শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫
১৬ কার্তিক ১৪৩২

বিহারে মুসলিমদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ

আপডেটেড
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২৩:১০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২৩:১০

ভারতের বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে বড় ধরনের বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, রাজ্যে ভোটার তালিকা থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলিম এবং বিজেপিবিরোধী ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলগুলো বলছে, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি নির্বাচনের ফল নিজেদের অনুকূলে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় প্রায় ৬৫ লাখ ভোটারের নাম বাদ গেছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, এদের এক–তৃতীয়াংশ মৃত, বাকিরা অন্যত্র সরে গেছেন বা একাধিকবার তালিকাভুক্ত ছিলেন। তবে বিরোধীরা দাবি করছে, কমিশনের এই ব্যাখ্যা অসত্য। প্রমাণ হিসেবে তারা রাজধানী নয়াদিল্লিতে কয়েকজন জীবিত ব্যক্তিকে হাজির করেছে, যাদের তালিকায় মৃত দেখানো হয়েছিল।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বিষয়টিকে ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘আমি তো শুনলাম, আপনারা বেঁচে নেই?’

বিরোধীদের অভিযোগ, বাদ যাওয়া ভোটারদের বড় অংশই মুসলিম এবং বিজেপিবিরোধী ভোটার। বিহারের বিরোধী নেতা তেজস্বী যাদবও বলেছেন, অনুমানের ভিত্তিতে প্রতিটি আসনে ২৫–৩০ হাজার ভোটারের নাম কেটে ফেলা হয়েছে।

নিরপেক্ষ হিসাব অনুযায়ী দেখা গেছে, রাজ্যের দুই–তৃতীয়াংশ আসনে বাদ পড়া ভোটারের সংখ্যা গত নির্বাচনে বিজয়ের ব্যবধানের চেয়েও বেশি। তার ভাষায়, ‘আপনি কল্পনা করতে পারেন, জয়ের ব্যবধান খুবই কম ছিল।’

ভোটার তালিকা যাচাইয়ের প্রক্রিয়াতেও বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। পরিচয় প্রমাণে ১১ ধরনের নথি গ্রহণ করা হলেও প্রথমে সবচেয়ে প্রচলিত ভোটার আইডি কার্ড ও আধার কার্ডকে গ্রহণ করা হয়নি। অথচ মোদি সরকার গত এক দশকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে মোবাইল সিম কেনাসহ সবকিছুতেই আধার কার্ডকে অপরিহার্য করেছে। পরে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন বাধ্য হয় আধারকে বৈধ নথি হিসেবে যুক্ত করতে।

এত কিছুর মধ্যেও মাঠপর্যায়ে বহু কর্মকর্তা বলছেন, তাদের শুরু থেকেই আধার কার্ড নিতে হয়েছে, কারণ বহু মানুষের কাছে তালিকাভুক্ত অন্য নথি ছিল না। তাছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করলে শাস্তির মুখে পড়তে হতো। ফলে কিছু কর্মকর্তা অনুমানের ভিত্তিতে পারিবারিক বৃক্ষের ছবি বা পুরোনো তালিকা ধরে ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এতে করে পুরো প্রক্রিয়া আরও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।

বিরোধীদের অভিযোগ, এই দ্রুত ও তড়িঘড়ি করা প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো মুসলিম ও বিজেপিবিরোধী ভোটারদের ভোটাধিকার খর্ব করা। রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকসহ বিভিন্ন রাজ্যের সাম্প্রতিক নির্বাচনে বিরোধী জোটের অপ্রত্যাশিত পরাজয়ও এই ধরনের অনিয়মের ফল।

অন্যদিকে বিজেপি এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে। দলের নেতা অনুরাগ ঠাকুর বলেছেন, আসলে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলো ভুয়া ভোটার যুক্ত করেছে। তিনি দাবি করেন, বিরোধীরা তাদের ‘অনুপ্রবেশকারীদের ভোটব্যাংক’ রক্ষা করতে চাইছে।

সাধারণ ভোটারদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। যারা রাজ্যের বাইরে কাজ করেন, যাদের ডিজিটাল জ্ঞান নেই বা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ সীমিত, তাদের পক্ষে নাম বাদ যাওয়ার অভিযোগ জানানো প্রায় অসম্ভব।

পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার বলেন, কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই তার স্ত্রীর নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি সংশোধনের চেষ্টা করছেন, কিন্তু আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন—অসচ্ছল মানুষদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ভুল সংশোধন সম্ভব হবে না।

নির্বাচন কমিশনের হিসাবে আগস্টের শেষ নাগাদ ৭ কোটি ২০ লাখ ভোটারের মধ্যে ৯৮ শতাংশ নথি জমা দিয়েছেন। কিন্তু যাচাইয়ের ক্ষেত্রে কোন নথি গ্রহণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে কমিশনের কর্মকর্তারা স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দেননি। বিরোধীদের অভিযোগ নিষ্পত্তি নিয়ে ইতিমধ্যে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট শুনানি শুরু করেছে এবং নভেম্বরে নির্বাচনের আগে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। তবে বিরোধীরা আশঙ্কা করছে, তত দিনে বিপুলসংখ্যক মুসলিম ও বিজেপিবিরোধী ভোটারের ভোটাধিকার খর্ব হয়ে যাবে।


তেলেঙ্গানা রাজ্য সরকারের মন্ত্রী হলেন আজহারউদ্দিন

ফাইল ছবি।
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ভারতের ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও কংগ্রেস নেতা মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন গতকাল শুক্রবার তেলেঙ্গানা রাজ্য সরকারের মন্ত্রিসভায় শপথ গ্রহণ করেছেন। রাজ্যের গভর্নর জিশ্নু দেব বর্মা রাজভবনে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান।
আজহারউদ্দিন ঠিক কোন দপ্তরের দায়িত্ব পালন করবেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তিনি শপথ নেওয়ায় রাজ্যটির মন্ত্রিসভার দীর্ঘদিনের শূন্যতা পূরণ হয়েছে। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের এই রাজ্যে কংগ্রেস সরকারের মন্ত্রিসভায় তিনিই প্রথম মুসলিম প্রতিনিধি।
আজহারউদ্দিনের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির সমালোচনা করেছে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি। তারা বলেছে, আগামী ১১ নভেম্বর জুবিলি হিলস আসনের উপনির্বাচনকে মাথায় রেখে আজহারউদ্দিনকে মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়েছে। কারণে, সেখানে প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটার রয়েছে।
তবে শাসক দল তেলেঙ্গানা কংগ্রেস আজহারউদ্দিনের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তিকে সামাজিক ন্যায়ের প্রতিশ্রুতি পূরণ বলে দাবি করেছে। কংগ্রেসের রাজ্যপ্রধান মহেশ গৌদ এনডিটিভিকে বলেন, ‘আমাদের দল সংখ্যালঘুদের মন্ত্রিসভায় প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এমনকি তৎকালীন অন্ধ্র প্রদেশে সব সময় সংখ্যালঘুরা মন্ত্রিসভায় থাকতেন। আমরা কেবল দীর্ঘদিনের অসমতা ঠিক করেছি।’
আজহারউদ্দিন এখন পর্যন্ত বিধানসভা কাউন্সিলের সদস্য নন, যা রাজ্যের মন্ত্রী হওয়ার জন্য আবশ্যক। তবে গভর্নরের কোটায় তাকে এরই মধ্যে বিধানসভা কাউন্সিলে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গভর্নর এখনো প্রস্তাবটিতে সই করেননি। মন্ত্রিসভার পদ ধরে রাখতে হলে তাকে ছয় মাসের মধ্যে বিধানসভা কাউন্সিলের সদস্য হতে হবে।


চীনের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি মিয়ানমারের দুই শহর থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর

মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে কয়েক মাস ধরে চলমান তীব্র সংঘর্ষ বন্ধে দেশটির জান্তা সরকারের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ)। চুক্তির আওতায় তারা দুটি শহর থেকে নিজেদের সদস্যদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে।

টিএনএলএ গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, চীনের মধ্যস্থতায় কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত কয়েক দিনের আলোচনা শেষে তারা এ চুক্তিতে পৌঁছেছে। কুনমিং মিয়ানমার সীমান্ত থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার (২৪৮ মাইল) দূরে অবস্থিত।

টিএনএলএ বলেছে, চুক্তির আওতায় উত্তরের মান্দালয়ে অবস্থিত মোগক শহর, যা রুবি খনির জন্য পরিচিত এবং শান রাজ্যের উত্তরাঞ্চলীয় মোমেইক শহর থেকে তারা সরে যাবে। তবে তারা সরে যাওয়ার নির্দিষ্ট সময়সীমা প্রকাশ করেনি।

চুক্তি অনুযায়ী, আগামী বুধবার থেকে উভয় পক্ষ অগ্রসর হওয়া বন্ধ রাখবে। টিএনএলএ বলেছে, জান্তা বাহিনী বিমান হামলা বন্ধ রাখতে সম্মত হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে বাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

টিএনএলএ মিয়ানমারের থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের অংশ। জোটের অন্য সদস্যরা হলো মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি ও আরাকান আর্মি। গোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়ে আসছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের পর গঠিত গণতান্ত্রিক প্রতিরোধ আন্দোলনের সঙ্গেও জড়িত তারা।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ওই জোট উত্তর-পূর্ব ও পশ্চিম মিয়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলো দখল করে নেয়। টিএনএলএ একাই ১২টি শহর দখল করেছে। তবে চলতি বছরের শুরুতে চীনের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তির কারণে তাদের অগ্রগতি ধীর হয়ে আসে। ফলে সেনাবাহিনী বড় শহরগুলো পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

চীন মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে একটি কেন্দ্রীয় মধ্যস্থতাকারী শক্তি হিসেবে কাজ করছে। কারণ, এখানে তাদের বড় ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। চলতি বছর চীন সরকার আরও প্রকাশ্যভাবে মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে।

আগামী ডিসেম্বরে মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামরিক সরকার নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।

তবে বহু নির্বাচনী এলাকা এখনো বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় সেসব এলাকায় ভোট গ্রহণ ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা আছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা এ নির্বাচনকে সামরিক সরকারকে বৈধতা দেওয়ার একটি কৌশল বলে মনে করছেন।


নতুন ওমরাহ ভিসা নীতি ঘোষণা করল সৌদি আরব

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

বিভিন্ন দেশ থেকে ওমরাহ পালনে ইচ্ছুক ব্যক্তির সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং হজ ব্যবস্থাপনাকে আরও সুশৃঙ্খল করতে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহমন্ত্রক ভিসা নীতিতে বড় পরিবর্তন এনেছে। নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, ওমরাহ ভিসার প্রবেশপত্রের বৈধতার সময়কাল তিন মাস থেকে কমিয়ে ইস্যু করার তারিখ থেকে মাত্র এক মাস (৩০ দিন) নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে, এই পরিবর্তনের ফলে ওমরাহ যাত্রীদের সৌদি আরবে অবস্থানের মেয়াদের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। সূত্রের বরাত দিয়ে সৌদি সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়া জানিয়েছে, ওমরাহ যাত্রীরা রাজ্যে পৌঁছানোর পর তাদের অবস্থানের মেয়াদ আগের মতোই তিন মাস অপরিবর্তিত থাকবে। এই নতুন নীতি আগামী সপ্তাহ থেকে কার্যকর হবে।

নতুন সংশোধিত নিয়মানুযায়ী, ভিসা ইস্যু হওয়ার তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে যদি কোনো ওমরাহযাত্রী সৌদি আরবে প্রবেশের জন্য নিবন্ধিত না হন বা প্রবেশ না করেন, তবে সেই ভিসাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। এই পদক্ষেপের প্রধান উদ্দেশ্য হলো, ভিসা ব্যবস্থাপনাকে আরও সুগম করা, অপ্রত্যাশিত ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা এবং কেবল প্রস্তুত তীর্থযাত্রীরাই যেন ভিসার সুযোগ নেন, তা নিশ্চিত করা।

ন্যাশনাল কমিটি ফর ওমরাহ অ্যান্ড ভিজিটের উপদেষ্টা আহমেদ বাজাইফার আল-আরাবিয়াকে জানিয়েছেন, গ্রীষ্মের সমাপ্তি এবং মক্কা ও মদিনায় আবহাওয়া শীতল হওয়ায় ওমরাহযাত্রীদের বিশাল ঢেউ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ভিড়কে সুচারুভাবে সামলানো এবং দুই পবিত্র শহরে অতিরিক্ত জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি বৃহত্তর প্রস্তুতির অংশ।

সৌদি গেজেটের তথ্যমতে, চলতি নতুন ওমরাহ মৌসুমের শুরুতে অর্থাৎ গত জুনের প্রথম দিক থেকে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ওমরাহযাত্রীদের জন্য ৪০ লাখের বেশি ওমরাহ ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে এই রেকর্ড সংখ্যক ভিসা প্রদান পূর্ববর্তী মৌসুমগুলোর পরিসংখ্যানকে উল্লেখযোগ্যভাবে ছাড়িয়ে গেছে।

এর আগে পর্যটন সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যে গত মাসে হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় একটি ঘোষণা দেয়। সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) জানায়, এখন থেকে সকল প্রকার ভিসাধারী- যার মধ্যে ব্যক্তিগত, ফ্যামিলি ভিজিট, ইলেকট্রনিক ট্যুরিস্ট, ট্রানজিট এবং ওয়ার্ক ভিসাও অন্তর্ভুক্ত- সবাই সৌদি আরবে ওমরাহ পালনের জন্য অনুমতি পাবেন।

মন্ত্রণালয় বলেছে, সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০-এর লক্ষ্য অনুযায়ী ওমরাহযাত্রীদের জন্য প্রক্রিয়া সহজ করা এবং ওমরাহ পরিষেবাগুলোতে প্রবেশাধিকার ব্যাপকভাবে প্রসারিত করার চলমান প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয় ওমরাহযাত্রীদের জন্য ‘নুসুক ওমরাহ প্ল্যাটফর্ম’ ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরেছে। এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী ওমরাহ প্যাকেজ বুকিং দিতে, ইলেকট্রনিকভাবে (অনলাইনে) ওমরাহ পালনের অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে এবং নিজেদের সুবিধামতো সময় বেছে নিতে পারেন। এই সমন্বিত ডিজিটাল ব্যবস্থা বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের জন্য ওমরাহ পালনকে আরও সহজ, প্রবেশগম্য এবং আধুনিক করবে বলে আশা করছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।


যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধিতে রাজি আফগানিস্তান-পাকিস্তান

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি অন্তত আরও এক সপ্তাহ বহাল রাখতে সম্মত হয়েছে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান। দুদেশের তরফ থেকে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার এসব কথা বলে।

এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুরস্ক ও কাতারের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, শান্তি বজায় রাখতে একটি পর্যবেক্ষণ ও যাচাই ব্যবস্থা গঠন করা হবে এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনকারী পক্ষের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আগামী ৬ নভেম্বর ইস্তাম্বুলে আরেকটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানা যায়।

তালেবান সরকারের মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ শুক্রবার জানান, ইস্তাম্বুলে কয়েকদিন ধরে আলোচনা চলেছে। সামনের দিনগুলোতেও মতবিনিময় অব্যাহত রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাই মত দিয়েছেন।

চলতি মাসের শুরুর দিকে আফগানিস্তানে এক বিস্ফোরণের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে তালেবান সরকার। সেখান থেকেই দুদেশ তাদের দুহাজার ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তবর্তী এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে এই প্রথম এমন ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়ালো দুই প্রতিবেশি।

সংঘর্ষে দুই শতাধিক তালেবান যোদ্ধাকে হত্যার দাবি করেছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। অন্যদিকে তালেবান সরকারের দাবি, তারা ৫৮ পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে।

পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষের পর গত ১৯ অক্টোবর দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে করে। কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় দোহায় ওই বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

শনিবার ইস্তাম্বুলে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় বসে কাবুল ও ইসলামাবাদ। তবে মতবিরোধের জেরে বুধবার আলোচনা কার্যত ভেস্তে যায়। আফগানিস্তানে অবস্থানরত সন্ত্রাসী সংগঠন তেহরিক ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) দ্বন্দ্বের প্রধান কারণ।

ইসলামাবাদের অভিযোগ, আফগান মাটিতে বসে পাকিস্তানে হামলা চালায় টিটিপি। তাদের নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে ব্যবস্থা নিতে তালেবান সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে আসছে পাকিস্তান। তাদের অভিযোগ ও দাবি অস্বীকার করে তালেবান সরকারের বক্তব্য, টিটিপির ওপর তাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।

এই উত্তপ্ত অবস্থা সামলে বৃহস্পতিবার আলোচনায় পুনরায় অগ্রগতি দেখা দেয়। তখন যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বৃদ্ধিতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়।

তালেবান সরকারের তরফ থেকে আলোচনা অব্যাহত থাকার কথা জানানো হলেও পাকিস্তান এ বিষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি।

তবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও দুই দেশের সীমান্ত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আফগানিস্তানের কান্দাহারে বস্ত্র ব্যবসায়ী নাজির আহমদ বলেন, দুই দেশই ক্ষতির মুখে। আমাদের দুদেশই ক্লান্ত-শ্রান্ত।

পাকিস্তানের চামান সীমান্ত শহরের গাড়ির যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার বলেন, বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দুই দেশই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ, কিন্তু উভয়েই ক্ষতির শিকার হচ্ছে।


গাজায় নানা অজুহাতে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল

ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত গাজা শহর। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

যুদ্ধবিরতির পরও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি তাণ্ডব বন্ধ হয়নি। নানা অজুহাতে গাজায় নির্বিচারে রক্তক্ষয়ী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। যুদ্ধবিরতির এই অব্যাহত লঙ্ঘনে গাজাবাসীর সব আশা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। খবর আল জাজিরার।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েল মারাত্মকভাবে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এতে অন্তত শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুদ্ধবিরতি এখনো দৃঢ়ভাবেই কার্যকর রয়েছে।
যদিও দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী কাতার হতাশা ব্যক্ত করে বলেছে, মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতির পরবর্তী পর্যায়ের জন্য অধীরভাবে অপেক্ষা করছে।
এদিকে ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলার পর গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৮ হাজার ৫২৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার ৩৯৫ জন ফিলিস্তিনি।
অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনারা গতকাল লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের ব্লিদা শহরে হামলা চালিয়ে পৌরসভার এক কর্মীকে হত্যা করেছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে।
লেবাননের সরকারি সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সৈন্যরা বেশ কয়েকটি সামরিক ব্লিদা শহরে প্রবেশ করে পৌর ভবনে হামলা চালায়। এসময় ইসরায়েলি হামলায় ইব্রাহিম সালামেহ নামে এক কর্মী নিহত হন। ইসরায়েলি বাহিনী এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি বলে টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে হিজবুল্লাহ এই হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে।
এদিকে, হামাস নিরস্ত্র হোক—চায় না ৭০ শতাংশ ফিলিস্তিনি। গত ২২ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের (পিসিপিএসআর) চালানো জরিপে এ তথ্য দেখা গেছে।
জরিপে অংশ নেওয়াদের ৭০ শতাংশ মনে করে, হামাসের হাতে অস্ত্র থাকলে যদি ইসরায়েল আবার হামলা শুরু করে তবু হামাস যেন অস্ত্র না ছাড়ে। হামাসের নিরস্ত্রীকরণের বিরোধিতা ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিমতীরে বেশি। সেখানে প্রায় ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা হামাসের হাতে অস্ত্র দেখতে চাওয়ার কথা বলেছে। অথচ পশ্চিমতীর শাসন করছে হামাসের প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠন ফাতাহ। ইসরায়েলি গণহত্যার শিকার গাজা উপত্যকার ৫৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি হামাসের নিরস্ত্রীকরণের বিরোধিতা করেছেন।
এ ছাড়া ৬২ শতাংশ ফিলিস্তিনি মনে করে না ট্রাম্পের পরিকল্পনা সফল হবে। এই পরিকল্পনা যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবে না বলে মনে করে তারা। পশ্চিমতীরের ৬৭ শতাংশ ও গাজার ৫৪ শতাংশ ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছে। এক হাজার ২০০ জনের ওপর জরিপটি পরিচালিত হয়। তাদের ৭৬০ জন পশ্চিমতীর ও ৪৪০ জন গাজার বাসিন্দা।
গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন শিগগিরই
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফিলিস্তিনের বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় ‘আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী’ মোতায়েনের পরিকল্পনা তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল শুক্রবার সূত্রের বরাত দিয়ে আল অ্যারাবিয়া এ খবর জানিয়েছে।
সৌদি সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুসারে, গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনীতে আরব এবং বিদেশি উভয় ধরণের সৈন্য থাকবে।
প্রতিবেদনে সামরিক কর্মী পাঠানোর জন্য প্রত্যাশিত নির্দিষ্ট দেশগুলোর নাম উল্লেখ করা হয়নি। আল অ্যারাবিয়ার সূত্র আরও জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের পুলিশ কর্মকর্তাদেরও প্রশিক্ষণের আয়োজন করার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র; তারা গাজায় নিরাপত্তা দেবে।
২৯ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউস গাজার সংঘাত নিরসনের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষিত ‘ব্যাপক পরিকল্পনা’ উন্মোচন করে। ২০-দফা নথিতে, বিশেষ করে ফিলিস্তিনি অঞ্চলে অস্থায়ী ‘বহিরাগত শাসনব্যবস্থা’ চালু করা এবং একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েনের কথা বলা হয়।
৯ অক্টোবর ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, মিসরে আলোচনার পর ইসরায়েল এবং হামাস শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছেছে। ১০ অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, গাজায় সংঘাতের মীমাংসার অংশ হিসেবে হামাস তাদের অস্ত্র সমর্পণ করবে এবং ইসরায়েলি বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করবে বলে জানানো হয়।
গাজায় ২৪ হাজার টনের বেশি ত্রাণ পৌঁছেছে
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ব্যাপকহারে ত্রাণ পৌঁছানো শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সীমান্ত দিয়ে এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার টনের বেশি ত্রাণ সরবরাহ করা হয়েছে এবং কমিউনিটি ভিত্তিক বিতরণ কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি বিষয়ক উপসমন্বয়ক রামিজ আলাকবারভ বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ায় আমরা অনেক বেশি ত্রাণ গাজায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। এখন পরিবার এবং স্থানীয় কমিউনিটির কাছে সরাসরি বিতরণ করা হচ্ছে।’
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির আঞ্চলিক পরিচালক সামের আবদেলজাবের জানান, চলতি মাসে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য সরবরাহ করা হয়েছে। আলাকবারভ বলেন, উপকূলীয় এলাকায় নিরাপত্তার পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় ত্রাণ বিতরণ এখন সহজ হচ্ছে।
একই সঙ্গে ১৫টি থেরাপিউটিক প্রোগ্রাম সেন্টার চালু হয়েছে, যার মধ্যে আটটি নতুন কেন্দ্র গাজার উত্তরে খোলা হয়েছে। এই উদ্যোগে ইউনিসেফ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
জাতিসংঘের কর্মকর্তা আলাকবারভ আরও বলেন, ত্রাণ কার্যক্রমের পূর্ণ সাফল্যের জন্য বেসরকারি সংস্থা ও এনজিওদের অংশগ্রহণ জরুরি, তবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখনো বাধা হয়ে আছে। তিনি ইসরায়েলকে আহ্বান জানান যেন তারা এই সংস্থাগুলোকে মানবিক সহায়তা বিতরণে সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করতে অনুমতি দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী দক্ষিণ ইসরায়েলে সমন্বয় কেন্দ্র স্থাপন করেছে, যা যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ এবং ত্রাণ ও পুনর্গঠন কার্যক্রমে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, যুদ্ধবিরতির কারণে আমরা এখন অনেক বেশি ত্রাণ পাঠাতে পারছি। আমাদের ৬০ দিনের জীবনরক্ষাকারী পরিকল্পনার আওতায় কাজ ত্বরান্বিত করা হয়েছে।


ইসরায়েলি গণহত্যা নিয়ে বাকযুদ্ধে জড়ালেন মের্জ-এরদোয়ান

রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান
আপডেটেড ৩১ অক্টোবর, ২০২৫ ১৮:১৮
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা ও হামলা সম্পর্কে জার্মানি ‘অজ্ঞ ও উদাসীন’ বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। দায়িত্ব গ্রহণের পর মের্জের প্রথম তুরস্ক সফরে দুই ন্যাটো মিত্রের মধ্যে প্রকাশ্য মতবিরোধ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার আঙ্কারায় জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ-এর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মের্জকে উদ্দেশ্য করে এই মন্তব্য করেছেন এরদোয়ান।
সংবাদ সম্মেলনে মের্জ বলেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর থেকেই ইসরায়েলের পাশে রয়েছে জার্মানি। তিনি মনে করেন ইসরায়েল তার ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ প্রয়োগ করছে। হামাস যদি বন্দিদের ছেড়ে দিয়ে অস্ত্র ত্যাগ করত তবে অসংখ্য প্রাণহানি এড়ানো যেত।
এ বক্তব্যের সরাসরি বিরোধিতা করে এরদোয়ান বলেন, হামাসের কাছে কোনো বোমা বা পারমাণবিক অস্ত্র নেই, কিন্তু ইসরায়েলের কাছে সবই আছে। তারা সেগুলো ব্যবহার করে গাজায় হামলা চালাচ্ছে, এমনকি গতরাতেও তারা গাজায় হামলা চালিয়েছে।’
তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘জার্মানি কি এগুলো দেখে না? জার্মানি কি গাজার ওপর এই হামলা ও অবরোধ লক্ষ্য করছে না? ইসরায়েল সবসময় গাজাকে ক্ষুধা ও গণহত্যার মাধ্যমে দমন করার চেষ্টা করছে।’
এরদোয়ানের তীক্ষ্ণ যুক্তিতে মের্জ ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের কিছুটা সমালোচনা করলেও ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার এড়িয়ে গেছেন। এক্ষেত্রে ইসরায়েলবিরোধী সমালোচনা যেন ইহুদিবিদ্বেষে পরিণত না হয় সে বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
এরদোয়ান বলেন, তুরস্ক ও জার্মানি একসঙ্গে কাজ করে গাজায় ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করতে পারে। পাশাপাশি তিনি প্রতিরক্ষা শিল্পে যৌথ প্রকল্প ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুরস্কের যোগদানের ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেন।
মের্জও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে তিনি তুরস্কের সঙ্গে অর্থনৈতিক, পরিবহন ও অভিবাসন বিষয়ে সহযোগিতা বাড়াতে চান।


আমিরাতে লটারিতে স্বর্ণের বার জিতলেন বাংলাদেশি বিক্রয়কর্মী

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে লটারিতে স্বর্ণের বার জিতেছেন মোহাম্মদ হায়দার আলী এক বাংলাদেশি প্রবাসী। তিনি ২৫০ গ্রাম ওজনের ২৪ ক্যারেট একটি সোনার বার জিতেছেন, যা মূল্য প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার দিরহাম (বাংলাদেশি অর্থে ৪১ লাখ টাকার বেশি)।
আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩১ বছর বয়সি হায়দার আলী গত পাঁচ বছর ধরে আমিরাতের আল আইনে থাকেন। সেখানে একটি ইলেকট্রনিকস সামগ্রীর দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন। গত দুই বছর ধরে চার থেকে পাঁচ বন্ধু মিলে তারা লটারির টিকিট কিনছিলেন। অবশেষে কাঙ্ঘিত সাফল্য পেয়ে ২৫০ গ্রাম স্বর্ণ জিতেছেন তিনি।
গালফ নিউজ জানিয়েছে, লটারির উপস্থাপক রিচার্ড লাইভ ড্র চলাকালীন হায়দার আলীকে যখন ফোন করেন, তিনি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তিনি জিজ্ঞেস করেন, কত গ্রাম সোনা জিতেছি? পরে ফোনটি তার কাছে থাকা তার বন্ধুর হাতে তুলে দেন। সত্যিটা জানতে পেরে তিনি ও তার বন্ধু আনন্দে লাফিয়ে ওঠেন।
হায়দার বলেন, ‘আমি খুব খুশি। এটা সত্যিই একটা বিরাট চমক। এটি আমাকে আবারো টিকিট কাটতে অনুপ্রাণিত করেছে।’ তবে লটারিতে পাওয়া স্বর্ণের বার দিয়ে কী করবেন সেটি এখনো ঠিক করেননি তিনি।
এর আগে গত সপ্তাহে মানসুর আহমেদ নামে এক বাংলাদেশি ইলেকট্রিশিয়ান ২৪ ক্যারেটের ২৫০ গ্রাম স্বর্ণের বার জিতেছিলেন।


মরক্কোতে ‘জেন জি’বিক্ষোভে সহিংসতা, হাজারেরও বেশি অভিযুক্ত

মরক্কোতে ‘জেন জি’ বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ ২৩:৪৪
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

মরক্কোতে তরুণদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া ‘জেন জি’ বিক্ষোভ এখন দেশটির ইতিহাসে অন্যতম বড় রাজনৈতিক অস্থিরতায় রূপ নিয়েছে। শান্তিপূর্ণ দাবিতে শুরু হওয়া এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সহিংসতায় পরিণত হয়, যার জেরে সরকার ব্যাপক গ্রেপ্তার ও মামলা শুরু করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো সরকারের কঠোর পদক্ষেপের নিন্দা জানালেও, রাষ্ট্রপক্ষ বলছে—আইনের সীমার মধ্যেই নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে।

সম্প্রতি মরক্কো সরকার জানায়, সহিংস ‘জেন জি’ বিক্ষোভের ঘটনায় মোট ২ হাজার ৪৮০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৭৩ জন বর্তমানে হেফাজতে রয়েছেন এবং তাদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার অপেক্ষায়। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে—বিদ্রোহে অংশগ্রহণ, সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর হামলা, সরকারি কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি, এবং অপরাধে প্ররোচনা দেওয়া। সরকার বলছে, দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার প্রতিক্রিয়ায় তারা এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।

এই আন্দোলনের সূচনা হয় ‘জেনজি ২১২’ নামে এক তরুণ সংগঠনের উদ্যোগে। সংগঠনটি সরকারের ব্যয় অগ্রাধিকার ও সরকারি সেবার দুরাবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। তাদের দাবি ছিল—সরকার খেলাধুলার অবকাঠামো নির্মাণে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে, অথচ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের মতো মৌলিক খাতগুলো অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। তরুণদের এই আন্দোলন দ্রুত জনপ্রিয়তা পেলেও, কয়েকটি শহরে তা সহিংস রূপ নেয়।

যদিও সংগঠকরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়েছিলেন, তবুও কিছু এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে অন্তত ৩ জন নিহত হন, বহু মানুষ আহত হন এবং দোকানপাট ও যানবাহনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কাসাব্লাঙ্কা ও মারাকেশসহ বিভিন্ন শহরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।

সরকারি পক্ষ দাবি করছে—নিরাপত্তা বাহিনীর হস্তক্ষেপ আইনসঙ্গতভাবে করা হয়েছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সরকারের এই দমন অভিযান অযৌক্তিক ও নির্বিচার। মরক্কান অ্যাসোসিয়েশন ফর হিউম্যান রাইটস (AMDH) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গ্রেপ্তারগুলো ‘এলোমেলো ও অন্যায্য’। অপরদিকে, ‘জেনজি ২১২’ সংগঠনটি তাদের সকল সদস্য ও সমর্থকের মুক্তির দাবি জানিয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সহযোগী পরিচালক হানান সালাহ বলেছেন, ‘তরুণদের ন্যায্য সুযোগ ও ভবিষ্যতের দাবি গুলি ও দমননীতির মাধ্যমে রোধ করা যায় না।’ তিনি মরক্কো সরকারকে তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠস্বর শোনার আহ্বান জানান।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন জনপ্রিয় র‍্যাপার হামজা রায়েদ, যিনি তরুণদের মাঝে পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। গত মাসে কাসাব্লাঙ্কা থেকে তাকে আটক করা হয়। তার গানে প্রায়ই রাজনৈতিক অন্যায়, দুর্নীতি এবং তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভের কথা উঠে আসে।

এদিকে গত সোমবার রাজধানীতে তিনজন অভিযুক্ত আদালতে হাজির হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—সরকারি সংস্থাকে অপমান করা ও অপরাধে প্ররোচনা দেওয়া। জানা গেছে, তারা জাতীয় ফুটবল দলের জার্সিতে প্রতিবাদী স্লোগান মুদ্রণ করেছিলেন। দোষী প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। তথ্যসূত্র: সিএনএন


চীনের ওপর শুল্ক কমালেন ট্রাম্প

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর দেশটির ওপর আরোপিত শুল্ক কমালেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন, চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানো হচ্ছে এবং দীর্ঘদিনের ‘রেয়ার আর্থস রোডব্লক’ বা বিরল খনিজ বিরোধের অবসান ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার এয়ার ফোর্স ওয়ান থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, এটি ছিল এক অসাধারণ বৈঠক। তিনি (সি) একজন মহান নেতা। আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছি, যার বিস্তারিত শিগগিরই জানানো হবে।

ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানাইল প্রবেশ রোধে চীনের ওপর আমি ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলাম। আমি সেটি ১০ শতাংশ কমিয়েছি এবং এটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে।

তিনি বলেন, ওয়াশিংটন ও বেইজিং এখন অনেক বিষয়ে একমত। চীন এখন থেকে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন কিনবে, আমি এর প্রশংসা করি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, রেয়ার আর্থ বা গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের বাণিজ্যসংক্রান্ত ইস্যুটি ‘সম্পূর্ণভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে’। তিনি বলেন, চীনের পক্ষ থেকে এখন আর কোনো রোডব্লক নেই। এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, সারা বিশ্বের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।

উল্লেখ্য, এই খনিজগুলোর প্রক্রিয়াজাতকরণে চীনের একচেটিয়া প্রভাব রয়েছে এবং সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেইজিং রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করেছিল।

ট্রাম্প আরও জানান, আগামী এপ্রিল মাসে তিনি চীন সফর করবেন এবং এর পর সি চিনপিং যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন।


মেলিসার তাণ্ডবে তছনছ তিন দেশ

মেলিসার তাণ্ডবে উপড়ে পড়েছে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি। ছবি: সংগৃহীত 
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

হ্যারিকেন মেলিসায় লণ্ডভণ্ড ক্যারিবীয় অঞ্চলের তিন দেশ। গত বুধবার রাতে দক্ষিণ-পশ্চিম জ্যামাইকায় নিউ হোপের কাছে আছড়ে পড়ে ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ কিলোমিটার বেগের ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়। নজিরবিহীন প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখনো পর্যন্ত ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৭৪ বছরে এত ভয়ংকর ঝড় দেখেনি জ্যামাইকা।

কেবল জ্যামাইকা নয়, ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে কিউবার পূর্বাঞ্চল এবং হাইতির কিছু অংশ। ঝড়ে মৃত্যু হয়েছে জ্যামাইকা এবং হাইতি দুই দেশেই। মৃতের সংখ্যা বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। জ্যামাইকায় ঝড়ের দাপটে উপড়ে গিয়েছে বহু গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি। এর ফলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে বেশির ভাগ এলাকায়। অন্ধকারে রয়েছেন দুলক্ষ মানুষ। তবে হাসপাতালে এখনো বিদ্যুৎ রয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। অধিকাংশ রাস্তা বন্ধ। উপকূলবর্তী অঞ্চলে বাড়ি, দোকানপাট ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। আগে থেকে স্থানীয়দের নিরাপদ এলাকায় সরানোয় বড় বিপদ এড়ানো গিয়েছে, মনে করছে প্রশাসন।

ইতোমধ্যে জরুরি সহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য একটি অনলাইন পোর্টাল খোলা হয়েছে। আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা, জ্যামাইকায় ভয়াবহ ভূমিধস ও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে, যা আরও বড় মানবিক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়কে ক্যাটাগরি-৫ বলে চিহ্নিত করেছে জ্যামাইকা। ১৭৪ বছরে এত ভয়ংকর ঝড় আর দেখেনি দেশটির মানুষ। এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় হিসাবেও বর্ণনা করা হচ্ছে এটিকে।

জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস বলছেন, মেলিসার মোকাবিলা করতে পারে এমন পরিকাঠামো নেই তার দেশে। তাই তিনি বাসিন্দাদের সাবধান থাকার অনুরোধ করেছিলেন।

জ্যামাইকায় মেলিসার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো স্পষ্ট নয়। উদ্ধারকাজও পুরোদমে শুরু করা যায়নি। বহু মানুষ ঘরছাড়া। নিখোঁজ অনেকে। মেলিসা আঘাত হানার সময় প্রায় ২৫ হাজার পর্যটক এই দ্বীপদেশটিতে অবস্থান করছিলেন।

বিমান চলাচল স্বাভাবিক হলে বার্বাডোজের একটি ত্রাণ সরবরাহ শিবির থেকে জ্যামাইকায় প্রায় ২ হাজার ত্রাণ সরঞ্জাম বিমানে পাঠানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শুধু জ্যামাইকাই নয়; কিউবা এবং হাইতিসহ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে এমন সব দেশেই সহায়তা পাঠানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাগরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত শক্তি অর্জন করেছে মেলিসা। তাদের মতে, সবশেষ এ হারিকেনটি কেবল জ্যামাইকাই নয়, গোটা ক্যারিবীয় অঞ্চলের জন্য এক ভয়ংকর মানবিক সংকটের ইঙ্গিত বহন করছে।

সরাসরি আঘাত না হানলেও টানা কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে হাইতিতে। দেশটির রাজধানী থেকে প্রায় ৬৪ কিলোমিরটার পশ্চিমে অবস্থিত উপকূলীয় শহর পেটিট-গোয়াভেতে একটি নদীর পানি উপচে পড়ে সৃষ্ট বন্যায় অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ১০ শিশু রয়েছে। এ ছাড়া, অন্তত ১২ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে হাইতির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা।

মেলিসার আঘাতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিউবাও। যদিও লক্ষাধিক মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে কিউবা সরকার। দেশটির রাষ্ট্রপতি মিগুয়েল ডিয়াজ-ক্যানেলের সভাপতিত্বে টেলিভিশনে প্রচারিত সিভিল ডিফেন্স সভায় ক্ষয়ক্ষতির কোনও আনুষ্ঠানিক অনুমান দেওয়া হয়নি। তবে, ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশ, সান্তিয়াগো, গ্রানমা, হলগুইন, গুয়ান্তানামো এবং লাস টুনাস-এর কর্মকর্তারা ছাদ, বিদ্যুৎ লাইন, ফাইবার অপটিক টেলিযোগাযোগ তার, কাটা রাস্তা, বিচ্ছিন্ন সম্প্রদায় এবং কলা, কাসাভা এবং কফি বাগানের ক্ষতির কথা জানিয়েছেন। উদ্ধার তৎপরতা শুরু হলেও ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ট্রান্সফরমার এবং বিদ্যুতের লাইন ভেঙে পড়ার কারণে এখনো বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট এবং টেলিফোন পরিষেবা বন্ধ আছে বিভিন্ন অঞ্চলে।

বৃহস্পতিবার ভোরে হারিকেন মেলিসা দুর্বল হয়ে ক্যাটাগরি ২ ঝড়ে পরিণত হয় যার বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ১০৫ মাইল। এটি বাহামা থেকে পিছু হটে বারমুডার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতের শেষের দিকে এটি বারমুডার উত্তর-পশ্চিমে অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে হারিকেন- এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড়-শক্তির বাতাস তার কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে বিস্তৃত এবং আজ বারমুডা পৌঁছাবে, হারিকেন কেন্দ্র জানিয়েছে।


জেরুজালেমে নতুন ১৩০০ বসতি নির্মাণের অনুমোদন দিল ইসরায়েল

পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি বাহিনীর টহল। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের দক্ষিণে এক হাজার ৩০০ নতুন বসতি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের সরকার। এ সপ্তাহের শুরুর দিকে সর্বসম্মতিক্রমে সরকারের গুশ এৎজিয়ন বসতি ব্লকের বিশেষ পরিকল্পনা ও নির্মাণ কমিটি পরিকল্পনাটির অনুমোদন দিয়েছে। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার ২০২২ সালে থেকে এ পর্যন্ত পশ্চিম তীরে প্রায় ৪৮,০০০ বসতি স্থাপন করার অনুমোদন দিয়েছে।

পশ্চিম তীরে অভিযান, জমি দখল ও বসতি স্থাপন নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর বার্তা দেওয়ার এক সপ্তাহ পার না হতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল সরকার। এছাড়াও ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের একদিন আগে দখলকৃত পশ্চিম তীর ও মা’লে আদুমিম আবাসন ব্লক সংযুক্ত করার দুটি প্রস্তাবিত আইনের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলি সংসদ নেসেট।

ইসরায়েলের চ্যানেল ১৪–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন এই বসতি পরিকল্পনার ফলে দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের দক্ষিণ-পশ্চিমে আলন শভুত এবং দক্ষিণে অবস্থিত হার হারুসিম এলাকায় এক অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ ঘটবে। পরিকল্পনার আওতায় বিদ্যালয়, সরকারি ভবন, পার্ক এবং বড় বাণিজ্যিক এলাকা তৈরির কথা বলা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে গুশ এৎজিয়ন আঞ্চলিক কাউন্সিল এক বিবৃতিতে বলেছেন, এটি হলো এলাকার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদার যথাযথ প্রতিক্রিয়া।

এই পরিকল্পনাকে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের জন্য প্রাণঘাতী আঘাত বলে উল্লেখ করেছে ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা পিস নাউ। এই পদক্ষেপের ফলে পশ্চিম তীর দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘ একাধিকবার ঘোষণা করেছে, দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতি আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ এবং এগুলো দুই রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে নষ্ট করছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব জেরুজালেমকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের রাজধানী করার দাবি করে আসছে ফিলিস্তিনিরা।

‘নতুন উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য ইসরায়েল সম্পূর্ণ দায়ী’

যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও দখলদার বাহিনীর ধারাবাহিক বিমান হামলায় ১০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর গাজা উপত্যকায় উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে হামাস।

গত বুধবার এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠনটি বলেছে, হামাস ইসরায়েলকে গাজায় ‘নতুন বাস্তবতা’ চাপিয়ে দেওয়ার অনুমতি দেবে না।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হামাস নিশ্চিত করছে, এই বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য- এর ক্ষেত্র ও রাজনৈতিক পরিণতির জন্য এবং ট্রাম্পের পরিকল্পনা ও যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে নাশকতার চেষ্টার জন্য (ইসরায়েলি) দখলদারিত্ব সম্পূর্ণ দায়ী।’

দখলদার বাহিনীর প্রাণঘাতী হামলার পরও যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি হামাস পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। মধ্যস্থতাকারীদের তাদের দায়িত্ব পালন করার এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা বন্ধ করার জন্য ইসরায়েলের ওপর অবিলম্বে চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি ভয়াবহ হামলায় ১০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এটি ট্রাম্পের ২০-দফা পরিকল্পনার অধীনে ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির নির্লজ্জ লঙ্ঘন।

ইসরায়েল দাবি করেছে, রাফায় তাদের বাহিনীর ওপর গুলি চালানোর জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। যদিও হামাস এই হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

প্রসঙ্গত, গাজা অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একই সময়ে ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি বেশি মানুষ আহত হয়েছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।

চলতি বছরের শুরুতেও একটি যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ইসরায়েল গত ২৭ মে থেকে গাজায় পৃথক সাহায্য বিতরণ উদ্যোগ শুরু করে। এই পদক্ষেপের পর অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষ প্রকট হয়ে উঠেছিল।

ইসরায়েলি বাহিনী খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও গুলি চালিয়ে যায়। এর ফলে শত শত মানুষ নিহত হয়। সেই সঙ্গে দুর্ভিক্ষে শিশুসহ বহু মানুষের মৃত্যু হয়।

গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।

ইসরায়েলি হামলায় স্ত্রীসহ ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে চালানো ইসরায়েলি হামলায় সস্ত্রীক নিহত হয়েছেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক। উপত্যকাটির সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় এ তথ্য জানিয়েছেন।

কার্যালয়ের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্যালেস্টাইন নিউজপেপার-এর সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-মুনিরাভি এবং তার স্ত্রী বুধবার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হন।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তবে যুদ্ধবিরতি চলার মধ্যেও গত কয়েক দিনে গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

সবশেষ মঙ্গলবার উপত্যকাটিতে চালানো ইসরায়েলি হামলায় ১০৪ জন নিহত হন। যাদের মধ্যে ৪৬টি শিশু এবং ২০ জন নারী। এছাড়া আহত হন আরও ২৩৫ জন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘তাৎক্ষণিক ও শক্তিশালী হামলার’ নির্দেশ দেওয়ার পর এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। তিনি দাবি করেন, হামাস রাফা অঞ্চলে ইসরাইলি সেনাদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। যদিও হামাস এই দবি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

আল-মুনিরাভির মৃত্যুর পর থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ২৫৬ জনে দাঁড়িয়েছে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের অনেকেই আন্তর্জাতিক ও মূলধারার গণমাধ্যমে কর্মরত ছিলেন এবং ফিলিস্তিনি সাংবাদিক মহলে ছিলেন সাহসী ও প্রভাবশালী কণ্ঠ। তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে, যাতে গাজায় চালানো হত্যাযজ্ঞের সঠিক তথ্য প্রকাশ না পায়।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, সাংবাদিক সুরক্ষা সংগঠন এবং ফিলিস্তিনিরা বারবার এই হত্যাকাণ্ডগুলোর নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, এটি নিঃসন্দেহে এমন একটি ধারাবাহিক প্যাটার্ন যা সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যা করে সত্যকে চাপা দেওয়ার নীরব প্রচেষ্টা।


চীনের সঙ্গে বিরল খনিজ পদার্থ নিয়ে এক বছরের নবায়নযোগ্য চুক্তি হয়েছে : ট্রাম্প

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং এর সঙ্গে বৈঠকে বিরল খনিজ নিয়ে বাধা দূর হয়েছে। দেশটির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সরবরাহে এক বছরের নবায়নযোগ্য চুক্তি হয়েছে।

চীন ‘বিরল খনিজ’ পদার্থের ওপর প্রায় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। এসব খনিজ পদার্থ ঘরোয়া যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে গাড়ি, জ্বালানি এবং অস্ত্র তৈরির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরিহার্য।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ট্রাম্প এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের বলেন, সব বিরল খনিজের বিষয়টি সমাধান হয়েছে এবং এটি বিশ্বের সবার জন্য প্রযোজ্য।

তিনি জানান, চুক্তিটি এক বছরের জন্য এবং প্রতিবছর পুনরায় আলোচনা করে নবায়ন করা হবে।

এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে ট্রাম্প জাপানের সঙ্গেও একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এতে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও বিরল খনিজ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বিরল খনিজ নিয়ে এখন আর কোনো বাধা নেই । আশা করি এই শব্দটি কিছুদিনের জন্য আমাদের শব্দভাণ্ডার থেকে মুছে যাবে।’ সূত্র: বাসস


শত বছর পর সমুদ্র সৈকতে মিলল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সৈন্যদের বোতলবন্দি চিঠি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

অস্ট্রেলিয়ার এক নির্জন সমুদ্র সৈকতে শত বছর পর ভেসে উঠেছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া দুই সৈন্যের লেখা বোতলবন্দি চিঠি। ১৯১৬ সালে লেখা এই চিঠিগুলো যুদ্ধযাত্রা শুরুর আনন্দে পূর্ণ থাকলেও, এর এক লেখক পরে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারান।

এক শতাব্দীরও বেশি সময় পর দুজন অস্ট্রেলিয়ান সৈন্যের লেখা বোতলবন্দি এই চিঠি দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে সম্প্রতি ভেসে আসে। বুধবার (২৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ১৯১৬ সালে লেখা এই চিঠিগুলো সৈন্যরা যুদ্ধের উদ্দেশে ফ্রান্সগামী জাহাজে ওঠার কয়েক দিনের মধ্যেই লিখেছিলেন। চিঠিতে তাদের হাসিখুশি কথাবার্তা ছিল। আর তাতে মিশে ছিল যুদ্ধযাত্রার শুরুতে তারুণ্যের উত্তেজনার ছোঁয়া।

সৈন্যদের একজন ছিলেন ২৮ বছর বয়সী প্রাইভেট ম্যালকম নেভিল। চিঠিতে তিনি তার মাকে লিখেছিলেন— জাহাজের খাবার “দারুণ ভালো” এবং তারা “ভীষণ খুশি”। কিন্তু কয়েক মাস পরই তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হন। অপর সৈন্য ছিলেন ৩৭ বছর বয়সী প্রাইভেট উইলিয়াম হার্লি। তিনি অবশ্য যুদ্ধ থেকে জীবিত ফিরে আসেন।

সম্প্রতি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার দূরবর্তী হোয়াইটন সৈকতে বোতলটি খুঁজে পান স্থানীয় নারী ডেব ব্রাউন ও তার পরিবার। নিয়মিতভাবে সৈকত পরিষ্কারে বের হলে বালুর ভেতর পুরু কাচের বোতলটি চোখে পড়ে তাদের।

ব্রাউন বলেন, “আমরা প্রায়ই সৈকত পরিষ্কার করি, তাই ময়লা দেখলে কখনও ফেলে যাই না। ছোট্ট এই বোতলটাও এমনভাবেই খুঁজে পাই আমরা।”

বিবিসি বলছে, চিঠির কাগজ ভেজা থাকলেও লেখাগুলো পরিষ্কারই ছিল। তাই তিনি সৈন্যদের পরিবারের খোঁজ শুরু করেন যাতে চিঠিগুলো তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া যায়।

নেভিলের চিঠিতে তার মায়ের ঠিকানা লেখা ছিল। এর ফলে ব্রাউন অনলাইনে নেভিলের আত্মীয় হার্বি নেভিলকে খুঁজে পান। তিনি বলেন, “এটা আমাদের পরিবারের জন্য অবিশ্বাস্য এক অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে আমার খালা মারিয়ান ডেভিসের জন্য। কারণ তিনি শৈশবে তার চাচাকে যুদ্ধে যেতে দেখেছিলেন, কিন্তু তিনি আর ফেরেননি।”

অন্য চিঠিটি লিখেছিলেন প্রাইভেট উইলিয়াম হার্লি। যেহেতু তার মা তখন বেঁচে ছিলেন না, তাই তিনি ওই চিঠিটি লিখেছিলেন “যে এই বোতলটি পাবে” তাকে সম্বোধন করে। হার্লির নাতনি অ্যান টার্নার বলেন, “এটা যেন এক অলৌকিক ঘটনা। মনে হচ্ছে দাদু যেন সমাধি থেকে আমাদের উদ্দেশে হাত বাড়িয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “অন্য সৈন্যটি মাকে চিঠি লিখেছিল, আর আমাদের দাদু তার মা অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন বলে তিনি চিঠিটি লিখেছিলেন অজানা খুঁজে-পাওয়া মানুষের উদ্দেশে। এটা ভীষণ আবেগের।”

হার্লি তার চিঠিতে লিখেছিলেন, বোতলটি নিক্ষেপ করা হয়েছিল ‘দ্য গ্রেট অস্ট্রেলিয়ান বাইট’-এর কোথাও থেকে। এটি দেশটির দক্ষিণ উপকূলবর্তী বিশাল সাগরীয় অঞ্চল।

অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (এবিসি) এক সমুদ্রবিজ্ঞান অধ্যাপক জানিয়েছেন, বোতলটি হয়তো প্রথমে মাত্র কয়েক সপ্তাহ পানিতে ভেসেছিল, এরপর হোয়াইটন সৈকতের বালুর নিচেই শত বছর ধরে চাপা পড়ে ছিল।


banner close