তর্কাতর্কির জের ধরে রাজধানীর বারিধারায় ডিপ্লোমেটিক জোনে ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে কনস্টেবল কাওসার সহকর্মী মনিরুলকে উদ্দেশ করে গুলি ছোড়েন বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন।
আজ রোববার দুপুরে ডিএমপির সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তবে কী নিয়ে তর্ক ও কী কারণে কনস্টেবল কাওসার উত্তেজিত ছিলেন সে বিষয়ে এখনও কিছুই জানাতে পারেনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তদন্ত করে সেটি বের করা হবে বলে জানিয়েছে ডিএমপি।
ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘দুই পুলিশ সদস্যের মধ্যে বিরোধ ছিল, এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই। কাওসারের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, কিন্তু বিরোধের কোনও তথ্য তার কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি অভিযুক্ত কাওসারের গত এক-দুই মাসের ডিউটি রেকর্ড দেখেছি। রেকর্ডে কাওসার যথাযথভাবেই ডিউটি করেছে।’
ডিএমপির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে অভিযুক্ত কনস্টেবল কাওসার আহমেদ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। গুলি করেই তিনি হতভম্ব। এ কারণে বারবার বলছিলেন, এটা কীভাবে হয়ে গেলো, আমি জানি না। অর্থাৎ এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর পর মানসিকভাবে নার্ভাস থাকে। যে কারণে ঘটনার পরও অস্ত্র রেখে কনস্টেবল কাওসার সেখানে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। কারণ, তিনি স্ট্রেসটা নিতে পারছিলেন না। ঘটনার পর তিনি বুঝতে পেরেছেন—হয়তো কত বড় অন্যায় ও অমানবিক কাজ করে ফেলেছে। হয়তো এক-দুদিন গেলে বোঝা যাবে গুলি করার কারণ।’
ড. খ. মহিদ আরও বলেন, ‘ডিউটির কারণে কোনও সমস্যা তৈরি হয়নি। আর এখন কোথাও ডিউটির অতিরিক্ত চাপ নেই। স্বাভাবিকভাবেই ডিউটি করছেন সবাই।’
সামগ্রিকভাবে পুলিশ সদস্যদের কাউন্সেলিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাউন্সেলিংয়ের সিস্টেম নেই। তবে নিয়মিত ব্রিফিংগুলোতে কী করা যাবে, কী করা যাবে না; সে সম্পর্কে বলা হয়। এটাও এক ধরনের কাউন্সেলিং।’
উল্লেখ্য, গতকাল শনিবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর বারিধারায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই পুলিশ সদস্যই ফিলিস্তিন দূতাবাসের বাইরে অবস্থিত পুলিশ বক্সে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ ঘটনায় জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ হোসেনসহ আরও একজন পথচারী আহত হয়েছেন। পরে তাদের গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।
বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আবার পেছানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত গতকাল সোমবার আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন।
এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা মোট ১২০ বার পিছিয়ে এসেছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। ঘটনার সময় বাসায় তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামিরা হলেন — রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তা রক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান।
এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন, বাকিরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে আসায় এ মামলার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাঝে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
পলাতক পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকারসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার ৪০ জন কর্মকর্তার বিপিএম (বাংলাদেশ পুলিশ পদক) ও পিপিএম (রাষ্ট্রপতি পুলিশ) পদক প্রত্যাহার করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব তৌছিফ আহমদ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনটি জারির তারিখ হিসেবে সেটিতে ৭ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) উল্লেখ করা হলেও গতকাল রোববার এ বিষয়ে জানা গেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘ইতোমধ্যে নিজ কর্মস্থল হতে পলায়ন করায় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এরূপ ৪০ (চল্লিশ) জন পুলিশ সদস্যের অনুকূলে প্রদত্ত পুলিশ পদক প্রত্যাহার করা হলো।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এসব কর্মকর্তা পলাতক আছেন। পদক বাতিল হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন।
কুমিল্লায় আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহা উদ্দিন বাহার ও তার কন্যা কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনাসহ ৩৫ জন নামে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ।
রবিবার (১০ আগষ্ট) দুপুরে কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুমিল্লা কোতয়ালী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মহিনুল ইসলাম।
রোববার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিনুল ইসলাম জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট কুমিল্লা নগরীর মোগলটুলি এলাকায় বিজয় মিছিলে অতর্কিত গুলিতে আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ আহত হন। এই ঘটনার দশ দিন পর ১৬ আগস্ট ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
ঘটনার পর নিহত আবুল কালাম আজাদের সহকার্মী আইনজীবী মোস্তাফা জামান জসিম বাদী হয়ে পাঁচজনে নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ২৫ জনের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এই বিষয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যাকান্ডের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত কুমিল্লা ৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আকম বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনাসহ ৩৫ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
নিহত আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ কুমিল্লা আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। তার বাসা কুমিল্লা নগরীর রাণীর দিঘির দক্ষিণপাড়। এবং গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর হাজীগঞ্জ।
হাইকোর্ট অর্থপাচার মামলায় জি কে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীর সাজা খালাস দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ রায় দেন।
২০২৩ সালের ১৭ জুলাই বিশেষ জজ আদালত শামীমকে ১০ বছর ও তার দেহরক্ষীদের চার বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছিল। আদালত তাদের ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল, যা পরিশোধ না করলে আরও এক বছর সাজা ভোগের নির্দেশ ছিল।
নিম্ন আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল, "অর্থপাচারকারীরা দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে। তারা জাতির শত্রু।" তবে হাইকোর্ট এই রায় বাতিল করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে অস্ত্র আইনের মামলায় শামীম ও তার দেহরক্ষীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালে র্যাবের অভিযানে শামীমের বাসা ও অফিস থেকে ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআরসহ বিপুল পরিমাণ অর্থ ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছিল।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ হত্যার ঘটনায় ‘মৌখিক নির্দেশনায়’ তদন্ত শুরু করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সাজিদের বাবার চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে সিআইডিকে এই তদন্তভার দেয়া হয়। ইবি থানা পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নিজেদের মত করে তথ্য সংগ্রহ করছেন বলে জানিয়েছেন ইবি থানা।
বুধবার (৬ আগস্ট) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা ও সিন্ডিকেট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
থানা সূত্রে জানা গেছে, ‘সাজিদ হত্যা ইস্যুতে তার বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ ইবি থানায় গত ৪ আগস্ট মামলা দায়ের করেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা সংস্থার মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত সম্পন্ন করার দাবি জানান। থানা পুলিশ ও পিবিআই যৌথ সহযোগিতায় মৌখিক আদেশের ভিত্তিতে সিআইডি তদন্ত শুরু করেছে।’
এ বিষয়টি নিশ্চিত করে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, ‘সাজিদের বাবা বাদী হয়ে এজাহার (মামলা নং-২) হিসেবে রুজুর করেছে। এতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।দণ্ডবিধির ৩০২, ২০১/৩৪ ধারায় রুজু করা হয়েছে।’
ইবি থানার তদন্ত ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশনায় সিআইডি কাজ শুরু করে দিয়েছে। তবে থানা পুলিশ ও পিবিআই যৌথ সহযোগিতা করে যাচ্ছে।’
এদিকে সিন্ডিকেট সূত্রে জানা যায়, ‘গত ৪ আগস্ট জরুরি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাজিদের ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সাজিদের বাবার চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে সিআইডিকে তদন্তভার দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এখনও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লিখিত প্রজ্ঞাপন জারি করেননি।’
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই বিকেল পৌঁনে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলের পুকুর থেকে সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ৩ আগস্ট প্রাপ্ত রিপোর্টে সাজিদকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। সাজিদ গত ১৬ জুলাই দিবাগত রাত সাড়ে ৩টা (আনুমানিক) উল্লেখ ছিল।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ আগামী ১৭ আগস্ট।
এই মামলায় আজ বুধবার দু’জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের এই দিন ধার্য করেন।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া এই মামলার অভিযোগের মধ্যে থাকা আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় আজ সাক্ষ্য দেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী রিনা মুরমু এবং এনটিভির রংপুরের সাংবাদিক এ কে এম মঈনুল হক। এর আগে দুইদিন এই মামলায় আরও তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
আজ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম শুনানি করেন। একসময় অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, শেখ হাসিনার পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। আর এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এছাড়া এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্র্যাইব্যুনাল।
গত ১৬ জুন ট্র্যাইব্যুনাল-১ পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে হাজির হতে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন এবং পরদিন দু’টি পত্রিকায় শেখ হাসিনা ও কামালকে সাতদিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তবে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরেও পলাতক দুই আসামি ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী দিয়ে এই মামলায় অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ী শুনানি শেষে গত ১০ জুলাই এই মামলায় অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন ট্র্যাইব্যুনাল-১।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনে অভিযোগ গঠনের আবেদন করে প্রসিকিউশন।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দু’টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দু’টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ আজ এই আদেশের মধ্য দিয়ে মামলাটির বিচার শুরু করে।
গত ৩০ জুলাই প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এই মামলায় অভিযোগ গঠনের আরজি পেশ করে শুনানি করেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় যাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের মধ্যে গ্রেফতার ছয়জন আজ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন।
তারা হলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান রাসেল, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক সাবেক কর্মচারী মো. আনোয়ার পারভেজ, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।
গত ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আবু সাঈদ। ২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কও ছিলেন।
শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি চলাকালে আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করছে-সেই দৃশ্য দেশের টিভি চ্যানেলগুলো সরাসরি সম্প্রচার করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিরস্ত্র আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। এতে সারা দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং ছাত্র-জনতা প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হয় এবং জনসম্পৃক্ততা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ‘হাসিনার পদত্যাগ’ এক দফা দাবিতে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে আওয়ামী লীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার ও অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে-এমন অভিযোগ একের পর এক জমা পড়ে। এই অপরাধগুলোর বিচার এখন চলছে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থানে গণকবর দেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ১১৪ জনের মরদেহ উত্তোলন করে তাদের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। আদেশে বিচারক ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৬(২) ধারার বিধান অনুযায়ী ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে (ডিসি) লাশ উত্তোলন কার্যক্রমে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন এ তথ্য জানান।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক মো. মাহিদুল ইসলাম মরদেহ উত্তোলন চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন বয়সের নারী ও পুরুষ শাহাদাত বরণ করেন। যাদের মধ্যে ১১৪ জন অজ্ঞাতনামা শহীদকে ‘অশনাক্ত’ হিসেবে মোহাম্মদপুর থানার রায়ের বাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আইনতগত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং শহীদদের মৃতদেহ শনাক্তকরণের জন্য মরদেহ যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কবর হতে উত্তোলন করা প্রয়োজন। এসব মরদেহের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট প্রস্তুত, মৃতদেহের ডিএনএ সংগ্রহের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হতে হবে। এছাড়া আইনি কার্যক্রম শেষে ডিএনএ প্রোফাইলিং-এর মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিতকরণের পর পরিবারের চাহিদা মোতাবেক মৃতদেহ তাদের পরিবারের নিকট হস্তান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
এরপর বিচারক আবেদনসহ নথি পর্যালোচনা করেন। সার্বিক পর্যালোচনা শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন।
গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক শিক্ষার্থী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালে দেয়া তার সাক্ষ্যে বললেন, পঙ্গু হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় শেখ হাসিনা বলেছিলেন- ‘নো রিলিজ, নো ট্রিটমেন্ট।’
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই কোটা বিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গুলিবিদ্ধ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ইমরান আজ বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই সাক্ষ্য দেন।
গুলিবিদ্ধ হয়ে অচল হয়ে যাওয়া বাম পা নিয়ে সাক্ষীর ডায়াসে বসে ইমরান তার সাক্ষ্যে বলেন, “২০২৪ সালের জুলাইয়ের শুরু থেকে কোটাবিরোধী যৌক্তিক আন্দোলনে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। ১৯ জুলাই বিজয়নগর পানির টাংকি এলাকায় আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশ আমাদের উপর অতর্কিত গুলি করে। আমি গুলিবিদ্ধ হই ও সেখানে আমার দুই সহযোদ্ধা নিহত হন। আমার বাম পায়ের হাঁটুর নিচে গুলি লাগে। এরপর আমাকে বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে কোন প্রাইভেট হাসপাতাল আমাকে ভর্তি করতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে মিটফোর্ড হাসপাতালে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে চিকিৎসকরা আমার বাম পা কেটে ফেলার কথা বলেন। আমি পা কেটে ফেলার পক্ষে ছিলাম তবে আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা পা কাটার অনুমতি দেয়নি। পরে মিডফোর্ড হাসপাতাল থেকে আমাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। এরপর আমাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গত বছরের ২৬ বা ২৭ জুলাই পঙ্গু হাসপাতালে আমাদের দেখতে আসেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আশা উপলক্ষে আগের রাত থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা চলতে থাকে হাসপাতালে। এজন্য আমাদের রাতে ঘুমের সুযোগও দেয়া হয়নি। শেখ হাসিনা এসে আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। তখন আমার সঙ্গে তার কথা হয়। তখন আমি তাকে ম্যাডাম বলে সম্মোধন করলে আপা বলে ডাকতে বলেন। আমি কোথায় পড়াশোনা করি, হলে থাকি কিনা সে সম্পর্কে তিনি জানতে চান। একপর্যায়ে সে বুঝতে পারে আমরা আন্দোলনকারী। সে আমাকে আরো জিজ্ঞাসা করে যে, তুমি কি দেখেছো পুলিশ তোমাকে গুলি করেছে? আমি বলি যে পুলিশ আমাকে গুলি করেছে। তবে পুলিশের পোশাকে কে ছিল তা আমি জানিনা। আমার পরেও উনি চার পাঁচজনের সঙ্গে হাসপাতালে কথা বলেন। পরে উনি যখন চলে যাচ্ছিলেন তখন হেল্প ডেস্কের কাছে গিয়ে ‘নো রিলিজ, নো ট্রিটমেন্ট’ অর্ডার দিয়ে যান। যা আমি শুনতে পাই। তখন বুঝিনি তিনি এটা বলে কি বুঝিয়েছেন। পরবর্তীতে আমার ঠিকঠাক ট্রিটমেন্ট দেয়া হচ্ছিল না। আমার পা টা পচে যাচ্ছিল। গন্ধ আশেপাশে কেউ থাকতে পারতো না। হাসপাতালে সাপ্লাই করা এন্টিবায়োটিক আমার শরীরে কাজ করছিল না। কিন্তু বাইরে থেকে কিনে আনারও অনুমতি ছিল না। তখন আমার বাবা আমাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজের চেষ্টা করে কিন্তু আমাকে রিলিজ দেয়া হয়নি। পরে আমি বুঝতে পারি শেখ হাসিনার ‘নো রিলিজ, নো ট্রিটমেন্ট’ অর্ডারের ফলে আমাকে রিলিজ দেয়া হচ্ছে না। তারা চাচ্ছিল আমার পা টা কেটে ফেলে পরবর্তীতে জেলে পাঠাতে। তবে গত ৫ আগস্টের পর হাসপাতালের সাধারণ বেড থেকে কেবিনে নেয়া হয়। এখন যথাযথ চিকিৎসা চলছে। এখন পর্যন্ত আমার পায়ে ২৫টি অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। তবে আমার বাম পাটা মুভমেন্ট হয় না, এটা কখোনো সুস্থ হবে না।”
একপর্যায়ে, সাক্ষী আব্দুল্লাহ আল ইমরান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালকে বলেন, আমার এই অবস্থার জন্য শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক আইজি দায়ী। কারণ তারাই গুলির নির্দেশ দেয় সে কারণে পুলিশ গুলি করে। এই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পর তাকে জেরা করা হয়। জেরা করেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
আজ ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউসন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম শুনানি করেন। একসময় অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, শেখ হাসিনার পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। আর এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
গতকাল এই মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের পর ট্র্যাইব্যুনালে প্রথম সাক্ষ্য দেন খোকন চন্দ্র বর্মন। তিনি গত বছরের ১৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় তার সামনে সংঘটিত হতাহতের ঘটনা ও গুলিতে নিজের মুখমণ্ডল বিকৃত হওয়ার বিষয়ে সাক্ষ্য দেন। পরবর্তীতে গতকাল তাকে জেরা করা শেষ হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এছাড়া এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্র্যাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে এই মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ৩ আগস্ট ও সাক্ষ্যের জন্য ৪ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
গত ১৬ জুন ট্র্যাইব্যুনাল-১ পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে হাজির হতে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন এবং পরদিন দু’টি পত্রিকায় শেখ হাসিনা ও কামালকে সাতদিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তবে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরেও পলাতক দুই আসামি ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী দিয়ে এই মামলায় অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ী শুনানি শেষে গত ১০ জুলাই এই মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্র্যাইব্যুনাল-১।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনে অভিযোগ গঠনের আবেদন করে প্রসিকিউশন।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দু’টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন এবং সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে আগামীকাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম জানিয়েছেন, আগামীকাল মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করা হবে। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে এটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। একই সঙ্গে প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণও শুরু হবে।
এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
এছাড়া এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে রাজ সাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেছে ট্রাইব্যুনাল। সেই সাথে এই মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ৩ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে এই মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করেন। শুনানিতে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন শুনানি করেন। আর এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির থাকা আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
গত ১৬ জুন ট্র্যাইব্যুনাল-১ পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে হাজির হতে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন এবং পরদিন দু’টি পত্রিকায় শেখ হাসিনা ও কামালকে ৭ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তবে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরেও পলাতক দুই আসামি ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী দিয়ে এই মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ী শুনানি শেষে গত ১০ জুলাই এই মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্র্যাইব্যুনাল-১।
জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনে অভিযোগ গঠনের আবেদন করে প্রসিকিউশন।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দু’টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করার সময় আওয়ামী লীগ, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসন সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। জাজ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে দু’টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহেনার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের উৎসের বাইরে ২ কোটি ৮৯ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন এবং প্রায় ১২ কোটি টাকার সন্দেহজনক ব্যাংক লেনদেনের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। আজ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান।
এজাহার থেকে জানা যায়, তার বৈধ আয়ের উৎস না থাকা সত্ত্বেও ২ কোটি ৮৯ লাখ ৩ হাজার ৩৫৫ টাকা মূল্যমানের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি তার নামে ৩৯ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫০ টাকার স্থাবর এবং ২ কোটি ৪৯ লাখ ১৯ হাজার ৬০৫ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য প্রদান করেন। তার তিনটি ব্যাংক হিসাবে মোট ১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, আসামির কোনো বৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল না এবং তার আয়কর নথিতে প্রদর্শিত আয় ও পারিবারিক ব্যয় বিবেচনায় বৈধ আয়ের পরিমাণ ছিল মাত্র ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অথচ তিনি ৪ কোটি ৬৫ লাখ ২৬ হাজার টাকার সম্পদ ও ব্যয় করেছেন, যা তার বৈধ আয়ের তুলনায় প্রায় ৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত।
এজাহারে বলা হয়েছে, আসামির প্রদর্শিত ব্যবসার কোনো বাস্তব অস্তিত্ব বা বৈধ উৎস না থাকায় এটি জ্ঞাত আয়ের বাইরে অর্জিত অবৈধ সম্পদ হিসেবে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। একইসঙ্গে উক্ত অর্থ বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে জমা, উত্তোলন ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং করেছেন।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি জানান, তথ্য এলে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালে খায়রুল হক শপথ নেন। পরের বছর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমদের গুলশানের আলিশান ডুপ্লেক্স বাসায় থাকা তার পরিবারের ব্যবহৃত জিনিসপত্রগুলো নিলামে তোলা হবে। বেনজীর গুলশানে র্যানকন আইকন টাওয়ারে যে চারটি আধুনিক ফ্ল্যাটের সমন্বয়ে একটি আলিশান ডুপ্লেক্স ইউনিট করেছিলেন সেখানকার ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিলামে তোলার জন্য ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত নিলাম কমিটি গঠন করেছে।
এক বৈঠকে কমিটির সিদ্ধান্ত হয় কয়েকদিনের মধ্যে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিলামে তোলার ব্যবস্থা করা হবে। কমিটি নিলাম প্রক্রিয়ার মানদণ্ড ঠিক করেছে এবং নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য ব্যবস্থা নিয়েছে। গতকাল বুধবার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এরই মধ্যে সম্পদের জব্দ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বেনজীরের এই আলিশান ফ্ল্যাটে জব্দ তালিকায় রয়েছে মোট ২৪৬টি আইটেমের জিনিসপত্র। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শার্ট ১২২টি, প্যান্ট ২৬৬টি, ৩০টি ব্লেজার, আটটি স্যুট, টি-শার্ট ৭২২টি, পাঞ্জাবি ২২৪টি, পায়জামা ৪৭টি, স্যান্ডেল ৮৮ জোড়া, কেডস ৩৫ জোড়া, জুতা ৩৮ জোড়া, শাড়ি ৪৯৪টি, থ্রিপিস ২৫০ সেট, সালোয়ার-কামিজ ৪৯৬টি, ব্লাউজ ৬৫টি, জামা ২১২টি, জ্যাকেট ৫৬টি, বেডশিট ১০৯টি, লেডিস ভ্যানিটি ব্যাগ ৭৫টি, লেডিস টপস ৬২২টি, পুরুষের সোয়েটার ১১টি, লেডিস সোয়েটার ৩৪টি, লেডিস প্যান্ট ৩৫৫টি, লেডিস টি-শার্ট ২৮টি, নাইট ড্রেস ৫৮টি, ওড়না ৩৪৭টি, শাল-চাদর ৮৯টি, শীতের জামা ১৩২টি, লেহেঙ্গা ১৬টি, সানগ্লাস ৩৪টি, ট্রাউজার ৬৭টি।
সেন্ট-পারফিউম ছাড়াও ড্রয়িং রুম, বৈঠকখানা, থিয়েটার রুম, করিডোর বৈঠকখানা, কিচেন রুম, মাস্টার বেডসহ অন্য বেডরুমের ব্যবহৃত জিনিসপত্র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গুলশানের র্যানকন টাওয়ারে চারটি আলিশান ফ্ল্যাট এক করে ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট তৈরি করেন বেনজীর দম্পতি। যেখানে সুইমিংপুল, মিনি থিয়েটার রুম, অতিথি বিনোদন বৈঠকখানাসহ আধুনিক আভিজাত্য সুযোগ-সুবিধা ছিল।
দুদকের অনুসন্ধান টিম জানায়, পুরো ফ্ল্যাটে ১৯টি ফ্রিজ রয়েছে। এসি রয়েছে সব মিলিয়ে ১০০ টন, সুইমিংপুলে ব্যবহৃত আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী। ফ্ল্যাটের খাট, ড্রেসিং টেবিল, ডাইনিং টেবিল, সোফা, চেয়ার, আলমারি, ওয়্যারড্রোবসহ মূল্যবান সামগ্রী নিলামবহির্ভূত রাখা হয়েছে। এগুলোর ব্যাপারে পরে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগ সরকার দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগেই ২০২৪ সালের ৪ মে মিথ্যা ঘোষণায় নতুন পাসপোর্ট বানিয়ে বেনজীর আহমদ তার স্ত্রী কন্যাদের নিয়ে গোপনে দেশ ছাড়েন। দুদকের তদন্ত টিম ও নিলাম কমিটির সদস্যদের মতে বেনজীর দম্পতি গোপনে পালিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাগ ভর্তি স্বর্ণালংকার, টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে গেছেন। এরই মধ্যে দুদক ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাচারের অভিযোগে বেনজীরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
বেনজীরের গুলশানের ফ্ল্যাটের জিনিসপত্র নিলামে তোলার জন্য আদালত কমিটি করে দিয়েছেন। কমিটিতে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের পরিচালককে সভাপতি এবং চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের একজন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিনিধি, বস্ত্র অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের একজন প্রতিনিধি, ইস্পাত প্রকৌশল অধিদপ্তরের চেয়ারম্যানের একজন প্রতিনিধি সদস্য থাকবেন। দুদকের উপপরিচালক (সম্পদ ব্যবস্থাপনা) সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। আদালত এই কমিটি গঠন করার পর ওই ফ্ল্যাটে ব্যবহৃত সম্পদের তালিকা (ইনভেনট্রি) প্রস্তুত করেছে।
বেনজীর আহমেদ পলাতক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের আইজিপি ছিলেন।
বেনজীরের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও পাসপোর্ট জালিয়াতির মামলা ছাড়াও তার স্ত্রী জিশান মীর্জা, বড় কন্যা ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর ও ছোট মেয়ে তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে ৭৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন পৃথক চারটি মামলা করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর এসব মামলা দায়ের করে দুদক। এর মধ্যে বেনজীর আহমদ ৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, ২ কোটি ৬২ লাখ টাকার তথ্য গোপন, স্ত্রী জীশান মির্জা ৩১ কোটি ৬৯ লাখ সম্পদ অর্জন, ১৬ কোটি ১ লাখ টাকার তথ্য গোপন, বড় মেয়ে ফারহীন ৮ কোটি ৭৫ লাখ এবং ছোট মেয়ে তাহসীন ৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপন করেছেন।