ভারতের লোকসভা নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়েছে। সংসদের ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ২৪০ আসনে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। আর প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস পেয়েছে ৯৯টি আসন। ভারতের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে গতকাল বুধবার এইফল প্রকাশ করা হয়েছে।
ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, অন্যান্য দলের মধ্যে সমাজবাদী পার্টি (এসপি) পেয়েছে ৩৭টি, তৃণমূল কংগ্রেস ২৯টি, ডিএমকে ২২টি, তেলেগু দেসম পার্টি (টিডিপি) ১৬টি, জনতা দল (জেডি-ইউ) ১২টি, শিবসেনা (উদ্ভব) ৯টি, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপিএসপি) ৮টি ও শিবসেনা (এসএইচএস) ৭টি আসন।
লোক জনশক্তি পার্টি (রাম বিলাস) পাঁচটি আসন পেয়েছে। চারটি করে আসনে জয় পেয়েছে ওয়াইএসআরসিপি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) ও কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সিস্ট)-সিপিআই (এম)। ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ (আইইউএমএল), আম আদমি পার্টি (আপ) ও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) তিনটি করে আসন পেয়েছে।
দুটি করে আসন পেয়েছে জনসেনা পার্টি (জেএনপি), কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সিস্ট–লেনিনিস্ট) (লিবারেশন)-সিপিআই (এমএল) (এল), জনতা দল-জেডি (এস), ভিসিকে, কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (সিপিআই), রাষ্ট্রীয় লোক দল (আরএলডি) ও জম্মু অ্যান্ড কাশ্মির ন্যাশনাল কনফারেন্স (জেকেএন)। এছাড়া বেশ কয়েকটি দল একটি করে আসনে জয় পেয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ৭ জন। চূড়ান্ত ফলে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স-এনডিএ জোট মোট আসন পেয়েছে ২৮৬টি। আর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে মোট ২০২টি আসন।
এর আগে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এককভাবে ৩০৩টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। তখন বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ পেয়েছিল ৩৫২টি আসন। একক দল হিসেবে এবার সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে বিজেপি। তবে সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় ২৭২টি আসনে জিততে পারেনি তারা। তাই সরকার গঠনে এনডিএ জোট মিত্রদের ওপর নির্ভর করতে হবে তাদের।
২০১৯ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস এককভাবে ৫২টি আসন পেয়েছিল। আর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ইউপিএ জোট পেয়েছিল ৯৪টি আসন। লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে সরকার গঠনে একটি দলকে ২৭২টি আসনে জয় পেতে হয়।
নাইজেরিয়ার মধ্যাঞ্চলে একটি ক্যাথলিক স্কুল থেকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ অন্তত ৩১৫ জনকে অপহরণ করেছে সশস্ত্র হামলাকারীরা। এটি দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম বড় গণঅপহরণ বলে মনে করা হচ্ছে।
নাইজেরিয়ার খ্রিস্টান সংগঠন ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব নাইজেরিয়া (সিএন) জানিয়েছে, নাইজার রাজ্যের পাপিরি এলাকার সেন্ট মেরিজ স্কুল থেকে ৩০৩ শিক্ষার্থী ও ১২ জন শিক্ষককে তুলে নেওয়া হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন পরিসংখ্যান অনুযায়ী অপহৃত ব্যক্তির সংখ্যা ২০১৪ সালের কুখ্যাত চিবুক অপহরণের (২৭৬ শিক্ষার্থী) সংখ্যাকেও পেরিয়ে গেছে।
পুলিশ জানায়, স্থানীয় সময় গত শুক্রবার রাত ২টার দিকে সশস্ত্র হামলাকারীরা স্কুলে ঢুকে পড়ে এবং সেখানেই থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের অপহরণ করে নিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা ডমিনিক আদামু বিবিসিকে বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে ওই স্কুলে পড়ে। তারা অপহৃত হয়নি। কিন্তু যাদের বাচ্চা অপহরণের শিকার, তারা সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ঘটনাটি সবাইকে হতবাক করে দিয়েছে।’
অন্যদিকে এক নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, তার দুই ভাগনি (বয়স ৬ ও ১৩) অপহৃত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি শুধু চাই তারা যেন বাড়ি ফিরে আসে।’
পুলিশ জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী অপহৃতদের সন্ধানে বনাঞ্চলে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথমে ২১৫ জনকে অপহরণ করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেলেও পরে জানা যায়, ৩১৫ জনকে অপহরণ করা হয়েছে।
নাইজার রাজ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, সম্ভাব্য হামলার গোয়েন্দা সতর্কবার্তা পাওয়ার পর সব আবাসিক স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেন্ট মেরিজ স্কুল সে নির্দেশ অমান্য করেছে, যা শিক্ষার্থী ও কর্মীদের ‘অবাঞ্ছিত ঝুঁকির’ মুখে ফেলেছে। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
নাইজেরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র (স্থানীয়ভাবে যাদের ‘ব্যান্ডিট’ বা ডাকাত বলা হয়) অপহরণকে বড় ব্যবসা বানিয়েছে। মুক্তিপণ আদায় ঠেকাতে আইন করে অপহরণে মুক্তিপণ দেওয়া নিষিদ্ধ করা হলেও বাস্তবে তাতে তেমন ফল আসেনি।
গত শুক্রবারের ঘটনাটি ছিল চলতি সপ্তাহে তৃতীয় গণ-অপহরণ। এর আগে গত সোমবার প্রতিবেশী কেব্বি রাজ্যের একটি আবাসিক স্কুল থেকে ২৫ জনের বেশি মুসলিম ছাত্রী অপহৃত হয়। একই সপ্তাহে দক্ষিণাঞ্চলীয় কওয়ারা রাজ্যের একটি গির্জায় হামলায় ২ জন নিহত ও ৩৮ জন অপহৃত হয়।
এদিকে, দেশে বাড়তে থাকা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে প্রেসিডেন্ট বোলা তিনুবু তার বিদেশ সফর (এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ) সবই বাতিল করেছেন। কেন্দ্র সরকার ৪০টির বেশি ফেডারেল কলেজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। কিছু রাজ্যে সব পাবলিক স্কুলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ক্রমবর্ধমান অপহরণ ও হামলার ঘটনায় নাইজেরিয়ায় জনরোষ বাড়ছে। মানুষ দাবি করছে, শিশু ও গ্রামাঞ্চলের নিরাপত্তায় সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এই অপহরণের ঘটনা এমন সময় ঘটেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ ডানপন্থী অনেকেই দাবি করছেন- নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টানদের ওপর পরিকল্পিত হামলা করা হচ্ছে। তবে নাইজেরিয়ার সরকার এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। বাস্তবে দেশটিতে হামলার শিকার হয় মুসলিম ও খ্রিস্টান উভয়েই।
এক সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাদের আদর্শে আপত্তি জানানো যেকোনো ব্যক্তিকেই আক্রমণ করে- মুসলিম, খ্রিস্টান বা ধর্মনিরপেক্ষ সবাইকে।’
আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়ায় স্কুলছাত্রী অপহরণ এখন নিরাপত্তাহীনতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়দের মতে, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছে স্কুল হলো কৌশলগত লক্ষ্যবস্তু- যেখানে হামলা করলে বেশি মনোযোগ পাওয়া যায়।
ইউনিসেফ গত বছর বলেছিল, সংঘাতপ্রবণ ১০টি অঙ্গরাজ্যের মাত্র ৩৭ শতাংশ স্কুলে হুমকি শনাক্তের প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা রয়েছে।
১০ বছর আগে বোকো হারাম নাইজেরিয়ার চিবুক শহরের একটি স্কুল থেকে ২৭৬ ছাত্রীকে অপহরণ করে আন্তর্জাতিক মনোযোগ কাড়ে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তরাঞ্চলে ডজন ডজন ‘ব্যান্ডিট’ বা ডাকাত গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা সাধারণত নিরাপত্তাহীন, দূরবর্তী গ্রামগুলোতে হামলা চালায়।
ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। দুই নেতার মধ্যে দীর্ঘদিনের মতবিরোধ থাকায় তাদের এই সাক্ষাৎ ঘিরে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ছিল ব্যাপক আগ্রহ। বৈঠকের আগে নানা বিশ্লেষণে বলা হচ্ছিল, অতীতের বিরোধ ভুলে কি তারা নতুন করে সহযোগিতার বার্তা দেবেন, নাকি পুরোনো তিক্ততার ছাপ থেকেই যাবে।
কিন্তু হোয়াইট হাউসে নিজেদের প্রথম সরাসরি বৈঠকটি তারা অত্যন্ত সফলভাবে শেষ করেছেন। সেখানে তারা ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল। একে অন্যের প্রশংসাও করেছেন। এমনকি তা তাদের শরীরী ভাষাতেও প্রকাশ পেয়েছে। নিউইয়র্ক শহরের অপরাধ দমন ও জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বৈঠক শেষে যে চিত্র সামনে এসেছে, তা আশাব্যঞ্জকই বলা যায়। হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ছিল অপ্রত্যাশিতভাবে উষ্ণ ও আন্তরিক। বৈঠকের শুরুতেই দুজনকে হাসিমুখে পরস্পরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা যায়। পুরো আলোচনার সময় ট্রাম্প বেশ আন্তরিক ছিলেন, আর মামদানিও ছিলেন আত্মবিশ্বাসী ও স্থির।
বামঘেঁষা ডেমোক্র্যাট জোহরান মামদানি খুব অল্প বয়সেই নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন। তিনি সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন। অভিবাসী পরিবারের সন্তান হয়েও মার্কিন রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসা তাকে বিশেষভাবে আলোচনায় এনেছে। নিউইয়র্কের বহু ভোটার বিশ্বাস করেন, তার নেতৃত্বে শহরের রাজনীতি ও প্রশাসনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যোগ হবে।
এই তরুণ মেয়র যে এখন জাতীয় পর্যায়ে নিজের অবস্থান শক্ত করতে চাইছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তার এই সাক্ষাৎ তা আরও স্পষ্ট করে তুলল।
বৈঠকের সময় ট্রাম্পকে শান্ত ও মনোযোগী দেখা যায়। তাকে কয়েকবার মামদানির প্রতি উৎসাহসূচক আচরণ করতে দেখা গেছে। তিনি আলতো করে মামদানির হাত চাপড়ে দেন। এটিকে সমর্থন ও শুভকামনার ভঙ্গি হিসেবে দেখা যেতে পারে। সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময়ও দুই নেতাকে খুব আন্তরিক দেখা গেছে। এমনকি রসিকতার ছলে ট্রাম্প মামদানির বাহুতে হালকা ঘুষিও মারেন। এটি অভিজ্ঞ রাজনীতিকের স্নেহপূর্ণ আচরণের মতো মনে হয়েছে।
এই দৃশ্যটি অনেকের নজর কেড়েছে। কেননা এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে যে, দুই নেতা নিজেদের আগের অবস্থান থেকে সরে এসে নতুনভাবে সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী।
ওভাল অফিসে বৈঠকের সময় ট্রাম্প তার ডেস্কে বসেছিলেন, আর মামদানি পাশে দাঁড়িয়ে দুহাতে হাত জোড়া করেছিলেন। দৃশ্যটি যেন অভিজ্ঞ রাজনীতিকের পাশে দাঁড়ানো তরুণ নেতার প্রতীকী অবস্থানকে ফুটিয়ে তুলেছিল। ট্রাম্পের লাল চওড়া টাই এবং মামদানির নীল সরু টাই দুটি রংই রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দলীয় পরিচয় বহন করে। দুই দলের প্রতীকী উপস্থিতি সত্ত্বেও দুজনের আচরণে ছিল সহযোগিতার মনোভাব।
বৈঠকের আগেই ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, আলোচনার পরিবেশ অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ হবে। বৈঠক শেষে তার বক্তব্যেও একই সুর শোনা যায়। ট্রাম্প বলেন, তিনি (মামদানি) ভালো কাজ করলে আমি অবশ্যই খুশি হব। তার এই মন্তব্যকে রাজনৈতিক সমীকরণে একটি নতুন পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন অনেক বিশ্লেষক।
মামদানির সঙ্গে ব্যক্তিগত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, আমি যা ভেবেছিলাম, তার চেয়েও অনেক বেশি বিষয়ে আমরা একমত হতে পেরেছি। এক জায়গায় আমরা একমত: আমরা চাই আমাদের এই প্রিয় শহরটি খুব ভালো থাকুক।
মামদানিও বৈঠকের পর জানিয়েছেন, নিউইয়র্কের স্বার্থে তিনি প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চান।
রাজনৈতিকভাবে পরস্পরবিরোধী দুই নেতার মধ্যে এমন ইতিবাচক সাক্ষাৎ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রাজনীতিতে নতুন বার্তা দিয়েছে। এই বৈঠককে দুই নেতার মধ্যে নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার সূচনা না বলা হলেও আগের সম্পর্কের টানাপড়েন পেছনে ফেলে তারা যে সামনে এগোতে আগ্রহী তা অনুমান করাই যায়।
দুবাই এয়ার শো-২০২৫ -এ শুক্রবার ভারতীয় তেজস যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে এর পাইলট নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে পাকিস্তানের গর্ব জেএফ-১৭ থান্ডার বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে।
এরই মধ্যে পাকিস্তান একটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশটির সঙ্গে এই যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য সমঝোতা স্মারক সই করেছে, যা দেশটির প্রতিরক্ষা রপ্তানি সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।
শুক্রবার দুবাই থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তান সরকার। তবে, কোন কোন দেশে কতটি জেএফ-১৭ বিক্রি করা হবে—এ তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
যদিও দেশটির কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, আরও কয়েকটি দেশ জেএফ-১৭ কেনার ব্যাপারে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছে, যা পাকিস্তানের বিমান শিল্পের প্রতি বৈশ্বিক আস্থার প্রতিফলন।
এর আগে, ২০২৪ সালে আজারবাইজান জেএফ-১৭ ব্লক–৩ কেনার জন্য ৪.৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিল।
এদিকে এয়ারশোতে অংশ নেওয়ার অংশ হিসেবে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল জহির আহমেদ বাবর সিদ্দিকি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলোর বিমানবাহিনীর প্রধান ও সামরিক নেতাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন।
তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্ডারসেক্রেটারি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (পাইলট) ইব্রাহিম নাসের আল–আলাওয়ি এবং ইউএই এয়ার ফোর্স অ্যান্ড এয়ার ডিফেন্সের কমান্ডার মেজর জেনারেল রাশিদ মোহাম্মদ আল–শামসির সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
বৈঠকে উন্নত প্রশিক্ষণ উদ্যোগ, এয়ারোস্পেস প্রযুক্তি সহযোগিতা, যৌথ পরিচালন সমন্বয়সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
ইউএই সামরিক নেতৃত্ব পাকিস্তান বিমানবাহিনীর উদ্ভাবন, পেশাদারিত্ব ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রশংসা করে এবং দুই পক্ষই যৌথ মহড়া, পেশাগত বিনিময় ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে একমত হয়।
দুবাই এয়ার শোতে জেএফ-১৭ ব্লক–৩ ছিল আকর্ষণের কেন্দ্রে। প্রদর্শনীতে পাকিস্তানের জেএফ-১৭ থান্ডার ব্লক–৩ এবং সুপার মাশশাক প্রশিক্ষণ বিমান তুলে ধরা হয়।
উন্নত জেএফ-১৭ ব্লক–৩ এয়ারশোর মূল আকর্ষণে পরিণত হয়—এর আধুনিক অ্যাভিওনিক্স, বাড়তি কৌশলগত সক্ষমতা, উন্নত অস্ত্র সংযোজন ক্ষমতা এবং শক্তিশালী রাডার ও ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম দর্শনার্থী ও বিশেষজ্ঞদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
এই স্বীকৃতি পাকিস্তানের নিজস্ব এয়ারস্পেস সক্ষমতার বৈশ্বিক সুনাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
জেএফ-১৭ থান্ডার হলো পাকিস্তান ও চীনের যৌথ উন্নয়নে তৈরি হালকা, মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান। এটি পাকিস্তান বিমানবাহিনীর আধুনিক বহরের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে এবং আকাশে লড়াই, ভূমিতে হামলা, নজরদারি—বহুমুখী মিশনে ব্যবহৃত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি দ্বিদলীয় কমিশন তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষকে ‘সুযোগসন্ধানীভাবে’ ব্যবহার করে চীন তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা পরীক্ষা ও প্রচার করেছে।
গত মঙ্গলবার প্রকাশিত মার্কিন-চীন অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা পর্যালোচনা কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেইজিং ‘ভারতের সঙ্গে চলমান সীমান্ত উত্তেজনা এবং ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা শিল্প লক্ষ্যের প্রেক্ষাপটে কার্যকর অস্ত্রের অত্যাধুনিকতা পরীক্ষা এবং প্রচারের জন্য ৪ দিনের এই সংঘাতকে কাজে লাগিয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সংঘাতটি ছিল প্রথমবারের মতো চীনের আধুনিক অস্ত্রব্যবস্থার পরীক্ষা, যা বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে কাজ করেছিল- এগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘HQ-9’ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ‘PL-15’ আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং ‘J-10’ যুদ্ধবিমান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন জুন মাসে পাকিস্তানের কাছে ৪০টি পঞ্চম প্রজন্মের ‘জে-৩৫’ যুদ্ধবিমান, ‘কেজে-৫০০’ বিমান এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিক্রির প্রস্তাব দেয়।
সংঘর্ষের পরের দিনগুলোতে চীনা দূতাবাসগুলো ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ‘সাফল্যের’ প্রশংসা করেছে এবং অস্ত্র বিক্রি জোরদার করার চেষ্টা করেছে।
মার্কিন রিপোর্টটি কমিটির শুনানি এবং গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যার মধ্যে জনসাধারণের জন্য উপলব্ধ তথ্য এবং মিডিয়া রিপোর্ট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের পর ফরাসি রাফাল যুদ্ধবিমানের ‘মর্যাদাহানি’ করার জন্য চীন একটি ‘ভুল তথ্য প্রচারণা’ ও চালিয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ফরাসি গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে, চীন তাদের নিজস্ব জে-৩৫ বিমানের পক্ষে ফরাসি রাফাল বিক্রি বাধাগ্রস্ত করার জন্য একটি বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা শুরু করেছে। চীনের অস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করা বিমানের ধ্বংসাবশেষের এআই ছবি এবং ভিডিও গেমের ছবি প্রচারের জন্য ভুয়া সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।’
এতে বলা হয়েছে, চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তারা ইন্দোনেশিয়াকে ইতোমধ্যেই প্রক্রিয়াধীন রাফাল জেট ক্রয় বন্ধ করতে রাজি করিয়েছেন।
প্রতিবেদনকে ‘ভুয়া’ বলছে চীন
তবে চীন এই প্রতিবেদনটিকে ‘ভুল তথ্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং এক সংবাদ সম্মেলনে ‘রাফাল নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা’ সম্পর্কে প্রশ্নের জবাব দেন।
তিনি বলেন, ‘আপনি যে তথাকথিত কমিশনের কথা উল্লেখ করেছেন, তা সর্বদা চীনের বিরুদ্ধে আদর্শিক পক্ষপাত পোষণ করে এবং এদের কথা বলার মতো কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘কমিশনের রিপোর্ট নিজেই বিভ্রান্তিকর।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে এক সংকটজনক পরিস্থিতিতে পড়েছে কিয়েভ। ইউক্রেনকে হয় মর্যাদা-স্বাধীনতা হারানোর ঝুঁকি, নতুবা ওয়াশিংটনের সমর্থন হারানোর আশঙ্কা-এ দুটি কঠিন পথের একটিকে বেছে নিতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
শুক্রবার প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে টেলিভিশনে বার্তায় দেশের নাগরিকদের উদ্দেশে জেলেনস্কি বলেন, ‘এটা আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তগুলোর একটি…। এখন ইউক্রেন খুব কঠিন এক সিদ্ধান্তের মুখে। মর্যাদা হারানো বা গুরুত্বপূর্ণ মিত্রকে হারানোর ঝুঁকি।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আমি ২৪ ঘণ্টা লড়ে যাব, যাতে এই পরিকল্পনার অন্তত দুটি বিষয় বাদ না পড়ে। ইউক্রেনের মর্যাদা ও স্বাধীনতা।’
ট্রাম্পের দেওয়া সময়সীমা
প্রায় চার বছর আগে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ শেষ করতে ২৮ দফার একটি প্রস্তাব দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, প্রস্তাবে সম্মতির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময়ই ‘উপযুক্ত’।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, পরিকল্পনায় রাজি করাতে যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে গোয়েন্দা তথ্য ও অস্ত্র সহায়তা বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে।
মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই প্রস্তাবে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের দাবিই প্রতিফলিত হয়েছে-ইউক্রেনকে অতিরিক্ত এলাকা ছেড়ে দেওয়া, সেনাবাহিনী ছোট করা এবং ন্যাটোতে যোগদানে নিষেধাজ্ঞা। বদলে রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে এবং মস্কোকে আবার জি ‘৮’ এ ফেরানো হবে।
মস্কোর প্রতিক্রিয়া
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব ‘আলাস্কা বৈঠকের আগের আলোচনার আধুনিক সংস্করণ’। তিনি জানান, পরিকল্পনাটি ‘চূড়ান্ত শান্তিচুক্তির ভিত্তি হতে পারে’, তবে এ নিয়ে এখনো ‘গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়নি’।
পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেন এতে রাজি নয়, আর তাদের ইউরোপীয় মিত্ররাও এখনো মনে করছে রাশিয়াকে যুদ্ধক্ষেত্রে কৌশলগতভাবে হারানো সম্ভব।’
চাপ বাড়ছে যুদ্ধে
এমন সময় ইউক্রেনের ভেতরেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। পশ্চিমাঞ্চলীয় টারনোপিলে একটি আবাসিক ভবনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত ও ৯৪ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে ক্রেমলিন দাবি করেছে, খারকিভের ওস্কিল নদীর পূর্ব তীরে প্রায় ৫ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা আটকা পড়েছে। কিয়েভ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
পূর্বের পোকরোভস্ক ও মিরনোহ্রাদ শহর দখলে রাশিয়ার তীব্র লড়াই চলছে। দক্ষিণের জাপোরিঝঝিয়াতেও মস্কো অগ্রসর হচ্ছে।
ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার অগ্রগতি জেলেনস্কিকে বুঝিয়ে দেবে যে ‘এখনই আলোচনায় বসা পরে বসার চেয়ে অনেক ভালো।’
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জিম টাউনসেন্ড বলেন, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা কমছে, যা কিয়েভকে চুক্তির দিকে ঠেলে দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র বলে’ আপনারা যদি রাজি না হন, আমরা আর সহায়তা দেব না তাহলে জেলেনস্কির ওপর চুক্তি গ্রহণের প্রবল চাপ তৈরি হবে।’
ইউরোপের সতর্কতা
মার্কিন পরিকল্পনা নিয়ে ইউরোপকে আগাম জানানো হয়নি। শুক্রবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টে ইমানুয়েল মাখোঁ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার ও জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ ম্যার্জ জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানালেও ইউক্রেনকে ‘অটল সমর্থনের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ইইউ–এর পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া ক্যালাস বলেন, ‘আমরা সবাই যুদ্ধের শেষ চাই, কিন্তু কীভাবে শেষ হবে তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়ার কোনো অধিকার নেই ইউক্রেনের কাছ থেকে কোনো ছাড় আদায় করার।’
বার্লিন থেকে আল জাজিরার ডমিনিক কেইন জানান, ইউরোপ সমর্থনে ঐক্য দেখালেও কোন কোন ছাড় গ্রহণযোগ্য হবে তা এখনো বড় প্রশ্ন। তবে তার মতে, শেষ পর্যন্ত মস্কো, কিয়েভ ও ওয়াশিংটনে এই তিন রাজধানীতে সিদ্ধান্ত হবে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার বলেছেন, ইউক্রেনে শান্তির জন্য মার্কিন প্রস্তাব সংঘাতের সমাধানের ভিত্তি হতে পারে। কিন্তু যদি কিয়েভ এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে তবে রুশ বাহিনী আরও এগিয়ে যাবে। খবর রয়টার্সের।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইউক্রেনকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত একটি মার্কিন শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সময় দিচ্ছেন যা ন্যাটো, ভূখণ্ড এবং রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোর স্বীকৃতির বিষয়ে রাশিয়ার মূল দাবিগুলোকে সমর্থন করে।
পুতিন রুশ নিরাপত্তা পরিষদের একটি সভায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে এটি একটি চূড়ান্ত শান্তিপূর্ণ সমাধানের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
পুতিন আরও বলেন, ২৮-দফা পরিকল্পনা নিয়ে এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়নি। তবে মস্কো এর একটি অনুলিপি পেয়েছে। পুতিন বলেন, ইউক্রেন এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ছিল কিন্তু কিয়েভ বা ইউরোপীয় শক্তি কেউই এই বাস্তবতা বুঝতে পারেনি যে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে অগ্রসর হচ্ছে এবং শান্তি না হলে অগ্রসর হতে থাকবে।
রাশিয়া ইউক্রেনের ১৯ শতাংশের বেশি অর্থাৎ ১ লাখ ১৫ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ন্ত্রণ করে, যা দুই বছর আগের তুলনায় মাত্র এক শতাংশ বেশি। মস্কো পুরো ডনবাসের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়, যার মধ্যে দনেৎস্ক এবং লুহানস্ক এবং সমগ্র খেরসন এবং ঝাপোরিঝিয়া অন্তর্ভুক্ত।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার বলেছেন, ইউক্রেন তার মর্যাদা এবং স্বাধীনতা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। অপরদিকে পুতিন বলছেন, রাশিয়া আগস্টে আলাস্কায় তাদের শীর্ষ সম্মেলনের আগে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছে এবং ওয়াশিংটনের অনুরোধ অনুসারে মস্কো আপস করেছে।
পুতিন বলেন, মার্কিন প্রশাসন এখন পর্যন্ত ইউক্রেনীয় পক্ষের সম্মতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিয়েভের অস্বীকৃতি সত্ত্বেও রুশ বাহিনী ৪ নভেম্বর উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনীয় শহর কুপিয়ানস্কের প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে এবং ইউক্রেন যদি মার্কিন পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে তবে এ ধরনের অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, কিয়েভ যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে না চায় এবং তা করতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে তাদের এবং ইউরোপীয় যুদ্ধবাজদের উভয়েরই বোঝা উচিত যে কুপিয়ানস্কে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো অনিবার্যভাবে ফ্রন্টের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও পুনরাবৃত্তি হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গত এক মাসে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৭ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ।
গত শুক্রবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনিসেফের মুখপাত্র রিকার্ডো পিরেস বলেন, নিহতদের মধ্যে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসে বিমান হামলায় নিহত এক মেয়ে শিশুও রয়েছে। এর আগের দিন ইসরায়েলের একাধিক হামলায় মারা যায় আরও সাত শিশু।
রিকার্ডো পিরেস বলেন, ‘এটা যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ঘটছে। চিত্রটা ভয়াবহ।’ তার ভাষায়, ‘এসব সংখ্যা নয়’ প্রতিটি ছিল একটি শিশু, একটি জীবন।’
২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় ৬৪ হাজারের বেশি শিশু হতাহত হয়েছে বলে আগের হিসাবে বলেছে ইউনিসেফ।
সেভ দ্য চিলড্রেন জানায়, চলতি বছর প্রতি মাসে গড়ে ৪৭৫ শিশু আজীবন শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছে। সংস্থাটির মতে, গাজা এখন ‘আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিশু অঙ্গহানি ভুক্তভোগীর এলাকা।’
গাজার মানবিক পরিস্থিতিও ক্রমেই অবনতির দিকে। ইসরায়েলের অব্যাহত নিষেধাজ্ঞার কারণে খাদ্য, চিকিৎসা ও আশ্রয়সামগ্রী প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ক্ষুধাজনিত কারণে শিশুদের মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে।
এই সপ্তাহে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় নতুন করে কয়েক দফা হামলা চালায়। এতে অন্তত ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। ইসরায়েল দাবি করে, খান ইউনুসে তাদের সেনাদের ওপর গুলির ঘটনার জবাবেই এই হামলা। তবে হামাস বলেছে, এসব হামলা ‘বিপজ্জনক উসকানি’ এবং এটি ‘গণহত্যা পুনরায় শুরুর ইঙ্গিত’।
ডাক্তারস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) জানায়, গাজায় নারী ও শিশুসহ বহু আহত ব্যক্তিকে তারা চিকিৎসা দিয়েছে-যাদের কারও হাত-পায়ে খোলা হাড় বেরিয়ে এসেছে, কারও মাথায় গুলির ক্ষত। এক এমএসএফ নার্স জানান, ড্রোন থেকে ছোড়া গুলিতে আহত ৯ বছরের এক শিশুকেও তারা চিকিৎসা দিয়েছেন।
গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের রোগী মোহাম্মদ মালাকা বলেন, হামলার পর চোখ খুলে দেখেন তার বাবা ও ভাইয়েরা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। চারদিকে মানুষের চিৎকার, তাবুগুলো ছাই হয়ে গেছে।’
ইউনিসেফ বলছে, শীতের মৌসুমে বাস্তুচ্যুত লাখো শিশু খোলা আকাশের নিচে বা বন্যায় প্লাবিত অস্থায়ী তাঁবুতে রাত কাটাচ্ছে। পিরেস বলেন, ‘গাজায় শিশুদের জন্য কোথাও নিরাপদ জায়গা নেই।’
গাজায় ৭ কিমি. লম্বা টানেলের সন্ধান পেল ইসরায়েল
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের একটি বড় টানেল খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
নতুন সন্ধান পাওয়া টানেলটি সাত কিলোমিটার লম্বা, ২৫ ফুট গভীর। বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছে আইডিএফ। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের।
পোস্টে বলা হয়েছে, ৭ কিলোমিটার লম্বা টানেলটি গাজার দক্ষিণের ঘনবসতিপূর্ণ রাফা শহরের নিচ দিয়ে গিয়েছে।
এছাড়া জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআডিব্লিউএ, শিশুদের স্কুল, হাসপাতাল এবং মসজিদের মধ্য দিয়ে টানেলটি গিয়েছে বলেও দাবি করেছে আইডিএফ।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরও দবি করে, হামাস কমান্ডাররা অস্ত্র সংরক্ষণ, আক্রমণ পরিকল্পনা এবং বসবাসের জন্য এই টানেলটি ব্যবহার করত।
আইডিএফের তথ্যমতে, নতুন সন্ধান পাওয়া টানেলটি সাত কিলোমিটার লম্বা, ২৫ ফুট গভীর এবং ভেতরে অন্তত ৮০টি গোপন কক্ষ রয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে হামাসের হাতে নিহত ইসরায়েলের সেনা সদস্য হাদার গোল্ডইনকে এই সুড়ঙ্গে রাখা হয়েছিল।
প্রায় ১১ বছর পরে চলতি বছরের নভেম্বর মাসের শুরুতে সেখান থেকেই গোল্ডইনের দেহাবশেষ খুঁজে পায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী।
আইডিএফ আরও জানায়, গত মে মাসে হামাসের অন্যতম শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ারের সঙ্গে নিহত মুহাম্মদ শাবানাসহ সিনিয়র হামাস কমান্ডারদের কমান্ড পোস্ট হিসেবে ব্যবহৃত কক্ষগুলো খুঁজে পেয়েছে তারা।
পৃথক পোস্টে আইডিএফ জানায়, হাদার গোল্ডইন হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এক হামাস সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। গাজার যে সুড়ঙ্গে হাদার গোল্ডিনের মরদেহ রাখা হয়েছিল, সেটি ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ, ৮০টি কক্ষ রয়েছে বলে জানায় আইডিএফ।
গাজায় তহবিলে বিপর্যয়কর পতন
অক্টোবরে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকে গাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য অনুদান সংগ্রহে ‘বিপর্যয়কর’ ধস নেমেছে। ত্রাণকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা সতর্ক করে বলছেন, বিশ্ববাসী ভুল ধারণা করছে যে ফিলিস্তিনিদের আর সাহায্যের প্রয়োজন নেই। অথচ সামনেই তীব্র শীত। লাখ লাখ মানুষ অসুস্থতা, ক্ষুধা ও আবাসন সংকটে ধুঁকছে।
অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক মেগান হল জানান, যুদ্ধ চলাকালে তিনি সপ্তাহে প্রায় ৫,০০০ ডলার সংগ্রহ করতে পারতেন, যা অক্টোবরে পুরো মাসে কমে মাত্র ২,০০০ ডলারে ঠেকেছে। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির কারণে বিশ্ব মনে করছে সংকট কেটে গেছে। অথচ দুই বছর ধরে বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের কাছে শীতের কাপড় বা কম্বলটুকুও নেই।’
শুধু ব্যক্তিগত উদ্যোগই নয়, গাজা স্যুপ কিচেনের মতো বড় উদ্যোগেও অনুদান ৫১% কমেছে। সেভ দ্য চিলড্রেন এবং অক্সফামের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাও অনুদানে বড় পতন দেখছে। জাতিসংঘের মতে, গাজার ৭০% মানুষ অর্থাৎ প্রায় ১৯ লাখ মানুষ ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামোর মধ্যে কোনোমতে টিকে আছে।
গাজা নগরীর ২৮ বছর বয়সি আহমেদ আল-দিব জানান, ১৪ সদস্যের পরিবারের খাবার ও ভাড়ার জন্য তিনি পারস্পরিক সহায়তা তহবিলের ওপর নির্ভরশীল। সেপ্টেম্বরে তিনি তিন হাজার ডলার সহায়তা পেলেও অক্টোবরে তা ৩০০ ডলারে নেমে আসে। ভাড়া দিতে না পারলে পরিবার নিয়ে তাকে রাস্তায় থাকতে হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন তার প্রথম মেয়াদে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন, তখন মার্কিন কর্মকর্তারা ভেনিজুয়েলার এই শক্তিশালী ব্যক্তির পতন কী হতে পারে তা মূল্যায়ন করার জন্য একটি যুদ্ধের খেলা শুরু করেছিলেন।
ফলাফলগুলি দেখিয়েছে যে ভেনিজুয়েলার অভ্যন্তরে দীর্ঘস্থায়ী বিশৃঙ্খলা এবং সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, কারণ সামরিক ইউনিট, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল এবং এমনকি জঙ্গল-ভিত্তিক গেরিলা গোষ্ঠীগুলি তেল সমৃদ্ধ দেশটির নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে। যদিও ট্রাম্প ভেনিজুয়েলা সম্পর্কে তার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ব্যাখ্যা করেননি, তবে তিনি মাদুরোকে একজন অপরাধী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং ভেনিজুয়েলার সীমানায় সৈন্য, যুদ্ধজাহাজ এবং বিমান মোতায়ের করেছেন।
সোমবার, ট্রাম্প বলেছিলেন যে তিনি ভেনিজুয়েলার নেতার সাথে কথা বলতে প্রস্তুত, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত মাদক পাচারে ‘জড়িত’ মাদুরো সরকারকে উৎখাতে তার ঘোষিত লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য স্থল আক্রমণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেবেন না।
সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনী ভেনিজুয়েলার উপকূলের কাছে নৌকায় কমপক্ষে ২১টি হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে কমপক্ষে ৮৩ জন নিহত হয়েছে যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাদক বহন করছিল বরে ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করেছে।
ভেনিজুয়েলার নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া করিনা মাচারো, মাদুরোর স্থলাভিষিক্ত হতে প্রস্তুত। মাচারো বলেছেন যে তিনি একটি জনপ্রিয় ম্যান্ডেট এবং প্রথম দিনেই বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত একটি রূপান্তর পরিকল্পনা নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন।
কিন্তু বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে ইরাক, আফগানিস্তান এবং লিবিয়ার মতো জায়গায় মার্কিন শাসন-পরিবর্তনের হস্তক্ষেপের সাম্প্রতিক ইতিহাস আবারও মাদুরো-পরবর্তী ভেনিজুয়েলায় দেখা দিতে পারে।
‘আমাদের সত্যিই উদ্বিগ্ন করে এমন বিষয় হলো, পরবর্তীতে কী ঘটবে সে সম্পর্কে তাদের কোনও গুরুতর পরিকল্পনা নেই বলে মনে হচ্ছে,’ বলেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের একজন জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক এবং এই বিষয়ের উপর একটি নতুন প্রতিবেদনের লেখক ফিল গানসন, ‘আপনি সরকারে বসতে পারবেন এবং বাকি সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চলে যাবে, এই ধারণাটি আমার মনে হয় কেবল কল্পনা।’
২০১৯ সালে পেন্টাগনের কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়, মাদুরোর উৎখাত - সামরিক অভ্যুত্থান, গণঅভ্যুত্থান বা মার্কিন সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে - ভেনিজুয়েলার ভঙ্গুর কর্তৃত্ববাদী সরকারকে ভেঙে ফেলবে এবং ‘দীর্ঘস্থায়ী সময়ের জন্য বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে যার অবসান হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।’
অনিয়মিত পথে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ ঠেকাতে কনজারভেটিভ সরকারের মতো ব্রিটেনের লেবার সরকারও বড় ধরনের সংস্কার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। আশ্রয়প্রার্থীদের সুরক্ষার সময় পাঁচ বছর থেকে কমিয়ে ৩০ মাসে নামিয়ে আনা এবং সামাজিক সহায়তা সীমিত করার মতো পদক্ষেপের ফলে আশ্রয়ব্যবস্থা আরো কঠোর হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ব্রিটিশ সরকার দাবি করছে, ছোট নৌকায় আগমন ও অনিয়মিত পথের ব্যবহার ঠেকাতে ‘দৃঢ় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা’ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এসব পদক্ষেপ কার্যকর হবে কি-না সেটি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
গত শনিবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিকল্পনার নতুন দিকগুলো তুলে ধরেছে আর সোমবার পার্লামেন্টে পুরো পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়েছে।
শরণার্থীদের ‘অস্থায়ী সুরক্ষা’
সরকারের নতুন সংস্কারে আশ্রয়প্রার্থীদের দেওয়া সুরক্ষাকে ‘অস্থায়ী’ করে ফেলা হচ্ছে। আগে পাঁচ বছরের স্ট্যাটাস পাওয়া যেত; এখন তা কমে দাঁড়াচ্ছে ৩০ মাসে। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে প্রতি দুই বছর ছয় মাসে শরণার্থীর অবস্থা পর্যালোচনা করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশের পরিস্থিতি ‘নিরাপদ’ মনে হলে তাকে ‘নিজ দেশে ফিরে যেতে’ বলা হতে পারে।
এই পরিবর্তন অভিবাসনের ডেনমার্ক মডেল অনুসরণ করে আনা হচ্ছে বলেই ধারণা। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক দেশে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা অন্য দেশে একই ফল দেবে, এমন নিশ্চয়তা নেই।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইগ্রেশন বিশেষজ্ঞ মিহনিয়া কুইবাস বাতা সংস্থা এএফপি-কে বলেন, ‘এগুলো কার্যকর হবে কিনা সেটি আমরা এখনই কিছু বলতে পারি না। বাস্তবায়ন দেখার পরই বোঝা যাবে।’
ব্রিটিশ সরকার আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আবাসন ও সাপ্তাহিক ভাতার বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা বাতিল করতে চায়। কাজ করতে সক্ষম অথচ কাজ করছেন না, এমন ব্যক্তিদের সামাজিক সহায়তা পুরোপুরি বন্ধ করা হতে পারে। একই সঙ্গে যাদের ব্যক্তিগত সম্পদ আছে, তাদের মাধ্যমেই থাকার খরচ আদায়ের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অ্যালেক্স নরিস টাইমস রেডিও-কে বলেন, ‘যাদের সম্পদ আছে তাদের কাছে নিজেদের ব্যয়ের একটা অংশ বহন করা খুব স্বাভাবিক।’
এই কঠোরতা কার্যকর হবে কি?
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাজ্য এখনও অনেকের কাছে আকর্ষণীয় রয়ে গেছে মূলত কয়েকটি কারণে। এগুলো হলো:
ডাবলিন রেগুলেশন থেকে বের হয়ে আসায় ব্রিটেন আর ইউরোপের প্রবেশ পথের দেশে (গ্রিস, ইটালি ইত্যাদি) শরণার্থীদের ফেরত পাঠাতে পারে না। এ কারণে শরণার্থী অধিকার সংস্থাগুলো মনে করে, এই কঠোরতার মাধ্যমে প্রাণ বাঁচাতে পালানো মানুষের আগমন থামবে না।
অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা রিফিউজি কাউন্সিল বলেছে, এই পরিকল্পনা অত্যন্ত অবাস্তব ও অমানবিক। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ৩০ মাস পরপর সুরক্ষা পুনর্মূল্যায়ন করতে সরকারের ৮৭২ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৯৯০ মিলিয়ন ইউরো) অতিরিক্ত খরচ হতে পারে।
আপিলের সুযোগ কমানো
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ ঘোষণা করেছেন, ‘আশ্রয়ের আবেদন করার একটাই সুযোগ থাকবে, এবং আপিলেরও সুযোগ মাত্র একবার।’ সরকার আশা করছে, এতে প্রত্যাখ্যাত ব্যক্তিদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যাবে।
এ ছাড়া একটি স্বাধীন ‘সালিশি’ সংস্থা গঠন করে আপিল প্রক্রিয়াকে আদালতের উপর নির্ভরতা থেকে সরানো হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব পরিবর্তন আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। কারণ:
ইতোমধ্যে অভিবাসন নিয়ে রুয়ান্ডা প্ল্যান বন্ধ হয়ে গেছে।
ফ্রান্স-যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক ‘ওয়ান ইন ওয়ান আউট’ প্রত্যাবর্তন চুক্তিতে আদালতের হস্তক্ষেপ এসেছে।
শিশু–অধিকার ও আইনি বাধা
শিশুদের স্বার্থ সুরক্ষায় জাতিসংঘ কনভেনশনের ৩নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, শিশু সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্তে সর্বোচ্চ বিবেচনা দিতে হবে শিশুর কল্যাণে।’ এতে বোঝা যাচ্ছে, পরিবারকে ফেরত পাঠানো, নাবালকদের সহায়তা কমানো এসব পদক্ষেপ আইনি বাধার মুখে পড়ার ঝুঁকি রাখে।
মিহনিয়া কুইবাস বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মানার উপায় সরকারকে খুঁজতেই হবে।’
ইসিএইচআর থেকে সরে যাওয়ার দাবি
ব্রিটেনের কিছু রাজনীতিক দাবি করছেন, ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশন (ইসিএইচআর) বহাল থাকলে এই সংস্কার কার্যকর হবে না। কারণ এটি আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা ও আপিলের সুযোগ রাখে।
কনজারভেটিভ বিরোধীদলীয় নেতা কেমি বাদেনক এবং রিফর্ম ইউকে-র নেতা জিয়া ইউসুফ বলেছেন, ‘ইসিএইচআর থাকলে অনিয়মিত অভিবাসন থামানো সম্ভব নয়।’ ি
দুবাই এয়ারশোতে ভারতের তেজস যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার পর নিরাপত্তা ও আর্থিক দিক নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে দেশটির নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি বিমান প্রকল্প নিয়ে।
হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (হাল) ও অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির যৌথ উদ্যোগে উন্নত তেজস যুদ্ধবিমান ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রতিরক্ষা কর্মসূচির অন্যতম প্রধান প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত।
২০২১ সালের এক চুক্তির আওতায় ভারত ৮৩টি তেজস এমকে–১এ কিনতে মোট প্রায় ৬.৫ বিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের চুক্তি করে। এতে প্রতিটি বিমানের দাম দাঁড়ায় প্রায় ৪৩ মিলিয়ন ডলার। ট্রেইনার ভ্যারিয়েন্টের মূল্য ছিল একটু কম—প্রায় ৩৯ মিলিয়ন ডলার প্রতিটি।
তবে নতুন অর্ডারের সঙ্গে ব্যয় বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। ২০২৫ সালে তেজস এমকে–১এ–এর আরও ৯৭টি বিমান কেনার জন্য ভারতের সর্বশেষ চুক্তির মূল্য ৭.৮ বিলিয়ন ডলার। এতে প্রতিটি বিমানের সম্ভাব্য মূল্য প্রায় ৮০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি, যা মূল্যস্ফীতি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
রপ্তানির ক্ষেত্রেও তেজসকে আক্রমণাত্মকভাবে বাজারজাত করছে হাল। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেজসের প্রতিটির সম্ভাব্য রপ্তানি মূল্য প্রায় ৪৩ মিলিয়ন ডলার হতে পারে। তবে দুবাইয়ের মতো আলোচিত আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে দুর্ঘটনা ঘটায় বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
একসময় সাশ্রয়ী মূল্যের দেশীয় যুদ্ধবিমান হিসেবে বিবেচিত তেজস প্রকল্প এখন নিরাপত্তা ও ব্যয়-সাশ্রয়—উভয় ক্ষেত্রেই কঠোর নজরদারির মুখে পড়েছে। ভারতের বিমানবাহিনী আধুনিকায়ন ও প্রতিরক্ষা রপ্তানির লক্ষ্য সামনে রেখে এগোতে চাইলে এসব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া পরিকল্পনা ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হতে পারে। তিনি জানান, কিয়েভ যদি এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে, তবে লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত রয়েছে মস্কো। পুতিন জোর দিয়ে বলেন, রাশিয়াকে পরাজিত করার বিভ্রমে আছে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি মার্কিন শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য ইউক্রেনকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনকে অবশ্যই মার্কিন শান্তি পরিকল্পনা মেনে নিতে হবে।
শুক্রবার তার নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠকে পুতিন বলেন, মস্কো পরিকল্পনাটি হাতে পেয়েছে। তিনি বলেন, রাশিয়া নমনীয়তা দেখাতে ইচ্ছুক, তবে লড়াই চালিয়ে যেতেও প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি বলেন, ইউক্রেন এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। পুতিন আরো বলেন, ‘স্পষ্টতই ইউক্রেন এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা এখনো বিভ্রান্তিতে রয়েছে। তারা ভাবছে যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়াকে কৌশলগতভাবে পরাজিত করা সম্ভব।’
পুতিন ২৮ দফা পরিকল্পনাকে ‘একটি নতুন সংস্করণ’ এবং আগস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলাস্কা শীর্ষ সম্মেলনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যা আলোচনা হয়েছিল তার ‘উন্নত সংস্করণ’ বলে অভিহিত করেছেন। মস্কো এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে বলেও জানান রুশ প্রেসিডেন্ট।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে তিনি প্রস্তুত আছেন। তবে ইউরোপের বেশ কিছু মিত্রদেশ বলছে, যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত এ পরিকল্পনাটি রাশিয়ার স্বার্থেই বেশি কাজ করবে।
বৃহস্পতিবার জেলেনস্কির কার্যালয় নিশ্চিত করেছে যে প্রেসিডেন্ট ওই পরিকল্পনার একটি খসড়া হাতে পেয়েছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলবেন।
তবে অপ্রকাশিত এই পরিকল্পনার বিষয়ে জেলেনস্কির কার্যালয় থেকে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে জেলেনস্কির কার্যালয় বলছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আশা করছেন কূটনৈতিক সুযোগ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় মূল দিকগুলো নিয়ে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা হবে।
বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের খবর বলছে, ২৮ দফার এই পরিকল্পনায় ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ও অস্ত্র ছাড় দিতে হবে। এই পরিকল্পনা–সংশ্লিষ্ট এক মার্কিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পরিকল্পনা অনুসারে, রাশিয়ার কাছে পূর্ব ইউক্রেনের কিছু অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়া হবে। এর বদলে ইউক্রেন ও ইউরোপকে ভবিষ্যতে রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলা থেকে নিরাপত্তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
এই পরিকল্পনা নিয়ে এক মাস ধরে কাজ করছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। ইউক্রেনীয় ও রুশ দুই পক্ষের জনগণের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য শর্তগুলো নিয়ে মতামত নেওয়া হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট। তিনি উদীয়মান এই প্রস্তাবের বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেন, ট্রাম্প এ বিষয়ে তাকে ব্রিফ করেছেন এবং তিনি প্রস্তাবটি সমর্থন করেছেন।
লেভিট বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই পক্ষের জন্য এটি একটি ভালো পরিকল্পনা। এটি দুই পক্ষের কাছেই গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত এবং তারা এটি নিয়ে কাজ করছেন বলেও জানান লেভিট।
পরে জেলেনস্কি বলেন, তিনি এই পরিকল্পনা নিয়ে কিয়েভে যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি সেক্রেটারি ড্যানিয়েল ড্রিসকলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
তবে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নতুন উদ্যোগকে গুরুত্ব দেবে না বলেই মনে হচ্ছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, এই মুহূর্তে কোনো আলোচনা চলছে না। অবশ্যই কিছু তথ্য বিনিময় হচ্ছে। তবে এমন কোনো প্রক্রিয়া চলছে না, যাকে যোগাযোগ বলা যায়।
জেলেনস্কি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাজ করার ইঙ্গিত দিলেও ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা এ ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছে।
ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো বলেন, ‘ইউক্রেনের মানুষ শান্তি চায়, যা সব দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করবে। এমন টেকসই শান্তি চায়, যা ভবিষ্যতে কোনো ধরনের আগ্রাসনের আশঙ্কা জাগাবে না। তবে শান্তি মানে আত্মসমর্পণ করা নয়।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কাজা ক্যালাস বলেন, যেকোনো শান্তি প্রস্তাব কার্যকরের জন্য ইউরোপ ও ইউক্রেনের সমর্থন প্রয়োজন। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোস্লাউ সিকোরস্কি বলেন, যেকোনো সম্ভাব্য চুক্তির বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করা হবে বলে ইউরোপ প্রত্যাশা করছে।
রাশিয়ার হামলার মুখে ইউক্রেনীয় সেনারা দেশটির পূর্বাঞ্চল থেকে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত কূটনৈতিক উদ্যোগে যোগ দিতে জেলেনস্কি চাপের মুখে পড়ছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত অক্টোবরে দাবি করেছিলেন, রুশ সেনারা চলতি বছর ইউক্রেনের প্রায় পাঁচ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করেছেন। তবে গত ২৫ অক্টোবর ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার বলেছে, প্রকৃতপক্ষে ৩ হাজার ৪৩৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল হয়েছে।
গাজা সিটির স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ- চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শহরের ভেতরে আরও অগ্রসর হয়েছে এবং তথাকথিত ‘ইয়েলো লাইন’ সীমারেখা সম্প্রসারণ করেছে। এতে আশ-শাফ, আন-নাজ্জাজ ও বাগদাদ স্ট্রিট এলাকার বহু ফিলিস্তিনি পরিবার ট্যাংকের অগ্রযাত্রার মধ্যে আটকা পড়েছে।
গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে গাজার গভর্নমেন্ট মিডিয়া অফিস জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী সীমার চিহ্নগুলো সরিয়ে প্রায় ৩০০ মিটার ভেতরে চলে গেছে। হামলার মধ্যে আটকা পড়া বহু পরিবারের ভাগ্য অজানা বলে জানিয়েছে দপ্তরটি। তারা বলেছে, সীমারেখা সম্প্রসারণ যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি ইসরায়েলের স্পষ্ট অবজ্ঞা।
শুক্রবারও দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসের পূর্ব দিকে ‘ইয়েলো লাইন’-এর ভেতরে ইসরায়েলি বিমান ও কামান হামলা অব্যাহত ছিল বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। এসব হামলায় একজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এর আগে গত বুধবার গাজা সিটি ও খান ইউনুসে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ২৫ ফিলিস্তিনি নিহত হন।
গাজার মিডিয়া অফিস জানায়, গত মাসে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিনই আকাশ, স্থল এবং সরাসরি গুলিবর্ষণের মাধ্যমে হামলা চালিয়েছে। এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ৪০০-এর বেশি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। এসব হামলায় ৩০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন।
যুদ্ধবিরতির প্রধান জামিনদার যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, কাতার ও তুরস্ককে দ্রুত হস্তক্ষেপ করে হামলা বন্ধ ও খাদ্য, আশ্রয়সামগ্রী, চিকিৎসা সহায়তা এবং অবকাঠামোর সরঞ্জাম সরবরাহের পথ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে গাজার কর্তৃপক্ষ।
চুক্তিতে উল্লিখিত ‘ইয়েলো লাইন’ হলো একটি অদৃশ্য সীমা, যেখানে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলি বাহিনী নিজেদের অবস্থান পুনর্গঠিত করে। এর মাধ্যমে ইসরায়েল গাজা উপত্যকার অর্ধেকের বেশি অংশে নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সীমার কাছে গেলে ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনাও নিয়মিত ঘটে।
জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত কমিশন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, বিটসেলেমসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে- গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান গণহত্যার শামিল।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় কমপক্ষে ৬৯ হাজার ৫৪৬ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন এক লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজার বড় অংশ, বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় পুরো জনগোষ্ঠী।