যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের নিউ অরলিন্স শহরের এক পর্যটন কেন্দ্রে ভিড়ের মধ্যে ট্রাকচাপায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় চালক একটি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলিবর্ষণও করে। এই ঘটনায় আরও ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার ভোরে ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারের বোরবন স্ট্রিটে এ ঘটনা ঘটে। নিউ অরলিন্সের পুলিশ প্রধানের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং সিবিএস নিউজ এসব তথ্য জানিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, একটি ট্রাক প্রচণ্ড গতিতে ভিড়ের মধ্যে উঠে পড়ে। এক পর্যায়ে চালক বেরিয়ে এসে গুলি চালাতে শুরু করে। শহরের সরকারি দুর্যোগ প্রস্তুতি সংস্থা ‘নোলা রেডি’ নিশ্চিত করেছে, ক্যানাল ও বোরবন স্ট্রিটে একটি ভিড়ের মধ্যে উঠে গেলে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
নিউ অরলিন্স ইমার্জেন্সি মেডিকেল সার্ভিসেস ৩০ জন আহতকে হাসপাতালে নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেই বোরবন স্ট্রিট অসংখ্য বার ও ক্লাবের জন্য পরিচিত। নতুন বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ২০২৫-এর আগমন উপলক্ষে নববর্ষের উদযাপনকারীতে পরিপূর্ণ ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা সিবিএস নিউজের একজন সাংবাদিককে বলেছেন, একটি গাড়ি দ্রুতগতিতে বোরবন স্ট্রিটে মানুষের ভিড়ের মধ্য দিয়ে চলে যায়। এর মধ্যে চালক বের হয়ে একটি অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুড়তে শুরু করেন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পাল্টা গুলি চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানিয়েছেন, একাধিক মানুষ আহত হয়ে মাটিতে পড়েছিলেন। নিউ অরলিন্স পুলিশের একজন মুখপাত্র সিবিএস নিউজকে বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, একটি গাড়ি একদল লোকের মধ্যে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে কয়েকজনের প্রাণহানি হয়েছে।’
এদিকে ঘটনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ প্রধান অ্যান কার্কপ্যাট্রিক বলেন, ‘রাত ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে এক চালক ইচ্ছাকৃতভাবে জনতার ওপর ট্রাক তুলে দেয়। ওই চালক যতজনকে সম্ভব পিষে মারার চেষ্টা করছিল। তিনি ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির মিশনে নেমেছিলেন।’
পুলিশ প্রধান আরও জানান, ট্রাক নিয়ে হামলার পর পুলিশের ওপরও গুলি চালায় ঘাতক চালক। এতে দুই কর্মকর্তা আহত হন। নিউ অরলিন্স নগর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, নববর্ষ উদযাপনের সময় এ ঘটনা ঘটে।
প্রসঙ্গত, বার্বন স্ট্রিট একটি ঐতিহাসিক পর্যটনকেন্দ্র। গান ও পানশালার জন্য এখানে প্রচুর জনসমাগম হয়ে থাকে। এর আগে ২০২৪ সালের নভেম্বরে নিউ অরলিন্সের একটি উৎসব চলাকালে হাজারো মানুষের ভিড়ে দুটি পৃথক গোলাবর্ষণের ঘটনায় দুজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়।
সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের ইকোনোমিক সেক্রেটারির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ নিজেই এক টুইটে এ তথ্য জানিয়েছেন।
টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) ছিলেন। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে।
জানা গেছে, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠের কাছ থেকে ফ্ল্যাট উপহার নিয়ে ব্যাপক চাপের মুখে ছিলেন তিনি।
এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান মঙ্গলবার তার পদত্যাগের বিষয়টি জানিয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অর্থনৈতিক অসঙ্গতির অভিযোগ উঠে। এরপর নিজের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগকে তদন্তের আহ্বান জানান তিনি। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস।
লন্ডনে হাসিনা ঘনিষ্ঠের কাছ থেকে ফ্ল্যাট উপহার নেওয়া ছাড়াও; সাবেক এক বাংলাদেশি এমপির কাছ থেকে ২০১৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের দুটি টিকিট নিয়েছিলেন টিউলিপ। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অন্যান্য আরও আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ উঠে। এসবের মধ্যে দেশটির বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি টিউলিপকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছিল। তারা বলছিল, টিউলিপের ওপর ব্রিটেনের দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারই নাম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়েছে। এতে তিনি মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালনের নৈতিকতা হারিয়েছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, টিউলিপ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তবে এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার বিরুদ্ধে যে তদন্ত হয়েছে সেখানে, মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস মন্ত্রিত্বের নীতি ভঙ্গের কোনো প্রমাণ পাননি।
সবচেয়ে কম বয়সে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই বলেছেন, গাজার শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইল। এছাড়া তিনি আফগানিস্তানে তালেবান শাসনকে বৈধতা না দিতেও মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের প্রভাবশালী ‘ডন’ পত্রিকা এই খবর জানিয়েছে।
ইসলামাবাদে ‘মুসলিম সম্প্রদায়ের নারী শিক্ষা: চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে মালালাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষা মন্ত্রীরা অংশ নেন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে পাকিস্তানের একটি স্কুলে পড়ার সময় স্থানীয় তালেবানদেন গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে দেশ ছাড়েন ১৫ বছর বয়সী মালালা। তবে সুস্থ হয়ে ফিরেই নারী শিক্ষার অধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। এরমধ্যে হাতে গোনা দু’-একবার পাকিস্তান সফরে যান মালালা। এবার নিজ দেশে নারী শিক্ষা বিষয়ক এক সম্মেলনে যোগ দেন এই নোবেল বিজয়ী।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বক্তব্য রাখেন মালালা। ইসরাইলের চলমান আগ্রাসন গাজার শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে বলে তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
উদ্বেগ প্রকাশ করে মালালা বলেন, ইসরাইল গাজার ৯০ শতাংশেরও বেশি স্কুল ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই সাথে স্কুল ভবনে আশ্রয় নেওয়া নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালানোরও তীব্র নিন্দা জানান তিনি। ইসরাইলের আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন মালালা।
এদিকে, আফগানিস্তানের তালেবানদের বৈধতা না দিতে মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মালালা ইউসুফজাই। তিনি বলেন,তালেবানের শাসনামলে নারী শিক্ষার অগ্রগতি স্বপ্ন দেখা বৃথা। তালেবান শাসকরা শতাধিক আইন প্রয়োগ করেছে, যা নারীদের শিক্ষা থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।
এর আগে, সম্মেলনের প্রথমদিন বক্তব্য রাখেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ। সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৫০ জনেরও বেশি শিক্ষক, গবেষক ও মন্ত্রী যোগ দেন। পাশাপাশি ইউনেস্কো, ইউৃনিসেফও ওয়াল্ড ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা যোগ দেন।
জাপানে সোমবার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৯। স্থানীয় সময় গতকাল রাত ৯টা ১৯ মিনিটে দক্ষিণ জাপানের কিউশু অঞ্চলে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের পরপরই ওই অঞ্চলে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
টোকিও থেকে এএফপি আজ মঙ্গলবার এই খবর জানায়।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ) জানিয়েছে, সোমবার ৬ দশমিক ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূুমিকম্পে কেঁপে উঠেছে কিউশু অঞ্চল। তবে ভূমিকম্পে তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ভূমিকম্পের পর মিয়াজাকি ও কোচির দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রিফেকচারে এক মিটার উচ্চতার ঢেউয়ের বিষয়ে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থা এক্সে জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের সুনামি সতর্কতা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত সমুদ্রে বা উপকুলের দিকে না যাওয়ার পরমর্শ দিয়েছে।
জাপানের সরকারি গণমাধ্যম এনএইচকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়াজাকি শহরে ইতোমধ্যে ২০ সেন্টিমিটার উচ্চতার ঢেউ রেকর্ড করা হয়েছে। প্রাদেশিক এই রাজধানীতে প্রায় ৪ লাখ মানুষ বসবাস করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের পর পশ্চিম জাপানের ইকাতা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ভূমিকম্প যে অঞ্চলে আঘাত হেনেছে তার কাছাকাছি এলাকায় দু’টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রু চালু রয়েছে।
নতুন করে রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় বিপদে পড়েছে চীন ও ভারত। এতে করে এই দুই দেশকে জ্বালানি তেল আমদানিতে খুঁজতে হবে বিকল্প বাজার। অন্যদিকে তেল বিক্রির বড় বাজার হারালে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে রাশিয়ার জন্য।
চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ক্ষমতা ছাড়ার আগমুহূর্তে এটি বাইডেন প্রশাসনের রাশিয়ার অর্থনীতিতে সর্বশেষ আঘাত বলে অভিমত ব্যবসা বিশ্লেষকদের।
রাশিয়ার তেল উৎপাদনকারী প্রধান দুটি প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম এবং সারগেটনেফটগ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে বড় ক্ষতি হয়েছে ১৮৩ তেলবহনকারী ভেসেল জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায়।
যেসব জাহাজের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, এর বড় একটি অংশ চীন-ভারতে জ্বালানি তেল পরিবহন করে। ২০২২ সালে জি-৭ দেশগুলো তেলের দাম বেধে দিলে রাশিয়া বাজার ধরতে বেছে নেয় এশিয়াকে। এদিকে সস্তায় তেল কিনতে পারায় রাশিয়া হয়ে উঠেছে চীন-ভারতের মুনাফার বড় বাজার।
নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত জাহাজগুলো ২০২৪ সালে মোট ৫৩০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রফতানি করেছে, যা দেশটির অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানির ৪২ শতাংশ। রফতানি হওয়া এ তেলের ৩০০ মিলিয়ন ব্যারেলই গিয়েছে চীনে এবং বাকিটা ভারতের বাজারে।
বাণিজ্যভিত্তিক পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান কেপলারের বিশ্লেষণ বলছে, রুশ জ্বালানি তেলের বাণিজ্যে এটা বড় রকমের ধাক্কা। সমুদ্রে রাশিয়ার তেল বহনকারী জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বিকল্প খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত ভুগতে হবে দেশটিকে।
এদিকে রুশ তেলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে বিশ্ববাজারে বাড়তে শুরু করেছে জ্বালানি তেলের দাম। সর্বশেষ ব্রেন্ট ক্রুড জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার ছাড়িয়েছে, যা নতুন বছরে সর্বোচ্চ।
গেল বছর প্রথম ১১ মাসে ভারত ৩৬ শতাংশ জ্বালানি তেল আমদানি করেছে রাশিয়া থেকে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় সাড়ে ৪ শতাংশ বেশি। একইসময়ে চীনের ২০ শতাংশ জ্বালানি তেলের জোগানদাতা ছিল রাশিয়া, যা আগের বছরের থেকে ২ শতাংশ বেশি।
হঠাৎ করে রাশিয়ার ওপর এমন নিষেধাজ্ঞায় ভারত-চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার দিকে ঝুঁকতে হবে। রাশিয়া ও ইরানের তেল সরবরাহ কমে আসায় মধ্যপ্রাচ্যে তেলের দাম এমনিতেই ঊর্ধ্বমুখী। এতদিন ভারত-চীন রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনতে পারলেও এবার বেশি দামে বিকল্প বাজারমুখী হওয়া ছাড়া দেশ দুটির সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই।
এরইমধ্য সরবরাহ কমায় জ্বালানি তেলের বাজারে আবারও শঙ্কা জেগেছে অস্থিরতা সৃষ্টির। তেলের দাম বেড়ে গেলে তার প্রভাব প্রতিটি পণ্যের ওপর পড়বে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর মাত্র কয়েকদিন পরই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন থেকেই বড় ধরনের পরিবর্তনের বার্তা দিয়ে আসছেন বিতর্কিত এই রিপাবলিকান নেতা, যা সম্ভব, তবে ক্যাম্পেইনের সময় দেওয়া বক্তব্য আর সরকার চালানো এক জিনিস নয়।
ট্রাম্প সরকার পরিচালনার জন্য যেসব ব্যক্তিকে বাছাই করেছেন এবং তাদের অগ্রাধিকারই নির্ধারণ করে দেবে ট্রাম্প আসলে কতটা বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটাতে পারবেন। প্রথমেই ট্রাম্পকে পরীক্ষা দিতে হবে পররাষ্ট্রনীতিতে। শুরু থেকেই ট্রাম্প বলে আসছেন ইউক্রেন যুদ্ধ একদিনের মধ্যে শেষ করে দেবেন। যদিও এ ব্যাপারে কাজ করতে তাকে বেগ পেতে হবে। ট্রাম্প যদি নিরাপত্তা গ্যারান্টি দিয়ে ইউক্রেনকে ভূখণ্ড হারানোর বিষয়টি গ্রহণ করাতে চাপ দেন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।
তবে তিনি যদি একতরফা বা ভারসাম্যহীন শান্তি চুক্তির জন্য ইউক্রেনকে চাপ দেন তাহলে মূলত পুতিনেরই জয় হবে। তখন ইউক্রেনের অস্তিত্ব নির্ভর করবে ইউরোপের ওপর। এক্ষেত্রে আমেরিকার অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাবে চীনসহ অন্যরা।
তাছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা ক্ষেত্র হয়ে উঠবে মধ্যপ্রাচ্যও। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি করানোর ক্ষেত্রে সফলতা দেখাতে পারেন ট্রাম্প। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও এক্ষেত্রে ট্রাম্পকে বড় জয় এনে দিতে চাইবেন। তবে ট্রাম্প ইসরায়েলকে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের দিকে নাও নিয়ে যেতে পারেন। সেটা হলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র।
তাছাড়া ইরানের ওপর আরও কঠোর অবস্থানে যেতে পারেন তিনি। তবে প্রথম মেয়াদের মতো নিষেধাজ্ঞানীতি কাজে নাও আসতে পারে। কারণ ইরান তেল বিক্রির জন্য এরই মধ্যে একটি ছায়া নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। যেমন চীন। কীভাবে চীনকে মোকাবিলা করা যায় সেটা হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক ইস্যু। চীনের অর্থনীতি বর্তমানে কিছুটা দুর্বল হলেও ট্রাম্পের প্রথম আমলের চেয়ে চীন অনেক বেশি আগ্রাসী। ফলে দক্ষিণ চীন সাগরে সংকটে পড়তে পারেন ট্রাম্প। তাই তিনি সেখানে ফিলিপাইনকে সহায়তা করবেন নাকি ত্যাগ করবেন। সেটাও একটা বড় পরীক্ষা হবে।
শুল্ক নীতিতে ট্রাম্প কতটা ভয়ংকর হতে পারেন সেটা প্রকাশ করবে চীন। এরই মধ্যে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন চীন থেকে আমদানির ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। এটা কি দরকষাকষি নাকি আমেরিকার অর্থনীতিকে চীনের থেকে আলাদা করার সত্যিকারের ইচ্ছা? যা ২০২৫ সালেই স্পষ্ট হবে। তালিকার শীর্ষে চলে আসবে অবৈধ অভিবাসন। গণহারে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াও ঘটতে পারে। ট্রাম্পের প্রথম আমলের ট্যাক্স প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের শেষ দিকে। তাই ট্যাক্স কাটও গুরুত্ব পাবে।
প্রতিবেশী হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেছেন, এই সম্পর্কে বিদ্বেষ কোনো পক্ষের জন্যই ভালো ফল বয়ে আনবে না।
সোমবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই দেশের সেনাবাহিনী পর্যায়ে সম্পর্কে কোনো সমস্যা নেই। আর রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা করা যাবে তখনই, যখন ‘নির্বাচিত সরকার’ থাকবে।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পালাবদলের পর ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও সামরিক সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ভারতের সেনাপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার (কৌশলগত অংশীদার)। কোনো ধরনের শত্রুতা দুই দেশের জন্যই ক্ষতিকর। তাতে কারও স্বার্থ চরিতার্থ হবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিবেশী। আমাদের দুই দেশকেই একসঙ্গে বাস করতে হবে। পরস্পরকে জানতে ও বুঝতে হবে। কোনো ধরনের শত্রুতা কারও পক্ষে ভালো নয়। দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক একেবারে ঠিক রয়েছে; কিন্তু দুই দেশের সার্বিক সম্পর্কের কথা যদি বলেন তাহলে বলব, নির্বাচিত সরকার এলেই তা স্বাভাবিক হবে।’
বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, সে দেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। গত আগস্টে রাজনৈতিক পালাবদলের সময় সর্বদা তারা যোগাযোগের মধ্যে ছিলেন। এমনকি গত ২৪ নভেম্বরও তাদের দুজনের মধ্যে ভিডিও মারফত আলোচনা হয়েছে। তারা সব সময় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখেছেন। এখনো সেই যোগাযোগ অব্যাহত আছে।
‘বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে যদি বলতে হয়, সেটা আগের মতোই চলছে। আমাদের অফিসাররা সেখানে এনডিসিতে যোগ দিয়েছেন। ওই পক্ষ থেকেও কোনো সমস্যা নেই। শুধু একটা বিষয়, যৌথ মহড়া যেটা হতো, বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সেটা সাময়িকভাবে স্থগিত আছে। যখনই পরিস্থিতির উন্নতি হবে, আমাদের মহড়াও হবে’, যোগ করেন তিনি।
এ বছর বিশ্বের সবচেয়ে বড় আতশবাজির প্রদর্শনী আয়োজন করতে যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। রাজধানী আবুধাবিতে এই রেকর্ড আতশবাজির মধ্য দিয়ে বছরটি শেষ করার পরিকল্পনা করছে দেশটি। শেখ জায়েদ ফেস্টিভ্যালে এই প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে ছয়টি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ভাঙার পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রদর্শনীটি মোট ৫৩ মিনিটের হবে। এর আগে গত নববর্ষের প্রাক্কালে উৎসবে আতশবাজির প্রদর্শনী ৪০ মিনিট স্থায়ী হয়। সেটি পরিমাণ, সময় এবং গঠনের দিক থেকে তিনটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ভাঙে। তবে এ বছর ছয়টি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ভাঙার চেষ্টা করছেন তারা, যার মধ্যে রয়েছে-
১. বিশ্বের ‘সবচেয়ে বড় ভেন্যুতে’ ৫৩ মিনিটেরও বেশি একটানা আতশবাজি। ২. ছয় হাজার ড্রোন ২০ মিনিট ধরে আকাশ আলোকিত করবে। ৩. তিন হাজারের বেশি ড্রোন প্রথমবারের মতো ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় বায়বীয় চিত্র’ তৈরি করবে। ৪. ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ লেখা সবচেয়ে বড় এরিয়াল ডিসপ্লেতে প্রথমবারের মতো তিন হাজার ড্রোন ব্যবহার করা হবে। ৫. সিনক্রোনাইজড মিউজিক শো’য়ের মাধ্যমে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়বে ৩ হাজার ড্রোন। ৬. বিশ্বে প্রথমবারের মতো পরিমাণ, নকশা এবং সময়কালের দিক থেকে বৃহত্তম এবং সবচেয়ে বেশি আতশবাজি প্রদর্শিত হবে। গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উৎসবটি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের জন্য খোলা থাকবে। সেখানে আসন নিতে উৎসবের ওয়েবসাইটে টিকিট নিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে চলমান ভয়াবহ দাবানলে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে নিখোঁজ রয়েছেন আরও অন্তত ১৬ জন। এদিকে, আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দিনরাত কাজ করে চললেও পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরেই বলা চলে। সোমবার বিবিসি ও কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, বুধবার (১৫ জানুয়ারি) পর্যন্ত কুখ্যাত শুষ্ক বাতাস ‘সান্তা আনার’ গতি বেড়ে ঘণ্টায় ৬০ মাইল (৯৬ কি.মি.) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এ কারণে পরিস্থিতি আবারও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
দাবানলের সর্বশেষ পরিস্থিতি
লস অ্যাঞ্জেলেসের আশপাশে তিনটি বড় দাবানল এখনো জ্বলছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা প্যালিসেডসের ২৩ হাজার একরের বেশি জায়গা পুড়ে গেছে। সেখানকার আগুনের মাত্র ১১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এবং ইটনের ১৪ হাজার এলাকা পুড়ে গেছে আর এখানকার দাবানল ২৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে, হার্স্ট নামক এলাকার ৭৯৯ একর এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও এখানকার আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা গেছে।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাতাস কম থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কিছুটা অগ্রগতি করতে পেরেছেন। তবে মঙ্গলবার বাতাসের গতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগুনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাসাডেনা কাউন্টির ফায়ার চিফ চ্যাড অগাস্টিন জানিয়েছেন, আমরা কিছুটা অগ্রগতি করছি, কিন্তু পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
এদিকে, লস অ্যাঞ্জেলেসের ফায়ার চিফ ক্রিস্টিন ক্রাউলি বাসিন্দাদের দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার বাসিন্দা বাধ্যতামূলক সরিয়ে নেওয়ার আদেশের অধীনে রয়েছেন।
বাড়ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা
দাবানল ছড়িয়ে পড়া অঞ্চলগুলোতে ১৪ হাজার দমকলকর্মী কাজ করছেন এবং তাদের সহায়তা করছে ৮৪টি প্লেন ও ১,৩৫৪টি অগ্নিনির্বাপণ ইঞ্জিন। এদিকে, লুটপাট রোধে ৪০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে, যা আরও ১ হাজার বাড়ানো হচ্ছে। এরই মধ্যে লুটপাটের জন্য ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন দমকলকর্মী ছদ্মবেশে লুটপাটের চেষ্টা করছিলেন বলে জানা গেছে।
টানা ষষ্ঠ দিনের মতো লস অ্যাঞ্জেলেসে দুটি স্থানের আগুন নিয়ন্ত্রণে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন দমকল কর্মীরা। আবহাওয়া কিছুটা অনুকূলে আসায় বাড়তি উদ্যমে কাজ করছেন তারা। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্ক করে বলেছে, আবারও দমকা বাতাসের প্রবাহ শুরু হতে পারে- যার ফলে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে যাবে আগুন।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসোম বলেছেন, এটি মার্কিন ইতিহাসের সম্ভবত ভয়াবহতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আগুন ছড়িয়ে পড়া এলাকা পুরো ভস্মীভূত হয়ে গেছে। ধনী-গরিব সবার বাড়িই ধ্বংস হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ১২ হাজার অবকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি সুপারভাইজার লিন্ডসি হোরভাথ বলেছেন, অকল্পনীয় আতঙ্ক ও বেদনার আরেকটি রাত পার করছে লস অ্যাঞ্জেলেসের মানুষ।
তীব্র বাতাসের কারণে অনেক স্থানে আগুনের ফুলকি তিন কিলোমিটার দূরে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছিল। বাতাস কিছুটা ধরে আসার সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে এই সামান্য অনুকূল অবস্থাও বেশিক্ষণ থাকবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মার্কিন জাতীয় আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, গত এপ্রিল থেকে অনেক স্থানে বৃষ্টিপাত হয়নি। ফলে সান্তা অ্যানা আবারও স্থানীয় সময় রোববার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত ৮০ থেকে ১১২ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হতে পারে।
দাবানলের মধ্যে দমকল কর্মী সেজে চুরি!
দাবানলের মধ্যেও লস অ্যাঞ্জেলসে চুরি ও লুটপাটের খবর পাওয়া যাচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, দাবানলের মধ্যে ফায়ার ফাইটার বেশে চুরির ঘটনাও ঘটেছে। এতে এখন পর্যন্ত এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছেন।
লস অ্যাঞ্জেলেসের কাউন্টির শেরিফ ডিপার্টমেন্টের প্রধান রবার্ট লুনা জানান, মালিবু এলাকার একটি বাড়িতে চুরির সময় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে রবার্ট লুনা বলেন, তিনি যখন ওই এলাকায় ছিলেন, তখন ওই ব্যক্তিকে বসে থাকতে দেখেন, যাকে ফায়ার ফাইটারের মতো দেখাচ্ছিল।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি সেভেন লিখেছে, শেরিফ বিভাগ ওই ব্যক্তিকে লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে সোপর্দ করেছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ প্রধান জিম ম্যাকডোনেল জানিয়েছেন যে, দমকলকর্মীর ছদ্মবেশ ধারণের অভিযোগে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল ঘিরে বিভিন্ন অভিযোগে ২৯ জনের মতো গ্রেপ্তার হয়েছে।
ট্রাম্পের অভিযোগ, ইউক্রেনের প্রস্তাব
দাবানল প্রতিরোধে ক্যালিফোর্নিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন—এ অভিযোগ নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমাদের দেশের ইতিহাসে এটা সবচেয়ে বড় বিপর্যয়গুলোর একটি। তারা আগুন নেভাতে পারছে না। তাদের কী সমস্যা?’
যদিও দাবানল ছড়িয়ে পড়ার শুরুর দিন থেকেই অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা ২৪ ঘণ্টা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। মেক্সিকো থেকে আরও কর্মী এ কাজে যুক্ত হয়েছেন। এর ফলে অগ্নিনির্বাপণের বীরত্বপূর্ণ কার্যক্রম আরও জোরদার হয়েছে।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৫০ জন অগ্নিনির্বাপণকর্মী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। যুদ্ধরত দেশটির প্রেসিডেন্ট বলেন, সেখানকার পরিস্থিতি এখন খুবই জটিল। আমেরিকানদের জীবন বাঁচাতে ইউক্রেনের মানুষ সহায়তা করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলে প্রাণহানি বেড়ে ১৬ জনের দাঁড়িয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ও স্থাপনা। এদিকে সামনের সপ্তাহের শুরুতে আবারও তীব্র বাতাস বয়ে যেতে পারে ও তাতে দাবানল আরও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা দাবানল নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। তবে কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছেন, পরের সপ্তাহের শুরুতে তীব্র বাতাস হতে পারে ও এতে তাদের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, লস অ্যাঞ্জেলেসের ৪টি এলাকায় এখনো আগুন জ্বলছে। নতুন করে আরও ১ হাজার একর এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় এক লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে সরিয়ে নিতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির আশপাশে দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লস অ্যাঞ্জেলেসকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। লস অ্যাঞ্জেলেসের ইতিহাসে এ ধরনের ভয়াবহ দাবানল আগে আর ঘটেনি। আগ্রাসী আগুনে জ্বলে-পুড়ে ছারখার হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও বিষয়-সম্পত্তি। আগুনে সব নিঃশেষ হয়ে যেতে দেখাই শুধু নয়, লেলিহান শিখা থেকে বাঁচতে যানজট, প্রকট ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসাসহ নানা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের।
এবারের দাবানল পুরো লস অ্যাঞ্জেলেসকে যেন তছনছ করে ফেলেছে। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়েছেন। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি মেডিকেল এক্সামিনার বা করোনারের কার্যালয় দাবানলের কারণে নিহতদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তবে তালিকায় নিহতদের বিস্তারিত পরিচয় বা বিবরণ দেওয়া হয়নি। নথিতে বলা হয়েছে, দাবানলের কারণে নিহতের মধ্যে প্যালিসেডস ফায়ার জোনে ৫ জন এবং ইটন ফায়ার জোনে ১১ জন পাওয়া গেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য মরিয়া চেষ্টা করছে। আগুন লাগা পাহাড়গুলোতে হেলিকপ্টার থেকে পানি ছোড়া হচ্ছে এবং অগ্নিপ্রতিরোধক দিয়ে পালিসেইডসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হচ্ছে।
তবে দ্রুত গতির আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ফায়ার হাইড্রেন্টগুলোতে পানি না থাকা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। এনিয়ে কর্মকর্তারা চাপের মুখে পড়েছেন। বিবিসি বলছে, প্যালিসেডসের অন্তত ২৩ হাজার একর এলাকা পুড়ে গেছে। মান্ডেভিলে ক্যানিয়ন পর্যন্ত ছড়িয়েছে এই আগুন। ফলে ব্রেন্টউডের বিভিন্ন এলাকায় লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকায় প্রখ্যাত অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ের্জনিগার, ডিজনির প্রধান নির্বাহী বব ইগার ও এনবিএ তারকা লেবরন জেমসের বাড়ি রয়েছে। এছাড়া যেসব এলাকা থেকে লোকজনকে সরতে বলা হয়েছে সেখানে গেটি সেন্টারও আছে। এটি একটি হিলটপ মিউজিয়াম। সেখানে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার শিল্পকর্ম আছে। এর মধ্যে ভ্যান গঁগ, রুবেনস, মনেট ও ডেগাসের শিল্পকর্মও আছে। তবে এখন পর্যন্ত সেই ভবনের কোনো ক্ষতি হয়নি। প্যালিসেডসের পর সবচেয়ে বেশি আগুন লেগেছে ইটন এলাকায়। সেখানে ১৪ হাজার একর এলাকা পুড়ে গেছে। অন্যদিকে কেনেথ ও হার্স্ট এর ছোট দুটি আগুন দমকল কর্মীরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। ওদিকে আবহাওয়া বিভাগ শনিবার ও রোববার বাতাস বাড়তে পারে বলে আগেই সতর্ক করেছিল। ক্যালিফোর্নিয়ার কাছাকাছি সাতটি রাজ্য, ফেডারেল সরকার, কানাডা ও মেক্সিকো প্রয়োজনীয় সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। আগুনের কোনও কারণ এখনো জানা যায়নি। যে দুটি এলাকায় বড় ধরনের আগুন লেগেছে তা এক করলে ম্যানহাটনের দ্বিগুণ হবে। প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার অধিবাসীকে ঘরবাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ১ লাখ ৬৬ হাজারকেও সতর্ক করে বলা হয়েছে যে তারা নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে পারে।
দাবানলের পূর্বদিকে বিস্তার রোধের চেষ্টা
লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যালিসেইডস পাহাড়ি এলাকায় দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমান থেকে পানি ও আগুন নির্বাপক রাসায়নিক ছিটানো হচ্ছে। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৭০ মাইল পর্যন্ত পৌঁছানোর আশঙ্কার মধ্যেই শনিবার (১১ জানুয়ারি) ভূমি ও আকাশ থেকে যৌথভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়া প্যালিসেইডসের দাবানলে আরও বাড়তি হাজার খানেক একর এলাকা আক্রান্ত হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া দমকলবাহিনীর কর্মকর্তা টড হপকিন্স এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এখন পর্যন্ত ১১ শতাংশ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে এটি ইতোমধ্যে ২২ হাজার একর এলাকা পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি আরও জানান, ম্যান্ডেভিল ক্যানিয়ন এলাকায় দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। এটি ব্রেন্টউডের অভিজাত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও দেখা যাচ্ছে। সেখানে অনেক সেলিব্রিটি বসবাস করেন। এটি সান ফার্নান্দো ভ্যালি ও উত্তর-দক্ষিণমুখী ৪০৫ ফ্রিওয়ের কাছেও পৌঁছেছে।
নিমিষেই পুড়ে ছাই ২০৪ কোটি ডলারজয়ী ব্যক্তির প্রাসাদ
ক্যালিফোর্নিয়ার এডউইন কাস্ত্রো। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে লটারিতে ২০৪ কোটি ডলার (২.০৪ বিলিয়ন ডলার) জিতেছিলেন। এই বিশাল অর্থ পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি একটি বিলাসবহুল প্রাসাদ কিনেছিলেন। প্রাসাদটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের হলিউড পাহাড়ের কাছে। কাস্ত্রো তার স্বপ্নময় প্রাসাদটিতে ২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার খরচ করেছিলেন। এর ভিতরে ছিল পাঁচটি বেডরুম, ছয়টি বাথরুম ও অসংখ্য বিলাসবহুল সুবিধা। কিন্তু এ বছর ভয়াবহ দাবানল প্রাসাদটিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। এখন, সেই প্রাসাদ পরিণত হয়েছে কেবল ছাইয়ের স্তূপে। প্রাসাদটির পাশের সমুদ্রসৈকতে একটি ইয়ট পড়ে থাকতে দেখা যায়। আর পাশে কিছু কাঠের তক্তা ও ভিত্তি পড়ে রয়েছে। সেখানে দামি গাড়ি রাখা ছিল, সেটিও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার তথ্য গোপনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ব্যতিক্রমী দণ্ড দিয়েছেন আদালত। তাকে কারাদণ্ড বা জরিমানা নয়, বরং ‘শর্তহীন মুক্তি’ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার নিউইয়র্কের বিচারক হুয়ান মারচান এ দণ্ড ঘোষণা করেন।
২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পর্ন তারকাকে ঘুষের মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের আইনে সর্বোচ্চ চার বছর কারাদণ্ডের সাজা হতে পারত তার। শর্তহীন মুক্তি হলো এমন একটি পদক্ষেপ, যেখানে আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারকের রায় বহাল থাকবে, তবে তার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা বা বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে না।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে করা ওই মামলায় বলা হয়েছিল, সাবেক পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক হয়েছিল ট্রাম্পের। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ওই সম্পর্কের কথা গোপন রাখতে স্টর্মিকে ঘুষ দিয়েছিলেন তিনি। ঘুষের তথ্য আবার নিজের ব্যবসায়িক নথিপত্রে উল্লেখ করেননি ট্রাম্প। এ মামলায় গত বছরের মে মাসে দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। ট্রাম্পকে বিচারক হুয়ান মারচান যে সাজা দিয়েছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের বিচারিক ইতিহাসে বিরল বলা চলে। সাজা ঘোষণার সময় মারচান বলেন, আগে কখনো এই আদালতকে এতটা অনন্য ও উল্লেখযোগ্য পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। দেশের সর্বোচ্চ পদধারী ব্যক্তির ওপর হস্তক্ষেপ না করে আইনগতভাবে একমাত্র যে সাজা দেওয়া যায়, তা হলো, শর্তহীন মুক্তি।
সাজা ঘোষণার সময় নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের আদালতে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্প। শর্তহীন মুক্তি পাওয়ার আগে তিনি বলেন, ‘এটি একটি ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। আমি মনে করি, এটা নিউইয়র্ক ও নিউইয়র্ক আদালত ব্যবস্থার জন্য বিরাট একটি ধাক্কা। আমি যেন নির্বাচনে পরাজিত হই, সে জন্য আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করতে এটি (মামলা) করা হয়েছিল।’
ঘুষের মামলায় ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেছিল তার দল রিপাবলিকান পার্টি। তার আইনজীবীও সাজা ঘোষণা স্থগিত করার আবেদন জানিয়েছিলেন। তবে গত মঙ্গলবার তা খারিজ করে দেন নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সহযোগী বিচারপতি এলেন জেসমার। ট্রাম্প বারবার দাবি করে এসেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে তার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে।
এদিকে সাজা ঘোষণার সময় ম্যানহাটান আদালতের বাইরে ট্রাম্পের নাম লেখা বিশাল এক ব্যানার নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন তার সমর্থকেরা। সেখানে ছোটখাটো জমায়েত করেছিলেন ট্রাম্পবিরোধী ব্যক্তিরাও। তাদের হাতে ‘ট্রাম্প দোষী’লেখা ব্যানার ছিল। এর আগে ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ঠিক চার বছর আগে একই দিনে একটি কেলেঙ্কারি ঘটিয়েছিলেন তিনি। ২০২০ সালের নির্বাচনের পর বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধে পরাজয় মেনে নেননি তিনি। সে বছরের ৬ জানুয়ারি বাইডেনকে স্বীকৃতি দেওয়ার দিন তার আহ্বানে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে হামলা চালিয়েছিলেন তার সমর্থকেরা। ওই ঘটনায় করা মামলা থেকে ট্রাম্পকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
সামাজিক মাধ্যম এক্স বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানির ৬০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে আসছিল তারা যেটি কয়েক বছর আগে কিনে নেন টেক জায়ান্ট ইলন মাস্ক। মূলত ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলো।
শনিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আনাদোলু এজেন্সি।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপে ডানপন্থিদের উত্থান, উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং গণতন্ত্রবিরোধী কনটেন্ট প্রচারে এক্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি এর আগে টুইটার নামে পরিচিত ছিল।
জার্মানির পাবলিক ব্রডকাস্টার আরবিবি, ফেডারেল অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি কমিউনিকেশনের এক বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছে, ‘মুক্ত আদান-প্রদানের শর্ত আর এক্সে (টুইটারে) আর নেই। কথিত মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে ঘৃণা, বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য প্রভাবশালীদের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে’।
পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র সিলকে এঙ্গেল জানান, প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেবে।
সিলকে এঙ্গেল বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে এক্স পর্যবেক্ষণ করছি এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে কয়েক মাস ধরে আমরা আগের মতো সক্রিয় ছিলাম না। এক্স (টুইটার) এখন তথ্যভিত্তিক আদান-প্রদান, উন্মুক্ত আলোচনা এবং স্বচ্ছতার জন্য জায়গা নয়।’
এ ছাড়া জার্মানির দুটি প্রধান শ্রমিক ইউনিয়ন- উনিফাইড সার্ভিস সেক্টর ইউনিয়ন (ভার্ডি) এবং এডুকেশন অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিয়ন (জিইডব্লিউ)—প্রায় ১৫ বছর পর এক্স বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দুই সংগঠনই প্ল্যাটফর্মটিকে ‘ডানপন্থি চরমপন্থি মতামত, ঘৃণা ও উসকানি, গণতন্ত্র বিরোধিতা এবং বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য একটি ফোরাম’ হিসেবে সমালোচনা করেছে।
জার্মানির শ্রমিক ইউনিয়নগুলো জোর দিয়ে বলেছে, এক্স গণতন্ত্রবিরোধী আচরণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে যা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মাস্ক বলেছেন, ‘ফার-রাইট অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) পার্টিই জার্মানিকে বাঁচাতে পারে।’ এর ফলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জার্মান নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া গত নভেম্বর মাসে, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সরকার ভেঙে পড়ার পর মাস্ক জার্মান ভাষায় টুইট করেছিলেন, ওলাফ বোকা।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা হিসেবে মাস্ক, নির্বাচনের আগে জার্মানির কট্টর ডানপন্থি দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) প্রতি তার দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
এক্সে এএফডি নেতা এলিস ওয়েইডেলের সঙ্গে এক অনলাইন আলোচনায় মাস্ক বলেন, ‘যদি আপনি বর্তমান পরিস্থিতিতে অসন্তুষ্ট হন, তবে পরিবর্তনের জন্য ভোট দেওয়া জরুরি। এজন্যই আমি জোরালোভাবে সুপারিশ করছি এএফডিকে মানুষ ভোট দিক। এটাই আমার দৃঢ় পরামর্শ। আমি মনে করি এটি একটি যৌক্তিক পদক্ষেপ।’
প্ল্যাটফর্মটিকে ‘মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর হাতিয়ার’ হিসেবে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ‘এক্স’ বয়কটের ঘোষণা দেয়।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, শুক্রবার বিএনপি মহাসচিব এ আমন্ত্রণপত্র হাতে পেয়েছেন।
শায়রুল কবির জানান, আগামী ৫-৬ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য বিএনপির এই তিন নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মার্কিন এ বার্ষিক অনুষ্ঠানটি প্রথমে ‘প্রেসিডেন্সিয়াল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ নামে পরিচিত ছিল। পরে ১৯৭০ সালে এর নামকরণ হয় ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট।
ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টির এমপি ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক মন্ত্রিত্ব হারাতে পারেন। সম্প্রতি ফ্ল্যাটকাণ্ডে অভিযুক্ত হয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে টিউলিপের জায়গায় নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার চিন্তা করছে তার দল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমসের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপের বিকল্প বিবেচনা করছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমারের জ্যেষ্ঠ মিত্ররা। বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুর্নীতির সম্পৃক্ততা থাকার কারণে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলে টিউলিপের স্থলাভিষিক্ত প্রার্থী হিসেবে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবছেন তারা। সোমবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর নীতিশাস্ত্র পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার কাছে নিজের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে তদন্তের দাবি জানানোর আগেই টিউলিপের বিকল্প প্রার্থীদের চিহ্নিত করেন কর্মকর্তারা। অবশ্য স্টারমার বলছেন, টিউলিপের ওপর তার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। এছাড়া ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র টিউলিপের বিকল্প সম্ভাব্য ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরির বিষয়টিকে ‘সম্পূর্ণ অসত্য’ বলে দাবি করেছেন। তবে টাইমস এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পেরেছে যে, স্টারমারের বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে আনুষ্ঠানিকভাবে টিউলিপের বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের জন্য টিউলিপের বিকল্প হিসেবে যাদের বিবেচনা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভসের দুই সহকারী। তারা হচ্ছেন অ্যালিস্টার স্ট্রাথার্ন ও ইমোজেন ওয়াকার।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক-অপরাধ বিভাগের কর্মকর্তারা এরই মধ্যে টিউলিপ ও তার পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নথি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অর্থায়নে পরিচালিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টিও তদন্ত করছে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই অর্থ কেলেঙ্কারিতে টিউলিপের ভূমিকা কী ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
টিউলিপের চাচি ও চাচাতো বোনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
টিউলিপ সিদ্দিকের পর এবার তার চাচি ও চাচাতো বোনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ব্রিটিশ সংবামাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করে ইউরোপের দেশ মাল্টার পাসপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন টিউলিপ সিদ্দিকের চাচি শাহীন সিদ্দিক ও তার চাচাতো বোন বুশরা সিদ্দিক; কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ায় দেশটি তাদের পাসপোর্ট দেয়নি।
এই শাহীন সিদ্দিকের স্বামী হলেন তারিক জামিল সিদ্দিক, যিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। এদিকে নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি শাহীন ও বুশরা সিদ্দিক। গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, ২০১৩ সালে নিজের একার জন্য মাল্টার পাসপোর্টের আবেদন করেছিলেন শাহীন সিদ্দিক।
ওই সময় মাল্টার পাসপোর্ট দেওয়ার কাজটি করতো যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনার্স। অভিবাসন সংশ্লিষ্ট এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে শাহীন সিদ্দিক ‘প্রচ্ছায়া’ নামের একটি কোম্পানির নামে ঢাকার মূল্যবান সরকারি জমি কুক্ষিগত করা তথ্য পায়। আর শাহীন তার পাসপোর্টের উল্লেখ করে বলেছিলেন, তিনি কোম্পানিটির চেয়ারম্যান। আর এই কারণে তাকে পাসপোর্ট দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।
প্রথমবার প্রচ্ছায়ার কথা উল্লেখ করে পাসপোর্ট না পাওয়ায় ২০১৫ সালে দ্বিতীয়বারের আবেদনে শাহীন সিদ্দিক দাবি করেন, চট্টগ্রামের ‘দ্য আর্ট প্রেস প্রাইভেট লিমিটেড’ নামের একটি কোম্পানির পরিচালক তিনি। যেটি ১৯২৬ সালে তার বাবা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে এই কোম্পানি নিয়ে সন্তুষ্ট না হওয়ায় তাকে ও তার মেয়েকে ওই সময় আর পাসপোর্ট দেওয়া হয়নি।
২০১৫ সালে মাল্টার পাসপোর্ট পেতে যথাক্রমে ৬ লাখ ৫০ হাজার ও ২৫ হাজার পাউন্ড খরচ করতে হতো শাহীন ও তার মেয়ে বুশরাকে। এরসঙ্গে ফি হিসেবে আরও ৭০ হাজার পাউন্ড নিত হেনলি। আবেদনের অংশ হিসেবে শাহীন কুয়ালামপুরের একটি ব্যাংকে ২৭ লাখ ৬০ হাজার ৪০৯ ডলার দেখিয়েছিলেন। ১১ বারে এই অর্থ তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছিল। তবে এসব অর্থের উৎস কী ছিল, তা স্পষ্ট নয়। শেখ হাসিনার পতনের পর গত অক্টোবরে তারিক জামিল সিদ্দিক ও তার স্ত্রী শাহীন সিদ্দিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাছাড়া, তারিক সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল।
এদিকে তারিক সিদ্দিকী ও তার স্ত্রী শাহীন সিদ্দিকীর মেয়ে ওই সময় স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডনে পড়াশোনা করছিলেন। তিনি তার ঠিকানা দিয়েছিলেন গ্র্যান্ড গোথিক ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাট, যেটি টিউলিপের লন্ডনের কিংস ক্রস ফ্ল্যাটের খুব কাছে অবস্থিত। এই ফ্ল্যাটটি ২০০৪ সালে টিউলিপকে উপহার দিয়েছিলেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি ব্যবসায়ী। তিনি কেন টিউলিপকে এত দামি ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছিলেন, সেটি নিয়ে ধোয়াশা রয়েছে। বুশরা লন্ডনে পড়াশোনা শেষে জেপি মর্গান ব্যাংকে কয়েকদিন চাকরি করেন। এরপর চাকরি ছেড়ে দেন। ২০১৮ সালে উত্তর লন্ডনের গোল্ডার্স গ্রিনে ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ইউরোতে পাঁচ বেডরুমের একটি ফ্ল্যাট কেনেন তিনি। এই অর্থও তাকে তার বাবা-মা দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।