মার্কিন সিনেটর ডিক ডারবিন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সমর্থন দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। গত সোমবার সিনেটে এক বক্তৃতায় তিনি এ অনুরোধ জানান।
এক বিবৃতিতে ডিক ডারবিনের দপ্তর জানায়, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউনূসের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তিনি। সিনেটে বক্তৃতায় তিনি ড. ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেন, যা উন্নয়নশীল দেশে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ করে দেয়।
বক্তৃতায় ডারবিন বলেন, ‘আমি তাকে (ড. ইউনূস) পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি। আমি তাকে বিশ্বাস করি, ২০ বছর আগেও করেছি এবং আজও করি। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতিও তাকে সমর্থন করার জন্য অনুরোধ করছি। আমি জানি ড. ইউনূসের হৃদয়ে বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থের বিষয় রয়েছে এবং এ চ্যালেঞ্জিং সময়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবেন।’
ডারবিন তার বক্তব্য শুরু করেন বাংলাদেশে সফরের কথা (২০ বছর আগে) স্মরণ করে। তখন তিনি ড. ইউনূসের সঙ্গে প্রথম দেখা করেন। তিনি বলেন, ড. ইউনূস এমন একটি তত্ত্ব নিয়ে আসেন, যার মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষের সাহযোগিতা করার কথা ভেবেছিলেন। এটি ক্ষুদ্রঋণ নামে পরিচিত এবং তিনি ‘গ্রামীণ ব্যাংক, জনগণের ব্যাংক’ নামে কিছু তৈরি করেন।
ডারবিন আরও বলেন, ড. ইউনূসের ধারণা বিশ্বকে বদলে দিয়েছে এবং তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে সাহায্য করেছে। দুঃখজনকভাবে তার ধারণাগুলোর কারণে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আক্রোশেরও শিকার হন। তাকে বছরের পর বছর ধরে সন্দেহজনক আইনি অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করে জেলহাজতের হুমকি দেওয়া হয়।
ডারবিন বলেন, ‘গত মাসে আমার বিস্ময়ের কথা কল্পনা করুন... জনগণের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে হাসিনা অবশেষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং যে ছাত্ররা বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা দাবি করেন যে তাদের দেশের নেতা হবেন কেবল ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
‘আমি তার সৌভাগ্যের কথা শুনে তাকে (ড. ইউনূস) ফোন করি। তিনি উচ্ছ্বসিত ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে দেশের মানুষ এখন এই ঐতিহাসিক সুযোগে কাজে লাগাতে প্রস্তুত।’
ডারবিন জুলাই মাসে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে হয়রানির নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশে তিন সহকর্মীর নেতৃত্ব দেন। এতে তিনি তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ডক্টর ইউনূসের সঙ্গে দুর্ব্যবহার বন্ধ করতে এবং তার বিরুদ্ধে আনা সন্দেহজনক অভিযোগগুলো প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধিদল, অর্থনৈতিক সংলাপের পরিকল্পনা
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংলাপ শুরুর পরিকল্পনা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করার কাজে সহায়তার অংশ হিসেবে আগামী সপ্তাহে এই সংলাপের পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
গতকাল মঙ্গলবার ব্রিটিশ গণসংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের অর্থনৈতিক সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে। মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সংলাপে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিনিধিদলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ, পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য দপ্তর ও ইউএসএইডের কর্মকর্তাদের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। সংলাপে বাংলাদেশের আর্থিক ও মুদ্রানীতির পাশাপাশি আর্থিক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হবে। পাশাপাশি মার্কিন কর্মকর্তারা বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
মার্কিন রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক দুর্বলতা মোকাবিলা ও নিরবচ্ছিন্ন প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়ন নিশ্চিতে একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করতে পারবে বলে যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদী।
তিনি আরও বলেন, আইএমএফ এবং অন্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশের নিরবচ্ছিন্ন সম্পৃক্ততার জন্য মার্কিন সমর্থন বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে ওয়াশিংটন। কারণ বাংলাদেশ আর্থিক খাতের সংস্কার গভীরতর করে আর্থিক টেকসইমূলক উন্নতি এবং দুর্নীতি হ্রাস করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদার করতে চায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত
বাসস জানায়, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে দেশটির সম্পৃক্ততার জল্পনা-কল্পনা দৃঢ়তার সঙ্গে নাকচ করে দিয়েছে।
সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল ওয়াশিংটনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার এ সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত ও আগ্রহী।’
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তবে তিনি দেশটিতে সাম্প্রতিক বিক্ষোভে বিদেশি প্রভাব সম্পর্কিত দাবির বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।
ছাত্র বিক্ষোভে চীনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে প্যাটেল জবাব দেন, ‘আমি শুধু শুধু অনুমান করতে যাচ্ছি না।’
এ সময় একজন সাংবাদিক বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক মৈত্রী তুলে ধরে কিছু ভারতীয় মিডিয়া আউটলেট সরকারবিরোধী বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনেছে বলে উল্লেখ করেন।
জবাবে প্যাটেল দৃঢ়ভাবে এ দাবিগুলো নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ‘আমি সেই প্রতিবেদনগুলো দেখিনি; কিন্তু আমি যা দ্ব্যর্থহীনভাবেই বলতে পারি তা হলো, সেগুলো (প্রতিবেদনগুলো) সত্য নয় আর সম্ভবত সে কারণেই আমি সেগুলো দেখিনি।
ভারতের মহারাষ্ট্রের সচিবালয় ভবন থেকে লাফ দিয়েছেন রাজ্যটির ডেপুটি স্পিকারসহ তিনজন সংসদ সদস্য। আজ শুক্রবার দুপুরের দিকে ভবনটির তিন তলা থেকে তারা লাফ দেন। তবে ভবনের নিচে জাল থাকায় তারা রক্ষা পেয়েছেন।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, মহারাষ্ট্র রাজ্যের ধাঙড় গোষ্ঠীকে তফসিলি জনজাতির (এসটি) অন্তর্ভুক্ত করার দাবির প্রতিবাদে ডেপুটি স্পিকার নরহরি জিরওয়াল এবং অন্য তিনজন আদিবাসী সংসদ সদস্য সচিবালয়ের তিন তলা থেকে ঝাঁপ দেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ভবনির নিচে থাকা তারা তিনজনই আটকা পড়েন। কারও তেমন কোনো আঘাত লাগেনি। তাদেরকে নিরাপদে জাল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
সচিবালয়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধের চেষ্টার অংশ হিসেবে ২০১৮ সালে এই জাল স্থাপান করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনজন এমপি জাল থেকে নেমে আবার সচিবালয় ভবনে উঠছেন। চলতি বছরের শেষে মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এমন ঘটনা মহারাষ্ট্রে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
পশ্চিম মহারাষ্ট্র এবং মরাঠাওয়াড়া অঞ্চলে ধাঙড় জনগোষ্ঠীর বসবাস। কয়েক বছর ধরেই তারা ভারত সরকারের কাছে জনজাতির স্বীকৃতি চেয়ে আন্দোলন করে আসছে। গত মাসেই ধাঙড় গোষ্ঠীর এক নেতা মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, দাবি পূরণ না হলে তাদেরও শিন্ডেকে প্রয়োজন নেই।
গত বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে, উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার ও দেবেন্দ্র ফড়নবিশসহ মন্ত্রিসভার অন্য কর্মকর্তারা তফসিলি জনজাতি (এসটি) বিষয়ে বৈঠক করেন। এ সময় কয়েকজন আদিবাসী এমপি সচিবালয় কমপ্লেক্সে বিক্ষোভ করেন। ধাঙড় জনগোষ্ঠী বর্তমানে অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) বিভাগে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তারা এসটি বিভাগে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে আবারও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই হামলায় অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় লেবাননে ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। এদিকে, লেবাননে হিজবুল্লাহ যোদ্ধা ও ইসরায়েলি সৈন্যদের মধ্যে যুদ্ধে অন্তত আটজন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্য বৈরুতকে লক্ষ্য করে রাতভর ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত ও আটজন আহত হয়েছেন। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় আরও ৪৬ জন নিহত ও ৮৫ জন আহত হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ২৪০টির মতো রকেট নিক্ষেপ করেছে। দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহ যোদ্ধা ও ইসরায়েলি সৈন্যদের মধ্যে যুদ্ধ তীব্রতর হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত আটজন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর সর্বশেষ রকেটগুলো তিন ধাপে ছোড়া হয়। এতে দুই ঘণ্টার কম সময় নেওয়া হয়েছে। এই রকেটগুলোর বেশির ভাগই ইসরায়েলের আপার গ্যালিলি অঞ্চলের পশ্চিমাংশে উন্মুক্ত স্থানে পড়েছে। এছাড়া অঞ্চলটির উত্তরাংশে উন্মুক্ত স্থানে পড়েছে দুটি রকেট। অন্যদিকে, ইসরায়েল গাজায় তাদের আক্রমণ জোরদার করেছে। এতে একটি এতিমখানাসহ আশ্রয়কেন্দ্র এবং কয়েকটি স্কুলে পৃথক হামলায় বহু মানুষ নিহত হয়েছেন।
হিজবুল্লাহর হামলায় একদিনে ৮ ইসরায়েলি সেনা নিহত
সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে স্থল হামলা চালাতে গিয়ে লেবাননে একদিনে ৮ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সাধারণ সৈন্য থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও রয়েছেন। লেবাননের যোদ্ধাদের সঙ্গে বুধবার প্রথমবারের মতো সরাসরি সংঘর্ষে জড়ায় ইসরায়েলি সেনারা। এদিন তারা বিভিন্ন দিক দিয়ে লেবাননের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-মানার জানিয়েছে, ইসরায়েল স্থল হামলা শুরুর ঘোষণার প্রথমদিনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের সেনাদের কাবু করে দিয়েছে হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা। তারা কৌশল অবলম্বন করে ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের ট্যাংক, কামান ও ভারী বোমা এগুলো খুব বেশি কাজে লাগছে না। ফলে বিভিন্ন জায়গা দিয়ে লেবাননে প্রবেশের চেষ্টা করলেও তারা এতে সফলতা পায়নি।
সেনাদের মৃত্যুর তথ্য জানিয়ে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, ৮ জনের মধ্যে ৪ জন ইগোজ ইউনিটের সেনা ছিলেন। এছাড়া লেবাননে স্থল হামলা চালাতে গিয়ে আরও ৭ সেনা গুরুতর আহত হয়েছেন।
ইসরায়েল সেনাদের মৃত্যুর তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর আগেই হিজবুল্লাহ জানায়, তারা দখলদার সেনাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়েছে। হিজবুল্লাহ আরও জানায়, দক্ষিণ লেবাননে অন্তত তিনটি গ্রামে ইসরায়েলিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে তারা। অপরদিকে লেবাননের সেনাবাহিনী আলাদা এক বিবৃতিতে জানায়, ইসরায়েলি সেনারা তাদের ভূখণ্ডের মাত্র ৪০০ মিটার ভেতরে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু প্রতিরোধের মুখে স্বল্প সময়ের মধ্যে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
ইসরায়েলের তিন ট্যাংক গুঁড়িয়ে দিল হিজবুল্লাহ
লেবাননের দিকে এগিয়ে আসার সময় দখলদার ইসরায়েলের ট্যাংক লক্ষ্য করে শক্তিশালী হামলা চালিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। তারা জানিয়েছে, শুধুমাত্র বুধবারই ইসরায়েলিদের তিনটি ট্যাংক ধ্বংস করেছে তারা। বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের তিনটি মেরকাভা ট্যাংক ধ্বংস করার দাবি করেছে। এই ট্যাংকগুলো মারুন আল-রাস গ্রামের দিকে আসছিল। তখন এগুলোকে লক্ষ্য করে রকেট ছোড়া হয়। এর আগে এই এলাকায় ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াই হয়েছিল।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা বিভিন্ন দিক দিয়ে লেবাননে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাদের সফলভাবে আটকে দিয়েছে হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা। আর প্রথমদিনের এই সফলতাকে একটি কৌশলগত বিজয় হিসেবে বিবেচনা করছে দলটি। এছাড়া এটি যোদ্ধাদের মনোবলও বৃদ্ধি করেছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। অবশ্য সীমান্ত এলাকায় ব্যর্থ হলেও লেবাননের রাজধানী বৈরুতসহ বিভিন্ন জায়গায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এসব হামলায় অসংখ্য মানুষ হতাহত হয়েছেন।
লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় ১ মার্কিনি নিহত
লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক মার্কিনি নিহত হয়েছেন। তিনি মিশিগানের ডিয়ারবর্নের বাসিন্দা। নিহত ওই ব্যক্তির মেয়ে, বন্ধু এবং তার নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্বকারী মার্কিন কংগ্রেসওম্যান এই তথ্য জানিয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। বুধবার ডেমোক্রেটিক মার্কিন রিপ্রেজেন্টেটিভ রাশিদা তালাইবের কার্যালয় বলেছে, তারা কামেল আহমাদ জাওয়াদ নামের নিহত ওই ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। কার্যালয়টি জানায়, কামেল আহমাদ প্যালেস্টাইন আমেরিকান কংগ্রেসওম্যানের সদস্য এবং একজন মার্কিন নাগরিক।
এক বিবৃতিতে তার মেয়ে নাদিন জাওয়াদ বলেছেন, তার বাবা মঙ্গলবার লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় ‘নিরীহদের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করার সময়’ নিহত হন। তার বাবা জীবনের শেষ দিনগুলো বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সাহায্য করার মাধ্যমে কাটিয়ে দিতে একটি হাসপাতালের কাছে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি। পৃথকভাবে হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘কামেল আহমদ জাওয়াদের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত এবং তার পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি। তার মৃত্যু লেবাননের অনেক বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর মতোই একটি ট্র্যাজেডি।’
সম্প্রতি ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেন্ডেন্টের বরাতে জানা যায় তিনি বলেছেন, ‘জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস দেশগুলোকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে।’
প্রতিবেদনের তথ্যমতে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে ক্ষোভ ঝেড়েছেন সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বিশ্ব আগুনে জ্বলছে এবং বর্তমান মার্কিন নেতৃত্ব তা প্রতিরোধে কিছুই করছে না, এমন অভিযোগ আনেন ট্রাম্প। তাদের (ডেমোক্রেটিক পার্টি) কোনো নেতৃত্ব নেই, দেশ পরিচালনার কেউ নেই। জো বাইডেন তাদের একজন অস্তিত্বহীন প্রেসিডেন্ট। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও এখানে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।
এদিকে ক্ষমতায় থাকাকালীন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও দ্বিপাক্ষিক পররাষ্ট্রনীতিতে ইরানের সঙ্গে অনেকটা সাপে-নেউলে সম্পর্ক ছিলো ট্রাম্পের। তার নির্দেশেই হত্যা করা হয় ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ডের জনপ্রিয় জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে। ইরানের সঙ্গে একটি পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকেও বের করে এনেছিলেন ট্রাম্প। আবার সম্প্রতি ট্রাম্পের ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর শোনা যাচ্ছে, তাকে হত্যার ছক কষছে ইরান।
উল্লেখ্য, রাতারাতি ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে আবারও সবার নজর নিজেদের দিকে টেনে নিয়েছে ইরান। মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশে যুদ্ধ বাঁধিয়ে রাখা ইসরায়েল, নিজেই এবার হামলার শিকার হয়ে হতভম্ব। গত মঙ্গলবার ইরান থেকে যখন একের পর এক মিসাইল ছোড়া হয় ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে। এতে আশ্রয়ের জন্য দেশটির বাসিন্দাদের এদিক-সেদিক ছুটতে দেখা যায়।
ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এবার মধ্যপ্রাচ্যের দুই চিরবৈরী দেশ ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল বারনিয়ার এবং জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানেলিনা বেয়ারবক এরই মধ্যেসামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল বার্নিয়ার এক টুইটবার্তায় বলেন, নিকট ভবিষ্যতে যেকোনো সময়ে ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। সেই আশঙ্কা এবং পরিস্থিতি ইতোমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। পৃথক এক পোস্টে অ্যানেলিনা বেয়ারবক বলেন, মঙ্গলবার রাতে যে হামলা ঘটল, তা মধ্যপ্রাচ্যকে অতল গহ্বরের দিকে নিয়ে যাবে।
গত প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকে লেবাননে ইরানের সমর্থনপুষ্ট সশস্ত্র ইসলাম রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। প্রথম পর্যায়ে কয়েক দিন ইসরায়েলের বিমান বাহিনী লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহর বিভিন্ন ঘাঁটি ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য গোলা ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, এতে হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডার নিহত হন। খবর এএফপির।
এই পর্বের শেষ পর্যায়ে লেবাননে হিজবুল্লাহর সদরদপ্তরে আঘাত হানে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। সে হামলায় নিহত হয়েছেন হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসারুল্লাহ। হাসান নাসারুল্লাহ নিহত হওয়ার পরের দিন মঙ্গলবার থেকে লেবাননে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের স্থলবাহিনী।
স্থলবাহিনী অভিযান শুরুর পর ওই রাতেই ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ১৮১টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরানের সামরিক বাহিনীর এলিট শাখা ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি এক বার্তায় জানান, ‘ইরানের হামলার জবাব দেওয়া হবে। আমাদের পরিকল্পনা প্রস্তুত আছে, ঠিক সময়ে সেটির বাস্তবায়ন করা হবে।’
এদিকে মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর গতকাল বুধবার সকালে হামলা চালিয়েছে লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। সংগঠনটি বলছে, তারা গতকাল সকালে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পর পর কয়েকটি হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে একটি ছিল ইসরায়েলি সামরিক ব্যারাকে রকেট হামলা।
হিজবুল্লাহ একটি বিবৃতিতে এসব জানিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ আরও বলেছে, স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ১৫ মিনিট থেকে ৭টা ২০ মিনিটের মধ্যে শুৎলা ও মাসকাফ আম সেটেলমেন্টে এবং শোমেরা ব্যারাকে ইসরায়েলি সেনাদের একটি জমায়েতে তিনটি মিসাইল হামলা চালানো হয়। তারা যত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে এর বেশ কয়েকটি সরাসরি ও নির্ভুলভাবে লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে।
এই হামলা চালানোর কিছুক্ষণ আগেই লেবাননের আদাইসেহ শহর থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পিছু হটিয়ে দেওয়ার কথা জানায় হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহর এসব দাবির বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল।
এদিকে, আইআরজিসির এক কর্মকর্তা ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সিকে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযানের প্রতিবাদে এই অপারেশন চালানো হয়েছে। জায়নবাদী গোষ্ঠী যদি ইরানের অপারেশনের প্রতিক্রিয়া জানানোর চেষ্টা করে, তাহলে আমাদের পরবর্তী হামলা আরও বিধ্বংসী হবে।’
এদিকে মিসাইল হামলার জবাবে ইরানে যেকোনো সময় হামলা চালাবে দখলদার ইসরায়েল। আর এই হামলার পরিধি বড় হবে বলে জানিয়েছেন এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা। হামলায় ইরানের তেল উৎপাদন কেন্দ্র এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে লক্ষ্য করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এক্সিওসকে এসব তথ্য জানিয়ে ইসরায়েলের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘হামলা হবে কয়েক দিনের মধ্যে।’
অপরদিকে ইরানের মিসাইল হামলার পর কথা বলেছেন দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ইসরায়েলে মিসাইল ছুড়ে ইরান ‘বড় ভুল’ করেছে। তারা এর মূল্য দেবে।
গত মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলের সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড। ইরানের হামলার পর নিজস্ব নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত নেতানিয়াহু। বৈঠক শুরুর আগে ইরানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি বাক্য উচ্চারণ করেন তিনি। এ ছাড়া নেতানিয়াহু দাবি করেন, ইরানের হামলা ব্যর্থ হয়েছে।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কল্যাণে ইরানের হামলা নস্যাৎ করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত। ইরান সরকার আমাদের প্রতিরক্ষার দৃঢ় সংকল্প, আমাদের জবাব দেওয়ার দৃঢ় সংকল্প বোঝে না। (হামাস নেতা) ইয়াহিয়া সিনওয়ার বোঝেনি, মোহাম্মদ দেইফ বোঝেনি, (হিজবুল্লাহ প্রধান) হাসান নাসরুল্লাহ বোঝেনি, প্রধান সামরিক কমান্ডার ফুয়াদ সুখর বোঝেনি। খুব সম্ভবত তেহরানে যারা আছে তারাও বোঝে না। তারা বুঝবে। যে আমাদের ওপর হামলা চালায়- আমরা তার ওপর হামলা চালাব।’
দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, ইরানের প্রক্সি বাহিনী ব্যর্থ হচ্ছে। তারা জয়ী হচ্ছেন। আর তারাই জয়ী হয়ে যাবেন এবং যুদ্ধের যতো লক্ষ্য আছে তার সবই অর্জন করবেন।
মধ্যপ্রাচ্যের দুই চিরশত্রু দেশ ইরান এবং ইসরায়েল। দশকের পর দশক ধরে বৈরিতা চললেও চলতি ২০২৪ সালের আগ পর্যন্ত কোনো দেশই পরস্পরকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়নি। ২০২৪ সালে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রথমবারের মতো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। সেবার প্রায় ৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ছুড়েছিল আইআরজিসি।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ বুধবার এই ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছেন, গুতেরেসকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে কারণ তিনি ইরানের মিসাইল হামলার নিন্দা জানাননি।
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার ইরান ইসরায়েলে যে হামলা চালিয়েছে সেটির পর্যাপ্ত নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব। এ কারণে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি ইসরায়েলে প্রবেশ করতে পারবেন না।’
দখলদার ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ আরও বলেন, গুতেরেস একজন ‘ইসরায়েল বিদ্বেষী’, তিনি ‘সন্ত্রাসী, ধর্ষক এবং হত্যাকারীদের’ সমর্থন করেন। গুতেরসকে আগামী কয়েক প্রজন্ম জাতিসংঘের কলঙ্ক হিসেবে মনে রাখবে।
যদিও মঙ্গলবার রাতে ইরান ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর তাৎক্ষণিকভাবে এর নিন্দা জানান জাতিসংঘের মহাসচিব। এ ছাড়া আবারও যুদ্ধবিরতির দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে আজ রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রায় ২০০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। এই হামলায় লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয় ইসরায়েলের সামরিক অবকাঠামোকে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন নিশ্চিত করেছে, ইরান ইসরায়েলের নেভাতিম বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এই ঘাঁটিতে অন্তত কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র পড়তে দেখা গেছে।
অপর মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস জানিয়েছে, ইরানের হামলার জবাব দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। দখলদারদের এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, তারা ইরানের তেল উৎপাদন কেন্দ্রসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালাবেন।
স্বাধীনতার ২০০ বছরে প্রথমবার নারী প্রেসিডেন্ট পেতে চলেছে মেক্সিকো। গতকাল মঙ্গলবার শপথ গ্রহণের মাধ্যমে এই দায়িত্ব নিয়েছেন ক্লডিয়া শেইনবম। গত জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৬০ শতাংশ ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন শেইনবম। জলবায়ুবিজ্ঞানী থেকে রাজনীতিতে আসা শেইনবম মেক্সিকো সিটির মেয়র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
পূর্বসূরির মতো বিস্তৃত সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও দরিদ্রদের হয়ে লড়াই করার অঙ্গীকার করলেও নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্লডিয়ার সামনে রয়েছে পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ। ৬২ বছর বয়সী নতুন প্রেসিডেন্টের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে দেশজুড়ে বিরাজমান নৃশংসতা বৃদ্ধি, মন্থরগতির অর্থনীতি ও ঘূর্ণিঝড়ের বিধ্বস্ত প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের আকাপুল্কোর পুনর্গঠন।
এ ছাড়া মাদক কারবারিদের আধিপত্য থাকা উত্তরাঞ্চলীয় কালিকান শহরের আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতিও সামলাতে হবে তাকে। দেশের উত্তরে তিজুয়ানা থেকে দক্ষিণে চিয়াপাস পর্যন্ত তাদের দৌরাত্ম্য সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে।
শপথ নেওয়ার পর শেইনবম বলেন, ‘এখন রূপান্তরের সময়, এখন নারীদের সময়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি একজন মা, একজন দাদী, একজন বিজ্ঞানী এবং একজন বিশ্বাসী নারী এবং আজ থেকে মেক্সিকান জনগণের ইচ্ছায় একজন প্রেসিডেন্ট।’
শেইনবম পুনর্ব্যক্ত করেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বায়ত্তশাসিত হবে এবং বিনিয়োগকারীদের তিনি আশ্বস্ত থাকতে বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে জাতীয় এবং বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগ নিরাপদ হবে।’
রয়্যাল হলোওয়ে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের জেন্ডার অ্যান্ড পলিটিক্সের অধ্যাপক, জেনিফার পিসকোপো, ল্যাটিন আমেরিকা নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। পিসকোপো বলেছেন, প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে নতুন এক বার্তা দিল মেক্সিকোর মানুষ। তারা এটা দেখাল, নারীরাও যোগ্যতায় পিছিয়ে নেই। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে আবার অবাস্তব আকাঙ্ক্ষার চাপ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তিনি বলেছেন, ‘নারী নেতৃত্ব একটি শক্তিশালী প্রতীক। কিন্তু তাদের তো কোনো জাদুকরী ক্ষমতা নেই। সরকারের সামনে যদি থাকে দৈত্যাকার চ্যালেঞ্জ, তবে রূপকথার মতো রাতারাতি সমাধানের আকাঙ্ক্ষা বরং গভীর হতাশাই (নারী নেতৃত্বে) সৃষ্টি করতে পারে।’
মেক্সিকোর সেন্টার ফর ইকোনমিক রিসার্চ অ্যান্ড টিচিংয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক কার্লোস পেরেজ রিকার্ট বলেছেন, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট লোপেজ ওবরাদোর ছিলেন প্রচণ্ড ক্যারিশম্যাটিক ব্যক্তিত্ব। এর জেরেই বেশ কিছু রাজনৈতিক ভুল পদক্ষেপ চাপা পড়ে যেত। তবে ক্লডিয়া শেইনবমের সে সুযোগ নেই। তাই যেখানে ওবরাদো যেসব চ্যালেঞ্জ ক্যারিশমা দিয়ে উতরে গেছেন, শেইনবমকে সেই বাধা টপকাতে হতে হবে কার্যোদ্ধারে সক্ষম। সূত্র : রয়টার্স
মজুরি, পেনশন বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যসেবার জোরদারসহ বেশ কিছু দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বন্দরে হাজার হাজার ডক শ্রমিক। প্রায় ৫০ বছরের মধ্যে এই প্রথম বন্দরের কার্যক্রম এভাবে বন্ধ হলো। ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন মার্কিন নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ধর্মঘটের ফলে মুদ্রাস্ফীতি আবার বাড়তে পারে। কয়েক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এটি চলতে থাকলে পণ্যের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
দেশটির স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে জার্মান বার্তা সংস্থা ডয়চে ভেলে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দর এবং আন্তর্জাতিক লংশোরম্যান অ্যাসোসিয়েশনের প্রায় ৪৫ হাজার সদস্যের মধ্যকার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। সোমবার আলোচনায় অগ্রগতির খবর পাওয়া গেলেও মঙ্গলবার থেকে শ্রমিকরা ধর্মঘট কর্মসূচি পালন শুরু করে। ৩৬টি বন্দরে এই ধর্মঘট ১৯৭৭ সালের পর ইউনিয়নের প্রথম ধর্মঘট।
শ্রমিকরা ধর্মঘট বিষয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম আইনের একটি বিবৃতি দেখিয়ে বলেছে, নিয়োগকর্তারা তাদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করেছে।
জানা গেছে, আগের চুক্তির অধীনে একজন শ্রমিকের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে প্রারম্ভিক মজুরি ঘণ্টা প্রতি ২০ ডলার থেকে ৩৯ ডলার পর্যন্ত ছিল। শ্রমিকরা অন্যান্য সুবিধাও পান, যেমন কনটেইনার বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত বোনাস। তবে শ্রমিক ইউনিয়ন টানা ৬ বছর ধরে প্রতি বছরেই ঘণ্টাপ্রতি ৫ ডলার বাড়তি মজুরি দাবি করছে বলে জানিয়েছেন ড্যাগেট। আবার প্রারম্ভিক বেতনও ৩৯ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৬৯ ডলার করার দাবি জানাচ্ছে ইউনিয়ন। এই হিসাবে শ্রমিকদের মজুরি ৭৭ শতাংশ বাড়ার কথা।
ইন্টারন্যাশনাল লংশোরমেনস অ্যাসোসিয়েশন (আইএলএ) বলছে, করোনা মহামারির সময় শ্রমিকদের বেতন এখনো পাওনা রয়েছে। মূল্যস্ফীতির কারণও মজুরিতে এর প্রভাব পড়েছে। এই পাওনা আদায়ে আরও বড় ধর্মঘট ডাকা হতে পারে বলে মার্কিন প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে।
সম্প্রতি সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর দীর্ঘদিনের নেতা হাসান নাসারাল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েল। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে লেবাননের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধে উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে। এই অঞ্চলটি আরও একটি বড় সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ধারণা করা হচ্ছে, এর কারণে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রও এ সংঘাতে জড়িয়ে যাবে। তাই ইসরায়েল পরিচালিত এ হত্যাকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে কোন দিকে নিয়ে যাবে?-তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি মূলত নিম্নের এ তিনটি মৌলিক প্রশ্নের ওপর নির্ভর করছে।
হিজবুল্লাহ কী করবে?
সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ এখন একের পর এক ইসরায়েলি হামলায় দিশেহারা অবস্থায় রয়েছে। এর কমান্ড কাঠামো কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে। এ গোষ্ঠীর শীর্ষস্থানীয় এক ডজনেরও বেশি কমান্ডারকে হত্যা করা হয়েছে। পেজার এবং ওয়াকি-টকির বিস্ফোরণের কারণে এর যোগাযোগ ব্যবস্থাও নষ্ট হয়ে গেছে এবং অনেক অস্ত্র বিমান হামলায় ধ্বংস করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মদ আল-বাশা বলেন, হাসান নাসারাল্লাহর মৃত্যু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। এরই মধ্যে এ পরিস্থিতি গোষ্ঠীটিকে অস্থিতিশীল করবে এবং গোষ্ঠীটি এর রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশলে স্বল্পমেয়াদি পরিবর্তনও আনতে পারে।’
তবে এই ইসরায়েলবিরোধী সংগঠনটি হাল ছেড়ে দিয়ে ইসরায়েলের শর্তে শান্তি চাইবে না। হিজবুল্লাহ ইতোমধ্যে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর এখনো হাজার হাজার যোদ্ধা রয়েছে যারা সিরিয়ায় সাম্প্রতিক যুদ্ধে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং তারাই প্রতিশোধের দাবি করছে। এদের কাছে এখনো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অনেক দূরপাল্লার, নির্ভুলভাবে লক্ষ্যভেদকারী অস্ত্র যা সহজেই তেল আবিব এবং অন্যান্য শহরে আঘাত হানতে পারে। সংগঠনের ভেতরে এগুলো ব্যবহার করার জন্য চাপ রয়েছে, কারণ এগুলোও ধ্বংস হওয়ার আগে ব্যবহার করতে চায়।
কিন্তু তারা যদি এ অস্ত্রগুলো ব্যবহার করে গণহামলা চালায় এবং ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলে বেসামরিক লোকদের হত্যা করা শুরু করে তাহলে এর পরিণতি অনেক ভয়াবহ হবে। এতে লেবাননের অবকাঠামোর ওপর ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে, এমনকি ইরান পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ৩২ বছর ধরে প্রভাবশালী শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব দিয়েছেন হাসান নাসারাল্লাহ। ইসরায়েল এবং পশ্চিমারা ছাড়াও তাদের শত্রু আছে। ২০১৬ সালে নাসারাল্লাহর হিজবুল্লাহকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিল উপসাগরীয় দেশগুলোসহ বৃহত্তর আরব লীগ। যদিও চলতি বছরের শুরুর দিকে এই তকমা প্রত্যাহার করে আরব লীগ।
ইরান কী করবে?
এই হত্যাকাণ্ড ইরানের জন্য হিজবুল্লাহর মতোই একটি বড় ধাক্কা। ইরান ইতোমধ্যেই পাঁচ দিনের শোক ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া জরুরি সতর্কতা হিসেবে ইরানের নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে তাকেও হত্যা না করা হয়।
তেহরানের একটি অতিথিশালায় জুলাই মাসে হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যার ঘটনায় ইরান এখনো প্রতিশোধ নেয়নি। এখন যা ঘটেছে সে বিষয়ে প্রতিশোধের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে ইরানের কট্টরপন্থি শাসকগোষ্ঠীকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান সমর্থিত বেশ কয়েকটি ভারী অস্ত্র বহনকারী সশস্ত্রগোষ্ঠীর নেটওয়ার্ক রয়েছে। এ নেটওয়ার্ক ‘অ্যাক্সিস অব রেজিসন্ট্যান্স’ নামে পরিচিত।
হিজবুল্লাহ ছাড়াও ইয়েমেনের হুথি এবং সিরিয়া ও ইরাকে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দেয় ইরান। ইরান এই গোষ্ঠীগুলোকে ইসরায়েল এবং অঞ্চলের মার্কিন ঘাঁটিগুলোর ওপর আক্রমণ বাড়ানোর আহ্বান জানাতে পারে। তবে ইরান যে প্রক্রিয়াই পছন্দ করুক নো কেন, সেটি একটি যুদ্ধ শুরু করার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ তারা কখনোই যুদ্ধে জয়ী হবে সে আশা করে না।
ইসরায়েল কী করবে?
এই হত্যাকাণ্ডের আগে যদি কারও কোনো সন্দেহ হয়ে থাকে তাহলে তা আর থাকবে না। ইসরায়েল স্পষ্টভাবে তার সামরিক অভিযান বন্ধ করার কোনো ইচ্ছা দেখাচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র এমন ১২টি দেশের ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবেও তাদের মধ্যে থামার কোনো লক্ষণ নেই।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী মনে করছে তারা হিজবুল্লাহকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। তাই ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি সম্পূর্ণভাবে দূর না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখবে। আপাতদৃষ্টিতে হিজবুল্লাহ আত্মসমর্পণ করবে না। তাছাড়া স্থলভাগে সেনা না পাঠিয়ে হিজবুল্লাহর হুমকি দূর করাও ইসরালের পক্ষে সম্ভব না।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিই) উদ্দেশ্যমূলকভাবে এরই মধ্যে সীমান্তের কাছাকাছি তাদের বাহিনীর প্রশিক্ষণের ভিডিও প্রকাশ করেছে। কিন্তু হিজবুল্লাহ গত ১৮ বছর ধরে পরবর্তী যুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। নাসারাল্লার মৃত্যুর আগে শেষ বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘‘দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের আক্রমণ হবে তার ভাষ্যমতে ‘একটি ঐতিহাসিক সুযোগ’।’’
আইডিইর জন্য লেবাননে প্রবেশ করা তুলনামূলকভাবে সহজ হতে পারে। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে আসা গাজা সংকটের মতোই মাসের পর মাস নিয়ে নিতে পারে।
লেবাননে স্থল অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল সোমবার রাতে লেবাননে প্রবেশের দাবি করে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, এই অভিযান ‘সীমিত, স্থানীয় এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক’, যা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে। এদিকে, এই আক্রমণ হিজবুল্লাহসহ ইরান-সমর্থিত অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাতের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এই স্থল অভিযানে মার্কিন সমর্থন বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশ যেখানে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ সমর্থন করেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সঙ্গে আলোচনায় ইসরায়েলের স্থল আক্রমণকে সমর্থন করে বলেছেন, লেবাননের দক্ষিণ সীমান্ত থেকে হিজবুল্লাহর অস্ত্র মজুত ও আক্রমণের উপকরণ সরানো দরকার।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
লেবাননে ইসরায়েলে স্থল অভিযানে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং জাপান। আমিরাত লেবাননের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান লেবাননের জনগণের জন্য জরুরি ত্রাণ হিসেবে ১০ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুলাজিজ আল-খুলাইফি এক্স-এ (সাবেক টুইটার) বলেছেন, লেবাননে আক্রমণ আরও বিপর্যয় ডেকে আনবে। তিনি লেবাননের জনগণকে সমর্থন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটি একটি নৈতিক দায়িত্ব। জাপানও ইসরায়েলি আক্রমণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সংঘাতের অবিলম্বে সমাপ্তির আহ্বান জানিয়েছে। জাপান সরকার লেবাননে তাদের ৫০ জন নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যও পদক্ষেপ নিয়েছে।
লেবাননের মানবিক সংকট
লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেছেন, তার দেশ ইতিহাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক সময় পার করছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরায়েলি আক্রমণে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতিসংঘের সহায়তা চেয়েছেন এই লেবানিজ নেতা। জাতিসংঘ এরই মধ্যে লেবাননের জন্য ৪২ কোটি ৬০ লাখ ডলারের জরুরি সহায়তা তহবিল ঘোষণা করেছে। তবে সংস্থাটির মানবিক সমন্বয়কারী ইমরান রিজা বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধ না হলে কোনো পরিমাণ সহায়তাই যথেষ্ট হবে না।
ইসরায়েলের ‘নর্দান অ্যারোস’ অভিযান
ইসরায়েল ‘নর্দান অ্যারোস’ নামে এই স্থল অভিযান শুরু করেছে, যা ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর লেবাননে প্রথম বড় ধরনের সামরিক অভিযান। ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, এই আক্রমণের উদ্দেশ্য হিজবুল্লাহকে লিটানি নদীর উত্তরে ঠেলে দেওয়া, যা ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। ইসরায়েল জাতিসংঘের রেজুলেশন ১৭০১ মেনে চলার কথা বললেও, আক্রমণের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
স্থল অভিযানের বিষয়টি জানত যুক্তরাষ্ট্র
লেবাননে স্থল অভিযান শুরুর বিষয়টি আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছিল ইসরায়েল। সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সাংবাদিকদের বলেন, ইসরায়েল জানিয়েছে, লেবাননে নির্দিষ্ট এলাকায় সীমিত পরিসরে স্থল অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে তারা। ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে জানানোর পরপরই, ইসরায়েলের সম্ভাব্য স্থল অভিযানের কথা সংবাদমাধ্যমকে জানান মার্কিন কর্মকর্তারা।
ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী লেবাননের দক্ষিণের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ‘ছোট পরিসরে’ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছে। এর বিষয়ে ইসরায়েল আমাদের অবহিত করেছে। এখন এটা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে ছোট পরিসরে অভিযান চালানো হয়েছে।’
লেবাননের ভূখণ্ডে ইসরায়েল স্থলবাহিনী পাঠাতে যাচ্ছে, সোমবার থেকেই এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন একজন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘ইসরায়েলি সেনাদের অবস্থান থেকে বোঝা যায় যে তারা লেবাননের স্থলভাগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।’
সোমবার রাত থেকেই দক্ষিণ লেবাননের সীমান্ত–সংলগ্ন গ্রামগুলোয় ইরান–সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। একই সঙ্গে সেখানে স্থলবাহিনী প্রবেশ করেছে বলে নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর আগে দুই সপ্তাহ ধরে লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে আসছিল ইসরায়েলি বাহিনী। গত শুক্রবার বৈরুতের দক্ষিণে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহ।
তেল আবিবে হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
লেবাননের ইরানপন্থি সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘খায়বার’নামের একাধিক অভিযানের অংশ হিসেবে বেসামরিক জনগণের ওপর হামলার প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে সংগঠনটি জানায়, ‘ও নাসারাল্লাহ! আমরা তোমার সেবায় আছি স্লোগান দিয়ে ইসরায়েলি গোয়েন্দা ইউনিট ৮২০০ এবং গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের তেল আবিবের উপকণ্ঠে অবস্থিত গ্লিলট ঘাঁটিতে একাধিক ‘ফাদি-৪’ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, তেল আবিবে রকেটের টুকরো পড়ে কমপক্ষে দুই ইসরায়েলি নাগরিক মাঝারি আঘাত পেয়েছে। এছাড়া, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা আকাশে বাধাপ্রাপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রের টুকরো তেল আবিবের উত্তরে রাস্তায় পড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর রকেট হামলার কারণে লক্ষাধিক ইসরায়েলি নাগরিক নিরাপদ আশ্রয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত ও বাধা দেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় হেলেনের তাণ্ডবে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯১ জনে পৌঁছেছে। শক্তিশালী এই ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নর্থ ক্যারোলিনা। সেখানে ৩০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। ফ্লোরিডার বিগ বেন্ড এলাকায় ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার বেগে গত বৃহস্পতিবার রাতে আঘাত হানে ৪ ক্যাটাগরির ঘূর্ণিঝড় হেলেন। এরপর সেটি জর্জিয়া, ক্যারোলিনা এবং টেনেসির দিকে অগ্রসর হয়। এর প্রভাবে সেসব অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিতে নদী-খাল প্লাবিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, নর্থ ক্যারোলিনা, সাউথ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া এবং টেনেসি- এই পাঁচটি রাজ্যের অনেক শহর প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টিতে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে এবং লাখ লাখ মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির প্রশাসক ডিন ক্রিসওয়েল বলেন, অসংখ্য বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। পানির লাইন, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন রুটসহ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, পাঁচটি রাজ্যজুড়ে উদ্ধারকাজ চালানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, ঝড়-বন্যায় নর্থ ক্যারোলিনায় ৩৭ জন, সাউথ ক্যারোলিনায় ২৫ জন, জর্জিয়ায় ১৭ জন, ফ্লোরিডায় ১১ জন এবং ভার্জিনিয়ায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
বুনকোম্ব কাউন্টির শেরিফ কুয়েন্টিন মিলার বলেছেন, আমরা আরও খারাপ খবর পাচ্ছি। আমাদের কাউন্টিতে এখন পর্যন্ত ৩০ জনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে এখনো বন্যা সতর্কতা জারি রয়েছে। জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, মঙ্গলবারের আগে আবহাওয়ার উন্নতির কোনো সম্ভাবনা নেই।
এদিকে, প্রায় ২৫ লাখ বাড়ি বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আবারো সচল করতে কয়েকদিন পর্যন্ত লেগে যাবে বলে সতর্ক করেছেন কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুজনেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের পরিকল্পনা করছেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় সহায়তা বৃদ্ধি এবং দুর্গম এলাকায় সাহায্য পৌঁছানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
মুডি’স অ্যানালিটিক্সের অনুমান, এই ঘূর্ণিঝড়ে সম্পত্তির ক্ষতির পরিমাণ ১৫০ থেকে ২৬০ কোটি মার্কিন ডলার হতে পারে। আকুওয়েদারের হিসাব মতে, হ্যারিকেন হেলেনের আঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৯৫০ থেকে ১১শ কোটি ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্ববর্তী রাজ্য সিকিম ও প্রতিবেশী দেশ নেপালে এক নাগাড়ে বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। সে কারণে এরই মধ্যে গজোলডোবা বাঁধ থেকে পানি ছাড়া হয়েছে। পানির স্তর বেড়েছে উত্তরবঙ্গের একাধিক নদীতেও। নদীর পাড় উপচে বেশ কিছু অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। দুর্গাপূজার আগে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় যে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য আবারও কেন্দ্রীয় সরকারকে দুষলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। বন্যা পরিস্থিতি দেখতে রাজ্যের উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।
কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, কেউ খবর নেয়নি। কেউ এক পয়সাও দেয়নি। একমাত্র আমরাই বন্যার টাকা থেকে বঞ্চিত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী অভিযোগ করে বলেন, ডিভিসি কোনো সর্তকতা ছাড়াই ইচ্ছামতো পানি ছাড়ে। ফারাক্কা ব্যারেজে ঠিকমতো ড্রেজিং করে না কেন্দ্র। তাই পলি জমেছে। ফলে ওই ব্যারেজে জলধারণের ক্ষমতা কমছে।
পশ্চিমবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতির জন্য নেপালকে দায়ী করে মমতা ব্যানার্জী বলেন, নেপাল যে কোশি নদীর পানি ছেড়েছে সেই পানি বিহার হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকছে। এর ফলে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে শুরু করে ইটাহারের কিছু জায়গায় বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ কারণে রাত ১২টা থেকে পুলিশ মাইকিং করেছে এবং সবাইকে সুরক্ষিত জায়গায় নিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বিহারেও বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নেপালে পানিতে বিহারও ভাসবে এবং পশ্চিমবঙ্গও ভাসবে। ফারাক্কায় ড্রেজিং করে না আজ ২০ বছর হয়ে গেছে। যদি ফারাক্কায় এই পানি ধরে রাখতে পারত, তাহলে মালদহে বন্যা হতো না।
লেবাননজুড়ে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। সর্বশেষ হামলায় আরও শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এ হামলায় আহত হয়েছেন আরও সাড়ে তিন শতাধিক মানুষ। এদিকে লেবাননের রাজনৈতিক নেতারা ইসরায়েলি এই হামলা ও হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ বলে উল্লেখ করেছেন। আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অবিরাম হামলার কারণে আরও একটি রক্তাক্ত দিনের সাক্ষী হয়েছে লেবানন। দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে সারা দেশে কমপক্ষে ১০৫ জন নিহত ও আরও ৩৫৯ জন আহত হয়েছেন। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দক্ষিণ সিডনের কাছে আইন আল-দেলবে একটি হামলায় দুটি আবাসিক ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে ও এতে ৩২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ঘটনাস্থলে আশ্রয় নেওয়া অনেক বাস্তুচ্যুত পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন।
তবে ইসরায়েল বলেছে, তারা হিজবুল্লাহর কয়েক ডজন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে। তবে লেবাননের কর্মকর্তারা বলেছেন, দক্ষিণ লেবানন, বেকা, বালবেক-হারমেল গভর্নরেট এবং বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে বাড়িঘরের পাশাপাশি অন্যান্য ভবনগুলোতে হামলা করা হয়েছে।
এদিকে সোমবার মধ্যরাতে স্থানীয় মিডিয়া আউটলেটগুলো বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে কোলা ব্রিজ এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলার খবর দিয়েছে। গত বছর সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে শহর সীমানার মধ্যে এটিই ইসরায়েলের প্রথম আক্রমণ ও সম্ভবত এটিকে সংঘাতের আরেক ধাপ বৃদ্ধি হিসাবে দেখা হবে।
লেবাননের রাজধানীকে আগে ইসরায়েলি আক্রমণ থেকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে দেখা হতো। তবে সরাসরি বৈরুত শহরে বোমা হামলার ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে, দেশটির অন্যান্য অংশের মতো রাজধানীও ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এর আগে শুক্রবার বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে বিমান হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েল। এরপরে রোববার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক কর্মকর্তা শেখ নাবিল কাউককেও হত্যা করে।
‘আমরা প্রস্তুত, দীর্ঘ যুদ্ধেও বিজয়ী হবো’
ইরান-সমর্থিত লেবানিজ সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত এবং তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান লড়াই চালিয়ে যাবে। আজ সোমবার এ ঘোষণা দিয়েছেন হিজবুল্লাহর উপপ্রধান নাইম কাসেম। গোষ্ঠীটির শীর্ষ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ ইসরায়েলি হামলায় নিহত হওয়ার পর এই প্রথমবার জনসম্মুখে এলেন কাসেম। ভাষণে তিনি বলেন, হিজবুল্লাহ তাদের প্রয়াত প্রধানের পরিকল্পনা অনুযায়ী বিকল্প কৌশল গ্রহণ করছে এবং শিগগির নতুন নেতা নির্বাচন করা হবে।
প্রয়াত নেতার স্মরণে শোক প্রকাশ করে নাইম কাসেম বলেন, আমরা একজন প্রিয় ভাই ও নেতাকে হারিয়েছি, যিনি ধর্মযোদ্ধাদের প্রতি গভীর ভালোবাসা পোষণ করতেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে।
হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে কাসেম জানান, গোষ্ঠীটি ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ১৫০ কিলোমিটার গভীরে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, হিজবুল্লাহর সামরিক কার্যক্রম আগের মতোই চালু রয়েছে এবং প্রয়াত প্রধান হাসান নাসারাল্লাহর মৃত্যুর পরও এই তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েলের সম্ভাব্য স্থল অভিযান সম্পর্কে তিনি বলেন, হিজবুল্লাহ যেকোনো স্থল অভিযান মোকাবিলায় প্রস্তুত। দীর্ঘ যুদ্ধের জন্যও মানসিকভাবে তারা প্রস্তুত। নতুন নেতৃত্ব প্রসঙ্গে কাসেম বলেন, আমরা শিগগির নতুন নেতা নির্বাচন করব।
গোষ্ঠীটির মূল লক্ষ্য সম্পর্কে হিজবুল্লাহর উপপ্রধান বলেন, গাজার প্রতি সমর্থন এবং লেবাননের সুরক্ষা অব্যাহত থাকবে। বক্তৃতার শেষাংশে তিনি ২০০৬ সালের ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘাতের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা ২০০৬ সালের মতোই বিজয়ী হবো।
ইসরায়েলে লেবাননের রকেট বৃষ্টি!
উত্তর ইসরায়েলে আজ সোমবার সকাল থেকে একের পর এক রকেট হামলা চালিয়ে যাচ্ছে লেবানন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী-আইডিএফ জানিয়েছে, সোমবার সকাল থেকেই হিজবুল্লাহ রকেট বৃষ্টি শুরু করেছে উত্তর ইসরায়েলে। এর মধ্যে উত্তর গোলান মালভূমিতে একসঙ্গে গিয়ে ১৫টি রকেট আঘাত হানে। তারপরে দক্ষিণ গোলান এবং আপার গ্যালিলে ২০টি রকেট গিয়ে আছড়ে পড়ে।
আইডিএফ আরও জানায়, কিছু রকেট বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিহত করা হয়েছে, বাকিগুলো খোলা জায়গায় আঘাত করেছে। তবে এতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি এবং হতাহত হয়েছে ইসরায়েল তা জানায়নি। অবশ্য, কখনোই ইসরায়েল তা জানায় না।
এর আগে ইসরায়েল-মার্কিন নির্মিত এফ-৩৫ জঙ্গীবিমানের সাহায্যে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণে দাহিয়েহ এলাকায় ভয়াবহ হামলা চালিয়ে ছয়টি বেসামরিক ভবন সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেয়ার পর হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা এই হামলা চালায়। হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা এক ঝাঁক ফাদি-৩ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সোমবার সকালে রামাত ডেভিড সামরিক বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। এর পাশাপাশি পশ্চিম গ্যালিলি অঞ্চলের কাবরি ইহুদি বসতিতেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা নিশ্চিত করেছে হিজবুল্লাহ। পাশাপাশি ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী নাহারিয়া শহরেও ফাদি-১ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ শুক্রবার রাতে প্রায় ৭৫টি রকেট ছুড়েছে। এর মধ্যে ইসরায়েলের সাফেদ শহরে অন্তত ত্রিশটি রকেট আঘাত হানে। এতে শহরের কয়েকটি এলাকায় বড় রকমের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ইসরাইলি বাহিনীর স্বীকার করেছে।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার পর পুরো এলাকায় এখন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
তোমরা আমাদের ধ্বংস করতে পারবে না-ইসরায়েলের উদ্দেশে এমন বার্তায় দিয়েছেন লেবাননবাসী। দক্ষিণ লেবাননের বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা আয়মেন বলেন, চলমান ইসরায়েলি হামলার আলোকে ভবিষ্যতে দেশটির কী হবে তা আমরা কল্পনা করতে পারছি না। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, লেবাননের ভবিষ্যৎ আল্লাহর হাতে। আমাদের সামনে কিছুই পরিষ্কার নয়। আমাদের দিকে তাকাও, আমরা রাস্তায় ঘুমাচ্ছি। আমাদের জীবন এখন এভাবেই চলছে এবং আমরা এটি আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।
বৈরুতের বাসিন্দা ফ্রাঙ্কোইস আজোরি বলেন, লেবাননের জনগণ তাদের দেশ ত্যাগ করবে না। ইসরায়েলের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা আমাদের ধ্বংস করতে পারবে না, তোমরা যাই করো না কেন, তোমরা যতই বোমা ফেলো না কেন, তোমরা যতই মানুষকে বাস্তুচ্যুত করো- আমরা এখানেই থাকব। আমরা ছাড়ব না। এটা আমাদের দেশ এবং আমরা থাকব। তোমরা যা করতে চাও তাই করো।
এদিকে গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে মোট ১ হাজার ৬৪০ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ১০৪ জন শিশু এবং ১৯৪ জন নারী রয়েছেন। তবে গত দুই সপ্তাহে ইসরায়েলি হামলাতেই বেশির ভাগই লেবাননবাসী নিহত হয়েছেন।
হিজবুল্লাহর আরেক নেতাকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসারাল্লাহর পর এবার লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠনটির আরেক নেতাকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। ওই নেতার নাম নাবিল কাওউক। গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে এ দাবি করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। ইসরায়েলি বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নাবিল কাওউক হিজবুল্লাহর নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন। এ ছাড়া সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। গতকাল যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহর শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন নাবিল কাওউক। ইসরায়েল ও দেশটির নাগরিকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন তিনি। তবে নাবিলের হত্যা নিয়ে ইসরায়েলের দাবির বিষয়ে এখনো মুখ খোলেনি হিজবুল্লাহ।
এর আগে গত শুক্রবার রাতভর লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে নিহত হন হাসান নাসারাল্লাহ। তিনি তিন দশকের বেশি সময় ধরে সংগঠনটির নেতৃত্বে ছিলেন। গত বছর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে নিয়মিত পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল।
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে লেবাননে হামলা বাড়ায় ইসরায়েল। হামলায় এখন পর্যন্ত দেশটিতে নারী, শিশুসহ প্রায় ৮০০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে বহু মানুষ। এ ছাড়া দেশটিতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে বলে জানিয়েছে লেবানন সরকার।
ইসরায়েলকে নাসারাল্লাহর অবস্থান জানিয়েছে ইরানি গুপ্তচর!
ইসরায়েলের বিমান হামলায় গত শুক্রবার নিহত হন ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসারাল্লাহ। এই বিমান হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলকে হাসান নাসারাল্লাহর অবস্থান সম্পর্কে গোপন তথ্য জানিয়ে দেয় এক ইরানি গুপ্তচর। এরপরই তাকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়। এই খবর জানিয়েছে ফরাসি সংবাদমাধ্যম লে প্যারিসিয়েন।
অভিযুক্ত ওই ইরানি গুপ্তচর ইসরায়েলকে জানায়, শুক্রবার বৈরুতে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সদর দপ্তরে উচ্চপদস্থ কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন হাসান নাসারাল্লাহ। তিনি যখন মাটির নিচে অবস্থিত সদর দপ্তরে প্রবেশ করেন তার কিছুক্ষণ পরই বিমান হামলা চালানো হয়। এতে ব্যবহার করা হয় বাঙ্কার বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। যা হিজবুল্লাহর সদর দপ্তর গুঁড়িয়ে দেয়। এতে নিহত হন হাসান নাসরাল্লাহ।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। গোপন তথ্য সংগ্রহের জন্য তারা বিভিন্নভাবে গুপ্তচর নিয়োগ করে। গোয়েন্দাদের নতুন দলটি তৈরি করা হয় সেনাবাহিনীর মধ্যে থেকে। যেন সেনা এবং বিমান বাহিনীর কাছে তারা সেগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌঁছে দিতে পারে।
পাশাপাশি ইসরায়েলি সিগন্যাল গোয়েন্দা এজেন্সি ইউনিট অনেক অত্যাধুনিক সাইবার টুলস তৈরি করে। যেগুলো দিয়ে খুব সহজেই হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য ডিভাইসে আঁড়ি পাতা যায়। সম্প্রতি তারা প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যেসব সাফল্য পেয়েছে সেগুলো এসব গোয়েন্দা কার্যক্রমের কল্যাণেই এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হাসান হাসান নাসারাল্লাহকে হারানোর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে, গোষ্ঠীটি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ার সম্ভাবনার পাশাপাশি স্বল্প মেয়াদে এর রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশলকে পরিবর্তন করবে। তবে ইসরায়েল বিরোধী এই সংগঠনটি হুট থেকে যাবে না। কারণ তারা ইতোমধ্যেই লড়াই অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। দলটির এখনো হাজার হাজার যোদ্ধা আছে। এদের অনেকেরই সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে এবং তারা প্রতিশোধ নেওয়ার দাবি করেছে।
সংগঠনটির এখনো যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যার অনেকগুলোই দূরপাল্লার। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলার মতো অস্ত্র আছে, যা তেল আবিব ও অন্য শহরগুলোতে পৌঁছাতে পারে।