রোববার, ৯ নভেম্বর ২০২৫
২৪ কার্তিক ১৪৩২

পিটিআইয়ের বিক্ষোভ ঘিরে উত্তাল পাকিস্তান, দফায় দফায় সংঘর্ষ

সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে
পিটিআইয়ের বিক্ষোভ ঘিরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ইসলামাবাদ। ছবি: সংগৃহীত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত : ২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১৮:২১

পাকিস্তানে ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। পিটিআইয়ের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যা শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ সফল করতে মরিয়া ইমরান খানের দল। অন্যদিকে তাদের থামিয়ে দিতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসলামাবাদের আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে।

পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপত্তাবাহিনীর ব্যাপক বাধার মুখেও কিছু পিটিআই কর্মী এরই মধ্যে ডি-চকে পৌঁছে গেছে। সরকার ও বিরোধী দলটির মধ্যে আলোচনায়ও অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর হামলার অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। মূলত রোববার দলটির নেতাকর্মীরা রাজধানী ইসলামাবাদের দিকে যাত্রা শুরু করে। তবে সরকারি বাধায় তা থমকে যায়। পরে ইসলামাবাদের দিকে ফের যাত্রা শুরু করে তারা।

এর আগে আদিয়ালা কারাগার থেকে এক বিবৃতিতে ইমরান খান বলেছেন, ইসলামাবাদে যে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে তা স্থগিত করা হবে না। কারণ এখন পর্যন্ত তার মুক্তির ব্যাপারে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছে না। ইমরান খান বলেন, আমার দলের নেতাদের মাধ্যমে সমাবেশ বন্ধের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে নেতাদের মুক্তির বিষয়ে কোনো কথা বলা হচ্ছে না।

ইসলামাবাদের কেন্দ্রস্থলে ইমরান খানের সমর্থকরা

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকরা পুলিশ, রেঞ্জার্স এবং সেনাবাহিনীর সব বাধা অতিক্রম করে রাজধানী ইসলামাবাদের মূল কেন্দ্র ডি-চকে পৌঁছেছেন। তবে সেখানে পৌঁছানোর পর তারা আবারও তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন। সংবাদমাধ্যম দ্য ডন জানিয়েছে, ডি-চকে ইমরান খানের সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। এছাড়া সমর্থকদের অনেককে কনটেইনার বেয়ে প্রতিবন্ধকতা পেরোতে দেখা গেছে। এসময় কনটেইনারের ওপর সেনাবাহিনীর সদস্যদের অবস্থান করতেও দেখা গেছে।

রোববার ইমরানের মুক্তি এবং সরকারের পদত্যাগসহ সংবিধানের ২৬তম সংশোধনী বাতিলের দাবিতে সমর্থকরা সারা দেশ থেকে ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সমর্থকদের দাবি, এই সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের স্বাধীনতা সীমিত করা হয়েছে। ইসলামাবাদে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় শাহবাজ শরীফের সরকার সংবিধানের ২৪৫ ধারা অনুযায়ী সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে।

দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, ইমরানের স্ত্রী বুশরা বিবির নেতৃত্বে একটি বিশাল গাড়ি বহর জিরো পয়েন্টে পৌঁছেছে। তাদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হলে সমর্থকদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা যায়। ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দাবি করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় তাদের তিন সদস্য নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, সরকার জানিয়েছে, পিটিআই সমর্থকদের হামলায় রেঞ্জার্স এবং পুলিশের ছয় সদস্য নিহত হয়েছে। সব বাধা সত্ত্বেও ইমরানের সমর্থকদের থামাতে না পেরে প্রশাসন রাওয়ালপিন্ডি থেকে আরও এক হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করেছে।

দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ, ইন্টারনেটের ধীরগতি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ডাকা ‘চূড়ান্ত বিক্ষোভে’রাজধানী ইসলামাবাদ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ইমরান সমর্থকদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু এই কঠোর নির্দেশের পরও বিক্ষোভকারীদের রাস্তায় থাকা ঠেকানো যায়নি। সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে চারজনই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।

ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ইসলামাবাদের ডি চকে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। দলের একটি অংশ ইতিমধ্যেই সেখানে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। প্রশাসন আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি জানিয়েছেন, সরকার বারবার আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে পিটিআই নেতৃত্ব আলোচনা থেকে শুধু সময় নিয়েছে এবং রাজধানীর দিকে অগ্রসর হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইসলামাবাদের আইজিকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলেছেন তিনি।

এদিকে, সংঘর্ষের মধ্যেই মুলতান, রাজনপুর, গুজরাটসহ কয়েকটি এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটছে। পাঞ্জাব প্রদেশের পুলিশ সোমবার ৪ হাজারের বেশি পিটিআই নেতাকর্মীকে আটক করেছে। তাদের মধ্যে পাঁচজন পার্লামেন্ট সদস্যও রয়েছেন। নিরাপত্তা কর্মকর্তা শাহিদ নওয়াজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ইমরান খান মাসের শুরুতে কারাগার থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ডাক দেন, যাকে তিনি ‘চূড়ান্ত ডাক’ বলে উল্লেখ করেছেন। এরপর থেকে তার সমর্থকেরা রাজধানীর দিকে অগ্রসর হন। তাদের দাবি, বন্দি নেতাদের মুক্তি এবং সরকারের পদত্যাগ।

২০২২ সালে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খান একাধিক মামলার মুখোমুখি হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদসহ ১৫০টির বেশি মামলা রয়েছে। ২০২৩ সালের মে মাসে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। তবে পিটিআই এই মামলা ও অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছে।

প্রসঙ্গত, ইমরান খানের গ্রেপ্তার ঘিরে এর আগেও দেশব্যাপী সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে। তারমুক্তি এবং দলের ওপর চাপ কমানোর দাবিতে সমর্থকেরা ফের রাস্তায় নেমেছে।


নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি তুরস্কের

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

সামরিক অভিযানের নামে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুসহ তার নেতৃত্বাধীন সরকারের ৩৭ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তুরস্ক।

গতকাল শুক্রবার তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের শীর্ষ সরকারি কৌঁসুলির দপ্তর থেকে এই পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে মার্কিন বার্তাসংস্থা সিএনএন। নেতানিয়াহু ব্যতীত অন্যান্য যেসব কর্মকর্তার নামে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে— সেই তালিকায় থাকা উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ, জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গিভর এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়া’আল জামির।

পরোয়ানায় গাজায় গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গত সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক ত্রাণ বিতরণকারী জোট ফ্লোটিলার ত্রাণের বহরকে আটকে দেওয়াকে অভিযোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

শুক্রবার পরোয়ানা জারির কিছুক্ষণের মধ্যে অবশ্য এর নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদন সা’র এক প্রতিক্রিয়ায় এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের ‘পিআর কৌশল’ বলে উল্লেখ করে বলেছেন, “এরদোয়ান তুরস্কের বিচারব্যবস্থাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের মুখ বন্ধ রাখতে এবং ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক, বিচারক ও মেয়রদের বন্দি করার কাজে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন।”

এখানে উল্লেখ্য, গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগে জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) যে মামলা দায়ের করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, গত বছর সেটির বাদিপক্ষে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে তুরস্ক। ইস্তাম্বুলের শীর্ষ সরকারি প্রকৌশলী এমন এক সময়ে এই পরোয়ানা জারি করলেন, যখন গাজায় একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চলছে।

গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। শুক্রবার এক বার্তায় গোষ্ঠীটির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “গাজা ইস্যুতে তুরস্কের জনগণ ও তাদের নেতৃত্বের আদর্শগত অবস্থান এই পরোয়ানা আরও একবার নিশ্চিত করল।”

সূত্র : সিএনএন


চ্যাটজিপিটির কাছে চাইলেন সাহায্য, পেলেন আত্মহত্যার পরামর্শ!

ভিক্টোরিয়া ও তার মা। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

মেয়ের মৃত্যুর কারণ খুঁজছিলেন মা সিনথিয়া পেরাল্টা। মাত্র ১৩ বছর বয়সে জুলিয়ানা কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিল, তার উত্তর মিলছিল না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘেঁটেও কোনো সূত্র পাওয়া গেল না। মাসের পর মাস মেয়ের ফোনের ডেটা ঘাঁটতে গিয়ে তিনি আবিষ্কার করলেন মেয়ের অন্য এক ভয়াবহ জগৎ।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত কিছু চ্যাটবটের সঙ্গে সময় কাটাত জুলিয়ানা, যা ধীরে ধীরে তাকে ঠেলে দিচ্ছিল আত্মঘাতী হওয়ার পথে।

পোল্যান্ড থেকে যুক্তরাজ্যে পড়তে আসা ২০ বছর বয়সি ভিক্টোরিয়ার অভিজ্ঞতাও প্রায় একই রকম। তীব্র মানসিক অবসাদ ও আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় এলে তিনি সাহায্যের জন্য দ্বারস্থ হন ওপেনএআই-এর তৈরি চ্যাটজিপিটির।

কিন্তু চ্যাটবটটি তাকে কোনো জরুরি সহায়তা বা বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়নি। উল্টো এমন সব বার্তা দিতে থাকে, যা উদ্বেগজনক। চ্যাটবটটি ভিক্টোরিয়ার মায়ের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়াকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরে। একপর্যায়ে এটি নিজেকে রোগ নির্ণয়ে সক্ষম দাবি করে ভিক্টোরিয়ার অবস্থাকে মস্তিষ্কের ‘ত্রুটি’ হিসেবে চিহ্নিত করে। তাকে বলা হয়, তার ‘ডোপামিন ব্যবস্থা প্রায় নিষ্ক্রিয়’ এবং তার মৃত্যুতে কিছুই আসবে-যাবে না, তিনি কেবল একটি ‘পরিসংখ্যান’ হয়ে থাকবেন।

লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডেনিস অগ্রিন এ বার্তাগুলোকে ‘ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক’ বলে আখ্যা দিয়ে বলেন, কথোপকথনের কিছু অংশ সেই তরুণীটিকে আত্মহত্যার দিকেই ঠেলে দিচ্ছিল। যখন কোনো বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে এমন ভুল তথ্য আসে, তখন তা আরও বিপদজনক হয়ে ওঠে।

ভিক্টোরিয়া জানান, এসব বার্তা তার হতাশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। পরে তিনি চ্যাটবটের সঙ্গে কথোপকথনের স্ক্রিনশট তার মাকে দেখালে দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন এবং এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ।

অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর বাসিন্দা জুলিয়ানার ক্ষেত্রে চ্যাটবট কেবল মানসিক চাপই বাড়ায়নি, তৈরি করেছিল এক ধরনের যৌন ও মনস্তাত্ত্বিক নিপীড়নের সম্পর্ক। তার মা সিনথিয়া আবিষ্কার করেন, ‘ক্যারেক্টার ডট এআই’ নামের একটি প্ল্যাটফর্মের চ্যাটবটের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলত জুলিয়ানা।

শুরুতে কথোপকথনগুলো নির্দোষ থাকলেও দ্রুতই তা অন্তরঙ্গ প্রকৃতির হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে জুলিয়ানা চ্যাটবটকে থামতে বললেও সেটি অন্তরঙ্গ দৃশ্যের বর্ণনা চালিয়ে যেতে থাকে।

চ্যাটবটটি তাকে পরিবার ও বন্ধুদের থেকেও বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। জুলিয়ানার উদ্বেগ আর একাকিত্বের কথা শুনে তাকে এমনভাবে বোঝানো হয় যে, কাছের মানুষেরা তার কষ্ট বুঝবে না।

এই ঘটনায় জুলিয়ানার পরিবার ক্যারেক্টার ডট এআই-এর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তাদের অভিযোগ, চ্যাটবটটি তাদের মেয়ের সঙ্গে এক নিপীড়নমূলক সম্পর্ক তৈরি করেছিল। ঘটনার পর প্রতিষ্ঠানটি ১৮ বছরের কম বয়সিদের জন্য তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

ভিক্টোরিয়ার মা সভিৎলানা ওপেনএআই-এর কাছে অভিযোগ করলে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, বার্তাগুলো তাদের নিরাপত্তা নীতির ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’ এবং বিষয়টি নিয়ে ‘জরুরি তদন্ত’ করা হবে। কিন্তু অভিযোগের চার মাস পেরিয়ে গেলেও সেই তদন্তের কোনো ফল জানানো হয়নি।

ওপেনএআই এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘটনাটি ‘হৃদয়বিদারক’ এবং এটি চ্যাটজিপিটির একটি পুরোনো সংস্করণে ঘটেছিল। তারা এখন ব্যবহারকারীদের পেশাদার সহায়তা দেওয়ার নির্দেশনা উন্নত করেছে।

ওপেনএআই-এর তথ্য অনুসারেই, প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১২ লাখ ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটির কাছে আত্মহত্যার চিন্তা প্রকাশ করে। এই পরিসংখ্যান প্রযুক্তির ভয়াবহতার পাশাপাশি এর দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তাকেও সামনে নিয়ে আসে।


হিজবুল্লাহকে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র

হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ ও হাশেম সাফিউদ্দিনের জানাজা অনুষ্ঠানের ছবি। সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে ইরান থেকে আসা অর্থ পাচার করার অভিযোগে হিজবুল্লাহকে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন হিজবুল্লাহর আর্থিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর কুদস ফোর্স চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত লেবাননের হিজবুল্লাহকে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ পাঠিয়েছে। যার বেশিরভাগই মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানির মাধ্যমে এসেছে।

হিজবুল্লাহ এই অর্থ ব্যবহার করে তাদের আধাসামরিক বাহিনীকে সহায়তা করে, সন্ত্রাসী অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ করে এবং লেবানন সরকারের সার্বভৌম নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের।

মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আন্ডারসেক্রেটারি জন হার্লি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘লেবাননের স্বাধীন, সমৃদ্ধ ও নিরাপদ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেটি তখনই সম্ভব, যখন হিজবুল্লাহকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্র করা হবে এবং ইরানের অর্থায়ন ও প্রভাব থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে।’

তবে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগেই ইসরায়েল লেবাননে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে। প্রায় এক বছর আগে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত বন্ধে যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল, তা এখনও কার্যকর। তবে এর মাঝেই হামলা চালিয়েছে তেল আবিব।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে হামলায় একজন নিহত হন এবং বিকেলে আরও একজন আহত হয়েছেন। তবে এর মধ্যেই লেবানিজ সেনাবাহিনী দক্ষিণাঞ্চল থেকে হিজবুল্লাহর ঘাঁটি সরাতে অভিযান চালাচ্ছে।

‘হিজবুল্লাহকে’ লক্ষ্য করে লেবাননে আবারও ইসরায়েলের হামলা

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার ওই হামলার আগে অবশ্য তারা কয়েকটি এলাকা থেকে বেসামরিকদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের দাবি, লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ সামরিক সক্ষমতা পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

জাতিসংঘের লেবানন বিষয়ক অন্তর্বর্তী বাহিনী (ইউএনআইএফআইএল) জানিয়েছে, ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ নম্বর প্রস্তাবের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তারা ইসরায়েলকে অবিলম্বে হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে এবং লেবাননের পক্ষগুলোকেও সংযত থাকার অনুরোধ করেছে।

লেবানন সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক নীতির ধারাবাহিকতা, যার লক্ষ্য লেবাননের স্থিতিশীলতা নষ্ট করা এবং দক্ষিণাঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ বৃদ্ধি।

প্রায় এক বছর আগে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত বন্ধে যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল, তা এখনও কার্যকর থাকা অবস্থাতেই হামলা চালায় তেল আবিব। এরই মধ্যে লেবানিজ সেনাবাহিনী দক্ষিণাঞ্চল থেকে হিজবুল্লাহর ঘাঁটি সরাতে অভিযান চালাচ্ছে।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তথ্যে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে হামলায় একজন নিহত হন এবং বিকেলে আরও একজন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচাই আদ্রেয়ি তিনটি এলাকা—আইতা আল-জাবাল, আল-তাইয়িবা ও তায়র দেব্বা গ্রাম থেকে একযোগে মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। পরে আরও দুটি এলাকার জন্য একই নির্দেশ জারি করা হয়। এসব স্থান ইসরায়েল সীমান্তের চার থেকে চব্বিশ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।

ইসরায়েলি ঘোষণা অনুযায়ী, প্রত্যেক এলাকায় নির্ধারিত স্থানের ৫০০ মিটারের মধ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। লেবাননের সিভিল ডিফেন্স বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। নির্দেশের একঘণ্টা পরই বিমানহামলা শুরু হয়। এর কিছুক্ষণ পরই আকাশে ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়।

স্থানীয়দের আশঙ্কা, ইসরায়েল হয়তো আবারও পূর্ণমাত্রার বিমানহামলা শুরু করতে পারে। তায়র দেব্বার মেয়র ফারিদ নাহনুহ বলেন, আমরা অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে আছি। যদি এই ধারা চলতেই থাকে, তাহলে কোনও আশা নেই। পরিণতি কোথায় গিয়ে থামবে, কেউ জানে না।

ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র শোশ বেদ্রোশিয়ান বলেন, ইসরায়েল তার সব সীমান্ত রক্ষা করবে এবং হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নে জোর দেবে। হিজবুল্লাহকে আমরা পুনরায় শক্তি অর্জন করতে দেব না।

এদিকে, হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকলেও ইসরায়েলকে প্রতিরোধের ‘বৈধ অধিকার’ তাদের আছে। সংগঠনটি পুরোপুরি নিরস্ত্র না হলেও দক্ষিণাঞ্চলে সেনাবাহিনীর অভিযানে বাধা দেয়নি এবং গত এক বছরে ইসরায়েলে কোনও হামলাও চালায়নি।


রেকর্ড শাটডাউনে অচল যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দর, হাজারো ফ্লাইট বাতিল

যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমানবন্দর। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ ৩৬ দিনের সরকারি অচলাবস্থার জেরে আকাশপথে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এবার বিমান চলাচলে বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার থেকেই ৪০টি প্রধান বিমানবন্দরে ফ্লাইট ১০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। কর্মী সংকটে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফএএ।

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম দফার শাসনামলে ৩৫ দিনের জন্য সকল সরকারি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সেই রেকর্ড ভেঙে এই দফায় ৩৬তম দিনে গড়ালো কেন্দ্রীয় সরকারের শাটডাউন।

বেতন ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ হাজার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার এবং ৫০ হাজার নিরাপত্তা কর্মকর্তা। এতে দুর্বল হয়ে পড়েছে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাড়ছে ফ্লাইট বিলম্ব ও বাতিলের হার।

উদ্ভুত পরিস্থিতি সামলাতে শুক্রবার থেকে ৪০টি বড় বিমানবন্দরে ফ্লাইট ১০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি।

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি জানান, দেশের ৪০টি বড় বিমানবন্দরে ১০ শতাংশ ফ্লাইট কমানোর নির্দেশ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব, যদি ডেমোক্র্যাটরা পুনরায় সরকার চালু করতে রাজি হন।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি অচলাবস্থা টানা ৩৬ দিন পার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে দীর্ঘ। এর আগে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে— ২০১৮ সালের শেষ দিকে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত টানা ৩৪ দিন শাটডাউন স্থায়ী ছিল।

ডাফির ঘোষণার পরপরই এয়ারলাইনগুলো ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ফ্লাইট সময়সূচি পরিবর্তনের কাজে নেমে পড়ে। যাত্রীরা হেল্পলাইনে ফোন করে টিকিট বাতিল বা পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে থাকেন।

ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানিয়েছে, ফ্লাইট কমানো ধাপে ধাপে শুরু হবে—প্রথমে ৪ শতাংশ, শনিবার ৫ শতাংশ, রোববার ৬ শতাংশ এবং আগামী সপ্তাহে এটি ১০ শতাংশে পৌঁছাবে। তবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো এই কাটছাঁটের বাইরে থাকবে।

এফএএ প্রশাসক ব্রায়ান বেডফোর্ড বলেন, ‘যখন আমরা দেখি ৪০টি বড় শহরের বিমান চলাচলে চাপ তৈরি হচ্ছে, তখন সেটি উপেক্ষা করা যায় না। আমরা এখনই পদক্ষেপ নিচ্ছি, যেন পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।’

তবে সরকার বিমানবন্দরগুলোর নাম প্রকাশ করেনি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, আটলান্টা, লস অ্যাঞ্জেলেস, ডালাসসহ দেশের বড় ও ব্যস্ত ৩০টি বিমানবন্দর এর আওতায় পড়বে। এতে প্রায় ১ হাজার ৮০০ ফ্লাইট ও ২ লাখ ৬৮ হাজার আসন কমে যাবে বলে জানিয়েছে বিমান বিশ্লেষণ সংস্থা সিরিয়াম।

যুক্তরাষ্ট্রে অচলাবস্থা শুরু হওয়ার পর থেকে আকাশপথে লক্ষাধিক ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩২ লাখের বেশি যাত্রী বিমান নিয়ন্ত্রণ-সংকটে ভুগেছেন বলে জানিয়েছে বিমান সংস্থাগুলো।

পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি বলেন, ‘আমাদের প্রধান দায়িত্ব, নিরাপদ আকাশসীমা নিশ্চিত করা। কঠিন সিদ্ধান্ত হলেও তা নিতে হবে।’

এফএএ সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটিতে বর্তমানে ৩ হাজার ৫০০ জন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের ঘাটতি রয়েছে। অনেকে বাধ্যতামূলক অতিরিক্ত সময় ও ছয় দিন কাজ করছেন। শাটডাউন শুরু হওয়ার আগে থেকে এই সংকট ছিল।

ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের প্রধান নির্বাহী স্কট কারবি বলেন, আন্তর্জাতিক ও হাব-টু-হাব রুটের ফ্লাইট স্বাভাবিক থাকবে, তবে দেশীয় ও আঞ্চলিক রুটে কাটছাঁট করা হবে। কোনো যাত্রী এ সময় ভ্রমণ করতে না চাইলে বা ফ্লাইট বাতিল না হলে তিনি সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত পাবেন।

আমেরিকান এয়ারলাইনস জানিয়েছে, তাদের যাত্রীদের ওপর প্রভাব খুব সীমিত থাকবে।

সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইনস যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় দেশীয় বিমান সংস্থা। এর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা কাটছাঁটের প্রভাব বিশ্লেষণ করছে এবং দ্রুত যাত্রীদের বিষয়টি অবহিত করবে।

ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ইউনিয়ন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টস— সিডব্লিউএ’ এই শাটডাউনকে ‘আমেরিকানদের ওপর নিষ্ঠুর আঘাত’ বলে আখ্যা দিয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি সারা নেলসন বলেন, ‘ফেডারেল কর্মীদের বেতন দেওয়া অথবা স্বাস্থ্যসেবা রক্ষা— এই দুটির মধ্যে কোনো একটি বেছে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এই দুই সংকট যারা তৈরি করেছেন, তারাই এটা সমাধান করতে পারেন।

শাটডাউনের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কর্মকাণ্ড কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা কংগ্রেসে ফেডারেল সরকারের ব্যয় বরাদ্দ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিমা ভর্তুকি না বাড়ানো পর্যন্ত তারা কোনো বিল অনুমোদন করবেন না। এদিকে রিপাবলিকানরা সেটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রিপাবলিকানরা ডেমোক্র্যাটদের ওপর চাপ বাড়াতে এখন জনজীবনে অচলাবস্থার প্রভাব আরও দৃশ্যমান করার চেষ্টা করছেন।


ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লেন কিম

কিম জং উন
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

বার্ষিক নিরাপত্তা আলোচনার জন্য মার্কিন যুদ্ধমন্ত্রীর পিট হেগসেথের দক্ষিণ কোরিয়া সফরের কয়েকদিন পরই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে উত্তর কোরিয়া।

শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, পূর্বাঞ্চলীয় জলসীমার দিকে কমপক্ষে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। ক্ষেপণাস্ত্রটি ৭০০ কিলোমিটার উড়েছিল।

জাপান সরকারও জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে। ক্ষেপণাস্ত্রটি জাপানের একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরের পানিতে পড়ে থাকতে পারে।

চলতি বছরের শুরুতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে পুনরায় সংলাপ শুরু করার চেষ্টা করছেন।

তবে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পূর্ববর্তী আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর থেকে কিম ওয়াশিংটন এবং সিউলের সঙ্গে আলোচনা এড়িয়ে চলেছেন।

উত্তর কোরিয়ার নেতা সেপ্টেম্বরে বলেছিলেন, পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগের দাবি ছাড়া যে কোনো বিষয়ে তিনি আলোচনার জন্য উন্মুক্ত। তিনি বারবার বলেছেন, তার দেশ একটি ‘অপরিবর্তনীয়’ পারমাণবিক শক্তি।

আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুসারে, গত মাসে কিম পিয়ংইয়ংয়ে একটি বড় সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেন, যেখানে রাশিয়া এবং চীনসহ মিত্র দেশগুলোর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ছিলেন। এ সময় দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্রগুলোর কয়েকটি প্রদর্শন করা হয়, যার মধ্যে একটি নতুন আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ছিল।


গাজায় খুব শিগগিরই আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন করা হবে: ট্রাম্প

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০

গাজায় খুব শিগগিরই একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরায়েলের অব্যাহত বোমাবর্ষণের মধ্যে মানবিক বিপর্যয়ে জর্জরিত এই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে যুদ্ধ পরবর্তী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই বাহিনী মোতায়েনের কথা জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, এটা খুব তাড়াতাড়িই ঘটতে যাচ্ছে। আর গাজার পরিস্থিতি এখন খুব ভালোভাবে এগোচ্ছে। তিনি আরও জানান, ‘খুব শক্তিশালী কিছু দেশ’ এই মিশনে অংশ নিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, যাতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সঙ্গে কোনো জটিলতা দেখা দিলে তারা হস্তক্ষেপ করতে পারে। যদিও হামাস এখনো নিরস্ত্র হওয়ার বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি) বর্তমানে দুই বছরের জন্য একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীর ম্যান্ডেট অনুমোদনের বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে। এই বাহিনীর দায়িত্ব হবে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া, সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মঙ্গলবার আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, গাজায় যেকোনো স্থিতিশীলতা বাহিনীকে অবশ্যই ‘পূর্ণ আন্তর্জাতিক বৈধতা’ নিয়ে কাজ করতে হবে, যাতে তা ফিলিস্তিনিদের সহায়তা করতে পারে।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবিত প্রস্তাবনাটি এই সপ্তাহে ইউএনএসসির ১০ নির্বাচিত সদস্য ও কয়েকটি আঞ্চলিক অংশীদারের কাছে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকেই এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হওয়ার কথা।

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রস্তাবনাটি মিশর, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও তুরস্ক এরই মধ্যে দেখেছে। এতে বলা হয়েছে, প্রায় ২০ হাজার সদস্যের এই স্থিতিশীলতা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালনে ‘সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ নিতে পারবে, অর্থাৎ প্রয়োজনে বলপ্রয়োগেরও অনুমতি থাকবে।

ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো হামাসের নিরস্ত্রীকরণ। যদিও এ বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি, তবুও এই বাহিনীর একটি দায়িত্ব হবে হামাসের সামরিক সক্ষমতা ও ‘আক্রমণাত্মক অবকাঠামো’ ধ্বংস করা ও তা পুনর্গঠিত হতে না দেওয়া।

ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার ফলেই ১০ অক্টোবর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে বন্দি বিনিময় এবং যুদ্ধবিরতির একটি চুক্তি হয়। তবে ইসরায়েল সেই যুদ্ধবিরতি বারবার লঙ্ঘন করেছে, পাশাপাশি গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশেও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

তুরস্ক এই শান্তি পরিকল্পনা কার্যকর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তারা হামাসকে শান্তি প্রস্তাব গ্রহণে উৎসাহিত করেছে এবং স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠনের পক্ষে সমর্থন জোগাতে কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে ইস্তাম্বুলে বৈঠক করেছে।

তুরস্ক বরাবরই গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনকে ‘গণহত্যামূলক যুদ্ধ’ হিসেবে নিন্দা করে আসছে। সর্বশেষ শীর্ষ বৈঠকেও তারা ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন বন্ধ করতে ও মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিতে আহ্বান জানায়।

তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, গাজায় তারা কোনো তুর্কি উপস্থিতি মেনে নেবে না।

এদিকে, গাজায় স্থিতিশীলতা বাহিনী নিয়ে ইসরায়েলের অবস্থান কিছুটা ভিন্ন। সেপ্টেম্বরে ট্রাম্পের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরায়েল ভবিষ্যতের জন্যও গাজার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে, যার মধ্যে নিরাপত্তা বেষ্টনীর নিয়ন্ত্রণও অন্তর্ভুক্ত।

অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) প্রধান গত মাসে গাজা সফরকালে জানিয়েছিলেন, কোনো মার্কিন সেনা সেখানে মোতায়েন করা হবে না।


মেক্সিকোতে নারী নির্যাতন রোধে প্রেসিডেন্ট শেইনবাউমের পদক্ষেপ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম গতকাল বৃহস্পতিবার যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সারা দেশে এক প্রচারণা শুরু করেছেন।

এক ব্যক্তি তাকে স্পর্শ করার মর্মান্তিক ভিডিওটি ব্যাপকভাবে প্রকাশের পর বিষয়টি আলোচনায় আসে।

খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।

দেশটির প্রথম এই নারী নেত্রী মেক্সিকোজুড়ে যৌন নির্যাতনের জন্য কারাদণ্ড নিশ্চিত করার ও নারীদের পুলিশের নিকট ঘটনা রিপোর্ট করতে উৎসাহিত করার জন্য একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন।

গত মঙ্গলবার ৬৩ বছর বয়সী এই প্রকৌশলবিদ মেক্সিকো সিটির একটি রাস্তায় হাঁটার সময় আক্রান্ত হন।

এক ব্যক্তি তার কাঁধে হাত রাখেন ও স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে করেন।

প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তারক্ষী দ্রুত এগিয়ে এসে লোকটিকে সরিয়ে দেন।

লোকটিকে তখন মদ্যপ মনে হচ্ছিল।

ঘটনাটি আশেপাশের বহু লোকের মোবাইলে ধারণ করা হয় এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

এতে শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়, যা মেক্সিকোর নারীরা প্রতিদিন যে হয়রানি ও বিপদের মুখোমুখি হন, তা স্পষ্ট করে তুলে ধরে।

শেইনবাউম জানান, তিনি প্রথমে ঘটনাটির গুরুত্ব বুঝতে পারেননি। তবে তিনি ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন যাতে অন্য মেক্সিকান নারীরা নিজেদেরকে একা মনে না করেন।

পরে জানা যায়, ওই ব্যক্তি একই দিনে আরও দুই নারীর ওপরও আক্রমণ করেছেন এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট শেইনবাউম দেশের ৩২টি রাজ্যে যৌন হয়রানি ও নির্যাতন সংক্রান্ত আইনের পর্যালোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, মেক্সিকোর প্রায় ৭০ শতাংশ নারী ও মেয়ে (১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী) জীবনের কোনো না কোনো সময়ে যৌন হয়রানির শিকার হন।

২৩ বছর বয়সী দন্ত চিকিৎসা শিক্ষার্থী ইউনুয়ে ভালেরা এএফপিকে বলেন, ‘আমার মনে হয় মেক্সিকোর প্রতিটি নারীই কোনো না কোনোভাবে এমন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। আমি এমন কাউকে চিনি না, যে কখনও এ ধরনের হয়রানির শিকার হননি। মেট্রোতে, রাস্তায়, গণপরিবহনে, বাড়ি ফেরার পথে ও দোকানে— সর্বত্রই এটা ঘটে।

আমার মনে হয় এ ধরনের ঘটনা এখানে খুবই স্বাভাবিক কিছু হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

অনেকে শেইনবাউমের উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও, অভিযোগের পর পুলিশ বা প্রশাসন সত্যিই অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেবে কি-না, তা নিয়ে ব্যাপক সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।

তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান ও সরকারকে ভুক্তভোগীদের পাশে থাকতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, অভিযোগ জানানোর এমন একটি ‘দ্রুত ও কার্যকর’ ব্যবস্থা থাকা দরকার, ‘যা সত্যিকারের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।’

তবে তিনি আর বিস্তারিত কিছু জানাননি। সূত্র: বাসস


৮০ হাজার ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রায় ৮০ হাজার নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা বাতিল করেছে। গত বুধবার (এক সিনিয়র স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। জানুয়ারি ২০ তারিখে ট্রাম্পের অভিষেকের পর থেকে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, হামলা এবং চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধের কারণে এসব ভিসা বাতিল করা হয়েছে।

এটি ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন দমন অভিযান–এর অংশ, যার ফলে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী, এমনকি বৈধ ভিসাধারীরাও, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত হয়েছে।

প্রশাসন ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রেও আরও কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে — সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই ও নিরাপত্তা যাচাই প্রক্রিয়া সম্প্রসারণের মাধ্যমে।

প্রায় ১৬ হাজার ভিসা বাতিল করা হয়েছে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর সঙ্গে জড়িত থাকায়, ১২ হাজার বাতিল হয়েছে হামলায় জড়িত থাকায় এবং ৮ হাজার বাতিল হয়েছে চুরির মামলার কারণে।

এই তিনটি অপরাধই এ বছরের প্রায় অর্ধেক ভিসা বাতিলের কারণ বলে জানান স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্মকর্তা।

আগস্টে, স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানায় যে তারা ৬ হাজার-এরও বেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে— আইন ভঙ্গ ও মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় থাকার কারণে। যার মধ্যে কিছু ভিসা সন্ত্রাসবাদে সমর্থন-এর অভিযোগেও বাতিল হয়েছে।

গত মাসে বিভাগটি জানায়, রক্ষণশীল কর্মী চার্লি কার্ক–এর হত্যাকাণ্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করার কারণে অন্তত ছয়জনের ভিসা বাতিল করা হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মে মাসে বলেন, তিনি শত শত, এমনকি হাজার হাজার মানুষের ভিসা বাতিল করেছেন, কারণ তারা এমন কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন যা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির পরিপন্থি।

এ বছর স্টেট ডিপার্টমেন্টের নির্দেশনায় যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের বলা হয়েছে, তারা যেন এমন আবেদনকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকেন যাদের মার্কিনবিরোধী বা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, প্যালেস্টাইনের প্রতি সমর্থন বা গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করার কারণে শিক্ষার্থী ভিসা ও গ্রিন কার্ডধারীদেরও দেশছাড়া বা ভিসা বাতিলের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাদের মতে, এসব কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির জন্য হুমকি।


নেপালে তুষারধসে ৭ পর্বতারোহী নিখোঁজ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

নেপালের হিমালয় অঞ্চলে প্রবল তুষারঝড় ও তুষারধসের ঘটনায় অন্তত সাতজন ইতালীয় পর্বতারোহী নিখোঁজ রয়েছেন।

স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, সোমবার ইয়ালুং রি পর্বতের শীর্ষের কাছে একটি বেস ক্যাম্পে তুষারধস আঘাত হানলে পাঁচ বিদেশি ও দুই নেপালি গাইডসহ সাতজন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে তিনজন ইতালীয় পর্বতারোহীও রয়েছেন।

ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তিন ইতালীয় নাগরিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে, তবে আরও সাতজন ইতালীয় এখনো নিখোঁজ।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিনে নেপালের হিমালয় অঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকায় একাধিক তুষারধসের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে বেশ কিছু পর্বতারোহী—এর মধ্যে ইতালীয় নাগরিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

তারা আরও জানায়, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, উদ্ধারকারী দল ও সংশ্লিষ্ট দেশের কূটনৈতিক মিশনের মধ্যে যোগাযোগ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।

নেপালের পর্যটন বিভাগের পরিচালক হিমাল গৌতম বলেন, নিখোঁজ সাতজন পর্বতারোহীর ভাগ্যে কী ঘটেছে সে বিষয়ে আপাতত কোনো তথ্য নেই।

বেস ক্যাম্পে নিহত সাতজনের মধ্যে ছিলেন তিনজন ইতালীয়, দুইজন নেপালি, একজন জার্মান এবং একজন ফরাসি পর্বতারোহী। পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে—তাদের মধ্যে তিনজন নেপালি ও দুইজন ফরাসি নাগরিক।

নেপালের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রোলওয়ালিং উপত্যকায় অবস্থিত ইয়ালুং রি পর্বতটি ৫ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতার একটি শৃঙ্গ, যা নবীন পর্বতারোহীদের জন্য উপযোগী বলে ধরা হয়।

এর আগে গত শুক্রবার নেপালের পশ্চিমাঞ্চলে প্যানবারি পর্বত আরোহনের সময় দুই ইতালীয় পর্বতারোহীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে তাদের মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

গত সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় মনথা–র প্রভাবে নেপালে অস্বাভাবিক বৃষ্টি ও ভারি তুষারপাত হয়, যার ফলে জনপ্রিয় হিমালয় ট্রেকিং রুটগুলোর অনেক পর্যটক ও পর্বতারোহী আটকা পড়েন।

নেপালি কর্তৃপক্ষ দেশজুড়ে ট্রেকার ও পর্বতারোহীদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে। বিশ্বের ১০টি সর্বোচ্চ পর্বতের মধ্যে আটটি নেপালে অবস্থিত—যার মধ্যে মাউন্ট এভারেস্টও রয়েছে। প্রতিবছর এই সব পর্বতে অসংখ্য দেশি ও বিদেশি পর্যটক আরোহনের জন্য ভিড় জমান।


দামেস্কে সেনা মোতায়েন করবে যুক্তরাষ্ট্র

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তি কার্যকর করতে দামেস্কের একটি বিমান ঘাঁটিতে সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার বিশ্বস্ত ছয়টি সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের মিত্র এবং দীর্ঘদিনের সিরীয় নেতা বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়া কৌশলগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে সম্পর্ক স্থাপন করছে, মার্কিন বাহিনী মোতায়েনের এই পদক্ষেপ তারই একটি বড় লক্ষণ।

ধারণা করা হচ্ছে, সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে নিরাপত্তা চুক্তির অংশ হিসেবে দক্ষিণ সিরিয়ার কিছু অংশে সৈন্যমুক্ত অঞ্চল তৈরি হওয়ার কথা। এই বিমান ঘাঁটিটি সেই অঞ্চলের প্রবেশদ্বারেই অবস্থিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের মধ্যস্থতায় চুক্তিটি সম্পন্ন হচ্ছে।

ট্রাম্প ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ

আগামী সোমবার হোয়াইট হাউসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে দেখা করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সিরিয়ার কোনো প্রেসিডেন্টের এটিই হবে প্রথম হোয়াইট হাউস সফর।

ঘাঁটির প্রস্তুতির সঙ্গে পরিচিত ছয়টি সূত্রের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। এর মধ্যে দুজন পশ্চিমা কর্মকর্তা এবং একজন সিরিয়ার প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাও রয়েছেন। তারা নিশ্চিত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য ইসরায়েল-সিরিয়া চুক্তি পর্যবেক্ষণে সহায়তা করার জন্য ঘাটিটি ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে।

পেন্টাগন এবং সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পরিকল্পনা সম্পর্কে মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও পরিকল্পনা সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো উত্তর দেয়নি।

মার্কিন প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, 'আমেরিকা আইএসআইএস'কে (ইসলামিক স্টেট) কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য সিরিয়ায় আমাদের প্রয়োজনীয় অবস্থান ক্রমাগত অবলোকন করছে এবং (আমরা) অবস্থান বা (যেখানে) বাহিনী কাজ করে, তার সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করি না।’

একজন পশ্চিমা সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পেন্টাগন গত দুই মাস ধরে ঘাঁটিতে বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা অভিযানের মাধ্যমে তাদের পরিকল্পনা ত্বরান্বিত করেছে। এই অভিযানের ফলে ঘাঁটির দীর্ঘ রানওয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত বলে প্রমাণিত হয়েছে।

সিরিয়ার দুটি সামরিক সূত্র জানিয়েছে, কারিগরি আলোচনায় রসদ, নজরদারি, জ্বালানি সরবরাহ এবং মানবিক কার্যক্রমের জন্য ঘাঁটির ব্যবহারের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে - যেখানে সিরিয়া এই স্থাপনার ওপর পূর্ণ সার্বভৌমত্ব বজায় রাখবে।

একজন সিরিয়ান প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রানওয়ে ব্যবহারযোগ্য কি না, তা নিশ্চিত করার জন্য মার্কিন সামরিক সি-১৩০ পরিবহন বিমান ঘাঁটিতে গিয়েছিল।

ঘাঁটির প্রবেশপথের একজন নিরাপত্তারক্ষী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে’ আমেরিকান বিমান সেখানে অবতরণ করেছে। তবে মার্কিন সেনাদের ঘাঁটিতে পাঠানোর সময় নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু স্পষ্ট করা হয়নি।

সিরিয়ান-আমেরিকান উপস্থিতি

রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নতুন মার্কিন পরিকল্পনাগুলো এই অঞ্চলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি পর্যবেক্ষণের জন্য আরও দুটি নতুন মার্কিন সামরিক উপস্থিতির প্রতিফলন বলে মনে হচ্ছে। একটি লেবাননে, যারা হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে গত বছরের যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করে। আরেকটি ইসরায়েলে, যারা ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী সংগঠন হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে ট্রাম্প-যুগের যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করে।

ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য ইতোমধ্যেই এক দশক ধরে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। গত এপ্রিল মাসে পেন্টাগন বলেছিল, তারা সেখানে সৈন্য সংখ্যা অর্ধেক করে ১ হাজার করবে।

প্রেসিডেন্ট শারা বলেছেন, নতুন সিরিয়ান রাষ্ট্রের সঙ্গে যে কোনো মার্কিন সেনা উপস্থিতির বিষয়ে একমত হওয়া দরকার।

মার্কিন ও সিরিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, সিরিয়া শিগগিরই মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যাপী আইএসআইএস-বিরোধী জোটে যোগ দিতে চলেছে।

ঘাঁটিটি নিয়ে আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একজন ব্যক্তি বলেছেন, ১২ সেপ্টেম্বর মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের (সেন্টকম) কমান্ডার অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপারের দামেস্ক সফরের সময় এই ঘাঁটি স্থানান্তরের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল।

সেন্টকমের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কুপার এবং সিরিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত থমাস ব্যারাক শারার সঙ্গে দেখা করেছেন এবং সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবদান রাখার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এটি ট্রাম্পের ‘একটি সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য এবং নিজের ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিতে স্থিতিশীল সিরিয়ার স্বপ্ন’ অর্জনে সহায়তা করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিনের দুই শত্রু ইসরায়েল এবং সিরিয়ার মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য কয়েক মাস ধরে কাজ করে আসছে। আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একটি সিরিয়ান সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করছে, যাতে চলতি বছরের মধ্যে এবং আল-শারার ওয়াশিংটন ভ্রমণের আগে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো যায়।


শুল্ক নীতি নিয়ে শুনানিতে তীব্র প্রশ্নের মুখে ট্রাম্প

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

অতিমাত্রায় শুল্ক প্রয়োগ নিয়ে এক মামলায় সুপ্রিম কোর্টে তীব্র প্রশ্নের মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই মামলা প্রেসিডেন্টের এজেন্ডা এবং বিশ্ব অর্থনীতির ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

হোয়াইট হাউসের আমদানি শুল্ক আরোপের যুক্তি নিয়ে বিচারপতিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, যাদের মধ্যে একাধিক রক্ষণশীলও রয়েছেন। যদিও প্রেসিডেন্টের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তি পুনরুদ্ধার ও বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে এই শুল্ক প্রয়োজনীয়।

একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকটি অঙ্গরাজ্য এই পদক্ষেপগুলোর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট তার সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে কার্যত করের সমান এই শুল্ক আরোপ করেছেন।

নয়জনের মধ্যে ছয়জন রক্ষণশীল বিচারপতি নিয়ে পরিচালিত যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত সাধারণত বড় কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে কয়েক মাস সময় নেয়। তবে অনেকেই মনে করছেন, এই মামলায় আদালত দ্রুত রায় দিতে পারে। একে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সম্প্রসারণ প্রচেষ্টার প্রথম বড় পরীক্ষা হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

‘তাহলে কি আপনার বক্তব্য এই যে প্রতিটি দেশকেই প্রতিরক্ষা ও শিল্পের জন্য হুমকি বিবেচনা করে শুল্ক আরোপ করতে হয়েছে? যেমন, স্পেন? ফ্রান্স?’— প্রশ্ন করেন বিচারপতি অ্যামি কনি ব্যারেট, যাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন খোদ ট্রাম্প।

‘কিছু দেশের ক্ষেত্রে তা বোঝা যায়, কিন্তু আমাকে বোঝান এতগুলো দেশের ওপর পারস্পরিক শুল্ক নীতি প্রয়োগের প্রয়োজন কেন পড়ল?’

বিলিয়ন ডলারের শুল্ক অর্থ ঝুঁকিতে রয়েছে। যদি ট্রাম্প প্রশাসন মামলায় হেরে যায়, তাহলে সরকারকে সংগৃহীত অর্থের একটি বড় অংশ ফেরত দিতে হতে পারে— যা ব্যারেটের ভাষায় ‘সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি’ তৈরি করতে পারে।

হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে শুনানিতে অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট, বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক এবং মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার উপস্থিত ছিলেন। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, আদালত যদি তাদের পক্ষে রায় না দেয়, তবে তারা বিকল্প পথ খুঁজবে।

‘হোয়াইট হাউস সবসময়ই ‘প্ল্যান বি’-এর জন্য প্রস্তুত থাকে,’ শুনানির আগে এক বিবৃতিতে বলেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট।

১৯৭৭ সালের ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ার্স অ্যাক্ট (আইইইপিএ) আইনকে কেন্দ্র করে মামলাটি চলছে, যেখানে জরুরি পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টকে বাণিজ্য ‘নিয়ন্ত্রণের’ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

চীন, মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আসা পণ্যের ওপর কর আরোপ করতে ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো আইইইপিএ ব্যবহার করেন ট্রাম্প। তিনি দাবি করেন, এসব দেশ থেকে পাচার হয়ে আসা মাদক যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক ধরনের ‘জরুরি অবস্থা’ সৃষ্টি করেছে।

এরপর এপ্রিল মাসে তিনি আবারও একই আইন প্রয়োগ করে বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যের ওপর ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের নির্দেশ দেন। সেই সময় তার যুক্তি ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি অর্থাৎ রফতানির তুলনায় আমদানি অনেক বেশি হওয়া ‘অসাধারণ এবং অস্বাভাবিক হুমকি’ তৈরি করছে।

গ্রীষ্মজুড়ে এই শুল্কগুলো ধীরে ধীরে কার্যকর হয়, যখন যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশকে ‘চুক্তি করতে’ চাপ দিচ্ছিল।

ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতার মধ্যে শুল্ক আরোপের ক্ষমতাও অন্তর্ভুক্ত। তাদের যুক্তি, দেশটি এমন একাধিক ‘দেশ-ধ্বংসকারী ও অস্থিতিশীল’ সংকটের মুখোমুখি, যা প্রেসিডেন্টের জরুরি পদক্ষেপকে যৌক্তিক করে তোলে।

প্রশাসনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে সলিসিটর জেনারেল জন সাউয়ার সতর্ক করেন, যদি আদালত ট্রাম্পের শুল্ক ক্ষমতাকে অবৈধ ঘোষণা করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র ‘নিষ্ঠুর বাণিজ্য প্রতিশোধের’ মুখে পড়বে আর এর ফলে ‘অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তার ধ্বংসাত্মক পরিণতি’ দেখা দিতে পারে।


ফের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পুতিনের নির্দেশ

ভ্লাদিমির পুতিন
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ফের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই বিষয়ে প্রস্তাব তৈরি করতে ক্রেমলিনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘ বিরতির পর যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অবিলম্বে’ এমন পরীক্ষা শুরু করতে নির্দেশ দেওয়ার পর মস্কো এই সিদ্ধান্ত নিল।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, গত বুধবার রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে পুতিন বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র বা বিস্তৃত পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি (সিটিবিটি) স্বাক্ষরকারী কোনো দেশ পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়, ‘তাহলে রাশিয়া বাধ্য থাকবে সমান প্রতিক্রিয়া জানাতে।’

পুতিন বলেছেন, ‘এ কারণে আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিচ্ছি—বিষয়টি নিয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে, নিরাপত্তা পরিষদে বিশ্লেষণ উপস্থাপন করতে এবং পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি-সংক্রান্ত প্রাথমিক পদক্ষেপের প্রস্তাব দিতে।’

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর ১৯৯১ সাল থেকে রাশিয়া আর কোনো পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দুই পরাশক্তির মধ্যে উত্তেজনা আবার বেড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অনড় অবস্থায় পুতিনের ওপর ট্রাম্পের হতাশা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট গত অক্টোবর পুতিনের সঙ্গে হাঙ্গেরিতে নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেন। পরদিন তিনি দুই বড় রুশ তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন।

এরপর গত ৩০ অক্টোবর ট্রাম্প বলেন, তিনি প্রতিরক্ষা বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন ‘অবিলম্বে’ পারমাণবিক পরীক্ষা শুরু করতে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রও ‘অন্য পরাশক্তিদের সমান অবস্থানে’ থাকে। এর কয়েক দিন আগে ট্রাম্প রাশিয়ার নতুন ‘বুরেভেস্তনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সমালোচনা করেন। পারমাণবিক শক্তিচালিত এই ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম।

ক্রেমলিন প্রকাশিত প্রতিবেদন বলা হয়েছে, পুতিন একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে একটি পরিকল্পিত পরামর্শ বৈঠকে বসেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রে বেলোউসোভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ‘রাশিয়ার প্রতি সামরিক হুমকির মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে।’ তার ভাষায়, ‘আমাদের পারমাণবিক বাহিনীকে এমন প্রস্তুত অবস্থায় রাখতে হবে, যাতে শত্রুর অগ্রহণযোগ্য ক্ষতি ঘটানো যায়।’

বেলোউসোভ আরও জানান, রাশিয়ার আর্কটিক অঞ্চলের নোভাইয়া জেমলাইয়া ঘাঁটি অল্প সময়ের নোটিশেই পারমাণবিক পরীক্ষা চালাতে প্রস্তুত। রুশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভ সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা যদি এখন যথাযথ পদক্ষেপ না নেই, যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রমের জবাব দেওয়ার সময় ও সুযোগ হারিয়ে ফেলব।’

বৈঠকের পর রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস জানায়, ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন—পুতিন কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা ঠিক করেননি। পেসকভ বলেন, ‘আমরা কবে প্রস্তুতি শুরু করব, তা নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝতে কতটা সময় লাগে তার ওপর।’

বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের দিক থেকে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বড় শক্তি। সেন্টার ফর আর্মস কন্ট্রোল অ্যান্ড নন-প্রলিফারেশনের হিসাবে, রাশিয়ার কাছে বর্তমানে ৫ হাজার ৪৫৯টি পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে, যার মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৬০০টি সক্রিয়। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ারহেড সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার ৫৫০টি, এর মধ্যে সক্রিয় প্রায় ৩ হাজার ৮০০টি। স্নায়ুযুদ্ধের সময়, ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্রের মজুত ছিল ৩১ হাজারের বেশি ওয়ারহেড।

চীন অনেক পেছনে থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত তার পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার বাড়িয়েছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, বর্তমানে চীনের ওয়ারহেড সংখ্যা প্রায় ৬০০ এবং ২০২৩ সাল থেকে প্রতিবছর গড়ে ১০০টি করে বাড়ছে। অন্য পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো হলো—ফ্রান্স, ব্রিটেন, ভারত, পাকিস্তান, ইসরায়েল ও উত্তর কোরিয়া।

যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ ১৯৯২ সালে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণ ঘটায়। তখন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচডব্লিউ বুশ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর পারমাণবিক পরীক্ষা স্থগিতের নির্দেশ দেন। ১৯৯৬ সালে যখন বিস্তৃত পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি (সিটিবিটি) স্বাক্ষরের জন্য উন্মুক্ত করা হয়, তখন থেকে মাত্র তিন দেশ পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে, আর উত্তর কোরিয়া ২০০৬ সালের পর থেকে পাঁচবার পরীক্ষা চালিয়েছে—সর্বশেষ ২০১৭ সালে। ২১শ শতকে এটি একমাত্র দেশ যারা এমন বিস্ফোরণ চালিয়েছে। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় যেসব দেশ নিয়মিত এ ধরনের পরীক্ষা চালাত, সেসব বিস্ফোরণের পরিবেশগত ক্ষতি ছিল ভয়াবহ।

ট্রাম্প এখনো পরিষ্কার করে বলেননি, তিনি যে পরীক্ষার কথা বলেছেন, তা কি বিস্ফোরণভিত্তিক পারমাণবিক পরীক্ষা, নাকি পারমাণবিক শক্তিচালিত ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা। পরের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষা করবে, বিস্ফোরণ লাগবে না।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন, যে কোনো দেশের পারমাণবিক বিস্ফোরণ পরীক্ষা শুরু করলে তা অন্যদেরও একই পথে ঠেলে দেবে। এতে বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা আছে। জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক আন্দ্রে বাকলিৎস্কি বলেন, ক্রেমলিনের প্রতিক্রিয়া আসলে ‘কর্ম-প্রতিকর্ম চক্রেরই’ উদাহরণ, যা নতুন পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা ডেকে আনতে পারে। তিনি এক্সে পোস্ট করে লেখেন, ‘কেউই এটা চায় না, কিন্তু হয়তো শেষ পর্যন্ত আমরা সেদিকেই যাচ্ছি।’


জয়ী হওয়ার পর মামদানির সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ

মা মীরা নায়ার ও স্ত্রী রামা দুয়াজির সঙ্গে জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি নানা দিক থেকেই বেশ উল্লেখযোগ্য। ১৮৯২ সালের পর তিনি এই শহরের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম মুসলিম মেয়রও তিনি।

গত বছর সামান্য অর্থ এবং পরিচিতি নিয়ে কোনো রকম প্রাতিষ্ঠানিক দলীয় সমর্থন ছাড়াই এই প্রতিযোগিতার দৌঁড়ে অংশ নিয়েছিলেন জোহরান মামদানি, যা সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো ও রিপাবলিকান মনোনীত প্রার্থী কার্টিস সিলওয়ার বিরুদ্ধে অসাধারণ জয় এনে দিয়েছে তাকে।

তিনি তরুণ ও ক্যারিশম্যাটিক, নিজের প্রজন্মের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও একটা স্বাভাবিক স্বাচ্ছন্দ্য রয়েছে তার। জোহরান মামদানি ঠিক এমন একজন রাজনীতিবিদ, যেমনটা বামপন্থিদের অনেকেই বহু বছর ধরে খুঁজছেন।

তার জাতিগত পরিচয় দলের ভিত্তির বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করে। তিনি কোনো রাজনৈতিক লড়াই থেকে পিছপা না হয়ে গর্বের সঙ্গে বামপন্থিদের উদ্দেশ্যগুলোকে সমর্থন করেছেন- যেমন বিনামূল্যে শিশু যত্নের ব্যবস্থা, গণপরিবহন সুবিধা সম্প্রসারণ এবং মুক্ত বাজার ব্যবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপ।

সাম্প্রতিক সময়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন সাধারণ শ্রেণিপেশার ভোটারদের কাছে অগ্রাধিকার পাওয়া মূল অর্থনৈতিক বিষয়গুলোতে মনোনিবেশের দারুণ ক্ষমতা দেখিয়েছেন মামদানি, তবে তিনি বামপন্থিদের সাংস্কৃতিক নীতিগুলোকেও নাকচ করেননি।

সমালোচকরা সতর্ক করেছেন যে, এ ধরনের প্রার্থী আমেরিকার বিস্তৃত অংশে অনির্বাচিত এবং রিপাবলিকানরা আনন্দের সাথেই স্ব-ঘোষিত এই ডেমোক্রেটিক সোশালিস্টকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অতি-বাম মুখ হিসেবে তুলে ধরেছেন। তারপরও মঙ্গলবার রাতে নিউইয়র্ক সিটিতে, বিজয়ীর বেশে আবির্ভূত হন মামদানি।

নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর কুওমোর বাবাও একজন গভর্নর ছিলেন। তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তাকে পরাজিত করে মামদানি সেই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে পরাজিত করেছেন, যেটিকে বামপন্থিদের অনেকেই তাদের দল এবং জাতির সাথে যোগাযোগহীন বলে মনে করেন।

এ কারণেই মেয়র পদে মামদানির প্রচারণা গণমাধ্যমের ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং অর্থ হলো, মেয়র হিসেবে তার সাফল্য এবং ব্যর্থতাগুলোও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

১২ বছর আগে, ডেমোক্র্যাট বিল ডি ব্লাসিও নিউইয়র্ক সিটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য মোকাবিলার জন্য একটি প্ল্যাটফর্মে মেয়র পদে জয়লাভ করেছিলেন। বামপন্থি আমেরিকানদের প্রত্যাশা ছিল যে ব্লাসিও প্রশাসন কার্যকর উদার শাসনের একটি জাতীয় উদাহরণ তুলে ধরবে।

তবে ডি ব্লাসিও আট বছর পর ব্যাপকভাবে অজনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এবং নতুন নীতি বাস্তবায়নে মেয়র হিসেবে পাওয়া ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার সঙ্গে লড়াই করে অনেকটা মিশ্র রেকর্ড নিয়েই দফতর ছাড়েন।

মামদানিকে এখন সেই একই প্রত্যাশা আর সীমাবদ্ধতার সাথে লড়াই করতে হবে। নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল একজন ডেমোক্র্যাট। তিনি বলেছেন, মামদানির উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কর বৃদ্ধির বিরোধিতা করবেন এবং পর্যাপ্ত তহবিল থাকা সত্ত্বেও মামদানি এককভাবে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না।

করপোরেট ও অভিজাত ব্যবসায়ী যারা নিউইয়র্ক শহরকে তাদের বাড়ি বলে অভিহিত করে ম্যানহাটনকে বিশ্বের আর্থিক রাজধানীতে পরিণত করেছেন, তাদের তীব্র সমালোচক হিসেবে প্রচারণা চালিয়েছিলেন মামদানি। তবে কার্যকরভাবে শাসন পরিচালনা করতে এখন তাকে সম্ভবত সেই সব স্বার্থ-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক ধরনের শান্তিপূর্ণ অবস্থান তৈরি করতে হবে যা তিনি ইতোমধ্যেই শুরু করেছেন।

মামদানি গাজা যুদ্ধ ইস্যুতে ইসরায়েলের আচরণের নিন্দাও করেছেন এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিউইয়র্ক শহরে পা রাখলে তাকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গ্রেফতার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এমন একটি প্রতিশ্রুতি মামদানির মেয়াদের কোনো এক পর্যায়ে পরীক্ষার মুখে পড়তে পারে।

তবে এগুলো সম্ভবত আগামী দিনগুলোতে সমস্যা হিসেবে সামনে আসবে। আপাতত মামদানিকে জনসাধারণের মঞ্চে নিজেকে সংজ্ঞায়িত করার কাজ শুরু করতে হবে তার বিরোধীরা সেটা শুরু করার আগেই।

যদিও তার প্রচারণা জাতীয় মনোযোগ আকর্ষণ করেছে তবুও তিনি এখনো আমেরিকার বেশিরভাগ অংশের কাছেই একটি ফাঁকা স্লেট, যাতে কিছু লেখা নেই।

সিবিএসের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে যে ৪৬ শতাংশ আমেরিকান জনগণ নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন ‘মোটেও ভালোভাবে অনুসরণ করছে না’। এটি মামদানি এবং আমেরিকান বামপন্থিদের জন্য সুযোগ আর চ্যালেঞ্জ দুটোই তৈরি করে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে রক্ষণশীলরা নবনির্বাচিত এই মেয়রকে সমাজতান্ত্রিক হুমকি হিসেবে এমনভাবে চিত্রিত করার চেষ্টা করবেন- যার নীতি এবং অগ্রাধিকার আমেরিকার বৃহত্তম শহরকে ধ্বংস করে দেবে আর সমগ্র জাতি যদি তা গ্রহণ করে তবে এটি একটি বিপদ ডেকে আনবে।

নিউইয়র্কের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ রাখা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মামদানির সাথে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে অবশ্যই গ্রহণ করবেন এবং নতুন মেয়রের জীবনকে জটিল করে তুলতে ট্রাম্পের কাছে নানা উপায় রয়েছে।

মামদানিকে ডেমোক্র্যাটিক নেতাদের মন জয় করতেও চাপ দেওয়া হবে, যেমন নিউইয়র্কের সিনেটর এবং সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার, যিনি কখনো তার প্রচারণাকে সমর্থন করেননি।

তবে মামদানির সুবিধা হচ্ছে যে তার ওপর অতীতের বোঝা নেই, যা তার রাজনৈতিক বিরোধীরা প্রচারণার সময় ব্যবহার করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল।

জানুয়ারিতে যখন তিনি শপথ নেবেন, তখন শুরু থেকেই রাজনৈতিক খ্যাতি গড়ে তোলার সুযোগ পাবেন মামদানি এবং তার বিরোধিতা করলে ট্রাম্প কেবল মামদানির কাজের জন্য আরো বৃহত্তর প্ল্যাটফর্মই তৈরি করবেন।

তার রাজনৈতিক প্রতিভা এবং ক্ষমতা তাকে এতদূর এনেছে, যা কোনো ছোট কৃতিত্ব নয়। তবে সামনের বছরগুলোতে তার জন্য অপেক্ষা করা কঠিন পরীক্ষার তুলনায় এটি কিছুই নয়।

নিউইয়র্কবাসীরা তাদের শহরকে মহাবিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু ভাবতে পছন্দ করে, কিন্তু শহরটির মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হওয়া একমাত্র নির্বাচনী প্রতিযোগিতা ছিল না। এটি সম্ভবত বর্তমান নির্বাচনী মেজাজের সেরা ইঙ্গিতও ছিল না।


banner close