মধ্যপ্রাচ্য জয়ের আশা নিয়ে শুরু করা যুদ্ধে এবার সর্বহারা হয়েই ফেরত যেতে হচ্ছে ইসরায়েলের খুনে নেতা নেতানিয়াহুকে। লেবাননে অসম্মানজনক যুদ্ধবিরতি চুক্তির আলোচনার মধ্যেই আরও খারাপ খবর এসেছে ইসরায়েলের জন্য। এত দিন দাবি জানিয়ে এলেও এবার প্রথমবারের মতো স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে সরাসরি মাঠে নেমেছে সবচেয়ে শক্তিশালী মুসলিম দেশ সৌদি আরব। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে প্রায় ১০০টি দেশকে এনে এক টেবিলে বসিয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহম্মদ বিন সালমান।
মুসলিম দেশগুলোর অন্যতম দুই স্তম্ভ সৌদি ও ইরানের মধ্যে কয়েক দশক ধরেই ছিল বৈরী সম্পর্ক। আর এই শত্রুতা উস্কে দেওয়ার পেছনে অব্যাহতভাবে কাজ করে গেছে ইসরায়েল ও এর মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিনিরা এমন এক সন্দেহ ঢুকিয়েছিল যে, সৌদি আরব মনে করত ফিলিস্তিনকে ব্যবহার করে আসলে ইরান মধ্যপ্রাচ্য নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে চাচ্ছে। আর এ জন্য ইরান নিয়ন্ত্রিত হামাস, হিজবুল্লাহ, হুতিদের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের ছিল তীব্র শত্রুতা। ইরানকে দমনের নামে সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক মেরামতে দূতিয়ালীও করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
তবে এক বছর ধরে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের নির্বিচার গণহত্যায় এবার ভুল ভেঙেছে সৌদি আরবের। মোহাম্মদ বিন সালমান বুঝতে পেরেছেন, ইরানের সঙ্গে বৈরিতা জিইয়ে রেখে এতদিন নিজেদের আগ্রাসন বাড়িয়েছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। দুই শক্তিশালী মুসলিম দেশের বিভেদকে কাজে লাগিয়ে ফিলিস্তিন, লেবানন, ইরান, ইয়েমেন, ইরাক, সিরিয়াকে মুছে ফেলতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল।
তবে দেরিতে হলেও ঘুম ভেঙেছে সৌদি আরবের। ইরানের বাড়ানোর বন্ধুত্বের হাতে হাত মিলিয়ে এবার মুসলিম বিশ্ব এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছে। গাজাজুড়ে এক বছরের বেশি সময় ধরে চালানো গণহত্যায় সৌদির সমর্থন আদায় করা তো দূরের কথা, মুসলিম দেশগুলোর কাছে ইসরায়েল এখন শুধুই ঘৃণার নাম। বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব এত তীব্রতা আগে কখনোই পায়নি।
মুসলমানদের ওপর ইসরায়েলের আগ্রাসন চিরতরে বন্ধে উঠেপড়ে লেগেছে সৌদি আরব। গেল সেপ্টেম্বরেই সৌদি যুবরাজ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে কোনোদিনই সম্পর্ক স্থাপন করবে না সৌদি আরব। এবার স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে ৯০টির বেশি দেশকে রিয়াদে এক করেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদির উদ্যোগে দ্বিরাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্যে বিশ্বের নতুন এই আন্তর্জাতিক জোটটি গেল মাসেই আত্মপ্রকাশ করে। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আদায়ে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, এশিয়ার মতো দেশগুলো এক কাতারে সমবেত হয়েছে।
গত বুধবারের এই বৈঠকে ইসরায়েলকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে সৌদি আরব। ফিলিস্তিনি জনগণকে নিজেদের ভূমি থেকে চিরতরে উচ্ছেদ করাই ইসরায়েলের যে এই নির্বিচার গণহত্যার উদ্দেশ্য সে কথাটি স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে ওই ৯০ জাতির বৈঠকে। তবে সৌদি আরব স্পষ্টভাবে বলেছে, সেটা তারা আর হতে দেবে না। ফিলিস্তিনজুড়ে ইসরায়েলের দানবীয় আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত অস্ত্রবিরতি কার্যকরে নেতানিয়াহুকে হুঁশিয়ারি দেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর নেতানিয়াহুর আগ্রাসন বন্ধে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কোনো বিকল্প নেই বলেও স্পষ্ট বার্তা দেয় সৌদি।
জাতিসংঘের ১৯৩টি রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৬টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে সব আন্তর্জাতিক আইনকে তুচ্ছ করে যুক্তরাষ্ট্রের মদদে ফিলিস্তিনকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার মিশনে নেমেছে নেতানিয়াহু। এক বছরে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর হাতে ৪৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। ত্রাণ ও অবরোধে গাজার সব মানুষ মৃত্যু ঝুঁকিতে আছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘও।
ফিলিস্তিনের সর্বাধিক প্রচারিত ‘দৈনিক ফেলেস্টিন’ জানিয়েছে, বিশ্ব সেরা সন্ত্রাসী নেতানিয়াহুর বাহিনী শনিবার ভোরে আবারও গাজায় হামলা চালিয়ে ৫০ শিশুসহ ৮৪ জনকে হত্যা করেছে। নেতানিয়াহুর বাহিনী দু’টি আবাসিক বহুতল ভবনে এ হামলা চালায়। ভবন দু’টিতে ১শ’ ৭০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলো।
নেতানিয়াহুর বাহিনী আবাসিক ভবনে হামলা চালিয়ে ৮৪ জনকে হত্যার ঘটনাকে ‘নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ বলে মন্তব্য করেছে গাজার সরকারি গণমাধ্যম ‘দৈনিক ফেলেস্টিন’।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই এলাকাটি অবরুদ্ধ করে ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত বোমা হামলার কারণে সেখানে উদ্ধারকর্মীরা যেতে পারছেন না। ওই এলাকায় কোনো ধরনের স্বাস্থ্য পরিষেবা কিংবা ত্রাণ সহায়তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সরকারের পক্ষ থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে কাতার ভিত্তিক আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির বালবেক-হেরমেল এলাকায় শনিবার ভোরে ইসরাইল বাহিনীর হামলায় ৫২ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন ৭২ জন। এ নিয়ে লেবাননে ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
এদিকে গাজা ও লেবাননে যুদ্ধবিরতি নিয়ে গুঞ্জন উঠলেও নেতানিয়াহু বাহিনীর ‘অমানবিক আগ্রাসন’ আরও বেড়েছে। এই অবস্থায় নেতানিয়াহুর প্রস্তাবিত স্বল্প মেয়াদি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মানবে না স্বাধীনতাকামী হামাস যোদ্ধারা। হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি শনিবার সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরাকে একথা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, বন্দিদের মুক্ত করার জন্য স্বল্প মেয়াদ এ চুক্তি ইসরাইলের এক ‘নয়া চল-চাতুরি।’ হামাসের মুখপাত্র আরও জানিয়েছেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ না করেই বন্দিদেও ফেরত চাওয়ার বিষয়টিকে ও হামাস প্রত্যাখ্যান দিয়েছে। স্বাধীনতাকামী হামাস জানিয়েছে, বন্দিদের মুক্তি দিলেও নেতানিয়াহু বাহিনী আবারও বোমা হামলা শুরু করতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এ নির্বাচনের আগে ব্যাপক সহিংসতা, ফল পাল্টানোর চেষ্টা, রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে দেশটির ভোটাররা শঙ্কায় রয়েছেন। হঠাৎ করেই রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে সাধারণ ভোটাররা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার ও রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে ভোটারদের মধ্যে দেশের গণতন্ত্র নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চের এক জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, আমেরিকার নিবন্ধিত ভোটারদের ৪০ ভাগই বলেছেন, তারা নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার চেষ্টায় সহিংসতা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে। রিপাবলিকানপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করে আসছেন-কেবলমাত্র নির্বাচনে কারচুপি হলে তিনি পরাজিত হবেন। এসব আগাম অভিযোগ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে ক্রমেই উদ্বেগ বাড়ছে। নিবন্ধিত ভোটারদের ৯০ ভাগই মনে করেন, প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যে ভোট গণনা শেষ করে এবং অভিযোগের চ্যালেঞ্জগুলো আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে সমাধান করলে নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীকে তা অবশ্যই মেনে নেওয়া উচিত। ভোটারদের এক-তৃতীয়াংশ মনে করেন, রিপাবলিকানপ্রার্থী ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে গেলে তিনি পরাজয় মেনে নিবেন। এদিকে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন ট্রাম্পের পরাজয় মেনে নেওয়ার বিষয়ে একমত প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্প প্রতিশোধের বন্যা বয়ে দেবেন: কমলা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি। এরই মধ্যে ভোটারদের উদ্দেশে সমাপনী বক্তব্য দিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। কমলা হ্যারিস তার বক্তব্য এমন স্থানে দিয়েছেন, যেখানে প্রায় চার বছর আগে ক্যাপিটল দাঙ্গার ঠিক আগে আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্টপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পও বক্তব্য রেখেছিলেন। সেই ওয়াশিংটনে নিজের শেষদিকের নির্বাচনি প্রচারে কমলা বলেছেন, রিপাবলিকানপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় গেলে প্রতিশোধের বন্যা বয়ে দেবেন। তিনি শত্রুর তালিকা নিয়ে হোয়াইট হাউসে যাবেন। আর আমি দেশের কল্যাণে কী করা যায় সেই পরিকল্পনার তালিকা নিয়ে যাব। কমলা হ্যারিস মার্কিনিদের সতর্ক করে বলেন, ট্রাম্প নির্বাচিত হলে কেবল তার শত্রুকেই ঘায়েল করবেন না, সাধারণ মানুষের ওপরও তিনি প্রতিশোধ নেবেন।
কমলা হ্যারিস বলেন, ৯০ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে আমি অথবা ট্রাম্প ওভাল অফিসে যাব। কিন্তু দুই জনের পরিকল্পনায় তফাত্ রয়েছে। তিনি শত্রুকে শেষ করার জন্য কাজ করবেন। আর আমি দেশের মঙ্গলের জন্য অগ্রাধিকার ইস্যুগুলো বাস্তবায়ন করব। ভাইস প্রসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, এই নির্বাচন সম্ভবত আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। স্বাধীনতা ও বিশৃঙ্খলার মধ্য থেকে যে কোনো একটিকে বেছে নেওয়ার এখনই সময়। এর মাধ্যমে আপনারা জীবনের সবচেয়ে অসাধারণ কাহিনির পরবর্তী অধ্যায়টি লিখতে পারবেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প ভারসাম্যহীন, প্রতিশোধপরায়ণ এবং ক্ষুব্ধ একজন ব্যক্তি। বাইডেনের কাছে পরাজয় মেনে নিতে পারেননি রিপাবলিকান প্রার্থী, তাই সশস্ত্র জনতা দিয়ে ইউএস ক্যাপিটলে হামলা চালিয়ে নির্বাচনের ফল উল্টে দিতে চেয়েছিলেন তিনি।
দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ে কমলা বলেন, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো খরচ কমানো, যা করোনা মহামারির আগ থেকে বাড়ছিল এবং এখনো অনেক বেশি। সব ভেদাভেদ ভুলে দেশের জন্য মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে হ্যারিস বলেন, পরস্পরকে দোষারোপ করা বন্ধ করে আমাদের উচিত হাতে হাত রেখে দাঁড়ানো। নারীদের গর্ভপাতের অধিকার নিয়েও কথা বলেছেন কমলা। তিনি বলেন, নিজের শরীরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মৌলিক স্বাধীনতা মানুষের থাকা দরকার। অথচ ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে আমেরিকার নারীদের গর্ভধারণ করতে বাধ্য করবেন। বিশ্বাস না হলে আপনারা প্রজেক্ট-২০২৫ গুগল করুন।
লেবাননে শান্তি ফেরাতে মুসলিমদের ভোট চাইলেন ট্রাম্প
মর্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এতে অংশগ্রহণ করছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। লেবাননে শান্তি ফেরাতে মুসলিম ভোটারদের কাছে সামাজিকমাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরাতে চান এবং লেবাননে ধ্বংস এবং দুভোর্গ কমিয়ে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চান। এক্স হ্যান্ডলে ট্রাম্প জানান, তার প্রশাসনের সময়, তারা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পেয়েছেন এবং খুব শিগগিরই তারা আবার শান্তি পাবে। তিনি কমলা হ্যারিস এবং জো বাইডেনের কারণে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান এবং লেবাননে দুর্ভোগ ও ধ্বংস বন্ধ করবেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে প্রকৃত শান্তি দেখতে চান। সেখানে একটি স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে। যাতে এটি প্রতি ৫ বা ১০ বছরে পর যেন পুনরাবৃত্তি না হয়।
ট্রাম্প আরও জানান, তিনি সমস্ত লেবাননের সম্প্রদায়ের মধ্যে সমান অংশীদারত্ব রক্ষা করবেন। লেবাননে তাদের বন্ধুবান্ধব এবং পরিবার তাদের প্রতিবেশীদের সাথে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করার যোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে চান। তিনি আশাবাদী লেবাননের মহান জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন। এ সময় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত লেবানিজ সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করে শান্তির জন্য তাকে ভোট দেওয়ার আহ্বান করেন। প্রসঙ্গত, গত ১ বছর ধরে গাজায় চলছে ইসরায়েলের অবর্ণনীয় নিষ্ঠুরতা। এমন পরিস্থিতিতে মুসলিম ভোটাররা হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে পারে। আর তাই মুসলিম ভোটারদের টানতে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ট্রাম্প ও কমলা।
পুরো বিশ্বের নজর এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে। এই নির্বাচনের প্রায় এক সপ্তাহ বাকি। ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষ ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস। তিনি বর্তমান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প ও কমলার মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এবার ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে দেশ-বিদেশে কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে চারদিকে বিস্তর আলোচনা চলছে। এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার কমতি নেই। ফলাফল উল্টো হলে; অর্থাৎ নির্বাচনে ট্রাম্প হেরে গেলে পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে, বিশেষ করে অনেক মার্কিনের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে।
২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে ২০২০ সালের নির্বাচনে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হন। তবে এই নির্বাচনে নিজের পরাজয়ের বিষয়টি এখন পর্যন্ত মেনে নেননি ট্রাম্প। পরাজয় মেনে নিতে ট্রাম্পের এই অস্বীকৃতি মার্কিন জনগণের মধ্যে ব্যাপক বিভক্তি তৈরি করে। ট্রাম্পের আহ্বানে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি তার উগ্র সমর্থকরা মার্কিন কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল হিল) হামলা চালান। এই সহিংস হামলার উদ্দেশ্য ছিল, কংগ্রেসে বাইডেনের জয়ের সত্যায়ন ঠেকানো।
মার্কিন গণতন্ত্রে অবিশ্বাসের বীজ বপনের বিষয়ে ট্রাম্পের অব্যাহত চেষ্টা দেশটির ভোটারদের মনে আশঙ্কা জাগাচ্ছে। আর সেই আশঙ্কা হলো, আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্প পরাজিত হলে ক্যাপিটল হিলে সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের বিংহামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডোনাল্ড নেইম্যান বলেন, এবার যদি তিনি (ট্রাম্প) হেরে যান, তাহলে আবার যে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলবেন, সে বিষয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই। আর ভোটের ফলাফল পাল্টে দিতে এমন কোনো চেষ্টা নেই, যা তিনি করবেন না। এ ছাড়া কমলা হ্যারিসের অভিষেক অনুষ্ঠানেও তিনি অংশ নেবেন না। তিনি এমন এক ব্যক্তি, যিনি কখনোই পরাজয় মেনে নেবেন না।
ট্রাম্পের অতীত কর্মকাণ্ডের যে ইতিহাস তা বলছে, আসন্ন নির্বাচনে তার প্রতারণার চেষ্টা করা কোনো অমূলক বিষয় নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দিতে ট্রাম্প ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছিলেন। এই ষড়যন্ত্রের পথ ধরেই তিনি নানা অপচেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
প্রাণঘাতী দাঙ্গা : ট্রাম্পের সমালোচকরা ২০২১ সালে ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন। সে সময় ট্রাম্প ভোট জালিয়াতির ভুয়া অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি তার সমর্থকদের কংগ্রেস ভবনে যেতে বলেছিলেন। ট্রাম্পের ডাকে সাড়া দিয়ে তার উগ্র সমর্থকরা ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো হয়েছিলেন। তারা ক্যাপিটল হিলে প্রাণঘাতী দাঙ্গায় জড়িয়েছিলেন।
সমালোচকদের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কেননা, গত মাসেই মিশিগানে এক নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি যদি হেরে যান, তাহলে তাদের (ডেমোক্র্যাটদের) প্রতারণার কারণেই হারবেন। প্রতারণা ছাড়া তাকে কোনোভাবেই হারানো যাবে না। ট্রাম্প ও তার সহযোগীরা আইনি উপায় ব্যবহার করেও ২০২১ সালে দাঙ্গার ক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন। ওই সময় তারা ৬০টির বেশি মামলা করেছিলেন। এসব মামলায় এমন অভিযোগও করা হয় যে, মহামারির অজুহাতে ভোটের নিয়ম পরিবর্তন করেছে স্থানীয় নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ। এসব মামলা ধোপে টেকেনি। প্রতিটি মামলায় হেরে যায় ট্রাম্প শিবির। ভোট গ্রহণের আগেই নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা উচিত ছিল বলে রায় দেন বিচারক।
এ জন্য এবার আগেই মাঠে নেমেছেন রিপাবলিকানরা। আগাম ভোট শুরুর আগে তারা ১০০টির বেশি মামলা করেছেন। এসব মামলায় মার্কিনরা কীভাবে নিবন্ধিত হন, কীভাবে ভোট দেন, কারা ভোট দিতে পারেন- এ ধরনের নির্বাচন-সংক্রান্ত নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিক্ষিপ্ত সহিংসতা : যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ-ভিত্তিক পিআর প্রতিষ্ঠান ক্রোনাস কমিউনিকেশনসের প্রতিষ্ঠাতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যাড্রিয়েন উথে বলেন, ট্রাম্প হেরে গেলে আইনি লড়াই সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে চলতে পারে। এর তীব্রতার ওপর ভিত্তি করে কিছু কিছু এলাকায় বিক্ষোভ, এমনকি বিক্ষিপ্ত সহিংসতাও হতে পারে। স্ক্রিপস নিউজ/ইপসোস জরিপে দেখা গেছে, এবার নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার বিষয়ে আশঙ্কা করছেন প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অংশগ্রহণকারী (জরিপে)। আর আগামী ৫ নভেম্বর ভোট গ্রহণ শুরুর পর সম্ভাব্য অস্থিরতা দমনে বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারী সামরিক বাহিনী ব্যবহারে পক্ষে মত দিয়েছেন।
ইউগভের নতুন একটি জরিপে দেখা গেছে, এক-চতুর্থাংশের বেশি অংশগ্রহণকারী মনে করছেন, নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। ১২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, তারা এমন ব্যক্তিদের চেনেন, যারা ট্রাম্প প্রতারিত হয়েছেন বলে মনে করলে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে পারেন।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকের দপ্তর থেকে আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে বিদেশি ক্রীড়নকের হুমকির ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সম্ভাব্য রক্তপাতের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশি ক্রীড়নকের মাধ্যমে বা ইন্ধনে হিংসাত্মক প্রতিবাদ, সহিংসতা বা প্রত্যক্ষ হুমকির কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন।
কমলার আইকিউ কম : ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে রোববার নির্বাচনী সমাবেশ করেছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সমাবেশের শুরুতে ট্রাম্পের মিত্ররা বেশ কিছু অশ্লীল ও বর্ণবাদী মন্তব্য করেন। বক্তব্যের শুরুতে ট্রাম্প সমবেত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘চার বছর আগের চেয়ে কি এখন আপনারা ভালো আছেন?’ এ সময় জনতা সমস্বরে বলে ওঠে, ‘না।’ ৫ নভেম্বরের ভোটে জয়ী হলে অপরাধীদের হামলা থেমে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস খুবই কম আইকিউসম্পন্ন (বুদ্ধির সূচক)।’
অস্ত্র বহন আর মত প্রকাশের স্বাধীনতায় সমর্থন দিতে হবে। তাহলেই কপালে জুটতে পারে ১০ লাখ মার্কিন ডলার। শনিবার পেনসিলভানিয়ায় এমন এক প্রতিযোগিতার ঘোষণা করেছেন মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
আসন্ন মার্কিন নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে আলোচনায় এলেন মাস্ক। ৫ নভেম্বর নির্বাচনের আগ পর্যন্ত নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে প্রতিদিন একজনকে ১০ লাখ মার্কিন ডলার প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। রিপাবলিকান প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে যেন কোমর বেঁধে নেমেছেন টেসলা ও স্পেস এক্স মালিক। তবে তার সর্বশেষ কাজে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। এই লটারির বৈধতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লটারিতে অংশগ্রহণের নিয়মকানুন ব্যাখ্যা করেছেন মাস্ক। ‘বাকস্বাধীনতা ও অস্ত্র বহনের সমর্থনে’ একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করতে হবে অংশগ্রহণকারীদের। আর পিটিশনে স্বাক্ষর করতে হলে অবশ্যই ‘সুইং স্টেটের’ নিবন্ধিত ভোটার হতে হবে।
মার্কিন নির্বাচনে ৭টি ‘দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের’(সুইং স্টেট) একটি হচ্ছে পেনসিলভানিয়া। এই অঙ্গরাজ্যগুলোতে সমর্থকদের পাল্লা আকস্মিকভাবে যেকোনো দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা অনেক বেশি। আর এই রাজ্যগুলোর ভোট অনেকাংশেই নির্ধারণ করে ওভাল অফিসের পরবর্তী প্রধান কে হবেন। ফলে এখানে প্রচারণার ওপরই অনেকটা নির্ভর করবে হ্যারিস বা ট্রাম্পের ভোট ভাগ্য।
বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের শিবির থেকে এখন পর্যন্ত মাস্কের কর্মকাণ্ড নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে পেনসিলভানিয়ার ডেমোক্র্যাট গভর্নর জশ শাপিরো মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসিকে বলেছেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত মাস্কের বিষয়টি খতিয়ে দেখা।’
নির্বাচনী আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ ও জর্জটাউন ল’স্কুলের অধ্যাপক ড্যানিয়েলে ল্যাং এএফপিকে বলেছেন, ‘ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের আওতায় মাস্কের প্রতিযোগিতা দেওয়ানি বা ফৌজদারি আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। কারণ নিবন্ধিত ভোটার হওয়ার শর্তে অর্থ প্রদান একেবারেই অবৈধ।’
প্রায় একই কথা বলেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক রিক হ্যাসেন। নির্বাচন সংক্রান্ত নির্দিষ্ট আইন উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে অর্থ গ্রহণ ও প্রদান উভয়ই আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ। আইন লঙ্ঘনের শাস্তি হতে পারে ১০ হাজার মার্কিন ডলার অর্থদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।
কয়েকজন অবশ্য ভিন্ন সুরে কথা বলছেন। তাদের একজন হলেন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ব্র্যাড স্মিথ।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে স্মিথ বলেছেন, ‘মাস্ক আইনের ধূসর একটা জায়গা থেকে কাজ করছেন। কারণ তিনি ভোটের জন্য অর্থ দিচ্ছেন না। বরং পিটিশনে স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করাচ্ছেন।’
এদিকে, নিজের সাফাই গেয়ে মাস্ক বলেছেন, তিনি কেবল মানুষকে ভোট দিতে উৎসাহিত করতে চাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, ‘কথা বলুন। বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সদস্য সবাইকে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করুন। আমরা চাই সুইং স্টেটের সবার কাছে আমাদের বার্তা পৌঁছাক। আমি ধারণা করি এর মাধ্যমে (১০ লাখ ডলার পুরস্কার) তা নিশ্চিত হলো।’
শেষ কয়েক মাস ধরে, রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন বৃদ্ধি করতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন মাস্ক। ট্রাম্প শিবিরে এখন পর্যন্ত সাড়ে সাত কোটি মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছেন তিনি।
অধ্যাপক ল্যাং বলেছেন, প্রতি নির্বাচনেই এসব ফন্দিফিকির দেখা যায়। নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেই অনেক প্রশ্নবিদ্ধ কাজ করতে দেখা গেছে। যেমন ‘আমি ভোট দিয়েছি’ (আই ভোটেড) স্টিকার দেখালে কোনো একটি পণ্য উপহার হিসেবে দেওয়া। তবে অর্থের পরিমাণের কারণে মাস্কের আয়োজিত প্রতিযোগিতার ব্যাপ্তি ও প্রভাব অনেক বেশি বিস্তৃত।
বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির মতে, শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলো বাণিজ্য যুদ্ধে জড়ালে বৈশ্বিক জিডিপি ৭ ভাগ পর্যন্ত কমতে পারে। এতে বড় সংকট তৈরি হবে বিশ্ব অর্থনীতিতে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের যৌথ বৈঠকে উঠে এসেছে এই সতর্কবার্তা।
করোনাভাইরাসের মহামারিতে অর্থনীতির স্থবিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সুদহার, ভোক্তা ব্যয় পতনসহ বিভিন্ন সংকট দেখেছে বিশ্ব। এর সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও বাণিজ্য সুরক্ষানীতি। বিশ্বে জোটবদ্ধভাবে বাণিজ্যে বিধিনিষেধ আরোপে প্রধান বাধা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শুল্ক আরোপ।
এ অবস্থায় বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি বলছে, বড় অর্থনীতির দেশগুলো বাণিজ্যযুদ্ধে জড়ালে বৈশ্বিক জিডিপি সংকোচন হতে পারে। এই সংকোচনের পরিমাণ হতে পারে ফ্রান্স ও জার্মানির সম্মিলিত জিডিপির সমান।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলে আমদানিতে ২০ ভাগ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সপ্তাহে তিনি এক বক্তৃতায় বলেন, ‘ডিকশনারিতে শুল্ক হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর শব্দ।’ বিপরীতে পাল্টা শুল্কের সতর্কতা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)।
এ ধরনের পাল্টাপাল্টি পরিকল্পনায় বিশ্ব অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্তের আশঙ্কায় আইএমএফ। সংস্থাটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গীতা গোপীনাথ বিবিসিকে বলেন, শুল্কের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হলে বৈশ্বিক জিডিপি প্রায় ৭ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন টিমে দায়িত্ব পালনের জন্য আরও পাঁচজন প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর কার্যালয় থেকে উপ-সলিসিটর সানা মো. মাহরুফ হোসাইন (জিপি-পিপি) স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নিয়োগ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এর সেকশন ৭(১) অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনার জন্য পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত পাঁচজনকে প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
নিয়োগ পাওয়া পাঁচ প্রসিকিউটর হলেন- সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম মঈনুল করিম ও মো. নুরে এরশাদ সিদ্দিকী ডেপুটি এটর্নি জেনারেল পদমর্যাদার, শাইখ মাহদী, তারেক আব্দুল্লাহ, তানভীর হাসান জোহা (ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ) এই তিনজন সহকারী এটর্নি জেনারেল পদমর্যাদার সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত হবেন।
এর আগে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও অপর চার প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হয়।
নারী ও শিশুসহ দেড়শ’র ও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ইন্দোনেশিয়ার উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। কয়েকদিন ধরে সমুদ্রে একটি নৌকা নোঙর করে রাখার পর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এসব শরণার্থীদের উপকূলে নিয়ে আসা হয়।
আজ শুক্রবার জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা একথা জানায়। ইউএনএইচসিআর-এর উদ্ধৃতি দিয়ে আজ ইন্দোনেশিয়ার বান্দা আচেহ থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
বেশিরভাগ জাতিগত রোহিঙ্গা মুসলমান মিয়ানমারে ব্যাপকভাবে নির্যাতিত হয়ে প্রতি বছর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছানোর জন্য দীর্ঘ ও বিপজ্জনক সমুদ্রে যাত্রা করে।
১৫২ জনকে বহনকারী নৌকাটি কয়েকদিন ধরে দক্ষিণ আচেহ জেলার উপকূল থেকে ১.৬ কিলোমিটার দূরে নোঙর করা হয়। কর্মকর্তারা তাদের নামতে দেবেন কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে তাদের উপকূলে নিয়ে আসা হয়।
ইউএনএইচসিআর-এর ফয়সাল রহমান শুক্রবার এএফপি’কে বলেছেন, ‘মানবিক মনোভাব ও জীবন রক্ষার পাশাপাশি প্রায় ১৫২ শরণার্থীকে অবতরণের অনুমতি দেওয়ার জন্য ইউএনএইচসিআর কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘নৌকায় যারা ছিল তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল অরক্ষিত নারী ও শিশু, মানব পাচারের শিকার।’ ইউএনএইচসিআর ও অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলো এখন শরণার্থীদের সহায়তা করছে।
ইন্দোনেশিয়ায় রোহিঙ্গাদের আগমনের প্রবণতা এক ধরনের চক্রাকার কৌশল অনুসরণ করে। ঝড়ের মাসগুলোতে হ্রাস পায়। সমুদ্র শান্ত হলে বেড়ে যায়।সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় আগমন বেড়েছে। ১৪০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর আরেকটি দল বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় সুমাত্রা প্রদেশে পৌঁছেছে।
ইন্দোনেশিয়া জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। দেশটি বলেছে, মিয়ানমার থেকে শরণার্থীদের নিতে বাধ্য করা যাবে না। প্রতিবেশি দেশগুলোকে রোহিঙ্গাদের বোঝা ভাগ করে নেওয়ার এবং তার উপকূলে আসা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য বাকি আর মাত্র দুই সপ্তাহ। দুই প্রার্থী বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রচারণায় ব্যস্ত। উভয় প্রার্থীই প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আর এর মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলে মন্তব্য করেছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটপ্রার্থী কমলা হ্যারিস। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার অযোগ্য ফ্যাসিস্ট ট্রাম্প। স্থানীয় সময় বুধবার বিকেলে ওয়াশিংটন ডিসিতে ভাইস-প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি রিপাবলিকান প্রার্থীর প্রতি এমন আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছেন।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক চিফ অব স্টাফ জন কেলিকে উদ্ধৃত করে কমলা হ্যারিস ট্রাম্পকে মানসিক ভারসাম্যহীন ও অস্থির বলেও অভিহিত করেন। জন কেলি নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে ‘ফ্যাসিস্ট’র সঙ্গে তুলনা করেছেন। কমলা হ্যারিস জন কেলিকে উদ্ধৃত করে আরও বলেন, সাবেক এই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফ্যাসিস্টের সাধারণ সংজ্ঞা খাপ খায়।
কমলা হ্যারিস অভিযোগ করেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের হিটলারপ্রীতি রয়েছে। তিনি বলেন, তার এই প্রতিদ্বন্দ্বী ‘একচেটিয়া ক্ষমতা’ চেয়েছিলেন। পরে তাকে আবারও জিজ্ঞেস করা হয় যে ট্রাম্প ফ্যাসিবাদী, এটা তিনি বিশ্বাস করেন কি না, জবাবে তিনি ‘হ্যাঁ’ সূচক উত্তর দেন। এদিকে কমলা হ্যারিসের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে লিখেছেন, তিনি (কমলা) বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথা বলেই যাচ্ছেন। আমাকে অ্যাডলফ হিটলার এবং তার মনে মনে আরও যা যা কিছু আছে তাই বলে ডাকতে চাচ্ছেন। এ সময় তিনি কমলা হ্যারিসকে কমরেড কমলা হ্যারিস হিসেবেও সম্বোধন করেন।
তবে তিনি কমলা হ্যারিসকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ হিসেবেও বর্ণনা করেছেন। এদিকে ট্রাম্পের প্রচারণা দল ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ এনেছে। প্রচারণা দলের মুখপাত্র স্টিভেন চেয়াং বলেন, কমলা হ্যারিস ক্রমশ মরিয়া হয়ে উঠছেন। কারণ তিনি নড়বড়ে হয়ে পড়েছেন এবং তার প্রচারণা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ অবস্থায় এক পক্ষ আরেক পক্ষের নামে বিষোদগার করবে, এটা এক রকম স্বাভাবিক প্রবণতা।
এ ধরনের বাকযুদ্ধের মূল লক্ষ্য থাকে সমর্থকদের ভোট দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করা ও প্রতিপক্ষের প্রচারাভিযানকে ব্যাহত করা। ডেমোক্র্যাট গ্রুপ থার্ড ওয়ে’র পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজিস্ট ম্যাট বেনেটের মতে, কমলা হ্যারিস কেন জন কেলির বক্তব্যকে ধরে মন্তব্য করেছেন, সে বিষয়টি স্পষ্ট। কমলা হ্যারিসকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, তিনি এখন যা করছেন, তা কৌশলগত।
তার এটা নিশ্চিত করা দরকার ছিল যে, জন কেলি যা বলেছেন, ভোটাররা যেন তা জানতে পারেন এবং সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টের এই সর্বশেষ মন্তব্যটিকে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা প্রচারণা কৌশলও বলা যেতে পারে, যাতে করে দ্বিধাদ্বন্দে থাকা রিপাবলিকান সমর্থকরা ডেমোক্র্যাট প্রার্থীকে ভোট দেয়। নির্বাচন নিয়ে করা বিভিন্ন জরিপে এটাই দেখা যাচ্ছে যে, এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে। দেশটির বড় বড় শহরগুলোর আশপাশে ফিলাডেলফিয়া, ডেট্রয়েট, ফিনিক্সের মতো ছোট শহর আছে। সেসব শহরতলিতে শিক্ষিত কর্মজীবীদের বসবাস। তারা বরাবরই রিপাবলিকানের পক্ষে ভোট দিয়েছে। কিন্তু এবার জরিপগুলো থেকে সেসব স্থানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তার ঘাটতি টের পাওয়া গেছে। বেনেট বলেন, অসন্তুষ্ট রিপাবলিকানদের বিশেষ করে যারা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেবেন কী দেবেন না তা নিয়ে সংশয়ে আছেন তাদের দলে চানতে চাইছেন কমলা হ্যারিস।
নেব্রাস্কার ডেভিন ডেভেলাসকো নামের একজন বরাবরই ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পদে অযোগ্য। যদিও তিনি মনে করেন, কিছু রিপাবলিকান আছেন যারা তার মতো কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দেবেন। তবে, তিনি এও বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট সম্বন্ধে করা দাবিগুলো একঘেয়ে। জন কেলির মন্তব্যকে ইঙ্গিত করে তিনি বিবিসিকে বলেন, এই প্রতিবেদন যখন প্রকাশ হলো আমি এতে হতবাক হইনি। এতে খুব বেশি পরিবর্তন নেই।
রিপাবলিকান স্ট্র্যাটেজিস্ট ডেনিস গ্রেস গিটশাম বলেন, ভোটাররা ২০১৬ সাল থেকে ট্রাম্প সম্পর্কে একই ধরনের বক্তব্য শুনে আসছেন। তাই মোড় ঘোরাতে হলে নতুন কোনো বিতর্ক লাগবে। তিনি বিবিসিকে বলেন, আপনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিত্ব পছন্দ করেন না বলে যদি তার বিরুদ্ধে ভোট দেন, তাহলে আপনি একজন নির্ধারিত ভোটার। কিন্তু আপনি যদি এমন কেউ হন যিনি তার নীতিগুলো দেখছেন এবং তা আপনার কাছে ভাইভ বা ব্যক্তিত্বের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় তবে আপনি সেই ব্যক্তির সঙ্গে হাঁটতে যাচ্ছেন যিনি হোয়াইট হাউসে থাকাকালে সবচেয়ে ভালো করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে আর দুই সপ্তাহ পরই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শেষ মুহূর্তে এসে দেখা যাচ্ছে, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে আরও এগিয়েছেন।
রয়টার্স ও ইপসোসের করা এক জরিপে এমন ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ ওই জরিপে উঠে এসেছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা তিন পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন।
গত সোমবার শেষ হওয়া রয়টার্স/ইপসোস জরিপ অনুযায়ী, জরিপে অংশগ্রহণকারী নিবন্ধিত ভোটারদের ৪৬ শতাংশ বলেছেন, তারা কমলা হ্যারিসকে ভোট দেবেন। এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন ৪৩ শতাংশ ভোটার। এর আগে গত সপ্তাহে করা রয়টার্স/ইপসোস জরিপে কমলা হ্যারিসকে ৪৫ শতাংশ ভোটার এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ৪২ শতাংশ ভোটার সমর্থন দিয়েছিলেন।
রয়টার্স ও ইপসোসের সর্বশেষ দুই জরিপেই দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি ও অভিবাসন নিয়ে ভোটাররা অখুশি। এসব বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থানের পক্ষে ভোটাররা।
জরিপে দেখা গেছে, নিবন্ধিত ৭০ শতাংশ ভোটার জীবনযাপনের ব্যয় ভুল পথে যাচ্ছে বলে মনে করেন। অর্থনীতি ভুল পথে যাচ্ছে মনে করেন ৬০ শতাংশ ভোটার। অভিবাসন নীতি নিয়ে এই অবস্থান ৬৫ শতাংশের।
ভোটাররা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এখন প্রধান তিনটি সমস্যা- অর্থনীতি, অভিবাসন ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। এসব বিষয়ে কোন প্রার্থীর অবস্থান ভালো, এমন প্রশ্নে ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন বেশি পড়েছে। জরিপে উঠে এসেছে, অর্থনীতি নিয়ে ট্রাম্পের পক্ষে ৪৬ শতাংশ ও কমলার পক্ষে ৩৮ শতাংশের সমর্থন রয়েছে। এদিকে অভিবাসনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প ও কমলার পক্ষে সমর্থনের এ হার ৪৮ ও ৩৫ শতাংশ।
তবে রাজনৈতিক চরমপন্থা ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি মোকাবিলার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের চেয়ে হ্যারিসের ওপর ভরসা বেশি রাখছেন মার্কিন ভোটাররা। জরিপে দেখা গেছে, রাজনৈতিক চরমপন্থা ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি মোকাবিলায় কমলা হ্যারিসের প্রতি সমর্থন রয়েছে ৪২ শতাংশ ভোটারের। অন্যদিকে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন আছে ৩৫ শতাংশের। গর্ভপাত ও স্বাস্থ্যসেবা নীতিতে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে কমলা।
পরবর্তী প্রেসিডেন্টের মেয়াদের প্রথম ১০০ দিনে কোন বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের এমন প্রশ্ন করে দেখা গেছে অভিবাসনের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পেয়েছে। ভোটারদের ৩৫ শতাংশ মনে করেন, নতুন প্রেসিডেন্টকে সবার আগে অভিবাসনে নজর দেওয়া উচিত। আর ১১ শতাংশ ভোটার আয়বৈষম্য এবং ১০ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা ও করের কথা বলেন।
‘ট্রাম্প জিতলে রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের পতন বাধ্য’
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রচারে ব্যস্ত। এর মধ্যেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে নতুন মামলা। কমলা হ্যারিস প্রচার করেছেন পেনসিলভানিয়া, উইসকন এবং মিশিগানে। তার সঙ্গে ছিলেন লিজ চেনি। লিজ হলেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির মেয়ে। বাবা, মেয়ে দুজনেই রিপাবলিকান নেতা, কিন্তু তারা প্রকাশ্যে কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করেছেন।
রিপাবলিকানদের দিকে ঝুঁকে থাকা ভোট যাতে তার দিকে আসে, লিজকে নিয়ে সেই চেষ্টা করলেন হ্যারিস। ২০১৬ সালে তিনটি অঙ্গরাজ্যেই ট্রাম্প সেই সময়ের ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের থেকে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু ২০২০ সালে বাইডেন এই তিনটি রাজ্যে জিতেছিলেন। সেজন্যই হ্যারিস এই তিন সুইং স্টেটকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন। এই তিন রাজ্যে এগিয়ে থাকতে পারলে প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে যাবেন হ্যারিস।
যুক্তরাষ্ট্রে কিছু অঙ্গরাজ্য আছে, যেখানে ডেমোক্র্যাটরা সাধারণত জেতে, কিছু রাজ্যে রিপাবলিকানরা। কিছু রাজ্য আছে, যা কখনও ডেমোক্র্যাট, কখনও রিপাবলিকান প্রার্থীরা জেতেন। সেগুলোকেই সুইং স্টেট বলা হয়। এই রাজ্যগুলোই ভোটের ফল নির্ধারণ করে। চেনির সঙ্গে তিনটি টাউন হল ইভেন্ট করেছেন হ্যারিস। পেনসিলভানিয়ায় রক্ষণশীল রেডিও হোস্ট ম্যালবার্ন মডারেটর ছিলেন। হ্যারিস সেখানে ট্রাম্পের মানসিক স্থিতি এবং প্রেসিডেন্টের পদে বসার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
হ্যারিস বলেন, অনেক ভাবেই ট্রাম্প সিরিয়াস মানুষ নন। কিন্তু তিনি যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে তা গুরুতর হতে বাধ্য। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প যদি নভেম্বরের নির্বাচনে জেতেন, তাহলে রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের পতন হতে বাধ্য। পররাষ্ট্রনীতির প্রসঙ্গে চেনিও বহুবার ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন।
চেনি মিশিগানের ইভেন্টে বলেছেন, তিনি অনেক রিপাবলিকানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারাও ট্রাম্পকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, কী কথা হয়েছে, তা তিনি প্রকাশ্যে জানাতে পারবেন না। তবে তারা যে ঠিক কাজটা করবেন, তা নিয়ে চেনির মনে কোনো সংশয় নেই।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা
ট্রাম্প গত মাসে বিতর্কের সময় সেন্ট্রাল পার্কে ১৯৮৯ সালের একটি হত্যা নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন। এই অভিযুক্তদের বলা হয় সেন্ট্রাল পার্ক ফাইভ। প্রথমে তাদের পাঁচ থেকে ১৩ বছরের জেল হয়। তবে আরেকজনের সাক্ষ্য ও ডিএনএ তথ্যের ভিত্তিতে তারা ছাড়া পায়। ট্রাম্প প্রচারে বলেছিলেন, তারা একজনকে খুন করেছিল এবং দোষ স্বীকারও করেছিল। তদন্তের প্রথম দিকে পাঁচ কিশোর অপরাধ স্বীকার করে। তারপরই তারা জানায়, তারা চাপের মুখে এই কথা বলেছিল এবং বিচারের সময় তারা বলে, তারা নির্দোষ। এই বিষয়টি নিয়েই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হয়েছে।
হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত চীন ও ভারতের মধ্যকার বিতর্কিত সীমান্তে টহলের বিষয়ে একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করে, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে ২০২০ সালে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘাতকে কেন্দ্র করে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা দূর করা সম্ভব হবে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়টি জানিয়েছে। এই চুক্তির বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি সোমবার নয়া দিল্লিতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতীয় ও চীনা কূটনীতিক এবং সামরিক কর্মকর্তারা একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন এবং এই আলোচনার ফলস্বরূপ ভারত-চীন সীমান্তে এলএসি বরাবর টহল দেওয়ার বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছে। যা ২০২০ সালে উত্থাপিত সমস্যাগুলোর সমাধানের দিকে নিয়ে গেছে।’
এলএসি বা ‘লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ বাংলায় যাকে বলা হয়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা-মূলত ভারত ও চীনের মধ্যকার সীমান্তকে নির্দেশ করে। ভারতের উত্তর-পশ্চিমের লাদাখ থেকে পূর্বদিকের অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত চীন-ভারতের মধ্যে ৩ হাজার ৪৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত আছে। এই সীমান্ত ইস্যুতে ১৯৬২ সালে দুই দেশের মধ্যে একদফা যুদ্ধ হয়েছে। একাধিকবার চীনা সেনারা এই সীমানা অতিক্রম করে ভারতে অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছে বলে বিভিন্ন সময়ে নয়া দিল্লি অভিযোগ করেছে।
চুক্তির কথা বললেও এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি মিশ্রি। বিশেষ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে লাদাখের উত্তরে মোতায়েনকৃত হাজার হাজার অতিরিক্ত সেনা প্রত্যাহার করা হবে কি না সে বিষয়টি জানাননি তিনি।
এই ঘোষণা এমন এক সময়ে দেওয়া হলো যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ায় শুরু হওয়া ব্রিকস জোটের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারত ছাড়ছেন। এই শীর্ষ সম্মেলনে চীনও অংশগ্রহণ করছে। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, ব্রিকস সম্মেলনের সাইডলাইনে মোদি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।
এদিকে, এই চুক্তির বিষয়টি গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেছেন, ‘সম্প্রতি, চীন এবং ভারত দুই দেশের সীমান্তের বিষয়গুলো নিয়ে কূটনৈতিক এবং সামরিক চ্যানেলে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করেছে। এখন দুই পক্ষ বিষয়গুলোর সমাধানে পৌঁছেছে, যা নিয়ে চীন অত্যন্ত সন্তুষ্ট।’
এর আগে, ২০২০ সালের জুলাইয়ে লাদাখের গালওয়ানে চীন-ভারতের সামরিক বাহিনীর মধ্যকার সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ ভারতীয় ও ৪ জন চীনা সেনা নিহত হয়। সেই ঘটনার পর ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। সেই ঘটনার পর দুই পক্ষই পার্বত্য অঞ্চলটি হাজার হাজার সেনা, আর্টিলারি, ট্যাংক এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েন করে।
চীন-ভারতের চুক্তির বিষয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণম জয়শংকর বলেন, এই চুক্তি অত্যন্ত ধৈর্যশীল ও অবিচলিত কূটনীতির ফল। এর ফলে ভারত ২০২০ সালের সংঘর্ষের আগে যেভাবে সামরিক পেট্রলিং শুরু হয়েছিল ঠিক সেভাবেই চালিয়ে যেতে পারবে। তিনি বলেন, ‘আশা করছি, আমরা শান্তিতে ফিরতে পারব।’
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ভারত-চীন বিশেষজ্ঞ এবং কলিঙ্গ ইনস্টিটিউটের ইন্দো-প্যাসিফিক স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক চিন্তামণি মহাপাত্র বলেছেন, ‘এটা একটা ইতিবাচক সূচনা। কারণ গত কয়েক মাসে কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে যে আলোচনা হয়েছে তার ফলেই (দুই দেশের মধ্যে) উত্তেজনা হ্রাস সংক্রান্ত সমঝোতা হয়েছে। তবে একটা চুক্তি দুই দেশের মধ্যে সব ধরনের উত্তেজনার অবসান ঘটাতে সক্ষম হবে এমনটা নয়। তবে একে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।’
সমঝোতার বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছেন অধ্যাপক মহাপাত্র। তার কথায়, ‘এই সমঝোতা ডিসএনগেজমেন্ট সংক্রান্ত। এটা কিছু এলাকায় ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং কিছু অঞ্চলে এখনো বাকি আছে। গত মাসে ভারতীয় সেনাপ্রধানও বলেছিলেন, সহজ সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে গিয়েছে এবং আগামী সময়ে কঠিন বিষয়গুলোর সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
কিছু বিশেষজ্ঞ আবার এলএসি সম্পর্কিত সাম্প্রতিক ঘোষণাকে ‘সতর্কতার’ সঙ্গে পর্যবেক্ষণের কথা বলেছেন। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো তনভি মদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটারে)-এ লিখেছেন, ‘২০১৭ সালের ডোকলাম সংকটও ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের আগেই সমাধান হয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির চীন সফরের পথ প্রশস্ত হয়েছিল।’
ঘূর্ণিঝড় দানার সম্ভাব্য গতিপথের বেশির জুড়েই রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজ্যটির উপকূলে ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। ঘূর্ণিঝড়কে মোকাবিলা করতে এরই মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে রাজ্যটি।
জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে টানা ৪দিন ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি একদিন বন্ধ ছিল রেল যোগাযোগ। আজ বুধবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর মারফতে এমন খবর জানা যায়।
এদিকে, আজ টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের শিয়ালদহ ডিভিশনে ১৬০টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত সেখানে কোনও ট্রেন চলাচল করবে না।
ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত এসব ট্রেন বাতিল হয়েছে। আর দক্ষিণ থেকে শিয়ালদহ স্টেশন পর্যন্ত ট্রেন চলাচল ২৪ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টা থেকে ২৫ অক্টোবর সকাল ১০ টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
আবার শিয়ালদহ হাসনাবাদ শাখায় ট্রেন চলাচল ২৪ অক্টোবর রাত ৮টা থেকে ২৫ অক্টোবর সকাল ১০টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের অগ্নিনির্বাপক ও জরুরি পরিবেশমন্ত্রী সুজিত বোস জানিয়েছেন, রাজ্যের ৮৫টি কেন্দ্রে তাদের দল মোতায়েন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ১১টি দল দক্ষিণ কলকাতায়, ৮টি উত্তর কলকাতায়, ১২টি দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায়, ২৪টি উত্তর চব্বিশ পরগনায়, ৬টি হাওড়ায়, ৪টি পশ্চিম মেদিনীপুরে এবং ৫টি পূর্ব মেদিনীপুরে অবস্থান করবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণের বাকি আর মাত্র দুই সপ্তাহ। এই নির্বাচন ঘিরে দেশটিতে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এ অবস্থায় জোরেশোরে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আর এই প্রচারণার অংশ হিসেবে রোববার ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস দুটি গির্জায় গিয়েছিলেন। আর তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প গিয়েছিলেন ফাস্ট ফুড রেস্তোরাঁ চেইন ম্যাকডোনাল্ডসে। খবর : রয়টার্স।
কমলা হ্যারিস কলেজে পড়ার সময় ম্যাকডোনাল্ডসে কাজ করেছেন। এ তথ্য তিনি নিজেই জানিয়েছেন। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতে, কমলা হ্যারিসের এ কথা মিথ্যা। তাই কমলার জন্মদিনে ম্যাকডোনাল্ডসে ট্রাম্পের যাওয়াটা সংবাদমাধ্যমের নজর কেড়েছে। সেখানে তিনি কমলার বিরুদ্ধে আবারও মিথ্যা বলার অভিযোগ তোলেন।
ফিলাডেলফিয়ায় ম্যাকডোনাল্ডসের একটি রেস্তোরাঁয় গিয়ে ট্রাম্প কালো-হলুদ অ্যাপ্রোন পরে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ভাজেন। শুধু ভাজা নয়, এমনকি রেস্তোরাঁর জানালা দিয়ে সমর্থকদের হাতে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই তুলে দেন তিনি। এ সময় রাস্তার উল্টা পাশে হাজারো মানুষ জড়ো হয়ে এ দৃশ্য দেখেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ম্যাকডোনাল্ড ফেঞ্চ ফ্রাই ভাজা ও সমর্থকদের হাতে তা তুলে দেওয়া উপভোগ করেছেন তিনি।
ভোট গ্রহণকে সামনে রেখে মার্কিন এই দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক রাজ্যে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জর্জিয়াতে কমলা হ্যারিস এবং পেনসিলভানিয়াতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রচারণা চালাচ্ছেন।
জর্জিয়ার স্টোনক্রেস্টে অবস্থিত নিউজ বার্থ মিশনারি ব্যাপিস্ট চার্জে যান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। হাজার হাজার মানুষের সামনে কমলা বলেন, ‘এ সময়ে আমাদের দেশজুড়ে দেখতে পাচ্ছি যে কিছু মানুষ আমাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা, ঘৃণা ছড়ানো, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি আর ভয়ের বীজ বপন করার চেষ্টা করছে।’
এ সময় ‘আরও সহানুভূতিশীল ভবিষ্যতের’ জন্য ভোট দেওয়ার আহ্বান কমলা হ্যারিস।
অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছেন ব্রিটেনের রাজা চার্লস। ক্যানসার আক্রান্ত রাজা চার্লস এখন অনেকটাই সুস্থ । গতকাল সোমবার অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে যান তিনি। সেখানে গিয়েই নারী সিনেটর লিডিয়া থর্পের তোপের মুখে পড়েন তিনি। জানা গেছে, পাঁচ দিনের সফরে অস্ট্রেলিয়া গেছেন ব্রিটিশ রাজা। তার সঙ্গে আছেন স্ত্রী ক্যামেলিয়া। গতকাল সোমবার দেশটির সংসদে এমপি ও সিনেটরদের সামনে বক্তব্য দিয়েছেন রাজা চার্লস।
রাজা চার্লসের বক্তব্য শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মঞ্চের সামনের দিকে চিৎকার করতে করতে আসেন ভিক্টোরিয়া রাজ্যের স্বতন্ত্র সিনেটর লিডিয়া থর্প। প্রথমেই রাজাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, এটা আপনার দেশ নয়। লিডিয়া থর্প চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘আমাদের জমি ফেরত দাও! তুমি আমাদের কাছ থেকে যা চুরি করেছ তা ফেরত দাও! এটা তোমার জমি নয়, তুমি আমার রাজা নও।’
এরপর চিৎকার করে থর্প বলেন, তুমি আমাদের দেশের জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছ। আমাদের ভূমি আমাদের কাছে ফিরিয়ে দাও। আমাদের কাছ থেকে যেগুলো চুরি করে নিয়ে গেছ সেগুলো ফিরিয়ে দাও। যেমন হাড়, আমাদের মাথার খুলি, আমাদের শিশু, আমাদের মানুষ।
লিডিয়া থর্প অস্ট্রেলিয়ারই ভূমিকন্যা। কঠোর রাজতন্ত্রবিরোধী অবস্থানের জন্য পরিচিত তিনি। এর আগে তিনি ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানদের ‘গণহত্যা’ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন। কেননা, অস্ট্রেলিয়া ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। আর সেই সময়ে হাজার হাজার আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানকে হত্যা করা হয়েছিল এবং সমগ্র সম্প্রদায়গুলোকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল।
পরে দেশটি ১৯০১ সালে প্রকৃত স্বাধীনতা লাভ করে, কিন্তু কখনই একটি পূর্ণাঙ্গ প্রজাতন্ত্র হয়ে উঠতে পারেনি। যেখানে রাজা চার্লস বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান। আর সেই সুবাদেই বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া ও সামোয়ায় ৯ দিনের সফরে রয়েছেন তিনি। যা তার ক্যানসার নির্ণয়ের পর প্রথম বড় সফর।
প্রসঙ্গত, রাজা চার্লসকে নিয়ে এমন মন্তব্য থর্পের নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন সময়ই আকর্ষণকারী রাজনৈতিক স্টান্ট এবং রাজতন্ত্রের তীব্র বিরোধিতা করে আলোচনায় আসেন থর্প। ২০২৩ সালে সংবিধানে আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানদের স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করার পেছনে অবদান রেখেছিলেন তিনি।