বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনকে অনেকেই বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন বলে মনে করছেন। অতীতে এভাবে আরও কয়েকটি দেশে ছাত্র আন্দোলনে সরকারের পতন হয়েছে বা তারা নীতি পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে। জেনে নেওয়া যাক তেমনই কয়েকটি দেশের কথা-
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্টের পলায়ন
বাংলাদেশের মতো শ্রীলঙ্কাতেও ২০২২ সালের এপ্রিলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এ আন্দোলন শুরু হয়েছিল। বিক্ষোভের একপর্যায়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন রাজাপাকসে।
গ্রিসের সেনা সরকার উৎখাত
১৯৭৩ সালে সেনাবাহিনীর স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গ্রিসের ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল ছিল এথেন্স পলিটেকনিক। টানা ছয় বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষিপ্ত হয়ে রাজপথে নামে ছাত্র-জনতা। একপর্যায়ে এথেন্স পলিটেকনিকের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায় সেনাবাহিনীর ট্যাংক। এতে মারা যান ১৫ জন। অবশেষে ১৯৭৪ সালে গণতন্ত্রের আঁতুড়ঘর গ্রিসে গণতন্ত্র ফিরে আসে।
যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ
ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে অনেক দিন ধরে বিক্ষোভ চলছিল। এ অবস্থায় ১৯৭০ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন কম্বোডিয়াতেও আক্রমণের অনুমোদন দিলে কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে গুলিতে চারজন নিহত হলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে গোটা দেশ। ৪০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এতে অংশ নেন। এসব ঘটনা যুদ্ধ নিয়ে মার্কিনীদের মনোভাবে কিছুটা পরিবর্তন এনেছিল বলে মনে করেন অনেক ইতিহাসবিদ।
দক্ষিণ আফ্রিকার সোয়েটো বিপ্লব
দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ শাসনের বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে বিক্ষোভ হয়েছে। ১৯৭৬ সালে জোহানেসবার্গের সোয়েটো এলাকায়ও আন্দোলন হয়েছিল। ১৬ জুন শুরু হওয়া বিক্ষোভে কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীরা আফ্রিকান ভাষায় পড়াশোনা করতে বাধ্য হওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। সরকার কঠোর হাতে সেই আন্দোলন দমনের চেষ্টা করলে কয়েকশ মানুষ প্রাণ হারান। ওই ঘটনার আরও দুই দশক পর আপার্থাইড বা বর্ণবাদের অবসান হয়। দেশটিতে আজও ১৬ জুন জাতীয় ছুটি হিসেবে পালন করা হয়।
ভেলভেট বিপ্লব
১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার রাজধানী প্রাগে আনুমানিক পাঁচ লাখ মানুষ ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট শাসকদের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে জড়ো হয়েছিলেন। অবশেষে ডিসেম্বরের ১০ তারিখ কমিউনিস্ট সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। আন্দোলনের অহিংস ধরনের কারণে এ আন্দোলন ভেলভেট বিপ্লব হিসেবে পরিচিত।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শাস্তি অব্যাহত থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালানোর পর সামাজিক মাধ্যমে তিনি প্রথম এসব নিয়ে কথা বলেছেন।
সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে খামেনি বলেন, ইহুদিবাদী শত্রু একটি বড় ভুল করেছে, একটি বড় অপরাধ করেছে, তাকে শাস্তি দিতে হবে এবং তাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে; এখনই তাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ইরানের মধ্যাঞ্চলে একটি অ্যাম্বুলেন্সে ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছে। ইরানের বার্তা সংস্থা ইসনা নিউজের বরাত দিয়ে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইস্পাহান প্রদেশের নাজাফাবাদ কাউন্টির গভর্নর হামিদরেজা মোহাম্মদি ফেশারাকির বরাত দিয়ে ইসনার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাম্বুলেন্সে একজন রোগীকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছিল। সে সময় সেখানে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
ফেশারাকির বলেন, অ্যাম্বুলেন্সে থাকা চালক, রোগী ও রোগীর সঙ্গে থাকা এক স্বজন নিহত হয়েছেন। তিনি আরো জানিয়েছেন যে, ড্রোনের আঘাতে অ্যাম্বুলেন্সটি পথ থেকে সরে যায় এবং পাশ দিয়ে যাওয়া একটি গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। এর পরপরই প্রণালিটি খোলা রাখতে চীনকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রেস টিভি জানিয়েছে, দেশটির পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও রোববার ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি চীন সরকারকে বলব তারা যেন ইরানকে এই পদক্ষেপ থেকে বিরত রাখে। কারণ চীন তাদের তেলের জন্য হরমুজ প্রণালির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি ইরান প্রণালিটি বন্ধ করে, তবে এটি হবে তাদের জন্য অর্থনৈতিক আত্মহত্যা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের হাতে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে, তবে অন্য দেশগুলোরও বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত। কারণ এতে আমাদের চেয়ে অন্য দেশের অর্থনীতি অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
হরমুজ প্রণালি বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সরবরাহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রুট। বিশ্বের মোট তেলের প্রায় ২০ শতাংশ এই পথ দিয়ে পরিবাহিত হয়। মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী দেশগুলো এই জলপথ ব্যবহার করেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি সরবরাহ করে। ফলে এই পথে জাহাজ চলাচল ব্যাহত হলে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম আকাশচুম্বী হতে পারে।
এরই মধ্যে ইরানের হুমকির পর তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে বিশ্ববাজারে। সোমবার অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮১ দশমিক ৪০ ডলারে পৌঁছায়, যা গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও পরে তা কিছুটা কমে ৭৮ ডলারে স্থির হয়। এমএসটি ফিন্যান্সিয়ালের জ্বালানি গবেষণা প্রধান সল কাভোনিক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে যেকোনো পাল্টা হামলা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু ঝুঁকি হলো, পরিস্থিতি আরও মারাত্মক রূপ নিলে তেলের দামও দ্রুত বাড়তে পারে।’
অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়লে তার প্রভাব পড়ে গাড়ির জ্বালানি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ওপর। চীন বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে ইরান থেকে বেশি তেল কেনে। জাহাজ ট্র্যাকিং সংস্থা ভর্টেক্সার তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে ইরান থেকে চীনের তেল আমদানি দৈনিক ১.৮ মিলিয়ন ব্যারেল ছাড়িয়েছে। এছাড়া ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো এশিয়ার অন্যান্য বড় অর্থনীতির দেশগুলোও হরমুজ প্রণালির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
এদিকে, ইরানে মার্কিন হামলার বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন। সোমবার বেইজিং বলেছে, মার্কিন হামলা ওয়াশিংটনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং সব পক্ষকে ‘শক্তি প্রয়োগ’ থেকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস বলেছে, মার্কিন হস্তক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে এবং সংঘাতকে ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
জ্বালানি বিশ্লেষক বন্দনা হরি বিবিসিকে বলেন, প্রণালিটি বন্ধ করে দিলে ইরানের ‘লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে’। কারণ এর মাধ্যমে ইরান কেবল উপসাগরীয় প্রতিবেশী দেশগুলোকেই শত্রু বানাবে না, বরং তাদের তেলের প্রধান বাজার চীনকেও ক্ষুব্ধ করবে।
ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার নিন্দা জানালেও অনেকেই আবার মার্কিন এই হামলার প্রশংসা করছে। তবে জাতিসংঘও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেছেন, একমাত্র সমাধান হলো শান্তি।
এই কথাগুলোর মাধ্যমে গুতেরেস ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত প্রশমনের আহ্বান জানিয়ে এই কূটনীতিক সতর্ক করেছেন যে, যদি এটি ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়’ তবে তা মানবজাতির জন্য ‘বিপর্যয়কর’ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
গত রোববার ভোরে, ইরানের ফরদো, নাতাঞ্জ এবং ইস্পাহানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত হলো। গত ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল তেহরানে হামলা চালিয়ে আসছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, এই আক্রমণের উদ্দেশ্য হলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা।
ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে তা তাদের রাষ্ট্র হিসেবে অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। ইরানের হামলার জবাবে ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যা ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তু রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হামলা এমন এক সময়ে এসেছে, যার মাত্র দুই দিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন যে তিনি ইসরায়েলের এই আক্রমণে সমর্থন দেবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত তিনি দুই সপ্তাহের মধ্যে নেবেন।
এদিকে ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, আজ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এটি এমন একটি অঞ্চলে বিপজ্জনক মাত্রার উত্তেজনা বৃদ্ধি, যা এরইমধ্যে সঙ্কটের কিনারায় রয়েছে এবং এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি।
তিনি আরও বলেন, আমি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যেন তারা উত্তেজনা প্রশমিত করে এবং জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যান্য বিধান অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন করে।
সামরিক অভিযানের পর টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প এই হামলাগুলোকে ‘চমৎকার সাফল্য’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এতে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনার ‘সম্পূর্ণ ও চূড়ান্ত ধ্বংস’ ঘটেছে।
অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এই ঘটনাগুলোর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটি জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির একটি ‘গভীর লঙ্ঘন’। তিনি লিখেছেন, আজ যা ঘটেছে তা নিন্দনীয় এবং এর দীর্ঘস্থায়ী পরিণতি বয়ে আনবে। আরাঘচি আরও বলেন, ইরান তার সার্বভৌমত্ব, স্বার্থ এবং জনগণকে রক্ষার জন্য সব ধরনের উপায় অবলম্বন করবে। ইরানের রেভ্যলুশনারি গার্ডস বাহিনী ঘোষণা দিয়েছে, ওয়াশিংটনকে তারা এমনভাবে জবাব দেবে, যাতে তারা অনুশোচনা করতে বাধ্য হয়।
বিভক্ত বিশ্ব
যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সৌদি আরব ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে, ওমান এই হামলার নিন্দা জানিয়ে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে।
ইরান ঘিরে উত্তেজনা বৃদ্ধির নিন্দা জানিয়েছে মিসর। দেশটি বলেছে, জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের যেকোনো লঙ্ঘনের নিন্দা জানায় মিশর। বিশেষ করে যেকোনো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ওপর দেশটি জোর দিয়েছে। ওই অঞ্চলে সংঘাত ও উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে দেশটি সতর্ক করে দিয়েছে।
এদিকে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ‘বর্তমান বিপজ্জনক উত্তেজনা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।’ সব দেশ বিবেচনা ও ধৈর্যের প্রদর্শন করবে বলে আশা প্রকাশ করেছে দেশটি।
ইরাকও ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিকে লক্ষ্যবস্তু করার মাধ্যমে বিপজ্জনকভাবে উত্তেজনা বৃদ্ধি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি হচ্ছে। উত্তেজনা প্রশমনে দ্রুত কূটনৈতিক আলোচনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে ইরাক।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী জোসেফ আউন বলেছেন, ‘ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে, যার ফলে আঞ্চলিক ও একাধিক দেশের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।’
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলায় জোরালো নিন্দা জানিয়েছে চীন ও রাশিয়া। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার নজরদারিতে থাকা ওই স্থাপনাগুলোয় হামলায় তারা জোর নিন্দা জানাচ্ছে, যা জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন। এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দেবে এমনটা জানিয়ে সব পক্ষকে হামলা বন্ধ করা ও দ্রুত আলোচনায় ফেরার জন্য তাগিদ দিয়েছে চীন।
অন্যদিকে মার্কিন হামলার জোর সমালোচনা করেছে রাশিয়া। দেশটি বলছে, কোনো ন্যায্যতা ছাড়া একটি সার্বভৌম দেশের ওপর এই হামলা একটি ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত, যা জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনার লঙ্ঘন। সকল ধরনের আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানিয়েছে রাশিয়া। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান কায়া কাল্লাস বলেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেওয়া যাবে না, কারণ এটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে। তিনি আরও বলেন, সব পক্ষকে সংযত হওয়া, আলোচনার টেবিলে ফিরে আসা এবং ভবিষ্যৎ উত্তেজনা এড়ানো উচিত।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার মন্তব্য করেছেন যে, ট্রাম্প প্রশাসন এমন পদক্ষেপ নিয়েছে যা ইরানকে পারমাণবিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার হুমকি ‘হ্রাস’ করতে সহায়ক হবে। তিনি বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর হুমকি। ইরানকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার এবং এই সংকটের কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানাই।
লাতিন আমেরিকায় চিলি, বলিভিয়া, ভেনেজুয়েলা এবং কিউবার রাষ্ট্রপ্রধানরা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন।
ইরানে বিমান হামলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রোববার আমেরিকান নাগরিকরা শহরগুলোতে ইরানে ট্রাম্প প্রশাসনের বিমান হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউইয়র্ক, রিচমন্ড, বোস্টন, শিকাগো, ওয়াশিংটন এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে এসব যুদ্ধবিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশ চলাকালীন বিক্ষোভকারীদের ইরানের পতাকা হাতে দেখা যায়। সেই সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তারা পোস্টার প্রদর্শন করেন। এর আগে রোববার ভোরে যুক্তরাষ্ট্র বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান দিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ চালায়।
হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, মার্কিন বিমানবাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় ‘সফল আক্রমণ’ চালিয়েছে।
এরপর এই হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের ‘গুরুতর ও নজিরবিহীন লঙ্ঘন’ বলে বর্ণনা করে। পাশাপাশি এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পূর্ণ অধিকার রয়েছে বলে জানায়। এর আগে গত শনিবার রাতে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে মার্কিন বি-২ বোমারু বিমান। হামলার পর ট্রুথ সোশ্যালে এক বার্তায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখেন, আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা- ফোরদো, নাতানজ এবং ইসফাহানে আমাদের অত্যন্ত সফল হামলা সম্পন্ন করেছি। সব বিমান এখন ইরানের আকাশসীমার বাইরে রয়েছে।
এসব লক্ষ্যবস্তু ছিল অত্যন্ত নিরাপদ ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তাই সেগুলোর ওপর হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলেও তিনি জানান ।
এদিকে ইরান-ইসরাইল চলমান যুদ্ধের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে তেহরান। সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ইব্রাহিম জোলফাগারি বলেন, ‘এই শত্রুতাপূর্ণ হামলা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সশস্ত্র বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তুর পরিধি আরো বিস্তৃত করবে এবং এই অঞ্চলে যুদ্ধের প্রসারের পথকে আরো প্রশস্ত করবে’।
তিনি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেন, ইসলামের যোদ্ধারা লক্ষ্যবস্তুতে শক্তিশালী (সামরিক) অভিযানের মাধ্যমে আপনাদের ওপর গুরুতর ও অপ্রত্যাশিত পরিণতি ডেকে আনবে।
গত শনিবার মধ্যরাতের পর ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যের এ সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে ফেললেন। ট্রাম্পের এ পদক্ষেপে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সংঘাত আরও বিপজ্জনক রূপ নেওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে। বিশ্বনেতা ও কূটনীতিকদের কেউ কেউ এর নিন্দা জানিয়েছেন। অন্যরা উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি এ হামলাকে উত্তেজনাপূর্ণ একটি অঞ্চলে বিপজ্জনক মাত্রায় উত্তেজনা বৃদ্ধির ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। একে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছিল ওমান। ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে অবৈধ আগ্রাসন বলে উল্লেখ করে এ কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে দেশটি। সেই সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে তারা।
গুতেরেস সতর্ক করে বলেন, ‘এই সংঘাত দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে; যা বেসামরিক মানুষ, এতদঞ্চল ও সারা বিশ্বের জন্যই ভয়ানক পরিণতি ঢেকে আনতে পারে।’
যুক্তরাজ্য: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘ইরানকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্র সেই হুমকি কমাতে পদক্ষেপ নিয়েছে।’ তিনি ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফেরার ও এ সংকটের একটি কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছার আহ্বান জানান।
অস্ট্রেলিয়া: অস্ট্রেলিয়া সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি।’
নিউজিল্যান্ড: নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সামরিক কর্মকাণ্ড অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ উত্তেজনা যাতে আর না বাড়ে, তা নিশ্চিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সামরিক কর্মকাণ্ড অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ উত্তেজনা যাতে আর না বাড়ে, তা নিশ্চিত করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মেক্সিকো: মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংঘাতে জড়িত পক্ষগুলোর প্রতি কূটনৈতিক সংলাপ শুরু করা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে।
চিলি: প্রেসিডেন্ট গাব্রিয়েল বোরিক বলেন, আন্তর্জাতিক আইনে এ হামলা অবৈধ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘আমরা শান্তি চাই এবং শান্তি প্রয়োজন।’
ভেনিজুয়েলা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে এক পোস্টে ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে অবৈধ, অযৌক্তিক ও ভীষণ বিপজ্জনক আগ্রাসন বলে বর্ণনা করেছেন।
সৌদি আরব: বিবিসি জানায়, সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, রিয়াদ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, বিশেষ করে দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিষয়টি।
বিবৃতিতে উত্তেজনা কমাতে সংযম প্রদর্শন এবং সংঘাত এড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এ সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছার প্রচেষ্টা জোরদার করার আহ্বানও জানিয়েছে সৌদি আরব।
ওমান: আল–জাজিরা জানায়, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছিল ওমান। ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে অবৈধ আগ্রাসন বলে উল্লেখ করে এ কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে দেশটি। ওমান তাৎক্ষণিকভাবে ও সর্বাত্মক উত্তেজনা প্রশমনেরও আহ্বান জানিয়েছে।
ওমান নিউজ এজেন্সিকে ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, দেশটি এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং সতর্ক করে বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ সংঘাত আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদেরও স্পষ্ট লঙ্ঘন।
কাতার: যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এ অঞ্চলে যে বিপজ্জনক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে, তা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে কাতার।
ইরাক: ইরাক প্রতিবেশী ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। এ হামলায় যে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তা আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে বলেও উল্লেখ করেছে দেশটি।
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের একটি গ্রিক অর্থোডক্স গির্জায় ঢুকে প্রার্থনাকারীদের ওপর গুলি চালান এক বন্দুকধারী। পরে তার নিজের শরীরে বাঁধা বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হন। এ ঘটনায় অন্তত ২২ জন নিহত এবং ৬৩ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় রবিবার (২২ জুন) দামেস্কের মার এলিয়াস গির্জায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া, রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানার এক প্রতিবেদনে হতাহতের সংখ্যা জানানো হয়েছে।
এদিকে, ব্রিটেনভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন এবং আরও অনেক আহত হয়েছেন। তবে আহতদের কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা জানায়নি তারা।
কিছু স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্যমতে, হতাহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।
বহু বছর পর সিরিয়ায় গির্জায় এই ধরনের হামলা হলো। এমন এক সময়ে এ হামলা ঘটনা হলো যখন দেশটি ইসলামপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং তারা সেখানকার সংখ্যালঘুদের সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করছেন।
এই প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে আবারও উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কোনো গোষ্ঠী তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নূরুদ্দিন আল-বাবা এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, এই হামলার পেছনে উগ্রবাদী ইসলামিক স্টেট (আইএস) জড়িত থাকতে পারে।
তিনি বলেন, ‘এক বন্দুকধারী গির্জায় ঢুকে প্রার্থনারতদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় এবং পরে শরীরের বাঁধা বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেই নিজেকে উড়িয়ে দেন।’
এই মুখপাত্রের দাবি, উপাসনালয়গুলোর নিরাপত্তা তাদের জন্য একটি রেড লাইন। তবে আইএস ও উৎখাত হওয়া আসাদ সরকারের অবশিষ্ট সদস্যরা সিরিয়াকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন।
সিরিয়ার তথ্যমন্ত্রী হামজা মোস্তাফা এটিকে সন্ত্রাসী হামলা আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘এই কাপুরুষোচিত কাজ আমাদের নাগরিক মূল্যবোধের পরিপন্থী, যা আমাদের একসূত্রে বেঁধে রাখে। আমরা সমান নাগরিকত্বের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং রাষ্ট্র সব অপরাধী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করে সমাজের রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাব।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মুখ ঢাকা এক বন্দুকধারী গির্জায় ঢুকে গুলি চালান। তখন উপস্থিত জনতা তাকে থামাতে ধাক্কা দিলে তিনি গির্জার প্রবেশপথে বিস্ফোরণ ঘটান।
ঘটনার পর ওই দিন সন্ধ্যায় সিরিয়ার সমাজকল্যাণ ও শ্রমমন্ত্রী হিন্দ কাবাওয়াত গির্জায় গিয়ে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করে শোক প্রকাশ করেন।
গির্জার ফাদার ফাদি ঘাট্টাস বলেন, ‘সবাই তখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছিল। আমি নিজ চোখে অন্তত ২০ জনের লাশ দেখেছি। গির্জায় তখন ৩৫০ জন প্রার্থনারত ছিল।’
তবে আরেক যাজক, মেলেটিয়াস শাহাতি বলেন, ‘হামলাকারী একজন ছিলেন না, দ্বিতীয় আরেক বন্দুকধারীও গির্জার দরজার দিকে গুলি ছুঁড়েছিলেন, এরপর প্রথম হামলাকারী বিস্ফোরণ ঘটান।’
ঘটনার পর হতাহতদের সহায়তায় সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ও উদ্ধারকারী দল দ্রুত গির্জায় ছুটে যায়।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর আবার নিজের অস্থিতিশীল আচরণের জন্য আলোচনায় এসেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানে হামলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে দুই সপ্তাহ সময় নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দুদিন না যেতেই তেহরানে হামলা চালিয়ে বসেন ট্রাম্প। মূলত হামলার পরিকল্পনা গোপন রাখতেই ওই তিনি ওই ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানে সামরিক অভিযানের ব্যাপারে কয়েকদিন ধরেই দৃঢ়ভাবে আগ্রহী ছিলেন ট্রাম্প। হামলার বিষয়ে তার প্রকৃত চিন্তাভাবনা গোপন রাখতেই তিনি তার জ্যেষ্ঠ সহকারীদের একটি নির্দেশ দেন— প্রেসকে জানিয়ে দেওয়া হোক, দুই সপ্তাহের মধ্যে অভিযান চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প!
তার মানে দাঁড়ায়, দুই সপ্তাহের ঘোষণা দিয়ে দুদিনের মাথায় হামলা চালানো কোনো অস্থিতিশীল আচরণ নয়, বরং এটি ট্রাম্পের সুপরিকল্পিত রণকৌশল।
সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন বলছে, ইতোমধ্যেই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন— কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশ হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন ট্রাম্প। এ কারণে দুই সপ্তাহের সময়সীমার ঘোষণা দেন তিনি।
ইরানিদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি এবং তার পরিকল্পনা গোপন রাখার অভিপ্রায়েই এই কৌশল অবলম্বন করেন ট্রাম্প।
গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়ানোর ব্যাপারে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছিলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের ভাষ্যে, ওই দিন তিনি তার সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননের সঙ্গে দুপুরের খাবারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। ব্যানন প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।
এরপরই তার প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট হোয়াইট হাউস ব্রিফিং রুমে গিয়ে প্রেসিডেন্টের নির্দেশ অনুসারে ওই দুই সপ্তাহের সময়সীমার ঘোষণা দেন।
যদিও হামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এসেছিল শনিবার (২১ জুন), তবে ট্রাম্পের আশপাশের মানুষের বিশ্বাস, ইরানে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে প্রেসিডেন্টের মন অনেক আগেই স্থির হয়ে গিয়েছিল।
সূত্র আরও জানায়, ট্রাম্পকে আগেই হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল এবং তিনি প্রতিদিনই জ্যেষ্ঠ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করছিলেন। এর পাশাপাশি দিনে একাধিকবার ফোনালাপও চলছিল বলে বিশ্বাস তার আশেপাশের লোকেদের।
এরপর, রবিবার (২২ জুন) ভোরে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় অত্যন্ত সফলভাবে হামলা পরিচালনা করেছি, যার মধ্যে রয়েছে ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। রাশিয়ার একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এমন তথ্য জানিয়েছেন।
আব্বাস আরাগচি বলেন, রবিবার (২২ জুন) দিন শেষে তিনি মস্কোর উদ্দেশে রওনা দেবেন। সেখানে পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠক হবে। আমাদের মধ্যকার কৌশলগত অংশীদারত্ব রয়েছে। আমাদের অবস্থান নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে কথা হয় এবং আমাদের অবস্থান নিয়ে সমন্বয় করি।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন কোনো চূড়ান্ত সীমা নেই, যেটা যুক্তরাষ্ট্র লঙ্ঘন করেনি। সর্বশেষ তারা যেটা করেছে, সেটা খুবই বিপজ্জনক। আমাদের পরমাণু স্থাপনায় হামলার মধ্য দিয়ে তারা আরেকটি বড় চূড়ান্ত সীমা লঙ্ঘন করেছে।’
এদিকে ইরানের প্রধান তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বাহিনীর বড় ধরনের হামলা চালানোর পর ইসরায়েলে প্রায় ২০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তেল আবিব, হাইফাসহ ইসরায়েলের অন্তত ১০টি এলাকায় আঘাত হেনেছে। আর এতে ৮৬ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, রবিবার সকালে ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চল লক্ষ্য করে ইরান থেকে ছোড়া প্রায় ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে তারা।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, এ সময় ইসরায়েলজুড়ে ভারী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ইসরায়েলে বড় পরিসরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে তেল আবিবের বেশ কয়েকটি ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড আদম (এমডিএ)। এই হামলায় অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
রবিবার (২২ জুন) এক বিবৃতিতে ইরানের হামলার বিষয়টি জানায় এমডিএ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তেহরানের হামলায় বেশ কয়েকটি দ্বিতল আবাসিক ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কিছু ভবন ধসে পড়েছে।’
এর আগে, ইরানের হামলার পর ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার খবর পেয়ে অন্তত ১০টি স্থানে উদ্ধারকাজের জন্য রওনা দেওয়ার কথা জানায় এমডিএ।
সংস্থাটির বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গত কয়েক মিনিটে সতর্কতামূলক সাইরেন শোনার পর যেসব স্থানে হামলার খবর পাওয়া গেছে, সেসব জায়গার উদ্দেশে উদ্ধারকারী দল রওনা দিয়েছে।’
সংস্থাটির সম্প্রচারিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ভবনের অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং আশপাশের অন্যান্য ভবনেরও উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সে সময় ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক উদ্ধারকারী ও জরুরি সেবাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলে গোলাবারুদ পড়ার ঘটনাস্থলে কর্মকর্তারা ও বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ইউনিট কাজ করছে।
উত্তরাঞ্চলীয় শহর হাইফার এক কর্মকর্তাও ওই শহরে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।
জেরুজালেমে অবস্থানরত মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রযোজক জানিয়েছেন, তিনি শহরের আকাশে বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন এবং ভিডিওতে আকাশে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্রও দেখা গেছে।
এর আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে বিমান হামলা চালানোর কথা নিশ্চিত করার পর প্রথমবারের মতো ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নতুন ঢেউ শুরু হয়েছে এবং তাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে।
এ সময় ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যবর্তী দেশ জর্ডানেও সতর্কতামূলক সংকেত শোনা গেছে বলে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
জাতিসংঘে ইরানের চিঠি
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে ইরান। এ ছাড়া এক চিঠিতে নিরাপত্তা পরিষদকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন হামলার নিন্দা জানাতে অনুরোধ জানিয়েছে তেহরান।
চিঠিতে জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে ‘আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি গুরুতর হুমকি’ বলে আখ্যায়িত করেন।
রবিবার ভোরে ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা হওয়ার বিষয়টিও তিনি চিঠিতে নিশ্চিত করেন।
এই হামলাগুলো ‘আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পূর্ণ তত্ত্বাবধায়নে হয়েছে বলেও দাবি করেন ইরাভানি। যদিও এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
তবে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইরান ক্রমাগত সংস্থাটির সমালোচনা করে আসছে।
চিঠিতে রাষ্ট্রদূত বলেন, এই হামলার মাধ্যমে জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) লঙ্ঘন করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই অবৈধ কাজের পর্যালোচনা, যথোপযুক্ত নিন্দা ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।’
ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে জড়াতে পারে যুক্তরাষ্ট্র- এমন আশঙ্কার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে রহস্যময় জাম্বো জেট। বিশালাকার সেই বিমানটি চোখে পড়তেই সাধারণ মার্কিনিদের চোখ কপালে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের একাংশের দাবি, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে বড় কোনো পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই কারণে গুপ্তঘাঁটি থেকে অতিশক্তিশালী ওই বিমানকে বের করেছে মার্কিন বিমান বাহিনী। যদিও বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি দেশটির প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মঙ্গলবার রাজধানী ওয়াশিংটনের যুগ্ম সামরিক ঘাঁটি ‘অ্যান্ড্রুজ’-এ হঠাৎই অবতরণ করে মার্কিন বিমান বাহিনীর রহস্যময় জাম্বো জেট ‘ই-৪বি নাইটওয়াচ’। কেউ কেউ অবশ্য একে ‘ডুম্সডে’ (কেয়ামত) উড়োজাহাজ বলেও উল্লেখ করে থাকেন।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে’ জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়দার ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলার সময়ে শেষ বার বিমানটিকে ওয়াশিংটনে উড়তে দেখা গিয়েছিল। প্রায় আড়াই দশক পর গায়ের ধুলো ঝেড়ে ‘নাইটওয়াচ’-এর প্রকাশ্যে আসাকে কেন্দ্র করে তাই তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।
যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাণকারী সংস্থা বোয়িংয়ের তৈরি ‘৭৪৭-২০০’ মডেলের ‘নাইটওয়াচ’ বিমানটিকে দীর্ঘ দিন ধরেই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ব্যবহার করে আসছে মার্কিন সরকার। এটি মাঝ-আকাশে ‘ন্যাশনাল এয়ারবর্ন অপারেশন্স সেন্টার’ বা এনএওসি হিসাবে কাজ করে থাকে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশের কাছে এর পরিচয় ‘উড়ন্ত পেন্টাগন’। পরমাণু যুদ্ধ বা ওই ধরনের কোনো জরুরি অবস্থা তৈরি হলে প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ অন্যান্য জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সুরক্ষা এবং পারমাণবিক যুদ্ধের সময় কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশে এটি নির্মাণ করেছে বোয়িং।
পেন্টাগন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তাদের হাতে মোট চারটি ‘নাইটওয়াচ’ বিমান রয়েছে। এগুলো পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে মার্কিন বিমান বাহিনীর এয়ার কমব্যাট কমান্ডের হাতে। সংশ্লিষ্ট বিমানটি সরাসরি পারমাণবিক ডুবোজাহাজ এবং আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা আইসিবিএমের (ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল) ইলেকট্রনিক ব্যবস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম।
এদিকে বিমানটিতে অত্যন্ত কম এবং উচ্চ কম্পাঙ্কের দুধরনের অ্যান্টেনা রয়েছে, যার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো স্থানে যোগাযোগ করতে পারেন পাইলট ও ক্রু সদস্যেরা। শুধু তাই নয়, এই বিমানটিকে সব সময় সর্বশেষ প্রযুক্তিতে আপডেট করার প্রক্রিয়া চালু রেখেছে পেন্টাগন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই জাম্বো জেটের পারমাণবিক বিস্ফোরণ, তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্র এবং যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক হামলা সহ্য করার সক্ষমতা রয়েছে। সেই কারণে বিমানটিতে কোনো জানালা রাখা হয়নি। একবার জ্বালানি ভরলে ৭ হাজার মাইল পর্যন্ত উড়তে পারে বিমানটি। তবে এক নাগাড়ে বেশ কয়েক দিন আকাশেও থাকতে পারে, কারণ আকাশেই জ্বালানি ভরার ব্যবস্থা রয়েছে এতে। এছাড়াও বিমানে রয়েছে আধুনিক ডিজিটাল যোগাযোগ ও সাইবার সুরক্ষা ব্যবস্থা।
‘নাইট ওয়াচ’ সম্পর্কে একটি প্রচলিত ধারণা হলো, এটি একদিকে যেমন পরমাণু অস্ত্র উৎক্ষেপণ করতে পারে আবার পারমাণবিক যুদ্ধের সময় একে কমান্ড সেন্টার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবে ওয়াশিংটন। আর ঠিক সেই কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, ইরানে হামলার জন্য বিমানটিকে কি পশ্চিম এশিয়ায় নিয়ে যাবে মার্কিন বিমান বাহিনী?
গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই পরিস্থিতিতে ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে মার্কিন বিমান বাহিনীর সংশ্লিষ্ট বিমানটির প্রয়োজন পড়তে পারে বলেই ধারণা করছেন অনেকে।
প্রসঙ্গত, গত শতাব্দীতে ‘স্নায়ু যুদ্ধের’ সময়ে প্রথম বার পরমাণু হামলা সহ্য করার মতো উড়োজাহাজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে যুক্তরাষ্ট্র। সেইমতো ১৯৭০-এর দশকে বোয়িংয়ের হাত ধরে জন্ম নেয় ‘নাইটওয়াচ’। কারণ স্নায়ু যুদ্ধের সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) থেকে পরমাণু হামলার আশঙ্কায় ভুগছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের ধারণা ছিল- যেকোনো সময় পারমাণবিক হামলা চালাবে মস্কো। তখন পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রয়োজন হবে ‘ডুম্সডে’ বিমানের।
কিন্তু ১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলে সংশ্লিষ্ট বিমানটির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। তার পর থেকে আর কখনোই একে ওড়ায়নি মার্কিন বিমান বাহিনী। তবে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন মহড়ায় অংশ নিয়েছে ‘ডুম্সডে’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিদেশ ভ্রমণের জন্য ব্যবহৃত ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’- এর ব্যাকআপ হিসেবেও মাঝেমধ্যে নাইটওয়াচকে ব্যবহার করেছে ওয়াশিংটন।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি একে ‘উত্তেজনাপূর্ণ অঞ্চলে পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি’ হিসেবেও অভিহিত করেন।
এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে আরো ভয়াবহ সংকট তৈরি করতে পারে বলেও সতর্ক করেন এবং অবিলম্বে পরিস্থিতি শান্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদরদপ্তর থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
এক বিবৃতিতে গুতেরেস আরো বলেন, ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এটি ইতোমধ্যে অস্থিতিশীল অঞ্চলটিতে ভয়ানক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি, এর কোন সামরিক সমাধান নেই।
তিনি বলেন, সমাধানের একমাত্র পথ কূটনীতি, একমাত্র আশা হল শান্তি।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ক্রমেই আগ্রাসী হয়ে উঠছে ইসরায়েল। এমন ইঙ্গিত মিলেছে সাম্প্রতিক হামলার বিশ্লেষণ থেকে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে যে ধর্মীয় নেতৃত্ব দেশটি শাসন করে আসছে, তা সরিয়ে দিলে নতুন যে নেতৃত্ব আসবে, তারা যে কম কট্টর হবে—তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
ইসরায়েল এখন আর শুধু ইরানের পারমাণবিক কিংবা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় আঘাত করছে না; বরং দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা আইআরআইবিতেও হামলা চালিয়েছে। এতে অনেকের ধারণা, ইসরায়েলের লক্ষ্য শুধু ইরানের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করা নয়; বরং দেশটির ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা খামেনিকেও সরিয়ে দেওয়া। কিন্তু তিন দশকের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা এই নেতাকে যদি সত্যিই সরিয়ে দেওয়া হয়, এরপর কী হবে?
২০০৩ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পরের পরিস্থিতি এবং ২০১১ সালে লিবিয়ায় ন্যাটো অভিযানের পর ছড়িয়ে পড়া বিশৃঙ্খলার কথা ভেবে আজও আতঙ্কিত হন ইউরোপীয় নেতারা। উভয় দেশ থেকে একনায়ক সরানো গেলেও দেশ দুটি বছরের পর বছর ধরে রক্তাক্ত সহিংসতায় জর্জরিত ছিল।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সম্প্রতি কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আজকের দিনে সেনা অভিযানের মাধ্যমে ইরানের শাসন পরিবর্তন করতে চাওয়া সবচেয়ে বড় ভুল। কারণ, এতে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। আপনাদের কি মনে হয়, ২০০৩ সালে ইরাকের অভিযান কিংবা ২০১১ সালে লিবিয়ায় যা ঘটেছিল, তা সফল কিছু ছিল? মোটেই নয়!’
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, যদি খামেনি ও তার ঘনিষ্ঠদের অপসারণ করা হয়, তবে যে শূন্যতা সৃষ্টি হবে, তা হয়তো ভরাট হবে ইরানের বিপ্লবী গার্ড (আইআরজিসি) বা সেনাবাহিনীর কট্টর অংশের দ্বারা।
থিংকট্যাংক কার্নেগি এনডাওমেন্টের গবেষক নিকোল গ্রাজেউস্কি বলেন, ‘ইসরায়েলের হামলা শুধুই পারমাণবিক কর্মসূচির নিষিদ্ধকরণ নয়, বরং তারা শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন চাইছে এবং তা স্পষ্ট।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা শুধু ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি নয়, বরং শাসকগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান; যেমন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনেও আঘাত হেনেছে। যদি শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তাহলে এক উদার ও গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের আশা করা যেতে পারে। তবে বিপ্লবী গার্ড বা আইআরজিসির মতো সংগঠিত শক্তির উত্থানও হতে পারে।’
ইরানের বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত মুখ হলেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী রেজা পাহলভি। তিনি ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির পুত্র। রেজা পাহলভি বলেছেন, ‘ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র পতনের দ্বারপ্রান্তে।’ তিনি খামেনিকে ‘ইঁদুরের মতো গর্তে লুকিয়ে থাকা ভিতু’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে তার পিতার সময়কার উষ্ণ সম্পর্ক ফিরিয়ে আনার পক্ষে এবং এই নতুন সম্পর্ককে ‘সাইরাস চুক্তি’ নামে অভিহিত করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে রেজা পাহলভি ইরান ও প্রবাসীদের মাঝে সর্বজনগ্রাহ্য নন। তার ইসরায়েলপ্রীতি ও জাতীয়তাবাদ বিরোধীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে ইসরায়েলি বিমান হামলার নিন্দা না করায়।
আরেকটি সংগঠিত বিরোধী দল হচ্ছে পিপলস মুজাহিদিন অব ইরান (এমইকে)। এই সংগঠনের নেত্রী মরিয়ম রাজাভি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বলেন, ‘ইরানের জনগণ এই সরকারের পতন চায়।’ তবে এমইকের অতীতে ইরাক-ইরান যুদ্ধে সাদ্দাম হোসেনের পাশে থাকার কারণে অনেক ইরানির মধ্যেই এদের প্রতি ঘৃণা রয়েছে।
অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থমাস জুনো বলেন, ‘ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বিকল্প হিসেবে সংগঠিত, গণতান্ত্রিক শক্তির অভাব রয়েছে। রেজা পাহলভি সবচেয়ে বেশি পরিচিত নাম হতে পারেন, কিন্তু তার সমর্থকেরা তার জনপ্রিয়তা অতিমাত্রায় বাড়িয়ে দেখান।’ তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে ভয়ংকর বিকল্প হতে পারে বিপ্লবী গার্ডের সেনা অভ্যুত্থান কিংবা ধর্মতন্ত্রের জায়গায় সামরিক একনায়কতন্ত্রের সূচনা।’
বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, ইরানের জটিল জাতিগত গঠনের দিকটিও ভবিষ্যতের অস্থিরতার কারণ হতে পারে। দেশটিতে পার্সিদের পাশাপাশি রয়েছে বড় সংখ্যায় কুর্দি, আরব, বালুচ ও তুর্কি সংখ্যালঘু। গবেষক নিকোল গ্রাজেউস্কি বলেন, ‘বিদেশি শত্রুরা ইরানের এই জাতিগত বিভাজনকে কাজে লাগাতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংকট্যাংক সুফান সেন্টার জানিয়েছে, ইরানি শাসনব্যবস্থার টিকে থাকা এখন অনেক দেশের দৃষ্টিতে এক ‘কৌশলগত ব্যর্থতা’। তারা সতর্ক করে বলেছেন, পোস্ট-রেজিম চেঞ্জ পরিস্থিতির কারণ ইরান ‘ইরাক ২.০’ হয়ে উঠতে পারে, যার প্রভাব শুধু এই অঞ্চলেই নয়, গোটা বিশ্বেই পড়বে।
নানা টালবাহানার পর ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে জড়াল যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলায় চালিয়েছে ওয়াশিংটন। এতে চলমান সংঘাত আরও বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সময় রবিবার (২২ জুন) ভোরে ফোরদো, ইসফাহান ও নাতানজের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। বার্তা সংস্থা অ্যাসেসিয়েটেড প্রেসের খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় অত্যন্ত সফলভাবে হামলা পরিচালনা করেছি, যার মধ্যে রয়েছে ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহান।’
হামলার বিষয়টি ইরানের পারমাণবিক সংস্থা থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে হামলা সত্ত্বেও ওই স্থাপনাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ না করে বরং চালিয়ে যাওয়া হবে বলে দাবি করেছে ইরান।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি স্থগিত করার অজুহাতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এবার তেল আবিবের সঙ্গে যুক্ত হলো ইসরায়েলের মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানান, ইরানের সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্টেলথ বোমা ও জিবিইউ-৫৭ ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা প্রয়োজন ছিল, যা ভূগর্ভের গভীরেও আঘাত হানতে সক্ষম।
ট্রাম্প জানান, তিনি রাত ১০টায় (ইস্টার্ন টাইম) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এই হামলাকে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও বিশ্বের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এখনই ইরানকে এই যুদ্ধ বন্ধে রাজি হতে হবে। ধন্যবাদ!’
হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগন এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য না করলেও ট্রাম্প সমর্থিত ফক্স নিউজের উপস্থাপক শন হ্যানিটি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি নিশ্চিত হয়েছেন যে, ফোরদোয় ছয়টি বাঙ্কার বাস্টার বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবমেরিন থেকে নাতানজ ও ইসফাহানে ৩০টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাতে জড়ানোর বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। তার আগে ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বানও জানান তিনি। তবে তার ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
তিনি বলেন, এই সংঘাতে যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ আমেরিকানদের জন্য ‘অপূরণীয় ক্ষতির’ কারণ হবে।
দুই সপ্তাহের কথা বললেও মাত্র দুদিন পরই ইরানে অভিযান পরিচালনার অনুমোদন দেন ট্রাম্প। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলি নেতাদের চাপ ও রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের তাগিদে এই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
এদিকে, শনিবার (২১ জুন) দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের জন্য প্রস্তুত হওয়ার কথা জানায় ইসরায়েল। তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত হওয়া পরিস্থিতিকে সবার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক করে তুলবে।’
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দেয়, তাহলে তারা আবারও লোহিত সাগর অঞ্চলে মার্কিন জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা শুরু করবে বলে হুমকি দিয়েছে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
২০১৮ সালে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার সাত বছর পর ইরানের সঙ্গে এই সামরিক সংঘাত ঘটল ট্রাম্পের।
ইরানের পরমাণু কার্যক্রম সীমিত করার বিনিময়ে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে ওই চুক্তিটি করেছিল ওবামা প্রশাসন ও অন্যান্য বিশ্বশক্তি।
তবে ট্রাম্পের এই হামলার সিদ্ধান্ত তার নিজ রাজনৈতিক দলের ভেতর থেকেই সমালোচিত হয়েছে। এই সংঘাতে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়া ট্রাম্পের যুদ্ধবিমুখ প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করবে বলেও সতর্ক করেছেন অনেকে।