১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও সরকারি ছুটি ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সরকারের করা লিভ টু আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেন। সোমবার অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দিন ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস এবং সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল।
এরপর ২০০২ সালে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাতীয় শোক দিবস এবং সরকারি ছুটির সিদ্ধান্তটি বাতিল করা হয়। এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সমর্থিত তিনজন আইনজীবী রিট করলে ২০০৮ সালের ২৭ জুলাই হাইকোর্ট ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এবং সরকারি ছুটি বাতিলের বিষয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে।
সে রায়ের ফলে এখন ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন এবং সরকারি ছুটির সিদ্ধান্ত বহাল হয়। সম্প্রতি হাইকোর্টের ওই রায়ে স্থগিত চেয়ে আপিলের আবেদনের করে রাষ্ট্রপক্ষ।
এদিকে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এ বিষয়ে ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, আগামী রোববার (৮ ডিসেম্বর) আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসবে।
২০২০ সালের ১০ মার্চ জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। বাংলায় দেওয়া রায়ের আদেশের অংশে আদালত বলেন, ‘আমরা ঘোষণা করছি যে জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে।’
‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা চেয়ে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. বশির আহমেদের করা রিটের শুনানি শেষে এ রায় দেন হাইকোর্ট।
পরে ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয় শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা।
এস আলম গ্রুপের সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন ২৪টি কোম্পানির সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা মূল্যের ৩২ কোটিরও বেশি শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এ আদেশ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিশেষ পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুদকের পক্ষ থেকে এসব শেয়ার অবরুদ্ধ করার আবেদন করা হয়। আদালত শুনানির পর তা মঞ্জুর করেন। যে ২৪টি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে এস আলম ট্যাংক টার্মিনাল লিমিটেড, এস আলম রিফাইন সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এস আলম সুপার এডিবল লিমিটেড, এস আলম সিমেন্ট লিমিটেড, এস আলম স্টিলস লিমিটেড, এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্টস লিমিটেড, শাহ আমানত প্রাকৃতিক গ্যাস লিমিটেড, এস আলম পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড, এস আলম ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং মিলস লিমিটেড, হাসান আবাসন লিমিটেড, এস আলম ব্রাদার্স লিমিটেড, এস আলম ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেড, সোনালী কার্গো লজিস্টিকস লিমিটেড, কর্ণফুলী প্রাকৃতিক গ্যাস লিমিটেড, ওশান রিসোর্স লিমিটেড, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড, মেরিন ইম্পায়ার লিমিটেড, এস আলম প্রপার্টিজ লিমিটেড, মডার্ন প্রপার্টিজ লিমিটেড, এস আলম লাক্সারি চেয়ার কোচ সার্ভিসেস লিমিটেড, ফাতেহাবাদ ফার্ম লিমিটেড, এস আলম কোল্ড স্টিলস লিমিটেড ও এস আলম সয়াসিড এক্সট্রাকশন প্ল্যান্ট লিমিটেড।
দুদকের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়েছে, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন ২৪টি কোম্পানিতে তাদের ৩২ কোটি ১০ লাখ ১৯ হাজার ৪৭৮টি শেয়ার রয়েছে। এসব শেয়ারের মূল্য ৩ হাজার ৫৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ২১ হাজার ৩০০ টাকা।
এস আলম গ্রুপের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসহ বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান তদন্তাধীন রয়েছে। এস আলম পরিবারের সদস্যরা এসব শেয়ার হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। কাজেই তাদের এসব শেয়ার অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন। অন্যথায় রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। এর আগে ১৪ জানুয়ারি মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ২০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ ও তাদের ৬৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করারও আদেশ দিয়েছেন আদালত। তারও আগে ১৯ ডিসেম্বর মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ১২৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত। ৭ অক্টোবর মোহাম্মদ সাইফুল আলম, তার স্ত্রী, সন্তান, ভাইসহ ১৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাতের মামলায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনসহ ১৯ জনকে ১২ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আজ বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক রবিউল আলমের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুনুর রশিদ, প্রধান কার্যালয়ের চেয়ারম্যান মো. হোসেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ গোফরানুল হক, সাইদ-উর রহমান, মেজবাহ উদ্দিন স্বপন, ইঞ্জিনিয়ার শেখ তৈয়েবুর রহমান ও গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস, পরিচালক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ সানী, মিসেস ফারহা দিবা ও জামসেদ আরা চৌধুরী, প্রফিট শেয়ারিং ডিস্ট্রিবিউটর মো. জসিম উদ্দীন ভূঁইয়া, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন ও সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ এস এম আহসানুল কবির বিপ্লব, জোবায়ের সোহেল ও আব্দুল মান্নান এবং ক্রাউন এক্সিকিউটিভ মোসাদ্দেক আলী খান।
আসামিদের মধ্যে রফিকুল আমীন, তার স্ত্রী ফারহা দিবা ও মোহাম্মদ হোসেন কারাগারে আছেন। রায় ঘোষণার আগে তাদের আদালতে হাজির করা হয়।
জামিনে থাকা অবরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুনুর রশিদও আদালতে হাজির হন। অপর ১৫ আসামি পলাতক। আদালত তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
রায়ে ১২ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি আদালত আসামিদের চার হাজার ৫১৫ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫৪ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে আসামিদের এই অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থদণ্ড পরিশোধ না করলে জেলা প্রশাসনকে অর্থদণ্ড আদায় করার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন দুদকের পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আইনে থাকা সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছেন আদালত। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ খুশি।
গত বছর ১১ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মামলায় বেনজির হোসেন নিশির দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। নিশি, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবির রমনা জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক মো. ইরফান খান তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। এসময় আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি. এম. ফারহান ইশতিয়াক তার জামিন নামঞ্জুর করে দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
মামলার সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা করে। এতে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় গত ২৮ অক্টোবর হত্যাচেষ্টার অভিযোগে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহিরুল হক হলের শিক্ষার্থী আরমান হোসাইন। মামলায় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ ২২০ জনকে আসামি করা হয়।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট নুপুর আখতারকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ৯৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আজ রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমানের আদালতে ভুক্তভোগী নিজে বাদী হয়ে এ মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড শেষে মোহাম্মদপুর থানাকে মামলার অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য অপর আসামিরা হলেন সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আসাদুজ্জামান খান কামাল, হাসানুল হক ইনু, আনিসুল হক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস, সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, মোহাম্মদ এ আরাফাত ও জুনায়েদ আহমেদ পলক।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী নুপুর আখতার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট বিকাল তিনটার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বিক্ষোভে অংশ নেন। এ সময় হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করলে তার বাম হাতে একটি গুলি এবং মাথায় আরেকটি গুলি লাগে। এতে তিনি গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। পরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হুমকিতে চিকিৎসা না করে ফেরত যেতে হয়। অতঃপর তিনি বাধ্য হয়ে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ সেবন করতে থাকেন। পরবর্তীতে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাথার এক্সরে করেন। পরে চিকিৎসক রিপোর্ট দেখে তাকে অপারেশন করতে বলেন। গত ১৭ ডিসেম্বর অপারেশন করে গুলির অংশ বের করা হয়।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে।
একই মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে ২০০ থেকে ৩০০ জন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীকে রাখা হয়েছে।
এরা হলেন- নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান। এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক শাহ নিজাম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনূর আলম বলেন, মো. আবুল হোসেন তালুকদার নামের এক ব্যক্তি মামলার জন্য নারায়ণগঞ্জ আদালতে আবেদন করেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলাটি রুজু করা হয়।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট রাত ৮টার সময় চিটাগাংরোডের ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের সামনে ছাত্র-জনতা একত্রিত হয়ে আন্দোলন করছিল। তখন ওই আন্দোলনস্থলে বাদী আবুল হোসেন তালুকদারের ছেলেও উপস্থিতি ছিলেন। সেসময় আন্দোলন দমাতে উক্ত মামলার আসামিরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করলে বাদীর ছেলে পিঠের বামপাশ ও শরীরে বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হন।
২০০৮ সাল থেকে গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে ২ হাজার ২৭৬ জনকে ক্রসফায়ারে হত্যা ও ১৫৩ জনকে গুমের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে পৃথক আবেদন দাখিল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে অভিযোগটি দায়ের করেন দলটির মামলা ও তথ্যবিষয়ক কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন খান পিপিএম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী নুরুল ইসলাম জাহিদ। প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আল নোমান সাংবাদিকদের জানান, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অফিসে বিএনপি ২ হাজার ২৭৬ জনকে ক্রসফায়ারে হত্যা ও ১৫৩ নেতা-কর্মীকে গুমের অভিযোগ দাখিল করেছে।’ অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ২০০৮ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দলকে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ও কিছু অতি উৎসাহী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের অপহরণ পূর্বক গুম করে হত্যা করে। এখন পর্যন্ত অনেককেই গুম করে রাখা হয়েছে। বিএনপির তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত মোট ১৫৩ জনকে গুম করে হত্যা ও অপহরণপূর্বক গুম করে রাখা হয়েছে। এ গুম সংক্রান্ত অনুসন্ধান ও তদন্ত করে মামলা গ্রহণের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলো।
ক্রসফায়ারের অভিযোগে বলা হয়েছে, অবৈধ ভোটারবিহীন আওয়ামী লীগ সরকারপ্রধানের নির্দেশে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতি উৎসাহী কিছু সদস্য দমন-নিপীড়ন ও নির্যাতন করে বিএনপিকে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করার জন্য এবং দল থেকে লোকজন বিচ্ছিন্ন করার জন্যই ক্রসফায়ারের নামে জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড চালায়। ক্রসফায়ারের নামে এ হত্যাকাণ্ডে মোট ২ হাজার ২৭৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মূল উদ্দেশ্যই ছিল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করা, ধ্বংস করা ও ক্রসফায়ারে নামে হত্যা করে বিএনপির মতো একটি বড় দল থেকে লোকজনদের শূন্য করা এবং বিএনপির পরিবারদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা, ক্রসফায়ার নামে হত্যা করে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করা, তাদের দলীয় কার্য থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা ও মেধাশূন্য করা। আওয়ামী লীগের ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই জঘন্য কর্মকাণ্ডে ও মিথ্যা বানোয়াট পরিকল্পনা সৃষ্টি করে ক্রসফায়ারের নামে ২২৭৬ জনদের হত্যার ন্যায়বিচার করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি। অভিযোগ দায়েরের পর সালাউদ্দিন খান বলেন, ক্রসফায়ার ও গুমের শিকার সবাই আমাদের দলের নেতা-কর্মী। যেমন গুমের শিকার হয়েছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ, আমাদের নেতা ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমসহ ১৫৩ জন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের করা চারটি মামলার কার্যক্রম বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ‘লিভ টু আপিল’ খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেন। এ আদেশের ফলে তারেক রহমানের চার মামলা বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ই বহাল রইল বলে জানান তার আইনজীবীরা।
আদালতে রাষ্ট্র পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক। এছাড়া ছিলেন অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ আবদুল জব্বার ভুঞা ও ডেপুটি এটর্নি জেনারেল জহিরুল ইসলাম সুমন। অন্যদিকে তারেক রহমানের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। চাঁদাবাজির অভিযোগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাজধানীর পৃথক দুটি থানায় দায়ের করা চার মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে হাইকোর্টে পৃথক আবেদন করেন তারেক রহমান। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (চূড়ান্ত) ঘোষণা করে গত ২৩ অক্টোবর রায় দেন বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ। সে রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক ‘লিভ টু আপিল’ (আপিল দায়েরে আবেদন) করে। তারেক রহমানের আইনজীবীরা জানান, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনামলে রাজনৈতিক হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে, হয়রানি করতে এসব মিথ্যা, ভুয়া ও বানোয়াট মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশের সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন। শুনানি শেষে চিন্ময় দাশের আইনজীবী অপূর্ব ভট্টাচার্য জানিয়েছেন তারা উচ্চ আদালতে যাবেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ নভেম্বর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চিন্ময় দাসের জামিন না মঞ্জুর হলে ওইদিনই চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয় ৩ ডিসেম্বর। কিন্তু ওইদিন চিন্ময়ের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষও শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করেন। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত জামিন শুনানির জন্য ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। ১১ ও ১২ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে রবীন্দ্র ঘোষ নামে এক আইনজীবী এসে চিন্ময়ের জামিন শুনানির তারিখ এগিয়ে আনার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন না করায় আদালত নাকচ করে দিয়ে পূর্ব নির্ধারিত তারিখে জামিন শুনানির দিন রাখেন।
গত ২৫ নভেম্বর বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদোহ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে মহানগর ষষ্ঠ কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এটি নিয়ে বিক্ষোভ করেন ইসকন অনুসারীরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিক্ষোভকারীরা। দুপুর পর বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আদালত এলাকায় মসজিদ-দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। এসময় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়।
একপর্যায়ে বিকেলে আদালতের প্রধান ফটকের বিপরীতে রঙ্গম কনভেনশন হলের গলিতে একদল ইসকন অনুসারীর হাতে খুন হন অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম। এ ঘটনায় ২৯ নভেম্বর দিবাগত রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। একই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় আরও কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার ঢাকায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে বাদী হয়ে মামলাটি করেন সংস্থাটির উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, আনিসুল হকের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৪৬ কোটি ১৯ লাখ ৭০ হাজার ৯৬ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জনপূর্বক দখলে রেখে এবং ২৯টি ব্যাংক হিসাবে ৬৬৫ কোটি টাকার বেশি লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর আনিসুল হক ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। সরকার পতনের পর গত ১৩ আগস্ট ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে আনিসুল হককে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় পুলিশ। এরপর তাকে কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসন থেকে জয়ী হন আনিসুল হক। ২০১৪ সাল থেকে তিনি আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি নিজ ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে অপরাধমূলক অসদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৪৬ কোটি ১৯ লাখ ৭০ হাজার ৯৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন।
এছাড়া বিবাদী ২৯টি ব্যাংক হিসাবে ৩৪৯ কোটি ১৫ লাখ ২১ হাজার ৫৮২ টাকা জমা ও ৩১৬ কোটি ৪৮ লাখ ৮১ হাজার ৬০৮ টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। আসামি মানি লন্ডারিংয়ের সম্পৃক্ত অপরাধ ‘দুর্নীতি ও ঘুষ’ সংঘটনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশে তার রূপান্তর, স্থানান্তর ও হস্তান্তর করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা তৎসহ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটন করেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর মিরপুর থানার দুই হত্যাচেষ্টা ও খিলগাঁও থানার এক হত্যা মামলায় হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হককের (ব্যারিস্টার সুমন) জামিন আবেদন না মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ বুধবার তিন মামলায় সুমনের জামিন চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবী। জামিনের বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। উভয় পক্ষের শুনানি শেষ ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শিহাবুল ইসলাম তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করেন।
গত ২১ অক্টোবর রাতে মিরপুর-৬ এলাকা থেকে সুমনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর তাকে এসব মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
মিরপুর থানায় দায়েরকৃত হত্যা মামলার সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর মোড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছিল আদহাম বিন আমিন। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গুলিবর্ষণ করলে তার দুই হাঁটুতে গুলি লাগে। এ ঘটনায় গত ২২ অক্টোবর তার ভাই আকিবুন নূর হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন।
মিরপুর থানায় দায়েরকৃত অপর এক হত্যাচেষ্টা মামলার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ এ কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন যুবদল নেতা ও মিরপুরের বাঙালিয়ানা ভোজের বাবুর্চি হৃদয় মিয়া। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে তার ডান পা গুলিবিদ্ধ হয়। গ্রেফতারের পর এ মামলায় পাঁচদিনের রিমান্ড ভোগ করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
অন্যদিকে খিলগাঁও থানার হত্যা মামলার সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে গত ১৯ জুলাই বিকেল ৩ টার দিকে খিলগাঁও থানাধীন বনশ্রী এলাকায় পায়ে গুলি লেগে গুলিবিদ্ধ হন মিজানুর রহমান। পরে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মো. কামাল হোসেন গত ২ সেপ্টেম্বর খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ৷
গুমের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেছেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতা মাইকেল চাকমা।
গুমের সময় যেই গামছা দিয়ে মাইকেল চাকমাকে বাধা হয়েছিল সেটিও অভিযোগের সঙ্গে তিনি জমা দিয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তিনি সোমবার এ অভিযোগ দায়ের করেন বলে জানান প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আল নোমান। নোমান জানান, গুমের সময় যে গামছা দিয়ে মাইকেল চাকমাকে বাধা হয়েছিল সেটিও আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে জমা দিয়েছেন এই ইউপিডিএফ নেতা।
অভিযোগে তাকে রাখা আয়না ঘরের বর্ণনা দিয়ে মাইকেল চাকমা বলেছেন, ‘৫ বছর ৪ মাস তিনি গুম ছিলেন। ২০১৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খাগড়াছড়ির সফরের সময় অবরোধ করেন ইউপিডিএফ। এই ঘটনায় তখন অবরোধকারীদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করায় গুম হওয়ার পর তাকে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তার আশঙ্কা এসব ঘটনায় তাকে গুম করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ৭ আগস্ট পর্যন্ত গুম ছিলেন মাইকেল চাকমা।’
খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণের রাতে (থার্টি ফার্স্ট নাইট) বাসা-বাড়ির ছাদে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো এবং ফানুস ওড়ানো বন্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আশরাফ উজ্জামান সোমবার হাইকোর্টে রিটটি করেছেন। রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারকে বিবাদী (রেসপনডেন্ট) করা হয়েছে।
রিটের বিষয়ে আইনজীবী আশরাফ উজ্জামান বলেন, রিটে থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত তীব্র সাউন্ড দিয়ে কোনো অনুষ্ঠান না করা, বাসা-বাড়ির ছাদে আতশবাজি-পটকা না ফাটানো ও ফানুস ওড়ানো বন্ধে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে রাত ১০টা থেকে সড়ক, পার্ক ও উন্মুক্তস্থানে জনসমাগম নিষিদ্ধ এবং আতশবাজি-পটকা ও ফানুস বেচাকেনা বন্ধের নির্দেশ চাওয়া হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে।
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে তিন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ২ টি কমিটি এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং সড়ক, পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত দুটি অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। এছাড়া বাকি দুটি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ শাখা থেকেও কমিটি গঠনের তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে গতকাল বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১টা ৫০ মিনিটে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ ভবনেই ছিলো শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডসমূহের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ ও তালিকা প্রস্তুত করা এবং ভবিষ্যতে যেকোনো দুর্ঘটনার ফলে উদ্ভূত ক্ষয়ক্ষতি রোধকল্পে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ দিতে প্রশাসন অধিশাখার যুগ্মসচিব বেগম মোর্শেদা আক্তারকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, সহকারী সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং সদস্য সচিব হিসেবে আছেন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মোহাম্মদ মাসুম।
এছাড়া মন্ত্রণালয়ের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের জন্য প্রশাসন অধিশাখার যুগ্মসচিব মো. আবদুছ সামাদ আল আজাদকে আহ্বায়ক করে অপর একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গঠিত এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন উপসচিব মোহাম্মদ সাইদুর রহমান, সিস্টেম অ্যানালিস্ট সুকান্ত বসাক, সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম মেহরাব হোসেন। সদস্য সচিব হিসেবে আছেন উপসচিব মো. কামাল হোসেন।
দুই কমিটিকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।