সুদানের উত্তরাঞ্চলে একটি স্বর্ণেও খনি ধসে অন্তত ছয়জন নিহত এবং প্রায় ২০ জন আটকা পড়েছে। শনিবার দেশটির সরকারি কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানায়।
খার্তুম থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
রিভার নিল প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় উম অড এলাকার সোনার খনিতে গতকাল শুক্রবার এই দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় কর্মকর্তা হাসান ইব্রাহিম কারার জানান, খনিতে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়াদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে খনি ধসের কারণ তিনি উল্লেখ করেননি।
সুদানে ২০২৩ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের মধ্যে সংঘাত শুরুর পর থেকে উভয় পক্ষই তাদের লড়াইয়ের ব্যয় বহন করছে স্বর্ণ শিল্পের মাধ্যমে।
দেশটির সরকারি ও এনজিও সূত্রগুলো বলছে, সুদানের স্বর্ণ বাণিজ্যের প্রায় পুরোটাই সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। আরএসএফ-কে আমিরাত অস্ত্র সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে, সেই অভিযোগ আমিরাত বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বৃহত্তম শহর দখলের পরিকল্পনার আগে স্বাধীনতাকামী হামাসের ব্যবহৃত উঁচু ভবনগুলোকে টার্গেট করে হামলা চালানোর ঘোষণা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই শুক্রবার গাজা শহরের একটি বহুতল ভবন ধ্বংস করে দিয়েছে।
গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা অভিযান বন্ধ করার জন্য দেশে-বিদেশে ক্রমবর্ধমান চাপ সত্ত্বেও ইসরাইল রিজার্ভ বাহিনীকে ডেকে বোমাবর্ষণ তীব্র করছে এবং গাজা শহরের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
গাজা সিটি থেকে এএফপি আজ এই খবর জানায়।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘গাজা শহরের বিভিন্ন অবকাঠামোগত স্থানে বিশেষ করে উঁচু ভবনগুলোতে হামাসের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চিহ্নিত করেছে’। তারা ‘আগামী দিনে’ সেই স্থানগুলোকে টার্গেট করে অভিযান চালানোর হুমকি দিচ্ছে।
তারা বলেছে, এক ঘণ্টারও কম সময় পরে তারা এমন একটি বহুতল ভবনে আঘাত হেনেছে এবং হামাসকে ‘এলাকায় সৈন্যদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর জন্য’ এই ভবন ব্যবহার করার অভিযোগ এনেছে।
এএফপি ফুটেজে দেখা গেছে, শহরের আল-রিমাল পাড়ায় অবস্থিত মুশতাহা টাওয়ারটি হামাসের ঘাঁটিতে শক্তিশালী বিস্ফোরণের পর ধসে পড়েছে। এর ফলে ধোঁয়া এবং ধুলোর ঘন মেঘ আকাশে উড়ছে।
এএফপি’র পরবর্তী ছবিতে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিরা ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ এবং ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করছে।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হামলার আগে, ‘বেসামরিক লোকদের ক্ষতি না হয় সেজন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল’। এর মধ্যে পূর্ব সতর্কতাও জারি করা ছিল।
গাজা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি তাঁবুতে বসবাসকারী ৫০ বছর বয়সী বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আরেজ আহমেদ এএফপি’কে বলেছেন, তার স্বামী ‘মুশতাহা টাওয়ারের বাসিন্দাদের ওপরের তলা থেকে তাদের জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলতে দেখেছেন যাতে তারা হামলার আগে সেগুলো নিয়ে পালিয়ে যেতে পারে’।
তিনি টেলিফোনে বলেছেন, ‘সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার আধ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে টাওয়ারটিতে বোমা হামলা চালানো হয়েছিল’।
‘কোনা নিরাপদ জায়গা নেই’
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল ইসরাইলকে ‘বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির নীতি’ অনুসরণ করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। অথচ সেখানে তারা উঁচু ভবন লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, গাজা শহরের ভেতরে এবং আশপাশে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ১৯ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার পুরো অঞ্চল জুড়ে কমপক্ষে ৪২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
এএফপি’র সাথে যোগাযোগ করা হলে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা এই প্রতিবেদনের ওপর মন্তব্য করবে না।
গাজায় মিডিয়ার বিধিনিষেধ এবং অনেক এলাকায় প্রবেশের অসুবিধার ফলে এএফপি স্বাধীনভাবে নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা বা ইসরাইলি সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রদত্ত টোল এবং বিবরণ যাচাই করতে পারছেনা।
আহমেদ আবু ওতফা (৪৫) বলেছেন, ‘ইসরাইল টাওয়ার এবং অ্যাপার্টমেন্ট ভবনগুলোতে বোমা হামলা শুরু করার খবরটি ভয়াবহ’। তিনি পশ্চিম গাজা শহরের তার আত্মীয়দের আংশিকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত পঞ্চম তলার অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমার সন্তানরা আতঙ্কিত এবং আমিও। কোনো নিরাপদ জায়গা নেই। আমরা কেবল আশা করি মৃত্যু দ্রুত আসবে।’
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর একজন সদস্য ইজ্জত আল-রিশক বলেছেন, ইসরাইল দাবি করছে হামাস গোষ্ঠীটি বহুতল ভবনগুলোতে কার্যক্রম চালাচ্ছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এই অভিযোগ ‘একটি তুচ্ছ অজুহাত এবং স্পষ্ট মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়।’
জাতিসংঘের অনুমান গাজা শহর এবং এর আশপাশে প্রায় দশ লক্ষ মানুষ বাস করে। যে অঞ্চলে গত মাসে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়াসুস গাজায় অনাহারে মৃত্যুর ‘বিপর্যয়’ বন্ধ করার জন্য ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৩৭০ জনেরও বেশি মানুষ অপুষ্টিতে মারা গেছে।
এদিকে বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রেভোট এএফপি’কে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘এই বিশাল মানবিক সংকটে তার দায়িত্ব পালন করছে না’।
‘নরকের দরজা’
প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বলেছেন, ‘গাজার নরকের দরজা থেকে এখন বোল্টটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে’। তিনি যুদ্ধ শেষ করার জন্য হামাসকে ইসরাইলের শর্ত মেনে না নেওয়া পর্যন্ত অভিযান তীব্রতর করার অঙ্গীকার করেছেন।
ইসরাইল আশা করছে, তাদের নতুন আক্রমণ দক্ষিণে প্রায় দশ লক্ষ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করবে।
যুদ্ধের সূত্রপাতকারী ইসরাইলের ওপর আক্রমণের সাতশ’ দিন পর হামাসের সশস্ত্র শাখা ফুটেজ প্রকাশ করেছে যেখানে গত মাসের শেষের দিকে গাজা শহরে হামলায় আটক দুই জিম্মিকে জীবিত দেখানো হয়েছে।
ভিডিওটিতে জিম্মি গাই গিলবোয়া-দালালকে একটি গাড়িতে করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গাজা শহরে পরিকল্পিত আক্রমণ না চালানোর জন্য আহ্বান জানাতে দেখা যাচ্ছে।
পরে এটিতে তাকে আরেক বন্দী অ্যালন ওহেলের সাথে দেখা করতে দেখা যাচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলার সময় অপহরণের পর তাকে প্রথমবারের মতো কোনো ভিডিওতে দেখা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, নেতানিয়াহু উভয় জিম্মির পরিবারের সাথে কথা বলেছেন।
নেতানিয়াহু তার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত মন্তব্যে বলেছেন, ‘কোনো খারাপ প্রচারণামূলক ভিডিও আমাদের দুর্বল করতে পারবে না অথবা হামাসকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য আমাদের দৃঢ় সংকল্প থেকে সরাতে পারবে না।’
জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য একটি চুক্তির দাবিতে শুক্রবার জেরুজালেম এবং তেল আবিবে জিম্মিদের আত্মীয়স্বজন এবং সমর্থকরা সমাবেশ করেছেন।
হামাসের হামলায় আটক ২৫১ জন জিম্মির মধ্যে ৪৭ জন এখনও গাজায় রয়েছেন। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দাবি এরমধ্যে ২৫ নিহত হয়েছেন।
ইসরাইলি পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এএফপি’র হিসাব অনুযায়ী, এই হামলার ফলে ১,২১৯ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
কর ফাঁকির অভিযোগ স্বীকার করার পর শুক্রবার পদত্যাগ করেছেন ব্রিটিশ উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেনার। তিনি লেবার পার্টির ডেপুটি লিডার পদও ছেড়ে দিয়েছেন।
এটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের জন্য একটি নতুন ধাক্কা। ৪৫ বছর বয়সী রেনার হলেন মন্ত্রীপরিষদের অষ্টম সদস্য, যিনি স্টারমারের সরকার থেকে বিদায় নিলেন।
স্টারমারকে লেখা চিঠিতে রেনার কর ফাঁকির কথা স্বীকার করে বলেছেন, 'আমার ভুলের জন্য আমি সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছি।'
সাম্প্রতিক জরিপে লেবার পার্টি ব্রিটেনের জনপ্রিয় রিফর্ম ইউকে'র চেয়ে পিছিয়ে থাকায় স্টারমার তার কর্তৃত্ব এবং দলের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় আরও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। এই সময় ডেপুটি হারানো তার জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর, বিশেষ করে রেনার।
উপ-প্রধানমন্ত্রী একজন শ্রমিক শ্রেণীর কিশোরী মা থেকে ব্রিটেনের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পদে উন্নীত হয়েছেন। তিনি দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য লেবারের বাম এবং মধ্যপন্থী শাখার মধ্যে মধ্যস্থতা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বলতে গেলে দলে স্টারমারের চেয়েও তার আবেদন ব্যাপক বিস্তৃত ছিল।
স্টারমারের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে পরিচিত রেনার এর আগে গত বুধবার কর পরিশোধের ক্ষেত্রে ভুল স্বীকার করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, স্টারমারের সরকার যে ৮ জন মন্ত্রিপরিষদ সদস্যকে হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে পাঁচ জনই অন্যায় কাজের জন্য পদত্যাগ করেছেন। ১৯৭৯ সালের পর থেকে ব্রিটেনে স্টারমারের সরকারেই সবচেয়ে বেশি মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভারত ও রাশিয়াকে চীনের কাছে হারিয়ে ফেলেছে। সেই সঙ্গে পোস্টে তিনি ব্যঙ্গাত্মকভাবে তিনটি দেশেরই ‘সমৃদ্ধ’ ভবিষ্যৎ কামনা করেছেন।
বেইজিং যখন একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন ওয়াশিংটনের নেতা নয়াদিল্লি ও মস্কোকে নিয়ে এমন মন্তব্য করলেন।
সপ্তাহের শুরুতে তিয়ানজিনে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনকে আতিথ্য দেন।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে আমরা ভারত এবং রাশিয়াকে সবচেয়ে গভীর অন্ধকারতম চীনের কাছে হারিয়ে ফেলেছি। তাদের একসঙ্গে দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ হোক।’
ট্রাম্পের এই মন্তব্যগুলো নয়াদিল্লি, মস্কো ও বেইজিংয়ের মধ্যে গভীরতর সম্পর্কের বিষয়ে ট্রাম্পের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রকাশ্য স্বীকৃতি।
তিন পারমাণবিক শক্তিধর দেশের নেতা বেইজিংয়ে প্রকাশ্যে জ্বালানি থেকে শুরু করে নিরাপত্তা পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্ববাণিজ্য নীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের মতবিরোধ চলছে।
কয়েক দশক ধরে ওয়াশিংটন ভারতকে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে একটি প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে আসছে। রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটিক উভয় প্রশাসনই নয়াদিল্লিকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিনিয়োগ করেছে।
ট্রাম্প নিজেই তার প্রথম মেয়াদে ভারতের সঙ্গে বিশেষ যোগাযোগ রেখেছিলেন। তবুও সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে ফাটলের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্ক ব্যবস্থা এবং রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের জ্বালানি বাণিজ্যের সমালোচনা ওয়াশিংটনের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ককে দুর্বল করে দিয়েছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় বর্বর হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে এক দিনে কমপক্ষে আরও ৭৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল গাজা সিটিতেই নিহত হয়েছেন ৪৪ জন। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নির্বিচার বোমা বর্ষণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে গাজা সিটির পাড়ামহল্লা। আতঙ্কে পালাতে চাইছেন মানুষ, কিন্তু গোটা উপত্যকাতেই নিরাপদ আশ্রয় নেই। টানা ২৩ মাস ধরে চলছে এ নির্মম হামলা।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ ইতোমধ্যেই গাজা সিটিকে আখ্যা দিয়েছে ‘আতঙ্কের নগরী’ বলে। গত বৃহস্পতিবার তাল আল-হাওয়া এলাকায় একটি তাঁবুতে হামলায় একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হন, যাদের মধ্যে তিনজনই শিশু।
হামলার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত তাঁবুগুলোর সামনে ফিলিস্তিনিরা ভাঙাচোরা মালপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে রক্তে ভেজা একটি গোলাপি রঙের স্যান্ডেলও মেলে। ইসরা আল-বাসুস এএফপিকে বলেন, ‘আমি ও আমার সন্তানরা তাঁবুতে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ বোমা পড়ল, শরীরে টুকরো এসে লাগল, আমার চার সন্তান আতঙ্কে চিৎকার শুরু করল।’
গাজা সিটির জেইতুন, সাবরা, তুফাহ, নাসর ও শুজাইয়া এলাকায় ভয়াবহ বোমা বর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। তুফাহ পাড়ায় অন্তত আটজন নিহত ও বহু আহত হয়েছেন বলে জানান সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল।
শুজাইয়ায় একটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলায় দুজন নিহত হয়েছেন। আর জেইতুনে ধ্বংসস্তূপ থেকে আল-ঘাফ পরিবারের তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালাচ্ছেন নিরাপত্তার খোঁজে, কিন্তু যেখানে যাচ্ছেন সেখানেও ইসরায়েলি বিমান ও গোলাবর্ষণ তাদের পিছু ছাড়ছে না।
ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার যোগাযোগ কর্মকর্তা টেস ইনগ্রাম সতর্ক করে বলেছেন, প্রায় ১০ লাখ মানুষ আটকা পড়েছেন এই ‘ভয়, পালানো ও জানাজায় ভরা নগরীতে’। শুধু গত বৃহস্পতিবারই গাজা সিটিতে নিহত হয়েছেন ৪৪ জন।
ইসরায়েলি সেনাদের তথ্যানুসারে,তারা এখন গাজা সিটির ৪০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং আগামী দিনগুলোতে অভিযান আরও জোরদার করবে।
আল জাজিরার সানাদ ফ্যাক্ট-চেকিং এজেন্সি স্যাটেলাইট ছবিতে অন্তত ৫২টি ইসরায়েলি সামরিক যান জেইতুন এলাকায় মোতায়েন থাকতে দেখেছে।
গাজা কতটা দখলে, জানাল ইসরায়েলি বাহিনী
বর্তমানে গাজা সিটির প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। একই সঙ্গে হামাসকে পরাজিত করার জন্য অভিযান আরও জোরদার করছে।
গত বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র এফি ডেফরিন বলেন, অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং আগামী দিনে তা আরও সম্প্রসারিত হবে।
এর আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ গাজা দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করেন এবং প্রায় ৮০ হাজার রিজার্ভ সেনা মোতায়েনের অনুমতি দেন। চলমান অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘গিডিওনস চারিয়টস বি’। সেনাদের দাবি, আগের ধাপে গাজার প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হামাসকে বন্দি বিনিময়ের চাপে রাখা হয়েছিল।
হামাস নতুন এই অভিযানের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের আলোচনাকে উপেক্ষা করছে। সংগঠনটি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকেও যেকোনো সমঝোতার ‘প্রধান অন্তরায়’ বলে অভিযুক্ত করেছে।
অন্যদিকে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে মধ্যস্থতাকারীরা নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে। হামাস ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি, ধাপে ধাপে বন্দি মুক্তি, ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছেড়ে দেওয়া এবং গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়ানোর একটি প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। তবে ইসরায়েল এখনো সব বন্দিকে একসঙ্গে মুক্তির দাবি করছে।
এদিকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজার আল-সাবরা এলাকায় অন্তত পাঁচজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন। একটি বাড়ি ও বাস্তুচ্যুতদের তাঁবুতে হামলায় আরও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজার ২৩১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ১ লাখ ৬১ হাজার ৫৮৩ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে ক্ষুধায় বা সহায়তা চাইতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
গাজার দিকে যাত্রা অব্যাহত রেখেছে সুমুদ ফ্লোটিলা
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা গাজার দিকে যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। তাদের লক্ষ্য হলো- ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের অবরোধ ভেঙে সেখানে সাহায্য পৌঁছানো, যেখানে এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে।
গত রোববার স্পেনের বার্সেলোনা থেকে জাহাজগুলো যাত্রা শুরু করে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে তারা প্রথমে ফিরে যায়, পরে সোমবার আবার যাত্রা শুরু করে।
ঝড়ের পর মেনোরকায় জাহাজগুলো কিছু মেরামতকাজ সম্পন্ন করে এবং গত বৃহস্পতিবার তিউনিসিয়ার উদ্দেশে আবার যাত্রা শুরু করে।
আগামী কয়েকদিনে তারা তিউনিসিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে অন্যান্য অংশগ্রহণকারী নৌযানের সঙ্গে মিলিত হবে।
সুমুদ ফ্লোটিলা একটি আন্তর্জাতিক নাগরিক উদ্যোগ, যার লক্ষ্য গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এবং ইসরায়েলি নৌঅবরোধের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ জানানো।
টেসলার শেয়ারহোল্ডাররা যদি নতুন একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেন, তবে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে পারেন। প্রস্তাবিত প্যাকেজ অনুযায়ী, নির্দিষ্ট আর্থিক লক্ষ্য অর্জিত হলে মাস্ককে দেওয়া হবে অতিরিক্ত ৪২৩.৭ মিলিয়ন টেসলা শেয়ার। বর্তমান বাজারদরে এর মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ১৪৩.৫ বিলিয়ন ডলার।
তবে এই শেয়ার হাতে পাওয়ার শর্ত হচ্ছে- আগামী বছরগুলোতে টেসলার বাজার মূল্য নাটকীয়ভাবে বেড়ে ৮.৫ ট্রিলিয়নে পৌঁছাতে হবে। ফলে বর্তমানের তুলনায় শেয়ারগুলোর দামও কয়েকগুণ বেড়ে বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার হিসেবে আবির্ভূত হবেন মাস্ক। বর্তমানে টেসলার বাজারমূল্য ১.১ ট্রিলিয়ন ডলার, যা এনভিডিয়ার তুলনায় অনেক কম। বর্তমানে ৪.১৭ ট্রিলিয়ন বাজার মূল্যের এনভিডিয়া বিশ্ববাজারে সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানি।
টেসলার পক্ষ থেকে শেয়ার হোল্ডারদের দেওয়া নথিতে মাস্কের এই পেমেন্ট পরিকল্পনার পাশাপাশি আরেকটি প্রস্তাবও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, টেসলা যেন মাস্কের মালিকানাধীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠান এক্সএআই-এ বিনিয়োগ করে। এক্সএআই সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (পূর্বে টুইটার) কিনে নিয়েছে। ২০২২ সালে মাস্ক ব্যক্তিগতভাবে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে এই মাধ্যমটি অধিগ্রহণ করেছিলেন।
শুক্রবার সিএনএন জানিয়েছে, বর্তমানে মাস্ক টেসলার ৪১০ মিলিয়ন শেয়ারের মালিক, যার বাজার মূল্য ১৩৯ বিলিয়ন ডলার। স্পেসএক্স, এক্সএআই এবং অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারের কারণে তিনি ইতোমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। ব্লুমবার্গের তথ্যমতে তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩৭৮ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে ২০১৮ সালে মাস্ককে দেওয়া আরেকটি শেয়ার অপশন প্যাকেজ আদালত অবৈধ ঘোষণা করে বাতিল করেছিলেন। তবু শেয়ার হোল্ডাররা বারবার তার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। সর্বশেষ প্রচেষ্টায় মাস্ক বর্তমানে টেসলার মোট শেয়ারের প্রায় ১৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে টেসলার শেয়ার প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে রেকর্ড উচ্চতায় উঠলেও রাজনৈতিক সম্পর্ক, বিক্ষোভ ও বিক্রি কমে যাওয়ার কারণে পরে শেয়ারের দর পড়ে যায়। বর্তমানে কিছুটা পুনরুদ্ধার হলেও গত ডিসেম্বরের শীর্ষ অবস্থান থেকে এখনো ২৬ শতাংশ নিচে রয়েছে।
তারপরও মাস্ক দাবি করছেন, স্বচালিত গাড়ি ও রোবোট্যাক্সি সেবা ভবিষ্যতে বিপুল মুনাফা বয়ে আনবে। পাশাপাশি তিনি এমন মানবাকৃতির রোবট বাজারে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা গাড়ির ব্যবসাকেও ছাড়িয়ে যাবে। তবে এসব এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। নতুন প্রস্তাবের পর প্রি-মার্কেট ট্রেডিংয়ে টেসলার শেয়ারের দাম অবশ্য সামান্য বেড়েছে।
শ্রীলঙ্কায় স্থানীয় পর্যটকবাহী একটি বাস সবুজ চা বাগানঘেরা পাহাড়ি শহর ভ্রমণের সময় প্রায় এক হাজার ফুট (৩০০ মিটার) নিচে পড়ে গিয়ে ১৫ জন নিহত ও ১৬ জন আহত হয়েছেন বলে শুক্রবার পুলিশ জানিয়েছে।
কলম্বো থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
বৃহস্পতিবার রাতে দেশটির রাজধানী থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার (৮১ মাইল) পূর্বে পাহাড়ি এলাকা এল্লায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ওই দুর্ঘটনায় সময় বাসে থাকা আরও ১৬ জন আহত হয়েছেন।
পর্যটক বহনকারী বাসটি শীতল পাহাড় থেকে ফেরার পথে অন্য একটি বাহনকে ধাক্কা দেয়। ফলে রেলিং ভেঙে বাসটি রাস্তা থেকে প্রায় এক হাজার ফুট নিচে পড়ে যায়।
মে মাসের পর থেকে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ওই সময় কোটমালেতে একটি বাস দুর্ঘটনায় ২৩ জন যাত্রী নিহত হয়।
দ্বীপের আঁকাবাঁকা রাস্তাগুলোকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক রাস্তাগুলির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশ শ্রীলঙ্কায় প্রতি বছর গড়ে ৩ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়।
হোয়াইট হাউস বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিরক্ষা বিভাগের নাম পরিবর্তন করে যুদ্ধ বিভাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এই পরিবর্তনের ফলে আরো শক্তিশালী ভাবমূর্তি তৈরি হবে।
ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের নাম আইনে নির্ধারিত থাকলেও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রশাসনিকভাবে ‘যুদ্ধ দপ্তর’ নামকে সেকেন্ডারি শিরোনাম হিসেবে ব্যবহার করার অনুমোদন দিয়েছেন।
নথি অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা সরকারি চিঠিপত্র, জনসাধারণের সাথে যোগাযোগ, আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান এবং নির্বাহী শাখার অ-বিধিবদ্ধ নথিপত্রে ‘যুদ্ধ মন্ত্রী’ এর মতো গৌণ শিরোনাম ব্যবহার করতে পারবেন।
এখনও স্পষ্ট নয় ট্রাম্প কবে আদেশে স্বাক্ষর করবেন, তবে শুক্রবারের তাঁর প্রকাশিত কর্মসূচিতে বলা হয়েছে, বিকেলে তিনি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন এবং হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে একটি ঘোষণা দেবেন।
প্রেসিডেন্ট, একজন বিপণন-বুদ্ধিমান রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বারবার বলেছেন, তিনি এই ধরনের পরিবর্তনের কথা ভাবছেন।
গত মাসের শেষের দিকে, ৭৯ বছর বয়সী রিপাবলিকান দাবি করেছিলেন যে প্রতিরক্ষা বিভাগের নামটি খুব বেশি ‘প্রতিরক্ষামূলক।
তিনি ২৫শে আগস্ট সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুদ্ধ বিভাগ ‘প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জয়লাভের সময় নাম ছিল। আমরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়লাভ করেছি, আমরা সবকিছু জিতেছি’।
’হোয়াইট হাউসের নথি অনুসারে, নাম পরিবর্তন ‘প্রস্তুতি এবং সংকল্পের একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে।’
মার্কিন স্বাধীনতার প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠিত, যুদ্ধ বিভাগ ঐতিহাসিকভাবে আমেরিকান স্থল বাহিনীর তত্ত্বাবধানে করা হত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সরকার পুনর্গঠনের ফলে এটি মার্কিন নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর সাথে একত্রিত জাতীয় সামরিক প্রতিষ্ঠানের অধীনে আসে, যা ১৯৪৯ সালে প্রতিরক্ষা বিভাগের নামে পুনঃনামকরণ করা হয়।
হোয়াইট হাউসের নথিতে বলা হয়েছে, ‘যুদ্ধ বিভাগ' নামটি পুনরুদ্ধার করা আমাদের জাতীয় স্বার্থের ওপর এই বিভাগের মনোযোগকে আরো তীক্ষ্ণ করবে এবং প্রতিপক্ষদের কাছে আমেরিকার স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য যুদ্ধ করার প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেবে’।
জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এবং ফক্স নিউজের প্রাক্তন উপস্থাপক পিট হেগসেথকে বিস্তৃত বিভাগের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নিযুক্ত করার পর থেকে এটি পেন্টাগনের সর্বশেষ রদবদল।
একজন যুদ্ধ অভিজ্ঞ সৈনিক হেগসেথ বারবার বিভাগে ‘যোদ্ধা নীতি’ পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার কথা বলেছেন এবং পূর্ববর্তী প্রশাসনের নীতিগুলোর সমালোচনা করেছেন যা তিনি এবং ট্রাম্প ‘জাগ্রত’ বলে উপহাস করেছেন।
হেগসেথ উল্লেখযোগ্যভাবে সামরিক বাহিনী থেকে ট্রান্সজেন্ডার সৈন্যদের বহিষ্কার করার এবং কনফেডারেট সৈন্যদের সম্মানিত ঘাঁটির নাম পরিবর্তন করে তাদের মূল পদবিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন, যা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনে নামকরণ করা হয়েছিল।
হোয়াইট হাউসের নথিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এই আদেশ ভবিষ্যতের কোনো প্রেসিডেন্ট বাতিল করতে পারলেও এতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে যুদ্ধ মন্ত্রীকে আইনগত ও নির্বাহী পদক্ষেপসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সুপারিশ করতে হবে, যাতে দপ্তরের নাম স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করা যায়।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যদি চুক্তি করতে রাজি না হয় তবে রাশিয়া তার সব উদ্দেশ্য অর্জনে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত আছে। চীনে গত বুধবার এক বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়ার পর এমন মন্তব্য করেন পুতিন। তার এমন মন্তব্যকে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বিশ্বের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। খবর বিবিসির।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই যুদ্ধ অবসানে পুতিনকে রাজি করানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু রাশিয়ার এই নেতা ট্রাম্পের আন্তরিক প্রচেষ্টার প্রশংসা করলেও এখন পর্যন্ত ওই পথে যাননি। যুক্তরাজ্যের ডিফেন্স সেক্রেটারি জন হিলি কিয়েভ সফরের সময় বিবিসিকে বলেন, ট্রাম্প পুতিনকে আলোচনার টেবিলে এনেছেন এবং তাকে আরও চাপ দেওয়ার সম্ভাবনা উঁড়িয়ে দেননি।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো পুতিনের ওপর অতিরিক্ত অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে... এবং ইউক্রেনকে যুদ্ধে টিকে থাকতে অতিরিক্ত সহায়তা দিতে ইচ্ছুক।
গত মাসে আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করে তাকে আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা থেকে বের করে এনেছেন ট্রাম্প। তিনি পুতিনকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাতে রাজি করানোর চেষ্টাও করেছিলেন।
বুধবার পুতিন বলেন, আমি কখনো এমন বৈঠকের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেইনি। কিন্তু এর কি কোনো অর্থ আছে? দেখা যাক। পুতিন আরও বলেন, এ ধরনের বৈঠকের ফলাফল পেতে হলে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় এবং জেলেনস্কি সবসময়ই মস্কোয় তার সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারেন।
তবে জেলেনস্কির মস্কো যাওয়ার বিষয়টি যে ‘অগ্রহণযোগ্য’ তা বোধগম্য বলে দ্রুত উল্লেখ করেছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে বৈঠক করার বিষয়ে পুতিনের অস্বীকৃতিকে রাশিয়ার ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাড়াতে আহ্বান জানানো একটি উপায় হিসেবে তুলে ধরেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া তার এই প্রতিবেশী দেশটির ওপর পূর্ণ মাত্রায় হামলা শুরু করে। এদিকে গত বুধবার ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার এই নেতা যুদ্ধ অবসানের বিষয়ে আমার অবস্থান কোথায় জানেন। হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছে আমার কোনো বার্তা নেই। তিনি আমার অবস্থান জানেন এবং তিনি কোনো না কোনোভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন।
রাশিয়ার তেল কেনার জন্য ভারতের ওপর শুল্ক আরোপের কথা উল্লেখ করে একজন সাংবাদিক বলেন, ট্রাম্প মস্কোর বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেননি।
তার প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ট্রাম্প বলেন, আপনি এটাকে কোনো পদক্ষেপ বলছেন না? আর আমি এখনো দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের পদক্ষেপ নেইনি।
বেইজিংয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক সাংবাদিক রুশ নেতা পুতিনের কাছে জানতে চান। ইউক্রেন শিগগিরই শেষ হতে পারে কি না। জবাবে পুতিন বলেন, পথের শেষে নিশ্চিতভাবেই একটা আলো আছে। আমার মনে হয় সাধারণ বুদ্ধি থাকলেও এই সংঘাত অবসানে একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে একমত হওয়া সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, যদি না হয় তবে আমাদের সব কাজ সামরিকভাবে সমাধান করতে হবে। কিন্তু তিনি জোর দিয়ে এটাও জানান, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চল রাশিয়া ছাড়বে না। এই রুশ নেতা আরও দাবি করেন, ইউক্রেন যেন ন্যাটোর সদস্যপদ না চায় এবং জাতিগত রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে তার ভাষায় ‘বৈষম্য’ বন্ধ করে।
এই অভিযোগকে রাশিয়ার আগ্রাসনের অন্যতম অজুহাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। পুতিন ইঙ্গিত দেন, ভবিষ্যতে শান্তি চুক্তির পর পশ্চিমা দেশগুলো নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ডনবাস অঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, যার বাসিন্দারা রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দিতে ভোট দিয়েছিল। যদিও এই ভোট ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল।
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে পুতিন বেইজিংয়ে দেখা করেছেন। পরে কিম জানান উত্তর কোরিয়া ‘ভ্রাতৃপ্রতিম কর্তব্য’ থেকে রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ অব্যাহত রাখবে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, পুতিন কিমকে ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য সৈন্য পাঠানোর কারণে ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে বিশ্বাস, বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যের বিশেষ সম্পর্ক বলে বর্ণনা করেন।
বৃহস্পতিবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ইউক্রেনের মিত্রদের নিয়ে গঠিত কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং বৈঠকের আয়োজন করবেন। মাখোঁর কার্যালয় এলিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, এই জোটের লক্ষ্য হলো ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিশ্চিত করা যাতে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বাড়ানো যায়।
একইসঙ্গে রাশিয়ার কাছ থেকে যুদ্ধবিরতি আদায় করা যায়। গত মাসে আলাস্কায় অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্প পুতিনকে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দেন।
কিন্তু সম্মেলনের পর তিনি জানান সংঘাত অবসানের জন্য শান্তি চুক্তির পথ খোঁজা হবে আরও কার্যকর উপায়। যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন পুতিন এবং ইউরোপীয় শহরগুলোতে হামলা আরও তীব্র করেছে তারা সেনারা। শুধু বুধবার রাতেই রাশিয়া পাঁচ শতাধিক ড্রোন ও ২৪ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার পশ্চিম তীরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক ডেকেছেন। দ্য টাইমস অফ ইসরায়েলকে এক মন্ত্রীর দপ্তর জানিয়েছে, স্থানীয় সময় আজ সন্ধ্যা ৬টায় বৈঠকটি হবে। এতে নেতানিয়াহু পশ্চিম তীরের ‘পরিস্থিতি মূল্যায়ন’ করবেন।
প্রতিবেদন অনুসারে, নেতানিয়াহু পশ্চিম তীরের কিছু অংশে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব প্রয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করবেন। এ বিষয়ে কার্যপরিধি অন্বেষণে আলোচনার জন্য শীর্ষ মন্ত্রী এবং সহযোগীদের মতামত শুনবেন। আলোচনা হবে ভবিষ্যত প্রস্তুতি নিয়েও।
অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচও বৈঠকে যোগ দেবেন। পশ্চিম তীরের ৮২ শতাংশ ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য একটি প্রস্তাব তিনি প্রকাশ করেন।
এই বছরের শুরুতে নেসেট ৭১-১৩ ভোটে পশ্চিম তীরকে সংযুক্ত করার জন্য একটি অ-বাধ্যতামূলক প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেটিই কার্যকর করতে যাচ্ছে দখলদার বাহিনী।
তবে পশ্চিম তীর ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্তিসংক্রান্ত বৈঠকের তথ্যটি অস্বীকার করেছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। সাংবাদিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক মতবিনিময়ে তারা বলেছেন, বিষয়টি আনুষ্ঠানিক এজেন্ডায় নেই।
ইসরায়েলের নতুন পরিকল্পনা জানাজানি হওয়ার মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। আমিরাতের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক লানা নুসাইবেহ বলেছেন, পশ্চিম তীর দখল আমিরাতের কাছে রেড লাইন। আব্রাহাম চুক্তি হলো ফিলিস্তিনি জনগণ ও তাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের ন্যায্য আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থনের একটি উপায়। পশ্চিম তীর দখলে ইসরায়েলের যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার অর্থ হলো রেড লাইন অতিক্রম করা এবং আব্রাহাম চুক্তির মূল চেতনা ধ্বংস করা।
প্রসঙ্গত, স্মোট্রিচ যে মানচিত্র দেখিয়েছেন তাতে দেখা যায়- পশ্চিম তীরের প্রায় ৮২ শতাংশ এলাকায় ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব বিস্তারের পরিকল্পনা রয়েছে। মাত্র ১৮ শতাংশ এলাকায় সীমাবদ্ধ রাখা হবে ৬টি ফিলিস্তিনি শহর—জেনিন, তুলকারেম, নাবলুস, রামাল্লাহ, জেরিহো ও হেবরন। এতে বেথলেহেমসহ বহু ফিলিস্তিনি এলাকা বাদ পড়ে যাবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এটি ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করবে।
গাজায় অনাহার এবং তীব্র খাদ্য সংকটে এখন পর্যন্ত ৩৭০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৩১ জনই শিশু। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় আকস্মিক হামলা চালায় হামাস। এরপরেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত সংঘাত চলছেই।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে তিনজন অনাহারে প্রাণ হারিয়েছে। এদিকে বেশ কিছু মেডিক্যাল সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজাজুড়ে কমপক্ষে ৩১ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। এরমধ্যে ১৯ জনই গাজা সিটির। এছাড়া আরও চারজন ত্রাণ সংগ্রহের সময় ইসরায়েলের গুলিতে নিহত হয়েছে।
হামাস জানিয়েছে, তারা গাজা পরিচালনার জন্য একটি স্বাধীন জাতীয় প্রশাসন গঠন এবং একটি ব্যাপক যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য প্রস্তুত। এই চুক্তির আওতায় সব ইসরায়েলি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় হামাসের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তার মন্ত্রিসভার নির্ধারিত শর্তে যুদ্ধ অবিলম্বে শেষ হতে পারে।
ইসরায়েলের অতি-ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরের প্রায় সব অংশকে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন এবং নেতানিয়াহুর অনুমোদনের আহ্বান জানিয়েছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজাজুড়ে কমপক্ষে ৬৩ হাজার ৭৪৬ জন নিহত এবং ১ হাজার ৬১ হাজার ২৪৫ জন আহত হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় মোট ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জনকে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়।
গাজায় প্রতিবন্ধী হয়েছে ২১ হাজার শিশু
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজার কমপক্ষে ২১ হাজার শিশু প্রতিবন্ধী হয়েছে। গত বুধবার জাতিসংঘের একটি কমিটি এ তথ্য জানিয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সংক্রান্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় দুই বছরে প্রায় ৪০ হাজার ৫০০ শিশু ‘নতুন যুদ্ধ-সম্পর্কিত আঘাতের’ শিকার হয়েছে, যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছে।
ফিলিস্তিনি অঞ্চলের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলা হয়েছে, গাজায় সেনাবাহিনীর আক্রমণের সময় স্থানীয়দের সরে যাওয়ার ব্যাপারে ইসরায়েলি সেনাদের আদেশগুলো প্রায়শই শ্রবণশক্তি বা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছায়নি, যার ফলে এসব ব্যক্তিকে সরিয়ে নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অনিরাপদ এবং অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে, এর মধ্যে রয়েছে- চলাচলের সহায়তা ছাড়াই বালি বা কাদার মধ্য দিয়ে হামাগুড়ি দেওয়া।’
কমিটি জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা আনার উপর বিধিনিষেধ প্রতিবন্ধীদের উপর অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাব ফেলছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সহায়তা গ্রহণে গুরুতর ব্যাঘাতের সম্মুখীন হয়েছেন, অনেককে খাদ্য, বিশুদ্ধ জল বা স্যানিটেশন ছাড়াই এবং বেঁচে থাকার জন্য অন্যদের উপর নির্ভরশীল করে তোলা হয়েছে।’
ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি আরব আমিরাতের
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় দীর্ঘ প্রায় ২৩ মাস ধরে অমানবিক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। হামাস উৎখাত ও জিম্মি মুক্তির নাম দিয়ে প্রতিদিনই দখলদার বাহিনী ভয়াবহ হামলা ও নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে নিরীহ গাজাবাসীর ওপর। দখলদারদের নারকীয় এ হত্যাযজ্ঞ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যুহীন একটি দিন পার করতে পারেনি ভূখণ্ডটির বাসিন্দারা।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা দখলের পরিকল্পনা নিয়ে প্রকাশ্য ঘোষণা দেওয়ার পর তাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন পেয়ে যেন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ইসরায়েল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ হলেও সেগুলোকে গ্রাহ্যই করছে না নেতানিয়াহু ও তার প্রশাসন। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আদালতও অমানবিক এ আগ্রাসনে লাগাম টানতে ব্যর্থ। এরই মধ্যে দখলকৃত পশ্চিম তীর পুরোপুরি ইসরায়েলের মানচিত্রে মিলিয়ে ফেলার পরিকল্পনাও এখন প্রকাশ্যে।
এ অবস্থায় এবার দখলদার রাষ্ট্রটিকে কঠিন হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। ইসরায়েল তার এই দখলনীতিতে অটল থাকলে আমিরাতের সঙ্গে হওয়া তাদের আব্রাহাম চুক্তি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে বলে জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী দেশটি। মূলত, আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতেই করা হয়েছিল এই চুক্তি। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েল তার মানচিত্রে অধিকৃত পশ্চিম তীর পুরোপুরি যুক্ত করে নিলে, তা চূড়ান্ত সীমা লঙ্ঘনের শামিল হবে বলে সতর্ক করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)।
দেশটির জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক লানা নুসেইবেহ বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনা নস্যাৎ করবে।
আরব আমিরাতের এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ)। তবে, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েলের সরকার।
নুসেইবেহ এমন এক সময়ে এ মন্তব্য করেছেন, যখন ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ পশ্চিম তীরের প্রায় চার-পঞ্চমাংশ দেশটির সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন।
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের সময় পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম দখল করে প্রায় ১৬০টি বসতি গড়ে তুলেছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক আইনে এসব বসতি অবৈধ।
রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দেখতে চায় ফিলিস্তিন। ওই অঞ্চলে প্রায় ৭ লাখ ইহুদি ও ৩৩ লাখ ফিলিস্তিনির বসবাস।
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল—ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে তৎকালে পশ্চিম তীরের কিছু অংশ দেশটির সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে।
ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা জোরদার করার পর, ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বৃহস্পতিবার তাদের ওপর মিশরের বাইবেলের ১০টি আজাব চাপিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
ইসরাইল কাটজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করেছেন, ‘হুথিরা আবার ইসরাইলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে। আমরা তাদের ওপর অন্ধকারের আজাব, প্রথম জাতের আজাব- আমরা ১০টি আজাবের সবগুলোই চাপিয়ে দিব।’
জেরুজালেম থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
তিনি এক্সোডাসের ১০টি বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করেন, যেগুলো হিব্রু ঈশ্বর মিশরের ওপর চাপিয়েছিলেন যাতে ফারাওরা দাসত্বপ্রাপ্ত ইসরাইলি মুক্ত করতে বাধ্য হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার, ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, ইয়েমেন থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলি ভূখণ্ডের বাইরে আঘাত করার একদিন পর, তারা দুটি হুথি ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিহত করেছে।
গত সপ্তাহে ইসরাইলি বিমান হামলায় তাদের প্রধানমন্ত্রী এবং ১১ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পর ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনি বিদ্রোহীরা ইসরাইলের ওপর তাদের আক্রমণ আরও তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে হুথিরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে বারবার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে তারা এসব হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করে।
ইসরাইল হুথি-অধিষ্ঠিত বন্দরের পাশাপাশি বিদ্রোহী-অধিষ্ঠিত রাজধানী সানাকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েক দফা প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের রায় দ্রুত শুনানির জন্য বুধবার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
প্রশাসন দাবি করেছে যে এই রায় ইতোমধ্যেই সংবেদনশীল বাণিজ্য আলোচনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
সলিসিটর জেনারেল জন সাওয়ার শ্রদ্ধার সঙ্গে অনুরোধ করছেন যে, এই আদালত যেন যথাসম্ভব দ্রুত এ মামলার নিষ্পত্তি করে। কারণ প্রেসিডেন্টের শুল্কের পূর্ণ আইনি অবস্থান দ্রুত নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আদালতে দাখিল করা আবেদনে তিনি আগামী নভেম্বরের শুরুতেই মৌখিক শুনানি চেয়েছেন।