রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
ক্রেমলিনের বরাত দিয়ে মস্কো থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ট্রাম্পের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার দুদিন আগেই উইটকফের সঙ্গে দেখা করলেন পুতিন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগামী শুক্রবারের মধ্যে রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। যুদ্ধ বন্ধ না করলে মস্কো নতুন শাস্তির মুখোমুখি হবে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।
নির্বাচনের আগে ট্রাম্প গর্ব করে বলেছিলেন, দায়িত্ব গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারবেন। ট্রাম্প।
এর আগে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে তিন দফা রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনায় যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি। বরং উভয় পক্ষের মধ্যে দূরত্ব আরো বেড়েছে।
ওয়াশিংটনের চাপ সত্ত্বেও রাশিয়া তার প্রতিবেশী ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা বাড়িয়েছে।
ক্রেমলিনের প্রকাশ করা ভিডিওতে দেখা যায়, বৈঠকের আগে উইটকফের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন পুতিন। তবে এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
বৈঠকের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার জন্য মস্কোর ওপর চাপ বাড়াতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর টানা হামলায় আরও অন্তত ৮৩ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অনেকেই সহায়তার আশায় বের হওয়া সাধারণ মানুষ। অনাহার ও অপুষ্টিতে মারা গেছে আরও অন্তত ৮ জন, যাদের মধ্যে রয়েছে শিশুও।
গত মঙ্গলবারের এই হতাহতের খবর নিশ্চিত করেছে গাজার স্থানীয় চিকিৎসা কর্মকর্তারা। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, নিহত ৮৩ জনের মধ্যে ৫৮ জনই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফয়ের) খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে যাওয়ার পথে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান।
গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকা থেকে আলজাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি বলেন, ‘জিএইচএফের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই একই ঘটনা ঘটছে। মানুষ খাবারের আশায় লাইনে দাঁড়াচ্ছে, আর তাদের ওপর গুলি চালানো হচ্ছে।’
তিনি জানান, উত্তর গাজার জিকিম ক্রসিংয়ের কাছ থেকে আহতদের আল-শিফা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলির চিহ্ন রয়েছে- বিশেষত মাথা, গলা ও বুক। এই ক্ষতগুলো চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত জটিল বলে জানান তিনি।
জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা জিএইচএফের সক্ষমতা ও এর কার্যক্রমের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাগুলোর অভিযোগ, যথাযথ সহায়তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি এই এলাকাগুলোতে নিরাপত্তার চরম অভাব রয়েছে। তাদের হিসেব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত গাজায় সহায়তার আশায় বের হয়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৫৬০ জন ফিলিস্তিনি।
এদিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের কাছে একটি ত্রাণের ট্রাক উল্টে ২০ জন নিহত হয়েছেন। খাবারের আশায় জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত লোকদের ভিড়ের মাঝে এটি উল্টে যায়। গতকাল বুধবার গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপিকে বলেছেন, গত রাতের দিকে ত্রাণ বহনকারী একটি ট্রাক উল্টে ২০ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। শত শত বেসামরিক মানুষ সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছিল।
হামাসের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ইসরায়েল ট্রাক চালকদের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য অনিরাপদ পথ ব্যবহার করতে বাধ্য করছে। এর ফলে প্রায়শই মরিয়া ক্ষুধার্ত জনতা ট্রাকগুলোর কাছে ভিড় জমায়।
এদিকে জর্ডান জানিয়েছে, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা গতকাল বুধবার গাজাগামী ত্রাণের বহরে আক্রমণ করেছে। কয়েক দিনের মধ্যে এটি দ্বিতীয় আক্রমণের ঘটনা। ইসরায়েল এসব আক্রমণ রোধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ।
জর্ডান সরকারের মুখপাত্র মোহাম্মদ আল-মোমানি রয়টার্সকে বলেছেন, ৩০টি ট্রাক মানবিক ত্রাণ বহনকারী কনভয়ে পৌঁছাতে বিলম্ব করানো হয়েছে। এটি চুক্তির লঙ্ঘন।
প্রতিদিন হাজার হাজার গাজাবাসী খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হয়, যার মধ্যে চারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলি-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের অন্তর্ভুক্ত।
মে মাসের শেষের দিকে ত্রাণ বিতরণ শুরু হওয়ার পর থেকে, এর কার্যক্রম প্রায় প্রতিদিনই ত্রাণ সংগ্রহের জন্য অপেক্ষারতদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিবর্ষণের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
প্রায় ২২ মাস আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় সরবরাহ প্রবেশের ওপর ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার ফলে খাদ্য ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ওষুধ ও জ্বালানি, যার ওপর হাসপাতালগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জেনারেটর চালাতে জ্বালানি অপরিহার্য।
মানবিক সাহায্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সতর্ক করে জানিয়েছেন, গাজায় বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
৭৫ বছর বয়সি সালিম আসফুর আলজাজিরাকে বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে শুধু রুটি আর পানি খেয়ে বেঁচে আছি। একসময় ৮০ কেজি ছিলাম, এখন ওজন ৪০ কেজিতে নেমে এসেছে। ছেলে আমাকে বাথরুমে নিয়ে যায়। রাফাহ থেকে খাবার আনতে হবে- ২০ কিলোমিটার হেঁটে কীভাবে যাব ‘
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার ও অপুষ্টিতে আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। চলমান যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৮৮ জন ফিলিস্তিনি, যাদের অর্ধেকই শিশু।
ইউএনআরডব্লিউএয়ের বরাতে জানা যায়, গত সোমবার গাজায় মাত্র ৯৫টি সহায়তাবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে, যেখানে প্রতিদিন অন্তত ৬০০ ট্রাক প্রয়োজন সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার ন্যূনতম চাহিদা পূরণে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৮৫টি ট্রাক প্রবেশ করছে, যা চরমভাবে অপর্যাপ্ত।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে আবারও সতর্ক করে জানিয়েছে, ‘মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হচ্ছে।’ তাদের দাবি, সহায়তা আসার পর তা পরিকল্পিতভাবে লুট হচ্ছে, যা ইসরায়েলি বাহিনীর সৃষ্টি করা নিরাপত্তা শূন্যতার সুযোগে সংঘটিত নৈরাজ্যেরই অংশ।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশটির ওপর আক্রমণ বন্ধে বুধবার রাশিয়ার ওপর চাপ বৃদ্ধি করার জন্য ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফের মস্কো সফরকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
কিয়েভ থেকে এ¦এফপি এ খবর জানায়।
জেলেনস্কি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন,‘যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জি৭-এর অস্ত্রাগারের সমস্ত শক্তি বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে করে অবিলম্বে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।’
তিনি আরো জানান, ইউক্রেন রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির আন্তরিকতা সম্পর্কে অবগত আছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ যারা আমাদেরকে সাহায্য করছে, আমাদের সে সকল অংশীদার প্রচেষ্টার প্রশংসা করে।
জুন মাসে ইসরাইলের সাথে ১২ দিনের যুদ্ধের সময় নিহত একজন পারমাণবিক বিজ্ঞানী সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে ইসরাইলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত এক ব্যক্তির বুধবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরানি কর্তৃপক্ষ।
তেহরান থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বিচার বিভাগের মিজান অনলাইন ওয়েবসাইট জানিয়েছে, "বিচারিক কার্যক্রম এবং সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক তার সাজা নিশ্চিত করার পর রুজবেহ ভাদির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।’ এতে আরও বলা হয়েছে যে, দোষী ব্যক্তি ‘ইহুদিবাদী শাসনের সাম্প্রতিক আগ্রাসনের সময় নিহত একজন পারমাণবিক বিজ্ঞানী’ সম্পর্কে তথ্য ফাঁস করে ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে সম্পর্ক এখন আগের মতো নেই। পুতিনের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, যুদ্ধ অব্যাহত রাখাসহ নানা কর্মকাণ্ডে ট্রাম্প নাখোশ। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, পরাশক্তি দুই দেশের মধ্যে কি সংঘাত অনিবার্য? রাশিয়ার ট্যাবলয়েড মস্কোভস্কি কমসোমোলেটসের বরাত দিয়ে বিবিসি এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প ও পুতিনের মুখোমুখি অবস্থান এখন আগের চেয়ে কাছে সরে এসেছে। তারা কেউই নিজ অবস্থান বা দাবি থেকে পিছপা হচ্ছেন না। ফলে একটি সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠতে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ, ট্রাম্প বারবার পুতিনকে যুদ্ধ থামানোর জন্য তাগিদ দিয়েছেন। নিজের দূতকে বারবার মস্কোয় পাঠিয়েছেন। এর পরও পুতিন কোনো সাড়া দেননি। বরং পুতিন তাঁর চলার পথ থেকে এক বিন্দুও সরে যাননি। এমনকি যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ইচ্ছাও প্রকাশ করেননি।
পরিস্থিতি যখন এমন, তখনই ইউক্রেনের দিনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলে নতুন গ্রাম দখল করার কথা জানিয়েছে মস্কো। এ ছাড়া রাশিয়ান শাহেদ ড্রোনে ভারতীয় উপাদান পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। বিষয়টি তারা নয়াদিল্লি ও ইইউর কাছে উত্থাপন করেছে।
শুল্ক নিয়ে ভারতকে ট্রাম্প হুমকি দেওয়ায় নিন্দা করেছে ক্রেমলিন। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও সামরিক সরঞ্জাম কিনছে। সেই অর্থ ইউক্রেনে সামরিক হামলায় মস্কোকে ইন্ধন জোগাচ্ছে। দেশগুলোর নিজস্ব বাণিজ্যিক অংশীদার বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের নিষেধাজ্ঞা আর মানবে না রাশিয়া। রুশ নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ন্যাটোর রাশিয়াবিরোধী নীতির জবাবে মস্কো আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
বিবিসি জানায়, গত ফেব্রুয়ারিতেও ফোনকলে কথা বলেন ট্রাম্প-পুতিন। তখন মনে হয়েছিল, যে কোনো সময় শক্তিধর দুই নেতার মধ্যে সরাসরি বৈঠক হতে পারে। পাশাপাশি ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের নিয়মিত রাশিয়া সফর একটি ইতিবাচক বার্তা দেয়। বাতাসে বার্তা ভাসছিল, ট্রাম্প এখন পুতিনে মুগ্ধ। কিন্তু ট্রাম্প এর চেয়ে বেশি কিছু চেয়েছিলেন পুতিনের কাছে, তা হলো একটি যুদ্ধবিরতি। তবে পুতিন কোনোভাবে সাড়া না দেওয়ায় ট্রাম্প ক্রেমলিনের প্রতি হতাশ হয়ে পড়েন। যুদ্ধ বন্ধে গত মাসে পুতিনকে ৫০ দিনের আলটিমেটাম দেন। পরে তা কমিয়ে ১০ দিনে আনেন। চলমান আলটিমেটাম এই সপ্তাহান্তে শেষ হওয়ার কথা। ইউক্রেনকে হয়তো পুতিন আত্মসমর্পণে বাধ্য করবেন বলে মনে করেন নিউইয়র্ক সিটির বিশ্ববিদ্যালয় দ্য নিউ স্কুলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক অধ্যাপক নিনা ক্রুশ্চেভা।
যুদ্ধ বন্ধে চুক্তি এখনও সম্ভব
ট্রাম্প এখনও হাল ছাড়েননি। তার দূত স্টিভ উইটকফ এই সপ্তাহে আবার ক্রেমলিনে যাবেন এবং পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মস্কোর কিছু ভাষ্যকার ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, এবার পুতিন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে চেষ্টা করবেন। মস্কোর এমজিআইএমও বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক তত্ত্বের সহযোগী অধ্যাপক ইভান লোশকারেভ বলেন, সংলাপকে সহজ করার জন্য উইটকফ পুতিনের কাছে সহযোগিতার সুবিধাজনক প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারেন। পরিস্থিতি যাতে যুদ্ধবিরতির দিকে যায়। চেক প্রেসিডেন্ট পেত্র পাভেল মনে করেন, ইউক্রেনকে টিকে থাকার জন্য আঞ্চলিক ক্ষতি মেনে নেওয়া উচিত।
ইউক্রেনকে ৪৩০ মিলিয়ন ইউরোর প্যাকেজ ঘোষণা তিন দেশের
নরওয়ে, সুইডেন এবং ডেনমার্ক ইউক্রেনের জন্য ৪৩০ মিলিয়ন ইউরো সামরিক প্যাকেজ অর্থায়ন করবে। নরওয়ে সরকারের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সুইডিশ মন্ত্রীরা স্টকহোমে এক সংবাদ সম্মেলনে চুক্তির রূপরেখা উপস্থাপন করেছেন। এর আগে নেদারল্যান্ডস নতুন প্রকল্পের অধীনে ইউক্রেনের জন্য মার্কিন অস্ত্রের জন্য প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইউরো ব্যয় করার পরিকল্পনা ঘোষণা করে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে কোনো উপায়ে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য রাশিয়ার ওপর মার্কিন চাপকে স্বাগত জানিয়েছে। সোমবার রাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, মিত্রদের অর্থায়ন ইউক্রেনীয় জনগণের জীবন রক্ষায় সহায়তা করবে।
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
ইয়েমেন উপকূলে অভিবাসী ও শরণার্থীদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবে গেছে। এতে কমপক্ষে ৬৮ জন অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৭০ জনেরও বেশি অভিবাসী।
ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে দেড় শতাধিক অভিবাসী ছিলেন এবং নিহতরা সবাই আফ্রিকান। সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইয়েমেন উপকূলে আফ্রিকার অভিবাসী ও শরণার্থীদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবে যাওয়ায় অন্তত ৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরও ৭৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) গত রোববার এ তথ্য জানিয়েছে।
আইওএময়ের ইয়েমেন শাখার প্রধান আবদুসাত্তার এসোয়েভ অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেন, নৌকাটিতে ১৫৪ জন ইথিওপিয়ান নাগরিক ছিলেন। এটি ইয়েমেনের আবিয়ান প্রদেশের উপকূলে ডুবে যায়।
তিনি জানান, দুর্ঘটনায় ১২ জন জীবিত উদ্ধার হয়েছেন। খানফার জেলায় ৫৪ জনের মরদেহ ভেসে আসে এবং আরও ১৪ জনের মরদেহ অন্য একটি এলাকা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ইয়েমেনের স্বাস্থ্য বিভাগ এর আগে জানায়, এই ঘটনায় অন্তত ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জাঞ্জিবার শহরের স্বাস্থ্য কার্যালয়ের পরিচালক আবদুল কাদের বাজামিল জানান, নিহতদের দাফনের জন্য শহরের শাকরা এলাকার কাছে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যেও উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
আফ্রিকার হর্ন অঞ্চল ও ইয়েমেনের মধ্যে সমুদ্রপথ শরণার্থী ও অভিবাসীদের জন্য বেশ সাধারণ হলেও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ রুট। ২০১৪ সালে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর দেশটি থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও বেড়েছে।
অবশ্য ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে হুথি বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি হওয়ার পর সহিংসতা কিছুটা কমেছে এবং মানবিক সংকট আংশিক হ্রাস পেয়েছে।
এদিকে সোমালিয়া ও ইথিওপিয়ার মতো দেশের সংঘাতপীড়িত মানুষজন ইয়েমেনে আশ্রয় নিতে বা সেখান দিয়ে উপসাগরীয় ধনী দেশগুলোর উদ্দেশে যাত্রা করতে গিয়ে এই বিপজ্জনক পথে পাড়ি দিচ্ছে। আইওএময়ের মতে, এটি বিশ্বে অন্যতম ব্যস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসন রুট।
মূলত এই পথ ধরে ইয়েমেনে পৌঁছাতে অভিবাসীরা প্রায়ই অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই নৌকায় লোহিত সাগর পাড়ি দেন।
আইওএময়ের তথ্যমতে, ২০২৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি শরণার্থী ও অভিবাসী ইয়েমেনে পৌঁছেছেন, যা আগের বছরের ৯৭ হাজার ২০০ জনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। আইওএময়ের মে মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সমুদ্রপথে নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় এই সংখ্যা কমেছে।
এই পথে গত ২ বছরে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আইওএম জানায়, গত বছর এই রুটে ৫৫৮ জন মারা গেছেন। এছাড়া গত এক দশকে এই পথে কমপক্ষে ২ হাজার ৮২ জন নিখোঁজ হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬৯৩ জনের ডুবে মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। বর্তমানে ইয়েমেনে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার শরণার্থী ও অভিবাসী অবস্থান করছেন।
গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানসহ ছয় শতাধিক অবসরপ্রাপ্ত ইসরাইলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গাজা যুদ্ধ বন্ধে তাদের সরকারকে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
জেরুজালেম থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ট্রাম্পের প্রতি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তগুলো ‘পরিচালনা’ করার আহ্বান জানিয়ে সোমবার গণমাধ্যমের সাথে শেয়ার করা একটি খোলা চিঠিতে সাবেক কর্মকর্তারা লিখেছেন, ‘আমাদের পেশাদার রায় হচ্ছে যে হামাস আর ইসরাইলের জন্য কৌশলগত হুমকি নয়।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ আগামী সপ্তাহে রাশিয়া সফর করবেন।
ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
স্থানীয় সময় রোববার সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘আমার ধারণা, উইটকফ আগামী বুধবার বা বৃহস্পতিবার রাশিয়া যাবেন।’
তিনি আরো জানান, রুশ সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ-এর সঙ্গে অনলাইনে বাকবিতণ্ডার পর তিনি দুইটি ‘পারমাণবিক সাবমেরিন’ মোতায়েন করেছেন, যেগুলো এখন ‘ওই অঞ্চলে’ অবস্থান করছে।
তবে সাবমেরিন দুটি পারমাণবিক-শক্তিচালিত না কি পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত তা তিনি স্পষ্ট করেননি। সাবমেরিনগুলোর অবস্থানও গোপন রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য পদক্ষেপ নিতে রাশিয়াকে আগামী সপ্তাহের শেষে ট্রাম্পের নির্ধারিত সময়সীমার পটভূমিতে পারমাণবিক অস্ত্রের এই মহড়া শুরু হয়েছে। এছাড়া রাশিয়াকে অনির্দিষ্ট নতুন নিষেধাজ্ঞারও মুখোমুখি হতে হবে।
সম্প্রতি তিনি একাধিকবার রাশিয়া সফর এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে, ‘উইটকফের বার্তা মস্কোর প্রতি কী হবে এবং নিষেধাজ্ঞা এড়াতে রাশিয়া কিছু করতে পারে কিনা, তখন ট্রাম্প উত্তর দিয়েছিলেন: "হ্যাঁ, এমন একটি চুক্তি হতে পারে। কারণ যেখানে মানুষ মারা যাওয়া বন্ধ করতে হবে।’
ট্রাম্প পূর্বে হুমকি দিয়েছিলেন যে নতুন পদক্ষেপের অর্থ রাশিয়ার অবশিষ্ট বাণিজ্য অংশীদার, যেমন চীন এবং ভারতকে লক্ষ্য করে ‘দ্বিতীয় শুল্ক’ আরোপ করা হতে পারে। এটি রাশিয়াকে আরো দমিয়ে রাখবে, তবে উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক ব্যাঘাতের ঝুঁকি তৈরি করবে।
ওয়াশিংটনের চাপ সত্ত্বেও, তার পশ্চিমাপন্থী প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে রাশিয়ার আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে।
পুতিন ধারাবাহিকভাবে যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। তিনি শুক্রবার বলেছেন তিনি শান্তি চান তবে তার প্রায় সাড়ে তিন বছরের আগ্রাসন বন্ধ করার ব্যাপারে দাবিসমূহ ‘অপরিবর্তিত’ রয়েছে।
এই দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনকে ভূখণ্ড ত্যাগ করা এবং ন্যাটোতে যোগদানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বন্ধ করা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুতে ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে একটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, এই যুদ্ধশিগগিরই শেষ হবে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ তখন থেকেই তীব্রতর হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, মস্কোর মারাত্মক আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ডের জন্য ট্রাম্প পুতিনের প্রতি ক্রমবর্ধমান হতাশা প্রকাশ করেছেন।
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদ ও পশ্চিমতীর পুরোপুরি দখলের হুমকি দিয়েছেন দখলদার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। এছাড়া জেরুজালেমে পূর্ণ দখলদারিত্ব আরোপ করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন এ দখলদার।
রোববার মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে এক পোস্টে ইসরায়েল কাৎজ লিখেছেন, ‘তিসা বা’ আভের দিন, দ্বিতীয় টেম্পল ধ্বংসের ২ হাজার বছর পর, পশ্চিম দেওয়াল এবং টেম্পল মাউন্ট (আল-আকসা) আবারও ইসরায়েলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এসেছে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘ইসরায়েলকে ঘৃণাকারীরা আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া এবং বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে এবং আমরা জেরুজালেম, পশ্চিম দেওয়াল এবং আল-আকসা মসজিদে আমাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী করে যাব।’
এই দখলদার জানিয়েছেন, তিনি পশ্চিম প্রাচীরে গিয়েছিলেন। সেখানে জিম্মি, ইসরায়েলি সেনা, ইসরায়েলিদের নিরাপত্তা ও হামাসের পরাজয়ের জন্য প্রার্থনা করেছেন।
এর আগে রোববার আল-আকসা প্রাঙ্গণে প্রার্থনা করেন দখলদার ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গিভির। আল-আকসায় ইহুদিদের প্রার্থনা নিষিদ্ধ সত্ত্বেও এ কাজ করায় ইসরায়েলি মন্ত্রীর কঠোর নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব। দেশটি বলেছে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা উস্কে দেবে।
বেন গিভিরের এ কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে সৌদি বলেছে, ‘আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি দখলদার সরকারের কর্মকর্তাদের বারবার উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের কঠোর নিন্দা জানাচ্ছে সৌদি আরব। এ ধরনের কর্মকাণ্ড এ অঞ্চলে উত্তেজনা উস্কে দেবে।’
আল-আকসা মসজিদের দায়িত্বে রয়েছে জর্ডান। একটি ওয়াকফের মাধ্যমে মসজিদটির কার্যক্রম চালানো হয়। এই মসজিদ নিয়ে কয়েক দশক পুরোনো একটি চুক্তি রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, পবিত্র এ মসজিদটিতে মুসলিম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মাবলম্বীরা প্রার্থনা করতে পারবে না। তবে ইহুদিরা চাইলে মসজিদ প্রাঙ্গণে যেতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি ফেডারেল ফৌজদারি মামলার নেতৃত্বদানকারী সাবেক বিশেষ কাউন্সেল জ্যাক স্মিথের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। শনিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
স্মিথ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ফেডারেল অপরাধ মামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং চলতি বছরের শুরুর দিকে পদত্যাগ করেছেন।
ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
বিশেষ কাউন্সেল কার্যালয় দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছে, তারা হ্যাচ অ্যাক্ট লঙ্ঘনের জন্য স্মিথের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে, যা ফেডারেল কর্মীদের কর্মরত অবস্থায় রাজনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত হওয়া নিষিদ্ধ।
রিপাবলিকান সিনেটর টম কটন সংস্থাটিকে তদন্ত করতে বলেছিলেন বলে জানা গেছে যে স্মিথের কর্মকাণ্ড ২০২৪ সালের নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল কিনা।
ফেডারেল কর্মীদের আচরণ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাটি তাৎক্ষণিকভাবে এএফপিকে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে রাজি হয়নি।
স্মিথকে ২০২২ সালে বিশেষ কাউন্সেল নিযুক্ত করা হয়েছিল এবং হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাওয়ার পর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেওয়ার ষড়যন্ত্র এবং শ্রেণীবদ্ধ নথিপত্র ভুলভাবে পরিচালনার অভিযোগ এনেছিল।
ট্রাম্প উভয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বিচার বিভাগকে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ এনে এগুলোকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।
কোনও মামলাই কখনও বিচারে আসেনি এবং ২০২৪ সালের নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প জয়লাভের পর বিচার বিভাগের নীতি অনুসারে, বিশেষ কাউন্সেল একজন বর্তমান প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মামলা না চালানোর নীতি অনুসারে উভয়কেই বাদ দিয়েছেন।
ট্রাম্প তাকে বরখাস্ত করার জন্য তার প্রচারণার প্রতিশ্রুতি পূরণ করার আগেই স্মিথ পদত্যাগ করেন।
বিশেষ কাউন্সেলের লর কার্যালয় বিচার বিভাগের অধীনে বিশেষ পরামর্শদাতার অফিস থেকে আলাদাভাবে কাজ করে যেমনটি পূর্বে স্মিথের নেতৃত্বে ছিল।
টাইমস অনুসারে, স্মিথের গৃহীত প্রসিকিউটরিয়াল সিদ্ধান্তগুলো সাধারণত এর এখতিয়ারের অধীনে আসে না।
এটি স্মিথের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনতে পারে না তবে তার ফলাফল বিচার বিভাগের কাছে পাঠাতে পারে, যার সেই ক্ষমতা রয়েছে।
হ্যাচ অ্যাক্টের অধীনে সবচেয়ে গুরুতর শাস্তি হল চাকরির অবসান, যা স্মিথের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না কারণ তিনি ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন।
জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে, ট্রাম্প তার অনুভূত শত্রুদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
তিনি প্রাক্তন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা ছাড়পত্র এবং সুরক্ষামূলক তথ্য কেড়ে নিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে অতীতের মামলায় জড়িত আইন সংস্থাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ফেডারেল তহবিল ছিনিয়ে নিয়েছেন।
গত মাসে এফবিআই তার প্রাক্তন পরিচালক জেমস কোমি এবং প্রাক্তন সিআইএ প্রধান জন ব্রেনান, দুই বিশিষ্ট ট্রাম্প সমালোচকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত শুরু করেছে।
রাশিয়ার পূর্ব কামচাটকা অঞ্চলে ৪৫০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো একটি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছে বলে দেশটির জরুরি কর্তৃপক্ষ রোববার জানিয়েছে। এই অঞ্চলে রেকর্ড করা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে একটির কয়েকদিন আগে অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটেছে।
মস্কো থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে।
স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের গ্লোবাল ভলকানিজম প্রোগ্রাম অনুসারে, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে ১৫৫০ সালে শেষবার অগ্ন্যুৎপাত হওয়া ক্র্যাশেনিনিকভ আগ্নেয়গিরি থেকে ছাইয়ের বিশাল কুণ্ডলী বের হতে দেখা যাচ্ছে।
কামচাটকার জরুরি অবস্থা মন্ত্রণালয় টেলিগ্রামে এক পোস্টে জানিয়েছে, আগ্নেয়গিরির স্তূপটি ৬,০০০ মিটার (১৯,৭০০ ফুট) উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। এর পথে কোনও জনবসতিপূর্ণ এলাকা নেই এবং জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কোনও ছাই পড়ার ঘটনাও রেকর্ড করা হয়নি ।
মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, আগ্নেয়গিরিটিকে ‘কমলা’ বিমান চলাচলের ঝুঁকি কোড দেওয়া হয়েছে। যার অর্থ এই অঞ্চলে বিমান চলাচল ব্যাহত হতে পারে।
বুধবার এই অঞ্চলের আরেকটি আগ্নেয়গিরি ইউরোপ ও এশিয়ার সর্বোচ্চ সক্রিয় ক্লাইচেভস্কয়ের অগ্ন্যুৎপাতের পর এটি ঘটে।
গ্লোবাল ভলকানিজম প্রোগ্রাম অনুসারে, ক্লাইচেভস্কয়ের অগ্ন্যুৎপাত বেশ সাধারণ, ২০০০ সাল থেকে কমপক্ষে ১৮টি ঘটেছে।
উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ রোববার হাজার হাজার ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীর সঙ্গে সিডনির হারবার ব্রিজ অতিক্রম করেন। এই বিক্ষোভের ফলে বিশ্ববিখ্যাত এই সেতুটি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
সিডনি থেকে এএফপি এ সংবাদ জানায়।
গত বছর উচ্চ-নিরাপত্তা সম্পন্ন ব্রিটিশ কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসা অ্যাসাঞ্জকে পরিবার পরিবেষ্টিত অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রধানমন্ত্রী বব কারের সাথে মিছিল করতে দেখা গেছে।
গাজায় অপুষ্টি ও মানবিক সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও সমালোচনা বাড়ার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ফ্রান্স, ব্রিটেন ও কানাডা কিছুটা শর্তসাপেক্ষে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। অস্ট্রেলিয়া গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানালেও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়া এক ডজনেরও বেশি দেশের সাথে এক যৌথ বিবৃতিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ‘ইচ্ছা বা ইতিবাচক বিবেচনা’ প্রকাশ করেছে। যেটিকে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টির মধ্যেও সেতু পার হন এবং ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি’, ‘ফিলিস্তিন মুক্ত হোক’ এই স্লোগান দেন।
নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ জানায়, তারা এ বিক্ষোভের জন্য সিডনির বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত শত শত অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল।
বামপন্থী গ্রিনস পার্টির নিউ সাউথ ওয়েলসের সিনেটর মেহরিন ফারুকি সেন্ট্রাল সিডনির ল্যাং পার্কে জনসমাবেশে বলেন, এই মিছিল ইতিহাস সৃষ্টি করবে।
তিনি গাজার জনগণের ওপর গণহত্যার অভিযোগ তুলে ইসরায়েলের ওপর সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান। একইসঙ্গে তিনি এই বিক্ষোভ বন্ধ করতে চাওয়ায় নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস কঠোর সমালোচনা করেন।
মিছিলে অনেকে এমন ব্যানার বহন করেন যাতে গাজায় নিহত হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশুর নাম তালিকাভুক্ত ছিল। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস ইসরায়েলে হামলা চালালে এই যুদ্ধ শুরু হয় ।
বিক্ষোভে লেবার পার্টির সংসদ সদস্য এড হুসিক উপস্থিত ছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান। তবে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ জনসম্মুখে কোনো বক্তব্য দেননি এবং সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলেননি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, চলমান সহিংসতায় ৬০,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের হামাসের হামলায় ১,২১৯ জন নিহত হয়। যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক ছিল। এছাড়া তাদের ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। যাদের মধ্যে ৪৯ জন এখনো গাজায় আটক। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মতে তাদের মধ্যে ২৭ জন ইতিমধ্যে মারা গেছেন।
১৯৩২ সালে উদ্বোধন করা যমজ খিলান আকৃতির এই হারবার ব্রিজটি এক কিলোমিটারেরও বেশি লম্বা। বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত এ ব্রিজটি সিডনি ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
একটা সময় পর্যন্ত বিশ্ব মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর মানুষের চরম বিশ্বাস ছিল। কিন্তু ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজার আজকের বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে সেসব যেন ধুলোয় ঢাকা কোনো গল্প। এখন সেখানে প্রতিদিনকার দৃশ্য— শুকিয়ে যাওয়া শিশুদের কঙ্কালসার দেহ, খাবারের আশায় হাত বাড়িয়ে থাকা মানুষের সারি এবং বাবা-মায়ের অসহায় কান্না—যাদের চোখের সামনেই অনাহারে ধুঁকে ধুঁকে মরছে সন্তানরা।
‘আমার ৫ বছরের মেয়ের ওজন এখনো মাত্র ১১ কেজি,’ বলছিলেন গাজার ৩৮ বছর বয়সী জামিল মুঘারি। তিনি বলেন, আমার ছেলের শরীরে চামড়া আর হাড় ছাড়া কিছু নেই। যুদ্ধ শুরুর পর আমি নিজেও ৩০ কেজি ওজন হারিয়েছি।
এটিই এখন গাজার প্রত্যাহিক চিত্র— শুধু যুদ্ধ নয়, এখন ক্ষুধাই হয়ে উঠেছে এখানকার নতুন মারণাস্ত্র।
দুর্ভিক্ষ: এখন আর আশঙ্কা নয়, বাস্তবতা
গত সপ্তাহে জাতিসংঘ-সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) জানিয়েছে, গাজা এখন চরম মাত্রার দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছে।
আইপিসি জানায়, গাজায় ২২ লাখ মানুষকে যেন একটি বন্দি চেম্বারে আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে বাইরে থেকে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, আর ভেতরে কোনো খাদ্য নেই, কর্মসংস্থান নেই, আশ্রয় নেই— আছে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর কান্না।
মুঘারি বললেন, ‘আমি ও আমার পরিবার এমনও দিন কাটাই যেদিন খাবারের জন্য একেবারেই কিছু খুঁজে পাই না। সেসব দিন শুধু পানি খেয়ে পেট ভরাতে হয়। খাবার না পেয়ে এমন হয়েছে, মাঝেমধ্যে হাঁটতে গিয়েও দুর্বলতার কারণে পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলাই। কারণ, সন্তানরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।’
সহায়তার নামে বিভ্রান্তি
ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের খবর অনুযায়ী, ইসরায়েল-নিয়ন্ত্রিত গাজার চারটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র প্রতিদিন মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য খোলা থাকে। খাবারের নাগাল পেতে গাজাবাসীকে হাজারো মানুষের ধাক্কাধাক্কি, বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়তে হয়। আর ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর ওপর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নির্বিচারে গুলির ঘটনা তো আছেই।
প্রতিবেদনে খাবারের সন্ধানে যাওয়া একজন তরুণের কথা তুলে ধরা হয়েছে। ওই ফিলিস্তিনি তরুণ নিজের পরিবারের জন্য খাবারের সন্ধানে গিয়ে লাশ হয়ে আত্মীয়দের কাঁধে করে ফিরছেন। এমন সব মর্মান্তিক ঘটনা গাজাবাসীর জন্য যেন নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আবু আল-আবেদ নামের আরেক গাজাবাসী বললেন, ‘আমার মেয়ের বুকের হাড় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। খাবার নেই, ওর মাথা ঘোরে, দুর্বলতায় পড়ে যায় সে। অথচ বাজারে যা পাওয়া যায়, সেগুলোর এত দাম দিয়ে কেনার সাধ্য আমাদের নেই।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার, সহানুভূতি—এসব এখন কেবল স্লোগান। যদি গাজায় পশুদের অধিকার রক্ষার কথা উঠতো, হয়তো অনেক আগে বিশ্ববাসী কোনো একটি ব্যবস্থা নিত।’
এদিকে, ৫৮ বছর বয়সি বিধবা মানসুরা ফাদল আল-হেলো বলেন, ‘আমার একটাই ছেলে। আমি ত্রাণ সহায়তা ট্রাকগুলোর আশপাশে যেতে দেই না। যদি গুলি খায়! আমি আর হারাতে পারব না। আমি ছেলেকে শহীদ হয়ে ফিরতে দেখতে চাই না।’
রাজনৈতিক প্রতীক না, চাই বাস্তব সহায়তা
ব্রিটিশ সরকার সেপ্টেম্বর নাগাদ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে অনেক গাজাবাসীর মতোই, মানসুরা এই সিদ্ধান্তে আশাবাদী নন। ‘রাষ্ট্র যদি সার্বভৌম না হয়, আত্মরক্ষার অধিকার না থাকে, তাহলে সেটা কি সত্যিকারের স্বীকৃতি? আমরা চাই বাস্তব অধিকার,’ —বললেন তিনি।
মানবতার জন্য এখনই সময়
গত সপ্তাহে গাজা দুইটি ভয়াবহ মাইলফলক ছুঁয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ফিলিস্তিনে নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে মারা যাওয়াদের যোগ করলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
গাজাবাসীর প্রতিটি অশ্রু ফোঁটা যেন একটা প্রশ্ন— এই পৃথিবীতে মানুষের জীবন কি এতটাই মূল্যহীন? কাঁপা কণ্ঠে বিশ্ববাসীর প্রতি জামিল মুঘারির প্রার্থনা, ‘আমরা ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছি। আমাদের এই বিপর্যয় থেকে বাঁচান।’