এশিয়া পেরিয়ে জেন-জি বিক্ষোভে এবার উত্তাল উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কো। শনিবার থেকে চলমান বিক্ষোভে দেশটিতে যেন সরকারবিরোধী গণজোয়ারের আগাম গর্জন শোনা যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণগ্রেপ্তার চালাচ্ছে।
একইসঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দাবি পূরণের আশ্বাস বা সমঝোতার ঘোষণা দিয়েও জেন-জিদের শান্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। মঙ্গলবার ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
স্থানীয় অধিকার গোষ্ঠী এবং সংবাদ সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে, টানা তৃতীয় দিনের বিক্ষোভের পর সোমবার গণগ্রেপ্তার শুরু করে মরক্কো পুলিশ। তারা সড়ক-বাড়ি-অফিস থেকে কয়েক ডজন লোককে আটক করেছে। আটককৃতরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন বলে দাবি পুলিশের। মানবাধিকার গোষ্ঠী বলছে, নতুন বিক্ষোভ দমন করার সব চেষ্টার একটি অংশ এই গণগ্রেপ্তার।
এদিকে রাজধানী রাবাত এবং মরক্কোর বৃহত্তম শহর কাসাব্লাঙ্কার মতো শহরগুলোর পাশাপাশি আগাদির, টাঙ্গিয়ার ও ওজদায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা গেছে। সপ্তাহান্তে বিক্ষোভের জন্য অনলাইনে আহ্বান প্রচারিত হওয়ার পর থেকে কর্তৃপক্ষ তরুণদের একত্রিত হতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এএফপি এবং রয়টার্স উভয় সংবাদসংস্থা সাংবাদিক এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, পুলিশ রাবাতে স্লোগান দেওয়ার বা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করার সময় কয়েক ডজন তরুণ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে।
মরক্কো মানবাধিকার সমিতির রাবাত শাখার সভাপতি হাকিম সিকুক বলেন, পুলিশ সপ্তাহান্তে রাবাতে ১০০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানা গেছে। কমপক্ষে ১১টি শহরের রাস্তায় তরুণ মরোক্কানরা নেমে আসার সময় কয়েক ডজন লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে, রোববার রাতে মরক্কোর বৃহত্তম শহর কাসাব্লাঙ্কায় বিক্ষোভকারীরা প্রধান মহাসড়ক অবরোধ করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কাছের সড়কে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক ছত্রভঙ্গ করছে।
সোমবার সিকুক বলেন, সপ্তাহান্তে আটক বেশিরভাগ বিক্ষোভকারীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেককে নির্যাতন করা হয়েছে বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি।
এদিকে মঙ্গলবার মরক্কোর সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতৃত্ব তরুণদের দাবি শোনার জন্য সংলাপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া আইন মেনে দাবি অনুযায়ী স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক পরিষেবা উন্নত করার কাজ করতে তারা পূর্ণ প্রস্তুতি প্রকাশ করেছেন।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক শেষে জানানো হয়, অনলাইন এবং পাবলিক প্লেসে তরুণদের দাবি পর্যালোচনা করার পর সরকার নিশ্চিত করছে যে, তারা প্রয়োগযোগ্য দাবিগুলো মনোযোগ সহকারে আমলে নেবেন।
‘জেন-জি ২১২’ ও মরোক্কান ইয়ুথ ভয়েসের মতো তরুণ গোষ্ঠীর নেতৃত্বে বিক্ষোভের ঢেউ কমপক্ষে ১১টি শহরে ছড়িয়ে পড়ার পর ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা, ক্রমবর্ধমান বৈষম্য এবং দুর্বল শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকে তরুণরা রাস্তায় নামেন। দিন দিন তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বয়সী মানুষ যোগ দিচ্ছেন।
আইনপ্রণেতারা ব্যয়সংক্রান্ত একটি বিল পাস করতে শেষ মুহূর্তে ব্যর্থ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার আংশিক শাটডাউন (অচল) হয়ে পড়েছে। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা অস্থায়ী ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারে অচলাবস্থার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারকে সচল রাখতে স্থানীয় সময় রাত ১২টার মধ্যে ব্যয়সংক্রান্ত বিল পাস করা লাগত। কিন্তু সেই বিল পাস হয়নি।
১৯৮০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ১৫ বার মার্কিন সরকারের কার্যক্রম আংশিকভাবে শাটডাউন হয়েছে। শাটডাউনের সময় সরকারি খাতের আকার উল্লেখযোগ্য হারে ছোট করার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে আগের শাটডাউনগুলোর তুলনায় এবার বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।
গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প সতর্ক করেন, শাটডাউনকে কাজে লাগিয়ে তিনি এমন পদক্ষেপ নিতে পারেন, যা ডেমোক্র্যাটদের জন্য ‘খারাপ’ হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও বলেন, শাটডাউনের সময় সরকারি কর্মীদের চাকরি ও সরকারি কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ‘অনেক কিছুতে পরিবর্তন’ আনা সম্ভব। এর মধ্যে সরকারি খাতের আকার ছোট করা এবং অপ্রয়োজনীয় সেবা কাটছাঁট করার বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত।
সরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ জনগণ শাটডাউনের প্রভাব টের পাবেন। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সেবা যেমন সামাজিক নিরাপত্তা এবং খাদ্যসহায়তা চালু থাকবে। তবে কম গুরুত্বপূর্ণ কিছু কার্যক্রম এবং ছোট ব্যবসার ঋণ অনুমোদন স্থগিত থাকবে।
ডেমোক্র্যাটরা শাটডাউনের জন্য রিপাবলিকানদের দায়ী করছেন। সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার বলেছেন, ‘রিপাবলিকানরা স্বাস্থ্যসেবা সমস্যার সমাধান না করে আমাদের শাটডাউনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।’
হাউসের ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফ্রিস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে রিপাবলিকানরা ভোট দিচ্ছেন।
এশিয়া পেরিয়ে জেন-জি বিক্ষোভে এবার উত্তাল উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কো। গত শনিবার থেকে চলমান বিক্ষোভে দেশটিতে যেন সরকারবিরোধী গণজোয়ারের আগাম গর্জন শোনা যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণগ্রেপ্তার চালাচ্ছে।
একইসঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দাবি পূরণের আশ্বাস বা সমঝোতার ঘোষণা দিয়েও জেন-জিদের শান্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। গত মঙ্গলবার ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
স্থানীয় অধিকার গোষ্ঠী এবং সংবাদ সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে, টানা তৃতীয় দিনের বিক্ষোভের পর গত সোমবার গণগ্রেপ্তার শুরু করে মরক্কো পুলিশ। তারা সড়ক-বাড়ি-অফিস থেকে কয়েক ডজন লোককে আটক করেছে। আটককৃতরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন বলে দাবি পুলিশের। মানবাধিকার গোষ্ঠী বলছে, নতুন বিক্ষোভ দমন করার সব চেষ্টার একটি অংশ এই গণগ্রেপ্তার।
এদিকে রাজধানী রাবাত এবং মরক্কোর বৃহত্তম শহর কাসাব্লাঙ্কার মতো শহরগুলোর পাশাপাশি আগাদির, টাঙ্গিয়ার ও ওজদায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা গেছে। সপ্তাহান্তে বিক্ষোভের জন্য অনলাইনে আহ্বান প্রচারিত হওয়ার পর থেকে কর্তৃপক্ষ তরুণদের একত্রিত হতে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এএফপি এবং রয়টার্স উভয় সংবাদসংস্থা সাংবাদিক এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, পুলিশ রাবাতে স্লোগান দেওয়ার বা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করার সময় কয়েক ডজন তরুণ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে।
মরক্কো মানবাধিকার সমিতির রাবাত শাখার সভাপতি হাকিম সিকুক বলেন, পুলিশ সপ্তাহান্তে রাবাতে ১০০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানা গেছে। কমপক্ষে ১১টি শহরের রাস্তায় তরুণ মরোক্কানরা নেমে আসার সময় কয়েক ডজন লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে, গত রোববার রাতে মরক্কোর বৃহত্তম শহর কাসাব্লাঙ্কায় বিক্ষোভকারীরা প্রধান মহাসড়ক অবরোধ করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কাছের সড়কে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক ছত্রভঙ্গ করছে।
গত সোমবার সিকুক বলেন, সপ্তাহান্তে আটক বেশিরভাগ বিক্ষোভকারীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেককে নির্যাতন করা হয়েছে বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি।
এদিকে গত মঙ্গলবার মরক্কোর সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতৃত্ব তরুণদের দাবি শোনার জন্য সংলাপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া আইন মেনে দাবি অনুযায়ী স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক পরিষেবা উন্নত করার কাজ করতে তারা পূর্ণ প্রস্তুতি প্রকাশ করেছেন।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক শেষে জানানো হয়, অনলাইন এবং পাবলিক প্লেসে তরুণদের দাবি পর্যালোচনা করার পর সরকার নিশ্চিত করছে যে, তারা প্রয়োগযোগ্য দাবিগুলো মনোযোগ সহকারে আমলে নেবেন।
‘জেন-জি ২১২’ ও মরোক্কান ইয়ুথ ভয়েসের মতো তরুণ গোষ্ঠীর নেতৃত্বে বিক্ষোভের ঢেউ কমপক্ষে ১১টি শহরে ছড়িয়ে পড়ার পর ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা, ক্রমবর্ধমান বৈষম্য এবং দুর্বল শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকে তরুণরা রাস্তায় নামেন। দিন দিন তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বয়সী মানুষ যোগ দিচ্ছেন।
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯ হয়েছে। গতকাল বুধবার এক দুর্যোগ কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে উদ্ধার অভিযান চালানো এবং বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ পুনরুদ্ধারের জন্য বিভিন্ন এজেন্সি মোবিলাইজ করা হয়েছে। সেবু প্রদেশের বোগো শহর ছিল ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল।
ভূমিকম্পটি গত মঙ্গলবার রাত ১০টার কিছু আগে সেবু উপকূলে আঘাত হানে। সেবু প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের তথ্যানুযায়ী মৃতের সংখ্যা ৬৯। তবে এটি যাচাই প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন সিভিল ডিফেন্স অফিসের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো। আরও এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৫০ এর বেশি লোক আহত হয়েছে।
ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র সারভাইভারদের দ্রুত সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন এবং বলেছেন, মন্ত্রীরা মাঠে আছেন এবং ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন তিনি। সেবু ফিলিপাইনের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য, সেখানে জনসংখ্যা ৩.৪ মিলিয়ন। ভূমিকম্পের পরও মাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, সান রেমিজিও শহরটিকে বিপর্যয় মোকাবিলা ঘোষণা করা হয়েছে যাতে ত্রাণ কার্যক্রমের সহায়তা করা যায়। উপমেয়র আলফি রেইনেস আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্য ও পানি এবং উদ্ধারকারী কর্মীদের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রেইনেস ডিএজেডএমএম রেডিওকে বলেছেন, ‘অতিরিক্ত বৃষ্টি হচ্ছে এবং বিদ্যুৎ নেই, তাই আমাদের সাহায্য প্রয়োজন। বিশেষ করে উত্তর অঞ্চলে, যেখানে পানির অভাব দেখা দিয়েছে কারণ ভূমিকম্পে সরবরাহ লাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
নিকটবর্তী পিলার শহরের বাসিন্দা আর্চেল কোরাজা জানান, তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য যখন ঘুমাচ্ছিলেন, তখন তাদের বাড়ি প্রচণ্ডভাবে কেঁপে ওঠে।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তাদের জাগিয়ে দিলাম এবং সবাই রাস্তায় দৌড়ে গেলাম।’ কোরাজা উপকূলীয় এলাকায় বাস করেন। তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্পের পর সমুদ্রের পানি সরে যেতে দেখেছি।’
ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল প্রায় ১০ কিলোমিটার (৬.২ মাইল) এবং একাধিক আফটারশক অনুভূত হয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল ৬ মাত্রার। ভূমিকম্পের পর কোনো সুনামি সতর্কতা ছিল না।
ফিলিপাইন প্রশান্ত মহাসাগরের ‘রিং অব ফায়ারে’ অবস্থিত, যেখানে ভূতাত্ত্বিক কার্যক্রম এবং ভূমিকম্প সাধারণ ঘটনা। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে দুটি বড় ভূমিকম্প হয়েছিল, তবে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। ২০২৩ সালে ৬.৭ মাত্রার এক উপকূলীয় ভূমিকম্পে ৮ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে ২৭ মিলিয়ন পাউন্ডের মানবিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য। এ প্যাকেজের আওতায় পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে সহায়তা প্রদান করা হবে।
ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে এই সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এই সহায়তা প্যাকেজের আওতায় কক্সবাজার ও আশপাশের এলাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থী ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য, বাসস্থান, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিষেবা সরবরাহ করা হবে।
এছাড়া ১ লাখ ৭৫ হাজার নারী ও কিশোরীদেরকে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং যৌন, শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদেরও সহায়তা করা হবে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার বলেন, এ অর্থায়ন সরাসরি মাঠপর্যায়ে জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য যুক্তরাজ্যের এই নতুন সহায়তায় খাদ্য, আশ্রয়, বিশুদ্ধ পানি ও জীবনরক্ষাকারী অন্যান্য সেবা দেওয়া হবে এবং একইসঙ্গে বাংলাদেশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীকেও সহায়তা করা হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যুতরা যাতে তাদের প্রাপ্য সমর্থন, সুরক্ষা, মর্যাদা এবং সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্য নিরলসভাবে কাজ করে যাবে।
২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গা সংকটে ৪৪৭ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি সহায়তা দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক ত্রাণ প্রচেষ্টায় অন্যতম নেতৃস্থানীয় দীর্ঘমেয়াদি অবদান।
সর্বশেষ এই প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশের পাশাপাশি বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর জন্য স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লন্ডনের অঙ্গীকারকে তুলে ধরে।
এ অর্থায়ন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি), ইউএনএইচসিআর, ইউনিসেফ, ইউএনএফপিএ এবং বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক এনজিওসহ বিশ্বস্ত বহুপাক্ষিক ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হবে।
সহায়তার মূল ক্ষেত্রগুলো হলো ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা, খাদ্য সহায়তা, স্যানিটেশন, শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, জলবায়ু সহনশীল কৃষি এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তা।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেন, মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুতির মূল কারণগুলো নিরসন এবং রাখাইন রাজ্যে এখনো ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে থাকা মানুষদের জন্য অবাধ মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে টেকসই আন্তর্জাতিক সমন্বয় জরুরি।
যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের ঐতিহাসিক অংশীদারিত্বের গুরুত্বও পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং উন্নয়ন, বাণিজ্য, জলবায়ু সহযোগিতা ও কমনওয়েলথের মাধ্যমে গভীর সম্পর্কের কথা তুলে ধরেছে। সূত্র : বাসস
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বেহালায় একটি দুর্গাপূজা মণ্ডপে এ বছর শিল্পীরা এক অন্য রকম প্রতিবাদের ভাষা বেছে নিয়েছেন। কেবল শিল্পসৌন্দর্য নয়, বরং যুদ্ধবিরোধী আর্তি এবং ক্ষুধার্ত মানুষের বেঁচে থাকার কাহিনি ফুটে উঠেছে এ মণ্ডপে। বেহালা ফ্রেন্ডস ক্লাবের আয়োজনে এ দুর্গোৎসবের প্রতিপাদ্য হয়ে উঠেছে গাজায় চলমান বিধ্বংসী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও দুর্ভিক্ষ। সর্বজনীন এই পূজামণ্ডপে শিল্পের ভাষায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ এই মানবিক সংকটকে। স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে সাজানো হয়েছে মণ্ডপের প্রতিটি কোণ।
পূজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গাজার এই মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের সঙ্গে বাংলার ১৯৪৩ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক নীতি যেমন লক্ষাধিক মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল, আজ একইভাবে ইসরায়েল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আশ্রয়ে খাদ্যরসদ আটকিয়ে ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
এই পূজামণ্ডপের নকশাকারী শিল্পী রাজনারায়ণ সন্ত্রা বলেন, ‘যেমন এক সময়ে চিত্তপ্রসাদ ও জয়নুল আবেদিন ক্ষুধার্ত মানুষের ছবি এঁকে প্রতিবাদ করেছিলেন, তেমনি আমরাও আজ তুলি ও প্রতিমা দিয়ে প্রতিবাদ করছি।’
মণ্ডপের প্রবেশ পথে দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাচ্ছে গাজাবাসী ফিলিস্তিনি কবি নামা হাসানের আরবি ভাষার কবিতা ‘ফেস টি ফেস’। যেখানে গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ রয়েছে। হাসানের লেখা সেই কবিতা বাংলায় লেখা রয়েছে প্যান্ডেলের দেয়ালে। ‘জেনোসাইড’ লেখা একটি চিত্রপটের পাশেই স্থান পেয়েছে এই কবিতাটি।
এর ঠিক বিপরীত দেয়ালে লেখা ‘ফিলিস্তিন মুক্তি পাক’। এই গণহত্যা ও মুক্তির দাবির মাঝখানে স্থাপন করা হয়েছে একটি ভেন্ডিং মেশিন, যেখান থেকে কোমল পানীয়ের বদলে বের হচ্ছে অস্ত্র।
পুরো প্যান্ডেলজুড়ে ফিলিস্তিনি নাট্যকার রিদা গাজালেহর কণ্ঠে দুর্ভিক্ষপীড়িত ফিলিস্তিনিদের মর্মান্তিক বাস্তবতার কথা বাজানো হচ্ছে।
প্রবেশপথ তৈরি হয়েছে মানুষের পাঁজরের কাঠামো দিয়ে, যা দুর্ভিক্ষে মানুষের শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা বোঝাতে প্রতীকী রূপ পেয়েছে।
ভেতরে ছাদের ওপর থেকে ঝুলছে চালভর্তি বস্তা চেপে ধরা বিশাল বল-প্রেস যন্ত্র, যেন খাদ্য মজুদের ভয়ংকর নিদর্শন।
এ ছাড়া পূজামণ্ডপে দেবী দুর্গা ও তার সন্তানদের রূপে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সমস্ত জাঁকজমক ও জৌলুস মুছে দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সাধারণ ও রুক্ষ রূপ।
শিল্পী প্রদীপ দাস বলেন, ‘আমরা জানি ঝুঁকি নিয়েছি। সরকারের অবস্থান এক রকম হলেও শিল্পীরা যদি চুপ করে থাকেন, তবে তদের শিল্পী বলা যায় না।’
রাজনারায়ণ সন্ত্রা বলেন, ‘শিল্পীদের প্রতিবাদ সীমান্তের মধ্যে আটকে থাকতে পারে না। ২০২১-এ যেমন রিহানা বা গ্রেটা থুনবার্গ ভারতের কৃষক আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, আজ আমরা গাজার মানুষের পাশে দাঁড়ালাম।’
দর্শনার্থীদের অনেকেই জানিয়েছেন, সাধারণত পূজামণ্ডপে এত গভীর রাজনৈতিক ও মানবিক বক্তব্য আগে দেখেননি। শিল্পীরা শুধু দেবী দর্শনের আঙ্গিকে সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং যুদ্ধবিরোধী আর্তিকে ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক আয়োজনে মিশিয়ে দিয়েছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ব্যক্তিগতভাবে কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চালু করার পরিকল্পনা করছেন না। সোমবার তাসকে এমন তথ্য দিয়েছেন ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।
পেসকভ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপস্থিত থাকেন ক্রেমলিনের অফিসিয়াল চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে। তবে নিজে সরাসরি এতে যুক্ত হতে চান না। আগে বহুবার তিনি জানিয়েছিলেন, ‘এটি তার পছন্দের বিষয় নয়।’
তিনি আরও যোগ করেন, ক্রেমলিনের কর্মীরা নিয়মিতভাবে পুতিনকে অনলাইন ট্রেন্ড ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রবণতা সম্পর্কে অবহিত করেন। এছাড়া তার পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনও মাঝে মাঝে গুরুত্বপূর্ণ খবর জানান।
২০১৭ সালে পুতিন জানিয়েছেন, ব্যস্ত সময়সূচির কারণে ইন্টারনেটে সময় কাটানোর সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘অবসরে তিনি শরীরচর্চা, সংগীত বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান, যা তাকে মানসিকভাবে স্বস্তি দেয়।’
পুতিন মোবাইল ফোন ও ব্যক্তিগত অনলাইন যোগাযোগ এড়িয়ে চলার জন্য পরিচিত। সমর্থকদের মতে, এটি তার নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। বিশেষ করে ২০১৫ সালে এনএসএর হুইসেলব্লোয়ার এডওয়ার্ড স্নোডেন ফাঁস করা নথিতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বিদেশি নেতাদের ফোনে নজরদারি করত। এর মধ্যে তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলও ছিলেন। এই ঘটনার পর পুতিনের মোবাইল ব্যবহারে সতর্কতা আরও বেড়েছে।
গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার প্রায় দুই বছর পর ইহুদি রাষ্ট্রটির প্রতি মার্কিনদের সমর্থনে আমূল পরিবর্তন এসেছে। নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা ইউনিভার্সিটির নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক ভোটার এই সংঘাত মোকাবিলায় ইসরায়েলি সরকারের ভূমিকা নিয়ে তীব্র নেতিবাচক মতামত প্রকাশ করেছেন।
গাজায় হামলার প্রতি এই অসন্তোষের কারণেই সম্ভবত মার্কিন ভোটাররা এই অঞ্চলের কয়েক দশকের পুরোনো সংঘাতের বিষয়ে তাদের সহানুভূতি পুনর্মূল্যায়ন করছেন। টাইমস ১৯৯৮ সাল থেকে ভোটারদের সহানুভূতি নিয়ে প্রশ্ন শুরু করার পর এই প্রথম ইসরায়েলিদের চেয়ে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কিছুটা বেশি ভোটার সমর্থন জানিয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর মার্কিন ভোটারদের বেশির ভাগই ফিলিস্তিনিদের চেয়ে ইসরায়েলিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। সেসময় ৪৭ শতাংশ ইসরায়েলকে এবং ২০ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন।
নতুন জরিপে ৩৪ শতাংশ ইসরায়েলিদের পক্ষে এবং ৩৫ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে মত দিয়েছেন। ৩১ শতাংশ বলেছেন, তারা সংশয়ে আছেন অথবা দুই পক্ষকেই সমানভাবে সমর্থন করেন।
অধিকাংশ মার্কিন ভোটার এখন ইসরায়েলকে অতিরিক্ত অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা পাঠানোর বিরোধিতা করছেন। ৭ অক্টোবরের হামলার পর জনমতে এটি একধরনের বড় পরিবর্তন। প্রতি ১০ ভোটারের মধ্যে প্রায় ৬ জন বলেছেন, বাকি ইসরায়েলি জিম্মিরা মুক্তি পাক বা না পাক বা হামাস নির্মূল হোক বা না হোক, তবু ইসরায়েলের উচিত সামরিক অভিযান বন্ধ করা।
৪০ শতাংশ ভোটার বলেছেন, ইসরায়েল গাজায় ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা চালাচ্ছে। এই সংখ্যা ২০২৩ সালের জরিপের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
সব মিলিয়ে টাইমস/ সিয়েনা জরিপের এই ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের একনিষ্ঠ মিত্রের প্রতি মার্কিনদের সমর্থনে বড় ধরনের অবনতির দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে।
কয়েক দশক ধরে দুই দলই সমানভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করে আসছিল। এই অতি বিভক্ত যুগে জনমতে এত বড় পরিবর্তন অস্বাভাবিক ঘটনা বটে। সাধারণত যুদ্ধ বা বিপর্যয়ের মতো বড় ঘটনা ছাড়া জনমত ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়।
আইডাহো অঙ্গরাজ্যের ব্ল্যাকফুট শহরের ডেমোক্র্যাট সমর্থক অস্টিন মাগলস্টন বলেন, সংঘাত দীর্ঘায়িত হওয়ায় ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি দুর্বল হয়ে পড়েছে।
যোগাযোগ খাতে কাজ করা ৩৩ বছর বয়সী মাগলস্টন বলেন, ‘আমি আসলে কয়েক বছর ধরে বেশ ইসরায়েলপন্থী ছিলাম, বিশেষ করে ৭ অক্টোবরের সেই বিধ্বংসী হামলার রাতের কথা শোনার পর। এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে কাউকে যাওয়া উচিত নয়। কিন্তু এটি যত দীর্ঘ হচ্ছে এবং ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যা করছে, তা দেখে এটিকে আর কোনোভাবেই সমান ক্ষেত্র বলে মনে হচ্ছে না।’
এই জরিপ ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্কের জন্যও চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্যের বৃহত্তম প্রাপক, যারা এ পর্যন্ত শত শত বিলিয়ন ডলার সহায়তা পেয়েছে।
দল-মতনির্বিশেষে তরুণ ভোটাররা ইসরায়েলের প্রতি এই সমর্থন অব্যাহত রাখার পক্ষে কম আগ্রহী। ৩০ বছরের কম বয়সী প্রতি ১০ জন ভোটারের মধ্যে প্রায় ৭ জন অতিরিক্ত অর্থনৈতিক বা সামরিক সাহায্যের বিরোধিতা করেছেন।
ইসরায়েলের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির এই পরিবর্তনের মূল কারণ হচ্ছে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি ভোটারদের সমর্থন ব্যাপক হারে কমে যাওয়া। রিপাবলিকানরা মূলত ইসরায়েলকে সমর্থন করে চলেছে। তবে তাদের মধ্যেও ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন সামান্য কমেছে।
প্রায় দুই বছর আগে ডেমোক্র্যাটরা সমানভাবে বিভক্ত ছিল। তখন ৩৪ শতাংশ ইসরায়েল এবং ৩১ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। এখন সারাদেশের সাধারণ ডেমোক্র্যাটরা বিপুলভাবে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। ৫৪ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন, তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল, যেখানে মাত্র ১৩ শতাংশ ইসরায়েলের প্রতি বেশি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।
প্রতি ১০ জন ডেমোক্র্যাটের মধ্যে ৮ জনের বেশি বলেছেন, লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারলেও ইসরায়েলের উচিত গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা। দুই বছর আগে এই সংখ্যা ছিল প্রতি ১০ জনে ৬ জন। এখন এটিকে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি বলা যায়।
কানেটিকাট অঙ্গরাজ্যের হার্টফোর্ডের শহরতলির ৩৯ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট সমর্থক শ্যানন ক্যারি বলেন, ৭ অক্টোবরের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি সরকারের পদক্ষেপ ‘অযৌক্তিক’ হয়ে উঠেছে। তিনি চান যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করুক।
পেশায় স্বাস্থ্য সহকারী মিসেস ক্যারি বলেন, একজন মা হিসেবে ওই শিশুদের দেখাটা ভয়ংকর। এটা কোনো যুদ্ধ নয়। এটা জাতিগত নিধন।
ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি এসেছে একটি অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকে—শ্বেতাঙ্গ, কলেজ-শিক্ষিত, বয়স্ক ডেমোক্র্যাট। এসব ব্যক্তিই সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোয় দলের মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছেন। তরুণ ডেমোক্র্যাট ও কলেজ ডিগ্রিবিহীন ডেমোক্র্যাটরা প্রায় দুই বছর আগে সংঘাত শুরুর সময় থেকেই ফিলিস্তিনিদের প্রতি অনেক বেশি সহানুভূতিশীল ছিলেন।
২০২৩ সালে ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ডেমোক্র্যাট ভোটারদের প্রতি ২ জন ইসরায়েলকে সমর্থন করতেন আর একজন ফিলিস্তিনকে। সেই চিত্র উল্টে গেছে। এখন ৪২ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের প্রতি এবং ১৭ শতাংশ ইসরায়েলের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল।
মধ্য ফ্লোরিডার ৬৭ বছর বয়সী প্যাটি ওয়েস্ট বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওই অঞ্চলে মার্কিন সম্পৃক্ততার একজন শক্তিশালী সমর্থক ছিলেন। তিনি সহায়তা বন্ধ করার ধারণার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। অবশেষে তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, এটি সংঘাত অবসানে সাহায্য করছে না।
ডেমোক্র্যাট সমর্থক ওয়েস্ট বলেন, ‘আমরা কেন এতে অর্থায়ন করে চলেছি? এটা আমার ছোটবেলা থেকে চলছে এবং এখনো চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওরা একে অপরকে সারাজীবন ঘৃণা করে যাবে।’
শ্বেতাঙ্গ ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন কমে যাওয়াটা অ-শ্বেতাঙ্গ ডেমোক্র্যাটদের পরিবর্তনের চেয়েও বেশি স্পষ্ট। সংঘাত শুরুর সময় অ-শ্বেতাঙ্গ ডেমোক্র্যাটরা এমনিতেই ফিলিস্তিনিদের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল ছিলেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার মেয়াদকালে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের জন্য তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। এমনকি তিনি ইসরায়েল সরকারের প্রতি কঠোর অবস্থান নেওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত ছিল।
বিপরীতে, রিপাবলিকান ভোটাররা মূলত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। একাধিক পশ্চিমা দেশ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার দিকে এগোলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে খুব কমই পার্থক্য রেখেছেন।
প্রতি ১০ জন রিপাবলিকানের মধ্যে ৭ জন ইসরায়েলকে অতিরিক্ত সহায়তা দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। অধিকাংশ রিপাবলিকান বলেছেন, সব জিম্মি মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়া উচিত। এমনকি এর জন্য বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হলেও। ৪৭ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বেসামরিক মৃত্যুরোধে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করছে।
মিনিয়াপোলিসের ৫১ বছর বয়সী রক্ষণশীল ভোটার এডওয়ার্ড জনসন বলেন, ইসরায়েলিরা নিজেদের রক্ষা করতে এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে যথেষ্ট সক্ষম। কিন্তু আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, যেন কেউ তাদের ওপর চড়াও না হয়।
তবে রিপাবলিকানদের মধ্যেও ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন কমেছে। অবশ্য তা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
রিপাবলিকানরা এখনো ফিলিস্তিনিদের চেয়ে ইসরায়েলের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল। ৬৪ শতাংশের বিপরীতে ৯ শতাংশ। কিন্তু ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ শতাংশ কমেছে। ওই সময় ৭৬ শতাংশ ইসরায়েলের পক্ষে ছিলেন।
প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রিপাবলিকান বলেছেন, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বেসামরিক মৃত্যুরোধে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
সেন্ট লুইসের ২৯ বছর বয়সী ট্রাম্প সমর্থক মেসন নর্থরুপ বলেন, তিনি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করেন। তবে তিনি চান প্রেসিডেন্ট যেন এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা কমান।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্পর্কে নর্থরুপ বলেন, ‘তার একটু পিছিয়ে আসা দরকার। কারণ, ইসরায়েলিরা বেশ কঠিন কাজ করতে সক্ষম। আমাদের উচিত তাদের নিজেদের যুদ্ধ লড়তে দেওয়া।’
২০২৫ সালের ২২ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মোট ১ হাজার ৩১৩ জন নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে পরিচালিত এই জরিপ চালানো হয়েছে।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের সাতটি বড় সংঘাত থামানোর দাবি তুলে এজন্য তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার না দেওয়া হলে সেটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় অপমান হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। মঙ্গলবার ভার্জিনিয়ার কুয়ান্টিকোয় শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প বলেন, তিনি বিশ্বের সাতটি বৃহৎ সংঘাত থামানোর কাজ করেছেন এবং গাজা সংঘাত বন্ধে প্রস্তাবনা জমা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমরা এটা মিটিয়ে ফেলেছি। দেখা যাক। হামাসকে রাজি হতে হবে, আর যদি তারা রাজি না হয়, তাহলে তাদের জন্য এটা খুবই কঠিন হবে। সমস্ত আরব দেশ, মুসলিম দেশ রাজি হয়েছে। ইসরায়েলও রাজি হয়েছে। এটা একটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার।’
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজের মধ্যস্থতার দাবি তুলে বলেন, তিনি বিভিন্ন অঞ্চলের যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা করেছেন- এর মধ্যে ভারত‑পাকিস্তান সংঘাত ও ইরান‑ইসরাইল অন্তর্ভুক্ত। যদিও রাশিয়া‑ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজার ওপর ইসরায়েলের অভিযান এখনও পুরোপুরি থামাতে পারেননি তিনি।
তবুও ট্রাম্প দাবি করেন, গত কয়েক মাসে তিনি সাতটি সংঘাত থামিয়েছেন এবং গাজায় বর্তমান পরিকল্পনা কার্যকর হলে তা আটটি সংঘাতের সমাধান হবে। তার ভাষ্য, ‘এটা বেশ ভালো, কারণ এর আগে এমনটা কখনো হয়নি।’
নোবেল পুরস্কারের প্রসঙ্গ তুলে ট্রাম্প বলেন, ‘এর জন্য আমি কি নোবেল পাব? একেবারেই না। তারা এটা এমন কাউকে দেবে যে কিছুই করেনি- এমন একজনকে দেবে যে ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন এবং যুদ্ধের সমাধানের জন্য কী প্রয়োজন’ বিষয়ক বই লিখেছে… নোবেল পুরস্কার একজন লেখকের কাছে যাবে। দেখি কী হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা হবে আমাদের দেশের জন্য বড় অপমান। আমি এটা চাই না। আমি চাই আমাদের দেশ এটি পাক। আমাদের দেশের এটা পাওয়া উচিত, কারণ এর আগে এমন কিছু ঘটেনি।’
সংকটের সমাধান কেবল মিয়ানমারের ভেতরেই সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্ডি। তিনি সতর্ক করে বলেন, মিয়ানমারের সাহসী পদক্ষেপ ছাড়া রোহিঙ্গাদের দুর্দশার অবসান হবে না।
মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ‘এই সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে। আর সমাধানও সেখানেই।’
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, আট বছর আগে মিয়ানমারের সেনাদের নির্মম সহিংসতায় ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে যায়। আর অনেকে রাখাইন রাজ্যেই বাস্তুচ্যুত অবস্থায় রয়ে যায়।
গ্রান্ডি বলেন, এখন আরাকান আর্মি রাখাইনের বেশিরভাগ এলাকা দখলে নিলেও রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।
‘তাদের জীবনে প্রতিদিনের বাস্তবতা হলো গ্রেপ্তার ও আটক হওয়ার ভয়, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় প্রবেশাধিকার সীমিত, চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা, জোরপূর্বক শ্রম ও নিয়োগ। প্রতিদিনই তারা বর্ণবাদ ও আতঙ্কের শিকার,’ বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, দেশটি বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে এবং ২০২৪ সালের নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতের পর আরও দেড় লাখ রোহিঙ্গাকে গ্রহণ করেছে।
ইউএনএইচসিআর প্রধান আরও বলেন, ‘অসংখ্য চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনো রোহিঙ্গার আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারা দেখিয়েছে, উদাসীনতা ও দায়িত্বহীন মনোভাব যখন স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে, সে সময়েও সহানুভূতি দেখানো সম্ভব। শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে জীবন রক্ষা করে বাংলাদেশ তা প্রমাণ করেছে।’
বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ১.২৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার তিনি প্রশংসা করেন। তবে বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা তহবিলের ঘাটতি এখনো রয়ে গেছে বলেও উদ্বেগ জানান।
তিনি সতর্ক করে বলেন, যথেষ্ট তহবিল ছাড়া জরুরি সহায়তা কাটছাঁট করতে হতে পারে। ফলে শিশুদের পুষ্টিহীনতা বাড়বে এবং আরও রোহিঙ্গা বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন।
ইউএনএইচসিআর প্রধান বলেন, ‘যদি পর্যাপ্ত তহবিল না আসে, তাহলে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আমাদের কিছু কাটছাঁট করতে হবে। তবে আমরা শিশুদের অপুষ্টিজনিত মৃত্যু এবং বিপজ্জনক নৌযাত্রায় রোহিঙ্গাদের প্রাণহানির ঘটনা রোধের চেষ্টা করব।’
তিনি বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে তহবিল, পুনর্বাসন, শিক্ষা ও শ্রমবাজারে প্রবেশের সুযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানান। তবে গ্রান্ডি জোর দিয়ে বলেন, শুধু মানবিক সহায়তা এই সংকট সমাধান করতে পারবে না।
‘আমরা উদাসীনতার পথে চলতে পারি না। একটি জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস হতে দিয়ে সমাধানের আশা করা যায় না,’ বলেন তিনি।
রাখাইন উপদেষ্টা কমিশনের কমিশনের সুপারিশগুলো আগের মতোই প্রাসঙ্গিক এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে দিকনির্দেশনা হওয়া উচিত উল্লেখ করে গ্রান্ডি বলেন, ‘কিন্তু সাহসী পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না।’
তিনি প্রভাবশালী দেশগুলোকে আহ্বান জানান, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মির সঙ্গে সক্রিয় সম্পৃক্ততা বাড়ানোর যাতে মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা যায়। সঙ্গে আস্থা পুনঃস্থাপন করে মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত জনগণের জন্য ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই সমাধান গ্রহণ করা যায়।
অন্যান্য সংঘাত থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ধারাবাহিক রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও নতুন পন্থার মাধ্যমে জটিল সংঘাতের গতিপথ পরিবর্তন করা সম্ভব।’
বক্তব্যর শেষে গ্রান্ডি বলেন, ‘মিয়ানমারের জনগণের জন্য ন্যায়সঙ্গত, বাস্তব ও ভবিষ্যৎমুখী নতুন অধ্যায় শুরু করতে চাই। রোহিঙ্গাদের দুর্দশার স্থায়ী সমাধানে, আমাদের সামনে এছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।’
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৯। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দেশটির বোগো শহরে। সেখানে ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
এছাড়া সেবুসহ একাধিক শহর ও পৌরসভায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার (১ অক্টোবর) এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন বলে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ১০টার কিছু আগে সেবু সিটির উপকূলে এই ভূমিকম্প আঘাত হানে।
এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এদিকে ভূমিকম্পের পর সুনামি সতর্কতা জারি করা হলেও পরে তা প্রত্যাহার করে ফিলিপাইন ইনস্টিটিউট অব ভলকানোলজি অ্যান্ড সিসমোলজি। সংস্থাটি জানায়, সমুদ্রপৃষ্ঠে সামান্য পরিবর্তন হলেও এর প্রভাব কেটে গেছে।
সেবু শহর ভিসায়াস অঞ্চলে অবস্থিত এবং এর জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। ভূমিকম্পের পর সেবু প্রদেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে সেখানকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বোগো শহরে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে। সেখানে এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১১৯ জন।
জাতীয় দুর্যোগ সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে মৃতের সংখ্যা ২৬ জনে দাঁড়িয়েছে।
বিবিসি বলছে, সান রেমিজিও পৌরসভাতেও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্সে ধ্বংসস্তূপের নিচে কয়েকজন আটকা পড়ায় উদ্ধার অভিযান চলছে।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, ভূমিকম্প আঘাত হানার সময় সেখানে বাস্কেটবল খেলা চলছিল। এতে প্রায় ২০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং অন্তত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত আরও কয়েকটি শহর ও পৌরসভা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। এসব এলাকাতেও হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। বোগো, সান রেমিজিও ও দানবান্তায়ান এলাকায় টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র শান্তিপূর্ণ সমাধান হলো তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংকট নিরসনে সাত দফা পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন। তিনি বলেন, ‘অর্থায়ন কমে আসছে। একমাত্র শান্তিপূর্ণ পথ হচ্ছে তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা।’
গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা এই প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, ‘গণহত্যা শুরুর আট বছর পরও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা অব্যাহত রয়েছে। সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেই। আন্তর্জাতিক অর্থায়নও মারাত্মক ঘাটতিতে ভুগছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং সমাধানও সেখানেই নিহিত।
রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ এবং দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, ‘এটাই সংকটের একমাত্র সমাধান। মিয়ানমারের সার্বিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় জিম্মি করে রাখা উচিত নয়।’
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সুরক্ষা অব্যাহত রাখার তুলনায় প্রত্যাবাসনে অনেক কম সম্পদের প্রয়োজন হবে। রোহিঙ্গারা বরাবরই নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে চেয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সাম্প্রতিক সংঘাত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে প্রত্যাবাসনের সুযোগ দিতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ সংকটের শিকার। আমাদের সামাজিক, পরিবেশগত ও আর্থিকভাবে বিপুল চাপ সহ্য করতে হচ্ছে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে মাদক পাচারসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলছে। আমাদের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ—যেমন বেকারত্ব ও দারিদ্র্য—বিবেচনায় দেশে রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়।’
টেকসই সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাত দফা পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দেন—
প্রথমত, রাখাইন অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন।
দ্বিতীয়ত, মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধ এবং সম্প্রতি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু।
তৃতীয়ত, রাখাইনে স্থিতিশীলতা আনতে আন্তর্জাতিক সহায়তা জোগাড় এবং তা পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
চতুর্থত, রোহিঙ্গাদের রাখাইন সমাজ ও শাসনব্যবস্থায় স্থায়ী অন্তর্ভুক্তির জন্য আস্থা গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ।
পঞ্চমত, যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনায় (Joint Response Plan) অর্থদাতাদের পূর্ণ সহায়তা নিশ্চিত করা।
ষষ্ঠত, জবাবদিহি ও পুনর্বাসনমূলক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
সপ্তম, মাদক অর্থনীতি ভেঙে দেওয়া এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন করা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্ব আর রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফেরার জন্য অপেক্ষায় রাখার সামর্থ্য রাখে না।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের সংকট সমাধানে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করতে হবে। বাংলাদেশ এ লক্ষ্যে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।’
সূত্র : বাসস
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
গত সসোমবার হোয়াইট হাউস থেকে এ প্রস্তাব প্রকাশ করা হয়। এটি গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ তাৎক্ষণিকভাবে থামাতে পারে বলে দাবি করেছে হোয়াইট হাউস।
যদি উভয় পক্ষ এই পরিকল্পনা বা প্রস্তাব গ্রহণ করে, তবে যুদ্ধ তাৎক্ষণিক শেষ হবে। এর ফলে গাজায় বন্দি থাকা জীবিত ও নিহতদের মরদেহ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হবে এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এছাড়া গাজা অস্থায়ীভাবে একটি ফিলিস্তিনি সরকার দ্বারা পরিচালিত হবে, যেখানে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। ইসরায়েল গাজাকে অধিগ্রহণ করবে না।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের প্রস্তাব গ্রহণ করলেও এখনো আনুষ্ঠানিক কিছু জানায়নি হামাস। হামাসের কর্মকর্তা মাহমুদ মারদাউই আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, গাজায় শান্তি পরিকল্পনার ট্রাম্পের লিখিত প্রস্তাব তারা এখনো পাননি।
ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাব-
১. গাজা উগ্রবাদমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত এলাকা হবে, যা এর প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি তৈরি করবে না।
২. গাজার জনগণের কল্যাণের জন্য গাজা পুনর্গঠিত হবে, যারা যথেষ্ট কষ্ট ভোগ করেছেন।
৩. যদি উভয় পক্ষ এই প্রস্তাবে সম্মত হয়, তবে যুদ্ধ তাৎক্ষণিক শেষ হবে। ইসরায়েলি বাহিনী বন্দি মুক্তির প্রস্তুতির জন্য নির্ধারিত সীমান্তে প্রত্যাহার করবে। এই সময়ে সব সামরিক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে, যার মধ্যে রয়েছে বায়ু ও আর্টিলারি হামলা।
৪. এই চুক্তি গ্রহণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলের সব বন্দি, জীবিত ও মৃতদেহ ফেরত পাঠাতে হবে।
৫. সব বন্দি মুক্তি পাওয়ার পর ইসরায়েল ২৫০ জন বন্দিসহ এক হাজার ৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে, যারা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পরে আটক হন। এর মধ্যে নারী ও শিশু অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রতিটি ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দিলে ইসরায়েল ১৫ জন মৃত গাজাবাসীর মরদেহ ফিরিয়ে দেবে।
৬. বন্দিদের ফেরত দেওয়ার পর হামাসের যারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং অস্ত্র সমর্পণ করতে রাজি হবে তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হবে। এছাড়া হামাসের যেসব সদস্য গাজা ছাড়তে চান তাদের নিরাপদভাবে গন্তব্য দেশে যেতে দেওয়া হবে।
৭. এই চুক্তি গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে গাজায় পূর্ণ সাহায্য অবিলম্বে পাঠানো হবে। যার মধ্যে রয়েছে অবকাঠামোর পুনর্বাসন, হাসপাতাল ও বেকারি পুনর্গঠন, ধ্বংসাবশেষ অপসারণ এবং রাস্তা খোলার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রবেশের ব্যবস্থা।
৮. গাজায় মানবিক সহায়তা জাতিসংঘ, রেড ক্রিসেন্ট ও অন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হবে, যেগুলো উভয় পক্ষের সঙ্গে কোনোভাবে সম্পর্কিত নয়। রাফাহ ক্রসিং খোলা থাকবে, যে বিষয়ে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি চুক্তি হয়েছিল।
৯. গাজা একটি প্রযুক্তিনির্ভর, অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটির অস্থায়ী শাসনের অধীনে পরিচালিত হবে। গাজার জনগণের দৈনন্দিন জনসেবা ও পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে তারা। এই কমিটিতে যোগ্য ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। এর তদারকি ও নজরদারি করবে একটি নতুন আন্তর্জাতিক অস্থায়ী প্রতিষ্ঠান ‘পিস বোর্ড’, যার নেতৃত্ব ও সভাপতিত্ব করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যান্য সদস্য ও রাষ্ট্রপ্রধানদের নাম পরে ঘোষণা করা হবে, এর মধ্যে থাকবেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার।
১০. গাজা পুনর্গঠনে একটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। এতে এমন বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল গঠন করা হবে যারা মধ্যপ্রাচ্যের কিছু উন্নত ও সমৃদ্ধ শহরের সূচনা করেছিলেন।
১১. গাজায় একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে আগ্রহী দেশগুলোর সঙ্গে শুল্ক ও প্রবেশাধিকার হার নিয়ে আলোচনা ও চুক্তি করা হবে।
১২. গাজা থেকে কাউকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হবে না। তবে যারা যেতে চান তারা নিজের ইচ্ছায় যেতে পারবেন এবং ফিরে আসতেও পারবেন।
১৩. হামাস এবং অন্যান্য গোষ্ঠী গাজার শাসনে সরাসরি, পরোক্ষভাবে বা কোনোভাবে অংশ নেবে না বলে সম্মত হয়েছে। সব সামরিক, সন্ত্রাস ও আক্রমণাত্মক অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে, যার মধ্যে সুড়ঙ্গ এবং অস্ত্র উৎপাদন সুবিধা অন্তর্ভুক্ত। নতুন গাজা সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলায় এবং তাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।
১৪. আঞ্চলিক অংশীদাররা এ বিষয় নিশ্চিত করবে যে, হামাস এবং অন্যান্য গোষ্ঠী প্রতিবেশী দেশ বা তার জনগণের জন্য কোনো হুমকি তৈরি করবে না।
১৫. যুক্তরাষ্ট্র আরব ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গড়ে তোলার জন্য, যা অবিলম্বে গাজায় মোতায়েন হবে। আইএসএফ গাজার ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীর প্রশিক্ষণ দেবে এবং তাদের সহায়তা করবে। এই বাহিনী গাজায় দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় কাজ করবে। ইসরায়েল ও মিসরের সঙ্গে মিলিতভাবে সীমান্ত এলাকায়ও কাজ করবে এই বাহিনী।
১৬. ইসরায়েল গাজা দখল বা অধিগ্রহণ করবে না। আইএসএফ যখন নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করবে, তখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হবে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের দখল করা গাজা এলাকা ধাপে ধাপে আইএসএফের কাছে হস্তান্তর করবে।
১৭. যদি হামাস এই প্রস্তাব বিলম্বিত বা প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো সেই এলাকায় বাস্তবায়িত হবে- যা ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইএসএফের কাছে হস্তান্তর করেছে।
১৮. ধৈর্য ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তিতে একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপ প্রক্রিয়া গড়ে তোলা হবে, যাতে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মানসিকতার পরিবর্তনের চেষ্টা করা যায়।
১৯. এসব উদ্যোগে ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদার জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ তৈরি হতে পারে। ফিলিস্তিনের জনগণের আকাঙ্ক্ষা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যা স্বীকৃতি দেয়।
২০. শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সহাবস্থানের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছাতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংলাপের আয়োজন করবে যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনাকে স্বাগত জানালেন মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় নেতারা
ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনাকে স্বাগত জানালেন মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় নেতারা। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, হামাস এ পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমঝোতায় তৈরি এই পরিকল্পনায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, হামাসের হাতে আটক ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি ও অন্তত দুই ডজন নিহত জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়া এবং এর বিনিময়ে শত শত বন্দি ফিলিস্তিনিকে মুক্তির প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামাস গাজার শাসন থেকে সম্পূর্ণভাবে দূরে থাকবে। এতে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ আছে, যদিও নেতানিয়াহু পরবর্তীতে তা নাকচ করেছেন।
হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প একে ‘ঐতিহাসিক শান্তির দিন’ বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, হামাস পরিকল্পনা না মানলে যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে ধ্বংস করার ব্যাপারে ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দেবে।
নেতানিয়াহুও বলেন, হামাস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ইসরায়েল ‘শেষ পর্যন্ত লড়বে’। পরে ভিডিওবার্তায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, তিনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিরোধী। যদিও পরিকল্পনায় ইসরায়েলি সেনাদের গাজা থেকে ধাপে ধাপে সরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে ‘আন্তরিক ও দৃঢ়’ আখ্যা দিয়েছে। তাদের সরকারি বার্তা সংস্থা ‘ওয়াফা’ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রসহ আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে যুদ্ধের অবসান, গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এবং বন্দি বিনিময়ে তারা কাজ চালিয়ে যাবে।
এছাড়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, মিশর, জর্ডান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে ট্রাম্পের নেতৃত্ব ও আন্তরিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানান। তারা বলেন, এই চুক্তি ‘দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথ তৈরি করবে, যেখানে গাজা ও পশ্চিম তীর মিলিত হয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করবে।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা বলেন, নেতানিয়াহুর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তাকে উৎসাহিত করেছে। তিনি সব পক্ষকে এই সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার বলেছেন, সব পক্ষকে একসঙ্গে বসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করে এ চুক্তিকে বাস্তবায়ন করতে হবে। হামাস এখনই অস্ত্র ফেলে সব জিম্মিকে মুক্তি দিয়ে কষ্টের অবসান ঘটানো উচিত।