অস্ত্র বহন আর মত প্রকাশের স্বাধীনতায় সমর্থন দিতে হবে। তাহলেই কপালে জুটতে পারে ১০ লাখ মার্কিন ডলার। শনিবার পেনসিলভানিয়ায় এমন এক প্রতিযোগিতার ঘোষণা করেছেন মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
আসন্ন মার্কিন নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে আলোচনায় এলেন মাস্ক। ৫ নভেম্বর নির্বাচনের আগ পর্যন্ত নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে প্রতিদিন একজনকে ১০ লাখ মার্কিন ডলার প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। রিপাবলিকান প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে যেন কোমর বেঁধে নেমেছেন টেসলা ও স্পেস এক্স মালিক। তবে তার সর্বশেষ কাজে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। এই লটারির বৈধতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লটারিতে অংশগ্রহণের নিয়মকানুন ব্যাখ্যা করেছেন মাস্ক। ‘বাকস্বাধীনতা ও অস্ত্র বহনের সমর্থনে’ একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করতে হবে অংশগ্রহণকারীদের। আর পিটিশনে স্বাক্ষর করতে হলে অবশ্যই ‘সুইং স্টেটের’ নিবন্ধিত ভোটার হতে হবে।
মার্কিন নির্বাচনে ৭টি ‘দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের’(সুইং স্টেট) একটি হচ্ছে পেনসিলভানিয়া। এই অঙ্গরাজ্যগুলোতে সমর্থকদের পাল্লা আকস্মিকভাবে যেকোনো দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা অনেক বেশি। আর এই রাজ্যগুলোর ভোট অনেকাংশেই নির্ধারণ করে ওভাল অফিসের পরবর্তী প্রধান কে হবেন। ফলে এখানে প্রচারণার ওপরই অনেকটা নির্ভর করবে হ্যারিস বা ট্রাম্পের ভোট ভাগ্য।
বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের শিবির থেকে এখন পর্যন্ত মাস্কের কর্মকাণ্ড নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে পেনসিলভানিয়ার ডেমোক্র্যাট গভর্নর জশ শাপিরো মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসিকে বলেছেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত মাস্কের বিষয়টি খতিয়ে দেখা।’
নির্বাচনী আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ ও জর্জটাউন ল’স্কুলের অধ্যাপক ড্যানিয়েলে ল্যাং এএফপিকে বলেছেন, ‘ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের আওতায় মাস্কের প্রতিযোগিতা দেওয়ানি বা ফৌজদারি আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। কারণ নিবন্ধিত ভোটার হওয়ার শর্তে অর্থ প্রদান একেবারেই অবৈধ।’
প্রায় একই কথা বলেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক রিক হ্যাসেন। নির্বাচন সংক্রান্ত নির্দিষ্ট আইন উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে অর্থ গ্রহণ ও প্রদান উভয়ই আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ। আইন লঙ্ঘনের শাস্তি হতে পারে ১০ হাজার মার্কিন ডলার অর্থদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।
কয়েকজন অবশ্য ভিন্ন সুরে কথা বলছেন। তাদের একজন হলেন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ব্র্যাড স্মিথ।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে স্মিথ বলেছেন, ‘মাস্ক আইনের ধূসর একটা জায়গা থেকে কাজ করছেন। কারণ তিনি ভোটের জন্য অর্থ দিচ্ছেন না। বরং পিটিশনে স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করাচ্ছেন।’
এদিকে, নিজের সাফাই গেয়ে মাস্ক বলেছেন, তিনি কেবল মানুষকে ভোট দিতে উৎসাহিত করতে চাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, ‘কথা বলুন। বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সদস্য সবাইকে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করুন। আমরা চাই সুইং স্টেটের সবার কাছে আমাদের বার্তা পৌঁছাক। আমি ধারণা করি এর মাধ্যমে (১০ লাখ ডলার পুরস্কার) তা নিশ্চিত হলো।’
শেষ কয়েক মাস ধরে, রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন বৃদ্ধি করতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন মাস্ক। ট্রাম্প শিবিরে এখন পর্যন্ত সাড়ে সাত কোটি মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছেন তিনি।
অধ্যাপক ল্যাং বলেছেন, প্রতি নির্বাচনেই এসব ফন্দিফিকির দেখা যায়। নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেই অনেক প্রশ্নবিদ্ধ কাজ করতে দেখা গেছে। যেমন ‘আমি ভোট দিয়েছি’ (আই ভোটেড) স্টিকার দেখালে কোনো একটি পণ্য উপহার হিসেবে দেওয়া। তবে অর্থের পরিমাণের কারণে মাস্কের আয়োজিত প্রতিযোগিতার ব্যাপ্তি ও প্রভাব অনেক বেশি বিস্তৃত।
ইসরায়েলকে কি দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কোণঠাসা করা সম্ভব? একসময় যেভাবে রাজনৈতিক চাপ, অর্থনৈতিক, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বয়কটের সম্মিলিত চাপ দক্ষিণ আফ্রিকাকে বর্ণবাদ ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল, ইসরায়েলেরও কি একই পরিণতি হবে?
নাকি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ডানপন্থি সরকার সে দেশের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না করেই এই কূটনৈতিক ঝড় সামলাতে পারবে, যাতে গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরকে ঘিরে তিনি তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন?
দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক ও এহুদ ওলমার্ট কিন্তু এরই মধ্যে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক স্তরে অস্পৃশ্য করে তোলার অভিযোগ তুলেছেন।
নেতানিয়াহু গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারেন এমন দেশের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমেছে। এর নেপথ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জারি করা পরোয়ানা।
জাতিসংঘে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম ও কানাডাসহ বেশ কয়েকটা দেশ এরই মধ্যে জানিয়েছে, তারা আগামী সপ্তাহে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
উপসাগরীয় দেশগুলো, গত মঙ্গলবার কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলি আক্রমণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এই দেশগুলো একত্রিত হয়ে সমন্বিত প্রতিক্রিয়া জানাতে দোহায় বৈঠকও করছে। যে দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক রয়েছে তাদের আরও একবার ভেবে দেখার জন্য অনুরোধও জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গ্রীষ্মে গাজায় অনাহারের চিত্র প্রকাশ্যে আসা, গাজা সিটি আক্রমণ এবং সেখানে সম্ভাব্য ধ্বংসের জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রস্তুতির মতো একাধিক কারণে আরও বেশি সংখ্যক ইউরোপীয় সরকার (ইসরায়েলের প্রতি) অসন্তোষ প্রকাশ করছে। নিছক বিবৃতি দিয়েই থেমে থাকেনি তারা।
শুধু তাই নয়, নেতানিয়াহু নিজেই গত সোমবার স্বীকার করেছেন, ইসরায়েল বিশ্ব মঞ্চে এক ধরনের অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার মুখোমুখি হচ্ছে। জেরুজালেমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই বিচ্ছিন্নতার জন্য তিনি বিদেশে ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারকে দায়ী করেন।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ইসরায়েলের প্রথাগত মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ইনফ্লুয়েন্স অপারেশন’ অর্থাৎ ইতিবাচক মনোভাব তৈরির অভিযানে বিনিয়োগ করা দরকার বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
চলতি মাসের শুরুতে পশ্চিম তীরে অবৈধ ইহুদি বসতি থেকে আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বেলজিয়াম। ইসরায়েলি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কেনাকাটা সংক্রান্ত নীতির পর্যালোচনার পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পাশাপাশি ওই অঞ্চলে বসবাসরত বেলজিয়ানদের কনস্যুলার সহায়তার ওপরও বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়। পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতার অভিযোগ তুলেছিল বেলজিয়াম। ইসরায়েলের দুই কট্টরপন্থি মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এবং বেজালেল স্মোট্রিচকে ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ (অবাঞ্ছিত বা অগ্রহণযোগ্য) ঘোষণা করেছিল।
যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশকেই এরই মধ্যে এই জাতীয় পদক্ষেপ নিতে দেখা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর বাইডেন প্রশাসন সহিংস বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফেরার পর প্রথম দিনই সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
বেলজিয়ামের ঘোষণার এক সপ্তাহ পর, স্পেনও নিজেদের পদক্ষেপ ঘোষণা করে। বিদ্যমান ডি ফ্যাক্টো অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাকে আইনে পরিণত করার পাশাপাশি আমদানির ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে তারা।
শুধু তাই নয়, গাজায় গণহত্যা বা যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত যে কারও জন্য স্প্যানিশ ভূখণ্ডে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। অস্ত্র বহনকারী ইসরায়েলগামী জাহাজ ও বিমানকে স্প্যানিশ বন্দরে নোঙর করা বা সে দেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
ইসরায়েলের জন্য উদ্বেগের কারণ
ইসরায়েলের জন্য উদ্বেগের কারণ এখানেই থেমে নেই। গত আগস্টে দুই ট্রিলিয়ন ডলার সার্বভৌম সম্পদের নরওয়েজিয়ান তহবিল ঘোষণা করে, তাদের তালিকায় থাকা ইসরায়েল-ভিত্তিক সংস্থাগুলোকে সরানো হবে।
ওই মাসেরই মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ২৩টি কোম্পানিকে ছাঁটাই করা হয়েছিল এবং অর্থমন্ত্রী জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছিলেন এই তালিকা আরও বাড়তে পারে।
এদিকে, ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের ডানপন্থি মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সে দেশের সঙ্গে কিছু বাণিজ্যিক চুক্তি আংশিকভাবে স্থগিত করার পরিকল্পনা করছে।
১০ সেপ্টেম্বর স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন-এ দেওয়া ভাষণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, গাজার ঘটনাগুলো বিশ্বের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে।
পরের দিন, ৩১৪ জন সাবেক ইউরোপীয় কূটনীতিক এবং কর্মকর্তারা উরসুলা ভন ডার লিয়েন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাযা কালাসকে চিঠি লিখে অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করাসহ একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানান।
কেন দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে তুলনা
এক সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্ষমতায় থাকা শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুরা সেখানকার সংখ্যাগুরু কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষমূলক আচরণ করতেন। তারই প্রতিবাদে ১৯৬০-এর দশক থেকে ১৯৯০-এর দশকে বর্ণবাদের শেষ পর্যন্ত সাংস্কৃতিক এবং ক্রীড়া অনুষ্ঠানে বয়কটের প্রথা দেখা যেত।ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও এখন একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।
ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতা এই প্রসঙ্গে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে না হলেও এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে ইসরায়েলের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
১৯৭৩ সাল থেকে চারবার এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছে ওই দেশ। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ইহুদি জাতির আন্তর্জাতিক স্তরে গ্রহণযোগ্যতার প্রতীক।
তবে আয়ারল্যান্ড, স্পেন, নেদারল্যান্ডস এবং স্লোভেনিয়ার মতো দেশ স্পষ্টভাবে জানিয়েছে বা ইঙ্গিত দিয়েছে, যদি ইসরায়েলকে ২০২৬ সালের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয় তবে তারা প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসবে।
ফিলিপিন্সে টানা অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ও ভয়াবহ বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট পানির নিচে, শহরের পর শহর কার্যত অচল। কিন্তু এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝেও সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বড় ক্ষোভ প্রকৃতির নয়, বরং সরকারের বিরুদ্ধে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে দেশজুড়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বছরের পর বছর ধরে বিলিয়ন বিলিয়ন পেসো খরচ হলেও সড়ক, বাঁধ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থায় কোনো উন্নয়ন হয়নি। এর পেছনে রয়েছে দুর্নীতি ও ‘ভূতুড়ে প্রকল্প’।
এই পরিস্থিতিতে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে পানিবাহিত রোগের সংক্রমণ। রাজধানীর আশপাশে লেপ্টোসপাইরোসিস নামে এক ধরনের সংক্রমণ বাড়ছে, যা মূলত ইঁদুরের মল থেকে ছড়ায়।
৩৬ বছর বয়সী এক স্কুল শিক্ষিকা, ক্রিসা তলেন্তিনো, প্রতিদিন পানিতে ডুবে যাওয়া রাস্তায় প্যাডেলবোটে করে স্কুলে যান। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক দিন ধরেই বন্যাকে জীবনের অংশ হিসেবে মেনে নিয়েছি। কিন্তু এবার আমি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ।’ তিনি অভিযোগ করেন, প্রতি মাসে নিয়ম করে কর দিলেও সেই টাকা জনগণের কাজে না লেগে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকদের বিলাসবহুল জীবনযাপনে ব্যয় হচ্ছে।
এই ক্ষোভ শুধু একজনের নয়, এখন তা সারাদেশজুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। মানুষ প্রশ্ন তুলছে, এত অর্থ খরচ সত্ত্বেও কেন প্রতিবছর একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়?
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ ‘বংবং’ মার্কোস জুনিয়র নিজেও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেননি। একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে তিনি দেখেন, সেটি আদৌ নির্মিতই হয়নি। পরে সাংবাদিকদের তিনি জানান, একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে, যাতে ধরা পড়বে কারা কারা এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এবং কত টাকা চুরি হয়েছে।
সরকারের পরিকল্পনা বিভাগের এক মন্ত্রী জানিয়েছেন, শুধু বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থের প্রায় ৭০ শতাংশ দুর্নীতির কারণে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে বড় অঘটন ঘটে গেছে সংসদেও। দুর্নীতির দায় না মেনেও স্পিকারের পদত্যাগ এসেছে, যা আরও সন্দেহ বাড়িয়েছে। অন্যদিকে, সিনেটের এক নেতাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, কারণ ২০২২ সালের নির্বাচনী প্রচারে তাকে অনুদান দিয়েছিলেন এমন এক ঠিকাদার, যিনি একটি সরকারি প্রকল্পের টেন্ডার পেয়েছিলেন। এটি ফিলিপিন্সের নির্বাচনী আইনে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ।
সরকারবিরোধী ক্ষোভ এখন ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইনেও। টিকটক, ফেসবুক ও এক্স-এ চলছে তীব্র সমালোচনা। জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের সন্তানদের বিলাসী জীবন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
‘নেপো বেবি’ হ্যাশট্যাগে চিহ্নিত করা হচ্ছে সেসব তরুণ-তরুণীকে, যারা সামাজিক মাধ্যমে দামি ডিজাইনের পোশাক, ব্যাগ বা গাড়ির ছবি দিচ্ছেন। সাধারণ মানুষের মতে, এসব বিলাসিতা সম্ভব হয়েছে করদাতাদের টাকায়।
সম্প্রতি এক সাবেক সংসদ সদস্যের মেয়ে ফ্যাশন ব্র্যান্ড ফেন্ডি ও ডিওরের পোশাক পরে এবং দামি হারমেস ব্যাগ হাতে ছবি দিলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। এই ঘটনার পর অনেকেই তাদের অ্যাকাউন্টের মন্তব্য অপশন বন্ধ করে দেন বা সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় করে দেন।
এদিকে, ‘ক্রিয়েটরস অ্যাগেইনস্ট করাপশন’ নামে একটি নতুন সামাজিক উদ্যোগ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন জনপ্রিয় অনলাইন কনটেন্ট নির্মাতা এতে যুক্ত হয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের প্রচার চলবে আরও বড় পরিসরে।
বিক্ষোভের ডাকও এসেছে। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর, রোববার রাজধানী ম্যানিলাসহ দেশের বড় বড় শহরে জনসমাবেশের প্রস্তুতি চলছে। এই তারিখটিকে প্রতীকী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে, কারণ ১৯৭২ সালের এই দিনেই ফার্দিনান্দ মার্কোস সিনিয়র সামরিক শাসন জারি করেছিলেন।
প্রেসিডেন্ট মার্কোস জুনিয়রের বাবা ছিলেন সেই সময়কার নেতা, যাকে ১৯৮৬ সালে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে হয়। এবার ইতিহাস যেন নিজেকে পুনরাবৃত্ত করছে।
বলা হচ্ছে, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার সাম্প্রতিক জনআন্দোলনের মতো ফিলিপিন্সেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে সরকারি প্রকৌশলীদের জনসমক্ষে হেনস্তার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে নির্মাণ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মীকে সরকারি ইউনিফর্ম না পরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে জনতা তাদের সহজে চিনে ফেলতে না পারে।
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন একটি আক্রমণাত্মক ড্রোন পরীক্ষা তদারকি করেছেন এবং দ্রুত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি উন্নয়নের নির্দেশ দিয়েছেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে।
সিউল থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ)-এর প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, চালকবিহীন ড্রোনটি উড্ডয়নের পর লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করছে।
খবরে বলা হয়েছে, এই মহড়া ‘কুমসং-সিরিজের কৌশলগত আক্রমণ ড্রোনের অসাধারণ যুদ্ধক্ষমতা’ প্রমাণ করেছে এবং কিম ‘ব্যাপক সন্তুষ্টি’ প্রকাশ করেছেন।
কিম বলেছেন, ড্রোনগুলো প্রধান সামরিক সম্পদ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই ডিপিআরকে সশস্ত্র বাহিনী আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে এটি শীর্ষ অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে।
তিনি নতুনভাবে চালু হওয়া এআই প্রযুক্তি দ্রুত উন্নয়নের পাশাপাশি ড্রোন উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালীকরণে উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিশ্লেষক হং মিন বলেছেন, কিম ড্রোন প্রযুক্তিকে দেশের ‘মহাশক্তি হিসেবে মর্যাদা’ নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।
ড্রোন উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কারণ এগুলো কম খরচে বেশি কার্যকর হুমকি তৈরি করে; স্বয়ংক্রিয় মিশন সম্পাদন, নির্ভুলতা ও প্রাণঘাতী ক্ষমতা বৃদ্ধি, ব্যাপক উৎপাদনের উপযোগিতা এবং কৌশলগত নমনীয়তা বাড়ায়।
রাশিয়া থেকে শিক্ষা:
পিয়ংইয়ং গত বছর প্রথমবার আক্রমণাত্মক ড্রোন উন্মোচন করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সক্ষমতা রাশিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার বাড়তে থাকা মৈত্রী সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
রাশিয়ার হয়ে লড়াই করা উত্তর কোরীয় সেনারা আধুনিক যুদ্ধের অভিজ্ঞতা অর্জন করছে, বিশেষত যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহারের কৌশল।
দক্ষিণ কোরিয়ার কিয়ংনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লিম বলেছেন, এআই প্রযুক্তি ড্রোনগুলোকে এমনভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম করে, যাতে জিপিএস বা যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হলেও পূর্বপ্রশিক্ষিত অ্যালগরিদমের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যেতে পারে।
উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক ও বেসামরিক সম্পদের ওপর জিপিএস জ্যামিং পরীক্ষা চালায়, যার ফলে বেশ কিছু জাহাজ ও বেসামরিক বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
লিম আরও বলেন, রাশিয়ার প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২০২৪ সাল থেকে উত্তর কোরিয়ায় এআই চালিত প্রযুক্তি দ্রুত উন্নয়ন হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়া ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, ২০২৪ সালে উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ১০ হাজারের বেশি সেনা পাঠিয়েছে এবং গোলাবারুদ, ক্ষেপণাস্ত্র ও দূরপাল্লার রকেট সিস্টেম সরবরাহ করেছে।
সিউল জানিয়েছে, রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রায় ৬শ’ উত্তর কোরীয় সৈন্য নিহত ও কয়েক হাজার আহত হয়েছেন।
‘কানাডা এবং মেক্সিকোর নেতারা বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের ত্রিপক্ষীয় মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তিকে সমর্থন করেছেন। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক চাপের মুখে এটিকে আরও ‘ন্যায্য’ করতে চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
মেক্সিকো সিটি থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
মেক্সিকোতে প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউমের সঙ্গে আলোচনা শেষে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেন, তারা যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তি (ইউএসএমসিএ)-এর প্রতি ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
তিনি আরও বলেন, এই চুক্তি উত্তর আমেরিকাকে বিশ্বের সেরা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত করতে সহায়তা করেছে।
শেইনবাম বলেন, তিনি চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে ‘আশাবাদী’। তবে ট্রাম্প চান, যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পখাতের জন্য সুবিধাজনক শর্তে চুক্তি নতুন করে করা হোক।
তিনি কার্নির সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে ইউএসএমসিএ টিকে থাকবে।’
২০২০ সাল থেকে কার্যকর থাকা এই চুক্তি আগামী বছর পর্যালোচনা করা হবে। এটি মেক্সিকো ও কানাডার অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মেক্সিকো তাদের প্রায় ৮০ শতাংশ এবং কানাডা প্রায় ৭৫ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে।
ট্রাম্প ইতোমধ্যেই কানাডা ও মেক্সিকোর কিছু রপ্তানি পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছেন, যেগুলো এই চুক্তির আওতায় পড়ে না। পাশাপাশি তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সীমান্ত পেরিয়ে অভিবাসন ও মাদক পাচার বন্ধ করতে না পারলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউএসএমসিএ ১৯৯০-এর দশকে হওয়া উত্তর আমেরিকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পরিবর্তে এসেছে। গত তিন দশকে এসব ধারাবাহিক চুক্তি উত্তর আমেরিকার অর্থনীতিকে আমূল বদলে দিয়েছে। এতে তিন দেশের মধ্যে গভীর পারস্পরিক নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে।
তবে, ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ ইতোমধ্যেই আন্তঃসীমান্ত সরবরাহ ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে। তিনি চুক্তির আওতার বাইরে থাকা কানাডীয় পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ এবং মেক্সিকান পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন।
এই শুল্ক কানাডার গুরুত্বপূর্ণ অটো, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, ফলে কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে। একই অবস্থা তৈরি হয়েছে মেক্সিকোর অটো ও ইস্পাত শিল্পের ক্ষেত্রেও।
কার্নি বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের পরিপূরক, আমরা তাদের আরও শক্তিশালী করি, আমরা সবাই একসাথে আরও শক্তিশালী।’
তিনি আরও বলেন, ওয়াশিংটন ইতোমধ্যেই ইউএসএমসিএ পর্যালোচনা করছে, এটি ‘একটি ভালো দিক’। এর ফলে শুল্ক ও স্থানীয় বিষয়বস্তুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত ‘ভালোভাবে ও সুচিন্তিতভাবে নেওয়া যেতে পারে’।
রাশিয়ায় দরূপ্রাচ্যের কামচাটকা উপদ্বীপ উপকূলে শুক্রবার ভোরে ৭.৮ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এতে স্থানীয় ভবনগুলো কেঁপে ওঠে এবং সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়। অবশ্য পরে তা তুলে নেওয়া হয়।
মস্কো থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
রাশিয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে ঘরবাড়ির আসবাবপত্র এবং আলোর সরঞ্জাম কাঁপতে দেখা যায়। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে রাস্তার পাশে পার্ক করা গাড়ি দুলছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ওই অঞ্চলটির রাজধানী পেট্রোপাভলভস্ক-কামচাটস্কি থেকে ১২৮ কিলোমিটার (৮০ মাইল) পূর্বে এবং ১০ কিলোমিটার (ছয় মাইল) গভীরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
যদিও রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় ভূতাত্ত্বিক পরিষেবা জানিয়েছে, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৪। পরে আরও পাঁচবার আফটারশক অনুভূত হয়েছে।
মার্কিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি সতর্কীকরণ কেন্দ্র আশেপাশের উপকূলীয় এলাকায় বিপজ্জনক ঢেউ আসার সম্ভাবনায় সতর্কতা জারি করেছিল। তবে কয়েক ঘণ্টা পর তা প্রত্যাহার করে নেয়।
আঞ্চলিক গভর্নর ভ্লাদিমির সোলোদভ টেলিগ্রামে বলেছেন, আজ (শুক্রবার) ভোরের ঘটনা আবারও কামচাটকার বাসিন্দাদের সহনশীলতার পরীক্ষা নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। এসময় সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানান গভর্নর।
কামচাটকা উপদ্বীপটি প্যাসিফিক মহাসাগরের চারপাশে থাকা ‘রিং অফ ফায়ার’ নামে ভূমিকম্পপ্রবণ টেকটোনিক বেল্টে অবস্থিত। এটি সুনামি এবং ভূমিকম্প সংবেদনশীল এলাকা হিসেবে পরিচিত।
জুলাই মাসে, এই অঞ্চলের উপকূলে ৮.৮ মাত্রার মেগা-ভূমিকম্পের কারণে সুনামি সৃষ্টি হয়। এতে উপকূলীয় একটি গ্রাম সমুদ্রে ভেসে যায় এবং প্যাসিফিক এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে সব ধরনের সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণে তিন দিনের সামরিক মহড়া শুরু করেছে ভেনিজুয়েলা। বৃহস্পতিবার ‘ক্যারিবিয়ান ২০০’ নামের এই মহড়া শুরু হয়।
দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনো লোপেজ বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর নির্দেশে, আমি সার্বভৌম ক্যারিবিয়ান মহড়া শুরু করার নির্দেশ দিচ্ছি। এটি আমাদের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা জোরদার করবে।’
তিনি জানান, তিন দিনের এই মহড়ায় ভেনিজুয়েলার সকল ধরনের সশস্ত্র বাহিনী অংশগ্রহণ করবে - মহাকাশ, বিশেষ, পুনর্গঠন, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ, নৌ, বিমান, স্থল ও মহাকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী।
ক্যারিবীয় অঞ্চলে সম্প্রতি মার্কিন নৌবাহিনী মোতায়েনের মধ্যে এই মহড়া পরিচালিত হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট মাদুরোর মতে, ভেনিজুয়েলা গত ১০০ বছরে দেখা সবচেয়ে বড় মার্কিন আগ্রাসনের হুমকির মুখোমুখি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে মাদক পাচারকারী চক্র পরিচালনা এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার যোগাযোগের অভিযোগ এনেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
১৯ আগস্ট পেন্টাগন সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, মাদক চোরাকারবারীদের হুমকি মোকাবিলার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ভেনিজুয়েলার কাছে তিনটি মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী জাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে।
আরেক প্রতিবেদনে ইউএসএস নিউপোর্ট নিউজ জানিয়েছে, সাবমেরিন, ইউএসএস লেক এরি মিসাইল ক্রুজার, অবতরণকারী জাহাজ এবং ৪ হাজার ৫০০ সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গোপনে কিছু ল্যাটিন আমেরিকার মাদক চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে পেন্টাগনকে সামরিক শক্তি ব্যবহার শুরু করার নির্দেশে সই করেছেন।
তবে কয়েক সপ্তাহ ধরেই ভেনেজুয়েলার নেতা উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্র সামরিক হুমকির মাধ্যমে তার দেশের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন চাইছে।
ফরাসি সরকারের বাজেট সংকোচন ও কৃচ্ছ্র নীতির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ধর্মঘট ও বিক্ষোভ মঙ্গলবার ভোর থেকেই শুরু হয়েছে। রাজধানী প্যারিস থেকে মার্সেই, লিওন, নান, রেনেস, মনপেলিয়ে, বোর্দো ও তুলুজসহ বড় শহরগুলোতে জনজীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
শিক্ষক, ট্রেন চালক, হাসপাতালের কর্মী, ফার্মাসিস্ট ও কৃষকরা আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও প্রবেশপথ অবরোধ করেছে।
শ্রমিক ইউনিয়নগুলো বলছে, জনসেবার খরচ কমানো এবং পেনশন পাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় কাজ করার প্রস্তাব সম্পূর্ণ অন্যায়।
তারা দাবি করছে, ধনীদের ওপর কর বাড়াতে হবে এবং জনসেবায় বাজেট বাড়ানো হবে।
সিজিটি ইউনিয়নের প্রধান সোফি বিনে জানিয়েছেন, যতদিন না শ্রমিকদের দাবি পূরণ হচ্ছে, ততদিন আন্দোলন চলবে। তার কথায়, বাজেটের সিদ্ধান্ত রাস্তাতেই হবে।
প্যারিসে সকাল থেকেই বহু মেট্রো লাইন বন্ধ ছিল। ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে এবং স্কুলের প্রবেশপথও বন্ধ ছিল। মার্সেইতে প্রধান সড়ক, লিওনে আবর্জনা জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করা হয়। নানে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়, রেনেসে একটি বাস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, মনপেলিয়েতে রাউন্ডঅ্যাবাউট অবরোধ হলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে। বোর্দো ও তুলুজে ট্রেন সেবা ব্যাহত হয় এবং কয়েকটি সড়ক বন্ধ হয়।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও প্রভাব পড়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতি তিনজন শিক্ষকের একজন ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন।
ফার্মেসি ইউনিয়নের জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৯৮ শতাংশ ফার্মেসি দিনভর বন্ধ ছিল।
সরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি ইডিএফ জানায়, ভোরে ফ্ল্যাম্যানভিল পারমাণবিক চুল্লিতে উৎপাদন প্রায় ১.১ গিগাওয়াট কমে যায়।
ফ্রান্সের অর্থনীতি বর্তমানে বড় ধরনের বাজেট ঘাটতিতে জর্জরিত। গত বছর ঘাটতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমার প্রায় দ্বিগুণ। নতুন প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়েন লেকর্নু ২০২৬ সালের বাজেট পাশ করানোর চেষ্টা করছেন, তবে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় তা কঠিন। তার পূর্বসূরি ফ্রাঁসোয়া বেইরু ৪৪ বিলিয়ন ইউরোর কৃচ্ছ্র পরিকল্পনা নিয়ে সংসদে আস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন।
ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ধর্মঘট ও বিক্ষোভে প্রায় ৮ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে ৮০ হাজার পুলিশ ও জেন্ডারমেরি মোতায়েন করা হয়েছে।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রিটেইলউ বলেছেন, অন্তত ৮ হাজার বিক্ষোভকারী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। এজন্য দাঙ্গা দমন বাহিনী, সাঁজোয়া যান ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।
ফ্রান্সজুড়ে এই আন্দোলন শুধু অর্থনৈতিক অসন্তোষ নয়, প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সরকারের জন্য বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। ইউনিয়নগুলো জানিয়েছে, তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত রাজপথেই সরকারের বাজেটের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে।
উল্লেখ্য, ফরাসি সরকারের বাজেট সংকোচন ও কৃচ্ছ্র নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন কয়েক ধাপে বেড়ে ওঠে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ‘Bloquons Tout’ (Block Everything) তত্ত্বগত আন্দোলনটি মিড-২০২৫ থেকে সক্রিয় হতে থাকে। সেপ্টেম্বরের শুরুতেই তা রাস্তায় দৃশ্যমান হয়। প্রথম বড় গোলযোগ হিসেবে ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ মহাসড়ক অবরোধ, ব্যারিকেড জ্বালানো এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর ইউনিয়নগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর জন্য দেশব্যাপী ধর্মঘট ও বিক্ষোভ ডাক দেয়।
ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে স্বাক্ষর সংগ্রহে নেমেছে জাজিম নামের একটি অ্যাডভোকেসি সংস্থা। এরই মধ্যে এ দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে জাজিমের পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন ৭ হাজার ৫ শতাধিক ইসরায়েলি।
সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ইসরায়েলে অবস্থিত বামপন্থি ইহুদি ও আরবদের রাজনৈতিক সংগঠন জাজিম, যারা মূলত বিভিন্ন ইস্যুতে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিবেশের অধিবেশন শুরু হবে। তাদের লক্ষ্য তার আগেই ১০ হাজারের বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তাদের পিটিশন সেই অধিবেশনে পাঠানো।
ইসরায়েলে অবস্থিত একটি রাজনৈতিক সংগঠন জাজিম, যারা বামপন্থি ইহুদি ও আরবদের নিয়ে কাজ করে, তারা স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে একটি পিটিশন শুরু করেছে। এই পিটিশনে এরই মধ্যে ৭ হাজার ৫০০-এর বেশি ইসরায়েলি স্বাক্ষর করেছেন। সংগঠনটির লক্ষ্য হলো, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন শুরু হওয়ার আগেই ১০ হাজারের বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করা এবং তা অধিবেশনে পেশ করা।
সংগঠনটির পিটিশনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া মানে ইসরায়েলের জন্য কোনো শাস্তি নয়; বরং এর মাধ্যমে এই অঞ্চলের উভয় জাতিগোষ্ঠীর জন্য একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি না দিলে ইসরায়েলের নিরাপত্তা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হবে এবং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মতো কট্টরপন্থি নেতারা বর্ণবাদ ও সহিংসতাকে উসকে দেবেন, যা ইসরায়েলকে ভবিষ্যতে আরও গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দেবে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সাল থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের হামলার জবাব দিতে গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। সে অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৬৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৭০ হাজারের অধিক।
এই অভিযান বন্ধের জন্য জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার আহ্বান জানালেও নেতানিয়াহু জানিয়েছেন যে, হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল ও জিম্মিদের মুক্ত না করা পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি আরও শক্তিশালী হচ্ছে, যা ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজকীয় আয়োজনে নজর কেড়েছেন কেট মিডলটন। স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পকে নিয়ে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে সফর করছেন ট্রাম্প। তার এই সফরকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সময় গত বুধবার রাতে উইন্ডসর ক্যাসলের সেন্ট জর্জেস হলে রাজকীয় নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। সেখানে প্রয়াত প্রিন্সেস ডায়ানার বিখ্যাত ‘লাভার্স নট টিয়ারা’ পরে প্রিন্স উইলিয়ামের সঙ্গে হাজির হন প্রিন্সেস অব ওয়েলস কেট মিডলটন। খবর এবিসি নিউজ।
ভোজ সভায় প্রবেশের সময় উইলিয়াম ও কেট একসঙ্গে হাঁটেন। তাদের ঠিক পরেই প্রবেশ করেন প্রেসিডেন্টের মেয়ে টিফানি ট্রাম্প ও তার স্বামী মাইকেল বুলস।
কেট পরেছিলেন ব্রিটিশ ডিজাইনার ফিলিপা লেপলির ডিজাইন করা সোনালি রঙের একটি গাউন এবং বিখ্যাত লাভার্স নট টিয়ারা। ব্রিটিশ রাজপরিবারের ঐতিহ্যবাহী অলংকারের একটি এই লাভার্স নট টিয়ারা মুকুট। এই সাজে তিনি সবার নজর কেড়েছেন। মুক্তা ও হীরার তৈরি এই টিয়ারাটি কেট আগেও বহু রাজকীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহার করেছেন। এটি তৈরি করা হয় ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ রানি মেরির জন্য। তিনি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের দাদি ছিলেন। প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মুকুটটি ডায়ানাকে দিয়েছিলেন। তারও প্রিয় অলংকার ছিল এই মুকুট।
ভোজ সভায় কেটকে বসানো হয়েছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাশে। ট্রাম্পের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। ভোজসভায় প্রবেশের সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা।
দিনের শুরুতে উইলিয়াম ও কেট উইন্ডসর ক্যাসেলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডিকে স্বাগত জানান। উইলিয়াম পরেছিলেন গাঢ় স্যুট ও টাই, আর কেট পরেছিলেন মেরুন রঙের কোট ড্রেস এবং হ্যাট। তারা মেরিন ওয়ান থেকে নেমে আসা ট্রাম্প দম্পতিকে করমর্দনের মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানান।
ট্রাম্প আধুনিক সময়ের একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান যিনি ব্রিটিশ রাজপরিবারের কাছ থেকে দুবার রাষ্ট্রীয় সফরের আমন্ত্রণ পেয়েছেন। এর আগে ২০১৯ সালে প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও তাকে আতিথেয়তা দিয়েছিলেন।
পরে ট্রাম্প দম্পতি ও রাজপরিবার ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে উইন্ডসর ক্যাসেলে যান এবং সেখানে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। মধ্যাহ্নভোজ শেষে রাজা চার্লস ও রানি ক্যামিলা প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডিকে নিয়ে রয়্যাল কালেকশনের প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। এরপর কেট ও উইলিয়াম মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে নিয়ে একই প্রদর্শনী পরিদর্শন করান।
গাজায় তীব্র হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এক দিনেই অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় আরও কমপক্ষে ৮৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৬১ জনই গাজা সিটির। সেখানে বড় ধরনের সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞার হুমকির পরেও আগ্রাসন বন্ধ হচ্ছে না। খবর আল জাজিরার।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা উত্তর গাজার লাখো বাসিন্দাকে কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণাঞ্চলের জনবহুল শরণার্থী শিবিরে ঠেলে দিতে ‘চরম চাপ’ প্রয়োগ করছে।
কাতারে ইসরায়েলি হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া হামাসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব অল্পের জন্য একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে গেছেন।
ইসরায়েলের চরম ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ গাজাকে সম্ভাব্য রিয়েল এস্টেটের ‘সোনার খনি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং জানিয়েছেন তিনি এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গাজা ভাগাভাগির বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলা গাজা সংঘাতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৫ হাজার ৬২ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৭ জন। ধারণা করা হচ্ছে, আরও কয়েক হাজার মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।
গাজার প্রধান আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়েছে ইসরায়েলি ট্যাংক
গাজা সিটির একটি প্রধান আবাসিক এলাকায় কয়েক ডজন ইসরায়েলি ট্যাংক এবং সামরিক বাহন ঢুকে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা। বলা হচ্ছে, ইসরায়েলের স্থল অভিযানের দ্বিতীয় দিনেই গাজা শহর দখলের লক্ষ্যে অভিযান শুরু হয়েছে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ট্যাংক, বুলডোজার এবং সাঁজোয়া যানগুলো উত্তর গাজা সিটির শেখ রাদওয়ানের পথে চলেছে। নিজেদের অগ্রযাত্রাকে আড়াল করার জন্য ইসরায়েলি বাহিনী কামানের গোলা এবং স্মোক বোমা নিক্ষেপ করায় চারদিকে মেঘের মতো ঘন ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে।
যুদ্ধের আগে এই শেখ রাদওয়ান জেলায় কয়েক হাজার মানুষের বসবাস ছিল। এটি সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত।
গাজা সিটিতে ইসরায়েলের অভিযানের লক্ষ্য হলো- হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্ত করা এবং সেখানে থাকা হামাসের আনুমানিক তিন হাজার যোদ্ধাকে পরাজিত করা। ইসরায়েল এই দলটিকে ‘সবশেষ শক্ত ঘাঁটি’ হিসেবে অভিহিত করেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে এই অভিযানের ব্যাপক নিন্দা করা হয়েছে।
এদিকে গাজার পরিস্থিতি ‘অমানবিক ও বিবেকহীন’ বলে সতর্ক করেছে সেভ দ্য চিলড্রেন এবং অক্সফামসহ ২০টির বেশি প্রধান দাতা সংস্থার নেতারা।
গত বুধবারের অনুপ্রবেশের পর আশেপাশের ভবন এবং প্রধান সড়কগুলোতে ভারী বিমান হামলা চালানো হয়েছে যা স্থল অভিযানের প্রস্তুতি বলে মনে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শেখ রাদওয়ানের বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা সাদ হামাদা পরিবার নিয়ে গত বুধবার সকালেই দক্ষিণে পালিয়ে গেছেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, ড্রোনগুলো কিছুই বাকি রাখেনি। তারা সোলার প্যানেল, বিদ্যুৎ জেনারেটর, পানির ট্যাংক, এমনকি ইন্টারনেট নেটওয়ার্কেও আঘাত করেছে।
তিনি বলেন, জীবন একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বিপদ থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ মানুষ চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। আবু ইস্কান্দার, আল তাওয়াম এবং আল সাফতাওয়ি এলাকাগুলো শেখ রাদওয়ানের অন্তর্ভুক্ত।
আল-জালা সড়ক দিয়ে এই শেখ রাদওয়ান বিভাজিত, যেটি গাজা সিটির মধ্যবর্তী অঞ্চলের সঙ্গে এর উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাগুলো সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। শহরের আরও গভীরে ইসরায়েলি বাহিনী নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে এবং কেন্দ্রীয় এলাকাগুলোতে পৌঁছানোর পথ খুলে দিতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
গাজা সিটির সড়কে ট্যাংকের ছবি ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বিশেষ করে যারা এখনো শহরের পশ্চিম এবং কেন্দ্রীয় অংশে রয়েছেন।
ট্যাংকগুলো বাড়ির দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ইসরায়েলের আগের হামলার স্মৃতি জাগিয়ে তোলে, যেটা পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
শেখ রাদওয়ানে ইসরায়েলি বাহিনীর এই অনুপ্রবেশের ফলে এখন আরেক দফায় মানুষের ঘরবাড়ি ছাড়ার ঢেউ শুরু হয়েছে ফলে হাজার হাজার পরিবার দক্ষিণে পালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সালাহেদীন রোড দিয়ে দক্ষিণে যাওয়ার পথ খুলে দেওয়ার সাথে সাথে সড়কে গাড়ি এবং জিনিসপত্র বোঝাই করা বাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
পরিবহন সংকট এবং অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে ভ্রমণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগছে এবং শত শত শেকেল খরচ করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
এই যুদ্ধের আগে, শেখ রাদওয়ান গাজা সিটির ব্যস্ততম এলাকাগুলোর মধ্যে একটি ছিল। কয়েক ডজন স্কুল, মসজিদ এবং দোকানপাটের শহর ছিল এটি।
গত কয়েক মাসে শেখ রাদওয়ান এলাকা বেশ কয়েকবার বিমান হামলার শিকার হয়েছে এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। তবে এলাকার একদম ভেতরে ট্যাংকের উপস্থিতি এখন ইসরায়েলের স্থল অভিযানের একটি উল্লেখযোগ্য নতুন ধাপ।
গত বুধবার সকালে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ঘোষণা করেছে, স্থল বাহিনীকে সাহায্য করতে দুদিনে তারা গাজা সিটি জুড়ে দেড়শর বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, অভিযানের অংশ হিসেবে তারা আইডিএফ বিস্ফোরক ভর্তি পুরোনো সামরিক যানবাহন ব্যবহার করছে। যেগুলো দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সংস্কার করা হয়েছে।
এই যানবাহনগুলো হামাসের ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে বলে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
সেখানকার বাসিন্দা নিদাল আল শেরবি বিবিসি অ্যারাবিকের মিডল ইস্ট ডেইলি প্রোগ্রামকে বলেছেন, গত রাত খুব কঠিন ছিল, রাত থেকে ভোর পর্যন্ত অবিরত বিস্ফোরণ এবং গোলাগুলি অব্যাহত ছিল।
ইসরায়েলি যানবাহন শেখ রাদওয়ান, তাল আল-হাওয়া এবং সেজাইয়া থেকেও অগ্রসর হয়েছে। এটা খুবই, খুবই ভয়াবহ রাত ছিল।
দাতা সংস্থা, জাতিসংঘের সংস্থা এবং অন্যান্যরা বলছেন, মানবিক এলাকা সেখানেই হবে যেখানে মানুষ স্থানান্তরিত হবে, প্রচুর মানুষের ভীড় হবে।
গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরাইলের স্থল হামলা ইতোমধ্যেই সেখানকার হাসপাতালগুলোকে ‘ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে’ নিয়ে গেছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিসুস বৃহস্পতিবার সতর্ক করেছেন।
জেনেভা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
তিনি এই অমানবিক পরিস্থিতির অবসান দাবি করে বলেন, ‘গাজার উত্তরাঞ্চলে সামরিক অনুপ্রবেশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার আদেশ নতুন করে মানুষকে বাস্তুচ্যুতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে আর এর ফলে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে মানবিক মর্যাদার অযোগ্য একটি সঙ্কুচিত এলাকায় যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।’
টেড্রোস আধানম গেব্রিসুস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ সতর্ক করেছেন যে হাসপাতালগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি রোগী ভর্তি আছে এবং ক্রমবর্ধমান সহিংসতায় এগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। ডব্লিউএইচও-এর প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও চিকিৎসা সারঞ্জামাদি সরবরাহ প্রদানে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বৃহস্পতিবার গাজায় যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির সর্বশেষ আহ্বানের ওপর ভোটাভুটি করবে।
বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো সত্ত্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা এই পদক্ষেপকে সমর্থন করেছে।
জাতিসংঘ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের প্রায় দুই বছরের আগ্রাসনের পর জাতিসংঘের দুর্ভিক্ষের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায়, ১০টি অস্থায়ী সদস্য আগস্টের শেষের দিকে বর্তমান খসড়া প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শুরু করে।
পূর্ববর্তী একটি খসড়ায় প্রাথমিকভাবে সাহায্যের ক্ষেত্রে বাধা অপসারণের দাবি করা হয়েছিল।
পূর্ববর্তী ভেটোটি কাউন্সিলের অন্য ১৪ সদস্যের মধ্যে অস্বাভাবিক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। যারা গাজার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বন্ধ করতে ইসরাইলকে চাপ দিতে তাদের স্পষ্ট অক্ষমতার জন্য ক্রমবর্ধমান হতাশা প্রকাশ করছে।
বৃহস্পতিবার ভোটের জন্য প্রস্তুত খসড়াটিকে এএফপি পর্যালোচনা করেছে। তাতে সাহায্যের প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং সকল পক্ষ ‘গাজায় অবিলম্বে, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির’ দাবি জানিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই একাধিকবার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। সম্প্রতি জুন মাসে তারা তাদের মিত্র ইসরাইলকে সমর্থন করার লক্ষ্যে ভেটো প্রয়োগ করে।
একজন ইউরোপীয় কূটনীতিক এএফপিকে বলেছেন, সর্বশেষ প্রচেষ্টা হলো— মার্কিন ভেটোর হুমকির কাছে নতি স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানানো।
তিনি আরো বলেন, ‘চেষ্টা না করাই যুক্তরাষ্ট্রের কাজকে খুব সহজ করে তুলবে। কারণ তাদেরকে এর ন্যায্যতা প্রমাণ করতে হবে না এবং কাউন্সিলের ১৪ সদস্য ও বিশ্ব জনসাধারণের মুখোমুখি হতে হবে না।’
ওই কূটনীতিক বলেন, ‘এটি মাঠে ফিলিস্তিনিদের খুব বেশি সাহায্য করবে না। কিন্তু অন্তত আমরা দেখাতে পারব যে আমরা চেষ্টা করছি।’
মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো, জাতিসংঘ-নির্ধারিত একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন তাদের স্বাধীন বিশ্লেষণ দিয়েছে, যেখানে ইসরাইলকে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনিদের ‘ধ্বংস’ করার উদ্দেশ্যে গাজায় ‘গণহত্যা’ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিষয়টি আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় বার্ষিক জাতিসংঘ শীর্ষ সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ স্থল অভিযান শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় নগরী গাজা সিটি দখলের জন্য ইসরায়েলি বাহিনী তীব্র বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালাচ্ছে এবং ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদে সামরিক কৌশল ব্যবহার করছে।
স্থানীয়দের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) অঞ্চলটির প্রধান আবাসিক এলাকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বোমাবর্ষণ-গোলাগুলির মধ্যেই প্রাণ নিয়ে পালাচ্ছেন ফিলিস্থিনিরা। বর্বর এই হামলাকে ‘ভয়াবহ’ বলে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস।
গাজা দখলে ইসরায়েলের পরিকল্পনার শুরুর দিকে অনেকেই তা উপেক্ষা করে সেখানে থেকে গিয়েছিলেন। তবে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা জোরালো করে। একের পর এক আবাসিক ভবনগুলো বোমা মেরে ধুলিসাৎ করে দিচ্ছে। প্রাণ বাঁচাতে দক্ষিণে পালাতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা।
গত মঙ্গলবার গাজা শহরে অন্তত ৯১ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালাতে থাকা ফিলিস্তিনিদের বহনকারী একটি গাড়িতে বোমা হামলা চালায় দখলদার বাহিনী। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সতর্ক করেছে যে, গাজা সিটিতে ইসরায়েলি অভিযানের ফলে মৃতের সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যাবে।
ওপর থেকে বোমাবর্ষণের পাশাপাশি বোমা বোঝাই রোবট দিয়ে উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব গাজা ধ্বংস করছে ইসরায়েল। অধিকার গোষ্ঠী ইউরো-মেড মনিটর এ মাসের শুরুতে জানিয়েছে, ২০টি করে বাড়ি ধ্বংস করতে সক্ষম এমন ১৫টি রোবট মোতায়েন করা হয়েছে।
দুই বছরের যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি গাজা শহরে ফিরে এসে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বসবাস শুরু করেছিলেন। তবে এখন শহরটিতে কত মানুষ রয়েছেন তা নিয়ে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ইসরায়েলের এক সামরিক কর্মকর্তা গত মঙ্গলবার বলেন, আনুমানিক সাড়ে ৩ লাখ ফিলিস্তিনি গাজা শহর ছেড়ে পালিয়েছেন যদিও গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, শুধু শহরের কেন্দ্র এবং পশ্চিমাঞ্চল থেকে সাড়ে ৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যার মধ্যে ১ লাখ ৯০ হাজার মানুষ সম্পূর্ণভাবে শহর ছেড়ে চলে গেছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধকে গণহত্যা বলে মন্তব্য করেছে। প্রায় দুই বছরের যুদ্ধ ও প্রায় ৬৫ হাজার মানুষের মৃত্যুর পর একে ফিলিস্তিনের জন্য একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। কমিশন তার রিপোর্টে বলেছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের প্রকাশ্য বিবৃতিতে এটা স্পষ্ট যে জাতি হিসেবে ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করার ‘সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য’ ছিল ইসরায়েলের।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য হামাসকে কড়া বার্তা দিয়েছেন। এছাড়া পশ্চিম তীরের নাবলুসেও ইসরায়েলি সেনাদের অভিযান চলছে। স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে যে, কাফর কিল্লাল শহরে আইডিএফ শব্দ বোমা নিক্ষেপ করেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বর্ধিত এই স্থল হামলায় তাদের দুটি ডিভিশন অংশ নিয়েছে, যেখানে ২০ হাজারেরও বেশি সেনা রয়েছে। ইসরায়েল এই হামলা শুরুর আগে শহরটির সব বাসিন্দাকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু এখনো সেখানে প্রায় ৬ লাখ মানুষ রয়ে গেছেন।
গাজা সিটি ছাড়তে বাসিন্দাদের জন্য ‘অস্থায়ী’ রুট ইসরায়েলের
গাজা সিটি থেকে বেসামরিক মানুষদের সরিয়ে নিতে নতুন একটি অস্থায়ী রুট খোলা হচ্ছে বলে গতকাল বুধবার জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
ইসরায়েলি সেনারা গতকাল বুধবার জানিয়েছে, ‘সালাহ আল-দ্বিন স্ট্রিটের মাধ্যমে একটি অস্থায়ী পরিবহন করিডর’ খোলা হচ্ছে। এএফপির প্রকাশিত ছবিতে গাজায় নতুন করে হামলার দৃশ্য দেখা গেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আরবিভাষী মুখপাত্র কর্নেল আভিখাই আদরেই বলেন, করিডরটি গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর থেকে ৪৮ ঘণ্টা খোলা থাকবে।
এর আগে সেনারা গাজা সিটি থেকে উপকূলীয় সড়ক দিয়ে দক্ষিণের আল-মাওয়াসিসহ তথাকথিত মানবিক এলাকায় যেতে বেসামরিক মানুষদের অনুরোধ করছিল। সালাহ আল-দ্বিন স্ট্রিট গাজা উপত্যকার উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত বিস্তৃত।