বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

চীনা পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের

নজর ইউরোপীয় পণ্যেও
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড
২৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:৪২
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত : ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:৪২

চীনের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি এবার বাস্তবে প্রমাণ করলেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি বার্তার পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথের পর দিনই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। তবে নির্বাহী আদেশে চীনা ফেন্টানিল পণ্যে আপাতত ১০ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দেন, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চীনে তৈরি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার কথা বিবেচনা করছেন তিনি। পাশাপাশি শুল্ক আরোপের তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাম। গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে এক প্রেস কনফারেন্সে ট্রাম্প বলেন, ‘এই পদক্ষেপ চীনের ফেন্টানিল বাণিজ্যের ওপর, যা প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে হাজার হাজার মৃত্যুর কারণ। তারা (চীন) মেক্সিকো ও কানাডায় ফেন্টানিল পাঠাচ্ছে। এ জন্য আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের ওপর শুল্ক আরোপ নিয়ে ভাবছে প্রশাসন।’ এ সময় ট্রাম্প জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপরও শুল্ক আরোপ করবেন তিনি।

ট্রাম্প বলেন, ‘চীন আমাদের সঙ্গে অন্যায় করছে, আবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের প্রতি খুবই খারাপ আচরণ করে। তাই তাদের ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে। এটাই একমাত্র উপায়, যার মাধ্যমে ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’

নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করবেন। আর মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের অভিযোগ, দেশ দুটি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী ও মাদকের অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে। আর তাদের দেশে মাদক প্রবেশ করাচ্ছে চীন।

গত সোমবার শপথ নেওয়ার পরপরই ট্রাম্প বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তিগুলোর পর্যালোচনা এবং মার্কিন বাণিজ্য অংশীদারদের অন্যায্য চর্চাগুলো চিহ্নিত করতে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রতিবেশী মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা ভাবছেন, যা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে পারে। এর উদ্দেশ্য হলো এই দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল প্রবাহ বন্ধ করা। তখন এ প্রসঙ্গে চীনের নাম উল্লেখ করেননি।


সুস্থ আছেন ইমরান খান: কর্তৃপক্ষ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইমরান খান

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে কারাগার থেকে সরিয়ে নেওয়া ও তার মারা যাওয়ার খবরকে গুজব ও ভিত্তিহীন বলে আখ্যা দিয়েছে দেশটির আদিয়ালা কারাগার কর্তৃপক্ষ।

গুজবে বলা হচ্ছিল, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতাকে কারাগার থেকে অন্যত্র সরানো হয়েছে।

তবে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের বরাত দিয়ে আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ জানিয়েছে, কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তিনি এখনও আদিয়ালা কারাগারেই আছেন এবং সুস্থ আছেন।

রাওয়ালপিন্ডি কারা কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আদিয়ালা জেল থেকে তাকে সরিয়ে নেওয়ার খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি পুরোপুরি সুস্থ এবং পূর্ণ চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন।’

কর্মকর্তারা আরও বলেন, তার স্বাস্থ্য নিয়ে যে জল্পনা চলছে, তা ‘ভিত্তিহীন।’ পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার সুস্থতা নিশ্চিত করা হচ্ছে বলেও তারা জানায়।

২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে থাকা ইমরান খান ক্ষমতা হারানোর পর দুর্নীতি থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবাদ পর্যন্ত বিভিন্ন মামলার মুখোমুখি। ২০২২ সালের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।

অন্যদিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ দাবি করেছেন, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা কারাগারে আগের তুলনায় অনেক আরাম পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘তার জন্য যেসব খাবার আসে, সেগুলো পাঁচতারা হোটেলেও মেলে না।’

আসিফ আরও বলেন, তার কাছে টেলিভিশন আছে এবং তিনি ইচ্ছেমতো যেকোনো চ্যানেল দেখতে পারেন।

তিনি বলেন, ‘তার জন্য ব্যায়াম করার মেশিনও আছে।’

এ পরিস্থিতির তুলনা করতে গিয়ে তিনি নিজের কারাবাসের কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ঠান্ডা মেঝেতে ঘুমাতাম, কারাগারের খাবার খেতাম, জানুয়ারিতে গরম পানি ছাড়াই মাত্র দুটি কম্বল ছিল।’ তখনকার সুপারিনটেনডেন্ট আসাদ ওয়ারাইচ তাঁর সেল থেকে গিজার খুলে নিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও দাবি করেন, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতাকে ডাবল বেড এবং ‘মখমলের গদি’ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘তার উচিত জেলের লাউডস্পিকারে তার ওয়াশিংটন অ্যারেনা বক্তৃতা শোনা।’তিনি আরও বলেন, ‘খোদাকে ভয় করো—সময় কারও হাতে থাকে না।’

এদিকে ক্ষমতাসীন জোটের মূল পক্ষ পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজের (পিএমএল-এন) সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ গতকাল বুধবার দাবি করেন, ‘যারা ইমরানকে ক্ষমতায় এনেছিল, তারাই বড় অপরাধী।’

উপনির্বাচনে জয়ী আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘ইমরান খান একমাত্র অপরাধী ছিলেন না। যারা তাকে ক্ষমতায় এনেছিল, তারা আরও বড় অপরাধী, এবং তাদের সম্পূর্ণ জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।’

২০২৪ সালের নির্বাচনের পর পিপিপির সঙ্গে জোট গঠনের মাধ্যমে পিএমএল-এন ক্ষমতায় আসার পর নওয়াজ সাধারণত নিম্ন প্রোফাইলে ছিলেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, পিটিআই দেশটির সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠে। মোট ২৭০টি জাতীয় পরিষদ আসনের মধ্যে ১১৫টি পায় তারা।


ভারত–চীন সম্পর্কে আবারও ফাটল

অরুণাচল প্রদেশের ভারত–চীন সীমান্ত। ছবি: সংগৃহীত 
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

অরুণাচল প্রদেশের এক ভারতীয় নারীকে চীনের সাংহাই বিমানবন্দরে আটক ও হয়রানির অভিযোগ ঘিরে আবারও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে ভারত–চীন সম্পর্কে। চীন বরাবরই অরুণাচলকে ‘দক্ষিণ তিব্বত’ বা ‘জাংনান’ বলে নিজেদের ভূখণ্ড দাবি করে, আর ভারত বলে— এটি তাদেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। দীর্ঘদিনের এই বিরোধের মধ্যেও সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু নতুন ঘটনাটি আবার আলোচনায় এনেছে পুরোনো দ্বন্দ্ব।

কী ঘটেছে?

আল জাজিরার বরাতে জানা যায়, অরুণাচল প্রদেশের বাসিন্দা প্রেমা ওয়াংজম থংডক যুক্তরাজ্য থেকে জাপানে যাওয়ার পথে সাংহাই পুডং বিমানবন্দরে ট্রানজিটে ছিলেন। সেখানে তার পাসপোর্টে জন্মস্থান হিসেবে অরুণাচল প্রদেশ লেখা থাকায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নাকি তাকে ১৮ ঘণ্টা আটকে রাখে এবং হয়রানি করে।

তিনি বলেন, ইমিগ্রেশন পেরোনোর পর এক কর্মকর্তা তাকে আলাদা করে নিয়ে জানান— অরুণাচল প্রদেশ নাকি চীনের অংশ, তাই তার ভারতীয় পাসপোর্ট ‘অবৈধ’। পাল্টা যুক্তিতে থংডক বলেন, অরুণাচল ভারতেরই অংশ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, তাকে চীনা ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের নতুন টিকিট কিনতে চাপ দেওয়া হয়েছিল, নইলে পাসপোর্ট ফেরত না দেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়। এতে তার আর্থিক ক্ষতিও হয়।

পরে যুক্তরাজ্যে থাকা এক বন্ধুর চেষ্টা ও সাংহাইয়ে ভারতীয় কনসুলেটের সহায়তায় তিনি সেদিন রাতেই শহর ছাড়তে সক্ষম হন। গত অক্টোবর মাসে একই বিমানবন্দর দিয়ে তিনি নির্বিঘ্নে যাতায়াত করেছিলেন— এবার আচরণ বদলে গেল কেন, তা পরিষ্কার নয়।

আগে কি এমন ঘটনা ঘটেছে?

হ্যাঁ। ২০০৫ সাল থেকে চীন অরুণাচল প্রদেশের মানুষকে ‘স্ট্যাপলড ভিসা’ দিতে শুরু করে— অর্থাৎ পাসপোর্টে সিল মারার পরিবর্তে আলাদা কাগজে ভিসা দিত। কারণ হিসেবে তারা বলে, ওই অঞ্চলের মানুষকে তারা চীনা নাগরিক মনে করে। ভারত কখনোই এ ধরনের ভিসা মানেনি। এর জেরে বিভিন্ন সময়ে খেলোয়াড়রা চীনে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেননি।

বিরোধের মূল উৎস কোথায়?

বিরোধের সূত্র উপনিবেশিক আমলে। ১৯১৪ সালের সিমলা কনভেনশনে ব্রিটিশ ভারত, তিব্বত ও চীনের মধ্যে ম্যাকমোহন লাইন নির্ধারণ করা হয়। চীনা প্রতিনিধি চুক্তিতে সই না করায় চীন এই সীমা স্বীকার করেনি। আর ভারত স্বাধীনতার পর থেকেই এটিকে বৈধ সীমান্ত বলে ধরে আসছে। এখন বেইজিং পুরো অরুণাচলকেই দাবি করছে।

ইতিহাসে কী ধরনের সংঘাত ঘটেছে?

অরুণাচল বহুদিন ধরেই দুই দেশের উত্তেজনার কেন্দ্র। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের একটি ফ্রন্ট এখানেই ছিল। ১৯৭৫ সালে তুলুং লায় সংঘর্ষে চার ভারতীয় সেনা নিহত হন। আর ২০২০ সালে লাদাখের গালওয়ানে প্রাণঘাতী সংঘর্ষে দুই দেশেরই সেনা হতাহত হয়। দালাই লামার সফর, সীমান্তে হাতাহাতি, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প— এসব নিয়েও উত্তেজনা দেখা গেছে।

কেন এই অঞ্চল এত গুরুত্বপূর্ণ?

ভারতের জন্য অরুণাচল প্রদেশ ভূরাজনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে অত্যন্ত কৌশলগত। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের যোগাযোগে এটি বড় ভূমিকা রাখে এবং মিয়ানমার ও ভুটান সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় নিরাপত্তার দিক থেকেও এটি সংবেদনশীল। চীনের কাছে তাওয়াং ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ— এখানে ষষ্ঠ দালাই লামার জন্ম হয়েছিল— তাই বেইজিং দাবি ছাড়তে নারাজ।

দুই দেশের প্রতিক্রিয়া

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, জাংনান যেহেতু তাদের ভূখণ্ড, তাই তারা আইন অনুযায়ীই ওই নারীর সঙ্গে আচরণ করেছে এবং আটক বা হয়রানির অভিযোগ সত্য নয়। ভারত পাল্টা জানিয়েছে, অরুণাচল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং চীনের বক্তব্য বাস্তব পরিবর্তন করতে পারে না। এছাড়া তারা অভিযোগ করেছে, চীন ট্রানজিট সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নিয়ম ভঙ্গ করেছে।

সম্পর্ক এখন কোন অবস্থায়?

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনাটি বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে না। গালওয়ান সংঘর্ষের পর জমাট বাধা সম্পর্ক গত এক বছরে কিছুটা উন্নতির দিকে ছিল— উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ও সেনা প্রত্যাহার তার প্রমাণ। তবে পারস্পরিক সন্দেহ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখনো রয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে দ্বন্দ্ব কেন

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল থেকেই অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত–দ্বন্দ্ব চলে আসছে। সিমলা কনভেনশনের সময় ১৯১৪ সালের মার্চ মাসে ম্যাকমোহন লাইন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ওই কনভেনশন নিয়ে আলোচনায় যুক্ত ছিল তিব্বত, চীন ও ব্রিটিশ শাসকেরা।

নয়াদিল্লি ও বেইজিংয়ের মধ্যে সম্পর্ক ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বেশ দ্বন্দ্বপূর্ণ ছিল। গত বছর তা নরম হয়েছে।

আলোচনায় ব্রিটেনের পক্ষ থেকে প্রধান মধ্যস্থতাকারী ছিলেন হেনরি ম্যাকমোহন। তার নামেই ম্যাকমোহন লাইন নামকরণ করা হয়েছে। সিমলা কনভেনশনের আলোচনায় চীনের প্রতিনিধিরা অংশ নিলেও মূল চুক্তিতে সই করেননি তারা। বেইজিংও ম্যাকমোহন লাইনের স্বীকৃতি দেয়নি।

যাই হোক, চীনের আপত্তির পরও এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ম্যাকমোহন। তিব্বতের সঙ্গে ভারতবর্ষের একটি সীমানা তৈরি করেন। তবে চীন অভিযোগ করেছে, ভারতের সঙ্গে সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই তিব্বতের। ১৯৫১ সালে তিব্বত দখলের পর বেইজিংয়ের এই অভিযোগ আরও জোরালো হয়।

এ ছাড়া পুরোনো কিছু মানচিত্রও তুলে ধরে চীন। এর মধ্যে ব্রিটিশদের তৈরি মানচিত্রও ছিল। সেখানে ম্যাকমোহন লাইনের দক্ষিণের ভূখণ্ডগুলো চীনের অংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। এরই মধ্যে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভ করে ভারত। তখন থেকেই ম্যাকমোহন লাইনকে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত বলে বিবেচনা করে আসছে নয়াদিল্লি।

দশকের পর দশক ধরে অরুণাচল প্রদেশে তাওয়াং নামে পরিচিত একটি অংশকে নিজেদের বলে দাবি করত চীন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পুরো রাজ্যটিকেই নিজেদের বলে দাবি করছে দেশটি। জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির সিগুর সেন্টার ফর এশিয়ান স্টাডিজের গবেষক রাজ ভার্মা বলেন, ২০১২ সালে সি চিন পিং চীনের প্রেসিডেন্ট পদে বসার পর থেকেই মূলত উত্তেজনাটা বেড়েছে।


হংকংয়ে ৬৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

হংকংয়ে গত ৬৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দুপুরে শুরু হওয়া আগুন কয়েকটি উঁচু ভবনে ছড়িয়ে পড়েছে। হংকংয়ের তাই পো এলাকার এই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এখনো নেভানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ভেতরে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।

বুধবার দুপুরে আগুন লাগার ১৬ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার ভোরে কর্মকর্তারা জানান, আগুনে আক্রান্ত সাতটি ভবনের মধ্যে চারটিতে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তবে বাকি তিনটিতে এখনো কাজ চলছে।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়, বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৫১ মিনিটে (জিএমটি ০৬:৫১) হংকংয়ের তাই পো এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে আগুন লাগে। আগুনের সূত্রপাত হয় ভবনের বাইরের বাঁশের মাচায়। ভবন সংস্কারের সময় যে বাঁশ ব্যবহার করা হয়, সেই মাচা খুব সহজেই দাহ্য। মাচায় আগুন লাগার পর মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে উপরের দিকে, তারপর ভবনের ভেতরে এবং কাছের অন্যান্য টাওয়ারে।

ভবনগুলো চারদিকে সবুজ রঙের নির্মাণ-নেট দিয়ে ঢাকা ছিল। এটি ছাদ পর্যন্ত টানানো থাকায় এই নেট আগুনে পুড়ে দ্রুত তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

এটি হংকংয়ের অন্তত আগস্ট ১৯৬২ সালের পর সবচেয়ে প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ড। ওই বছর শাম শুই পো এলাকায় ভয়াবহ আগুনে ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

পরে ১৯৯৬ সালের নভেম্বরে কোলউনের নাথান রোডের গারলি বিল্ডিংয়ে আগুনে ৪১ জনের মৃত্যু এবং ৮১ জন আহত হয়।

১৯৮৩ সালে নির্মিত এই কমপ্লেক্সে মোট আটটি উঁচু ভবন রয়েছে, যেখানে ১,৯৮৪টি ফ্ল্যাট আছে। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এর মধ্যে সাতটি ভবনে আগুন ছড়ায়। চারটি ভবনে আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে।

জানা গেছে, সোমবার থেকেই হংকংয়ে অগ্নিসতর্কতা জারি ছিল।

অতিরিক্ত শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি ছিল অত্যন্ত বেশি।


ঢাকার অনুরোধ খতিয়ে দেখছে দিল্লি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে দিল্লিকে লেখা চিঠির জবাব এখনও আসেনি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। দিল্লি এত তাড়াতাড়ি উত্তর দেবে– এটা তিনি আশা করেন না বলেও উল্লেখ করেছেন। গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

এদিকে গতকাল দিল্লিতে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। বিচারিক এবং অভ্যন্তরীণ আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এটি পরীক্ষা করা হচ্ছে।

কোন প্রক্রিয়ায় ভারতে চিঠি পাঠানো হয়েছে– এ প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘নোট ভারবাল (কূটনৈতিক পত্র) আমাদের মিশনের মাধ্যমে ওদের (ভারতের) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কোনো উত্তর আসেনি। এত তাড়াতাড়ি উত্তর আশাও করি না আমরা।’ উত্তর তাড়াতাড়ি আশা করেন না কেন– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এত তাড়াতাড়ি উত্তর… আমি তো আগের চিঠিরই উত্তর পাইনি এখনও। কাজেই এটা একেবারে কালকে বা এক সপ্তাহের মধ্যে উত্তর দিয়ে দেবে, আমি প্রত্যাশা করি না। তবে আমরা আশা করি, এটার উত্তর আমরা পাব। এক সপ্তাহের মধ্যে উত্তর এসে যাবে– এটা আমি প্রত্যাশা করি না।’ চিঠিতে কী বলা হয়েছে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা বলেছি, যেহেতু তাঁকে বিচারে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, কাজেই তাঁকে যেন ফেরত দেওয়া হয়।

গত ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে। দণ্ডিত হওয়ার পর দুজনকে হস্তান্তরের জন্য ভারতকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে ২০২৪ সালের ২০ এবং ২৭ ডিসেম্বর চিঠি দিয়ে দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের অনুরোধ জানানো হয়েছিল।

নির্বাচনে ভারতীয় পর্যবেক্ষক ইসির বিষয় নির্বাচনে ভারতীয় পর্যবেক্ষক আসতে চাইলে অনুমতি দেওয়া হবে কিনা– জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, এটা পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের বিষয়। এটাতে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই। এমনকি যারা আসবে, তাদের কোনো সহায়তা আমরা করব না, যদি না নির্বাচন কমিশন আমাদের বলে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের বিষয়ে পশ্চিমা চাপ নেই

জাতীয় সংসদ নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক করার বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে কোনো চাপ নেই বলে জানিয়েছেন তৌহিদ হোসেন। তিনি জানান, আগামী নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য পশ্চিমাদের কোনো চাপ অনুভব করছে না সরকার।

এয়ারবাস কেনার বিষয়ে কোনো চাপ নেই
এয়ারবাসের উড়োজাহাজ না কেনায় ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমি মনে করি না এই বাণিজ্যিক একটি সমঝোতার ওপরে আমাদের সার্বিক সম্পর্ক নির্ভরশীল হবে। অবশ্যই জার্মানির রাষ্ট্রদূত চেষ্টা করবেন, যেন তাঁর দেশের যে ব্র্যান্ড আছে, সেটা বিক্রি হয়। এটা স্বাভাবিক, এটা তাঁর দায়িত্ব। আমি মনে করি, তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু আমি একেবারে মনে করি না যে, একটা বাণিজ্যিক সমঝোতা, যেটা বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি, তাতে করে আমাদের জন্য কোনটা সুবিধা হবে– সেটা আমাদের বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে।

তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয় না যে, বিশেষজ্ঞদের মতামতের বাইরে গিয়ে একজন রাষ্ট্রদূত বা অন্যরা কী বলবেন, সেটার ভিত্তিতে এটা কেনা হবে। এয়ারবাস কেনার ক্ষেত্রে সরকার কোনো চাপ অনুভব করছে কিনা– জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আমি অন্তত অনুভব করছি না। বাকিটুকু যিনি কিনবেন, তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন।

বাংলাদেশের অনুরোধ খতিয়ে দেখছে ভারত
দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, চলমান বিচারিক ও অভ্যন্তরীণ আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর অনুরোধটি (ঢাকার চিঠি) পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। আমরা শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি, স্থিতিশীলতাসহ বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা অব্যাহতভাবে সব অংশীজনের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকব।


বিশ্বে প্রতি ১০ মিনিটে ঘনিষ্ঠজনের হাতে খুন হন একজন নারী: জাতিসংঘ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

পৃথিবীর কোথাও না কোথাও প্রতি ১০ মিনিটে একজন নারী খুন হচ্ছেন তার ঘনিষ্ঠ কারো হাতে, জানিয়েছে জাতিসংঘ। এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে জাতিসংঘ আরো জানিয়েছে, নারী হত্যা রোধে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টায় তেমন কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। খবর- এএফপি।

নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নির্মূলে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক কার্যালয় এবং জাতিসংঘ নারী সংস্থা। এতে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে সঙ্গীর হাতে অথবা পরিবারের কোনো সদস্যের হাতে নিহত হয়েছে ৫০ হাজার নারী বা মেয়ে।

বিশ্বজুড়ে যত নারী নিহত হন, তার ৬০ শতাংশই সঙ্গী বা আত্মীয় (যেমন বাবা, মামা/চাচা, মা, ভাই) এর হাতে খুন হন।

এর সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, বিশ্বজুড়ে নিহত হওয়া পুরুষদের মাত্র ১১ শতাংশ খুন হন কাছের মানুষের হাতে।

এই প্রতিবেদনে ১১৭টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দৈনিক ১৩৭ জন বা প্রতি ১০ মিনিটে একজন করে নারী নিহত হন প্রিয়জনের হাতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের একই রকম প্রতিবেদনের তুলনায় এ বছর নিহতের সংখ্যা কম পাওয়া গেছে, কিন্তু তারমানে এই নয় যে আদতে সে সংখ্যাটি কমে এসেছে। বরং বিভিন্ন দেশে তথ্য সরবরাহে ঘাটতির কারণে এই পার্থক্য দেখা গেছে।

প্রতি বছর হাজার হাজার নারী জীবন হারাচ্ছেন, এবং এ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘হত্যার ঝুঁকি বিবেচনায় নারী ও মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান তাদের নিজ বাসস্থান।’

পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চলে এমন হত্যাকাণ্ডের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এ ধরণের হত্যার ঘটনা আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি- গত বছর আফ্রিকার প্রায় ২২ হাজার নারী খুন হন আপনজনের হাতে।

‘নারী হত্যা (ফেমিসাইড) কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। অন্যান্য সহিংসতার হাত ধরে হত্যার ঘটনা আসে, যেমন আধিপত্যমূলক আচরণ, হুমকিধমকি, এবং হয়রানি- এমনকি ইন্টারনেটের হয়রানি,’ এক বিবৃতিতে বলেন সারাহ হেন্ড্রিকস, জাতিসংঘ নারী সংস্থার নীতিমালা বিভাগের পরিচালক।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে নারী ও মেয়েদের সাথে ঘটা কিছু সহিংসতা আগের থেকে তীব্র হয়েছে, এমনকি নতুন ধরনের সহিংসতা তৈরি হয়েছে, যেমন নারীর সম্মতি ছাড়াই তার ছবি ছড়িয়ে দেওয়া, তার ব্যক্তিগত তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া, নারীর ডিপফেইক ভিডিও তৈরি করা।

হেন্ড্রিকস বলেন, ‘আমাদের এমন আইন বাস্তবায়নের প্রয়োজন যা অনলাইন এবং অফলাইন উভয় ক্ষেত্রেই নারী ও মেয়েদের জীবনে সহিংসতার ব্যাপারটি বিবেচনা করে এবং পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ার আগেই অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হয়।’


ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য পর্ষদে প্রথম  জয়ী বাংলাদেশ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য সংক্রান্ত আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের নির্বাচনে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো জয়লাভ করেছে। প্যারিসে সংস্থার সদর দপ্তরে ১৯৭২ সালের কনভেনশনের ২৫তম সাধারণ সভায় এই নির্বাচনে বাংলাদেশ সফল হয়।

এ বছর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য বাংলাদেশের কোন আসন বরাদ্দ না থাকায়, দেশটি উন্মুক্ত আসনে অংশগ্রহণ করে এবং কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০২৫-২৯ মেয়াদে আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করল। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে প্যারিসের বাংলাদেশ দূতাবাস।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতকে পেছনে ফেলে ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউনেস্কোতে স্থায়ী প্রতিনিধি খন্দকার এম তালহা ইউনেস্কো সাধারণ পরিষদের সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়। বিশ্ব ঐতিহ্য সংক্রান্ত আন্তরাষ্ট্রীয় পর্ষদের নির্বাচনে বাংলাদেশ জয়লাভের মাধ্যমে ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের জয়ধারা অব্যাহত থাকল।

রাষ্ট্রদূত তালহা ২০২১ সালের নভেম্বরে ইউনেস্কোর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত চার বছরে অদ্যাবধি বাংলাদেশ মোট ৮টি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং প্রতিটি নির্বাচনে জয়ী হয়।

নির্বাচনে জয়লাভের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রদূত তালহা বলেন, ‘ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের সাফল্য কোনও একক ঘটনা নয়। এটি ইউনেস্কোতে আমাদের কূটনৈতিক সক্ষমতার প্রতি অন্য সব দেশের আস্থার প্রতিফলন এবং বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন। এটি সম্ভব হয়েছে আমাদের ধারাবাহিক কূটনৈতিক প্রয়াস এবং একনিষ্ঠ প্রচারণার মাধ্যমে।’

এ সময় রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে এই নির্বাচনী কাজে সহায়তা করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বিশেষভাবে পররাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ অনুবিভাগ এবং বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিসের সব সহকর্মীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। বাংলাদেশ বিশ্ব ঐতিহ্য সংক্রান্ত ১৯৭২ কনভেনশনের সদস্য পদ গ্রহণের পর থেকে এই কনভেনশনের আওতায় মোট তিনটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং একটি প্রাকৃতিক ঐতিহ্যকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে নিবন্ধন গ্রহণে সক্ষম হয়। সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য নিবন্ধনের পর থেকে এই কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত ছিল। তবে এই নির্বাচনের ফলে বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বের অন্যান্য দেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত হলো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট অনেকে। ইউনেস্কোতে বিভিন্ন কমিটির নির্বাচনের মধ্যে বিশ্ব ঐতিহ্য সংক্রান্ত আন্তরাষ্ট্রীয় পর্ষদের নির্বাচনকে সর্বাপেক্ষা কঠিন নির্বাচন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আগামী বছরের জুন মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে এই আন্তরাষ্ট্রীয় পর্ষদের ৪৮তম সভায় যোগদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই পর্ষদে তার কার্যক্রম শুরু করবে।


মুসলিম ব্রাদারহুডকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা দিতে প্রক্রিয়া শুরু ট্রাম্পের

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

মুসলিম ব্রাদারহুডের নির্দিষ্ট শাখাগুলোকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন এবং বিশেষভাবে বৈশ্বিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিতে প্রক্রিয়া শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এই পদক্ষেপের ফলে আরব বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে পুরোনো ও সবচেয়ে প্রভাবশালী ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে ওয়াশিংটন।

হোয়াইট হাউসের ফ্যাক্ট শিটের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ট্রাম্প গত সোমবার একটি নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করেছেন যেটিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও অর্থমন্ত্রী স্কট বেস্যান্টকে মিসর, লেবানন ও জর্ডানে মুসলিম ব্রাদারহুডের শাখাগুলোর কোনোটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন মনোনীত করা হবে কি না, সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ওই আদেশে এই মন্ত্রীদের প্রতিবেদন দেওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন বা বৈশ্বিক সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ওই দেশগুলোতে মুসলিম ব্রাদারহুডের শাখাগুলো ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারদের বিরুদ্ধে সহিংস হামলায় সমর্থন জোগাচ্ছে বা উৎসাহিত করছে অথবা ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে উপদান দিয়ে সমর্থন জোগাচ্ছে বলে অভিযোগ ট্রাম্প প্রশাসনের।

হোয়াইট হাউসের ওই ফ্যাক্ট শিটে বলা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মুসলিম ব্রাদারহুডের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন, যেটি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও মিত্রদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রচারণায় ইন্ধন জোগায়।’

যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকানরা এবং ডানপন্থি রাজনৈতিক মতাদর্শের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে আসছে ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করছে।

রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও তার প্রথম মেয়াদে একই প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে রুবিও জানিয়েছিলেন, মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিতে ট্রাম্প প্রশাসন কাজ করছে।

টেক্সাসের গভর্নর রিপাবলিকান গ্রেগ অ্যাবোট গত সপ্তাহে অঙ্গরাজ্য স্তরে মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

সেক্যুলার ও জাতীয়তাবাদী ধ্যানধারণার বিরুদ্ধে একটি ইসলামিক আন্দোলন হিসেবে ১৯২০-এর দশকে মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুড প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে এটি দ্রুতগতিতে মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীতে পরিণত হয়; কিন্তু সংগঠনটি প্রায়ই গোপনে কাজ করে।

জর্ডানে সংগঠনটির ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। যদিও ২০২০ সালে দেশটির শীর্ষ আদালত মুসলিম ব্রাদারহুডকে ভেঙে দেওয়ার রায় দেয়; কিন্তু অতীতে কর্তৃপক্ষ বহু সময়েই তাদের কার্যক্রমের প্রতি চোখ বন্ধ রেখেছে।

মিসরে ২০১৩ সাল থেকে মুসলিম ব্রাদারহুড নিষিদ্ধ। সে বছর সংগঠনটির নেতা ও নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। এরপর থেকেই সিসি দেশ পরিচালনা করছেন ও এই সময়টাতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।

জাতিসংঘে ইসরায়েলের দূত ডেনি ড্যানন ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। গত সোমবার এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি লেখেন, এটি শুধু ইসরায়েলের জন্য নয়, বরং আরব বিশ্বের প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।


মামদানির টিমে ফরহাদ মজহারের মেয়েসহ ১০ বাংলাদেশি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রম এবার স্বার্থক হয়েছে। নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির সদ্যঘোষিত ট্রানজিশন টিমে একসঙ্গে ১০ জন বাংলাদেশি অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

তাদের মধ্যে বাংলাদেশি কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহারের কন্যা সমতলী হকও রয়েছেন। সমতলী সিটি ইউনিভিারসিটি অব নিউইয়র্কে অধ্যাপনা করেন। তিনি একজন মানবাধিকারকর্মী।

অধ্যাপনা শুরুর আগে লেবার অ্যাটর্নি হিসেবে কাজ করেছেন। মামদানির মেয়র প্রার্থিতা ঘোষণার পর থেকেই তিনি নির্বাচনি প্রচারণায় ছিলেন। মামদানির সঙ্গে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

টিমে স্থান পাওয়া অপর বাংলাদেশিরা হলেন—নাগরিক আন্দোলনের নেত্রী কাজী ফৌজিয়া, জনসংগঠক আব্দুল আজিজ ভূঁইয়া, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা শামসুল হক, শ্রম অধিকার সংগঠক মোহাম্মদ করিম চৌধুরী, অভিবাসন অধিকারকর্মী ফারিহাহ আখতার, ক্ষুদ্র ব্যবসা খাতের সংগঠক ও মুসলিম কমিউনিটির নেতা আরমান চৌধুরী, সামাজিক সংগঠন ভালো ও ম্যাসভোটের সংগঠক শাহরিয়ার রহমান, শিক্ষা-যুব খাতে পরিচিত সংগঠক তাজিন আজাদ, আইন ও ন্যায়বিষয়ক ক্ষেত্রের প্রতিনিধি এবং স্ট্যাটেন আইল্যান্ড ইসলামিক সেন্টারের প্রতিনিধিত্বকারী কমিউনিটি সংগঠক ইমরান পাশা।

চার শতাধিক বিশেষজ্ঞ, কর্মী ও কমিউনিটি নেতার সমন্বয়ে এ বৃহৎ ট্রানজিশন টিম গঠিত হয়েছে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও দীর্ঘদিনের কাজের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ১৭টি কমিটির বিভিন্ন দায়িত্বে মনোনীত হয়েছেন।

৪০০ জনের দীর্ঘ তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এবারের ট্রানজিশন টিমে ১১ জন পাকিস্তানি এবং ১৬ জন ভারতীয়সহ দক্ষিণ এশিয়ার নানা কমিউনিটির প্রতিনিধিত্ব থাকলেও, বাংলাদেশিদের এত বড় সম্মিলিত উপস্থিতি এবারই প্রথম, যা প্রবাসী কমিউনিটির অবস্থানকে আরো শক্তিশালীভাবে তুলে ধরেছে।


রাখাইনে জান্তা–আরাকান আর্মির মধ্যে তীব্র লড়াই, জনশূন্য ২০টি গ্রাম

রাখাইনে আরাকান আর্মি। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের কিয়াউকফিউ ঘিরে তীব্র সংঘর্ষে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে সামরিক জান্তা বাহিনী। সংঘর্ষের কেন্দ্র মিন পিয়িন গ্রাম। আরাকান আর্মির পরিকল্পিত হামলা ও কৌশলগত ফাঁদে পড়ে গুরুতর হতাহতের শিকার হয়েছে মিয়ানমার সেনারা। এর পাশাপাশি প্রায় ২০টি গ্রাম জনশূন্য হয়ে গেছে। নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছে আরও প্রায় দশ হাজার মানুষ।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াইয়ে বিভিন্ন এলাকায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে জান্তা বাহিনী। ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজ্যে জান্তার বেশ কয়েকটি ঘাঁটি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বিদ্রোহী প্রতিরোধ যোদ্ধারা। অন্যদিকে বিদ্রোহীদের দখলে থাকা অঞ্চল পুনঃদখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে মিয়ানমার জান্তা।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের কিয়াউকফিউ শহরে জান্তা সেনা ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান লড়াই ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
সম্প্রতি মিন পিয়িন থানার সামনে অবস্থান নেওয়া জান্তা সেনাদের ওপর ড্রোন হামলা চালায় আরাকান আর্মি। এতে অন্তত ১০ জন জান্তা সেনা ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে।
এই হামলার পর ১৮ নভেম্বর মিন পিয়িন, ওয়া নাচুইন, লাকেটিনসহ আশপাশের গ্রামে বোমাবর্ষণ চালায় জান্তা বাহিনী। ফলে কয়েক হাজার মানুষ পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
সম্প্রতি জান্তা সেনারা মিন পিয়িনের কাছে আরাকান আর্মির একটি গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়ি শিবির দখল করে নেয় এবং কাছাকাছি অন্য শিবিরগুলোর দিকে অগ্রসর হয়। তবে আরাকান আর্মির ব্যাপক পালটা হামলায় জান্তা সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। কিয়াউকফিউ এবং সুরক্ষিত নৌ সদর দপ্তরের দিকে যাওয়া মূল সড়কের পাশে থাকা জান্তা ঘাঁটিগুলোতেও আঘাত হানে আরাকান আর্মি।
বর্তমানে আরাকান আর্মি প্রায় ১৫টি শহর নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এবং কিয়াউকফিউ ও রাখাইন-মেইনল্যান্ড সীমান্ত এলাকায় জান্তা বাহিনীর সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষ চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে স্থানীয়দের দাবি, এলাকা পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে সামরিক বাহিনী। চীন-সমর্থিত বিনিয়োগ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত শহরে জান্তা সরকার নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই দুই পক্ষের এ সহিংসতা শুরু হয়।
স্থানীয় ত্রাণকর্মীরা জানান, কিয়াউকফিউতে তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে স্থানীয়রা আতঙ্কে দিন পার করছে। স্কুল ও গ্রাম লক্ষ্য করে নৌবাহিনী হামলা চালাচ্ছে। প্রায় ২০টি গ্রাম জনশূন্য হয়ে গেছে; নতুন করে প্রায় দশ হাজার মানুষ নিজ বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে।


শান্তি পরিকল্পনার সংশোধনীকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলেনস্কি

ভলোদিমির জেলেনস্কি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের অবসান করতে যুক্তরাষ্ট্র যে বিতর্কিত ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা দিয়েছে, তাতে যুক্ত করা নতুন পরিবর্তনসমূহকে স্বাগত জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেনের ইউরোপীয়ান মিত্ররা রাশিয়ার যুদ্ধের পক্ষে থাকা অংশগুলোকে প্রত্যাখ্যান করার পরে শান্তি পরিকল্পনার একটি সংশোধিত সংস্করণ করা হয়েছে।

টেলিগ্রামে জেলেনস্কি বলেন, এখন যুদ্ধ শেষ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের তালিকা তৈরি করা সম্ভব হতে পারে। অনেক সঠিক উপাদান এখন এ কাঠামোতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে, কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেন, রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় রাজধানীর একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বিদ্যুৎ এবং পানি সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে।

ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ও দেশটির জ্বালানি অবকাঠামোগুলোতে ব্যাপক ও সম্মিলিত হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনুকূলে এলেই জ্বালানি কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ এবং পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু করবেন।

গত রোববার জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের কর্মকর্তারা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক করেন যেটি কিয়েভ এবং তাদের ইউরোপীয়ান মিত্রদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে রাশিয়ার কোনে প্রতিনিধি অংশ নেননি। এর আগে অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার কর্মকর্তারা এ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন।

গত সোমবার ক্রেমলিনের এক কর্মকর্তা শান্তি পরিকল্পনায় প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলোকে ‘সম্পূর্ণ অগঠনমূলক’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

অন্যদিকে হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট জোরালো দাবি করেছেন যে, যুদ্ধ অবসানের প্রচেষ্টায় ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে না।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা এই যুদ্ধে কোন পক্ষের সঙ্গে সমানভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছে না- এমন ধারণা সম্পূর্ণ এবং পুরোপুরি ভুল।

লিভিট আরও বলেন, এই যুদ্ধ অবসানে কাজ করতে পারে এমন একটি পরিকল্পনা তৈরির বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘আশাবাদী’ ছিলেন।

জেনেভায় আলোচনা শেষ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, ভালে কিছু ঘটতে পারে, কিন্তু তিনি এটাও বলেছেন যে, যতক্ষণ না আপনি তা নিজে দেখতে পান, ততক্ষণ কিছু বিশ্বাস করবেন না।

ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২৮ দফার শান্তি পরিকল্পনা ক্রেমলিনের পরামর্শে বা সম্পূর্ণ তাদেরই মনমতো বানানো হয়েছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করার মধ্য দিয়েই জেনেভার আলোচনা শুরু হয়।

কারণ এর বেশ কয়েকটি উপাদান মস্কোর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বলে মনে করা হয়েছিল। স্থানীয় সময় গত সোমবার সন্ধ্যায় জেলেনস্কি বলেন, সংশোধিত পরিকল্পনাটি ছিল সত্যিই সঠিক অ্যাপ্রোচ বা উপায়।

তিনি আরও বলেন, সংবেদনশীল বিষয়গুলো সবচেয়ে নাজুক বিষয়গুলো নিয়ে আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করব। তবে কবে বা কখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন তা তিনি উল্লেখ করেননি।

জেলেনস্কির কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার ফাঁস হওয়া ২৮ দফা পরিকল্পনাটি আর বিদ্যমান নেই। সপ্তাহের শেষে জেনেভায় অংশ নেওয়া ইউক্রেনের ফার্স্ট ডেপুটি ফরেন মিনিস্টার সের্গেই কিসলিৎসা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছেন, সর্বশেষ পরিকল্পনায় মাত্র ১৯টি দফা রয়েছে।

রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে সংবেদনশীল কিছু বিষয় যার মধ্যে আঞ্চলিক বা ভূখণ্ডগত ছাড়ের বিষয়টি রয়েছে। সেটি আলোচনার টেবিলে সমাধান না করে, শীর্ষ নেতারা নিজেরাই সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন সেজন্য রেখে দেওয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার ঘোষণা দিয়েছেন, উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করার জন্য মঙ্গলবার ইউক্রেনের ইউরোপীয়ান মিত্রদের একটি ভার্চুয়াল ‘কোয়ালিশন অব দ্যা উইলিং বা ইচ্ছুকদের জোট’ এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনে একটি ‘ন্যায়সঙ্গত এবং স্থায়ী শান্তির’ জন্য এখনো কিছু কাজ বাকি আছে। এদিকে মস্কোতে ক্রেমলিনের ফরেন পলিসি এইড বা পররাষ্ট্র নীতির সহকারী ইউরি ইউশাকোভ সাংবাদিকদের বলেন, প্রথম দেখায় এ ইউরোপীয়ান পরিকল্পনা সম্পূর্ণভাবে গঠনমূলক নয় এবং এটি আমাদের জন্য উপকারী নয়।


নিরাপত্তা শঙ্কায় ভারত সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

দিল্লিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে চলতি বছরের শেষ দিকের ভারত সফর বাতিল করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। চলতি বছরে তৃতীয়বারের মতো ভারত সফরের পরিকল্পনা বাতিল করলেন ইসরায়েলের এই নেতা।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম আই২৪নিউজ সূত্র উদ্ধৃত করে জানায়, ২০১৮ সালে সর্বশেষ ভারত সফর করা নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠকের জন্য ফের ভারত যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে নিরাপত্তা মূল্যায়ন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তিনি আগামী বছরে সফরের নতুন তারিখ খুঁজবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

এর আগে জানা গিয়েছিল, চলতি বছর শেষ হওয়ার আগে নেতানিয়াহুর ভারত সফরের পরিকল্পনা রয়েছে।

এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর মাত্র এক দিনের সফরের পরিকল্পনা বাতিল করেন তিনি। এরও আগে এপ্রিলের নির্বাচনের আগে একইভাবে সফর স্থগিত করেছিলেন তিনি।

ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর এ সফরকে তার বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। গত জুলাইয়ে তার রাজনৈতিক দল নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে এমন সব ব্যানার টাঙিয়েছিল, যেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমনকি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নেতানিয়াহুর ছবি ব্যবহার করা হয়।

তার নির্বাচনী প্রচারে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা ও ইসরায়েলের নিরাপত্তায় তার ভূমিকা, এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

নেতানিয়াহু সর্বশেষ ভারত সফর করেছিলেন ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। এর আগে ২০১৭ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তেল আবিব সফর করেন, যা ছিল কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ইসরায়েল সফর। দুই নেতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে ভারতীয় ও ইসরায়েলি গণমাধ্যমে আগে থেকেই ব্যাপক আলোচনা হয়।


গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় নিহত ১ লাখ ফিলিস্তিনি

যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় টানা দুই বছর ধরে ভয়াবহ আগ্রাসন ও গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল। বর্বর এই আগ্রাসনে নিহত হয়েছেন ১ লাখেরও বেশি মানুষ। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই তথ্য।

মূলত জার্মান এই গবেষণায় সরকারি পরিসংখ্যানের বাইরে উঠে এসেছে বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির চিত্র।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, গাজায় চলমান যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা এতদিন যা ধারণা করা হচ্ছিল, বাস্তবে তা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে গত সোমবার জার্মানির সাপ্তাহিক পত্রিকা জাইট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

জার্মানির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরনগরী রস্টকের খ্যাতনামা ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ডেমোগ্রাফিক রিসার্চের একদল গবেষকের হিসাব অনুযায়ী, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধে অন্তত এক লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে বা নিহত হয়েছে।

গবেষণা প্রকল্পটির কো-লিডার ইরিনা চেন জানান, ‘সঠিক মৃতের সংখ্যা আমরা কখনোই জানতে পারব না। আমরা শুধু যতটা সম্ভব বাস্তবসম্মত একটি অনুমান করতে চেষ্টা করছি।

গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধের প্রথম দুই বছরে গাজা উপত্যকায় ৯৯ হাজার ৯৯৭ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার ৯১৫ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে বা তারা নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যবর্তী বা গড় অনুমান ১ লাখ ১২ হাজার ৬৯ জন।

ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের গবেষকরা বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পরিসংখ্যানগত এই চিত্র তৈরি করেছেন। গাজাভিত্তিক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যের পাশাপাশি তারা একটি স্বাধীন পরিবারভিত্তিক সমীক্ষা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত মৃত্যুসংবাদও এই বিশ্লেষণে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

এতদিন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যার একমাত্র সরকারি উৎস ছিল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যুদ্ধের প্রথম দুই বছরে তারা ৬৭ হাজার ১৭৩ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে। তবে জাইট–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই তথ্য নিয়ে কোনো ধরনের পরিসংখ্যানগত কারসাজির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

উল্টো বিভিন্ন গবেষণা দল আগেই দেখিয়েছে যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সাধারণত রক্ষণশীলভাবে হিসাব করে থাকে। এখন ভালোভাবেই নথিভুক্ত হয়েছে যে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলাকালে সরকারি সংখ্যার চেয়ে বাস্তবে আরও বেশি মানুষ মারা গেছেন।

বিভিন্ন গবেষণাতেই অপ্রকাশিত মৃত্যুর সংখ্যা যে বেশি, তা বারবার উঠে এসেছে। এছাড়া গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেবল নিশ্চিত মৃত্যুর তথ্যগুলোই গণনা করে— যেমন হাসপাতাল থেকে ইস্যুকৃত মৃত্যু সনদের ভিত্তিতে।

যুদ্ধের কারণে অনেক হাসপাতালে স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন তারা স্বজনদের দেওয়া মৃত্যুসংবাদও গ্রহণ করে, পরে একটি প্যানেল সেগুলো যাচাই করে। বোমায় বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে যারা মারা যান, তাদের অনেকেই এসব রেকর্ডে ধরা পড়ে না।

ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের এই গকেষণা দলটি আগের গবেষণার ভিত্তিতে আরও বিস্তারিত মৃত্যুহার বিশ্লেষণ করেছে। তারা পুরুষ ও নারীদের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সভিত্তিক হিসাব আলাদাভাবে পরীক্ষা করেছে।

এ পদ্ধতিতে শুধু মোট মৃত্যুর সংখ্যা আরও নির্ভুলভাবে জানা যায় না, বরং কারা মারা গেছে— তা নিয়েও বিস্তারিত চিত্র পাওয়া যায়। লিঙ্গ ও বয়সভেদে মৃত্যুর রেকর্ডের তথ্য পরিবর্তিত হয়।

নারীদের মৃত্যু অনেক সময় পুরুষদের তুলনায় কম নথিবদ্ধ হয়। ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের মৃত্যু প্রায়ই সরকারি হিসাব থেকে বাদ পড়ে যায়। গবেষকদের হিসাবে, মৃতদের প্রায় ২৭ শতাংশই ১৫ বছরের কম বয়সি শিশু এবং প্রায় ২৪ শতাংশ নারী।

এছাড়া গবেষকরা যুদ্ধের কারণে গাজার জীবনযাত্রার ওপর প্রভাবও হিসাব করেছেন। যুদ্ধের আগে গাজায় নারীদের গড় আয়ু ছিল ৭৭ বছর, পুরুষদের ৭৪ বছর।

২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী নারীদের জন্য এই সংখ্যা নেমে এসেছে ৪৬ বছরে এবং পুরুষদের জন্য ৩৬ বছরে। এটি আপাতত একটি পরিসংখ্যানগত মান।

এর অর্থ হলো— যদি সাম্প্রতিক বছরের মতো একই মাত্রায় যুদ্ধ চলতে থাকে, তাহলে ফিলিস্তিনিরা গড়ে এই বয়স পর্যন্ত বাঁচতে পারবেন। আর এসব পরিসংখ্যানই দেখাচ্ছে, গাজার সাধারণ মানুষের জীবনের ঝুঁকি কতটা ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে।

গাজার ৯০ শতাংশ মানুষ খাদ্য সংকটে

ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গাজার অনেকেই প্রতি ২৪ ঘণ্টায় মাত্র একবার খাবার পান। ১০ অক্টোবর যখন গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়, তখন অনেক ফিলিস্তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। তারা দুই বছর ধরে টানা বোমাবর্ষণ সহ্য করেছেন, যা ১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরক শক্তির প্রায় ছয় গুণের সমান ছিল। অথচ গাজার আয়তন হিরোশিমা শহরের অর্ধেকেরও কম। ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গাজার ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ এখনো খাদ্য সংকটে রয়েছে। অনেকেই প্রতি ২৪ ঘণ্টায় মাত্র একবার খাবার পান।

গাজায় বিধ্বংসী কার্যক্রম চলেছে সর্বত্র। সব হাসপাতাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বোমাবর্ষণ হয়েছে। বেশির ভাগ বাড়িঘর এবং স্কুল ধ্বংস হয়ে গেছে। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং বিদ্যুতের লাইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আনুমানিক পাঁচ কোটি টন ধ্বংসস্তূপ পুরো উপত্যকাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে অন্তত ১০ হাজার ফিলিস্তিনির মৃতদেহ রয়েছে। যেগুলো এখনও উদ্ধার করা যায়নি।

তবুও গাজার জনগণ যে স্বস্তি আশা করেছিল, তা অবশেষে পায়নি। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরই ইসরায়েলি সরকার আবারও বোমাবর্ষণ শুরু করে। তারপর থেকে সেই হামলা আর থামেনি।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির ৪৪ দিনে ইসরায়েল প্রায় ৫০০ বার তা লঙ্ঘন করেছে। যার ফলে ৩৪২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ দিন ছিল গত ২৯ অক্টোবর। দখলদার বাহিনী সেদিন ১০৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে, যাদের মধ্যে ৫২ শিশুও ছিল। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার গাজা শহরের জেইতুন পাড়ায় ভবনে বোমা ফেলা হয়। এতে ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হন। তাদের মধ্যে একটি পুরো পরিবারও ছিল।


ইসরাইলের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি, ১৭ জনের মৃত্যুদণ্ড হুথিদের

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইসরাইল ও তার পশ্চিমা মিত্রদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ১৭ জনকে ফায়ারিং স্কোয়াড বা প্রকাশ্যে গুলি করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে ইয়েমেনের হুথি নিয়ন্ত্রিত আদালত।

হুথি নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রাজধানী সানার বিশেষায়িত ফৌজদারি আদালত শনিবার সকালে এই সাজা ঘোষণা করেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ‘আমেরিকান, ইসরাইলি ও সৌদি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত একটি গুপ্তচর নেটওয়ার্কের মধ্যে গুপ্তচরবৃত্তির’ অভিযোগ আনা হয়েছে। এই রায়ে হুথি বিচারকদের সঙ্গে কাজ করেছেন ইয়েমেনের কৌঁসুলিরা।

সাবা এবং অন্যান্য সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ১৭ জনকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে জনসম্মুখে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত, যাতে এটি অন্যদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করে। দণ্ডপ্রাপ্তদের নামের একটি তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।

একই মামলায় একজন মহিলা এবং একজন পুরুষকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর অন্য একজনকে সব অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এই মামলায় মোট ২০ জন বিচারাধীন ছিলেন।

হুথি পরিচালিত সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আসামিদের বিরুদ্ধে ২০২৪ এবং ২০২৫ সালে ইয়েমেনবিরোধী বিদেশি রাষ্ট্রের জন্য গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনেন রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলিরা, যার মধ্যে ব্রিটেনও ছিল।

অভিযোগ পত্রে বলা হয়, অভিযুক্ত ইয়েমেনি নাগরিকদের সঙ্গে ইসরাইলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ যোগাযোগ করত, যাদের দিয়ে বেশ কয়েকটি সামরিক, নিরাপত্তা এবং বেসামরিক স্থান লক্ষ্যবস্তু করেছিল ইসরাইল। ফলে বেশ কয়েকজন নিহত হন এবং ব্যাপক অবকাঠামো ধ্বংস হয়।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলের গণহত্যামূলক হামলার পর হুথি যোদ্ধারা লোহিত সাগরের নৌপথে আন্তর্জাতিক জাহাজ ও ইসরাইলকে লক্ষ্য করে হামলা চালাতে শুরু করে। এর জবাবে ইয়েমেনে পাল্টা হামলা চালায় আমেরিকা ও ব্রিটেন। তবে গত মাসের গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর হুথিরা হামলা বন্ধ করেছে।


banner close