৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে রাশিয়ার দূর-পূর্বাঞ্চলের কামচাতকা উপদ্বীপ। আজ রোববার সকালে ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর সেখানে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি আগ্নেয়গিরি। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অগ্ন্যুৎপাত শুরু হওয়ার পর আকাশে কয়েক মাইল ছাইয়ে ছেয়ে গেছে।
শিভেলুচ নামের এই আগ্নেয়গিরিটি কামচাতকা উপদ্বীপের রাজধানী পেত্রোপাভলোস্ক-কামচাতস্কি থেকে ২৮০ মাইল দূরে অবস্থিত। সেখানে ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষ বসবাস করেন।
বার্তাসংস্থা টাস নিউজ জানিয়েছে, আগ্নেয়গিরির ছাই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ কিলোমিটার উপর পর্যন্ত উঠেছে। এছাড়া আগ্নেয়গিরি থেকে গড়িয়ে নিচে নেমে এসেছে লাভা।
শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানলেও এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিতের জন্য সেখানকার ভবনগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ব জরিপ সংস্থা জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল ৭টার দিকে পেত্রোপাভলোস্ক-কামচাতস্কি থেকে ৯০ কিলোমিটার পূর্বে মাটির ৫০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সুনামি সতর্কতা কেন্দ্র ভূমিকম্পের পর পর সুনামির সতর্কতা জারি করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তারা জানায় এ শঙ্কা কেটে গেছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সুনামির কোনো সতর্কতা জারি করেনি।
বড় ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর বেশ কয়েকটি আফটার শক (ছোট ছোট ভূমিকম্প) অনুভূত হয়েছে। কিন্তু এগুলোর তীব্রতা কম ছিল। যেই উপদ্বীপটিতে ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছে সেটি একটি ভূমিকম্পন প্রবণ এলাকা। এটি ‘রিং অব ফায়ারের’ পাশেই অবস্থিত। সেখানে এক ডজনের বেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তাদের দাবি হামাসও যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় নতুন করে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র দাবি করেন, হামাস যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন করে ‘ইয়েলো লাইন’-এর ওপারে ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর একাধিক হামলা চালিয়েছে।
সেনাবাহিনীর দাবি, এই ‘ইয়েলো লাইন’ হচ্ছে সেই সীমারেখা, যার বাইরে ইসরায়েলি বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ অনুযায়ী নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল।
অন্যদিকে হামাস জানিয়েছে, তারা এখনো যুদ্ধবিরতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং বরং ইসরায়েলই একাধিকবার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছে।
বার বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসের শুরুতে কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ৪৭ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ফলে ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৪৩ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েলি সরকার বলছে, গাজা ও মিসরের মধ্যবর্তী রাফা সীমান্ত ক্রসিং ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ বন্ধ থাকবে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
৪৭ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল
বার বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসের শুরুতে কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ৪৭ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
হামাস এরই মধ্যে আরও দুই জিম্মির মরদেহ ফেরত দিয়েছে। হামাস বলছে, নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি চুক্তি ‘ব্যাহত করার জন্য তুচ্ছ অজুহাত’ কাজে লাগাতে চাচ্ছেন।
শনিবার রাতে হামাস জানিয়েছে, রাফা ক্রসিং বন্ধ থাকায় মৃতদেহ উদ্ধার ও স্থানান্তরে উল্লেখযোগ্য বিলম্ব হবে। গাজার মধ্যে এখনো বন্দি ও মৃতদেহ ফেরতের বিষয়টি যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়নের অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাফাহ ক্রসিং পুনরায় খোলার সঙ্গে সব মৃতদেহ পুনরুদ্ধারের বিষয়টি যুক্ত করেছে ইসরায়েল।
২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া সংঘাতে গাজায় কমপক্ষে ৬৮ হাজার ১১৬ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ২০০ জন আহত হয়েছে। অপরদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়।
যুদ্ধবিরতির পরেও বন্ধ গাজার ‘লাইফলাইন’ রাফা ক্রসিং
যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার, তুরস্কের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও এখনো বন্ধ রয়েছে ‘লাইফলাইন’ খ্যাত রাফা ক্রসিং। গাজার শহর থেকে প্রায় ৩০-৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে মিসর সীমান্তে অবস্থিত এ চেকপোস্টটি মাত্র ৩০০ মিটারের একটি রাস্তা। তবে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ এবং ত্রাণ পৌছানোর প্রধান আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বার এ রাফা ক্রসিং।
হামাসের ওপর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে ফিলিস্তিনিদের জীবন বাঁচানোর এ পথটি বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে রাফা ক্রসিং।
কার্যালয়ের বরাত দিয়ে দ্য নাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রসিং পুনরায় খোলার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে হামাস কতটা তাদের দায়িত্ব পালন করছে তার ওপর। বন্দিদের ফিরানো এবং মৃতদেহ হস্তান্তরসহ সম্মত ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়ন করছে কিনা সে বিষয় বিবেচনা করে রাফা ক্রসিং খোলা হবে।
গাজার মধ্যে এখনও বন্দি ও মৃতদেহ ফেরতের বিষয়টি যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়নের অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাফা ক্রসিং পুনরায় খোলার সঙ্গে সব মৃতদেহের পুনরুদ্ধারের বিষয়টি যুক্ত করেছে ইসরায়েল।
এর আগে নয় মাস পর গত ফেব্রুয়ারিতে সীমিত সময়ের জন্য রাফা ক্রসিং খুলে দেওয়া হয়েছে। তখন যে পরিমান ত্রাণ প্রবেশের কথা ছিল তা হটে দেয়নি ইসরায়েল। এছাড়া তখন ছয় হাজারের বেশি রোগীকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে তা করতে দেয়নি ইসরাইয়েল। ফলে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচার হামলা ও গণহত্যার কারণে গাজায় মানব সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ শুরু হয়।
গাজায় ফের হামলা শুরু করতে বললেন ইসরায়েলি মন্ত্রীরা
ইসরায়েলের অতি-ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরসহ একাধিক মন্ত্রী গাজায় আবারও আক্রমণ শুরু করার জন্য নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার আল জাজিরা জানিয়েছে, বেন-গভির এক্স-পোস্টে বলেন, তিনি চান ইসরায়েলি বাহিনী ‘সর্বোচ্চ শক্তির সঙ্গে গাজা উপত্যকায় সম্পূর্ণরূপে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করুক’।
আল জাজিরা জানিয়েছে, আজ সকালে গাজাজুড়ে বেশ কয়েকটি বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর মন্ত্রীদের এ বক্তব্য এলো।
ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এক্স-পোস্টে একটি শব্দ লিখে একই ইঙ্গিত দিছেন: ‘যুদ্ধ!’
প্রবাসীবিষয়ক মন্ত্রী আমিচাই চিকলি বলেন, ‘যতদিন হামাস থাকবে, যুদ্ধ থাকবেই।’
নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার আরেক সদস্য আভি ডিচটার পরিস্থিতিকে ‘কঠিন ও জটিল’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং হামাসকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনে অভিযুক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, সমস্ত জীবিত জিম্মিরা আমাদের হাতে, পরিস্থিতি বদলে গেছে। ইসরায়েল হামাসকে নিরস্ত্র করার ক্ষেত্রে হাল ছাড়বে না।
দীর্ঘদিনের গণহত্যা ও দুর্ভিক্ষের মাঝে কয়েকদিন আগে মার্কিন মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করে হামাস ও ইসরায়েল। তবে কয়েকদিন না গড়াতেই ইসরায়েলি মন্ত্রীদের এসব মন্তব্য তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ বাড়িয়ে দেয়।
ক্যারিবীয় সাগরে একটি মাদকবাহী সাবমেরিন ধ্বংস করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সাবমেরিনটি যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এদিকে মার্কিন হামলায় দুজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরও দুজন বেঁচে গেছেন। বেঁচে যাওয়া ওই দুজনকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র। রোববার (১৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী একটি “মাদকবাহী” সাবমেরিন ধ্বংস করেছে। সাবমেরিনটি “মাদক চোরাচালান পথ” ধরে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে আসছিল।
শনিবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশালে মার্কিন রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, “আমার জন্য এটা এক বিরাট সম্মান, আমরা একটি বিশাল মাদকবাহী সাবমেরিন ধ্বংস করতে পেরেছি, যা মাদক পাচারপথ ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল।”
তিনি জানান, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চিত করেছে যে সাবমেরিনটিতে মূলত ফেন্টানিলসহ বিপুল পরিমাণ অবৈধ মাদক ছিল। ট্রাম্প বলেন, “নৌযানটিতে চারজন ‘নার্কো-টেররিস্ট’ ছিলেন। তাদের মধ্যে দুইজন নিহত হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, অভিযানে যুক্ত কোনো মার্কিন বাহিনীর ক্ষতি বা কোনো সেনা আহত হয়নি।
ট্রাম্প দাবি করেন, “আমি যদি এই সাবমেরিনকে উপকূলে পৌঁছাতে দিতাম, তাহলে অন্তত ২৫ হাজার আমেরিকান মারা যেতেন। বেঁচে থাকা দুই সন্ত্রাসীকে তাদের নিজ নিজ দেশ ইকুয়েডর ও কলম্বিয়ায় ফেরত পাঠানো হচ্ছে, সেখানে তাদের আটক রাখার পাশাপাশি বিচার করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র স্থল বা সমুদ্র, কোনও পথেই মাদকবাহী সন্ত্রাসীদের সহ্য করবে না।”
সংবাদমাধ্যম বলছে, গত মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় সাগরে অন্তত ছয়টি অভিযান চালিয়েছে। সেখানে মূলত আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবৈধ মাদকবাহী জাহাজ লক্ষ্য করে দেশটি এসব হামলা চালাচ্ছে। যদিও এসব অভিযান ভেনেজুয়েলার উপকূলের অনেকটা কাছাকাছিই সংঘটিত হচ্ছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ক্যারিবীয় অঞ্চলে নৌবাহিনীর একটি বহর মোতায়েন করার পর পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়। ওয়াশিংটনের দাবি, মার্কিন এই নৌবহর অপরাধী চক্র ও মাদক পাচার রোধে কাজ করছে।
এর আগে গত শুক্রবার মার্কিন প্রকিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের প্রধান পিট হেগসেথ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন কমান্ড অঞ্চলে মাদক চোরাচালানকারী সংগঠনগুলোকে লক্ষ্য করে একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে গাজায় একই পরিবারের ১১ জন সদস্যকে হত্যা করেছে ইসরাইল। আট দিন আগে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ চুক্তি লঙ্ঘনের ঘটনা। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় গাজা সিটিতে একটি গাড়িতে হামলা চালায় ইসরাইল। খবর আল জাজিরার।
শুক্রবার সন্ধ্যায় গাজা সিটির জেইতুন পাড়ায় একটি বেসামরিক গাড়ি লক্ষ্য করে ট্যাঙ্কের শেল নিক্ষেপ করে ইসরাইলি বাহিনী। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এক বিবৃতিতে জানান, পরিবারটি যখন তাদের বাড়িতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল, তখন ইসরাইলি সেনাবাহিনী তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। নিহতদের মধ্যে সাত শিশু এবং তিনজন নারী ছিলেন।
তিনি আরো বলেন ‘যা ঘটেছে তা নিশ্চিত করে যে দখলদাররা এখনো রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষ চালাতে চায়।’
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিসের সঙ্গে সমন্বয় করে এখন পর্যন্ত নয়জনের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
হামাস এ হামলাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করে এর নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলছে, কোনো যুক্তি ছাড়াই পরিবারটিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মধ্যস্থতাকারীদের কাছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলার জন্য ইসরাইলকে চাপ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে হামাস।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরও গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
হামাস এই হামলাগুলোকে যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যাতে তারা ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে চুক্তি মেনে চলতে বাধ্য করে।
হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা যুদ্ধবিরতির বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। মধ্যস্থতাকারীরা যদি নীরব থাকে, তবে এটি আরও রক্তপাতের পথ খুলে দেবে।
হামাস জানিয়েছে, তারা রেড ক্রসের মাধ্যমে এক নিহত ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দিয়েছে।
এদিকে, গাজার মানবিক পরিস্থিতি এখনও অত্যন্ত ভয়াবহ। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আহ্বান সত্ত্বেও বড় পরিসরে ত্রাণ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ইসরায়েলের আরোপিত বিধিনিষেধের কারণে। ফলে স্থানীয় মানুষ এখনো খাবার, পানি ও চিকিৎসা সংকটে ভুগছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত ৬৭ হাজার ৯৬৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ১৭৯ জন আহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
নতুন করে এই হামলাগুলোর ফলে যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বেড়েছে এবং পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, সংঘাত পুনরায় তীব্র রূপ নিতে পারে যদি ইসরায়েলি অভিযান বন্ধ না হয়।
ইসরায়েলি হামলায় একই পরিবারের ১১ জন নিহত
যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজা শহরের পূর্ব আল-জেইতুন এলাকায় কোনো সতর্কতা ছাড়াই একটি গাড়ি লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় একই পরিবারের ১১ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। গাজার ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স শুক্রবার রাতে এ তথ্য জানিয়েছে।
সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, পরিবারের ১১ জন সদস্যকে বহনকারী গাড়িটি ‘হলুদ রেখা’ অতিক্রম করলে বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। আক্রমণটি কোনো সতর্কতা ছাড়াই হয়েছিল। নিহতদের মধ্যে মধ্যে সাত শিশু এবং দুই নারী ছিলেন।
‘হলুদ রেখা’ হলো একটি সীমানা - যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলি বাহিনী যেখানে অবস্থান করছে সেই জায়গা। এই রেখা টেনে গাজার মধ্যে ফিলিস্তিনিদের চলাচলের অনুমতিপ্রাপ্ত এলাকাগুলোকে পৃথক করা হয়েছে।
বাসাল বলেন, ‘তাদের সতর্ক করা বা তাদের সঙ্গে এমনভাবে আচরণ করা সম্ভব ছিল, যাতে মৃত্যু না ঘটে। কিন্তু যা ঘটেছে তা নিশ্চিত করে যে, দখলদাররা এখনো রক্তপিপাসু এবং নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
গত ১০ অক্টোবর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়িত হয়। চুক্তির আওতায় গাজার প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলি সেনাদের আংশিক প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৬৮ হাজার জনে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি বেশি মানুষ আহত হয়েছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।
ফিলিস্তিনি বন্দিদের অবস্থা অবমূল্যায়ন করা হয়েছে
যুদ্ধের সময় গাজা এবং পশ্চিম তীর থেকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরায়েল। কিন্তু মুক্তির সময় তারা যে অবস্থায় ফিরেছে, সেদিকে আন্তর্জাতিকভাবে খুব কম মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, হাতে গোনা কয়েকজন ইসরায়েলি বন্দিকে নিয়ে অনেকটা হৈ চৈ পড়ে গেছে, বিশেষ করে পশ্চিমা মিডিয়াগুলোতে।
শনিবার লন্ডনভিত্তিক কাউন্সিল ফর আরব-ব্রিটিশ আন্ডারস্ট্যান্ডিং (CAABU) এর পরিচালক ক্রিস ডয়েল আল জাজিরাকে এমনটাই বলেছেন।
ডয়েল বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইসরায়েলি বন্দিদের ওপর এত বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে, যা বোধগম্য; কিন্তু এই ফিলিস্তিনি বন্দি ও আটক ব্যক্তিদের, মুক্তি দেওয়ার সময় তাদের অবস্থা সম্পর্কে কোনো খবরই পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, তাদের কোথায় রাখা হয়েছিল? নির্যাতন, এমনকি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ... এই সবকিছুই খুব বেশি অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে।
ক্রিস ডয়েলের মতে, অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের জন্য এটি অত্যন্ত বাস্তব, খুবই বেদনাদায়ক। এটি দেখায় যে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অন্যান্য দেশে কভারেজ এবং রাজনৈতিক বিতর্ক এতটাই এগিয়ে গেছে যে, সর্বদা ইসরায়েলিদের সঙ্গে কী ঘটে তার ওপর ফোকাস থাকে। ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে কী ঘটে, তার ওপর ফোকাস কম।
ডয়েল আরও বলেন, ট্রাম্পের ২০-দফা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সবকিছুর জন্য কে দায়ী, তা নির্ধারণ করার জন্য একটি ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। ২০-দফা পরিকল্পনা চুক্তিতে তা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত, ইচ্ছাকৃতভাবে এটি রাখা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল কোনো বিচারিক ব্যবস্থা অনুমোদন করতে চাইবে না, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ইসরায়েলি গণহত্যা
টানা দুই বছরের গণহত্যা যুদ্ধের অবসানে সম্প্রতি মার্কিন-সমর্থিত চুক্তির পর হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজারেরও বেশি। একই সময়ে ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি বেশি মানুষ আহত হয়েছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
চলতি বছরের শুরুতেও একটি যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ইসরায়েল গত ২৭ মে থেকে গাজায় পৃথক সাহায্য বিতরণ উদ্যোগ শুরু করে। এতে সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই পদক্ষেপের পর অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষ প্রকট হয়ে ওঠে।
ইসরায়েলি বাহিনী খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও গুলি চালিয়ে যায়। এর ফলে শত শত মানুষ নিহত হয়। সেই সঙ্গে দুর্ভিক্ষে শিশুসহ বহু মানুষের মৃত্যু হয়।
মেক্সিকান ন্যাশনাল গার্ড বৃহস্পতিবার বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ত্রাণ-সামগ্রী পাঠিয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ৭০ জন নিহত এবং কয়েক ডজন নিখোঁজ হয়েছে।
মেক্সিকোর জোচিকোআটলান থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
সামরিক বাহিনী পরিচালিত এই সংস্থাটি হিডালগোর রাজধানী পাচুকা থেকে তিয়ানগুইস্টেঙ্গো এবং জালাকাহুয়ানতলাসহ বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।
জোচিকোআটলানে টেক্সকাকো সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা একটি বিমান অবতরণের পর তার কাছে লাইনে দাঁড়িয়েছিল এবং বেশ কয়েকজন শিশু কৌতূহলীভাবে সৈন্যদের মালামাল নামানো এবং ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণ করার সময় তা দেখছিল।
জোচিকোআটলানের ৩৭ বছর বয়সী বাসিন্দা মেরিলিন কর্টেস এএফপি’কে বলেছেন, ‘আমাদের দোকানে কেনার মতো কিছুই অবশিষ্ট নেই।’
‘সত্যি বলতে, এই ত্রাণ-সামগ্রী আমাদের জন্য খুবই সহায়ক হবে। আমাদের সত্যিই এটির প্রয়োজন। এটি ইতোমধ্যেই আমাদের জন্য আশার আলো।’
ত্রাণ-সামগ্রীর মধ্যে টুনা, দুধ, ওটমিল, টয়লেট পেপার এবং সাবানসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল।
ত্রাণ-সামগ্রী বিতরনের পাশাপাশি ন্যাশনাল গার্ড আহতদের হাসপাতালে স্থানান্তরও করছে।
বিমান বাহিনীর ক্যাপ্টেন ইরাক আলেজান্দ্রো মার্টিনেজ বলেছেন, ‘যদি আহত ব্যক্তি বা এমন কেউ থাকে যার ওষুধ বা অতিরিক্ত সাহায্যের প্রয়োজন হয় - হাসপাতালের প্রয়োজন হয়, আমরা তাদের বিমানে পরিবহন করি’।
গত সপ্তাহে কয়েকদিন ধরে প্রবল বৃষ্টিপাতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই দুর্যোগে দেশের মধ্য এবং পূর্বে রাস্তা এবং মহাসড়ক ডুবে বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর ১৬০টি এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
মেক্সিকো সিটির প্রতিবেশী হিডালগোতে ৮৪টি বিচ্ছিন্ন পৌরসভা রয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলো পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত যেখানে ভূমিধসের কারণে প্রবেশপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সূত্র: বাসস
দূরপাল্লার টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে ওয়াশিংটনে গেলেও শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কোনো প্রতিশ্রুতি পাননি ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো ইউক্রেইনে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর বিষয়ে প্রস্তুত নয়।
হোয়াইট হাউসে শুক্রবার জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, “আশা করি ইউক্রেইনের টমাহক লাগবে না। এই ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াই আমরা যুদ্ধ শেষ করতে পারবো বলে আশা করছি।” তিনি আরও বলেন, এ ধরনের অস্ত্র সরবরাহ করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে।
জেলেনস্কি বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে আলোচনা হলেও তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কারণ যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা বাড়াতে চায় না। তিনি দাবি করেন, রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালানোর জন্য টমাহক অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।
ট্রাম্প এর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। সেই আলাপের পরদিনই হলো জেলেনস্কির সঙ্গে এই বৈঠক। জানা গেছে, শিগগিরই ট্রাম্প ও পুতিন হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে মুখোমুখি আলোচনায় বসবেন।
বৈঠকে জেলেনস্কি প্রস্তাব দেন, যুক্তরাষ্ট্র টমাহক দিলে এর বদলে ইউক্রেইন ড্রোন সরবরাহ করতে পারে। ট্রাম্প প্রস্তাবে সরাসরি সম্মতি না দিলেও আগ্রহ দেখান বলে জানা গেছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রাথমিক ধাপ নিশ্চিত করার ভূমিকার জন্য ট্রাম্পের প্রশংসা করেন জেলেনস্কি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, একই কৌশল প্রয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেইন যুদ্ধে শান্তির পথ তৈরি করবে।
টমাহক না পেলেও এটি পাওয়ার সম্ভাবনা রাশিয়াকে উদ্বিগ্ন করেছে বলে দাবি করেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, “টমাহক শক্তিশালী অস্ত্র—এ কারণেই রাশিয়া এ নিয়ে শঙ্কিত।” তবে তিনি জানান, “আমি বাস্তববাদী, প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তব ফল চাই।”
পবিত্র নগরী মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদকে কেন্দ্র করে সৌদি আরব এক নতুন মেগা উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণা করেছে। এই প্রকল্পের অধীনে গ্র্যান্ড মসজিদের কাছাকাছি আকাশচুম্বী অট্টালিকা নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হলো মক্কা নগরীতে আগত বিশ্বের মুসলিমদের জন্য থাকার ব্যবস্থা, আতিথেয়তা এবং নামাজ আদায়ের সুবিধা নিশ্চিত করা।
নতুন এই উন্নয়ন প্রকল্পের নামকরণ করা হয়েছে ‘কিং সালমান গেট’। এটি আগামী বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ১২ মিলিয়ন স্কয়ার মিটার এলাকাজুড়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবেন।
প্রকল্পে থাকবে আবাসিক, বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক ও হোটেল সুবিধা। এছাড়াও, ইনডোর ও আউটডোর মিলিয়ে একসঙ্গে প্রায় ৯ লাখ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি ভিডিওতে দেখা গেছে, মক্কা নগরীর পাশ দিয়ে বিশাল উঁচু ভবনগুলো দাঁড়ানো এবং তার ওপরে শান্তির পায়রা উড়ছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে রুয়া আলহারাম আলমাক্কি প্রতিষ্ঠান। নতুন এই উদ্যোগে আনুমানিক ৩ লাখ মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সৌদি আরবের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে মক্কায় ৩ কোটি হজ যাত্রীকে স্বাগত জানানো হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মক্কা-মদিনা অঞ্চলে মুসলিম সম্প্রদায়ের আকর্ষণ আরও বৃদ্ধি পাবে।
পর্তুগালের বেশির ভাগ উন্মুক্ত স্থানে ‘লিঙ্গ বা ধর্মীয় উদ্দেশ্য’ পূরণে নিকাব ব্যবহার নিষিদ্ধের একটি বিল পার্লামেন্টে পাস হয়েছে। দেশটির কট্টর ডানপন্থি চেগা প্রস্তাবিত বিলটিতে মূলত মুসলিম নারীদের বোরকা ও নিকাব পরাকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে।
শুক্রবার পাস হওয়া বিলটিতে জনসমক্ষে মুখ ঢাকা পোশাক পরার জন্য ২০০ থেকে ৪ হাজার ইউরো জরিমানার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কাউকে নিকাব পরতে বাধ্য করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। তবে উড়োজাহাজ ভ্রমণ, কূটনৈতিক প্রাঙ্গণ এবং উপাসনালয়ে মুখ ঢাকা পোশাক পরা যাবে। খবর আল জাজিরার।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, বিলটি নিয়ে এখন সাংবিধানিক বিষয়, অধিকার, স্বাধীনতা ও নিশ্চয়তা সম্পর্কিত আইন পর্যালোচনার দায়িত্বে থাকা সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা করা হবে।
এর আগে ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসের মতো ইউরোপীয় দেশ নিকাব আংশিক বা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে। বিলটি আইনে পরিণত হলে পর্তুগালও সেই তালিকায় নাম লেখাবে।
প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো ডি সুজা এখনও বিলটিতে ভেটো দিতে পারেন কিংবা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সাংবিধানিক আদালতে পাঠাতে পারেন।
শুক্রবারের পার্লামেন্ট অধিবেশন চলাকালে বামপন্থী দলগুলোর বেশ কয়েকজন নারী আইনপ্রণেতা বিলটির বিরোধিতা করেন। তবে মধ্য-ডানপন্থি জোটের সমর্থনে বিলটি পাস হয়।
কট্টর ডানপন্থি দল চেগার নেতা আন্দ্রে ভেনচুরা বলেন, ‘আমরা আজ পার্লামেন্টের নারী সদস্য, আপনার মেয়ে, আমাদের মেয়েদের এই দেশে একদিন বোরকা পরার হাত থেকে রক্ষা করছি।’
এক্স বার্তায় তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের গণতন্ত্র এবং আমাদের মূল্যবোধ, পরিচয় ও নারীর অধিকার রক্ষার এক ঐতিহাসিক দিন।’
ক্ষমতাসীন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আইনপ্রণেতা আন্দ্রেয়া নেতো ভোটের আগে বলেছিলেন, ‘এটি পুরুষ ও নারীর মধ্যে সমতা নিয়ে বিতর্ক। কোনো নারীকে তার মুখ ঢাকতে বাধ্য করা উচিত নয়।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পার্লামেন্টে ১০টি দলের মধ্যে দুটি দল ভোটদানে বিরত ছিল। পিপল-অ্যানিম্যালস-নেচার পার্টি এবং টুগেদার ফর দ্য পিপল পার্টি বলেছে, এই প্রস্তাব বৈষম্যকে উসকে দিচ্ছে।
ইউরোপে খুবই অল্পসংখ্যক মুসলিম নারী তাদের মুখ ঢেকে রাখেন এবং পর্তুগালে এটা খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু নিকাব ও বোরকা ইউরোপজুড়ে একটি মেরূকরণের বিষয় হয়ে উঠেছে। কারো কারো যুক্তি, এগুলো লিঙ্গ বৈষম্যের প্রতীক, যা নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তাই এগুলো নিষিদ্ধ করা উচিত।
অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশের স্পিন বোলদাক শহরে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের বিমান বাহিনী। এতে নিহত হয়েছেন ৪০ জন এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৭৯ জন।
স্পিন বোলদাক শহরটির অবস্থান আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে। স্পিন বোলদাকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা করিমুল্লাহ জুবাইর আগা-এর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে আফগান সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজ জানিয়েছে, নিহত এবং আহতদের সবাই বেসমারিক এবং একটি বড় অংশই নারী ও শিশু।
সীমান্তে গত ১১ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত সংঘাত, হামলা-পাল্টা হামলার পর ১৫ অক্টোবর থেকে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে যায় দুই প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সেনাবাহিনী। সেই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হয়েছে গতকাল ১৭ অক্টোবর শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১ টার দিকে।
বিরতি শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। যারা বেঁচে গেছেন, তারা সবাই নিন্দা জানিয়েছেন এ হামলার।
হামলার শিকার এবং আহত হাজি বাহরাম নামের এক ব্যক্তি তোলো নিউজকে বলেন, “আমি ইতিহাসে কখনও এমন অবিচার দেখিনি। একটি দেশ, যারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করে— তারা এখানে নারী, শিশু ও বেসামরিক লোকজনের ওপরে হামলা করল।”
বিমান বাহিনীর অভিযানের পাশপাশি স্পিন বোলদাক শহরের নোকলি, হাজি হাসান কেলাই, ওয়ার্দাক, কুচিয়ান, শহীদ ও শোরবাকে একের পর এক আর্টিলারি গোলা নিক্ষেপ করেছে পাকিস্তানি স্থলবাহিনী। এতে বেশ কিছু বাড়িঘর, দোকান ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে হতাহতও হয়েছেন অনেকে।
প্রসঙ্গত, আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাতের মূলে রয়েছে পাকিস্তানের তালেবানপন্থি সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালেবান (টিটিপি)। বেশ কয়েক বছর আগে পাকিস্তানের সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়া এই গোষ্ঠীটি পাকিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য দিনকে দিন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
আফগাস্তানের সীমান্তবর্তী পাকিস্তানি প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়া টিটিপির প্রধা ঘাঁটি। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গোষ্ঠীটি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানের অভিযোগ—আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের মদত ও আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছে টিটিপি। তবে কাবুল বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
গত ৯ অক্টোবর আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে হামলা চালিয়ে টিটিপির শীর্ষ নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদকে হত্যা করে পাকিস্তানের বিমান বাহিনী। হামলার দু’দিন পর ১১ অক্টোবর আফগানিস্তানের সঙ্গে লাগোয়া খাইবার পাখতুনখোয়ার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে তীব্র সংঘাত শুরু হয় পাক-আফগান সেনাবাহিনীর মধ্যে।
চার দিন সংঘাত চলার পর ১৫ অক্টোবর ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি হয় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে। সেই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হয়েছে আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১ টায়। মির আলী সেনা ক্যাম্পে হামলাও ঘটেছে দুপুর ১ টার দিকেই।
সূত্র : তোলো নিউজ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ইস্যুতে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনকে দীর্ঘপাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা হলে মস্কো-ওয়াশিংটনের সম্পর্ক গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
দুই নেতার মধ্যে প্রায় আড়াই ঘণ্টার ফোনালাপে এমন হুঁশিয়ারি দেন পুতিন। ফোনালাপে ইউক্রেন যুদ্ধ ও ভবিষ্যৎ শান্তি আলোচনার বিষয়গুলো নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ট্রাম্প জানান, তার ও পুতিনের মধ্যে দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ টেলিফোন আলাপের পর দুই নেতা হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে সাক্ষাৎ করবেন। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, বৈঠকটি সম্ভবত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এই ফোনালাপের এক দিন পরই ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে জেলেনস্কি আবারও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির অনুরোধ জানাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই অস্ত্র ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভেতরের আরও গভীর এলাকায় হামলা চালাতে সক্ষম করবে।
ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের ফোনালাপ নিয়ে বৃহস্পতিবার মস্কোয় সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে রুশ প্রেসিডেন্টের সহকারী ইউরি উশাকভ বলেন, পুতিন পুনরায় তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন যে টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতা বদলাতে পারবে না। বরং এই ক্ষেপণাস্ত্র দুই দেশের সম্পর্ক এবং ইউক্রেনে শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনাকে বড় ধরনের ক্ষতি করবে।
তিনি আরও বলেন, দুই নেতার মধ্যে প্রায় আড়াই ঘণ্টার ফোনালাপ ছিল ‘খুবই ফলপ্রসূ, খোলামেলা ও গোপনীয়’। আলোচনায় ইউক্রেন যুদ্ধ ছিল মুখ্য বিষয়। এছাড়া ট্রাম্পের সামনে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির একটি বিস্তারিত মূল্যায়নও তুলে ধরেন পুতিন।
এই রুশ কর্মকর্তার ভাষায়, মস্কো ওয়াশিংটনকে জানায়- রুশ বাহিনী এখনো ‘পুরো ফ্রন্টলাইনে কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ’ ধরে রেখেছে। অপরদিকে ট্রাম্প বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধ দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন।
উশাকভ আরও বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্টের অন্যতম মূল বক্তব্য ছিল- ইউক্রেন সংঘাতের অবসান ঘটলে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হবে।
আলোচনায় দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে সরাসরি সাক্ষাতের সম্ভাবনাও উত্থাপিত হয়। উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা অবিলম্বে ট্রাম্প ও পুতিনের পরবর্তী বৈঠকের প্রস্তুতি শুরু করবেন বলেও তারা সম্মত হয়েছেন। সম্ভাব্য স্থান হিসেবে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের নাম উঠে এসেছে।
পুতিন ও ট্রাম্পের সর্বশেষ মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়েছিল গত আগস্টে আলাস্কায়। তবে সেখানেই শান্তি আলোচনার অগ্রগতি থেমে যায়। এরপর থেকে ট্রাম্প ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করবেন ট্রাম্প। এই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় হবে ইউক্রেনকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও দীর্ঘপাল্লার অস্ত্র সরবরাহ করা।
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি ইউক্রেনকে টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কাছাকাছি’ আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করছে সৌদি আরব। আগামী মাসে (নভেম্বর) সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ওয়াশিংটন সফরের সময় চুক্তিটি স্বাক্ষর হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
সম্ভাব্য এই প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে অবগত কর্মকর্তাদের বরাতে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস।
ট্রাম্প প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ফিনান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘ক্রাউন প্রিন্সের ওয়াশিংটন সফরে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে, তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।’
তবে ফিনান্সিয়াল টাইমস বলছে, আলোচনাধীন সম্ভাব্য এই চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের সাম্প্রতিক প্রতিরক্ষা চুক্তির অনুরুপ হতে পারে। ওই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে কাতারের ওপর কোনো সশস্ত্র হামলা হলে সেটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। গত মাসে কাতারের রাজধানী দোহায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বিমান হামলা চালানোর কয়েকদিন পরই দেশটির সঙ্গে চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ফিনান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছে, সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ‘আমাদের আঞ্চলিক কৌশলের একটি শক্তিশালী ভিত্তি’। তবে সম্ভাব্য চুক্তির বিস্তারিত নিয়ে কোনও ধরনের মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এদিকে ফিনান্সিয়াল টাইমসের এই প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর, হোয়াইট হাউস এবং সৌদি সরকার।
প্রসঙ্গত, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কাতারের মতো নিরাপত্তা গ্যারান্টি চেয়ে আসছে সৌদি আরব।
অন্যদিকে গত মাসেই পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের সঙ্গে একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে সৌদি আরব। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উপস্থিতিতে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’ নামে পরিচিত এই সমঝোতাকে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি শুধু সামরিক সহযোগিতার নয়, বরং এটি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা সংকটের প্রেক্ষাপটে একটি কৌশলগত বার্তা বহন করে। চুক্তিতে বলা হয়েছে, কোনো একটি দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ঘটলে, তা উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার প্রতিক্রিয়ায় যৌথ প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিষয়টি চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ইস্যুতে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনকে দীর্ঘপাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা হলে মস্কো-ওয়াশিংটনের সম্পর্ক গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
দুই নেতার মধ্যে প্রায় আড়াই ঘণ্টার ফোনালাপে এমন হুঁশিয়ারি দেন পুতিন। ফোনালাপে ইউক্রেন যুদ্ধ ও ভবিষ্যৎ শান্তি আলোচনার বিষয়গুলো নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ট্রাম্প জানান, তার ও পুতিনের মধ্যে দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ টেলিফোন আলাপের পর দুই নেতা হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে সাক্ষাৎ করবেন। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, বৈঠকটি সম্ভবত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এই ফোনালাপের এক দিন পরই ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে জেলেনস্কি আবারও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির অনুরোধ জানাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই অস্ত্র ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভেতরের আরও গভীর এলাকায় হামলা চালাতে সক্ষম করবে।
ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের ফোনালাপ নিয়ে বৃহস্পতিবার মস্কোয় সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে রুশ প্রেসিডেন্টের সহকারী ইউরি উশাকভ বলেন, পুতিন পুনরায় তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন যে টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতা বদলাতে পারবে না। বরং এই ক্ষেপণাস্ত্র দুই দেশের সম্পর্ক এবং ইউক্রেনে শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনাকে বড় ধরনের ক্ষতি করবে।
তিনি আরও বলেন, দুই নেতার মধ্যে প্রায় আড়াই ঘণ্টার ফোনালাপ ছিল ‘খুবই ফলপ্রসূ, খোলামেলা ও গোপনীয়’। আলোচনায় ইউক্রেন যুদ্ধ ছিল মুখ্য বিষয়। এছাড়া ট্রাম্পের সামনে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির একটি বিস্তারিত মূল্যায়নও তুলে ধরেন পুতিন।
এই রুশ কর্মকর্তার ভাষায়, মস্কো ওয়াশিংটনকে জানায়- রুশ বাহিনী এখনো ‘পুরো ফ্রন্টলাইনে কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ’ ধরে রেখেছে। অপরদিকে ট্রাম্প বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধ দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন।
উশাকভ আরও বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্টের অন্যতম মূল বক্তব্য ছিল- ইউক্রেন সংঘাতের অবসান ঘটলে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হবে।
আলোচনায় দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে সরাসরি সাক্ষাতের সম্ভাবনাও উত্থাপিত হয়। উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা অবিলম্বে ট্রাম্প ও পুতিনের পরবর্তী বৈঠকের প্রস্তুতি শুরু করবেন বলেও তারা সম্মত হয়েছেন। সম্ভাব্য স্থান হিসেবে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের নাম উঠে এসেছে।
পুতিন ও ট্রাম্পের সর্বশেষ মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়েছিল গত আগস্টে আলাস্কায়। তবে সেখানেই শান্তি আলোচনার অগ্রগতি থেমে যায়। এরপর থেকে ট্রাম্প ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করবেন ট্রাম্প। এই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় হবে ইউক্রেনকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও দীর্ঘপাল্লার অস্ত্র সরবরাহ করা।
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি ইউক্রেনকে টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কাছাকাছি’ আছেন।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে হুঁশিয়ারি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, হামাস গাজায় হত্যাযজ্ঞ চালালে তিনি তাদের ‘নির্মূল করতে বাধ্য হবেন’। খবর আল জজিরার।
গাজায় দীর্ঘ দু্ই বছর ধরে চলা যুদ্ধবিরতির কার্যকর হয়েছে গত শুক্রবার। উপত্যকাটিতে এখন ছড়িয়ে আছে কেবল ধ্বংসস্তূপ। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, দুই বছরের অব্যাহত বোমাবর্ষণে প্রায় ৭ কোটি টন ধ্বংসাবশেষ জমেছে, যা ১৩টি পিরামিডের সমান।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম জানাচ্ছে, এই ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অসংখ্য মৃতদেহ এবং অবিস্ফোরিত বোমা রয়েছে। এদিকে, যুদ্ধবিরতির মধ্যেও থামেনি ইসরায়েলি হামলা। একদিনে নিহত হয়েছেন আরও কয়েকজন ফিলিস্তিনি।
এর মধ্যেই, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হামাসকে নতুন করে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছেন, যদি হামাস গাজায় মানুষ হত্যা চালিয়ে যায়, যা চুক্তির অংশ ছিল না, তবে তিনি তাদের হত্যা করতে বাধ্য হবেন।
তবে তিনি কোনো প্রমাণ বা নির্দিষ্ট ঘটনার উল্লেখ করেননি।
স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘যদি হামাস গাজায় মানুষ হত্যা অব্যাহত রাখে, যা চুক্তিতে ছিল না, তাহলে আমাদের সেখানে গিয়ে তাদের নির্মূল করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। এই বিষয়ে আপনাদের মনোযোগের জন্য ধন্যবাদ!’
সম্প্রতি হামাস ও ইসরায়েল-সমর্থিত স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে, যা ট্রাম্পের মন্তব্যের পটভূমি হিসেবে দেখা হচ্ছে।