আগস্ট মাসে বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম কিছুটা কমেছে। এ নিয়ে টানা দুই মাসে বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম কমল। গত মাসে চিনি, মাংস ও শস্যের দাম কমলেও দুগ্ধজাত পণ্য ও উদ্ভিজ্জ তেলের দাম বেড়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিভাগের (এফএও) মাসিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সূচকে দেখা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত টানা পাঁচ মাস বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম বেড়েছিল।
বিশ্ববাজারে জুলাই ও আগস্ট মাসে খাদ্যমূল্য কমলেও বাংলাদেশে জুলাই মাসে গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। জুন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক বাজারে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হওয়া খাদ্যপণ্যের ভিত্তিতে এফএওর মূল্যসূচক তৈরি করা হয়। সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্টে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক কমে ১২০ দশমিক ৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে; জুলাই মাসে যা ছিল ১২১ পয়েন্ট।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ২০২২ সালে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের দুর্দশার অন্ত ছিল না। ২০২২ সালে এফএওর গড় খাদ্যমূল্য সূচক ছিল এযাবৎকালের সবচেয়ে বেশি—১৪৪ দশমিক ৭। ২০২৩ সালে তা অনেকটাই কমে ১২৪ দশমিক দশমিক ৭-এ নেমে আসে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এফএও সূচক কমে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে।
দেখা গেছে, আগস্টে এফএওর খাদ্য মূল্যসূচক ছিল গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২০২২ সালের মার্চ মাসের তুলনায় ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ কম।
মোট পাঁচ ধরনের খাদ্যপণ্যের ভিত্তিতে এই খাদ্য মূল্যসূচক তৈরি করে এফএও। দেখা গেছে, আগস্ট মাসে মাংসের সূচক ছিল ১১৯ দশমিক ৫; জুলাই মাসে যা ছিল ১২০ দশমিক ৪। দুগ্ধজাত পণ্যের গড় মূল্যসূচক ছিল ১৩০ দশমিক ৬ পয়েন্ট; জুলাই মাসে যা ছিল ১২৭ দশমিক ৯।
তবে গত মাসে শস্যজাতীয় খাদ্যের দাম কমেছে। আগস্ট মাসে এই শস্যজাতীয় খাদ্যের মূল্যসূচক ছিল ১১০ দশমিক ১; জুলাই মাসে যা ছিল ১১০ দশমিক ৭। উদ্ভিজ্জ তেলের মূল্যসূচক ছিল ১৩৬; গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ১৩৫। এ ছাড়া আগস্টে চিনির মূল্যসূচক ছিল ১১৩ দশমিক ৯; জুলাই মাসে যা ছিল ১১৯ দশমিক ৫।
এদিকে আরেক প্রতিবেদনে এফএও চলতি বছরের জন্য বিশ্বব্যাপী শস্য উৎপাদনের পূর্বাভাস সংশোধন করেছে। চলতি বছর শস্য উৎপাদন পূর্বাভাস ২৮ লাখ টন কমিয়ে ২ হাজার ৮৫ কোটি ১০ লাখ টনে নামিয়ে আনা হয়েছে। গত বছরও সমপরিমাণ শস্য উৎপাদিত হয়েছিল।
এফএও জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী শস্য উৎপাদন কমে যাওয়ার মূল কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশ, মেক্সিকো ও ইউক্রেনে গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া।
এ ছাড়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্য ব্যবহারের পূর্বাভাসও সংশোধন করেছে এফএও। জুলাই মাসে যে পূর্বাভাস ছিল, তা থেকে ৪৭ লাখ টন কমানো হয়েছে। এবারের পূর্বাভাস ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় দশমিক ২ শতাংশ বেশি। আগামী বছর মৌসুমের শেষে বিশ্বব্যাপী শস্য মজুতের পূর্বাভাস ৪৫ লাখ টন কমিয়ে ৮৯ কোটি টন করা হয়েছে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তিনি দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘর্ষ থামাতে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন।
আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, আগামী সোমবার আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আগে রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুই নেতাকে ফোন করেন আনোয়ার।
তিনি এক্স-পোস্টে বলেছেন, ‘আমি কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ডের জন্য সংলাপ, প্রজ্ঞা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার চেতনা মেনে চলার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছি- যাতে উত্তেজনার অবসান ঘটে এবং এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।’
গত অক্টোবরে কুয়ালালামপুরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আনোয়ার ইব্রাহিমের উপস্থিতিতে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া।
কিন্তু সম্প্রতি সীমান্তবর্তী একটি প্রদেশে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে থাই সৈন্যরা গুরুতর আহত হওয়ার পর এটি স্থগিত করে থাইল্যান্ড। এরপর থেকে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়।
থাই-কম্বোডিয়া সংঘাতে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় সীমান্তবর্তী অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা
চলমান থাই-কম্বোডিয়া সীমান্ত সংঘাত দীর্ঘায়িত হওয়ায় এর খেসারত দিচ্ছে দুই দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এরইমধ্যে ব্যাংকক ও নমপেনের অনেক স্কুল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। অবিলম্বে শ্রেণিকক্ষে প্রিয় সহপাঠীদের কাছে ফিরতে উদগ্রীব কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
পান্না ত্রিভুজ নামে একটি বিতর্কিত অঞ্চলের দাবিকে কেন্দ্র করে ১১৮ বছরের পুরোনো দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। যা নিয়ে মাঝে-মধ্যেই দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় দুই দেশের সৈন্যরা। ইস্যুটির সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়াসহ আন্তর্জাতিক পক্ষগুলো বেশ কয়েকবার ব্যাংকক ও নমপেনকে আলোচনার টেবিলে বসালেও আসেনি কোনো স্থায়ী সমাধান।
এ বছরের জুলাইয়ে রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘাতে জড়ায় থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সৈন্যরা। কয়েকদিনের সংঘাতের পর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় প্রাথমিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় দুই দেশ। যার স্থায়ী ভিত্তি পায় অক্টোবরে কুয়ালালামপুরে ট্রাম্পের উপস্থিতিতে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে।
কিন্তু এর দেড় মাস না পেরোতেই ডিসেম্বর থেকে নতুন করে সংঘাতে জড়ায় ব্যাংকক ও নমপেন। চলমান সংঘাতে প্রাণহানি ছাড়াও বাস্তুচ্যুত হয়েছে দুই দেশের সীমান্ত এলাকার কয়েক লাখ বাসিন্দা। যার রেশ পড়েছে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও। শুক্রবার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে থাইল্যান্ডের অন্তত ৭টি প্রদেশের প্রায় এক হাজার স্কুল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। দ্রুত চলমান সংঘাতের সমাধান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরতে নিজেদের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন এসব এলাকার শিক্ষার্থীরা।
নতুন একটি দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পাওয়ার পর দেশব্যাপী আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান। একই সঙ্গে তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছেন।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) কারাগার থেকে তার আইনজীবীর সঙ্গে কথোপকথনের ভিত্তিতে প্রকাশিত এক বার্তায় ইমরান খান বলেন, তিনি খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী সোহাইল আফ্রিদিকে রাজপথে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তার ভাষায়, পুরো জাতিকে নিজেদের অধিকার আদায়ে দাঁড়াতে হবে।
কারাগারে থাকায় ইমরান খানের নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের সুযোগ নেই। আইনজীবীর মাধ্যমে দেওয়া বার্তায় তিনি বলেন, এই মামলার রায় তাকে অবাক করেনি। তবে তিনি তার আইনি দলকে রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইমরান খানের দাবি, গত তিন বছরে যেসব ভিত্তিহীন রায় ও সাজা দেওয়া হয়েছে, তোশাখানা- ২ মামলার রায়ও তার ব্যতিক্রম নয়। কোনো প্রমাণ ছাড়াই, আইনগত শর্ত পূরণ না করেই তড়িঘড়ি এই রায় দেওয়া হয়েছে। এমনকি, আমার আইনজীবীদের কথাও শোনা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, সংবিধানের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে ইনসাফ লইয়ার্স ফোরাম ও আইনজীবী সমাজের সামনে আসা অনিবার্য। তার মতে, ন্যায়বিচার ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
এক বিবৃতিতে পিটিআই এই সাজাকে ‘স্পষ্টতই অসাংবিধানিক, অবৈধ, বিদ্বেষপূর্ণ এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জঘন্য উদাহরণ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। দলটির নেতাদের অভিযোগ, ইমরান খানের কারাবাস দীর্ঘায়িত করতেই এই রায় দেওয়া হয়েছে, যাতে আতঙ্কিত শাসকগোষ্ঠী সাময়িক স্বস্তি পায়।
পিটিআই আরও দাবি করেছে, পাকিস্তানে আইনের শাসন ধ্বংস করা হয়েছে এবং একটি ‘অনুগত’ বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
পিটিআই মহাসচিব সালমান আকরাম রাজা, জ্যেষ্ঠ নেতা আসাদ কায়সারের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আদালতে প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার সালমান সাফদারের সঙ্গে বৈঠকে ইমরান খান জাতির উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে তিনি দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছি, কোনো অবস্থাতেই কারও কাছে ক্ষমা চাইবেন না।
সালমান রাজা অভিযোগ করেন, মামলাটি কেবল প্রতিশ্রুতিপত্রের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই। তার ভাষায়, এই মামলায় একমাত্র সাক্ষী সেই ব্যক্তি, যাকে পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা নিজেই সামনে এনেছিলেন।
তিনি মামলাটিকে ‘হাস্যকর’ ও দুর্বলতম সাক্ষ্যের ওপর দাঁড়ানো বলে উল্লেখ করেন। তার অভিযোগ, কেবল চাপ দেওয়া হয়েছিল- এমন একটি বক্তব্যকেই প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
আসাদ কায়সার বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিরোধ ছাড়া আর কোনো পথ নেই। তবে এই প্রতিরোধ হবে শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক এবং সংবিধানভিত্তিক। তিনি জানান, পিটিআই তাদের প্রতিষ্ঠাতার জন্য ন্যায়বিচার চায় এবং তা আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।
পিটিআইয়ের কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক শেখ ওয়াকাস আকরাম বলেন, ইমরান খানের পরিবারকেও কারাগারে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তার অভিযোগ, একটি ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টে’ এই রায় ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, একই অভিযোগে এটি দ্বিতীয় সাজা, যা সংবিধান, ফৌজদারি আইন ও আন্তর্জাতিক আইনের ‘ডাবল জিওপার্ডি’ বা ‘একই অপরাধে দুইবার বিচার নয়’ নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এদিকে, ইমরান খানের বোন আলিমা খান গণমাধ্যমে এই রায়ের কড়া সমালোচনা করে বলেন, তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে দেওয়া সিদ্ধান্তগুলো একটি ‘পূর্বলিখিত চিত্রনাট্য’ অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, এসব মামলার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিরা ‘বুদ্ধিমান নন’ ও তিনি তাদের চিত্রনাট্য বুঝতে ব্যর্থ।
আলিমা খান বলেন, রাতের বেলাতেও মনে হচ্ছিল, কুয়াশার সুযোগ নিয়ে দ্রুত রায় ঘোষণা করতে চায় তারা। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ১০ বছর বা ১৪ বছর সাজা দিলেই বা কী আসে যায়? আগেই তো ১৪ বছর দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, জনগণের ধৈর্য শেষ হয়ে গেছে এবং প্রতি ছয় মাসে নতুন করে রায় দেওয়ার পরিকল্পনা জনগণ আর মেনে নেবে না। পাশাপাশি তিনি বুশরা বিবির বিরুদ্ধে আচরণের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এবং তাকে ‘অবৈধ নিঃসঙ্গ বন্দিত্বে’ রাখার অভিযোগ করেন।
এদিকে, পিটিআই নেতা ওমর আয়ুবও রায়ের নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার স্ত্রীকে দেওয়া সাজা একটি ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টের’ রায়। তার মন্তব্য, পাকিস্তানে আইনের কোনো শাসন নেই।
উজবেকিস্তানের ইসলামিক সভ্যতা কেন্দ্র কেবল একটি জাদুঘর কমপ্লেক্স নয়; এটি একটি বৃহৎ সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক মেগা প্রকল্প। যার লক্ষ্য বিশ্ব ইতিহাসে ইসলামী ঐতিহ্যের ভূমিকা নতুনভাবে ব্যাখ্যা করা। উজবেকিস্তানের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক বিষয় অধ্যয়ন করা এবং তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করাও এর উদ্দেশ্য।
এই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার ধারণাটি প্রথম উত্থাপন করেন উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়য়েভ। ২০১৭ সালে জাতিসংঘের মঞ্চ থেকে তিনি এই প্রকল্পের দর্শন তুলে ধরেন।
প্রেসিডেন্ট মিরজিয়য়েভ বলেন, আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ইসলামের প্রকৃত মানবিক সত্তাকে তুলে ধরা। ইসলাম আমাদের কল্যাণ ও শান্তির পথে আহ্বান জানায় এবং মানবতার প্রকৃত মূল সত্তাকে রক্ষা করতে বলে।
প্রেসিডেন্ট এই ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপনের আট বছর পর, তা আজ দৃশ্যমান স্থাপত্যে রূপ পেয়েছে। এই কমপ্লেক্সটি নির্মিত হয়েছে তাশখন্দের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হাস্ত-ইমাম এলাকায়।
৬৫ মিটার উচ্চ গম্বুজ ও চারটি প্রবেশপথ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐক্যের প্রতীক বহন করে। কমপ্লেক্সের কেন্দ্রে রয়েছে পবিত্র কোরআনের হল, যেখানে সপ্তম শতাব্দীর বিখ্যাত ওসমানী মুশাফ (কোরআনের পাণ্ডুলিপি) সংরক্ষিত আছে। এটি ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নিবন্ধনে অন্তর্ভুক্ত।
আধুনিক ডিজিটাল স্থাপনায় সমৃদ্ধ প্রদর্শনীর ধারণাটি একটি কালানুক্রমিক ধারায় গড়ে তোলা হয়েছে- ইসলাম-পূর্ব যুগ থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় রেনেসাঁ, এরপর নতুন যুগ এবং নতুন উজবেকিস্তান পর্যন্ত।
এই কেন্দ্র বিজ্ঞান, শিল্প ও শিক্ষাকে একত্র করেছে। এখানে রয়েছে ২ লাখ বইসমৃদ্ধ একটি বৃহৎ গ্রন্থাগার, ক্যালিগ্রাফি স্কুল, হস্তশিল্প কর্মশালা এবং একটি সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার গবেষণাগার।
এছাড়া এখানে রয়েছে কিংস ফাউন্ডেশন স্কুল অব ট্র্যাডিশনাল আর্টস এবং উজবেকিস্তানের প্রথম শিশুদের জন্য নিবেদিত জাদুঘর, যেখানে খেলাধুলা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মাল্টিমিডিয়া স্থাপনার মাধ্যমে বিজ্ঞান শেখানো হয়।
এই কেন্দ্রের ভেতর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কার্যালয় রয়েছে, যার মধ্যে আছে ইসলামিক ওয়ার্ল্ড এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন, ইসলামিক ইতিহাস, শিল্প ও সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র, অক্সফোর্ড সেন্টার ফর ইসলামিক স্টাডিজ এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান।
কমপ্লেক্সের ভেতরে রয়েছে ৪৬০ আসনের একটি সম্মেলন হল, যা আন্তর্জাতিক সংলাপ ও সহযোগিতার জন্য বিশেষভাবে নকশা করা হয়েছে। এই বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশে সম্পন্ন সব আবিষ্কার, গবেষণা ও সাংস্কৃতিক উদ্যোগ কেন্দ্রের প্রথম তলার প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করা হবে। জাদুঘরের বিষয়বস্তু নিয়মিত হালনাগাদ করা হবে, যা একে একটি জীবন্ত ও বিকাশমান ব্যবস্থায় রূপ দেবে।
এই কেন্দ্রের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো বহু বছর ধরে বিদেশে থাকা হারিয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক নিদর্শন পুনরুদ্ধার করা। উজবেক গবেষক ও শিল্প ইতিহাসবিদদের প্রতিনিধিদল বিশ্বের শীর্ষ নিলামঘর, খ্যাতনামা ব্যক্তিগত সংগ্রাহক ও গ্যালারি পরিদর্শন করেন। এই ব্যাপক কার্যক্রমের ফলে এক হাজারেরও বেশি দুর্লভ বস্তু উজবেকিস্তানে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
এদিকে, উজবেকিস্তানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অধ্যয়ন, সংরক্ষণ ও জনপ্রিয়করণ বিষয়ক বিশ্ব সমাজ উজবেকিস্তানের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত প্রায় ১ হাজার পাণ্ডুলিপি ও নিদর্শন দান করেছে।
এই কেন্দ্র দাতব্য সংস্থা ও ব্যক্তিগত সংগ্রাহকদের সঙ্গেও অংশীদারত্ব গড়ে তুলেছে, যাতে ঐতিহাসিক অখণ্ডতা বজায় থাকে এবং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সংগঠন, বিষয়বস্তু ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের সর্বোচ্চ স্তর নিশ্চিত করা যায়।
ইসলামিক সভ্যতা কেন্দ্রের পরিচালক চেয়ারম্যান ড. ফিরদাভস আবদুখালিকভ বলেন, প্রতিদিন উজবেকিস্তানের ইসলামিক সভ্যতা কেন্দ্রে প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়য়েভের উদ্দেশে অসংখ্য কৃতজ্ঞতার বার্তা আসে। তাশখন্দে শান্তি, কল্যাণ, বিজ্ঞান, জ্ঞানচর্চা ও আধ্যাত্মিক সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে ইসলামী সভ্যতার আধুনিক ব্যাখ্যা গঠনে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য মানুষ তাকে ধন্যবাদ জানায়।
তিনি আরও বলেন, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ইতিহাসের পাতায় ছড়িয়ে ছিল, আজ তা আবার একত্র করা হচ্ছে। ইসলামিক সভ্যতা কেন্দ্রে অতীতের এই আধ্যাত্মিক উচ্চতা নতুন ঐক্য লাভ করছে।
তিনি বলেন, এই মহান প্রকল্পকে এগিয়ে নেওয়া এবং এটিকে এমন এক সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক শক্তিতে রূপান্তর করা আমাদের দায়িত্ব, যা এই মহান ঐতিহ্যের ফসলকে আলোকিত ভবিষ্যতের শক্তিশালী জ্বালানিতে পরিণত করতে সক্ষম হবে।
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে আরও ১৯টি নতুন ইহুদি বসতি স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা। এতে গত তিন বছরে অনুমোদিত মোট বসতির সংখ্যা দাঁড়াল ৬৯টিতে। স্থানীয় সময় রোববার (২১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জুডিয়া ও সামারিয়ায়’ ১৯টি নতুন বসতি ঘোষণা ও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। তবে এই সিদ্ধান্ত কবে নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে বিবৃতিতে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।
বিবৃতিতে স্মোট্রিচ বলেন, মাঠপর্যায়ে আমরা একটি ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা রুখে দিচ্ছি। নিজেদের পথের ন্যায্যতায় দৃঢ় বিশ্বাস রেখে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ভূমিতে উন্নয়ন, নির্মাণ ও বসতি স্থাপন অব্যাহত রাখবো।
নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এলো, যখন পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা ও উদ্বেগ রয়েছে। ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও ৯৪ ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ভয়াবহতা এখনও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার হচ্ছে সারি সারি লাশ। সর্বশেষ মধ্য গাজা সিটির ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও ৯৪ ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
গত শনিবার এক বিবৃতিতে গাজার সিভিল ডিফেন্স জানায়, মধ্য গাজা সিটির বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, উদ্ধার করা মরদেহগুলো ময়নাতদন্ত ও দাফনের প্রস্তুতির জন্য গাজা সিটির আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্সের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। পরে সেগুলো মধ্যাঞ্চলীয় শহর দেইর আল-বালাহ’র শহীদ কবরস্থানে দাফন করা হবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনের নিচে এখনও হাজার হাজার ফিলিস্তিনি চাপা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গাজার সিভিল ডিফেন্স জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ধর্মীয় বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ীভাবে সমাহিত হাজারও মরদেহ গাজার বিভিন্ন কবরস্থানে স্থানান্তর করতে সক্ষম হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
একই সময়ে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১ লাখ ৭১ হাজার ১০০ জন। গত ১০ অক্টোবর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েলি এই আগ্রাসন আপাতত থেমে গেলেও এখনও প্রায় প্রতিদিনই হামলার শিকার হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা।
ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই শুরু গাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস
২ বছর পর গাজা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সশরীরে ক্লাসে ফিরে এসেছেন। ইসরাইলের অব্যাহত হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে, তবে তা সত্ত্বেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনোবল শক্ত রয়েছে। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে পুনরায় পাঠদান শুরু হয়েছে।
ইসরায়েলের গোলাবর্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও, ক্লাস চলছে এবং সেখানে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৫০০ পরিবার যারা ইসরাইলের হামলায় গৃহহীন হয়েছে। গাজার এই অবস্থা শিক্ষা ও গৃহহীনতার এক কঠিন মিশ্রণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আশ্রয় নেওয়া আত্তা সিয়াম নামক এক ব্যক্তি জানান, তারা জাবালিয়া থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে এখানে এসেছেন, কারণ যাওয়ার আর কোনো জায়গা ছিল না। তবে তিনি বলেন, এটি একটি শিক্ষার স্থান হওয়া উচিত, আশ্রয়কেন্দ্র নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় কার্যক্রম শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। ইউনেস্কোর হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে গাজার অধিকাংশ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।
প্রথম বর্ষের মেডিকেল শিক্ষার্থী ইউমনা আলবাবা বলেন, তিনি একটি সম্পূর্ণ সুবিধাসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার স্বপ্ন দেখতেন, তবে বর্তমান পরিস্থিতি তার কল্পনার মতো নয়। তবুও তিনি আশাবাদী, কারণ তারা শূন্য থেকে নতুন করে শুরু করছে।
মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা গাজার শিক্ষাব্যবস্থাকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলের এই হামলাকে ‘স্কলাস্টিসাইড’ বা শিক্ষাব্যবস্থার ধ্বংস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এর ফলে, প্রায় দুই বছর ধরে ৭ লাখ ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
নতুন পরিসংখ্যানে জানা যায়, গাজায় ৪৯৪টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১৩৭টি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া ১২ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী এবং ৭৬০ জন শিক্ষক নিহত হয়েছেন এবং ১৫০ জন শিক্ষাবিদও প্রাণ হারিয়েছেন।
গাজার শেষ কার্যকর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত ইসরা বিশ্ববিদ্যালয়ও ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ইসরাইলি বাহিনী গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় তার সীমিত সম্পদ দিয়েই পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও বিদ্যুৎ সংকট, সরঞ্জামের অভাব এবং অযোগ্য শিক্ষার পরিবেশ রয়েছে। মাত্র চারটি শ্রেণিকক্ষ চালু থাকলেও, শিক্ষার্থীরা অস্থায়ী ব্যবস্থা নিয়েই তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে।
ভেনিজুয়েলার উপকূলের আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে একটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ (ডিএইচএস) জানিয়েছে, সম্প্রতি ভেনিজুয়েলা থেকে যাত্রা করা ওই জাহাজটি জব্দ করা হয়েছে। চলতি মাসে এটি ভেনিজুয়েলার উপকূলে যুক্তরাষ্ট্রের জব্দ করা দ্বিতীয় তেলবাহী ট্যাংকার।
এই পদক্ষেপটি এমন এক সময় এলো, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন— ভেনিজুয়েলায় আসা ও সেখান থেকে বের হওয়া নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী ট্যাংকারগুলোর বিরুদ্ধে তিনি ‘ব্লকেড’ বা অবরোধের নির্দেশ দিয়েছেন।
ভেনিজুয়েলা সরকার এই সর্বশেষ জব্দের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। দেশটির পক্ষ থেকে একে ‘চুরি ও অপহরণ’ হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ভেনিজুয়েলা বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ লুটের চেষ্টা করার অভিযোগ করে আসছে।
এক বিবৃতিতে ভেনিজুয়েলা সরকার জানিয়েছে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড শাস্তিহীন থাকবে না। পাশাপাশি বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদসহ অন্যান্য বহুপাক্ষিক সংস্থা ও বিশ্বের বিভিন্ন সরকারের কাছে উত্থাপন করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
মার্কিন কোস্ট গার্ডের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানে একটি বিশেষায়িত ট্যাকটিক্যাল টিম অংশ নেয়। জাহাজটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবস্থানের সময় সেটি জব্দ করা হয়। এর আগেও চলতি মাসে একই ধরনের অভিযানে একটি ট্যাংকার আটক করা হয়েছিল।
মার্কিন স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগের সচিব ক্রিস্টি নোয়েম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ অভিযানের একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, ২০ ডিসেম্বর ভোররাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড ও যুদ্ধ দপ্তরের সহায়তায় ভেনিজুয়েলায় সর্বশেষ নোঙর করা একটি তেলবাহী ট্যাংকার আটক করা হয়েছে।
প্রকাশিত সাত মিনিটের ভিডিওতে দেখা যায়, ‘সেঞ্চুরিজ’ নামের একটি জাহাজের ডেকে মার্কিন হেলিকপ্টার অবতরণ করছে।
নোয়েম বলেন, নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলের অবৈধ পরিবহন, যা এই অঞ্চলে মাদক-সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগান দেয়, যুক্তরাষ্ট্র তা বন্ধ করতে থাকবে। আমরা আপনাদের খুঁজে বের করব এবং থামাব।
পানামার পতাকাবাহী এই ‘সেঞ্চুরিজ’ জাহাজটি গত পাঁচ বছরে গ্রিস ও লাইবেরিয়ার পতাকাতেও চলাচল করেছে বলে বিবিসি ভেরিফাইয়ের নথিতে জানা গেছে। তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের নিষেধাজ্ঞাভুক্ত জাহাজের তালিকায় নেই।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ক্যারিবিয়ান সাগরে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছে। এ সময় ভেনিজুয়েলার কথিত মাদক পাচারকারী নৌযানে চালানো হামলায় প্রায় ১০০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও এসব নৌযানে মাদক বহনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে কোনো প্রমাণ দেয়নি। ফলে কংগ্রেসে মার্কিন সামরিক বাহিনীর এই অভিযানের বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে ‘কার্টেল দে লস সোলেস’ নামের একটি ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ এনেছে, যা তিনি অস্বীকার করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এই গোষ্ঠী ‘চুরি করা’ তেল বিক্রি করে মাদক সন্ত্রাস, মানব পাচার, হত্যা ও অপহরণের মতো অপরাধে অর্থ জোগান দেয়।
দ্বিতীয় জাহাজ জব্দের পর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এক্স-এ লিখেছেন, অবৈধ অপরাধী নেটওয়ার্ক ধ্বংসে যুক্তরাষ্ট্র অবিচলভাবে সামুদ্রিক অভিযান চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, পশ্চিম গোলার্ধে সহিংসতা, মাদক ও বিশৃঙ্খলা চলতে দেওয়া হবে না।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণিত তেল মজুত থাকা ভেনিজুয়েলা সরকারের ব্যয় নির্বাহে তেল রপ্তানি আয়ের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের ‘ব্লকেড’ ঘোষণার এক সপ্তাহেরও কম সময় আগে যুক্তরাষ্ট্র ভেনিজুয়েলার উপকূল থেকে ‘স্কিপার’ নামের আরেকটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করে। হোয়াইট হাউসের দাবি, ওই জাহাজটি তথাকথিত ‘ঘোস্ট ফ্লিট’-এর অংশ ছিল এবং অবৈধভাবে তেল পরিবহনে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করত। জাহাজটি একটি মার্কিন বন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল।
সেই সময়ও ভেনিজুয়েলা সরকার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। প্রেসিডেন্ট মাদুরো অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র নাবিকদের ‘অপহরণ’ করেছে এবং জাহাজটি ‘চুরি’ করেছে।
শেষ হতে যাচ্ছে ২০২৫, এ বছরে বিশ্ব হারিয়েছে ধর্ম, রাজনীতি, বিজ্ঞান, সাহিত্য, চলচ্চিত্র, সংগীত, ক্রীড়া ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বকে। মানবসভ্যতার নানা ক্ষেত্রে যাদের অবদান ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে, তাদের অনেকেই এ বছর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
ধর্ম
৮৮ বছর বয়সে প্রয়াত হন ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পোপ ফ্রান্সিস। জীবনের শেষদিকে তিনি বলেছিলেন, ‘চার্চ যখন দেয়াল তোলে, তখন তা মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’ প্রথম লাতিন আমেরিকান পোপ হিসেবে তিনি চার্চের জাঁকজমক কমান, সমকামিতার বিষয়ে ক্যাথলিক অবস্থান নরম করেন এবং নারীদের নেতৃত্বে বেশি সুযোগ দেন। ভ্যাটিকানের তথ্যমতে, এপ্রিলে তার শেষকৃত্যে আড়াই লাখের বেশি মানুষ অংশ নেন।
ফেব্রুয়ারিতে মারা যান ইসমাইলি মুসলিমদের আধ্যাত্মিক নেতা আগা খান (করিম আল হুসেইনি)। তিনি ছিলেন ১ কোটি ৫০ লাখ ইসমাইলির উত্তরাধিকারসূত্রে ধর্মীয় নেতা এবং আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ধনাঢ্য ব্যক্তিত্ব।
রাজনীতি
২০২৪ সালে বাংলাদেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের অকুতোভয় যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি মাত্র ৩৩ বছর বয়সে নিহত হন। বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে (এসজিএইচ) চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়। ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পল্টনের কালভার্ট রোডে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে যাওয়ার সময় আততায়ীরা তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সোমবার দুপুরে হাদিকে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। এ ঘটনা বিশ্ব মিডিয়ায় ঘটা করে প্রচার করা হয় এবং জাতিসংঘ থেকে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি ও ইউএস অ্যাম্বাসি বাংলাদেশ থেকে শোক জানানো হয়।
নভেম্বরে মারা যান যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি (৮৪)। ফ্রান্সের কট্টর ডানপন্থি নেতা জ্যঁ-মারি ল্য পেন জানুয়ারিতে মারা যান।
নাইজেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি, উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসে মুজিকা, জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তোমিইচি মুরায়ামাসহ একাধিক রাষ্ট্রনেতাও এ বছর মারা যান।
বিজ্ঞান
পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক, প্রাইমেট গবেষক জেন গুডল ৯১ বছর বয়সে অক্টোবরে মারা যান। অ্যাপোলো-১৩ অভিযানের কমান্ডার জিম লাভেল (৯৭) এবং ডিএনএ গঠনের আবিষ্কারক জীববিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন (৯৭) এ বছর পৃথিবীকে বিদায় জানান।
চলচ্চিত্র ও বিনোদন
হলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা রবার্ট রেডফোর্ড সেপ্টেম্বরে ৮৯ বছর বয়সে মারা যান। ‘দ্য স্টিং’, ‘আউট অব আফ্রিকা’ ও ‘অল দ্য প্রেসিডেন্টস মেন’-এ অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি সানড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভালের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। অক্টোবরে প্রয়াত হন অভিনেত্রী ডায়ান কিটন (৭৯)। জানুয়ারিতে মারা যান রহস্যময় চলচ্চিত্র নির্মাতা ডেভিড লিঞ্চ (৭৮)।
জিন হ্যাকম্যান (৯৫) কে ফেব্রুয়ারিতে স্ত্রী ও একটি কুকুরসহ নিজ বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ময়নাতদন্তে জানা যায়, তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় মারা যান। অভিনেতা ভ্যাল কিলমার (৬৫) এপ্রিল মাসে নিউমোনিয়ায় মারা যান।
ক্রীড়া
হেভিওয়েট বক্সিং কিংবদন্তি জর্জ ফোরম্যান ৭৬ বছর বয়সে মারা যান। পেশাদার কুস্তির আইকন হাল্ক হোগান জুলাইয়ে ৭১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। লিভারপুলের পর্তুগিজ ফুটবলার দিওগো জোটা (২৮) জুলাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।
সাহিত্য
নভেম্বরে মারা যান নাট্যকার টম স্টপার্ড (৮৮)। নোবেলজয়ী পেরুভিয়ান লেখক মারিও ভার্গাস ইয়োসা এপ্রিল মাসে ৮৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। কেনিয়ান লেখক নগুগি ওয়া থিয়ং’ও, ফ্রেডরিক ফরসাইথ ও ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক জিলি কুপারও এ বছর মারা যান।
সংগীত
জুলাইয়ে মারা যান হেভি মেটাল তারকা অজি অসবোর্ন (৭৬)। বিচ বয়েজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান উইলসন জুনে ৮২ বছর বয়সে মারা যান।
রোবার্টা ফ্ল্যাক, জিমি ক্লিফ, ম্যারিয়েন ফেইথফুল, স্লাই স্টোনসহ আরও অনেক সংগীতশিল্পীকে হারিয়েছে বিশ্ব।
সাংবাদিকতা ও আলোকচিত্র
আগস্টে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় রয়টার্সের ক্যামেরাপারসন হুসাম আল-মাসরিসহ পাঁচ সাংবাদিক নিহত হন। বিশ্বখ্যাত আলোকচিত্রী সেবাস্তিয়াও সালগাদো ৮১ বছর বয়সে মারা যান।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য মৃত্যু
বিখ্যাত স্থপতি ফ্র্যাঙ্ক গেহরি, ব্রিটেনের প্রথম নারী গোয়েন্দা প্রধান স্টেলা রিমিংটন, স্পেস স্কাইডাইভার ফেলিক্স বাউমগার্টনার, ব্যবসায়ী ফ্রেডেরিক স্মিথসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের আরও বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি এ বছর পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছেন।
বিদায়ী বছরটি তাই শুধু সময়ের হিসাবেই নয়, ইতিহাসের পাতায়ও চিহ্নিত হয়ে থাকবে অসংখ্য প্রভাবশালী মানুষের বিদায়ের জন্য—যাদের কাজ, চিন্তা ও অবদান বিশ্বকে দীর্ঘদিন পথ দেখাবে।
ভারতের আসাম রাজ্যে দিল্লিগামী রাজধানী এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় অন্তত সাতটি হাতির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ট্রেনটির ইঞ্জিনসহ পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে গেছে। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে আসামের হোজাই এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনাস্থলটি আসামের রাজধানী গুয়াহাটি থেকে প্রায় ১২৬ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। দুর্ঘটনার সময় শতাধিক হাতির একটি বিশাল পাল রেললাইন অতিক্রম করছিল। লোকো পাইলট জরুরি ব্রেক কষে সংঘর্ষ এড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলেও শেষরক্ষা হয়নি। ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই হাতিগুলোর মৃত্যু হয়।
তবে স্বস্তির খবর হলো, ইঞ্জিন ও বগি লাইনচ্যুত হলেও এই ঘটনায় ট্রেনের কোনো যাত্রীর হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও উদ্ধারকারী দল। ক্ষতিগ্রস্ত বগির যাত্রীদের অন্য কোচে স্থানান্তর করা হয়। পরে উদ্ধারকাজ শেষে শনিবার সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ট্রেনটি আবার গুয়াহাটির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।
এদিকে মর্মান্তিক এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি জানান, দুর্ঘটনায় তিনটি প্রাপ্তবয়স্ক ও চারটি শাবকসহ মোট সাতটি হাতির মৃত্যু হয়েছে। তিনি এই ঘটনার বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
পাকিস্তানের এক বিশেষ আদালত শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দেশটির তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে তোষাখানার দ্বিতীয় মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
এই মামলাটি খ্যাতিমান ইতালীয় বিলাসবহুল ব্র্যান্ড বুলগারির দামি একটি গহনা সেট কেনা সম্পর্কিত। ২০২১ এর মে মাসে সৌদি আরব এক সরকারি সফরের সময় যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরানকে উপহার দিয়েছিলেন। এই গহনার সেটটি সরকারি তোষাখানায় জমা হওয়ার কথা থাকলেও ইমরান দম্পতি তা অল্প দামে কিনে নিয়েছিলেন, জানিয়েছে পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডন।
মামলার কার্যক্রম চলাকালীন রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করে যে, প্রায় ৮ কোটি পাকিস্তানি রুপি মূল্যের গহনার সেটটি মাত্র ২৯ লাখ রুপি পরিশোধ করে নিজের কাছে রেখে দেন।
রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে শুনানিকালে এ রায় দেন বিশেষ বিচারক শাহরুখ আরজুমান্দ। ইমরান এই কারাগারেই বন্দি আছেন।
ডন জানিয়েছে, এই মামলায় ইমরানকে মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাকিস্তানের ফৌজদারি আইনের ৩৪ ধারায় (সাধারণ অভিপ্রায়) ও ৪০৯ ধারায় (অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ) তাকে ১০ বছর এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) (সরকারি কর্মচারীদের অপরাধমূলক অসদাচরণ) ধারায় আরও সাত বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুশরা বিবিকেও একই বিধানে মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাদের উভয়কেই এক কোটি ৬৪ লাখ রুপি জরিমানা করা হয়েছে যা অনাদায়ে কারাদণ্ডের মেয়াদ বৃদ্ধি পাবে।
রায়ে আদালত বলেছে, ইমরান আহমেদ খান নিয়াজির বয়স বিবেচনায় (বৃদ্ধ) ও বুশরা বিবি নারী হওয়ায় ‘নম্র দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করে তাদের কম শাস্তি দেওয়া হয়েছে’। এ দণ্ড কার্যকর করার সময় তাদের আটকের সময়কাল বিবেচনা করা হবে।
গত বছরের ডিসেম্বরে ইমরান ও বুশরা এই মামলায় অভিযুক্ত হন। চলতি বছরের অক্টোবরে এই মামলায় আনা সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন তারা। ইমরানকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে দূরভিসন্ধিমূলকভাবে বানোয়াট এ মামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
২০২৩ সাল থেকে কারাগারে থাকা ইমরান ১৯ কোপি পাউন্ডের এক দুর্নীতি মামলায় ১৪ বছরের সাজা খাটছেন। ২০২৩ সালের ৯ মে-র প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনেও একটি মামলার বিচার চলছে। ১৯ কোটি পাউন্ড দুর্নীতির ওই মামলায় বুশরা বিবিও সাত বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
এই রায়ের পর ইমরানের দল পিটিআই এক্স এ দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, ‘কারাগারের ভেতরে এক ক্যাঙ্গারু কোটে তোষাখানা-২ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রুদ্ধদ্বার কারাগারে বিচার অবাধও নয়, ন্যায্যও নয়। এটি আদতে একটি সামরিক বিচার।’
রায় ঘোষণার সময় ইমরানের পরিবারের সদস্যদেরও কারাগারের ভেতরে যেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছে দলটি।
গাজা অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ কেটে গেছে বলে জানিয়েছে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি)। তবে সামনে আরও বাজে পরিস্থিতি আসন্ন ভেবে শঙ্কা দেখছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, যুদ্ধবিরতির পর মানবিক ও বাণিজ্যিক খাদ্য সরবরাহ কিছুটা বাড়ায় পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তবে আইপিসি সতর্ক করে বলেছে, যদিও দুর্ভিক্ষ আপাতত কাটিয়ে ওঠা গেছে, তবুও গাজার পরিস্থিতি এখনো অত্যন্ত সংকটপূর্ণ।
সংস্থাটি জানিয়েছে, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে—যদি আবার যুদ্ধ শুরু হয় এবং মানবিক ও বাণিজ্যিক সরবরাহ বন্ধ হয়—তাহলে ২০২৬ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত পুরো গাজা উপত্যকা পুনরায় দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
চার মাস আগে সংস্থাটি জানিয়েছিল, গাজার প্রায় ৫ লাখ ১৪ হাজার মানুষ, অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ, দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির মধ্যে। সে সময়ের সেই মূল্যায়ন ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছিল।
গাজায় দুর্ভিক্ষ কেটে যাওয়ার কথা জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা আপাতত নেই। তবে পরিস্থিতির উন্নতি ‘ভীষণভাবে অনিশ্চিত’। তিনি বলেন, এখন অনেক বেশি মানুষ ন্যূনতম খাদ্য পাচ্ছে না। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ আসছে না।
তবে আগেরবারের মতো এবারও এই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অধীনস্থ সহায়তা সমন্বয়কারী সংস্থা কোগাট দাবি করেছে, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করছে। এর প্রায় ৭০ শতাংশই খাদ্যপণ্য।
হামাস এই দাবিকে অস্বীকার করে জানিয়েছে, প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক গাজায় প্রবেশ করছে—এই তথ্য সঠিক নয়। বাস্তবে এর চেয়ে অনেক কম সহায়তা পৌঁছাচ্ছে। আইপিসির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কোগাট অভিযোগ করে, সংস্থাটি ‘ভূমির বাস্তব চিত্র ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে।’ কোগাটের দাবি, প্রতিবেদনে তথ্য সংগ্রহে গুরুতর ঘাটতি রয়েছে এবং এমন কিছু সূত্রের ওপর নির্ভর করা হয়েছে, যা গাজায় প্রবেশ করা মানবিক সহায়তার পূর্ণ চিত্র তুলে ধরে না।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইপিসির প্রতিবেদনে যেটুকু দেখানো হয়েছে, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি সহায়তা গাজায় প্রবেশ করছে। মন্ত্রণালয়ের দাবি, চলতি বছরের জুলাইয়ের পর থেকে গাজায় খাদ্যপণ্যের দামও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো বারবার বলছে, গাজার মতো ছোট ও জনবহুল এলাকায় প্রয়োজনের তুলনায় এখনো পর্যাপ্ত সহায়তা ঢুকছে না। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েল প্রয়োজনীয় অনেক সামগ্রী গাজায় প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই। দখলদার দেশটির দাবি, সমস্যা মূলত খাদ্য বিতরণে অব্যবস্থাপনা।
গাজায় ১ লাখ মানুষ এখনো ‘বিপর্যস্ত’
জাতিসংঘ-সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যে খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি এবং পুষ্টির হারের উন্নতি হচ্ছে। তবে বিপর্যয় এখনও কাটেনি। গত মাসে বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছে ১ লাখ মানুষ। আগস্টে ‘দ্য ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন’ (আইপিসি) দেখতে পেয়েছিল, পাঁচ লাখ মানুষ (গাজার জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ) দুর্ভিক্ষ পীড়িত এলাকাগুলোতে বাস করছে।
এরপর অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধবিরতি হওয়ার পর থেকে জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক ত্রাণ সংস্থাগুলো সেখানে খাদ্য সরবরাহ বাড়াতে সক্ষম হয়। কিন্তু খাদ্য সরবরাহ বাড়লেও আইপিসির বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, একমাস আগেও পাঁচ লাখ গাজাবাসী জরুরি পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। আর এক লাখের বেশি মানুষ এখনও চরম মাত্রার খাদ্য অনিরাপত্তার মধ্যে আছে। তারা বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
এই সংখ্যা ক্রমেই কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হলেও পরিস্থিতি যে এখনো চরমভাবে নাজুক সেকথা জোর দিয়েই বলা হচ্ছে। আবার গাজার কোনও এলাকাই এখন দুর্ভিক্ষ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত নয় বলেও জানিয়েছে আইপিসি।
গাজায় যুদ্ধবিরতির পর থেকে ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা
হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকে গাজা উপত্যকাজুড়ে ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। রাশিয়ায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত আবদেল হাফিজ নোফাল বার্তা সংস্থা তাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করে হয়, রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও অনুমান করা হচ্ছে যে, ৪০০ জনেরও বেশি নিহত এবং এর চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যক লোক আহত হয়েছে।’
তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘এর কারণ হলো ইসরায়েল ক্রমাগত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে এবং কেবলমাত্র ন্যূনতম পরিমাণে মানবিক সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে।’ দীর্ঘদিনের গণহত্যার যুদ্ধের অবসানে গত ১১ অক্টোবর থেকে গাজায় মার্কিন মধ্যস্ততায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি গণহত্যার যুদ্ধ অঞ্চলজুড়ে নিহতের সবশেষ সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একই সময়ে ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি বেশি মানুষ আহত হয়েছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
চলতি বছরের শুরুতেও একটি যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ইসরায়েল গত ২৭ মে থেকে গাজায় পৃথক সাহায্য বিতরণ উদ্যোগ শুরু করেছিল। এই পদক্ষেপের পর অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষ প্রকট হয়ে ওঠে। ইসরায়েলি বাহিনী খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও গুলি চালিয়ে যায়। এর ফলে শত শত মানুষ নিহত হয়। সেই সঙ্গে দুর্ভিক্ষে শিশুসহ বহু মানুষের মৃত্যু হয়।
গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর আর কোনো যুদ্ধ হবে না—যদি পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে সম্মান করে এবং দেশটির নিরাপত্তাগত স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠান ‘ডিরেক্ট লাইন’-এ তিনি এই মন্তব্য করেন।
শুক্রবার বছরের শেষ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত হন পুতিন। সেখানে বিবিসির সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করেন ‘অন্য কোথাও রাশিয়া আর বিশেষ সামরিক অভিযান (যুদ্ধ)’ চালাবে কিনা। জবাবে পুতিন বলেন, যদি আপনারা আমাদের সম্মান করেন তাহলে আর কোনো অভিযান হবে না। আমরা যেমনটা আপনাদের সম্মান করার চেষ্টা করছি, আপনারাও যদি এমন সম্মান করেন তাহলে আর অভিযান হবে না।
এর আগে গত সপ্তাহে রুশ প্রেসিডেন্ট জানান, রাশিয়া ইউরোপের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে না। কিন্তু যদি যুদ্ধ বাঁধে তাহলে লড়াই করতে রাশিয়া প্রস্তুত আছে। এছাড়া তিনি শর্ত দেন যদি ন্যাটোর পূর্বাঞ্চলীয় সম্প্রসারণ নিয়ে ইউরোপ কোনো প্রতারণা না করে তাহলে আমরা যুদ্ধ করব না।
ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে পুতিন বলেন, তিনি ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত। তবে কোনো ধরনের আপসের ইঙ্গিত দেননি। তিনি আবারও দাবি করেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা বাদ দিতে হবে এবং রাশিয়ার দখল করা চারটি অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা সরিয়ে নিতে হবে। আংশিকভাবে দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় রাশিয়া।
দেশের অর্থনীতির প্রশ্নে মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয় স্বীকার করেন পুতিন। অনুষ্ঠানের মধ্যেই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়ে ১৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণা দেয়। বিদেশনীতি, অর্থনীতি ও যুদ্ধের পাশাপাশি অনুষ্ঠানজুড়ে উঠে আসে মাতৃভূমি, প্রবীণ সেনাদের সম্মান এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা।
পুতিন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের সঙ্গে ‘সমান মর্যাদা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে’ কাজ করতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। রাশিয়া ভবিষ্যতে ন্যাটোর ওপর হামলা চালাতে পারে—পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন আশঙ্কার কথা আবারও তা নাকচ করে দেন তিনি।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে করা মামলার মূল শুনানি আগামী জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) জানিয়েছে, এ মামলার শুনানি চলবে আগামী ১২ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।
এই শুনানি আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এক দশকের বেশি সময় পর এটি হবে আইসিজেতে কোনো গণহত্যা মামলার মূল বিষয়ের ওপর শুনানি। একই সঙ্গে গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুনানির প্রথম সপ্তাহে (১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি) মামলার বাদী দেশ গাম্বিয়া আদালতে তাদের অভিযোগ উপস্থাপন করবে। পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়া ২০১৯ সালে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে এ মামলা দায়ের করে। মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হয়।
এরপর ১৬ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমার তাদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পাবে। মিয়ানমার সরকার বরাবরই গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
আইসিজে জানিয়েছে, এ মামলায় তিন দিন সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে এসব শুনানি জনসাধারণ ও গণমাধ্যমের জন্য বন্ধ থাকবে।
জাতিসংঘের একটি তদন্ত মিশন ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দেয়। ওই অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
মিয়ানমার অবশ্য জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও ত্রুটিপূর্ণ’ বলে দাবি করেছে। দেশটির বক্তব্য, সে সময়কার অভিযান ছিল রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, যারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।
মিয়ানমারের আপত্তি খারিজ, রোহিঙ্গা ‘গণহত্যা’ মামলা চলবেমিয়ানমারের আপত্তি খারিজ, রোহিঙ্গা ‘গণহত্যা’ মামলা চলবে।
মামলাটি ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা সনদ অনুযায়ী দায়ের করা হয়েছে। নাৎসি জার্মানির হাতে ইহুদিদের গণহত্যার পর এ সনদ প্রণয়ন করা হয়। এতে গণহত্যা বলতে কোনো জাতিগত, ধর্মীয় বা নৃগোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, কিংবা পুরোপুরি ধ্বংসের উদ্দেশে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়েছে।
গাম্বিয়া ও মিয়ানমার—দুই দেশই এ সনদের স্বাক্ষরকারী হওয়ায় আইসিজের এ মামলার বিচারিক এখতিয়ার রয়েছে।
১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদের পর আইসিজে এখন পর্যন্ত মাত্র একবার গণহত্যার ঘটনা নিশ্চিত করেছে। এটি ছিল ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসায় প্রায় ৮ হাজার মুসলিম পুরুষ ও কিশোর হত্যাকাণ্ড।
গাম্বিয়া ও মামলায় হস্তক্ষেপকারী অন্য দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। এই পাঁচ দেশ আদালতে যুক্তি দিয়েছে, গণহত্যা শুধু ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাদের মতে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাও গণহত্যার উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
সিরিয়ায় আইএসকে (ইসলামিক স্টেট) লক্ষ্য করে ‘ব্যাপক’ হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিবিসি লিখেছে, দেশটিতে মার্কিন বাহিনীর ওপর প্রাণঘাতী হামলার প্রতিক্রিয়ায় এ অভিযান পরিচালনার কথা বলছে ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) জানিয়েছে, সিরিয়ার একাধিক স্থানে আইএসের অন্তত ৭০টি লক্ষ্যবস্তুতে যুদ্ধবিমান, আক্রমণকারী উড়োজাহাজ ও কামান থেকে হামলা চালানো হয়। এই অভিযানে জর্ডানের বিমানও অংশ নেয়।
সেন্টকমের বিবৃতিতে বলা হয়, আইএস অবকাঠামো ও অস্ত্রভাণ্ডার নিশানা করে শতাধিক নিখুঁত হামলা চালানো হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা খুব শক্তভাবে আঘাত হানছি।’
গত ১৩ ডিসেম্বর সিরিয়ার প্রাচীন নগরী পালমিরায় আইএসের হামলায় দুই মার্কিন সেনা এবং এক মার্কিন বেসামরিক দোভাষী নিহত হওয়ার পর তার এ মন্তব্য এলো।
সেন্টকম এক্স পোস্টে বলেছে, ‘অপারেশন হকআই স্ট্রাইক’ নামের এই অভিযান শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় শুরু হয়।
সেন্টকমের কমান্ডার অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকান ও তাদের মিত্রদের ক্ষতি করতে চাওয়া সন্ত্রাসীদের কঠোরভাবে অনুসরণ করে যাবে।’
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, এই অভিযান কোনো যুদ্ধের সূচনা নয়, বরং প্রতিশোধের ঘোষণা।
‘যদি আপনি পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে আমেরিকানদের লক্ষ্য করেন, তাহলে বাকি সংক্ষিপ্ত ও আতঙ্কিত জীবনটা এই ভয়ে কাটবে যে- যুক্তরাষ্ট্র আপনাকে খুঁজে বের করবে এবং নির্মমভাবে হত্যা করবে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে বলেন, দায়ীদের বিরুদ্ধে তিনি যে প্রতিশোধের কথা দিয়েছিলেন, সেটিই এখন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তার ভাষ্য, সিরিয়ার সরকার এই অভিযানে ‘পূর্ণ সমর্থন’ দিয়েছে।
এদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) বলছে, রাক্কা ও দেইর ইজোরের আশপাশে আইএসের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এতে আইএসের এক শীর্ষ নেতা ও একাধিক যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।
তবে হামলার লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য যাচাই করতে পারেনি বিবিসি। আইএসও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি।
এর আগে সেন্টকম জানায়, পালমিরায় হামলাটি চালিয়েছিল এক আইএস বন্দুকধারী, যাকে পরে হত্যা করা হয়। ওই হামলায় আরও তিন মার্কিন সেনা আহত হন।
পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাটি এমন এলাকায় ঘটেছে, যেখানে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে এসওএইচআর দাবি করেছে, হামলাকারী সিরীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ছিল।
এ হামলার দায় কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি, বন্দুকধারীর পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়নি।
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সিরীয় বাহিনীগুলো আইএসের শেষ ভূখণ্ড দখলের ঘোষণা দিলেও এরপরও সংগঠনটি বিচ্ছিন্ন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের হিসাবে, সিরিয়া ও ইরাকে এখনো আইএসের পাঁচ থেকে সাত হাজার যোদ্ধা রয়েছে।
আইএসের বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে সিরিয়ায় মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে আইএসবিরোধী আন্তর্জাতিক জোটে যোগ দিয়েছে সিরিয়া, সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তার অঙ্গীকার করেছে।
২০২৪ সালে বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন ঘটায় আহমেদ আল-শারা নেতৃত্বাধীন জোট। সেই শারাই এখন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট। গত নভেম্বরে তিনি হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই সময় দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘নতুন যুগের’ সূচনার কথা বলেন তিনি।
আগামী জানুয়ারি মাসে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে দায়ের করা ঐতিহাসিক মামলার গণশুনানি শুরু করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত জাতিসংঘের এই শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, এই শুনানিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর চালানো নৃশংসতার অভিযোগের বিচারিক কার্যক্রম চলবে।
শুনানির নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, মামলার বাদী পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিমপ্রধান দেশ গাম্বিয়া আগামী ১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের যুক্তি উপস্থাপন করবে। অন্যদিকে, গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করা মিয়ানমার ১৬ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত আদালতে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনে যুক্তি ও প্রমাণ তুলে ধরার সুযোগ পাবে। এছাড়া আইসিজে সাক্ষীদের শুনানির জন্য তিন দিন সময় বরাদ্দ করেছে, তবে এই অংশটি গণমাধ্যম ও জনসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে।
ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সহায়তায় ২০১৯ সালে গাম্বিয়া এই মামলাটি দায়ের করেছিল। মামলায় ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং বৌদ্ধ মিলিশিয়াদের চালানো নৃশংস অভিযানকে 'গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘন' হিসেবে অভিহিত করা হয়। আল জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে আইসিজেতে 'যোগ্যতার ভিত্তিতে' (merits) এটিই প্রথম কোনো গণহত্যার মামলার শুনানি। ধারণা করা হচ্ছে, এই কার্যক্রম একটি নজির স্থাপন করবে, যা গাজায় যুদ্ধের বিষয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলাতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী দাউদা জালো সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এক সভায় জানান, প্রায় ছয় বছর আগে দায়ের করা এই মামলার মৌখিক শুনানির জন্য তারা প্রস্তুত। তিনি বলেন, "রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য মিয়ানমার কেন দায়ী এবং কেন ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, সে বিষয়ে গাম্বিয়া আদালতে জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করবে।"
উইমেন'স পিস নেটওয়ার্ক-মিয়ানমারের নির্বাহী পরিচালক ওয়াই ওয়াই নু জানিয়েছেন, আইসিজেতে গাম্বিয়ার মামলার সমর্থনে হস্তক্ষেপকারী দেশগুলোর অবস্থান বেশ শক্তিশালী, যা রাখাইন রাজ্যে নৃশংসতা বন্ধে ভূমিকা রাখতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ভয়াবহ সহিংসতার পর প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ৭ লাখ ৪২ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বর্তমানে কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মানবেতর জীবনযাপন করছে। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থী সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ দাবি করে আসছে।