গাজায় ইসরায়েলি বর্বর হামলায় হতাহতদের পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় দিয়ে হজ পালনে সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ। তার এই নির্দেশের আওতায় আরও বাড়তি ১ হাজার ফিলিস্তিনি পরিবার থেকে সৌদি আরবে বিনা খরচে হজ পালনের সুবিধা পাবেন। সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সির (এসপিএ) বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়ার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আল-আরাবিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের বাদশাহের দপ্তর এক রাজকীয় নির্দেশ জারি করেছে। সব মিলিয়ে এই উদ্যোগের আওতায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি সৌদি আরবে বিনা খরচে হজ পালনের সুযোগ পাবেন।
বাদশাহ সালমানের রাজকীয় নির্দেশে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকার শহীদদের পরিবার থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরবে আনার জন্য ‘হোস্টিং ইনিশিয়েটিভ ফর পিলগ্রিমস ফ্রম দ্য ফ্যামিলিস অব মার্টায়ার্স অ্যান্ড দ্য ওউন্ডেড ফ্রম দ্য গাজা স্ট্রিপ’ উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। এই উদ্যোগের আওতায় ফিলিস্তিন থেকে মোট ২ হাজার হজযাত্রী আসবেন।
সৌদি আরবের ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স, দাওয়াহ অ্যান্ড গাইডেন্স মন্ত্রী শেখ আবদুল লতিফ বিন আবদুল আজিজ আল-শায়েখ বলেছেন, এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনের জন্য সব স্তরে আমাদের দেশের (সৌদি আরবের) অটল সমর্থনকেই তুলে ধরে।
শেখ আব্দুল লতিফ বিন আব্দুল আজিজ আল-শায়েখ আরও বলেছেন, এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের কষ্ট-দুর্দশা কিছুটা প্রশমিত করবে। সৌদি সরকারের এমন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নতুন কিছু নয়। সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাকালীন বাদশাহ আবদুল আজিজের যুগ থেকে দেশটি ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে।
মুসলিম বিশ্বে হজ অন্যতম অবশ্য পালনীয় ফরজ ইবাদত, যা প্রতি আরবি বছরের জিলহজ মাসে পবিত্র শহর মক্কায় অবস্থিত কাবাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সারা বিশ্ব থেকে লাখো মানুষ সৌদি আরবের মক্কায় সমবেত হন। মক্কার আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানিয়েছে, গত শনিবার পর্যন্ত ১৩ লাখ নিবন্ধিত হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন।
হজের সময় গাজা নিয়ে ‘স্লোগান’ নিষিদ্ধ
গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের মধ্যে ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে হজ চলাকালে কোনো প্রকার ‘রাজনৈতিক স্লোগান’ নিষিদ্ধ করেছে সৌদি আরব। গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে দেশটির পবিত্র স্থানগুলোতে রাজনৈতিক স্লোগান দেওয়া থেকে বিরত থাকতে ১২ লাখের বেশি হজযাত্রীকে আহ্বান জানিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। সৌদির হজ ও ওমরাহ বিষয়কমন্ত্রী তৌফিক আল রাবিয়াহ বলেছেন, ‘হজ হচ্ছে উপাসনার সময়, এটি রাজনৈতিক অভিব্যক্তি প্রকাশের সময় নয়।’
তিনি বলেন, ‘হজযাত্রীদের জন্য শান্ত ও ভক্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে তারা স্বস্তির সঙ্গে ধর্মীয় আচার পালন করতে পারেন।’
আসন্ন হজ মৌসুমের খুঁটিনাটি তুলে ধরতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘হজ সত্যিকার অর্থে ভক্তি, প্রশান্তি ও আধ্যাত্মিকতার সর্বোচ্চ স্তরের ক্রিয়াকলাপ এবং সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতেই কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। খোদা সৌদি আরবকে রক্ষা করুন।’
তিনি বলেন, ‘সবার আধ্যাত্মিকতা ও ভক্তির দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত হতে পারে- এমন যেকোনো ঝামেলা হজযাত্রীদের এড়িয়ে চলা উচিত।’
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলের প্রতি সংহতি জানিয়ে ট্রাম্প টাওয়ারের লবিতে বিক্ষোভ করেছে শতাধিক মানুষ। এই বিক্ষোভকারীদের মধ্য থেকে ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ (এনওয়াইপিডি) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় ফিলিস্তিনিপন্থি শিক্ষার্থীদের পক্ষে প্রধান আলোচকদের একজন ছিলেন মাহমুদ খলিল। গত শনিবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় স্টুডেন্ট ওয়ার্কার্স অব কলাম্বিয়া ইউনিয়ন।
এদিকে, এনওয়াইপিডি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই প্রতিবাদ শুরু হয়। সাধারণ পোশাকে প্রায় ১৫০ জন ট্রাম্প টাওয়ারে প্রবেশ করেন। ভবনের ভিতরে গিয়ে তারা তাদের শার্ট খুলে ফেলেন ও ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনমূলক বার্তা লেখা লাল টি-শার্ট পরে ফ্লোরে বসে আন্দোলন শুরু করেন। সে সময় তারা ‘মাহমুদকে মুক্ত করো’স্লোগানও দেন।
এনওয়াইপিডির প্রধান জন চেল বলেন, ১০ মিনিটের মধ্যে আমরা পুলিশ বিভাগ থেকে সাড়া দিই। ৪০ থেকে ৫০ মিনিটের মধ্যে আমরা গ্রেপ্তার শুরু করি। মোট ৯৮ জনকে অবৈধ প্রবেশ ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে, প্রতিবাদের আয়োজক সংগঠন ইহুদি ভয়েস ফর পিস (জেভিপি) জানায়, অভিনেত্রী ডেবরা উইঙ্গারও এই প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন। জেভিপির তাল ফ্রিডেন বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন বাকস্বাধীনতায় আক্রমণ করছেন আর এটি করার জন্য তিনি ইহুদি বিদ্বেষের মিথ্যা অভিযোগ ব্যবহার করছেন।
অভিনেতা মরগান স্পেক্টর বলেন, আপনি যদি আমেরিকান হন ও সংবিধানে বিশ্বাস করেন, তাহলে আজ এখানে দাঁড়ানো আপনার উচিত। প্রতিবাদী জোশ ডাবনাউ বলেন, আমাদের মতামত প্রকাশের অধিকার আছে এবং ভয়ের কারণে আমি আমার প্রথম সংশোধনীর অধিকার ব্যবহার থেকে বিরত থাকব না।
মাহমুদ খলিল কে?
মাহমুদ খলিল একজন ফিলিস্তিন সমর্থক ও কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শিক্ষার্থী। গত শনিবার নিউইয়র্ক সিটি থেকে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) এজেন্টরা তাকে গ্রেপ্তার করেন ও লুইজিয়ানায় স্থানান্তর করে।
গ্রেপ্তারের পরে খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মার্কিন কর্তৃপক্ষ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারপতি সেই সিদ্ধান্তের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তার আইনজীবীরা তাকে নিউইয়র্কে সরিয়ে নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন, যেন তিনি তার স্ত্রীর কাছাকাছি থাকতে পারেন। তার স্ত্রী আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
যুদ্ধ ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার ফলে আগামী দুই বছরে বিশ্বব্যাপী ৬৭ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মানবিক সংস্থা ডেনিশ রিফিউজি কাউন্সিল (ডিআরসি) শুক্রবার এ কথা জানায়।
ডিআরসির প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে কোপেনহেগেন থেকে এএফপি জানায়, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রত্যাহারের ‘বিধ্বংসী’ পদক্ষেপের ফলে লাখ লাখ দুর্বল মানুষ প্রয়োজনীয় সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে।
ডিআরসি মহাসচিব শার্লট স্লেন্তে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ ও দায়মুক্তির যুগে বাস করছি। বেসামরিক নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি মূল্য দিচ্ছে।’
ডিআরসি জানায়, বিশ্বব্যাপী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বর্তমানে ১২২.৬ মিলিয়ন। সংস্থাটি তাদের বৈশ্বিক স্থানচ্যুতির পূর্বাভাসে ২০২৫ সালে ৪২ লাখ মানুষের বৃদ্ধির আশঙ্কার কথা জানায়, যা ২০২১ সালের পর থেকে ডিআরসির সর্বোচ্চ পূর্বাভাস।
২০২৬ সালে আরো ২৫ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা করা হয়।
সমস্ত আশঙ্কাজনক এই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির প্রায় অর্ধেকের জন্য দায়ী সুদান ও মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ।
সুদানে ‘বিশ্বের সবচেয়ে জরুরি মানবিক সংকট’ চলমান রয়েছে। দেশটি নতুন বাস্তুচ্যুতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী, এটি উল্লেখ করেছে ১ কোটি ২৬ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে ইতোমধ্যেই সুদান ও এর প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে ‘অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, যা দেশকে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ থেকে অন্য দুর্ভিক্ষে ঠেলে দিয়েছে।’
ডিআরসি জানায়, মিয়ানমারে বহুমুখী গৃহযুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। এর ফলে ৩৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং প্রায় ২ কোটি মানুষের অর্থাৎ জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের এখন মানবিক সহায়তার প্রয়োজন।
এটি পূর্বাভাসে দেখিয়েছে, ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ দেশটিতে আরও ১৪ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আফগানিস্তান, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, সিরিয়া, ইয়েমেন ও ভেনিজুয়েলায়ও সশস্ত্র সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আর্থ-সামাজিক অস্থিতিশীলতার কারণে বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ডিআরসি জানিয়েছে, ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ ৬৭ লাখ লোকের বাস্তুচ্যুত হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হবে।
আবারও সংঘাতে উত্তাল হয়ে পড়েছে সিরিয়া। দেশটির নতুন ইসলামপন্থি শাসকদের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত আলাউইত সম্প্রদায়ের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছে। গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
সিরিয়ার যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের বরাতে বার্তা সংস্থা দ্য গার্ডিয়ান রোববার জানায়, নিরাপত্তাবাহিনী এবং মিত্র গোষ্ঠীগুলো গত দুই দিনে ৭৪৫ জন আলাউইত বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে।
মানবাধিকার সংস্থাটি জানায়, গত বৃহস্পতিবার থেকে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত সিরিয়ায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। দুপক্ষের মধ্যে লড়াইয়ে ১২৫ জন নিরাপত্তাকর্মী এবং বাশার আল-আসাদের অনুগত ১৪৮ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।
আলাউইত সম্প্রদায়ের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় এমন এলাকাগুলোতে আসাদের প্রতি অনুগত বিদ্রোহীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
এর আগে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কর্নেল হাসান আব্দুল গনি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে লাতাকিয়ায় লড়াইরত আসাদের অনুগতদের প্রতি সতর্কবার্তায় বলেন, ‘হাজার হাজার মানুষ তাদের অস্ত্র সমর্পণ করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবার কেউ কেউ খুনি এবং অপরাধীদের রক্ষা করতে তাদের পালিয়ে যাওয়ার উপর জোর দিচ্ছে। তবে পথ মাত্র দুটি; হয় অস্ত্র জমা দিন অথবা অনিবার্য পরিণতির মুখোমুখি হোন।’
বর্তমানে সিরিয়ার এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার জন্য একটি বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে আলাউইত সম্প্রদায়ের কর্মীরা বলছেন, আসাদের পতনের পর থেকে তাদের সম্প্রদায় সহিংসতা ও আক্রমণের শিকার হয়েছে। বিশেষ করে, হোমস ও লাতাকিয়ার গ্রামীণ এলাকাগুলো এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে।
অন্যদিকে, দেশটির অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বিদ্রোহীদের অস্ত্র জমা ও আত্মসমর্পণ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে প্রচারিত এক বক্তব্যে শারা বলেন, ‘আপনারা সিরীয় নাগরিকদের ওপর আক্রমণ এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। আপনাদের অস্ত্রগুলো জমা দিন এবং দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই আত্মসমর্পণ করুন।’
উপকূলীয় লাতাকিয়া ও তারতুসে শনিবার পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। এছাড়া হোমস শহরেও কারফিউ জারি করা হয়েছে। আসাদের অনুগত সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং তাদের সমর্থকদের লক্ষ্য করে নিরাপত্তা অভিযান চালানো হচ্ছে। এসব অভিযানের সময় বেসামরিক নাগরিকদের নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। এই এলাকাগুলোকে আলাউইত সম্প্রদায়ের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এসওএইচআর-এর প্রধান রামি আব্দুল রাহমান জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে সিরিয়ার আলাউইতিদের মূল এলাকা জাবলেহ, বানিয়াসসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে। এসওএইচআর বলছে, গত দুইদিনে এক হাজারের বেশি জন নিহত হয়েছে। গত ডিসেম্বরে বাশার আল আসাদের পতনের পর সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা সেখানে চালানো হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে বর্তমান সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং আসাদের যোদ্ধারাও রয়েছে। এসওএইচআর জানিয়েছে, সংঘর্ষে বর্তমান সরকারের ১২৫ জন নিরাপত্তা রক্ষী এবং আসাদপন্থী ১৪৮ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছে।
সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সংবাদসংস্থা সানাকে বলেছে, হামলাকবলিত এলাকাগুলো সরকারি বাহিনী নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। বিবিসি বলছে, সংঘর্ষ ও দমন অভিযানের কারণে আলাউইত সম্প্রদায়ের শত শত ব্যক্তি এলাকা ছেড়েছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, লাতাকিয়ায় মেইমিমে একটি রাশিয়ান ঘাঁটিতে বড় ধরনের ভিড় দেখা গেছে। ঘাঁটির কাছে অনেকেই রাশিয়ার সুরক্ষার জন্য স্লোগান দিচ্ছিলেন।
বিবিসি জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে সিরিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষ এই দমন অভিযান শুরু করে। তাদের দাবি, বাশার আল-আসাদের সমর্থক জঙ্গিরা তাদের বাহিনীর ওপর প্রাণঘাতী চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছে আর এটি একটি উদীয়মান বিদ্রোহ। অভিযান চলাকালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথাও স্বীকার করেছেন কর্মকর্তারা।
নারী মমতাময়ী, নারী মায়াময়ী, নারী করুণাময়ী। নারী : কন্যা জায়া জননী, নারী ভগিনী। নারীর স্নেহ, মায়া, মমতা ও করুণা মানব সভ্যতার অমূল্য সম্পদ। নারী সকল প্রেরণার উৎস।
‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এভাবেই তার ‘নারী’ কবিতায় সকল সৃষ্টি ও বিশ্ব সভ্যতার বিকাশে নারীর কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের কথা স্মরণ করেছেন।
কিন্তু এই নারীই আবার সমাজে-পরিবারে এখনো নানাভাবে উপেক্ষিত, অবহেলিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত। সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে, দেশের নানা স্থানে চলার পথে, রাস্তাঘাটে, পরিবহনে এমনকি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। নারী শিক্ষার্থী ও নারী শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশায় কর্মরত নারীদের ইভটিজিং, শ্লীলতাহানি এবং হেনস্তা করা হচ্ছে। যা নারীর ক্ষমতায়নের পথে প্রধান অন্তরায়। এটি খুবই লজ্জার এবং উদ্বেগের বিষয়।
পুরুষের পাশাপাশি নারীর চলার পথ নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ রাখা এবং একজন নারীকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পরিবারের পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সমাজেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে। নারীর অক্লান্ত শ্রম ও সমাজ-সভ্যতার প্রতি তার অসামান্য অবদানের কথা সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে।
সমাজ-সংসার-পরিবারে একজন নারীর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক সময়ের ‘অবলা নারী’ একবিংশ শতাব্দীতে এসে শুধু সংসার নয়, কর্মক্ষেত্রেও সাফল্যের সঙ্গে তাদের বুদ্ধিমত্তা, শক্তি-সামর্থ্য ও কর্মদক্ষতা প্রদর্শন করে চলেছে। তারা রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে শুরু করে বিমান চালনা, মহাকাশের নভোচারী থেকে শুরু করে যুদ্ধক্ষেত্রের সৈনিক হিসেবে সব জায়গাতেই দাপটের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলদেশে শিক্ষা-দীক্ষা, রাজনীতি, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রেই নারীরা ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রধান রপ্তানি খাত পোশাকশিল্পে নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। অফিসের কাজ থেকে শুরু করে কঠোর শারীরিক পরিশ্রমের কাজও করে যাচ্ছে অনায়াসে। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে নারীদের সাফল্য আজ অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়।
আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীর কাজের স্বীকৃতি প্রদান, নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, নারীর সাফল্য উদযাপন ও নারীদের প্রতি যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতি বছর দিনটি পালিত হয় বিশ্বজুড়ে। নারীর প্রতি সকল প্রকার
অন্যায়-অবিচার ও সহিংসতা বন্ধ হবে এটাই হোক নারী দিবসের মূল অঙ্গীকার।
এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯০৮ সালে কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা, বেতন বৃদ্ধি এবং ভোটাধিকারের দাবিতে প্রায় ১৫ হাজার নারী নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছিল। মূলত এই আন্দোলনের মাধ্যমেই নারী দিবসের বীজ বোপিত হয়।
জাতীয় পর্যায় থেকে দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে পরিণত করার প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন নারী অধিকার কর্মী ক্লারা জেটকিন। ১৯১০ সালে তিনি কোপেনহেগেনে কর্মজীবী নারীদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ ধারণার প্রস্তাব দেন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বছর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয় : ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে।
১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে শুরু করে। অতঃপর ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে পৃথিবীজুড়েই যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
সিরিয়ায় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুসারীদের তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ৭০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হন আরও বেশ কয়েকজন। ব্রিটেনভিত্তিক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবিসি বলছে, এক্স পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘সিরীয় উপকূলে প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদস্য এবং ক্ষমতাচ্যুত সরকারের বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও অতর্কিত হামলার ঘটনায় ৭০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। আরও বেশ কয়েকজন কয়েকজন আহত ও বন্দি হয়েছেন।’
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় লাতাকিয়া প্রদেশে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত একটি বিমানঘাঁটির কাছে এলাকাটির অবস্থান। গত ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকে সিরিয়ার ইসলামপন্থি সরকারের সঙ্গে যুক্ত বাহিনীর ওপর এটি সবচেয়ে সহিংস হামলা। এ ঘটনার পর আজ (শুক্রবার) সকাল পর্যন্ত সেখানে কারফিউ ঘোষণা করা হয়।
বিবিসির ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আলাউইত সম্প্রদায়ের প্রাণকেন্দ্র এবং আসাদ পরিবারের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত উপকূলীয় এলাকাগুলোতে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, বিপুলসংখ্যক সেনা জাবলেহ শহরের দিকে যাচ্ছে। হোমস ও আলোপ্পো শহরেও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, হোমসের আবাসিক এলাকার রাস্তায় প্রচণ্ড গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। যদিও বিবিসি ভিডিওগুলোর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কর্নেল হাসান আবদুল গনি লাতাকিয়ায় লড়াইরত আসাদের অনুগতদের প্রতি সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
হাসান আবদুল গনি বলেন, ‘হাজার হাজার মানুষ তাদের অস্ত্র সমর্পণ করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবার কেউ কেউ পালিয়ে গিয়ে খুনি ও অপরাধীদের বাঁচানোর জন্য মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার পথ বেছে নিচ্ছে। স্পষ্ট করে বলছি, অস্ত্র জমা দিন অথবা অনিবার্য পরিণতির মুখোমুখি হোন।’
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার জন্য এ অঞ্চল একটি বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি দক্ষিণেও প্রতিরোধের মুখোমুখি হচ্ছেন। সেখানে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দ্রুজ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে।
আলাউইত সম্প্রদায়ের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার থাকা কর্মীরা বলেছেন, আসাদের পতনের পর থেকে সম্প্রদায়টির মানুষজন বিশেষ করে গ্রামীণ হোমস ও লাতাকিয়া এলাকায় সহিংসতা ও হামলার শিকার হয়েছেন।
সিরিয়াভিত্তিক বার্তা সংস্থা স্টেপ জানিয়েছে, ‘নিহত প্রায় ৭০ জনের সবাই’ সাবেক সরকারপন্থি যোদ্ধা। তবে এর আগে এএফপির প্রতিবেদনে ৪৮ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়ে বলা হয়, এর মধ্যে সরকারি বাহিনীর ১৬ জন, আসাদপন্থি ২৮ জন আর ৪ জন বেসামরিক নাগরিক।
সৌদি আরবে হিজরি ১৪৪৬ সনের রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আগামীকাল শনিবার থেকে দেশটিতে শুরু হচ্ছে পবিত্র ও মহিমান্বিত রমজান মাস। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতেও এ মাসের চাঁদের দেখা মিলেছে।
আজ শুক্রবার সৌদি আরবে চাঁদ দেখার তথ্য ইনসাইড দ্য হারামাইনের ফেসবুক পেজে জানানো হয়েছে।
সেখানে বলা হয়, সৌদি আরবের আকাশে আজ শুক্রবার রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে ২৯ দিনে শেষ হচ্ছে শাবান মাস। আর রমজানের প্রথম দিন হবে আগামীকাল শনিবার।
এদিকে, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ায় আজ শুক্রবার পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে দেশটিতে রমজান মাস শুরু হবে আগামী রোববার (২ মার্চ) থেকে। আগামীকাল শনিবার মালয়েশিয়ায় হবে শাবান মাসের ৩০তম দিন।
এছাড়া ব্রুনাই ও সিঙ্গাপুরে আজ পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে দেশ দু’টিতেও রোববার থেকে শুরু হবে রোজা। ব্রুনাই ও সিঙ্গাপুর উভয় দেশই আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য জানিয়েছে।
আর অস্ট্রেলিয়ায় আগামীকাল শনিবার থেকেই রমজান শুরু হতে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিন শুরু হবে শনিবার (১ মার্চ) থেকে। অস্ট্রেলিয়ান ফতোয়া কাউন্সিল জ্যোতির্বিদ্যার গণনার ভিত্তিতে এই তারিখ ঘোষণা করেছে। আজ শুক্রবার খালিজ টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে, বাংলাদেশে আগামীকাল শনিবার পবিত্র রমজানের চাঁদ দেখা কমিটির সভা হওয়ার কথা রয়েছে। রাজধানীতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সভাকক্ষে সন্ধ্যা ৬টায় এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
শনিবার বাংলাদেশের আকাশে কোথাও রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেলে, তা নিচের টেলিফোন ও ফ্যাক্স নম্বরে অথবা সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। টেলিফোন নম্বর: ০২-২২৩৩৮১৭২৫, ০২-৪১০৫০৯১২, ০২-৪১০৫০৯১৬ ও ০২-৪১০৫০৯১৭। ফ্যাক্স নম্বর: ০২-২২৩৩৮৩৩৯৭ ও ০২-৯৫৫৫৯৫১।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ইবি-৫ ভিসার পরিবর্তে ৫ মিলিয়ন ডলারের একটি ‘গোল্ড কার্ড’ চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন। এই গোল্ড কার্ড দিয়ে পরে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও পাওয়া যাবে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে ইবি-৫ ভিসা দিয়ে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। এর পরিবর্তে গোল্ড কার্ড চালু করা হবে।
ট্রাম্প জানান, এই নতুন গোল্ড কার্ডের মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ৫ মিলিয়ন ডলার, যা গ্রিন কার্ডের সুবিধার পাশাপাশি নাগরিকত্ব পাওয়ার পথও খুলে দেবে। তিনি বলেন, ‘ধনী ব্যক্তিরা এই কার্ড কিনে আমাদের দেশে আসতে পারবেন। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন প্রোগ্রামের বিস্তারিত জানানো হবে।’ রুশ ধনকুবেররাও (অলিগার্ক) এই কার্ডের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন কি না জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, সম্ভবত, হ্যাঁ। আমি কয়েকজন রুশ অলিগার্ককে চিনি যারা খুব ভালো মানুষ।
ইবি-৫ ইমিগ্র্যান্ট ইনভেস্টর প্রোগ্রামটি ১৯৯০ সালে কংগ্রেস অনুমোদন করে। বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান তৈড়ি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে এই প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছিল। নতুন সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক মঙ্গলবার ইবি-৫ প্রোগ্রামকে ‘অর্থহীন, কাল্পনিক ও প্রতারণায় পূর্ণ অভিহিত করে বলেন, প্রেসিডেন্ট এই ত্রুটিপূর্ণ প্রকল্পটি বাতিল করে গোল্ড কার্ড চালু করতে চাইছেন। এই নতুন প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য মার্কিন অভিবাসন নীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
প্রবল গণআন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এর পর থেকে সে দেশে অবস্থান করছেন তিনি।
শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে দিল্লিকে চিঠি পাঠিয়েছে ঢাকা। তবে চিঠিপ্রাপ্তির বিষয়টি স্বীকার করলেও শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানো প্রসঙ্গে স্পষ্ট করে কিছুই বলেনি দিল্লি।
গত সপ্তাহে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে ভারতের কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি।
তবে বিভিন্ন সময় ভারতের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক প্রশ্ন তুলেছেন, শেখ হাসিনা কোন স্ট্যাটাসে ভারতে অবস্থান করছেন? তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবিও জানিয়েছেন তারা।
এরই মধ্যে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে ‘ইন্ডিয়া টুডে মোড অব দ্য নর্থ–ইস্ট’ শীর্ষক জরিপ পরিচালনা করেছে।
জরিপে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সরকারের আশ্রয় দেওয়া প্রসঙ্গে আপনার মতামত কী? চলতি ফেব্রুয়ারি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৮টি রাজ্যের নাগরিকদের মধ্যে এ জরিপ চালানো হয়।
জরিপের ফলাফল ভেরিফায়েড এক্স হ্যান্ডলে শেয়ার করেছে ইন্ডিয়া টুডে এনই। জরিপে তিনটি প্রধান অপশনে মতামত দিয়েছে নাগরিকরা। দেখা গেছে, ‘তিনি ভারতের মিত্র, তাকে আশ্রয় দেওয়া ঠিক আছে’- এই মতের পক্ষে ভোট দিয়েছে ২৩ শতাংশ উত্তরদাতা। আর এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ৩৭.৬ শতাংশ।
‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নয়নের স্বার্থে তাকে ফেরত পাঠানো উচিত’- এই মতের পক্ষে ভোট দিয়েছে ৫৫ শতাংশ, বিপক্ষে দিয়েছে ২১.১ শতাংশ।
‘তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো উচিত নয়, বরং অন্য দেশে চলে যেতে বলা যেতে পারে’- এই মতের পক্ষে মত দিয়েছে ১৬ শতাংশ, বিপক্ষে মত দিয়েছে ২৯.১ শতাংশ।
এখানে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো- ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নাগরিকদের মধ্যে উত্তরদাতাদের ৫৫ শতাংশ শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পক্ষে মত দিয়েছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের ‘ভারতবিরোধী’ বক্তব্যকে ‘হাস্যকর’ আখ্যায়িত করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, বাংলাদেশকে ঠিক করতে হবে যে তারা ভারতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা খুব স্পষ্ট বার্তা দিয়েছি- আপনারা আমাদের প্রতিবেশী, আমরা চাই পরিস্থিতি শান্ত হোক, আমরা চাই বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং অন্যান্য বিষয় এগিয়ে যাক; কিন্তু যদি ক্রমাগত এমন বার্তা বা সংকেত দেওয়া হয়, যেটা ভারতের প্রতি শত্রুতামূলক, সেটা নিশ্চয় আমাদের ভালো লাগবে না।’
শনিবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জয়শঙ্কর বলেন, ‘আমরা অবশ্যই আমাদের সব প্রতিবেশীর মঙ্গল চাই। বাংলাদেশের সাথে আমাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে; এটা বিশেষ এক সম্পর্ক, যা ১৯৭১ সাল থেকে চলে আসছে। কিন্তু গত বছর কিছু ঘটনা ঘটেছে, আপনারা সবাই জানেন। আমার মনে হয়, আমাদের জন্য বিষয়টা খুবই উদ্বেগজনক।’
বাংলাদেশের দুটি বিষয় ভারতের জন্য ‘খুবই উদ্বেগজনক’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর ধারাবাহিক হামলার ঘটনা; আমি মনে করি এটা আমাদের চিন্তাভাবনার ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলছে এবং এটা এমন একটা বিষয়, যা নিয়ে আমাদের কথা বলা উচিত এবং আমরা তা বলছি।’
জয়শঙ্কর বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, তাদের নিজেদের রাজনীতি আছে, আপনি একমত হতে পারেন বা না হতে পারেন, দিন শেষে আমরা প্রতিবেশী। তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা আমাদের সাথে কেমন সম্পর্ক চায়। কারণ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো সদস্য যদি প্রতিদিন উঠে দাঁড়িয়ে সবকিছুর দোষ ভারতের ওপর চাপাতে থাকেন… আর কিছু কিছু বিষয়, আপনারা যদি খবরগুলো পড়েন, সম্পূর্ণ হাস্যকর।’
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি যদি প্রতিদিন সকালে উঠেই আপনাকে দোষারোপ করতে থাকি, তখন আপনি একা একা বলতে পারবেন না যে, ‘আমি আপনার সাথে ভালো সম্পর্ক চাই।’ তাহলে এই সিদ্ধান্তটা তাদেরই নিতে হবে যে তারা আমাদের সাথে কেমন সম্পর্ক চায়।’’
রাজনৈতিক পরিমণ্ডল শক্তিশালীকরণে বাংলাদেশের অজ্ঞাত একটি প্রতিষ্ঠানকে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএইডের ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার দেওয়া নিয়ে আবারও বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শনিবার ওয়াশিংটনে কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্সের (সিপিএসি) শেষ দিনে ওই মন্তব্য করেছেন তিনি। ট্রাম্পের দাবি, বাংলাদেশে উগ্র বাম কমিউনিস্টদের ভোট দিতে দেওয়া হয় ২৯ মিলিয়ন ডলার।
সিপিএসিতে দেওয়া বক্তৃতায় ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল শক্তিশালীকরণের বিষয়টি ব্যবহার করা হয়েছে উগ্র বামপন্থি কমিউনিস্টদের ক্ষমতায় আনতে। বাংলাদেশে ২৯ মিলিয়ন ডলার গেছে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলকে শক্তিশালীকরণ ও তাদের সহায়তা করতে; যাতে তারা উগ্র বাম কমিউনিস্টদের ভোট দিতে পারেন।
এর আগে, গত শুক্রবার ওয়াশিংটনে গভর্নরদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, বাংলাদেশের যে প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার দেওয়া হয়েছে, সেটিতে মাত্র দুজন লোক কাজ করেন। তার এমন বক্তব্য নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।
অখ্যাত বাংলাদেশি সংস্থার কাছে অর্থ যাওয়ার অভিযোগ করে ট্রাম্প বলেন, ’বাংলাদেশের একটি সংস্থার কাছে ২৯ মিলিয়ন ডলার গেছে। যেটির নাম কেউ কোনো দিন শোনেনি। তারা চেক পেয়েছে। আপনারা ভাবতে পারেন? আপনার ছোট সংস্থা আছে। আপনি এখানে ১০ হাজার পান, ওইখানে এক লাখ পান।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সরকার থেকে ২৯ মিলিয়ন ডলার পেয়েছি (বাংলাদেশকে দেওয়ার জন্য)। ওই সংস্থায় মাত্র দুজন কাজ করেন। আমি মনে করি তারা খুব খুশি, তারা খুবই ধনী। কয়েকদিন পর মহান ব্যক্তি হওয়ার জন্য বড় কোনো ম্যাগাজিনে তাদের ছবি প্রকাশিত হবে।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিমণ্ডল শক্তিশালী করতে বাংলাদেশকে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার দেওয়া হয়েছে। কেউ জানে না এই রাজনৈতিক পরিমণ্ডল কী। এটির মানে কী?’ বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতকে নিয়েও শনিবার কথা বলেছেন রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত কয়েকদিনের মতো আবারও তিনি দাবি করেছেন, ভারতে নির্বাচনের জন্য ইউএসএইড সহায়তা করেছে। তিনি বলেন, ভারতকে কেন তারা সহায়তা করবেন? যেখানে ভারত তাদের পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে রেখেছে।
ফোনালাপ পর্ব শেষে এবার মুখোমুখি বসতে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ায় তার সমকক্ষ ভ্লাদিমির পুতিন। বিশ্বের আলোচিত এই দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে। এই বৈঠকের মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে গেল তিন বছর ধরে চলা মার্কিন নীতিতে বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সময় শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ। পুতিন-ট্রাম্পের সম্ভাব্য বৈঠকে শুধু ইউক্রেন যুদ্ধ নয়; বৈশ্বিক নানা বিষয়ে বৃহত্তর পরিসরে আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।
সের্গেই রিয়াবকভ জানান, ‘এই বৈঠক দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ। তবে বৈঠক আয়োজন একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।’
এ সময় বৈঠকের প্রস্তুতি বিষয়ে আলোচনা করতে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশ দুটির রাষ্ট্রদূতদের সাক্ষাৎ হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি। এর আগে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ওভাল অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করতে একমত হওয়ার কথা জানান ট্রাম্প। তাদের দীর্ঘ ফোনালাপের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয় তখন। ওভাল অফিসে ট্রাম্প বলেন, ‘এই যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা করতে পুতিন ও আমি একমত।’
ওভাল অফিসের বৈঠকের পর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘তিনি ও রুশ প্রেসিডেন্ট একমত হয়েছেন, তাদের নিজ নিজ কূটনৈতিক দল অবিলম্বে আলোচনা শুরু করবে এবং আলোচনার জন্য একে অপরকে নিজেদের রাজধানীতে আমন্ত্রণ জানাবে।’
এরপর স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সৌদির দিরিয়াহ প্রাসাদে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ও রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসেন দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
তবে সেই বৈঠকে ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ না জানানোতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন ইউক্রেনের প্রসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কিয়েভকে ছাড়া করা বৈঠকের কোনো সিদ্ধান্ত মেনে না নেওয়ার কথাও সুস্পষ্ট করে জানান দেন তিনি।
এছাড়াও আলোচনায় ইউরোপকে অর্ন্তভুক্ত না করায় তাদের পাশ কাটিয়ে শান্তি চুক্তির আলোচনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন ইউরোপীয় নেতারা।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি খড়গহস্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের আটক করে বিমানে তুলে নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে ফেরত পাঠানো হচ্ছে অনেক ভারতীয়কেও। এরইমধ্যে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা ব্যক্তিদের নিয়ে একটি বিমান ভারতে এসেছে। শনিবার রাতে আরও একটি বিমান আসতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
খবরে বলা হয়েছে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে ভারতে নেমেছিল প্রথম বিমানটি। তবে সেই বিমানে ফেরত পাঠানো ১০৪ ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে অমানবিক ব্যবহার করা হয়। বিমানের মধ্যে তাদের হাতকড়া এবং পায়ে বেঁড়ি পরিয়ে রাখা হয়েছিল। তাই এবারও ১১৯ জনকে একইভাবে ফেরানো হবে কি না তা নিয়ে ভারত সরকারের প্রতি প্রশ্ন তুলছে বিরোধীদলগুলো।
শনিবার কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট করে লেখেন, বিমানে করে যাদের আনা হবে, তাদের হাতে কি হাতকড়া আর পায়ে দড়ি বাঁধা থাকবে? ভারতীয় কূটনীতির জন্য এটা একটা পরীক্ষা।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, এবার যে ১১৯ জনকে ভারতে ফেরত পাঠানো হচ্ছে তাদের মধ্যে ৬৭ জনই পাঞ্জাবের বাসিন্দা। এছাড়া হরিয়ানা থেকে রয়েছেন ৩৩ জন এবং গুজরাটের আট জন, উত্তরপ্রদেশের তিন জন, গোয়ার দুজন, মহারাষ্ট্রের দুজন, রাজস্তানের দুজন, হিমাচল প্রদেশের একজন এবং জম্মু ও কাশ্মীরের একজনকে দ্বিতীয় দফায় ফেরত পাঠাচ্ছে আমেরিকা।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই তৃতীয় দফার অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আরও একটি বিমান ভারতে আসার কথা। তবে তৃতীয় দফার বিমানটির অবতরণের দিনক্ষণ কিংবা বিমানে কোন রাজ্যের কত জন আছেন তা এখনো জানানো হয়নি।
সম্প্রতি আমেরিকা সফর শেষে দেশে ফিরেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে অবৈধ অভিবাসী সমস্যা নিয়েও তার আলোচনা হয়েছে। এরপরই যখন আরও একটি বিমান যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থান করা ভারতীয়দের ফেরত নিয়ে আসছে তখনই সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলো।
এদিকে, পাঞ্জাব প্রশাসনের প্রশ্ন, ভারতের অবৈধ অভিবাসীর বিমান কেন সব সময় পাঞ্জাবেই নামে? এর পেছনে দিল্লির বড় ধরনের ষড়যন্ত্র দেখছেন ভগবন্ত। তার অভিযোগ, দিল্লি ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতের সামনে পাঞ্জাবকে ছোট করছে।
শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় অমৃতসরের বিমানবন্দরে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে নামবে আমেরিকার আরেকটি বিমান। ওই বিমানে ভারতের ১১৯ অবৈধবাসী আছে। যাদের মধ্যে ৬৭ জনই পাঞ্জাবের বাসিন্দা। হরিয়ানা থেকে রয়েছেন ৩৩ জন। কিন্তু পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ কেন বিমানটি পাঞ্জাবেই নামতে হবে! তার কথায়, ‘অবৈধ অভিবাসন শুধু পাঞ্জাবের সমস্যা নয়। এটা গোটা দেশের সমস্যা।’
ভগবন্ত মান এখানে ষড়যন্ত্র দেখছেন, ‘কেন অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে আমেরিকা থেকে আসা বিমান শুধু পাঞ্জাবেই নামছে? কেন দেশের রাজধানী দিল্লিতে যাচ্ছে না? আসলে এটা একটা চক্রান্ত। সারা দেশের সামনে পাঞ্জাব এবং পাঞ্জাবিদের ছোট করার চক্রান্ত। যেন শুধু পাঞ্জাবিরাই অবৈধভাবে আমেরিকায় যান, এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’
ভগবন্ত মান জানিয়েছেন, অবৈধ অভিবাসীদের পাঠানো উচিত দিল্লি কিংবা আহমদাবাদে। সেখান থেকে পাঞ্জাবিদের সসম্মানে রাজ্যে নিয়ে আসবে পাঞ্জাব সরকার।
বাংলাদেশের চলমান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) ওপর ছেড়ে দেব।’
হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে মোদির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে করা একটি প্রশ্ন এড়িয়ে যান ট্রাম্প। এ সময় ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ও দুই দেশের বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করেন দুই নেতা।