ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভা দ্বীপের সক্রিয় আগ্নেয়গিরি মাউন্ট সেমেরুতে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছে। গত রোববার স্থানীয় সময় পৌনে ৩টার দিকে ৩ হাজার ৬৭৬ মিটার উচ্চতার আগ্নেয়গিরিটিতে এই অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়। খবর রয়টার্সের।
এ কারণে দ্বীপটির হাজারো বাসিন্দাকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সোমবার এই সতর্কতা জারি করে আট কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সরিয়ে নেয়া হয়েছে সেমেরুর নিকটস্থ বাসিন্দাদের।
স্থানীয় একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে মাউন্ট সেমেরুর কাছে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রাদেশিক অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, রোববার ভারী বৃষ্টির কারণে আগ্নেয়গিরির লাভা দ্রুত নিচের দিকে ছড়িয়ে পড়ছিল। তবে সোমবার বৃষ্টি কমায় পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো আছে।
এ ঘটনায় এখনো কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি এবং প্লেন চলাচলে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি।
কর্তৃপক্ষ বলছে, অগ্ন্যুৎপাত শুরুর পর স্থানীয়রা অনেকে এলাকা ছেড়ে গেছেন। সরিয়ে নেয়া হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার বাসিন্দাকে।
গত বছর সেমেরুতে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে অর্ধশতাধিক মানুষ মারা যায় এবং হাজারের বেশি বাস্তুচ্যুত হয়।
সিরিয়ার পালমিরায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) এক হামলায় ২ জন মার্কিন সেনা সদস্য এবং একজন বেসামরিক দোভাষী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। তারা সেখানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে সহায়তা করছিলেন।
পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পারনেল জানান, হামলায় আরও তিনজন আহত হয়েছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, হামলাকারীকে মিত্রবাহিনী হত্যা করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, তিনি নিশ্চিত হয়েছেন যে আহত মার্কিন সেনারা ভালো আছেন।
তবে তিনি এটিকে আইএসআইএল (আইএসআইএস) হামলা হিসেবে উল্লেখ করে সতর্ক করেন যে এর জন্য গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হবে।
ট্রাম্প লিখেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এবং সিরিয়ার একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক এলাকায় সংঘটিত একটি আইএসআইএস হামলা।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা এই হামলায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও বিচলিত। এর জবাবে অত্যন্ত কঠোর প্রতিশোধ নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
হেগসেথ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেন, এটা সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হোক, যদি আপনি আমেরিকানদের লক্ষ্য করেন, তবে আপনার বাকি সংক্ষিপ্ত ও উদ্বিগ্ন জীবন কাটবে এই জেনে যে যুক্তরাষ্ট্র আপনাকে খুঁজে বের করবে এবং নির্মমভাবে হত্যা করবে।
শনিবারের (১৩ ডিসেম্বর) এই হামলার খবর প্রথম জানায় যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড, যা সেন্টকম নামেও পরিচিত। তারা এই হামলাকে একজন একক আইএসআইএল বন্দুকধারীর চালানো একটি অ্যামবুশ বা অতর্কিত হামলা হিসেবে বর্ণনা করে এবং জানায়, পরবর্তীতে হামলাকারীকে মোকাবিলা করে হত্যা করা হয়। পরে হেগসেথ নিশ্চিত করেন যে অপরাধীকে মিত্রবাহিনী হত্যা করেছে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পারনেল জানান, হামলাটি সিরিয়ার কেন্দ্রীয় হোমস অঞ্চলের পালমিরার কাছে সংঘটিত হয়।
তিনি এক বিবৃতিতে লেখেন, সৈন্যরা যখন একটি গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে বৈঠক পরিচালনা করছিলেন, তখনই এই হামলা ঘটে। তাদের মিশন ছিল ওই অঞ্চলে চলমান আইএসআইএস-বিরোধী ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে সহায়তা প্রদান করা।
ফিলিস্তিনের গাজায় ত্রাণ প্রবেশের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার দাবিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস হয়েছে। এর মাধ্যমে অবাধে ত্রাণ প্রবেশে দেশগুলো ইসরায়েলকে কঠোর বার্তা দিল। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের পরামর্শের ভিত্তিতে শুক্রবার এই ভোটাভুটি হয়। প্রস্তাবটি ১৩৯টি দেশের সমর্থন পেয়েছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রসহ মাত্র ১২টি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। ভোটদানে বিরত ছিল ১৯টি দেশ। প্রস্তাবে জাতিসংঘের স্থাপনায় হামলা বন্ধের দাবিতেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সমর্থন পাস হয়েছে। আলজাজিরা এসব তথ্য দিয়েছে।
নরওয়ের নেতৃত্বে একডজনেরও বেশি দেশ প্রস্তাবটি জাতিসংঘে উপস্থাপন করে। প্রস্তাবটি এমন সময় পাস হলো, যখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার মধ্যে তথাকথিত হলুদ রেখার নামে নতুন সীমান্ত স্থাপন করেছে। তারা এই সীমান্ত ক্রমেই গাজার অভ্যন্তরে বাড়িয়ে নিচ্ছে। ফলে নতুন করে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন বাসিন্দারা। খসড়াটি উপস্থাপন করে জাতিসংঘে নরওয়ের স্থায়ী প্রতিনিধি মেরেট ফেজেল্ড ব্র্যাটেস্টেড সতর্ক করেন, তিন দশকের মধ্যে ২০২৪ ছিল সবচেয়ে সহিংস বছর। ২০২৫ সালও একই রকম সহিংস হয়ে ওঠে। এসবের মূলে রয়েছে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন। আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য মানবিক সহায়তার আইনি স্পষ্টতা চেয়ে আসছি।
ভোটের আগে জাতিসংঘের মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেফ বার্তোস প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন। তার দাবি, এটি প্রমাণ করে নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুগান্তকারী শান্তিচুক্তি পাস হওয়ার পরও সাধারণ পরিষদ ইসরায়েলকে অন্যায্যভাবে লক্ষ্যবস্তু করার ধারা অব্যাহত রেখেছে।
জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউ এর কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজ্জারিনি ভোটাভুটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রস্তাবটি পাস হওয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে আমাদের সংস্থায় হামাসের অনুপ্রবেশের অভিযোগ সত্য নয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় দুইজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। টানা দুই বছরে নিহতের সংখ্যা ৭০ হাজার ৬৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে। গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে ৩৮৬ জন নিহত ও এক হাজার ১৮ জন আহত হয়েছে।
গাজায় ঝড়-বৃষ্টিতে দুর্ভোগ
গাজায় কয়েক দিন ধরে তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘বায়রন’। ইসরায়েল ত্রাণ, তাঁবু এবং জ্বালানি প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়ায় আগে থেকেই দুর্ভোগ ছিল। নতুন করে এই ঝড় দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে। অক্সফাম জানায়, ঝড়ের পরে গাজার মানুষ আরও বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে পড়েছে।
হলুদ রেখায় উচ্ছেদ হচ্ছে পরিবার
যুদ্ধবিরতির পর আহমেদ হামেদ যখন গাজা শহরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন, তখন এটি ইসরায়েল আরোপিত তথাকথিত ‘হলুদ রেখা’ থেকে প্রায় ১.৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ছিল। দুই মাস পর সেই দূরত্ব প্রায় ২০০ মিটারে সংকুচিত হয়ে গেছে।
তিনি মিডলইস্ট আইকে বলেন, যুদ্ধবিরতির পর পূর্ব গাজা সিটির শুজাইয়া পাড়ার কাছে আমরা বাড়িতে ফিরে যাই। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই বোমাবর্ষণ, ধ্বংসযজ্ঞ এবং গুলিবর্ষণের শব্দ শুনতে পাই। প্রথমে মনে হয়েছিল হলুদ রেখা এখনো দূরে। কিছুদিন পর জানালা দিয়েই কংক্রিটের ব্লক ফেলে তৈরি হলুদ রেখা স্পষ্ট দেখা গেল। ইসরায়েলি হামলায় আবারও বাড়িঘর ছাড়তে হলো। এ পর্যন্ত ১১ বার বাস্তুচ্যুত হয়েছে পরিবারটি।
১৯ অবৈধ বসতির অনুমোদন ইসরায়েলের
অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণে আরেকটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে ইসরায়েল। পশ্চিম তীরজুড়ে ১৯টি বসতি স্থাপনকারীদের আউটপোস্টকে বৈধতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা।
এই সিদ্ধান্তের আওতায় ১৯টি আউটপোস্টকে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈধ ঘোষণা ও নতুনভাবে প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি আউটপোস্ট রয়েছে যেগুলো ২০০৫ সালের গাজা ও পশ্চিম তীর থেকে ইসরায়েলের তথাকথিত ‘ডিসএনগেজমেন্ট পরিকল্পনা’র সময় সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ বলেন, ইসরায়েলের সব ধরনের বসতি কার্যক্রম অবৈধ এবং এটি আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক বৈধতা সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলোর সরাসরি লঙ্ঘন।
উল্লেখ্য, এসব আউটপোস্ট শুধু আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ীই নয় বরং ইসরায়েলের নিজস্ব আইন অনুসারেও অবৈধ। সাধারণত ভবিষ্যতে সরকারিভাবে অনুমোদন পাওয়ার লক্ষ্যেই বসতি স্থাপনকারীরা এসব আউটপোস্ট গড়ে তোলে। নতুন করে বৈধতা পাওয়া অনেক আউটপোস্টই পশ্চিম তীরের ভেতরের এলাকায় অবস্থিত যা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে আরও বিচ্ছিন্ন করে তুলছে।
ফিলিস্তিনের ‘কলোনাইজেশন অ্যান্ড ওয়াল রেজিস্ট্যান্স কমিশন’-এর প্রধান মুয়ায়্যাদ শাবান এই সিদ্ধান্তকে একটি বিপজ্জনক উত্তেজনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেয় যে দখলদার সরকার ফিলিস্তিনি ভূমিতে সংযুক্তীকরণ, বর্ণবাদ এবং পূর্ণমাত্রার ইহুদিকরণ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায়।
এর আগে চলতি বছরের মে মাসে ইসরায়েল ২২টি নতুন বসতি স্থাপনের ঘোষণা দেয়। বসতি পর্যবেক্ষণকারী সংগঠন পিস নাউ জানায়, এটি গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বসতি সম্প্রসারণের ঘোষণা। এছাড়া বুধবার পশ্চিম তীরের তিনটি পৃথক বসতিতে প্রায় ৮০০টি নতুন আবাসন ইউনিট নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়।
পিস নাউ বলেছে, এসব সিদ্ধান্ত একটি সুপরিকল্পিত ধারা অনুসরণ করছে যার উদ্দেশ্য বসতিগুলোতে পরিকল্পনা প্রক্রিয়াকে ‘স্বাভাবিক’ করে তোলা এবং আন্তর্জাতিক মহলের নজর ও সমালোচনা কমিয়ে আনা।
গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় হামাসের এক শীর্ষ কমান্ডার নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, গাজা সিটিতে হামলা চালিয়ে তারা হামাসের সিনিয়র কমান্ডার রায়েদ সাদকে হত্যা করেছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবারের হামলায় পাঁচজন নিহত এবং কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে।
তবে হামাসের দেওয়া এক বিবৃতিতে রায়েদ সাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। হামাস বলছে, গাজা সিটির বাইরে একটি বেসামরিক গাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে এবং ইসরায়েল যুদ্ধ বিরতি লঙ্ঘন করেছে।
মেসির অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে।
ভারতের চার শহরে তিন দিনের সফরে এসেছিলেন ফুটবল মহাতারকা লিওনেল মেসি। কিন্তু সফরের শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি। কলকাতার যুব ভারতী স্টেডিয়ামে ঘটে যায় বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা।
কলকাতায় মেসিকে এক ঝলক দেখতে স্টেডিয়ামে ভিড় জমিয়েছিলেন হাজার হাজার দর্শক। মোটা অঙ্কের টিকিট কেটে সবাই অপেক্ষায় ছিলেন প্রিয় তারকাকে কাছ থেকে দেখার। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় মেসি স্টেডিয়ামে পৌঁছানোর পরই।
লুইস সুয়ারেজ ও রদ্রিগো ডি’পলকে সঙ্গে নিয়ে মেসি মাঠে ঢুকতেই তাকে ঘিরে ধরেন প্রায় ৭০-৮০ জন। বেশির ভাগই ছিলেন মন্ত্রী ও বিভিন্ন সংস্থার কর্তা। সবাই মোবাইল ও ক্যামেরা হাতে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নিরাপত্তারক্ষীরাও মেসিকে ঘিরে রাখেন। এতে গ্যালারিতে থাকা দর্শকরা মেসিকে ঠিকমতো দেখতে পাননি।
এতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন দর্শকরা। তারা মাঠে বোতল ছুড়তে শুরু করেন, চেয়ার ভেঙে মাঠে ছুড়ে মারেন। কেউ কেউ ফেন্সিং ভেঙে মাঠে ঢুকে পড়েন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। পুরো স্টেডিয়ামজুড়ে তৈরি হয় উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা।
পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগেই মেসিকে স্টেডিয়াম ছাড়তে হয়।
এই আয়োজনের উদ্যোক্তা ছিলেন শতদ্রু দত্ত। ঘটনার পর কলকাতা পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে এবং বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর শতদ্রু দত্ত দর্শকদের টাকা ফেরত দেওয়ার লিখিত আশ্বাস দেন।
এদিকে মেসির অনুষ্ঠান ঘিরে বিশৃঙ্খলার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। তবে এই ঘটনায় আরও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত শর্মা বলেন, ‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, যিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন এবং কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল। প্রথম দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তায়।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উপেক্ষা করে কম্বোডিয়ার হামলার জবাবে পাল্টা হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে থাইল্যান্ড। উভয় দেশের রাষ্ট্রনেতাদের ডোনাল্ড ট্রাম্পের টেলিফোনের পর শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সীমান্তে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতে থাইল্যান্ডের অন্তত ৪ সেনা নিহত হয়েছেন।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ব্যাংককে এক সংবাদ সম্মেলনে থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সুরাসান্ত কংসিরি বলেন, ‘সীমান্তের চং আন মা এলাকায় সংঘর্ষে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) আরও ৪ জন সেনা নিহত হয়েছেন। গত সোমবার কম্বোডিয়ার সঙ্গে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৪ থাই সেনা নিহত হয়েছেন।’
ব্যাংকক বলেছে, শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) কম্বোডিয়ার সামরিক বাহিনী ৪ থাই সেনাকে হত্যা করেছে। এর আগে, কয়েকদিন ধরে চলা প্রাণঘাতী সংঘাতের অবসানে উভয় দেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে বলে জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুই দেশের রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার পর ওই দাবি করেন তিনি। যদিও পরবর্তীতে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি নাকচ করে দেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত-সহিংসতা চলছে। উভয় দেশের ঔপনিবেশিক আমলের ৮০০ কিলোমিটার (৫০০ মাইল) বিতর্কিত দীর্ঘ সীমান্ত নিয়ে এই সংঘাত চলছে।
থাই-কম্বোডিয়ার সীমান্ত সংঘর্ষে কেবল চলতি সপ্তাহেই অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সীমান্ত এলাকায় কম্বোডিয়ার হামলায় নিহত ৪ থাই সেনাও রয়েছেন বলে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
নতুন করে সংঘাত শুরুর জন্য উভয়পক্ষই পরস্পরকে দায়ী করছে। যদিও ট্রাম্প বলেছেন, উভয় দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে থাই প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল বলেছেন, ‘শুক্রবার ফোনালাপে ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি করা উচিত কি না- সে বিষয়ে কিছু বলেননি।’
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অনুতিন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। শুক্রবার অনুতিন ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেতের সঙ্গে টেলিফোনে ‘খুব ভালো আলোচনা’ হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন ট্রাম্প।’
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লেখেন, ‘তারা আজ সন্ধ্যা থেকেই সব ধরনের গোলাগুলি বন্ধ এবং জুলাইয়ে স্বাক্ষরিত মূল শান্তিচুক্তিতে ফিরে যেতে রাজি হয়েছেন।’
পাঁচ দিনের প্রাণঘাতী সহিংসতার পর জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। অক্টোবরে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে পরবর্তী একটি যৌথ ঘোষণার পক্ষে সমর্থন দেন ট্রাম্প। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে রাজি হওয়ার পর দুই দেশের মাঝে নতুন বাণিজ্য চুক্তির কথাও জানান তিনি।
তবে পরের মাসেই সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে কয়েকজন থাই সেনা আহত হওয়ার পর ওই চুক্তি স্থগিত করে থাইল্যান্ড। দেশটিতে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত কানিয়াপাত সাওপ্রিয়া বলেন, ‘এখন আর কম্বোডিয়াকে বিশ্বাস করি না।’ ৩৯ বছর বয়সি এই নারী এএফপিকে বলেন, ‘শেষবারের শান্তি প্রচেষ্টা সফল হয়নি... এবারও হবে কি না, আমি জানি না।’
কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষে ৭ লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত বা গৃহহীন হয়েছে বলে গণমাধ্যমের সূত্রে জানা গেছে, যেখানে সংঘর্ষে একজন কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হয়েছেন। এই বাস্তুচ্যুতির ঘটনাটি মূলত সাম্প্রতিক সামরিক সংঘাতের কারণে ঘটেছে, যা ১৯০৭ সালের ফরাসি মানচিত্র এবং প্রিয়াহ ভিহার ট্রায়াঙ্গেল (পান্না ত্রিভুজ) অঞ্চল নিয়ে বিতর্কের জের ধরে শুরু হয়েছিল।
যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানে জাতিসংঘের এক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ছয় সদস্য নিহত এবং আরও আট জন আহত হয়েছেন। হতাহত সকলেই বাংলাদেশের নাগরিক বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় কর্দোফান অঞ্চলের কাদুগলি শহরে অবস্থিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা লজিস্টিক ঘাঁটিতে এই নৃশংস হামলা চালানো হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং এক বিবৃতিতে বলেছেন যে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের লক্ষ্য করে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। তিনি এই হামলার জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। আহত ও নিহতরা জাতিসংঘের ‘ইউনাইটেড নেশনস ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেই’ (ইউনিসফা)-এর সদস্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সুদানের সেনাবাহিনী এই হামলার জন্য আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে দায়ী করেছে। সেনাবাহিনী দাবি করেছে যে, এই হামলা বিদ্রোহী মিলিশিয়া ও তাদের পেছনের শক্তির ধ্বংসাত্মক মনোভাব প্রকাশ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতিসংঘের স্থাপনা বলে দাবি করা একটি এলাকায় ঘন কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলি ওঠার ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। তবে হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আরএসএফের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই হামলায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের জন্য প্রয়োজনীয় জরুরি সহায়তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস সুদানে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেন যে সংঘাত নিরসনে একটি ব্যাপক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুদানি নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক প্রক্রিয়া প্রয়োজন। এই যুদ্ধ ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সামরিক বাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের জের ধরে শুরু হয়েছিল এবং এতে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানা যায়, যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিম দারফুরে সংঘাত তীব্র হওয়ায় কর্দোফান অঞ্চল যুদ্ধের নতুন কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই সংঘাত বিশ্বে ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে এবং এই হামলা এমন এক সময়ে এলো যখন মাত্র এক মাস আগে নিরাপত্তা পরিষদ ইউনিসফা মিশনের মেয়াদ নবায়ন করেছিল। বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যতম প্রধান অবদানকারী দেশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে আবেই অঞ্চলে বেসামরিক জনগণ সুরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির জনপ্রিয় বন্ডি সমুদ্র সৈকতে আজ রবিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় এক ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় বন্দুকধারী ব্যক্তি সহ কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এছাড়াও, হামলায় কমপক্ষে ১২ জন সাধারণ নাগরিক এবং দুজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনার পর সিডনি জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং জনমনে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
বিবিসি এবং আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে এই হামলায় মোট দুজন হামলাকারী জড়িত ছিল। নিহত দশজনের মধ্যে একজন হামলাকারী ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়, এবং অন্য হামলাকারী আহত অবস্থায় পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
কর্তব্যরত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন পুলিশ কর্মকর্তাও আহত হয়েছেন এবং আহত নাগরিকদের সঙ্গে তাঁদেরও চিকিৎসা চলছে।
হামলার গুরুত্বের কারণে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলেছে এবং একটি বিশেষ নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে একটি এক্সক্লুশন জোন তৈরি করা হয়েছে এবং হাতে তৈরি বোমা (আইইডি) নিষ্ক্রিয় করার জন্য বিশেষ দল ও সরঞ্জাম ঘটনাস্থলে আনা হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়ায় ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে নিহতের সংখ্যা ১,০০৩ জনে দাঁড়িয়েছে। শনিবার দেশটির উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, এখনো অন্তত ২১৮ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সুমাত্রা দ্বীপে টানা ভারী বৃষ্টি ও বন্যার কারণে এই দুর্যোগ দেখা দেয়।
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, এই দুর্যোগে প্রায় ২ হাজার ৭০০ জন বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন। প্রাথমিক অনুমানে, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দুর্যোগকবলিত এলাকাগুলোতে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে অব্যাহত বৃষ্টি ও দুর্গম পরিস্থিতির কারণে উদ্ধার কাজে বেগ পেতে হচ্ছে।
জাতীয় অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংস্থার তথ্যানুসারে, টানা বৃষ্টিপাতের ফলে কাদামাটি ধসে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে উদ্ধার প্রচেষ্টা জটিল হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত বন উজাড়, বন উজাড় করে নতুন বৃক্ষরোপণ ও খনির জন্য বন উজাড় করে ফেলার কারণে প্রাকৃতিক ‘সুরক্ষামূলক আবরণ’ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
জাকার্তা পোস্ট জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান ধারাবাহিকতায় দেশটিতে ২০২৪ সালে বন উজাড়ের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই বছরটিতে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪০০ হেক্টর বনভূমি ‘ধ্বংস’ করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫৪ হাজার ৩০০ হেক্টর বেশি।
দেশটির বন উজাড় পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা নুসানতারা অ্যাটলাসের প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড গ্যাভোর মতে, বেশিরভাগ ক্ষতি সুমাত্রায় ঘটেছে। অঞ্চলটিতে ২০০১ সাল থেকে ৪৪ লাখ হেক্টর বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে। এটি সুইজারল্যান্ডের চেয়েও বড় একটি এলাকা।
ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি জানিয়েছে, সুমাত্রার বন্যাকবলিত এলাকায় বন ধ্বংসের অভিযোগে বিভিন্ন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির প্রতিবেশী থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কিছু অংশ এবং পশ্চিমে শ্রীলঙ্কাও চরম আবহাওয়ার কবলে পড়েছে। গত কয়েকদিনে চরম আবহাওয়াজনিত কারণে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
দেশটির দুর্যোগ প্রশমন সংস্থার মুখপাত্র আবদুল মুহারি জানান, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সুমাত্রা দ্বীপে সৃষ্ট বন্যায় গত বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৯০ জনে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় দুর্যোগ। এখনো ২২০ জনের বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছে।
চলতি ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ক্রান্তীয় ঝড় ও মৌসুমি বৃষ্টিপাতে সুমাত্রার রেইনফরেস্ট থেকে শ্রীলঙ্কার পার্বত্য অঞ্চল পর্যন্ত ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যা দেখা দেয় এবং আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
২০০৪ সালের বিধ্বংসী সুনামির স্মৃতি বহনকারী সুমাত্রার আচেহ প্রদেশে মানুষ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছে। তবে, ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের গতি নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
৩৯ বছর বয়সি শিয়ারুল বলেন, ‘মানুষ জানে না যে, ‘তারা কার ওপর ভরসা করবে।’
আরেক বাসিন্দা সারিউলিস (৩৬) বলেন, ‘বন্যার প্রায় ১৫ দিন পর প্রতিদিন আমরা শুধু ঘরের ভেতরটা পরিষ্কার করতে পারছি। বাইরে কাদা জমে থাকায় আর পরিষ্কার করা যাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বেশিরভাগ মানুষ সরকারি সহায়তার ঘাটতি নিয়ে অভিযোগ করছেন। আমরা শুনে আসছি প্রদেশভিত্তিক বন্যা মোকাবিলা নাকি সম্ভব; কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ উল্টো। দুই সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আমরা একই সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছি। অগ্রগতির কথা যদি বলেন, তা খুবই সামান্য।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ অবসানের বিষয়ে আশার বাণী শোনালেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। শুক্রবার তুর্কমেনিস্তানে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক শেষে তিনি মন্তব্য করেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মাঝে শান্তি স্থাপন খুব বেশি দূরে নয়। প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে এখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী।
তুর্কমেনিস্তান থেকে ফেরার পথে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এরদোয়ান বলেন, পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর এখন ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পাওয়ার আশা করছেন তিনি। যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চলমান শান্তি প্রচেষ্টাকে মূল্যায়ন করে তিনি বলেন, জ্বালানি স্থাপনা ও বন্দরগুলোকে কেন্দ্র করে একটি সীমিত যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হলে তা সব পক্ষের জন্যই উপকারী হতে পারে। তুরস্ক এই শান্তি প্রক্রিয়ায় সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত বলেও তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।
কৃষ্ণসাগরের নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব তুলে ধরে তুর্কি প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেন, কৃষ্ণসাগরকে যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। এমন পরিস্থিতি রাশিয়া ও ইউক্রেন—উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর হবে। তাই সেখানে সবার জন্য নিরাপদ নৌ চলাচল নিশ্চিত করা জরুরি। উল্লেখ্য, এরদোয়ানের এই শান্তিবার্তার ঠিক আগেই শুক্রবার ইউক্রেনের দুটি বন্দরে রুশ হামলায় খাদ্যসামগ্রী বহনকারী একটি জাহাজসহ তুরস্কের মালিকানাধীন তিনটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এর কিছুদিন আগেই মস্কো ইউক্রেনকে সমুদ্রপথ থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছিল।
বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রতিদ্বন্দ্বী পরাশক্তি রাশিয়া ও চীনকে সঙ্গে নিয়ে ভারত এবং জাপানের সমন্বয়ে ‘কোর-৫’ বা সি-৫ নামে একটি নতুন জোট গঠনের পরিকল্পনা করছেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এমন একটি ‘সুপারক্লাব’ গঠনের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লেও এখন পর্যন্ত পাঁচটি দেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘পলিটিকো’র এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, হোয়াইট হাউসের সাম্প্রতিক জাতীয় নিরাপত্তা-সংক্রান্ত রিপোর্টে এই জোটের ইঙ্গিত মিলেছে। প্রস্তাবিত এই ফোরামটি মূলত জি-৭ এর আদলে নির্দিষ্ট বিষয়ে শীর্ষ সম্মেলন করবে। এর মাধ্যমে ইউরোপ নিয়ন্ত্রিত বিদ্যমান জোট এবং গণতন্ত্র বা সম্পদের ভিত্তিতে গঠিত ঐতিহ্যবাহী পশ্চিমা জোটগুলোকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। জানা গেছে, প্রস্তাবিত ‘কোর-৫’ জোটের এজেন্ডার শুরুতেই থাকবে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিশেষ করে ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিষয়টি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনায় ইউরোপের কোনো স্থান রাখা হয়নি, যা ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বাইডেন প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা টরি টসিগ মনে করেন, ট্রাম্পের বিশ্বকে দেখার ‘অ-আদর্শবাদী’ দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে এই পরিকল্পনা পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। তার মতে, এটি বাস্তবায়িত হলে বোঝা যাবে যে বর্তমান মার্কিন প্রশাসন রাশিয়াকে ইউরোপে প্রভাব বিস্তারে সক্ষম একটি শক্তি হিসেবেই মেনে নিচ্ছে। অন্যদিকে, রিপাবলিকান শিবিরের বিশ্লেষক মাইকেল সবোলিক মনে করেন, এমন জোট গঠিত হলে তা হবে আমেরিকার দীর্ঘদিনের চীন নীতি থেকে এক বিশাল সরে আসা।
তবে হোয়াইট হাউস আনুষ্ঠানিকভাবে এমন কোনো গোপন নথির অস্তিত্ব অস্বীকার করেছে। প্রেস সেক্রেটারি হান্না কেলি জোর দিয়ে বলেছেন, সরকারি পরিকল্পনার কোনো বিকল্প বা গোপন সংস্করণ নেই। তবুও মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, যেহেতু ট্রাম্প আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শক্তিশালী খেলোয়াড়দের সঙ্গে সরাসরি কাজ করতে পছন্দ করেন, তাই এই ‘কোর-৫’ ধারণাটি তার মস্তিষ্কপ্রসূত হওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
ইরানের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নার্গিস মোহাম্মদিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শুক্রবার ইরানের নিরাপত্তা ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করেছেন। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
এ ঘটনার পর নোবেল কমিটি এক বিবৃতিতে জানায়, তারা নার্গিস মোহাম্মদীর ‘নৃশংস গ্রেপ্তারে’ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে মোহাম্মদীর অবস্থান স্পষ্ট করার, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এবং শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
ইরানে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং মানবাধিকার প্রচারে সক্রিয়তার জন্য মিসেস মোহাম্মদীকে ২০২৩ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০২১ সাল থেকে তেহরানের এভিন কারাগারে বন্দি থাকার পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চিকিৎসা দিতে তিন সপ্তাহের জন্য জেল থেকে অস্থায়ী মুক্তি দেওয়া হয় তাকে।
গত সপ্তাহে তার অফিসে মৃত অবস্থায় পাওয়া আইনজীবী খোসরো আলিকর্দির স্মরণসভায় যোগ দেওয়ার সময় তার সর্বশেষ গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে। আইনজীবীর মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল তা নির্ধারণের জন্য একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে নরওয়েভিত্তিক গ্রুপ ইরান হিউম্যান রাইটস। সংস্থাটি বলেছে, তার মৃত্যুর আশেপাশের পরিস্থিতি বেশ সন্দেহজনক।
মোহাম্মদীর সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন কর্মীকে আটক করা হয়। জানা গেছে, তারা ‘স্বৈরশাসকের মৃত্যু’ এবং ‘ইরান দীর্ঘজীবী হোক’-সহ নানা স্লোগান দিয়েছিলেন।
মোহাম্মদীর স্বামী তাগি রহমানি বলেন, ‘তারা নার্গিসকে সহিংসভাবে গ্রেপ্তার করেছে। আইনজীবীর ভাই স্মৃতিসৌধে তার গ্রেপ্তার প্রত্যক্ষ করেন। এই কাজ মানবাধিকার আইনের পরিপন্থি।’
মোহাম্মদী ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইরানি কর্তৃপক্ষের ওপর দমন-পীড়ন তীব্র করার অভিযোগ করে আসছিলেন। গত সপ্তাহে তিনি টাইম ম্যাগাজিনে একটি নিবন্ধও লেখেন। যেখানে উল্লেখ করা হয়, ইরান ব্যক্তিগত বা জনজীবনের সকল দিক নিয়ন্ত্রণ করছে। নজরদারি, সেন্সরশিপ, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং সহিংসতার ক্রমাগত হুমকির কারণে তাদের শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে।
গত এক বছর ধরে তিনি বাধ্যতামূলক হিজাব পরতে এবং দেশজুড়ে সহকর্মী কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন। তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অধিকারের জন্য সাহসী লড়াইয়ের ফলে ব্যক্তিগত অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। ইরানের শাসকরা তাকে ১৩ বার গ্রেপ্তার করেছে, পাঁচবার দোষী সাব্যস্ত করেছে, সব মিলিয়ে ৩১ বছরের কারাদণ্ড ও ১৫৪টি বেত্রাঘাত করেছে।
ওমান উপসাগরে একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করেছে ইরান। উদ্বেগজনক খবর হলো, জব্দকৃত ওই জাহাজে বাংলাদেশি নাবিকরাও রয়েছেন। ইরানি গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, জাহাজটিতে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার মোট ১৮ জন নাবিক অবস্থান করছেন।
ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, ওমান উপকূলে আটক করা ওই জাহাজটি প্রায় ৬ মিলিয়ন লিটার চোরাচালানকৃত ডিজেল বহন করছিল। দেশটির হরমোজগান প্রদেশের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানানো হয়, আটকের সময় জাহাজটি তার সকল নেভিগেশন সিস্টেম বা দিকনির্ণয় যন্ত্র বন্ধ করে রেখেছিল, যা সন্দেহজনক আচরণের ইঙ্গিত দেয়।
ইরানি কর্তৃপক্ষ প্রায়ই উপসাগরীয় অঞ্চলে জ্বালানি পাচারের অভিযোগে বিদেশি জাহাজ আটক করে থাকে। বিশ্বে ইরানে খুচরা জ্বালানির দাম তুলনামূলকভাবে বেশ কম হওয়ায়, প্রতিবেশী দেশগুলোতে এখান থেকে জ্বালানি পাচার করা অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা হিসেবে বিবেচিত হয়।
এর আগেও গত মাসে গালফ অঞ্চলের জলসীমা থেকে ইরান একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করেছিল। তখন ওই জাহাজের বিরুদ্ধে ‘অননুমোদিত পণ্য পরিবহনের’ অভিযোগ আনা হলেও, আন্তর্জাতিক মহলে ধারণা ছিল যে এটি কোনো নির্দিষ্ট দেশের বিরুদ্ধে ইরানের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ। তবে তেহরান বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
সর্বশেষ এই জাহাজ আটকের ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল, যার মাত্র দুই দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র ভেনিজুয়েলার উপকূলে একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করে। ওয়াশিংটনের দাবি অনুযায়ী, ওই জাহাজটি ভেনিজুয়েলা ও ইরান থেকে তেল পরিবহন করছিল এবং এর সঙ্গে ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) ও হিজবুল্লাহর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোর কোনও সদস্য রাষ্ট্রে বছর পাঁচেকের মাঝেই রাশিয়া হামলা চালাতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ন্যাটো প্রধান মার্কো রুট্টে। জার্মানিতে আয়োজিত এক সম্মেলনে ভাষণ প্রদানকালে এই কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, রাশিয়া ইতোমধ্যে আমাদের বিরুদ্ধে গোপন অভিযানের মাত্রা বাড়াচ্ছে। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে সেই ধরনের যুদ্ধের জন্য, যা আমাদের পূর্বপুরুষরা দেখেছিলেন।
পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিভিন্ন সময়ের মূল্যায়নের পুনরাবৃত্তি করলেন রুট্টে, যা মস্কো বরাবরই ‘উদ্বেগ তৈরির অপচেষ্টা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
চলতি মাসের শুরুতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, ইউরোপের সঙ্গে যুদ্ধের কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই। তবে ইউরোপ যুদ্ধ শুরুর পাঁয়তারা করলে মস্কো যে কোনও সময় প্রস্তুত।
তবে ২০২২ ইউক্রেনে সেনা অভিযান শুরুর আগেও এ ধরনের আশ্বাসবাণী দিত রাশিয়া।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচেষ্টায় ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত বন্ধের চেষ্টা চলছে। পুতিনের অভিযোগ, ইউক্রেনে শান্তি আনার মার্কিন প্রচেষ্টায় ইউরোপ বাগড়া দিচ্ছে।
ট্রাম্পের প্রস্তাবে মস্কোর দিকে পক্ষপাতের অভিযোগে কিয়েভের মিত্ররা পরিকল্পনার খসড়ায় কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছে। পুতিনের অভিযোগে এই প্রচেষ্টায় নাখোশ হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
তবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় পুতিনের আন্তরিকতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে ন্যাটো মহাসচিব বলেন, ভাবুন, যদি পুতিন তার লক্ষ্য পূরণ করতে পারেন, তার ফল হবে- ইউক্রেন দখল, ন্যাটোর সঙ্গে আরও দীর্ঘ সীমান্তে রুশ সেনা, আর আমাদের ওপর সশস্ত্র হামলার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাওয়া।
রাশিয়ার অর্থনীতি তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধের উপযোগী কাঠামোতে রূপান্তরিত হয়েছে। তাদের কারখানাগুলো ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদের উৎপাদন বাড়িয়ে চলেছে।
কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমির সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, রাশিয়া মাসে প্রায় ১৫০টি ট্যাংক, ৫৫০টি ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং ভেহিকল, ১২০টি ল্যানসেট ড্রোন এবং ৫০টির বেশি আর্টিলারি পিস তৈরি করছে।
যুক্তরাজ্যসহ বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশ এই উৎপাদন সক্ষমতার ধারেকাছেও নেই।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার বর্তমান সামরিক উৎপাদন সামর্থ্যের কাছাকাছি পৌঁছাতে পশ্চিম ইউরোপের আরও বহু বছর লাগবে।
ন্যাটোতে ৩০টি ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে রয়েছে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র, যাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী। ট্রাম্পের চাপের মুখে সদস্য রাষ্ট্রগুলো আরও বেশি প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছে।
রুট্টে বলেন, ন্যাটোর বর্তমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সামলে নিতে পারছে। কিন্তু আমাদের পাশেই সংঘাত চলছে, আর আমি দেখি- অনেকেই আত্মতুষ্ট, অনেকেই জরুরি অবস্থা অনুভব করছে না, অনেকেই ভাবছে সময় আমাদের পক্ষে। মিত্রদেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয় ও সামরিক উৎপাদন দ্রুত বাড়াতে হবে- আমাদের বাহিনীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো সামর্থ্য থাকতে হবে।
দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উপত্যকার বাসিন্দাদের জীবন আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ‘বায়রন’ ঝড়ের কারণে গাজায় গত ২৪ ঘণ্টায় ঘরবাড়ি, দেয়াল ও তাঁবু ধসে পড়ে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে। তীব্র শীতে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজা সিটি কর্তৃপক্ষ।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, টানা যুদ্ধ ও বাস্তুচ্যুতির মধ্যে থাকা অসহায় ফিলিস্তিনিদের দুর্যোগ মোকাবিলার মতো কোনো প্রস্তুতি বা সামর্থ্য নেই। টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বাস্তুচ্যুত অবস্থায় থাকা পরিবারগুলো এখন মারাত্মক বিপদের মধ্যে রয়েছে।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসের আল-মাওয়াসি এলাকায় ঝড় ও ভূমি ধসে অনেক তাঁবু হুমকির মুখে পড়েছে। এসব এলাকায় অন্তত ৮ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ ৭৬১টি সাইটে আশ্রিত আছে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় সবাই ঝুঁকিতে রয়েছে।
গাজা সিটির শাতি শরণার্থী শিবিরে শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকালেই তীব্র ঠান্ডায় এক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে, উত্তর গাজার বির আন-নিজা এলাকায় ধসে পড়া একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি মৃতদেহ এবং দুই শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
এছাড়া, গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান এলাকায় দারবি পরিবারের বাড়ির প্রবেশদ্বার ধসে পড়ায় বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যায় কমপক্ষে ৭০ হাজার ৩৬৯ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭১ হাজার ০৬৯ জন আহত হয়েছেন।
গাজায় থামেনি ইসরায়েলি বর্বরতা
একদিকে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার হামলা আর অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতে বিপন্ন গাজার বাস্তুচ্যুত মানুষের জীবন। তীব্র শীতের মধ্যে ঝড় বায়রনের আঘাতে বিপর্যস্ত গাজাবাসী। এরইমধ্যে বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে উপত্যকাটির অনেক রাস্তাঘাট ও ত্রাণশিবিরের তাঁবু।
রাতভর বৃষ্টি আর ঠাণ্ডায় জর্জরিত হয়ে প্রাণ গেছে শিশুসহ কয়েকজনের। ঝড়ে কয়েকটি ভবনও ধসে পড়েছে। অস্থায়ী তাঁবুগুলো ঝড়-বৃষ্টি থেকে সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত না হওয়ায় বাসিন্দারা আশ্রয় নিচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোতে।
জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, গাজায় বন্যা বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ। ৭৬০টির বেশি শরণার্থী শিবির সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এমন অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে নীরবে প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। তবে কবে কার্যকর হবে, তা নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা জানানো হয়নি।
যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে নিজস্ব পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে হামাস। সব অস্ত্র জমা দেয়ার বিষয়টি গাজাবাসী প্রত্যাখ্যান করেছে উল্লেখ করে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি জানায়, নিরস্ত্রীকরণ ও সামরিক অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে কীভাবে এগোবে সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের পরিকল্পনা বোঝানোর চেষ্টা চলছে।
ফিলিস্তিনিদের পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করার সুযোগ দিতে মধ্যস্থতাকারীসহ অন্য দেশগুলোকে ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
এদিকে ইসরায়েল বলছে, গাজা উপত্যকার শাসনব্যবস্থায় হামাসের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। যুদ্ধবিধ্বস্ত এ ভূখণ্ডকে অস্ত্রমুক্ত করার পাশাপাশি যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী হামাসকে নিরস্ত্র করা হবে বলে জানিয়েছে সরকারের মুখপাত্র শোশ বেদ্রোসিয়ান।
ফিলিস্তিন ইস্যুকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে পশ্চিমারা
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেন সংঘাতকে ব্যবহার করে ফিলিস্তিন এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের মুখোমুখি অন্যান্য চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলো থেকে ‘মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার’ চেষ্টা করছে।
বৃহস্পতিবার মস্কোয় ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে পশ্চিমাদের ‘মনোভাব’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে কেউই ইউক্রেন সংঘাতের ‘মূল কারণগুলো’ বা সেগুলো অপসারণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে না। তারা কেবল ইউক্রেন ও ইউরোপীয়দের কিছুটা অবকাশ দেওয়ার জন্য এবং অন্তত কোনোভাবে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে কিয়েভের শাসনকে সমর্থন করার জন্য সময় পাওয়ার আশায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি দাবি করে।
মস্কোর বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধ চালানোর জন্য পশ্চিমাদের সম্পদ ফুরিয়ে আসছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তার মতে, ইউক্রেনকে ব্যবহার করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের করা ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।
এই কারণে ইউরোপ এখনই ‘একটি নতুন সংঘাতের বীজ’ বপন করতে চায় বলেও তার মত। ল্যাভরভ বলেন, পসচিমারা প্রকাশ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা এটির (নতুন সংঘাতের) জন্যও প্রস্তুত হচ্ছে।
শীর্ষ রুশ কূটনীতিক সতর্ক করেন, ইউরোপে ‘সামরিক উন্মাদনা’ চলছে এবং যদি তারা যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, রাশিয়া ‘যতটা সম্ভব’ প্রস্তুত।
তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, ন্যাটো বা ইইউ সদস্যদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো আক্রমণাত্মক পরিকল্পনা নেই। আমরা লিখিতভাবে, একটি আইনি নথিতে সংশ্লিষ্ট গ্যারান্টিগুলিকে আনুষ্ঠানিকভাবে রূপ দিতে প্রস্তুত- স্বাভাবিকভাবেই, সম্মিলিতভাবে, পারস্পরিক ভিত্তিতে।
ল্যাভরভ বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যে মস্কোতে সাম্প্রতিক আলোচনার ফলে ‘ভুল বোঝাবুঝি এবং ভুল যোগাযোগগুলো’ সমাধান হয়েছে।