২৭তম বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্ত উত্তীর্ণের পর নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা প্রায় ১২শ পরীক্ষার্থীকে ফের দ্বিতীয় বার মৌখিক পরীক্ষা-সংক্রান্ত রায়ের রিভিউতে ‘লিভ মঞ্জুর’ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
বিষয়টি নিয়ে আপিল শুনানির জন্য আগামী ৪ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
আদালতে পরীক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন ও ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। আর রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল অনিক আর হক।
ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন সাংবাদিকদের আদালতের আদেশের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, ‘২৭তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রায় ১২শ জন চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর যখন তারা নিয়োগের অপেক্ষায় ছিল তখন এক এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের প্রথম মৌখিক পরীক্ষা বাতিল করে দেয়। দ্বিতীয়বার মৌখিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত দেয়। প্রথম মৌখিক পরীক্ষা বাতিল সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট মামলা হয়। হাইকোর্ট ওই সিদ্ধান্ত বিষয়ে রায় দেয়। এর বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করলে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা সঠিক বলে সিদ্ধান্ত দেয় আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগ বিষয়টি নিয়ে লিভ মঞ্জুর না করে হাইকোর্ট রায়ের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সিপি নিষ্পত্তি (জাজমেন্ট সেটাসাইড) করে দিয়েছিল। তাতে আমরা পেয়ার ট্রায়াল থেকে বঞ্চিত হয়েছি। যার ন্যায়বিচারের পরিপন্থি।’
ব্যারিস্টার দোলন বলেন, ‘এ রায় আমরা রিভিউ চেয়ে আবেদন ফাইল করি। আজ (বৃহস্পতিবার) শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ আমাদের আবেদন মঞ্জুর করেছে। আমরা তিনটি সাংবিধানিক পয়েন্ট রেইজ করে গ্রাউন্ডস তুলে ধরে রিভিউ চেয়েছি। সে লিভ মঞ্জুর করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।’
তিনি বলেন, বিসিএস পরীক্ষা-সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীন এখতিয়ার সাংবিধানিকভাবে সরকারি কর্ম কমিশন তথা পিএসসির। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার ছিল না। আগামী ৪ ডিসেম্বর বিষয়টি আপিল আকারে শুনবেন সর্বোচ্চ আদালত। এ সিনিয়র অ্যাডভোকেট বলেন, ‘দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির আশায় থাকা এ সকল বিচার প্রার্থীদের ভোগান্তির অবসান ঘটবে বলে আমরা আশা করছি।’
২৭তন বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষা ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সিদ্ধান্তে বাতিল করে দেয় সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের পক্ষে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ ১৮ বছর ন্যায়বিচার প্রাপ্তির আশায় আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন উত্তীর্ণ হওয়ার পরও নিয়োগ বঞ্চিত ২৭ তম বিসিএস-এর প্রায় ১২'শ পরীক্ষার্থী।
২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি ২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় ৩৫৬৭ জন উত্তীর্ণ হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ওই বছরের ৩০ মে প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) ওই বছরের ১ জুলাই প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিল করে এবং দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন পরীক্ষার্থীরা। ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। তার আগে ওই বছরের ২৯ জুলাই দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ‘লিভ টু আপিল’ করে সরকারপক্ষ। ২০১০ সালের ১১ জুলাই আপিল বিভাগ সেই ‘লিভ টু আপিল পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি’ করেন আপিল বিভাগ। এ সংক্রান্ত রায়ে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষাকে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করা হয়। এর বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনটি দায়ের করা হয়। গতকাল সেই রিভিউ মঞ্জুর করে আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য করে আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইনের পাঁচ মামলার কার্যক্রম বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আজ রোববার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র পক্ষেও দায়েরকৃত 'লিভ টু আপিল' খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতি আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ। এ আদেশের ফলে শ্রম আইনের পাঁচ মামলার কার্যক্রম বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রইলো বলে জানান ড. ইউনূসের পক্ষের আইনজীবী।
আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান। আর রাষ্ট্র পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল অনিক আর হক।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইনের এই পাঁচ মামলার কার্যক্রম বাতিল করে গত ২৪ অক্টোবর রায় দেয় হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিলে যায় রাষ্ট্রপক্ষ।
২০১৯ সালের ৩ জুলাই ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সের চাকরিচ্যুত কয়েকজন কর্মচারি। এসব মামলা বাতিল চেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০২০ সালে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন। তখন হাইকোর্ট মামলা বাতিল প্রশ্নে রুল জারি করেছিলেন। শুনানি শেষে গত ২৪ অক্টোবর হাইকোর্ট ওই পাঁচ মামলা বাতিল করে রায় দেন।
চাঁদাবাজির মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া সাত বছরের কারাদণ্ড থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ বৃহস্পতিবার বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিল মঞ্জুর করে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আইনজীবী নাজমুল হুদা। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী তারেক ভূঁইয়া।
২০০৭ সালের ৬ মার্চ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় পূর্ব আগানগরের রফিকুল আলম নামের এক ব্যক্তি চাঁদাবাজির অভিযোগের এ মামলা করেন। ২০০৪ সালের ২৬ জুনের এক ঘটনায় ২০০৫ সালে দুই পর্বে ৫ লাখ টাকা চাঁদা নেয়ার অভিযোগ আনা হয়। বিচার শেষে ২০০৮ সালের ৮ মে সাত বছর কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন আমান। বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে আপিল মঞ্জুর করে রায় দেয় হাইকোর্ট।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিচারের অপেক্ষায় ট্রাইব্যুনালে অপেক্ষমান মামলার সাক্ষীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার কথা বিবেচনায় পাশাপাশি তাদের সাক্ষ্য দেয়ার প্রক্রিয়া নিরাপদ রাখতে এ আবেদন করা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বে দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ আবেদনের শুনানি হয়। শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি, যেসব বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে সেসব সরিয়ে নেয়ার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশনা দেয় ট্রাইব্যুনাল।
তবে, শুধুমাত্র বিদ্বেষ ছড়ায় শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যগুলো প্রচারে এ নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে, যেন তা ট্রাইব্যুনাল বা এর তদন্ত সংস্থার কাজের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত না করতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে যাবার পর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেখান থেকে ইতিমধ্যে তার নেতাকর্মীদের সঙ্গে কিছু কথোপকথনের রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয় যেখানে তিনি অগোচরে দেশে ফিরে আসাসহ নানান ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।
এসব বক্তব্য সাক্ষীদের মনে ভীতির সঞ্চার করতে পারে এবং বিচারের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে এ আশঙ্কা থেকেই মূলত এ আবেদন করা হয়।
সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বর্তমানে বেশ কয়েকজন বিচারপতি আচরণের (কনডাক্ট) বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান চলছে। একইসঙ্গে এ বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতিও হয়েছে। বুধবার সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী–বিষয়ক আপিলের রায়ের পর সম্প্রতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে এবং কাউন্সিলের বৈঠকও হয়েছে বলে গত ৭ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে ওঠা নানা অনিয়মের অভিযোগ যাচাই–বাছাই হচ্ছে বলেও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
আপাতত হাইকোর্ট বিভাগে ১২ বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না বলে গত ১৬ অক্টোবর জানান সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা।
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা শেষে ওই ১২ জন বিচারপতিকে বেঞ্চ না দেওয়ার ঘোষণা দেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল। তাঁর ওই ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা হাইকোর্ট এলাকা ছাড়েন।
এর আগে বিচারপতিদের অপসারণ–সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় রিভিউ চেয়ে করা আবেদন গত ২০ অক্টোবর পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেন আপিল বিভাগ। ওই রায়ের ফলে কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অসমর্থতা ও পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বলে জানান আইনজীবীরা।
১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এই ক্ষমতা দেওয়া হয় রাষ্ট্রপতিকে। ১৯৭৭ সালে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়, যা পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়।
খন্দকার দেলোয়ার হোসেন বনাম ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস মামলায় ২০০৫ সালে হাইকোর্ট সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেন। ২০১০ সালে আপিল বিভাগ পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের রায় বহাল রাখেন। তবে অধিকতর স্বচ্ছতা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বিবেচনায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান বলবৎ রাখেন আপিল বিভাগ।
২০১১ সালে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান অপরিবর্তিত রেখে জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। পরবর্তী সময় বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়।
তবে এর বৈধতা নিয়ে রিট করলে চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২০১৭ সালের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতিতে আপিলটি খারিজ করে রায় দেন। যাতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরে আসে।
আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের ১ আগস্ট। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তাঁর লেখা রায়ে গণতন্ত্র, রাজনীতি, দুর্নীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দেন। তবে সে সময় ওই পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও দলীয় নেতা–কর্মীরা। তাঁরা প্রধান বিচারপতি সিনহার পদত্যাগও দাবি করেন।
অভিযোগ রয়েছে ২০১৭ সালে অসুস্থতার কথা বলে এস কে সিনহাকে সরকার ছুটিতে যেতে বাধ্য করে। যদিও বিদেশ যাওয়ার সময় এস কে সিনহা সাংবাদিকদের বলেন, তিনি অসুস্থ নন, ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় তিনি বিব্রত। পরে বিদেশে থাকা অবস্থায়ই তিনি পদত্যাগ করেন এবং এখন পর্যন্ত আর দেশে ফেরেননি। পরে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ।
আলোচিত সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার কারাগার থেকে তিন বছর সাত মাস পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। আজ বুধবার বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে তিনি কারাগার থেকে বের হন। এ সময় বাবুল আক্তারের বর্তমান স্ত্রী ইশরাত জাহান মুক্তাসহ আত্মীয়-স্বজনরা কারাগারের গেটে উপস্থিত ছিলেন। স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে ছিলেন। বাবুল আক্তারের কারাগার থেকে বের হওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন তার আইনজীবী কফিল উদ্দিন।
তিনি বলেন, বাবুল আক্তারের জামিনের পর তা স্থগিত চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিলেন তার সাবেক শ্বশুর মোশাররফ হোসেন। গতকাল উচ্চ আদালত সেই আবেদনে সাড়া না দেওয়ায় তার মুক্তিতে কোনো বাধা ছিল না। তাই সন্ধ্যায় তাকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে কারাগার থেকে একটা সাদা গাড়িতে করে বের হয়ে আসেন বাবুল আক্তার। এরপর ঢাকায় বাসার উদ্দেশে রওনা হন। এর আগে হাইকোর্টের দেওয়া ৬ মাসের অন্তর্বর্তী জামিন স্থগিত চেয়ে নিহত মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের আবেদনে সাড়া দেননি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। গতকাল শুনানির পর ওই আবেদনে কোনো আদেশ দেননি বিচারপতি মো. রেজাউল হকের চেম্বার আদালত। ফলে হাইকোর্টের দেওয়া অন্তর্বর্তী জামিন বহাল থাকছে। বাবুল আক্তারের কারা মুক্তিতে আর কোনো বাধা না থাকায় তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে বের হয়ে আসেন। এর আগে তার জামিনের কাগজপত্র গত ১ তারিখ চট্টগ্রাম কারাগারে এসে পৌঁছায়; কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় তিনি মুক্তি পাননি। গত ২৭ নভেম্বর বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ বাবুল আক্তারকে ছয় মাসের জামিন দেন। বাবুল আক্তারকে কেন নিয়মিত জামিন দেওয়া হবে না, সে প্রশ্নে রুল জারি করেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। গত ১ ডিসেম্বর এই জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন মোশাররফ হোসেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে গিয়ে নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় খুন হন মাহমুদা খানম। তখন তার স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১২ মে এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ওই দিনই মাহমুদার বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে বাবুলসহ আটজনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। সেদিনই বাবুল আক্তারকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। বাবুল ও শ্বশুরের করা দুটি মামলা তদন্ত করে পিবিআই। শ্বশুরের মামলায় ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। এই প্রতিবেদন গ্রহণ করে বাবুল আক্তারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার আগে বাবুল আক্তারের করা মামলায় ৯ জানুয়ারি তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ মামলায় ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পিবিআই আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। বাবুল আক্তারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে পিবিআইয়ের দেওয়া অভিযোগপত্র ওই বছর ১০ অক্টোবর গ্রহণ করেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। গত বছর ১৩ মার্চ বাবুল আক্তারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত। ৯ এপ্রিল শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।
ডিএনএ মিলেছে, হারিছ চৌধুরীকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দসাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব বিএনপি নেতা আবুল হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নির্ধারণে কবর থেকে তুলে করা ডিএনএ পরীক্ষা তার পরিবারের সঙ্গে মিলেছে। এখন পরিবারের পছন্দমতো কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে হারিছ চৌধুরীর মরদেহ দাফন করতে বলা হয়েছে।
হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিনের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের পর আজ বুধবার বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
সামিরা তানজিনের আইনজীবী মাহদীন চৌধুরী বলেন, ‘ছদ্মবেশে থাকা মাহমুদুর রহমানই হারিছ চৌধুরী। ডিএনএ পরীক্ষায় তা প্রমাণিত হয়েছে। তার লাশ বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে সিলেটের কানাইঘাটে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।’
এর আগে, ৫ সেপ্টেম্বর ব্যারিস্টার সামিরা তানজিনের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নির্ধারণে কবর থেকে লাশ তুলে ডিএনএ পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন।
২০২১ সালে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ও বিএনপির সাবেক নেতা হারিছ চৌধুরীকে ‘মাহমুদুর রহমান’ পরিচয়ে ঢাকার সাভারের জালালাবাদ এলাকার একটি মাদ্রাসার কবরস্থানে দাফন করা হয়।
হারিছ চৌধুরীর মেয়ে জানান, সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ একটি নাটক রচনা করে বাবার মৃত্যুকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। মিডিয়া একটির পর একটি রিপোর্ট করলেও হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। এটি নিয়ে যেন কখনও প্রশ্ন না ওঠে, সেটি নিশ্চিত করার জন্যই এ রিট করা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমার বাবার মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ থাকবে- সন্তান হিসেবে এটি খুব মর্মান্তিক, কষ্টদায়ক।’ ‘এখনও মানুষ জিজ্ঞেস করে- সত্যিই কি তিনি মারা গেছেন? এ নিয়ে আমাদের হয়রানির শিকার হতে হয়। তাই বিষয়টি শেষ করতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি; আদালত নিরাশ করেননি।’
সাভারের জামিয়া খাতামুন নাবিয়্যিন মাদ্রাসার কবরস্থানে মাহমুদুর রহমান নামে কবর দেওয়া আবুল হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নির্ধারণে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর তার নামে কেন ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হবে না, তার নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ কেন প্রত্যাহার করা হবে না, একইসঙ্গে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী নিজ জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধার যথাযথ সম্মান দিয়ে কেন কবরস্থ করা হবে না মর্মে রুল জারি করা হয়। স্বরাষ্ট্র সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, রেজিস্ট্রার জেনারেল (জন্ম ও মৃত্যু), সিআইডির পরিচালক, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার ও সাভার মডেল থানার ওসিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর হারিছ চৌধুরী সস্ত্রীক তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দর্পনগরে যান। সেখানে একদিন রাত ১২টার পর তার ব্যক্তিগত সহকারী আতিক মোবাইল ফোনে জানান, ঢাকায় বিএনপি নেতাদের বাসভবনে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। কয়েক ঘণ্টা পর যৌথ বাহিনী হারিছের বাড়িতে হানা দেয়, কিন্তু তার আগেই তিনি সটকে পড়েন।
কিছুদিন সিলেটে লুকিয়ে থাকার পর ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে যান হারিছ চৌধুরী। ভারতের আসামের করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরে তার নানাবাড়ি। সেখানেই তিনি ওঠেন। সেখান থেকে তিনি বিদেশে যাতায়াতও করতেন।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও সরকারি ছুটি ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সরকারের করা লিভ টু আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেন। সোমবার অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দিন ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস এবং সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল।
এরপর ২০০২ সালে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাতীয় শোক দিবস এবং সরকারি ছুটির সিদ্ধান্তটি বাতিল করা হয়। এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সমর্থিত তিনজন আইনজীবী রিট করলে ২০০৮ সালের ২৭ জুলাই হাইকোর্ট ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এবং সরকারি ছুটি বাতিলের বিষয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে।
সে রায়ের ফলে এখন ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন এবং সরকারি ছুটির সিদ্ধান্ত বহাল হয়। সম্প্রতি হাইকোর্টের ওই রায়ে স্থগিত চেয়ে আপিলের আবেদনের করে রাষ্ট্রপক্ষ।
এদিকে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এ বিষয়ে ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, আগামী রোববার (৮ ডিসেম্বর) আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসবে।
২০২০ সালের ১০ মার্চ জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। বাংলায় দেওয়া রায়ের আদেশের অংশে আদালত বলেন, ‘আমরা ঘোষণা করছি যে জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে।’
‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা চেয়ে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. বশির আহমেদের করা রিটের শুনানি শেষে এ রায় দেন হাইকোর্ট।
পরে ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয় শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ দণ্ডিত সব আসামি খালাস পেয়েছেন।
রায়ে এ মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে বিচারিক আদালতের রায় অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে এ রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ রোববার বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশ বেঞ্চ এ রায় দেন।
এর আগে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ ২১ নভেম্বর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি গ্রহণ শেষ করেন। সেদিন আদালত মামলা দুটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। আজ রায় ঘোষণা করা হল।
২০১৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলা দুটির নথিপত্র হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। এটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। কোনো ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে।
পাশাপাশি দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের জেল আপিল, নিয়মিত আপিল ও বিবিধ আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। সে অনুযায়ী আসামি পক্ষ আপিল করে।
গত ৩১ অক্টোবর বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ২০১৮ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ২০০১-২০০৬ আমলের বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও আসামি শেখ আবদুস সালাম ২০২১ সালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপির নেতা হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইনসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে ১১ জনকে দণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। এরপর ওই বছরই হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স আসে। পাশাপাশি দণ্ডিত কারাবন্দিরা আপিল দায়ের করেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ-সংক্রান্ত মামলা দুটির (হত্যা ও বিস্ফোরক) নতুন করে তদন্ত শুরু করে। ২০০৮ সালে ২২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে মামলার অধিকতর তদন্ত হয়। এরপর তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলার (হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা) রায় দেন। রায়ের পর একই বছর বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলা দুটির নথিপত্র হাইকোর্টে এসে পৌঁছে। পেপার বুক প্রস্তুত করাসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে মামলায় আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি সম্পন্ন হলো। এখন হাইকোর্ট রায়ের অপেক্ষায়।
এ মামলায় বিএনপি'র শীর্ষ নেতৃত্বকে সম্পৃক্ত করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে বারবার দাবি করে আসছিল দলটি।
চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন নগরীর কোতোয়ালি থানায়। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগ ১১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪শ’ থেকে ৫শ’ জনের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের করেছেন হত্যাকান্ডের শিকার আইনজীবী আলিফের বড়ভাই খানে আলম।
আজ বৃহস্পতিবার মামলাগুলোর বিষয়ে নিশ্চিত করে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে হত্যাকান্ডের শিকার সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন ও ভাই খানে আলম বাদী হয়ে নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলা দু’টি করেছেন।
হত্যা মামলার আসামিরা হলেন- চন্দন, আমান দাস, শ্রী শুভ কান্তি দাশ, বুজা, রনব, বিধান, বিকাশ, রমিত, রুমিত দাশ, নয়ন দাশ, গগন দাশ, বিশাল দাশ, ওমকার দাশ, বিশাল, রাজকাপুর, লালা, সামির, সোহেল দাশ, শিব কুমার, বিগলাল, পরাশ, শ্রী গণেশ, ওম দাশ, পপি, অজয়, দেবী চরণ, দেব, জয়, লালা, দুর্লভ দাশ ও রাজীব ভট্টাচার্য্য।
মামলার এজাহারে আলিফের বাবা অভিযোগ করেন, গত ২৬ নভেম্বর সকাল ১১টার দিকে রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন আদালত। আদেশ প্রদানের সাথে সাথে আসামির পক্ষের ইসকনপন্থী আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আদালতকে উদ্দেশ্য করে অশালীন ভাষায় বিভিন্ন আজেবাজে মন্তব্য করে এবং আদালতে হট্টগোল সৃষ্টি করে। তখন চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারী এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আসামিরা প্রিজন ভ্যানের সামনে অবস্থান করে দায়িত্বরত পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা প্রদান করে।
আরও উল্লেখ করা হয়, প্রিজন ভ্যানের সামনে থেকে বিক্ষুব্ধদের সরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিচার্জ করলে আদালত চত্বর ত্যাগের সময় মসজিদসহ আইনজীবী ও সরকারি গাড়ি ভাঙচুর করে ওরা। একইদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তার ছেলে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রকাশ আলিফ বাসায় যাওয়ার সময় তার মুখে দাঁড়ি দেখে আসামিরা তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এ সময় তারা বহিস্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নামে জয়ধ্বনী দেয়।
স্থানীয় লোকজন ও ছেলের সহকর্মীদের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত শুনে তিনি জেনেছেন-ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ইন্ধনে আসামিরা তার ছেলেকে হত্যা করেছে।
ছেলের দাফন-কাফন ও জানাজা নামাজ সম্পন্ন করে আত্মীয়-স্বজনের সাথে আলাপ-আলোচনা শেষে ঘটনার ভিডিও ও স্থিরচিত্র দেখে আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে থানায় গিয়ে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
এরআগে, পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় কোতোয়ালী থানায় ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো প্রায় ১৪শ’ জনকে আসামি করে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করে পুলিশ।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে নজিরবিহীন অনভিপ্রেত ঘটনা ও দেশের জেলা আদালতে সাম্প্রতিক সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এ উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।
পাশাপাশি আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং আদালতের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে দেশের প্রতিটি আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ, এজলাস, বিচারকদের বাসভবন, বিচারক, কর্মচারীসহ আদালত-সংশ্লিষ্ট সবার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য দেশের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক স্মারকে এ তথ্য জানা গেছে।
ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যের অভিযোগে বুধবার হাইকোর্ট বিভাগের একটি দ্বৈত বেঞ্চের নেতৃত্বদানকারী বিচারপতিকে বেঞ্চ থেকে নেমে যেতে বলেন একদল আইনজীবী। তখন দুই বিচারপতি বেঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার সময় তাদেরকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৭ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে যে নজিরবিহীন অনভিপ্রেত ঘটনাবলি সংঘটিত হয়েছে এবং একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণসহ দেশের জেলা আদালতগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সেসব বিষয় সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের প্রধান বিচারপতি।
সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের সই করা ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের আদালতগুলো যাতে বিচারপ্রার্থীদের নির্বিঘ্নে বিচার সেবা দিতে পারে, সে লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট সামগ্রিক বিষয়াবলি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এ মর্মে আশ্বস্ত করছে যে, সব প্রতিকূলতা ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সত্ত্বেও দেশের আদালতগুলোতে বিচারসেবা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। প্রধান বিচারপতি দেশের আদালতগুলোতে এ ধরনের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধ করতে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ : এদিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণসহ অধস্তন সব দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত বা ট্রাইব্যুনালে কর্মরত বিচারক, তাদের এজলাস ও বাসভবনের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বৃহস্পতিবার স্মারক জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই স্মারকে বলা হয়, রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি অঙ্গের মধ্যে বিচার বিভাগ অন্যতম। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ এবং আদালতের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে দেশের প্রত্যেক আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ, এজলাস, বিচারকদের বাসভবন, বিচারক, কর্মচারীসহ আদালত-সংশ্লিষ্ট সবার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রধান বিচারপতি দেশের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞার সই করা স্মারকের শেষাংশে বলা হয়, এ অবস্থায় দেশের প্রত্যেক আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ, এজলাস, বিচারকদের বাসভবন, বিচারকদের গাড়ি, বিচারক, কর্মচারীসহ আদালত সংশ্লিষ্ট সবার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
দেশের আটটি বিভাগের বিভিন্ন স্থানে থাকা অবৈধ ইটভাটাগুলো যাতে কার্যক্রম শুরু না করতে পারে, সে জন্য ৭ দিনের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিভাগীয় কমিশনারদের পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) এক রিট আবেদনের নির্দেশনার আলোকে বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে এইচআরপিবির আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আদালতের নির্দেশনার বিষয়টি অবহিত করে নির্দেশনা চান। মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে ২০২২ সালে জনস্বার্থে এইচআরপিবি একটি রিট আবেদন করে। ওই আবেদন শুনানি শেষে আদালত বিবাদীদের প্রতি রুল জারি করে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারগণ এখন পর্যন্ত পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এবং আদালতে কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে কোনো প্রতিবেদন দাখিল না করায় গতকাল আদালতে একটি আবেদন করি।’
আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ইট উৎপাদন ও ভাটা পরিচালনার মৌসুম। এই সময়ের মধ্যে সারা দেশে লাইসেন্সবিহীন অসংখ্য অবৈধ ইটভাটা তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে এবং করতে যাচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত হুমকি স্বরূপ।
অবৈধ ইটভাটাগুলো যাতে কার্যক্রম শুরু করতে না পারে, সে জন্য আদালতে আবেদনটি দাখিল করা হয় জানিয়ে মনজিল মোরসেদ বলেন, শুনানি শেষে আদালত এক সপ্তাহের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারগণকে নিজ নিজ এলাকার অবৈধ ইটভাটার মালিকরা যাতে তাদের কার্যক্রম শুরু না করতে পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এবং ওই কার্যক্রম সম্পর্কে ১৫ ডিসেম্বরের আগে তাদের পদক্ষেপ সম্পর্কে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারগণকে এ নির্দেশ পালন করতে বলা হয়। রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন মনজিল মোরসেদ, তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী সঞ্জয় মন্ডল ও সেলিম রেজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. তামিম।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তার ছেলে খন্দকার মাহবুব হোসেন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক লাইন ডিরেক্টর ডা. মাহবুবুর রহমানকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এর বিচারক আবুল কাশেমের আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেন।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর দুদকের উপপরিচালক লুৎফর রহমান ওই মামলাটি করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, পরস্পর যোগসাজশে আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ও বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পভুক্ত বিদেশে গমনেচ্ছু কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিমানের টিকিট সরবরাহের বিষয়ে প্রতারণা, জালিয়াতি ও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সাজানো টেন্ডারের মাধ্যমে নিজেরা লাভবান হন সরকারের ৪৮ লাখ ৫১ হাজার ৮০ টাকা ক্ষতি করে। আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
এর আগে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
মানহানীর অভিযোগে করা মামলায় আত্মসমর্পণ করে সাময়িক বরখাস্ত সহকারী কমিশনার তাপসী তাবাসসুম উর্মি জামিন পেয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান আহম্মেদ শুনানি শেষে এ জামিন মঞ্জুর করেন।
সকাল সাড়ে দশটায় তিনি আদালতে উপস্থিত হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে বাদীপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
প্রসঙ্গত, গত ৮ অক্টোবর শহীদ আবু সাঈদসহ অন্য শহীদদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মানহানির মামলার আবেদন করেন গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ।
এরপর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড এবং পর্যালোচনা শেষে ২৮ নভেম্বর তাকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সরকারের দায়িত্বশীল পদে থাকা সত্বেও গত ৫ অক্টোবর আসামি উর্মি শহীদ আবু সাঈদসহ ছাত্র-গণআন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ও এর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অবমাননাকর বক্তব্য ফেসবুক লিখেন।
যার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেফারেন্সের ভিত্তিতে সংবিধান সম্মতভাবে গঠিত একটি সরকার প্রধান সম্পর্কে বিষেদগার করা হয়েছে এবং সরকার উৎখাতের হুমকি দিয়ে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করা হয়েছে।
গত ৬ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। পরে ৭ অক্টোবর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে চাকরিবিধি অনুযায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার পক্ষ থেকে জানানো হয়।