হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত চীন ও ভারতের মধ্যকার বিতর্কিত সীমান্তে টহলের বিষয়ে একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করে, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে ২০২০ সালে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘাতকে কেন্দ্র করে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা দূর করা সম্ভব হবে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়টি জানিয়েছে। এই চুক্তির বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি সোমবার নয়া দিল্লিতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতীয় ও চীনা কূটনীতিক এবং সামরিক কর্মকর্তারা একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন এবং এই আলোচনার ফলস্বরূপ ভারত-চীন সীমান্তে এলএসি বরাবর টহল দেওয়ার বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছে। যা ২০২০ সালে উত্থাপিত সমস্যাগুলোর সমাধানের দিকে নিয়ে গেছে।’
এলএসি বা ‘লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ বাংলায় যাকে বলা হয়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা-মূলত ভারত ও চীনের মধ্যকার সীমান্তকে নির্দেশ করে। ভারতের উত্তর-পশ্চিমের লাদাখ থেকে পূর্বদিকের অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত চীন-ভারতের মধ্যে ৩ হাজার ৪৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত আছে। এই সীমান্ত ইস্যুতে ১৯৬২ সালে দুই দেশের মধ্যে একদফা যুদ্ধ হয়েছে। একাধিকবার চীনা সেনারা এই সীমানা অতিক্রম করে ভারতে অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছে বলে বিভিন্ন সময়ে নয়া দিল্লি অভিযোগ করেছে।
চুক্তির কথা বললেও এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি মিশ্রি। বিশেষ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে লাদাখের উত্তরে মোতায়েনকৃত হাজার হাজার অতিরিক্ত সেনা প্রত্যাহার করা হবে কি না সে বিষয়টি জানাননি তিনি।
এই ঘোষণা এমন এক সময়ে দেওয়া হলো যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ায় শুরু হওয়া ব্রিকস জোটের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারত ছাড়ছেন। এই শীর্ষ সম্মেলনে চীনও অংশগ্রহণ করছে। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, ব্রিকস সম্মেলনের সাইডলাইনে মোদি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।
এদিকে, এই চুক্তির বিষয়টি গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেছেন, ‘সম্প্রতি, চীন এবং ভারত দুই দেশের সীমান্তের বিষয়গুলো নিয়ে কূটনৈতিক এবং সামরিক চ্যানেলে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করেছে। এখন দুই পক্ষ বিষয়গুলোর সমাধানে পৌঁছেছে, যা নিয়ে চীন অত্যন্ত সন্তুষ্ট।’
এর আগে, ২০২০ সালের জুলাইয়ে লাদাখের গালওয়ানে চীন-ভারতের সামরিক বাহিনীর মধ্যকার সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ ভারতীয় ও ৪ জন চীনা সেনা নিহত হয়। সেই ঘটনার পর ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। সেই ঘটনার পর দুই পক্ষই পার্বত্য অঞ্চলটি হাজার হাজার সেনা, আর্টিলারি, ট্যাংক এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েন করে।
চীন-ভারতের চুক্তির বিষয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণম জয়শংকর বলেন, এই চুক্তি অত্যন্ত ধৈর্যশীল ও অবিচলিত কূটনীতির ফল। এর ফলে ভারত ২০২০ সালের সংঘর্ষের আগে যেভাবে সামরিক পেট্রলিং শুরু হয়েছিল ঠিক সেভাবেই চালিয়ে যেতে পারবে। তিনি বলেন, ‘আশা করছি, আমরা শান্তিতে ফিরতে পারব।’
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ভারত-চীন বিশেষজ্ঞ এবং কলিঙ্গ ইনস্টিটিউটের ইন্দো-প্যাসিফিক স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক চিন্তামণি মহাপাত্র বলেছেন, ‘এটা একটা ইতিবাচক সূচনা। কারণ গত কয়েক মাসে কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে যে আলোচনা হয়েছে তার ফলেই (দুই দেশের মধ্যে) উত্তেজনা হ্রাস সংক্রান্ত সমঝোতা হয়েছে। তবে একটা চুক্তি দুই দেশের মধ্যে সব ধরনের উত্তেজনার অবসান ঘটাতে সক্ষম হবে এমনটা নয়। তবে একে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।’
সমঝোতার বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছেন অধ্যাপক মহাপাত্র। তার কথায়, ‘এই সমঝোতা ডিসএনগেজমেন্ট সংক্রান্ত। এটা কিছু এলাকায় ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং কিছু অঞ্চলে এখনো বাকি আছে। গত মাসে ভারতীয় সেনাপ্রধানও বলেছিলেন, সহজ সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে গিয়েছে এবং আগামী সময়ে কঠিন বিষয়গুলোর সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
কিছু বিশেষজ্ঞ আবার এলএসি সম্পর্কিত সাম্প্রতিক ঘোষণাকে ‘সতর্কতার’ সঙ্গে পর্যবেক্ষণের কথা বলেছেন। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো তনভি মদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটারে)-এ লিখেছেন, ‘২০১৭ সালের ডোকলাম সংকটও ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের আগেই সমাধান হয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির চীন সফরের পথ প্রশস্ত হয়েছিল।’
রাশিয়ায় দরূপ্রাচ্যের কামচাটকা উপদ্বীপ উপকূলে শুক্রবার ভোরে ৭.৮ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এতে স্থানীয় ভবনগুলো কেঁপে ওঠে এবং সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়। অবশ্য পরে তা তুলে নেওয়া হয়।
মস্কো থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
রাশিয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে ঘরবাড়ির আসবাবপত্র এবং আলোর সরঞ্জাম কাঁপতে দেখা যায়। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে রাস্তার পাশে পার্ক করা গাড়ি দুলছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ওই অঞ্চলটির রাজধানী পেট্রোপাভলভস্ক-কামচাটস্কি থেকে ১২৮ কিলোমিটার (৮০ মাইল) পূর্বে এবং ১০ কিলোমিটার (ছয় মাইল) গভীরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
যদিও রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় ভূতাত্ত্বিক পরিষেবা জানিয়েছে, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৪। পরে আরও পাঁচবার আফটারশক অনুভূত হয়েছে।
মার্কিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি সতর্কীকরণ কেন্দ্র আশেপাশের উপকূলীয় এলাকায় বিপজ্জনক ঢেউ আসার সম্ভাবনায় সতর্কতা জারি করেছিল। তবে কয়েক ঘণ্টা পর তা প্রত্যাহার করে নেয়।
আঞ্চলিক গভর্নর ভ্লাদিমির সোলোদভ টেলিগ্রামে বলেছেন, আজ (শুক্রবার) ভোরের ঘটনা আবারও কামচাটকার বাসিন্দাদের সহনশীলতার পরীক্ষা নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। এসময় সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানান গভর্নর।
কামচাটকা উপদ্বীপটি প্যাসিফিক মহাসাগরের চারপাশে থাকা ‘রিং অফ ফায়ার’ নামে ভূমিকম্পপ্রবণ টেকটোনিক বেল্টে অবস্থিত। এটি সুনামি এবং ভূমিকম্প সংবেদনশীল এলাকা হিসেবে পরিচিত।
জুলাই মাসে, এই অঞ্চলের উপকূলে ৮.৮ মাত্রার মেগা-ভূমিকম্পের কারণে সুনামি সৃষ্টি হয়। এতে উপকূলীয় একটি গ্রাম সমুদ্রে ভেসে যায় এবং প্যাসিফিক এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে সব ধরনের সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণে তিন দিনের সামরিক মহড়া শুরু করেছে ভেনিজুয়েলা। বৃহস্পতিবার ‘ক্যারিবিয়ান ২০০’ নামের এই মহড়া শুরু হয়।
দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনো লোপেজ বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর নির্দেশে, আমি সার্বভৌম ক্যারিবিয়ান মহড়া শুরু করার নির্দেশ দিচ্ছি। এটি আমাদের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা জোরদার করবে।’
তিনি জানান, তিন দিনের এই মহড়ায় ভেনিজুয়েলার সকল ধরনের সশস্ত্র বাহিনী অংশগ্রহণ করবে - মহাকাশ, বিশেষ, পুনর্গঠন, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ, নৌ, বিমান, স্থল ও মহাকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী।
ক্যারিবীয় অঞ্চলে সম্প্রতি মার্কিন নৌবাহিনী মোতায়েনের মধ্যে এই মহড়া পরিচালিত হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট মাদুরোর মতে, ভেনিজুয়েলা গত ১০০ বছরে দেখা সবচেয়ে বড় মার্কিন আগ্রাসনের হুমকির মুখোমুখি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে মাদক পাচারকারী চক্র পরিচালনা এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার যোগাযোগের অভিযোগ এনেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
১৯ আগস্ট পেন্টাগন সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, মাদক চোরাকারবারীদের হুমকি মোকাবিলার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ভেনিজুয়েলার কাছে তিনটি মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী জাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে।
আরেক প্রতিবেদনে ইউএসএস নিউপোর্ট নিউজ জানিয়েছে, সাবমেরিন, ইউএসএস লেক এরি মিসাইল ক্রুজার, অবতরণকারী জাহাজ এবং ৪ হাজার ৫০০ সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গোপনে কিছু ল্যাটিন আমেরিকার মাদক চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে পেন্টাগনকে সামরিক শক্তি ব্যবহার শুরু করার নির্দেশে সই করেছেন।
তবে কয়েক সপ্তাহ ধরেই ভেনেজুয়েলার নেতা উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্র সামরিক হুমকির মাধ্যমে তার দেশের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন চাইছে।
ফরাসি সরকারের বাজেট সংকোচন ও কৃচ্ছ্র নীতির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ধর্মঘট ও বিক্ষোভ মঙ্গলবার ভোর থেকেই শুরু হয়েছে। রাজধানী প্যারিস থেকে মার্সেই, লিওন, নান, রেনেস, মনপেলিয়ে, বোর্দো ও তুলুজসহ বড় শহরগুলোতে জনজীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
শিক্ষক, ট্রেন চালক, হাসপাতালের কর্মী, ফার্মাসিস্ট ও কৃষকরা আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও প্রবেশপথ অবরোধ করেছে।
শ্রমিক ইউনিয়নগুলো বলছে, জনসেবার খরচ কমানো এবং পেনশন পাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় কাজ করার প্রস্তাব সম্পূর্ণ অন্যায়।
তারা দাবি করছে, ধনীদের ওপর কর বাড়াতে হবে এবং জনসেবায় বাজেট বাড়ানো হবে।
সিজিটি ইউনিয়নের প্রধান সোফি বিনে জানিয়েছেন, যতদিন না শ্রমিকদের দাবি পূরণ হচ্ছে, ততদিন আন্দোলন চলবে। তার কথায়, বাজেটের সিদ্ধান্ত রাস্তাতেই হবে।
প্যারিসে সকাল থেকেই বহু মেট্রো লাইন বন্ধ ছিল। ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে এবং স্কুলের প্রবেশপথও বন্ধ ছিল। মার্সেইতে প্রধান সড়ক, লিওনে আবর্জনা জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করা হয়। নানে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়, রেনেসে একটি বাস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, মনপেলিয়েতে রাউন্ডঅ্যাবাউট অবরোধ হলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে। বোর্দো ও তুলুজে ট্রেন সেবা ব্যাহত হয় এবং কয়েকটি সড়ক বন্ধ হয়।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও প্রভাব পড়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতি তিনজন শিক্ষকের একজন ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন।
ফার্মেসি ইউনিয়নের জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৯৮ শতাংশ ফার্মেসি দিনভর বন্ধ ছিল।
সরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি ইডিএফ জানায়, ভোরে ফ্ল্যাম্যানভিল পারমাণবিক চুল্লিতে উৎপাদন প্রায় ১.১ গিগাওয়াট কমে যায়।
ফ্রান্সের অর্থনীতি বর্তমানে বড় ধরনের বাজেট ঘাটতিতে জর্জরিত। গত বছর ঘাটতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমার প্রায় দ্বিগুণ। নতুন প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়েন লেকর্নু ২০২৬ সালের বাজেট পাশ করানোর চেষ্টা করছেন, তবে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় তা কঠিন। তার পূর্বসূরি ফ্রাঁসোয়া বেইরু ৪৪ বিলিয়ন ইউরোর কৃচ্ছ্র পরিকল্পনা নিয়ে সংসদে আস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন।
ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ধর্মঘট ও বিক্ষোভে প্রায় ৮ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে ৮০ হাজার পুলিশ ও জেন্ডারমেরি মোতায়েন করা হয়েছে।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রিটেইলউ বলেছেন, অন্তত ৮ হাজার বিক্ষোভকারী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। এজন্য দাঙ্গা দমন বাহিনী, সাঁজোয়া যান ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।
ফ্রান্সজুড়ে এই আন্দোলন শুধু অর্থনৈতিক অসন্তোষ নয়, প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সরকারের জন্য বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। ইউনিয়নগুলো জানিয়েছে, তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত রাজপথেই সরকারের বাজেটের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে।
উল্লেখ্য, ফরাসি সরকারের বাজেট সংকোচন ও কৃচ্ছ্র নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন কয়েক ধাপে বেড়ে ওঠে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ‘Bloquons Tout’ (Block Everything) তত্ত্বগত আন্দোলনটি মিড-২০২৫ থেকে সক্রিয় হতে থাকে। সেপ্টেম্বরের শুরুতেই তা রাস্তায় দৃশ্যমান হয়। প্রথম বড় গোলযোগ হিসেবে ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ মহাসড়ক অবরোধ, ব্যারিকেড জ্বালানো এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর ইউনিয়নগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর জন্য দেশব্যাপী ধর্মঘট ও বিক্ষোভ ডাক দেয়।
ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে স্বাক্ষর সংগ্রহে নেমেছে জাজিম নামের একটি অ্যাডভোকেসি সংস্থা। এরই মধ্যে এ দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে জাজিমের পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন ৭ হাজার ৫ শতাধিক ইসরায়েলি।
সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ইসরায়েলে অবস্থিত বামপন্থি ইহুদি ও আরবদের রাজনৈতিক সংগঠন জাজিম, যারা মূলত বিভিন্ন ইস্যুতে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিবেশের অধিবেশন শুরু হবে। তাদের লক্ষ্য তার আগেই ১০ হাজারের বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তাদের পিটিশন সেই অধিবেশনে পাঠানো।
ইসরায়েলে অবস্থিত একটি রাজনৈতিক সংগঠন জাজিম, যারা বামপন্থি ইহুদি ও আরবদের নিয়ে কাজ করে, তারা স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে একটি পিটিশন শুরু করেছে। এই পিটিশনে এরই মধ্যে ৭ হাজার ৫০০-এর বেশি ইসরায়েলি স্বাক্ষর করেছেন। সংগঠনটির লক্ষ্য হলো, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন শুরু হওয়ার আগেই ১০ হাজারের বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করা এবং তা অধিবেশনে পেশ করা।
সংগঠনটির পিটিশনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া মানে ইসরায়েলের জন্য কোনো শাস্তি নয়; বরং এর মাধ্যমে এই অঞ্চলের উভয় জাতিগোষ্ঠীর জন্য একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি না দিলে ইসরায়েলের নিরাপত্তা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হবে এবং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মতো কট্টরপন্থি নেতারা বর্ণবাদ ও সহিংসতাকে উসকে দেবেন, যা ইসরায়েলকে ভবিষ্যতে আরও গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দেবে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সাল থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের হামলার জবাব দিতে গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। সে অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৬৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৭০ হাজারের অধিক।
এই অভিযান বন্ধের জন্য জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার আহ্বান জানালেও নেতানিয়াহু জানিয়েছেন যে, হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল ও জিম্মিদের মুক্ত না করা পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি আরও শক্তিশালী হচ্ছে, যা ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজকীয় আয়োজনে নজর কেড়েছেন কেট মিডলটন। স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পকে নিয়ে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে সফর করছেন ট্রাম্প। তার এই সফরকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সময় গত বুধবার রাতে উইন্ডসর ক্যাসলের সেন্ট জর্জেস হলে রাজকীয় নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। সেখানে প্রয়াত প্রিন্সেস ডায়ানার বিখ্যাত ‘লাভার্স নট টিয়ারা’ পরে প্রিন্স উইলিয়ামের সঙ্গে হাজির হন প্রিন্সেস অব ওয়েলস কেট মিডলটন। খবর এবিসি নিউজ।
ভোজ সভায় প্রবেশের সময় উইলিয়াম ও কেট একসঙ্গে হাঁটেন। তাদের ঠিক পরেই প্রবেশ করেন প্রেসিডেন্টের মেয়ে টিফানি ট্রাম্প ও তার স্বামী মাইকেল বুলস।
কেট পরেছিলেন ব্রিটিশ ডিজাইনার ফিলিপা লেপলির ডিজাইন করা সোনালি রঙের একটি গাউন এবং বিখ্যাত লাভার্স নট টিয়ারা। ব্রিটিশ রাজপরিবারের ঐতিহ্যবাহী অলংকারের একটি এই লাভার্স নট টিয়ারা মুকুট। এই সাজে তিনি সবার নজর কেড়েছেন। মুক্তা ও হীরার তৈরি এই টিয়ারাটি কেট আগেও বহু রাজকীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহার করেছেন। এটি তৈরি করা হয় ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ রানি মেরির জন্য। তিনি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের দাদি ছিলেন। প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মুকুটটি ডায়ানাকে দিয়েছিলেন। তারও প্রিয় অলংকার ছিল এই মুকুট।
ভোজ সভায় কেটকে বসানো হয়েছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাশে। ট্রাম্পের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। ভোজসভায় প্রবেশের সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা।
দিনের শুরুতে উইলিয়াম ও কেট উইন্ডসর ক্যাসেলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডিকে স্বাগত জানান। উইলিয়াম পরেছিলেন গাঢ় স্যুট ও টাই, আর কেট পরেছিলেন মেরুন রঙের কোট ড্রেস এবং হ্যাট। তারা মেরিন ওয়ান থেকে নেমে আসা ট্রাম্প দম্পতিকে করমর্দনের মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানান।
ট্রাম্প আধুনিক সময়ের একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান যিনি ব্রিটিশ রাজপরিবারের কাছ থেকে দুবার রাষ্ট্রীয় সফরের আমন্ত্রণ পেয়েছেন। এর আগে ২০১৯ সালে প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও তাকে আতিথেয়তা দিয়েছিলেন।
পরে ট্রাম্প দম্পতি ও রাজপরিবার ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে উইন্ডসর ক্যাসেলে যান এবং সেখানে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। মধ্যাহ্নভোজ শেষে রাজা চার্লস ও রানি ক্যামিলা প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডিকে নিয়ে রয়্যাল কালেকশনের প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। এরপর কেট ও উইলিয়াম মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে নিয়ে একই প্রদর্শনী পরিদর্শন করান।
গাজায় তীব্র হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এক দিনেই অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় আরও কমপক্ষে ৮৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৬১ জনই গাজা সিটির। সেখানে বড় ধরনের সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞার হুমকির পরেও আগ্রাসন বন্ধ হচ্ছে না। খবর আল জাজিরার।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা উত্তর গাজার লাখো বাসিন্দাকে কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণাঞ্চলের জনবহুল শরণার্থী শিবিরে ঠেলে দিতে ‘চরম চাপ’ প্রয়োগ করছে।
কাতারে ইসরায়েলি হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া হামাসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব অল্পের জন্য একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে গেছেন।
ইসরায়েলের চরম ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ গাজাকে সম্ভাব্য রিয়েল এস্টেটের ‘সোনার খনি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং জানিয়েছেন তিনি এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গাজা ভাগাভাগির বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলা গাজা সংঘাতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৫ হাজার ৬২ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৭ জন। ধারণা করা হচ্ছে, আরও কয়েক হাজার মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।
গাজার প্রধান আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়েছে ইসরায়েলি ট্যাংক
গাজা সিটির একটি প্রধান আবাসিক এলাকায় কয়েক ডজন ইসরায়েলি ট্যাংক এবং সামরিক বাহন ঢুকে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা। বলা হচ্ছে, ইসরায়েলের স্থল অভিযানের দ্বিতীয় দিনেই গাজা শহর দখলের লক্ষ্যে অভিযান শুরু হয়েছে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ট্যাংক, বুলডোজার এবং সাঁজোয়া যানগুলো উত্তর গাজা সিটির শেখ রাদওয়ানের পথে চলেছে। নিজেদের অগ্রযাত্রাকে আড়াল করার জন্য ইসরায়েলি বাহিনী কামানের গোলা এবং স্মোক বোমা নিক্ষেপ করায় চারদিকে মেঘের মতো ঘন ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে।
যুদ্ধের আগে এই শেখ রাদওয়ান জেলায় কয়েক হাজার মানুষের বসবাস ছিল। এটি সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত।
গাজা সিটিতে ইসরায়েলের অভিযানের লক্ষ্য হলো- হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্ত করা এবং সেখানে থাকা হামাসের আনুমানিক তিন হাজার যোদ্ধাকে পরাজিত করা। ইসরায়েল এই দলটিকে ‘সবশেষ শক্ত ঘাঁটি’ হিসেবে অভিহিত করেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে এই অভিযানের ব্যাপক নিন্দা করা হয়েছে।
এদিকে গাজার পরিস্থিতি ‘অমানবিক ও বিবেকহীন’ বলে সতর্ক করেছে সেভ দ্য চিলড্রেন এবং অক্সফামসহ ২০টির বেশি প্রধান দাতা সংস্থার নেতারা।
গত বুধবারের অনুপ্রবেশের পর আশেপাশের ভবন এবং প্রধান সড়কগুলোতে ভারী বিমান হামলা চালানো হয়েছে যা স্থল অভিযানের প্রস্তুতি বলে মনে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শেখ রাদওয়ানের বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা সাদ হামাদা পরিবার নিয়ে গত বুধবার সকালেই দক্ষিণে পালিয়ে গেছেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, ড্রোনগুলো কিছুই বাকি রাখেনি। তারা সোলার প্যানেল, বিদ্যুৎ জেনারেটর, পানির ট্যাংক, এমনকি ইন্টারনেট নেটওয়ার্কেও আঘাত করেছে।
তিনি বলেন, জীবন একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বিপদ থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ মানুষ চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। আবু ইস্কান্দার, আল তাওয়াম এবং আল সাফতাওয়ি এলাকাগুলো শেখ রাদওয়ানের অন্তর্ভুক্ত।
আল-জালা সড়ক দিয়ে এই শেখ রাদওয়ান বিভাজিত, যেটি গাজা সিটির মধ্যবর্তী অঞ্চলের সঙ্গে এর উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাগুলো সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। শহরের আরও গভীরে ইসরায়েলি বাহিনী নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে এবং কেন্দ্রীয় এলাকাগুলোতে পৌঁছানোর পথ খুলে দিতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
গাজা সিটির সড়কে ট্যাংকের ছবি ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বিশেষ করে যারা এখনো শহরের পশ্চিম এবং কেন্দ্রীয় অংশে রয়েছেন।
ট্যাংকগুলো বাড়ির দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ইসরায়েলের আগের হামলার স্মৃতি জাগিয়ে তোলে, যেটা পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
শেখ রাদওয়ানে ইসরায়েলি বাহিনীর এই অনুপ্রবেশের ফলে এখন আরেক দফায় মানুষের ঘরবাড়ি ছাড়ার ঢেউ শুরু হয়েছে ফলে হাজার হাজার পরিবার দক্ষিণে পালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সালাহেদীন রোড দিয়ে দক্ষিণে যাওয়ার পথ খুলে দেওয়ার সাথে সাথে সড়কে গাড়ি এবং জিনিসপত্র বোঝাই করা বাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
পরিবহন সংকট এবং অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে ভ্রমণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগছে এবং শত শত শেকেল খরচ করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
এই যুদ্ধের আগে, শেখ রাদওয়ান গাজা সিটির ব্যস্ততম এলাকাগুলোর মধ্যে একটি ছিল। কয়েক ডজন স্কুল, মসজিদ এবং দোকানপাটের শহর ছিল এটি।
গত কয়েক মাসে শেখ রাদওয়ান এলাকা বেশ কয়েকবার বিমান হামলার শিকার হয়েছে এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। তবে এলাকার একদম ভেতরে ট্যাংকের উপস্থিতি এখন ইসরায়েলের স্থল অভিযানের একটি উল্লেখযোগ্য নতুন ধাপ।
গত বুধবার সকালে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ঘোষণা করেছে, স্থল বাহিনীকে সাহায্য করতে দুদিনে তারা গাজা সিটি জুড়ে দেড়শর বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, অভিযানের অংশ হিসেবে তারা আইডিএফ বিস্ফোরক ভর্তি পুরোনো সামরিক যানবাহন ব্যবহার করছে। যেগুলো দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সংস্কার করা হয়েছে।
এই যানবাহনগুলো হামাসের ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে বলে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
সেখানকার বাসিন্দা নিদাল আল শেরবি বিবিসি অ্যারাবিকের মিডল ইস্ট ডেইলি প্রোগ্রামকে বলেছেন, গত রাত খুব কঠিন ছিল, রাত থেকে ভোর পর্যন্ত অবিরত বিস্ফোরণ এবং গোলাগুলি অব্যাহত ছিল।
ইসরায়েলি যানবাহন শেখ রাদওয়ান, তাল আল-হাওয়া এবং সেজাইয়া থেকেও অগ্রসর হয়েছে। এটা খুবই, খুবই ভয়াবহ রাত ছিল।
দাতা সংস্থা, জাতিসংঘের সংস্থা এবং অন্যান্যরা বলছেন, মানবিক এলাকা সেখানেই হবে যেখানে মানুষ স্থানান্তরিত হবে, প্রচুর মানুষের ভীড় হবে।
গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরাইলের স্থল হামলা ইতোমধ্যেই সেখানকার হাসপাতালগুলোকে ‘ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে’ নিয়ে গেছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিসুস বৃহস্পতিবার সতর্ক করেছেন।
জেনেভা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
তিনি এই অমানবিক পরিস্থিতির অবসান দাবি করে বলেন, ‘গাজার উত্তরাঞ্চলে সামরিক অনুপ্রবেশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার আদেশ নতুন করে মানুষকে বাস্তুচ্যুতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে আর এর ফলে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে মানবিক মর্যাদার অযোগ্য একটি সঙ্কুচিত এলাকায় যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।’
টেড্রোস আধানম গেব্রিসুস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ সতর্ক করেছেন যে হাসপাতালগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি রোগী ভর্তি আছে এবং ক্রমবর্ধমান সহিংসতায় এগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। ডব্লিউএইচও-এর প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও চিকিৎসা সারঞ্জামাদি সরবরাহ প্রদানে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বৃহস্পতিবার গাজায় যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির সর্বশেষ আহ্বানের ওপর ভোটাভুটি করবে।
বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো সত্ত্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা এই পদক্ষেপকে সমর্থন করেছে।
জাতিসংঘ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের প্রায় দুই বছরের আগ্রাসনের পর জাতিসংঘের দুর্ভিক্ষের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায়, ১০টি অস্থায়ী সদস্য আগস্টের শেষের দিকে বর্তমান খসড়া প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শুরু করে।
পূর্ববর্তী একটি খসড়ায় প্রাথমিকভাবে সাহায্যের ক্ষেত্রে বাধা অপসারণের দাবি করা হয়েছিল।
পূর্ববর্তী ভেটোটি কাউন্সিলের অন্য ১৪ সদস্যের মধ্যে অস্বাভাবিক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। যারা গাজার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বন্ধ করতে ইসরাইলকে চাপ দিতে তাদের স্পষ্ট অক্ষমতার জন্য ক্রমবর্ধমান হতাশা প্রকাশ করছে।
বৃহস্পতিবার ভোটের জন্য প্রস্তুত খসড়াটিকে এএফপি পর্যালোচনা করেছে। তাতে সাহায্যের প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং সকল পক্ষ ‘গাজায় অবিলম্বে, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির’ দাবি জানিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই একাধিকবার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। সম্প্রতি জুন মাসে তারা তাদের মিত্র ইসরাইলকে সমর্থন করার লক্ষ্যে ভেটো প্রয়োগ করে।
একজন ইউরোপীয় কূটনীতিক এএফপিকে বলেছেন, সর্বশেষ প্রচেষ্টা হলো— মার্কিন ভেটোর হুমকির কাছে নতি স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানানো।
তিনি আরো বলেন, ‘চেষ্টা না করাই যুক্তরাষ্ট্রের কাজকে খুব সহজ করে তুলবে। কারণ তাদেরকে এর ন্যায্যতা প্রমাণ করতে হবে না এবং কাউন্সিলের ১৪ সদস্য ও বিশ্ব জনসাধারণের মুখোমুখি হতে হবে না।’
ওই কূটনীতিক বলেন, ‘এটি মাঠে ফিলিস্তিনিদের খুব বেশি সাহায্য করবে না। কিন্তু অন্তত আমরা দেখাতে পারব যে আমরা চেষ্টা করছি।’
মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো, জাতিসংঘ-নির্ধারিত একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন তাদের স্বাধীন বিশ্লেষণ দিয়েছে, যেখানে ইসরাইলকে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনিদের ‘ধ্বংস’ করার উদ্দেশ্যে গাজায় ‘গণহত্যা’ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিষয়টি আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় বার্ষিক জাতিসংঘ শীর্ষ সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ স্থল অভিযান শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় নগরী গাজা সিটি দখলের জন্য ইসরায়েলি বাহিনী তীব্র বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালাচ্ছে এবং ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদে সামরিক কৌশল ব্যবহার করছে।
স্থানীয়দের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) অঞ্চলটির প্রধান আবাসিক এলাকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বোমাবর্ষণ-গোলাগুলির মধ্যেই প্রাণ নিয়ে পালাচ্ছেন ফিলিস্থিনিরা। বর্বর এই হামলাকে ‘ভয়াবহ’ বলে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস।
গাজা দখলে ইসরায়েলের পরিকল্পনার শুরুর দিকে অনেকেই তা উপেক্ষা করে সেখানে থেকে গিয়েছিলেন। তবে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা জোরালো করে। একের পর এক আবাসিক ভবনগুলো বোমা মেরে ধুলিসাৎ করে দিচ্ছে। প্রাণ বাঁচাতে দক্ষিণে পালাতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা।
গত মঙ্গলবার গাজা শহরে অন্তত ৯১ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালাতে থাকা ফিলিস্তিনিদের বহনকারী একটি গাড়িতে বোমা হামলা চালায় দখলদার বাহিনী। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সতর্ক করেছে যে, গাজা সিটিতে ইসরায়েলি অভিযানের ফলে মৃতের সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যাবে।
ওপর থেকে বোমাবর্ষণের পাশাপাশি বোমা বোঝাই রোবট দিয়ে উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব গাজা ধ্বংস করছে ইসরায়েল। অধিকার গোষ্ঠী ইউরো-মেড মনিটর এ মাসের শুরুতে জানিয়েছে, ২০টি করে বাড়ি ধ্বংস করতে সক্ষম এমন ১৫টি রোবট মোতায়েন করা হয়েছে।
দুই বছরের যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি গাজা শহরে ফিরে এসে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বসবাস শুরু করেছিলেন। তবে এখন শহরটিতে কত মানুষ রয়েছেন তা নিয়ে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ইসরায়েলের এক সামরিক কর্মকর্তা গত মঙ্গলবার বলেন, আনুমানিক সাড়ে ৩ লাখ ফিলিস্তিনি গাজা শহর ছেড়ে পালিয়েছেন যদিও গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, শুধু শহরের কেন্দ্র এবং পশ্চিমাঞ্চল থেকে সাড়ে ৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যার মধ্যে ১ লাখ ৯০ হাজার মানুষ সম্পূর্ণভাবে শহর ছেড়ে চলে গেছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধকে গণহত্যা বলে মন্তব্য করেছে। প্রায় দুই বছরের যুদ্ধ ও প্রায় ৬৫ হাজার মানুষের মৃত্যুর পর একে ফিলিস্তিনের জন্য একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। কমিশন তার রিপোর্টে বলেছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের প্রকাশ্য বিবৃতিতে এটা স্পষ্ট যে জাতি হিসেবে ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করার ‘সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য’ ছিল ইসরায়েলের।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য হামাসকে কড়া বার্তা দিয়েছেন। এছাড়া পশ্চিম তীরের নাবলুসেও ইসরায়েলি সেনাদের অভিযান চলছে। স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে যে, কাফর কিল্লাল শহরে আইডিএফ শব্দ বোমা নিক্ষেপ করেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বর্ধিত এই স্থল হামলায় তাদের দুটি ডিভিশন অংশ নিয়েছে, যেখানে ২০ হাজারেরও বেশি সেনা রয়েছে। ইসরায়েল এই হামলা শুরুর আগে শহরটির সব বাসিন্দাকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু এখনো সেখানে প্রায় ৬ লাখ মানুষ রয়ে গেছেন।
গাজা সিটি ছাড়তে বাসিন্দাদের জন্য ‘অস্থায়ী’ রুট ইসরায়েলের
গাজা সিটি থেকে বেসামরিক মানুষদের সরিয়ে নিতে নতুন একটি অস্থায়ী রুট খোলা হচ্ছে বলে গতকাল বুধবার জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
ইসরায়েলি সেনারা গতকাল বুধবার জানিয়েছে, ‘সালাহ আল-দ্বিন স্ট্রিটের মাধ্যমে একটি অস্থায়ী পরিবহন করিডর’ খোলা হচ্ছে। এএফপির প্রকাশিত ছবিতে গাজায় নতুন করে হামলার দৃশ্য দেখা গেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আরবিভাষী মুখপাত্র কর্নেল আভিখাই আদরেই বলেন, করিডরটি গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর থেকে ৪৮ ঘণ্টা খোলা থাকবে।
এর আগে সেনারা গাজা সিটি থেকে উপকূলীয় সড়ক দিয়ে দক্ষিণের আল-মাওয়াসিসহ তথাকথিত মানবিক এলাকায় যেতে বেসামরিক মানুষদের অনুরোধ করছিল। সালাহ আল-দ্বিন স্ট্রিট গাজা উপত্যকার উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত বিস্তৃত।
ফিলিস্তিনের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের দিনটি। সেদিন ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাসের হামলার জেরে গাজায় প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল।
২৩ মাসে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে নিহত হয়েছেন ৬৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি এবং এসব হামলা বন্ধেরও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
তবে ওই যুদ্ধে শুধু ফিলিস্তিনিরাই ভুক্তভোগী- বিষয়টি এমন নয়। সম্প্রতি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পুনর্বাসন দপ্তর অসুস্থ সেনাদের বিষয়ে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে।
দপ্তরটি জানায়, গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে তারা মোট ২০ হাজারেরও বেশি আহত ইসরায়েলি সেনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।
আহতদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি সেনা এক বা একাধিক মানসিক রোগে ভুগছেন। গত রোববার দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি জানানো হয়।
যুদ্ধের সময় যেসব সেনা রিহ্যাব কেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে (পিটিএসডি) ও অন্যান্য মানসিক রোগে ভুগছেন।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সার্বিকভাবে ২০ হাজার আহত সেনার ৪৫ শতাংশ শারীরিক আঘাত পেয়েছেন। ৩৫ শতাংশ পিটিএসডি ও অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় ভুগছেন।
প্রায় ২০ শতাংশ একইসঙ্গে শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। ২০ হাজার আহত সেনার মধ্যে ৬৪ শতাংশই রিজার্ভ সেনা।
যুদ্ধ চলার সময় প্রতি মাসে গড়ে এক হাজার আহত সেনাকে চিকিৎসা দেয় পুনর্বাসন দপ্তর। পাশাপাশি, আগের যুদ্ধে আহতদের মধ্য থেকেও অন্তত ৬০০টি অনুরোধ আসে গড়ে।
গাজায় চলমান আগ্রাসন ও আগের যুদ্ধও মিলিয়ে পুনর্বাসন দপ্তর মোট ৮১ হাজার ৭০০ সেনাকে চিকিৎসা দিচ্ছে। তাদের ৩৮ শতাংশ (সংখ্যা ৩১ হাজার) মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন।
পূর্বাভাস মতে, ২০২৮ সাল নাগাদ ওই দপ্তরে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়াবে। তাদের অন্তত ৫০ শতাংশ পিটিএসডি ও অন্যান্য মানসিক রোগে ভুগবেন।
পুনর্বাসন দপ্তরের বার্ষিক বাজেট প্রায় আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ করা আছে। পুনর্বাসন দপ্তরের কর্মকর্তারা কয়েকটি ‘জাতীয় উদ্বেগের’ উৎস চিহ্নিত করেছেন।
তাদের মতে, আগামী বছরগুলোতে ইসরায়েল আরও নতুন নতুন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকবে আহতের সংখ্যা।
বিশেষ করে, মানসিক রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাবেন দেশটির বিশেষজ্ঞরা। বাড়তে পারে আত্মহত্যার প্রবণতাও। ইতোমধ্যে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ থেরাপিস্টের অভাবে ভুগছে ইসরায়েল।
কর্মকর্তাদের মত, অবিলম্বে এ বিষয়গুলোর জন্য অগ্রিম প্রস্তুতি নিয়ে কাজ শুরু করা উচিত।
পুনর্বাসন দপ্তরে কর্মী সংকট রয়েছে। আপাতত প্রতি ৭৫০ জন রোগীর জন্য মাত্র একজন পুনর্বাসন কর্মী কাজ করছেন। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে নতুন কর্মী নিয়োগ বেশ জটিল হয়ে পড়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, আহতের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। তাদের বিভিন্ন অভিনব ও অনন্য শারীরিক-মানসিক চাহিদা মেটানোর জন্য এসব জটিলতা দূর করতে হবে।
এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে সম্প্রতি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মৎরিচ একটি সরকারি কমিটি গঠন করেছেন। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন লেমিত হেলথ সার্ভিসেস নামের সংগঠনের চেয়ারম্যান ড. শ্লোমো মোর-ইয়োসেফ। তিনি ও তার দল আহত আইডিএফ সেনাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করার জন্য সুপারিশ দেবেন।
ওই কমিটি আহত সেনাদের শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো পর্যালোচনা করবেন এবং সার্বিকভাবে এর মানোন্নয়নের জন্য সুপারিশ দেবেন।
ধাপগুলোর মধ্যে আছে আহত সাবেক ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাদের উপযুক্ত স্বীকৃতি দেওয়া, শারীরিক-মানসিক চিকিৎসার মধ্যে সমন্বয়, পঙ্গু বা বিকলাঙ্গ হয়ে পড়া সেনাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান, হতাহত সেনাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সহায়তা এবং পুনর্বাসন দপ্তরের বাজেট ও মানবসম্পদ বরাদ্দ দেওয়া।
টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া আগ্রাসনে পর্যন্ত মোট ৯০৪ সেনা নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩২৯ জন ৭ অক্টোবর নিহত হন এবং পরবর্তীতে গাজার স্থল অভিযানে বাকি ৪৬০ জন নিহত হন।
পাশাপাশি, ইসরায়েলে হিজবুল্লাহর হামলায় নিহত ২৯ ও লেবাননের স্থল অভিযানে নিহত ৫১ জনও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। পশ্চিম তীর ও ইসরায়েলে মোট ২২ জন সেনা নিহত হন।
ইরাক থেকে ধেয়ে আসা ড্রোন হামলায় দুই ও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এক সেনা নিহত হয়েছেন। সেনাবাহিনীর তালিকায় পশ্চিম তীরে নিজ সহকর্মীদের হাতে নিহত এক সেনার তথ্যও আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার প্রায় ৯ মাস পর প্রথমবারের মতো ইউক্রেনে অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি এলব্রিজ কোলবি ইতোমধ্যেই ইউক্রেনে অস্ত্রের চালান পাঠানো সংক্রান্ত অনুমোদনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউস এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শিগগিরই ইউক্রেনে দুটি অস্ত্রের চালান পাঠানো হচ্ছে, যার প্রত্যেকটিতে ৫০কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র ও গোলাবারুদ থাকবে।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসন সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের মতো এই অস্ত্র সহায়তা হিসেবে দিচ্ছে না। কিয়েভের ইউরোপীয় মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এই অস্ত্র কিনে ইউক্রেনে পাঠাচ্ছে এবং চালান পাঠানোর খরচও তারাই বহন করবে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘প্রায়োরিটাইজড ইউক্রেন রিকোয়্যার লিস্ট (পার্ল)’ নামের একটি নতুন সমঝোতার আওতায় ইউক্রেনে মোট ১ হাজার কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং তারই প্রথম চালান এটি।
প্রসঙ্গত, ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ওয়াশিংটন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানকে অগ্রাধিকার দেবে এবং ইউক্রেনকে আর সামরিক সহায়তার অনুমোদন দেওয়া হবে না। গত ৯ মাস তিনি তার এই কথার ওপর অটল থাকার চেষ্টা করেছেন। ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা বন্ধের পাশাপাশি যুদ্ধাবসানের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও করেছেন। তবে তার প্রশাসনের গত ৯ মাসের তৎপরতায় যুদ্ধাবসানের ইস্যুতে দৃশ্যমান কোনো বড় অগ্রগতি হয়নি।
ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন এখনো ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিত রেখেছে, যদিও গত ৯ মাসে বাইডেন প্রশাসনের অনুমোদিত কিছু অস্ত্রের চালান ইউক্রেনে পৌঁছেছে। কিয়েভে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত দুটি চালানে কী কী অস্ত্র রয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি, তবে বাইডেন প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অন্যান্য অস্ত্রের সঙ্গে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমও রয়েছে। রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা ঠেকানোর জন্য এই সিস্টেম পাঠানো হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, ‘পার্ল’-এর আওতায় কিয়েভের জন্য প্রচুর অস্ত্রের ফরমায়েশ দিয়েছে ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা। আমরা তাদের এই ফরমায়েশের তালিকা যাচাই করছি এবং তালিকায় থাকা যেসব অস্ত্র মার্কিন নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, কেবল সেগুলোই কিয়েভে পাঠানো হবে।
সূত্র: রয়টার্স
ছয় মাসের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন করে দায়িত্ব থেকে মুক্তি চান বলে জানিয়েছেন, নেপালের অন্তর্বতীকালীন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি। দায়িত্ব নেওয়ার পর বিবিসিকে প্রথম সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি।
ছয় মাসের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন, জেন জি-র আন্দোলন চলাকালীন হত্যা ও সহিংসতার তদন্ত এবং আগের সরকারের ব্যাপক দুর্নীতির তদন্তসহ নানা বিষয়ে সুশীলা কার্কি কথা বলেছেন বিবিসির নেপালি বিভাগের বিনিতা দাহালের সঙ্গে।
সুশীলা কার্কি অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গণমাধ্যমকে দেওয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে বিবিসি তার কাছে জানতে চেয়েছিল নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে ২০২৬ সালের ৫ মার্চ। সময়মতো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করার ক্ষেত্রে কী কী চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে তাকে?
সুশীলা কার্কি এর জবাবে বলেন, আমি তো বলেইছি যে, আমি দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করবো। আপনি জানেন যে সাধারণ মানুষের দিক থেকে কতটা চাপের মুখে এই সরকার গঠিত হয়েছে। আমি আমার দায়িত্ব ছয় মাসের মধ্যে শেষ করে পদ থেকে সরে যেতে চাই। আগামী কয়েক দিনে নির্বাচন কমিশনকে সক্রিয় করে তুলবো আমরা। প্রথমত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। একটা পুরোনো ভোটার তালিকা আছে কিন্তু সেটা হালনাগাদ করতে হবে। যদি দিনরাত কাজ করতে পারি তাহলে ছয় মাসে সেটা করা সম্ভব। যেদিন আমি ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেব, সেদিন থেকে আমি মুক্ত।
দুর্নীতির অভিযোগগুলো নিয়ে তদন্ত করার জন্য কোনো কমিশন গঠনের পরিকল্পনা আছে কি না সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সুশীলা কার্কি বলেন, প্রথমে আমরা ১০-১১জন সদস্যের একটি মন্ত্রিসভা গঠন করবো। কয়েক দিনের মধ্যেই এই কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। কী আকারে দুর্নীতি হয়েছে, সেটা আগে জানা প্রয়োজন। আমরা যদি তদন্ত শুরু করতে পারি, পরবর্তী সরকারও সেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। আমাদের মনে হয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে যতক্ষণ না তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, ততদিন পর্যন্ত এই জাতি শান্তি পাবে না। আমরা নিশ্চিতভাবেই এটা করবো।
জেন জি-র আন্দোলন চলাকালীন নেপালে যেসব সম্পত্তি ও প্রাণহানির ঘটনা হয়েছে, তা তদন্ত করে দেখার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করেছে সরকার। সেই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিবিসি জানতে চেয়েছিল এটা কী ধরনের কমিশন হবে? তাদের কতদিন সময় দেওয়া হবে?
নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান মন্ত্রিসভায় আমরা মাত্র চারজন সদস্য আছি। আমাদের হাতে সময় রয়েছে ছয় মাস। এই ছয় মাসকে আমরা যতটা সম্ভব কাজে লাগাতে চাই। আমাদের পরিকল্পনা হলো ওই তদন্ত এক মাসের মধ্যে শেষ করার বা বড়জোর দেড় মাস। বিভিন্ন ক্ষেত্রের তিনজন বিশেষজ্ঞকে দিয়ে এই তদন্ত চালানো হবে।
বিবিসির নেপালি বিভাগ সুশীলা কার্কির কাছে জানতে চেয়েছিল, মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী? কতজন মন্ত্রী থাকবেন? কাদের মন্ত্রী করার কথা ভাবছেন আপনি? মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের প্রস্তুতি কি নিতে শুরু করেছেন?
এর জবাবে সুশীলা কার্কি বলেন, প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌড়েল বলেছিলেন যে প্রতিটা রাজনৈতিক দল থেকে একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করতে। আমি বলি যে, এটা অনুচিত হবে। আমার মতে, মন্ত্রিসভা অরাজনৈতিক হওয়া উচিত এবং স্বতন্ত্র ব্যক্তিদেরই রাখা উচিত। আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর সদস্য, দলিত, নারী ও অনগ্রসর শ্রেণির সদস্যদের যাতে যতটা সম্ভব রাখা যায়, সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। অনেক নাম এসেছে। কিন্তু আমরা এটা যাচাই করে দেখছি যে তারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কি না। যদি তা হয়, তাহলে আমরা তাদের বদলে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের আনার চেষ্টা করবো অথবা প্রাক্তন সচিব, আদিবাসী গোষ্ঠী, দলিত, নারী ও অনগ্রসর শ্রেণির মানুষদের নিয়ে আসা যেতে পারে।
প্রেসিডেন্ট পরামর্শ দিয়েছিলেন যে রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্যদের নেওয়া হোক, যাদের হয়তো অভিজ্ঞতাও আছে, সেই পরামর্শ মানতে আপনি অস্বীকার করলেন কেন?
এর জবাবে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয়েছিল যে যদি রাজনৈতিক সদস্যদের বেছে নেই তবে নির্বাচনের সময় তার অপব্যবহার হতে পারে। কারণ নির্বাচনের সময়েও মন্ত্রিসভার হাতে তো কিছু ক্ষমতা থাকবে, যেমন হেলিকপ্টার ব্যবহার ইত্যাদির মতো সুবিধা। আর আমি সেরকম ব্যক্তিই বেছে নিতে চেয়েছিলাম যারা নির্বাচনে লড়াই করবেন না। নাহলে তো মন্ত্রিসভার সেসব সদস্য নির্বাচনে লড়াই করবেন।
নেপালের মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া চলছে এখন। এ বিষয়ে বিবিসি সুশীলা কার্কির কাছে জানতে চেয়েছিল যে, রাজনৈতিক দলগুলোর সুবিধা আছে যে তারা পরামর্শ নিতে পারে, যেটা আপনার নেই। তাহলে বাছাই প্রক্রিয়া কীভাবে চলছে?
এর জবাবে সুশীলা কার্কি বলেন, আমাদের কিছু বন্ধু আছেন, যারা আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। আমরা তাদের পরামর্শ নিচ্ছি আর মাঠ পর্যায়েও কাজ করছি আমরা। আবার ওই ব্যক্তির কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে যে মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তার সদিচ্ছা আছে কি না। ভারতে টিএন শেষন (ভারতের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার) যেভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতেন, সেভাবেই ভোট হওয়া উচিত। প্রতিটা বিষয় আইন আর নিয়ম অনুযায়ী হবে। কোনো ত্রুটি যাতে না থাকে। একটা সুষ্ঠু সরকার গঠিত হোক। আমরা সবাই মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি যেন ভোটের পরে একটা সুষ্ঠু সংসদ গঠন করা যায়।
যে জেন জি আন্দোলনকারীরা নতুন একটি সরকারের, প্রশাসনের দাবি তুলেছিল, তাদের একাংশের মধ্যে থেকেই সুশীলা কার্কির বিরোধিতা করা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে বিবিসি তার কাছে জানতে চেয়েছিল। একটা নতুন সরকারের দাবি যে গোষ্ঠী তুলেছিল, তারাই আবার প্রতিবাদ করছে। আপনিও নিশ্চয়ই শুনেছেন বিষয়টি। এই পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করার পরিকল্পনা করছেন আপনি?
সুশীলা কার্কি বলেন, হ্যা, সেই গোষ্ঠীটিই তো সরকার গড়ার জন্য আমাদের নাম প্রস্তাব করেছিল। আমরা তো পদ চাইনি। এটা আমাদের সিদ্ধান্তও ছিল না। যখন ৮ সেপ্টেম্বর ছাত্রদের হত্যা করা হলো আমরা এতটাই মনোক্ষুণ্ণ হয়েছিলাম যে ব্যাপক দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অনিয়ম আর সুশাসনের অভাব নিয়ে ওরা যে দাবিগুলো তুলছিল, তা পূরণ করতে চেয়েছিলাম আমরা। কোনো কিছুতেই তো ১০০ শতাংশ সাফল্য বলে কিছু হয়নি। হয়তো আমরা সবগুলো দাবি পূরণ করতে পারব না, কিন্তু আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। আমরা সব দায়িত্ব পালন করতে চেষ্টা করবো কিন্তু যদি কিছু অপূর্ণ থেকে যায় তাহলে পরবর্তী সরকার আর সংসদ (নির্বাচনের পরে) সেগুলোর দায়িত্ব নেবে।
২০২৬ সালে জাতিসংঘের বাজেট ১৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেছেন সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির কারণে দীর্ঘস্থায়ী তারল্য সমস্যার ফলে এই প্রস্তাব দিয়েছেন আন্তোনিও গুতেরেস। গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, সংশোধিত বাজেট ৩.২৩৮ বিলিয়ন ডলার। এর ফলে ২৬৮১ জনকে চাকরি হারাতে হবে।
এর আগে গুতেরেস ২০২৬ সালের বাজেট ২০২৫ সালের সমান স্তরে রাখার প্রস্তাব করেছিলেন, যা প্রায় ৩.৭ বিলিয়ন ডলার।
তবে পরে তিনি সংস্থাকে আরো দক্ষ ও গতিশীল একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ইউএন ৮০ উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই পরিমাণ কমানোর জন্য কাজ করেছিলেন।
গত মঙ্গলবার সদস্যরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ কর্মীদের কাছে পাঠানো চিঠিতে মহাসচিব ঘোষণা করেছেন, নিয়মিত বাজেটের ১৫ শতাংশ এবং কর্মীসংখ্যার ১৯ শতাংশ কমানো হবে।
তিনি বলেন, কর্তনের প্রভাব জাতিসংঘের তিনটি স্তম্ভ- শান্তি ও নিরাপত্তা, মানবাধিকার এবং টেকসই উন্নয়নে প্রভাব পড়বে।
জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, জেনেভা এবং নিউইয়র্ক থেকে কমপক্ষে ২০০ জনকে নাইরোবির মতো কম ব্যয়বহুল শহরে স্থানান্তর করা হতে পারে।
প্রস্তাবিত বাজেটটি বছরের শেষের আগে সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটির জন্য উপস্থাপন করা হবে।
কিছু সদস্য রাষ্ট্র তাদের বাধ্যতামূলক অবদান সম্পূর্ণরূপে পরিশোধ না করা এবং অন্যরা সময়মতো পরিশোধ না করায় জাতিসংঘ বছরের পর বছর ধরে দীর্ঘস্থায়ী তারল্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত জাতিসংঘের নিয়মিত বাজেটের ২২ শতাংশ বহন করে, যা মূল সাংগঠনিক কার্যক্রমের জন্য অর্থ প্রদান করে এবং শান্তিরক্ষা বাজেট থেকে আলাদা।
জাতিসংঘের মতে, জানুয়ারির শেষে ওয়াশিংটনের কাছে ১.৫ বিলিয়ন ডলার বকেয়া ছিল, কিন্তু ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে কিছুই পরিশোধ করেনি।
সংস্থাটিতে ভবিষ্যতের মার্কিন অনুদান অনিশ্চিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি জাতিসংঘ সংস্থা ত্যাগ করেছে এবং কংগ্রেস জুলাই মাসে পূর্বে অনুমোদিত তহবিল বাতিল করার পক্ষে ভোট দিয়েছে।