বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
১৮ ভাদ্র ১৪৩২

ট্রাম্পের শুল্কে চাপের মুখে ভারত

দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত : ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২২:৩৮

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্কে টালমাটাল হয়ে উঠেছে ভারতের অর্থনীতি। সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজারে আঘাত লাগায় এর প্রভাব পড়েছে মুদ্রা ও শেয়ারবাজার উভয় খাতেই।
মঙ্গলবার ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপি নেমে গেছে প্রতি ডলারে ৮৮ দশমিক ১৬ রুপিতে যা রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
গত সোমবার এক পর্যায়ে রুপি আরও কমে দাঁড়ায় ৮৮ দশমিক ৩৩-এ, যদিও দিনের শেষে সামান্য ঘুরে ৮৮ দশমিক ১০-এ স্থির হয়। ফরেক্স ব্যবসায়ীদের মতে, ধারাবাহিকভাবে বৈদেশিক তহবিল প্রত্যাহার ও ডলারের বাড়তি চাহিদাই রুপির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে।
গত তিন সেশনে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় শেয়ারবাজার থেকে প্রায় ২.৪ বিলিয়ন ডলার তুলে নিয়েছেন। সিআর ফরেক্স অ্যাডভাইজর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমিত পাবাড়ি বলেন, ‘এ ধরনের ব্যাপক বহিঃপ্রবাহ শুধু রুপিকে চাপে ফেলছে না, বরং স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ প্রবণতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপে ভারতীয় রপ্তানির প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রুপির জন্য ৮৮ দশমিক ৫০ বড় প্রতিরোধ সীমা হতে পারে আর ৮৭ দশমিক ৫০ সমর্থন সীমা। তবে মার্কিন শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটতে না পারায় ঝুঁকি এখনো নিম্নমুখী।
গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে ডলারের সূচক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭ দশমিক ৮৪-তে। একই সময়ে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ০.৪৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬৮ দশমিক ৪৫ ডলার।
ভারতের শেয়ারবাজারে অবশ্য দিনের শুরুতে কিছুটা উত্থান দেখা গেছে। সেনসেক্স বেড়েছে ২০৭ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট, দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৫৭১ দশমিক ৯৪-এ। নিফটি সূচক বেড়েছে ৬০ দশমিক ৮ পয়েন্ট, দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৬৮৫ দশমিক ৮৫-এ। তবে সোমবার বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ১ হাজার ৪২৯ কোটি রুপির শেয়ার বিক্রি করেছেন।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত সোমবার দাবি করেছেন, ভারত মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক শূন্যে নামানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তবে তার মন্তব্য, এই সিদ্ধান্ত অনেক দেরিতে এসেছে। তিনি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশালে লেখেন, ‘ওরা এখন শুল্ক শূন্যে নামানোর প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু সময় ফুরিয়ে আসছে। অনেক বছর আগেই এটা করা উচিত ছিল। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এতদিন ধরে ‘একতরফা বিপর্যয়’ ছাড়া কিছুই নয়।’


আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্প, ৮ শতাধিক নিহত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং একাধিক আফটারশকের প্রভাবে ৮০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে বিশাল উদ্ধার অভিযান চলছে।

রিখটার স্কেলে ৬.০ মাত্রার এই ভূমিকম্পটি গত রোববার স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে পাকিস্তান সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানের দুর্গম উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কুনার প্রদেশে আঘাত হানে। এতে কাবুল থেকে প্রতিবেশী পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ পর্যন্ত কেঁপে ওঠে।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য অনুসারে, ১২ লাখেরও বেশি মানুষ সম্ভবত খুব শক্তিশালী কম্পন অনুভব করেছেন।

তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের পূর্বে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে শুধুমাত্র প্রত্যন্ত কুনার প্রদেশেই প্রায় ৮০০ জন নিহত এবং ২ হাজার ৫০০ জন আহত হয়েছেন। তিনি আরও জানান, পার্শ্ববর্তী নাঙ্গারহার প্রদেশে আরও ১২ জন নিহত এবং ২৫৫ জন আহত হয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুল মতিন কানি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অসংখ্য বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।’

আফগানদের বেশিরভাগই মাটির ও ইটের তৈরি নিচু বাড়িতে বাস করেন। সেগুলো অল্পতেই ধসে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে।

জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে সতর্ক করে বলেছে, দুর্গম কুনার প্রদেশের কিছু গ্রামে রাস্তাঘাট বন্ধ থাকার কারণে এখনো পৌঁছানো যায়নি।

তালেবান কর্তৃপক্ষ এবং জাতিসংঘ দুর্গত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৪০টি বিমানে উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

কুনারের নুরগাল জেলার কৃষি বিভাগের সদস্য ইজাজ উলহাক ইয়াদ বলেন, ‘প্রচণ্ড ভয় এবং উত্তেজনা বিরাজ করছে, শিশু এবং নারীরা চিৎকার করছিল। আমরা আমাদের জীবনে কখনো এমন কিছু অনুভব করিনি।’

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান ও পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরে আসা ৪০ লাকেরও বেশি আফগানের মধ্যে ভূমিকম্পবিধ্বস্ত গ্রামে বসবাসকারী অনেকেই রয়েছেন।

ইউএসজিএস অনুসারে, নাঙ্গারহার প্রদেশের জালালাবাদ শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে ভূপৃষ্ঠের ৮ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আজ ভোরে দেশটিতে আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর আমি আফগানিস্তানের জনগণের সঙ্গে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছি।’

এদিকে, প্রাথমিক ভূমিকম্পের পর সারারাত ধরে কমপক্ষে পাঁচটি আফটারশক অনুভূত হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালীটি ছিল ভোর ৪টার ঠিক পরে ৫.২ মাত্রার।

আফগানিস্তানে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়, বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালায়। সেখানে ইউরেশিয়ান এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল।

প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত শুক্রবার থেকে শনিবার রাতভর নাঙ্গারহার প্রদেশে বন্যাও দেখা দিয়েছে, যেখানে পাঁচজন নিহত এবং ফসল-সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে।

এর আগে ২০২৩ সালের অক্টোবরে পশ্চিম হেরাত প্রদেশ ৬.৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়। এর ফলে তখন ১ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয় এবং ৬৩ হাজারের বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়।


শি, পুতিন ও মোদির ঐক্যের বার্তা

আপডেটেড ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১১:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের শুরু করা বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গতকাল সোমবার বিশ্ব দেখলো- তিন শীর্ষ নেতার করমর্দন, হাসি ও বন্ধুর মতো অভিবাদন। চীনে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে এমন দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছেন আলোকচিত্রীরা। ওই তিন শীর্ষ নেতা হলেন শি চিনপিং, ভ্লাদিমির পুতিন ও নরেন্দ্র মোদি।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দৃশ্যের শুরুতেই দেখা যায় সভা কক্ষে হাত ধরে প্রবেশ করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানে তখন বিশ্বের অন্য দেশের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। পুতিন ও মোদি কক্ষে প্রবেশ করে সরাসরি চীনের প্রসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের কাছে যান। একে অপরের সঙ্গে হাত মেলান। তখন ওই তিনজনকে ঘিরে অনুবাদকসহ অন্যদের একটি বৃত্ত তৈরি হয়। কথোপকথনের এক পর্যায়ে পুতিন হেসে ওঠেন। অট্টহাসি হাসেন নরেন্দ্র মোদিও।

পুতিন ও মোদির ওই কক্ষে প্রবেশের একটি ভিডিও প্রচার করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিও। সেখানে দেখা যায়, ওই দুই নেতার হেঁটে আসার সময় পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। টেলিভিশনে তখন শাহবাজ শরিফকে বৃত্ত দ্বারা চিহ্নিত করে দেখানো হয়। টেলিভিশনটির লাইভ অনুষ্ঠান চলার সময় ভিডিওটির ওই অংশটুকু একাধিকবার দেখানো হয়।

তিন বৃহৎ অর্থনীতির দেশের প্রধানদের এমন বন্ধুত্বপূর্ণ কথোপকথন কী বার্তা দেয়? বিশ্লেষকরা বলছেন, ওই দৃশ্য একাধিক বার্তা বহন করে। শি চিনপিং ও ভ্লাদিমির পুতিনের বন্ধুত্ব দেখায় তারা যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ জানানো পরিবর্তনশীল বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আছেন। আর নরেন্দ্র মোদি দেখাতে চেয়েছেন চীন, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্ব ঠিক কতটা গভীর।

কোনো কোনো সম্মেলনে কিছু দৃশ্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হচ্ছে। এমন মন্তব্য করেছেন ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর তক্ষশিলা ইনস্টিটিউশনের ইন্দো-প্যাসিফিক স্টাডিজের প্রধান মনোজ কেওয়ালরামানি। তিনি বলছেন, এখন হোয়াইট হাউসকে বুঝতে হবে যে তাদের নেওয়া নীতিই অন্য দেশগুলোকে বিকল্প খুঁজতে বাধ্য করছে।

চীনের তিয়ানজিনে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) ওই সম্মেলন দেখাচ্ছে, বাণিজ্য যুদ্ধের মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভূরাজনীতিতে যে ব্যাঘাত ঘটিয়েছেন, তা অনেকগুলো দেশকে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসেছে। ওই সম্মেলনে ২০টিরও বেশি দেশ অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূরাজনীতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ব্যাঘাত ঘটিয়েছেন, সেটিই এখন চীন-রাশিয়াকে একটি প্ল্যাটফর্মে নেতৃত্বে দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলো এখন অংশীদারত্বের সম্পর্ক গভীর করছে।

এদিকে এসসিও সম্মেলনের আগে তিন নেতাকেই ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোদি সেই ছবি পোস্ট করেছেন।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মোদি কিছু একটা বলছেন- তা যেন মনোযোগ দিয়ে শুনছেন পুতিন ও শি। সেসময় শিকে মোদির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে তারা কী নিয়ে আড্ডায় মজেছেন তা জানা যায়নি।

এছাড়া আরও কিছু ছবি পোস্ট করেছেন মোদি। সেইসব ছবিতে মোদি-পুতিনকে করমর্দন ও কোলাকুলি করতে দেখা যাচ্ছে এবং তারা দুইজনে ছিলেন হাস্যোজ্বল। মোদি তার পোস্টে লিখেছেন, পুতিনের সঙ্গে দেখা করা সবসময় আনন্দের।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের আবহে মোদি-পুতিন এবং শির ওই ঘনিষ্ঠতাকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ধাক্কা খেয়েছে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার কারণেই ওই শুল্কের বোঝা চাপানো হয়েছে, দাবি ওয়াশিংটনের।

তবে চীনের উপর কোনও বাড়তি শুল্ক এখনো আরোপ করা হয়নি। ওই পরিস্থিতিতে তিন রাষ্ট্রপ্রধানের ঘনিষ্ঠতায় ত্রিদেশীয় কোনো অক্ষ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে কিনা, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।

শি’র সঙ্গে ইতোমধ্যে বাণিজ্য নিয়ে কথা বলেছেন মোদি। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস রিপোর্ট করেছে, বৈঠকে প্রেসিডেন্ট শি মোদিকে বলেন, চীন ও ভারত পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়– বরং তারা হলো সহযোগিতার অংশীদার (কোঅপারেশন পার্টনারস)।

দুদেশ যে পরস্পরের কাছে হুমকি নয়, বরং একে অন্যের কাছে ‘উন্নয়নের সুযোগ’, সে কথাও বলেছেন শি।


গাজার মানবিক পরিস্থিতি ‘অবিলম্বে’ উন্নয়নে ইসরাইলের প্রতি বার্লিনের আহ্বান

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

গাজায় ‘অবিলম্বে’ মানবিক পরিস্থিতির উন্নতি করতে জার্মান সরকারের মানবাধিকার ও মানবিক সহায়তা প্রতিনিধি আহ্বান জানান। ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি অঞ্চল সফরের আগে সোমবার তিনি এ কথা বলেন।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে এএফপি এই খবর জানায়।

সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত ইসরাইল জার্মানির রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সমর্থন পেয়ে আসছিল। তবে গাজায় মানবিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎসের সুর ইসরাইলের প্রতি কঠোর হয়েছে।

জাতিসংঘ গত মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে গাজায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে। এর আগে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছিল যে যুদ্ধবিধ্বস্ত এই অঞ্চলের পাঁচ লাখ মানুষ ‘ভয়াবহ’ পরিস্থিতির মুখোমুখি রয়েছে।

জার্মানির মের্ৎস কনজারভেটিভ সরকার জোটের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস পার্টির আইনপ্রণেতা লার্স কাস্তেলুচ্চি বলেন, ‘ইসরাইল সরকারকে অবশ্যই অবিলম্বে, পুরোপুরি ও টেকসইভাবে এবং মানবিক নীতি ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী গাজার মানবিক পরিস্থিতি উন্নত করতে হবে।’

তিনি এই সংঘাতে আটকে পড়া বেসামরিক নাগরিক, বিশেষ করে শিশুদের ‘অপরিসীম’ দুর্ভোগের নিন্দা করেছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘এই দুর্ভোগের জন্য তাদের কোনো দোষ বা দায় নেই।’

কাস্তেলুচ্চি আরও বলেন, গাজায় জার্মানির মানবিক সহায়তা ‘কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে’ তবে যাদের সাহায্যের প্রয়োজন তাদের কাছে তা না পৌঁছালে এর কোন অর্থ নেই।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরাইলের নিরাপত্তার প্রতি জার্মানির ‘বিশেষ দায়িত্ব’ রয়েছে।

এছাড়া হামাসের হাতে জিম্মি থাকা বন্দীদের ‘অবিলম্বে মুক্তি’ দেওয়ারও দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি তিনি যুদ্ধবিরতির জরুরি প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান’-এর পক্ষে কথা বলেন।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরাইলের ওপর হামাসের হামলার পর গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়। ইসরাইলের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ওই হামলায় ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।

ওই হামলায় ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়, যাদের মধ্যে ৪৭ জন এখনও গাজায় রয়েছে। ধারণা করা হয়, তাদের মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত আছেন।

জাতিসংঘের নির্ভরযোগ্য সূত্র অনুযায়ী, হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরাইলের পাল্টা হামলায় অন্তত ৬৩ হাজার ৪৫৯ ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।


ট্রাম্পের ভারত সফরের পরিকল্পনা বাতিল

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বছরের শেষ দিকে ভারত সফরের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু সেই পরিকল্পনাটি তিনি বাতিল করেছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের অনলাইনে শনিবার প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে এ দাবি করা হয়েছে। কোয়াড সম্মেলনে যোগ দেওয়ার উদ্দেশে সফরটির পরিকল্পনা ছিল।

নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণটির নাম ‘দ্য নোবেল প্রাইজ অ্যান্ড আ টেস্টি ফোন কল: হাউ দ্য ট্রাম্প-মোদি রিলেশনশিপ আনরাভেল্ড’ (নোবেল পুরস্কার ও এক তিক্ত ফোনকল: ট্রাম্প-মোদি সম্পর্কের যেভাবে অবনতি হলো)।

এই বিশ্লেষণে ট্রাম্পের সফরসূচির বিষয়ে জানাশোনা আছে এমন কর্মকর্তাদের বরাতে বলা হয়, ‘ট্রাম্প (গত ১৭ জুন ফোনালাপে) মোদিকে বলেছিলেন, চলতি বছরের শেষের দিকে কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে আসবেন। কিন্তু শরতে ট্রাম্পের ভারত সফরের এই পরিকল্পনা এখন আর নেই।’

নিউইয়র্ক টাইমসের এই দাবির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পরদিন কোয়াডভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক আয়োজন করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। সেই বৈঠকেই চলতি বছরের শেষের দিকে ভারতে কোয়াডের শীর্ষ বৈঠকের সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত করা হয়েছিল।

কিন্তু গত কয়েক মাসে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লির সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এই বিশ্লেষণে ট্রাম্প ও মোদির সম্পর্ক কীভাবে অবনতি হয়েছে, তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

ট্রাম্প বারবার দাবি করে আসছিলেন, গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের চার দিনের সংঘাত বন্ধে তিনি মধ্যস্থতা করেছেন। পাকিস্তান ট্রাম্পের মধ্যস্থতার কথা স্বীকার করলেও ভারত তা অস্বীকার করে আসছিল। তা সত্ত্বেও গত ১৭ জুন মোদির সঙ্গে ফোনালাপে ট্রাম্প সেই দাবির পুনরাবৃত্তি করেন। নিউইয়র্ক টাইমসের দাবি, এতে মোদির ধৈর্যচ্যুতি ঘটে।

এই ফোনালাপের আগে ওই মাসেই কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭–এর শীর্ষ সম্মেলনের এক ফাঁকে মোদি-ট্রাম্প বৈঠক করার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাম্প আগেভাগে দেশে ফেরায় তাদের পূর্বনির্ধারিত সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। মূলত এই নির্বারিত বৈঠক না হওয়ায় ১৭ জুন তারা ফোনালাপ করেছিলেন। কিন্তু ৩৫ মিনিটের এই ফোনালাপ দুই নেতার সম্পর্ক ভালো করার পরিবর্তে আরও তিক্ত করেছে।

তবে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লির সম্পর্ক তিক্ত হওয়ার পেছনে ভারতের পণ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্কও বড় ভূমিকা রেখেছে। গত বৃহস্পতিবার এই শুল্ক কার্যকর শুরু হয়েছে।


চীন-ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ: শি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং বলেছেন, বিশ্বের জনবহুল ও সভ্য দেশ হিসেবে চীন-ভারতের বন্ধু হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। উভয় দেশ ভালো প্রতিবেশী হয়ে গ্লোবাল সাউথে ভূমিকা রাখতে পারে।

গতকাল রোববার চীনের তিয়ানজিন শহরে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করেন এই দুই নেতা। সেখানে মোদিকে চীনা প্রেসিডেন্ট এসব কথা বলেন বলে জানিয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট ও টাইমস অব ইন্ডিয়া।

গ্লোবাল সাউথ বলতে অপশ্চিমা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বোঝানো হয়। শি চিন পিং বলেন, ‘বিশ্ব এখন পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চীন ও ভারত দুটি সবচেয়ে সভ্য দেশ। আমরা বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দুটি দেশ এবং গ্লোবাল সাউথের অংশ। তাই আমাদের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, ভালো প্রতিবেশী হওয়া এবং ড্রাগন ও হাতির একত্রিত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ ড্রাগন ও এলিফ্যান্ট হলো এই দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রতীক।

তিনি আরও বলেন, উভয় দেশের উচিত কৌশলগত ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পর্ক পরিচালনা করা।

চীনের প্রেসিডেন্ট এই বছর চীন-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপনের কথা তুলে ধরেন এবং বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই বহুপাক্ষিকতা, বহুমেরু বিশ্ব এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আরও বেশি গণতন্ত্র বজায় রাখার জন্য আমাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং এশিয়া ও বিশ্বজুড়ে শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মোদির এই সাক্ষাৎকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ভারতে। শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধ তৈরির পর ভারত চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে চলা দীর্ঘদিনের বিরোধ নিষ্পত্তির ওপর জোর দিচ্ছে নয়াদিল্লি।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বলছে, প্রায় সাত বছর পর চীন সফর করছেন মোদি। তিনি মূলত এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছেন। এই সম্মেলনকে বেইজিংয়ের নেতৃত্ব প্রদর্শন ও ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে গ্লোবাল সাউথের ঐক্য গড়ে তোলার সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এদিকে সাইডলাইন বৈঠকে উভয়পক্ষের বিশ্বাস, সম্মান ও সংবেদনশীলতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে কথা বলেছেন নরেন্দ্র মোদি। এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোদি বলেছেন, সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের পর শান্তি ও স্থিতিশীলতার একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, শি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদি তার উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, ভারত পারস্পরিক বিশ্বাস, সম্মান এবং সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে চীনের সঙ্গে তার সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিব্বতকে চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদি আরও বলেন, মাউন্ট কৈলাস ও মানসারোভাতে তীর্থযাত্রা আবারও শুরু হবে। উভয় দেশের মধ্যে পুনরায় সরাসরি বিমান চলাচলের পরিকল্পনা নিয়েও এগোচ্ছে ভারত।

এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন ২০টিরও বেশি দেশের নেতারা। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই এশিয়া আঞ্চলের। রোববার চীনে পৌঁছেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও। তিনিসহ অন্যান্য নেতারা বেইজিংয়ে একটি সামরিক প্রদর্শনীতেও অংশ নেবেন।

প্রসঙ্গত, মস্কোর তেল কেনার শাস্তি হিসেবে ওয়াশিংটন ভারতীয় পণ্যে যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, তা কার্যকর হওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় চীন-ভারত এ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হল। দুই নেতা এখন পশ্চিমা চাপের বিপক্ষে এশিয়ার দুই গুরুত্বপূর্ণ পরাশক্তি যে ঐক্যবদ্ধ তা দেখাতে চাইছেন, বলছেন বিশ্লেষকরা।

তবে গত বছর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। দুই দেশ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে একমত হয়েছে বলেও মোদি জানিয়েছেন, তবে এ নিয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।

গত বছর শি চিন পিং ও মোদি রাশিয়াতে বরফগলানো এক বৈঠকে সীমান্তে টহল নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছান। এরপর থেকে বিশ্বের শীর্ষ দুই জনবহুল দেশের মধ্যে বিবাদ কমতে শুরু করে; সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তারা একে অপরের আরও কাছে এসেছে ওয়াশিংটনের দেওয়া শুল্কের চাপে পড়ে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ককে মোকাবেলায় দিল্লি যখন বিকল্প পথ খুঁজতে শুরু করে, তখন বেইজিংকে তারা পাশে পায়।

দুই দেশের মধ্যে শিগগিরই সরাসরি বিমান চলাচল ফের চালু হবে বলে মোদী জানিয়েছেন। এটি ২০২০ সাল থেকে বন্ধ ছিল। তবে ঠিক কখন থেকে এই সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তা বলেননি।

ভারতে দুর্লভ মৌল, সার ও টানেল বোরিং মেশিন রপ্তানিতে বিধিনিষেধ ছিল চীনের, ভারতে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র সফরের সময় বেইজিং তা তুলে নিতে রাজি হয়।

ওয়াশিংটন ভারতীয় পণ্যে যে চড়া শুল্ক আরোপ করেছে তারও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে চীন, এ ইস্যুতে বেইজিং ‘দৃঢ়ভাবে ভারতের পাশে থাকবে’ বলে চলতি মাসেই নয়া দিল্লিতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত সু ফেইহং মন্তব্য করেছিলেন।

দশকের পর দশক ধরে ওয়াশিংটন এশিয়ায় বেইজিংয়ের প্রভাব মোকাবেলায় নয়া দিল্লিকে কাছে টানার চেষ্টা করেছে। কিন্তু দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনের সময় তার উল্টোটাই দেখা যাচ্ছে।


গাজা সিটি ছেড়ে অন্যত্র যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা

গাজায় ইসরায়েলি হামলা জোরদার, একদিনেই নিহত ৭৭
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে আরও ৭৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৭ জনই গাজা সিটির বাসিন্দা ছিলেন। এছাড়া নিহতদের মধ্যে ১১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন রুটি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়। গতকাল রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ ও জোরপূর্বক উচ্ছেদ অভিযানের মুখে গাজা নগরী ছেড়ে শত শত ফিলিস্তিনি পালাচ্ছেন। হাতে গোনা সামান্য মালপত্র ট্রাক, ভ্যান ও গাধার গাড়িতে তুলে তারা এলাকা ছাড়ছেন।

নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের পশ্চিম দিকে দেইর আল-বালাহর কাছে বহু পরিবার খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ী তাবু ফেলতে শুরু করেছে। এদের অধিকাংশকেই একাধিকবার ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়েছে।

আগস্টের শুরু থেকে ইসরায়েলি সেনারা হামলা জোরদার করেছে গাজা সিটতে। শহর দখল ও প্রায় ১০ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করার লক্ষ্যেই এই অভিযান— এমন আশঙ্কা জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)।

গত শুক্রবার ইসরায়েল জানায়, তারা নগরী দখলের ‘প্রাথমিক ধাপ’ শুরু করেছে এবং এটিকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ ঘোষণা করেছে।

গত শনিবার হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ওই দিন একদিনেই গোটা গাজায় ৭৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শুধু গাজা নগরীতেই নিহত ৪৭ জন। এর মধ্যে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন রুটি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়।

অন্যদিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আবাসিক ভবনে হামলায় সাতজন নিহত হন। ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারকাজ চালাতে দেখা গেছে স্বেচ্ছাসেবকদের।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, ‘গাজা নগরীজুড়ে হামলা আরও বাড়ছে। ঘরবাড়ি, কমিউনিটি সেন্টার সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবনধারার ভিত্তি ভেঙে পড়ছে। এ সব ঘটছে যখন মানুষ দুর্ভিক্ষ, অনাহার আর পানিশূন্যতার মধ্যে রয়েছে। পুরো পরিস্থিতি মানবিক বিপর্যয়ে গড়াচ্ছে।’

গাজা সংঘাতে ৯০০ ইসরায়েলি সেনা নিহত

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে শনিবার লড়াই চলাকালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) এক রিজার্ভ সদস্য নিহত হয়েছেন। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নিহত সৈনিক সার্জেন্ট ফার্স্ট ক্লাস (রিজার্ভ) এরিয়েল লুবলিনার (৩৪)। তিনি চলমান যুদ্ধ শুরুর পর থেকে নিহত হওয়া ৯০০তম ইসরায়েলি সেনা।

তার মৃত্যুর পরিস্থিতি তদন্ত করা হচ্ছে। আইডিএফ-এর প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে যে, দুর্ঘটনাবশত অন্য একজন সৈনিকের ছোড়া গুলিতে তিনি প্রাণ হারান।

গাজার খান ইউনিসে নিহত হন লুবলিনার। তিনি উত্তর ইসরায়েলের কিরিয়াত বিয়ালিকের বাসিন্দা ছিলেন। লুবলিনার প্রায় ১০ বছর আগে ব্রাজিল থেকে ইসরায়েলে আসেন। তার স্ত্রী বারবারা স্পেন থেকে আসা একজন অভিবাসী। লিওর নামে তাদের নয় মাস বয়সি একটি ছেলে আছে।

টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লুবলিনারের রিজার্ভ ডিউটির পর্ব শেষ করার কথা ছিল এবং পরিবারটি ছুটি কাটাতে ব্রাজিল যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল। জুন মাস থেকে তিনি এই পর্বে ডিউটিতে ছিলেন।

এর আগে শুক্রবার রাতে উত্তর গাজার জায়তুন এলাকায় সাঁজোয়া যানে বোমা বিস্ফোরণে সাতজন ইসরায়েলি সেনা আহত হন। সেনাদের বহনকারী ওই যানটি একটি রাস্তার পাশে পুতে রাখা বিস্ফোরক যন্ত্রের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে।

আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা কিছুটা গুরুতর, বাকিদের আঘাত আশঙ্কাজন নন। তাদের মধ্যে পাঁচ সেনাকে চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

হামাসের মুখপাত্রকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলা

গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দাকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কেএএন-এর গত শনিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই খবর জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজা সিটিতে হামাসের সামরিক শাখার মুখপাত্র আবু ওবায়দাকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, গাজা সিটিতে হামাসের এক ‘গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে’ লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। বিবৃতিতে বিস্তারিত কিছু জানানো না হলেও, একাধিক হিব্রু সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে যে, হামাসের দীর্ঘদিনের মুখপাত্র হুদাইফা সামির আবদুল্লাহ আল-কাহলৌত, যিনি আবু ওবায়দা নামে পরিচিত, তাকে লক্ষ্য করেই হামলাটি চালানো হয়েছিল।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই হামলায় তারা নির্ভুল গোলাবারুদ, আকাশপথে নজরদারি এবং অতিরিক্ত গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করেছে। ইসরায়েলের চ্যানেল ১৩ জানিয়েছে, এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিলেন আবু ওবায়দা। ইসরায়েলের এই দাবির বিষয়ে হামাস তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং রহস্যময় ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। তিনি সর্বদা মুখোশ পরে থাকেন এবং তার আসল পরিচয় ও অবস্থান সম্পর্কে কারও কোনো তথ্য জানা নেই। এর আগেও ইসরায়েল বেশ কয়েকবার তাকে লক্ষ্যবস্তু করার চেষ্টা করেছে।

এদিকে, চিকিৎসা সূত্র জানায়, গত শনিবার ভোরে গাজা সিটির পশ্চিমাঞ্চলীয় আল-রিমাল এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলায় সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ভবনটিতে নারী, শিশু এবং বাস্তুচ্যুত মানুষ বসবাস করছিল।


ইসরায়েলের ২১ স্থাপনা ধ্বংসের দাবি ইরানের

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ইরানের বেসিজ সংগঠনের প্রধান জানিয়েছেন, গত জুন মাসে ১২ দিনের যুদ্ধে ইরান দখলদার ইসরায়েলের ২১টি কৌশলগত স্থাপনা ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। আর ইরানের এই টার্গেটগুলো এমন এক নির্ভুলতায় সম্পন্ন হয়েছে, যার ভ্রান্তি এক মিটারেরও কম। খবর মেহের নিউজের।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলামরেজা সোলেইমানি গতকাল রোববার জানান, শত্রুপক্ষ ওই ১২ দিনের যুদ্ধ উসকে দিয়েছিল এবং একইসঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকেও সক্রিয় করেছিল। যাতে ভেতর থেকে ও বাইরে থেকে ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যায়। কিন্তু তাদের সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।

তার ভাষায়, ‘এই ১২ দিনে আমরা জায়নিস্ট শাসনের ২১টি গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থাপনা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছি। নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর ভরসা করে আমরা আমাদের টার্গেট ব্যাংক সম্পন্ন করেছি, যার নির্ভুলতা এক মিটারেরও কম। আজ আমরা তাদের দুর্বল দিকগুলো পুরোপুরি জানি এবং অধিকৃত ভূখণ্ডের প্রতিটি বর্গমিটারে কী ঘটছে সে সম্পর্কে অবগত’।

বেসিজ সংগঠনের প্রধান এ সময় সতর্ক করে বলেন, ভবিষ্যতে যদি আবার কোনো আগ্রাসন ঘটে, তাহলে ইরান কেবল জায়নিস্টদের নয় বরং তাদের সমর্থকদেরও দায়ী করবে।

গোলামরেজা সোলেইমানি বলেন, ‘যান এবং খুঁজে দেখুন, সাম্প্রতিক যুদ্ধে কত দেশ ইসরাইলকে রক্ষা করতে অংশ নিয়েছিল এবং কত হাজার টন বোমা ও বিস্ফোরক তারা একটি নিরস্ত্র জাতির ওপর বর্ষণ করার জন্য জায়নিস্ট শাসনকে দিয়েছে। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন হবে’।

গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক ও অঘোষিত আগ্রাসন শুরু করে, যা ১২ দিনের যুদ্ধকে উসকে দেয়। এই যুদ্ধে অন্তত ১,০৬৪ জন নিহত হয়, যার মধ্যে সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সাধারণ বেসামরিক নাগরিকও ছিলেন।

এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রও যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেয় এবং ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়, যা আন্তর্জাতিক আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন।

প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপে ইরানি সশস্ত্র বাহিনী অধিকৃত ভূখণ্ডজুড়ে কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়, পাশাপাশি কাতারের আল-উদেইদ ঘাঁটিতেও (যা পশ্চিম এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি) আঘাত হানে।

গত ২৪ জুন ইরান তার সফল প্রতিশোধমূলক অভিযানের মাধ্যমে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের ওপরই চাপে ফেলে এবং আগ্রাসন থামাতে বাধ্য করে।


সি আয়োজিত সম্মেলনে যোগ দিলেন পুতিন ও মোদি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

রাশিয়া ও ভারতের রাষ্ট্রনেতাসহ প্রায় ২০টি ইউরেশীয় দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ চীনে পৌঁছেছেন।

দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর আমন্ত্রণে এক সম্মেলনে যোগ দিতে তারা তিয়ানজিনে একত্রিত হয়েছেন।

উদ্দেশ্য আঞ্চলিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে চীনকে কেন্দ্র বিন্দুতে রাখা।

তিয়ানজিন থেকে এএফপি জানায়, এই সম্মেলনের নাম সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও), চলবে সোমবার পর্যন্ত। উত্তরাঞ্চলীয় বন্দরনগরী তিয়ানজিনে এই শীর্ষ সম্মেলনকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এর কয়েকদিন পরই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বেইজিংয়ে এক বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে।

এসসিও’র সদস্য দেশগুলো হলো- চীন, ভারত, রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও বেলারুশ। এছাড়াও, আরও ১৬টি দেশ পর্যবেক্ষক বা ‘সংলাপ সহযোগী’ হিসেবে এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।

রোববার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তিয়ানজিনে পৌঁছান। তার সঙ্গে ছিলেন শীর্ষ রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, সি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।

চীন ও রাশিয়া এসসিও-কে প্রায়ই ন্যাটোর বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফেরার পর এ বছরের সম্মেলনটি প্রথম অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

শনিবার সিনহুয়াতে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, এই সম্মেলন ‘সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ ও হুমকি মোকাবিলায় এসসিও-এর সক্ষমতা বাড়াতে এবং সমগ্র ইউরেশীয় অঞ্চলে সংহতি জোরদার করতে’ সহায়ক হবে।

পুতিন আরো বলেন, ‘এসব উদ্যোগ বিশ্বকে আরো ন্যায়পরায়ণ ও বহুমুখী শক্তির বিশ্বব্যবস্থার দিকে এগিয়ে নেবে।’

চীনের তাইওয়ান দাবি ও রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণের কারণে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতিতে বেইজিং ও মস্কো এসসিও-এর মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে চাইছে।

সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ডিলান লো বলেন, ‘চীন দীর্ঘদিন ধরে এসসিও-কে একটি পশ্চিমাবিরোধী ক্ষমতাধর জোট হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। তারা দাবি করে এই জোট এক নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তুলছে যা আরো গণতান্ত্রিক।’

২০০১ সালে এসসিও প্রতিষ্ঠার পর এবারই জোটটির সবচেয়ে বড় আসর বসেছে। এতে যোগ দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানসহ ২০জনের বেশি শীর্ষ নেতা।

লো আরও বলেন, ‘এত বিশাল সংখ্যক দেশের অংশগ্রহণ প্রমাণ করছে যে চীনের প্রভাব বাড়ছে এবং পশ্চিমা-বহির্ভূত দেশগুলোর জন্য এসসিও একটি আকর্ষণীয় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।’

এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের লিজি লি বলেন, বেইজিং এসসিও’র মাধ্যমে ‘প্রভাব বিস্তার করার এবং এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করবে যে ইউরেশিয়ার নিজের প্রতিষ্ঠান আছে এবং নিজের নিয়মে খেলা চলে।’

তিনি এএফপিকে বলেন, ‘চীন এটিকে সার্বভৌমত্ব, একে অন্যের ওপর হস্তক্ষেপ না করা এবং বহুমুখী শক্তির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা ভিন্ন ধরনের এক ব্যবস্থা হিসেবে উপস্থাপন করছে। দেশটি এটিকে একটি আদর্শ মডেল হিসেবে প্রচার করছে।

শনিবার তিয়ানজিনে সি কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেতসহ বিভিন্ন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন।

পুতিন সোমবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করবেন। সেখানে যথাক্রমে আলোচনা হবে ইউক্রেন সংঘাত এবং তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে।

জাপানের সোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পূর্ব এশিয়া বিশেষজ্ঞ লিম তাই ওয়েই বলেন, ‘বিশ্ব মঞ্চের একজন খেলোয়াড় হিসেবে এসসিও থেকে পাওয়া সব ধরনের সুবিধা রাশিয়ার প্রয়োজন। পাশাপাশি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির সমর্থনও তার দরকার।’

লিম এএফপিকে বলেন, ‘রাশিয়া ভারতকেও নিজেদের পক্ষে টানতে চাইছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য বিরোধ এই সুযোগ তৈরি করেছে।’

এই সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে যুক্তরাষ্ট্র শাস্তি হিসেবে ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী শনিবার তিয়ানজিনে পৌঁছান। এটি ২০১৮ সালের পর তার প্রথম চীন সফর।

বিশ্বের এই দুই জনবহুল দেশ দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে প্রভাব বিস্তারে একে অপরের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী। ২০২০ সালে তাদের মধ্যে সীমান্তে এক প্রাণঘাতী সংঘর্ষও হয়েছিল।

গত বছরের অক্টোবরে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ সম্মেলনে মোদী পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সি-র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং এর মাধ্যমেই সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে।


ইরানে এ বছর ৮৪১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর : জাতিসংঘ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

জাতিসংঘ আজ শুক্রবার জানিয়েছে, চলতি বছর ইরানে এ পর্যন্ত ৮০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে জনগণকে ভয় দেখাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ।

জেনেভা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

জাতিসংঘের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি জেনেভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘ইরান এ বছরের শুরু থেকে গতকাল ২৮ আগস্ট পর্যন্ত কমপক্ষে ৮৪১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে।’ প্রকৃত পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, ‘শুধু জুলাই মাসেই ইরান কমপক্ষে ১১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে, যা ২০২৪ সালের জুলাই মাসের দ্বিগুণ।’

জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেন, ‘বিপুল সংখ্যক মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিষয়টি রাষ্ট্রীয়ভাবে ভীতি প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের পদ্ধতিগত ধরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।’ জাতিগত সংখ্যালঘু ও অভিবাসীরা এর শিকার হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

শামদাসানি বলেন, ‘ইরানে এই মুহূর্তে ১১ ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়ে আছেন। তাদের মধ্যে ৬ জন নির্বাসিত বিরোধী দল পিপলস মুজাহিদীন অর্গানাইজেশন অব ইরানের (এমইকে) সদস্যপদ গ্রহণ করায় ‘সশস্ত্র বিদ্রোহের’ অভিযোগে অভিযুক্ত।’

তিনি আরো বলেন, ‘মানুষের জীবনের জন্য যে অধিকার রয়েছে, মৃত্যুদণ্ড তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং মানবিক মর্যাদার সঙ্গেও অসঙ্গতিপূর্ণ।’


কমালা হ্যারিসের সিক্রেট সার্ভিস সুরক্ষা প্রত্যাহার : হোয়াইট হাউস

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

ট্রাম্প প্রশাসন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সিক্রেট সার্ভিস সুরক্ষা প্রত্যাহার করেছে। হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা শুক্রবার এ কথা জানিয়েছেন।

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, সিএনএন রিপোর্ট করেছে যে হ্যারিসের জন্য তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কর্তৃক অনুমোদিত বর্ধিত সিক্রেট সার্ভিস সুরক্ষার মেয়াদ বাতিল করেছে প্রশাসন।

ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তার ছয় মাসের সুরক্ষার মেয়াদ ২১ জুলাই শেষ হয়েছে।


মোদি ‘অত্যন্ত ভয়ংকর ব্যক্তি’: ট্রাম্প

আমার ফোনেই থেমেছে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত, বলেন তিনি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘অত্যন্ত ভয়ংকর ব্যক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, গত মে মাসে জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে হামলাকে ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের যে সংঘাত শুরু হয়েছিল, তা শুধু তার ফোনকলের মাধ্যমেই থেমেছিল।
স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রিসভার বৈঠকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত শুরু হলে আমি মোদিকে ফোন করি। তাকে জিজ্ঞেস করি, পাকিস্তানের সঙ্গে কী চলছে? আমি তাকে একজন অত্যন্ত ভয়ংকর মানুষ মনে করি। ফোনকলে তার রাগ ও ঘৃণা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। দুদেশের মধ্যে এই বৈরিতা অবশ্য বহু পুরোনো—শত শত বছরের শত্রুতার মতো।’
ট্রাম্প আরও জানান, সেই ফোনকলে তিনি মোদিকে সতর্ক করেছিলেন—আমি বলেছিলাম, আমি আপনাদের সঙ্গে কোনো বাণিজ্যচুক্তি করতে চাই না। যদি সংঘাত পরমাণু যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায়, তাহলে সেটাই আপনাদের পরিণতি হবে। আমি আরও বলেছিলাম, আগামীকাল যদি ফোন না করেন এবং সংঘাত না থামান তাহলে শুধু বাণিজ্যচুক্তিই বাতিল করব না, এমন শুল্ক আরোপ করব যাতে আপনাদের মাথা ঘুরে যাবে।’
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়। এরপর ৪ মে ভারত শুরু করে ‘অপারেশন সিঁদুর’, যেখানে লস্কর-ই-তইয়বা (লেট) এবং জইশ-ই মোহাম্মদ (জেম)-এর ৭০ জনেরও বেশি সদস্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করে নয়াদিল্লি।
জবাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ৭ মে শুরু করে ‘অপারেশন বুনিয়ান উল মারসুস’। পাকিস্তানের দাবি, এই অভিযানে ভারতে ৩১ জন নিহত ও ২৭ জন আহত হয়েছে।
টানা পাঁচ দিন সংঘাত চলার পর ৯ মে দুদেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। ইসলামাবাদ এজন্য ট্রাম্পকে কৃতিত্ব দিলেও নয়াদিল্লি সেই দাবি মানেনি।
সংঘাত-পরবর্তী পরিস্থিতিতে দিল্লির সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করেছে। এই শুল্ক গত বুধবার থেকে কার্যকর হয়েছে।


পাকিস্তানে বন্যায় ২৫ জনের মৃত্যু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

পাকিস্তানের পাঞ্জাবে ভয়াবহ বন্যা ও নদীভাঙনে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি ভারত চেনাব, রাভি ও শতদ্রু নদীতে পানি ছাড়ার কারণে এই বন্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় প্রশাসন জানায়, বন্যায় সিয়ালকোট জেলার সাম্বারিয়ালে একই পরিবারের পাঁচজন মারা গেছেন। গুজরানওয়ালা বিভাগে ১৫ জন, গুজরাটে ৪ জন, নারোয়ালে ৩ জন এবং হাফিজাবাদ জেলায় আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।

বন্যার পানিতে ডুবে গেছে কাসুর, নারোয়াল ও পিন্ডি ভাটিয়ান এলাকার শত শত গ্রাম। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। প্রবল স্রোতে ভেসে গেছে শত শত গবাদি পশু এবং কয়েক হাজার একর ফসল। বাহাওয়ালনগরে ডুবে গেছে বহু বাড়িঘর।

চেনাব নদীর পানি প্রবেশ করেছে চেনিওট ও ওজিরাবাদের বহু গ্রামে। লাহোরের শাহদারায় রাভি নদীতে পানির প্রবাহ ১ লাখ ৪৫ হাজার কিউসেক ছাড়িয়েছে, আর জাসারে তা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার কিউসেক। তবে লাহোর কমিশনার জানিয়েছেন, শীর্ষ প্রবাহ পেরিয়ে গেছে এবং পানির স্তর কমতে শুরু করেছে।

শতদ্রু নদীতেও একাধিক স্থানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। গণ্ডা সিং ওয়ালায় প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার কিউসেক, আর হেড সুলেমানকিতে ১ লাখ ৯ হাজার কিউসেক। চিশতিয়ানে প্রবল স্রোতে ভেঙে গেছে ছয়টি রক্ষাবাঁধ। এতে তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং প্রায় সাত হাজার একর ফসল নষ্ট হয়েছে।

বাহাওয়ালনগরে পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ পর্যন্ত একশর বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। এর মধ্যে ৯০ হাজারের মতো মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। প্রবল স্রোতে ভেসে গেছে অস্থায়ী বাঁধ, ধ্বংস হয়েছে ঘরবাড়ি ও মাঠের ফসল।

স্থানীয় কৃষকরা ঘরবাড়ি রক্ষায় প্রায় আট কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ করেছেন। তবে কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, এই বাঁধ ভেঙে গেলে প্রায় ২০ হাজার বাড়িঘর ঝুঁকির মুখে পড়বে।


গাজা সিটির নতুন এলাকায় ইসরায়েলি ট্যাংক

ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়ার নির্দেশ
আপডেটেড ২৯ আগস্ট, ২০২৫ ০০:২৩
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজা সিটির আরও ভেতরে নতুন এলাকায় ট্যাংক নিয়ে ঢুকে পড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামলা চালিয়ে ধ্বংস করছে সেখানকার বাড়িঘর। পালাতে বাধ্য হচ্ছে বাসিন্দারা।

এর মধ্যেই গাজা সিটি খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনিদের হুঁশিয়ারি দিয়ে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, তারা গাজা সিটি জয় করার প্রস্তুতি নিয়েছে। এ শহর খালি করতেই হবে।

গাজা সিটির বাসিন্দারা জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার গভীর রাতে ইসরায়েলের ট্যাংক গাজা সিটির উত্তর প্রান্তে ইবাদ-আলরহমান এলাকায় ঢুকে গোলা ছুড়ে। এতে অনেকে আহত হয়। বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয় অনেক বাসিন্দা।

৬০ বছর বয়সী বাসিন্দা সাদ আবেদ বলেন, ‘হঠাৎ খবর এল এবাদ-আলরহমানে ট্যাংক ঢুকেছে। বিস্ফোরণের শব্দ বাড়তে লাগল। আমরা দেখলাম মানুষ আমাদের এলাকায় পালিয়ে আসছে। যুদ্ধবিরতি না হলে ট্যাংক আমাদের বাড়ির সামনেই এসে পড়বে।’

ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা গাজা সিটিতে নতুন অভিযান শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাসের শেষ ঘাঁটি সেখানে অবস্থিত বলেই দাবি তাদের।

অপরদিকে, গাজার প্রায় ২২ লাখ মানুষের অর্ধেকই এখন এই শহরে বাস করছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের সবাইকেই সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে শহরের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতারা গত বুধবার বলেছেন, তারা সরে যাবেন না। কারণ, দক্ষিণে পালানো মানে মৃত্যুদণ্ডের সামিল।

ওদিকে, গত বুধবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আরবি ভাষার মুখপাত্র আভিচাই আদ্রেয়ি বলেছেন, ‘গাজা সিটি খালি করাটা অনিবার্য। আমি নিশ্চিত করে জানাতে চাই, দক্ষিণাঞ্চলে বিশাল ফাঁকা এলাকা রয়েছে। মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন আশ্রয়শিবির এবং আল-মাওয়াসিতেও ফাঁকা জায়গা আছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, হোয়াইট হাউজে গত বুধবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সভাপতিত্বে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক হবে। তিনি বলেছেন, এ বছর শেষেই যুদ্ধের অবসান হবে বলে ওয়াশিংটনের প্রত্যাশা।

অন্যদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ওয়াশিংটনে বৈঠক করছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সারের সঙ্গে।

গত বুধবার ইসরায়েলের ট্যাংক আবার গাজা সিটির প্রান্ত থেকে জাবালিয়া এলাকায় ফিরে যায়। যদিও গাজার পূর্বদিকের শেজাইয়া, জেইতুন ও সাবরা এলাকায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত ছিল। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৪ বছর বয়সী এক শিশুও আছে।

ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস করাসহ হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল’ করছে। গত ২২ আগাস্ট পশ্চিম গাজার সাধারণ নিরাপত্তা গোয়েন্দা প্রধান মাহমুদ আল-আসওয়াদকে হত্যা করার কথাও জানিয়েছে সেনারা। তবে হামাস তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেনি।

ইসরায়েলে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ জোরাল হচ্ছে। গত মঙ্গলবার ইসরায়েলজুড়ে হাজারো মানুষ গাজায় যুদ্ধ বন্ধ ও হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে রাস্তায় বিক্ষোভ করে।

যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সর্বশেষ ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েল এখনও সাড়া দেয়নি। তবে হামাস গত সপ্তাহে এ প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছিল।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে ঢুকে ১২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। এর জবাবে ইসরায়েল সেদিন থেকেই গাজায় যুদ্ধ শুরু করে।

ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৬২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে হিসাব দিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। যুদ্ধে গাজার প্রায় সব মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং গোটা অঞ্চলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

গাজায় ২৩৩ ইমামকে হত্যা করেছে ইসরায়েল

গাজায় ইসরায়েলের লাগাতার হামলা, বোমাবর্ষণ ও হত্যাযজ্ঞে বেড়েই চলেছে প্রাণহানি ও অবকাঠামোর ধ্বংস। টার্গেট করা হচ্ছে মসজিদ, গির্জা, মসজিদের ইমাম, ইসলাম ধর্মের প্রচারকদের। অবকাঠামোর ধ্বংসের কারণে মসজিদ ও উপাসনালয়হীন হয়ে পড়েছে অনেক পাড়া-মহল্লা।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর গাজায় চলমান আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ২৩৩ জন ইমাম ও ইসলাম ধর্মের প্রচারককে হত্যা করেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। ধ্বংস করেছে ৮২৮ মসজিদ এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ১৬৭টি মসজিদ। এছাড়াও এই সময়ের মধ্যে বোমা হামলায় ধ্বংস করা হয়েছে তিনটি চার্চ, হত্যা করা হয়েছে ২১ জন ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানকে।

গাজার মিডিয়া অফিসের প্রধান ইসমাইল আল থাওয়াবতেহ আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, মসজিদ, গির্জা, মসজিদের ইমাম ও ধর্মীয় নেতাদের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে ধর্মীয় কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ ও প্রতিরোধের মূল ভিত্তিগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ইমাম ও আলেমরা জাতীয় পরিচয় শক্তিশালী করতে, ঈমান জাগ্রত রাখতে এবং সামাজিক সংহতি রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাদের হত্যা ও নির্মূল করার মাধ্যমে মনোবল দুর্বল করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং ইসরায়েলের অপরাধগুলো চিহ্নিতকারী আওয়াজ নিস্তব্ধ করা হচ্ছে।

শতাব্দী প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংসের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের অতীতের সঙ্গে সম্পর্কও ছিন্ন হচ্ছে। ইতিহাস, সংস্কৃতি, সামাজিক পরিচয় এবং সমষ্টিগত স্মৃতি মুছে ফেলার এই প্রচেষ্টা ফিলিস্তিনের অস্তিত্বের জন্য বড় হুমকি।

গাজায় অনাহারে আরও ১০ জনের মৃত্যু

ইসরায়েলের অবরোধ ও অব্যাহত হামলায় গাজাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে দুর্ভিক্ষ। এই উপত্যকাটিতে অপুষ্টি ও অনাহারে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি শিশু।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ এখন বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরাইলের অবরোধ ও অব্যাহত হামলার কারণে জীবনরক্ষাকারী সহায়তা প্রবেশ করতে না পারায় শিশুদের ক্রমবর্ধমানভাবে না খেয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।


banner close