পারস্পরিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতা থাকলেও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাকে সমর্থন করে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এ তথ্য জানিয়েছেন।
ল্যাভরভ অবশ্য বলেছেন, গাজায় রক্তপাত বন্ধের জন্য এই মুহূর্তে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ‘সেরা’ হলেও ‘আদর্শ’ নয়। তিনি আরও বলেছেন গাজায় যুদ্ধবিরতি ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য ইসরায়েল, হামাস এবং তিন মধ্যস্থতাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার যদি রাশিয়ার কাছে কোনো ধরনের সহযোগিতা চায়, তাহলে তা দিতে প্রস্তুত আছে মস্কো।
মার্কিন সাময়িকী ফরেন অ্যাফেয়ার্সকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ল্যাভরভ। সেখানে গাজার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং ট্রাম্পের নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা বাস্তববাদী। সেই সঙ্গে আমরা অনুভব করতে পারছি যে গাজায় রক্তপাত বন্ধের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটি সেরা। আলোচনার টেবিলে এই মুহূর্তে এটির বিকল্পর আর কিছু নেই।’
‘এটি সেরা হলেও আদর্শ প্রস্তাব নয়। কারণ এই যুদ্ধের একদম মূল পয়েন্ট হলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। ট্রাম্পের প্রস্তাবে এ বিষয়টিকে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, শুধু ফোকাস করা হয়েছে গাজার ওপর।’
‘তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো গাজায় রক্তপাত থামানো। এ কারণেই ট্রাম্পের প্রস্তাবটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আশাব্যাঞ্জক।’
গত ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার স্থানীয় সময় বিকেলে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ও দপ্তর হোয়াইট হাউসে গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত নতুন একটি পরিকল্পনার ব্যাপারে ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এ সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার পাশে ছিলেন।
সেদিন ট্রাম্প বলেছিলেন, গাজায় যুদ্ধের অবসান এবং স্থায়ী শান্তি স্থাপন সংক্রান্ত নতুন পরিকল্পনার কপি ইসরায়েল, হামাস এবং যুদ্ধের অপর দুই মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর ও কাতারের কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং হামাস ব্যতীত বাকি সবাই তার পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছে।
৩ অক্টোবর শুক্রবার হামাস সম্মতি জানানোর পরের দিন ৪ অক্টোবর ইসরায়েলকে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে বলেন ট্রাম্প। তারপর ৬ অক্টোবর মিসরের লোহিত সাগর তীরবর্তী পর্যটন শহর শারম আল শেখ- এ ট্রাম্পের প্রস্তাবের ওপর বৈঠক শুরু হয় ইসরায়েল, হামাস, মিসর, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের প্রতিনিধিদের মধ্যে।
সেই বৈঠকে দুই দিনেরও বেশি সময় ধরে আলোচনা চলার পর ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রাথমিক পর্যায় বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইসরায়েল-হামাস। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন ট্রাম্প।
প্রসঙ্গত, রাশিয়া শুরু থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের আল আকসা অঞ্চলে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান (টু স্টেট সলিউশন)-এর দৃঢ় সমর্থক। গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের হামলার জবাব দিতে ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী; সে সময় প্রথম যেসব দেশ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিল— তাদের মধ্যে রাশিয়া অন্যতম। ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবার গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করে রাশিয়া।
সুদানের এল-ফাশের শহরের একটি মসজিদে আধাসামরিক বাহিনীর হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে এবং ২০ জন আহত হয়েছে । বুধবার বিদ্রোহী গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এ হামলা করেছে বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই মসজিদটিতে যুদ্ধের ফলে বাস্তুচ্যুত ৭০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। উত্তর দিক থেকে মসজিদে বোমা হামলা চালানো হয়। ফলে ১৩ জন মারা যায় এবং মসজিদের একটি অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। আরএসএফ আবু শৌক শরণার্থী শিবির দখলের পর সেখান থেকে শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র হামলা চালাচ্ছে। গত মাসে আরেকটি মসজিদে আরএসএফ এর এক ড্রোন হামলায় কমপক্ষে ৭৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বুধবার বিকেলের দিকে বোমা হামলার পর আমরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ১৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করি এবং তাদের দাফন করি।
২০২৩ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এল-ফাশের শহরে আরএসএফের সবচেয়ে বড় হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। আরএসএফ প্রতিদিনই আর্টিলারি ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে এবং আশপাশের শরণার্থী শিবির দখল করছে। এসব হামলায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
জাতিসংঘের তথ্য মতে, যুদ্ধের ফলে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ মারাত্মক খাদ্যসংকটে ভুগছে এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
উত্তর দারফুর প্রদেশের রাজধানী এল-ফাশের গত বছরের মে মাস থেকে আরএসএফের অবরোধে রয়েছে। এটি এখন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা শেষ বড় শহর। ধীরে ধীরে সেনা ও তাদের মিত্রদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা ছোট হয়ে আসছে।
সম্পর্কের উষ্ণতায় নতুন অধ্যায় সূচনা করে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছে অত্যাধুনিক মাঝারি পাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এআইএম-১২০ উন্নত সংস্করণ বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ মন্ত্রণালয়—যা আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নামে পরিচিত ছিল—এক সরকারি ঘোষণায় ইসলামাবাদকে এই ক্ষেপণাস্ত্রের নতুন ক্রেতাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে এনডিটিভি।
এই অনুমোদন আসে কয়েক সপ্তাহ পর, যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
চুক্তির বিবরণ
যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রে-থিয়ন একটি পূর্ববর্তী প্রতিরক্ষা চুক্তির সংশোধিত সংস্করণে ৪১ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত বরাদ্দ পেয়েছে। এর আওতায় ক্ষেপণাস্ত্রের সি–৮ এবং ডি–৩ মডেল তৈরি করা হবে।
নতুন এই সংশোধিত চুক্তিতে পাকিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, ফলে পুরো প্রকল্পের মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই দশমিক পাঁচ এক বিলিয়ন ডলার। উৎপাদন কাজ শেষ হওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০৩০ সালের মে মাস পর্যন্ত।
চুক্তির আওতায় পাকিস্তান ছাড়াও যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, সৌদি আরব, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইসরাইল, তুরস্কসহ ৩০টিরও বেশি দেশ রয়েছে।
ভারতের জন্য অর্থ ও তাৎপর্য
কতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তান পেতে যাচ্ছে তা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে সামরিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই অনুমোদন পাকিস্তান বিমানবাহিনীর এফ–১৬ যুদ্ধবিমানের আধুনিকীকরণের ইঙ্গিত বহন করছে।
এই ক্ষেপণাস্ত্র শুধুমাত্র এফ–১৬ যুদ্ধবিমানে ব্যবহারযোগ্য—যা পাকিস্তান বিমানবাহিনীর মূল আকাশযুদ্ধ সক্ষমতা নির্ধারণ করে। পাকিস্তানের সংবাদপত্র এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর মিগ–২১ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করতে পাকিস্তান এই ক্ষেপণাস্ত্রই ব্যবহার করেছিল।
ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত
প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষণী ওয়েবসাইট কুওয়া জানিয়েছে, এআইএম–১২০ সি–৮ সংস্করণটি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ডি–শ্রেণির রপ্তানি সংস্করণ। পাকিস্তান এর আগের সি–৫ সংস্করণ পরিচালনা করছে, যা ২০১০ সালে তাদের নতুন ব্লক–৫২ এফ–১৬ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে সরবরাহ করা হয়েছিল।
এআইএম–১২০ ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বের অন্যতম কার্যকর দীর্ঘপাল্লার আকাশযুদ্ধ অস্ত্র। এর বিশেষত্ব হলো ‘লক্ষ্যে ছুড়ে ভুলে যাও’ বা ফায়ার অ্যান্ড ফরগেট প্রযুক্তি—যার ফলে এটি পাইলটের নিরবচ্ছিন্ন নির্দেশনা ছাড়াই নিজস্ব রাডার ব্যবস্থার মাধ্যমে দীর্ঘ দূরত্বে লক্ষ্য শনাক্ত ও আঘাত হানতে সক্ষম।
পাকিস্তান–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের পটভূমি
সম্প্রতি পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নতির ইঙ্গিত স্পষ্ট হচ্ছে, বিশেষ করে গত মে মাসে ভারত–পাকিস্তানের চার দিনের সীমান্তযুদ্ধের পর। পাকিস্তান প্রকাশ্যে জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি আনার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকা ছিল মুখ্য এবং ইসলামাবাদ এমনকি তার নাম নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্যও প্রস্তাব করেছে।
অন্যদিকে ভারত দাবি করে, যুদ্ধবিরতির সমঝোতা হয়েছিল দুই দেশের সামরিক পরিচালকদের (ডিজিএমও) সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা ছাড়াই।
বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া
ওয়াশিংটন থেকে ইসলামাবাদের উদ্দেশে এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এতে পাকিস্তানের এফ–১৬ যুদ্ধবিমানের আকাশযুদ্ধ সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে, যা নিয়ন্ত্রণরেখা এলাকায় শক্তির ভারসাম্য নড়বড়ে করতে পারে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, এই অস্ত্র বিক্রি ‘আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ন করবে না,’ তবু বাস্তবে এটি দিল্লি–ওয়াশিংটন সম্পর্কের সূক্ষ্ম ভারসাম্যে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
পাকিস্তানের পক্ষে এটি কেবল সামরিক শক্তি বাড়ানোর পদক্ষেপ নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক ঘনিষ্ঠতারও এক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। ভারতের জন্য বার্তাটি স্পষ্ট—দক্ষিণ এশিয়ায় ভূরাজনৈতিক মিত্রতার সমীকরণ দ্রুত বদলে যাচ্ছে।
ইসরায়েলের চরম ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ বলেছেন, গাজা থেকে জিম্মিরা দেশে ফেরার পর হামাসকে ধ্বংস করতে হবে। বৃহস্পতিবার এক্সে (পূর্বে টুইটার) এই মন্তব্য করেন স্মোত্রিচ।
স্মোত্রিচ লেখেন, জিম্মিরা যখন দেশে ফিরবে, তখনই ইসরায়েল সব শক্তি নিয়ে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ ও নির্মূলের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে, যাতে তারা আর ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি আরও বলেন, তিনি গাজা যুদ্ধ শেষ করতে হামাসের সঙ্গে হওয়া কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তির পক্ষে ভোট দেবেন না। তবে তিনি নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে সমর্থন প্রত্যাহারের বা সরকার পতনের হুমকি দেননি।
স্মোত্রিচ আরও সতর্ক করেন যে, আমরা যেন ৭ অক্টোবরের আগের ভুল ধারণার কাছে ফিরে না যাই। আমরা যেন এমন কিছু না করি, যাতে নিজেদের ভবিষ্যৎ বন্ধক রেখে ভয়াবহ মূল্য পরিশোধ করতে হয়।
গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তির প্রথম ধাপে ইসরায়েল ও হামাস উভয়েই রাজি হয়েছে বলে গত বুধবার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে নিশ্চিত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে দুই পক্ষ সম্মত হওয়ার পর ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা এ পরিকল্পনার অনুমোদন দিতে পারে। এরই মধ্যে নেতানিয়াহু নেসেটে (ইসরায়েলের পার্লামেন্ট) ভাষণ দিতে ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান ও উপত্যকাটিতে হামাসের হাতে থাকা ৪৮ জন জিম্মিকে (জীবিত ও মৃত) মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি রয়েছে। জিম্মিদের মধ্যে ২০ জন জীবিত আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিপরীতে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের অনেককেই মুক্তি দেওয়া হবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হন। জিম্মি করা হয় ২৫১ জনকে। তাদের মধ্যে ৪৭ জন এখনো জিম্মি। এর মধ্যে ২৫ জন আর বেঁচে নেই বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। অন্যদিকে ওই দিন থেকেই গাজায় টানা বর্বর গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত দুই বছরে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ৬৭ হাজার ১৭৩ জন নিহত হন। এর মধ্যে ২০ হাজার ১৭৯ জন শিশু।
তীব্র অর্থসংকটের কারণে বিশ্বজুড়ে নয়টি শান্তিরক্ষা মিশন থেকে এক-চতুর্থাংশ সেনা ও পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে জাতিসংঘ (ইউএন)। একাধিক শীর্ষ জাতিসংঘ কর্মকর্তার বরাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতিসংঘের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, সামগ্রিকভাবে আমাদের প্রায় ২৫ শতাংশ শান্তিরক্ষী সেনা ও পুলিশ, তাদের সরঞ্জামসহ নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। একই সঙ্গে বিপুলসংখ্যক বেসামরিক কর্মীকেও মিশন থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।
তিনি জানান, এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় ১৩ থেকে ১৪ হাজার শান্তিরক্ষী সদস্য প্রভাবিত হবেন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা তহবিলে সবচেয়ে বড় অবদান রাখে যুক্তরাষ্ট্র, প্রায় ২৬ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন, যার অংশ ২৪ শতাংশের কাছাকাছি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থপ্রদান বাধ্যতামূলক হলেও, দেশটি বর্তমানে গুরুতর বকেয়ায় রয়েছে।
একজন জাতিসংঘ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন আর্থিক বছর শুরু হওয়ার আগেই (১ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের বকেয়া ছিল ১.৫ বিলিয়ন বা ১৫০ কোটি ডলার। এর সঙ্গে চলতি অর্থবছরের আরও ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ১৩০ কোটি ডলার যুক্ত হওয়ায় বর্তমানে মোট বকেয়া দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৮ বিলিয়নের বা ২৮০ কোটি ডলারেরও বেশি।
যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘকে জানিয়েছে, তারা শিগগিরই ৬৮ কোটি ডলার পরিশোধ করবে। তবে মার্কিন মিশন এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।
জাতিসংঘ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত আগস্টে একতরফাভাবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালের জন্য বরাদ্দকৃত ৮০০ মিলিয়ন বা ৮০ কোটি ডলার শান্তিরক্ষা তহবিল বাতিল করেন।
হোয়াইট হাউসের বাজেট অফিস আরও প্রস্তাব দিয়েছে, ২০২৬ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যুক্তরাষ্ট্রের সব অর্থায়নই বন্ধ করে দেওয়া হবে, যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে মালি, লেবানন ও কঙ্গোতে মিশনের ব্যর্থতা।
যেসব মিশনে প্রভাব পড়বে
অর্থসংকটের কারণে যেসব মিশনে সদস্যসংখ্যা কমানো হচ্ছে, সেগুলো হলো- দক্ষিণ সুদান, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, লেবানন, কসোভো, সাইপ্রাস, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, পশ্চিম সাহারা, ইসরায়েল-সিরিয়ার গোলান মালভূমির নিরস্ত্রীকৃত এলাকা, আবেয়ি (দক্ষিণ সুদান ও সুদানের যৌথ প্রশাসনিক অঞ্চল)
জাতিসংঘের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বছরেই এমন আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। সংস্থার মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এরই মধ্যে ব্যয় সাশ্রয় ও দক্ষতা বৃদ্ধির নতুন কৌশল নিয়ে কাজ করছেন।
গুতেরেসের ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, এই সংকট কেবল একটি অস্থায়ী অর্থঘাটতি নয়- এটি জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম ও বৈশ্বিক শান্তিরক্ষার সক্ষমতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে।
দক্ষিণ ভারতের সুপারস্টার অভিনেতা বিজয় থালাপতির বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। বাড়ানো হয়েছে বিজয়ের তামিলনাডুর নীলঙ্করাই এলাকার বাড়ির নিরাপত্তা। এছাড়া সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরাও তার বাড়ির দিকে নজর রাখছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘এই সময়ের’ প্রতিবেদনে বলা হয়, বোমা মেরে বিজয়ের বাড়ি উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি আসে। এক ব্যক্তি ফোন করে চেন্নাই পুলিশকে ভয়ংকর কথাটি জানান। এরপরই পুলিশের একটি দল তার বাড়ির চারপাশে অবস্থান নেয়।
পুলিশ জানিয়েছে, কন্যাকুমারী থেকে হুমকি দিয়ে ফোনটি আসে। পুলিশের ১০০ নম্বরে ফোন করে বলা হয়, ভবিষ্যতে আর কোনো দিন যদি বিজয় জনসভা করেন, তাহলে তার বাড়ি বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হবে। কারুরে পদপিষ্টের ঘটনা নিয়ে এখনো অস্বস্তি কাটেনি তামিলাগা ভেত্তরি কাজহাগামের। ৪১ জনের মৃত্যু হয় সেই দুর্ঘটনায়। তারই মধ্যে এবার বিজয়ের বাড়িতে বোমা হামলার হুমকি এলো।
ইতোমধ্যে পুলিশ বিজয়ের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। সেখানে কোনো বিস্ফোরক বা সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।
এদিকে হুমকির ঘটনা তদন্তে পুলিশ কাজ করছে। কর্মকর্তারা জানান, ফোনকারী ব্যক্তির লোকেশন ট্র্যাক করে তাকে আটকের চেষ্টা চলছে। তবে তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, এটি কোনো প্র্যাঙ্ক বা ভুয়া কল ছিল।
সম্প্রতি তামিলনাড়ুর কারুরে সমাবেশে ৪১ জন নিহত হন। বিজয়ের রাজনৈতিক দল তামিলাগা ভেত্রি কাজাগাম (টিভিকে) এই ঘটনার পর বেশ চাপে পড়েছে। নিহতদের মধ্যে বহু নারী ও শিশু রয়েছেন।
ওই দিনের সমাবেশে ৫১ বছর বয়সি বিজয় প্রায় ৭ ঘণ্টা দেরিতে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান। দুপুর থেকেই হাজার হাজার মানুষ সমাবেশে উপস্থিত হতে শুরু করেন। তার দেরি হওয়ায় ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সমাবেশের জন্য বরাদ্দ ১০ হাজার জনের জায়গায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। নিরাপত্তা নির্দেশিকা লঙ্ঘন করা হয় এবং পর্যাপ্ত খাবার, পানি ও জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, এই সব কারণে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সমাবেশ চলাকালীন অনেক মানুষ অজ্ঞান হলেও সেখানে অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে পারেনি।
ঘটনার পর বিজয় শোক প্রকাশ করেছেন এবং আহতদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে টিভিকে নেতারা বলেন, ‘আমরা এর আগে বহু বিশাল সমাবেশ আয়োজন করেছি এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
গাজা পুনর্নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফক্স নিউজের শন হ্যানিটির সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, শান্তি চুক্তির প্রথম পর্যায়ের পর আপনারা দেখতে পাবেন যে লোকজন একসঙ্গে কাজ করছে এবং গাজা পুনর্নির্মাণ করা হবে। খবর আল জাজিরার।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, এটি একটি ‘ভিন্ন বিশ্ব’ হতে চলেছে এবং গাজায় সম্পদ ব্যয় করা হবে। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, গাজা অনেক নিরাপদ স্থান হতে চলেছে এবং এটি এমন একটি স্থান হতে চলেছে যেখানে পুনর্গঠন হবে এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলো এটি পুনর্গঠনে সহায়তা করবে। কারণ তাদের প্রচুর পরিমাণে সম্পদ রয়েছে এবং তারা এটা দেখতে চায়। তিনি আরও বলেন, আমি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী যে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আসবে।
এদিকে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর ফিলিস্তিনিরা আনন্দ উদযাপন শুরু করে। কিন্তু এর মধ্যেই ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে গাজায় হামলা চালিয়েছে দখলদার সেনারা।
গাজা সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মুগাইর বলেছেন, যুদ্ধবিরতিসংক্রান্ত একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর ঘোষণার পরও ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটিসহ একাধিক স্থানে হামলা চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত রাতে গাজায় প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি কাঠামোর বিষয়ে একটি চুক্তির ঘোষণার পরও বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে, বিশেষ করে উত্তর গাজ এলাকায়।
তবে এসব অভিযানে কতজন হতাহত হয়েছে সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। এর আগে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলের ‘গ্যারান্টি’ চেয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই সংগঠন জানিয়েছে, তারা এমন নিশ্চয়তা চায় যাতে ইসরায়েল গাজার যুদ্ধ শেষ করে এবং পুরোপুরি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়।
ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনের কারণে গাজায় ছয় বছরের কম বয়সি প্রায় ৫৫ হাজার শিশু মারাত্মক পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। পুষ্টিহীনতার কারণে এদের মধ্যে ১২ হাজারের বেশি শিশুর অবস্থা গুরুতর যা দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণ হতে পারে। বিখ্যাত আন্তর্জাতিক চিকিৎসা জার্নাল দ্য ল্যানসেট- এ প্রকাশিত এক গবেষণায় এমন তথ্য ওঠে এসেছে।
প্রকাশিত এ গবেষণাটি পরিচালনায় সহায়তা করেছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সহায়তা সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)। এ গবেষণায় যুদ্ধ চলাকালে শিশুদের পুষ্টিহীনতার সঙ্গে ত্রাণ সরবরাহে ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ গবেষণায় ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত গাজায় ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সি দুই লাখ ২০ হাজার শিশুর বাহুর পরিধি মেপে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে শিশুদের ৫ শতাংশে অপুষ্টির লক্ষণ পাওয়া যায়। তবে ছয় মাস পর এ হার বেড়ে ৯ শতাংশ হয়।
২০২৪ সালের শেষ দিকে ত্রাণ সরবরাহে ইসরায়েল কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এ হার দ্বিগুণের বেশি হয়। গবেষণা অনুযায়ী, গাজার মোট জনসংখ্যার অনুপাতে ৫৪ হাজার ৬০০ শিশুর জরুরি পুষ্টি ও চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন।
ইউএনআরডব্লিউয়ের স্বাস্থ্য পরিচালক ও গবেষক ড. আকিহিরো সেইতা জানিয়েছেন, যুদ্ধ থামিয়ে নিরবচ্ছিন্ন আন্তর্জাতিক মানবিক ত্রাণ, চিকিৎসা ও পুষ্টি সহায়তা না পেলে আরও অনেক শিশুর মৃত্যু হবে।
জাতিসংঘের তথ্য মতে, ২০২৫ সালের মে থেকে জুলাইয়ের মধ্যে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ১ হাজার ৪০০-র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৮৫৯ জন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রের কাছে নিহত হয়েছেন। এদের অধিকাংশের মৃত্যু ইসরায়েলি সামরিক হামলায় ঘটেছে।
গাজায় স্বাস্থ্যসেবা বাড়াতে প্রস্তুত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে স্থায়ী শান্তির পথে বড় পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস। এ যুদ্ধবিরতির ফলে গাজায় স্বাস্থ্যসেবা বাড়াতে এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠনে নতুন উদ্যোগে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেন, ডব্লিউএইচও গাজার ভয়াবহ স্বাস্থ্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ বাড়াতে এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য খাত পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় বসবাস করা প্রতি ১০ জনে একজন নিহত বা আহত হয়েছেন। প্রতি ১০টি বাড়ির মধ্যে নয়টি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। কৃষি জমির ৮০ শতাংশের বেশি এলাকা উজাড় হয়ে গেছে। গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ শতাংশ নিহত বা আহত, এবং হাজার হাজার মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। গাজায় আহত প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষের মধ্যে ৪০ হাজারেরও বেশি জীবন-পরিবর্তনকারী গুরুতর আঘাত পেয়েছেন।
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) ‘অপারেশন আয়রন সোর্ড’ পরিচালনা করে গাজা উপত্যকাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে যেখানে ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনির বসবাস ছিল। মাত্র ৩২০ বর্গ কিলোমিটারের উপত্যকার ওপর ১ লাখ টনের বেশি বিস্ফোরক নিক্ষেপ করেছে আইডিএফ।
ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় গাজায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার আহত হয়েছেন বলে তথ্য প্রকাশ করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইউনিসেফের তথ্য মতে, এ যুদ্ধে ২০ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ৪২ হাজারের বেশি শিশু যাদের মধ্যে অন্তত ২১ হাজার শিশু স্থায়ীভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
মুক্তি পাবে ২০০০ ফিলিস্তিনি বন্দি
গাজা চুক্তির আওতায় মুক্তি পাবে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চুক্তি সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত তথ্য ওঠে আসছে। চুক্তির আওতায় প্রায় ২০ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এরপর মৃত জিম্মিদের দেহাবশেষ পর্যায়ক্রমে হস্তান্তর করা হবে। অপরদিকে ইসরায়েল এক হাজার ৯৫০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে, যার মধ্যে ২৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
এখন এই চুক্তির অন্যান্য অংশগুলোর মধ্যে বিশেষ করে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ কীভাবে ঘটবে এবং কখন ঘটবে সে সম্পর্কে এখনো অস্পষ্টতা রয়ে গেছে।
গাজার একটি নির্দিষ্ট এলাকায় থেকে সেনা প্রত্যাহ্যারের বিষয়ে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল। কিন্তু হামাসের দাবি, ইসরায়েলকে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার করতে হবে এবং গাজায় যুদ্ধ বন্ধের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফক্স নিউজের শন হ্যানিটির সঙ্গে আলাপকালে বলেন, শান্তি চুক্তির প্রথম পর্যায়ের পর আপনারা দেখতে পাবেন যে লোকজন একসঙ্গে কাজ করছে এবং গাজা পুনর্নির্মাণ করা হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, এটি একটি ‘ভিন্ন বিশ্ব’ হতে চলেছে এবং গাজায় সম্পদ ব্যয় করা হবে। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, গাজা অনেক নিরাপদ স্থান হতে চলেছে এবং এটি এমন একটি স্থান হতে চলেছে যেখানে পুনর্গঠন হবে এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলো এটি পুনর্গঠনে সহায়তা করবে। কারণ তাদের প্রচুর পরিমাণে সম্পদ রয়েছে এবং তারা এটা দেখতে চায়। তিনি আরও বলেন, আমি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী যে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আসবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে বলেছেন, ইসরাইল এবং হামাস ‘আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে সই করেছে।’
ট্রাম্প বলেছেন, ‘এর অর্থ হল, খুব শীঘ্রই সকল জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং ইসরাইল তাদের সৈন্যদের প্রত্যাহার করবে। এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি একটি শক্তিশালী, টেকসই এবং চিরস্থায়ী শান্তির প্রথম পদক্ষেপ। সকল পক্ষের সাথে ন্যায্য আচরণ করা হবে! এটি আরব ও মুসলিম বিশ্ব, ইসরাইল, আশেপাশের সমস্ত দেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি মহান দিন।
কায়রো থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আরো বলেছেন, আমরা কাতার, মিশর এবং তুরস্কের মধ্যস্থতাকারীদের ধন্যবাদ জানাই, যারা এই ঐতিহাসিক এবং অভূতপূর্ব ঘটনাটি ঘটাতে আমাদের সাথে কাজ করেছেন। শান্তি প্রতিষ্ঠাকারীরা ধন্য!’
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের এই সপ্তাহান্তে মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত থাকার কথা বলার মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই এই ঘোষণা আসে।
ইসরাইল এবং হামাস একে অপরের সাথে সরাসরি কথা বলে না, যার জন্য পরোক্ষ আলোচনার প্রয়োজন হয় যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ, প্রেসিডেন্টের জামাতা জ্যারেড কুশনার এবং মিশরের শার্ম-এল-শেখে মিশর, কাতার এবং তুরস্কের মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যস্থতায় হয়েছিল।
তবে যুদ্ধবিরতি কবে থেকে কার্যকর হবে তা স্পষ্ট নয়।
ধারণা করা হচ্ছে, চুক্তিতে হামাসকে জীবিত ও মৃত প্রায় ৫০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার এবং ইসরাইলকে প্রায় ২০০০ ফিলিস্তিনি বন্দী ও আটক ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ট্রাম্প গত সপ্তাহে যেমন উল্লেখ করেছিলেন, চুক্তির অন্যান্য মূল উপাদানগুলোতে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং দুই বছরের যুদ্ধে বিধ্বস্ত সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল গাজা শাসনে ভবিষ্যতের ভূমিকা ত্যাগ করার কথা বলা হয়েছে।
ইসরাইল আপাতত গাজায় কিছু সৈন্য রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে যুদ্ধবিরতি দৃঢ় হওয়ার সাথে সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে শেষ পর্যন্ত তাদের সরিয়ে নেবে।
এই মূল বিধানগুলোর সুনির্দিষ্ট বিবরণ তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট ছিল না।
একাধিক ব্যর্থ প্রচেষ্টা এবং পূর্ববর্তী দু’টি যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর চুক্তিটিকে একটি বড় অগ্রগতি হিসাবে দেখা হচ্ছে। এই বছরের জানুয়ারিতে সম্পাদিত একটি যুদ্ধবিরতি মার্চ মাসে ভেঙে যায় যখন ইসরাইল গাজায় আক্রমণ পুনর্নবীকরণ করে। যুদ্ধের প্রথম দিনগুলোতে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে একটি যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ স্থায়ী হয়েছিল।
বিস্তৃত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রতি ব্যাপক সমর্থন তৈরি করেছে এবং আশা জাগিয়েছে যে, এই যুদ্ধবিরতি স্থায়ী হবে। ইসরাইলি এবং ফিলিস্তিনি উভয় সমাজেই শক্তিশালী সংখ্যাগরিষ্ঠরা যুদ্ধের অবসানের পক্ষে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ভোরে দক্ষিণ ইসরাইলে ফিলিস্তিনের স্বাথীনতাকামী হামাসের আকস্মিক আক্রমণের মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। হামলায় প্রায় ১,২১৯ জন নিহত হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই ইসরাইলি বেসামরিক নাগরিক। তাদের অনেকেই সপ্তাহান্তে একটি সঙ্গীত উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে দেশটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি ছিল ইসরাইলের ওপর একদিনের সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণ।
ইসরাইল একটি ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে, যার ফলে ৬৭ হাজারেরও বেশি বেসামরিক ফিলিস্তিনি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ইসরাইলের ক্রমাগত বোমা হামলা এবং অবিরাম স্থল বাহিনীর আক্রমণ গাজার বেশিরভাগ বাড়িঘর, স্কুল, হাসপাতাল এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে।
সংঘাত জুড়ে ইসরাইল গাজায় সীমিত সাহায্য দিয়েছে। যার ফলে খাদ্য ও ওষুধের চরম ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
যুদ্ধের সময় গাজার ২০ লক্ষেরও বেশি জনসংখ্যা বারবার বাস্তুুচ্যুত হয়েছে। বেশিরভাগ বাসিন্দা এখন মিশরের সীমান্তের কাছে ভূখণ্ডের দক্ষিণ অংশে তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে।
যুদ্ধের অবসানের ফলে খাদ্য এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদার সরবরাহ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কিন্তু ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, পানি এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুনর্নির্মাণে বহু বছর সময় লাগবে।
যুদ্ধের সমাপ্তি এখন হাতের নাগালে থাকলেও ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক অধিকারের প্রশ্ন সমাধানের জন্য কোনো স্পষ্ট রোডম্যাপ নেই।
এই পরিকল্পনায় প্রায় দুই দশক ধরে গাজা শাসন করার পর হামাসকে সরে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। এতে ‘যোগ্য ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের’ একটি অন্তর্বর্তীকালীন পরিচালনা কমিটি গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়াও, ট্রাম্পের সভাপতিত্বে একটি আন্তর্জাতিক ‘শান্তির বোর্ড’ কমিটি তত্ত্বাবধান করবে এবং গাজার পুনর্গঠন তত্ত্বাবধান করবে।
একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে পরিকল্পনাটি ‘ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্রত্বের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ’ তৈরির জন্য একটি অস্পষ্ট আহ্বান জানিয়েছে, তবে কোনো বিবরণ প্রদান করেনি।
ইতোমধ্যে গাজায় হামাসকে ধ্বংস করার পর লেবাননে হিজবুল্লাহকে আক্রমণ এবং ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলা চালানোর পর ইসরাইল যুদ্ধ থেকে অনেক শক্তিশালী অবস্থানে উঠে এসেছে।
তবুও গাজা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ইসরাইল আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যার ফলে অনেক বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সূত্র: বাসস
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষরের খবরে উচ্ছ্বাসের জোয়ার বইছে গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে। কেউ খুশিতে কাঁদছেন-হাততালি দিচ্ছেন, কেউ বাঁশি বাজাচ্ছেন, কেউ গান গাইছেন-নাচানাচি করছেন এবং চিৎকার করে বলছেন ‘আল্লাহু আকবর’।
৫ সন্তানের মা ঘাদা এই খবর শোনার পর থেকে কাঁদছেন। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি কাঁদছি; কিন্তু এটা আনন্দের অশ্রু। মনে হচ্ছে, নতুন করে আবার আমাদের জন্ম হলো। আশা করছি, এই ভয়াবহ যুদ্ধের শেষ হচ্ছে।”
ঘাদা জানান, গাজার প্রধান শহর গাজা সিটির বাসিন্দা ছিলেন তিনি। যে বাড়িতে তারা থাকতেন, সেটি ইসরায়েলি বাহিনীর বোমায় ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর গত ১৫ মাস ধরে পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ তাঁবুতে বসবাস করছেন ঘাদা।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার স্থানীয় সময় বিকেলে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ও দপ্তর হোয়াইট হাউসে গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত নতুন একটি পরিকল্পনার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েল ও মধ্যস্থতাকারী দুই দেশ মিসর ও কাতার সম্মতি দিলেও হামাস তখনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
পরে ৩ অক্টোবর শুক্রবার হামাস সম্মতি জানানোর পরের দিন ৪ অক্টোবর ইসরায়েলকে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে বলেন ট্রাম্প। তার পর ৬ অক্টোবর মিসরের লোহিত সাগর তীরবর্তী পর্যটন শহর শারম আল শেখ- এ ট্রাম্পের প্রস্তাবের ওপর বৈঠক শুরু হয় ইসরায়েল, হামাস, মিসর, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের প্রতিনিধিদের মধ্যে।
সেই বৈঠকে দুই দিনেরও বেশি সময় ধরে আলোচনা চলার পর গতকাল রাতে ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রাথমিক পর্যায় বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্বাক্ষর করেছে ইসরায়েল-হামাস।
এই পর্যায়টির স্থায়িত্ব হবে ৬ সপ্তাহ। এই ছয় সপ্তাহে নিজেদের হাতে থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এর পরিবর্তে ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ, ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি এবং গাজা থেকে পর্যায়ক্রমে সেনা প্রত্যাহার করে নেবে।
চুক্তি স্বাক্ষরের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর গতকাল রাতেই আনন্দ মিছিল বের করেন গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের বাসিন্দারা। কিশোর তরুণরা বাঁশি-খঞ্জনি-ড্রাম বাজিয়ে, নেচে গেয়ে উল্লাস শুরু করেন।
ইমান আল কৌকা নামের এক তরুণী এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। রয়টার্সকে তিনি বলেন, “আজ আমাদের আনন্দের দিন, আজ আমাদের দুঃখেরও দিন। এটা এমন দিন যার জন্য আমরা হাসব—আবার যুদ্ধে আমরা যাদের হারিয়েছি, যা যা হারিয়েছে—সেসব স্মরণ করে কাঁদব। আমরা শুধু আমাদের বন্ধু, স্বজন এবং বাড়িঘরই হারাইনি। আমরা আমাদের শহর হারিয়েছি। এই যুদ্ধের মাধ্যমে ইসরায়েল আমাদের প্রাগৈতিহাসিক আমলে ঠেলে দিয়েছে।”
ইসরায়েলি বাহিনীর বোমায় বাড়ি ঘর হারিয়ে গত বছর খান ইউনিসের দেইর আল বালাহ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন গাজার অপর বাসিন্দা আহমেদ দাহমান। রয়টার্সকে তিনি জানান, ইসরায়েলি বাহিনীর বোমার আঘাতে বাড়িঘরের পাশাপাশি নিজের বাবাকেও হারিয়েছেন তিনি; কিন্তু তাকে দাফন করতে পারেননি। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বাবার মরদেহ রেখেই নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটতে হয়েছে তাদের।
রয়টার্সকে দাহমান বলেন, “অবশেষে গাজায় রক্তপাত বন্ধ হচ্ছে এবং আমাদের জীবন রক্ষা পাচ্ছে—এটা আনন্দের খবর। তবে আমি যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত। আমরা যখন ফিরব, তখন দেখব যে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।”
“আমার বাবার লাশ ধ্বংসস্তূপের তলায় রেখে পালাতে বাধ্য হয়েছিলাম। বাড়ি ফিরে আমার প্রথম কাজ হবে বাবার দেহাবশেষ খুঁজে বের করে তার দাফন সম্পন্ন করা।”
আহমেদ দাহমানের মা বুশরা বলেন, “এ যুদ্ধবিরতি আমার স্বামীকে ফেরত দিতে পারবে না। কিন্তু অন্তত অনেকের জীবন রক্ষা পাবে। আমি কাঁদব, এমন কান্না যা এর আগে কখনও, কোনোদিন কাঁদিনি। এই নিষ্ঠুর যুদ্ধ আমাদের কাঁদার সময় দেয়নি।”
সূত্র : রয়টার্স
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে ইসরায়েল ও হামাস রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার (৮ অক্টোবর) নিজের মালিকানাধীন সামাজিকমাধ্যম ট্রুথে এক পোস্টে তিনি এ তথ্য জানান।
ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘শান্তি চুক্তির অর্থ হল খুব শীঘ্রই সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। ইসরায়েল গাজা থেকে তাদের সৈন্যদের প্রত্যাহার করবে। এটি শক্তিশালী, টেকসই এবং চিরস্থায়ী শান্তির দিকে প্রথম পদক্ষেপ।’ খবর আল জাজিরা, বিবিসির।
এর আগে, ট্রাম্প আরও বলেছেন, গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণা করতে এই সপ্তাহের শেষে মিশরে যেতে পারেন।
গত মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা নিয়ে ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। ইসরায়েল ও হামাস দুই পক্ষই ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ইতিবাচক সাড়া দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়।
বুধবার (৮ অক্টোবর) মিসরে তৃতীয় দিনের মতো আলোচনা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে তারা আলোচনা করেন। এদিন আলোচনায় যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী মধ্যস্থতাকারীরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানি এবং তুরস্কের গোয়েন্দাপ্রধান ইব্রাহিম কালিন।
এদিকে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি সামাজিকমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে বলেছেন, ‘মধ্যস্থতাকারীরা ঘোষণা করেছেন যে, গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের ‘সমস্ত বিধান এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া’ সম্পর্কে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে উভয় পক্ষ। এর ফলে যুদ্ধের অবসান হবে। এই চুক্তির ফলে ইসরায়েলি জিম্মিরা দেশে ফিরে যাবে। ফিলিস্তিনি বন্দীরা মুক্তি পাবে। গাজা উপত্যকায় খাবারও প্রবেশ করবে।’
এদিকে বিবৃতি দিয়েছে হামাস। সংগঠনটি বলছে, ‘চুক্তিটি গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটাবে। দখলদার বাহিনীর সব সৈন্য প্রত্যাহার নিশ্চিত করবে। এই চুক্তির ফলে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি পাবে। উভয় পক্ষের বন্দিবিনিময় বাস্তবায়ন করবে।’
বিবিসির মার্কিন সংবাদ অংশীদার সিবিএস জানিয়েছে, শান্তিতে মধ্যস্থতা করায় কাতার, মিশর, তুরস্ক ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানায় হামাস। ট্রাম্প ও অন্য পক্ষকে ইসরায়েলি দখলদার সরকার চুক্তির শর্তাবলী পুরোপুরি মেনে চলে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানায় সংগঠনটি।
ফিলিস্তিনের পুরোপুরি স্বাধীনতা অর্জন করা পর্যন্ত আমরা লড়াই করে যাব বলে বিবৃতিতে জানায় হামাস।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের জন্য আজ মহান দিন। এর ফলে জিম্মিরা তাদের বাড়ি ফিরে আসবে।’
চুক্তি হওয়ায় তিনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হন। জিম্মি করা হয় ২৫১ জনকে। তাদের মধ্যে ৪৭ জন এখনও জিম্মি। এর মধ্যে ২৫ জন আর বেঁচে নেই বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এদিকে, ওই দিন থেকেই গাজায় টানা বর্বর গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ৬৭ হাজার ১৭৩ জন নিহত হন। এর মধ্যে ২০ হাজার ১৭৯ জন শিশু।
ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ভিসা নীতি শিথিল করবে না যুক্তরাজ্য। ভারত সফরে যাওয়ার আগে এ কথা বলেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে দুই দিনের সফরে বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী। গতকাল বুধবার তিনি ভারতে পৌঁছান।
এ সফরে স্টারমার উদ্যোক্তা, সাংস্কৃতিক নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শতাধিক ব্যক্তির একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার এ সফরের লক্ষ্য যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও দেশটির ধীরগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উন্নয়নে কাজ করা।
স্টারমার বলেন, ভারতের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ‘বিস্তৃত সুযোগ’ রয়েছে। তবে ভারতীয় শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাজ্যের ভিসার পাওয়ার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আলোচনা ভিসা নিয়ে নয়, আলোচনা হবে ব্যবসায়িক অংশীদারত্ব, বিনিয়োগ, চাকরি ও যুক্তরাজ্যের সমৃদ্ধি বৃদ্ধি নিয়ে।
কয়েক বছর ধরে আলোচনার পর গত জুলাইয়ে ভারতের সঙ্গে একটি বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাজ্য।
চুক্তির লক্ষ্য, লাখ কোটি পাউন্ডের বাণিজ্য সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের গাড়ি ও হুইস্কি সস্তায় ভারতে রপ্তানি করা এবং ভারতীয় পোশাক ও গয়না সস্তায় যুক্তরাজ্যে আমদানি করা।
এছাড়া চুক্তির অংশ হিসেবে যেসব ভারতীয় স্বল্পমেয়াদি ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে কাজ করবেন, তারা সামাজিক নিরাপত্তা (সোশ্যাল সিকিউরিটি) ব্যয়ে তিন বছরের জন্য ছাড় পাবেন।
তবে মন্ত্রীরা জোর দিয়ে বলেছেন, অভিবাসননীতিতে কোনো বিস্তৃত পরিবর্তন আনা হয়নি।
যুক্তরাজ্যের বর্তমান লেবার সরকার দেশটিতে অভিবাসন কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। গত সপ্তাহে দলীয় সম্মেলনে বিদেশিদের স্থায়ীভাবে বসবাসের ক্ষেত্রে নিয়মনীতি কঠোর করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ভারতে যাওয়ার পথে উড়োজাহাজের ভেতর সাংবাদিকদের স্টারমার বলেন, ভারতের সঙ্গে এই বাণিজ্য চুক্তিতে ভিসার কোনো ভূমিকা নেই। ভিসা নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
সেখানে স্টারমারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির দক্ষ কর্মী ভিসা (এইচ-১বি) আবেদনে ফি আরোপের পর, বিশেষ করে প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের নিয়ে আসতে যুক্তরাজ্য নিজেদের ভিসা নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে কি না।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্য সারা বিশ্বের ‘শীর্ষ মেধাবীদের’ আকর্ষণ করতে চায়, যেন তারা দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে পারেন।
তবে স্টারমার বারবার এটাও বলেছেন, ভারতীয়দের জন্য যুক্তরাজ্যের ভিসা পাওয়ার নতুন পথ চালুর কোনো পরিকল্পনা তার সরকারের নেই।
দুই দিনের এ সফরে প্রধানমন্ত্রী স্টারমার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
স্টারমার সফরে আসার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।
তিনি এমন কিছু করবেন না বলে জানিয়েছেন স্টারমার। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্পষ্ট করে বলতে গেলে, আমি পুতিনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাইনি। এমন কোনো কিছু আমি করতেও যাচ্ছি না। আমার মনে হয় না, এতে কেউ আশ্চর্য হবেন।’
রাশিয়ার তেল কেনার কারণে তিনি নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে স্টারমার বলেন, তেলের ট্যাংকারের যেসব বহর ছদ্মবেশে রাশিয়ার তেল বহন করে, যুক্তরাজ্যের নজর তাদের দিকে।
সূত্র: বিবিসি
চলতি বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জাপানের সুসুমু কিতাগাওয়া, যুক্তরাজ্যের রিচার্ড রবসন এবং জর্ডান বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক ওমর এম ইয়াঘি। ধাতব-জৈব কাঠামো (মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কস) আবিষ্কারের জন্য তাদের এই পুরস্কারেরস জন্য নির্বাচিত করা হয়।
গতকাল বুধবার রসায়নে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস। স্টকহোম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
নোবেল জুরি বোর্ড জানায়, এই কাঠামোগুলো (মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কস) ব্যবহার করে মরুভূমির বাতাস থেকে পানি সংগ্রহ করা যায়, কার্বন ডাই-অক্সাইড আটকানো যায়, বিষাক্ত গ্যাস সংরক্ষণ করা যায় কিংবা রাসায়নিক বিক্রিয়া অনুঘটক হিসেবে কাজে লাগানো যায়।
দীর্ঘদিন ধরে বিশ্লেষকরা ইয়াঘিকে নোবেলের জন্য শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে গণ্য করে আসছেন। তার সঙ্গে কিতাগাওয়ার নামও প্রায়ই আলোচনায় আসত।
নোবেল কমিটির কেমিস্ট্রি বিভাগের চেয়ারম্যান হেইনার লিংকে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কসের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে, যা আগে কল্পনাও করা যায়নি এমন সব সুযোগ এনে দিয়েছে। বিশেষ করে এটি নতুন বৈশিষ্ট্যের উপযোগী কাস্টমাইজড উপকরণ তৈরির সুযোগ করে দিয়েছে।’
গত বছর রসায়নে নোবেল পান যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড বেকার ও জন জাম্পার এবং ব্রিটেনের ডেমিস হাসাবিস। তারা কম্পিউটিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে জীবনের মূল গঠন উপাদান প্রোটিনের গঠন কোড উন্মোচনে কাজ করেন।
এই বছর পদার্থবিজ্ঞানে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ব্রিটেনের জন ক্লার্ক, ফ্রান্সের মিশেল এইচ. দেভরেট ও মার্কিন নাগরিক জন এম মার্টিনিস। গত মঙ্গলবার এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর আগে সোমবার চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্র-জাপানের তিন বিজ্ঞানীকে। যুক্তরাষ্ট্রের মেরি ব্রাঙ্কো ও ফ্রেড রামসডেল এবং জাপানের শিমোন সাকাগুচি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণার জন্য তারা নোবেল পান।
আজ বৃহস্পতিবার সাহিত্যে এবং আগামীকাল শুক্রবার বহুল আলোচিত শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হবে। অর্থনীতির নোবেল দিয়ে আগামী ১৩ অক্টোবর শেষ হবে ২০২৫ সালের নোবেল মৌসুম।
প্রতিটি নোবেল পুরস্কারের সঙ্গে থাকবে একটি সনদপত্র, একটি স্বর্ণপদক এবং ১২ লাখ মার্কিন ডলার সমমূল্যের চেক। কোনো বিভাগে একাধিক বিজয়ী হলে পুরস্কারের অর্থ ভাগ করে দেওয়া হয়।
আগামী ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে স্টকহোমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সুইডেনের রাজা কার্ল ষোড়শ গুস্তাফের কাছ থেকে এই বছর নোবেল বিজয়ীরা আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার গ্রহণ করবেন।