যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলে প্রাণহানি বেড়ে ১৬ জনের দাঁড়িয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ও স্থাপনা। এদিকে সামনের সপ্তাহের শুরুতে আবারও তীব্র বাতাস বয়ে যেতে পারে ও তাতে দাবানল আরও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা দাবানল নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। তবে কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছেন, পরের সপ্তাহের শুরুতে তীব্র বাতাস হতে পারে ও এতে তাদের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, লস অ্যাঞ্জেলেসের ৪টি এলাকায় এখনো আগুন জ্বলছে। নতুন করে আরও ১ হাজার একর এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় এক লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে সরিয়ে নিতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির আশপাশে দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লস অ্যাঞ্জেলেসকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। লস অ্যাঞ্জেলেসের ইতিহাসে এ ধরনের ভয়াবহ দাবানল আগে আর ঘটেনি। আগ্রাসী আগুনে জ্বলে-পুড়ে ছারখার হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও বিষয়-সম্পত্তি। আগুনে সব নিঃশেষ হয়ে যেতে দেখাই শুধু নয়, লেলিহান শিখা থেকে বাঁচতে যানজট, প্রকট ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসাসহ নানা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের।
এবারের দাবানল পুরো লস অ্যাঞ্জেলেসকে যেন তছনছ করে ফেলেছে। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়েছেন। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি মেডিকেল এক্সামিনার বা করোনারের কার্যালয় দাবানলের কারণে নিহতদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তবে তালিকায় নিহতদের বিস্তারিত পরিচয় বা বিবরণ দেওয়া হয়নি। নথিতে বলা হয়েছে, দাবানলের কারণে নিহতের মধ্যে প্যালিসেডস ফায়ার জোনে ৫ জন এবং ইটন ফায়ার জোনে ১১ জন পাওয়া গেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য মরিয়া চেষ্টা করছে। আগুন লাগা পাহাড়গুলোতে হেলিকপ্টার থেকে পানি ছোড়া হচ্ছে এবং অগ্নিপ্রতিরোধক দিয়ে পালিসেইডসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হচ্ছে।
তবে দ্রুত গতির আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ফায়ার হাইড্রেন্টগুলোতে পানি না থাকা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। এনিয়ে কর্মকর্তারা চাপের মুখে পড়েছেন। বিবিসি বলছে, প্যালিসেডসের অন্তত ২৩ হাজার একর এলাকা পুড়ে গেছে। মান্ডেভিলে ক্যানিয়ন পর্যন্ত ছড়িয়েছে এই আগুন। ফলে ব্রেন্টউডের বিভিন্ন এলাকায় লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকায় প্রখ্যাত অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ের্জনিগার, ডিজনির প্রধান নির্বাহী বব ইগার ও এনবিএ তারকা লেবরন জেমসের বাড়ি রয়েছে। এছাড়া যেসব এলাকা থেকে লোকজনকে সরতে বলা হয়েছে সেখানে গেটি সেন্টারও আছে। এটি একটি হিলটপ মিউজিয়াম। সেখানে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার শিল্পকর্ম আছে। এর মধ্যে ভ্যান গঁগ, রুবেনস, মনেট ও ডেগাসের শিল্পকর্মও আছে। তবে এখন পর্যন্ত সেই ভবনের কোনো ক্ষতি হয়নি। প্যালিসেডসের পর সবচেয়ে বেশি আগুন লেগেছে ইটন এলাকায়। সেখানে ১৪ হাজার একর এলাকা পুড়ে গেছে। অন্যদিকে কেনেথ ও হার্স্ট এর ছোট দুটি আগুন দমকল কর্মীরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। ওদিকে আবহাওয়া বিভাগ শনিবার ও রোববার বাতাস বাড়তে পারে বলে আগেই সতর্ক করেছিল। ক্যালিফোর্নিয়ার কাছাকাছি সাতটি রাজ্য, ফেডারেল সরকার, কানাডা ও মেক্সিকো প্রয়োজনীয় সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। আগুনের কোনও কারণ এখনো জানা যায়নি। যে দুটি এলাকায় বড় ধরনের আগুন লেগেছে তা এক করলে ম্যানহাটনের দ্বিগুণ হবে। প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার অধিবাসীকে ঘরবাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ১ লাখ ৬৬ হাজারকেও সতর্ক করে বলা হয়েছে যে তারা নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে পারে।
দাবানলের পূর্বদিকে বিস্তার রোধের চেষ্টা
লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যালিসেইডস পাহাড়ি এলাকায় দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমান থেকে পানি ও আগুন নির্বাপক রাসায়নিক ছিটানো হচ্ছে। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৭০ মাইল পর্যন্ত পৌঁছানোর আশঙ্কার মধ্যেই শনিবার (১১ জানুয়ারি) ভূমি ও আকাশ থেকে যৌথভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়া প্যালিসেইডসের দাবানলে আরও বাড়তি হাজার খানেক একর এলাকা আক্রান্ত হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া দমকলবাহিনীর কর্মকর্তা টড হপকিন্স এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এখন পর্যন্ত ১১ শতাংশ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে এটি ইতোমধ্যে ২২ হাজার একর এলাকা পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি আরও জানান, ম্যান্ডেভিল ক্যানিয়ন এলাকায় দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। এটি ব্রেন্টউডের অভিজাত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও দেখা যাচ্ছে। সেখানে অনেক সেলিব্রিটি বসবাস করেন। এটি সান ফার্নান্দো ভ্যালি ও উত্তর-দক্ষিণমুখী ৪০৫ ফ্রিওয়ের কাছেও পৌঁছেছে।
নিমিষেই পুড়ে ছাই ২০৪ কোটি ডলারজয়ী ব্যক্তির প্রাসাদ
ক্যালিফোর্নিয়ার এডউইন কাস্ত্রো। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে লটারিতে ২০৪ কোটি ডলার (২.০৪ বিলিয়ন ডলার) জিতেছিলেন। এই বিশাল অর্থ পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি একটি বিলাসবহুল প্রাসাদ কিনেছিলেন। প্রাসাদটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের হলিউড পাহাড়ের কাছে। কাস্ত্রো তার স্বপ্নময় প্রাসাদটিতে ২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার খরচ করেছিলেন। এর ভিতরে ছিল পাঁচটি বেডরুম, ছয়টি বাথরুম ও অসংখ্য বিলাসবহুল সুবিধা। কিন্তু এ বছর ভয়াবহ দাবানল প্রাসাদটিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। এখন, সেই প্রাসাদ পরিণত হয়েছে কেবল ছাইয়ের স্তূপে। প্রাসাদটির পাশের সমুদ্রসৈকতে একটি ইয়ট পড়ে থাকতে দেখা যায়। আর পাশে কিছু কাঠের তক্তা ও ভিত্তি পড়ে রয়েছে। সেখানে দামি গাড়ি রাখা ছিল, সেটিও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
জাতিসংঘ যদি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে অগ্রসর হয়, তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) কর্মকর্তাদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া উচিত হবে বলে হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী উগ্রপন্থি ইহুদি নেতা ইতামার বেন-গভির।
গত সোমবার ওৎজমা ইয়েহুদিত দলের এক সভায় বক্তৃতাকালে বেন-গভির শীর্ষ পিএ কর্মকর্তাদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে উল্লেখ করেন। একাধিক ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে।
বেন-গভিরের হুমকির বরাত দিয়ে জেরুজালেম পোস্টের খবরে বলা হয়, ‘যদি তারা ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে এবং জাতিসংঘ একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বেছে বেছে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়াই উচিত হবে। কারণ, সবদিক থেকেই তারা সন্ত্রাসী।’
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা তদারক করে। তবে ইসরায়েলি নেতারা পিএর নেতৃত্বে কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়ে রেখেছে।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে আলাদাভাবে বিবৃতি দিয়ে বেন-গভিরের এ মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের এ ধরনের মন্তব্য পদ্ধতিগত উসকানি।
মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের মন্তব্যের জন্য বেন-গভিরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধও জানানো হয়েছে।
গাজা যুদ্ধ শেষ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের করা একটি খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে সোমবার ভোট দিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।
এ প্রস্তাবে গাজা উপত্যকার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা বাহিনী গঠনের অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সংস্কার কর্মসূচি শেষ করলে এবং গাজা পুনর্গঠন কাজ এগিয়ে গেলে ‘ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্রগঠনে একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ তৈরিতে’ সমর্থন দেবে জাতিসংঘ।
ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রগঠনের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ থাকায় এ প্রস্তাব নিয়ে ইসরায়েল ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
বেন-গভির বলেছেন, জাতিসংঘের ভোটে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণা সামনে এগোলে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে গ্রেপ্তার করা উচিত।
সপ্তাহ দুয়েক আগে যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রচার টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এনবিসি জানিয়েছিল, মেক্সিকোতে যেকোনো সময় হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র। গণমাধ্যমটি হোয়াইট হাউসের ভূ-অভিযানের প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছিলেন। গত সোমবার সেই দাবিতে সিলমোহর দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এবং টিভি নেটওয়ার্ক এনবিসি জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট সম্ভাব্য হামলার খসড়াও প্রস্তুত করে ফেলেছেন। ট্রাম্পের চাওয়া লাতিন অঞ্চলে মাদকের বিরুদ্ধে চলা ‘যুদ্ধে’ মেক্সিকোকেও রাখতে। তার এমন ঘোষণার পর ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে দুদেশে।
সোমবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ট্রাম্প প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘মাদক বন্ধ করতে আমি কি মেক্সিকোতে হামলা চালাতে পারি?’ পরে নিজেই দেন উত্তর, ‘আমার মনে হয় চালাতেই পারি। মেক্সিকোর সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানে আমি কী চাই।’
ট্রাম্প এসময় বলেন, ‘আমরা মাদকে হাজারো মানুষের জীবন হারাচ্ছি। পানিপথ বন্ধ করেছি। কিন্তু আমরা প্রতিটি রুট জানি।’ সপ্তাহখানেক আগেও ট্রাম্প এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ‘সবগুলো মাদকের রুট জানি। প্রতিটি ড্রাগ লর্ডের ঠিকানা জানি। তাদের বাড়ির সামনের দরজা পর্যন্ত জানি। সবার সম্পর্কে সবকিছুই জানি।’
ট্রাম্প বা যুক্তরাষ্ট্র যে হামলা চালাবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। কিন্তু কবে, কখন এবং কিভাবে হামলা চালাবেন, তা জানা নেই। ট্রাম্পও খোলাসা করেননি কিছু। তবে এনবিসি জানিয়েছে, অভিযানে মেক্সিকোর মাদক ল্যাব ও কার্টেল সদস্যদের লক্ষ্য করে ড্রোন হামলার ওপর জোর দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম সম্ভাব্য হামলার ইস্যুতে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, তার দেশের ভূখণ্ডে এমন কোনও হামলার তিনি ‘কঠোর বিরোধিতা’ করবেন।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরাকে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাতিন আমেরিকা-বিষয়ক সহযোগী অধ্যাপক জেফ গারম্যানি বলেছেন, মেক্সিকো সিটির এই আপত্তি হয়তো গুরুত্ব না-ও পেতে পারে। তবে আইনি কিছু বাধা সামনে আসতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে।
গারম্যানি আল জাজিরাকে বলেন, মেক্সিকোতে মার্কিন হামলা বাস্তবে খুব বেশি ফল নাও দিতে পারে। কারণ হিসেবে তিনি জানান, মেক্সিকোর মাদক কার্টেলগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী। মেক্সিকো সরকারও গত ২০ বছর ধরে ঘোষিত ‘মাদক-বিরোধী যুদ্ধে’–দীর্ঘ, রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়িত।
গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই এক সতর্কবার্তায় বলেছেন, মানুষ যেন এআই টুলের কথাকে অন্ধভাবে বিশ্বাস না করে।
বিবিসিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বর্তমানের এআই মডেলগুলো ভুল করার প্রবণতা রাখে এবং তাই এটিকে অন্যান্য টুলের পাশাপাশি ব্যবহার করা উচিত।
সুন্দর পিচাই বলেন, ফলে কেবল এআই-এর ওপর নির্ভরশীলতা নয়, প্রয়োজন একটি সমৃদ্ধ ইনফরমেশন ইকোসিস্টেম।
তিনি বলেন, এ কারণেই মানুষ গুগল সার্চ ব্যবহার করে। আমাদের আরও কিছু পণ্য আছে যা নির্ভুল তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশি নির্ভরযোগ্য।
পিচাই আরও বলেন, সৃজনশীল লেখালেখির মতো কাজে এআই টুল খুবই সহায়ক হলেও, মানুষকে শিখতে হবে কোন কাজে এগুলো ভালো এবং কোন ক্ষেত্রে অন্ধভাবে বিশ্বাস না করাই ভালো।
তিনি বিবিসিকে বলেন, যতটা সম্ভব নির্ভুল তথ্য দিতে আমরা অসংখ্য কাজ করি—কিন্তু বর্তমান অত্যাধুনিক এআই প্রযুক্তিও এখনো ভুল করে।
এদিকে প্রযুক্তি দুনিয়ায় গুগলের নতুন ভোক্তাবিষয়ক এআই মডেল জেমিনি ৩.০ বেশ আলোচনায় রয়েছে, যা ধীরে ধীরে চ্যাটজিপিটির কাছ থেকে বাজারের অংশ পুনরুদ্ধার করছে।
গত মে মাস থেকে গুগল তাদের সার্চে ‘এআই মোড’ চালু করেছে, যেখানে জেমিনি চ্যাটবটকে যুক্ত করা হয়েছে—এটি ব্যবহারকারীদের যেন কোনো বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্র সফর দিয়ে ফের আলোচনায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)। সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের পর অনেকটা ‘একঘরে’ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই ঘটনার সাত বছর পর প্রথমবারের মতো হোয়াইট হাউসে গিয়ে বৈশ্বিক মঞ্চে ফিরছেন এমবিএস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার মঙ্গলবারের বৈঠক প্রমাণ করে, বিতর্ক ও সমালোচনা পেছনে ফেলে দুই দেশের স্বার্থভিত্তিক সম্পর্ক এখনো অটুট।
২০১৮ সালে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর সৌদি যুবরাজকে ‘একঘরে’ বলা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তিনি নিজেকে একজন শান্তির দূত হিসেবে তুলে ধরছেন। ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত, গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টা এবং সিরিয়াকে আরব লিগে ফেরানোর মধ্য দিয়ে আলোচনায় এসেছেন তিনি। একসময় ইয়েমেন যুদ্ধের জন্য যাকে ‘উদাসীন ও বেপরোয়া’ নেতা বলা হয়েছিল, সেই এমবিএস এখন আন্তর্জাতিক কূটনীতির অন্যতম আলোচিত চরিত্র।
মাত্র এক দশকের মধ্যে সৌদি সমাজে ঘটে গেছে নজিরবিহীন পরিবর্তন। ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া, ধর্মীয় নেতাদের প্রভাব কমানো, নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি, কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ ও পুরুষদের সঙ্গে অবাধ সামাজিক মেলামেশার সুযোগ—এমন পরিবর্তন সৌদি ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি।
একসময় বাধ্যতামূলক কালো আবায়া ও হিজাবে ঢাকা সৌদি নারীরা আজ অংশ নিচ্ছেন ফ্যাশন শোতে; রিয়াদে আয়োজিত কনসার্টে জেনিফার লোপেজ, কামিলা ক্যাবেলোসহ বিশ্ব তারকারা অংশ নিচ্ছেন। হলিউড অভিনেত্রী হ্যালি বেরি ও মনিকা বেলুচ্চির মতো তারকাদের উপস্থিতি সৌদি আরবকে এক কঠোর রক্ষণশীলতা থেকে রূপান্তরিত করেছে আধুনিকতা ও বিনোদনের নতুন গন্তব্যে।
তবে এই মুক্তির পথ নির্মাতা যুবরাজ সালমান তার বিরোধীদের জন্য আরও কঠোর। বহু সমালোচক, কর্মী, এমনকি ক্ষমতাকেন্দ্রের প্রতিদ্বন্দ্বীদের কারাবন্দি বা নির্বাসিত করা হয়েছে। অর্থাৎ বার্তা পরিষ্কার—সংস্কার হবে, কিন্তু তা কেবল যুবরাজের শর্তে, আর আনুগত্য হবে তার মূল্য।
খাশোগি হত্যা নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এমবিএসের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও তিনি তা অস্বীকার করেন। তবে দায়িত্ব স্বীকার করেন সৌদি শাসক হিসেবে।
তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন বলেছিলেন, সৌদি আরবকে ‘পরিত্যক্ত’ রাষ্ট্র বানাতে হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত ফিরে যায় জ্বালানি, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তিগত স্বার্থের বাস্তবতায়।
২০২৫ সালে ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরা সেই সম্পর্ককে আরও উষ্ণ করেছে। সৌদি থেকে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি, প্রতিরক্ষা চুক্তি আর উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় তা স্পষ্ট।
ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্লেষক স্টিভ ক্লেমন্সের মতে, যুবরাজের এই সফর হলো ‘প্রি-করোনেশন মোমেন্ট’, অর্থাৎ ভবিষ্যৎ রাজা হিসেবে তার অভিষেকের পূর্ব মুহূর্ত।
গাজায় শীতকালীন বৃষ্টির কারণে রোগব্যাধি বাড়ছে এবং আরও লোকজনের মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের প্রতি আরও তাঁবু এবং জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় সরবরাহের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে সাহায্য সংস্থাগুলো। তারা বলছে, আড়াই লাখেরও বেশি পরিবারের আশ্রয়স্থলের পাশাপাশি জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। খবর বিবিসির।
নরওয়েজ রিফিউজি কাউন্সিলের (এনআরসি) মহাসচিব জ্যান এগেল্যান্ড বলেন, এই শীতে আমরা প্রাণ হারাতে যাচ্ছি। আমাদের শিশুরা এবং পরিবারের সদস্যরা মারা যাবে। তিনি বলেন, এটা আসলে খুবই হতাশাজনক যে, ট্রাম্প শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণের পর থেকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো হারিয়ে ফেলেছি। ওই পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল যে, মানবিক সহায়তা দেওয়া হবে এবং ফিলিস্তিনিরা অসহনীয় কষ্ট সহ্য করবে না।
প্রায় দুই বছর ধরে চলা ভয়াবহ সংঘাতে বেশিরভাগ ফিলিস্তিনিই এখন বাস্তুচ্যুত। গাজার বেশিরভাগ মানুষ এখন তাঁবুতে বসবাস করে, যাদের অনেকেই অস্থায়ী।
শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া শীতকালীন ঝড়ের কারণে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বৃষ্টির পানি নর্দমার পানির সঙ্গে মিশে যাওয়ায় রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিবিসির এক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিককে গাজা সিটিতে নিজের অস্থায়ী বাড়ির ভেতরের গোড়ালি পর্যন্ত গভীর জলাশয় দেখাতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ফাতিমা হামদোনা নামের এক ফিলিস্তিনি নারী বলেন, আমার বাচ্চারা এরই মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছে এবং আমাদের তাঁবুর কী হয়েছে তা দেখুন।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে খাবার নেই, সব আটা ভিজে গেছে। আমরা ধ্বংস হয়ে যাওয়া মানুষ। আমরা কোথায় যাব? এখন আমাদের যাওয়ার জন্য কোনো আশ্রয়ও নেই।
দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরেও একই পরিস্থিতি দেখা গেছে। সেখানে নিহাদ শাবাত নামের এক ফিলিস্তিনি বলেন, আমাদের কাপড়, গদি এবং কম্বল ডুবে গেছে। সোমবার তিনি তার জিনিসপত্র শুকানোর চেষ্টা করছিলেন।
তার পরিবার চাদর এবং কম্বল দিয়ে তৈরি একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ঘুমাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা আবারও বন্যার আশঙ্কা করছি। আমাদের তাঁবু কেনার সামর্থ্য নেই। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গাজাজুড়ে ৮০ শতাংশের বেশি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে এবং গাজা সিটির ৯২ শতাংশ ভবনই ধ্বংস হয়ে গেছে।
’ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা ‘শান্তি ও সমৃদ্ধি’ বয়ে আনবে বলে প্রশংসা করেছে ইসরায়েল। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার পর ‘শান্তি ও সমৃদ্ধি’ বয়ে আনবে।
গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা সোমবার অনুমোদন দিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। এই প্রস্তাবটি ১৩ ভোটে পাস হয়েছে। কোনো দেশ প্রস্তাবের বিরোধিতা না করলেও ভোটদানে বিরত ছিল চীন ও রাশিয়া।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জানিয়েছে, আমরা বিশ্বাস করি যে (মার্কিন) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনা শান্তি ও সমৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করবে কারণ এটি গাজার পূর্ণাঙ্গ নিরস্ত্রীকরণ এবং উগ্রবাদমুক্তকরণের ওপর জোর দেয়।
তবে এই প্রস্তাব পাসের পর হামাস এক বিবৃতিতে এই আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, ‘গাজায় আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে—এটি আমাদের জনগণ এবং প্রতিরোধের সব পক্ষই প্রত্যাখ্যান করে।’
হামাসের দাবি, গাজার ভেতরে দায়িত্ব পালন করলে যে কোনও আন্তর্জাতিক বাহিনী ‘নিরপেক্ষতা হারাবে’ এবং ‘ইসরায়েলের দখলদারির পক্ষে সংঘাতের অংশে’ পরিণত হবে।
সংগঠনটি বলেছে, আন্তর্জাতিক বাহিনী থাকলেও তা শুধু সীমান্তে, যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের কাজে এবং সম্পূর্ণ জাতিসংঘের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে।
অপরদিকে নিরাপত্তা পরিষদের ভোটকে ‘অবিশ্বাস্য সমর্থন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, এই প্রস্তাবের মাধ্যমে একটি ‘বোর্ড অব পিস’ গঠন করা হবে, যার সভাপতি থাকবেন তিনিই।
এই বোর্ডে বিশ্বের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী ও সম্মানিত নেতারা’ যুক্ত হবেন বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। কাতার, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক এবং জর্ডানসহ যেসব দেশ উদ্যোগটিকে সমর্থন করেছে, তাদের ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প।
গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের প্রস্তাবে জাতিসংঘের সমর্থন
ফিলিস্তিনের গাজা ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনাকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। এই পরিকল্পনায় গাজার জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠনের কথা রয়েছে।
মঙ্গলবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এই তথ্য জানিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের ১৩টি সদস্য দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়, যার মধ্যে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সোমালিয়া ছিল, তবে রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত থাকে।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ বলেন, আইএসএফ-এর কাজ হবে এলাকা সুরক্ষিত রাখা, গাজাকে সামরিকীকরণমুক্ত করা, সন্ত্রাসী অবকাঠামো ভেঙে ফেলা, অস্ত্র অপসারণ এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
অবশ্য গাজার শাসকদল হামাস এই প্রস্তাবটি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, এটি ফিলিস্তিনিদের অধিকারের দাবি পূরণ করে না। টেলিগ্রামে দেওয়া বিবৃতিতে হামাস বলেছে, পরিকল্পনাটি গাজায় আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব চাপিয়ে দিচ্ছে, যা ফিলিস্তিনি জনগণ ও তাদের বিভিন্ন গোষ্ঠী মানতে রাজি নয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গাজার ভেতরে আন্তর্জাতিক বাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া—যেমন প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে নিরস্ত্র করা—এই বাহিনীকে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরিয়ে দেবে। খসড়া অনুযায়ী, আইএসএফ-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হবে হামাসসহ অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় করা। পাশাপাশি বেসামরিক মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং মানবিক সহায়তার রুটগুলো নিরাপদ রাখা।
বিশ্ব ইতিহাসে বিভিন্ন সময় আদালতের রায় বা বিপ্লবীদের হাতে বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, রাষ্ট্রদ্রোহ, সংবিধান লঙ্ঘন থেকে শুরু করে বিদেশি শক্তির সঙ্গে ষড়যন্ত্র—বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। ফায়ারিং স্কোয়াড, ফাঁসি, গিলোটিনের মতো পদ্ধতি ব্যবহার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল এসব নেতার।
ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সেই ঘটনাগুলোর সারসংক্ষেপ নিচে তুলে ধরা হলো-
ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লস
১৬৪৯ সালের ৩০ জানুয়ারি, ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লসকে শিরশ্ছেদ করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কর্তৃত্ববাদী শাসন এবং পার্লামেন্টের সঙ্গে বিরোধের জেরে রাষ্ট্রদ্রোহের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে তার এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রাজা প্রথম চার্লসের মৃত্যুদণ্ড ইংরেজ গৃহযুদ্ধের পরিণতি এবং সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের জন্ম দেয়, যা আধুনিক গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করে।
ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুই
১৭৯৩ সালের ২১ জানুয়ারি, ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুইকে প্যারিসের রিভোল্যুশনারি ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ফরাসি বিপ্লবের সময় রাজতান্ত্রিক শাসন এবং জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাকে গিলোটিনের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এই ঘটনা বিপ্লবীদের জয়ের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়, যা ইউরোপীয় রাজতন্ত্রের পতনের সূচনা করে।
হাঙ্গেরির ইমরে ন্যাগি
১৯৫৮ সালের ১৬ জুন বুদাপেস্টে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় হাঙ্গেরির সমাজতান্ত্রিক নেতা ইমরে ন্যাগির। ১৯৫৬ সালের ব্যর্থ বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। তবে এটি একটি ‘শো ট্রায়াল’ হিসেবে পরিচিত, যা পরবর্তীকালে হাঙ্গেরিয়ান কমিউনিস্ট পার্টি নিজেরাই অবৈধ বলে স্বীকার করে।
পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভুট্টো
১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল রাওয়ালপিন্ডি জেলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর। ১৯৭৪ সালে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নওয়াব মোহাম্মদ আহমদ খানকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে লাহোর হাইকোর্ট তাকে দোষী সাব্যস্ত করে। তবে পাকিস্তানে এই ঘটনা ‘জুডিশিয়াল মার্ডার’ হিসেবে বিবেচিত, যা পরবর্তীকালে দেশটির সুপ্রিম কোর্টও ‘বিচারিক ব্যর্থতা’ বলে ঘোষণা করে।
ইরানের আমির-আব্বাস হোবেইদা
১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল ইসলামী বিপ্লবের পর ইরানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আমির-আব্বাস হোবেইদাকে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন এবং দুর্নীতির অভিযোগে ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির অধীন হোবেইদার সরকারকে বিপ্লবীদের ‘দমনকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে তার বিচার ছিল অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। অনেকের মতে, এটি বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ডের খুব কাছাকাছি ছিল।
রোমানিয়ার নিকোলাই চাউশেস্কু
১৯৮৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট নিকোলাই চাউশেস্কু এবং তার স্ত্রী এলেনাকে একটি দ্রুত বিচারে গণহত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এই ঘটনা ইউরোপের কমিউনিস্ট শাসনের পতনের সবচেয়ে নাটকীয় মুহূর্ত হিসেবে পরিচিত।
ইরাকের সাদ্দাম হোসেন
২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে ইরাকি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা (১৯৮২ সালের দুজাইল গণহত্যা) এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। দেশটিতে মার্কিন অভিযানের পর এই বিচার আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করে, যদিও এর নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
ইতিহাস পর্যবেক্ষকদের মতে, এই মৃত্যুদণ্ডগুলো শুধু আইনি সিদ্ধান্ত নয়, বরং রাজনৈতিক বাস্তবতার ফলাফল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষমতার পরিবর্তন, অভ্যুত্থান বা যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে এসব বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও রাষ্ট্রদ্রোহ—এই দুই অভিযোগেই সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড হয়েছে সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানদের।
ইন্দোনেশিয়ার মধ্য জাভায় প্রবল বৃষ্টির কারণে দুটি অঞ্চলে হওয়া দুটি ভূমিধসের ঘটনায় অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।
গতকাল সোমবার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিখোঁজদের সন্ধানে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে।
দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, মধ্য জাভা প্রদেশের দক্ষিণ উপকূলীয় চিলাচাপ রিজেন্সির চিবেউইং গ্রামে এক ডজনের মতো বাড়ি ভূমিধসে চাপা পড়ে। লোকজন তিন থেকে আট মিটার (১০ থেকে ২৫ ফুট) মাটির নিচে চাপা পড়ায় তাদের বের করে আনতে উদ্ধারকারীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়।
উদ্ধারকারী সংস্থার স্থানীয় বিভাগ ও উদ্ধার অভিযানের প্রধান জানিয়েছেন, চিলাচাপের ভূমিধসে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে আর সাতজন নিখোঁজ রয়েছেন।
সোমবার কম্পাস টিভি চ্যানেলে প্রদর্শিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, চিলাচাপে স্তূপ হয়ে থাকা মাটি ও আবর্জনা সরাতে এস্কাভেটর মোতায়েন করা হয়েছে।
সোমবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, শনিবার মধ্য জাভার বাঞ্জারনেগারা অঞ্চলে আরেকটি ভূমিধসে দুই জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আরও ২৭ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এখানে ভূমিধসে ৩০টির মতো বাড়ির পাশাপাশি অনেকগুলো খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
১৭ হাজারের মতো ছোট বড় দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত ইন্দোনেশিয়ার বেশিরভাগ মানুষ হয় পাহাড়ি এলাকা নয়তো বন্যাপ্রবণ উর্বর সমতলে বসবাস করে। দেশটির আবহাওয়া সংস্থা কয়েকদিন আগেই পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে বেশ কিছু অঞ্চলে তুমুল বৃষ্টিপাত, বন্যা ও ভূমিধস হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল।
দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ ইন্দোনেশিয়ায় সেপ্টেম্বর থেকে বর্ষাকাল শুরু হয়ে পরের বছরের এপ্রিল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এ সময় অতিপ্রবল বৃষ্টিপাত ও বন্যার উচ্চ ঝুঁকি বিরাজ করে।
উত্তেজনা-উসকানি ছড়ানোর অভিযোগে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের তৃতীয় পবিত্র মসজিদ আল আকসা’র খতিব শেখ একরিমা সাব্বিরের (৮৬) বিচার শুরু করছে ইসরায়েল। শিগগিরই জেরুজালেমের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার বিচার শুরু হবে।
শেখ একরিমা সাব্বিরের আইনজীবীদের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, “২০২৪ সালের আগস্ট মাসে শেখ একরিমা সাব্বিরের বিরুদ্ধে ধর্মীয় উসকানি ছাড়ানোর অভিযোগ নিবন্ধন করেছিল জেরুজালেম ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সরকারি প্রসিকিউটরের টিম। আদালত সেই অভিযোগ সম্প্রতি আমলে নিয়েছেন। বর্তমানে তার অভিযোগ সংক্রান্ত বিবরণের পর্যালোচনা চলছে। এই পর্ব শেষে হলেই বিচারকাজ শুরু হবে।”
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে গিয়ে ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই তেহরানে নিহত হন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ও শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া। হানিয়া নিহত হওয়ার পর প্রথম জুমার নামাজের খুৎবায় তার মৃত্যুতে সমবেদনা ও বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছিলেন শেখ একরিমা সাব্বির।
হানিয়ার প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের অভিযোগে শেখ একরিমা সাব্বিরকে আল আকসায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইসরয়েল। ৮৬ বছর বয়সী এই খতিবের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, শেখ একরিমাকে ইসরায়েল গ্রেপ্তার করেনি, তবে তাকে আল-আকসায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং তার বাড়ি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হানিয়া ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে মসজিদে খুৎবা প্রদানের সময় ইসরায়েলের রাজনীতিবিদ ও সরকারী কর্মকর্তাদের সমালোচনা করার অভিযোগ করেছে শেখ একরিমার বিরুদ্ধে।
আ-আকসা মসজিদের অবস্থান পূর্ব জেরুজালেমে। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় পূর্ব জেরুজালেমের দখল নেয় ইসরায়েল। পরে ১৯৮০ সালে পুরো জেরুজালেম দখল করে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও জেরুজালেমকে ইসরায়েলি ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি
সৌদি আরবের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের হোয়াইট হাউসে সফরের আগে তিনি এ কথা জানালেন।
আজ মঙ্গলবার তুরস্কের বার্তাসংস্থা আনাদোলু এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
গতকাল সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, সৌদি আরবকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির বিষয়টি তিনি বিবেচনা করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বলছি, আমরা এটা করব। আমরা এফ-৩৫ বিক্রি করব।’
এর আগে গত শুক্রবার তিনি জানিয়েছিলেন, লকহিড মার্টিনের তৈরি এই উন্নত যুদ্ধবিমান কেনার ব্যাপারে প্রবল আগ্রহ দেখিয়েছে সৌদি আরব।
তার ভাষ্য, “তারা অনেক বিমান কিনতে চায়। তারা আমাকে বিষয়টা দেখতে বলেছে। তারা অনেক ‘৩৫’ কিনতে চায়, বরং এর চেয়েও বেশি ধরনের যুদ্ধবিমান কিনতে আগ্রহী।”
ব্লুমবার্গ এক প্রশাসনিক কর্মকর্তার বরাতে জানিয়েছে, সফরকালে ট্রাম্প ও মোহাম্মদ বিন সালমান এফ-৩৫ কেনার বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেন।
এছাড়া সফরে অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তিও হতে পারে, যার মধ্যে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সম্পর্কিত একটি চুক্তিও রয়েছে।
গত সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রী ক্রিস রাইট সৌদি আরবের সঙ্গে সিভিল পারমাণবিক শক্তি ও প্রযুক্তিতে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা জানিয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সব ঠিক থাকলে হোয়াইট হাউসে মঙ্গলবার ওই চুক্তি স্বাক্ষর হয়ে যেতে পারে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ওয়াশিংটন ও রিয়াদের মধ্যে পারমাণবিক সহযোগিতার বিস্তারিত তথ্য এ বছরের শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
তবে নাম গোপন করার শর্তে আলোচনা সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি সোমবার রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান তার সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সিভিল পারমাণবিক সহযোগিতা চুক্তির কাঠামো স্বাক্ষর করবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সব ঠিক থাকলে এদিনই চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মতে, মার্কিন আইনে সাধারণত অন্য কোনো দেশের কাছে উল্লেখযোগ্য পারমাণবিক উপকরণ—যেমন রিঅ্যাক্টর জ্বালানি, রিঅ্যাক্টর সরঞ্জাম বা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রপ্তানি করতে হলে আগে একটি ১২৩ অ্যাগ্রিমেন্ট থাকা বাধ্যতামূলক। সৌদি ওই শর্ত মেনেই এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে বলে জানিয়েছে সৌদি গেজেট।
‘১২৩ অ্যাগ্রিমেন্ট’ সাধারণত এমন শর্ত রাখে যাতে বলা হয়, পারমাণবিক প্রযুক্তি শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হবে এবং প্রসার (যেমন পারমাণবিক অস্ত্র) এড়াতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা থাকবে।
তবে সৌদি আরবের একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সৌদি আরব এখনো এমন সব শর্তাবলীর জন্য পুরোপুরি রাজি হয়নি। তবে চুক্তি স্বাক্ষর হলে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া প্রযুক্তিটির সামরিক ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ রাখা হতে পারে।
তবে মার্কিন জ্বালানি মন্ত্রী ক্রিস রাইট বলেছেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে অবশ্যই একটি ১২৩ পারমাণবিক চুক্তি হবে।’ সৌদির জ্বালানি মন্ত্রী বলেছেন, তারা পারমাণবিক কার্যকলাপের ওপর সব শর্ত মেনে নিতে প্রস্তুত।
রয়টার্সের মতে, সৌদি আরবের ‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনার একটি অংশ হিসেবে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি তাদের জ্বালানির উৎস বৈচিত্র্য করা এবং কার্বন নির্গমন কমিয়ে শক্তি ভবিষ্যৎ নিরাপদ করতে পারমাণবিক পথে হাঁটছে। যুক্তরাষ্ট্রও পারমাণবিক কারিগরি ও জ্বালানিতে সৌদিকে সহযোগিতার মাধ্যমে নিজের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থ দেখতে পারে।
ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেছেন, সন্ত্রাসী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের একইভাবে বিবেচনা করবে ভারত, আর সন্ত্রাস মোকাবিলায় অবস্থান হবে কঠোর। পাকিস্তানকে উদ্দেশ্য করে তিনি সতর্ক করেন, সন্ত্রাসে মদদ অব্যাহত থাকলে তা তাদের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
সোমবার এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, পাকিস্তান সীমান্ত থেকে সন্ত্রাসী তৎপরতা অব্যাহত থাকলে ভারত কঠোর অবস্থান নেবে। তার ভাষায়, ‘আমরা আগেই বলেছি, আলোচনা ও সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না; রক্ত ও পানি একসঙ্গে চলবে না। শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ার প্রতি আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে ততক্ষণ পর্যন্ত সন্ত্রাসী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের একইভাবে বিবেচনা করা হবে।’
অপারেশন সিন্দুরকে ‘৮৮ ঘণ্টার ট্রেলার’ হিসেবে অভিহিত করে ভারতীয় সেনাপ্রধান বলেছেন, যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে সশস্ত্র বাহিনী ‘তাদের (পাকিস্তানকে) প্রতিবেশী দেশের সাথে কীভাবে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হয় তা শেখাতে’ প্রস্তুত।
তিনি বলেন, ‘ভারত উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে মনোযোগী। কেউ আমাদের পথে বাধা দিলে তার বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।’
পাকিস্তানের পারমাণবিক হুমকির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আজকের ভারত কোনো ব্ল্যাকমেইলে ভয় পায় না।’ তার দাবি, সন্ত্রাস মোকাবিলায় ভারতের ‘নিউ নরমাল’ এখন পাকিস্তানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেনারেল দ্বিবেদী জানান, ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেশের প্রতিরোধ সক্ষমতা বাড়াতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ‘আজকের সময় আমাদের প্রতিরোধশক্তি খুবই শক্তিশালী, কার্যকরও বটে,’ তিনি বলেন।
চীনকে ঘিরে উত্তেজনার প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, গত এক বছরে দুই দেশের নেতৃত্বের আলোচনার ফলে সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মিরের পরিস্থিতি নিয়েও মন্তব্য করেন তিনি। তার দাবি, ২০১৯ সালে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর সেখানে রাজনৈতিক স্পষ্টতা এসেছে এবং সন্ত্রাসবাদ অনেক কমেছে। মণিপুরের উন্নতিশীল পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি ইঙ্গিত দেন, প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুও সেখানে সফরের বিষয়ে বিবেচনা করতে পারেন।
‘পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আল্লাহর সেনাবাহিনী। আমাদের সৈন্যরা আল্লাহর নামে যুদ্ধ করে।’ প্রেসিডেন্ট হাউজে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ দ্বিতীয়ের সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনির।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হাউজে বাদশাহ আবদুল্লাহ দ্বিতীয়ের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজ ও তাকে নিশান-এ-ইমতিয়াজ খেতাব প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আসিম মুনির আরও বলেন, পাকিস্তান একটি শান্তিপ্রিয় দেশ, তবে কেউ যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে তার জবাব দেওয়া হবে। তিনি আকাশের দিকে ইশারা করে বলেন, ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তানকে আমি নই, আল্লাহ বিজয় দিয়েছেন।
তিনি বলেন, কোনো মুসলমান আল্লাহর ওপর ভরসা রাখলে, শত্রুর দিকে নিক্ষিপ্ত ধুলিকণাও আল্লাহ ক্ষেপণাস্ত্রে পরিণত করে দেন।
আসিম মুনির বলেন, আমি আল্লাহর আদেশ ও বিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করি। আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহেই পাকিস্তান তার শত্রুকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছে।
চলতি বছরের মে মাসে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। একপর্যায়ে পাকিস্তানে হামলা চালায় ভারত। এ সময় পাকিস্তান সাতটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করে।
ভারত এই হামলার আগে কাশ্মীরের পহেলগাম এলাকায় পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছিল। যদিও পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করে।
পরে পাকিস্তান অপারেশন বুনইয়ান–উম–মারসুস নামে পাল্টা হামলায় ভারতের ২০টিরও বেশি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করে।
দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের এই সংঘাত ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়।
যুদ্ধ শেষে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে সংঘাতকালীন নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে জেনারেল মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করা হয়।
ফিল্ড মার্শাল মুনির শান্তির প্রতি পাকিস্তানের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তবে তিনি বলেন, আগ্রাসন ঘটলে মে মাসের মতোই দৃঢ় জবাব দেওয়া হবে।
তিনি কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ঈমান থাকলে যেকোনো শক্তিশালী শত্রুকেও পরাজিত করা সম্ভব এবং পাকিস্তান মে মাসে তা দেখিয়েছে।
সভা শেষে উপস্থিতদের অভিনন্দন জানানোর সময় তিনি পাকিস্তানের অগ্রগতির জন্য দোয়া করতে বলেন এবং নিজের দায়িত্ব আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী পালন করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ যুক্তরাজ্য, ইতালি এবং জার্মানিসহ প্রধান ইউরোপীয় শক্তিগুলোকে গাজায় গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। তিনি সতর্ক করেছেন, এসব দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের আইনি পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।
চলতি মাসের শুরুতে এক্সপার্ট উইটনেস পডকাস্টে উপস্থিত হয়ে তার সবশেষ প্রতিবেদন ‘গাজা গণহত্যা: একটি যৌথ অপরাধ’-এর ফলাফল নিয়ে আলোচনা করেন। সেখানে তিনি ইসরায়েলিদের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকে সহায়তার জন্য ৬৩টি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতার প্রমাণ উল্লেখ করেছেন।
মিডল ইস্ট আইকে তিনি বলেন, গাজা ও পশ্চিম তীরে গণহত্যা এবং ব্যাপক নৃশংসতার অপ্রতিরোধ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলকে কূটনৈতিক, সামরিক এবং রাজনৈতিক আবরণ প্রদান করে চলেছে।
তিনি গণহত্যার ঝুঁকি স্বীকার করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আচরণে ব্রিটিশ সরকারের জড়িত থাকার অভিযোগ স্বীকার করতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানান।
আলবানিজ বলেন, ‘যুক্তরাজ্য সেইসব আকর্ষণীয় উদাহরণগুলোর মধ্যে একটি - যেখানকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব গাজার জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যে যুদ্ধ শুরু করেছে, তার চারপাশে ঐকমত্য তৈরি করতে সাহায্য করেছে।’
ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার ব্রিটিশ সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর ওপর যুক্তরাজ্যের দমন-পীড়নের নিন্দা করে তিনি বলেন, এটি গণহত্যায় ‘জড়িত থাকার পরিবেশ’ তৈরিতে সহায়তা করেছে।
তিনি বলেন, ‘সরকার যখন নাগরিক সমাজের কর্মকাণ্ডকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে চিহ্নিত করার, অথবা সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে গণহত্যার তদন্তকারী সাংবাদিকদের থামিয়ে দেওয়ার ইচ্ছাকৃত সিদ্ধান্ত নেয় - তখন কার্যত অসহায় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসকে ব্যবহার এবং অনুশীলনকারী রাষ্ট্রকে (ইসরায়েল) সমর্থন অব্যাহত রাখার ফলে, জড়িত থাকার পরিবেশ তৈরি হয়।’
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইইউ যৌথ পদক্ষেপ নিতে চেয়েছিল। কিন্তু এতে বাধা দেওয়ার জন্য আলবানিজ জার্মানি এবং ইতালিকে দায়ী করেন।
আলবানিজ বলেন, ‘এটি একটি অত্যন্ত দুঃখজনক কাকতালীয় ঘটনা যে, এক শতাব্দী পরেও, এই দুটি দেশ এখনো ইতিহাসের ভুল দিকে রয়েছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘গণহত্যা প্রতিরোধে এই দুটি দেশেরই সর্বোচ্চ দায়িত্ব রয়েছে - বিশেষ করে জার্মানির, তাদের রেকর্ডের কারণে।’
আলবানিজ ব্যাখ্যা করেন, জার্মানি ইতোমধ্যেই ইতিহাসে একবার ইউরোপে...এবং তার পরেও ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে এনেছে। তারা আবারও নৃশংসতা রোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।’
গাজায় গণহত্যা তদন্তের কাজের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গত জুলাই মাসে আলবানিজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞার দলে কার্যকরভাবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে পারেন না। সেখানে তার সম্পদও জব্দ করা হয়েছে।
২৮ অক্টোবর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সদর দপ্তরে এই বিশেষজ্ঞ আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারেননি। পরিবর্তে, তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন থেকে পরিষদে বক্তব্য রাখেন।
তিনি মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘এটা হতাশাজনক যে, একজন জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ভ্রমণ করতে না পারার কারণে এবং তার ওপরে নিষেধাজ্ঞার কারণে নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা ভোগ করছেন।’
আলবানিজের বিরুদ্ধে মার্কিন পদক্ষেপের ফলে জাতিসংঘের অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের যে কূটনৈতিক অধিকার রয়েছে, তার লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা দায়েরের আহ্বান জানিয়েছেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ফিলিস্তিন ও আফগানিস্তানে নৃশংসতার তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান প্রসিকিউটর এবং তার দুই ডেপুটিসহ ছয় বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পরবর্তীতে ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থা এবং কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞাগুলো দেওয়া হয়।
সাক্ষাৎকারে আলবানিজ তার এবং অন্যদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলোকে ‘মাফিয়া-ধাঁচের’ ব্যবস্থা বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি আইসিসির প্রসিকিউটর এবং বিচারকদের প্রতি এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘অবশ্যই তাদের তদন্ত চালিয়ে যাওয়া এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা উচিত। আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার ভিত্তি ধ্বংস করে দেওয়া এই মাফিয়া-ধাঁচের ব্যবস্থার কারণে কি আমরা পেছনের দিকে ঝুঁকে পড়ব? আমাদের আগে অনেক কাজ এবং অনেক জীবনের ত্যাগ হয়েছে। এখান থেকে আরও বড় আহ্বানের জবাব দিতে হবে।’
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের ওপর গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী
লেবাননে নিযুক্ত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ওপর গুলি চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি সৈন্যরা। রোববার শান্তিরক্ষীরা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারী মেশিনগানের গুলি তাদের কর্মীদের থেকে মাত্র ৫ মিটার দূরে আঘাত হেনেছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুসারে, দখলদার বাহিনী এক বছর ধরে চলা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে প্রায় প্রতিদিনই লেবাননে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।
লেবাননে নিযুক্ত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী (UNIFIL) এক বিবৃতিতে বলেছে, লেবাননের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠিত অবস্থানের কাছাকাছি থেকে মেরকাভা ট্যাঙ্ক দিয়ে শান্তিরক্ষীদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। ভারী মেশিনগানের গুলি কর্মীদের থেকে প্রায় ৫ মিটার (৫.৫ গজ) দূরে আঘাত হেনেছে।
ইউনিফিল আরও জানিয়েছে, ট্যাঙ্কটি ইসরায়েলি অবস্থানের ভেতরে চলে যাওয়ার ৩০ মিনিট পর শান্তিরক্ষীরা নিরাপদে চলে যেতে সক্ষম হয়।
ইসরায়েল বলেছে, তাদের সৈন্যরা জাতিসংঘের টহলকে ‘সন্দেহভাজন’ ভেবেছিল।
লেবাননের সেনাবাহিনী পৃথক এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সেনা কমান্ড নিশ্চিত করছে যে, তারা ইসরায়েলি শত্রুদের চলমান লঙ্ঘন বন্ধ করার জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। এর জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, কারণ এটি একটি বিপজ্জনক উত্তাজনা বৃদ্ধির প্রতিনিধিত্ব করে।’
গত সেপ্টেম্বরেও ইউনিফিল বলেছিল, ইসরায়েলি ড্রোনগুলো দক্ষিণ লেবাননে তাদের শান্তিরক্ষীদের কাছে চারটি গ্রেনেড ফেলেছে। এর মধ্যে একটি জাতিসংঘের কর্মী এবং যানবাহনের ২০ মিটার (২২ গজ) মধ্যে পড়েছিল।
ইউনিফিল আরও বলেছে, এসব গুলিবর্ষণ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ নম্বর প্রস্তাবের গুরুতর লঙ্ঘন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আবারও আমরা (ইসরায়েলি বাহিনীকে) শান্তিরক্ষীদের ওপর বা তার কাছাকাছি যে কোনো আক্রমণাত্মক আচরণ এবং আক্রমণ বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’