গত বছরের ২১ জুন জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় বরখাস্ত হওয়া পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন ডিআইজি মিজান। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সেই মামলায় বরখাস্ত হওয়া পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের ১৪ বছরের কারাদণ্ড বহালই রেখেছেন হাইকোর্ট।
আজ বুধবার বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। এ ছাড়া এই মামলায় মিজানুর রহমানের স্ত্রী, ভাই ও ভাগনেকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক মঞ্জুরুল ইমাম এ রায় ঘোষণা করেন।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও সরকারি ছুটি ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সরকারের করা লিভ টু আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেন। সোমবার অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দিন ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস এবং সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল।
এরপর ২০০২ সালে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাতীয় শোক দিবস এবং সরকারি ছুটির সিদ্ধান্তটি বাতিল করা হয়। এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সমর্থিত তিনজন আইনজীবী রিট করলে ২০০৮ সালের ২৭ জুলাই হাইকোর্ট ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এবং সরকারি ছুটি বাতিলের বিষয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে।
সে রায়ের ফলে এখন ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন এবং সরকারি ছুটির সিদ্ধান্ত বহাল হয়। সম্প্রতি হাইকোর্টের ওই রায়ে স্থগিত চেয়ে আপিলের আবেদনের করে রাষ্ট্রপক্ষ।
এদিকে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এ বিষয়ে ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, আগামী রোববার (৮ ডিসেম্বর) আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসবে।
২০২০ সালের ১০ মার্চ জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। বাংলায় দেওয়া রায়ের আদেশের অংশে আদালত বলেন, ‘আমরা ঘোষণা করছি যে জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে।’
‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা চেয়ে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. বশির আহমেদের করা রিটের শুনানি শেষে এ রায় দেন হাইকোর্ট।
পরে ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয় শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ দণ্ডিত সব আসামি খালাস পেয়েছেন।
রায়ে এ মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে বিচারিক আদালতের রায় অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে এ রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ রোববার বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশ বেঞ্চ এ রায় দেন।
এর আগে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ ২১ নভেম্বর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি গ্রহণ শেষ করেন। সেদিন আদালত মামলা দুটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। আজ রায় ঘোষণা করা হল।
২০১৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলা দুটির নথিপত্র হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। এটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। কোনো ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে।
পাশাপাশি দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের জেল আপিল, নিয়মিত আপিল ও বিবিধ আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। সে অনুযায়ী আসামি পক্ষ আপিল করে।
গত ৩১ অক্টোবর বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ২০১৮ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ২০০১-২০০৬ আমলের বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও আসামি শেখ আবদুস সালাম ২০২১ সালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপির নেতা হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইনসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে ১১ জনকে দণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। এরপর ওই বছরই হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স আসে। পাশাপাশি দণ্ডিত কারাবন্দিরা আপিল দায়ের করেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ-সংক্রান্ত মামলা দুটির (হত্যা ও বিস্ফোরক) নতুন করে তদন্ত শুরু করে। ২০০৮ সালে ২২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে মামলার অধিকতর তদন্ত হয়। এরপর তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলার (হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা) রায় দেন। রায়ের পর একই বছর বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলা দুটির নথিপত্র হাইকোর্টে এসে পৌঁছে। পেপার বুক প্রস্তুত করাসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে মামলায় আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি সম্পন্ন হলো। এখন হাইকোর্ট রায়ের অপেক্ষায়।
এ মামলায় বিএনপি'র শীর্ষ নেতৃত্বকে সম্পৃক্ত করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে বারবার দাবি করে আসছিল দলটি।
চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন নগরীর কোতোয়ালি থানায়। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগ ১১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪শ’ থেকে ৫শ’ জনের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের করেছেন হত্যাকান্ডের শিকার আইনজীবী আলিফের বড়ভাই খানে আলম।
আজ বৃহস্পতিবার মামলাগুলোর বিষয়ে নিশ্চিত করে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে হত্যাকান্ডের শিকার সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন ও ভাই খানে আলম বাদী হয়ে নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলা দু’টি করেছেন।
হত্যা মামলার আসামিরা হলেন- চন্দন, আমান দাস, শ্রী শুভ কান্তি দাশ, বুজা, রনব, বিধান, বিকাশ, রমিত, রুমিত দাশ, নয়ন দাশ, গগন দাশ, বিশাল দাশ, ওমকার দাশ, বিশাল, রাজকাপুর, লালা, সামির, সোহেল দাশ, শিব কুমার, বিগলাল, পরাশ, শ্রী গণেশ, ওম দাশ, পপি, অজয়, দেবী চরণ, দেব, জয়, লালা, দুর্লভ দাশ ও রাজীব ভট্টাচার্য্য।
মামলার এজাহারে আলিফের বাবা অভিযোগ করেন, গত ২৬ নভেম্বর সকাল ১১টার দিকে রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন আদালত। আদেশ প্রদানের সাথে সাথে আসামির পক্ষের ইসকনপন্থী আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আদালতকে উদ্দেশ্য করে অশালীন ভাষায় বিভিন্ন আজেবাজে মন্তব্য করে এবং আদালতে হট্টগোল সৃষ্টি করে। তখন চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারী এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আসামিরা প্রিজন ভ্যানের সামনে অবস্থান করে দায়িত্বরত পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা প্রদান করে।
আরও উল্লেখ করা হয়, প্রিজন ভ্যানের সামনে থেকে বিক্ষুব্ধদের সরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিচার্জ করলে আদালত চত্বর ত্যাগের সময় মসজিদসহ আইনজীবী ও সরকারি গাড়ি ভাঙচুর করে ওরা। একইদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তার ছেলে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রকাশ আলিফ বাসায় যাওয়ার সময় তার মুখে দাঁড়ি দেখে আসামিরা তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এ সময় তারা বহিস্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নামে জয়ধ্বনী দেয়।
স্থানীয় লোকজন ও ছেলের সহকর্মীদের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত শুনে তিনি জেনেছেন-ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ইন্ধনে আসামিরা তার ছেলেকে হত্যা করেছে।
ছেলের দাফন-কাফন ও জানাজা নামাজ সম্পন্ন করে আত্মীয়-স্বজনের সাথে আলাপ-আলোচনা শেষে ঘটনার ভিডিও ও স্থিরচিত্র দেখে আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে থানায় গিয়ে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
এরআগে, পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় কোতোয়ালী থানায় ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো প্রায় ১৪শ’ জনকে আসামি করে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করে পুলিশ।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে নজিরবিহীন অনভিপ্রেত ঘটনা ও দেশের জেলা আদালতে সাম্প্রতিক সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এ উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।
পাশাপাশি আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং আদালতের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে দেশের প্রতিটি আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ, এজলাস, বিচারকদের বাসভবন, বিচারক, কর্মচারীসহ আদালত-সংশ্লিষ্ট সবার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য দেশের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক স্মারকে এ তথ্য জানা গেছে।
ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যের অভিযোগে বুধবার হাইকোর্ট বিভাগের একটি দ্বৈত বেঞ্চের নেতৃত্বদানকারী বিচারপতিকে বেঞ্চ থেকে নেমে যেতে বলেন একদল আইনজীবী। তখন দুই বিচারপতি বেঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার সময় তাদেরকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৭ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে যে নজিরবিহীন অনভিপ্রেত ঘটনাবলি সংঘটিত হয়েছে এবং একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণসহ দেশের জেলা আদালতগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সেসব বিষয় সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের প্রধান বিচারপতি।
সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের সই করা ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের আদালতগুলো যাতে বিচারপ্রার্থীদের নির্বিঘ্নে বিচার সেবা দিতে পারে, সে লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট সামগ্রিক বিষয়াবলি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এ মর্মে আশ্বস্ত করছে যে, সব প্রতিকূলতা ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সত্ত্বেও দেশের আদালতগুলোতে বিচারসেবা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। প্রধান বিচারপতি দেশের আদালতগুলোতে এ ধরনের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধ করতে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ : এদিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণসহ অধস্তন সব দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত বা ট্রাইব্যুনালে কর্মরত বিচারক, তাদের এজলাস ও বাসভবনের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বৃহস্পতিবার স্মারক জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই স্মারকে বলা হয়, রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি অঙ্গের মধ্যে বিচার বিভাগ অন্যতম। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ এবং আদালতের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে দেশের প্রত্যেক আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ, এজলাস, বিচারকদের বাসভবন, বিচারক, কর্মচারীসহ আদালত-সংশ্লিষ্ট সবার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রধান বিচারপতি দেশের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞার সই করা স্মারকের শেষাংশে বলা হয়, এ অবস্থায় দেশের প্রত্যেক আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ, এজলাস, বিচারকদের বাসভবন, বিচারকদের গাড়ি, বিচারক, কর্মচারীসহ আদালত সংশ্লিষ্ট সবার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
দেশের আটটি বিভাগের বিভিন্ন স্থানে থাকা অবৈধ ইটভাটাগুলো যাতে কার্যক্রম শুরু না করতে পারে, সে জন্য ৭ দিনের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিভাগীয় কমিশনারদের পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) এক রিট আবেদনের নির্দেশনার আলোকে বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে এইচআরপিবির আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আদালতের নির্দেশনার বিষয়টি অবহিত করে নির্দেশনা চান। মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে ২০২২ সালে জনস্বার্থে এইচআরপিবি একটি রিট আবেদন করে। ওই আবেদন শুনানি শেষে আদালত বিবাদীদের প্রতি রুল জারি করে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারগণ এখন পর্যন্ত পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এবং আদালতে কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে কোনো প্রতিবেদন দাখিল না করায় গতকাল আদালতে একটি আবেদন করি।’
আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ইট উৎপাদন ও ভাটা পরিচালনার মৌসুম। এই সময়ের মধ্যে সারা দেশে লাইসেন্সবিহীন অসংখ্য অবৈধ ইটভাটা তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে এবং করতে যাচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত হুমকি স্বরূপ।
অবৈধ ইটভাটাগুলো যাতে কার্যক্রম শুরু করতে না পারে, সে জন্য আদালতে আবেদনটি দাখিল করা হয় জানিয়ে মনজিল মোরসেদ বলেন, শুনানি শেষে আদালত এক সপ্তাহের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারগণকে নিজ নিজ এলাকার অবৈধ ইটভাটার মালিকরা যাতে তাদের কার্যক্রম শুরু না করতে পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এবং ওই কার্যক্রম সম্পর্কে ১৫ ডিসেম্বরের আগে তাদের পদক্ষেপ সম্পর্কে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারগণকে এ নির্দেশ পালন করতে বলা হয়। রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন মনজিল মোরসেদ, তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী সঞ্জয় মন্ডল ও সেলিম রেজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. তামিম।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তার ছেলে খন্দকার মাহবুব হোসেন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক লাইন ডিরেক্টর ডা. মাহবুবুর রহমানকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এর বিচারক আবুল কাশেমের আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেন।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর দুদকের উপপরিচালক লুৎফর রহমান ওই মামলাটি করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, পরস্পর যোগসাজশে আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ও বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পভুক্ত বিদেশে গমনেচ্ছু কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিমানের টিকিট সরবরাহের বিষয়ে প্রতারণা, জালিয়াতি ও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সাজানো টেন্ডারের মাধ্যমে নিজেরা লাভবান হন সরকারের ৪৮ লাখ ৫১ হাজার ৮০ টাকা ক্ষতি করে। আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
এর আগে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
মানহানীর অভিযোগে করা মামলায় আত্মসমর্পণ করে সাময়িক বরখাস্ত সহকারী কমিশনার তাপসী তাবাসসুম উর্মি জামিন পেয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান আহম্মেদ শুনানি শেষে এ জামিন মঞ্জুর করেন।
সকাল সাড়ে দশটায় তিনি আদালতে উপস্থিত হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে বাদীপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
প্রসঙ্গত, গত ৮ অক্টোবর শহীদ আবু সাঈদসহ অন্য শহীদদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মানহানির মামলার আবেদন করেন গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ।
এরপর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড এবং পর্যালোচনা শেষে ২৮ নভেম্বর তাকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সরকারের দায়িত্বশীল পদে থাকা সত্বেও গত ৫ অক্টোবর আসামি উর্মি শহীদ আবু সাঈদসহ ছাত্র-গণআন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ও এর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অবমাননাকর বক্তব্য ফেসবুক লিখেন।
যার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেফারেন্সের ভিত্তিতে সংবিধান সম্মতভাবে গঠিত একটি সরকার প্রধান সম্পর্কে বিষেদগার করা হয়েছে এবং সরকার উৎখাতের হুমকি দিয়ে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করা হয়েছে।
গত ৬ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। পরে ৭ অক্টোবর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে চাকরিবিধি অনুযায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার পক্ষ থেকে জানানো হয়।
বিগত ১৫ বছরে বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুমের একটি মামলায় রাঙ্গামাটি ট্রেনিং সেন্টারের ও র্যাব-২-এর সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) মহিউদ্দিন ফারুকী ও বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনকে আগামী ২ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে সদস্যের বিচারিক প্যানেল আজ এ আদেশ দেয়।
তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরে পরোয়ানা জারির আবেদন করে প্রসিকিউশন। প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ বাসসকে ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, 'আজ ট্রাইব্যুনালে তাদের প্রডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যুর আবেদন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল আগামী ২ ডিসেম্বর তাদের হাজির করতে নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।'
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন কেন্দ্র করে জুলাই-আগস্টে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে নতুন প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থা গঠিত হয়েছে। বিচারের জন্য আইন সংশোধন হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল ভবন মেরামতের কাজও শেষ পর্যায়ে। গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ, ১৪ দলের নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত গুম, হত্যা, গণহত্যাসহ একশত ২৫টির বেশি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা পড়েছে।
গত ১৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান হাইকোর্টের বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার। আর ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান হাইকোর্টের বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এর আগে চিফ প্রসিকিউটরসহ প্রসিকিউশন, তদন্ত সংস্থা নিয়োগ দেয়া হয়। গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনের পতন হয়।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামীলীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গনহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘঠিত করে। জাজ্জ¦ল্যমান এ অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে।
গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবি ঘিরে সংঘর্ষে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এসব মামলায় ১৪৭৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর কোতোয়ালী থানায় মামলা তিনটি দায়ের করা হয় বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ।
কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। আসামিরা সবাই ইসকন সদস্য এবং চিন্ময় দাসের অনুসারী।’
এদিকে এখনও আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানা যায়।
পুলিশ জানায়, এখন পর্যন্ত সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ২০ জন পুলিশের ওপর হামলা করেছে এবং ৭ জন আইনজীবী আলিফ হত্যায় জড়িত।
নগর পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভরতদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের ১২ জন সদস্য আহত হন। এ ছাড়া, ভাঙচুর করা হয় পুলিশের ব্যবহৃত একটি গাড়ি।
জানা গেছে, নগরের কোতোয়ালী থানার আদালত প্রাঙ্গণ, রঙ্গম সিনেমা হল এবং কোতোয়ালী মোড়- এই তিন এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা এবং গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। পৃথক তিন ঘটনায় পৃথকভাবে কোতোয়ালী থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে।
আদালত প্রাঙ্গণে হামলার ঘটনায় ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৬শ থেকে ৭শ জন, রঙ্গম সিনেমা হলের সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় ১৪ জনকে এজাহারনামীয় করে অজ্ঞাত ৩শ থেকে ৪শ জন এবং কোতোয়ালী মোড়ের ঘটনায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আড়াইশ থেকে ৩শ জনকে আসামি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ বুধবার বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন, আইনজীবী শিশির মনির।
তিনি বলেন, বাবুল আক্তার অন্য মামলায় আগে থেকেই জামিনে আছেন। আজ স্ত্রী হত্যা মামলায় জামিন পাওয়ায় তার মুক্তিতে বাধা নেই।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, বাবুল আক্তার তিন বছর ৭ মাস ধরে কারাগারে আছেন, এই বিবেচনায় আদালত তাকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছেন। একইসঙ্গে বাবুল আক্তারকে কেন স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন।
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত বুধবার (১৪ আগস্ট) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে জামিন আবেদন করেছিলেন এসপি বাবুল আক্তার। পরে ১৮ আগস্ট বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন।
গত বছরের ১৩ মার্চ বাবুল আক্তারসহ সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালত।
আসামিরা হলেন, বাবুল আক্তার, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা ও খায়রুল ইসলাম।
অভিযোগ গঠনের দিন চট্টগ্রাম মহানগর পিপি মো. আবদুর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, দীর্ঘদিন পরিকল্পনা করে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে আসামি বাবুল আক্তার হত্যা করেন। বাবুল আক্তার যখন ঢাকায় ছিলেন তখন সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে ৩০২, ২০১ এবং ১০৯ ধারায় চার্জ গঠন করা হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ সাত জনকে আসামি করে আদালতে ২ হাজার ৮৪ পৃষ্ঠার চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ অভিযোগপত্র গত ১০ অক্টোবর গ্রহণ করেন আদালত।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন নগরের জিইসি মোড় এলাকায় খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় মামলার বাদী ছিলেন বাবুল আক্তার। ঘটনার কয়েক দিন পরেই মামলার তদন্তে নতুন মোড় নেয়। একপর্যায়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন। তদন্তের পর সেই মামলায় আসামি হন বাবুল আক্তার।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ বুধবার খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একই মামলায় খালেদা জিয়াসহ তিনজনকে দেওয়া নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করেছেন হাইকোর্ট।
অজ্ঞাত উৎস থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তহবিল সংগ্রহের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ, অ্যাডভোকেট আজমল হোসেন খোকন, ব্যারিস্টার সানজিদ সিদ্দিকী। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আসিফ হোসাইন।
আদালতে শুনানি শেষে আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পেয়েছেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজার বিরুদ্ধে গত ২০ নভেম্বর আপিল শুনানি শুরু হয়। তার আগে ৩ নভেম্বর এই মামলায় খালেদা জিয়ার সাজার বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য নিজ খরচে পেপারবুক তৈরির অনুমতি দেন হাইকোর্ট।
২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অন্য তিন আসামিকেও সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছিলেন আদালত। খালেদা জিয়াসহ প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া ট্রাস্টের নামে কেনা কাকরাইলে ৪২ কাঠা জমি বাজেয়াপ্ত করে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়া।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জালাল উদ্দীনকে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ ১২৯ নামে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেলাল হোসেনের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী মলি। বিচারক বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মুগদা থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
রোববার মুগদা থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ মামলার উল্লেখযোগ্য অন্যান্য আসামিরা হলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নুর তাপস, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হক নওফেল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, সাঈদ খোকন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কামরুল ইসলাম, আইন সম্পাদক কাজী নজীবুল্লাহ হিরু, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলামসহ ১২৯ জন।
মামলার এজাহার বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর মুগদা থানার মানিকনগর এলাকায় গত ২০ জুলাই সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ছাত্রজনতার সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফুটপাতে ছানা ও মাঠা বিক্রি করা অবস্থায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান জালাল উদ্দীন। পরে তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে তাকে দাফন করা হয়।
গাজীপুরের জয়দেবপুর থানা পুলিশের করা একটি বিস্ফোরক মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩২ জনকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
রোববার জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৩ গাজীপুরের বিচারক মো. বাহাউদ্দিন কাজী দীর্ঘ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সদর উপজেলার তৎকালীন হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি আওতাধীন মনিপুরের খাসপাড়া এলাকায় ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে একটি পার্কিং করা বাসে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ওই এলাকার মোতালেব মেম্বারকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০-৪৫ জনের বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানার এসআই দিলীপ চন্দ্র সরকার বাদী হয়ে মামলাটি করেন। পরে একই বছরের আগস্টে এসআই এমদাদুল হক তদন্ত করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং সাবেক মেয়র ও প্রতিমন্ত্রী মৃত অধ্যাপক এমএ মান্নানের ছেলে মনজুরুল করিম রনিকে সংযুক্ত করে ৩২ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। পরে তা আদালত গ্রহণ করেন। মামলাটি দীর্ঘ শুনানি শেষে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় রোববার সব আসামিকে ওই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আদালতে শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষের কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। তবে বিবাদীপক্ষের ড. সহিদুজ্জামান, মেহেদী হাসান এলিস, আনোয়ার হোসেন, নাসির উদ্দিন, শফিকুল আলম মিলুসহ বিপুল আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত বুধবার (২০ নভেম্বর) গাজীপুরের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক পাভেল সুইট তারেক রহমানসহ ৬০ জনকে মানহানির একটি মামলা থেকে খালাস দিয়েছিলেন। মামলাটি ২০১৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে মন্তব্য করার অভিযোগ এনে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে তৎকালীন গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম দ্বীপ দায়ের করেন।