ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত ঐতিহাসিক নিদর্শন ভারতের তাজমহলের প্রধান গম্বুজ ফুটো হয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে বলে জানা গেছে। গত তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়ে গেছে তাজমহল প্রাঙ্গণের বাগান। বার্তা সংস্থা পিটিআই এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া তাজমহল প্রাঙ্গণের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভিডিওতে দেখা গেছে, স্মৃতিস্তম্ভের একটি বাগান বৃষ্টির পানিতে থই থই করছে।
আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) আগ্রা সার্কেলের সুপারিনটেনডিং চিফ রাজকুমার প্যাটেল পিটিআইকে বলেন, ‘আমরা তাজমহলের মূল গম্বুজে একটি ফুটো দেখেছি। ক্ষয় হয়ে যাওয়ায় এই ফুটোর সৃষ্টি হয়েছে। তবে এতে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, প্রথম বিষয়টি তাজমহলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তার নজর আসে। তিনি তাজমহলের মূল গম্বুজ বা ডোম, (যেখানে সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মুমতাজের সমাধি রয়েছে) তার ছাদ ভেজা লক্ষ্য করেন। তিনি অনুমান করেন, হয়তো ছাদে সূক্ষ্ম ফাটল ধরেছে। সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি তাজমহল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ায় (এএসআই) খবর দেওয়া হয়।
মূলত তাজমহলের রক্ষণাবেক্ষণ করে এএসআই। ইতোমধ্যে তারা এ বিষয়ে কমিটি গঠন করেছে বিষয়টির ওপরে নজরদারি করার জন্য।
আগ্রা সার্কেলের এএসআই-এর সুপারেনটেন্ডিং আর্কিওলজিস্ট রাজকুমার প্যাটেল জানান, ‘প্রথমে প্রধান গম্বুজের ছাদ ফাটল ধরেছে বলে মনে করা হয়েছিল। তবে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ছোট একটি ফুটো দিয়ে কোনোভাবে ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ছে। মূল অংশে কোনো ক্ষতি হয়নি। ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে আমরা পরীক্ষা করেছি। টানা জল পড়ছে নাকি কখনো কখনো, তাও দেখা হচ্ছে।’
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, গত তিন দিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে আগ্রায়। এ কারণে শহরজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বন্যায় তলিয়ে গেছে একটি জাতীয় সড়ক, ফসলি জমি ও আশপাশের উঁচু এলাকা।
তাজমহলকে বিশ্বঐতিহ্য ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। এই দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভটি ১৬৩২ থেকে ১৬৫৩ সালে মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজ মহলের সমাধির ওপর নির্মাণ করেন। সাদা মার্বেলের কমপ্লেক্সে একটি বিশাল গম্বুজ, মিনার, বাগান ও একটি প্রতিফলিত পুল রয়েছে। স্থাপনাটিতে পারস্য, ইসলামিক ও ভারতীয় শৈলীর মিশ্রণ ঘটেছে। এটিকে মুঘল স্থাপত্যের একটি অনন্য কৃর্তি। সারা বিশ্ব থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটকরা এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন।
রাশিয়ায় ক্রু ও যাত্রীসহ ৪৮ আরোহীকে নিয়ে এএন-২৪ নামের ৫০ বছর পুরোনো বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় সব আরোহীর মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দেশটির আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি অরলভ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বিমানে থাকা ৪৮ জন আরোহীর সবাই নিহত হয়েছেন। তিনি ঘটনাটিকে একটি ‘ভয়াবহ ট্র্যাজেডি’ হিসেবে উল্লেখ করে আমুর অঞ্চলে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন।
দেশটির স্থানীয় জরুরি পরিষেবা মন্ত্রণালয় তথ্যনুযায়ী, গতকাল (বৃহস্পতিবার) দেশটির দূর প্রাচ্যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। বিমানে ৬ শিশুসহ ৪২ যাত্রী ও ৬ জন বিমান ক্র ছিলেন।
দুর্ঘটনার পর গভর্নরের দপ্তর থেকে ৪৯ জন আরোহীর থাকার কথা বলা হলেও পরে সেটি সংশোধন করে ৪৮ করা হয়। তবে সংখ্যাগত ভিন্নতার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হয়নি।
মন্ত্রণালয় জানায়, দূর প্রাচ্যের তিন্দা শহরের উদ্দেশে রওনা হওয়া বিমানটি রাডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এর ধ্বংসাবশেষ একটি পাহাড়ি জায়গায় খুঁজে পাওয়া যায়। দুর্ঘটনার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে রাশিয়ার ইন্টারফ্যাক্স বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, বিধ্বস্তের সময় ওই এলাকায় খারাপ আবহাওয়া বিরাজ করছিল।
প্রায় ৫০ বছরের পুরোনো সোভিয়েত আমলের বিমানটি খাবারোভস্ক থেকে যাত্রা শুরু করে ব্লাগোভেশচেনস্কে পৌঁছে পরে তিন্দার দিকে যাচ্ছিল। রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত ছবিতে দেখা যায়, বিমানের ধ্বংসাবশেষ ঘন জঙ্গলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আছে এবং সেখান থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছিল।
দূরপ্রাচ্যের পরিবহন প্রসিকিউটরের অফিস জানিয়েছে, দুর্ঘটনাস্থলটি তিন্দা থেকে ১৫ কিলোমিটার (৯ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত।
একটি অনলাইন বিবৃতিতে অফিসটি জানিয়েছে, বিমানটি অবতরণের জন্য দুইবার চেষ্টা করে। দ্বিতীয়বার অবতরণের চেষ্টার পর এটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়।
স্থানীয় জরুরি সেবা বিষয়কমন্ত্রী বলেন, সাইবেরিয়াভিত্তিক আনগারা নামের একটি এয়ারলাইন্স বিমানটি পরিচালনা করতো। বিমানটির নাম এএন-২৪।
‘উড়ন্ত ট্রাক্টর’ নামে পরিচিত এএন-২৪ বিমানগুলোকে রাশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হলেও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব পুরোনো বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ সংগ্রহ ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।
নতুন লাদোগা বিমানের ব্যাপক উৎপাদন ২০২৭ সালের আগে শুরু হবে না বলে জানা গেছে। এই অবস্থায় রাশিয়ার গ্রামীণ ও দুর্গম অঞ্চলে পরিবহনের জন্য এখনও পুরোনো ‘উড়ন্ত ট্রাক্টর’-এর ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে।
বিমানের বয়স ৫০!
রাশিয়ানপ্লেইনস নামের একটি সংস্থা জানিয়েছে, আনগারা এয়ারলাইন্স মূলত রাশিয়ার পূর্বাঞ্চল ও সাইবেরিয়ার দুর্গম এলাকায় ফ্লাইট পরিচালনা করে। তারা বর্তমানে ১০টি এএন-২৪ বিমান পরিচালনা করে, যেগুলো ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে তৈরি।
সোভিয়েত আমলে মোট ১ হাজার ৩৪০টি এএন-২৪ তৈরি হয়। রাশিয়ানপ্লেইনসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এর মধ্যে ৮৮টি দুর্ঘটনায় ধ্বংস হয়েছে, ৬৫টি গুরুতর ঘটনার শিকার হয়েছে যাত্রী হতাহতের ঘটনা ছাড়াই এবং বর্তমানে মাত্র ৭৫টি বিমান চালু রয়েছে। বিমানগুলোর বয়স বহুদিন ধরেই উদ্বেগের বিষয়। ২০১১ সালে সাইবেরিয়ায় এক এএন-২৪ বিমান দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত হলে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ এই বিমানগুলো গ্রাউন্ড (পরিচালনা বন্ধ) করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
বর্তমান পরিস্থিতি এই বিমানের পরিচালনা ও ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্র: বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, তার দেশ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ ঘোষণা দেন।
ম্যাখোঁর এই ঘোষণায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
প্যারিস থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
এএফপির এক হিসাব অনুযায়ী, কমপক্ষে ১৪২টি দেশ এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে বা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তবে ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ‘এটি একটি বেপরোয়া সিদ্ধান্ত যা কেবল হামাসের প্রচারণায় সাহায্য করবে’।
তিনি এক্স-এ এক পোস্টে লিখেছেন ‘এটি ৭ই অক্টোবরের ভুক্তভোগীদের মুখে চপেটাঘাত। যা ২০২৩ সালে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধের কারণ হিসেবে হামাসের হামলার কথাকে বুঝিয়েছে।
প্রায় দুই বছর আগে হামাসের হামলার জবাবে ইসরাইল গাজায় বোমাবর্ষণ শুরু করার পর থেকে বেশ কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
ম্যাক্রোঁর এই ঘোষণা ইসরাইলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘এটি ‘সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত করছে’ এবং ইসরাইলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি তৈরি করছে।’
নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেন, এ সিদ্ধান্তে ‘গাজার মতো আরেকটি ইরানপন্থি শক্তি গড়ে ওঠার ঝুঁকি আছে যা ইসরাইলের পাশে শান্তিতে বসবাসের জন্য নয়, বরং ইসরাইলকে ধ্বংস করার জন্য ব্যবহার হবে।’
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হুসেইন আল-শেখ এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এটি দেখায় যে ফ্রান্স আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার অধিকারকে সমর্থন করে।’
হামাস ম্যাখোঁর ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, ‘এটি সঠিক পথে এক ইতিবাচক পদক্ষেপ, যা আমাদের নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায্য অধিকার ও স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার দাবিকে সমর্থন করে।’
হামাস আরও বলেছে, ‘বিশ্বের সব দেশকে, বিশেষ করে ইউরোপের যেসব দেশ এখনো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি তাদের ফ্রান্সের পথ অনুসরণ করার আহ্বান জানাই।’
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদর দফতর পরিদর্শনকালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের মধ্যে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা হয়।
বৃহস্পতিবার এই পরিদর্শনকালে ট্রাম্প ফেডের সুদের হার না কমানোয় পাওয়েলকে দায়ী করে তাকে অপসারণের হুমকি দেন। যদিও আইনত তার এমন ক্ষমতা আছে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ফেড সদর দপ্তরের সংস্কার ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে ট্রাম্প তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ফেড ভবন পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের সামনে এই দুজনের মধ্যে সংক্ষিপ্ত কিন্তু বিব্রতকর বাক্যবিনিময় ঘটে। সংস্কারের খরচ ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার বলে ট্রাম্প দাবি করলে পাওয়েল তা সংশোধন করে জানান প্রকৃত ব্যয় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
ট্রাম্প যে কাগজপত্র দেখান, তাতে ‘উইলিয়াম ম্যাকচেসনি মার্টিন জুনিয়র বিল্ডিং’য়ের সংস্কার ব্যয়ও যুক্ত ছিল।
যদিও সেটি প্রকল্পের অংশ নয়। পাওয়েল স্পষ্ট বলেন, আপনি মার্টিন ভবনের খরচও ধরেছেন, এটি প্রকল্পে নেই।
ট্রাম্প পাল্টা বলেন, সেটিও সামগ্রিক প্রকল্পের অংশ। পাওয়েল জবাব দেন, না, ওটা পাঁচ বছর আগেই শেষ হয়েছে। এটা নতুন নয়। টেলিভিশন লাইভে বিবাদ চলাকালীন উভয়ের মধ্যে স্পষ্ট উত্তেজনা দেখা যায়।
এই সফর এমন এক সময়ে হয়েছে যখন ট্রাম্প তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে জেফরি এপস্টেইনের মামলা বন্ধ করা নিয়ে সৃষ্টি হওয়া সংকট থেকে মনোযোগ সরাতে মরিয়া।
ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, এ বছরের বসন্তে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন, এপস্টেইনের নথিপত্রে তার নামও রয়েছে। ২০১৯ সালে কারাগারে আত্মহত্যা করার আগে, এপস্টেইনের বিরুদ্ধে ধনবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের যৌন কাজে বাধ্য করার অভিযোগ ছিল।
এপস্টেইনের এ খবরকে চাপা দিতে ট্রাম্প এখন নানা টার্গেটে আঘাত করছেন। ডেমোক্রেটিক পূর্বসূরি থেকে শুরু করে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদেরও ছাড়ছেন না।
তিনি বুধবার সুদের হার নিয়ে জেরোম পাওয়েলকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেন এবং বৃহস্পতিবারের সফরের সময় ১০ বারেরও বেশি ঋণ গ্রহণের উচ্চ খরচ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যত ভালো করছি, আরও ভালো করতাম যদি সুদের হার কম হতো।’
ফেডারেল রিজার্ভে প্রেসিডেন্টের সফর অতীতে দেখা গেছে, ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট, জেরাল্ড ফোর্ড ও জর্জ ডব্লিউ. বুশ সফর করেছিলেন। তবে এবারের ঘটনাটি বেশ বিরল।
ট্রাম্প মাসের পর মাস ধরে পাওয়েলের সমালোচনা করে আসছেন, কারণ পাওয়েল সুদের হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশে রেখেছেন, যদিও গত বছর জো বাইডেনের শাসনে এটি তিনবার কমানো হয়েছিল।
পাওয়েল বলেছেন, ট্রাম্পের নতুন নতুন আমদানি শুল্কের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছেন তিনি। যা মুদ্রাস্ফীতি বাড়াতে পারে।
কিন্তু ট্রাম্প তাকে ‘মূর্খ’ ও ‘পরাজিত’ বলে কটাক্ষ করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন যে পাওয়েল দেশের অর্থনীতিকে পিছিয়ে দিচ্ছেন। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি কিছুটা নরম সুরে বলেন, তাদের মধ্যে ‘অর্থনীতি নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা’ হয়েছে এবং কোনো উত্তেজনা ছিল না।’
ট্রাম্প বলেন, ‘একটু দেরি হয়ে গেছে বটে, তবে আমি বিশ্বাস করি তিনি সঠিক কাজটি করবেন।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত ৮৮ বছরের পুরনো ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান কার্যালয় ও পাশের একটি ভবনের সংস্কার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ায় বিষয়টি নজরে এসেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। প্রাথমিকভাবে ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের কথা থাকলেও পরে তা ৬০০ মিলিয়ন ডলার বেড়ে গেছে।
এই ব্যয়বৃদ্ধির একটি বড় কারণ ভবনের নিরাপত্তা যেমন বিস্ফোরণ প্রতিরোধী জানালা ও ভবন ধ্বংস ঠেকানোর ব্যবস্থা।
বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ স্বাধীনভাবে নীতিনির্ধারণ করে এবং এর বোর্ড সদস্যরা সাধারণত উভয় দলীয় প্রেসিডেন্টদের অধীনে দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের পাওয়েলকে বরখাস্তের ক্ষমতা নেই, বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক একটি সিদ্ধান্তের পর, যা ফেডের ওপর প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রণ সীমিত করে দিয়েছে।
রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় আমুরের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় বৃহস্পতিবার প্রায় ৫০ আরোহী নিয়ে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে।
তাৎক্ষণিকভাবে এই ঘটনায় বিমানটির কোন আরোহীর বেঁচে থাকার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
মস্কো থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ কথা জানায়।
আঙ্গারা এয়ারলাইন্সের আন্তোনভ-২৪ বিমানটি ব্লাগোভেশচেনস্ক শহর থেকে টিন্ডা শহরের দিকে যাচ্ছিল। স্থানীয় সময় দুপুর ১:০০ টার দিকে রাডার থেকে বিমানটি অদৃশ্য হয়ে যায়। বিমানটির জোড়া প্রোপেলার ছিল।
পরে একটি উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার টিন্ডা থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার (১০ মাইল) দূরে একটি জঙ্গলময় পাহাড়ি ঢালে বিমানটির জ্বলন্ত অংশ দেখতে পায়।
স্থানীয় উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, হেলিকপ্টারে থাকা উদ্ধারকারীরা বিমানটির কোন আরোহীর বেঁচে থাকার প্রমাণ পাননি।
তারা আরো জানায়, ‘এই মুহূর্তে ২৫ জন ও সরঞ্জামসহ পাঁচটি ইউনিট পাঠানো হয়েছে এবং ক্রুসহ চারটি বিমান প্রস্তুত রয়েছে।’
একজন উদ্ধারকারী রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসকে জানিয়েছেন, বনভূমির কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই অঞ্চলের গভর্নর ভ্যাসিলি অরলভ জানান, বিমানটিতে ৪৩ জন যাত্রী এবং ছয় জন ক্রু সদস্য ছিলো।
তিনি বলেন, যাত্রীদের মধ্যে পাঁচ জন শিশুও ছিল।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, বিমানটি প্রায় ৫০ বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল।
বিমান পরিষেবার একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এটি আরো জানায়, ২০২১ সালে, বিমানটির ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদ ২০৩৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়া সোভিয়েত আমলের বিমান থেকে আধুনিক জেটে যাওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে।
তবে পুরানো হালকা বিমানগুলি এখনও দূরবর্তী অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটে।
ব্রাজিল বুধবার ঘোষণা দিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্বে ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজায় ‘গণহত্যা’ সংঘটনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় যোগ দিতে চায়।
ব্রাসিলিয়া থেকে এএফপি জানায়, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই মামলায় ‘আনুষ্ঠানিক হস্তক্ষেপের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে’ রয়েছে। কলম্বিয়া, লিবিয়া ও মেক্সিকোর মতো দেশ ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় যোগ দিয়েছে এবং আরও বহু দেশ তা সমর্থন জানিয়েছে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা হেগে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে মামলাটি দায়ের করে। এতে বলা হয়, গাজায় ইসরাইলি হামলা ১৯৪৮ সালের গণহত্যা প্রতিরোধ ও শাস্তি বিষয়ক জাতিসংঘ কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে। তবে ইসরাইল এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
২০২৪ সালের জানুয়ারি, মার্চ ও মে মাসে আইসিজে রায় দেয়, গাজায় সামরিক অভিযান চালানোর সময় ইসরাইলকে অবশ্যই ‘গণহত্যা প্রতিরোধে’ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে দুর্ভিক্ষ রোধে জরুরি মানবিক সহায়তা প্রদানও অন্তর্ভুক্ত।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গাজায় বেসামরিকদের ওপর ‘নির্বিচারে সহিংসতা’ চালানো হচ্ছে এবং ‘ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার’ করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চলমান বর্বরতার মুখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে না।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের এক প্রাণঘাতী হামলার মাধ্যমে গাজা যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর থেকে ইসরাইল গাজায় অনবরত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এ যুদ্ধ বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমেই বেড়েছে।
বুধবার ইসরাইল গাজায় দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য সংকট সৃষ্টির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে শতাধিক ত্রাণ ও মানবাধিকার সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ‘দুর্ভিক্ষ’ ছড়িয়ে পড়ছে।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা বারবার গাজায় ইসরাইলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন অনুসারে, কোনো জাতীয়, জাতিগত, বর্ণগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে সংঘটিত পাঁচটি নির্দিষ্ট কাজকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
রাশিয়ার সুদূর পূর্বাঞ্চলের আমুর এলাকা থেকে একটি যাত্রীবাহী বিমান নিখোঁজ হয়েছে। বিমানটিতে ছয়জন ক্রুসহ ৪৯ জনের মতো যাত্রী ছিলেন। আঞ্চলিক গভর্নরের বরাতে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এমন খবর দিয়েছে।
স্থানীয় জরুরি সেবা বিষয়কমন্ত্রী বলেন, সাইবেরিয়াভিত্তিক আনগারা নামের একটি এয়ারলাইন বিমানটি পরিচালন করতো। এটির নাম এএন-২৪। কিন্তু আমুরের তিয়ান্দা শহরের আসার সময় এটি রাডারের পর্দা থেকে হারিয়ে যায়।
চীনের সীমান্তবর্তী অঞ্চল আমুরের গভর্নর ভাসিলি অর্লভ বলেন, বিমানটিতে ৪৩ যাত্রী ছিলেন, যাদের মধ্যে পাঁচটি শিশুও রয়েছে। এছাড়াও ছয় ক্রু সদস্য ছিলেন আকাশযানটিতে।
টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, বিমানটির খোঁজে প্রয়োজনীয় সব বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। যন্ত্রপাতিও প্রস্তুত রয়েছে।
জরুরি সেবা বিভাগের বরাতে রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, খাবারোভস্ক-ব্লাগোভেশচেনস্ক-তিয়ান্দা রুটে একটি এএন-২৪ যাত্রীবাহিনী বিমান উড়ছিল।
কিন্তু চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই নিরাপত্তা তল্লাশি অতিক্রম করতে এটি ব্যর্থ হয়েছে। বিমানটির সঙ্গে এখন কোনো যোগাযোগ নেই।
গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির ইসরাইলি প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে হামাস। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাতারে চলা পরোক্ষ আলোচনা থেকে কোনো সমাধান না আসার পর বৃহস্পতিবার প্রস্তাবটিতে সাড়া হামাস।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামকে দেওয়া এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, ‘অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর পক্ষ থেকে হামাস মধ্যস্থতাকারীদের কাছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে।’
দোহায় চলমান আলোচনার সঙ্গে যুক্ত এক ফিলিস্তিনি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, হামাসের পক্ষ থেকে কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, গাজায় সহায়তা প্রবেশে শর্ত শিথিল করা, ইসরাইলি বাহিনী যেসব অঞ্চল থেকে সরে যাবে তার মানচিত্র ও যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধের নিশ্চয়তা।
গাজায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে হামাস ও ইসরাইলের প্রতিনিধিরা দোহায় মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে পরোক্ষ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আলোচনার মূল লক্ষ্য হলো যুদ্ধবিরতি চুক্তির পাশাপাশি ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি।
২০২৩ সালে হামাসের হামলায় মোট ২৫১ জন ইসরাইলিকে জিম্মি করা হয়। এর মধ্যে ৪৯ জন এখনও গাজায় রয়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, এদের মধ্যে ২৭ জন ইতোমধ্যে মারা গেছে।
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা আলোচনায় এখনও কোনো সমঝোতা হয়নি। এর জন্য উভয় পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছে।
ইসরাইল কঠোর শর্ত দিয়েছে, হামাসের সামরিক ও শাসন ক্ষমতা ভেঙে দিতে হবে।
অন্যদিকে হামাস দাবি করছে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা, ইসরাইলি বাহিনীর পূর্ণ প্রত্যাহার ও গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে পূর্ণ স্বাধীনতা।
বুধবার ইসরাইল সরকারের মুখপাত্র ডেভিড মেনসার বলেন, ইসরাইল কাতারের প্রস্তাব এবং যুক্তরাষ্ট্রের (বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের) হালনাগাদ প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। কিন্তু হামাস এখনো এতে রাজি নয়।’
তিনি আরো বলেন, ইসরাইলি প্রতিনিধি দল এখনও দোহায় অবস্থান করছে এবং আলোচনা চলমান রয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ যুদ্ধবিরতি এবং সহায়তা করিডোর নিয়ে আলোচনা করতে এই সপ্তাহে ইউরোপ সফরে যাচ্ছেন।
এছাড়া বুধবার ১০০টিরও বেশি ত্রাণ সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে সতর্ক করে জানিয়েছে, গাজায় ‘দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে চরম খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ।’
মার্কিন শীর্ষ দূতের ইউরোপ সফরের আগে শতাধিক আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা গত বুধবার সতর্ক করে বলেছে, গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ছে। এই সফরে যুদ্ধবিরতি ও ত্রাণ করিডোর নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
২১ মাস ধরে চলা সংঘাতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। গাজার ২০ লাখের বেশি মানুষ চরম খাদ্য সংকটসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘোর ঘাটতির মুখে পড়েছে।
জাতিসংঘ গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, গত মে মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সমর্থিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’ নামে নতুন সহায়তা উদ্যোগ চালুর পর থেকে জাতিসংঘের ত্রাণ কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়ে।
সংস্থাটি জানায়, জিএইচএফ থেকে ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
সেইভ দ্য চিলড্রেন, অক্সফাম, ডাক্তারি সাহায্য সংস্থা এমএসএফসহ ১১১টি সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে সতর্ক করে বলেছেন, ‘আমাদের সহকর্মীরা এবং যাদের আমরা সেবা দিচ্ছি, তারা না খেয়ে শুকিয়ে যাচ্ছেন।’
তারা অবিলম্বে একটি সমঝোতার ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি, সব স্থল পথ খুলে দেওয়া ও জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মানবিক সহায়তা চালু করার দাবি জানায়।
এর একদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র জানায়, তাদের দূত স্টিভ উইটকফ এ সপ্তাহে ইউরোপে যাচ্ছেন গাজা ইস্যুতে আলোচনা করতে। এরপর তিনি মধ্যপ্রাচ্য সফরেও যেতে পারেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস সাংবাদিকদের বলেন, উইটকফ ‘জোরালো আশা’ নিয়ে যাচ্ছেন যে, উভয় পক্ষের সম্মতিতে একটি নতুন যুদ্ধবিরতি এবং সহায়তা প্রবাহে একটি মানবিক করিডোর গঠনের পথ বেরিয়ে আসবে।
গত মে মাসের শেষ দিকে ইসরায়েল দুই মাসেরও বেশি সময়ের সহায়তা অবরোধ কিছুটা শিথিল করলেও, গাজার মানুষ এখনো খাদ্য ও মৌলিক চাহিদার ঘাটতির মধ্যে রয়েছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গত মঙ্গলবার জানান, গাজায় ইসরায়েলি সামরিক হামলার মুখে ফিলিস্তিনিরা যে ‘ভয়াবহতা’র মধ্যে রয়েছে, তা সাম্প্রতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজা সীমান্তের ভেতরে ও বাইরে টনকে টন সহায়তা সামগ্রী গুদামে পড়ে আছে, কিন্তু সেগুলো গাজাবাসীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ মিলছে না।
মায়ের চোখের সামনেই মরছে ক্ষুধার্ত শিশু
ফিলিস্তিনের গাজার কেন্দ্রীয় হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রতি ঘণ্টায় অপুষ্টির রোগী পাচ্ছেন। গাজা শহরের একটি ৩৫ দিনের শিশু ও দেইর এল-বালাহতে চার মাস বয়সী এক শিশু আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে অপুষ্টিতে মারা গেছে। হাসপাতালে এক মা তাঁর সন্তানের শরীর ছুঁয়ে আর্তনাদ করছিলেন, ‘আমি দুঃখিত, আমি তোমাকে খাওয়াতে পারিনি। আমার চোখের সামনে তোমাকে মরতে দেখা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না।’ প্রতিনিয়ত শিশুদের এমন মৃত্যু দেখতে হচ্ছে গাজার মায়েদের।
এই দুটি ঘটনাই কেবল নয়। গত ৭২ ঘণ্টায় আরও বেশি ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালের চিকিৎসকদের মতে, প্রতি ঘণ্টায় অপুষ্টিতে ভোগা শিশু ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে।
শিশুদের অনাহার থেকে বাঁচাতে বাবা-মায়েরা মার্কিন-ইসরায়েলের তৈরি জিএইচএফ বিতরণ কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হন। কারণ, তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। বাবা-মায়েরা বলছেন, নারী-শিশুসহ তারা সবাই ক্ষুধার্ত এবং তারা নিজ সন্তানদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে অক্ষম। অনেক শিশুকে শুধুই পানি খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। কারণ, আটা কেনার সাধ্য তাদের নেই।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৫৪ ত্রাণপ্রত্যাশীসহ কমপক্ষে ১৩০ জন নিহত এবং ৪৯৫ জন আহত হয়েছেন। গত ২১ মাসে দখলদার বাহিনীর হামলায় এ পর্যন্ত ৫৮ হাজার ৮৯৫ জন ও ১ লাখ ৪০ হাজার ৯৮০ জন আহত হয়েছেন।
আলজাজিরা জানায়, আরও এক ইসরায়েলি সৈনিক আত্মহত্যা করেছেন। দখলদার বাহিনী জানিয়েছে, এ নিয়ে গত দুই সপ্তাহে চারজন সেনার আত্মহত্যার ঘটনা ঘটল। নরওয়ের বাসিন্দা ও প্রশিক্ষণরত সৈনিকের নাম ড্যান ফিলিপসন। দক্ষিণ ইসরায়েলের একটি প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে হাসপাতালে মারা যান। ইসরায়েলি গণমাধ্যমের মতে, বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৯ জন এবং গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২১ মাসে ৪২ জন সৈন্য আত্মহত্যা করেছেন।
গাজা যুদ্ধের নামে ‘বর্বরতার’ অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন পোপ লিও। গত বৃহস্পতিবার গাজার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জায় ইসরায়েলি হামলার পর গতকাল রোববার এক প্রার্থনা সভায় পোপ লিও এই আহ্বান জানান। ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক গিডিয়ন লেভি সরকারকে গাজায় জাতিগত নির্মূলের পরিকল্পনার অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার মধ্যাঞ্চলের একটি জনাকীর্ণ অংশ থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ জারি করেছে। যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত মানবাধিকার সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপের ৫৫ জন সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
টানা দুর্ঘটনার ধাক্কায় যেন ‘শনির দশা’ চলছে এয়ার ইন্ডিয়ার। মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় সংস্থাটির তিনটি উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার হংকং থেকে দিল্লিগামী ফ্লাইট এআই-৩১৫-এর অক্সিলারি পাওয়ার ইউনিটে (এপিইউ) আগুন ধরে যাওয়ায় ফের প্রশ্ন উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে।
বিমানটি ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর যাত্রী নামানোর সময় এপিইউতে আগুন ধরে যায়। যদিও এতে কেউ হতাহত হননি বলে জানিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। প্রতিষ্ঠানটির বিবৃতিতে বলা হয়, যান্ত্রিক ত্রুটি শনাক্তের পর বিমানের এপিইউ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং যাত্রীরা নিরাপদে বেরিয়ে আসেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও এয়ারবাস এ৩২১ মডেলের উড়োজাহাজটি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তদন্তের জন্য সেটিকে গ্রাউন্ড করে রাখা হয়েছে এবং ঘটনার তথ্য ডিরেক্টর জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-কে জানানো হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার কোচি থেকে মুম্বইগামী একটি ফ্লাইট অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে খানিকটা সরে যায়, যার ফলে বিমানের ইঞ্জিন কাভার এবং রানওয়ের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই দিনে দিল্লি থেকে কলকাতাগামী আরেকটি ফ্লাইট টেক-অফের ঠিক আগে ১৫৫ কিলোমিটার গতিতে থাকা অবস্থায় উড্ডয়ন স্থগিত করে।
শুধু গত মাসেই নয়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একাধিকবার যান্ত্রিক ত্রুটির মুখে পড়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে গত ১২ জুন। আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী ফ্লাইট এআই-১৭১ উড্ডয়নের মাত্র ৩২ সেকেন্ডের মাথায় ভেঙে পড়ে। ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২৭৪ জন, যাদের মধ্যে ১৯ জন ছিলেন ঘটনাস্থলের একটি ছাত্রাবাসে। অলৌকিকভাবে বেঁচে যান একমাত্র যাত্রী।
দুর্ঘটনার তদন্তে নিয়োজিত এয়ারক্র্যাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএইবি) জানায়, ফ্লাইটটি উড্ডয়নের পর হঠাৎ করে জ্বালানি সরবরাহ সুইচ ‘রান’ থেকে ‘কাটঅফ’-এ চলে যায়, যা সাধারণত স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্ভব নয়। এই সন্দেহ থেকেই ডিজাইনে কোনো ক্রটি রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে ভারতে নিবন্ধিত সব বোয়িং উড়োজাহাজে জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচ পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তারা পরীক্ষাগুলো শেষ করেছে এবং কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি।
এদিকে, ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মুরলিধর মোহল জানিয়েছেন, গত ছয় মাসে এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের পাঁচটি নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছে। এসব ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটিকে নয়টি কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
গত বসন্তে গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এ আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার, প্রবেশন ও ডিগ্রি বাতিলসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২২ জুলাই) এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা আটটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গঠিত গ্রুপ ‘আইভি লীগের’ একটি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পরই গাজা যুদ্ধ নিয়ে ক্যাম্পাসে হওয়া আন্দোলন প্রতিহত করতে না পারার অজুহাতে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ৪০০ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল স্থগিত করে প্রশাসন।
সম্প্রতি এই তহবিল ফেরাতে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে কলাম্বিয়া প্রশাসন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শৃঙ্খলাবিষয়ক প্রক্রিয়া পুনর্গঠন ও ইহুদিবিদ্বেষের নতুন সংজ্ঞা গ্রহণকরাসহ প্রশাসনের বেশ কয়েকটি দাবিতে সম্মতি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি জানিয়েছে, ‘একটি সমৃদ্ধ অ্যাকাডেমিক পরিবেশ গড়ে তুলতে পরস্পরের প্রতি এবং প্রতিষ্ঠানের মৌলিক কাজ, নীতিমালা ও নিয়মকানুনের প্রতি সম্মান থাকা আবশ্যক। অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটানো বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা ও নিয়মের লঙ্ঘন, এবং এমন লঙ্ঘনের জন্য অবশ্যই পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
মঙ্গলবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিচারিক বোর্ডের মাধ্যমে আরোপিত শাস্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রবেশন, ডিগ্রি বাতিলসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা।
তবে যেসব শিক্ষার্থীদের এই শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে তাদের পরিচয় প্রকাশ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এর আগে মে মাসে তারা জানিয়েছিল, অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ১৮০ জন কর্মী ছাঁটাই করবে এই বিশ্ববিদ্যালয়। একইসঙ্গে গবেষণার পরিসরও সীমিত করবে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের একটি অধিকার-সংগঠন থেকে জানানো হয়েছে, আন্দোলনে অংশ নেওয়ার দায়ে প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থীকে ১-৩ বছরের জন্য বহিষ্কার বা তাদের স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আগের যেকোনো আন্দোলনের শাস্তির নজিরকে ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছে সংগঠনটি।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসতে হলে তাদের ক্ষমা চাইতে হবে, নাহলে তাদের স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের মুখে পড়তে হবে। তবে অনেকেই এটি করতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন বলে মনে করছে তারা।
এর আগে, গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সংঘঠিত বিক্ষোভে জড়িত থাকার কারণে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তার করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) কর্মকর্তারা। বিষয়টি নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়।
এরপর তাকে অবৈধভাবে বন্দি, বিদ্বেষপূর্ণভাবে মামলা ও ইহুদিবিদ্বেষী হিসেবে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মাহমুদ।
ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে ফিরেই অঙ্গীকার করেছিলেন, গত বছর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিপন্থি প্রতিবাদী আন্দোলনে জড়িত কিছু বিদেশি শিক্ষার্থীকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেবেন। এই আন্দোলনকে তিনি ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করেন।
ট্রাম্পের মতে, গাজার ক্ষমতায় থাকা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসকে’ সমর্থন করে ওই শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অধিকার হারিয়েছেন।
তবে ট্রাম্পের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছেন, তারা কেবল যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকি তাদের সঙ্গে কিছু ইহুদি শিক্ষার্থী ও তাদের কয়েকটি সংগঠনও ছিল।
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাসংক্রান্ত বহু গোপন নথি প্রকাশ করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। তার ওপর গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই কীভাবে নজরদারি চালাত তা রয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার পৃষ্ঠার এই দলিলে। এ ছাড়া, রয়েছে আগে কখনো প্রকাশ না হওয়া সিআইএ রেকর্ড। ১৯৭৭ সাল থেকে এসব নথি আদালতের আদেশে জনসাধারণের আওতার বাইরে ছিল।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নথি প্রকাশের ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছে মার্টিন লুথার কিংয়ের পরিবার। তার দুই সন্তান মার্টিন লুথার কিং তৃতীয় ও বার্নিস কিং এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘এই নথিগুলোর মাধ্যমে আমাদের বাবার ভাবমূর্তি যেন ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকে নজর রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’ তারা অনুরোধ করেছেন, যারা এই দলিলপত্র পর্যালোচনা করবেন, তারা যেন সহানুভূতি, সংযম ও সম্মানবোধ নিয়ে তা করেন।
বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, ‘জীবদ্দশায় বাবার ওপর এফবিআইয়ের নেতৃত্বে যে নজরদারি ও মিথ্যা প্রচার চালানো হয়েছিল, তা ছিল অবৈধ, হীন এবং মর্যাদাহানিকর। এতে তিনি সাধারণ নাগরিক হিসেবে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন।’
তবে কিং পরিবারের সবার আবার এক মত নয়। পরিবারের এক সদস্য এবং কিংয়ের ভাইঝি আলভেদা কিং নথি প্রকাশকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং জাতীয় গোয়েন্দা দপ্তরের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাদের স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা এখনো তার মৃত্যুতে শোকাহত, কিন্তু সত্য প্রকাশের এই পদক্ষেপকে আমরা ঐতিহাসিক মনে করি।’
নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল টেনেসির মেমফিসে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৯ বছর। পেশাদার অপরাধী জেমস আর্ল রে মার্টিন লুথার কিংকে হত্যার দায় স্বীকার করেন। পরে অবশ্য তিনি দাবি করেন তিনি এক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। আগে দেওয়া স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারেরও চেষ্টা করেন তিনি। তবে, আদালত তার সেই দাবি নাকচ করে দেন। রে ১৯৯৮ সালে কারাগারেই মারা যান।
কিং হত্যাকাণ্ড নিয়ে ১৯৯৯ সালে এক দেওয়ানি মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি জুরি রায় দেয়, কিং কোনো একক আততায়ীর হাতে নিহত হননি। বরং একটি বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন।
নথিগুলোতে রয়েছে এফবিআইয়ের অভ্যন্তরীণ মেমো, কিংয়ের চলাফেরা নিয়ে নজরদারির বিশদ বিবরণ এবং সিআইএর তদন্তের দলিল। জাতীয় গোয়েন্দা দপ্তর বলছে, ‘দশকের পর দশক ধরে এই নথিগুলো ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ধুলোমাখা অবস্থায় পড়ে ছিল। এবারই প্রথম সেগুলো জনসাধারণের সামনে এলো।’
নথি প্রকাশের উদ্যোগে সমন্বয় করে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ, এফবিআই, সিআইএ এবং ন্যাশনাল আর্কাইভস। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পামেলা বন্ডি বলেন, ‘দেশের এক মহান নেতার হত্যাকাণ্ড নিয়ে জানার অধিকার মার্কিন জনগণের আছে।’
ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচকেরা অবশ্য এই সময়ে এসে এই নথিগুলো প্রকাশের পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য দেখছেন। নাগরিক অধিকার নেতা রেভারেন্ড আল শার্পটন বলেন, ‘জেফ্রি এপস্টেইনের মৃত্যুর ঘটনায় সরকারের স্বচ্ছতার অভাবের যে অভিযোগ উঠেছে, সেটি থেকে জনগণের মনযোগ সরাতেই এখন নথিগুলো প্রকাশ করা হলো।’
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে নতুন দফা শান্তি আলোচনা আগামী বুধবার তুরস্কে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সোমবার রাতে প্রতিদিনকার ভাষণে এ কথা বলেন।
যুদ্ধের অবসানের বিষয়ে এর আগে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে দুই দফায় আলোচনায় খুব কম অগ্রগতি হয়েছিল।
কিয়েভ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
তুরস্ক সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, আলোচনাটি ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত হবে। এখানে পূর্ববর্তী আলোচনাগুলো মে ও জুন মাসে কোনও অগ্রগতি অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছিল।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে চুক্তিতে একমত হতে ৫০ দিন সময় দিয়েছেন।
অন্যথায় নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার সর্বশেষ আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে জেলেনস্কি নতুন দফা আলোচনার কথা ঘোষণা করলেন।
রাশিয়ার হামলায় বেসামরিক নাগরিকদের আশ্রয় নেওয়া ভূগর্ভস্থ একটি আশ্রয়কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সোমবার জেলেনস্কি তার ভাষণে বলেন, ‘আজ আমি তুরস্কে রাশিয়ান পক্ষের সঙ্গে আরো একটি আলোচনার প্রস্তুতি নিয়ে রুস্তেম উমেরভের (ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান) সঙ্গে আলোচনা করেছি। রুস্তেম আমাকে জানিয়েছেন যে, বুধবার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।’
তিনি বন্দি বিনিময় ও রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কে একটি নতুন বৈঠকের প্রস্তুতির দায়িত্বে রয়েছেন।
সপ্তাহান্তে নতুন করে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া জেলেনস্কি আরো বলেন, মঙ্গলবার আরো বিস্তারিত জানানো হবে।
রাশিয়া তাৎক্ষণিকভাবে নতুন আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঊর্ধ্বতন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা এর আগে এএফপিকে বলেছিলেন যে, ইস্তাম্বুল আলোচনা সম্ভবত আরো বন্দী বিনিময় এবং জেলেনস্কি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে সম্ভাব্য বৈঠকের ওপর আলোকপাত করবে।
গত ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার সর্বাত্মক আক্রমণের পর থেকে যুদ্ধের মধ্যে ওয়াশিংটন একটি চুক্তির জন্য চাপ বাড়িয়েছিল। উভয় দেশ ১৬ মে ও ২ জুন ইস্তাম্বুলে বৈঠক করেছিল। কিন্তু বৈঠকে কোনও অগ্রগতি হয়নি।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার আলোচকরা কেবল বন্দী বিনিময় করতে সম্মত হয়েছেন।
রাশিয়া তখন থেকে ইউক্রেনের ওপর তীব্র বিমান হামলা শুরু করেছে এবং আরো অনেক অঞ্চল দখল করে নিয়েছে।
শান্তি চুক্তি কেমন হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনায় উভয় পক্ষই মতবিনিময় করেছে। কিন্তু এখনও তাদের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে।
রাশিয়া ইউক্রেনকে চারটি অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে এবং ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে বলেছে। এই চারটি অঞ্চলের মধ্যে ২০১৪ সালে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা ক্রিমিয়াও রয়েছে।
ইসরাইল মঙ্গলবার ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় ১৫ জন নিহত ও আরো অনেকেই আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী দেইর এল-বালাহ এলাকায় স্থল অভিযান সম্প্রসারণ করেছে।
গাজার নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার বরাত দিয়ে গাজা সিটি থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপিকে বলেছেন, গাজা শহরের পশ্চিমে আল-শাতি ক্যাম্পে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৫০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
২১ মাসের সংঘাতের সময় গাজার বেশিরভাগ জনসংখ্যা অন্তত একবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত আল-শাতি ক্যাম্পে হাজার হাজার মানুষ তাঁবু এবং অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে উত্তর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
আল-শাতি ক্যাম্পে বসবাসকারী ৩৩ বছর বয়সী মুহান্নাদ থাবেত ‘নিরবচ্ছিন্ন বিমান হামলা এবং বিস্ফোরণ’ এর কারণে এটিকে ‘ভয়ঙ্কর রাত’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, তিনি ছয় বছরের একটি শিশুকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন কাছাকাছি শিফা হাসপাতাল। এটি এক সময় গাজার বৃহত্তম হাসপাতাল ছিল।
বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার বাসাল জানিয়েছেন, দেইর এল-বালাহে আরো দুই জন নিহত হয়েছেন।ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা তাদের স্থল অভিযান সম্প্রসারণ করবে। বেশিরভাগ এলাকা খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) অনুমান করেছে যে, এই এলাকায় ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার মানুষ বাস করছে, যা এখন পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বলে বিবেচিত হত।