশি মানুষ। গত শনিবারের এই সমাবেশে ইংল্যান্ড ও ব্রিটেনের পতাকা হাতে বিক্ষোভকারীরা পদযাত্রা করেন এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যে সংঘটিত অন্যতম বৃহত্তম ডানপন্থি বিক্ষোভ হিসেবে একে বিবেচনা করা হচ্ছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ডানপন্থি কর্মী টমি রবিনসনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইউনাইট দ্য কিংডম’ শীর্ষক এই পদযাত্রায় প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ অংশ নেন। বিপরীতে, একই সময়ে অনুষ্ঠিত ‘স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম’ শীর্ষক পাল্টা সমাবেশে প্রায় ৫ হাজার মানুষ যোগ দেন।
সমাবেশে দেশজুড়ে মানুষ ট্রেন ও বাসে করে লন্ডনে আসেন। শুরুতে এটিকে ‘বাকস্বাধীনতার উৎসব’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হলেও সমাবেশ দ্রুত বর্ণবাদী ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও মুসলিমবিদ্বেষী ঘৃণা-ভাষণে রূপ নেয়। পুলিশের ধারণার চেয়েও বেশি মানুষ অংশ নেওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তীব্র সহিংসতার শিকার হয়। পুলিশের ওপর লাথি, ঘুষি, বোতল, ফ্লেয়ার ও বিভিন্ন বস্তু নিক্ষেপ করা হয়। এতে ২৬ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন, যাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। ঘটনাস্থল থেকে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে সমাবেশে যোগ দিয়ে মার্কিন ব্যবসায়ী ইলন মাস্ক ব্রিটেনে সরকার পরিবর্তনের আহ্বান জানান। তিনি রবিনসনসহ অন্যান্য কট্টর ডানপন্থি নেতাদের সমর্থন দেন এবং অভিযোগ করেন যে, ব্রিটিশ জনগণ এখন আর তাদের বাকস্বাধীনতা প্রয়োগে নিরাপদ বোধ করছেন না। তিনি বলেন, ‘ব্রিটেনের ক্ষয় এখন দ্রুতগতিতে বাড়ছে। আগে এটি ছিল ধীর প্রক্রিয়া, কিন্তু ব্যাপক ও নিয়ন্ত্রণহীন অভিবাসন এর ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করছে।’
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ফরাসি কট্টর ডানপন্থি রাজনীতিবিদ এরিক জেমুরও। তিনি দাবি করেন, ‘দক্ষিণ ও মুসলিম সংস্কৃতি থেকে আসা মানুষের মাধ্যমে ইউরোপীয় জনসংখ্যার প্রতিস্থাপন ঘটছে। আমাদের সাবেক উপনিবেশগুলো এখন আমাদেরকেই উপনিবেশে পরিণত করছে।’
বিক্ষোভকারীরা এ সময় অভিবাসীদের জন্য ব্যবহৃত হোটেলের বাইরেও সমাবেশ করেন। তাদের হাতে ছিল ইউনিয়ন পতাকা, সেন্ট জর্জ ক্রসের লাল-সাদা পতাকা, পাশাপাশি মার্কিন ও ইসরায়েলি পতাকা। অনেকেই মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ ক্যাপ পরে ছিলেন। তারা প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডে লিখে আনেন—‘ওদের বাড়ি ফেরত পাঠাও।’
সমাবেশে একটি গান গাওয়া হয়, যার কথায় ছিল, ‘পশ্চিমকে মধ্যপ্রাচ্যের মতো করে তোলা হচ্ছে।’ পরে মুসলিম ব্রাদারহুড, ইসলামিক স্টেট ও ফিলিস্তিনের পতাকা প্রদর্শিত হলে জনতা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। প্রতিটি পতাকা ছিঁড়ে ফেলা হলে বিক্ষোভকারীরা উল্লাস প্রকাশ করে।
রবিনসন, যার প্রকৃত নাম স্টিফেন ইয়াক্সলে-লেনন, মঞ্চে উঠে ঘোষণা দেন, ‘ব্রিটেন অবশেষে জেগে উঠেছে, এই আন্দোলন কোনোদিন শেষ হবে না।’ তিনি নিজেকে রাষ্ট্রের অনিয়ম উন্মোচনকারী সাংবাদিক হিসেবে দাবি করলেও তার বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধের রেকর্ড রয়েছে।
সমাবেশে যোগ দেওয়া এক সমর্থক সান্ড্রা মিচেল বলেন, ‘তাদের অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে হবে।’ অন্যদিকে পাল্টা বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষক বেন হেচিন মন্তব্য করেন, ‘ঘৃণার ধারণা আমাদের বিভক্ত করছে। আমরা যত বেশি মানুষকে স্বাগত জানাব, দেশ হিসেবে আমরা তত শক্তিশালী হব।’
উল্লেখ্য, অভিবাসন এখন ব্রিটেনের রাজনীতির কেন্দ্রীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। দুর্বল অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগকেও ছাপিয়ে গেছে এ বিতর্ক। চলতি বছর এ পর্যন্ত ২৮ হাজারের বেশি অভিবাসী ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন, যা রেকর্ডসংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, তার সরকার দেশে সন্ত্রাস মোকাবিলায় ‘পূর্ণ শক্তি’ ব্যবহার করবে। সম্প্রতি খাইবার পাখতুনখাওয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলাকালে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের হামলায় ১৯ সেনা নিহত হওয়ার পর গত শনিবার এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম রেডিও পাকিস্তান এ খবর দিয়েছে।
এর আগে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বলেছিল, খাইবার পাখতুনখাওয়ার দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধে ১২ সেনা নিহত হয়েছেন। আর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন ১৩ জন।
আইএসপিআর আরও বলেছে, ১০ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর দুই জায়গায় সংঘর্ষে ‘ভারতের মদদপুষ্ট ফিতনা আল খাওয়ারিজ’ গোষ্ঠীর ৩৫ সদস্য নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ওই ১৩ জনও আছেন।
পরে আইএসপিআর জানায়, গত বৃহস্পতিবার লোয়ার দির এলাকায় আরও ৭ সেনা নিহত হয়েছেন এবং সেনারা আরও ১০ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছেন।
রাষ্ট্রীয়ভাবে পাকিস্তান সরকার নিষিদ্ধ সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) বোঝাতে ‘ফিতনা আল খাওয়ারিজ’ শব্দ ব্যবহার করে। আবার বেলুচিস্তানভিত্তিক গোষ্ঠীগুলোকে তারা ‘ফিতনা আল হিন্দুস্তান’ বলে উল্লেখ করে থাকে। এর মধ্য দিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে সন্ত্রাস ও অস্থিতিশীলতা তৈরির অভিযোগ তুলে ধরে তারা।
রেডিও পাকিস্তানের খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির পরে বান্নু এলাকা সফর করেন। সেখানে তারা সন্ত্রাসবিরোধী উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন। তাঁরা দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে নিহত সেনাদের জানাজাতেও অংশ নেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শাহবাজ শরিফ আবারও দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন যে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই পূর্ণ শক্তি দিয়েই চালিয়ে যাওয়া হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, এ ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।
শাহবাজের অভিযোগ, পাকিস্তানে হামলাকারীদের নেতা ও পৃষ্ঠপোষকেরা আফগান ভূমিতে অবস্থান করছেন এবং ভারতের সমর্থন পাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কোনো ধরনের রাজনীতি বা বিভ্রান্তিকর প্রচারণা পাকিস্তান মেনে নেবে না। যারা সন্ত্রাসীদের সহায়তা করে, তাদের হয়ে সাফাই গায় কিংবা ভারতের ছায়ায় থেকে কাজ করে, তারা মূলত পাকিস্তানের শত্রু এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাহবাজ শরিফ খাইবার পাখতুনখাওয়ার জনগণসহ গোটা জাতির ঐক্য ও দৃঢ়তার প্রশংসা করেন। তিনি আশ্বাস দেন, সন্ত্রাস মোকাবিলায় কার্যকর জবাব নিশ্চিত করতে সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেবে।
সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানে, বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়েছে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের সঙ্গে সরকারের যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়। সংগঠনটি তখন নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে হামলা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।
চলতি মাসের শুরুতে বান্নু এলাকায় আধা সামরিক বাহিনী ‘ফেডারেল কনস্ট্যাবুলারির (এফসি) সদর দপ্তরে হামলার চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। এতে পাঁচ সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী ও ছয় সেনা নিহত হন। জবাবে সেনাবাহিনী সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করেছে।
কাতারের রাজধানী দোহায় সম্প্রতি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। চাঞ্চল্যকর এই হামলায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে এবং হামলার সময় সৌদি আরবের ওপর দিয়ে দোহায় মিসাইল নিক্ষেপ করেছিল ইসরায়েল।
তবে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো পার্শ্ববর্তী কোনো আরব দেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে শনিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী লোহিত সাগর থেকে পাঠানো যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে কাতারের দোহায় অবস্থানরত হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। গত শুক্রবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, লোহিত সাগরের আকাশসীমায় ইসরায়েলি বিমানবাহিনী (আইএএফ) আটটি এফ-১৫ এবং চারটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছিল। তবে কোনো ইসরায়েলি বিমান পার্শ্ববর্তী কোনো আরব দেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের পাঠানো এক সাংবাদিক হামলার শিকার দোহার ভবনটি ঘুরে দেখেছেন এবং জানিয়েছেন, ভবনের মধ্যবর্তী তলা ও নিচতলার ডানদিকের অংশ প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কাতার আরব উপদ্বীপের অন্য পাশে থাকায় ইসরায়েল দোহায় আঘাত হানতে দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবহার করে। মার্কিন কর্মকর্তারা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানান, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান সৌদি আরবের ওপর দিয়ে এই মিসাইল মহাকাশে পাঠায় এবং তা দোহায় গিয়ে আঘাত হানে।
তারা বলেন, মহাকাশভিত্তিক মার্কিন সেন্সর মিসাইল উৎক্ষেপণের তাপ ও গতিপথ শনাক্ত করে নিশ্চিত হয় যে এর লক্ষ্যবস্তু ছিল দোহা। এভাবে মহাকাশ দিয়ে মিসাইল পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল সৌদি আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ এড়ানো।
কাতারে হামলার পরপরই রিয়াদ এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে, তবে নিজেদের আকাশসীমার ওপর দিয়ে মিসাইল নিক্ষেপের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেনি সৌদি আরব। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ইসরায়েলের অপরাধমূলক আগ্রাসন অব্যাহত রাখা আন্তর্জাতিক আইন ও সব ধরনের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের নগ্ন লঙ্ঘন।’
প্রতিবেদনে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, কাতারে হামলার বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। হামলার কয়েক মিনিট আগে ইসরায়েলি সেনারা মার্কিন সেনাবাহিনীকে এই বিষয়ে জানায়। এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘সেসময় এই হামলা প্রত্যাহার বা থামানোর কোনো উপায় তখন আর ছিল না।’
এদিকে হামাস শুক্রবার দাবি করে, হামলায় তাদের ভারপ্রাপ্ত নেতা খলিল আল-হাইয়া বেঁচে গেছেন। এর আগের দিন একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা জেরুজালেম পোস্ট-কে জানান, এই হামলায় কোনও শীর্ষ হামাস নেতা নিহত না হওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে।
রাশিয়ার ব্যাপক আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনে গুচ্ছ বোমা হামলায় ১ হাজার ২শ’ জনেরও বেশি বেসামরিক লোক হতাহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সোমবার একটি পর্যবেক্ষক সংস্থার বরাত দিয়ে জেনেভা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
ক্লাস্টার মিউনিশন কোয়ালিশন (সিএমসি) তার বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া তার পশ্চিমা প্রতিবেশীর ওপর অভিযান সম্প্রসারণের পর থেকে এক বছরে ইউক্রেনে গুচ্ছ বোমা হামলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক হতাহতের ঘটনা রেকর্ড করেছে।
রাশিয়া যুদ্ধের প্রথম দিন থেকেই ব্যাপকভাবে নিষিদ্ধ অস্ত্রগুলো ‘ব্যাপকভাবে’ ব্যবহার করেছে।
বার্ষিক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ইউক্রেনও অস্ত্রগুলো ব্যবহার করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী ৩১৪টির মধ্যে ইউক্রেনে কমপক্ষে ১৯৩টি ক্লাস্টার অস্ত্রের হতাহতের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনে মোট এক হাজার ২শ’ জনেরও বেশি ক্লাস্টার অস্ত্রের হতাহতের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এই হতাহতের অধিকাংশই ২০২২ সালে ঘটেছে।
কিন্তু প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, এই সংখ্যাটি অবশ্যই একটি নাটকীয় অবমূল্যায়ন। গত বছরই ইউক্রেনে প্রায় ৪০টি ক্লাস্টার বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে যেখানে হতাহতের সংখ্যা দেওয়া হয়নি।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি ‘দ্বৈত নীতি’ বন্ধ করে ইসরাইলকে ‘অপরাধের’ জন্য শাস্তি দিতে রোববার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
দোহায় হামাস নেতাদের ওপর ইসরাইলের বিমান হামলার প্রতিক্রিয়ায় ডাকা জরুরি শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত প্রস্তুতিমূলক বৈঠকের বক্তৃতায় এ আহ্বান জানান আল থানি।
এক মার্কিন মিত্রের ভূখণ্ডে অন্য মার্কিন মিত্রের দ্বারা পরিচালিত এই মারাত্মক হামলা সমালোচনার ঝড় তুলেছে। যার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র নিন্দাও রয়েছে। তবুও তিনি ইসরাইলের প্রতি সমর্থন প্রদর্শনের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে ইসরাইলে পাঠিয়েছেন।
দোহা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, আজ সোমবার আরব ও ইসলামী নেতাদের জরুরি বৈঠকটি উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যের এক স্পষ্ট প্রদর্শন হিসেবে কাজ করবে।
এ বৈঠক ইসরাইলের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রটি ইতোমধ্যেই গাজায় যুদ্ধ এবং এর ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ মানবিক সংকটের অবসান ঘটাতে ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হচ্ছে।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য দ্বৈত নীতি অবলম্বন বন্ধ করে, ইসরাইলকে তার সব অপরাধের জন্য শাস্তি দেওয়ার সময় এসেছে আর ইসরাইলকেও বুঝতে হবে, আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে তারা যে গণহত্যামূলক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, সেটি কখনোই সফল হবে না। ইসরাইলের এই অমানবিক দমন-পীড়নের লক্ষ্য হলো— ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে উৎখাত করা।’
তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা ও ইসরাইলকে জবাবদিহির আওতায় আনতে ব্যর্থ হওয়া, দেশটিকে সাধারণ ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর এই অমানবিক দমন অভিযান অব্যাহত রাখতে উৎসাহিত করছে।
আজ সোমবারের এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন— ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান, ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সম্মেলনের প্রাক্কালে গতকাল রোববার দোহায় পৌঁছেছেন।
সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এই সমাবেশে যোগ দেবেন কি-না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও তিনি প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সংহতির প্রদর্শনের জন্য এই সপ্তাহের শুরুতে কাতার সফর করেছেন।
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিতে প্রস্তুত। তবে সেক্ষেত্রে শর্ত হলো— ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোকে আগে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে হবে। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ন্যাটো দেশগুলো একই পদক্ষেপ নিতে রাজি হলে এবং তেল কেনা বন্ধ করলে তিনি রাশিয়ার ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেবেন।
আগেও মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু রাশিয়া সময়সীমা ও সতর্কবার্তা উপেক্ষা করলেও এখনো কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেননি তিনি।
রাশিয়ার তেল কেনার বিষয়টিকে অবিশ্বাস্য বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। একইসঙ্গে ন্যাটো দেশগুলোকে চীনের ওপর ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করার পরামর্শ দেন। তার দাবি, এতে রাশিয়ার ওপর চীনের কঠিন নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে পড়বে।
ন্যাটোর উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, আমি প্রস্তুত, আপনারা কখন প্রস্তুত। শুধু বলুন, কবে? কয়েকটি দেশের রাশিয়ার তেল কেনা সত্যিই বিস্ময়কর! এতে রাশিয়ার সঙ্গে আপনাদের দর-কষাকষির ক্ষমতা ও প্রভাব মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে।
ট্রাম্প দাবি করেন, রুশ জ্বালানি কেনা বন্ধ এবং চীনের ওপর চড়া শুল্ক আরোপ সংঘাত দ্রুত শেষ করতে অত্যন্ত সহায়ক হবে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউরোপের জ্বালানি নির্ভরতা অনেকটাই কমেছে। ২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ৪৫ শতাংশ গ্যাস আসত রাশিয়া থেকে। এ বছর তা কমে প্রায় ১৩ শতাংশে নামবে বলে অনুমান। তবে ট্রাম্পের মতে, এ হার এখনও যথেষ্ট নয়।
ন্যাটো–রাশিয়া উত্তেজনার মধ্যেই ট্রাম্পের এই বার্তা এল। বুধবার ডজনখানেক রুশ ড্রোন পোল্যান্ডের আকাশসীমায় প্রবেশ করে। পোল্যান্ড বলছে, এটি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে। তবে মস্কোর দাবি, তাদের পোল্যান্ডের স্থাপনা লক্ষ্য করার কোনো পরিকল্পনা নেই।
ন্যাটোর পূর্ব সীমান্ত শক্তিশালী করতে ডেনমার্ক, ফ্রান্স ও জার্মানি নতুন মিশনে যোগ দিয়েছে এবং সামরিক সরঞ্জাম পূর্বদিকে সরিয়ে নিচ্ছে। সূত্র: বিবিসি
আফগান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে সন্ত্রাসী হামলায় ১২ জন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি পাহাড়ি বাদার এলাকায় যাওয়ার সময় হামলার শিকার হয়।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তীব্র গোলাগুলির পর ১২ জন সেনা এবং ১৩ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। সেই সঙ্গে কমপক্ষে চারজন আহত হয়েছে।
পাকিস্তানি তালেবান নামক একটি জিহাদিগোষ্ঠী ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, সৈন্যদের কাছ থেকে অস্ত্র এবং ড্রোনও দখলে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভোরের দিকে হামলার পর তারা কয়েক ঘণ্টা ধরে আকাশে হেলিকপ্টার দেখতে পেয়েছে।
পাকিস্তানি তালেবানের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত এই এলাকায় সাধারণত সামরিক যান চলাচলের আগে কারফিউ জারি করা হয়। পথগুলো স্ক্যান করা হয়।
ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে, ভারতের সহায়তায় আফগানের তালেবান প্রশাসন পাকিস্তানি তালেবানদের আশ্রয় দিচ্ছে। কাবুল এবং নয়াদিল্লির এই অভিযোগ অস্বীকার করে। সশস্ত্র গ্রুপটি আফগান তালেবান থেকে অনুপ্রাণিত।
২০২১ সালে আফগান তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাকিস্তানে এই গোষ্ঠীটি নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা জোরদার করেছে। ফলে সেনাসহ শত শত বেসামরিক লোক প্রাণ হারিয়েছেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিংবা সাইবারস্পেসে আটকে থাকার চেয়ে মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন উদার মানুষ হওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবার্গে এক কালচারস অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি দ্রুত বিকাশমান প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ভবিষ্যতের বিশ্বে মানুষের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।
পুতিন বলেন, মানবতার ভবিষ্যৎ তাদের হাতে, যারা ভালোবাসা, বন্ধুত্ব এবং পরিবারকে মূল্য দেয়- সাইবারস্পেসে আটকে থাকা অহংকারী একাকীদের চেয়ে।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ভবিষ্যতের পৃথিবী অহংকারীদের জগৎ নয়, যারা সম্পূর্ণরূপে সাইবারস্পেসে ডুবে আছে। ভবিষ্যতের পৃথিবী ‘নিজের জন্য’ নীতিতে বিশ্বাসী একাকী লোকদেরও নয়, বরং এমন লোকদের জগৎ যারা এখনো ভালোবাসা এবং বন্ধুত্বকে মূল্য দেয়, তাদের প্রিয়জনদের লালন করে, সমাজের সঙ্গে তাদের অবিচ্ছেদ্য সংযোগ এবং এর প্রতি দায়িত্ব বোঝে।
তিনি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেক তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং প্রবণতা ভবিষ্যদ্বাণী করে। তবে আমি বিশ্বাস করি বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও সামাজিক ক্ষেত্রে আবিষ্কার এবং অগ্রগতির উপযোগী মৌলিক সমাধানগুলো শুধু মানুষের অনুপ্রেরণা, প্রতিভা এবং স্রষ্টার অনুপ্রেরণা ও প্রতিভার মাধ্যমেই দেওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, মানবজাতিকে এই নতুন বাস্তবতাকে ‘অধিগ্রহণ’ করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, রাশিয়ান পরিচয় এবং জাতীয় চরিত্র উভয়ই ‘পরিবারের শেকড়ে প্রোথিত।’
পুতিন গত বছরের গোড়ার দিকে ‘পরিবার’ নামে একটি জাতীয় প্রকল্প চালু করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর লক্ষ্য ছিল- শিশুসহ পরিবারগুলো সহায়তা করা এবং দেশে জন্মহার বাড়ানো।
মস্কো তখন থেকে বেশ কিছু ব্যবস্থা চালু করেছে, যেমন- পরিবারে প্রতিটি সন্তানের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে বড় অঙ্কের অর্থ প্রদান, বিস্তৃত মাতৃত্বকালীন সুবিধা এবং পরিবারগুলোতে চলমান আর্থিক সহায়তা।
গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক চিফ অব স্টাফ হারজি হালেভি সম্প্রতি এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি স্বীকার করেন, সামরিক অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি বা তার অধীনস্থরা কোনো আইনি পরামর্শের তোয়াক্কা করেননি।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানায়, যুদ্ধের প্রথম ১৭ মাস ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেসের (আইডিএফ) নেতৃত্ব দিয়ে গত মার্চে পদত্যাগ করেন হালেভি। সম্প্রতি দক্ষিণ ইসরায়েলের এক কমিউনিটি সভায় তিনি বলেন, গাজার ২২ লাখ মানুষের মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা প্রায় ‘২ লাখেরও বেশি মানুষ’। তার এ অনুমান গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যের কাছাকাছি, যা এতদিন ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ‘হামাসের প্রোপাগান্ডা’ বলে উড়িয়ে দিত। তবে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো বরাবরই এই তথ্যকে নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ৬৪ হাজার ৭১৮ জন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫৯ জন। এছাড়া বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত শুক্রবারও ইসরায়েলি হামলায়, বিশেষ করে গাজা সিটির আশপাশে, আরও ৪০ জন নিহত হয়েছেন।
ফাঁস হওয়া ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত নিহতদের ৮০ শতাংশের বেশি বেসামরিক নাগরিক। অন্যদিকে ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে প্রাণ হারান প্রায় ১ হাজার ২০০ জন, যার মধ্যে ৮১৫ জন ছিলেন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিক। নিহতদের অনেকেই সামরিক সদস্য ছিলেন।
হালেভি সভায় বলেন, ‘এটি কোনো কোমল যুদ্ধ নয়। আমরা প্রথম মিনিট থেকেই গ্লাভস খুলে ফেলেছি।’ তার দাবি, ৭ অক্টোবরের আগেই ইসরায়েলের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। যদিও তিনি জোর দিয়ে বলেন, আইডিএফ আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সীমার মধ্যেই কাজ করে, তবুও স্বীকার করেন যে তিনি কখনোই আইনি পরামর্শকে গুরুত্ব দেননি।
তার ভাষায়, ‘কেউ আমাকে একবারও থামায়নি। একবারও না। সামরিক অ্যাডভোকেট জেনারেল ইফাত তোমের-ইয়েরুশালমি, যার আমাকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতাও নেই, তিনিও না।’
তবে ওয়াইনেট নিউজে প্রকাশিত রেকর্ডিংয়ে হালেভির এই বক্তব্য ছিল না। পত্রিকাটির বরাত দিয়ে আরও জানানো হয়, হালেভির দৃষ্টিতে সামরিক আইনজীবীদের আসল কাজ হলো- আইডিএফের কর্মকাণ্ডকে বৈধ হিসেবে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করা।
এই মন্তব্য নিয়ে দ্য গার্ডিয়ান আইডিএফের সঙ্গে যোগাযোগ করলে গত শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এদিকে ইসরায়েলি মানবাধিকার আইনজীবী মাইকেল সফার্দ বলেন, হালেভির বক্তব্য নিশ্চিত করেছে যে সামরিক আইনি উপদেষ্টারা কার্যত ‘রাবার স্ট্যাম্প’ হিসেবে কাজ করেন।
এর আগে হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়, হালেভির উত্তরসূরি বর্তমান আইডিএফ চিফ অব স্টাফ ইয়াল জামিরও সামরিক অ্যাডভোকেট জেনারেলের আইনি পরামর্শ উপেক্ষা করেছেন। তোমের-ইয়েরুশালমি জানিয়েছিলেন, গাজা সিটির প্রায় ১০ লাখ মানুষকে দক্ষিণে সরে যেতে বলার আগে সেখানে পর্যাপ্ত আশ্রয় ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিত। কিন্তু সেই পরামর্শ উপেক্ষা করেই হামলা চালানো হয়। গত শুক্রবারের ইসরায়েলি হামলায় নিহত অনেক ফিলিস্তিনি সম্ভবত ওইসব মানুষ, যারা দক্ষিণে যেতে পারেনি বা ঘরবাড়ি ছাড়তে অনিচ্ছুক ছিল- কারণ দক্ষিণেও ইসরায়েলের বোমা হামলার ঝুঁকি থেকে যায়।
‘হামাসমুক্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন’ গঠনের প্রস্তাব পাস জাতিসংঘে
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে একটি প্রস্তাব বিপুল ভোটে অনুমোদন পেয়েছে। ইসরায়েল এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করলেও জাতিসংঘ তা কার্যকর রাখতে অনঢ় রয়েছে। তবে ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেছে হামাস। খবর রয়টার্সের। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এ ভোটাভুটি হয়।
প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে সাধারণ পরিষদের ১৪২টি দেশ। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে মাত্র ১০টি দেশ। তাদের মধ্যে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে। ভোটদানে বিরত ছিল ১২টি দেশ। সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল ফ্রান্স ও সৌদি আরব।
এই প্রস্তাবকে ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’ বলা হচ্ছে। ঘোষণায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলা যেমন- নিন্দনীয়, তেমনি গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বোমাবর্ষণ, অবরোধ ও অনাহারও অমানবিক। এতে সৃষ্ট ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তুলে ধরে তা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের জন্য সুনির্দিষ্ট, সময়সীমাসাপেক্ষ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগের দিনই ঘোষণা দেন, ফিলিস্তিন কখনোই স্বাধীন রাষ্ট্র হবে না। জাতিসংঘের ঘোষণাও প্রত্যাখ্যান করে তেল আবিব।
গত শুক্রবার ভোটের পর ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওরেন মারমোরস্টেইন বলেন, ঘোষণায় হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ না করাই প্রমাণ করে যে সাধারণ পরিষদ বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন এক রাজনৈতিক সার্কাসে পরিণত হয়েছে।
যদিও, ইসরায়েলের প্রত্যাখ্যান উপেক্ষা করে নিজেদের ঘোষণায় অনড় থাকার সিদ্ধান্ত জানায় জাতিসংঘ।
তবে, হামাস এই ঘোষণা অনুমোদনকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা এটিকে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। ভোটের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর উচ্চপর্যায়ের সাধারণ পরিষদ বৈঠকে কিছু দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারে বলেও জানায় গণমাধ্যম।
দেশটির একটি জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠীর বরাত দিয়ে শনিবার বার্তা সংস্থা এএফপি একথা জানিয়েছে।
আরাকান আর্মি (এএ) রাখাইনের নিয়ন্ত্রণের জন্য মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সেনাবাহিনীর সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে।
তারা গত বছর সেখানকার বেশ কিছু ভূখণ্ড দখল করে নেয়।
২০২১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চি’র বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করার পর থেকে মিয়ানমারে যে রক্তাক্ত বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক সশস্ত্র বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়, রাখাইন লড়াই সেগুলোর অন্যতম।
এএ শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রাম-এ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার মধ্যরাতের ঠিক পরেই কিয়াউকতাও শহরের দুটি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে হামলায় ১৫ থেকে ২১ বছর বয়সী ১৯ জন শিক্ষার্থী নিহত ও আরও ২২ জন আহত হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নিরীহ শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর জন্য আমরা নিহতদের পরিবারের মতোই দুঃখিত ।’
তারা হামলার জন্য জান্তাকে দায়ী করেছে, কিন্তু ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য জান্তার মুখপাত্রের কাছে এএফপি’র আহ্বানের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাও জানিয়েছে, একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ঘুমন্ত অবস্থায় থাকাকালিন একটি জান্তা যুদ্ধবিমান সেখানে দুটি ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমা ফেলেছে।
ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে, ‘নৃশংস হামলার’ নিন্দা জানিয়েছে।
এএফপি কিয়াউকতাওয়ের আশপাশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। সেখানে ইন্টারনেট ও ফোন পরিষেবা অচল রয়েছে।
মিয়ানমারের বিভিন্ন ফ্রন্টে সেনাবাহিনী তাদের শাসনের বিরোধিতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হিমশিম খাচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত বেসামরিক সম্প্রদায়ের ওপর বিমান ও কামান হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।