ভারতে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল বা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য উচ্চশিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত বহাল রাখার পক্ষে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট আজ সোমবার রায় দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের জন্য এটি এক বড় জয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। খবর এনডিটিভির।
এ সংক্রান্ত মামলায় ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের পাঁচ জন বিচারপতির মধ্যে তিন জনই মনে করেন, দরিদ্রদের জন্য কোটা সংরক্ষণের যে সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকার নিয়েছে, তা যথার্থ। অর্থনৈতিক মানদণ্ডের বিচারে সরকারের এ সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই বৈষম্যমূলক নয়।
আর্থিকভাবে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ কোটা বরাদ্দের জন্য বর্তমান বিজেপি সরকার একটি প্রস্তাব আনার পর সেটা লোকসভায় ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে পাশ হয়। কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে একটি আবেদন করা হয়েছিল।
এতে বলা হয়, এরকম কোটা সংরক্ষণের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক সাম্যের নীতি লঙ্ঘন হয়েছে। তবে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস সহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই মোদি সরকারের ওই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেনি।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বর্বরতা অব্যাহত রয়েছে। এদিকে গাজায় হামাস যদি অস্ত্র ত্যাগ করে তাহলে ইসরায়েল সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেবে। তবে হামাস সাড়া না দিলে সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে। ইসরায়েলের এক সিনিয়র কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন।
গাজায় একটি অভিযানে খান ইউনিসে এক আইডিএফ সেনা নিহত হয়েছেন। হামাস যোদ্ধারা তাকে অপহরণের চেষ্টা করেছিল। ইসরায়েলি নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এই ঘটনার জন্য হামাসের সঙ্গে চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনা দায়ী করেছেন। এছাড়া পশ্চিম তীরে এক ইসরায়েলি সেনা ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন এবং গাজায় কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে ১ লাখ ৫২ হাজার লিটার জ্বালানি সরবরাহ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছেন, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সৌদি আরব এই দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার মধ্যে গাজায় নিহত ২৪
যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নতুন করে আরও ২৪ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। এরই মধ্যে সেখানে ৫৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির সময়সীমা বাড়িয়ে বলেছেন, এই সপ্তাহে বা আগামী সপ্তাহে গাজায় একটি চুক্তির ‘খুব ভালো সম্ভাবনা’ রয়েছে। তবে হামাস বলছে, ইসরায়েলের একগুঁয়েমির কারণে কাতারে আলোচনা ‘কঠিন’ হয়ে পড়েছে।
বেশ কিছু চিকিৎসা সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় বিমান হামলা আরও তীব্র করেছে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এই উপত্যকাজুড়ে কমপক্ষে ২৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ৫৭ হাজার ৫৭৫ জন নিহত এবং ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮৭৯ জন আহত হয়েছেন। অপরদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলায় ইসরায়েলে আনুমানিক ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি হিসেবে অপহরণ করা হয়েছিল।
গাজায় ত্রাণকেন্দ্রে ৭৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা
গত মে মাসের শেষের দিক থেকে মানবিক ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে হামলার ফলে গাজা উপত্যকায় ৭৭০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, মানবিক সাহায্য বিতরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর কেন্দ্রগুলোতে ২৭ মে থেকে নিহতের সংখ্যা ৭৭০ ছাড়িয়ে গেছে।
আল জাজিরা এর আগে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, অস্থিতিশীলভাবে ত্রাণ সরবরাহের মধ্যে ২১ লাখ গাজাবাসী খাদ্যের সন্ধানে মরিয়া হয়ে আছে। দিনকে দিন অবরুদ্ধ অঞ্চলে ক্ষুধার্ত মানুষের মাঝে হতাশা বাড়ছেই।
১৮ মে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গাজা উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে তাদের বৃহৎ স্থল আক্রমণ ‘গিডিওনস চ্যারিয়টস’-এর অংশ হিসেবে গণহত্যা শুরু করে। এর ঘোষিত লক্ষ্য হলো হামাসের সম্পূর্ণ পরাজয় এবং সেখানে আটক সমস্ত ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এই অভিযানের পর তাদের বাহিনী সমগ্র গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৮ শিশু নিহত
গাজার মধ্যাঞ্চলে একটি মেডিকেল পয়েন্টের কাছে ইসরায়েলি হামলায় ৮ শিশু ও দুই নারীসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে বলে সেখানকার এক হাসপাতাল জানিয়েছে। আল-আকসা মার্টায়ার্স হাসপাতাল বলছে, দেইর আল-বালাহ এলাকায় পুষ্টিকর সাপ্লিমেন্টের জন্য লাইন দাঁড়ানো লোকদের ওপর ওই হামলা হয়েছে।
হাসপাতাল থেকে পাওয়া এক ভিডিওতে একাধিক শিশুর মরদেহ এবং আরও কিছু আহত শিশুকে চিকিৎসা দেওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা এ খবরের সত্যতা যাচাই করে দেখছে।
পুষ্টিকর সাপ্লিমেন্ট বলতে সাধারণত ভিটামিন ডি ট্যাবলেট, আয়রন ট্যাবলেট, ওমেগা সাপ্লিমেন্ট ও গুড়ো প্রোটিনের মতো নানা সহায়ক পথ্যকে বোঝায়। গাজার ওই মেডিকেল পয়েন্ট থেকে কী কী পাওয়া যাচ্ছিল তা জানা যায়নি।
নতুন যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে দোহায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলাকালেও ফিলিস্তিনি এ ভূখণ্ডটিতে তেল আবিবের হামলা থেমে নেই। প্রতিদিনই তাদের হামলায় গাজায় ডজন ডজন মানুষের মৃত্যুর খবর মিলছে।
দোহার এ আলোচনায় কাতার ও মিসরের পাশাপাশি মধ্যস্থতা করছে যুক্তরাষ্ট্রও। আলোচনায় শিগগিরই ফল আসবে বলে ওয়াশিংটন আশাবাদ ব্যক্ত করলেও হামাস ও ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক মন্তব্যে দ্রুত কোনো ‘ব্রেক থ্রুর’ আশা দেখা যাচ্ছে না। গত বুধবার (৯ জুলাই) রাতে ঊর্ধ্বতন এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেছেন, যুদ্ধবিরতি নিয়ে চুক্তিতে পৌঁছাতে এক-দুই সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।
এমন এক সময়ে তিনি এ কথা বললেন যখন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুক্তরাষ্ট্র সফর চলছে। ইসরায়েলি ওই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, দুই পক্ষ ৬০ দিনের কোনো যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছালে, ইসরায়েল ওই সময়টাকে যুদ্ধের একটি স্থায়ী সমাপ্তির প্রস্তাব দেওয়ার জন্য কাজে লাগাতে চায়, সেখানে অবশ্যই হামাসকে নিরস্ত্র হওয়ার শর্ত দেওয়া হবে। যদি হামাস অস্ত্র সমর্পণে রাজি না হয়, তাহলে ইসরায়েলি সামরিক অভিযান ‘অব্যাহত থাকবে’। এর আগে হামাস বলেছিল, আলোচনা ‘কঠিন’ হয়ে উঠেছে, এজন্য ইসরায়েলি ‘একগুঁয়েমিকেও’ দায়ী করেছে তারা।
ফিলিস্তিনি এ সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বলছে, ১০ জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়ে তারা নমনীয়তার পরিচয় দিয়েছে। তারা ইসরায়েলি হামলার অবসান ঘটাবে এমন ‘বিস্তৃত’ চুক্তির দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন, আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কপার আমদানির ওপর "জাতীয় নিরাপত্তা" ভিত্তিক শুল্ক কার্যকর হবে।
ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ট্রাম্প ব্রাজিলের সাবেক ডানপন্থী নেতা জাইর বলসোনারোর বিচারকে ‘আন্তর্জাতিক অপমান’ বলে উল্লেখ করেন।
বলসোনারো ২০২২ সালের নির্বাচনে লুলার কাছে পরাজয়ের পর অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে বর্তমানে বিচারের মুখোমুখি।
ট্রাম্পের শুল্ক সংক্রান্ত চিঠির জবাবে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা একতরফা শুল্ক বৃদ্ধির বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তিনি এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ব্রাজিলের অর্থনৈতিক পারস্পরিকতার আইনের আলোকে এই ধরনের পদক্ষেপের জবাব দেওয়া হবে।
এর আগে বুধবার ব্রাজিল জানিয়েছে যে তারা বোলসোনারো বিচারের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের আগের সমালোচনার জন্য মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে তলব করেছেন।
ট্রাম্প তার চিঠিতে বলেছেন যে ব্রাজিলের পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ মার্কিন শুল্ক ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। ট্রাম্প বুধবার সন্ধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করেন, একই তারিখ হতে, গ্রিন এনার্জি এবং অন্যান্য প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত একটি মূল ধাতু তামার মার্কিন আমদানির উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে।
তিনি বলেন, এই পদক্ষেপটি "শক্তিশালী জাতীয় নিরাপত্তা মূল্যায়ন" অনুসরণ করে সম্ভবত এই বছরের শুরুতে শুরু হওয়া তামার উপর বাণিজ্য বিভাগের তদন্তের প্রতিফলন। ট্রাম্প বলেছেন, প্রতিরক্ষা বিভাগে তামা দ্বিতীয় সর্বাধিক ব্যবহৃত উপাদান।
শুল্কে উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা: লুলাকে পাঠানো চিঠিটি ছিল সোমবার থেকে শুরু হওয়া ট্রাম্পের ২০টিরও বেশি অনুরূপ চিঠির সর্বশেষ। এসব চিঠিতে তিনি পারস্পরিক বাণিজ্য না হওয়ার অভিযোগ তুলে নানা দেশের ওপর একতরফাভাবে শুল্ক নির্ধারণ করছেন।
ব্রাজিল এতদিন ১০ শতাংশের প্রাথমিক শুল্ক হারের বাইরে ছিল। যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিলের সাথে পণ্যে বাণিজ্য উদ্বৃত্তে রয়েছে।
বুধবার ট্রাম্প ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, ব্রুনেই, আলজেরিয়া, লিবিয়া, ইরাক ও মলডোভাসহ একাধিক দেশের নেতাদের চিঠি পাঠান। যেখানে ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা রয়েছে, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
মার্চ-এপ্রিলে এই শুল্ক পরিকল্পনার প্রথম ধাপে যে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তার তুলনায় এবার কিছু দেশে তুলনামূলকভাবে কম শুল্ক আরোপ হয়েছে।
এপ্রিল মাসে ট্রাম্প প্রায় সব বাণিজ্য অংশীদারের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও, তখন আরও বেশি হারের শুল্ক ঘোষণা করে তা স্থগিত রাখেন। এগুলোর কার্যকর সময়সীমা ছিল বুধবার, যা পরে তিনি ১ আগস্ট পর্যন্ত পিছিয়ে দেন।
এখন শুল্কের নির্দিষ্ট হার উল্লেখ করে চিঠি পাঠানো হচ্ছে, যেখানে ট্রাম্প এসব পদক্ষেপকে “অপারস্পরিক বাণিজ্য সম্পর্কের” জবাব বলে উল্লেখ করেছেন।
এই চিঠিগুলোতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন করলেই তারা শুল্ক এড়াতে পারবে। অন্যথায় পাল্টা ব্যবস্থা নিলে আরও শুল্ক আরোপের হুমকি রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের লক্ষ্যবস্তু মূলত এশীয় দেশগুলো হলেও, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-র সঙ্গে আলোচনার দিকে এখন সবার দৃষ্টি।
ট্রাম্প মঙ্গলবার বলেন, তার সরকার ‘সম্ভবত দুই দিনের মধ্যেই’ ইইউ’র কাছে নতুন শুল্ক হারের একটি চিঠি পাঠাবে।
বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন মুখপাত্র বলেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘আসন্ন দিনগুলোতে’ একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে চায়।
এই সব দেশের পণ্যের ওপর শুল্কের পাশাপাশি ট্রাম্প জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরার পর স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ও গাড়ি শিল্পের ওপরও খাতভিত্তিক শুল্ক আরোপ করেছেন।
রাশিয়ার রাতভর মিসাইল ও ড্রোন হামলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার মিত্র দেশগুলোর প্রতি রাশিয়ার ওপর আরও দ্রুত এবং কার্যকর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন।
কিয়েভ, ইউক্রেন থেকে এএফপি জানায়, জেলেনস্কি সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেন, রাশিয়া প্রায় ১৮টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রায় ৪০০টি আক্রমণাত্মক ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা দ্রুত আরোপ করতে হবে এবং রাশিয়ার উপর চাপ এত শক্তিশালী হতে হবে যেন তারা তাদের সন্ত্রাসের পরিণতি সত্যিই অনুভব করে।
ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান তথা ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর চিফ ডিফেন্স অব স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান বলেছেন, বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের অভিন্ন স্বার্থের কারণে ভারতের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। গত মঙ্গলবার তিনি এই কথা বলেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
অনিল চৌহান বলেছেন, চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে স্বার্থের সম্ভাব্য অভিন্নতা ভারতের ‘স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর’ গুরুতর ‘প্রভাব’ ফেলতে পারে। ভারতীয় থিংকট্যাংক অবজারভার ফাউন্ডেশনের এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় তিনি কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক দুর্দশাকে বাইরে শক্তিগুলো তাদের প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, এটি ভারতে দুর্বলতা সৃষ্টির কারণ হতে পারে।
জেনারেল চৌহান বলেন, ‘চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে এমন একটি সম্ভাব্য স্বার্থের মিল থাকতে পারে, যা ভারতের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।’ তবে তিনি এটাও উল্লেখ করেন, অপারেশন সিঁদুর চলাকালে চীন পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কতটা রাষ্ট্রীয় সমর্থন দেওয়া হয়েছিল, তা নির্ধারণ করা কঠিন। তিনি বলেছেন, সংঘর্ষের সময় উত্তরের সীমান্তে (চীনের দিকে) কোনো অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ড লক্ষ করা যায়নি।
অপারেশন সিঁদুর সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে জেনারেল চৌহান বলেন, সম্ভবত এই প্রথমবার দুটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল। তিনি আরও বলেন, ভারত ঘোষণা করেছে, পারমাণবিক হুমকি দিয়ে বাধা দেওয়া যাবে না।
জেনারেল চৌহান আরও করেন, অপারেশন সিঁদুর এক ধরনের ‘বিশেষ ঘটনা’ এবং এটি সারা বিশ্বের জন্য শিক্ষা হতে পারে। তিনি বলেন, যুদ্ধে আরও বিস্তৃতি সম্ভব, যা নতুন যুদ্ধক্ষেত্র যেমন সাইবার ও ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ক্ষেত্র পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে পারে।
গাজা যুদ্ধের ‘ভয়াবহ সংকট’ অবসানে চুক্তিতে পৌঁছাতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়িয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুজনের মধ্যে দ্বিতীয় দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানিয়েছে, দোহায় কাতারের মধ্যস্থতায় চলমান আলোচনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে নেতানিয়াহু মঙ্গলবার আবার হোয়াইট হাউসে যান। কাতার সতর্ক করে বলেছে, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে সময় লাগবে।
হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহুর ফেরার ঘোষণার সময় ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এটা এক দুঃখজনক পরিস্থিতি। তিনি (নেতানিয়াহু) এর সমাধান চান, আমিও চাই এবং আমার মনে হয় অন্য পক্ষও সেটা চায়।’
ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই সপ্তাহের শেষ নাগাদ একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারব বলে আমরা আশা করছি, যা ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির পথ খুলে দেবে।’
চুক্তির আওতায় হামাসের হাতে আটকে থাকা ১০ জীবিত ও ৯ মৃত বন্দিকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে জানান তিনি।
সোমবার রাতে ট্রাম্পের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেওয়ার পর নেতানিয়াহু মঙ্গলবার আবার হোয়াইট হাউসে আলোচনায় বসেন। এই বৈঠকে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশাধিকার ছিল না।
এর আগে মার্কিন কংগ্রেসের হাউস স্পিকার মাইক জনসনের সঙ্গে এক বৈঠকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা শিগগিরই আসবে কি না জানতে চাইলে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা অবশ্যই এটা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’
ট্রাম্প ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় থেকে ইসরাইলের প্রতি জোরালো সমর্থন বজায় রেখেছেন। তবে একইসঙ্গে গাজায় চলমান সংঘর্ষকে ‘নরক’ আখ্যায়িত করে তা বন্ধে চাপও বাড়াচ্ছেন।
এদিকে কাতার জানায়, দোহায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা তৃতীয় দিনে গড়ালেও এখনো কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
এদিকে, কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে কোনো সময়সীমা দেওয়া সম্ভব না, তবে এটুকু বলতে পারি যে, এর জন্য আমাদের সময় লাগবে।’
যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরের পাশাপাশি কাতারও এই আলোচনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে। তারা জানিয়েছে, দোহায় চলা বৈঠকে মূলত আলোচনা চালানোর নিয়মকানুন ঠিক করা হচ্ছে।
তবে আলোচনায় থাকা এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কোনো বড় অগ্রগতি হয়নি।
অন্যদিকে, ময়দানে সংঘাত চলছেই। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, মঙ্গলবার ইসরাইলি হামলায় ২৯ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে তিন শিশু রয়েছে।
উত্তর গাজায় সংঘর্ষে পাঁচ ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে। এই বছর ফিলিস্তিনি এলাকায় ইসরাইলি বাহিনীর জন্য এটি সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিনের মধ্যে একটি। তাদের মৃত্যু হয় বেইত হানুন এলাকার কাছে পুঁতে রাখা বোমার বিস্ফোরণে।
নেতানিয়াহু সেনাদের মৃত্যুকে ‘কষ্টকর সকাল’ বলে মন্তব্য করেছেন।
লেবানন জানিয়েছে, মঙ্গলবার ত্রিপোলির কাছে এক হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ওই হামলার লক্ষ্য ছিলেন এক হামাস যোদ্ধা। এটি ওই এলাকায় হিজবুল্লাহর সঙ্গে গত নভেম্বরের যুদ্ধবিরতির পর প্রথম হামলা।
ইরান-ইসরাইলের সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতিকে কাজে লাগিয়ে গাজা সংকটের নিষ্পত্তি চাচ্ছেন ট্রাম্প।
এদিকে ফ্রান্সের গোয়েন্দা প্রধানও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের যৌথ হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘গভীরভাবে ব্যাহত’ হয়েছে। এই মন্তব্যের মাধ্যমে হামলায় আসলে কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে
চলমান বিতর্কে তিনি সরাসরি যুক্ত হলেন।
ইসরাইল ও হামাস রোববার থেকে নতুন দফার আলোচনায় বসেছে। যদিও একই ভবনের ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে বসে অংশ নিচ্ছেন দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা।
ওয়াশিংটনে নেতানিয়াহুর সফরসঙ্গী এক ইসরাইলি কর্মকর্তা বলেছেন, আলোচনায় যে প্রস্তাব উঠেছে তা ‘ইসরাইলের ৮০-৯০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে।’
তবে ইসরাইলের কট্টর ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির হামাসের সঙ্গে আলোচনার বিরোধিতা করে বলেন, ‘আমাদের সেনাদের হত্যাকারীদের সঙ্গে আলোচনার কোন দরকার নেই, তাদের ছিন্নভিন্ন করে দিতে হবে।’
গাজায় চলমান যুদ্ধ ২০ লাখের বেশি মানুষের জন্য ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরাইলে ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিল সাধারণ জনগণ। ওই ঘটনায় হামাস ২৫১ জনকে ইসরাইলিকে বন্দি করে। এখনো তাদের হাতে ৪৯ জন বন্দি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৭ জন মারা গেছে বলে ইসরাইল দাবি করেছে।
অন্যদিকে, ইসরাইলের পাল্টা অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৭ হাজার ৫৭৫ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই সাধারণ ফিলিস্তিনি নাগরিক বলে জানায় হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘ ওই সংখ্যা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে।
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বৈরী দুটি দেশ ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষের স্বাক্ষী হয়েছে বিশ্ব। ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্ততায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে দেশ দুটি। তবে এই যুদ্ধবিরতিতে ভরসা করতে পারছে না ইরান। তেহরানের আশঙ্কা, যে কোনো সময় আবারো হামলা করতে পারে ইসরায়েল। আর সেই আশঙ্কা থেকেই এবার জোরকদমে পূর্বপ্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে খামেনি প্রশাসন।
জানা গেছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরপরই চীন থেকে অত্যাধুনিক সারফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের (এসএএম) বিশাল চালান হাতে পেয়েছে ইরান। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা এতটাই শক্তিশালী, ইরানের আকাশসীমার ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান প্রবেশ করাই কঠিন হয়ে পড়বে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন একাধিক আরব গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তারা জানান, ২৪ জুন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরই চীনা এসএএম HQ-9 বা HQ-16 এর এসব ব্যাটারি ইরানে পৌঁছায়। যুদ্ধের সময় ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হওয়া প্রতিরক্ষা কাঠামো পুনর্গঠনের অংশ হিসেবেই এই সরঞ্জাম হস্তান্তর হয়েছে।
আরেক আরব কর্মকর্তা জানান, ইরান তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে তীব্র গতিতে কাজ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকেও এ অগ্রগতির বিষয়ে অবহিত রাখা হয়েছে। জানা গেছে, চীন থেকে এসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার বিনিময়ে ইরান বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল সরবরাহ করছে।
চীন বর্তমানে ইরানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তৃতীয় দেশের মাধ্যমে চীন নিয়মিতভাবে ইরানি তেল আমদানি করছে, যা দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্ককে আরও মজবুত করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চীনা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইরানের আকাশে ইসরায়েলি আধিপত্যের সমাপ্তি ঘটাতে পারে। কারণ, সম্প্রতি ইসরায়েল ইরানের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ও সামরিক বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে ধ্বংসাত্মক হামলা চালায়।
তবে পাল্টা হামলায় ইরানও ইসরায়েলের তেলআবিব ও হাইফার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়।
বর্তমানে ইরান রাশিয়ার এস-৩০০ ছাড়াও দেশীয় প্রযুক্তির খোরদাদ ও বাভার-৩৭৩ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা পরিচালনা করছে, যদিও সেগুলো মার্কিন স্টেলথ ফাইটার F-35 প্রতিরোধে পুরোপুরি কার্যকর নয়। তাই চীনা HQ-9 বা HQ-16 এর মতো আধুনিক এসএএম সিস্টেম ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারে।
চীন ইতোমধ্যেই পাকিস্তান ও মিসরের মতো মিত্রদের কাছে এসব ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করেছে। এবার ইরানেও তা হস্তান্তর, মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির ভারসাম্যে এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সোমবার বলেছেন, তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মনোনীত করেছেন এবং পুরস্কার কমিটির কাছে পাঠানো চিঠির একটি কপি তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে উপহার দেন।
ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
সোমবার রাতে হোয়াইট হাউসের নৈশভোজে অংশ নিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, ‘তিনি আমাদের কথা অনুসারে, একের পর এক দেশে, একের পর এক অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করছেন’।
ট্রাম্প বছরের পর বছর ধরে সমর্থক এবং অনুগত আইন প্রণেতাদের কাছ থেকে একাধিক বার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন এবং মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কারটি বারবার হাতছাড়া হওয়ার কারণে তিনি তার বিরক্তির কথা গোপন করেননি।
এই রিপাবলিকান অভিযোগ করেছেন, ভারত ও পাকিস্তান, সেইসাথে সার্বিয়া ও কসোভোর মধ্যে সংঘাতে মধ্যস্থতার ভূমিকার জন্য নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি তাকে উপেক্ষা করেছে।
তিনি মিশর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে ‘শান্তি বজায় রাখার’ জন্য এবং ইব্রাহিম চুক্তির মধ্যস্থতার জন্যও কৃতিত্ব দাবি করেছেন, যা ইসরাইল এবং বেশ কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে একটি ধারাবাহিক চুক্তি।
ট্রাম্প নিজেকে একজন ‘শান্তি প্রতিষ্ঠাতা’ হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তিনি ইউক্রেন এবং গাজায় দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য তার আলোচনার দক্ষতা ব্যবহার করবেন, যদিও তার প্রেসিডেন্ট হিসাবে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে উভয় সংঘাত এখনও তীব্র।
ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এর একজন উপদেষ্টা বলেছেন, ইরানের এখনো দুই বছর ধরে প্রতিদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর মতো পর্যাপ্ত সামরিক সক্ষমতা রয়েছে।
সোমবার (০৭ জুলাই) মেজর জেনারেল ইব্রাহিম জাব্বারি আধা-সরকারি মেহের নিউজ এজেন্সিকে বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তাদের প্রস্তুতির শীর্ষে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে, আমাদের গুদাম, ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি এবং সুযোগ-সুবিধা এত বিশাল যে, আমরা এখনো আমাদের বেশিরভাগ প্রতিরক্ষা ক্ষমতা এবং কার্যকর ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করতে পারিনি।’
আইআরজিসি উপদেষ্টার ভাষ্য, ‘ইসরায়েল এবং আমেরিকার সঙ্গে যুদ্ধের ক্ষেত্রে, আমরা যদি দুই বছর ধরে প্রতিদিন তাদের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে মারি, তবুও আমাদের স্থাপনাগুলো খালি হবে না।’
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুন ভোরে ইসরায়েল ইরানের মাটিতে বিমান হামলা চালিয়ে আগ্রাসন শুরু করে। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ইরান প্রতিশোধ নেয়।
এরপর নয় দিন ধরে ইসরায়েলি হামলার জবাবে পাল্টা হামলা চালিয়ে যায় ইরান। ২২ জুন ভোরে মার্কিন ভারী বোমারু বিমানগুলো তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ করে এবং সংঘর্ষে প্রবেশ করে।
পরের দিন সন্ধ্যায় তেহরান কাতারে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক বিমানঘাঁটি আল উদেইদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। মার্কিন কর্তৃপক্ষের মতে, কোনো হতাহত বা উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়নি।
এরপর ২৪ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইসরায়েল এবং ইরান সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষও জানায়, তারা মার্কিন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং ইরানের বিরুদ্ধে তাদের অভিযানের সমস্ত উদ্দেশ্য সম্পন্ন করেছে। পরিবর্তে তেহরান বলেছে, তারা আগ্রাসন বন্ধ করতে বাধ্য করে তেল আবিবের ওপর বিজয় অর্জন করেছে।
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম সোমবার জানিয়েছে, তেহরান ৬ জুলাইয়ের মধ্যে কাগজ পত্রবিহীনদের ইরান ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর জুনের শুরু থেকে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার আফগান নাগরিক ইরান থেকে নিজ দেশে ফিরেছেন।
কাবুল থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
তেহরান মে মাসের শেষের দিকে ৬ জুলাইয়ের মধ্যে কাগজপত্রবিহীন আফগানদের দেশত্যাগ করার নির্দেশ দেয়।
এই ঘোষণা ইরানে বাসবাসরত প্রায় ষাট লাখ আফগানের মধ্যে চল্লিশ লাখ আফগানের ওপর এর প্রভাব ফেলছে।
জাতিসংঘের সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গত জুনের মাঝামাঝি থেকে সীমান্ত অতিক্রমকারী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। কিছু দিন ধরে পশ্চিম হেরাত প্রদেশের ইসলাম কালা দিয়ে প্রায় ৪০হাজার লোক পার হতে দেখা গেছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার এক মুখপাত্র এএফপিকে জানিয়েছেন, গত ১ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত ৪ লাখ ৪৯ হাজার ২১৮ জন আফগান ইরান থেকে নিজ দেশে ফিরে গেছে।
তিনি আরো বলেন, এ বছর এখন পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ৬ হাজার ৩শ’ ২৬ জন আফগান ইরান ছেড়েছেন।
অনেকেই কর্তৃপক্ষের চাপ, গ্রেপ্তার ও নির্বাসন এবং দ্রুত দেশত্যাগের তাড়াহুড়োয় ইতিমধ্যেই কিছু অর্থ হারানোর কথা জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক বেসরকারি গোষ্ঠী ও তালেবান কর্মকর্তারা ইরান প্রত্যাবর্তনকারী আফগানদের সহায়তার জন্য আরো তহবিলের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, এই অনুপ্রবেশ ইতোমধ্যেই দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত ধাক্কায় জর্জরিত আফগানিস্তানকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
জোরপূর্বক আফগানদের ফেরত না পাঠানোর জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর শুক্রবার (০৪ জুলাই ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আফগানদের ফিরে যেতে বাধ্য করা বা চাপ দেওয়া, এই অঞ্চলে আরো অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে এবং আফগানদের ইউরোপের দিকে অগ্রসর হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে।’
কোনো অগ্রগতি ছাড়াই ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার সর্বশেষ পরোক্ষ যুদ্ধবিরতি আলোচনা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন আলোচনা সংশ্লিষ্ট এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা। স্থানীয় সময় রবিবার (৬ জুলাই) কাতারের দোহায় দুটি আলাদা ভবনে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, আলোচনা প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলে। কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে দুপক্ষের মধ্যে বার্তা ও ব্যাখ্যা বিনিময় হয়, তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আলোচনার পরবর্তী ধাপ সোমবার (৭ জুলাই) আবার শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। দুপক্ষের মধ্যকার বাধাগুলো দূর করে সমঝোতার পথ খুঁজতে মধ্যস্থতাকারীরা উভয়পক্ষের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করবেন।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে দুই ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার বক্তব্য জানিয়েছে বিবিসি। এতে বলা হয়, ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন—হামাসের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ইসরায়েলি প্রতিনিধি দল ‘যথেষ্ট ক্ষমতাসম্পন্ন’ ছিল না, কারণ তাদের কাছে ‘বাস্তবিক কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা’ ছিল না।
এমন এক সময় এ আলোচনা চলছে, যখন ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার বৈঠকটি যুদ্ধবিরতি ও গাজায় আটক অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে অগ্রগতির ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে তিনি আশা করেন। তিনি আরও জানান, যুদ্ধবিরতি চুক্তি অর্জনের জন্য তিনি তার আলোচকদের ‘পরিষ্কার নির্দেশনা’ দিয়েছেন, যা ইসরায়েলের পক্ষে গ্রহণযোগ্য।
এদিকে, সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক মনোভাব’ দেখানোর দাবি করেছে হামাস। তবে এখনও দুপক্ষের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, যা দূর না হলে চুক্তি সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে তারা।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য হামাসের অন্যতম প্রধান শর্ত হলো—যেকোনো সমঝোতার শেষে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা। এ অবস্থানে তারা এখনও অনড়।
তবে নেতানিয়াহুর সরকার এর আগেও এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এখনও ইসরায়েলি অবস্থানে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রে রওনা হওয়ার আগে নেতানিয়াহু বলেন, তিনি এখনো তিনটি লক্ষ্যেই অটল—‘সব জিম্মি, জীবিত ও মৃতদের মুক্তি ও প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা; হামাসের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করে গাজা থেকে উৎখাত করা; এবং গাজা যেন আর কখনোই ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হয়, তা নিশ্চিত করা।’
কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের জন্য এই পরোক্ষ আলোচনা সহজ হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত মার্চের আগের যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে এ ধরনের নানা উদ্যোগ একই জায়গায় এসে আটকে গেছে।
সেই সময় থেকে ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে তীব্র সামরিক অভিযান শুরু করেছে। পাশাপাশি গাজায় ত্রাণ প্রবেশের ওপর ১১ সপ্তাহের অবরোধও আরোপ করে, যা কয়েক সপ্তাহ আগে আংশিকভাবে শিথিল করা হয়।
ইসরায়েলি সরকার বলছে, এসব পদক্ষেপ হামাসকে আরও দুর্বল করা এবং তাদেরকে আলোচনায় বসতে ও জিম্মিদের মুক্তি দিতে বাধ্য করতেই নেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা হামাসের ১৩০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে এবং বেশ কয়েকজন হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।
তবে গাজায় বেসামরিক প্রাণহানির সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলায় রবিবার অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হলো— কাতারে চলমান এই আলোচনা কি সত্যিই দুপক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবে? আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি নেতানিয়াহুকে রাজি করাতে পারবেন যে, এই যুদ্ধের ইতি টানতে হবে?
ইসরায়েলের অনেকেই মনে করছেন, অবশিষ্ট জিম্মিদের বাঁচাতে যুদ্ধ বন্ধের মূল্য দেওয়ার এখনই সময়।
শনিবার রাতেও তারা জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছিল। এ সময় দ্রুত চুক্তি করে জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানান তারা।
ইয়েমেনের হুদাইদা বন্দরনগরীসহ হুথি বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন এলাকায় একযোগে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। সোমবার ভোরে দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে।
জেরুজালেম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
টেলিগ্রামে দেওয়া বিবৃতিতে ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইয়েমেন থেকে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। যদিও সেনাবাহিনীর দাবি, তারা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিহত করার চেষ্টা করছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, হুথিদের সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। টার্গেটগুলোর মধ্যে ছিল হুদাইদা, রাস ইসা ও সালিফ বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইসরাইল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হুথিদের বারবার হামলার জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে।
হামলার আগে হুথি নিয়ন্ত্রিত আল-মাসিরাহ টেলিভিশন রোববার জানায়, ইসরাইলি শত্রুরা হোদেইদা বন্দর লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। এছাড়া রাস ইসা ও সালিফ বন্দরের পাশাপাশি রাস আল-কাথিব বিদ্যুৎকেন্দ্রেও হামলা হয়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই স্থানগুলোতে সম্ভাব্য হামলার সতর্ক করার আধ ঘন্টা পরেই হামলা চালানো হয়।
২০২৩ সালে অক্টোবরে হামাসের ইসরাইল আক্রমণের পর গাজা যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর থেকেই ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করছে হুথি বিদ্রোহীরা। গত মার্চে দু’মাসের যুদ্ধবিরতি শেষ হলে গাজায় আবারো সামরিক অভিযান শুরু করে তেল আবিব। তখন থেকে ফের হামলা শুরু করে হুথিরাও।
হুথি বিদ্রোহীদের দাবি, তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে এ হামলা চালাচ্ছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে তারা লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিপিং জাহাজগুলোতেও আক্রমণ করছে।
ইসরাইল বলছে, হুথিদের দখলে থাকা ‘গ্যালাক্সি লিডার’ কার্গো জাহাজেও হামলা চালানো হয়েছে। জাহাজটি ২০২৩ সালের নভেম্বরে হুথি বিদ্রোহীরা দখলে নেয়। এরপরে রেড সিতে শিপিং ট্র্যাক করার জন্য সেটিতে রাডার ব্যবস্থাও বসায়।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে লোহিত সাগরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে হুথিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করলে লক্ষ্যবস্তুতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের জাহাজগুলোকেও যুক্ত করে বিদ্রোহীরা।
গত মে মাসে হুথিরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে। যার ফলে তাদের বিরুদ্ধে চলা তীব্র মার্কিন হামলার অবসান ঘটে। কিন্তু ইসরাইলি জাহাজগুলোতে হামলা অব্যাহত রাখে হুথিরা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপক কর ছাড় আইনের জবাবে ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের হুমকি এবার বাস্তবায়ন করার কথা জানিয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। তার এই সিদ্ধান্তকে ‘হাস্যকর’ বলে অভিহিত করেছেন ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় শনিবার (৫ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মাস্ক লিখেছিলেন, ‘দেশকে দেউলিয়া করার এই অপচয় ও দুর্নীতির খেলায় আমাদের এখানে আসলে একদলীয় শাসন চলছে, গণতন্ত্র নয়। আজ আপনাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে আমেরিকা পার্টি গঠন করা হল।’
একসময় ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত মাস্ক ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ (ডিওইজি) নামে পরিচিত সরকারের খরচ কমানো সংস্থার প্রধান ছিলেন। তবে প্রেসিডেন্টের এই কর ছাড় আইন নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেন। শুক্রবার এই আইনটি চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষরিত হয়।
আইনটি কংগ্রেসে পাস হওয়ার পথে থাকতেই মাস্ক হুমকি দেন, ‘যদি এই বেসামাল খরচের বিল পাস হয়, তাহলে আমি আমেরিকা পার্টি গঠন করব।’
যদিও হোয়াইট হাউসে তার শেষ দিকে মাস্ক বলেছিলেন— ভবিষ্যতে তিনি রাজনীতিতে ‘অনেক কম’ অর্থ ব্যয় করবেন।ি
এদিকে, রবিবার (৬ জুলাই) নিউ জার্সির নিজ বাসা থেকে ওয়াশিংটনে ফেরার আগে মাস্কের এই উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘মাস্কের এই উদ্যোগ পুরোপুরি হাস্যকর।’
তিনি আরও বলেন, ‘রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গে আমরা দারুণ সাফল্য অর্জন করেছি। তাছাড়া, ডেমোক্রেটরা তাদের পথ হারিয়েছে, কিন্তু এটা বরাবরই দ্বিদলীয় ব্যবস্থা ছিল। আমার মনে হয় তৃতীয় দল গঠন শুধু বিভ্রান্তিই সৃষ্টি করবে। এটা মূলত দুই দলের জন্যই তৈরি ব্যবস্থা।’
এ ছাড়া, তৃতীয় দলগুলো কখনোই কার্যকর হয়নি বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠন অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে নতুন নয়, তবে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট পার্টির কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য সমর্থন টেনে নেওয়া সাধারণত কঠিন। তবে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মাস্ক, যিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের পেছনে অন্তত ২৫ কোটি ডলার খরচ করেছিলেন।
যদি তিনি ২০২৬ সালের কংগ্রেস নিয়ন্ত্রণ নির্ধারণকারী নির্বাচনে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করেন, তবে ভোটের সমীকরণে বড় প্রভাব ফেলতে পারেন বলে মনে করেন অনেকে।
তবে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার পুনরায় শুরু হওয়া দ্বন্দ্ব মাস্কের জন্য আর্থিকভাবে বিপর্যয়করও হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ সরকার থেকে কোটি কোটি ডলারের চুক্তির ওপর নির্ভরশীল তার ব্যবসা এবং তার কোম্পানি টেসলা ইতোমধ্যেই শেয়ারবাজারে ধাক্কা খেয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে মাস্ক আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন করেছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। রবিবার মাস্ক বা তার রাজনৈতিক কমিটি আমেরিকা পিএসির পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
যদিও রবিবার সকালে মাস্ক এক্স পোস্টের মাধ্যমে পার্টি নিয়ে ব্যবহারকারীদের মতামত নিচ্ছিলেন এবং এই দল ব্যবহার করে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে সক্রিয় হবেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
গত মাসেও ট্রাম্পের বিলের পক্ষে ভোট দেওয়া প্রতিটি কংগ্রেস সদস্যকে তিনি নির্বাচনে পরাজিত করার চেষ্টা করবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন। ওই বিলে ফেডারেল ঘাটতি আরও বাড়াবে বলে সতর্ক করেছিলেন।
এদিকে, রবিবার সিএনএনর ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘ডিওজিউয়ের নীতিগুলো জনপ্রিয় হলেও, ইলন মাস্ক মোটেও জনপ্রিয় ছিলেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, তার পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা কালকের (শনিবার) ঘোষণায় মোটেই খুশি হননি এবং তাকে তার ব্যবসায় মনোযোগ দিতে উৎসাহিত করবেন, রাজনীতিতে নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যায় অন্তত ১৫টি শিশুসহ নিহতের সংখ্যা ৫১ ছাড়িয়েছে। স্থানীয় গোয়াডালুপ নদীর উচ্চপ্রবাহের কারণে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এখনও ২৭ কিশোরীসহ বহু মানুষের সন্ধান মেলেনি। নিখোঁজদের উদ্ধারে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো।
ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান ও এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবরে এসব তথ্য জানা যায়। স্থানীয়রা জানান, নদীর পানি ৪৫ মিনিটের মধ্যে ২৬ ফুট বেড়ে গিয়ে মৃত্যু ও বিপর্যয়ের মুখে পড়েন তারা। মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বহু ঘরবাড়ি, গাড়ি ভেসে গেছে।
শুক্রবার (৪ জুলাই) ভোরে টেক্সাসের কেরি কাউন্টিতে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতে নদীর পানি বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেছে। এতে ওই এলাকায় ৪৩ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া, এর আশপাশের বিভিন্ন জেলায় আরও অন্তত ৮ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা (এনডব্লিউ) কেরি কাউন্টির বিভিন্ন এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি রেখেছে।
গার্ডিয়ান জানায়, গোয়াডালুপ নদীর তীরে ক্যাম্প মিস্টিক নামের খ্রিস্টান মেয়েদের গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে ৭৫০টির বেশি শিশু অবস্থান করছিল। ওই ক্যাম্পের ২৭ কিশোরি এখনও নিখোঁজ রয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনের জানিয়েছে, বন্যার প্রবল ঢলে ভেসে যাওয়াদের উদ্ধারে হেলিকপ্টার ও ড্রোনের মাধ্যমে উদ্ধার অভিযান চলছে। এখন পর্যন্ত ৮৫০ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ১২ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও ৫টি শিশুর পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।
টেক্সাস রাজ্যের জরুরি বিভাগের প্রধান নিম কিড বলেন, ‘প্রতিটি নিখোঁজ ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধারের তৎপরতা চলছে।’
এদিকে, টেক্সাসের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ড্যান প্যাট্রিক বলেন, ‘নিখোঁজদের কেউ কেউ গাছের ডালে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন। আমরা তাদের জীবিত উদ্ধারের জন্য কার্যক্রম চালাচ্ছি।’
নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে কাজ করছে বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টার, কয়েকশত উদ্ধারকারী দল ও দেশটির সেনাসদস্যরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিবারগুলো নিখোঁজ স্বজনদের ছবি দিয়ে সাহায্য চাচ্ছেন।
এদিকে, এত ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির জন্য অনেকেই ট্রাম্প প্রশাসনকে দোষারোপ করছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প প্রশাসন আবহাওয়া বিভাগসহ বিভিন্ন সংস্থায় বাজেট ও কর্মী সংখ্যা ব্যাপক কমিয়েছে।
অনেকের অভিযোগ, এর কারণেই পূর্বাভাস ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে সঠিক সময়ে মানুষের কাছে সকর্তবার্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে, স্থানীয় কর্মকর্তারা অভিযোগ করে জানান, তারা এমন ভয়াবহ বন্যার পূর্বাভাস পাননি।
তবে এই অভিযোগ উড়িয়ে স্থানীয় আবহাওয়া বিভাগের কর্মকর্তা অ্যাভেরি তোমাসকো দাবি করেন, ‘বিপর্যয়ের ১২ ঘণ্টা আগেই কেরি কাউন্টিতে বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।’
দেশটির জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা (এনডব্লিউ) বলছে, শুক্রবার রাতেই অন্তত ৩০ হাজার মানুষের জন্য বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। তবে, স্থানীয়রা জানান, রাতের আঁধারে পরিস্থিতি এত দ্রুত খারাপের দিকে যাবে, সেটি অনেকেই বুঝে উঠতে পারেননি।
উদ্ধার অভিযান চলতে থাকলেও নিখোঁজ শিশুদের ভাগ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে পরিবারগুলোর। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আমরা রাষ্ট্রীয় ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করছি। বন্যাদুর্গতদের পরিবারের প্রতি আমাদের প্রার্থনা ও সমবেদনা রইল।’
টেক্সাসের হিল কান্ট্রি অঞ্চলের অর্থনীতিতে নদী পর্যটনের বড় ভূমিকা রয়েছে। শতবর্ষ পুরনো গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্প ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে প্রতিবছর হাজার হাজার শিশু ও পর্যটক বেড়াতে আসেন।