টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার লড়াইয়ে বিরোধী জোটের বিপক্ষে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার দেশটির লোকসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ ধাপের ভোটগ্রহণ চলছে।
তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে এদিন সকাল ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই কেন্দ্রগুলোর সামনে ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা গেছে।
রাজধানী নয়াদিল্লিসহ ভারতের ৫৮টি নির্বাচনি এলাকায় ষষ্ঠ ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশটির ৮৯.৫ শতাংশ আসনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে। আগামী ১ জুন সপ্তম ও শেষ ধাপে ৫৭টি আসনে ভোটগ্রহণের মাধ্যমে ৬ সপ্তাহব্যাপী বিশাল এ নির্বাচনি কর্মযোগ্য শেষ হবে। ভোটের ফল প্রকাশ হবে আগামী ৪ জুন।
এদিন রাজধানীতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ায় ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, বিরোধী দল কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীর মতো বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে আজ ভোট দিতে দেখা গেছে।
এদিকে দলের শতাধিক কর্মীকে আটকের অভিযোগ তুলে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিক্ষোভ করেছেন পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) প্রেসিডেন্ট মেহবুবা মুফতি। এ বিষয়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেছেন বলেও জানিয়েছেন নির্বাচনে অনন্তনাগ-রাজৌরি এলাকা থেকে ভোটে দাঁড়ানো এই নেত্রী।
অপরদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে ভোট দিতে যাওয়ার সময় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের বাধার মুখে পড়েন এ আসনে বিজেপির প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল। এ নিয়ে দুই পক্ষের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়ায়।
চলমান এই নির্বাচনকে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। মোদির রাজনৈতিক আধিপত্যেরও পরীক্ষা হবে এই নির্বাচনে। এবার নির্বাচিত হলে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর পর দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে টানা তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসবেন তিনি।
নির্বাচনের প্রথম ৫ ধাপে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ষষ্ঠ দফার ভোটের আগে দেশটির কিছু জায়গায় তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রিতে উঠেছে। ভোটকেন্দ্রে টানতে নির্বাচনি কর্তৃপক্ষ ভোটারদের জন্য ফ্যান, তাঁবু ও পানির ব্যবস্থা করেছে বলে জানানো হয়েছে।
ইতোমধ্যে হয়ে যাওয়া ভোটে মোদির বিজেপির জয়ের ব্যাপারেই ইঙ্গিত দিয়েছে বেশিরভাগ জরিপ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাশীদ কিদওয়াই বলেন, ‘ভোটগ্রহণ শুরুর প্রথম দিকে মনে হয়েছিল, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন প্রতিযোগিতায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মোদি। তবে এখন আমরা এক ধরনের পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। বিরোধী দলগুলো প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করছে এবং মনে হচ্ছে মোদির দল বিপর্যস্ত।’
এ কারণেই ভোটারদের নিজের দলের প্রতি আকৃষ্ট করতে মোদিকে মুসলিম-বিদ্বেষী বক্তৃতা দিতে দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্রমবর্ধমান বেকারত্বকে নির্বাচনি প্রচারের কেন্দ্রে রেখেছে বিরোধীরা। এতে মোদি এতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছেন যে নির্বাচনে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
শুরুতে নির্বাচনি প্রচারে মোদি তার গত ১০ বছরের শাসনামলে দেশের দরিদ্র নাগরিকদের আর্থিক সুবিধা, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, পাকা টয়লেট ও নারীদের বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে রান্নার গ্যাস দেওয়ার মতো কাজগুলো তুলে ধরেন। তবে প্রথম ধাপের ভোটে প্রত্যাশা অনুযায়ী ভোটারদের সাড়া না পেয়ে পদ্ধতি বদলান তিনি। এরপর কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম নাগরিকদের বেশি সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে হিন্দু জাতীয়তাবাদকে উস্কে দেওয়া শুরু করেন তিনি।
চিত্রকর্মটি বেশ পুরোনো। গড়পড়তা চোখে দেখে অনেকে হয়তো বলবেন, এ আর এমন কী, ভয়ংকরদর্শী মানুষের মাথায় চেপে বসেছে ভিনগ্রহী কোনো বস্তু। তবে ঝানু চোখের রায় হবে ভিন্ন। খুঁটিয়ে দেখলে তিনি ঠিকই বুঝবেন, ছবিটি যেনতেন কিছু নয়। কারণ, এর আঁকিয়ের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। তিনি স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী সালভাদর দালি।
সালভাদর দালির ওই চিত্রকর্ম গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যে নিলামে বিক্রি হয়েছে। নামী শিল্পী, তাই দামটাও আকাশছোঁয়া। পরিচয় প্রকাশ না করা কেউ একজন সেটি কিনে নিয়েছেন ৪৫ হাজার ৭০০ পাউন্ডে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা সাড়ে ৭৪ লাখ টাকার বেশি। অবাক করা বিষয় হলো- চিত্রকর্মটি মাত্র ১৫০ পাউন্ডে (২৪ হাজার টাকা) কিনেছিলেন জন রাসেল (ছদ্মনাম) নামের এক ব্যক্তি।
জন রাসেল একজন শিল্পকর্ম বিক্রেতা। তার সঙ্গে ঘটনাটি ঘটেছিল দুই বছর আগে। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজে একটি বাড়ির পুরোনো জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছিল। সেখানেই ওই চিত্রকর্ম এক চোখ দেখার সুযোগ পান রাসেল। চিত্রকর্মের এক কোণে ছিল দালির স্বাক্ষর। আর পেছনে ছিল যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত নিলামকারী প্রতিষ্ঠান সদবি’স-এর স্টিকার।
‘এটি হয়তো নকল’- ঠিক এ কথাই প্রথম মাথায় এসেছিল রাসেলের। তবে একটু ঝুঁকি নিতে দোষ কী? যদি ভাগ্য খুলে যায়। চিত্রকর্মটির দরাদরি শুরু করেন তিনি। তার সঙ্গে আরও একজন দরদাম করছিলেন। তবে রাসেল হুট করে ১৫০ পাউন্ড বলার পর ওই ব্যক্তি আর আগে বাড়েননি। রাসেলের কথায়, ‘জীবনে এমন সুযোগ একবারই আসে।’
চিত্রকর্মটি যে আসল, তা পরে যাচাই করে বোঝা যায়। এটি আসলে একজন ‘বৃদ্ধ সুলতানের’ ছবি। তিনি আরব্য রজনীর একটি চরিত্র। ১৯৬৬ সালে আরবের এই রূপকথা নিয়ে ৫০০ ছবির এক সিরিজ আঁকতে চেয়েছিলেন সালভাদর দালি। সুলতানের চিত্রকর্মটি তারই একটি অংশ। কোনো কারণে চিত্রকর্মটি সিরিজ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল।
চিত্রকর্মটি কেনার পর রাসেলের অবশ্য আরও কিছু খরচ হয়েছিল। সেটি আসল কি না, যাচাই করতে পকেট থেকে বের হয়েছিল ৪ হাজার পাউন্ড। তবে কেমব্রিজের নিলামকারী প্রতিষ্ঠান চেফিন্জ-এ যখন চূড়ান্ত দামটা হাঁকা হলো তখন রাসেলের মনে হয়েছিল, তিনি যেন ‘চাঁদকে ছাড়িয়ে’ গেছেন। তার একটাই কথা- ‘এটি ছিল অসাধারণ।’
চিত্রকর্মে ‘সুররিয়ালিজম’ বা ‘পরাবাস্তববাদ’ ধারার জন্য সালভাদর দালির খ্যাতি রয়েছে। তার বিখ্যাত শিল্পকর্মগুলোর কয়েকটি হলো- ‘দ্য পারসিসট্যান্স অব মেমোরি’, ‘দ্য এলিফেন্টস’, ‘দ্য বার্নিং জিরাফ’ ও ‘মেটামরফোসিস অব নার্সিসাস’। ১৯৮৯ সালে ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যু হয় এই শিল্পীর।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করার অভিযোগে ৫৪ ভারতীয় নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে ওয়াশিংটন। রোববার ভোরে হাতে হাতকড়া ও পায়ে বেড়ি পরিয়ে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ৫০ তরুণকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাদের বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। খবর এনডিটিভির।
পুলিশ জানায়, দেশে ফেরত আসা এই তরুণরা সবাই অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। এদের মধ্যে ১৬ জন কর্ণালের, ১৫ জন কৈথালের, ৫ জন আম্বালার, ৪ জন যমুনা নগরের, ৪ জন কুরুক্ষেত্রের, ৩ জন জিন্দের, ২ জন সোনিপতের এবং ১ জন করে পঞ্চকুলা, পানিপত, রোহতক এবং ফতেহাবাদের বাসিন্দা।
করনাল পুলিশ জানায়, সবাইকে পরিবারের জিম্মায় দেয়া হয়েছে এবং কোনো দালালের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
করনালের ডিএসপি সন্দীপ কুমার বলেন, ‘আজ আরো কিছু ভারতীয়কে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে হরিয়ানার ৫০ জন। কেবল করনাল জেলা থেকেই রয়েছেন ১৬ জন। সবাই ‘ডংকি রুটে’ যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছিল, কিন্তু আজ ফেরত এসেছে।’
পুলিশ আরো জানিয়েছে, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
এই বছরের শুরুতে, মার্কিন কর্তৃপক্ষ শত শত ভারতীয় দেশে ফেরত পাঠায়। গত জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে, অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে তার প্রশাসন।
চলতি মাসের ১০ তারিখে গাজায় শুরু হয়েছে যুদ্ধবিরতি। কিন্তু এর মধ্যেও হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৯৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩২৪ জন। শনিবার প্রকাশিত বিবৃতিতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, গাজার হাসপাতালে গত দুদিনে ইসরাইলি হামলায় ১৯ জন নিহত এবং সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া শনিবার ভোর থেকে উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ছয় ফিলিস্তিনি আহত হন।
মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি গণহত্যায় এখন পর্যন্ত মোট ৬৮ হাজার ৫১৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন এক লাখ ৭০ হাজার ৩৮২ জন।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল ইসরাইল ও হামাস। এর প্রথম পর্যায়ে ইসরাইলি জিম্মি মুক্তি এবং ফিলিস্তিনি বন্দিবিনিময় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের মতে, ইসরাইল যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের পর থেকে ৮০ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এ সময় তারা বিভিন্ন এলাকা ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। দক্ষিণ গাজার রাফা শহরের উত্তর-পশ্চিমে ইসরাইলি গুলিতে এক ফিলিস্তিনি শিশু গুরুতর আহত হয়। খান ইউনুসের পূর্বে অবস্থিত বানি সুহাইলায় ইসরাইলি বাহিনী একটি গাড়িতে গুলি চালালে দুই বেসামরিক ব্যক্তি আহত হন। শুক্রবার খান ইউনুসের দক্ষিণ-পূর্বে বাড়িতে বিস্ফোরণ এবং মধ্য গাজার পূর্ব দেইর আল-বালাহে কামান হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এসব হামলায় দেইর আল-বালাহে দুই ফিলিস্তিনি ভাই নিহত হন। ইসরাইলের দাবি, তারা তথাকথিত ‘ইয়ালো লাইন’ অতিক্রম করেছে।
হামাস জানিয়েছে, তারা ২০ জন জীবিত ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। এছাড়া ৯ জনের লাশ ফেরত দিয়েছে। এছাড়া বাকি লাশও ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা।
এদিকে, গাজায় মানবিক সহায়তা চালিয়ে যেতে ইসরাইলকে অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিএ। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ইসরাইলের বর্তমান পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে।
দক্ষিণ চীন সাগরে আধ ঘন্টার ব্যবধানে মার্কিন নৌবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার ও একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন সকল ক্রু সদস্য। রোববার এ দুর্ঘটনা ঘটে। উভয় ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে বিস্তর অনুসন্ধান শুরু করেছে দেশটির নৌবাহিনী। খবর সিএনএনের।
রোববার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া বার্তায় মার্কিন নৌবাহিনী জানায়, মেরিটাইম স্ট্রাইক স্কোয়াড্রন (এইচএসএম) ‘ব্যাটল ক্যাটস’র জন্য নিযুক্ত একটি এমএইচ-৬০আর সিহক হেলিকপ্টার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস নিমিৎজ থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করার সময় বিধ্বস্ত হয়।
ঘটনার পর, বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে স্ট্রাইক ফাইটার স্কোয়াড্রন (ভিএফএ) ২২-এর ‘ফাইটিং রেডককস’র জন্য নিযুক্ত একটি এফ/এ-১৮এফ সুপার হর্নেট ফাইটারও নিমিৎজ থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করার সময় বিধ্বস্ত হয়। নৌবাহিনী জানিয়েছে, উভয় আকাশযানের ক্রু সদস্যরা সফলভাবে বেরিয়ে আসেন এবং তাদের নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে।
এই বসন্তে লোহিত সাগরে নৌবাহিনীর দুটি সুপার হর্নেট জেট হারিয়ে যাওয়ার পর একই সিরিজের যুদ্ধবিমান হারানোর এটি তৃতীয় কোনো দুর্ঘটনা। নৌবাহিনীর মতে, একটি পৃথক এফ/এ-১৮ যুদ্ধবিমানের দাম ৬ কোটি ডলারেরও বেশি।
চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় বেশ কয়েকটি দেশ দ্বারা বেষ্টিত গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরের বিভিন্ন অংশের মালিকানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আদালতের রায় অমান্য করে বেইজিং প্রায়ই সমস্ত কৌশলগত জলপথের মালিকানা দাবি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুদেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। মালয়েশিয়ায় সই হওয়া এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প নিজেও।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমও এ সময় উপস্থিতিত ছিলেন। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
এশিয়া সফরের প্রথম ধাপেই এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘাতের পর রোববার ট্রাম্পের সামনে থাই প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এর আগে রোববারই মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর মাধ্যমে এশিয়া সফরের সূচনা করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটিতে আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পর তিনি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াও সফর করবেন।
আর এই সফরের সবচেয়ে আলোচিত অংশ হতে চলেছে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক। দুদেশের বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান ঘটাতে ওই বৈঠকে নতুন চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে ওয়াশিংটন ছাড়ার আগে বিমানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তিনি আশাবাদী যে চীন নতুন চুক্তিতে রাজি হবে যেন আগামী ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ঠেকানো যায়।
এবারের সফরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গেও সাক্ষাতের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। ২০১৯ সালের পর এটিই হতে পারে দুই নেতার প্রথম সাক্ষাৎ।
এদিকে মালয়েশিয়া সফর শেষে সোমবার ট্রাম্প পৌঁছাবেন জাপানে। কাল মঙ্গলবার তিনি জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ট্রাম্প তাকে ‘চমৎকার একজন নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তিনি নিহত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ঘনিষ্ঠ অনুসারী, আর এটি যুক্তরাষ্ট্র-জাপান সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক।
তাকাইচি গত শনিবার ফোনে ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, তার সরকারের প্রধান কূটনৈতিক অগ্রাধিকার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোট আরও শক্তিশালী করা।
এরপর ট্রাম্প আগামী বুধবার পৌঁছাবেন দক্ষিণ কোরিয়ার বন্দরনগরী বুসানে। সেখানে তিনি এপেক সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এরপর আগামী বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ও সি চিন পিংয়ের মধ্যে বৈঠক হবে। আর এটি হবে ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার পর সি চিন পিংয়ের সঙ্গে প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ। বৈঠকে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ নিরসনের সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সীমান্তপথগুলো বন্ধ থাকার পনেরো দিন পূর্ণ হলো। এই দীর্ঘস্থায়ী স্থবিরতায় উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা সরাসরি ও পরোক্ষভাবে কোটি কোটি ডলারের ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন আফগান ব্যবসায়ীরা।
করাচি বন্দরের মাধ্যমে আফগান পণ্যের ট্রানজিট স্থগিত হওয়ায়, আফগানিস্তানের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নতুন বিকল্প বাণিজ্যপথ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।
আফগান শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী নূরুদ্দিন আজিজি বলেন, এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো আফগান কৃষক, ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সীমান্তপথ বন্ধ, আফগান পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে, একই সঙ্গে পাকিস্তানের মাধ্যমে ট্রানজিটও স্থগিত। আমরা এখন এমন বিকল্প বাণিজ্যপথ গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, যাতে আফগান পণ্য আঞ্চলিক বাজারে প্রবেশ করতে পারে। গত চার বছর ধরে আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি, এখন তা আরও গতিশীল করেছি।’
অন্যদিকে, আফগানিস্তান–পাকিস্তান যৌথ বাণিজ্য চেম্বার জানিয়েছে, সীমান্ত বন্ধ থাকার কারণে দুদেশের বেসরকারি খাত ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে, রপ্তানি ও ট্রানজিট কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
চেম্বারের কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে হলে রাজনীতি থেকে বাণিজ্যকে আলাদা রাখা জরুরি।
যৌথ চেম্বারের প্রধান নির্বাহী নাকিবুল্লাহ সাফি বলেন, ‘উভয় দেশের বেসরকারি খাত ও বাণিজ্যচেম্বার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং সমস্যার সমাধান খুঁজছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিষয়টি এখন রাজনৈতিক হয়ে পড়েছে। যদি এটি কেবল বাণিজ্যসংক্রান্ত হতো, তবে সীমান্ত পুনরায় খোলার সম্ভাবনা এখনই দেখা যেত।’
কিছু আফগান ব্যবসায়ী জানান, সীমান্ত বন্ধের কারণে তাদের অনেক রপ্তানি পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে।
তবে তারা মনে করেন, বিকল্প বাজার ও বন্দর খোঁজা পাকিস্তানের ওপর আফগানিস্তানের বাণিজ্যিক নির্ভরতা কমাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
ব্যবসায়ী ওমিদ হায়দারি বলেন, ‘তোরখাম, গুলাম খান ও স্পিন বলদাক দিয়ে রপ্তানি প্রায়ই বাঁধাগ্রস্ত হয়, এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। সরকার যদি নীমরোজ ও ইসলাম কালা বন্দর ব্যবহার করে তুরস্ক ও ভারতের মতো বাজারে রপ্তানি বাড়াতে উৎসাহ দেয়, তবে তা বড় পদক্ষেপ হবে।’
অন্যদিকে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে দেশটির গণমাধ্যম জানিয়েছে, আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য ট্রানজিট সাময়িকভাবে স্থগিত আছে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা না হওয়া পর্যন্ত সীমান্ত বন্ধ থাকবে।
পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাহির আন্দরাবি বলেন, ‘পাকিস্তানি নাগরিকদের জীবন যে কোনো বাণিজ্যপণ্যের চেয়ে মূল্যবান।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, রাশিয়া সফলভাবে তার পারমাণবিক শক্তিচালিত আন্তঃমহাদেশীয় ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘বুরেভেস্তনিক’-এর পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে।
রোববার সকালে এক বিবৃতিতে পুতিন জানান, রাশিয়ার এই অনন্য ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাটি সম্পন্ন হয়েছে গত মঙ্গলবার। খবর স্কাই নিউজের।
দেশটির সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ পুতিনকে জানান, ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার (৮,৭০০ মাইল) দূরত্ব অতিক্রম করেছে এবং হাওয়ায় উড়েছে ১৫ ঘণ্টা ধরে।
পুতিন বলেন, এটি সত্যিই একটি অনন্য অস্ত্র- এমন প্রযুক্তি বিশ্বের অন্য কোনো দেশের নেই। তিনি রাশিয়ার যৌথ বাহিনীর একটি কমান্ড সেন্টার পরিদর্শনের সময় এ কথা বলেন।
‘বুরেভেস্তনিক’ রাশিয়ার উন্নত অস্ত্র কর্মসূচির অংশ, যেটিকে ন্যাটো এসএসসি-এক্স-৯ স্কাইফল নামে চিহ্নিত করেছে। ২০১৯ সালে এই ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রথম আলোচনায় আসে, যখন একটি ব্যর্থ পরীক্ষার পর আর্কটিক অঞ্চলে উদ্ধার অভিযানে প্রাণহানি ঘটে।
রাশিয়ার এই সফল পরীক্ষার মাধ্যমে দেশটির দূরপাল্লার আঘাত ক্ষমতা এবং পারমাণবিক প্রযুক্তির আধুনিকীকরণে আরও এক ধাপ অগ্রগতি হলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার তার এশিয়া সফরের প্রথম ধাপে মালয়েশিয়া পৌঁছেছেন। এই সফরে তিনি আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্য আলোচনায় অংশ নেবেন।
ট্রাম্প সফরের শেষ দিনে দক্ষিণ কোরিয়ায় সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ওয়াশিংটন ছাড়ার আগে তিনি ইঙ্গিত দেন, ২০১৯ সালের পর প্রথমবারের মতো উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গেও তার সাক্ষাৎ হতে পারে।
জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর এটি ট্রাম্পের প্রথম এশিয়া সফর। তিনি বলেন, সি চিন পিংয়ের সঙ্গে একটি ব্যাপক বাণিজ্য চুক্তি করার আশা করছি।
তার মতে, চীন নতুন ১০০ শতাংশ শুল্ক এড়াতে একটি সমঝোতায় আসবে।
মালয়েশিয়ায় ট্রাম্প দেশটির সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করবেন এবং থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির সাক্ষী থাকবেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে বলেন, আমরা পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই একটি শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করব।
এ সফরে ট্রাম্পের জাপান সফরের সম্ভাবনাও রয়েছে। তিনি নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বৈঠক করবেন। তাকাইচি জানান, জাপান-মার্কিন জোটকে শক্তিশালী করা আমার প্রশাসনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
এই সফরের মূল আকর্ষণ হবে দক্ষিণ কোরিয়া, যেখানে ট্রাম্প ও সি চিন পিংয়ের বৈঠককে কেন্দ্র করে বিশ্ব বাজার নিবিড়ভাবে নজর রাখছে। আলোচনায় শুল্ক সংকট ও বিরল-পৃথিবী খনিজ নিয়ন্ত্রণে চীনের ভূমিকা মুখ্য বিষয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে ট্রাম্প ও কিম জং উনের মধ্যেও সাক্ষাতের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
কিম জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন যদি পিয়ংইয়ংকে পরমাণু অস্ত্র ত্যাগে চাপ না দেয়, তবে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে রাজি থাকবেন।
যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে গাজায় অব্যাহত রয়েছে ইসরায়েলি হামলা। পশ্চিম তীরে ধরপাকড় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি তৃতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করলেও উপত্যকায় এখনো থামেনি ইসরায়েলি আগ্রাসন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, গাজার মধ্যাঞ্চলের নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় এক ফিলিস্তিনি নিহত এবং অন্তত চারজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আল-আওয়াদা হাসপাতাল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের এই হামলার লক্ষ্য ছিল ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন ইসলামিক জিহাদের এক সদস্য।
এদিকে, গত শনিবার গাজা শহরে একটি ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ধসে নয় বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
‘এখনো নিরাপত্তা নেই’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রোববার সকালে থেকেই গাজার পূর্বাঞ্চলজুড়ে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইসরায়েলি বাহিনী আবারও ভারী বিস্ফোরক ব্যবহার করছে।
পূর্ব দেইর আল-বালাহ ও আল-জুয়াইদা এলাকাসহ একাধিক স্থানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, যা ইসরায়েলি সেনাদের ঘোষিত প্রত্যাহার সীমারেখারও বাইরে।
নুসেইরাতের সাম্প্রতিক হামলার পর স্থানীয়রা আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন, যুদ্ধবিরতি থাকলেও যেকোনো সময় আকাশ থেকে হামলা হতে পারে। অনেকের মতে, ‘এখনো কোনো নিরাপত্তা নেই।’
গাজায় কাতারি সেনা মোতায়েনের ইঙ্গিত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত শনিবার এশিয়া সফরের পথে কাতারের আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে কাতারি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পরে ট্রাম্প জানান, গাজায় স্থিতিশীলতা আনার প্রচেষ্টা অগ্রসর হচ্ছে এবং তার ২০ দফা গাজা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে একটি ‘আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী’ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেখানে প্রয়োজনে কাতারি সেনারাও থাকতে পারেন।
তিনি বলেন, বাহিনীটি খুব দ্রুতই গঠন করা হতে পারে এবং ‘এখনই নেতৃত্ব বাছাই চলছে।’
পশ্চিম তীরে ধরাপাকড়
অন্যদিকে, দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন করে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেবরন এলাকায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেরুজালেমের কাছে আল-রাম শহরে গুলিতে এক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
এছাড়া, নাবলুস শহরেও অভিযান চালানো হলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানিয়েছে ওয়াফা।
‘গাজায় যুদ্ধবিরতি ব্যর্থ হতে দিতে পারে না বিশ্ব’
ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক পরিচালক এডুয়ার্ড বেগবেডার বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি শিশুদের বেঁচে থাকা, নিরাপত্তা এবং মর্যাদার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। বিশ্ব এই যুদ্ধবিরতির সুযোগ ব্যর্থ হতে দিতে পারে না।
একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, বিবৃতিতে বেগবেডার বলেছেন, ‘গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের ফলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে। আমি শিশুদের ওপর যে মাত্রার প্রভাব দেখেছি, তা কেবল শব্দ এবং সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এটি এমন একটি প্রভাব, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে থেকে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অপুষ্টি, রোগ এবং শীতকালীন ঠাণ্ডার মতো প্রতিরোধযোগ্য হুমকি থেকে শিশুদের জীবন বাঁচাতে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে দৌড়াচ্ছি।’
বেগবেদার গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশকারী সকল ক্রসিং খুলে দেওয়ার এবং ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের জন্য ছাড়পত্রের প্রক্রিয়া দ্রুত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন- এমন শিশুদের অবিলম্বে চলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া উচিত।
গত ৯ অক্টোবর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইসরায়েল এবং হামাস একটি শান্তি পরিকল্পনার চুক্তিতে পৌঁছেছে। প্রথম পর্যায়ে মধ্যে সমস্ত বন্দিদের মুক্তি এবং ইসরায়েলি সৈন্যদের একটি রেখার বাইরে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ১০ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়।
এদিকে, গাজা অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একই সময়ে ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি বেশি মানুষ আহত হয়েছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
চলতি বছরের শুরুতেও একটি যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ইসরায়েল গত ২৭ মে থেকে গাজায় পৃথক সাহায্য বিতরণ উদ্যোগ শুরু করে। এই পদক্ষেপের পর অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষ প্রকট হয়ে উঠেছিল।
ইসরায়েলি বাহিনী খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও গুলি চালিয়ে যায়। এর ফলে শত শত মানুষ নিহত হয়। সেই সঙ্গে দুর্ভিক্ষে শিশুসহ বহু মানুষের মৃত্যু হয়।
গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।
আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে গাজার পরিস্থিতি
শীতের আগমনীর সঙ্গে সঙ্গে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। জরুরি আশ্রয় ও শীতের সামগ্রী প্রবেশে ইসরায়েলের অব্যাহত বাঁধার কারণে বিপদে পড়েছেন লক্ষাধিক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি। এমনটাই জানিয়েছে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ (UNRWA)। বার্তাসংস্থা আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
ইউএনআরডব্লিউএ এক বিবৃতিতে বলেছে, শীতপ্রবণ গাজায় আশ্রয় ও উষ্ণতার প্রয়োজন ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য নির্ধারিত তাঁবু, কম্বল ও অন্যান্য শীতকালীন সামগ্রী এখনো জর্ডান ও মিসরে সংস্থাটির গুদামেই আটকে আছে। সংস্থাটি অবিলম্বে মানবিক সহায়তা অবাধে প্রবেশ করতে দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও ইসরায়েল গাজায় ইউএনআরডব্লিউএর কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে দেবে না।
উল্লেখ্য, এর একদিন আগেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বলেছিল যে, গাজার ফিলিস্তিনিরা যথেষ্ট পরিমাণ মানবিক সহায়তা পাচ্ছেন না। আদালত ইসরায়েলকে অবশ্যই সহায়তা প্রবেশে অনুমতি দিতে এবং ‘অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার’ করা বন্ধের নির্দেশ দেয়।
অক্টোবরের শেষ রোববার মানেই পর্তুগাল তথা ইউরোপজুড়ে সময় বদলের উৎসব। এ বছর আজ ২৬ অক্টোবর ২০২৫-এ ইউরোপের দেশগুলোতে ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে শেষ হবে ‘ডে-লাইট সেভিং টাইম’ বা গ্রীষ্মকালীন সময় এবং শুরু হবে শীতকালীন বা স্ট্যান্ডার্ড টাইম। এ নিয়মের মূল লক্ষ্য ছিল দিনের আলোকে সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগানো।
গ্রীষ্মকালে যখন সূর্য ভোরে ওঠে ও দেরিতে অস্ত যায়, তখন সময় এক ঘণ্টা এগিয়ে দেওয়ার ফলে সন্ধ্যার আলোতে বেশি সময় কাজ করা যায়। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হতো- অন্তত একসময় তাই ভাবা হতো। কিন্তু অক্টোবর এলে দিন ছোট হতে শুরু করে, তাই আবার ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক সময় ফিরিয়ে আনা হয়।
তবে এই সময় বদলের নিয়ম নিয়ে এখন ইউরোপেই নানা মতভেদ। অনেকেই মনে করেন, আধুনিক যুগে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের সেই পুরোনো যুক্তি আর কার্যকর নয়। বরং বছরে দুইবার সময় বদলের ফলে মানুষের ঘুমের ছন্দ, কাজের তাল ও শরীরের জৈবিক ঘড়ি বিঘ্নিত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতোমধ্যে এ ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে পুনর্বিবেচনা শুরু করেছে।
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের সময়ের পার্থক্যও এ পরিবর্তনের কারণে কিছুটা বদলায়। উদাহরণস্বরূপ- যখন লন্ডনে ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া হবে, তখন বাংলাদেশের সঙ্গে সময়ের পার্থক্য হবে ৬ ঘণ্টা, যা আগে ৫ ঘণ্টার পরিবর্তে।
ঘড়ির কাঁটা পেছানো মানে শুধু সময়ের সূচক বদল নয়, বরং ঋতুর পরিবর্তনের এক প্রতীকী বার্তা। দিন ছোট হয়, সন্ধ্যা নামে তাড়াতাড়ি আর শীতের আগমনী বার্তা ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। সময় চলে যায় তার নিজের ছন্দে, মানুষ শুধু সেই ছন্দে নিজেকে মানিয়ে নেয়- এক ঘণ্টা এগিয়ে কিংবা এক ঘণ্টা পিছিয়ে।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোকে নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বব্যাপী মাদক ব্যবসায় ভূমিকা রাখার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছেন পেত্রোর স্ত্রী, পুত্র ও কলম্বিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এক বিবৃতিতে বলেন, গুস্তাভো পেত্রো ক্ষমতায় আসার পর থেকে কলম্বিয়ায় কোকেন উৎপাদন কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে যা যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকানদের ক্ষতি করছে।
নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট পেত্রো সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ জানান, তিনি একজন মার্কিন আইনজীবী নিয়োগ করেছেন এবং নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে লড়বেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মাদকবিরোধী লড়াই করার ফলেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটা এক অদ্ভুত পরিহাস; কিন্তু আমরা কখনো পিছু হটব না।
মাদকবিরোধী অভিযানের নামে সম্প্রতি দক্ষিণ ক্যারিবীয় উপকূলীয় অঞ্চলে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। উপকূলীয় অঞ্চল থেকে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। ফলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পেত্রোর সরকার ও মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
পেত্রো যুক্তরাষ্ট্রের মাদকবাহী নৌকায় বিমান হামলার কড়া সমালোচনা করে মার্কিনীদের খুনি বলে অভিহিত করেন। তিনি দাবি করেন, এসব নৌকার কিছুতে নিরীহ কলম্বিয়ান নাগরিক ছিলেন। গত দুই মাসে ক্যারিবীয় সাগরে অন্তত দুটি মার্কিন হামলায় কলম্বিয়ার নাগরিক নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
টিভিতে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বিজ্ঞাপনের জন্য কানাডার ওপর ক্ষেপেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দুই দেশের বাণিজ্য আলোচনা। এ অবস্থায় সেই বিতর্কিত বিজ্ঞাপনটি সরিয়ে নিচ্ছে কানাডীয় প্রশাসন।
কানাডার সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ অন্টারিওর প্রধান ডগ ফোর্ড জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা ফের শুরু করার লক্ষ্যে তিনি সেই বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করবেন।
গত শুক্রবার ফোর্ড জানান, কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনির সঙ্গে আলোচনার পর সোমবার থেকে বিজ্ঞাপন প্রচার স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
ওই বিজ্ঞাপনে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের ১৯৮৭ সালের এক বক্তব্য ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির সমালোচনা করা হয়েছিল।
ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবার এক পোস্টে অভিযোগ করেন, রিগান ফাউন্ডেশন ঘোষণা করেছে, কানাডা ভুয়া উপায়ে একটি বিজ্ঞাপনে রোনাল্ড রিগানের বক্তব্য ব্যবহার করেছে, যেখানে তিনি শুল্ক নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
এরপর গত শুক্রবার ট্রাম্প আরও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অন্টারিও সরকারের অর্থায়নে প্রচারিত ওই বিজ্ঞাপন কানাডার পক্ষ থেকে তার বৈশ্বিক শুল্কনীতি বিষয়ে আসন্ন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রভাবিত করার চেষ্টা। এ সময় কানাডার সঙ্গে সব বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন তিনি।
অন্টারিও সরকার জানিয়েছে, প্রায় সাড়ে সাত কোটি কানাডীয় ডলার ব্যয়ে বিজ্ঞাপনটি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার করা হয়েছে। বিজ্ঞাপনটিতে ১৯৮৭ সালে রিগানের শুল্কবিরোধী রেডিও ভাষণের অংশ দেখানো হয়।
যদিও ডগ ফোর্ড বলেন, আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করেছি। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত বার্তা পৌঁছে দিতে পেরেছি। তিনি আরও জানান, সপ্তাহান্তে বিজ্ঞাপনটি চলবে, বিশেষত টরন্টো ব্লু জেস ও লস অ্যাঞ্জেলেস ডজার্সের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচের বিরতিতে।
কিন্তু ট্রাম্পের ক্ষোভে এরই মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও বেড়েছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কুশ দেশাই বলেন, অন্টারিওর বিজ্ঞাপনটি বিভ্রান্তিকরভাবে রিগানের ভাষণ ব্যবহার করেছে। কানাডা আলোচনায় আগ্রহী নয়, তারা কেবল রাজনৈতিক খেলা খেলছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নীতির পরিবর্তনকে মাথায় রেখে তার সরকার দেশটির বাইরের বাজারে রপ্তানি দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমাদের যা নিয়ন্ত্রণে আছে, সেদিকেই মনোযোগ দিতে হবে।
ফোর্ড ও কারনি রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন আদর্শের হলেও উভয়ে বর্তমান শুল্কনীতিকে কানাডার অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করেন।
তবে কানাডার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিজ্ঞাপন আসলে উল্টো ফল দিয়েছে। ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড্যানিয়েল বেলান্দ মন্তব্য করেন, বিজ্ঞাপনটি বড় ধরনের কূটনৈতিক ভুল। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে উত্তেজিত করে সম্পর্ক আরও খারাপ করেছে।
কানাডার সাবেক মন্ত্রী জেসন কেনি বলেন, অন্টারিওর বিজ্ঞাপনটি রিগানের বক্তব্যকে বিকৃত করেনি, বরং হুবহু পুনঃপ্রচার করেছে। রিগান ফাউন্ডেশনের বর্তমান নেতৃত্ব হোয়াইট হাউসের চাপে নতি স্বীকার করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল রাজনীতিতে ট্রাম্পের ক্ষতিকর প্রভাবের আরেকটি দৃষ্টান্ত।
অন্যদিকে ম্যানিটোবা প্রিমিয়ার ওয়াব কিনু ও ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার প্রধান ডেভিড এবি ফোর্ডের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিনু বলেন, যদি আপনি হ্রদে পাথর ছুড়ে দেন আর কোনো ছিটা না ওঠে, বুঝতে হবে আপনি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছেন। বিজ্ঞাপনটি কাজ করছে বলেই ট্রাম্প এতটা ক্ষুব্ধ।
গাজা উপত্যকায় হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে অন্তত চারটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে বিভিন্নভাবে সমর্থন ও সহায়তা দিচ্ছে ইসরায়েল। শনিবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। গাজায় সর্বশেষ গঠিত একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতা হুসাম আল-আস্তাল স্কাই নিউজে বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
আস্তাল জানান, ‘প্রজেক্ট নিউ গাজা’ নামে একটি পরিকল্পনার আওতায় চারটি বিদ্রোহী গ্রুপ একযোগে কাজ করছে। এসব গ্রুপের লক্ষ্য গাজা থেকে হামাসের শাসন অপসারণ। তিনি আরও দাবি করেন, এই উদ্যোগে অন্য নেতাদের মধ্যে ইয়াসের আবু শাবাব ও আশরাফ আল-মানসিও যুক্ত হয়েছেন।
স্কাই নিউজের তথ্যমতে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ)-এর পোস্ট থেকে মাত্র ৭০০ মিটার দূরে গাজা সীমান্তের ইয়েলো লাইন এলাকায় আস্তালের সদরদপ্তর অবস্থিত। আইডিএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয়ে একটি ‘গ্রিন জোন’ চুক্তি হয়েছে। গ্রিন জোন এলাকায় কোনো গোলাগুলি বা বিমান হামলা চালানো হবে না বলে নিশ্চয়তা দিয়েছে আইডিএফ।
প্রচারিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, আস্তালের ব্যবহৃত কিছু গাড়িতে হিব্রু লেখা ছিল যা পরে মুছে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, এসব যানবাহন গাজার বাইরে থেকে আনা হয়েছে এবং তারা কালোবাজার থেকে হামাসের কিছু অস্ত্রও কিনেছে।
স্কাই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আবু শাবাব বিদ্রোহী গোষ্ঠীর এক সদস্য দাবি করেছেন, ইসরায়েল তাদের অস্ত্র, নগদ অর্থ ও যানবাহন গোপনে গাজায় আনতে সহায়তা করেছে। অন্য দুটি গোষ্ঠীও নাকি একই ধরনের সহায়তা পেয়েছে।
তবে আল-মানসি সংগঠনের নেতারা আইডিএফের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের কথা অস্বীকার করে জানিয়েছেন, তারা শুধু জেলা অফিসের মাধ্যমে সমন্বয় করে থাকে যা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত হয়।
গাজায় নতুন বেসামরিক প্রধান নিয়োগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি কার্যকর ও টেকসইভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এক অভিজ্ঞ কূটনীতিককে নতুন বেসামরিক প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বেসামরিক প্রধান হিসেবে স্টিভ ফ্যাগিন এই দায়িত্ব পালন করবেন।
ফ্যাগিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল প্যাট্রিক ফ্র্যাঙ্কের সঙ্গে কাজ করবেন। প্যাট্রিক ইতোমধ্যেই ‘সিভিল-মিলিটারি কোঅর্ডিনেশন সেন্টারের’ সামরিক প্রধান হিসেবে দায়িত্বে আছেন। অক্টোবরের ১০ তারিখে যুদ্ধবিরতির হওয়ার পর ১৭ অক্টোবর ইসরায়েলে এই কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। এ কেন্দ্রটির কাজ হলো যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন পর্যবেক্ষণ এবং গাজায় ত্রাণ সরবরাহসহ অন্যান্য লজিস্টিক কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।
জানা গেছে, প্রায় ২০০ মার্কিন সেনা বর্তমানে কেন্দ্রটিতে কাজ করছেন। সেখানে ইসরায়েল, ইউরোপীয় দেশগুলো, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, জাতিসংঘ ও বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে একযোগে কাজ করছেন মার্কিন সেনারা।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গত শুক্রবার কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছেন। তিনি এ পদক্ষেপকে ঐতিহাসিক উদ্যোগ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ায় উত্থান-পতন থাকবে। তবে এখন পর্যন্ত অগ্রগতি নিয়ে আমাদের যথেষ্ট আশাবাদী।
স্টিভ ফ্যাগিন দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করছেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সম্প্রতি ফ্যাগিন একই সঙ্গে ইয়েমেনের রাষ্ট্রদূতের পাশাপাশি ইরাকের বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক হিসেবেও তিন মাস দায়িত্ব পালন করেছেন।
নিরপেক্ষ প্রশাসনের হাতে ক্ষমতা দিতে একমত হামাস-ফাতাহ
যুদ্ধবিরতির পর গাজার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কমিটি গঠনে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনের প্রধান রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। নিরপেক্ষ এ প্রশাসনের হাতে গাজা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে হামাস, ফাতাহসহ অন্যান্য মুক্তিকামী সংগঠন।
গত শুক্রবার কায়রোতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে হামাসের ওয়েবসাইটে যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকা পরিচালনার দায়িত্ব একটি অস্থায়ী নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ প্রশাসনিক কমিটি আরব দেশগুলো ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় গাজায় মৌলিক সেবা পরিচালনা করবে।
এছাড়া যৌথ বিবৃতিতে জাতীয় লক্ষ্যকে সামনে রেখে সকল দলের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। দলগুলো ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা (পিএলও) পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে তার ভূমিকা শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিম তীরের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে পিএলও- ফাতাহ। এ সংগঠনের সঙ্গে আদর্শ ছাড়াও রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে হামাসের। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে কায়রোতে হামাস ও ফাতাহ প্রতিনিধিদলের মধ্যে মার্কিন সমর্থিত গাজা যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উভয় পক্ষ ভবিষ্যতেও বৈঠক চালিয়ে যাওয়ার এবং ইসরায়েলি সরকারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ফিলিস্তিনি অভ্যন্তরীণ ঐক্য জোরদার করার বিষয়ে একমত হয়েছে।
এই বিষয়ে হামাসের মিত্র ইসলামিক জিহাদসহ পিএলও-ভুক্ত গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব ফিলিস্তিনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন মিসরের গোয়েন্দা প্রধান হাসান রাশাদ।
২০০৬ সালের নির্বাচনের পর হামাস ও ফাতাহর রাজনৈতিক বিরোধ একসময় সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সংঘর্ষ দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনি ঐক্যের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে উভয় দল যুদ্ধ পরবর্তী গাজা প্রশাসনের জন্য একটি যৌথ কমিটি গঠনে সম্মত হয়েছে।
২০০৭ সালে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হামাস আগেই জানিয়েছে যে, তারা যুদ্ধোত্তর গাজার প্রশাসন চালাতে আগ্রহী নয়। তবে সংগঠনের যোদ্ধাদের নিরস্ত্র করার বিরোধিতা করছে হামাস।