জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রোম স্ট্যাটিউটের ১৫ অনুচ্ছেদের অধীনে মামলাটি করেন ‘থ্রি বোল্ট কোর্ট চেম্বার্সের ব্যারিস্টার মো. আশরাফুল আরেফিন।
মামলায় বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী এবং সরকারের অন্যান্য প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে। শুক্রবার লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মামলার বাদী ব্যারিস্টার মো. আশরাফুল আরেফিন।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার সারাহ ফোরে ও ব্যারিস্টার এমিল লিক্সান্দ্রু উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই এবং আগস্ট মাসে, বাংলাদেশ ইতিহাসের এক পৈশাচিক নৃশংসতার সাক্ষী হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, চলতি বছরের জুলাই মাসে, বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন ছাত্র আন্দোলনের সূচনা ঘটে, যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করে। শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার অযৌক্তিক হারে পুনর্বহাল এবং সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ পদ নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষণের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। তাদের দাবি ছিল, এই কোটা ব্যবস্থা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে অযাচিত অগ্রাধিকার প্রদান করে, যা দেশের মেধাবী এবং যোগ্য প্রার্থীদের জন্য চাকরির পথ রুদ্ধ করে দেয়। আন্দোলনের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল কোটা সংস্কার, তবে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যুর মতো ঘটনার পর এটি দ্রুত বৃহত্তর আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। শিক্ষার্থীরা তখন কেবল কোটা সংস্কার নয়, বরং প্রশাসনিক দুর্নীতি, অর্থনৈতিক সংকট এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনে যুক্ত হন।
এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখোমুখি হওয়ার পর সরকার এর জবাব দেয় অমানবিক সহিংসতার মাধ্যমে উল্লেখ করে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করতে সরকার পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের মতো বাহিনী মোতায়েন করে। এই বাহিনী নির্বিচারে গুলি, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র- যেমন বার্ডশট প্লেট এবং তাজা গুলি- ব্যবহার করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা চালায়। ইতিহাসের এই বর্বরতম নৃশংসতায় ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণ করেন।
বাংলাদেশ সরকারের এই কঠোর ব্যবস্থার ফলে দেশে গণহত্যা, বিচার-বহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং অসংখ্য বিক্ষোভকারী নিখোঁজ হয়েছেন। এই নিষ্ঠুরতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের উদাহরণ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।
সন্ত্রাস বিরোধ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সাংবাদিক আনিস আলমগীরের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক মুনিরুজ্জামান আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
এসময় আসামির উপস্থিতিতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালতে শুনানি হয়। রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। পরে আদালত তার এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উত্তরা পশ্চিম থানার প্রসিকিউশন বিভাগ সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর ধানমন্ডির ২ নম্বর রোডের একটি জিম থেকে বের হওয়ার পর আনিস আলমগীরকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে নেওয়া হয়। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবির কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
একই রাতে অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ চারজনের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা দায়ের করেন জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্সের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ। মামলার অপর আসামিরা হলেন- মারিয়া কিসপট্টা (ফ্যাশন মডেল) ও ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজ (উপস্থাপক)।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার অনুসারীরা বিভিন্ন কৌশলে ঘাপটি মেরে দেশে অবস্থান করে দেশকে অস্থিতিশীল করা এবং দেশের অবকাঠামোকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র করে আসছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, আসামিরা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতে বসে নিষিদ্ধ সংগঠনকে ফিরিয়ে আনার জন্য নানা গুজব (প্রপাগান্ডা) চালিয়ে আসছে। এর মাধ্যমে তারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পাঁয়তারা করছে। তাদের বিভিন্ন পোস্টের ফলে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা অনুপ্রাণিত হয়ে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও অবকাঠামোকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে।
২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে দায়ীদের তালিকায় নাম থাকার অভিযোগে বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের অপসারণ চেয়ে দায়ের করা রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটকারী আইনজীবীর অনুপস্থিতির কারণে আবেদনটি খারিজের আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ ও ব্যারিস্টার অনীক আর হক।
ন্যাশনাল লইয়ার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এস এম জুলফিকার আলী জুনু এই রিট আবেদনটি দায়ের করেছিলেন। এর আগে গত ৬ ডিসেম্বর তিনি রেজিস্ট্রি ডাকযোগে প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে দাবি করেন যে, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মতো সংবেদনশীল ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনে নাম আসা কোনো ব্যক্তির পুলিশ প্রধানের পদে থাকা ন্যায়বিচার ও জনআস্থার পরিপন্থী।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, ২০০৯ সালের ওই নৃশংস ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ অসংখ্য সদস্য শহীদ হন। তদন্ত প্রতিবেদনে নাম আসার পর আইজিপি পদে বহাল থাকলে তা অপরাধের বিচারের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সংশয় তৈরি করতে পারে। তাই সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাকে অবিলম্বে অপসারণ বা বরখাস্তের দাবি জানানো হয়। তবে শুনানির দিন রিটকারী আইনজীবী আদালতে উপস্থিত না থাকায় আদালত আবেদনটি খারিজ করে দেন।
সাবেক বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি এএফএম মেজবাহ উদ্দিনের মৃত্যুতে আজ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ আধাবেলা বন্ধ থাকবে। সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, তাঁর সম্মানে এদিন চেম্বার আদালতেও কোনো কার্যক্রম হবে না।
রবিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে এএফএম মেজবাহ উদ্দিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। সুপ্রিম কোর্ট বার এক বার্তায় তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে। আজ বাদ জোহর তাঁর জানাযা সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত হবে।
এএফএম মেজবাহ উদ্দিন ১৯৭৭ সালের ৩ অক্টোবর সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগে তালিকাভুক্ত হন। এরপর ২০০০ সালের ২৮ মে তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন এবং দুই বছর দায়িত্ব পালনের পর স্থায়ী বিচারপতি না হওয়ায় পুনরায় আইন পেশায় ফিরে আসেন। তিনি ২০০৯-২০১০ সেশনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর মেয়ে অ্যাডভোকেট সীমন্তী আহমেদ জানিয়েছেন যে, অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিনকে বনানী গোরস্থানে দাফন করা হবে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুম করে টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেলে (টিএফআই সেল) নির্যাতনের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ ২১ ডিসেম্বর।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই দিন ধার্য করেন।
মামলার ১৭ আসামির মধ্যে শুনানির সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন ১০ সেনা কর্মকর্তা।
তারা হলেন—র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব আলম, সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম, সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) খায়রুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল ও সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন।
ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত তিন আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ এবং সাতজনের পক্ষে ছিলেন তাবারক হোসেন। শেখ হাসিনার পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এম হাসান ইমাম ও পলাতক তিনজনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সুজাদ মিয়া।
আসামিদের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সাবেক প্রতিরক্ষা-বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন পলাতক রয়েছেন।
র্যাবের টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেলে নির্যাতনের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ৮ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন। পরে ওই দিনই তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৪ জন ব্যক্তিকে গুম করে নির্যাতনের ঘটনায় চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
নিজের নামে অনৈতিকভাবে ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুদক মহাপরিচালক আখতার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
দুদুকের তথ্য মতে, ইস্টার্ন হাউজিংকে অনৈতিক উপায়ে ঢাকার গুলশানে একটি প্লট নির্মাণের অনুমতি দিয়ে টিউলিপ সিদ্দিক একই ভবনে একটি বিনামূল্যের ফ্ল্যাট পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ঘটনায় চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল টিউলিপ সিদ্দিক, রাজউকের দুই সাবেক আইন কর্মকর্তা শাহ খসরুজ্জামান ও সরদার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক।
জুলাই মাসে তদন্ত যখন প্রায় শেষ পর্যায়ে, তখন মামলার আসামি শাহ খসরুজ্জামান হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। এতে তিন মাসের জন্য তদন্ত স্থগিত হয়ে যায়।
পরে দুদক চেম্বার আদালতে আপিল করলে ‘নো অর্ডার’ আদেশ পায়।
দুদক মহাপরিচালক আখতার হোসেন বলেন, ‘অন্য কোনো বিকল্প না থাকায়, মামলা থেকে খসরুজ্জামানকে বাদ দিয়ে পাঁচ মাস পর চার্জশিট দাখিল করতে হচ্ছে।’
এর আগে গত ১ ডিসেম্বর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির মামলায় টিউলিপ সিদ্দিককে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। একই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঁচ বছর ও তার বোন শেখ রেহানাকে সাত বছর সাজা দেন আদালত।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়’। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ আজ এই ঐতিহাসিক সচিবালয়ের উদ্বোধন করবেন। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আপাতত সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক ভবন-৪ এর দুটি কক্ষ নিয়ে সচিবালয়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। তবে এর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিশাল কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রধান বিচারপতি আট সদস্যবিশিষ্ট একটি ‘পরিকল্পনা ও উন্নয়ন’ কমিটি এবং পদ সৃজন কমিটি গঠন করেছেন। পাশাপাশি সচিবালয়ের দাপ্তরিক কাজের গতি আনতে গত ৭ ডিসেম্বর ৪৮৯ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ৩০ নভেম্বর সরকার ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ-২০২৫’ জারি করে। এর মাধ্যমেই দীর্ঘ ২৫ বছর পর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পুরোপুরি পৃথক করা সম্ভব হয়েছে। নতুন এই ব্যবস্থা চালুর ফলে এখন থেকে অধস্তন আদালত ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান এবং নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত যাবতীয় প্রশাসনিক ও সাচিবিক দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় পালন করবে। বিচার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই সচিবালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের বিচার বিভাগ দীর্ঘদিনের দ্বৈত শাসন থেকে মুক্তি পেল এবং বিচারিক স্বাধীনতা আরও সুসংহত হলো।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী নবগঠিত এই সচিবালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিজের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লোটজ সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ কথা জানান। এ সময় উভয় দেশের বিচার বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও মিথস্ক্রিয়া বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধান বিচারপতি।
সাক্ষাৎকালে জার্মান রাষ্ট্রদূত প্রধান বিচারপতির শপথ গ্রহণের পর থেকে বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বতন্ত্রীকরণের জন্য নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ এবং সেগুলোর সফল বাস্তবায়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বিশেষ করে বিচার বিভাগের জন্য একটি পৃথক ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়’ প্রতিষ্ঠায় প্রধান বিচারপতির অক্লান্ত প্রচেষ্টাকে তিনি অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেন। রাষ্ট্রদূত আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আগামী দিনে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বর্তমান প্রধান বিচারপতির দেখানো পথ ভবিষ্যতে পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করবে।
আলোচনায় বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন বিচার বিভাগ গঠনে জার্মানির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন ড. রুডিগার লোটজ। সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, প্রধান বিচারপতি জার্মান রাষ্ট্রদূতকে আশ্বস্ত করেছেন যে, তিনি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করা এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খানের মেয়ে ঐশী খানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। কমিশনের সহকারী পরিচালক এস. এম. রাশেদুল হাসান বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ঐশী খানের নামে অনুসন্ধানে ১ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ৭৫০ টাকার সম্পদ এবং ১১ লাখ ৪৯ হাজার ২৬৪ টাকার পারিবারিক ব্যয়ের তথ্য পাওয়া যায়। মোট ১ কোটি ৮১ লাখ ৭১ হাজার ৯০৪ টাকার সম্পদের বিপরীতে তার বৈধ আয় পাওয়া যায় মাত্র ১০ লাখ ৫৩ হাজার ৮৯২ টাকা। তার নামে ১ কোটি ৭১ লাখ ১৮ হাজার ৯২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক।
এছাড়া তার নামে বা বেনামে আরও সম্পদ থাকার সম্ভাবনার কথাও অনুসন্ধান টিম প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
দুদক জানায়, অনুসন্ধানের ভিত্তিতে কমিশন তাকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারি করে। নির্ধারিত ঠিকানায় গিয়েও নোটিশ প্রদান সম্ভব না হওয়ায় গত ১০ জুলাই সম্পদ বিবরণী ফরম লটকিয়ে জারি করা হয়। পরে তিনি এক মাস সময় বৃদ্ধির আবেদন করলে নির্ধারিত ২১ কার্যদিবসের পাশাপাশি, আরও ১৫ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়। তবে বাড়তি সময় পেলেও তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেননি।
দুদক উল্লেখ করে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পাশাপাশি তার নামে বিপুল অপ্রদর্শিত ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়ায় ২৭ (১) ধারার অভিযোগও প্রযোজ্য বলে কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়।
চট্টগ্রামের রাউজানে ৪টি অবৈধ ইটভাটার চিমনি গুঁড়িয়ে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। একই সঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া ইটভাটাকে ১২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ১০টা থেকে রাউজান পৌরসভা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী পাড়া এলাকা থেকে শুরু হয় এ অভিযান। অভিযান শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৩টায়। এ সময় রাউজান পৌরসভা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাজীপাড়ার সি.বি এম ব্রিকসের চিমনি গুঁড়িয়ে দিয়ে ৩ লাখ টাকা, রশিদর পাড়া এসএসবি ব্রিকসের চিমনি গুঁড়িয়ে দিয়ে ৩ লাখ টাকা, পূর্ব রাউজান কেবিআই ব্রিকসের চিমনি গুঁড়িয়ে দিয়ে ৪ লাখ টাকা, ডাবুয়া কলমপতি কেবি এম ব্রিকসের চিমনি গুঁড়িয়ে দিয়ে ২ লাখ টাকাসহ মোট ১২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রেজওয়ান-উল-ইসলাম। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন রাউজান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অংছিং মারমা, চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোজাহিদুর রহমান, সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন, পরিদর্শক চন্দন বিশ্বাস, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর কাজী ইফতেকার উদ্দিনসহ র্যাব, পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়ন বাহিনীর সদস্যরা। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, রাউজানে অবৈধভাবে ৩২ টি ইটভাটা রয়েছে। তন্মধ্যে ২৬ টি ইটভাটা চলমান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হবে। তিনি বলেন, কৃষি জমি ও পাহাড় টিলা কেটে ইটভাটায় মাটির যোগান ও জ্বালানি হিসাবে কাঠ পুড়ানোর অভিযোগে জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘঠিত হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) দুপুরে এ আদেশ জারি করে ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুনায়েদ আহমেদ পলককে ১০ ডিসেম্বর হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন। আগে থেকে জুনায়েদ আহমেদ পলক একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।
এরআগে, সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। পাশাপাশি সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহ্মেদ পলকের বিরুদ্ধেও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
নিয়ম অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা তদন্তের পর প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় বা প্রসিকিউশনে দাখিল করে। পরে প্রসিকিউশন তা যাচাই–বাছাই করে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আকারে ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন ও শপথ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামত প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলও খারিজ করেছে আপিল বিভাগ।
৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এ আদেশ দেন। এই আদেশের ফলে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন প্রক্রিয়া বৈধ প্রমাণিত হলো বলে জানান আইনজীবীরা।
লিভ টু আপিলের পক্ষে আপিলকারী সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ নিজে শুনানি করেন। অন্যদিকে ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হওয়া লেখক ফিরোজ আহমেদের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। ইন্টারভেনার হয়ে আরও শুনানি করেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি দেশ পরিচালনার জন্য সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চান। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং উপদেষ্টাগণ শপথ নেন।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ নিয়ে রাষ্ট্রপতির রেফারেন্স প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। সে রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে পরে তিনি লিভ টু আপিল করেন।
রিট খারিজের আদেশে হাইকোর্ট বলেন, এক ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের উপদেশমূলক মতামত গ্রহণ করেছেন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছেন। তাই এটি আইনি দলিল ও জনগণের ইচ্ছার সমর্থনপুষ্ট।
আদালত আরও উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ এবং আগামী বহু বছর জনগণ তা স্মরণে রাখবে।
সংবিধানের ১০৬ নং অনুচ্ছেদে ‘সুপ্রিম কোর্টের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ার’-এর কথা বলা আছে। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির কাছে যদি মনে হয় জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো আইনি প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে বা হতে পারে এবং এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়া প্রয়োজন, তাহলে তিনি প্রশ্নটি আপিল বিভাগের কাছে পাঠাতে পারবেন। আপিল বিভাগ উপযুক্ত শুনানির পর রাষ্ট্রপতিকে মতামত জানাতে পারবেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। গঠন ও শপথের আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১০৬ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চেয়ে রেফারেন্স পাঠান।
রাষ্ট্রপতির বিশেষ রেফারেন্স (১/২৪) অনুযায়ী তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ গত বছরের ৮ আগস্ট মতামত দেন। তাতে বলা হয়, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে পারবেন এবং তাদের শপথ পাঠ করাতে পারবেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
পাশাপাশি সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহ্মেদ পলকের বিরুদ্ধেও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কর্মরত সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম এসব তথ্য জানান।
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার লেখেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সজীব ওয়াজেদ জয়, আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান ও জুনায়েদ আহ্মেদ পলকের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে প্রসিকিউশন।
নিয়ম অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা তদন্তের পর প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় বা প্রসিকিউশনে প্রতিবেদন দাখিল করে। পরে প্রসিকিউশন তা যাচাই–বাছাই করে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আকারে ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়।
সাবেক ছাত্রদল নেতার বাড়িতে প্রবেশ করে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে করা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান (ম খা) আলমগীরসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। আগামী ২৯ ডিসেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার চার্জশিট গ্রহণ বিষয় শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার এসআই মাহামুদুন্নবী গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘গত ২৬ অক্টোবর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শেখ হাসিনাসহ ২৩ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেছি।’
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, মামলার বাদী জান্নাত আরা ফেরদৌসের স্বামী মোহাম্মদ শামীম পারভেজ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১১নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার। সাবেক প্রচার সম্পদক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ এবং সাবেক ভিপি সরকারি বাংলা কলেজ মিরপুর। যার দরুন তৎকালিন আওয়ামী লীগ দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তাকে বিভিন্ন মামলা হামলা করে আসছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ও মহিউদ্দিন খান আলমগীরের নির্দেশে অপর আসামিরা তার বাড়ির প্রত্যেকটি ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে প্রতিটি ফ্ল্যাটের আসবাবপত্র ভাংচুর ও লুটপাট করে ২২টি ল্যাপটপ, ১৭টি স্মার্ট মোবাইল ফোন, আনুমানিক ২০ ভরি স্বর্ণালংকার এবং বাদীর বাড়ির ২য় তলা থেকে নগদ নয় লাখ টাকা লুটপাট করে নিয়ে যায় এবং ভাংচুর ও লুটপাট শেষে বাদীর নাবালক সন্তানসহ বাড়ির ৫৪ জন ভাড়াটিয়াকে অবৈধভাবে আটক করে এবং মারপিট করে। এ ঘটনায় জান্নাত আরা ফেরদৌস বাদী হয়ে ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মিরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার এসআই মাহামুদুন্নবী।