মার্কিন সাহায্য বন্ধের পর জীবন রক্ষাকারী ক্লিনিকগুলোয় সেবা নিতে পৌঁছাতে না পারায় দক্ষিণ সুদানের শিশুরা কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। বুধবার একটি আন্তর্জাতিক এনজিও সতর্ক করে একথা বলেছে।
নাইরোবি থেকে এএফপি জানায়, ২০১১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে অত্যন্ত দরিদ্র দেশটি নিরাপত্তার সাথে লড়াই করছে। সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ফলে পাঁচ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটানো শান্তি চুক্তি হুমকির মুখে পড়েছে।
দেশটিতে কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে প্রায় ৪০ হাজার কলেরা আক্রান্তের খবর জানা গেছে। ইউনিসেফ জানিয়েছে, এটিকে দেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ প্রাদুর্ভাব হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ বুধবার জানিয়েছে, দক্ষিণ সুদানের কমপক্ষে পাঁচ তরুণের মৃত্যুর রেকর্ড করেছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় জোংলেই রাজ্যে জীবন রক্ষাকারী সেবা পেতে তারা ঘন্টার পর ঘন্টা হেঁটে যান।
দাতব্য সংস্থাটি পূর্ব আকোবো কাউন্টির ২৭টি ক্লিনিককে সহায়তা করে, কিন্তু এটি জানিয়েছে, ইউএসএআইডি-এর কাটছাঁটের কারণে সাতটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২০টি আংশিক খোলা রয়েছে।
এটি আরো জানায়, দেশব্যাপী প্রায় ৬শ’টি ক্লিনিকের প্রায় ২শ’ কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে।
ইউএসএআইডি-এর বার্ষিক বাজেট যার প্রায় ৪৩ বিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বের মানবিক সাহায্যের প্রায় ৪০ শতাংশ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই বাজেটের কাটছাঁট করায় বিশ্বজুড়ে এর ওপর প্রভাব পড়েছে।
২৪ বছর বয়সী পুরোনো কলেরা রোগী সারাহ বলেন, ‘আমরা আগে খুশি ছিলাম। অনেক ডাক্তার ও পর্যাপ্ত ওষুধ ছিল। তাই আমরা খুব বেশি কষ্ট পাইনি। কিন্তু এখন আমরা কষ্ট পাচ্ছি।’
স্বেচ্ছাসেবক স্বাস্থ্যকর্মী মাইকেল বলেছেন, সাহায্য কাটছাঁটের পর থেকে রোগীরা ওষুধের অভাবের সাথে লড়াই করছে।
‘আমরা রোগীদের কষ্ট দেখতে পাচ্ছি কিন্তু তাদের সাহায্য করতে পারছি না।’
‘এখন একটি গুরুতর কলেরা প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা শুধুমাত্র রোগীদের খাবার স্যালাইন সরবরাহ করতে পারছেন।’
এরআগে ইউনিসেফ জানায়, সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৭শ’ জন কলেরায় মারা গেছে। যার অর্ধেকই ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, দক্ষিণ সুদানের ১০টি রাজ্যের মধ্যে ৯টি রাজ্য আক্রান্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় জোংলেই রাজ্য।
দক্ষিণ সুদানের সেভ দ্য চিল্ড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ক্রিস নিয়ামান্ডি এএফপি’কে বলেন, এই অঞ্চলের পরিস্থিতি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।
তিনি জোংলেইয়ের আকোবোর পূর্বাঞ্চলে একটি ভ্রমণের বর্ণনা দেন, যেখানে উপচে পড়া তাঁবুতে পর্যাপ্ত জায়গা না রাখায় অসুস্থ শিশুদের বাইরে গাছের নীচে শুয়ে রাখা হয়।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘অন্যান্য দেশের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের নেওয়া সিদ্ধান্তের ফলে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই নিয়ে বিশ্বব্যাপী নৈতিক ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়া উচিত।’
তিনি ‘দক্ষিণ সুদানে মানবিক বিপর্যয়ের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটি এমন একটি দেশ যেখানে পাঁচজনের মধ্যে চারজনের বেঁচে থাকার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন।’ নিয়ামান্ডি প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে উত্তেজনা আর না বাড়ার এবং যাতে করে চিকিৎসা ব্যবস্থা আর জটিল না হয় তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
দেশের কিছু অংশে সম্প্রতি নতুন করে সহিংসতা দেখা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট সালভা কি ও তার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক মাচার উভয়ের মিত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোরে একটি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী। এছাড়াও দেশটিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্ষেপনাস্ত্র হামলার পর থেকে পাঁচটি যুদ্ধবিমানও ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) ভোরে ভারত সীমান্ত থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার (১৬ মাইল) দূরে অবস্থিত লাহোরের ওয়ালটন বিমানবন্দরে ড্রোনটি ভূপাতিত করার কথা জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।
স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঞ্জাবের অন্যান্য শহরে আরও দুটি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পাকিস্তানের বিমানবাহিনী গুলি করে একটি ছোট ভারতীয় ড্রোন নামিয়েছে।
তবে ড্রোনটি সশস্ত্র ছিল কি না, সেটি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে এই ঘটনার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে এপি। ভারত থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
পাঞ্জাবের চকওয়াল জেলার পুলিশ প্রধান গুলাম মুহিউদ্দিন জানান, ওই এলাকার কৃষিজমিতে একটি ড্রোন আছড়ে পড়ে। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
তবে ড্রোনটির ভারতের কিনা এ বিষয়ে কিছু জানায়নি তিনি। গুলাম মুহিউদ্দিন বলেন, কর্তৃপক্ষ একটি ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ জব্দ করেছে এবং ড্রোনটির উৎস ও উদ্দেশ্য নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলা নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত।
এ ঘটনাকে ‘যুদ্ধের শামিল’ ও ‘আগ্রাসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে পাকিস্তান। দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ বলেন, ‘পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাঞ্জাব প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হেনেছে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র।’ তবে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, ‘ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা হচ্ছে, এমন অন্তত ৯টি স্থানে আঘাত হানা হয়েছে।’
আহমেদ শরিফ বলেন, ‘ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলায় পাকিস্তানে অন্তত ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে ২৬ জন ক্ষেপণাস্ত্রে, আর পাঁচজন গোলার আঘাতে নিহত হন।’
এদিকে, এবার এ হামলার জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে পাকিস্তান। এ হামলায় নিহতদের প্রতিশোধ নেবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তবে কোথায় ও কীভাবে হামলা চালানো হবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি তিনি।
এছাড়া অধিকৃত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর ভারতীয় সেনাদের ওপর পাল্টা হামলার কথা জানিয়েছে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতিতে কাশ্মীর সীমান্তের কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাতভর হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রাত কাটিয়েছেন।
এদিকে চলমান উত্তেজনার মধ্যে কাশ্মীর সীমান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে ভারত। ইউরি ও পুঞ্চের মতো সীমান্ত শহরের কিছু মানুষ স্বেচ্ছায়ই নিজেদের ঘর ছেড়ে চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
ভারতীয় সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, বিতর্কিত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্যরা রাতভর ছোট অস্ত্র ও কামানের গোলা বিনিময় করেছে। শ্রীনগর থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে।
বুধবার ভারত তার প্রতিবেশীর উপর মারাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এর আগে কয়েকদিন ধরে সীমান্ত সংঘর্ষ শেষে পরিস্থিতি এই কামান হামলায় রূপ নেয়।
ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বুধবারের হামলায় পাকিস্তানে ৯টি ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ ধ্বংস করা হয়েছে। এর দুই সপ্তাহ আগে, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করেছিল নয়াদিল্লি। পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ।
বুধবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, ইসলামাবাদ ‘ভারতের হত্যাকাণ্ডের বদলা নেবে।’
বুধবারের সংঘর্ষে দুই পক্ষ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৩ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ইসলামাবাদ জানিয়েছে, ভারতের হামলা ও সীমান্তে গুলিতে ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। নয়াদিল্লি জানিয়েছে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে।
সীমান্তে সর্বশেষ সংঘর্ষের বিষয়ে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে তৎক্ষণাত কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ভারতীয় সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘রাতের বেলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পোস্টগুলো কাপওয়ারা, বারামুল্লা, উরি এবং জম্মু ও কাশ্মীরের আখনূরের বিপরীতে এলাকা থেকে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ছোট অস্ত্র এবং কামান ব্যবহার করে বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়েছে।’ ‘আমরাও পাল্টা জবাব দিয়েছি’।
বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এবং কূটনীতিকরা দুই দেশকে সংঘর্ষ থেকে পিছু হটতে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। আমিও চাই তারা থেমে যাক।’
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি (আজ) বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামণ্যম জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করবেন, এর আগে তিনি পাকিস্তান সফর করেছেন। তেহরান দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে চাইছে।
ভারত ও পাকিস্তান ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের রক্তক্ষয়ী বিভাজনের পর থেকে একাধিকবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে, যখন উপনিবেশিক কর্মকর্তারা সোজা লাইন টেনে মানচিত্রে বিভক্তির সীমারেখা এঁকেছিলেন, যা অনেক সম্প্রদায়কে বিভক্ত করে দেয়।
মুসলিম-প্রধান কাশ্মীর দীর্ঘদিন ধরে সংঘর্ষের মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। উভয় দেশই কাশ্মীরকে তাদের নিজের দাবি বলে মনে করে আসছে।
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলাকে কেন্দ্র করে টানা কয়েক দিনের তীব্র উত্তেজনার পর মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তান-অধিকৃত আজাদ কাশ্মীরের ৯টি স্থানে একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। পাকিস্তান বলছে, হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত ও ৪০ জনের বেশি আহত হয়েছে। আর ভারতের দাবি, তাদের হামলায় কমপক্ষে ৭০ জন নিহত হয়েছে। দিল্লির দাবি, নিহতদের সবাই সন্ত্রাসী। ভারত এ অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’।
অন্যদিকে ভারতের হামলার জবাবে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাল্টা হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলোয় পাকিস্তানি বাহিনীর গোলার আঘাতে নিহত বেসামরিক ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা বেড়ে ১৫ জন হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে।
এর মধ্যে তিনটি ফ্রান্সের তৈরি রাফাল, একটি রাশিয়ার তৈরি সু-৩০ ও অন্যটি মিগ-২৯। সু-৩০ ও মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান সোভিয়েত আমলে তৈরি। ভারতের চার সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স আরও জানিয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীরে বুধবার তিনটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে পাকিস্তানের দাবির বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে কিছু নিশ্চিত করা হয়নি। এনিয়ে আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্যও দেয়নি নয়াদিল্লি।
এদিকে পাল্টাপাল্টি হামলা প্রতিবেশী দেশকে সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ভারতের হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জরুরি নিরাপত্তা বৈঠকে বসেছেন। হামলার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, প্রতিশোধ নেয়ার সবঅধিকার পাকিস্তানের রয়েছে। এক্সে দেয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, পাকিস্তানের পাঁচটি জায়গায় কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়েছে শত্রুরা।
তিনি ভারতের এই হামলাকে ‘অ্যাক্ট অফ ওয়ার’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। শাহবাজ শরিফ তার পোস্টে লিখেছেন, ভারতের এই যুদ্ধের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার পূর্ণ অধিকার পাকিস্তানের রয়েছে এবং তাদের যোগ্য জবাবও দেয়া হচ্ছে। পাকিস্তানের পুরো জনগণ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছে এবং দেশের মনোবল একেবারে মজবুত রয়েছে। শাহবাজ বলেন, পাকিস্তান কখনোই ভারতকে নিজেদের ‘উদ্দেশ্যে সফল’ হতে দেবে না।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানিয়েছেন, সাতটি লক্ষ্যবস্তুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, হতাহতের সবশেষ সংখ্যা আমার কাছে নেই, তবে নিশ্চিত হওয়া সাতটি লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে দু’টি কাশ্মীরে এবং পাঁচটি পাকিস্তানে। সবকটি ক্ষেত্রে নিশানা ছিলো বেসামরিক নাগরিকেরা। লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে দু’টি মসজিদও ছিল। এক শিশু শহীদ হয়েছে এবং এক নারী শহীদ হয়েছেন।
হামলার পর পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ পাঞ্জাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। হাসপাতালসহ জরুরি সব ধরনেরসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মীদের নিজ নিজ দায়িত্বে ফেরত যেতে বলা হয়েছে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ শরিফ বুধবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
পাকিস্তানে হামলা নিয়ে ভারত যা বলছে:
গতকাল বুধবার দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানে হামলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেন, বুধবার রাত ১টা ৫ মিনিট থেকে দেড়টা পর্যন্ত পাকিস্তানি ভূখণ্ডে হামলা চালানো হয়েছে। ভারতের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী যৌথভাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের এই অভিযান পরিচালনা করেছে। ২৫ মিনিটে ৯টি লক্ষ্যবস্তুতে ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ভারতীয় বাহিনী।
সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ভায়োমিকা সিংহ উপস্থিত ছিলেন। মিশ্রি বলেছেন, জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলার জবাবে পাকিস্তানে হামলা করা হয়েছে। পেহেলগামের ওই হামলায় ২৫ ভারতীয় ও এক নেপালি নাগরিকের প্রাণহানি ঘটে।
হামলা নিয়ে পাকিস্তান যা বলেছে
এ ঘটনাকে ‘যুদ্ধের শামিল’ ও ‘আগ্রাসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে পাকিস্তান। দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ বলেন, ‘পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাঞ্জাব প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হেনেছে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র।’ তবে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, ‘ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা হচ্ছে, এমন অন্তত ৯টি স্থানে আঘাত হানা হয়েছে।’
আহমেদ শরিফ বলেন, ‘ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলায় পাকিস্তানে অন্তত ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে ২৬ জন ক্ষেপণাস্ত্রে, আর পাঁচজন গোলার আঘাতে নিহত হন।’
যেকোনো সময় হামলার জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর এই মুখপাত্র। তিনি বলেন, ‘কোথায় ও কীভাবে জবাব দেব, সেটা একান্তই আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’
হামলা পাল্টা হামলার মধ্যেও দুদেশের কোনো যুদ্ধবিমান একে অপরের সীমান্ত লঙ্ঘন করেনি বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তর। আইএসপিআরের মহাপরিচালক জেনারেল আহমেদ চৌধুরী দাবি করেছেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রেক্ষিতে সীমান্ত পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলেও ভারতের কোনো যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি এবং পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানও ভারতের আকাশসীমায় যায়নি। তিনি বলেন, পাকিস্তান তার সীমান্ত থেকেই ভারতে হামলার প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কোনো সময়ই ভারতের কোনো যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি এবং একইভাবে পাকিস্তানের কোনো যুদ্ধবিমানও ভারতের আকাশসীমায় যায়নি। জেনারেল আহমেদ আরও দাবি করেন, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সম্পূর্ণভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং একাধিক ভারতীয় চৌকি ধ্বংস করেছে। তিনি ভারতীয় একটি ইউনিট ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের ভিডিও ফুটেজ প্রদর্শন করেন, যেগুলো লক্ষ্য করে পাকিস্তানি বাহিনী হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করা হয়।
কাশ্মীর সীমান্তে উত্তেজনা চরমে, গোলাগুলি
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে হামলা-পাল্টা হামলার উত্তেজনা ছড়িয়েছে সীমান্তেও। পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি ও রয়টার্স জানিয়েছে, লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) বরাবর ভারত ও পাকিস্তান সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি ও মর্টার হামলা শুরু হয়েছে। এক বিবৃতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ভারতশাসিত কাশ্মীরে পাকিস্তানি সেনাদের গোলাবর্ষণে তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
ভারতের সাদা পতাকা তোলার দাবি পাকিস্তানের
সীমান্তে ভারতীয় সেনাবাহিনী ‘সাদা পতাকা’ উড়িয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। দেশটি বলছে, সীমান্তে সাদা পতাকা উত্তোলন করে ভারত পরাজয় স্বীকার করেছে। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়ে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এআরওয়াই নিউজ বলছে, ভারত নিয়ন্ত্রণ রেখায় সাদা পতাকা উত্তোলন করে কার্যকরভাবে পরাজয় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার।
পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এ নিয়ে প্রতিবেশি দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনাকে ‘যুদ্ধের শামিল’ ও ‘আগ্রাসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে পাকিস্তান। যেকোনো সময় হামলার জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ। তিনি বলেছেন, ‘কোথায় ও কীভাবে জবাব দেব, সেটি একান্তই আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’
অন্যদিকে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, ‘ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা হচ্ছে, এমন অন্তত ৯টি স্থানে আঘাত হানা হয়েছে।’
এমন বাস্তবতায় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতে ভারতের হামলার মধ্য দিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা এই পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষকেই সংযম প্রদর্শনের জন্য আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন।
পরিস্থিতির যাতে আরও অবনতি না হয়, সে লক্ষ্যে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ‘দায়িত্বপূর্ণ সমাধানের’ পথ খুঁজে বের করতে ভারত ও পাকিস্তানকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৬ মে) ওয়াশিংটন ডিসিতে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার এই উত্তেজনা একটি চলমান পরিস্থিতি। আমরা এখনও বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’
এ বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর দেশদুটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একাধিক পর্যায়ে যোগাযোগ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ব্রুস বলেন, ‘এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কেবল দর্শকের ভূমিকা পালন করছে না, আমরা সক্রিয়ভাবে দুই পক্ষের সঙ্গে যুক্ত আছি। অত্যন্ত স্পর্শকাতর এই পরিস্থিতির মধ্যেও চলমান বিভিন্ন ঘটনার বিষয়ে অবগত রয়েছি।’
এর আগে, হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের এই হামলাকে লজ্জাজনক উল্লেখ করে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘এটি সত্যিই দুঃখজনক। আমি শুধু চাই, দ্রুত এই সংকটের অবসান ঘটুক।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক এক্স পোস্টে লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মন্তব্যের সঙ্গে তিনি একমত। তিনিও দ্রুত এই সংকটের অবসান কামনা করেন।
পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ বের করতে ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার কথাও বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব সামলানো রুবিও।
ভারত-পাকিস্তানের এই সামরিক উত্তেজনা নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তার মুখপাত্র বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের সামরিক অভিযান নিয়ে (জাতিসংঘ) মহাসচিব অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।’
তিনি উভয় দেশকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। গুতেরেসের ভাষ্যে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কোনো সামরিক সংঘাত হলে তার ভার বিশ্ব বহন করতে পারবে না।
ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারত ও পাকিস্তানে সামরিক সংঘাত বৃদ্ধিতে রাশিয়া উদ্বিগ্ন। পরিস্থিতির যাতে আরও অবনতি না হয়, সে জন্য দুই পক্ষকেই সংযম দেখানোর অনুরোধ করছি।
বিবৃতিতে রাশিয়া আশা প্রকাশ করেছে যে, শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক উপায়ে উত্তেজনা নিরসন করা সম্ভব।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ভারত ও পাকিস্তান এমন প্রতিবেশী, যাদের চাইলেও আলাদা করা যায় না। তারা চীনেরও প্রতিবেশী।’
‘তাই শান্তি ও স্থিতিশীলতায় অগ্রাধিকার দিয়ে দুপক্ষকেই আমরা শান্ত ও সংযত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি (চলমান) পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে, এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে উভয় দেশকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
এছাড়া দুই দেশের মধ্যকার এই উত্তেজনা কমাতে প্রয়োজনে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাবও দিয়েছে চীন।
এ বিষয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেছেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের বর্তমান উত্তেজনা কমাতে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে চায় চীন। এ ক্ষেত্রে আমরা আান্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক।’
চলমান উত্তেজনা প্রশমনে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশকেই যুক্তরাজ্য সহযোগিতা করতে চায় বলে জানিয়েছেন দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডস।
এ বিষয়ে বিবিসি রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের বার্তা হলো, আমরা দুই দেশেরই বন্ধু ও অংশীদার। ফলে উভয় দেশকেই সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত।’
‘আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, সংলাপ, উত্তেজনা প্রশমনে ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশেরই যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে এবং এসব বিষয়ে সহযোগিতা লাগলে তা করার ইচ্ছা আমাদের আছে।’
পাকিস্তানে ভারতের অপারেশন সিঁদুর পরিচালনার ঘটনায় পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাপান।
পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির মুখ্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় কঠোর নিন্দা জানায় জাপান। এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে আমরা কোনোভাবেই সমর্থন করি না।’
‘ওই ঘটনার পর সৃষ্ট বর্তমান পরিস্থিতি পাল্টাপাল্টি প্রতিশোধমূলক হামলার দিকে গড়াতে পারে এবং তা পূর্ণ মাত্রার সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে আমরা ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন সংযম প্রদর্শন করে এবং সংলাপের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করে।’
ভারত ও পাকিস্তানকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্সও। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো বলেছেন, ‘সন্ত্রাসী হামলা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ভারতের অভিপ্রায়ের বিষয়টি আমরা বুঝি। তবে উত্তেজনা যাতে আর না বাড়ে এবং নিজ নিজ দেশের বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই সংযম অনুশীলন করার আহ্বান জানাই।’
দেশটির টিএফ১ টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই আহ্বান জানান।
এ সময় ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের কারোরই যে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের দিকে যাওয়ার ইচ্ছা আছে, তা আমার মনে হয় না।’
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। বুধবার (৭ এপ্রিল) এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুই দেশকে শান্ত থাকার পাশাপাশি সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উদ্ভূত পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ সরকার।’
‘আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ আশাবাদী যে, কূটনৈতিকভাবে এই উত্তেজনা নিরসন হবে এবং শান্তি ফিরে আসবে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতে অপারেশন সিঁদুর নামে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বেশ কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জন ক্ষেপণাস্ত্র এবং পাঁচজন গোলার আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ।
সীমান্তে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর পাল্টা গোলায় ৭ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভারতীয় পুলিশ ও চিকিৎসকরা।
পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এশিয়ার বিভিন্ন এয়ারলাইন্স তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে কিংবা ঘুরপথে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি বিমানবন্দরও।
মঙ্গলবার (৭ মে) মধ্যরাতের পর এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো, স্পাইসজেটসহ ভারতের বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স কাশ্মীর, রাজস্থান ও পাঞ্জাবের মদো সীমান্তবর্তী রাজ্যের কিছু শহরে ফ্লাইট বাতিল করেছে।
কাশ্মীরের বৃহত্তম শহর শ্রীনগর ও লেহ বিমানবন্দর বেসামরিক নাগরিকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উত্তর ভারতের অমৃতসর, চণ্ডীগড়, ধর্মশালা বিমানবন্দরও বন্ধ রাখা হয়েছে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এসব বিমানবন্দরের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় ফ্লাইট বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স। সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে স্পাইসজেট বলেছে, চলমান পরিস্থিতির কারণে উত্তর ভারতের কিছু অংশের বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়েছে। এসব গন্তব্যে তাদের ফ্লাইট চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।
এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, স্থানীয় সময় দুপুর পর্যন্ত তারা জম্মু, শ্রীনগর, লেহ, যোধপুর, অমৃতসর, ভুজ, জামনগর, চণ্ডীগড় ও রাজকোট বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে।
অমৃতসর ও পাঞ্জাবের দুটি বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট দিল্লিতে ডাইভার্ট করেছে। অপরদিকে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের খবরের তথ্য প্রচারের পর পাকিস্তান লাহোর ও করাচির প্রধান শহরগুলোর আকাশসীমা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়।
ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বেশ কয়েকটি প্রধান বিমানবন্দর এ আকাশসীমার মধ্যে পড়ে। ফলে এসব বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার খবর দিয়েছে ফ্লাইট রাডার।
কাতারসহ বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স সাময়িকভাবে পাকিস্তানে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এমিরেটস, টার্কিশ কার্গো এবং সৌদিয়ার মত অন্য এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইট ডাইভার্ট করেছে।
এয়ার ফ্রান্স জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তারা পাকিস্তানের উপর দিয়ে ফ্লাইট চালাবে না। জার্মান এয়ারলাইন্স লুফথানসা রয়টার্সকে বলেছে, তারাও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলবে।
এদিকে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত বেড়ে ২৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এ হামলায় একটি শিশুরও প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া ভারতীয় গোলায় আরও পাঁচ পাকিস্তানি নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনাকে ‘যুদ্ধের শামিল’ ও ‘আগ্রাসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে পাকিস্তান। দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ বলেন, ‘পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাঞ্জাব প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হেনেছে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র।’ তবে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, ‘ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা হচ্ছে, এমন অন্তত ৯টি স্থানে আঘাত হানা হয়েছে।’
আহমেদ শরিফ বলেন, ‘ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলায় পাকিস্তানে অন্তত ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে ২৬ জন ক্ষেপণাস্ত্রে, আর পাঁচজন গোলার আঘাতে নিহত হন।’
যেকোনো সময় হামলার জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর এই মুখপাত্র। তিনি বলেন, ‘কোথায় ও কীভাবে জবাব দেব, সেটা একান্তই আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’
ভারত বলছে, ‘গেল মাসে ভারতশাসিত কাশ্মীরে পর্যটকদের হত্যায় যোগসাজশ থাকা জঙ্গিদের ব্যবহার করা অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে তারা।’ জবাবে কয়েকটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান। এরমধ্যে দুটি বিমান ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গিয়ে পড়েছে।
পাকিস্তানের গোলায় সাত বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় পুলিশ ও চিকিৎসকরা। এছাড়াও ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
গেল মাসে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে হামলা চালিয়ে ২৬ পর্যটককে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। তবে ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে। এ ঘটনার পর দুদেশের সম্পর্ক নতুন করে তলানিতে চলে যায়। পরবর্তীতে দুপক্ষই প্রতিবেশী দেশের কূটনীতিক ও নাগরিকদের বহিষ্কারে করেছে, সীমান্ত এবং আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘ভারত যে যুদ্ধ পরিস্থিতি চাপিয়ে দিয়েছে, তার সমুচিত জবাব দেওয়ার অধিকার পাকিস্তানের আছে। এই হামলার কঠিন জবাব দেওয়া হবে।’
এই হামলাকে ‘নিবৃত্তিমূলক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিক্রম মিসরি। নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘তার দেশের কাছে মনে হয়েছে, এই হামলা চালানোর মধ্যদিয়ে নিবৃত্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ নিজভূখণ্ডে সন্ত্রাসী অবকাঠামোর বিরুদ্ধে চোখেপড়ার মতো কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান।’
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ‘তিনটি রাফায়েল পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। ভারতীয় আগ্রাসনের জবাব দেওয়া হচ্ছে।’
পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হবে আজ বুধবার। তবে নতুন পোপ নির্বাচন সম্পন্ন করতে অনুসরণ করা হবে কয়েক শতাব্দীর পুরোনো একটি জটিল ও দীর্ঘ আনুষ্ঠানিকতাকে। সেই আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে ভ্যাটিকানের সিস্টিন চ্যাপেলে অনুষ্ঠিত হবে কনক্লেভ (পোপ সম্মেলন)। সেখানেই কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে নির্বাচন করা হবে নতুন পোপ।
কারা করবেন পোপ নির্বাচন?
ক্যাথলিক চার্চসমূহের শীর্ষ ধর্মযাজকরা ‘কলেজ অব কার্ডিনালস নামে’ পরিচিত। এসব কার্ডিনালসদের সবাই পুরুষ এবং সরাসরি পোপ কর্তৃক নিযুক্ত হন। মূলত তারাই ভোটাভুটি করে নতুন পোপ নির্বাচন করেন। তবে নতুন ভোটে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মকানুন বেঁধে দেওয়া আছে। কার্ডিনালদের বয়স ৮০ বছরের বেশি হলে তারা সরাসরি ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তাই, বর্তমানে সারাবিশ্বে মোট ২৫২ জন ক্যাথলিক কার্ডিনাল থাকলেও নতুন পোপ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন ১৩৫ জন। বাকি কার্ডিনালরা নতুন পোপ হিসেবে কাকে নির্বাচিত করা উচিত, সেই বিতর্কে অংশ নিয়ে তারা নিজেদের মতামত জানাতে পারবেন।
তবে ভ্যাটিকান সূত্র মতে, ৮০ বছর অনূর্ধ্ব ১৩৫ জনের মধ্যে ইতোমধ্যে ২ জন কার্ডিনাল স্বাস্থ্যজনিত কারণে নাম প্রত্যাহার করেছেন বলে জানা যায়। ভ্যাটিকানের সিস্টিন চ্যাপেলে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এবারের কনক্লেভে অংশ নেবেন ৭১টি ভিন্ন ভিন্ন দেশের ১৩৩ জন কার্ডিনাল, ফলে এটি হতে যাচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে ভৌগোলিকভাবে বৈচিত্র্যময় পোপ নির্বাচনী সম্মেলন।
পোপ হতে লাগবে ৮৯ ভোট
এবার, এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপ থেকে আসা ধর্মযাজকদের মধ্যে থেকেই পরবর্তী পোপ নির্বাচনের সম্ভাবনা বেশি। পোপ নির্বাচিত হতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ কার্ডিনালদের ভোট পেতে হয়। ফলে এবারের কনক্লেভে পোপ নির্বাচিত হতে হলে ৮৯টি ভোট পেতে হবে।
এবারের কনক্লেভে ইতালি থেকে সবোর্চ্চ সংখ্যক (১৭ জন) কার্ডিনাল অংশ নেবেন। এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১০ জন, ব্রাজিলের ৭ জন, ফ্রান্স ও স্পেন থেকে ৫ জন করে এবং আর্জন্টিনা, কানাডা, ভারত, পোলান্ড এবং পর্তুগাল থেকে ৪ জন করে কার্ডিনাল ভোটার অংশ নেবেন।
মহাদেশভিত্তিক হিসাব অনুযায়ী ইউরোপে কার্ডিনালদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এবারের কনক্লেভে ইউরোপ মহাদেশ থেকে ৫৩ জন কার্ডিনাল অংশ নেবেন। এ ছাড়া এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে ২৩ জন, আফ্রিকা থেকে ১৮ জন, মধ্য আমেরিকা থেকে ৪ জন, দক্ষিণ আমেরিকা ও উত্তর আমেরিকা থেকে যথাক্রমে ১৭ ও ১৬ জন এবং ওশেনিয়া মহাদেশ থেকে ৪ জন কার্ডিনাল কনক্লেভে অংশ নিয়ে নতুন ক্যাথলিক ধর্মগুরু নির্বাচন করবেন।
ভোট হতে পারে কয়েক ধাপে, সংকেত দেয় ব্যালট পোড়ানো ধোঁয়া
এই নির্বাচন প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করে থাকেন ৯ জন কার্ডিনাল। তবে ঐতিহ্যগতভাবে পোপ নির্বাচনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয়। তবে এই শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ভোটের কার্যক্রম কয়েক পর্বে অব্যাহত থাকে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রতিটি পর্বের ব্যালট কেমিক্যাল দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এ সময় কালো বা সাদা ধোঁয়া তৈরি হয়। যেটি মূলত ফলাফলের সংকেত দেয় বিশ্ববাসীকে। এর মধ্যে কালো ধোঁয়া সংকেত দেয় যে সিদ্ধান্ত হয়নি। আর সাদা ধোঁয়া সংকেত দেয় সিদ্ধান্ত হয়েছে। সর্বশেষ পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর একজন শীর্ষ কার্ডিনাল সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা থেকে নতুন পোপের নাম ঘোষণা করবেন।
প্রভাব এড়াতে বন্ধ থাকবে ভ্যাটিকানের মোবাইল নেটওয়ার্ক
এবারের পোপ নির্বাচনকে স্বচ্ছ করতে ভ্যাটিকান কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। পোপ কনক্লেভ শুরু উপলক্ষে স্থানীয় সময় বুধবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভ্যাটিকানে সকল প্রকার মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হবে। এই সময়ে কার্ডিনালরা যাতে বাইরের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারেন কিংবা বাইরে থেকে পোপ নির্বাচনকে যাতে কেউ প্রভাবিত করতে না পারেন- মূলত সেজন্যই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
পাকিস্তানের নয়টি স্থানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হামলার তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতীয় সেনাবাহিনীর হামলার কয়েক ঘন্টা পরই জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র এই উদ্বেগের কথা জানান।
গুতেরেস বলেছেন, বিশ্ব কখনো এই যুদ্ধকে সমর্থন করবে না।
জাতিসংঘ থেকে এএফপি এই খবর জানায়।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেছেন, ‘ মহাসচিব আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিশ্ব প্রতিবেশি দুই দেশের মধ্যে সামরিক বাহিনীর অভিযানকে সমর্থন করবে না।’
এদিকে পাকিস্তানের নয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেনএই হামলা খুবই দূর্ভাগ্যজনক এবং এটা লজ্জাজনকও বটে।’
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেছেন, ওভাল অফিসে ঠিক প্রবেশের সময়ই আমরা খবরটা পেলাম।
ট্রাম্প বলেছেন, আমি মনে করছি অতীতের কিছু ঘটনার উপর ভিত্তি করে মানুষ জানত যে কিছু ঘটতে চলেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসছে। তারা অনেক, অনেক যুগ ধরে একে অপরের সঙ্গে লড়াই করে আসছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরো বলেছেন, সঠিক করে বলা হলে, এক শতক ধরে তারা লেগে আছে বলে মনে করতে পারেন। আশা করছি এটি দ্রুতই শেষ হবে।
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
একইভাবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিন ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিবেশি দেশ দুটিকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
পাকিস্তানে হামলা চালানোর পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সাথে কথা বলেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল।
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারত-পাকিস্তান উভয় পক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
এদিকে ভারতের হামলার জবাব দিতে শুরু করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। বুধবার সকালে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)-এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী।
তিনি জানান, গভীর রাতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলায় পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি বেসামরিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৩৩ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই হামলার জবাবে কঠোর ও সমন্বিত প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইএসপিআর প্রধান। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।
আহমেদ শরীফ বলেন, কাশ্মীরের পূর্ব আহমদপুর এলাকায় হামলায় ৫ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একটি শিশু রয়েছে। মুজাফফরাবাদে বিলাল মসজিদে হামলায় একটি শিশু আহত এবং মসজিদটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া কোটলির আব্বাস মসজিদ এবং মুরিদকেতে আরো দু'টি মসজিদে হামলা হয়েছে, যেখানে একজন নিহত এবং একজন আহত হয়েছেন। ভারতের হামলাকে কাপুরুষোচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাদের গোলাবর্ষণে তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তানের কোটলি, ভাওয়ালপুর, মুরিদকে, বাগ ও মুজাফফরাবাদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এর জবাবে পাকিস্তান বিমান বাহিনী কমপক্ষে পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ।
প্রায় দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে দুই নিকট প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান। ভারত ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখার বরাবর ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে আজ। এর আগে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এ খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
ইসলামাবাদ জানায়, ভারতীয় হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। অপরদিকে, নয়াদিল্লির দাবি, পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে ভারতের অন্তত ৮ জন নিহত হয়েছে।
এদিকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ বলেছেন, প্রতিশোধমূলক হামলার হিসাব দ্রুতই চুকিয়ে দেওয়া হবে। তার দাবি, পাকিস্তান ৫টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ও একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বুধবার দেশের অভ্যন্তরে তিনটি যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়েছে। তবে এর কারণ বা পাইলটদের ভাগ্যে কী ঘটেছে জানা যায়নি। ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর অংশে একটি যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পাহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন ভারতীয় পর্যটক নিহত হন। এই ঘটনার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বাকে দায়ী করে আসছে ভারত। তবে এখন পর্যন্ত হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি। এরপর থেকেই দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা ও সীমান্তে গুলিবিনিময় শুরু হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেছেন, “ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত বিশ্ববাসী বহন করতে পারবে না।” অন্যদিকে সংঘাত দ্রুতই থেমে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এদিকে, দুদেশের মধ্যে শান্তি প্রচেষ্টায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির আজ নয়াদিল্লি সফর করার কথা। দুই দিন আগে তিনি ইসলামাবাদ সফর করেন।
পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের অন্তত ছয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ১৩ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী।
তিনি জানান, ভারত মোট ২৪টি হামলা চালিয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা ঘটেছে (পাকিস্তানের) পাঞ্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালপুরের কাছে আহমেদপুর শারকিয়ায়। সেখানে একটি মসজিদ প্রাঙ্গণে হামলায় এক শিশুকন্যাসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন।
এছাড়া পাঞ্জাবের মুরিদকে শহর, শিয়ালকোটের কাছে একটি গ্রাম এবং শাকরগড়েও হামলা চালানো হয়েছে। পাশাপাশি পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদ ও কোটলিতেও হামলা হয়েছে। সেখানের হামলায় দুটি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে। তাছাড়া এই হামলায় ১৬ বছর বয়সী এক তরুণী ও ১৮ বছর বয়সী এক তরুণও নিহত হয়েছে বলে জানান আহমেদ শরীফ।
গত ২২শে এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে কয়েকদিন ধরে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই এ হামলা চালানো হলো। শুরু থেকেই হামলার জন্য পাকিস্তানতে দায়ী করে আসছিল ভারত। যদিও পাকিস্থান এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল।
এদিকে, ভারতের এই হামলার জবাবে হুমকি দিয়েছে পাকিস্তান। এই ঘটনায় পরমাণু শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বুধবার (৭ মে) সকালে জানিয়েছেন, পাকিস্তানের সেনারা ভারতের ৫টি বিমান ভূপাতিত করেছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের খবরে এমন বলা হয়েছে।
এছাড়া অধিকৃত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর ভারতীয় সেনাদের ওপর পাল্টা হামলার কথা জানিয়েছে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহতের ঘটনায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। রোববার রাতেও ভারত এবং পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে কাশ্মীর সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটির মধ্যে এমন উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যেই গত শনিবার করাচির বন্দরে ভিড়েছে তুরস্কের নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ। খবর আরব নিউজের।
পাকিস্তানের নৌবাহিনীর পক্ষ রোববার এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, দুই দেশের সহযোগিতা জোরদার করতে তুরস্কের যুদ্ধজাহাজ টিসিজি বুয়ুকডা পাকিস্তানে পৌঁছেছে।
এদিকে, এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন ভারত বড় ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাচ্ছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ভারতের প্রত্যাঘাত সামাল দিতে বন্ধু দেশগুলোর সাহায্য চেয়েছে পাকিস্তান। তাদের বন্ধু তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে চীন ও তুরস্ক।
সামরিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের অন্যতম বড় সাহায্যকারী দেশ তুরস্ক। আগেও পাকিস্তানকে আগোস্টা ৯০বি ক্লাস সাবমেরিনের আধুনিকীকরণ, ড্রোনসহ অন্য যুদ্ধাস্ত্র দিয়েছে তুরস্ক। এ ছাড়া প্রায়ই যৌথ মহড়ায় অংশ নেয় দুই দেশের সেনা। তবে এবার ভারতে যুদ্ধ পরিস্থিতির মাঝে তুরস্কের যুদ্ধজাহাজের করাচি আগমন মোটেই সহজভাবে দেখছে না ভারতের বিশেষজ্ঞমহল।
যদিও পাকিস্তানের নৌবাহিনীর দাবি, করাচিতে থাকাকালীন তুরস্কের যুদ্ধজাহাজ পাকিস্তানের নৌবাহিনীর সঙ্গে সামরিক ক্ষেত্রে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।
এই সফরের লক্ষ্য দুই নৌবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি ও সমুদ্রে সহযোগিতা বাড়ানো। তবে ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের দাবি, বর্তমান পরিস্থিতিতে তুরস্কের যুদ্ধ জাহাজের আগমন সাধারণ বিষয় নয়।
পাকিস্তান সফরে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয় সফরে গেলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। ইসলামাবাদে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পশ্চিম এশিয়া) সৈয়দ আসাদ গিলানি, পাকিস্তানে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত এবং অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। খবর ইরনার।
সফরকালে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক কারের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন বলে জানানো হয়েছে। এই সফরের সময় দুই দেশের প্রতিনিধিরা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়েও মতবিনিময় করবেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই উচ্চপর্যায়ের সফর ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতিফলন। পাশাপাশি দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর অঙ্গীকারও এতে ফুটে উঠেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঘচির এই সফরের মাধ্যমে পাকিস্তান-ইরান সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নতুন মাত্রা পাবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই এ প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে জানান, আরাঘচির সফরে ইরান-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ছাড়াও ইসরায়েলি হুমকি মোকাবিলার সম্ভাব্য কৌশল নিয়েও আলোচনা হবে।
সোমবার আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) জানিয়েছে, গাজার অবরুদ্ধ বাসিন্দাদের কাছে অবিলম্বে মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে হবে এবং এটিকে রাজনীতিকরণ করা উচিত নয়।
জেনেভা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ইসরাইলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ‘অধিকাংশ জনসংখ্যাকে স্থানান্তর’সহ সামরিক হামলা বৃদ্ধির পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে।
জেনেভায় আইসিআরসির মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান কার্ডন এএফপিকে বলেন, ‘মানবিক সাহায্যের রাজনীতিকরণ করা উচিত নয়। গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে এই মুহূর্তে চাহিদার মাত্রা অপ্রতিরোধ্য, এবং অবিলম্বে সাহায্য পৌঁছানো প্রয়োজন’।
তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে, ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণাধীন বেসামরিক জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করার জন্য উপলব্ধ সমস্ত উপায় ব্যবহার করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ইসরাইল হামাসের বিরুদ্ধে মানবিক সাহায্যের অপব্যবহারের অভিযোগ এনেছে। হামাস এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য তাদের অবরোধ প্রয়োজন ছিল।
কার্ডন বলেন, আইসিআরসি সরাসরি অথবা আমাদের অংশীদারদের সাথে একসাথে মানবিক সরবরাহ পরিচালনা ও বিতরণ করে। তাই আমরা দেখি সেই জিনিসগুলো কোথায় যায়।
তিনি বলেন, গাজায় আমাদের ত্রাণ সরবরাহ সকল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে।
আমরা নিরাপত্তার উদ্বেগ স্বীকার করি, তবে মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে আমরা জরুরি ভিত্তিতে জোর দিচ্ছি। কর্তৃপক্ষ গাজার মানুষের কাছে জীবন রক্ষাকারী ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়াটি দ্রুততর করুক এবং সরবরাহের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করুক।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান সম্প্রসারণ এবং ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল সোমবার আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতভাবে এ পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছে। এই পরিকল্পনার আওতায় রিজার্ভ সেনাদের ডাক দেওয়া হবে এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সরাসরি ২৩ লাখ জনসংখ্যার গাজা অঞ্চলে খাদ্য ও জরুরি ত্রাণ সরবরাহ পরিচালনা করবে। এই জনগণ ইসরায়েলের অবরোধের কারণে দীর্ঘদিন ধরে মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, নতুন পরিকল্পনার আওতায় ইসরায়েল গাজা পুরোপুরি দখলে নিতে পারে। এএফপির এক সূত্র বলেছে, পরিকল্পনায় গাজা দখল, সেখানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং বাসিন্দাদের দক্ষিণে স্থানান্তরের বিষয় রয়েছে, যাতে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখনো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই পরিকল্পনাকেই এগিয়ে নিচ্ছেন, যেখানে গাজার ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের প্রস্তাব রয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজায় আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেসরকারি নিরাপত্তা কোম্পানিগুলো ত্রাণ বিতরণে নিয়োজিত থাকবে। এসব সংস্থাকে বাইরের নিরাপত্তা দেবে ইসরায়েলি সেনারা, যাতে ত্রাণ বিতরণ নিরাপদভাবে পরিচালিত হয়।
এর আগে মানবিক সংস্থাগুলো সতর্ক করেছিল, গাজায় দুর্ভিক্ষ ঘনিয়ে আসছে। তবে ইসরায়েল সে দাবি অস্বীকার করে এবং মার্চের ২ তারিখ থেকে ১৬ দিন পর্যন্ত সব ধরনের ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ রাখে।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সম্ভাব্য পূর্ণ দখল এবং ত্রাণ ব্যবস্থার সামরিকীকরণ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এটি শুধু মানবিক সংকটকেই বাড়াবে না, বরং যুদ্ধাপরাধের আশঙ্কাও উসকে দিচ্ছে। বর্তমানে গাজার অবস্থা চরম মানবিক বিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছে। খাদ্য, পানি, ওষুধের অভাবে প্রতিদিন মৃত্যুবরণ করছেন সাধারণ মানুষ, যার অধিকাংশই শিশু ও নারী।
কোথায় আশ্রয় নেবে ফিলিস্তিনিরা?
গাজার এমন কোনো স্থান বাকি নেই যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালায়নি। পুরো গাজাকে এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে দখলদার বাহিনী। ফিলিস্তিনিরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন পার করছেন। তাদের আশ্রয় নেওয়ার মতো নিরাপদ কোনো জায়গা নেই। এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালাচ্ছে না বা এমন কোনো মানবিক অঞ্চল নেই যেখানে তারা আশ্রয় নিতে পারে। ভয়াবহ দুর্বিষহ জীবন পার করছে ফিলিস্তিনি নারী, পুরুষ এবং শিশুরা।
গাজার বেশিরভাগ জনগোষ্ঠীই মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ইসরায়েলি বাহিনী রাফাহ দখল করার পর গাজার বিভিন্ন এলাকায় লোকজন আটকা পড়েছে। তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানেও যেতে পারছেন না। উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণ গাজায় যাওয়ার স্বাধীনতাও পাচ্ছেন না তারা।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান আরও জোরদার ও বিস্তারের লক্ষ্যে হাজার হাজার রিজার্ভ সৈন্য ডাকতে শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত চাপ সৃষ্টি এবং বন্দিদের ফিরিয়ে আনাই তাদের লক্ষ্য।
ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। প্রায় ৪৭০ দিন ধরে চলা যুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা বাড়ি-ঘর, প্রিয়জন সবকিছু হারিয়েছেন। তাদের মাথার ওপর আশ্রয় নেওয়ার মতো শেষ অবলম্বনটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বোমা হামলায় চোখের সামনে বাবা-ভাই বা সন্তানের মৃত্যু দেখছেন তারা।
এরই মধ্যে নতুন পরিকল্পনার আওতায়, গাজায় ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠের সব ধরনের অবকাঠামো ধ্বংস করার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে সমালোচকরা বলছেন, দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবারও শুরু হওয়া এই অভিযান বন্দিমুক্তির নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজায় অভিযান ফের সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান শুরু হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বর্তমানে হামাসের হাতে ৫৯ জন জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৪ জনের জীবিত বলে বিশ্বাস করা হয়। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে নতুন করে হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে আর কোনো ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি পায়নি।
এই সময়ের মধ্যে গাজার বিশাল এলাকা দখলে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে আবারও লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। একই সঙ্গে গাজায় প্রায় দুই মাস ধরে চলছে মানবিক সহায়তার ওপর কঠোর অবরোধ।
গাজায় নিহত আরও ৪০ ফিলিস্তিনি
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হামাস উৎখাত আর তাদের কবল থেকে জিম্মি উদ্ধারের নামে ইসরায়েলের নির্বিচার গণহত্যা চলছেই। প্রতিদিনই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা; দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে লাশের মিছিল। নিরাপদ বলে কোনো স্থান বাকি নেই গাজাবাসীর জন্য। একদিকে আকাশ ও স্থল অভিযান, অন্যদিকে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ; গাজা যেন সাক্ষাৎ নরক হয়ে উঠেছে তার বাসিন্দাদের জন্য। এরই মধ্যে গাজায় সামরিক অভিযানের মাত্রা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন।
এদিকে সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় গাজায় আরও অন্তত ৪০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে দখলদার বাহিনী। এতে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৫২ হাজার ৫৪০ ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ২৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
ষাট বছরেরও বেশি সময় আগে বন্ধ হওয়া একটি কুখ্যাত কারাগার নতুন করে চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকোর দুর্গম দ্বীপ আলকাট্রাজে ১৯৩৪ সালে এই কারাগারটি স্থাপন করা হয়েছিল। পরে ১৯৬৩ সালে সেটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এবার কারাগারটি কেবল চালু করাই না, এটিকে আরও বড় করে পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। রবিবার (৪ মে) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘এক সময় আমেরিকার জনগণকে রক্ষায় দেশটির বিপজ্জনক অপরাধীদের আলকাট্রাজ কারাগারে আটকে রাখা হতো। সেই কারাগারটিই আবার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্পের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই আমেরিকা হিংস্র ও সহিংস অপরাধীদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। এমনকি কিছু কিছু অপরাধী বারবারই সহিংস কার্যকলাপ করে দেশটির ক্ষতি করে আসছেন। আমি বিচার বিভাগ, ফেডারেল ব্যুরো অব আমেরিকা (এফবিআই) ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সঙ্গে কারাগার ব্যুরোকে একীভূত করে আলকাট্রাজ কারাগারটি ফের চালু ও সম্প্রসারণের নির্দেশ দিয়েছি। সেখানে আমেরিকার সবচেয়ে নিষ্ঠুর ও সহিংস অপরাধীদের রাখা হবে।’
এ বিষয়ে ফ্লোরিডা থেকে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘কারাগারটির একটি দীর্ঘ ইতিহাস আছে। এটি আইন ও শৃঙ্খলার প্রতীক।’
প্রসঙ্গত, সান ফ্রান্সিসকো উপসাগরে অবস্থিত আলকাট্রাজ কারাগারটি ৬৩ বছর ধরে বন্ধ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ প্রিজনসের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, ভঙ্গুর অবকাঠামো ও উচ্চব্যয়ের কারণে ১৯৬৩ সালে কারাগারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। দ্বীপে অবস্থিত হওয়ার কারণে এটি পরিচালনার খরচ ছিল অন্য যেকোনও ফেডারেল কারাগারের তুলনায় প্রায় তিনগুণ।
এছাড়া দ্বীপের অবস্থান, তীব্র স্রোত এবং বরফ শীতল পানির কারণে আলকাট্রাজকে আমেরিকার সবচেয়ে নিরাপদ কারাগার হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে এ কারাগার থেকে কোনো বন্দির পালানোর রেকর্ডও নেই। এফবিআইয়ের তথ্যমতে, কারাগারটি চালু থাকাকালীন ৩৬ জন আসামি অন্তত ১৪ বার পালানোর চেষ্টা করেও সফল হননি। সবাই কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়েছেন। এটি বর্তমানে সান ফ্রান্সিসকোর অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ।
এদিকে, ট্রাম্পের ঘোষণার পর থেকেই নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করেছেন সাবেক হাউস স্পিকার ও ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতা ন্যান্সি পেলোসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া পোস্টে তিনি বলেন, ‘ষাট বছরেরও বেশি সময় আগে আলকাট্রাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এটি এখন অত্যন্ত জনপ্রিয় জাতীয় উদ্যান এবং প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। ট্রাম্পের প্রস্তাবটি যথোচিত নয়।’
শুরুতে আলকাট্রাজ একটি নৌ প্রতিরক্ষা দুর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ২০ শতকের প্রথম দিকে এটিকে একটি সামরিক কারাগারে রূপান্তর করা হয়। ১৯৩০-এর দশকে বিচার বিভাগের অধীনে নেওয়া হয় এই কারাগারটি। এরপর থেকে ফেডারেল বন্দিদের এ কারাগারে পাঠানো শুরু করা হয়।
এখানে রাখা কয়েদিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কুখ্যাত গ্যাংস্টার আল কাপোন, মিকি কোহেন এবং জর্জ মেশিন গান কেলি।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ১৯৬২ সালে বার্ট ল্যাঙ্কাস্টার অভিনিত ‘বার্ডম্যান অফ আলকাট্রাজ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমেও বিখ্যাত হয়েছিল কারাগারটি। এছাড়াও ১৯৯৬ সালের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘দ্যা রকে’র শুটিংও হয় এই দ্বীপে। ওই মুভিতে বিখ্যাত অভিনেতা শন কনারি ও নিকোলাস কেজ অভিনয় করেন।