ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়ে খুন হয়েছেন না জীবিত আছেন সে বিষয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজাল। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের কাছ থেকে তিনি নিখোঁজের তথ্য থাকলেও তার খুন হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ভারতে গিয়ে ৮ দিন নিখোঁজ থাকার পর কলকাতার নিউ টাউনের বিলাসবহুল আবাসন সঞ্জিভা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে (বিইউ) ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এই এমপির হত্যার খবর পাওয়া গেল।
এদিকে কলকাতার নিউ টাউন থানায় হত্যার বিষয়ে মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সংশ্লিষ্ট পুলিশ। তারা বলছে, মরদেহ পাওয়া যায়নি, কিন্তু রক্তের দাগ পাওয়া গেছে। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এ রক্ত কার? মরদেহ কোথায় গেল? এখন কী অবস্থায় আছেন এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার? তিনি জীবিত না মৃত?
এমপি আনোয়ারুল আজিম কলকাতায় তার যে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন, সেই গোপাল বিশ্বাস বুধবার সকালে জানিয়েছেন, তিনি পুলিশের কাছ থেকে এমপি আনার হত্যার খবর পেয়েছেন বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন।
প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় পুলিশের ধারণা, এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে। তবে তাকে কে বা কারা, কেন খুন করেছে; এ বিষয়ে এখনো স্পষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি। এরই মধ্যে নিউ টাউন থানার পুলিশ ও বিধান নগর গোয়েন্দা শাখার পুলিশ এবং এইচডিএফ কর্মকর্তারা তদন্তে নেমেছেন। ওই আবাসিক এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন তারা।
গতকাল রাত পৌনে ১০টার দিকে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে হত্যার বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অফিসিয়ালি কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন জানিয়েছে, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে অফিশিয়ালি বা আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য তাদের জানানো হয়নি। তদন্তকারী সংশ্লিষ্টরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখে এ বিষয়ে কাজ করছেন।
এদিকে, বুধবার আনোয়ারুল আজিম হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ধানমন্ডির নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, এমপি আনোয়ারুল আজিমকে বাংলাদেশিরাই হত্যা করেছে। কারা তাকে খুন করেছে, খুনের মোটিভ কী? তা জানতে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ সময় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান ও ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এমপি আনোয়ারুল আজিমকে কলকাতার একটি বাসায় পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। এ বিষয়ে ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে।
আনোয়ারুল আজিমকে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে ধরা হয়েছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আরও কয়েকজনকে ধরার চেষ্টায় আছি। তাকে (আনোয়ারুল আজিম) হত্যা করা হয়েছে। এখানে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরবে, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। ভারতের কেউ এখানে জড়িত নন। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, তাতে আমাদের দেশের মানুষই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যেসব তথ্য আছে, তা তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করছি না। তদন্ত শেষ হলে জানানো হবে, তিনি কেন খুন হয়েছেন, কে কে খুন করেছে, কী ধরনের অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মরদেহ এখনো আসেনি। দুই দেশের পুলিশ তদন্ত করছে। ভারতের পুলিশ আমাদের জানিয়েছে যে, তিনি খুন হয়েছেন, এটা নিশ্চিত।
এ ঘটনায় আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘তদন্ত চলছে। যারা এই খুনের সঙ্গে জড়িত, তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল, আমরা পরে সেগুলো প্রকাশ করব।’
এদিকে, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলা করেছেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। সন্ধ্যায় শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আহাদ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে (মামলা নম্বর ৪২)। তদন্ত করে আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হকও মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এমপি আনোয়ারুল আজিম সংসদ ভবন এলাকায় থাকতেন। সেখান থেকেই তিনি ভারতে গেছেন। এ কারণে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরামর্শে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন তার মেয়ে ডরিন।
অন্যদিকে বুধবার সকালে রাজধানীর বাড্ডায় এক অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভারতে গিয়ে নিখোঁজ বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়েছি গণমাধ্যম সূত্রে। তবে ইন্ডিয়ান বা কলকাতা পুলিশ আমাদের এখনো কিছু নিশ্চিত করেনি। তিনি জীবিত নাকি মৃত তা এখনো অফিশিয়ালি নিশ্চিত নই। আমরা যৌথভাবে কাজ করছি। এ ঘটনায় বাংলাদেশের পুলিশ কলকাতার পুলিশের সঙ্গে কাজ করছে। তারা যোগাযোগ রাখছে। কোনো অগ্রগতি থাকলে জানানো হবে।
এমপি আনার চিকিৎসা করাতে গত ১২ মে দুপুরে দর্শনা-গেদে সীমান্ত হয়ে ভারতের কলকাতায় যান। প্রথম দুই দিন যোগাযোগ থাকলেও ১৪ মে থেকে পরিবারের সদস্যরা তার খোঁজ পাচ্ছিলেন না। পরে আনোয়ারুলের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। পরে ভারতের দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও কলকাতায় বাংলাদেশ উপ- হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপর থেকে ওই সংসদ সদস্যের খোঁজে তদন্ত শুরু করে কলকাতা পুলিশ। সংস্থাটি জানায়, দিল্লি ও কলকাতা হাইকমিশনের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পরই তার খোঁজে তৎপরতা শুরু করে পুলিশ।
জানা গেছে, এমপি আনার কলকাতায় যাওয়ার পর শহরের অদূরে ব্যারাকপুর এলাকার বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনের স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে পৌঁছান তিনি। পরে ১৪ মে তিনি ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন বলে গোপালের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় লিখিত নিখোঁজ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন গোপাল বিশ্বাস।
জিডির তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারুল আজিম বের হয়ে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ফেরেননি। আনোয়ারুল আজিমের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে গোপালকে একটি বার্তা পাঠিয়ে জানানো হয়, বিশেষ কাজে তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। সেখানে পৌঁছে তিনি ফোন করে গোপাল বিশ্বাসকে জানাবেন, গোপাল বিশ্বাসের ফোন করার দরকার নেই। পরে ১৫ মে স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ২১ মিনিটে আনোয়ারুল আজিমের নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে আরেকটি বার্তা আসে। তাতে আনোয়ারুল আজিমের দিল্লি পৌঁছানোর কথা জানিয়ে বলা হয়, ‘আমার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন, ফোন করার দরকার নেই।’ আনোয়ারুল আজিমের নম্বর থেকে একই বার্তা বাংলাদেশে তার বাড়ির লোকজন এবং ব্যক্তিগত সহকারীকে (পিএস) পাঠানো হয়।
পরে ১৬ মে আনোয়ারুলের নম্বর থেকে তার ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফের নম্বরে একটি ফোন আসে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত সহকারী ফোন ধরতে পারেননি। পরে আনোয়ারুল আজিমকে তিনি (ব্যক্তিগত সহকারী) ফোন করেও আর যোগাযোগ করতে পারেননি। পরদিন ১৭ মে আনোয়ারুলের মেয়ে গোপাল বিশ্বাসকে ফোন করে জানান, তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তারপর তিনি আনোয়ারুলের পরিচিতজনের ফোন করেন। কিন্তু তার কোনো সন্ধান মেলেনি।
এ ছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার বিষয়ে জানতে নিবিড়ভাবে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
গতকাল বুধবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘নিহত এমপির মেয়ে ডরিন আমাদের কাছে এসেছেন। তার বাবা বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন, এরপর আর তাকে পাওয়া যায়নি। সেখানে কী ঘটেছে, এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করার জন্য এসেছেন ডরিন। মামলা কীভাবে কোথায় করবেন। তার বাবা সংসদ ভবন এলাকায় থাকতেন। সেখান থেকে তিনি ভারতে গেছেন। আমরা তাকে বলেছি, শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করতে। মামলা করতে আমাদের কর্মকর্তারা তাকে সহযোগিতা করছেন। মামলাটি আজকের মধ্যেই হবে।’
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এই ঘটনাটি মর্মান্তিক। তিনি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ এলাকার জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি। আমরা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। তিনি তিনবারের সংসদ সদস্য। আমরা নিবিড়ভাবে ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কয়েকজন আমাদের কাছে আছে, তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে আমরা সবকিছু বলতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্যকে বাংলাদেশি অপরাধীরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি যারা আছে, তাদের প্রত্যেককে আমরা আইনের আওতায় আনব। বিচারের মুখোমুখি করব। তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছি না।’
কী কারণে হত্যার ঘটনা ঘটেছে, তা জানা গেছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘আসলে এটা কী কারণে ঘটেছে জানতে আমাদের তদন্ত চলছে। এটা পারিবারিক নাকি আর্থিক, অথবা এলাকায় কোনো দুর্বৃত্ত দমন করার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে কি না, সবকিছু আমরা তদন্তের আওতায় আনব।’
আনোয়ারুল আজিম ভারতে গিয়ে নিখোঁজের ঘটনায় তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একটি পুলিশ সূত্র জানায়, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করা হয়েছে। আটক হওয়া ওই দুই ব্যক্তি সম্প্রতি কলকাতা থেকে ফিরেছেন। দুইজনের মধ্যে একজনের নাম আমানুল্লাহ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ‘গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগের একটি দল কেরানীগঞ্জ থেকে শুরুতে আমানুল্লাহ নামের একজনকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যগুলো ভারতের একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে জানালে তারা জানায়, আনোয়ারুল আজিম খুন হয়েছেন।’
এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় আনোয়ারুল আজিমের মরদেহ উদ্ধার না হলেও তাকে হত্যার প্রমাণ পেয়েছে বলে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ জানিয়েছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের মহাপরিদর্শক (সিআইডি) অখিলেশ চতুর্বেদী বুধবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের মরদেহ এখনো পায়নি পুলিশ। তবে কিছু প্রমাণের ভিত্তিতে মনে করা হচ্ছে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত হাতে নিয়েছে বলে জানান এই সিআইডি কর্মকর্তা। এক প্রশ্নের জবাবে অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, আমরা কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছি, যার ভিত্তিতে মনে করা হচ্ছে যে ওনাকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পূর্ব কলকাতার নিউ টাউন অঞ্চলে যে ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল আজিম উঠেছিলেন, সেটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি দপ্তরের (এক্সাইজ) কর্মকর্তা সন্দীপ কুমার রায়ের। তার কাছ থেকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন আখতারুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি।
আখতারুজ্জামানই ওই ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল আজিমের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে কয়েকজন ব্যক্তি এই ফ্ল্যাটে এসেছিলেন। কিন্তু তারা কবে বেরিয়ে গেলেন, সে বিষয়ে তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলতে পারছি না। এটুকু বোঝা যাচ্ছে যে, ১৩ মে উনি এখানে এসেছিলেন।
চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্য বন্ধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) বাহারুল আলম।
শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে ঢাকা জেলা পুলিশ লাইন, রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স (আরআরএফ) ও ট্রাফিক এন্ড ড্রাইভিং স্কুল (টিডিএস) পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
চাঁদাবাজ ও আধিপত্য বিস্তারকারীদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেবেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, সারাদেশে বিশেষ করে ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের মাধ্যমে চাঁদাবাজ ও আধিপত্য বিস্তারকারীদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
তিনি বলেন, ঢাকায় এলাকাভিত্তিক গোয়েন্দা পুলিশকে দায়িত্ব দিয়েছি, যাদের রেপুটেশন খারাপ এবং যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে তাদের তালিকা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে যাদের রেপুটেশন খারাপ তাদের বিরুদ্ধে প্রিভেনটিভ ডিটেনশন এবং যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আইজিপি বলেন, সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা দরকার।
তিনি আরও বলেন, সমাজব্যবস্থা দীর্ঘ ১৫ বছরে এত জটিল হয়েছে, এই কয়েক মাসে সবকিছু সমাধান করে বের হয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাস করে এ দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতিসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের ডিজি। ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’
‘গত ২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানের ওপর মব ভায়োলেন্সের অযাচিত ঘটনায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সামনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘এ ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি, আর পুরো বিষয়টি দেখছে ডিএমপির তদন্ত বিভাগ।’
র্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে দ্রুততম সময়ে বিচার শেষ করা হবে।
উপদেষ্টা শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
তিনি আরো বলেন, এই পাশবিক হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে এবং ধারা ১০-এর অধীনে দ্রুততম সময়ে বিচার নিশ্চিত করা হবে।
গত বুধবার রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯)। হত্যার আগে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও ইট-পাথরের আঘাতে মাথা ও শরীর থেঁতলে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ, মামলার এজাহার, নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে হত্যাকাণ্ডের এমন বর্ণনা উঠে এসেছে।
মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনের ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ চাঁদাবাজি। নিহত লাল চাঁদ একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
এদিকে, অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি। পাশাপাশি ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে এ আদেশ দেন। আদেশ প্রদানকারী ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
অভিযোগ গঠনের এ আদেশের মধ্য দিয়ে চব্বিশের মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রথমবারের মতো শেখ হাসিনাসহ এ মামলার অপর আসামিদের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।
ট্র্যাইব্যুনালে এ মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম শুনানি করেন। শুনানিতে অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, শেখ হাসিনার পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এছাড়া এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে ট্র্যাইব্যুনালে হাজির থাকা আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
গত ১৬ জুন ট্র্যাইব্যুনাল-১ পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে হাজির হতে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন এবং পরদিন দুটি পত্রিকায় শেখ হাসিনা ও কামালকে সাত দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তবে বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরেও পলাতক দুই আসামি ট্র্যাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী দিয়ে এই মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন।
এরপর প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর প্রার্থনা করেন। অন্যদিকে, হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন আসামিদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানির পর অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশের জন্য ১০ জুলাই দিন ধার্য করেন ট্র্যাইব্যুনাল-১।
জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫ টি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন।
সেদিন ট্র্যাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
এই মামলা ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরের গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। জাজ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বরখাস্ত হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জ্যেষ্ঠতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বুধবার (৯ জুলাই) বিচারপতি রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
তিন বছর আগে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। কোনো ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়াই কোনো কর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণ-সংক্রান্ত দুদক কর্মচারী বিধিমালার ৫৪(২) বিধির বৈধতা নিয়ে ও চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়ে একই বছরের ১৩ মার্চ শরীফ রিট করেন।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক পদ থেকে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বেতন, সব সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয় রুলে। দুদকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
রুলের ওপর গতকাল মঙ্গলবার শুনানি শেষে আদালত আজ রায়ের জন্য দিন রেখেছিলেন। রুল যথাযথ (অ্যাবসোলিউট) ঘোষণা করে আজ রায় দেওয়া হলো।
রায়ের সময় শরীফ উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালতে শরীফ উদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দীন দোলন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ ইশতিয়াক। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আসিফ হাসান।
রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দীন দোলন বলেন, শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। জ্যেষ্ঠতা ও সব সুযোগ-সুবিধাসহ তাঁকে চাকরিতে ৩০ দিনের মধ্যে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, রায়ের বিষয়টি দুদককে জানানো হবে। আপিল করবে কি না, সে বিষয়ে দুদক সিদ্ধান্ত নেবে।
নিজেদের রাজকীয় জীবনযাপন আর মাদকের অর্থ যোগাতে অনলাইনে প্রতারণায় নামেন তারা। লোভনীয় প্রতারণার জাল ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে করেন শত শত পরিবারকে নিঃস্ব। অবশেষে ধরা পড়লেন নড়াইল জেলা ডিবি পুলিশের হাতে। কেবল বিলাসী জীবনই না, তাদের রয়েছে অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মও।
সোমবার (৭ জুলাই) কালিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর ও যাদবপুরে আটঘণ্টা অভিযান চালিয়ে এই প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা ৬টি মোবাইল ফোন ও সিম জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতার হওয়া আসামিরা হলেন, উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের শুকুর আলী মুন্সির ছেলে মুসাব্বির মুন্সি ছিপাতুল্যা (২৮), যাদবপুর গ্রামের শেখ বাহার উদ্দিনের দুই ছেলে নাজমুল হুসাইন (৩১) ও বাপ্পি হাসান অভি (২৭) এবং একই গ্রামের আফসার মীনার ছেলে রনি মীনা (৪১)।
ডিবি জানায়, অনলাইনে চমকপ্রদসব বিজ্ঞাপনের পরতে পরতে বুনে রাখা হয় প্রতারণার জাল। আর সেই জালে পা দিলেই নিঃস্ব হয় মানুষ। এমনই অনলাইন প্রতারক চক্রের সুচতুর সদস্যদের ধরতে অভিযানে নামে তারা।
দুটি মামলার সূত্র ধরে সোমবার দিনের আলো ফুটে ওঠার আগেই কালিয়া উপজেলার রঘুনাথপুরে হানা দেয় পুলিশ। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় মুসাব্বির মুন্সি ছিপাতুল্যাকে।
‘পরের গন্তব্য ছিল পার্শ্ববর্তী গ্রাম যাদবপুরে। নবনির্মিত একতলা ভবনে তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দুই ভাই নাজমুল হুসাইন ও বাপ্পি হাসান অভি। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সব প্রমাণ সরিয়ে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করেন তাদের স্ত্রীরা। প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, সিমসহ গ্রেফতার করা হয় দুই ভাইকে। একই এলাকা থেকে রনি মীনা নামে আরও এক অনলাইন প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়,’ জানিয়েছে ডিবি।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা জানান, অতিরিক্ত টাকা উপার্জনের আশায় অনলাইন প্রতারণাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে কালিয়া উপজেলার যাদবপুর, রঘুনাথপুর, চাঁদপুর, মহিষখোলাসহ আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের হাজারো পরিবার।
তারা আরও জানান, প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া অর্থ পারিবারিক প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি নিজেদের বিলাসী জীবন, মাদক ও অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মে খরচ করেন তারা।
প্রতারণার শিকার মাদারীপুরের নয়ন ঠিকাদার বলেন, ‘মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপন দেখে প্রথমে ৩০০ টাকা দিই। পরে তাদের ফাঁদে পড়ে ৩ হাজার টাকার ফোনের জন্য ২১ হাজার টাকা দিছি। আমার অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য জমানো টাকা ছিল ওটা। কান্নাকাটি করছি, অনেকবার কল দিছি তাদের; আমার ফোন, টাকা–কোনোটাই দেইনি তারা।’
আরেক ভুক্তভোগী আহাদ বলেন, ‘একটা মোটরসাইকেলের জন্য কয়েক দফায় ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা তাদের দিছি। গাড়ি দেয়ার কথা বলে আমাকে এক মাস ধরে হয়রানি করছে। বাংলাদেশের আইনের বাইরেও যদি কোনো বিচার থাকে–প্রতারক চক্রের যেন কঠোর শাস্তি হয়।’
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা পুলিশের অভিযানে অনলাইন প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ ও প্রতারণা সংক্রান্ত মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রথমে ফেসবুক পেজে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেয়। পরে পেজগুলো বুস্টিংয়ের মাধ্যমে বেশি মানুষের কাছে তাদের বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেয়। আর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোম্পানির এজেন্টদের মাধ্যমে চড়া দামে অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম কিনে সেগুলো দিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে লেনদেন করে।
নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে এসব অনলাইন প্রতারক চক্র নির্মূলের আশ্বাসের পাশাপাশি অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন।
জঙ্গি সন্দেহে তুলে নেওয়ার সাড়ে ৫ বছর পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) দুই শিক্ষার্থী নুর মোহাম্মাদ অনিক এবং মোজাহিদুল ইসলাম।
সোমবার (৭ জুলাই) রাতে খুলনা জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তারা। এর আগে গত সপ্তাহে উচ্চ আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
খুবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিমসহ বর্তমান প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অবশেষে বিস্ফোরক মামলাসহ ছয়টি মামলায় প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তি মিললো দুই শিক্ষার্থী অনিক ও মোজাহিদুলের।
জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে করা মামলায় এই দুই শিক্ষার্থীর ৩০ বছরের সাজা হয়েছিল। তবে ছাত-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ার পর কারা অভ্যন্তরে তারা অনশন শুরু করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তাদের আইনি সহায়তা দেওয়া শুরু করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট বেগম আক্তার জাহান রুকু। মামলা পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল সেল।
সহপাঠীরা জানান, ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি ওই দুই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ১৭ দিন অজানা স্থানে রেখে তাদের নির্যাতন করা হয়। পরে ২৫ জানুয়ারি তাদের বিস্ফোরক দ্রব্যসহ গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। সেদিনই তাদের খুলনার কৃষক লীগ কার্যালয় ও আড়ংঘাটা থানার গাড়ির গ্যারেজে বোমা হামলা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর একে একে তাদের বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা করে পুলিশ। সেই থেকে গত পাঁচ বছর তারা কারাবন্দি ছিলেন।
অভ্যুত্থানের পরে তাদের মুক্তির দাবিতে খুবি ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করেন সহপাঠী, রুমমেট, শিক্ষক ও পরিবারের সদস্যরা।
গ্রেপ্তারের সময় অনিক মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে এবং রাফি পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনে অধ্যয়নরত ছিলেন। তাদের গ্রেপ্তারের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ক্যাম্পাসে একাধিকবার মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন সহপাঠী, শিক্ষক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট আকতার জাহান রুকু বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা দেওয়া হয়। এর মধ্যে দুটি মামলায় খালাস, দুটিতে জামিন এবং সোনাডাঙ্গা থানার দুটি মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। সাজা হওয়া দুটি মামলায় উচ্চ আদালতে জামিন চাওয়া হলে হাইকোর্ট সেটি মঞ্জুর করেন।’
তিনি আরও জানান, জামিন আদেশ আশুরার ছুটির কারণে কারাগারে পৌঁছাতে দেরি হয়। সোমবার আদেশ পৌঁছানোর পর সন্ধ্যায় তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।
উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম জানান, তাদের অনশনের বিষয়টি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমন্বয়কের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। পরবর্তীতে কারাবন্দি দুই শিক্ষার্থীর জামিনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে লিগ্যাল সেলের পরিচালক এস এম শাকিল রহমানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর জমি ও প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
এছাড়া তার নামে একটি ব্যাংক হিসাব, একটি ক্রেডিট কার্ড ও ৫ লাখ টাকার একটি সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
সম্পত্তি সমুহের রয়েছে- গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৪ শতক জমি ও রাজধানীর উত্তরায় রাজউক থেকে বরাদ্দপ্রাত্ত ৩ কাঠার একটি প্লট।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ের দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রাথমিক অনুসন্ধানে ৫৫ লাখ ৩২ হাজার টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও নিজ ভোগ দখলে রাখায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি তদন্তের নিমিত্তে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। আসামির মালিকানাধীন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদসমূহ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার প্রচেষ্টা করছেন। আসামির মালিকানাধীন স্থাবর ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদসমূহ অবরুদ্ধ করা না হলে বিচারকালে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না। এতে রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অবিলম্বে আসামির মালিকানাধীন স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
চব্বিশের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং গ্রেফতার সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে আগামী ১০ জুলাই।
এই মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে প্রসিকিউশন ও আসামি পক্ষের শুনানি শেষে সোমবার বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এদিন ধার্য করেন।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আবেদন জানান। অন্যদিকে, পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। সেসময় গ্রেফতার আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। তার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন যায়েদ বিন আমজাদ।
গত ১৬ জুন ট্রাইব্যুনাল-১ পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে হাজির হতে বাংলা ও ইংরেজি দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়। পরদিন দুটি পত্রিকায় তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এরপরও পলাতক আসামিরা হাজির না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল-১ জুলাই অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানি শুরু করেন।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গ্রহণ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। পাশাপাশি মামলায় অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধেও মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) দায়ের হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
এর বাইরেও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরো দুটি মামলা রয়েছে। একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্যটি রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছে।
গত জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় ক্যাডার, সরকারের অনুগত প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। এসব অপরাধের বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
রাজধানীর বনানী থানার অস্ত্র আইনের মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার একটি আদালত।
আজ তাকে কারাগার থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।
এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
অপর দিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুল ইসলাম তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বছরের ২৫ আগস্ট জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি হতে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য প্রদত্ত সকল আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। স্থগিতকৃত লাইসেন্সভুক্ত আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দানের নির্দেশ প্রদান করা হয়। এ তারিখের মধ্যে কোন অস্ত্র ও গোলাবারুদ থানায় জমা না দেওয়া হলে, তা অবৈধ অস্ত্র হিসেবে গণ্য করে অস্ত্র আইনে মামলা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
তবে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসামি আনিসুল হক তার একটি আগ্নেয়াস্ত্র নিজে অথবা অন্য কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে বনানী থানায় বা অন্য কোন থানায় জমা দিয়েছেন কি-না, সে বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তিনি থানাকে অবহিতও করেন নাই। তার অস্ত্রের লাইসেন্সে উল্লেখিত ঠিকানায় উপস্থিত হয়ে বাসায় কাউকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় গত ২৪ মে অস্ত্র আইনের ১৯(১) ধারায় আনিসুল হকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন বনানী থানার এসআই (নিরস্ত্র) মো. জানে আলম দুলাল।
উল্লেখ, গত ১৩ আগস্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নৌপথে পলায়নরত অবস্থায় রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয়।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠা সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে পৃথক ছয় মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১শ’ জনকে আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
গত ৩ জুলাই ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের সই করা এই গেজেট বিজিপ্রেস (বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয়) প্রকাশ করে।
গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, তফসিল বর্ণিত আসামিদেরকে জানানো যাচ্ছে যে, যেহেতু, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রহিয়াছে। যেহেতু এই কোর্ট বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে যে, তারা গ্রেফতার ও বিচারে সোপর্দকরণ এড়াইবার জন্য আত্মগোপন করিয়াছেন এবং তাহাদের আশু গ্রেফতারের সম্ভাবনা নাই।
সেহেতু ১৯৫৮ সনের ক্রিমিনাল 'ল' এমেন্ডমেন্ট এ্যাক্ট ৬(১৩) ধারা বিধান অনুসারে তফসিল বর্ণিত মামলায় তাহাদেরকে আগামী ধার্য তারিখের মধ্যে এই কোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। অন্যথায় আপনাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার কার্য সম্পন্ন করা হবে।
এর আগে ১ জুলাই বিচারক গেজেট প্রকাশের আদেশ দেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব। মামলাগুলোর পরবর্তী শুনানি ২০ জুলাই।
বিষয়টি বাসস’কে নিশ্চিত করেছেন দুদক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম।
তিনি বলেছেন, ‘প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির ছয়টি মামলায় গেজেট প্রকাশের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বিজি প্রেস থেকে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। আগামী ২০ জুলাই মামলা গুলোর তারিখ ধার্য হয়েছে। এ তারিখের মধ্যে আসামিরা আদালতে হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে।’
প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, টিউলিপ সিদ্দিক, পুতুল ও আজমিনা সিদ্দিকসহ মোট ১০০ জনকে আসামি করে ছয়টি মামলা দায়ের করা হয় ১২ থেকে ১৪ জানুয়ারির মধ্যে।
মামলাগুলো দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন, সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া এবং এস এম রাশেদুল হাসান। তদন্ত শেষে ১০ মার্চ চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
১৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনাসহ ৮ জনকে আসামি করেন উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন। তদন্তে নতুন ৪ জন যুক্ত হয়ে চার্জশিটে আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ১২। তদন্ত করেন সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।
একইদিন সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে ২ জন যুক্ত হয়ে চার্জশিটে আসামি হন ১৭ জন।
১৩ জানুয়ারি উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন শেখ রেহানাকে প্রধান আসামি করে শেখ হাসিনা ও টিউলিপসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে আরও দুইজন সহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন আফনান জান্নাত কেয়া।
আজমিনা সিদ্দিককে প্রধান আসামি করে ১৩ জানুয়ারি সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া শেখ হাসিনা ও টিউলিপসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে আরও দুইজন যুক্ত হয়ে চার্জশিটে আসামি হন ১৮ জন।
একইদিন সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, টিউলিপ ও শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে আরও দুইজন যুক্ত হয়ে চার্জশিট দেওয়া হয় ১৮ জনের নামে।
শেষে ১২ জানুয়ারি আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে শেখ হাসিনা ও পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে আরও দুইজন যুক্ত হয়ে চার্জশিট দেন মোট ১৮ জনের নামে। এই মামলায় সাক্ষী রাখা হয়েছে ১৬ জনকে।
চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ জুলাই মাসের শেষে কিংবা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রসিকিউসন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাই মাসের শেষের দিকে কিংবা আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে শেখ হাসিনার মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে বলে আমরা প্রসিকিউসনের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করছি।’
এদিকে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার পলাতক আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারের মুখোমুখী করতে ট্রাইব্যুনালে এরইমধ্যে আর্জি জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর।
গত ১ জুলাই বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ অভিযোগ গঠন বিষয়ক শুনানিতে বিচারের এই আর্জি জানিয়ে চিফ প্রসিকিউটর আসামিদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ তুলে ধরেন। এসময় তিনি ট্র্যাইব্যুনালকে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সারা বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে সর্বত্র অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। পরিমাণে, সংখ্যায় এবং স্থানের ব্যপকতায় এই অপরাধ ছিল বিস্তৃত-ব্যাপক। আর এই অপরাধ ছিল সিস্টেমেটিক (পদ্ধতিগত)। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নির্দেশ এসেছে এবং নির্দেশের চেইন অব কমান্ড অনুসারে বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুলিশ এবং অন্যান্য সহযোগী বাহিনী সব জায়গায় একই পদ্ধতিতে অপরাধ সংঘটন করেছে। এছাড়া সারা বাংলাদেশের সর্বত্র একই পদ্ধতিতে প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং যে অপরাধ বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে এবং যে অভিযোগগুলো আমরা দিয়েছি পুরোটাই ছিল বিস্তৃত এবং পদ্ধতিগত, যা মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে প্রমাণ করে। ফলে আমাদের সবিনয় প্রার্থনা হচ্ছে, এই মামলায় যে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো এনেছি, তার ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করে তাদের বিচারের মুখোমুখী করা হোক।’
চিফ প্রসিকিউটরের এই শুনানির পর শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন দুই সপ্তাহ সময় চাইলে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ অভিযোগ গঠন বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী সোমবার দিন ধার্য রয়েছে।
এসময় ট্র্যাইব্যুনালে হাজির ছিলেন এই মামলায় গ্রেফতারকৃত পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল- মামুন। তার পক্ষে ট্র্যাইব্যুনালে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ। অভিযোগ গঠন বিষয়ক সেদিনের শুনানি ট্র্যাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে সরাসরি সম্প্রচার করে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)।
গত ১৬ জুন ট্র্যাইব্যুনাল-১ পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আগামী সাতদিনের মধ্যে হাজির হতে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন এবং পরদিন দু’টি পত্রিকায় শেখ হাসিনা ও কামালকে সাতদিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তবে বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরেও পলাতক দুই আসামি ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় ট্র্যাইব্যুনাল ১ জুলাই অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন। সে ধারাবাহিকতা ১ জুলাই শুনানি শেষে পরবর্তী শুনানির জন্য আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউসন। এদিন প্রথম ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দু’টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। জাজ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
কুষ্টিয়ায় জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে কটুক্তিমূলক ফেসবুক পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ফারজুল ইসলাম রনি নামে ট্রাফিক পুলিশের সেই সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শনিবার (৫ জুলাই) কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকালের দিকে ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে জুলাই বিপ্লবকে অবমাননা করে পোস্ট করেন কুষ্টিয়া ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল ফারজুল ইসলাম রনি। বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে ছাত্রসমাজ। এরপর তাকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে তারা বিক্ষোভ মিছিল এবং কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
ওসি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনার পর গতরাতেই অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়। এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরপরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘ওই পুলিশ সদস্য ছুটিতে গিয়ে এই পোস্ট করেন। তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এরপর তিনি আর কাজে ফেরেননি; আত্মগোপনে রয়েছেন।’
কুষ্টিয়া ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক শেখ শাহাদাত আলী বলেন, ‘ফারজুল ইসলাম রনি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার দহকুলা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই থেকে কুষ্টিয়া ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত। ছুটিতে গিয়ে ফেসবুকে ওই পোস্ট দেন তিনি।’