বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
৩০ আশ্বিন ১৪৩২

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চান আইসিসি

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: সংগৃহীত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত : ২০ মে, ২০২৪ ২১:৫৮

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান সিএনএনকে জানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তিনি হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাইছেন। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

খান সিএনএনকে বলেন, হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার, আল কাসেম ব্রিগেডের নেতা মোহাম্মদ দিয়াব ইব্রাহিম আল-মাসরি, হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়ার বিরুদ্ধে ‘নির্মূল, হত্যা, জিম্মি, ধর্ষণ এবং আটক অবস্থায় যৌন নিপীড়ন’-এর অভিযোগ রয়েছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ‘মানবিক ত্রাণ সরবরাহ অস্বীকার করা, ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘাতে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করাসহ যুদ্ধের পদ্ধতি হিসেবে নির্মূল করা, অনাহার সৃষ্টি করা।’

আইসিসির প্রসিকিউটরের এ ঘোষণায় ইসরায়েলে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ইসরায়েলের যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বেনি গান্টজ এক এক্সবার্তায় লিখেছেন, যে দেশ তার নাগরিকদের রক্ষার জন্য যুদ্ধে নেমেছে, সেই দেশের নেতাদের রক্তপিপাসু সন্ত্রাসীদের সঙ্গে একই কাতারে দাঁড় করানো নৈতিক অন্ধত্ব।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান প্রসিকিউটরের এমন ঘোষণাকে ‘বিপর্যয়’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ।

এদিকে প্রধান প্রসিকিউটরের আবেদন বিবেচনায় নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আইসিসির। অর্থাৎ শিগগিরই নেতানিয়াহু, ইয়োয়াভ গ্যালান্ট, ইয়াহিয়া সিনওয়ার, মোহাম্মদ দিয়াব ইব্রাহিম আল-মাসরি, ইসমাইল হানিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে পারে।


পোস্টার, টি-শার্ট-ফেসবুকে ‘আই লাভ মোহাম্মদ’

ভারতে ২০০ জনেরও বেশি গ্রেপ্তার
আপডেটেড ১৫ অক্টোবর, ২০২৫ ২০:২৯
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ভারতে সম্প্রতি ‘আই লাভ মোহাম্মদ’ স্লোগানকে কেন্দ্র করে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। এই স্লোগানটি মূলত নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের একটি শান্তিপূর্ণ উপায় হিসেবে দেখা হলেও, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এটিকে জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ফলস্বরূপ, দেশজুড়ে ৪ হাজারের বেশি মুসলিমের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এবং ২০০ জনেরও বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন।
আলজাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর উত্তর প্রদেশের কানপুর শহরে মুসলিমরা ঈদে-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ‘আই লাভ মোহাম্মদ’ লেখা একটি বিলবোর্ড স্থাপন করে। এটি ‘আই লাভ নিউইয়র্ক’ সাইনবোর্ডের অনুকরণে তৈরি করা হয়েছিল। স্থানীয় কিছু হিন্দু এই বিলবোর্ড নিয়ে আপত্তি জানায়। পরে পুলিশ ধর্মীয় উত্তেজনা উসকে দেওয়ার অভিযোগে দুই ডজনেরও বেশি মুসলিমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র বরে ভারতের কানপুরের দেশটির পুলিশের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে মুসলিমরা। পরে এই প্রতিবাদ উত্তর প্রদেশের বেরিলি, গুজরাটের গোধরা, মহারাষ্ট্রের মুম্বাই, তেলেঙ্গানার হায়দ্রাবাদসহ বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা ‘আই লাভ মোহাম্মদ’ লেখা পোস্টার, টি-শার্ট পরিধান এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে প্রতিবাদ জানায়। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশ ৪ হাজার ৫০০-এরও বেশি মুসলিমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে এবং ২৮৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এছাড়া ভারতের উত্তর প্রদেশের বেরিলি শহরে, ‘আই লাভ মোহাম্মদ’ আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মাওলানা তৌকির রাজার বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। গুজরাটের গোধরায়, ‘আই লাভ মোহাম্মদ’ পোস্টার শেয়ার করার অভিযোগে যুবক জাকির ঝাবাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাকে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
ভারতের সংবিধান ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। তবে, ‘আই লাভ মোহাম্মদ’ স্লোগানকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা এই মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের ইঙ্গিত দেয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান আকার প্যাটেল বলেন, ‘এই ধরনের স্লোগান শান্তিপূর্ণ এবং কোনো উসকানি বা হুমকি মুক্ত। তাই এটি ফৌজদারি নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা উচিত নয়।’


বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা

পাকিস্তান-আফগানিস্তান সংঘাত তীব্রতর
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

দক্ষিণ এশিয়ার আকাশে ফের যুদ্ধের আশঙ্কা ঘনিয়ে এসেছে। গত শনিবার রাতে আফগান বাহিনীর হামলায় অন্তত ৫৮ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে তালেবান সরকার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষের পুনরাবৃত্তি এই অঞ্চলে আরও বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার ও শনিবারের ধারাবাহিক সংঘর্ষের পর থেকে উভয় পক্ষই একে অপরের সীমান্তচৌকি দখল ও ধ্বংসের দাবি করেছে। পাকিস্তান বিমান বাহিনী কাবুলসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাকটিকা প্রদেশে বিমান হামলা চালায়। এর জবাবে আফগান বাহিনী শনিবার রাতে পাল্টা হামলা চালিয়ে বহু পাকিস্তানি সেনা হত্যার দাবি তোলে।
তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান যে একসময় আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল—তারাই আজ সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত প্রথম তালেবান সরকারের স্বীকৃতি দেওয়া তিনটি দেশের একটি ছিল পাকিস্তান।
নিউইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার রাতের সংঘর্ষ দুই দেশের মধ্যে সংঘাতকে বৃহত্তর আকারে বিস্তৃত করতে পারে। প্রায় ১ হাজার ৬০০ মাইল দীর্ঘ দুর্গম পাহাড়ি সীমান্তজুড়ে নিয়মিত লড়াই চলছে, যা কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও জটিল করছে।
পাকিস্তানের অভিযোগ, আফগানিস্তান নিষিদ্ধ সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) আশ্রয় দিচ্ছে—যাদের হামলায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শতাধিক পাকিস্তানি সেনা ও নিরাপত্তা সদস্য নিহত হয়েছে। ইসলামাবাদ আরও দাবি করছে, তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত টিটিপিকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে তা কেবল দুই দেশ নয়, বরং পুরো দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে।
সংঘাতের প্রভাব ইতোমধ্যেই দুই দেশের সম্পর্কের ওপর পড়তে শুরু করেছে। পাকিস্তান আফগানিস্তানের অন্যতম শীর্ষ রপ্তানি অংশীদার এবং গত কয়েক দশক ধরে লাখ লাখ আফগান শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু শনিবারের সংঘর্ষের পর প্রধান সীমান্ত ক্রসিংগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তান সরকারের নির্দেশে দেশটিতে বসবাসরত হাজারো আফগানকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই দেশের মধ্যে শান্তি স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। দ্য ডন জানিয়েছে, রোববার ওয়াশিংটন থেকে ইসরায়েলগামী বিমানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, 'আমি শুনেছি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। আমি বলেছি, আমার ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুক তারা—কারণ আমি যুদ্ধের ভালো সমাধান দিতে পারি। আমি লাখ লাখ জীবন বাচাতে পারি।’
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মুখপাত্র লিন জিয়ান এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, চীন উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে এবং নিজেদের নাগরিক ও বিনিয়োগ সুরক্ষার স্বার্থে শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রত্যাশা করছে। তিনি আরও বলেন, বেইজিং পাকিস্তান-আফগান সম্পর্কের উন্নয়নে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে আগ্রহী।
এদিকে, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে নতুন মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন সোহাইল আফ্রিদি। সোমবার অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনে স্পিকার বাবর সালিম সওয়াতি তার নাম ঘোষণা করেন। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) মনোনীত এই প্রার্থী ৯০ ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন। তবে বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বয়কট করে একে
‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়েছে।
বিরোধী নেতা ড. ইবাদুল্লাহ বলেন, ‘যখন আলি আমিন গান্ধাপুর এখনো মুখ্যমন্ত্রীর পদে রয়েছেন, তখন নতুন মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের কোনো বৈধতা নেই।’ যদিও বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী গান্ধাপুর অধিবেশনে বক্তব্য দিয়ে আফ্রিদিকে অভিনন্দন জানান এবং বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য দেশের শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা।’ তিনি আরও যোগ করেন, দলের প্রতিষ্ঠাতার নির্দেশেই পদত্যাগ করেছেন এবং বিরোধীদের প্রতি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্মান করার আহ্বান জানান।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস


গাজা ঘোষণাপত্রে সই করল যুক্তরাষ্ট্রসহ চার দেশ

আপডেটেড ১৫ অক্টোবর, ২০২৫ ০৯:৩২
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
    মিসরে শান্তি সম্মেলন

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আঞ্চলিক নেতারা একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। গত সোমবার মিসরের শারম আল-শেখ শহরে এ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত হয়। ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি অসাধারণ দিন’ আখ্যা দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন ট্রাম্প। ইসরায়েল ও হামাসের জিম্মি ও বন্দি বিনিময়ের কয়েক ঘণ্টা পর ঘোষণাপত্রটি স্বাক্ষর হয়।
ঘোষণাপত্রটির নাম রাখা হয়েছে ‘ট্রাম্প ডিক্লারেশন ফর এন্ডিউরিং পিস অ্যান্ড প্রসপারিটি’ বা ‘টেকসই শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য ট্রাম্প ঘোষণা’। মূলত মধ্যপ্রাচ্য ও গাজায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে করা হয়েছে এটি।
এতে স্বাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। হোয়াইট হাউস কর্তৃক প্রকাশিত সম্পূর্ণ অংশটি নীচে দেওয়া হল।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে—আমরা স্বাক্ষরকারীরা ট্রাম্প শান্তি চুক্তির সকল পক্ষের ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়নকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। এই চুক্তি দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা গভীর দুর্ভোগ ও ক্ষতির অবসান ঘটিয়ে আশা, নিরাপত্তা এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির এক যৌথ দৃষ্টিভঙ্গিতে সংজ্ঞায়িত একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
আমরা গাজায় যুদ্ধের অবসান ও মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানাই এবং তার পাশে আছি। আমরা একসঙ্গে এই চুক্তি এমনভাবে বাস্তবায়ন করব, যাতে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি উভয় অঞ্চলের সকল মানুষের জন্য শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের সুযোগ নিশ্চিত হয়।
ঘোষণাপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা বুঝতে পারছি স্থায়ী শান্তি তখনই সম্ভব হবে, যখন ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি উভয় জনগোষ্ঠী তাদের মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষিত রেখে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে সমৃদ্ধির পথে আগাতে পারবে। আমরা বিশ্বাস করি, অর্থবহ অগ্রগতি শুধুমাত্র সহযোগিতা ও ধারাবাহিক সংলাপের মাধ্যমেই অর্জিত হয়।
জাতি ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তাতে বলা হয়েছে, আমরা এই অঞ্চলের গভীর ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব স্বীকার করি—যেখানে খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম ও ইহুদি ধর্মসহ বিভিন্ন বিশ্বাসের শিকড় গভীরভাবে রয়েছে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে আমরা এই পবিত্র সম্পর্কগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা জানাব এবং ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলোর সুরক্ষাকে সর্বাগ্রে রাখব।
এ ছাড়া বলা হয়েছে, আমরা সব ধরনের উগ্রবাদ ও চরমপন্থা নির্মূলের প্রতিশ্রুতিতে ঐক্যবদ্ধ। কোনো সমাজই বিকশিত হতে পারে না, যদি সহিংসতা ও বর্ণবাদকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া হয়, অথবা উগ্র মতাদর্শ নাগরিক জীবনের ভিত্তিকে হুমকির মুখে ফেলে।
আমরা উগ্রবাদের জন্ম দেয় এমন সব পরিস্থিতি মোকাবিলার অঙ্গীকার করছি এবং শিক্ষা, সুযোগ সৃষ্টি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাকে স্থায়ী শান্তির ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
আমরা ঘোষণা করছি যে, ভবিষ্যতের যেকোনো বিরোধ আমরা বলপ্রয়োগ বা দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের পরিবর্তে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করব। আমরা স্বীকার করি, মধ্যপ্রাচ্য আর দীর্ঘ যুদ্ধ, স্থগিত আলোচনা বা অসম্পূর্ণ শান্তিচুক্তির পুনরাবৃত্তি সহ্য করতে পারে না। গত দুই বছরের ট্র্যাজেডিগুলো আমাদের জন্য একটি কঠোর শিক্ষা— ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অতীতের ব্যর্থতার চেয়ে আরো ভালো ভবিষ্যতের দাবিদার।
আমরা সহনশীলতা, মর্যাদা ও প্রতিটি মানুষের জন্য সমান সুযোগ কামনা করি, যাতে এই অঞ্চলটি এমন এক জায়গায় পরিণত হয়, যেখানে জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে সবাই শান্তি, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। আমরা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও যৌথ নিয়তির নীতির ভিত্তিতে এই অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও যৌথ সমৃদ্ধির একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করছি।
আরো বলা হয়েছে, এই চেতনা থেকেই আমরা গাজা উপত্যকায় ব্যাপক ও টেকসই শান্তি ব্যবস্থার অগ্রগতি এবং ইসরায়েল ও তার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ পারস্পরিকভাবে উপকারী সম্পর্কের বিকাশকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। আমরা এই অর্জন বাস্তবায়ন ও টিকিয়ে রাখতে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করছি, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শান্তিতে একসঙ্গে উন্নতি করতে পারে এমন এক দৃঢ় প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি তৈরি হয়। আমরা স্থায়ী শান্তির ভবিষ্যতের প্রতি নিজেদের সম্পূর্ণভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ করছি।
ইসরায়েলে ঝটিকা সফরে গিয়ে দেশটির পার্লামেন্টে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। এরপর তিনি গাজা শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে মিসরে যান। সেখানে তিনি এবং মিসর, কাতার ও তুরস্কের নেতারা গাজা চুক্তির জিম্মাদার হিসেবে ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন।
শার্ম আল-শেখের রিসোর্টে ট্রাম্প বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বলেন, এটি বিশ্বের ও মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি অসাধারণ দিন।
ট্রাম্প স্বাক্ষর করার আগে দুবার ‘এটি টিকে থাকবে’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, নথিতে নিয়ম-কানুন ও আরো অনেক কিছু স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।
গাজা যুদ্ধের অবসানে ট্রাম্পের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সোমবার হামাস উপত্যকায় দুই বছর ধরে তাদের কাছে জিম্মি থাকা ইসরায়েলিদের সর্বশেষ ২০ জনকে জীবিত অবস্থায় ফেরত দিয়েছে।
ইসরায়েলের কারা বিভাগ জানিয়েছে, এর বিনিময়ে ইসরায়েল তাদের কারাগারে থাকা ১ হাজার ৯৬৮ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।
ইসরায়েলি পার্লামেন্টে উপস্থিত হলে দীর্ঘক্ষণ ধরে করতালির মাধ্যমে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয়। সেখানে ভাষণে ট্রাম্প আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে বলেন, ৭ অক্টোবর (২০২৩) থেকে চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত ইসরায়েল যুদ্ধে জড়িয়েছিল। এই যুদ্ধের ভার বহন করা কেবল গর্বিত কোনো জাতি ও বিশ্বস্ত জনগণই সহ্য করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, এই ভূখণ্ডের পরিবারগুলোতে বছরের পর বছর ধরে সত্যিকারের শান্তিময় একটি দিনও আসেনি। শুধু ইসরায়েলিদের জন্যই নয়, ফিলিস্তিনিদের এবং আরো অনেকের জন্য দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক দুঃস্বপ্নের অবশেষে অবসান ঘটেছে।
জিম্মি পরিবারগুলোর সমর্থনে তেল আবিবে জমায়েত বিপুলসংখ্যক লোকজন জিম্মি মুক্তির খবরে উল্লাস করেছে, অনেকে আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়েছে এবং সমবেতভাবে গানও গেয়েছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় বন্দিদের বহনকারী বাসগুলো পৌঁছালে তাদের স্বাগত জানাতে জনতা ভীড় জমায়। এ সময় অনেকে ‘আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দেয়।
গাজার খান ইউনিসে বন্দিদের বহনকারী ধীর গতির রেড ক্রস বাসগুলো পৌঁছালে অপেক্ষমাণ স্বজনরা তাদের প্রিয়জনদের উষ্ণ আলিঙ্গনের মাধ্যমে স্বাগত জানাতে শুরু করে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ একাধিক পোস্টে জিম্মিদের ফিরে আসায় স্বাগত জানিয়েছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে হামাসের হাতে জিম্মি অবস্থায় মারা যাওয়া ২৭ জনের মৃতদেহ এবং এর আগে গাজায় সংঘাতের সময় ২০১৪ সালে নিহত একজন সৈন্যের দেহাবশেষও ফিরিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে।
ইসরায়েল সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা হামাস কর্তৃক রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করা দুই বন্দির মৃতদেহ পেয়েছে এবং তারা এখনো আরো দুজনের দেহাবশেষ ফেরত পাওয়ার আশা করছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করে হামাস। ওই হামলায় ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। ৪৭ জন ছাড়া বাকি সব জিম্মিকে এর আগের যুদ্ধবিরতিতে মুক্তি দেওয়া হয়।
গাজায় যুদ্ধবিরতি চালুতে সেখানকার মানুষের মনে স্বস্তি এসেছে। তবে, যুদ্ধের ফলে বেশিরভাগ অঞ্চলই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে মুক্তি পাওয়া ২৫ বছর বয়সী ইউসুফ আফানা খান ইউনিসে এএফপিকে বলেন, সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো-আমার পুরো পরিবার আমাকে স্বাগত জানাতে জড়ো হয়েছে। আমি ১০ মাস কারাগারে কাটিয়েছি। আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিনগুলোর অন্যতম এসব দিন।
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের লক্ষ্য হলো, গত সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তিতে মধ্যস্থতায় তার ভূমিকা উদযাপন করা। তবে, এখনো অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা বাকি রয়েছে।
সম্ভাব্য বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে— হামাসের নিরস্ত্রীকরণে অস্বীকৃতি ও বিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহারে ইসরাইলের প্রতিশ্রুতি না পাওয়া।
ট্রাম্প সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে গাজার জন্য একটি ২০ দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, যা যুদ্ধবিরতি আনতে সহায়তা করে।
হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম সোমবার ট্রাম্প ও গাজা চুক্তির মধ্যস্থতাকারীদের ‘ইসরায়েলের আচরণ পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখার এবং তাদের জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন পুনরায় শুরু না করার বিষয়টি নিশ্চিত করার’ আহ্বান জানান।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে কমপক্ষে ৬৭ হাজার ৮৬৯ জন নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ এই তথ্য বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে।
তথ্যটি বেসামরিক ও যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য করে না। তবে ইঙ্গিত দেয় যে-নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু।


তালেবান তোষামোদের সমালোচনায় জাভেদ আখতার

জাভেদ আখতার
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তালেবান প্রতিনিধিকে ‘রাজকীয় সংবর্ধনা’ দেওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কবি ও গীতিকার জাভেদ আখতার। তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির ভারত সফর ও তাকে ঘিরে সরকারি আপ্যায়নের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিকে নিয়ে ভারত সরকার যে আদিখ্যেতা দেখিয়েছে, তাতে লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে।’

আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি বর্তমানে ভারত সফরে রয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে। সফরের অংশ হিসেবে নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। যদিও ওই বৈঠকে দুই দেশের পতাকা অনুপস্থিত ছিল।

এ সফর ঘিরে বিতর্ক শুরু হয় গত শনিবার, যখন মুত্তাকির আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে পরদিন নারী সাংবাদিকদের আলাদা করে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাভেদ আখতার ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, ‘যারা সবসময় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলে, তাদের এই দ্বিচারিতা দেখে মাথা হেঁট হয়ে যায়।’ তিনি দারুল উলুম দেওবন্দকেও কটাক্ষ করে বলেন, ‘তালেবান নেতাকে তারা মাথায় তুলে নেচেছে, অথচ নারীদের শিক্ষা ও অধিকার নিয়ে তাদের অবস্থান নির্লজ্জ।’

নারী সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাফাই দিয়ে জানায়, ওই সংবাদ সম্মেলন হয়েছিল আফগান দূতাবাসে, যা ভিয়েনা কনভেনশনের আওতায় কূটনৈতিক নিরাপত্তার মধ্যে পড়ে। ভারত সরকারের তাতে সরাসরি হাত নেই।

তবে সমালোচনা থামেনি। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র ও পি চিদম্বরম ছাড়াও সম্পাদকদের সংগঠন এডিটর্স গিল্ড অব ইন্ডিয়া এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, ‘ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে কেউ লিঙ্গবৈষম্য করবে, আর সরকার চুপ করে থাকবে—এটা অনভিপ্রেত।’

ভারত সফরে থাকা মুত্তাকির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ভারতে বসবাসরত আফগান শিখ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের এক প্রতিনিধিদল। তারা আফগানিস্তানে থাকা ধর্মীয় স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, দখল হওয়া সম্পত্তি ফেরত দেওয়া ও মাল্টিপল ভিসার দাবির পাশাপাশি আফগানিস্তানে ফিরে যাওয়ার বিষয়েও আলোচনা করেন।

মুত্তাকি তাদের দেশে ফিরে যেতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য আবার শুরু করুন, সরকার আপনাদের স্বাগত জানাবে।’


ভারতে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ বলা নিয়ে চলছে মামলা-ধরপাকড়

দিল্লি জামে মসজিদে নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ভারতে গত মাসে বিভিন্ন বাজার ও বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপিশাসিত কয়েকটি রাজ্যে মুসলিম পুরুষদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে বাড়িও ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

পোস্টার, টি-শার্ট বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ (আমি মুহাম্মদকে ভালোবাসি) লেখাই এর মূল কারণ। কারণ কর্তৃপক্ষ এটিকে সর্বজনীন শৃঙ্খলা ভঙ্গ হিসেবে দেখছে।

অলাভজনক সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব সিভিল রাইটস জানিয়েছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২২টি মামলা করা হয়েছে এবং বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে দুই হাজার পাঁচশ এর বেশি মুসলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল হয়েছে; বহু রাজ্যে অন্তত ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর উত্তর প্রদেশের কানপুর শহরে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের সময় ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা একটি বোর্ড টানানো হয়। স্থানীয় কিছু হিন্দু এই বোর্ড নিয়ে সমালোচনা শুরু করে। তারা অভিযোগ করে যে, এটি উৎসবে নতুন সংযোজন, যা উত্তর প্রদেশের ধর্মীয় উৎসবে নতুন কিছু যোগ করার ওপর নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন।

তবে অভিযোগগুলো ভিত্তিতে পুলিশ আরও গুরুতর ধারায় মামলাও করে। এ ধারা প্রয়োগে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। কানপুর ঘটনার পরে দেশজুড়ে সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে তেলেঙ্গানা, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, উত্তরাখণ্ড ও জম্মু-কাশ্মিরেও। অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ও টি-শার্টে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ স্লোগান ব্যবহার করেন।

কানপুর থেকে প্রায় ২৭০ কিমি দূরে বরেলির একটি বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে (২৬ সেপ্টেম্বর) এবং ৭৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়—অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় ইমাম তৌকির রাজা ও তার আত্মীয়-সহকর্মীরা। ওই এলাকায় অভিযুক্তদের অন্তত চারটি ভবন ধ্বংস করা হয়েছে।

গত কয়েক বছরের মধ্যে বহু মুসলিমের বাড়ি এমনভাবে ধ্বংসের শিকার হয়েছে—অধিকাংশ সময় আগাম নোটিশ বা আদালতের আদেশ ছাড়াই।

ভারতের সংবিধান ধর্মীয় স্বাধীনতা (আর্টিকেল ২৫) ও মুক্ত মতপ্রকাশের অধিকার (আর্টিকেল ১৯(১)(এ)) রক্ষা করে—শুধু হিংসা বা ঘৃণার উসকানি ছাড়া। কিন্তু ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ সংক্রান্ত অভিযোগগুলোর ক্ষেত্রে পুলিশ সাধারণত একই সঙ্গে জমায়েত, দুষ্টতা বা ধর্মীয় উত্তেজনা উসকানোর ধারাও প্রয়োগ করেছে—এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট বা টি-শার্টের জন্যও।

এপিসিআর-এর জাতীয় সমন্বয়কারী নাদিম খান বলছেন, ভারতের অনেক জায়গায় পুরনো সময় থেকেই হিন্দু দেবতাদের অস্ত্রসহ ছবি প্রচলিত—সেগুলোও কি মুসলিমদের উদ্বিগ্ন বা হুমকিস্বরূপ বলা হবে? সরকার কোনো ধর্মকেই এইভাবে ক্রিমিনালাইজ করতে পারবে না।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বোর্ড চেয়ার আকার প্যাটেল বলছেন, ‘আই লাভ মুহাম্মদ’—যা শান্তিপূর্ণ এবং ঘৃণা-উস্কানিমুক্ত—এমন স্লোগানের বিরুদ্ধে দমন আইন প্রয়োগ করা সংবিধানগতও নয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনেরও লঙ্ঘন। তিনি বলেন, পাবলিক অর্ডার নিয়ে উদ্বেগ থাকলে তা অনুপাতসঙ্গতভাবে মোকাবিলা করতে হবে, পুরো ধর্মীয় পরিচয় চেপে দেওয়া যাবে না।

সমালোচকরা বলছেন, এটা ২০১৪ সালে মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে লক্ষ্যভিত্তিক আইনগত বা সামাজিক চাপ বেড়েছে, তারই সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। গত ১১ বছরে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণাসূচিত বক্তব্যের ঘটনা ব্যাপকভাবে বাড়েছে—যেখানে ২০২৩ সালে ৬৬৮টি নথিভুক্ত ঘটনার সংখ্যা ২০২৪ সালে ১ হাজার ১৬৫-এ পৌঁছায় (প্রায় ৭৪ শতাংশ বৃদ্ধি)। অধিকাংশ ঘটনাই ঘটে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে বা যেখানে নির্বাচনের আগে উত্তেজনা বাড়ে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিম আলি বলছেন, একটা পুরো ইকোসিস্টেম কাজ করছে—ম্যনিপুলেটেড মিডিয়া থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার সাংগঠনিক প্রচার—যাতে কোনো লোকাল বিবাদ দ্রুত জাতীয় ইস্যুতে রূপ নেয়।

বিশ্লেষক রশিদ কিদওয়াই বলছেন, ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ বিতর্কটি মোটামুটি রাজনৈতিক—ধর্মীয় নয়। ভারতের যুব মুসলিমদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। কারণ তারা মনে করেন আইনি ও সামাজিক নিয়ম এক রকমভাবে সকলের ওপর প্রয়োগ হয় না। অভিযুক্তদের মধ্যে অনেকে তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক। বিশ্লেষক আসিম আলি বলছেন, এই ধরণের দমন-নীতি তরুণদের আরও বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে।


গাজার ক্ষমতায় আসছে ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ!

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতির প্রধান শর্ত হচ্ছে গাজা থেকে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে নির্মূল করা।

অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিরা তাদের শাসনভার কোন বিদেশি শাসকের হাতে দিতে নারাজ। এক্ষেত্রে গাজায় হামাস গাজায় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের (পিএনএ) সঙ্গে যুক্ত হতে নতুন একটি প্লাটফর্ম খুলতে চায়। খবর তাসের।

আল আরাবিয়া টেলিভিশন চ্যানেল হামাসের একজন প্রতিনিধির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। হামাসের ওই নেতা বলেন, আমরা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন শাখা খুলতে প্রস্তুত।

হামাসের বর্তমানে পিএনএর সঙ্গে কোন সংঘাতের ইচ্ছা নেই। হামাস আন্দোলন বিশ্বাস করে যে গাজা উপত্যকায় স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি অতিরঞ্জিত এবং দ্রুত এটি সমাধান করা হবে।

নাম প্রকাশ না করে এক হামাস নেতা বলেন, নিরস্ত্রীকরণ একটি জটিল সমস্যা, তবে আমরা একটি সমাধান খুঁজে বের করব।

তিনি উল্লেখ করেন, অস্ত্র সমর্পণ এবং গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা সম্পর্কিত বিষয়গুলি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে আলোচনা করা উচিত।

সোমবার হামাস এবং অন্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। একই সঙ্গে চারজন নিহত জিম্মির মৃতদেহও হস্তান্তর করেছে।

রেডক্রসের মাধ্যমে জিম্মিদের ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তারা ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের ভূখণ্ডে চলে গেছে।

এর পরিবর্তে, ইসরায়েল ১ হাজার ৯৬৮ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে, যার মধ্যে ২৫০ জন যাবজ্জীবন বা দীর্ঘ কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি উপলক্ষে সোমবার মিশরের শার্ম আল-শেখে একটি শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মিসরের রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, কাতারি আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় একটি চূড়ান্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

মিশরের রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির কার্যালয় থেকে প্রকাশিত একটি নথি অনুসারে, সম্মেলনে ট্রাম্পের পরিকল্পনার পরবর্তী পর্যায়গুলি বাস্তবায়নের জন্য, বিশেষ করে গাজা উপত্যকার প্রশাসনের অবকাঠামো পুনরুদ্ধার এবং ছিটমহলের রাজনৈতিক পরিস্থিতির মতো বিষয়গুলি বাস্তবায়নের জন্য ব্যবস্থা সম্পর্কে পরামর্শ আয়োজনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা উপত্যকা থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহার করে এবং ইহুদি বসতিগুলি খালি করে। গাজার নিয়ন্ত্রণ পিএনএ-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়, যা পশ্চিম তীরও পরিচালনা করে।

এরপর প্রথম ফিলিস্তিনি সংসদীয় নির্বাচনে, হামাস বিজয়ী হয়ে সেখানে মধ্যপন্থি ফাতাহ আন্দোলনের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যার ফলে উপদলগুলির মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়।

পরে হামাস উপত্যকার ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে, যখন তাদের বিরোধীরা পশ্চিম তীরে ক্ষমতা ধরে রাখে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট এবং তার সমর্থকরা নিয়মিতভাবে গাজার ওপর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের শাসন পুনরুদ্ধারের ইচ্ছা পোষণ করতেন।


ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে ‘সুন্দরী’ বললেন ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জর্জিয়া মেলোনি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

মিসরের শারম এল-শেইখে অনুষ্ঠিত গাজা শান্তি সম্মেলনে ইসরায়েল-হামাস সংঘাত নিরসনে অগ্রগতি অর্জনের পর বিশ্বনেতারা একত্রিত হন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার মধ্যস্থতার ভূমিকার প্রশংসা পান। তবে আলোচনার চেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিকে ঘিরে তার মন্তব্য, যা মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার ঝড়।

বক্তৃতার সময় ট্রাম্প উপস্থিত বিশ্বনেতাদের ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে মেলোনির প্রতি ব্যক্তিগত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমাদের এখানে এক নারী আছেন, এক তরুণী। আমি আসলে এটা বলার অনুমতি পাই না, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে কোনো নারীকে সুন্দর বললে সাধারণত সেটিই হয় আপনার রাজনৈতিক জীবনের সমাপ্তি।

এরপর মেলোনির দিকে ঘুরে ট্রাম্প যোগ করেন, আমি ঝুঁকি নিচ্ছি, কিন্তু বলতে চাই— আপনি সত্যিই সুন্দরী। আশা করি এতে আপনি কিছু মনে করবেন না। এখানে আসার জন্য ধন্যবাদ, আমি কৃতজ্ঞ।

এই মন্তব্যের ভিডিও ক্লিপটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে ট্রাম্পের প্রশংসাকে অস্বস্তিকর বলে মন্তব্য করেন, বিশেষত মেলোনির মুখের অভিব্যক্তি দেখে অনেকে ধারণা করেন, তিনি এতে তেমন সন্তুষ্ট ছিলেন না।

একই সম্মেলনে মেলোনির আরেকটি ভিডিওও ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়, যেখানে তাকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে হাস্যরসাত্মক আলাপ করতে দেখা যায়। পাশে ছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো। ভিডিওতে এরদোয়ান মেলোনিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাকে দেখতে চমৎকার লাগছে, তবে আমি আপনাকে ধূমপান ছাড়তে বাধ্য করব। মেলোনি তখন হাসতে হাসতে জবাব দেন, আমি জানি, আমি জানি।

ট্রাম্প ও এরদোয়ানের সঙ্গে এই দুই ভিন্ন মুহূর্তের ভিডিওর কারণে মেলোনি সামাজিকমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। শারম এল-শেইখের এই সম্মেলন ছিল ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘাত প্রশমনে এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক উদ্যোগ, যেখানে ট্রাম্প অন্যান্য বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আমার বন্ধু, অসাধারণ মানুষ। যদিও কয়েকজন আছেন যাদের আমি তেমন পছন্দ করি না — তবে কে তারা, সেটা বলব না।

এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ছিল গাজায় শান্তি পুনঃস্থাপন, তবে ট্রাম্পের মন্তব্য ও মেলোনির সঙ্গে তার মিথস্ক্রিয়াই শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে।


গাজায় ৮০ শতাংশেরও বেশি ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে

গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইসরায়েল। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

গাজা উপত্যকার ৮০ শতাংশেরও বেশি এবং গাজা সিটির ৯২ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। গাজা পুনর্গঠনে কী কী দরকার তার চাহিদা মূল্যায়ন করছে সংস্থাটি। জেনেভায় ইউএনডিপির এক মুখপাত্র গাজার ধ্বংসস্তূপকে ‘বিধ্বংসী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সংস্থাটি অনুমান করছে, সেখানে কমপক্ষে ৫৫ মিলিয়ন বা সাড়ে পাঁচ কোটি টন ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করা প্রয়োজন।

ইউএনডিপি বলছে, তারা কিছু অপসারণ শুরু করেছে, কিন্তু অবিস্ফোরিত বিস্ফোরক তাদের কার্যক্রমকে ব্যহত করছে। ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার কার্যক্রমের সময় অনেক মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে যেগুলো শনাক্ত ও সমাহিত করা প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন তারা।

জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিশ্বব্যাংক পরিচালিত পুনর্গঠন ব্যয়ের একটি অনুমান অনুসারে, গাজাকে আবার বাসযোগ্য করে তুলতে কমপক্ষে ৭০ বিলিয়ন ডলার (৫২.৭ বিলিয়ন পাউন্ড) প্রয়োজন হবে।

এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমি মনে করি এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন, কারণ কেউ ভাবেনি যে এটা সম্ভব।

ইসরায়েল ও মিসর সফরের পর যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। গাজায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরছে, এটা বলা তড়িঘড়ি হয়ে যাবে কি না এই প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, অনেক মানুষ এক-রাষ্ট্রীয় সমাধান পছন্দ করেন। কিছু মানুষ দ্বী-রাষ্ট্রীয় সমাধান পছন্দ করেন। আমাদের দেখতে হবে। আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করিনি।

মিশরে ২০টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক সম্মেলনে গাজা সংক্রান্ত এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প। ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছে এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গাজা উপত্যকায় পরবর্তীতে কী হবে তা নিয়ে কথা বলেন ট্রাম্প।

তিনি প্রেসিডেন্ট না থাকলে শান্তি থাকবে কি না জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, আমি বলতে পারছি না কী ঘটবে। তবে যেই হোক না কেন, তার পক্ষে আমি লড়াই করব।

গাজায় পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত

যুদ্ধবিরতির পরেও গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজা শহরের শুজাইয়া এলাকায় ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় দখলদার বাহিনী। খবর আল জাজিরার।

কাতার, মিসর এবং তুরস্কের নেতাদের সঙ্গে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যেই পুরোনো রুপে ফিরে গেছে ইসরায়েলি সেনারা।

এদিকে ইসরায়েলি বন্দিদশা থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছেন, তাদের মারধর এবং অপমান করা হয়েছে। ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া এক ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের ওফার কারাগারকে ‌‘কসাইখানা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসেবে ইসরায়েল প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে। অপরদিকে হামাস গাজায় আটক ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে এবং আরও চারজনের মৃতদেহ হস্তান্তর করেছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৭ হাজার ৮৬৯ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ১০৫ জন আহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে মোট ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জনকে বন্দি করা হয়েছিল।

গাজায় ৮৩৫টি মসজিদ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছে ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও ধর্মীয় ঐতিহ্য কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। উপত্যকার মোট ১ হাজার ২৪৪টি মসজিদের মধ্যে ৮৩৫টিই সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ১৮০টি মসজিদ। ধ্বংস হওয়া এসব স্থাপত্যের বেশিরভাগই মামলুক ও উসমানীয় আমলে নির্মিত হয়েছিল।

গত শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় গাজার যুদ্ধবিরতি। পুরো উপত্যকা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ঘরবাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি শতাব্দী প্রাচীন মসজিদ ও ঐতিহাসিক স্থাপনাও রক্ষা পায়নি। ইসরায়েলের বর্বর ও নৃশংস আগ্রাসনে গত দুই বছরে প্রাণহানি ছাড়িয়েছে সাড়ে ৬৭ হাজার।

গাজার সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন মসজিদ ছিল প্রায় ১৪০০ বছর পুরনো মহান ওমরী মসজিদ। ‘ছোট আল-আকসা’ নামে পরিচিত এই স্থাপনাটি একসময় ৫ হাজার বর্গমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছিল এবং এটি ছিল ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনের তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদ। সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় এটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থাপনা, সাইয়্যিদ হাশিম মসজিদ, ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর ইসরায়েলি বিমান হামলায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এছাড়া মামলুক আমলে নির্মিত কাতিব আল-ওয়ালায়া মসজিদও হামলা থেকে রেহাই পায়নি; ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর এটিও ধ্বংস হয়ে যায়।

চতুর্দশ শতকে নির্মিত ইবনে উসমান মসজিদ, আলী ইবনে মারওয়ান মসজিদ এবং ১৩৬১ সালে নির্মিত জাফার আদ-দিমরী মসজিদ–এগুলোর সবই এখন কেবল ধ্বংসস্তূপ।

দক্ষিণ গাজার ১৯২৮ সালে নির্মিত গ্রেট খান ইউনিস মসজিদ, যা পরে ৩ হাজার বর্গমিটারের বেশি জায়গায় সম্প্রসারিত হয়েছিল, সেটিও সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।

এই মসজিদগুলো কেবল উপাসনার স্থান ছিল না, বরং গাজার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পরিচয়ের প্রতীক ছিল। ইসরায়েলি হামলায় এখন সেগুলোর জায়গায় কেবলই ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে।


উষ্ণতার কারণে বিশ্বের অধিকাংশ প্রবালপ্রাচীর ধ্বংস হয়ে যেতে পারে

বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

বিশ্বের উষ্ণমণ্ডলীয় প্রবালপ্রাচীরগুলো এমন এক সীমা অতিক্রম করেছে, যেখান থেকে আর ফেরার পথ নেই। কারণ, সমুদ্রের তাপমাত্রা এখন এমন মাত্রায় পৌঁছেছে, যেখানে অধিকাংশ প্রবালের টিকে থাকা অসম্ভব। গতকাল সোমবার প্রকাশিত এক বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদনে এমন সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পৃথিবী সম্ভবত একটি ‘বিপজ্জনক’ সীমারেখায় পৌঁছেছে। এতে বিশ্বের প্রকৃতিতে বড় ধরনের, এমনকি স্থায়ী পরিবর্তনও দেখা যেতে পারে।
প্রতিবেদনের মূল লেখক এবং এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু ও বিশ্বব্যবস্থাবিষয়ক বিজ্ঞানী টিম লেন্টন এএফপিকে বলেন, ‘দুঃখজনক বিষয় হলো, এখন আমরা অনেকটাই নিশ্চিত যে আমরা উষ্ণ পানির বা উষ্ণমণ্ডলীয় প্রবালপ্রাচীরের একটি ‘বিপজ্জনক সীমা’ অতিক্রম করেছি।’
বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ১৬০ জন বিজ্ঞানী প্রতিবেদনটি তৈরি করছেন। বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে একমত যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার শিল্পপূর্ব যুগের চেয়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হলেই অধিকাংশ প্রবালপ্রাচীর ধ্বংস হয়ে যাবে। আর কয়েক বছরের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা সে সীমারেখাকে ছুঁয়ে ফেলতে পারে।
উষ্ণ সমুদ্রে চাপের কারণে প্রবালগুলো তাদের স্বাভাবিক রং ও খাদ্যের উৎস হারাচ্ছে। যদি সমুদ্র ঠাণ্ডা না হয়, তাহলে রং হারিয়ে ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া প্রবাল আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারে না। তা ছাড়া খাবার না পেয়ে এগুলো ধীরে ধীরে মরে যায়।
২০২৩ সালের পর থেকে সমুদ্র বিজ্ঞানীরা এমন মাত্রায় প্রবালের মৃত্যু দেখেছেন, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। প্রশান্ত, ভারত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবালপ্রাচীরগুলো ভুতুড়ে সাদা রং ধারণ করেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রবালপ্রাচীর পুরোপুরি নষ্ট না হয়ে তা কম বৈচিত্র্যপূর্ণ বাস্তুব্যবস্থায় পরিণত হবে। অ্যালজি, স্পঞ্জের মতো যেসব প্রাণী উষ্ণ সমুদ্রে টিকে থাকতে সক্ষম, তাদের আধিপত্য দেখা যাবে। নতুন জলজ পরিবেশে এসব প্রজাতি আধিপত্য করবে। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মৃত প্রবালের কঙ্কালগুলো ভেঙে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।
এ ধরনের পরিবর্তন প্রবালপ্রাচীরের ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষ এবং প্রায় ১০ লাখ প্রজাতির প্রাণীর জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠবে।
সূত্র: এএফপি


মসজিদ-স্কুলের কাছে সিগারেটের দোকান নিষিদ্ধ করল সৌদি আরব

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

সৌদি আরবের পৌরসভা ও আবাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত নতুন নিয়ম অনুযায়ী, মসজিদ ও স্কুল থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনো তামাক পণ্যের দোকান স্থাপন করা যাবে না। এই পদক্ষেপটি জনস্বাস্থ্য রক্ষা, বিধিমালা মেনে চলা এবং বাণিজ্যিক পরিবেশকে নিরাপদ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, দোকানগুলো সিগারেট, ই-সিগারেট, শীশা বা অন্যান্য তামাকজাত পণ্য ও সরঞ্জাম বিক্রি করে, তাদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। লাইসেন্স পেতে হলে যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে তা হলো, বৈধ বাণিজ্যিক রেজিস্ট্রেশন থাকতে হবে, সিভিল ডিফেন্সের অনুমোদন থাকতে হবে, পৌর লাইসেন্সিং আইনের সকল ধারা ও বিধি মানতে হবে, দোকানটি শহরের একটি বাণিজ্যিক ভবনে অবস্থিত হতে হবে, ন্যূনতম দোকানের আকার ৩৬ বর্গমিটার হতে হবে।
চালানোর নিয়ম ও সাইনবোর্ডের বিধিতে রয়েছে, দোকানের বাইরের সাইনবোর্ডে যেকোনও ধরনের লোগো কিংবা প্রচারণামূলক ছবির ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। তবে কেবল দোকানের নাম প্রদর্শন করা যাবে। দোকানের বাইরে ফুটপাত ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, পাবলিক ফুটপাত ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন বাধ্যতামূলক, ইলেকট্রনিক পেমেন্ট ব্যবস্থা থাকতে হবে, দোকানকে স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
স্থাপত্য ও কারিগরি নির্দেশনা অনুযায়ী যা যা থাকতে হবে তা হলো, নাগরিক প্রবেশের জন্য র‍্যাম্প, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এবং সৌদি বিল্ডিং কোড অনুযায়ী বায়ু চলাচল, আলো, এসি ইত্যাদি।
তামাকজাত পণ্য বিক্রির ওপরও কড়াকড়ি নিয়ম দেওয়া হয়েছে। পণ্যের উৎসের প্রমাণপত্র রাখতে হবে, কোনো ধরণের মিশ্রণ বা পুনঃপ্যাকেজিং নিষিদ্ধ, ১৮ বছরের নিচে কাউকে বিক্রি করা যাবে না (বয়স যাচাই বাধ্যতামূলক), পণ্যের মান হতে হবে এসএফডিএ অনুমোদিত এবং বিনামূল্যে নমুনা, একক সিগারেট বিক্রি বা প্রোমোশন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
প্রদর্শনী ও মোড়ক সংক্রান্ত নিয়মের মধ্যে রয়েছে, তামাকজাত পণ্য সিল করা প্যাকেটে থাকতে হবে, ভেন্ডিং মেশিনের মাধ্যমে বিক্রি নিষিদ্ধ, পণ্যের মূল্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
সতর্কীকরণ লেবেল ও কিউআর কোড থাকতে হবে, যা লাইসেন্স ও নিয়ম সংক্রান্ত তথ্য দেবে।
নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ নজরদারি চালাবে ও প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। নতুন এই বিধিনিষেধ কার্যকর হলে তামাক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ আসবে, জনসুরক্ষা বাড়বে এবং শহরের পরিবেশ আরও সুশৃঙ্খল হবে বলে আশা করছে সরকার।

সূত্র: গালফ নিউজ।


সম্পর্ক পুনর্গঠনে ভারতে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল সোমবার নয়াদিল্লিতে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনিতা আনন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন — দুই দেশের মধ্যে তীব্র কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব কাটিয়ে রাষ্ট্রদূত বিনিময় পুনরায় শুরু হওয়ার পর এটি সবচেয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেন, ‘গত কয়েক মাসে ভারত-কানাডা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ধারাবাহিকভাবে অগ্রগতি দেখাচ্ছে।’
মোদির সঙ্গে আনন্দের সাক্ষাতের পর জয়শঙ্কর আরো বলেন, ‘আমরা কানাডাকে দেখি একটি সহযোগী অর্থনীতি হিসেবে, আরেকটি উন্মুক্ত সমাজ হিসেবে — যা ঘনিষ্ঠ, টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার ভিত্তি তৈরি করে।’
দুই দেশের সম্পর্ক ২০২৩ সালে গভীর সংকটে পড়ে, যখন কানাডা অভিযোগ তোলে যে ভারত ভ্যাঙ্কুভারে একজন কানাডীয় শিখ নেতার হত্যায় জড়িত — ভারত অভিযোগটি অস্বীকার করে।
এই কূটনৈতিক উত্তেজনার ফলে দূতাবাস, কনস্যুলার ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে। ২০২৩ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪ সালের মার্চে কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ক্ষমতা গ্রহণের পর সম্পর্কে উন্নতি আসে।
কার্নি ও মোদি জুন মাসে কানাডায় অনুষ্ঠিত জি৭ সম্মেলনের ফাঁকে সাক্ষাৎ করেন এবং নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগে সম্মত হন। উভয় কূটনীতিক ইতোমধ্যেই দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
আনন্দ বলেন, মোদির সঙ্গে তার বৈঠক ছিল ‘কার্নির সঙ্গে মোদির আলোচনার গতি ধরে রাখার প্রচেষ্টা’।

তিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আইন প্রয়োগ ও নিরাপত্তা সংলাপ বজায় রেখে এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিস্তৃত করে কানাডা ও ভারত তাদের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনায়, ভারত ও কানাডা উভয়ই এখন একে অপরের সঙ্গে কাজ করতে আরো আগ্রহী হয়েছে।

নয়াদিল্লিতে সফর শেষে আনন্দ বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে এবং মুম্বাইয়ের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গেছে।

কানাডায় ভারতের বাইরে সবচেয়ে বড় শিখ সম্প্রদায় বাস করে। এই সম্প্রদায়ের মধ্যেই রয়েছে ‘খালিস্তান’ আন্দোলনের কর্মীরা — যারা ভারতের শিখ ধর্মাবলম্বীদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের দাবি জানায়।

অটোয়া ২০২৩ সালে অভিযোগ তোলে, ভারত ভ্যাঙ্কুভারে খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হারদীপ সিং নিজজারের হত্যায় জড়িত এবং অন্যান্য শিখ কর্মীদেরও লক্ষ্যবস্তু করেছে।

১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর থেকেই শুরু হওয়া খালিস্তান আন্দোলনকে ঘিরে একজন প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা ও একটি যাত্রীবাহী বিমানে বোমা হামলার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে।

এই ইস্যুটি ভারতের সঙ্গে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশের সম্পর্কেরও দীর্ঘদিনের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু।


পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষ, নিহত কয়েক ডজন

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

পাকিস্তান-আফগানিস্তানের অস্থিতিশীল সীমান্তে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। বুধবার ভোরের দিকের এই সংঘাতে এক ডজনেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক ও সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। গত সপ্তাহের প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর নতুন এই সহিংসতায় দুই দেশের সীমান্তের ভঙ্গুর শান্তি আবারও ভেস্তে গেছে।

২০২১ সালে তালেবান কাবুলের ক্ষমতা দখলের পর দুই দেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মাঝে সবচেয়ে ভয়াবহ লড়াই হয়েছে গত সপ্তাহে। যদিও ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিতর্কিত সীমান্তজুড়ে দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মাঝে এই ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়মিতই ঘটে।

আফগান তালেবান বলেছে, বুধবার ভোরের দিকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী স্পিন বোলদাক জেলায় হামলা চালিয়েছে। এতে ২০ তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। এছাড়া পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্তে রাতভর সংঘর্ষে আফগানিস্তানের আরও প্রায় ৩০ জন বেসামরিক নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন।

পাকিস্তান বলেছে, সীমান্তের অপর প্রান্তে স্পিন বোলদাকের বিপরীতে অবস্থিত চামান জেলায় ‌তালেবান বাহিনীর হামলায় পাকিস্তানের চার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী ওরাকজাই জেলায় পৃথক ঘটনায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে জঙ্গিদের সংঘর্ষে দেশটির আধা-সামরিক বাহিনীর অন্তত ছয় সদস্য নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছেন।

দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর দুই কর্মকর্তা ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ওই সংঘর্ষে ৯ জঙ্গিও নিহত হয়েছেন। দেশটিতে গত সপ্তাহে এক জঙ্গি হামলায় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ১১ সদস্য নিহত হন। ওরাকজাইয়ের সংঘর্ষ নিয়ে মন্তব্যের অনুরোধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

তবে কাবুল বলেছে, পাকিস্তান স্পিন বোলদাকে হামলা চালিয়েছে। যদিও কাবুলের এই অভিযোগকে অসত্য ও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।


ইসরাইলি কারাগারের লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন মুক্ত ফিলিস্তিনিরা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ইসরাইলি আটক থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাদের কারাগারে কেমন ছিলেন সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন ফিলিস্তিনিরা। তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার।

প্রতিবেদননে বলা হয়—আব্দাল্লাহ আবু রাফে নামের এক ফিলিস্তিনি তার ইসরাইল থেকে মুক্তির অনুভূতিকে ‘অসাধারণ’ বলে বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ছিলাম এক কসাইখানায়, কারাগারে নয়। দুর্ভাগ্যবশত, আমরা ‘ওফার কারাগার’ নামের এক কসাইখানায় ছিলাম। সেখানে এখনো অনেক তরুণ পুরুষ আটক রয়েছে। ইসরাইলি কারাগারের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। সেখানে কোনো বিছানা নেই—তারা সবসময় বিছানা নিয়ে যায়। খাবারের অবস্থাও খুবই খারাপ। সেখানে জীবনযাপন সত্যিই কঠিন।’

আরেক মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দি, ইয়াসিন আবু আমরা, ইসরাইলি কারাগারের পরিস্থিতিকে ‘খুব, খুবই খারাপ’ বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘খাবার, নির্যাতন, মারধর—সবকিছুই খারাপ ছিল। কোনো খাবার বা পানীয় দেওয়া হতো না। আমি টানা চার দিন কিছু খাইনি। এখানে (খান ইউনিস) তারা আমাকে দুটি মিষ্টি দিয়েছে, আমি সেগুলোই খেয়েছি।’

আরেকজন মুক্তিপ্রাপ্ত, সাঈদ শুবাইর, যিনি সোমবার মুক্তি পান, বলেন তিনি তার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছেন না।

তিনি বলেন, ‘এই অনুভূতি বর্ণনাতীত। লোহার শিক ছাড়াই সূর্য দেখা—এই অনুভূতি বর্ণনা করার মতো নয়। আমার হাত এখন হ্যান্ডকাফমুক্ত। স্বাধীনতা অমূল্য।’

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরাইল প্রায় ২৫০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে, যারা আজীবন বা দীর্ঘ মেয়াদের সাজা ভোগ করছিলেন। এছাড়া, গাজা থেকে যুদ্ধ চলাকালে আটক করা আরও প্রায় ১,৭১৮ জনকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের মতে, এই দ্বিতীয় দলটি ‘জোরপূর্বক নিখোঁজ’ হিসেবে বিবেচিত ছিল।


banner close