ঢাকার আদালতের বিভিন্ন এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরানো হচ্ছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম), ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এবং মহানগর দায়রা জজ আদালতের এজলাসে থাকা লোহার খাঁচা সরানো হচ্ছে বলে জানান আদালত সংশ্লিষ্টরা।
কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঢাকার আদালতের কয়েকটি এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব আদালতের খাঁচা সরিয়ে ফেলা হবে। গণপূর্ত বিভাগের লোকজন লোহার খাঁচা সরানোর কাজটি করছেন বলে জানান আদালতের কর্মকর্তারা।
আদালত সহায়ক কর্মকর্তাগণ জানান, উচ্চপর্যায় থেকে লোহার খাঁচা সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকে ঢাকার আদালতের কয়েকটি কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরানো হয়।
উল্লেখ্য, ঢাকার আদালতের লোহার খাঁচা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার বিরুদ্ধে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে আনা মামলায় হাজিরা দিতে গেলে তাকে লোহার খাঁচায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
এ নিয়ে গত ১২ জুন ড.মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, অনেকক্ষণ খাঁচার (আসামির কাঠগড়া) মধ্যে ছিলাম। আমি যত দূর জানি যত দিন আসামি অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত না হচ্ছে তত দিন তিনি নিরপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবেন। একজন নিরপরাধ নাগরিককে শুনানির সময় লোহার খাঁচায় (আসামির কাঠগড়া) দাঁড়িয়ে থাকতে হবে এটা আমার কাছে অত্যন্ত অপমানজনক। এটা গর্হিত কাজ। এটা কারও ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। একটা সভ্য দেশে কেন একজন নাগরিককে শুনানির সময় পশুর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হবে? যেখানে তিনি তখনো দোষী সাব্যস্ত হননি।
এদিকে দেশের অধস্তন আদালত কক্ষে থাকা লোহার খাঁচা অপসারণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী। সে রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ৪ ফেব্রুয়ারি রুলসহ আদেশ দেয়। রিটের পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন,সারাদেশে অধস্তন আদালত কক্ষে কতগুলো লোহার খাঁচা রয়েছে সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি রুলও জারি করেন আদালত।
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার হুকুমদাতা ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিদেশে পলাতকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম।
রোববার ধানমণ্ডিতে ট্রাইব্যুনালের কার্যালয়ে এক বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে এ কথা জানান তিনি। অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিচারক নিয়োগ হলে এ সপ্তাহেই জুলাই গণহত্যায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হবে। শেখ হাসিনাসহ বিদেশে পলাতকদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘বিচারক নিয়োগ হওয়া মাত্রই ট্রাইব্যুনাল ফাংশনাল হবে। এরপর আমরা নেসেসারি কিছু অর্ডার চাইব। এ বিচার শুরুর আগে যেগুলো দরকার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, আসামিদের বিদেশ যাওয়া বন্ধ করা, অনেক রকমের তথ্য-উপাত্ত এগুলো সিজ করার জন্য অর্ডার লাগবে।’
‘তাদের দ্রুততার সঙ্গে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য লাগবে। সে ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে আদেশ আসবে। ইমপ্লিম্যান্ট করার দায়িত্ব কিন্তু ট্রাইব্যুনালের হাতে না, এর দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে’- বললেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, ‘মূলত যাদের নির্দেশে ও যাদের কারণে এ গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল তাদের আমরা অগ্রাধিকার তালিকায় শুরুতে নিয়ে এসেছি। আইন অনুযায়ী তাদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের সাহায্য চাওয়া হবে। কোনো অপরাধী বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে থাকলে ইন্টারপোলের সিস্টেমের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা থাকায় তাদের গ্রেপ্তারে বাংলাদেশ ইন্টারপোলে রেড নোটিশ পাঠাতে পারে। আর এর কল্যাণে আমরা অনেককেই দেশে ফেরত আনতে পারব।’
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত গুম, হত্যা, গণহত্যাসহ ৬০টির বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ, ১৪ দলের নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গেল জুলাই ও আগস্টে গণহত্যার অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরই অংশ হিসেবে নতুন প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থা গঠিত হয়েছে। বিচারের জন্য আইন সংশোধন ও ভবন মেরামতের কাজও চলমান। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ হবে।
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ২৩ জনকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে তাদের নিয়োগ দিয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে মঙ্গলবার রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান-এর ৯৮ অনুচ্ছেদ-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নিম্নবর্ণিত (ক)-(ব) ক্রমিকে উল্লেখকৃত ২৩ জন ব্যক্তিকে শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে অনধিক দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগদান করেছেন।
‘তারা হলেন মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার, সৈয়দ এনায়েত হোসেন, মোঃ মনসুর আলম, সৈয়দ জাহেদ মনসুর, কে এম রাশেদুজ্জামান রাজা, মো. যাবিদ হোসেন, মুবিনা আসাফ, কাজী ওয়ালিউল ইসলাম, আইনুন নাহার সিদ্দিকা, মো. আবদুল মান্নান, তামান্না রহমান, মো. শফিউল আলম মাহমুদ, মো. হামিদুর রহমান, নাসরিন আক্তার, সাথিকা হোসেন, সৈয়দ মোহাম্মদ তাজরুল হোসেন, মো. তৌফিক ইনাম, ইউসুফ আবদুল্লাহ সুমন, শেখ তাহসিন আলী, ফয়েজ আহমেদ, মো. সগীর হোসেন, শিকদার মাহমুদুর রাজী ও দেবাশীষ রায় চৌধুরী।’
সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং হত্যাচেষ্টার মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আমার দেশ পত্রিকার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ দুজনকে দেওয়া আদালতের দণ্ডাদেশ স্থগিত করা হয়েছে। রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আবু সাঈদ মোল্লার সই করা প্রজ্ঞাপনে এ স্থগিতাদেশ জারি করা হয়।
সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে এ মামলায় আত্মসমর্পণ করতে আদালতে আসেন মাহমুদুর রহমান। এ সময় তার পক্ষে আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করেন আইনজীবীরা।
শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল হকের আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে তাকে কারাগারে ডিভিশন দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এদিকে শফিক রেহমানের সাজা স্থগিত করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শফিক রেহমান এবং মো. মিজানুর রহমান ভূঁইয়া ওরফে এম আর ভুঁইয়া ওরফে মিল্টন ভূঁইয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়ে দাখিল করা আবেদন এবং আইন ও বিচার বিভাগের মতামতের আলোকে ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিকিউটর, (অ্যাক্ট নম্বর, ভি অব ১৮৯৮)-এর ধারা ৪০১(১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-২, ঢাকার পল্টন মডেল থানার মামলা নং-০১(০৮)২০১৫, জিআর মামলা নং-২৯৪/১৫-এ তাদের বিরুদ্ধে প্রদত্ত দণ্ডাদেশ বিজ্ঞ আদালতে আত্মসমর্পণপূর্বক আপিল দায়েরের শর্তে এক বছরের জন্য নির্দেশক্রমে স্থগিত করা হলো। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এ আদেশ জারি করা হয়েছে।
জানা গেছে, সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং হত্যাচেষ্টার মামলায় গত বছরের ১৭ আগস্ট ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালত আমার দেশ পত্রিকার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ ৫ জনের পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন— জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ, রিজভী আহমেদ সিজার ও মিজানুর রহমান ভূইয়া।
আসামিদের দণ্ডবিধির ৩৬৫ ধারায় (অপহরণ) পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। জরিমানার টাকা অনাদায়ে তাদের আরও একমাসের কারাভোগ করতে হবে। এছাড়া একই আইনে ১২০-খ ধারায় (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) দুই বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যে কোনো সময় থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার আসামিরা একত্রিত হয়ে যোগসাজশে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। ওই ঘটনায় ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় মামলাটি করেন।
২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এ মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে তুরস্ক থেকে দেশে ফেরেন মাহমুদুর রহমান। দেশে ফিরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই আমলে আমার ৫ মাস কারাগারে থাকতে আপত্তি নেই। হ্যাঁ, আমার বয়স হয়েছে, আমি বুড়ো হয়ে গেছি, কিন্তু জেলে থাকার মতো মানসিক এবং শারীরিক শক্তি এখনো আমার আছে। কাজেই আপনারা এটা নিয়ে একদম বিচলিত হবেন না। একদম উদ্বিগ্ন হবেন না। আইনকে তার রাস্তায় যেতে দিন। আমাকে আমার মতো করে লড়াই করতে দিন।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন গত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আমি আমার মতো করে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে লড়াই করে গেছি। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতো করে লড়াই করেছে, আর আমি লড়াই করেছি আমার মতো করে।’
এস আলম গ্রুপ, কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সব স্থাবর সম্পদের তালিকা দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার রুলসহ এ আদেশ দেন।
স্থাবর সব সম্পদের তালিকা দাখিল করতে আইন সচিব ও নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শকের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে এস আলম গ্রুপ, কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সব স্থাবর সম্পদের তালিকা দাখিল করা এবং এসব সম্পদ স্থানান্তর বা বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. রুকুনুজ্জামান।
রিটের শুনানিতে ২২ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী আদালতকে জানান, এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের যেসব বিষয় এসেছে, তা নিয়ে সংস্থাটি (দুদক) অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে। হালনাগাদ তথ্য জানাতে তিনি সময়ের আরজি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন আদালত শুনানি মুলতবি করে এস আলম গ্রুপের অর্থ পাচারের অভিযোগের ওপর অনুসন্ধান-সংক্রান্ত তথ্য দুদকের আইনজীবীকে গতকাল রোববার আদালতকে অবহিত করতে বলেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী মো. রুকুনুজ্জামান নিজেই শুনানি করেন। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহীন আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান।
রিট দায়েরের পর আইনজীবী মো. রুকুনুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এস আলম গ্রুপের এ পর্যন্ত নেওয়া ঋণের পরিমাণ, সেগুলোর বর্তমান অবস্থা ও দায়, বিদেশে পাচার করা অর্থ ও সব স্থাবর সম্পত্তির তালিকা, সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে। আদালতের অনুমতি ছাড়া কোম্পানির পরিচালকসহ পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও চাওয়া হয়েছে।
ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হককে এবং মামুন নামের এক দোকান কর্মচারীকে হত্যার অভিযোগে আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
আজ রোববার কারাগার থেকে তাদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ।
এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক তাদের এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর তাদের আইনজীবী জামিন চাইলে আদালত তা নামঞ্জুর করে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ১৩ আগস্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নৌপথে পলায়নরত অবস্থায় রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের দিন ১৪ আগস্ট তাদের দুইজনের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউমার্কেট থানা এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় এদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামুন নামের এক দোকান কর্মচারীকে হত্যার অভিযোগে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় করা মামলায় সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন আদালত।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় বেইলী রোডের নওরতন কলোনী থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ১৬ সেপ্টেম্বর হোটেল কর্মচারী মো. সিয়াম সরদারকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে মিরপুর মডেল থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
এরপর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেনের আদালত শুনানি শেষে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই বিকেলে নিউমার্কেট থানাধীন নীলক্ষেত এলাকায় পুলিশের গুলিতে ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ মারা যান।
এ ঘটনায় তার শ্যালক আব্দুর রহমান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এছাড়া গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নিহত হন মামুন।
এ ঘটনায় গত ২৯ আগস্ট তার বাবা আজগর আলী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রপ্তানি বন্ধে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। একইসঙ্গে রিটে পদ্মা ও মেঘনা নদীর ইলিশ রপ্তানিতে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান রিটটি করেন। রিটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আমদানি-রপ্তানি কার্যালয়ের প্রধান নিয়ন্ত্রককে বিবাদি করা হয়েছে।
এর আগে, ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতির প্রতিবাদে গত ২২ সেপ্টেম্বর সরকারের সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশে বলা হয়, ভারতের বিশাল ও বিস্তৃত সমুদ্রসীমা রয়েছে। ভারতের জলসীমায় ব্যাপকভাবে ইলিশ উৎপাদন হয়। এই বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে ভারতের ইলিশ মাছ আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু ভারত মূলত বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ইলিশ আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশে ভারতীয় এজেন্টরা ও মাছ রপ্তানিকারকরা সারা বছর ধরে পদ্মা নদীর ইলিশ মাছ মজুদ করে রাখে এবং বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে পদ্মা নদীর সব ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি করে ও ক্ষেত্রবিশেষে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পাচার করে। বাংলাদেশের পদ্মা নদীর সব ইলিশ ভারতে রপ্তানি ও পাচার হওয়ার কারণে বাংলাদেশের জনগণ বাজারে গিয়ে পদ্মার নদীর ইলিশ পায় না। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের জনগণকে সামুদ্রিক ইলিশ খেতে হয়, যা পদ্মার ইলিশের মতো সুস্বাদু নয়।
নোটিশে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের পদ্মা নদীতে যে সীমিত পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায়, তা দেশের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট নয়। এ অবস্থায় যদি পদ্মার সব ইলিশ ভারতে চলে যায় তাহলে বাংলাদেশের জনগণ এই পদ্মার ইলিশ খেতে পারবে না। এভাবে বাংলাদেশের জনগণকে পদ্মার ইলিশ থেকে বঞ্চিত করে ভারতের জনগণকে পদ্মার ইলিশ খাওয়ানো সরকারের জন্য সমীচীন নয়। এ কথা সত্য যে, বাংলাদেশ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্র ভারত থেকে আমদানি করে থাকে কিন্তু ভারত সরকার কখনোই তার নিজের দেশের জনগণের চাহিদা না মিটিয়ে বাংলাদেশে কোনো পণ্য রপ্তানি করে না। বাংলাদেশের রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪ অনুযায়ী ইলিশ মাছ মুক্তভাবে রপ্তানি যোগ্য কোনো মাছ নয়। এ অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারতে ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমতি দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থবিরোধী কাজ করেছে।
আইনি নোটিশে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুথানের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসে। দেশের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা এই সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ। কিন্তু বাংলাদেশের আপামর জনগণকে বঞ্চিত করে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের জনগণের সঙ্গে বেইমানি করেছে।
এ অবস্থায় নোটিশ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে ভারতে ইলিশ রপ্তানির বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে বলেও নোটিশে বলা হয়।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ সাতজনকে তেজগাঁও থানার পৃথক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেন তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
এই তালিকায় আরও রয়েছেন সাবেক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এবং সাংবাদিক দম্পতি শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপা।
এর মধ্যে ইনু, মেনন ও মামুনকে তেজগাঁও থানার রমিজ উদ্দিন হত্যা মামলা এবং কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী তাহিদুল ইসলাম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বাকিদের শুধু রমিজ উদ্দিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর তাদের পক্ষে আইনজীবী জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
৪ আগস্ট তেজগাঁও থানা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে রমিজ উদ্দিন আহমদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এ ঘটনায় ৭ সেপ্টেম্বর নিহত রমিজ উদ্দিনের বাবা এ কে এম রকিবুল হাসান বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২২৩ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী তাহিদুল ইসলাম একই এলাকায় এ আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এ ঘটনায় তার ভাই তারিকুল ইসলাম বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ৪৭ জনের নামোল্লেখ করে মামলা করেন।
সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের জন্য ১২টি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সুপ্রিম কোর্টের সহকারি রেজিস্ট্রার হতে তার ওপরের পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া দিকনির্দেশনামূলক বক্তৃতায় ১২ দফা নির্দেশনা দেন প্রধান বিচারপতি।
১২ দফা নির্দেশনা গুলো হলো
১. দায়িত্ব পালনে কোড অব কন্ড্যাক্ট যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
২. দায়িত্ব পালনকালে কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন সম্পূর্ণভাবে বর্জন করতে হবে।
৩. সেবা গ্রহীতাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. সেবা প্রদানের সময় কোনো প্রকার বিলম্ব সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য হবে।
৫. সেবা গ্রহীতাদের কোনো প্রকার হয়রানি করা যাবে না।
৬. সুপ্রীম কোর্টের কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণকে সেবা গ্রহীতাদের সঙ্গে সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে।
৭. প্রতিটি শাখায় প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন সম্পন্ন করতে হবে এবং কোনো কাজ পেন্ডিং রাখা যাবে না।
৮. প্রত্যেক শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রারগণকে তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত শাখাসমূহে প্রতিদিন সরেজমিনে মনিটর করতে হবে।
৯. প্রত্যেক শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রারগণ তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত শাখার কার্যক্রম সম্পর্কে স্ব স্ব অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারগণকে নিয়মিত অবহিত করতে হবে।
১০. উক্ত মনিটর কার্যক্রম ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে শুরু হবে।
১১. প্রতি ৪ সপ্তাহ পর পর অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারগণ মনিটরিং কার্যক্রমের প্রতিক্রিয়া ও ফলাফল রেজিস্ট্রার আপীল ও হাইকোর্ট বিভাগ এবং রেজিস্ট্রার (বিচার) এর নিকট রিপোর্ট করবেন।
১২. যদি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারি আচরণবিধি এবং উপরিউল্লিখিত নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো সেবা গ্রহীতাকে হয়রানি করেন বা আর্থিক লেনদেন করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ছেলে শাফি মুদ্দাসির খানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাত ৩টার পর রাজধানীর উত্তরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা জেলা পুলিশের একটি দল।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আহমেদ মুঈদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ছেলে শাফি মুদ্দাসির খানের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা হয়েছে। সেই মামলায় উত্তরার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে রাজধানীর আশুলিয়া থানার হত্যাচেষ্টা মামলায় শাফির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
এদিন তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার এসআই আবু তাহের মিয়া তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ভুক্তভোগী মো. রবিউল সানি বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলার ৪ নম্বর আসামি হলেন শাফি।
এ মামলার উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ইউজিসির সাবেক সচিব ড. ফেরদৌস জামান, সাবেক সদস্য ড. মুহাম্মদ আলমগীর, ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র, ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন।
এর আগে ১ সেপ্টেম্বর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, তার ছেলে শাফি মুদ্দাসির খানসহ ১০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এই আদেশ দিয়েছিলেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর পর থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ১৬৫টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৪৭টিই হত্যা মামলা। বেশির ভাগ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অনেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
অধস্তন আদালতের ২২৪ বিচারকের বদলি, পদায়ন ও প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার ছয়জনকে জেলা ও দায়রা জজ এবং যুগ্ম জেলা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদে ২৩ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এ বিষয়ে আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ ছাড়া আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. গোলাম রব্বানীকে আইন ও বিচার বিভাগের সচিবের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এর আগে মো. গোলাম রব্বানী সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কুষ্টিয়ার জেলা ও দায়রা জজ রুহুল আমীনকে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব পদে প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বদলি হওয়া বিচারকদের মধ্যে জেলা ও দায়রা জজ পদ মর্যাদার ৫২ জন, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদ মর্যাদার ৪৮ জন (এর মধ্যে ২ জন প্রেষণে), যুগ্ম জেলা জজ পদ পদমর্যাদার ৯ জন, সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজ পদমর্যাদার ১১৪ জন এবং একজনকে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন ও বিচার বিভাগের উপসচিব (প্রশাসন-১) মোহাম্মদ ওসমান হায়দারের স্বাক্ষরিত এসব প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বদলি ও পদায়নের প্রজ্ঞাপন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। বদলি ও পদায়নকৃত এসব বিচারকদের প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত নির্দিষ্ট সময় ও পরবর্তী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কিংবা প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত জেলা ও দায়রা জজ, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/দপ্তরপ্রধান মনোনীত কর্মকর্তার কাছে বর্তমান পদের দায়িত্বভার অর্পণ করে অবিলম্বে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ/ছুটিতে থাকা বিচারকদের প্রশিক্ষণ/ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগদানের তারিখে বর্তমান পদের দায়িত্বভার অর্পণ করে অবিলম্বে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নবনিযুক্ত চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নির্মূলে জুলাই গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রুত ন্যায়বিচার করা হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আজ রোববার একথা বলেন।
অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার প্রধান আসামি শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা করা হবে। জুলাইয়ের গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রুত ন্যায়বিচার করা হবে। গণহত্যায় জড়িত কোনো তথ্য-প্রমাণ কারো কাছে থাকলে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় জমা দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
দ্রুত ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আহ্বান জানিয়ে চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, সৎ দক্ষ ও সাহসী বিচারক নিয়োগ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কোর্টের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হলে শেখ হাসিনাসহ যারা সম্ভাব্য আসামি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া হবে।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, সম্ভাব্য প্রধান অপরাধী দেশ থেকে পালিয়েছেন তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আইনি প্রক্রিয়া; সেটা আমরা শুরু করবো। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অপরাধী প্রত্যার্পণ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে ২০১৩ সালে। শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে এ চুক্তিটি হয়েছিলো। তিনি যেহেতু বাংলাদেশে গণহত্যার প্রধান আসামি হবেন মনে করি। বা অধিকাংশ মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। সতুরাং এ প্রক্রিয়া শুরুর মাধ্যমে তাকে আইনগতভাবে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা করবো।
নিজের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এভিডেন্স কালেক্ট করা। অপরাধটা গোটা বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সব জায়গায় একইসেঙ্গ সংঘঠিত হয়েছে। প্রত্যেকটা জায়গায় একটা কমন ইনস্ট্রাকশন ছিলো গুলি করে সব মেরে ফেলা। এ অপরাধের যে আলামতগুলো সেগুলো সংগ্রহ করে কম্পাইল করা এটা একটা চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আসামিরা এখনো পলাতক প্রধান আসামি দেশত্যাগ করেছেন। অনেকে দেশত্যাগের চেষ্টায় আছেন। তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা।
গণহত্যার আলামতের বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রথম প্রায়োরিটি হচ্ছে, যেহেতু ঘটনাগুলো তাজা, এ মামলায় যারা আসামি হবেন তারা এখনো বাংলাদেশে আছেন। অনেকে দায়িত্বেও আছেন। তারা এ আলামতগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা করবেন। তাই আমাদের প্রধান দায়িত্ব এ আলমতগুলো দ্রুত সংরক্ষণ করা, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এগুলো সংগ্রহ করা। প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার হাতে নিয়ে আসা। যেন এ আলামতগুলো আদালতের সামনে উপস্থাপন করতে পারি। চিফ প্রসিকিউটর সব ধরণের আলামত তদন্ত সংস্থা বা প্রসিকিউশনের কাছে পৌঁছানোর জন্য ছাত্র-জনতাসহ ভুক্তভোগীদের প্রতি আহ্বান জানান।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আরও বলেন, এটা এমন একটা বিচার হবে যে, বিচারের পরে শহীদ পরিবার, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার, বাদীপক্ষসহ আসামিপক্ষও মনে করবে তাদের প্রতি ন্যায় বিচার করা হয়েছে। আসামিদের প্রতি জুলুম করা হবে না আবার ছাড়ও দেয়া হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, এ অপরাধগুলোর মাত্রা এতটাই ভয়াবহ যে তদন্ত কালে আসামিদের গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন হবে। নিশ্চয়ই আমরা অপরাধীদের গ্রেপ্তার চাইবো। আমাদের প্রথম চেষ্টা থাকবে যরা সম্ভাব্য অপরাধী তারা যাতে আদালতের জুরিসডিকশনের বাইরে চলে যেতে না পারেন। সেটা ঠেকানোর চেষ্টা থাকবে।
আইন সংশোধনের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা মাত্র দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমরা সরকারের সঙ্গে বসে এগুলো নিয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিবো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে সংঘটিত অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে।
বৈষম্যবিরোধী টানা ৩৬ দিনের আন্দোলন নির্মূলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় ক্যাডারদের হামলায় সরকারি হিসেবেই ৮০০ লোক নিহত হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে বহু মানুষ। এখনো চিকিৎসাধীন কয়েক হাজার মানুষ। এ গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হবে। ইতোমধ্যে প্রসিকিউশন টিম নিয়োগ দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর বাড্ডায় হৃদয় আহম্মেদ (১৬) নামে এক কিশোর হত্যার অভিযোগের মামলায় ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। শনিবার তিন দিনের রিমান্ড শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার এসআই মো. সাদেক আসামিকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালত এই রিমান্ডের আদেশ দেন।
এদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তার জামিন চেয়ে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের বাড্ডা থানার সহকারী জিআরও এস এম জহিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
কারাগারে আটক রাখার আবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, আসামিকে নিবিড়ভাবে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে আসামির কাছে থেকে হত্যা মামলার বিষয়ে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এই তথ্যসহ আসামির নাম-ঠিকানা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াধীন। আসামি জামিনে মুক্তি পেলে পলাতক ও মামলার তদন্তে বিঘ্ন ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এমন অবস্থায় মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত, তাকে জেলহাজতে আটক রাখা প্রয়োজন।
গত ৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গত ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন আসামি দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই দুপুর ২টার দিকে বাড্ডা থানাধীন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গুলিতে নিহত হন হৃদয়। এ ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৬১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন শাহাদাত হোসেন খান নামে এক ব্যক্তি।
প্রতারণা, জালিয়াতি ও অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগে আলোচিত-সমালোচিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমের মানিলন্ডারিং নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। অভিযোগ রয়েছে, এস আলম গ্রুপ প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।
শনিবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এস আলম গ্রুপের মালিক মো. সাইফুল আলমসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, ওভার ইনভয়েস, আন্ডার ইনভয়েজ ও সংঘবদ্ধ অপরাধের মাধ্যমে হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে।’
আজাদ রহমান জানান, প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের বিষয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সিআইডি। বিভিন্ন সূত্রে সিআইডি জানতে পেরেছে, এস আলমসহ সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে মাত্র এক দিনের ব্যবধানে সংশ্লিষ্ট দেশে পিআর (পার্মানেন্ট রেসিডেন্স) গ্রহণ করেছেন।
এস আলম সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সাইপ্রাসসহ ইউরোপে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে নিজের ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ ক্রয় ও ব্যবসা পরিচালনা করেছেন।
পাচার করা অর্থে সিঙ্গাপুরে প্রায় ২৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের ‘ক্যানালি লজিস্টিক প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে প্রতিষ্ঠান গড়েছেন সাইফুল আলম। এ ছাড়া ভুয়া নথি তৈরি, জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিদেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানি এবং বিনিয়োগের জন্য নামে-বেনামে ছয়টি ব্যাংক থেকে ৯৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে বিদেশে পাচার করেছেন এই বিতর্কিত ব্যবসায়ী।
তিনি ‘শেল কোম্পানি’ (নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান) খুলে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে বিদেশে পাচার করেছেন।
সিআইডি কর্মকর্তা আরও জানান, এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলমসহ তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় সংঘবদ্ধভাবে মানিলন্ডারিং অপরাধ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। এ বিষয়ে মানিলন্ডারিং আইন ও বিধি অনুযায়ী সিআইডি অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে।